তুমি ছাড়া – রাতের প্রেমের গোপন গল্প

তুমি ছাড়া – রাত না কাটা প্রেমের গোপন গল্প: ভালোবাসি রিমন। তোকে অনেক ভালোবাসি এবার আর তোকে ছাড়বো না। আমাকে ফাকি দিতে পারবিনা।


১ম পর্ব

সময়টা হয়তো রাত ১২ টা হবে।

রিতুকে টেনে হেচড়ে জঙ্গলের ভিতর নিয়ে এসেছে রিমন। রিতু এখন ঘুমে আছে অথবা অজ্ঞান। রিমন কোনোভাবেই তার রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে পারছেনা। গায়ের শার্টটা দিয়ে পেট ভালো মত বেধে রেখেছে তবুও রক্ত বন্ধ করতে পারছেনা। রিমনের চিৎকার করে কাদতে ইচ্ছা করছে। প্রিয় বন্ধুর মৃত্যু হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু টু শব্দ করতে পারছে না।

তন্দ্রা কাটিয়ে রিতু রিমন কে বলল,
দোস্ত আমি যদি মারা যায় তাহলে তুই যেন কাদিস না।
খুব ইচ্ছা ছিলো নিজের হাতে তোর বউকে সাজিয়ে দেব। কিন্তু বিধাতা হয়তো আমার কপালে তার কিছুই লিখিনি।

রিমন রিতুর মাথাটা বুকে জড়িয়ে নিলো,
তোর কিচ্ছু হবে না দেখিস। আমার বউকে তুই সাজিয়ে দিবি। তুই আমাকে কথা দিয়েছিলি আজীবন আমার পাশে থাকবি। তাহলে আজ কেন চলে যাবি আমাকে একা ফেলে?

রিতুর দিকে তাকাতেই দেখলো আবারও জ্ঞান হারিয়েছে।

কিছুক্ষণ পর আবার রিতু চোখ মেলে তাকালো।

আচ্ছা দোস্ত মৃত্য কি খুব কষ্টের হয়?

কথাটার জবাব রিমন কিভাবে দিবে তার জানা নেয়।

তোর কিচ্ছু হবে না রিতু। রিমন যতদিন বেচে আছে তোর কিচ্ছু হবে না। আমার শরীরের একবিন্দু রক্ত থাকা কালীন তুই বেচে থাকবি। (কান্না করতে করতে রিমন কথা গুলো বলতে থাকে)

কিছুক্ষণ আগে,

রিতুর কাকা সম্পত্তির লোভে রিতুর বাবা না আর ভাইয়াকে মেরে ফেলে।
রিতুকেও মারার জন্য দরজা ধাক্কা দিতে থাকে। কিন্তু রিতু কিছুতেই দরজা খোলে না।
এখন একোটাই চিন্তা বাচতে হবে। তাই প্রাণের বন্ধু রিমন কে কল দিয়ে বলে, “ওরা আমার মাবাবা আর ভাইয়াকে মেরে ফেলেছে। আমাকেও মেরে ফেলবে। আমি দরজা আটকে ঘরে বসে আছি। দরজা ভাঙ্গার চেষ্টা করছে। তুই আমাকে বাচা রিমন। “
কথা শেষ হতেই দরজা ভেঙ্গে রিতুর চাচা আর চাচাতো ভাই রিহাম ঢুকে পড়ে।

খুব ইচ্ছা ছিলো নিজের ছেলের বউ করবো তোমাকে। কিন্তু তোমার বাবা নাকি আমার মাতাল ছেলের সাথে তোমাকে বিয়ে দিবেনা।
তাই সম্পত্তি পাওয়ার এই একটাই উপায় ছিলো।

কাকু তুমি কি মানুষ সামান্য সম্পত্তির জন্য নিজের ভাই ভাবি আর ভাইপো কে মেরে ফেললে?
বাবাকে একবার বলেই দেখতে সব খুশি খুশি তোমাকে দিয়ে দিতো।

কিন্তু সেটা হতো করুণা, ভিক্ষা।
আর এটা হলো ক্ষমতা। একবার ভাবছিলাম তোমার বাবা মাকে মেরেছি তো কি হয়েছে তোমাকে মারবো না।
ছেলের বউ করবো এতে তোমার ইচ্ছা থাক বা না থাক।
কিন্তু আবার ভাবলাম যদি তুমি পুলিশকে সব ঘটনা বলে দাও তাহলে তো আমদের বিপদ।
নিজেদের বিপদ কিভাবে ডেকে আনি বলো! তাই তোমাকেও যে মারতে হবে মামুনি।

রিতুকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই পেটে ছুরির আঘাত করে।
রিতুর দেহটা যখন লুটিয়ে পড়ে তখন ওরা রিতুর বাবার রুমে গিয়ে প্রোপার্টির সমস্ত পেপার খুজতে থাকে।
এই ফাকে রিমন এসে পড়ে। মেইন দরজা দিয়ে ঢুকলে ঝামেলা হবে তাই পিছনের প্রাচির টপকে বাসার ভিতর ঢুকে পড়ে। চুপিচুপি রিতুর ঘরে গিয়ে দেখে ওর দেহটা মেঝেতে লুটিয়ে আছে। কাছে গিয়ে দেখে এখনও নিশ্বাস নিচ্ছে।

রিতুর কাকারা হয়তো বিষয়টা খেয়াল না করেই ওকে ফেলে চলে গেছে। তখন যদি বুঝতে পারতো বেচে আছে তাহলে হয়তো আরো আঘাত করতো।

রিমন ওর দেহটা ঘাড়ে নিয়ে চুপিচুপি বের হয়ে যায়। কিন্তু ভুল একটা মানুষকে নিয়ে দেয়াল টপকে যাওয়া সম্ভব না তাই মেইন দরজা দিয়ের বের হতে যায়।

এর ভিতর রিতুর কাকারা প্রোপার্টির কাগজ খুজতে গিয়ে আর এদিকটায় খেয়াল করে নি।

এই ফাকে রিমন রিতুকে নিয়ে বের হয়ে যায়। কিন্তু ওর কাকা কি ভেবে আবার ওর ঘরে এসে রিতুকে গায়েব দেখে হন্নে হয়ে খুজতে লাগে। বাসার গেইটের দিকে চোখ পড়তেই দেখে কেও রিতুকে ঘাড়ে করে নিয়ে যাচ্ছে।
তাই ওদের পিছু নেয়।

রিমন বিষয়টা বুঝতে পারে তাই।
রাস্তায় না গিয়ে জঙলের দিকে দৌড়াতে থাকে।
আর রিতুর কাকা এবং কাকাতো ভাই রিহাম পিছু নিতেই থাকে।

একজনের দেহ নিয়ে দৌড়ানো খুব কষ্টের তবুও। ফ্রেন্ডকে বাচানোর চিন্তায় আছে শুধু রিমনের মাথায়।

হঠাৎ কিছু একটাই হোছট লেগে রিমন পড়ে যায়।
পায়ে অনেকটা কেটে যায়। এই অবস্থা আর পালানো সম্ভব না তাই রিতুকে টেনে হেচড়ে পাশের ঝোপে নিয়ে লুকিয়ে থাকে। আর রিতুর কাকারা ওদের খুজতে থাকে জঙ্গলে।

বর্তমানে,
তোর কিচ্ছু হবে না রিতু।
রিমন যতদিন বেচে আছে তোর কিচ্ছু হবে না। আমার শরীরের একবিন্দু রক্ত থাকা কালীন তুই বেচে থাকবি। (কান্না করতে করতে রিমন কথা গুলো বলতে থাকে)

রিতুর দিকে তাকিয়ে দেখে আবারও জ্ঞান হারিয়েছে। কিন্তু এই অবস্থায় এই জঙ্গল থেকে কিভাবে বের হবে রিমন। এদিকে রক্ত বের হতে হতে রিতুর অবস্থাও শোচনীয়। আবার রিতুর কাকারাও এই জঙলের ভিতরেই হন্নে হয়ে তাদের কে খুজে চলেছে। একটু আগেও রিমন কারো পায়ের শব্দ পেয়েছে।

আজকে নিয়তির কাছে হয়তো হেরে জেতেই হবে রিতু~ রিমন কে।
দুজনের সব কথা শেয়ার করলেও মনের কোঠরে থাকা ছোট্ট অনুভূতি গুলো কেও কাওকে জানায় নি। আর তা হলো রিতু আর রিমন একে অপরকে পাগলের মত ভালোবাসে। বন্ধুত্ব ভেঙে যাওয়ার ভয়ে কেও নিজেদের ভালোবাসাটা প্রকাশ করেনি কোনোদিন।

কিন্তু আজকে হয়তো জীবনের শেষ দিন। রিমনের খুব ইচ্ছা করছে। মরার আগে একবার বলে দিতে।
তুমি ছাড়া আমি কিছুই না
ভালোবাসি তোমাকে আজীবন রিতু
আমাকে কি ভালোবাসবে না?
কিন্তু রিতুর তো জ্ঞান ফিরছে আর চলে যাচ্ছে ও কি কিছু বুঝবে যদি বলি ভালোবাসি?


২য় পর্ব

দোস্ত কাওকে ভালোবাসলে কিভাবে বলতে হয় জানিস নাকি?

আবার হঠাৎ চোখ মেলল রিতু।

তুই চোখ বন্ধ করবিনা বলে দিচ্ছি আমার দিব্যি।

আমি আবার চোখ কখন বন্ধ করলাম?
রিমন বুঝতে পারছে রিতু কখন চোখ বন্ধ করছে কখন খুলছে ও নিজেই বুঝতে পারছেনা তাই এই কথা বলছে।

নিয়তির কাছে হেরে গেলে আর কোনোদিন হয়তো আর বলায় হবে না ভালোবাসি।
কেন বলতে পারিস রিমন। আমার ভালোবাসাকে একবারও বলতে পারিনি তাকে ভালোবাসি।
সত্যি বলছি আজ মরে যাচ্ছি বলে কষ্ট হচ্ছেনা, কষ্ট হচ্ছে এই ভেবে যে নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে কোনোদিন জানাতেই পারবোনা তাকে ভালোবাসি।

রিতুর কথা শুনে রিমনের মন যেন মেশিন গানের গুলি দিয়ে ঝাজরা হয়ে গেলো।

রিতু কি তাহলে অন্যকে ভালোবাসে। কথাটা মনে হতেই চোখ থেকে কয়েক ফোটা অশ্রু রিতুর মুখের উপর পড়লো।

তুই কাদছিস কেন। আমি তো এখনো মরে যায় নি। এখনই যদি এতো কাদিস আমি মরার পর কাদবি কিভাবে?

রিতুর কথা শুনে রিমনের চিৎকার করে কাদতে ইচ্ছা করছে। কিন্তু চিৎকারের শব্দ শুনে যদি রিতুর কাকা ওদের ধরে ফেলে।
তাই নিজের মুখচেপে কান্না আটকে রাখছে রিমন। কি

রিমনের এখনই রিতুকে নিয়ে এই জঙ্গল থেকে পালাতে হবে যত কষ্টই হোক না কেন।
নিজের জীবন চলে গেলেও নিজের ভালোবাসাকে বাচাবেই রিমন।

যদিও এই কঠিন মুহূর্তেও একবার রিতুকে ভালোবাসি বলতে চেয়েছিলো।
কিন্তু রিমন তো মনে মনে ভেবেই নিয়েছে যে রিতু অন্যকাওকে ভালোবাসে।
তাই সে তার মনের কথা আর বলবে না। রিতুকে বাচিয়ে রাখবে।
যেন রিতু নিজের ভালোবাসার মানুষকে বলতে পারে তার ভালোবাসার কথা।
কিন্তু রিমন তো এটাই জানে না যে সে নিজেই রিতুর সেই ভালোবাসার মানুষ যাকে নিয়ে রিতুর ছোট্ট মনটাই হাজারো স্বপ্ন।
প্রিয় বন্ধুটা একদিন প্রিয় মানুষ হবে একটা প্রিয় বন্ধনে যে বন্ধন মৃত্যুতেও ভাঙবে না।

পায়ে ক্ষত থাকা সত্ত্বেও এখনই সুযোগ বুঝে পালাতে হবে রিতু রিমনকে।
রিতু রিমন বললে ভুল হবে।
রিতুকে নিয়ে রিমন পালাবে। নাহলে সকালে রিতুর কাকা সহজে ওদের ধরে ফেলবে।
তাছাড়া বাকি রাতটা এখানে থাকলে হয়তো রিতুর প্রাণ পাখিটাও খাচা ছেড়ে পালিয়ে যাবে।

রিতুকে আবারো ঘাড়ে নিয়ে চলতে লাগে রিমন।
এভাবে এখানে বসে থাকলেও তো মর‍তে হবে।
তাই বিধাতার সাহায্য প্রার্থনা করে ধীর পায়ে চলতে লাগলো রিমন। ছোট্ট ছোট্ট আঘাতে কাতর হয়ে যাওয়া রিমন যেন নিজের পায়ের ক্ষতটা দেখতেই পাচ্ছে না।

রিতুকে বাচানোই তার আসল উদ্দেশ্য।
একজীবনে যদি নিজের ভালোবাসাকে নায় বাচাতে পারে তাহলে তার থেকে বড় ব্যার্থতা আর কিছু নেয়।

অনেক্ক্ষণ হাটতে হাটতে আশার আলো দেখতে পেলো রিমন। হাই রোড পেয়ে ঈশ্বরের কাছে হাজারো শোকর আদায় করতে থাকে রিমন।
এই রাস্তা ধরে এখন গ্রামের দিকে যেতে হবে।
হঠাৎ একটা ট্রাক দেখতে পাই রিমন। রিমন হাতের ইশারা দিয়ে ইফট চায়।
ট্রাক ওদের সামনে এসেই থেকে যায়। ড্রাইভার ওদের এই অবস্থা দেখে দ্রুত গাড়িতে তুলে নেয়।

রিমনের কাছে সমস্ত ঘটনা শুনে নেয় ড্রাইভার।

আপনাদেত এই মুহুর্তে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া সম্ভব না। তাহলে হয়তো পুলিশি ঝামেলায় পড়তে পারেন। তার থেকে বরং আমার গ্রামে চলুন। আমার বাবা একজন ডাক্তার। তিনি সব ব্যবস্থা করতে পারবে।

লোকটার কথা শুনে রিমনের চোখ বেরিয়ে আসার মত অবস্থা। একজন ডাক্তার এর ছেলে হয়েও সামান্য ট্রাকের ড্রাইভারি করে লোকটা।

রিমনের মনের কথাটা হয়তো বুঝতে পেরেছে,

নিশ্চয়ই অবাক হচ্ছেন আমি ডাক্তারের ছেলে হয়েও কেন একোটা ট্রাক চালাই। অবাক লাগতেই পারে ডাক্তারের ছেলের ডাক্তার না হয়ে কেন ড্রাইভার হলো? আসলে আমি প্রোফেশনাল ড্রাইভার না।
আমাদের ড্রাইভারটা একটু অসুস্থ তাই কাচামাল শহরে ডেলিভারি দিতে গিয়েছিলাম নিজেই। শখের বসে এটা শিখে রেখেছিলাম। আজকে কাজে লেগে গেলো। শুধু কাজে লেগে গেল বললে ভুল হবে। আপনাদের সাহায্য করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে হচ্ছে।
ও হো আমি তো আমার পরিচয় দিতেই ভুলে গেছি। আমি আমান গ্রামে কাচামালের সাপ্লায়ার বলতে পারেন। গ্রাম থেকে কিনে শহরে ডেলিভারি দিই।

রিমন রিতুকে বুকে নিয়েই গাড়ির ছিটে বসে আছে। আমান কি বলছে না বলছে সব কথা মাথা যাছে কি না যাচ্ছে বোঝা দায়। ওর ভাবনা কেবল রিতুকে নিয়ে।

রিতুকে নিয়ে আমানদের বাড়িতে পৌছালে।
সবাই ধরাধরি করে রিতুকে একটা ঘরে নিয়ে যায়।
ঘরটা টেম্পরারি অপারেশন থিয়েটার বলা চলে।

আমান আগে থেকে ফোন করে দিয়েছিলো তাই সব কিছু রেডি করে রাখে আমানের বাবা।
রিতুর অপারেশন সাকসেস হয়।
কিন্তু প্রচুর পরিমান রক্ত লাগে।

যা আমানের প্রতিবেশীরা দান করেছিলো।
রিমন এই মানুষ গুলোকে যত দেখছে তত অবাক হচ্ছে।
চেনা নায় জানা নায় অচেনা একজনের প্রতি মানুষের এতোটা মায়া থাকতে পারে।

আমানের হঠাৎ রিমনের কথা মনে হয়।

আপনি এখন এই অবস্থায় দাড়িয়ে আছেন?
আসলে আমারই ভুল হয়েছে। তাড়াহুড়ায় আপনার স্ত্রীকে দেখতে গিয়ে কিছুই মনে নেয়।

রিমন রিতুকে নিজের স্ত্রী হিসেবে পরিচয় দেয় যাতে আলাদা কোনো সমস্যায় না পড়তে হয়।

তিন ঘন্টা পর রিতুর জ্ঞান ফেরে। চোখ খুলেই পাশে রিমন কে না দেখতে পেয়ে মনে করে ওরা ধরা পড়ে গেছে। তাই রিতু চিৎকার দিয়ে ওঠে। কিন্তু পরে ক্ষনে রিমন কে দরজা দিয়ে ঢুকতে দেখে মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে ওঠে।

রিমন এ যাত্রায় হয়তো বেচে গিয়েছি। সামনে কি বিপদ আছে উপর আলা জানে। আমি আমার মনের কথা তোকে বলে দিতে চাই। তোকে ভালোবাসি কথাটা বলতে পারলেই আমার জীবন সফল। তারপর কেও মেরে ফেললেও কষ্ট থাকবেনা। (রিতু মনে মনে বলতে থাকে)

জীবনে তোকে পাওয়া মানেই সুখ এমন কোনো কথা নেয়। তোকে তোর ভালোবাসার মানুষের সামনে নিয়ে দাড় করিয়ে তোর মনের কথা তাকে বলতে সাহায্য করা পর্যন্ত আমার দায়িত্ব শেষ।

সকালে,
রিতু সুয়ে আছে আর রিমন পাশে বসে আছে।

হুড়মুড় করে আমান ঘরের ভিতর ঢুকলো,

আপনার কাকা কোনো ভাবে খোজ পেয়েগেছে যে আপনারা এখানে এসেছেন। সাথে করে পুলিশ নিয়ে আসছে। আর বলছে আপনি আর আপনার হাসবেন্ড মিলে আপনার বাবামা আর ভাইয়াকে মেরে ফেলেছেন সম্পত্তির লোভে।

আমানের কথা শুনে রিতু কাদতে থাকে। নিজের বাবাকে কেও কিভাবে মারতে পারে। কাকা এতোটা নিচে নামলো কিভাবে।

আপনি চিন্তা করবেন না। আমি তো সব শুনেছি কি হয়েছে না হয়েছে। তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিন। সিলেটে আমার এক মামার বাসা আছে সেখানে রওনা দিবো।

আমান, রিমন আর রিতু আমানদের বাড়ির পিছনের গেইট দিয়ে বের হয়ে গেল। ঢাকা থেকে সিলেট উদ্দেশ্য বের হয়ে যায় আমানের প্রাইভেট কার নিয়ে। রিতুর খুব কষ্ট হচ্ছে কিন্তু বেচে থাকতে এতো টুকু কষ্ট তো করতেই হবে।

পথ মধ্যে,

রিতু আমানকে জিজ্ঞাসা করলো,
আমরা যেখানে যাচ্ছি সেই জায়গাটার নাম কি?

বিজয় নগর।

কথা বলতে বলতে আমান খেয়াল করেয়নি সামনে বড় একটা ট্রাক আসছে। নিজের গাড়ি সাইড করার আগেই ট্রাকটা এসে ধাক্কা দিয়ে দেয়। আমান গাড়ি থেকে ছিটকে বের হয়ে যায়। কিন্তু রিতু আর রিমন গাড়ি থেকে বের হতে পারে না। ফলে গাড়ির মধ্যেই পিষে যায় দুজনে।
বলাই হয়ে ওঠেনা দুজনার না বলা ভালোবাসার কথা। সুপ্ত ভালোবাসা চ্যাপ্টা হয়ে পড়ে থাকে গাড়ির ভিতর। ছিটকে বের হওয়ার ফলে আমান বেচে গেলেও রিতু আর রিমনের স্পট ডেথ হয়ে যায়।


পর্ব ৩

চিৎকার দিয়ে ওঠে দানিয়া। ঘামে সারা দেহ ভিজে গেছে। এতো ক্ষণ ধরে স্বপ্ন দেখেছে দানিয়া। কিন্তু এমন আবার স্বপ্ন হয় নাকি। যেন স্বপ্নের মানুষ গুলোর অস্তিত্ব উপলব্ধি করতে পারা যাচ্ছে।

নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে দানিয়ার। কিছুক্ষণের মধ্যে ঘরের ভিতর বাবা মা প্রবেশ করে। মেয়ের চিৎকার শুনেই তারা দৌড়ে এসেছেন।

মা রে কি হচ্ছে তোর?
মা দানিয়াকে জিজ্ঞাসা করলো।

মা আবারও আমি সেই স্বপ্নটা দেখেছি। ( কান্না করতে করতে বলল, সাথে নিশ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে)

মারে একটা স্বপ্নের জন্য কেন কষ্ট পাচ্ছিস তুই। তুমি একটা কিছু করো আমি মেয়ের এই কষ্ট যে আর দেখতে পারছিনা। (মিস্টার ওয়াহিদকে বলল)

আমি ডক্টর কে ফোন করে দিয়েছি। কিছুক্ষনের মধ্যেই চলে আসবে।

তুমি একটু এসির পাওয়ারটা বাড়িয়ে দাও। মেয়েটার সারা দেহ ঘেমে গেছে।

এসির পাওয়ার বাড়িয়েও কাজ হচ্ছেনা। দানিয়া খুব ঘামছে। যেন দেহের মধ্যে বন্যা বয়ে যাচ্ছে। সাথে নিশ্বাসের কষ্ট আর কান্না তো আছেই।

কিছুক্ষণের মধ্যে কলিং বেল বেজে উঠলো। বাবা গিয়ে দরজা খুলে দিলো। ডক্টর নাওয়াব এসেছে। দানিয়ার বাবার বন্ধু।

দেখ না মেয়েটার এই কষ্ট যে আর সহ্য করতে পারছিনা। দশটা বছর ধরে মেয়েটা একি স্বপ্ন দেখে কষ্ট পায় ভয় পায়। মাঝে মাঝে পাগলামিও করে। এখন চেক কর মেয়েটাকে।

হ্যা চল।

অনেক্ক্ষণ ধরে চেক করার পর। ডক্টর নাওয়াবের মুখে বিষন্নতার ছাপ দেখা যায়। মিস্টার ওয়াহিদ এটা দেখে একটু ঘাবড়ে যায়। মেয়ের বড় কোনো ক্ষতি হলো কিনা এই নিয়ে।
তাই জিজ্ঞাসা করলো,

নাওয়াব, কথা বলছিস না কেন? দশ বছর ধরেই তো দেখছিস। মেয়েটার এই অবস্থা হচ্ছে বার বার।

ডক্টর নাওয়াব তবুও চুপ করে রয়েছে।

কি ব্যাপার তুই কথা বল। একজন ডাক্তার হয়েও চুপ থাকিস কি করে।

ওয়াহিদ তোর মেয়েকে নিজের মেয়ের মতই দেখি আমি। কিন্তু আমি আজ হয়তো পৃৃথিবীর সবচেয়ে অবাক হওয়ার ব্যক্তির একজন হতে চলেছি। সাথে তোরাও।

মিসেস ওয়াহিদ এবার বললেন,
ভাইয়া আপনি বলুন না আমার মেয়েটার কি এমন হয়েছে যে আপনি খুব অবাক হচ্ছে। আমি যে আর সহ্য করতে পারছিনা।

ভাবি দানিয়ার এই মুহুর্তে ব্লাড প্রেসার ২৫০/১৫০।

হোয়াট? চিৎকার করে উঠলো মিস্টার ওয়াহিদ।
এমন ব্লাড প্রেসার হলে তো কেও বাচে না। (বিঃদ্রঃ যদিও আমি জানি না কত ব্লাড প্রেসার হলে মানুষ মারা যায়)

বিশ্বাস না হলে তুই দেখ।

মিস্টার ওয়াহিদ ব্লাড প্রেসার দেখে অবাক হয়ে যায়। এভাবে চললে যে মেয়েটা মারা যাবে।

ডক্টর নাওয়াব তাড়াতাড়ি হাসপাতালে ফোন করে দেই এম্বুলেন্স পাঠানোর জন্য। এই অবস্থায় দানিয়াকে হাস্পাতালে নিতেই হবে। নাহলে অঘটন ঘটতে সময় লাগবেনা।

দুইদিন পর,

দানিয়া এখন একটু সুস্থ। এই দুইদিনে অনেক ধকল গেছে তার উপর দিয়ে। বিভিন্ন টেস্ট করে কোনো ফল্ট ধরাই পড়েনি। কেন এতো এতো ব্লাড প্রেসার হাই হলো তাও কেও বুঝতে পারেনি।

আজকে রিলিজ নিয়ে তার পর সাইকাইট্রিস্ট ডক্টর মেহেরাবের কাছে যাবে দানিয়া। বাবা মাকে ডক্টর নাওয়াব এই পরামর্শ দিয়েছে। কারণ তার কাছে এই স্বপ্ন আর অসুস্থ হওয়াটা এখন আর স্বাভাবিক মনে হচ্ছে না।

ডক্টর মেহেরাবের চেম্বারে,

তোমার এই সমস্যা কতদিন ধরে হচ্ছে মা? কবে থেকে এমন স্বপ্ন দেখছো?

আমার যখন দশ বছর বয়স বাবামা আর আমি বাংলাদেশ ছেড়ে কাতারে চলে আসি। সেই থেকে প্রায় প্রতি রাতেই এমন অদ্ভুত স্বপ্ন দেখি। কিন্তু স্বপ্ন গুলোর মানুষের অনুভূতি ভালোবাসা কষ্ট সব কিছু যেন আমি অনুভব করতে পারি। যেন মনে হয় আমি ওখানে উপস্থিত।

দানিয়া ডক্টর মেহেরাব কে সমস্ত স্বপ্নের কথা বলে।

আচ্ছা মা তুমি একটু বাইরে গিয়ে বসো আমি একটু তোমার বাবা সাথে কথা বলি?

জ্বি আংকেল। এই বলে দানিয়া মায়ের সাথে বের হয়ে ওয়েটিং রুমে বসে থাকে।

ভিতরে,
দেখুন মিস্টার ওয়াহিদ, আপনার মেয়ের যে সমস্যা এটা কোনো স্বপ্ন না।

কি বলছেন ডক্টর। যেটা স্বপ্ন দেখে সেটা স্বপ্ন না কিভাবে?

আপনি আমার কথা বুঝতে পারেন নি। আমি বলতে চাচ্ছি। যত দিন ও বাংলাদেশে ছিলো। ওর সাথে এমন হয়নি কিন্তু এখানে আসার পর পর এমন হয়েছে। মানে বুঝতে পারছেন। ওখানে ওর সাথে বা ওর সামনে এমন কিছু ঘটার কারনেই ও এসব স্বপ্ন দেখে। আপনি হয়তো ভালোই জানেন মানুষ স্বপ্নের ১০% মনে রাখতে পারে। কিন্তু দানিয়া সব কথা এমন ভাবে বলছে যেন একটা গল্প বলছে। এটা তখনই হয় যখন কেও কারো ব্রেইন কন্ট্রোল করে।

ডক্টর আপনি কি কালোজাদুর কথা বলছেন। একজন ডাক্তার হয়ে?

এটা কালো জাদু না। এটা ওর কোনো অতিত।

আমার মেয়ের জীবনে এমন কোনো অতিত নেই ডক্টর। আমি গ্যারান্টি দিচ্ছি। মাত্র ২২ বছর বয়স ওর তার ভিতর ১০ বছর ধরে ও বাংলাদেশের বাইরে আছে তাহলে কিভাবে অতিত থাকতে পারে।

মনে যেটা ভাবা যায় তার থেকেও বড় ভাবনা আছে। মনের চিবতা ধারার বাইরে চিন্তা করুন দেখবেন সব সমাধান পেয়ে যাবেন। আমি আপনাকে একোটা প্রশ্ন করি। এই দশ বছরে মেয়েকে নিয়ে কয়বার বাংলাদেশে গিয়েছেন?

তিন বার। একমাস করে পার করে এসেছি।

তখন কি ওর ভিতর এই সব স্বপ্ন নিয়ে কোনো আতংক বা কোনো ধরনের সমস্যা লক্ষ্য করেছেন?

না। ইভেন ও নিজেই বলেছে। বাংলাদেশে গেলে ও কোনো খারাপ স্বপ্ন দেখেই না।

মেয়েকে নিয়ে দ্রুত দেশে ফিরে যান স্বপ্ন গুলোর উত্তর সেখানেই আছে। ওখানে কোনো সমস্যা হলে আমাকে অবশ্যই জানাবেন।

ডক্টরের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে। বাসাতে চলে আসলো। সবাই।

রাতে ঘুমিয়ে আছে দানিয়া,

তোমার অস্তিত্ব আমি
তুমি ছাড়া আমি আলোহীন
আমাকে ছাড়া কেমন আছো তুমি
ভালো নেয় আমি তুমিহীন।

কেও একজন কবিতাটা সুর করে গাইছে। আবছা আলোয় মুখটা দেখা যাচ্ছে না। দানিয়া খুব চেষ্টা করছে মানুষটার মুকখানা দেখতে।
স্বপ্ন দেখছে কিনা দানিয়া বুঝতে পারছেনা। মনে হচ্ছে সব ওর চোখের সামনে হচ্ছে।

কে আপনি।

তোমাতেই আমি। তুমি ছাড়া আমি আলোহীন অন্ধকার।

দানিয়ার আবারও ঘুম ভেঙেগেলো। কবিতাটা যেন মনে হচ্ছে জীবন্ত। এটা যে স্বপ্ন সেটা বোঝা দায়। কিন্তু আজকের স্বপ্নে কষ্ট নেয় কেন? ভালোবাসায় ভরা যেন কথাগুলো দানিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলা হচ্ছে। কিছু অনুভূতি মনে থেকেই যায়। যেমিন স্বপ্নের এই মানুষটাকে পাওয়ার ইচ্ছাটা দানিয়ার প্রবল যদিও লোকটার মুখ কোনোদিন দেখেনি স্বপ্নে।

আচ্ছা এই লোকটা স্বপ্নের সেই রিতু রিমনের কেও না তো?

পর্ব ৪

স্বপ্নের মানুষটার কবিতা শুনে যেন মনে হয়। এগুলো কত আগেও শুনেছি। এতো জীবন্ত কিভাবে হতে পারে এই ছন্দ। মনে এতো অনুভূতির সৃষ্টি করে কেন? আমি কি অস্তিত্বহীন কারো প্রেমে পড়ে গেছি?

দানিয়া মনে মনে এসব চিন্তা করতে থাকে। মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে ওঠে। এই অনুভূতিটা অদ্ভুত। অদেখা মানুষের প্রতি এতোটা মায়া থাকতে পারে দানিয়ার জানাই ছিলো না।

দেশে ফেরার ফরমালিটিস পুরণ করতে আরো তিন দিন সময় লেগে যায়।

দেশের মাঠিতে পা রেখে এক অদ্ভুত প্রশান্তি ছুয়ে যায় মনে। কেও যেম কানে কানে বলে গেল “দেখা হচ্ছে শীঘ্রই”। কিন্তু দানিয়া পিছন ফিরে কাওকেই দেখতে পাইনা। কণ্ঠটা যেন সেই কবিটার যে স্বপ্নে উকি দিয়ে আবার গায়েব হয়ে যায়।

দানিয়া মনে বলে শুধু চায় একটিবার মানুষটার সাথে দেখা করতে। ভালোবাসার সুযোগ না পেলেও মানুষটাকে দেখেই যেন মনের তৃপ্তি মিটায়।

সুযোগ সে~ তো তোমারই জন্য।

আবারো সেই কন্ঠ কানে ভেসে আসলো। কিন্তু মানুষটা কোথায়। এতো লুকোচুরি কেন করছে। একবার সামনে আসল ক্ষতি কি।

আসবো যেদিন আর ফিরবো না।

মৃদু কন্ঠে আবারও এই কথাটা ভেসে আসে।
আমিও ফিরাতে চাইনা আপনাকে। আমার মনের ভিতর আপনার জন্য ছোট্ট একটা ঘর তৈরি হয়েছে তা কি আপনি জানেন? কেন এই লুকোচুরি খেলছেন আপনি আমার সাথে? আপনি কিভাবে আমার স্বপ্নে নিজের অস্তিত্ব জানিয়ে দিয়ে জান। (মনে মনে বলতে থাকে দানিয়া)

কিন্তু তার মনের কথা শোনার মত কেও তো নেই। তাই দীর্ঘ নিশ্বাস ছেড়ে মাবাব্র সাথে এয়ারপোর্ট থেকে বের হয়ে যায়। ঢাকা শহরের তাদের বাসা আছে সেখানে গিয়ে ওঠে।

রাতে,
নিজের ঘরে কারো অস্তিত্ব লক্ষ্য করে দানিয়া। যেন একটা ছায়া মুর্তি।

কেমন আছিস রিতু?

দানিয়া চিৎকার দিতে গিয়েও থেমে যায় রিতু নামটা শুনে।

রিতু? আমি রিতু না, আমি দানিয়া ওয়াহিদ।

নিজের অতীত কে ভুলে গেলে?

আমার কোনো অতিত নেই। আপনি কে আগে বলুন? আর আমাকে রিতু বলছেন কেন?

ফিরবে যেদিন বুঝবে সেদিন। তুমি ছাড়া।

মানে কি? কিছুই বুঝলাম না। কোথায় ফিরবো আমি?

কথাটা বলে সামনে তাকিয়ে দেখে কেও নেয়।

আগেতো স্বপ্নে এসব দেখতাম এখন কেন আমার সাথে এমন হচ্ছে। এখন সব সময় কারো অস্তিত্ব কেন বুঝতে পারি আমার আসেপাশে? মনে মনে বলতে থাকে দানিয়া।

সকালে উঠে দানিয়া বাইনা ধরে গ্রাম দেখবে। বাবা মেয়ের কথা ফেলতে পারেনা। মেয়ের বাইনা গুলো পূরণ করলে কি মেয়েটা ভালো হবে এই তার চিন্তা। প্রাইভেট কার নিয়ে ঢাকা শহরের পাশে একটা গ্রামে যায় সবাই। অবশ্য এটাকে গ্রাম বললে ভুল হবে মোফাচ্ছল টাইপের শহর বলা চলে।

গাড়ি থেকে নেমে গ্রামটা ঘুরে দেখে। অনেক সময় পর নিজেকে বাবামায়ের সাথে আর পায়না। ঘুরতে ঘুরতে নিজেকে হারিয়ে ফেলে দানিয়া।

একটা বড় বাড়ির সামনে দাড়িয়ে আছে দানিয়া। বাড়িয়ে সম্পুর্ন পোড়া। যেন মনে হচ্ছে ভুতুড়ে বাড়ি। আশেপাশে কাওকে খুজতে থাকে।

একজন মানুষকে দেখতে পায় দানিয়া,

আংকেল এই বাড়িটা এমন পোড়ো হয়ে আছে কেন? কেও বাস করে না? লোকটা দানিয়া কে দেখে চমকে ওঠে।

রিতু?

কে রিতু? আমাকে সবাই রিতু কেন বলছে আমিতো দানিয়া?
দানিয়া লোকটার মুখ দেখে এক্টু অবাক হয়। যেন মনে হচ্ছে তাকে আগে কোথাও দেখেছে।

তুই রিতু আয় আমার সাথে। তোকে সব দেখাচ্ছি?

রিতু লোকটার পিছুপিছু তার বাড়িতে যায়। মানুষটার বয়স ৪৪/৪৫ হবে হয়তো।

লোকটা এক ফটোর এলব্যাম দেখায় যাতে দানিয়া নিজের ছবি দেখে অবাক হয়ে যায়।

এটা তো আমি। কিন্তু এগূলো কারা। আমি আগেও এদের দেখেছি মনে হচ্ছে।

দেখবিই তো করে।

তার মানে কি আমি….

কিন্তু তুই সেদিনের পর বেচে আছিস কিভাবে? আর এতো অল্পবয়সী কেমনে হলি?

কোনদিনের পর?

২২ বছর আগে তো শর্টসার্কিটে তোর বাবা মা তোর ভাইয়া আর তোর কাকা, কাকাতো ভাই সবাই মারা যায়।
আমরা জানতাম তুই আর রিমনও মারা গেছিস। কিন্তু তোকে তো জীবিত দেখছি? রিমন বেচে আছে?

দানিয়ার মাথা ভন ভন করে ঘুরতে থাকে। এ কেমন গোলক ধাধায় পড়লো সে।
লোকটাকে কি উত্তর দেবে সে ভেবে পায়না।

তাই সেখান থেকে পালিয়ে যায়।

এটা কি আমার আগের জন্ম। কিন্তু কিভাবে সম্ভব। আমি বিশ্বাস করি না। আবার ছবি গুলোও আমার কথা বলছে।

ঘাড়ে হাত পড়তেই চমকে ওঠে দানিয়া।

এখানে কি করছিস তুই? আমরা সারা এলাকা খুজে হয়রান হতে যাচ্ছি। ( মা উদ্দিগ্ন কণ্ঠে বলল)

এই তো। কিছুনা মা চলো এখন। আমার ভালো লাগছেনা।

মাবাবা আর কথা বাড়ালো না বাসার দিকে রওনা দিলো দানিয়াকে নিয়ে। কিন্তু দানিয়ার মনে হাজার প্রশ্নের ভিড়। সেই তাহলে রিতু। তার পুণর্জন্ম হয়েছে তাহলে?

তাহলে কি স্বপ্নের সেই কবি মানুষটাই রিমন। যাকে ঘিরে অনুভূতির অত্যাচার।

দেখতে দেখতে একমাস কেটে গেছে। এই একমাসে দানিয়া খুব হাসি খুশি কাটিয়েছে। স্বপ্নে আর কষ্ট হয়না। প্রতিরাতে কেও যেন তার একবুক অনুভূতি দানিয়াকে দিয়ে যায়। অনুভূতি গুলো জটলা করতে করতে সময়টা কিভাবে চলে গেছে দানিয়া বুঝতেই পারেনি। কিন্তু বারবার মনে হয় মানুষটা কবে আমার সামনে আসবে।

মেয়েকে ভালো থাকতে দেখে দানিয়ার মাবাবা খুব খুশি। তারা এসেছিলো দানিয়ার অতিত জানতে কিন্তু কি জানবে তারা নিজেও জানে না। অবশ্য ডক্টর মেহেরাবের সাথে ফোনে কথা বলার সময় উনি বলেন, “যার অতিত সে নিজের বের করে নিবে”।

ডক্টর নেহেরাবের কথা মিস্টার ওয়াহিদের বুঝতে কষ্ট হয় না। কারণ দানিয়ার অতিত দানিয়া নিজেই খুজে নেবে। তবে মেয়ের এই ভালো থাকা দেখে দেখে তারা আর চিন্তা করেন না। এমনকি সিদ্ধান্তও নিয়্র ফেলেছেন যে এখন থেকে বাংলাদেশেই থাকবেন মেয়েকে নিয়ে।

এই একমাসে অচেনা মানুষটাকে খুজে পাওয়ার ইচ্ছাটা যেন বেড়েই চলেছে দানিয়ার মধ্যে।

মেয়ের কষ্ট আর হয়না ঠিকই কিন্তু মেয়েটা দেশে আশার পর থেকেই সারাদিন হাসি খুশি থাকলেও সকাল বেলা যেন খুব উদাসীন থাকে।

মিস্টার ওয়াহিদ নিজে তো আর মেয়ের সাথে এই বিষয়ে কথা বলতে পারেন না তাই স্ত্রীকে দায়িত্ব দিলেন।

দানিয়া ছোট্ট বাচ্চার মত করে মায়ের কোলে চুপটি করে শুয়ে আছে। মা মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।

~ আচ্ছা দানিয়া মা, তোকে একটা কথা জিজ্ঞাসা করবো?

~ পারমিশন নেওয়ার কি আছে মা জিজ্ঞাসা করোতো!

~ না মানে বাংলাদেশে আসার পর থেকে তোকে খুব হাসিখুশিই দেখেছি। শুধু মাত্র সকাল্টা ছাড়া।

দানিয়া শুয়ে থাকা অবস্থায় মাকে জড়িয়ে ধরে,
~ জানো মা, সারা রাত টা আমি খুব মজাই মজাই কাটাই। ভালবাসার মানুষটার হাত ধরে ঘুরে বেড়ানো, তার কাধে মাথা রেখে তার পাশে বসে তার বলা কিছু কবিতার লাইন শুনে নিজেকে হারিয়ে ফেলা। এভাবেই রাতটা কাটে কিন্তু সকাল হলেই যখন বুঝতে পারি মানুষটা একটা ভ্রম তখন মনটা খারাপ হয়ে যায়।

দানিয়া মায়ের সাথে খুব ফ্রি তাই নিজের মনের অনুভূতিগুলো মাকে জানিয়ে দেয়।

~ কিন্তু তুই যাকে স্বপ্ন দেখে ভালোবেসেছিস তার অস্তিত্ব তো নাও থাকতে পারে।

~ জানো মা কেন জানি মনে হয়। সে আসবে আমার জীবনে। বার বার একটা কথায় বলে আগের বার ভালোবাসা প্রকাশ করতে পারিনি। কিন্তু এবার সে আমাকে তার মনের ভাষা জানাবেই।

~ একটা স্বপ্ন নিয়ে এভাবে পড়ে থাকিস না মা।

~ মা এটা কোনো স্বপ্ন না। স্বপ্ন তো মানুষ ভুলে যায় কিন্তু এই অনুভূতি গুলো এমন যে আমার মনে গিথে আছে। আমি কোনো ভাবেই ভুলতে পারিনা।

মিসেস ওয়াহিদ মেয়ের সাথে আর তর্কে জড়ালেন না। যায়হোক মেয়েটা ভালো তবে আছে এটাই শান্তি।
এভাবে আরো কয়েকদিন চলে যায়। দানিয়ার সাথে অনেকেরই বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছে। তার মধ্যে রায়মা,রিয়া,তানিয়া জানের দোস্ত হয়ে উঠেছে।

দানিয়া একদিন বাসায় ফিরে মাবাবাকে জানায় যে সে সিলেট বেড়াতে যেতে চায়। মাবাবা প্রথমে রাজি না হলেও রিয়া এসে জোর করায় তারা রাজি না হয়ে পারে না। তাছাড়া মেয়েটা একটু ঘুরতে গেলে স্বপ্ন ওসব আজগুবি চিন্তাও হয়তো ভুলতে পারবে। তাই তারা রাজি হয়ে যায়।

কালকেই সিলেট যাবে। কিন্তু কোনো পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করবে না। তানিয়া নিজেদের প্রাইভেট কার নিবে যাওয়ার জন্য। কারণ চারজন যাওয়ার এটাই পারফেক্ট উপায়। সাথে আশে পাশের পরিবেশ কে উপলব্ধি করতে পারবে।

পরদিন সকালে মাবাবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে রায়মা,রিয়া,তানিয়া, আর দানিয়া সিলেটের উদ্দেশ্যে বের হয়।

পথমধ্যে,
দানিয়া রিয়াকে জিজ্ঞাসা করে,
~ আচ্ছা আমরা সিলেটের কোথায় যাচ্ছি সেটাতো জানালি না?

রিয়া~ তানিয়ার মামার বাসা সেখানেই যাচ্ছি আমরা।

~ জায়গাটার নাম কি?

রায়মা বলল~ কেন শ্বশুর বাড়ি বানাবি নাকি? জায়গার নাম শোনার এতো ইচ্ছা কেন?

~ আরে না এমনিতেই জিজ্ঞাসা করছি।

তানিয়া~ বিজয় নগর।

~ হোয়াট।
দানিয়া একরকম চিল্লে কথাটা বললো।

~ কি ব্যপার তুই এতো অবাক হলি কেন? চিনিস নাকি জায়গাটা?
সবাই একসাথে জিজ্ঞাসা করলো।

~ না মানে, কিছু না এমনিতেই বললাম।
দানিয়ার মাথা ভনভন করতে লাগলো। বিজয়নগর নামটা তো আগেও শুনেছে। সেই স্বপ্ন! রিতু রিমনের গন্তব্য! কিন্তু কেও সেখানে যাতে পারে না যাওয়ার আগেই মরে যায়।

রাস্তার মাঝে হঠাৎ গাড়ি বন্ধ হয়ে যায়।
চারজন মিলে জোগেজাগে গাড়িটা ধাক্কা দিয়ে রাস্তার ধারে নিয়ে যায়। এখন কি করবে তারা ভেবে পায়না।

তাই তারা সিদ্ধান্ত নেয় কারো কাছথেকে হেল্প চাইবে। হঠাৎ রাস্তায় দিয়ে একটা ইস্কর্পিয়ন কার আসতে দেখে। তারা ইশারা করে যে তাদের হেল্প লাগবে?

গাড়িটা ওদের সামনেই রাখে। ৫০ এর কাছাকাছি বয়সের একজনকে বের হতে দেখে সবাই কিন্তু দানিয়া ফেইসবুক নিয়ে ব্যস্ত থাকায় লোকটার দিকে তাকানো হয়না।

~ এনি প্রব্লেম?

~ আসলে আংকেল আমাদের গাড়িটা নষ্ট হয়ে গেছে এখন কি করবো ভেবে পাচ্ছিনা।

~ আচ্ছা, তোমরা আমার সাথে চলো। সামনেই গ্যারেজ আছে ওখান থেকে মিস্ত্রি নিয়ে আসা যাবে।

~ আপনি যদি একটু গিয়ে মিস্ত্রিকে খবর দিতেন খুব উপকার হতো।

~ তা দেব। কিন্তু জায়গাটা ভালো না। তোমরা গাড়িতে ওঠো। মিস্ত্রি এসে ঠিক করে গ্যারেজে নিয়ে গেলে তোমাদের গাড়িও পেয়ে গেলে নিজেরাও সুরক্ষিত থাকলে।

লোকটার কথা শুনে সবাই ভরসা পায়। তারা গাড়িতে উঠতে গিয়ে দেখে দানিয়া এখনও দাড়িয়ে আছে। ফেইসবুক নিয়ে ব্যস্ত।
তাই রিয়া দানিয়া নাম ধরার আগেই,
লোকটা বলে বলে,
~ রিতু গাড়িতে এসে বসো।

বারবার রিতু নামটা শুনে রিতু এবার সত্যিই মনে হচ্ছে যে তার পুনর্জন্ম এটা। তার মানে স্বপ্ন অদেখা সেই মানুষটাই আগের জন্মের রিমন? রিমন আর সেই কবিটা যদি একজনই হয় তাহলে কেন একজনের চেহারা ইস্পষ্ট দেখা যায় আর আরেকজনের আবছা?

~ দানিয়া ওর নাম। (রিয়া লোকোটাকে বলল)

এবার দানিয়া লোকটার মুখের দিকে তাকিয়ে হঠাৎ মুখ ফসকে বলে ফেলল,
~ আমান ভাইয়া?

রায়মা,রিয়া, তানিয়া দানিতার মুখে নামটা শুনে অবাক হয়ে যায়।

সবাই একসাথে জিজ্ঞাসা করে,
~ তুই ওনাকে আগে থেকেই চিনিস?

লোকটা বলে~ না ও আমাকে কিভাবে চিনবে। হয়তো পরিচিত কারো নাম আমান আর তার চেহারার সাথে আমার মিল পেয়েছে। তাই হয়তো আমাকে আমান ভাইয়া বলেছে।

সবাই গাড়িতে বসে আছে। দানিয়ার এখন সব পরিষ্কার যে তার দেখা স্বপ্নগুলো ছিলো তার আগের জন্মের।

হঠাৎ সামনে থেকে একটা বড় ট্রাক আসতে থাকে।

দানিয়া গাড়িটাকে দেখে চমকে ওঠে। যেন আগেত বারের পুনরাবৃত্তি হতে চলেছে। লোকটা গাড়ি সাইড করার আগেই বড় গাড়িটা এসে ধাক্কা দিয়ে দেই। সবাই গাড়ি থেকে ছিটকে বাইরে পড়ে।

দানিয়ার চোখ নিভুনিভু হয়ে আসে। হঠাৎ সামনে কারো অস্তিত্ব লক্ষ্য করে।

যদি চলে যাও
আবার ডেকে নিবো
যদি পালিয়ে যাও
ধরে নিবো।
শুন্য আমি
তুমি ছাড়া।
থাকতে চাইনা
তুমি হীনা।

অজান্তেই দানিয়ার মুখ থেকে বের হয়ে যায়

~ রিমন!

~ হ্যা রিমন।
কথাটা বলে রিমন দানিয়ার হাতে হাত রাখে।

হাতের স্পর্শ পেয়ে দানিয়ার যেন মনে হয় ও তার আগের জন্মেই ফিরে গেছে। সেই আগের জায়গায় আছে। যেখানে আগের বার নিজেদেত অনুভুতি না জানিয়ে পৃৃথিবীর মায়া ছেড়ে চলে যেতে হয়।
তাই দানিয়া আবারো মুখ ফসকে বলে ফেলে,
~ আগেরবার ভালোবাসার কথা জানাসনি আজকে তুই জানিয়ে দে। যদি আবার না বলায় হয়ে থাকে।

এবার আর কোনো কিছুই না বলা থাকবে না।
তোকে যতটুকু ভালোবেসেছি হাজারবার জন্ম নিলেও আমার এই ভালোবাসা শেষ হবে না। আগের বারের আর এবারের ভালোবাসা একসাথে তোর সামনে নিয়ে বলছি। আমি তোকে ভালোবাসি আমার জীবনের থেকেও তুই কি আমাকে ভালোবাসবি।

~ ভালোবাসি রিমন। তোকে অনেক ভালোবাসি এবার আর তোকে ছাড়বো না। আমাকে ফাকি দিতে পারবিনা।

~ তুইও তবে ফাকি দিয়েছিলি আমাকে।

~ আর ফাকি দেবনা রিমন। সারাজীবন তোর পাশে থাকবো।

রিমুন মুচকি হেসে জবাব দেয়,
~ সারাজীবন নারে। সারামরণ।

~ মানে কি বলছিস তুই? আর এখন আমি কোথায়?

~ আয় তোকে দেখাচ্ছি।
এই বলে দানিয়ার হাতটা ধরে রিমন দানিয়াকে ঊঠায়। দানিয়া দাড়িয়ে পিছন ফিরে অবাক হয়ে যায়। ওতো এখনও রাস্তায় পড়েই আছে। বাকিরা নড়াচড়া করছে কিন্তু দানিয়ার নিজের দেহটা নিস্তেজ হয়ে পড়ে আছে।

~ সব বুঝতে পারছিস তো? আমাকে ছাড়াতো একজমন বেচে ছিলি। কিন্তু বিধাতা আমাকে আর দুনিয়ায় পাঠায়নি রে। এতো দিন পর এটাই হয়তো তার ইচ্ছা ছিলো। তুই আবার ফিরে এসেছিস। এখন থেকে সারাজীবন মরবো একসাথে।

দানিয়া মরলেও নিজের ভালোবাসা ফিরে পেয়েছে এটাই তার প্রাপ্তি। বেচে থেকে বলা হয়নি তো কি হয়েছে মরে গিয়ে তো বলা হল “ভালোবাসি”। দানিয়া, সরি, রিতু রিমনের কাধে মাথা রেখে আকাশের দিকে তাদের গন্তব্যে যেতে থাকে।
যাওয়ার পথে রিমন পিছন ফিরে সেই লোকটা টাকে চোখের ইশারায় বলে দেই।

লেখনীতেঃ রাফিজা আখতার সাথী

সমাপ্ত

(পাঠক আপনাদের ভালোলাগার উদ্দেশ্যেই প্রতিনিয়ত আমাদের লেখা। আপনাদের একটি শেয়ার আমাদের লেখার স্পৃহা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আমাদের এই পর্বের “তুমি ছাড়া – রাত না কাটা প্রেমের গোপন গল্প” গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম। ধন্যবাদ।)

আরো পড়ূন – অতৃপ্ত প্রেমিক – গোপন কামের আশা

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *