পাজরের টানে – Gopon valobashar kotha bangla: ওয়াওও বিউটিফুল লাবিবা নাম টাও তার মতো কিউট। এখানে এসে যে এতো সৌন্দর্য অবলোকন করতে পারবো তা কি ভেবেছিলাম কখনো? আন্টির বাসায় পরীর দেখা ও আল্লাহ আগে কেনো বিডি তে নিয়ে এলে না?
পর্ব ১০
ভোর হতেই নামায পড়ে নিচে এলাম। উনাকে দেখার জন্যে মনটা খচ খচ করছে। উনি কি রাগ করে মিশুর কাছে চলে গেছে?
দারোয়ান কে জিজ্ঞাসা করে জানতে পারলাম কোন গাড়ি বের হয়নি। তারমানে উনি বাড়িতেই আছেন।
দু কাপ কফি করে ছাদে আসলাম। কোথাও না থাকলে উনি যে ছাদে থাকবেন তা এতদিনে বুঝে গেছি। ছাদে এসে উনাকে খুজতে লাগলাম। খুঁজতে খুঁজতে এক কর্নারে দেখি খালি গায়ে একটা থ্রী কোয়ার্টার পেন্ট পরে আকাশ দিকে তাকিয়ে বসে আছে। হয়ত একটু আগে এক্সারসাইজ করেছে। এগিয়ে গেলাম তার দিকে।
ও আমার আল্লাহ আমি তো ক্রাসিত এই কর্নারে এত্তগুলো black rose tree কত্তগুলা করে Black rose ধরে আছে।
উনার পাশে বসে একটা মগ এগিয়ে দিলাম। উনি নিঃশব্দে মগ নিয়ে চুমুক দিলেন।
আমি তো সেইরকম খুশিতে জিজ্ঞাসা করলাম
~ black rose যে আমার সবথেকে বেশি প্রিয় আপনি কি করে জানলেন?
~ উনি আমার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে হেসে দিলেন। এই tree গুলোর age কত জান?
~ কত?
~ 9 years তো 9 years আগে তুমি কি আমার পরিচিত ছিলে?
~ না
~ তাহলে?
~ ঘোড়ার ডিম। কফি খান। গেলাম আমি।
~ রাতে তোমার জন্য ওয়েট করছিলাম। ভেবেছিলাম আসবে তুমি। যাই হোক, কফি টা ভালো ছিলো। black rose my favorite তোমার favorite জেনে খুশি হলাম। তোমায় দিয়ে দিলাম এগুলো। আমি না থাকলে এদের care করো।
ওনার প্রথম কথা শুনেই রাগ উঠে গেছে আমার। বেটা বলে কি আমার জন্য ওয়েট করে। হুহহ। সামনে এসে মাথার পেছনে চুল গুলো ধরে আমার মুখোমুখি আনলাম। শার্ট থাকলে কলার ধরতাম নেই যেহেতু সেহেতু কানা মামাই ভালা।
দাতে করমর করে বললাম
~ First of all, আপনাকে আমি ছাদে আসতে বলি নি আর আপনিও আমাকে বলেননি যে আপনি ছাদে। ছাদে গার্ল ফ্রেন্ডরা ওয়েট করে তাদের বয়ফ্রেন্ডের সাথে লুকিয়ে দেখা করার জন্য। আর বউরা তাদের জামাইয়ের জন্য ওয়েট করে বেডরুমে। আমি বেডরুমেই ছিলাম। secondly, কফি টা ভালো না খুব খারাপ ছিল।
আমি কফিশপের কফি থেকেও ভালো কফি বানাই। কিন্তু আপনার টা একদম ভালো হয়নি। ঝাল দিয়েছি আমি। আপনার ঠোঁট ঝালে লাল হয়ে আছে। And lastly, কোথায় যাবেন আপনি? মিশুর কাছে তাইতো? দিবনা যেতে আমি দেখি কিভাবে যান?
আমার জিজ্ঞাসা তুর দৃষ্টিতে উনিও দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন। উনার এমন দৃষ্টিতে আরো রাগ উঠেছে আমার। রাগে চুল গুলো আরো শক্ত করে টানছি যাতে ব্যথা পায়। কিন্তু তার কোন হেলদোল নেই। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। এই মুহুর্তে আমার প্রচুর কান্না পাচ্ছে। চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে আসছে।
উনি কিছু না বলে হাত দিয়ে চুল ছাড়িয়ে উঠে চলে গেলেন। আমি চোখের জল ছেড়ে দিলাম। একটু গিয়েই আবার ব্যাক করে উবু হয়ে আমার আমার ঠোঁটে গাড় করে একটা চুমু দিয়ে চলে গেলেন। আর আমি অবাক হয়ে তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম।
মম আমার এডমিশন এর জন্য কলেজে এনেছে। এই কলেজে নাকি উনিও পড়েছেন। Hsc দিয়েছেন এখান থেকে। এডমিশন কমপ্লিট করে গাড়ি রেখে মম চলে যান।
ক্লাস রুমে বসে আছি। সবার প্রথমে আমিই ক্লাসে এসেছি। কেমন যেন লাগছে নিউ কলেজ ফার্স্ট ক্লাস নিউ ক্লাসমেট নিউ টিচার। ও আমার আল্লাহ সাহস দান করো আমায়। আস্তে আস্তে অনেক স্টুডেন্ট চলে এলো। সবার ফোকাস আমি। সবাই কথা বলতে আসছে। হাই হ্যালো হচ্ছে আর কি। ছেলেরা পারতে আমার কোলে এসে বসে জীবনে যেন মেয়ে দেখেনি হুহহ। টিচার এলে সবাই যার যার সীটে গিয়ে বসে।
ক্লাস শেষে
~ হাই আমি আবিদ। আর ওরা আমার ফ্রেন্ড সেবা, পপি, আপেল, রাকিব
~ ফিক করে হেসে দিলাম আপেল
~ u are so beautiful Your smile is so cute
~ thank you
সেবা ~ আমরা কি বন্ধু হতে পারি।
আমিঃ অবশ্যই
আপেল ~ তো সবাই চল কিছু খেয়ে আসি। আজকের ট্রিট আমি দিব।
সবাইঃ হুঁ রেএএ।
বাসায় আসতেই মমের সাথে গল্প জুড়ে দিলাম
~আজ আমার পাঁচটা ফ্রেন্ড হয়েছে। সবাই খুব ভালো। আপেল, আবিদ, রাকিব, পপি, সেবা। আপেল আজ ট্রিট দিয়েছে। মম কাল আমিও ট্রিট দিব।
~ আচ্ছা।
~ টিচার গুলো খুব ভালো। দুটো ম্যাম আছে। খুব কিউট।
~ হুম। এখন রুমে যা। ফ্রেস হয়ে খেতে আয়। অনেক গল্প হয়েছে।
~ আমি খেয়ে এসেছি মম। একটা বার্গার, দুইটা সমুচা, জুস খেয়ে এসেছি। আর খাব না।
দোলার সাথে কথা বলছি। এর মধ্যেই মম হাতে একটা শাড়ি নিয়ে হাজির। ফোন রাখতেই মম বলল
~ তানভীর ভুলে একটা ফাইল রেখে গেছে। মিটিং এ আছে তাই আসতে পারবেনা। তুই একটু দিয়ে আয় না আম্মু।
~ আমিইই অফিসে।
~ হুম যাবি। এদিক আয় তো শাড়িটি পরিয়ে দেই।
~ মম আমি পারি তো।
~ এটা পারবিনা। ডিজাইনার শাড়ি এটা।
~ মম তুমি কি শুধু আমাকেই সাজিয়ে দাও? অন্য কাউকে দাও না?
~ দেই তো। মিমকে দেই। এইতো দেখি
~ মম আমি মেকাব দেই না প্লিজ।
~ একটু যাস্ট একটু হাল্কা দিয়ে দিব।
~ ওকে। আগে হিযআপ বেধে নেই।
~ হুমমম।
গাড়ি থেকে নেমে দাড়িয়ে আছি। ভেতরে যাওয়ার সাহস পাচ্ছি না। এই প্রথম উনার অফিসে। ড্রাইভার গাড়ি পার্ক করে এসে আমাকে নিয়ে ভেতরে ঢুকল। লিফটে উঠে 9th floor এ গেলাম। উনার কেবিন নাকি 9th floor এ। বিল্ডিং টিতে 11টি floor রয়েছে। পুরোটাই নাকি উনার অফিস। উনার কথা বলতেই একজন ইমপ্লয়ি বললেন উনি 5th floor এ মিটিং এ আছেন। আবার উল্টো 5th floor এ আসলাম। ড্রাইভার কাকা আমাকে রেখেই চলে গেল।
একটা রুমের সামনে একজন দাড়িয়ে আছেন। আমি উনাকে বললাম
~ excuses me আপনার বস কি ভিতরে?
~ yes mam Sir meeting এ আছেন।
~ okay Open the door I will go to the room
~ sorry mam এখানে meeting হচ্ছে। you are not allowed
~ আপনার বস কে বলুন ফাইল নিয়ে আসছি।
~ একটু ওয়েট। আপনি বসুন।
আমি কর্নার সোফায় বসে আছি। দুই মিনিট পর লোকটা এসে আমার থেকে ফাইল টা নিয়ে চলে গেলেন।
আমি উনার জন্য এখানেই বসে ওয়েট করছি। উনি লোকটাকে বলে দিয়েছেন যেন আমাকে উনার কেবিনে নিয়ে যায়। আমি যাইনি।
উনি বের হতে দেখে আমি একটু এগিয়ে গেলাম তার দিকে। আমাকে দেখে
~ কেবিনে যাও নি?
~ না। এখানেই ঠিক আছি।
Someone: wow So beautiful lady Who are you baby? আমার দিকে এগিয়ে এসে You are so s
উনিঃ Mr Grove I wanna go
বাব্বাহ লাগে বুঝি? ঐ লোকটাও আমার প্রশংসা করে আর উনি হুহহ।
সারাক্ষণ শুধু টিশু পেপার (মিশু) কে নিয়ে পড়ে থাকে। এত সুন্দর করে যে সামনে সেজে আসি তাকিয়েও দেখে না। হারামি একটা বললে কি হত যে আমি তার বউ। আমাকে বুঝি বউ বউ লাগে না? শাড়ী পরেছি তাও কি বউ বউ লাগে না?
আজ দিন টাই আমার রাগের দিন। সকাল থেকেই উনার প্রতি রেগে যাচ্ছি আমি। এখনো প্রচন্ড রাগ হচ্ছে। ডিনার করাবেন ভাল কথা। কিন্তু এই বারে নিয়ে আসলেন কেন? এক টেবিলে দুজনে বসে আছি। সামনে একটি বড় প্লেটে কতগুলো কাবাব। উনি কাবাব খাচ্ছেন। আর আমি গুনছি কতগুলো খাচ্ছেন উনি।
~ তুমি কি সিউর কাবাব খাবে না?
~ খাবনা।
~ আশেপাশে দেখ মানুষ কিভাবে কাবাব খাচ্ছে। একটা করে কাবাব মুখে দিচ্ছে আর এক চুমুক ওয়াইন খাচ্ছে।
আশেপাশে দেখতে লাগলাম। সত্যিই তো এইভাবেই খাচ্ছে। আমার চোখ আটকে গেল এক ভয়াবহ চোখের দিকে।
মিশু তেড়ে এসে আমাকে টেনে তুলে দিল বসা থেকে। দেখে বেশ বুঝা যাচ্ছে ড্রিংক করেছে।
~ হে ইউ লজ্জা নেই তোমার? তানভীর আমার যেনেও তুমি এখনো ওর সাথেই আছো
~ কেন মিশু আপু আমার কি কোথাও যাওয়ার কথা ছিল?
~ মুখে মুখে তর্ক করবিনা একদম ভিখারী কথাকার। বামুন হয়ে চাদে হাত বাড়াতে চাস? কি যোগ্যতা আছে তোর তানভীর ইভান খানের বউ হওয়ার? দু বেলা খেতে পাস না আবার বড় বাড়ির বউ হয়েছিস তোকে তো আমার বাড়ির কাজের লোক ও রাখব না।
তানভীরঃ মিশু তুমি ড্রিংক করেছ?
তানভীরের দিকে তাকিয়ে
~ হা করেছি। তুমি ঐ মেয়েকে নিয়ে ফুর্তি করে বেড়াবে আর আমি সামান্য ড্রিংক করলেই দোষ? ডিনারে এসেছো তুমি? তাও আবার ঐ মেয়েকে নিয়ে? আমি কি মরে গেছি নাকি? কি পেয়েছ ঐ মেয়ের মাঝে যা আমি তোমায় দিতে পারব না?
তানভীর~ please stop mishu Don’t be scencreate It’s a public place
মিশুঃ আরে কিসের সিনক্রিয়েট? ঐ মেয়েকে নিয়ে তুমি কেন ঘুরতে এসেছ? বল আমাকে। তুমি শুধুই আমার জাননা তুমি?
তানভীরঃ I think তুমি বেশী ড্রাংক করেছ। বাসায় যাওয়া উচিত।
মিশুঃ যাব না আমি। তুমিও যাবে আমার সাথে। আজ থেকে আমার সাথে থাকবে তুমি।
তানভীরঃ মিশু চল তোমাকে বাসায় নেওয়ার ব্যবস্থা করি। আমার ড্রাইভার তোমাকে পৌঁছে দিবে।
মিশুঃ ড্রাইভার মাই ফুট। আমার তোমাকে চাই। এই মুহুর্ত থেকে সবসময়। যদি বাসায় যেতেই হয় তাহলে তোমার সাথে যাব।
তানভীরঃ মিশু কন্টোল ইউরসেল্ফ। আমি পারবনা তোমার সাথে যেতে।
আমিঃ আপনি যান। ওকে অনেক কষ্ট দিয়েছেন। আর দিবেন না প্লিজ। আমি ড্রাইভার নিয়ে বাসায় চলে যাবো।
তানভীরঃকি বলছ এসব?
আমিঃ আপনার সব কিছু আমি মিশুর বাসায় পাঠিয়ে দিব।
মিশুঃ এই মেয়ে এই একদম আমাদের মাঝে কথা বলবে না। তোমার কথায় ও আমার সাথে যাবে নাকি?
সহ্য করার একটা সীমা থাকে। সেটাও নেই। দাড়িয়ে দাড়িয়ে মাতালের ভান করে উনার উপর গা এলিয়ে থাকা একদম সহ্য করতে পারছি না। এক দৌড়ে বেরিয়ে এলাম বার থেকে। গাড়ি তেও উঠলাম না। একটা ট্যাক্সি করে বাসায় চলে এলাম।
পর্ব ১১
বালিশে মুখ গুজে কান্না করছি। কান্না করলে বুকে জমানো ব্যথা অনেকটাই কমে যায়। উনাকে রেখেই চলে এসেছি। মিশুর সাথে থাকবেন উনি। হয়ত এতক্ষণে মিশুর বাসাতেও পৌঁছে গেছে। দুটো ভালবাসার পাখি এক হলে স্বর্গ নেমে আসে। ভাল থাকুন আপনি। আমার শূন্য বুক কখনো ভরে উঠে নি। খা খা করবে কিভাবে?
কতগুলো লোকের সামনে এইভাবে অপমান করলো আমায় উনি কিচ্ছুই বলল না। অবশ্য বলবেই বা কি করে উনি তো খুশি হয়েছেন। উনার ধারনা আমাকে অপমান করলে আমি চলে যাবো আর উনি ঐ টিস্যু পেপার কে নিয়ে সংসার পাতবে। মুখে বললেই তো হয় আমাকে চায় না। আমার ঘারে কয়টা মাথা আছে যে আমি উনার বিরুদ্ধে যাব? এই কথা কি জানেন উনি?
ভালোইতো বাসেন না তাহলে আগলে রাখেন কেন? আমার কিছু হলে অস্থির হয়ে যান কেন? বুকে জায়গা দেন কেন? আমায় আশার আলো দেখান কেন?
দরজায় বার বার নক হচ্ছে। হয়তো মম এসেছে আমরা ফিরেছি কিনা জানতে কি জবাব দেব আমি? আমি কি বলব আমায় ছেড়ে তুমার ছেলে আজ থেকে মিশুর কাছে থাকবে? বিশ্বাস করবে তুমি মম এইকথা? আমাকে যদি তোমার এত মনে ধরেছিল এমনিই মেয়ে করে আনতে ছেলের বউ করে এনে কষ্ট কেন দিলে? কি লাভ তোমার এতে?
চোখের পানি মুছে বিছানা ছেড়ে দরজা খুলে দিয়ে নিচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। মমের দিক তাকানো যাবে না। মম বুঝে যাবে আমি কদেছি। কিন্তু মম কোন কথা বলছেনা কেন? সামনে তাকিয়ে দেখি স্বয়ং উনি দাঁড়িয়ে আছেন। আমি আসার ঘন্টা খানেক সময়ও হয়নি। এর মধ্যেই উনি চলে এলেন? উনি কি মিশুকে নিয়ে এই বাড়িতে থাকার প্লান করেছেন? আমার বেডরুমে? তাহলে কোথায় যাবো আমি? আমার কি এখানের সময় শেষ হয়ে আসছে?
ভিতরে এসেই সজোরে একটা থাপ্পড় বসালো আমার গালে। আর উনার এই ব্যবহারে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছি আমি। পাঁচটা আঙুল যেখানে যেখানে বসেছে মনে হচ্ছে জায়গাটা কেটে গুটি গুটি রক্তের কনা বের হচ্ছে।
উনি চেঁচিয়ে বলে উঠলেন
~ খুব সাহস হয়ে গেছে তাইনা? খুব সাহসী তুই রাত ১১ টায় একা একা বাসায় ফিরিস। গাড়ি থাকতে ট্যাক্সি করে বাসায় আসিস। you have any idea এত রাতে কি হতে পারতো? It’s Dhaka city remember it আমি কি বলেছিলাম তোকে চলে আসতে? কেন আসলি তুই?
~ আমাকে নিয়ে না ভাবলেও চলবে
~ ভাবতাম না একদমি ভাবতাম না যদি না আমার বউ হতি এখন ভাবতে বাধ্য আমি। আর একবার যদি এমন কিছু না ফেস করতে হয় আমাকে তাহলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না।
উনি তখনি রুম থেকে চলে গেছেন। আমি এখনও গালে হাত দিয়ে চোখের পানি ফেলছি। এই পানি ব্যথার নয় এই পানি উনার ভালবাসার। উনার এই আঘাতে আমি জেনে গেছি উনি আমাকে ভালবাসেন। অন্য কাউকে না। আমাকে নিয়ে উনার ভয় হয়। হারানোর ভয়। রাগ করেছে উনি। রাগ কমে গেলে নিশ্চয় আমার কাছে আসবে। অপেক্ষা করব আমি।
উনি কি রাগ করে ছাদে আমার জন্য অপেক্ষা করছে? আমি কি যাব তার কাছে? না আমি কেন যাব? আমি কি তো তার শুধু প্রেমিকা হতে চাই না প্রেমিকা বউ হতে চাই যে কখনো ছেড়ে যায় না। অর্ধাঙ্গিনী হয়ে লেপ্টে থাকে মৃত্যু পর্যন্ত। উনিই আসবে আমার কাছে।
আজ খুব ভালো ঘুম হবে আমার। প্রতিদিন ই হয় উনার বুকে শান্তির ঘুম। কিন্তু আজ আমি ঘুমাব ভালোবাসার ঘুমে।
সকালে ঘুম থেকে উঠে নামায আদায় করে নিলাম। মিররের সামনে এসে চুলে চিরুনি করছি। মিররের দিকে তাকাতেই আমি অবাক। কাল রাতের থাপ্পড়ের কোন চিহ্নমাত্র খুঁজে পাচ্ছি না।
অথচ রাতে খুব ভালো করে খেয়াল করেছি দু~চার দিন না যাওয়ার আগে এই কাল দাগ গুলো মিশার কথা নয়। তাহলে এক রাতেই কিভাবে মিশে গেল? নিচে চোখ নিতেই দেখি একটা মলম জাতীয় কিছু পড়ে আছে। ওওও তাহলে উনি এসেছিলেন রুমে রাগ কমে গেছে উনার। আমার গালে ওষুধ লাগিয়েছেন।
কলেজের জন্য রেডি হয়ে হটপটে নিজের হাতে রান্না করা বিরিয়ানি তুলে নিচ্ছি। বন্ধু দের ট্রিট দিতে চেয়েছিলাম আজ। সবাই তো বাইরের খাবার খাওয়ায় আমি না হয় ঘরের খাবারই খাওয়ালাম। উনার জন্যেও একটু রেখে দিলাম। বিরিয়ানি লাভার কিনা।
কলেজে এসে ক্লাস করছি। আপেল, সেবা, পপি, রাকিব, আমি পাশাপাশি বসে ক্লাস করছি। আবিদ আসে নি আজ। কি যেন কাজে ব্যস্ত। কিন্তু আমার মোটেও ভালো লাগছে না ওকে ছাড়া। আজ আমি নিজের হাতে তৈরি করে খাবার এনেছি আর আমার একজন বন্ধু খেতে পারবেনা তা কি করে হয়?
ক্যান্টিনে বসে আছি সবাই।
আমিঃ হ্যালো বন্ধু গণ আজ ট্রিট টা আমি দিচ্ছি।
সেবাঃ ওকে।
আপেলঃ এখন খাবার অর্ডার কর। ক্ষিধে পেয়েছে।
পপিঃ রাক্ষস কথাকার।
আমিঃ খাবার এখানেই আছে। ব্যাগ থেকে হটপট সামনে টেবিলে রেখে বললাম আমার বানানো স্পেশাল বিরিয়ানি ট্রিট হপ্পে আজ।
সবাইঃ ওওওওওওওওওওওয়য়য়য়য়।
আমিঃ হুমমমমমমমমমমমমম।
রাকিবঃ ইসস আবিদ টা মিস করল।
পপিঃ দারা আমি কল দিচ্ছি।
আপেলঃ লাউট দে।
ফোনে ~
আবিদঃ হ্যাঁ বস্তী রাণী সুরাইয়া বলল।
পপিঃ চুপ হারামি। কথাই বলতে ইচ্ছা করে না তোর সাথে।
আবিদঃ তো কল দিতে বলেছে কে তোকে?
আপেলঃ আবিদ তোর সব কাজ বাদ দিয়ে কলেজ ক্যান্টিনে চলে আয়। বিরিয়ানি ট্রিট মামা।
আবিদঃ আমি মাত্র কাজ থেকে ফিরেছি। খুব টায়ার্ড। প্লিজ অন্যদিন আমি তোদের খাওয়াবনি।
রাকিবঃআরে মামা হোম মেইড বিরিয়ানি খেতে পারবি আজ। লাবিবা নিজে করে এনেছে আমাদের জন্য। আহহহ কি খুশবু মাইরি।
আবিদঃ আগে তো বলবি শালা দশ মিনিট ওয়েট কর আমি আধা ঘন্টার মধ্যে আসছি।
রাকিবঃ আয় আয়।
খুব খুশি খুশি লাগছে। সবাই কত্ত প্রশংসা করলো আমার হাতের বিরিয়ানি খেয়ে। নাচতে নাচতে বাসায় চলে আসলাম। ওমা মম কই? হয়ত রুমে। আজ নিচে কেউই নেই। রুমে চলে এলাম। ফ্রেস হয়েই মমের সাথে গল্প করতে যাবো আজ।
রুমে ঢুকেই দেখি উনি লাগেজ গুছাচ্ছেন। একটা লাগেজে কাপড় ভর্তি আরেকটাতে পেপারস তুলছেন। উনি চলে যাচ্ছেন? উনি আমায় ছেড়ে চলে যাচ্ছেন মিশুর কাছে? বুকের ভিতর মোচড় দিয়ে উঠল।
কিছুক্ষন আগের আমার ভুবন জোড়া আশাগুলো হতাশাই পূর্ণ হতে লাগল। শূন্যতা অনুভব করতে পারছি আমি। উনাকে হারানোর ভয়ে কেপে কেপে উঠছি আমি। চোখে বেদনার পানি টলমল করছে। একদৌড়ে উনাকে গিয়ে জড়িয়ে ধরলাম। বললাম
~ কোথায় যাচ্ছেন আপনি?
~ বলুন না কোথায় যাচ্ছেন?
~সরো বিজি আছি আমি। আমাকে নিজের থেকে সরিয়ে নিলেন।
~ এমন করছেন কেন? কোথায় যাচ্ছেন বলুন? হেল্প লাগবে? আপনি বলেন কোথায় যাচ্ছেন আমি আপনার ব্যাগ গুছিয়ে দিব।
~ no need আমার ব্যাগ গুছানো হয়ে গেছে।
~ আমিও যাব আপনার সাথে। আমায় রেখে যাবেন না প্লিজ।
~ আমি ইউ এস এ যাচ্ছি। তুমি চাইলেই তো যেতে পারবেনা আমার সাথে।
~ তাহলে আপনারো যাওয়ার প্রয়োজন নেই।
~ আমি বিজনেস এর জন্য যাচ্ছি। ওকে?
~ অন্য কাউকে কাজ টা দিয়ে দিন। আপনি যাবেন না। আমি আপনাকে যেতে দিব না।
~ আর ইউ মেড? সরো সামনে থেকে। আমার ফ্লাইটের টাইম হয়ে গেছে।
~ না আপনি যাবেন না।
মম এসে দেখে আমি কাঁদছি আর উনার শার্ট টেনে ধরে যাবেন না যাবেন না বলছি।
মমঃ আম্মু ছাড় ওকে। ছি ছি এভাবে জামাইয়ের জন্য কেউ কাদে? লোকে দেখলে কি বলবে? কয়দিন পরে তো চলেই আসবে।
আমিঃ মম ওকে যেতে না কর। আমি যেতে দিব না ওকে। প্লিজ মম।
উনিঃ মম লাগেজ দুটো ড্রাইভার কে নিতে বল।
মমঃ হ্যাঁ তাড়াতাড়ি আয়।
মম যেতেই উনি খুব শক্ত করে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন।
আমিঃ আপনি মিশুর কাছে যাচ্ছেন না?
~ আমি ইউ এস এ যাচ্ছি। কাজ শেষ করে চলে আসব।
~ মিশু কাল রাতেই ইউ এস এ চলে গেছে। মিম আপুর সাথে কথা বলার সময় আমি শুনেছি। আপনি যাবেন না ওখানে প্লিজ।
~ ইউ এস এ তে আমার বিজনেসে যে দায়িত্বে ছিল সে মারা গেছে সকালে। আমাকে এখন সেখানে যেতেই হবে। নিজের খেয়াল রেখো।
মম আর আপু খাওয়ানোর জন্য অনেক চেষ্টা করছে। কিন্তু আমি খাচ্ছি না। খাবার গলা দিয়ে নামছেনা আমার। শুধু মনে হচ্ছে হারিয়ে ফেললাম উনাকে। কান্না কমছে না আমার। কমাতে পারছি না। কারন কারন আমার খুব কান্না পাচ্ছে তাই কাঁদছি। কাদব নাইবা কেন? আমার স্বামী আমাকে ছেড়ে চলে গেছে।
ঐ টিস্যু পেপার আমার জামাইটাকে আমার কাছ থেকে নিয়ে নিল। রাক্ষসী টা পিছু ছাড়বে না আমার জামাইয়ের। ওখানেও আমার জামাইয়ের পিছে পড়ে থাকবে আমি ভালো করেই জানি। আল্লাহ আমার জামাইকে আমার কাছে ফিরিয়ে দাও। আপনাকে ছাড়া কিভাবে থাকব আমি? এতটা নিষ্ঠুর ভাবে কিভাবে চলে গেলেন আপনি? কবে ফিরবেন আপনি?
পর্ব ১২
আগে ভাবতাম রাত অনেক সুন্দর। উপভোগ করতাম কল্পনায় ভাবনার গহীনে গিয়ে। কিন্তু কখনো কি ভেবেছিলাম যে প্রতিটা রাত এত বেদনার হতে পারে? দু মাসের মতো সংসার করেছি আমার স্বামীর সাথে আমাকে গভীর ভাবে অধিকার না দিলেও আমার প্রতি তার তার দায়িত্ব পালনে কখনো ত্রুটি হয় নি। দিন শেষে তার বুকে ছিল আমার স্থান জদিও আমার অজান্তেই। আজ ৬ টি মাস হতে চলল ও চলে গেছে। যাওয়ার পর থেকে আমার সাথে কথাও হয় না।
মম কে বলে আমি নাকি উনাকে চলে আসার জন্য পাগলামি করব তাই কথা বলে না। ছোট বাচ্চা ভাবে আমায়। আপনি কি মনে রেখেছেন আমায়? নাকি কারো মাঝে নিজের ভাবনাকেই সপে দিয়েছেন? আমি যে আজো আপনার অপেক্ষায় পথ চেয়ে
Black rose tree তে পানি দিচ্ছিলাম সারাদিন পানি দেওয়া হয় নি। যন্ত নিতে হবে যে যাওয়ার আগে যে উনি আমায় এই বাগানের মালিনীর দায়িত্ব দিয়ে গেছেন। তখনি মম এসে ডাকছে
~ আমার ছেলে এই কাজ টা করতো আর এখন তোকে শিখিয়ে গেছে তাইনা? রাত কয়টা বাজে? ঘুমোতে হবে না?
~ হুম। যাচ্ছি মম। তুমি যাও।
~ এখনি ছাদ থেকে নেমে আয়।
পানির ঝাঝরিটা রেখে একটা রোজ তুলে নিলাম। এইটা আমার প্রতিদিনের কর্ম। ফুল সাথে নিয়ে রুমে এলাম। গা এলিয়ে দিলাম বিছানায়। ইদানীং জোর করে পযাপ্ত ঘুমাই আমি। উনি চলে যাওয়ার পর ঘুমাতাম না। মম তাই নালিশ করেছিল তাকে।
তারপর আমার সাথে কথা বলেন উনি। আমাকে কড়া করে রাত জাগতে নিষেধ করে দিয়েছেন। ফিরে এসে যেন না দেখেন আমার চেহারা এতটুকু পরিমাণ নষ্ট হয়েছে। তাই ইদানীং নিজের যত্ন নিতে শিখেছি। মম শিখিয়েছে কিভাবে আধুনিক রুপচর্চা করতে হয়। আমার যা সৌন্দর্য তা তো আমার স্বামীর জন্যই।
কলেজে আসতেই বন্ধুরা শুরু করল গুজুর গুজুর ফুসুর ফুসুর। বেশ কয়েকদিন ধরেই চলছে। আমাকে নেয় না তাদের আলোচনায়। রাগ করলে আবার পিছু ছাড়ে না। থাকতেও পারি না আমি। আত্মার টানে চলে আসি। রাগ পেয়ে
আমিঃ এই তোরা বলবি কি প্রতিদিন কি ফুসুর মুসুর করিস?
সেবাঃ হে বলবো তো। আবিদ বলবে। আবিদ এবার বলেই দে।
আবিদঃ হ্যাঁ হ্যাঁ বলবোতো। শোন তুই।
আমিঃ কান পেতেই আছি বল।
আবিদঃ মানে হচ্ছে কি আমার না আমার না
আমিঃ দেক তোর কাছে শুনবনা। প্রতিদিন তুই এমন করিস। পপি বল।
পপিঃ না না আবিদ ই বলবে। বল আবিদ বল। আমরা তোর সাপোর্টার তো।
আবিদঃ আসলে লাবিবা আমার আমি আমি না আমি না তোর চুল দেখতে চাই।
আমিঃ কিহ। তুই জানিস না মেয়ে দের চুল পর পুরুষ দেখতে নাই?
আবিদঃ পপি আর সেবার টাতো দেখি।
আমিঃ আমি ওদের মত নই। এমনিতেই বোরখা পরি না পর্দা করি না। জানি না মরলে আল্লাহ পাক কি কি শাস্তি দেয় আবার তার মধ্যে তুই এই সব বলিস
আবিদঃ ওকে সরি সরি আর বলবনা।
আমিঃ থাক তোরা গেলাম আমি।
আমি চলে আসার পর ~
আবিদঃ আরে আরে লাগছেতো। ছাড়।
রাকিবঃ হারামি মেরেই ফেলব তোকে একটা কথা বলতে পারিস না।
পপিঃ আসলে তোকে দারা কিছুই হবে না।
আপেলঃ ঐ তুইইই বল ভাই কবে বলবি তুই ওকে ভালবাসিস?
আবিদঃ ধুররর আমার কি দোষ? আমি তো বলতেই চাই পারিনাতো
ইউ এস এ তে …
বাদী পক্ষের উকিল উপস্থিত কিন্তু বিবাদী পক্ষের উকিল এখনো আসে নি। এইভাবে দিনের পর দিন মামলা টাকে রেখে যাচ্ছে। আজো কোর্ট এই মামলায় বসতে পারল না। আশাহত হয়ে ফিরে এল তানভীর। তার এখানকার এম ডি কে হত্যা করা হয়েছে।
নিজে বাদী হয়ে মামলা করেছে কিন্তু খুনীকে কিছুতেই ধরতে পারছে না। আদালত দারা খুনিকে খোজা সম্ভব না। তাই নিজেই লোক লাগিয়েছে খোজার জন্য। বাসায় ঢুকতেই মিশুর ফোন
~ বেবিই কাম না শপিং এ যাব।
~ ওকে আই কাম।
এখানে এসে কাজের বাইরে অনেকটা সময়ই মিশুর সাথে কাটায় তানভীর। মিশুর সাথে আগের মতোই সব চলছে। কিন্তু মিশুকে দিন দিন অসহ্য লাগে তার। মিশুর বেপারোয়া জীবন একদম পছন্দ না তার। বিদেশী দের মতোই চাল চলন কাজ তার। যা একদমি তানভীরের অপছন্দ।
শপিং করতে মলে ডুকছে দুজনে। একজনের সাথে ধাক্কা লাগে তানভীরের।
সেই লোকটিঃ oh bro sorry sorry sorry Actually I can’t see
তানভীরঃ জোহান
জোহানঃ ইভান ভাইয়া (দুজন দুজনকে বুকে জড়িয়ে নেয়। ) ভাইয়া আপনি এখানে আমি তো জানিই না
তানভীরঃ হুমম। অনেক দিন হল আছি।
জোহানঃ তো কবে ব্যাক করবেন? আমরা তো দুদিন পর বি ডি তে একেবারেই চলে যাচ্ছি।
তানভীরঃ ও আচ্ছা। আমার কিছু দিন সময় লাগবে।
জোহানঃ উনি কে? মিশুকে দেখিয়ে
তানভীরঃ আমার বিজনেস পার্টনার। মিশু কাম
জোহানঃ হাই হাই আই এম জোহান।
মিশুঃ আই এম মিশু। নাইস টু মিট ইউ।
জোহানঃ মি টু। ব্রো সেলফি?
তানভীরঃ সিউর।
কয়েকটি সেল্ফি নিয়ে জোহান চলে যায়। মিশু আর তানভীর ঘুরে ঘুরে শপিং করতে থাকে। শপিং শেষে বারে ডিনারে যায় দুজনে। মিশু দু বোতল বিয়ার অর্ডার করে।
তানভীরঃ মিশু বিয়ার ফেরত দাও। এসব খাবে না তুমি। আমি লাইক করি না এসব।
মিশুঃ আমি করি। দু গ্লাস ঢেলে একটা গ্লাস তানভীরের দিকে এগিয়ে নিয়ে বলে”নাও।”
তানভীরঃ ইসস bad smell
মিশুঃ হা হা হা হা এই smell টুকু সহ্য করতে পার না?
তানভীরঃ সরাও এটা। আমি লাইক করি না বললামতো।
মিশুঃ oh come on baby এইটা বি ডি না। এটা ইউ এস। এখানে এইটা কিছুই না। এখানে তোমার মম দেখতে আসবে না যে তুমি কি করছ
তানভীরঃ এইটা হারাম।
মিশুঃ হারাম এগুলো মান বুঝি? হা হা হা বউ রেখে প্রেমিকার সাথে ঘুরাঘুরি করো এগুলা কিছু না আর এক চুমুক দিলেই হারাম হয়ে যায়? How funny
মিশুর কথাটা একদম বুকে গিয়ে লাগে। হাসিটা অসহ্য লাগছে তানভীরের কাছে। আমি আসছি বলেই উঠে
চলে আসে বার থেকে।
“অনেক মিস করি বৌপাখি। খুব মিস করি। কেমন আছো তুমি? কতদিন কথা হয় না তোমার সাথে? তুমি কি খুব রাগ করেছ আমার প্রতি? কেমন দেখতে হয়েছ তুমি? আগের মতোই পিচ্চি আছ নাকি বড় বড় ভাব চলে আসছে তোমার মাঝে? আমায় ক্ষমা করো বউপাখি। অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলেছি তোমায়। নিজেকে খুব অপরাধী মনে হচ্ছে।
মিশুর সাথে কমিটমেন্ট এ থাকতেই আমার জীবনে এসেছ তুমি। আমার তো মিশুকে চাইনা। আমার তো তোমাকে চাই বউ পাখি। মিশু ছাড়া আমি থাকতে পারবো কিন্তু তুমি ছাড়া বাঁচতে পারবো না আমি। অনেক ভালবেসে ফেলেছি বউ পাখি। তোমার কাছে যেতে চাই আমি। তোমার সাথে থাকতে চাই আমি। কিন্তু কাউকে ঠকাতে চাই না। আমি যে তোমাদের কথা ভেবে নিজেকেই ঠকাচ্ছি। কতো বোকা আমি।”
ব্রিজের উপর বসে বসে ভাবছে তানভীর। তখনি ফোন বেজে ওঠে।
~ হা মিশু বলো।
~ এভাবে না রিয়েক্ট করে চলে যেতেই পারতে। বারে আমার এক কাজিন ছিল। সাক্সেসফুল বিজনেসমেন। ওর সামনে মাথা কেটে গেল আমার। আমার বি এফ আমার সাথে মিসবিহেব করেছে ওর সামনে। ছি ছি ছি।
~ তো কি করবে এবার?
~ কি করবো মানে? আমার কাজিন আমার বাসাতেই আছে। সকালে মিট করবে ওর সাথে।
~ সকালেই মিট করতে হবে?
~ হা। ও মিট করতে চাইল তো। তোমাকে কিন্তু করতেই হবে। সব কাজ বাদ।
~ ওকে। বাই।
রেস্টুরেন্টে বসে আছে তানভীর, মিশু আর মিশুর কাজিন থামস। মিশু বার বার থামসের সাথে হেসে হেসে গায়ে ডলে পড়ছে।
থামসঃ you are so handsome Mr Tanvir
মিশুঃ ইয়াহ আমার বেবি অনেক হ্যান্ডসাম। তুমিও কিন্তু কম যাও না কত মেয়ে তোমার জন্য কতকিছু করল কাউকেই তো এক্সসেপ্ট করলে না।
থামসঃ হা হা হা হা।
মিশুর অবস্থা দেখে রাগ লাগছে তানভীরের। কথা বলতে এসেছে থামস আর ও বাট ওর কোন ফোকাসি নেই। দুজনে দিব্বি কথা বলে যাচ্ছে। কিছুটা অপমান বোধ হয় তানভীরের। কোন মতে ওখান থেকে চলে আসে অফিসে।
অফিসে বসে কাজ করছে তানভীর। তখনি ফোন আসে।
~ হ্যালো ডনি বল।
~ স্যার দেখা করুন। একটা ফুটেজ যোগাড় করেছি। ফুটেজে সমস্ত কিছু আছে।
~ অফিসে চলে আসো।
~ ওকে স্যার।
অফিসে বসে ফুটেজ দেখছে তানভীর
তার চক্ষু লাল বর্ণ ধারন করেছে যেন এক্ষুনি রক্ত গড়িয়ে পড়বে। ভিডিওতে
~তার এমডি কে সরাসরি সামনা সামনি দাড়িয়ে শুট করা হয়েছে। তাও আবার একটা মহিলা শুট করেছে। যে খান গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রির বহু পুরনো শত্রু। দিন যায় বছর যায় তবুও শত্রুতা ভুলে না। সেখান থেকে উঠে ডাইরেক্ট উকিলের কাছে গিয়ে মামলা ডিসমিস করার আবেদন জানিয়ে আসে।
পর্ব ১৩
মিশুঃ থ্যাংক ইউ বাবু।
আমি জানতাম তুমি আমার কথা শুনবে। কেন শুনবে না বল আমার মত বুদ্ধি তুমি আর কোন মেয়ের কাছে পাবে বল?
তানভীরঃ hey wait wait I don’t understand What are you say? কি শুনেছি আমি?
মিশুঃ আমি তো তোমাকে আগেই বলেছিলাম এসব মামলা করতে যেও না। তবুও তুমি করলে। ছয় মাস থেকে ঝুলছে তবুও কিছুই হল না। ফাইনালি তুমি মামলা ডিসমিস করলে। আরে যে মরার সেত মরেই গেছে। তাকে কি আর ফেরানো যায়?
তানভীরঃ “( মনে মনে) বুঝলাম না। এই ব্যাপারে প্রথম থেকেই মিশু বেশী উদিগ্ন ছিল। আমাকে এসব কিছু করার থেকে না করে চলেছে আমি তো আরো অনেক ব্যপার ইনভল্ভ ছিলাম। কই কখনো তো কিছুতে মাথা ঘামায়নি। তাহলে এখন কেন?”
মিশুঃ বেবি কই হারিয়ে গেলে?
তানভীরঃ কোথাও না। আমাকে দেখা শেষ হলে বাসায় যাও।
মিশুঃ বেবি তুমি আমাকে ইগনোর কর অলটাইম। আমি এটা মেনে নিতে পারছি না।
তানভীরঃ কে বলেছে পারতে? চলে যাও। শুনলাম তোমার কাজিন নাকি তোমার বাসায় আছে। তুমি না গেলে তো না খেয়ে বসে থাকবে।
মিশুঃ ও মাই গড। আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম থামস waiting for me Bye baby
তানভীরঃ bye
সেই যে কখন থেকে দুজন দুজনকে জড়িয়ে আছে আর ছাড়ার নাম নেই। দুজনের কান্ড সিড়ির কাছে দাঁড়িয়ে উপর থেকে দেখে মিটি মিটি হাসছি আমি। আর নিচে মিম আপু শুকনো মুখ করে একধেনে তাকিয়ে আছে তাদের দিকে। আর একজন যাকে মম জড়িয়ে আছে তার ছেলে এপাশ থেকে ওপাশ ~ওপাশ থেকে এপাশ পায়চারি করছে। মুখে বিরক্তির ছাপ টেনে এবার চেচিয়েই উঠল
~ মাম্মা
~ ইসসস জোহান দিলিতো ইমশোনে ডিস্টার্ব করে।
~ মাম্মা তোমাদের যদি এভাবেই জড়িয়ে থাকতে ইচ্ছা করে তাহলে প্লিজ আমাকে বাসার কি টা দিয়ে আন্টির বেডরুমে গিয়ে শুয়ে থাকো। আমি একদম ডিস্টার্ব করবোনা।
মমঃ আরে বেটা তুই চলে যাবি কেন? আয় আমার কাছে আয়। এইতো সুমি কে ছেড়ে দিয়েছি। কতো বড়ো হয়ে গেছিস।
এবার তো তোকে বিয়ে দিতে হবে রে।
মিমঃ মম আমি কি জোহানের জন্য গুগোলে পাত্রী দেখব?
সুমিঃ হা বউমা দেখ। বিয়ে তো দিতে হবে ছেলেকে এবার। মেয়ের খুজে লেগে পড়ি।
জোহানঃঃ মাম্মা তুমি বলছ এই কথা?। আন্টি আমি তো বিয়ে করতেই চাই মাম্মা ই তো দেয় না।
মমঃ হা হা হা শোন ছেলের কথা। মিম তুমি গল্প করো ওর সাথে। আমি আর তোমার আন্টি রুমে যাচ্ছি। এইযে পাত্র মশাই রুমেই যাচ্ছি। যাতে ডিস্টার্ব না করিস। তোর মাম্মার সাথে অনেক কথা জমে আছে। বাসার কি লাগবেনা। সাথে দুজনকে দিয়ে যাচ্ছি গল্প করো। আম্মু লাবিবা
আমিঃ আসছি মম। ডাকছো কেন?
মমঃ ওদের সাথে বসে গল্প কর।
আমিঃ ওকে
জোহানঃ ওয়াওও বিউটিফুল লাবিবা নাম টাও তার মতো কিউট। এখানে এসে যে এতো সৌন্দর্য অবলোকন করতে পারবো তা কি ভেবেছিলাম কখনো? আন্টির বাসায় পরীর দেখা ও আল্লাহ আগে কেনো বিডি তে নিয়ে এলে না? আন্টি তোমাকে আর মেয়ে খুজতে হবে না তোমার মেয়েটাকে আমায় দিলেই চলবে।
আমরা তিনজন মিলে গল্প করছি। জোহান ছেলেটাকে ভালোই মনে হচ্ছে। বেশ সুন্দর করে কথা বলে। দেখতেও হ্যান্ডসাম। সুমি আন্টি আর মম খুব ক্লোজ বান্ধবী ছিল।
ছোট সময় নাকি জোহানের বেশির ভাগ সময় এখানেই কেটেছে। তারপর এত দিন ইউ এস এ ছিল। দুদিন আগে ব্যক করেছে। আজ মমের সাথে দেখা করতে এসেছে। জোহানের গল্পে আমি আর আপু হাসতে হাসতে শেষ। কিন্তু হটাৎ এক ঝটকায় আমার হাসি সব উবে গেল।
জোহানঃ কয়েকদিন আগে তো আমি সেই লেভেলের ধাক্কা খাইলাম একজনের সাথে। তারপর সরি বলতে গিয়ে দেখি আমাদের তানভীর ব্রো।
মিমঃ ভাইয়ার সাথে দেখা হয়েছে তোমার?
জোহানঃ হুম শুধু দেখা নয় গল্প করলাম সেল্ফি নিলাম।
ওনার কথা শুনলেই আজকাল মনটা অস্থির হয়ে ওঠে। আচ্ছা কেমন দেখতে হয়েছেন তিনি? উনি কি দাড়ি রেখেছেন নাকি সেফ করেন ঐ দেশে গিয়ে? ঐ দেশের মানুষের মতো কি ফর্সা হয়ে গেছেন? কবে আসবে উনি? জোহানকে জিজ্ঞাসা করে বসলাম
~ কবে আসবে বলেছে তোমায়?
~ বলেছে আরো কিছু দিন পরে আসবে তবে খুব তাড়াতাড়ি।
~ তোমাদের সেল্ফি দেখাবে?
~ দাড়াও বের করে দিচ্ছি। ও হা উনার বিজনেস পার্টনারের সাথেও পরিচিত হয়েছি। এই নাও।
আমি ফোন টা নিয়ে দুজনের ছবি দেখছি। উনি সেফ করেছেন। একদম বিদেশীদের মতো সাদা হয়ে গেছেন। আরো হ্যান্ডসাম লাগছে।
আমার চোখ আটকে যায় একটি ছবিতে। মিশু মিশুর সাথে উনি ছবিটা তাও শপিং মলে বোঝা যাচ্ছে। তারমানে বিজনেস পার্টনার আমার সাথে কথা না বলা এতদিন ধরে সেখানে থাকা ও আমার আল্লাহ আমি কিছু ভাবতে পারছি না উনি সত্যিই আমাকে ঠকাল।
পুরো দুনিয়া ঘুরছে আমার। যে ভয়ে উনাকে যেতে দিতে চাইলামনা না সেই ভয়টাই আমার সত্যি হল। বসে থাকতে পারলাম না সেখানে। ফোনটা রেখে উঠে পরলাম। আমার মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে ঠকে গেলাম আমি আমার স্বামী আমায় রেখে অন্যকারো সাথে থাকছে আমায় ভালবাসেন না উনা এতদিন উনি মানবিক কারনে আমার সাথে ভালো ব্যবহার করেছেন এখানে আমি তাদের মিলনে বাধা তাই আমার ধরা ছোঁয়ার বাইরে গিয়ে থাকছেন
আমি তো চলে যেতে চেয়েছিলাম কিন্তু আমি আবার থাকতে কেন চাইলাম আমি তো আমার সবটা জুড়ে ভালবাসি তাকে তাকে ছাড়া বাঁচবো কিভাবে আমার যে অনেক কিছু থেকেও নেই বেঁচে থাকার শেষ সম্বল টুকুও আজ হারালাম। আহহহ
হাতে প্রচন্ড ব্যাথা করছে তাকিয়ে দেখি রক্ত বের হচ্ছে কয়েকজন লোকের আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি। আশে পাশে তাকিয়ে দেখি এটা রাস্তা অনেক গাড়ি লোকজন।
একজন এসে চেঁচিয়ে বলতে লাগলো
~ ঐ মাইয়া দিনের বেলা চোখে কি কম দেহনি মরার এত শখ তো রেললাইন যাও আমার গাড়ির সামনে কি?
তারমানে আমি এখন রাস্তায় আমি তো বাসায় ছিলাম এখানে কিভাবে এলাম? ঝাপসা চোখে উনার দিকে তাকিয়ে আছি লোকটাকে চেনা চেনা লাগছে।
উনিঃ ও আল্লাহ তুমি আমাগো ভাগনি লাবিবা না? এইহানে কি কর? হায় হায় শেষে মেশে এই মামার গাড়ি দিয়াই এক্সিডেন্ট করলা? কত রক্ত পরতাছে আম্মুডার আহ আহ আমার লগে আহ।
আমি উনার সাথে যাচ্ছি। যাচ্ছি না উনিই ধরে ধরে নিয়ে যাচ্ছেন। উনি আমার মামার বাড়ির লোক। সম্পর্কে মামা হয়। একটা ফার্মেসি তে বসিয়ে ডাক্তার আমার হাত ব্যান্ডেজ করিয়ে দিচ্ছেন। আর মামা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। আদর করে সুন্দর করে মাথায় কাপড় দিয়ে দিলেন।
~ আম্মু কই যাইতাছিলা? ঢাকা কেন? পড়ালেখা কর?
ওহ তারমানে উনি যানেননা যে আমার বিয়ে হয়েছে। আমি কিছু বললাম না। উনি আবার প্রশ্ন করলেন
~ কই যাইবা আম্মু? আমাগো বাড়িত যাইগা চলো। তোমার মামা দেইখা খুশি হইব।
আমি কিছু না বলে মাথা নাড়ালাম। তারপর মামার সাথে আমার মামার বাড়ি চলে এলাম। মামনি আমাকে দেখে দৌড়ে এলেন। আমার হাত দেখে জিজ্ঞাসা করলেন এসব কিভাবে হলো? আমি বলার আগে ঐ মামাটাই বলে দিলেন সব। মামা বাসায় নেই। তাই ঘরে গিয়ে রেস্ট নিলাম।
মামা বাসায় এসে আমার কথা শুনে রুমে এসে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। মাথায় ছোয়া পেয়ে ঘুম ভেঙ্গে যায়। মামাকে দেখে লাফ দিয়ে উঠে জড়িয়ে ধরলাম। মামা আমায় বুকে নিয়ে অনেক গুলা কথা শুনাল। আমি এত কেয়ারলেস কেন? নিজেকে সাবধানে রাখতে পারি না কেন রাস্তায় একা একা এভাবে চলি কেন এইসব কথা বলেই যাচ্ছেন। আর আমি একনাগারে কেদেই যাচ্ছি।
মামাঃ আম্মু কান্না থামাও তো। দেখি তোমার শাশুড়ি কে জানাই উনি বার বার ফোন করে তোমার কথা বলছে। তুমি নাকি না বলেই বাসা থেকে বের হয়েছ এখনও বাসায় ফিরনি।
মামা ফোনে কথা বলে নিল মমের সাথে। তারপর আমাকে শান্ত হতে বলে জানতে চাইল আমি কেন এরকম ছেলেমানুষী করলাম? প্রথমে আমি বলতে চাইনি তারপর মামা আমার মুখ থেকে কথা বের করেই ছাড়ল।
সবটা বললাম মামাকে। মামা সবটা শুনে মাথা নিচু করে বসে আছে। কিইবা বলবেন উনি? সবাই চায় তাদের মেয়েরা যেন ভালো ঘরের বউ হতে পারে। উনিও তাই চেয়েছেন। সবি আমার কপালের দোষ। এই কপালে সুখ সত্যিই দুষ্প্রাপ্য। মাথা তুলে আমার দিকে তাকিয়ে মামা বললেন
~ আমি কিছু জানাতে চাই তোকে।
~ কি মামা? মামার এই বলার ধরন আমার কাছে কেমন যেন লাগছে।
~ একটা কঠিন সত্য কথা জানতে চলেছিস তুই। নিজেকে প্রস্তুত করে নে।
, বুঝতে পারছি না কি এমন সত্য কথা যে শোনার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে?
~ তুই তো জানিস তোর মা মারা গেছে। কিভাবে মারা গেছে জানিস?
~ আম্মুর নাকি কিডনী ডেমেজ হয়ে ছিল।
~ নাহ। মিথ্যা বলা হয়েছে তোকে। তোর মা গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছে।
মামার কথায় আমার পায়ের নিচে মাটি সরে গেল। মাথা চক্কর দিতে থাকল। একি শুনছি আমি? নিজেকে শক্ত করলাম।
মামা ~ তোর বাবা মার সুখের সংসার ছিল। তার মধ্যে তুই হলি। তোর বাবা একটা ভালো কোম্পানি তে জব করত। ভালোই চলছিল তাদের। এরমধ্যে তোর খালামনি তোর বাবার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ে। তোর মার থেকে তোর খালামনি শত গুনে অতুলনীয় সুন্দরী ছিল। তোর মার অন্তপ্রাণ ছিল তোর খালামনি।
তোর খালামনি তোর মার কলিজা টা চাইলে তাও দিতে একবার ভাবত না। তোর বাবা ধীরে ধীরে তোর খালামনির রুপে ভুলতে থাকে। একদিন তোর মা তাদের একসাথে খুব ক্লোজলি ভাবে দেখে নেয়। তাদের প্রেমালাপ শুনে নেয়। তোর মায়ের কাছে কতটা খারাপ মুহূর্ত ছিল বুঝতে পারছিস? নিজের বোন আর বাচ্চার বাবা। সাত বছর সংসার করার স্বামী।
সহ্য করতে পারে নি তোর মা। তোর খালামনির মুখোমুখি হলে তোর খালামনি তোর মাকে খুব খারাপ ভাবে অপমান করে আর তোর বাবাকে বিয়ে করবে জানায়। এইটা তোর মা নিতে না পেরে আমায় চিঠি লিখে তোর দায়িত্ব দিয়ে গলায় দড়ি দেয়। তখন আমি বিদেশ ছিলাম। তোর মায়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে আমি দেশে এসে দেখি তোর বাবা আর খালামনি সংসার পেতে বসেছে কয়দিনের মধ্যেই। তোকে নিতে চেয়েছিলাম আমি কিন্তু তোর বাবা দেয় নি।
মামার কথা শুনে আমার কি রিয়েক্ট করা উচিৎ কি ভাবা উচিত সব জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছি।
মামা আমার কাছে এসে বসলেন।
~ আম্মু তোর মার মতো বোকামি করিস না। তোর মা নিজের বোনের জন্য নিজের জায়গা ছেড়ে দিয়েছে। কি লাভ হয়েছে এতে তোর মার? তোর খালামনি কখনো তো তোর মার কথা মনেও করে না।
অকৃতজ্ঞ। তোর জীবনটা অনেক টা নষ্ট হয়ে গেছে। তোর মা জাহান্নামী হয়ে গেছে। কোন লাভ হয়েছে কি? না। আজ যদি তোর মা এর প্রতিবাদ করতো তোর বাবাকে তোর খালামনির থেকে দূরে সরিয়ে দিত নিজের কাছে আবদ্ধ করে নিত তাহলে তোদের জীবন টা অনেক সুন্দর হত।
কিছু দিন কষ্ট করলে সারাজীবন সুখ করতে পারতি। আল্লাহ সবাইকে সবার জায়গাতেই আবদ্ধ রাখে। নিজের কিছু অর্জন করার থেকে রক্ষা করা কঠিন। তুমি তাদের মত হয়না যারা ভয় পেয়ে পিছিয়ে যায় আর ধুকে ধুকে মরে। নিজের টা নিজের কাছে গুছিয়ে রাখ। বুঝতে পেরেছ?
আমিঃ হ্যাঁ।
পর্ব ১৪
দরজায় দাড়িয়ে সব শুনে নেয় মামনি। এক মুহূর্ত দেরী না করে মামাকে ডাক দেয়। মামা ঘরের বাইরে যেতেই মামনি টেনে রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়।
মামনিঃ তোমার বোনের মেয়ে কবে যাবে এখান থেকে?
মামাঃ কবে যাবে মানে? আজি তো এল।
মামনিঃ তুমি কি ঐ মেয়েকে সারাজীবনের জন্য এখানে রাখার প্লেন করছ নাকি?
মামাঃ এ কেমন কথা সারাজীবন রাখব মানে?
~ আহহ নেকা আমি সব শুনেছি বুঝেছ? শশুর বাড়ি থেকে চলে এসেছে জামাই অন্য মেয়ে নিয়ে ফুর্তি করছে। দেইখো দুদিন পর এসে ডিভোর্স ও দিয়ে দিবে। না বলে চলে এসেছে শশুর বাড়ি জায়গা দিবে কিনা কে জানে?
~ ঠিক করে কথা বলো। আমার ভাগনী কেমন মেয়ে তা তুমি ভাল করে জানো।
~ তুমি আমি জানি। শশুর বাড়ি কি তা মানবে গো? এতদিন টাকা পয়সা দিয়ে পালন করে এসেছ কিচ্ছু বলিনি।
বিয়ে দিয়ে তো বোঝাটাকে নামানো গেছে এখন আবার টানতে হবে নাকি?
~ তুমি এত নিচ তা আজ জানলাম। ছিহহ ঘৃনা হচ্ছে আমার।
মামা ঘর থেকে বেরিয়ে এলেন আমার রুমে। এসেই আমাকে বুকে টেনে নিলেন। আমি মামার বুকে চুপটি করে আছি। পাশাপাশি রুম হওয়াই সবটাই শুনেছি। বিপদে বন্ধুর পরিচয়। চেনা মানুষ গুলো অচেনা হতে এক মুহুর্ত লাগে না।
মামাকে বললাম
~ আমি কাল সকালে চলে যাব মামা।
~ সকালে আমার একটা কাজ আছে। কাজটা সেরে এসে তোকে আমি নিজে গিয়ে দিয়ে আসব। তোর শাশুড়ি কতদিন যেতে বলছে এই সুযোগে যাওয়াটাও হবে আমার।
মামাও যখন যেতে চায় তখন আমি আর কিছু বললাম না। আমি একা গেলেও ব্যপারটা ভাল দেখায় না। এ বাড়িতে একমুহুর্ত থাকতে ইচ্ছা করছে না। তবুও থাকতে হবে।
মাঝরাতে ঘুম ভেঙে যায় তানভীরের। সারা শরীর অস্থির হয়ে আছে। কপাল বেয়ে ঘাম ঝড়ে পড়ছে তার। ভয়ঙ্কর এক সপ্নে তার সব ওলোট পালট হয়ে গেছে। তারাহুরো করে ফোনটা নিয়ে মমের ফোনে কল দেয়।
~ আসসালামু আলায়কুম বাবা। ইউ এস এ তো এখন গভীর রাত। ঘুমোস নি?
~ তোমার মেয়ে কেমন আছে মম?
~ কি হয়েছে বাবা? গলাটা এমন লাগছে কেন?
~ ওকে ফোনটা দাও।
~ ও তো ওর মামার বাসায়।
~ কবে গেছে?
~ গতকাল। তুই বরং তোর মামা শশুরের ফোনে ফোন দে।
~ নাম্বার টা পাঠিয়ে দাও।
~ ওকে।
মামা বারান্দায় বসে কিছু পেপারস ঘাটা ঘাটি করছে। আমি টূকুর সাথে বসে বসে খেলছি। মামনি রান্নার কাজে ব্যস্ত। মামার ফোনে কল আসে। রিংটোনের শব্দ পেয়ে রুম থেকে ফোনটা এনে মামার হাতে দিলাম। মামা রিসিভ করে
~ আসসালামু আলায়কুম। কে বলছেন?
~ ওয়ালাইকুম সালাম। আমি তানভীর ইভান খান। কেমন আছেন মামা?
মামা আমার দিকে তাকিয়ে একটু হেসে লাউট স্পিকারে রাখল ফোনটা।
~ তানভীর আলহামদুলিল্লাহ। তুমি কেমন আছো?
~ আলহামদুলিল্লাহ মামা। সবাই কেমন আছে?
~ ভালো বাবা। তো কবে ফিরবে?
~ কাজ টা শেষ হলে। মামা আপনার ভাগনী আছে ওখানে?
~ রসিকতা করে আমার ভাগনী কোন ভাগনীর কথা বলছ?
~ ওইযে মামা ওইযে আমি যাকে বিয়ে করছি।
~ হা হা হা হা দিচ্ছি কথা বল।
তার কথা শুনে আমার এমনিতেই অবস্থা খারাপ। উনি ফোন দিয়েছেন তাও আবার মামার ফোনে কেন দিয়েছে? কি কারনে? ভয় হচ্ছে খুব। কি বলার জন্য ফোন দিয়েছেন উনি? মামা আমার দিকে ফোনটা এগিয়ে দিতেই আমি নিয়ে রুমে এসে দরজা বন্ধ করে দিলাম।
কানে ধরে কান্না সিক্ত গলায় বললাম
~ হ্যাঁলো
~ বউপাখি
ওনার কন্ঠে বউপাখি ডাক শুনে আমার চাপা কান্না গুলো বেড়িয়ে এসে ফুপানো কান্নার রুপ ধারণ করে।
কত দিন এই ডাক শুনার জন্য আমার কান অপেক্ষা করছে। রিতীমত ফুপিয়ে কান্না করে যাচ্ছি। আমার ফুপানো শব্দে উনি হয়ত বুঝেছে তাই চুপ করে আমার ফুপানো কান্নার আওয়াজ শুনছে। কিছুক্ষন পর বলে
~ বউপাখি ঠিক আছ?
~ হ্যাঁ। আমার নামটা জানেন তো?
উনি চুপ করে আছেন আর জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছেন। আমি চুপ করে তার প্রতিটি নিশ্বাস গুনছি। আমার এই গুনার স্বভাব কোনদিন ই মনে হয় যাবে না।
~ প্রয়োজন নেই।
উনার এই কথায় আমি গুনা বন্ধ করে দিয়েছি। আমার কোন রিয়েক্ট আসছে না। উনি আবার বললেন
~ আগেও প্রয়োজন মনে করি নি এখনো করছি না। সোসাইটি তে তুমি মিসেস তানভীর ইভান খান। খান গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রির ছোট মালকিং। অন্দরমহলে সোহানা খানের মেয়ে। সরোয়াজ খানের ভাবী। মিম খানের জা। আর আমার বউপাখি।
~ ভালবাসেন আমায়?
উনি আবার চুপ করে আছেন। আমি উনার উত্তর শুনতে চাই না। উনার উত্তর আমার জন্য ভয়ংকর কিছু। তাই ফোন টা কেটে দিলাম।
আলোর ভিরে আধার খোঁজে করি নিজেকে অন্ধকার। কেন হারিয়ে গেলে এই ভুল শহরে করে দিয়ে আজ আমায় একা।
তুমি ছেড়েও আমায় কেন ছেড়ে গেলে না কিছু ছেড়ে যাওয়া যেন এখনো বাকি।
আমি ভেঙেও আজ ভাঙিনি বেচে থাকাতে এখনো শুধু তুমি।
মামার সাথে বাসায় এলাম। দারোয়ান আমাকে দেখে একদৌড়ে ভিতরে চলে গেল। পিছু পিছু এসে দেখি মম কে ডাকছেন।
~ বড় মালকিং বড় মালকিং ছোট মালকিং আইসা পড়ছে। তারাতারি আহেন। ছোট মালকিং এইভাবে চইলা গেছিলেন কেন?
(আমাকে দেখে) জানেন বড় মালকিং কত চিন্তায় পড়ছিল? আমরা সহ ভয় পাইয়া গেছিলাম।
তখনি মম এসে আমার গালে ঠাস করে চড় বসিয়ে দিল। আমার হাতের ব্যান্ডেজ দেখে আরো রেগে গেল। উনার চোখে পানি চিক চিক করছে।
~ কেন চলেগিয়েছিলি বল? কিসের জন্য চলেগিয়েছিলি? মামা বাড়ি যাবি আমি কি না করতাম? কোনটার অভাব তোর? কি দেইনি তোকে? কখনো মেয়ের থেকে আলাদা করে দেখেছি? ভাললাগে না আমাকে? জালাই তোকে? অত্যাচার করি?
মমের চোখের পানি পড়ছে। হাত দিয়ে পানি মুছে জড়িয়ে ধরলাম। কত ভালবাসে আমাকে। আর আমি কত কষ্ট দিয়ে ফেললাম। কানের কাছে গিয়ে আস্তে করে বললাম
~ চলে এসেছি তো। তবুও কেন কাদছ? তোমার এতকিছু তো আমার চাইনা মম। আমার যা প্রয়োজন তা তুমি দিতে পারবে না।
~ আকাশের চাঁদ টা চাইলেও তোর মম তোকে এনে দিবে।
~ আমার তোমার ইভানকে চাই। ভেতর বাহির পুরোটাই চাই। পারবে এনে দিতে? পারবেনা।
মম কিছু না বলে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরল আমাকে।
ভালোবাসি বউপাখি খুব ভালোবাসি। অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলেছি তোমায়। অনেক কাদিয়েছি। অপরাধ করেছি আমি।
তোমার এই অপরাধী হাজবেন্ডটাকে ক্ষমা কর বউপাখি। আমি তোমায় আর কাদাতে চাই না। তোমাকে ভালবাসতে চাই। তোমার আগুনে পুড়ে ছাই হতে চাই। তোমার ভালবাসায় সিক্ত হতে চাই। তোমার কাছে ফিরতে চাই। সব বাধা পেরিয়ে ভালো থাকতে চাই। নিজের ভালবাসার জন্য স্বার্থপর হব আমি। কারো কথা ভাবব না।
মিশুর মার সাথে অনেক দিন থেকে কথা বলতে বলছে। দেখা করব আমি তার সাথে। মিশু তো আমাকে ভালবাসে। আমি চলে যাওয়ার পর ওর পাগলামি গুলো ওর মাকেই সামলাতে হবে। তিনি মুরুব্বি সব বুঝবেন। আমি বিবাহিত যেনে তার মেয়েকে সরিয়ে নিতে উনিই হেল্প করতে পারেন আমাকে।
রেস্টুরেন্টে মিশু আর তার মার জন্য ওয়েট করছে তানভীর। কিছুক্ষনের মধ্যেই মিশু আর তার মা চলে এল। ওদেরকে বসতে বলল। মিশুর মা বসে মুখের নেকাবটা খুলে হাত এগিয়ে দিয়ে বলল
~ হাই। আই এম মমতা শেখ। মিশুর মম।
মমতা শেখ নাম শুনে তানভীর তার দিকে তাকিয়ে অনেক বড় সড় ধাক্কা খায়। ক্রমশ তার চেহারা পাল্টে যায়। কপাল কুঁচকে নীল বর্ণ ধারন করে। চোখ দুটো দিয়ে আগুন বের হতে থাকে। সাদা বর্ণের শরীর নীলচে বর্ণের ধারন করে। বসে থাকা তার জন্য ভয়ংকর ব্যপার হয়ে উঠে। ঝড়ের বেগে উঠে চলে আসে সেখান থেকে। মিশু ও মিশুর মা তানভীরের এমন ব্যবহারে অবাক হয়ে যায়।
পুলের উপর বসে রাগ কমানোর চেষ্টা করছে তানভীর। কিন্তু তার রাগ কমার বদলে বেড়েই যাচ্ছে। কিছুক্ষন আগে সে তার সবথেকে ঘৃনীয় ব্যক্তির সামনে বসে ছিল। যার মুখ দর্শন করাও তার জন্য কবিরা গুনাহ স্বরুপ।
চিৎকার করে উঠে তানভীর
~ মিশু Lufer girl Game খেলেছিস আমার সাথে। মুরগি বানাতে চাস আমাকে। revenge নিচ্ছিস তুই আমার সম্পত্তি হাতাতে চাস you are a greedy girl like your mother আমার সেদিনি বুঝা উচিত ছিল যেদিন তোর টাকা চুরির ব্যপারটা ধরে ফেলেছিলাম আমি।
তানভীর ইভান খান the best icon of the business industry কিভাবে এত Fool হতে পারে? How? Killer woman Oh Just go to hell।
পুলে ঝাপ দিয়ে অনেক ক্ষন পানিতে ঝাপা ঝাপি করে নিজেকে শান্ত করে।
মিশুর মা মমতা শেখ ইনি সেই ব্যক্তি যার জন্য অনেক গুলো রাত নির্ঘুম কাটিয়েছেন সোহানা খান। পেয়েছেন হাজারো কষ্ট। তানভীর এর বাবা ফিরোজ খান এর সাথে অবৈধ সম্পর্ক ছিল মমতার। আট বছর বয়সী ছেলের বাবাকে প্রেমের নামে ফাঁদে ফেলে ছিলেন ইনি। স্ত্রী সন্তান এর কাছে আসার জন্য পাগল ফিরোজ কে ভালবাসার নামে আটকাতে চেয়েছিলেন।
এতে যখন পেরে উঠেন নি তখন মিথ্যা প্রেগন্যান্ট এর অভিনয় করে আটকে রেখেছিলেন তিনি। ব্যবসার 80‰ শেয়ার নিজের নামে ফিরোজ এর ব্যবসা বন্ধ করে দিয়ে টাকা পয়সা নিয়ে বিদেশে পাড়ি জমান ইনি। ফিরোজ খান তখন অসহায় হয়ে সোহানা খানের দ্বার প্রান্তে উপস্থিত হন। সোহানার দয়ালু মন তাকে ক্ষমা করে ব্যবসার হাল ধরার জন্য অর্থের যোগান দেয়।
আস্তে আস্তে আবার খান গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রি টপ ওয়ান হয়ে উঠে। এই খবর পেয়ে মেয়েকে লেলিয়ে দেন মমতা আবার সম্পত্তি পাওয়ার জন্য। এমডি কে উনিই মার্ডার করে তানভীর কে বিদেশে এনে মেয়ের সাথে বিয়ে দেওয়ার জন্য। কিন্তু তা আর হয়ে উঠে না। উনাকে দেখেই তানভীর চিনতে পেরে যায়।
পর্ব ১৫
ঘরে এসে জিনিস পত্র এদিক থেকে ওদিক ছোড়ে ফেলছে তানভীর। মিশুর বেশ কয়েকটা জিনিস এখানে আছে। ঐগুলো দেখে চিৎকার করে কাঁদতে থাকে।
“Dafar Lufer Mishu I hate you I hate you a lot ছলনাময়ী রাক্ষসী লোভী। তোর জন্য আমার বউপাখি কে কাদিয়েছি আমি। আমার আর পাপার মাঝে আর তফাত থাকল না। তুই আর তোর মা লুজার। I am sorry bowpakhi Love you Love you more and more Please forgive me Please। সব শেষ করে দিব। সব মিশু নামের পোকা টাকে আমার জীবন থেকে আউট করে দিব। ওর সাথে সব শেষ করে দিব। আজি এক্ষুনি শেষ করে দিব। আসছি আমি ডাইনি মিশু ডারলিং।”
সকালে
বাসার নিচে অনেকক্ষণ যাবৎ দাড়িয়ে আছে তানভীর। এখানে অনেকবার মিশুকে নামিয়ে দেওয়ার জন্য এসেছে সে। কিন্তু কখনো ভিতরে যাওয়া হয় নি। না আর এভাবে দাঁড়িয়ে থাকা যাবে না। ভিতরে যেতে থাকল এক পা দু পা করে।
দাঁড়িয়ে গেল সে। ভিতরে যেতে তার মন একদম সায় দিচ্ছে না। ভিতরে গেলেই সে ঐ লুজার মহিলাটির সম্মুখীন হবে। না শেষ বারের জন্য হলেও যাবে সে। সামনে যাবে ঐ মহিলা আর তার মেয়ের। একদম নিঃশ্বাস নিয়ে ভিতরে ঢুকে গেল সে। দরজা খোলা পেল স্টেঞ্জ। ভিতরে গিয়ে এ ঘর ও ঘর খুজতে লাগল কিন্তু কাউকে পাচ্ছে না।
মিশুর নাম ধরে অনেক বার ডাকল। কিন্তু কোন সাড়া আসলো না। তখনি চোখ গেল সিড়ির দিকে। সিড়ি দিয়ে উপরে চলে এসে হাটতে লাগল। একটা রুমের দরজায় আটকে গেল। ভিতর থেকে আওয়াজ আসছে। তারমানে মিশু এখানে। দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকে যায় তানভীর। ভিতরে ঢুকে যা দেখল তার জন্য প্রস্তুত ছিল না সে।
রাগে তার চোয়াল শক্ত হতে থাকে। নিজের প্রতিই নিজের ঘৃণা হচ্ছে। এতোদিন এই মেয়ের সাথে রিলেশনে ছিল সে। এক বিছানায় নিজের কাজিন থামস এর সাথে ছি। বমি আসছে দেখে। হুংকার ছেড়ে দিল
~ মিশুউউ
মিশু আর থামস এতটাই বিভোর ছিল যে দরজা খুলে যে ভিতরে কেউ এসেছে বুঝতেই পারে নি।
তানভীর এর চিৎকার শুনে হুস ফিরে তাদের। মিশু তানভীর কে দেখে আমতা আমতা করা শুরু করে দেয়। তানভীর কে দেখে থামস একটু একটু করে কেটে পড়ে। মিশু কোনরকম গায়ে কাপড় জড়িয়ে তানভীর এর সামনে এসে দাড়ায়।
~ তাতা ননভী র।
~ ঠাস ঠাস ঠাস। বেশরম নষ্টা পতিতা এতটা খারাপ তুই। আমাকে ভালবাসার কথা বলে তুই নষ্টামি করছিস ভাইয়ের সাথে। ছিহহ তোকে দেখে বমি আসছে আমার ঘৃনা হচ্ছে তোকে। মায়ের মতই নোংরা হয়েছিস তুই।
~ আমার মায়ের নামে কিছু বলবেনা তানভির।
~ কেন বলবোনা নষ্টা মায়ের নষ্টা মেয়ে তুই। কাজিনের সাথে নষ্টামি করছিস।
~ ও আমি নষ্টামি করি আমার সাথে সম্পর্ক রেখে তুমি বউ নিয়ে ফুর্তি কর সেটা কিছু না।
~ খোদার কসম মিশু তোকে ঠকাবোনা জন্য আমি আমার বউকে দিনের পর দিন ঠকিয়েছি আগে যদি জানতাম তুই এরকম কখনোই তোর মুখ দেখতাম না।
~ এটা ইউ এস এ ফ্রি সেক্স এর দেশ। এসব যাস্ট ফ্যাশন ডিয়ার আমি কোন অন্যায় করি নি। আর তুমি তোমার দারা কি কিছু সম্ভব? আমি একটা ২৬ বছরের মেয়ে ২ বছর থেকে রিলেশনে আছি। একটা বার ও ইচ্ছে করে আমার হাত ধর নি। কত চেয়েছি তোমায়।
এভাবে থাকা যায়? আর আমি নিজেও এখন চাই না তুমি আমার মুখ দেখ। তোমার প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে। তোমার কোম্পানির 70% শেয়ার আমার নামে বাকি 30% তোমায় ভিক্ষা দিলাম। নইত তো আবার না খেয়ে মরবে। আমার আবার অনেক দয়া।
মিশুর কথা শুনে ফ্লোরে বসে পড়ে তানভীর। কিছুক্ষনের জন্য তার মাথাটা ঘুরে যায়। নিজেকে শান্ত করে মিশুর দিকে তাকে হো হো করে হেসে উঠে।
তানভীরের হাসিতে মিশু ভ্রু কুঁচকে তাকায়।
~ অতিরিক্ত চাপে মস্তিষ্ক বিগড়ে যাওয়া খুব স্বাভাবিক বিষয়।
~ মস্তিষ্ক তো এবার তোমার বিঘড়ে যাবে মিশু ডারলিং। তোমায় আমি টাচ করিনি কারণ তুমি কখনো আমার নজর কারতে পার নি। এইটা তোমার ব্যর্থতা। আর আমি কোন অবৈধ পিতৃ পরিচয়হীন মেয়েকে টাচ করতেও চাই না। আমি আমার মমের শিক্ষায় বড় হয়েছি তাই পাপা তোমার মায়ের সাথে যেভাবে অবৈধ সম্পর্ক গড়ে তুলছিল তা ভুলেও কল্পনাও করিনি।
আসলে আমি তোমাকে কখনো ভালইবাসিনি। তোমাকে ধন্যবাদ আমার চোখ খুলে দেওয়ার জন্য। যেখানে তুমি ২৬ বছরের মহিলা হয়ে থাকতে পার না সেখানে আমার সুইট ২০ বছরের যুবতী বউ কিভাবে থাকবে? তার যে আমাকে চাই চাই আমি ফিরে যাচ্ছি তার কাছে।
দরজার দিকে পা বাড়ায় তানভীর। আরেকবার পেছন দিক তাকিয়ে মিশুকে একবার দেখে নিয়ে বলে
~ না দেখে কাজ করা বোকামি। আমার বিজনেস থেকে ৬ মাস আগেই তুমায় না জানিয়ে কেনসেল করে দেওয়া হয়েছে। শেয়ার কিভাবে পাবে তুমি? হা হা হা হা।
তানভীর এর কথা শুনে স্তব্ধ হয়ে যায় মিশু। দৌড়ে গিয়ে সব পেপারস দেখতে থাকে। তার মানে তার এতদিনের সাধনা পরিশ্রম সব নষ্ট হয়ে গেল। চিৎকার করে কাঁদতে থাকে মিশু। মিশুর এই কান্নার আওয়াজ শুনে হাসতে হাসতে বাসা থেকে বের হয়ে আসে তানভীর।
আজ চারদিন পরে কলেজ এলাম। বন্ধুরা ফোন করতে করতে অস্থির করে দিয়েছে আমায়। কিসব কথা আমার জন্য নাকি মন কাদছে আমাকে না দেখে নাকি থাকতে পারছে না। এতো ভালুপাসা। গেইট দিয়ে ডুকতেই আবিদ হাত ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে
~ আরে আরে কই নিয়ে যাস? পরে যাব তো।
~ আজকে দুইটা ক্লাস হবে। স্যার ঢুকে পরবে তারাতারি আয়।
~ আজব।
~ আজব না। তারাতারি ক্লাস করে ফিল্ডে যাব। কথা আছে।
~ ক্লাস তারাতারি করব কিভাবে? টানা ৪০ মিনিট করে একেকটা ক্লাস। এর আগে বের হবো কিভাবে।
~ ঐঐঐঐ ত আর কি। চল।
~ হু।
ক্লাস করে ফিল্ডে সবাই গোল হয়ে দাড়িয়ে আছি। পপির হাতে এক গুচ্ছ গোলাপ। আবিদ পপির হাত থেকে ফুল গুলো নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলল
~ লাবিবা এই ফুল গুলো তোর জন্য।
গোলাপ গুলো গোলাপি রংয়ের। আমার গোলাপি গোলাপ একদম ভাল লাগে না। নিতে ইচ্ছে করছে না। তবুও নিলাম আর কি।
~ লাবিবা তোকে বলবো বলবো করে বলা হয়নি।
~ বল।
~ আমি আসলে আমি না তোকে এই পপি আমার না পা কাপছে।
পপিঃ শালা আবিদ্দা এইবার মিস করলে তোর সাথে আমি আর নেই।
এই অবস্থা দেখে আমার যে কি হাসি পাচ্ছে হেসেও দিলাম। আমার এমন হাসি দেখে আবিদ খানিকটা লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে নিল। আবার আমার দিকে তাকিয়ে
~ লাবিবা আমি তোমাকে
লাবিবা
পেছন ফিরে দেখি জোহান ভাইয়া দাড়িয়ে আছে।
আমি তো খুশিতে দৌড়েই তার কাছে গেলাম। জোহান ভাইয়ার সাথে বেশ ভালো বন্ধুত্ব হয়ে গেছে এই কয়দিনে।
~ জোহান ভাইয়া আপনি এখানে?
~ হুম ক্লাস শেষ?
~ জি।
~ আন্টিকে বলে এসেছি তোমায় নিয়ে ঘুরব
~ ঘুরতে তো আমার খুব ভালো লাগে। দাড়ান আমার বন্ধুদের বলে আসি।
বন্ধু দের বলে জোহান ভাইয়ার সাথে ঘুরতে চলে
এলাম।
প্রচন্ড জোরে চেপে ধরে আছে মিশু। শ্বাস রুদ্ধ হয়ে যাচ্ছে তানভীর।
~ ছাড়। ছাড় বলছি। হচ্ছে টা কি। তোমার ওই নোংরা শরীর নিয়ে আমার কাছে আসার সাহস কি করে হয়।
~ না ছাড়ব না। কিছুতেই ছাড়ব না। ভালোবাসি তানভীর।
এক ধাক্কায় সরিয়ে দিয়ে
~ রাবিস লজ্জা নেই তোর। এত কিছুর পরেও তুই ভালবাসি বলছিস। দুর হ আমার চোখের সামনে থেকে।
~ প্লিজ ক্ষমা করে দাও আমায়। আমাকে ছেড়ে ঐ মেয়েটার কাছে যেও না।
~ ক্ষমা আমি আগেই করে দিয়েছি। ক্ষমা করা মহৎ গুন। আমি যদি কাওকে ক্ষমা করি তাহলে আমার আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করবে।
~ আমি জানি তুমি ক্ষমা করবে। ঐ মেয়ের কাছে যেও না প্লিজ
~ ঐটা ঐ মেয়ে নয়। ঐটা আমার বউপাখি। আমার বাম পাজরে সৃষ্টি। আমার অর্ধাঙ্গিনী। পবিত্র থেকেও পবিত্র সে। তার পবিত্রতায় নিজেকে পবিত্র করতে চাই আমি। #পাজরের টানে আমি তার মুখী হবো। তুমি কে? আমি তো তোমায় চিনি না।
~ তানভীররর অসহায় দৃষ্টি নিক্ষেপ করে।
~ আল্লাহ হাফেজ।
জোহান ভাইয়ার সাথে হাতির ঝিলে ঘুরতে এসেছি। আমি আর ভাইয়া পাশাপাশি হাঁটছি। এখানে অনেক লোকজন। বেশির ভাগি যুগল। একজন আরেকজনের হাত ধরে হাটছে। এমনি ভাবে একদিন হেটেছিলাম আমার স্বামির সাথে আর রঙিন সপ্ন বুনেছিলাম দু চোখ ভরে। বাচ্চারা বেলুন উরাচ্ছে।
ফুচকা দোকান গুলোতে ভিড় জমে আছে। হটাৎ চোখ গেল দুধচার দিকে। একটা লোক কেটলিতে করে দুধচা লালচা বিক্রি করছে। উনার সাথে সেই বিকেলে মাটির কাপে দুধচা আর তার কাপে দেওয়া চুমুক। আহহহহ আর সহ্য করতে পারছি না। চোখ দুটো বন্ধ করে নিলাম।
খুব উৎফুল্ল হয়ে জোহান ভাইয়ার, সাথে ঘুরতে এসেছিলাম। কিন্তু উপভোগ করতে পারছি না। উনার স্মৃতি গুলো বার বার উকি দিয়ে আমার বিচলিত করে তুলছে। এ এক কঠিন যন্ত্রনা। কিছুই কি নেই এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাবার মত?
~ আচ্ছা জোহান ভাইয়া
~ বলো।
~ সবকিছু ভুলে যাওয়ার কোন ঔষধ আছে?
~ একেবারে ভুলার মত কিছুর কথা আমি জানি না। তবে কিছু সময়ের জন্য ভুলার মতো একটা জিনিসের নাম জানি।
~ কি সেটা? (কিছু সময় কিনা জানিনা তবে এই মুহুর্তে আমার সেটা চাই)
~ কেন বলতো?
~ ঐ জিনিস টা নিতে চাই।
~ হা হা হা হা ঐটা ভাল না। ওয়াইনের কথা বলছিলাম আমি।
~ চলুন।
~ কোথায়?
~ ওয়াইন খাব।
~ মজা করো না।
~ আমি সিরিয়াস।
~ ভেবে বলছো তো?
~ ছিলেন তো ইউ এস এ তে। না খেয়ে থাকেন নি নিশ্চয়?
~ তা খেয়েছি। তবে তুমি এর আগে কখনো খেয়েছ?
~ না। তবে আজ খাব।
~ না তুমার খাওয়া যাবে না। প্রথম প্রথম তোমার এইটা হজম করতে পারবে না।
~ পারব। নিয়ে চলুন আমায়।
~ লাবিবা
~ নিয়ে চলুন
~ ওকে
একটা ক্লাবে ডুকলাম। অনেকে মাতলামি করছে মদ খেয়ে। ভাইয়া এক প্যাক দিতে বলল। আমার সামনে এগিয়ে দিল।
~ এইটা হচ্ছে ওয়াইন। খাও।
~ইস কি গন্ধ
কিন্তু আমার যে যন্ত্রনা থেকে মুক্তি পেতে হবে তাই নাক চেপে খেয়ে নিলাম। টেস্ট তেমন খারাপ না। আরো দিতে বললাম।
জোহান ভাইয়া বলল আর খেতে দিবে না। আমিও নাছোড়বান্দা একটার পর একটা গ্লাস খালি করছি। 12 টা গ্লাস সাভার করে দিলাম। আমার শরীরের ব্যলোন্স অনেক আগেই হারিয়ে ফেলেছি। ভাইয়া এইবার আর খেতে দিল না। জোর করে আমাকে নিয়ে ক্লাব থেকে চলে এল। এতক্ষনে আমার পাগলামি শুরু হয়ে গেছে। ভাইয়া আমার চোখে মুখে পানি দিয়ে নেশা কাটানোর চেষ্টা করছে। বাট ভাইসাব মেরে তো নেশা হগাইয়া
পর্ব ১৬
ড্রয়িং রুমে চোখ মুখ খিচে মাথা নিচু করে বসে রাগ কন্টোল করতে ব্যস্ত তানভীর। সোহানা, সরোয়াজ, মিম বার বার ঢুক গিলছে। আজি এমন একটা পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হল। নিজের রাগ আর সামলাতে না পেরে ট্রে টেবিলটি এক আছাড় দিয়ে ভেঙে ফেলল।
~ রাত ৯ টা বাজতে চলল আমার বউপাখি এখনো বাসায় ফিরে নি কেন। কলেজে দুপুরেই ক্লাস শেষ হয়ে গেছে কোথায় ও?
~ ইভান বাবা একটু ঠান্ডা হ। চলে আসবে তো। আমি আনতে পাঠিয়েছি ওকে
~ মম আমি তোমার ভরসায় ওকে রেখে গেছি। বার বার বলেছি ওর দিকে খেয়াল রেখ। সবার নজর কাড়ে ও বুঝনা কেন?
~ আচ্ছা বাবা একটু বস। আমি দেখি কতদুর
কলিং বেল এর শব্দ শুনে মিম দরজা খুলে দিতেই জোহান লাবিবাকে নিয়ে ভিতরে ঢুকে। ওদের দেখে সবাই হতবাক। লাবিবা অস্ফষ্ট সুরে ঢুলে ঢুলে বির বির করে কি জানি বলছে আর মাঝে মাঝে জোরে চিল্লানি দিচ্ছে। ওকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে মাতাল হয়ে মাতলামি করছে। আর জোহান দু বাহু চেপে সামলানোর চেষ্টা করছে। এ দৃশ্য তানভীর এর বুকে চোখে সর্ব শরীরে অদৃশ্য আঘাত করতে থাকে।
লাবিবার দিকে এগিয়ে সযত্নে জোহানের থেকে নিয়ে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নেয়। বহুদিনের চক্ষু ক্ষুদা মিটাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। তৃষ্ণার্ত বুকটা যেন প্রাণ ফিরে পায়। তার বউপাখিটা আরো সুন্দর হয়ে গেছে।
মাতাল বউয়ের নাকের ডগা লাল হয়ে আছে চোখ দুটো ঢুলু ঢুলু করে একবার পাপড়ি মেলছে আরেকবার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ঠোঁটের পাপড়ি দুটো লাল টকটকে হয়ে নাড়িয়ে নাড়িয়ে বির বির করে আওয়াজ করছে। কি বলছে শুনার জন্য ঠোটের কাছে নিজের কানটা ধরেতেই শুনতে পায়।
~ কেউ ভালোবাসে না আমায় কেউ ভালোবাসে না বরটাও একটু ভালবাসে না।
বার বার এই কথা উচ্চারিত হতে থাকে। আর প্রত্যেক টা বাক্য তানভীরের বুকে গিয়ে বিধতে থাকে। চিৎকার করে বলতে ইচ্ছা করে এইতো বউপাখি আমি ভালোবাসি প্রচন্ড রকমের ভালোবাসি।
এদিকে সোহানা রীতিমত জোহানকে প্রশ্নের উপর প্রশ্ন করে অস্থির করে তুলেছে। লাবিবাকে আনতে বলেছিলাম দুপুরে। এতোক্ষণ কোথায় ছিলে?
কই কই ঘুরলে? আমার মেয়ে নেশা করল কিভাবে? ওকে ওয়াইন দিলে কেন? কতক্ষণ থেকে মাতলামো করছে? আমার ফোন ধর না কেন? জোহানের অবস্থাতো এখন ছেড়ে দে মা কাইন্দা বাচি। তবুও কষ্ট করে উত্তর দিল। সোহানা রাগে ফুসতে লাগলো। একটা মেয়েকে কন্টোল করতে পারে না যেই বলল সেই ওয়াইন খাওয়াল।?
তানভীর এতোক্ষন দাড়িয়ে দাড়িয়ে এইসব শুনছিল আর বউকে দেখছিল।
মিমকে বলে টক জাতীয় কিছু নিয়ে আসতে। মিম তেতুল ঘোলা আর লেবুর শরবত নিয়ে আসে। সোফায় লাবিবাকে বসিয়ে দেয় তানভীর। তার পর চামচ দিয়ে তেতুলের রস মুখ উঁচু করে খায়িয়ে দিতে থাকে। লাবিবা বার বার নাক মুখ ছিটকে চলে যেতে চাইছে কিন্তু তানভীর জোর করে পুরো রস খাইয়ে দেয়। লাবিবার বার বার উটকি আসতে থাকে। এক পর্যায়ে বমি করতে থাকে একটু একটু করে।
বমি করে দুর্বল হয়ে পড়ে সোফায় গা এলিয়ে দেয়। তানভীর লেবুর শরবত টা খাইয়ে দেয়। নিজের দিকে তাকিয়ে দেখে পুরো শার্ট বমি লেগে আছে। শার্ট খুলে ফেলে দেয়। জোহান লাবিবার কি অবস্থা দেখার জন্য সোফার কাছে এসে দাড়ায়। জ্ঞান এ আছে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস নিয়ে তানভীর কে জিজ্ঞাসা করে
~ ভাইয়া কখন এলে? দুপুরে তো তোমায় দেখলাম না।
তানভীরের এইবার আর সহ্য হয়না। অগ্নি দৃষ্টিতে জোহানের দিকে তাকায়। সোহানা এই অগ্নি দৃষ্টির মানে বুঝতে পেরে জোহান কে বলে
~ জোহান তুমি বাবা এবার আসো কেমন?
~ আরে আন্টি ভাইয়া আসছে কথা বলি কিছুক্ষণ তারপর না হয় যাই। আর এমনিতেই লাবিবার শরীর ভালো নেই
এইকথাটা তানভীর হজম করতে পারে না। বসা থেকে দাঁড়িয়ে এগোতে থাকে জোহানের দিকে। সরোয়াজ তারাতারি এসে পেছন থেকে আটকে ধরে। আর সোহানা জোহানের হাত ধরে টেনেই একপ্রকার বাইরে বের করে দেয়।
কিছুক্ষনের মধ্যেই ড্রয়িং রুমে ভুমিকম্প হয়ে যায়। তানভীর রাগ কমানোর জন্য একটার পর একটা জিনিস ভাঙছে আর গলা ফাটিয়ে চেঁচাচ্ছে।
“আমি নেই বলে এখানে যা ইচ্ছা তাই হবে ভেবেছে সবাই কে এই জোহান? যাকে আমার বউকে বাড়ি নিয়ে আসার অনুমতি দেওয়া হয়? কি হয় ও আমার? আমি মানি না যে সে আমার কোন আপনজন। আমার বউ কে আনার জন্য ড্রাইভার আছে কার আছে। যদি কাউকে লাগতো আমায় বলতে আমি বডিগার্ড রেখে দিতাম।
তবুও কেন ওকে অনুমতি দেওয়া হয়? তুমার ভরসায় আমি রেখে গিয়েছিলাম মম। ওই জোহানের বাচ্চার কি করে সাহস হয় আমার বউকে টাচ করার? আজ পর্যন্ত এ বাড়ির কেউ ড্রাগস ছুয়েও দেখেনি আর ঐ ছেলে আমার বউকে নেশা করায় কোন সাহসে? হাউ ডেয়ার হিস? গবেট বয় কথাকার”।
“ভাইয়া শান্ত হ প্লিজ। আসলে এমন হবে কে জানে বল? দুপুরে হুটহাট এসে বলছে যে ভাবিকে কলেজে আনতে যাবে। মম না করতে পারে নি। বুঝার ট্রাই কর। আর ভাবি নাকি জোর করে মদ খেয়েছে। এতে জোহানের কোন দোষ নেই।”
“কে কি বললো তাই বিশ্বাস করতে হবে নাকি? কত দিন ধরে মদ খাওয়ানো হয় ওকে?”
“ভাইয়া আজি এমন হয়েছে। আই সুয়ার আজি এমন হয়েছে ফার্স্ট টাইম।”
প্রায় সাত মাস পর উনি দেশে এসেছেন। মাথাটা চিন চিন করে ব্যথা করছে। চোখ গুলো ঝাপসা হয়ে আছে। তবুও এই ঝাপসা চোখে উনাকে ঠিক ই দেখছি আমি। কত দিনের তৃষ্ণার্ত আমি বধু স্বামী কে দেখার জন্য। মুগ্ধ হয়ে তাকে দেখছি। দু চোখ ভরে দেখছি। চোখ ভরে গেলে মন ভরে দেখবো। মন ভরে গেলে পেট ভরে দেখবো। পেট ভরে গেলে ভূবন ভরে দেখবো। এই দেখার আদি আছে অন্ত নেই।
আমি এক আলাদা তানভীর কে দেখছি। অবাক হয়ে দেখছি। কত পাল্টে গেছেন উনি কত পরিবর্তন। আমার জন্য সুনামি বইয়ে দিল। আমি মদ খেয়েছি বলে এতো রাগ উনার? আমাকে অন্যকেউ ছুঁয়েছে বলে এমন অগ্নি শিখা জলছে তার ভিতরে যে সামনে যা পাচ্ছে তাই গুড়িয়ে দিচ্ছে? যে ব্যক্তি আমাকে অপমান করলেও মুখ থেকে শব্দ বের করতো না সেই ব্যক্তি আজ আমাকে ছুয়েছে বলে এত হু ংকার দিচ্ছে? ভাবা যায় এগুলা?
উনাকে দেখে সবাই ভয়ে থরথর করে কাঁপছিল। অথচ আমি যে তাকে সবসময় ভয় করি আজ আমি ভয় পাচ্ছি না। একদম ভয় করছে না আমার। আমার তো ইচ্ছা করছিল উনাকে গিয়ে ভাংচুর থেকে আটকাতে। কিন্ত আজ শরীরে এনার্জি নেই বলে উঠতেও পারলাম না।
উনি আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। দুজনের চোখ দুজনার চোখে। উঠে এসে এক ঝটকায় আমাকে ঘারে তুলে উপরের দিকে হাঁটা দিলেন। পেছন পেছন মম আর আপু আসলো। রুমে নিয়ে গিয়ে সোজা বাথরুমে চলে গেল। বাথটবে আমায় শুইয়ে দিয়ে মম কে বলল ফ্রেস করিয়ে দিতে। উনি বাইরে চলে গেল। দরজা টা লাগিয়ে আপু এসে আমায় জড়িয়ে ধরে ডাকতে লাগলো। মম ও ডাকলো। আমি রেসপন্স করতেই মম আমার মুখে অজস্র চুমো একে দিল। মিম আপু জিজ্ঞাসা করল জোহান কিছু করেছে কিনা?
বাড়ির বড় দের এই একটা ভয় সবসময় থাকে। ওদের ও আছে। তাই আমি ওদের আশ্বস্ত করলাম যে কিছু হয়নি। এবার মম ধমকানো শুরু করেছে
~ মম আমি অসুস্থ মানুষ আমাকেই ধমকাচ্ছ এভাবে
~ তোকে তো মেরে পিঠের ছাল তুলে দেওয়া উচিৎ। কে বলেছে মদ খেতে? কেন খেয়েছিস বল?
~ জোহান ভাইয়াইতো বলল মদ খেলে নাকি সব ভুলে থাকা যায়। সব যন্ত্রণা কমে যায়। আমি তো যাস্ট আমার যন্ত্রণা কে কমাতে চেয়েছিলাম।
মম আর কিছু বলল না। দুজনে আমাকে ফ্রেস করিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিল। মম আমার মাথায় একটা চুমু দিয়ে চলে গেল।
মিম আপু এসে আমার পাশে বসল। আমার হাত ধরে বলল
~ মদ খেলে কখনো কষ্ট কমে না। এইটা হারাম। তোমার মতো একটা ধার্মিক মেয়ে কি করে এই ভুলটা করলে বলতো? আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর। তোমার কাজে আজ মম ভাইয়া কতটা কষ্ট পেয়েছে যানো!? নেহাত জোহান ছেলেটা ভালো তাই কোন কিছু হয়নি। তুমি জানো তুমি কতটা সুন্দর? কত জনের চোখে থাকো তুমি? তোমার জন্য ভাইয়ার কত চিন্তা?
প্রত্যেক দিন মম কে বলতো তোমায় যেন দেখে রাখে। তুমি যখন বাইরে যাও তোমার, সাথে ২ জন গার্ড থাকে। এইটা সরোয়াজ যানে শুধু। ওর থেকে আমি যেনেছি। সব খবর ভাইয়ার কানে যায়। তাইতো ভাইয়া এতো রিয়েক্ট করলো।
আপু চাদরটা আমার গায়ে জড়িয়ে চলে গেল। একটু যেয়ে আবার ফিরে এসে দাঁড়ালো। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মেকি স্মাইল দিচ্ছে। আমি ইশারায় বললাম কিছু বলবে কিনা?
আপু এসে আমার কানে মুখ নিয়ে বলল
~ সুন্দরী আজ তাহলে সব যন্ত্রনার অবসান ঘটছে তাই না? ভাইয়ার হাতে মলম লাগালে সব যন্ত্রণা ফুস করে উরে যাবে। আর মদের দিকে তাকাতে হবে না। ভাইয়ার রাগটাও কমিয়ে দিও কিন্তু।
আপুর কথা বুঝেও যেন কিছুই বুঝলাম না। হাবার মতো তাকিয়ে থাকলাম। আপু আমার তাকানো দেখে আবার কানের কাছে এসে বলল
~হ্যাপি বাসর
আমি লজ্জায় চাদর দিকে মুখ ঢেকে নিলাম। আর আপু হাসতে হাসতে বেরিয়ে গেল।
কিসের বাসর? ঐ পচা লোকটার সাথে? কাভি নেহি। আমার তো ঘুমাবো। good night
সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি আমি আর জীবিত নেই। আমার পেটে কিছু নেই। আগেরদিন সকালে খেয়েছিলাম। রাতে সব বমি করে দিয়েছি। এখন আমি নড়তেও পারছি না।
কি করব? কেউ তো নেই পাশে। দিলাম কান্না জুড়ে
~ আমি ভাত খাব আমার পেটে কিছু নেই গো আমি মরে যাচ্ছি গো মরে গেলে আর নাতির ঘরের পুতির মুখ দেখতে পারবোনা গো ক্ষুদায় মরে যাচ্ছি গো
আমার মুখের ভিতর এক লোকমা ভাত ডুকে গেল। আমি খেতে শুরু করলাম। একের পর এক লোকমা খেলাম। পেটটা ভরে গেল। বললাম
~ মম পানি দাও আর খাব না।
~ হুয়াট? আমি কোন এঙ্গেলে মমের মতো দেখতে?
উনার কথায় ফিরে তাকায়। তার মানে উনি খাওয়ালেন আমায়? আমি তো মম ভেবে খাইলাম। এই লোকটার হাতে তো আমি খাবনা। জঘন্য খারাপ লোক ইনি। দুই নৌকায় পা দিয়ে চলা লোক কখনোই ভাল হয় না। ইনার কাছে থাকবোনা আমি।
এর থেকে জোহান অনেক ভালো। একটা প্রেম করে ছেকা খাইছে। ঘরে বউ রেখে তো আর প্রেমিকার সাথে সংসার করে না। হুহহহ। আমার জন্য কাল কতগুলো বকা শুনলো ভাইটা।
সকাল সকাল ই জোহান তার বাবা মা কে নিয়ে খান বাড়িতে হাজির। কাল যে ঘটনা ঘটেছে তার পর এদের সাথে দুরত্ব বেড়ে যেতে পারে। সেই ভয়েই সম্পর্ক দৃঢ় করতে আসা। সুমি তো সেই খুশি।
লাবিবাকে সে ঐদিন দেখেই পছন্দ করে ফেলেছে। এমন মেয়ে ছেলের বউ হিসেবে পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। জোহানের বাবাও লাবিবার বৃত্তান্ত শুনে খুশিতে বাক বাকুম। সুমির দীর্ঘ বিশ্বাস সোহানা তাকে না করতে পারবে না। আর বান্ধবী এখন বেইনি হবে ভেবেই আত্মহারা। জোহানের কথা নই নায়ি বললাম। মুখ থেকে হাসিই সরছে না।
সোহানাঃ ভাইজান আপনারা এসেছেন আমি খুবই খুশি। অনেক ভালো লাগছে।
সুমিঃ আমি তো জোর করে নিয়ে এলাম। গুরুত্বপূর্ণ আলাপ আছে তোর সাথে। জোহানের বাবা না হলে চলে নাকি?
সোহানাঃ কি কথা?
জোহানের বাবাঃ বলব তো। বাড়ির সবাই এক সাথে হই তার পর বলবো।
সোহানাঃ ও আচ্ছা।
জোহানঃ আন্টি আমি আসলে কালকের জন্য সরি। আমি ভাবতে পারি নি যে
সোহানাঃ আরে বাবা বাদ দাও ওসব। কিছুই না ওগুলো। আমি ক্ষমা করে দিয়েছি।
সুমিঃ তবুও জোহান তোর মনে হয় লাবিবাকে সরি বলা উচিৎ। যা সরি বলে নিয়ে আয় ওকে এখানে। (চোখ মেরে)।
জোহানঃ হা মম আনছি। কোথায় ও মিম ভাবি?
মিমঃ ছাদে।
জোহানঃ থ্যাংকস।
সোহানা আটকাতে যেয়েও পারল না।
পর্ব ১৭
পুলে উনি সুইমিং করছেন। আর আমি দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখছি। এখন নাকি জুস খাবে। বড় লোক দের যে কত কি লাগে। একটা সার্ভেন্ট দিয়ে পাঠালে কি হত? মম টাও না আমার হাতে জুস ধরিয়ে দিল। নেহাত সকালে খাইয়ে দিয়েছিল তাই আনলাম। নইত আমি লাবিবা এই ব্যটার ধারে কাছেও আসতাম না। আচ্ছা এই কথাটার সত্যতা কোন জ্যোতিষী গুনে বের করতে পারবে? আমার থেকে কজন আছে যে ভাল গুনতে পারে।
“জুসটা তুমিই খেয়ে নাও আমার আর খেতে হবে না। যেভাবে তাকিয়ে আছ আমার আবার পেট খারাপ হয়ে যাবে।”
এই তাইতো আমি তো এতক্ষণ ধরে জুসের কালার দেখেই যাচ্ছি। ওনার যদি পেট খারাপ হয়ে যায় না থাক বাবা আমিই খেয়ে নেই এক চুমুকে জুসটা সাভার করে দিলাম। আহহহ খুব টেস।
সামনে তাকিয়ে দেখি উনি পুলের কিনারায় এসে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম
~ কি হয়েছে?
~ তোমার বুঝি খুব তেষ্টা পেয়েছিল?
~
~ সাতার কাটতে পারো?
~ না।
~ আস আজ তোমায় নিয়ে সাতার কাটবো।
~ লাগবেনা। আপনার সাথে আমি কেন সাতার কাটতে যাব? পচা লোক।
~ কাটবে আমার কাছে আস।
~ আপনার কাছে একটুও যাব না আপনার শরীর মিশু মিশু গন্ধ করতেছে।
~ কিহহহহ
~ ছিলেন তো ঐ ডংগীটার সাথেই শরীরে আআআ
কথা না বলতে দিয়ে আমার হাত ধরে হেচকা টানে পানিতে ফেলে দিল। একটানে বুকের সাথে মিশিয়ে নিল। আমার এখনো শরীর কাপছে। এই ভাবে কেউ টান দেয় নাকি। তার মধ্য আবার উনার ভেজা উম্নুক্ত বুকের ভিতর মিশে আছি। উনার মুখ টা আমার কানের কাছে নিয়ে ছোট্ট একটা কামড় দিলেন। আমি একটুও ব্যথা পেলাম না বরং আমার তো মরে যাই যাই অবস্থা।
“বউপাখি স্মেল নাও। দেখ শরীরে শুধু তানভীর তানভীর গন্ধ পাবে অন্য কারো না। এটা তোমার স্বামীর গন্ধ আর আমার যতটুকু জুড়ে তুমি ছুঁয়ে আছ সেখানে স্মেল নিয়ে দেখ (আমি~তুমি) গন্ধ।”
উনি সোজাভাবে চিৎ হয়ে আমাকে তার উপর নিয়ে ঐভাবেই সাতার কাটতে লাগলেন। আর আমি কিছু না বলে নিজের ভর টুকু তার উপর দিয়ে শক্ত করে উনাকে ধরে রাখলাম।
জোহান লাবিবাকে খুঁজতে এসে দেখে তানভীর লাবিবাকে নিয়ে সাতার কাটছে আর লাবিবা তানভীর কে গলা দিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে আছে। মাথা ঘুরে যায় জোহানের। এ কি দেখছে সে? কিভাবে সম্ভব এটা? লাবিবা কেন ভাইয়ার সাথে এভাবে মিশে থাকবে? লাবিবা তো এখন আর ছোট নেই বড় হয়েছে ওর বুঝতে হবে এটা। ছি ছি লাবিবা তো বুদ্ধিমান মেয়ে। তাহলে এমন কেন করবে? যতই ভাইয়ের আদরের হোক তাই বলে এভাবে থাকবে? তাও পুলে? ওদের কি সেন্স নেই কোন? এ আমি কাকে বিয়ে করতে এলাম?
জোহান বসে বসে এসব ভাবতে থাকে। এদিকে লাবিবাও নিচে চলে এসেছে। সোহানা লাবিবাকে পাঠিয়েছে নাস্তা নিয়ে আসার জন্য। জোহানের বাবা তো মেয়ে দেখে সেই খুশি। তানভীর হাতে ফাইল নিয়ে নিচে নামতে নামতে এক হাতা ফ্লোল্ড করতে করতে মিমকে বলে
~ মিম আমার বউ কোথায় রে?
~ ওইতো নাস্তা নিয়ে আসছে গেস্ট দের জন্য।
একথা শুনে তো অবাকের চরম পর্যায়ে পৌছে যায় তিনজনে। তানভীর একবার ওদের দিকে তাকিয়ে কিচেনে চলে যায়। ওদের দেখে একদমি ভালো লাগে না তানভীরের।
কিচেনে এসেই টুপ করে একটা কিসি দিয়ে দেয় আমার গালে। তাকিয়ে দেখি তানভীর দাঁড়িয়ে আছে আর মিটি মিটি হাসছে। মুখে বিরক্তি এনে
~ আপনার নোংরা মুখ দিয়ে আমাকে ছোবেন না।
~ নোংরা মানে?
~ নোংরা মানে ইউজ করা জিনিস। আর আমার কাছে এসে একদমি আমাকে দুর্বল করার চেষ্টা করবেন না। সকালের জন্য ক্ষমা করে দিলাম
~ বউপাখি শোন
~ আমার নাম লাবিবা তানহা। ওকে?
~ আচ্ছা ওকে বাট এরকম করো না।
~ আপনি যান তো আমার সামনে থেকে বলেই নাস্তা হাতে চলে এলাম। গেস্টদের সামনে প্লেট রাখতেই দেখলাম জোহান আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আহারে বেচারা আমার জন্য কাল কত নাজেহাল হল আর উনি ভুল বোঝলো। উনি আমার পাশে এসে দাড়াতেই মম বলল
~ এইযে দেখেন ভাইজান। আমার বড় ছেলে তানভীর ইভান। আর তার বউ লাবিবা তানহা।
ভদ্রলোক শুধু মাথা নাড়ালেন। আমি ওখানে না থেকে উপড়ে চলে এলাম।
জোহানের বাবাঃ ভাবি আমার একটু কাজ আছে। উঠতে হবে এখনি।
মমঃ একি এখনি চলে যাবেন? মুখে কিছুইতো দিলেন না। আর কি জানি বলতে এসেছিলেন।
সুমিঃ আজ না রে। অন্যদিন বলবোনি। আজ আসি। জোহান আয় চল।
মমঃ তুইও চলে যাবি?
জোহানঃ হা আন্টি। সবাই যাব। আসি তাহলে।
মমঃ আরে।
বাড়ির বাইরে এসে জোহানের বাবা জোহানকে আর সুমিকে উল্টে পাল্টে ধমকাতে থাকে।
“বেদ্দপ ছেলে তানভীরের বউকে বিয়ে করতে চাস। তানভীর জানলে তোর হাড্ডি গুড়া গুড়া করে দুধ বানিয়ে দিবে।
তখন তোর মা ঐ দুধ গরম করে খাবে। তুমিও কেমন বলদ মার্কা মহিলা সারাজীবন বলদামি করেই গেলে। ছেলের সাথে সাথে তুমিও নাচতে নাচতে অন্যের বউকে নিজের বাড়ি নিয়ে যাওয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছিলে। একটুর জন্য অপমানিত হতে হতে বেচে গেলাম। বিয়ের কথা আগেই বললে মান সম্মান আর কিছুই অবশিষ্ট থাকতো না।”
“পাপাআআ আমি কি জানতাম নাকি? আমি তো ভেবেছিলাম আন্টির মেয়ে আমার কি দোষ?”
“চুপ বেটা বলদার ঘরের বলদা তোর আন্টি কেমন মানুষ জানিস না? নিজের আর পরের মেয়ের মধ্যে কোন পার্থক্য রাখবেনা ভাল করেই জানিস। থাক তোরা গেলাম আমি।”
সুমিঃ এই জোহানের বাবা দাড়াও। পিছে পিছে চলে গেলেন।
জোহানঃ ভালবাসার কুত্তা ভাগ্য মোর। ভালোবাসার গুষ্টি কিলাই। সালা জীবনটাই বেদনার।
জোহানের বাবা মা তাদের গাড়ি দিয়ে চলে গেছে। আর জোহান নিজের গাড়ির দিকে এগুতে ঠাস করে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যায়। পড়ার পর তার চক্ষু চড়কগাছ। গ্রাউন্ডে না পড়ে একটা মেয়ের উপর পড়ে আছে
দোলা আর দোলার খালামনি তানভীরের আসার খবর পেয়ে বেড়াতে এসেছে। আর আসতেই গেইট দিয়ে ঢুকেই জোহানের সাথে ধাক্কা লেগে গ্রাউন্ডে পড়ে যায় দোলা। আর জোহান সোজা দোলার উপর পড়ে যায়। দুজনের চোখ চোখ আটকে যায়।
অনেক ক্ষন এই দৃষ্টি অক্ষত থাকে। দুজনের মনের ভিতর ব্যাকগ্রাউন্ডে মিউজিক বাজতে থাকে~
“তুজে দেখা তয়ে জানাসানাম,
পেয়ার হতা হে দিবানা সানাম
, তুজে দেখা তয়ে জানাসা নামম। (2)
আব এহাসে কাহা যায়ে হামম
তেরি বাহমে মার যায়ে হামম।
তুজে দেখা তয়ে জানাসা নাম।”
উপরে বেলকনি থেকে এসব দেখে তো আমার মাথা ঘুরতেছে
খালামনি না পারতে চিৎকার করে দুজনের ধ্যান ভাঙায়। দোলাকে টেনে তুলে বাসায় ঢুকে পড়ে। আর ওদিকে জোহান হা করে ওদের যাওয়ার দিক তাকিয়েই থাকে।
দোলার জন্য উনি অনেককিছু এনেছেন। ওগুলো দোলা পেয়ে খুব খুশি। দোলাকে নিজের সাথে ঘুমোতে বললাম। কিন্তু উনি এসে দোলাকে বের করে দিলেন। আমি তো তাহলে এই রুমে থাকবোনা। দোলার পেছন পেছন যেতে নিলেই আমার হাত ধরে ফেলে। আমি ছাড়াবার জন্য মুচরা মুচরি করছি। কিন্তু উনি কিছুতেই ছাড়ছেন না।
~ কোথায় যাচ্ছ?
~ দোলার সাথে ঘুমাবো।
~ তাহলে আমার সাথে কে ঘুমোবে?
~ আপনার প্রেমিকা মিশু ডংগীকে নিয়ে ঘুমান। কান্না আটকাতে পারলাম না আর।
~ ওর সাথে কেন ঘুমাবো? ওকি আমার বউ লাগে?
~ এতদিন তো ওর সাথেই ছিলেন। কেন আসছেন এখানে? আপনাকে ছেড়ে দিয়েছে নাকি আপনার প্রেমিকা?
~ উহু। আমি ছেড়ে দিছি। তোমার জন্য।
~ আমিকি বলেছি ছাড়তে? আমার হাত ছাড়ুন।
~ প্লিজ বউপাখি ফরগিভ মি। আমি জানি তোমার কথা না শুনে আমি অন্যায় করছি।
ধাক্কা দিয়ে উনাকে সরিয়ে দিয়ে খাটে এসে বসে পরলাম।
~ কেন করেন আমার সাথে এমন? ভালোই যদি না বাসতে পারেন কেন বিয়ে করেছিলেন? আমি তো একটা মানুষ। মন আছে আমারো। ঐ মেয়ের সাথে সাত মাস কাটিয়ে এসে এখন আমাকে চাইছেন কেন? চলেই তো গিয়েছিলেন। ফিরে আসতে কে বলেছিল?
তানভীর আমার পায়ের কাছে হাটু মোড়া দিয়ে বসে আমার হাত দুটো নিজের হাতে মুঠো দিয়ে ধরল। আমি ছাড়াতে পারলাম না। খুব কান্না করছি আমি।
“বউপাখি তাকাও আমার দিকে। তুমি কাঁদলে আমার বুক চিরে যন্ত্রনা হয় যে। তোমার জন্য ফিরে এসেছি আমি। #পাজরের টানে ফিরে এসেছি আমি। তুমি যে আমার অংশ। তোমাকে ছেড়ে দুরে থাকতে আর পারছি না যে আমি।
খুব ভালোবাসি আমার এই বউপাখি টাকে। খুব ভালোবাসি। আমার এই মন প্রাণ শরীর, অর্থ সম্পদ সবকিছু তোমার জন্য। অন্যকেউ ঘায়েল করতে পারেনি। সবটা জুড়ে শুধু তুমি। ছুয়ে দেখ আমায় আমার সবটা জুড়ে তুমি রয়েছ অন্যকেউ স্থান পায়নি। বিশ্বাস করো আমায়। আর একটুও কষ্ট দিবো না।
আই প্রমিজ সারা জীবন এই বুকে আগলে রাখবো এবার থেকে তুমায় ফেলে কোথাও যাব না। একদিনের জন্য গেলেও তুমায় সাথে নিব। আমার সাথে বিজনেসে এড হবে। আমরা দুজনে একসাথে বিজনেস করবো। আমার থেকে কখনো আলাদা হতে দিব না। প্লিজ বউ পাখি আমার উপর তাও অভিমান করে থেকনা। শেষ হয়ে যাব আমি”।
আমি নিজেকে ধরে রাখতে পারছি না। এতদিনের কষ্ট গুলো সব কান্না হয়ে বেরোতে থাকে। আমার সামনে বসে উনিও চোখের জল ফেলছেন। হালকা ঝুকে উনাকে জড়িয়ে নিতেই এক টানে আমায় বুকে ত
চেপে ধরলেন। উনি আমার কপালে চুমু দিয়ে বুকে জড়িয়ে কান্না থামানোর চেষ্টা করছেন। আমি ওনার বুকে কাঁদতে কাঁদতে এক সময় চুপ হয়ে গেলাম। উনার এই বুকে অনেক দিন পর আজ শান্তির ঘুম হবে আমার।
পর্ব ১৮
উনার বুকে একের পর এক চিমটি কাটছি। লোমস বুকটা তে লাল লাল আভা স্পষ্ট হয়ে উঠছে। তবুও থামছি না। মাঝে মাঝে লোম টেনেই ছিড়ে দিচ্ছি। কিন্তু উনি কিছু বলছে না কেন? এত ঘুম মানুষ কিভাবে ঘুমায়?
উনার দিকে মুখ তুলতেই দেখি আমার দিকে তাকিয়ে মিটি মিটি হাসছে। উফফ কি যে দারুন হাসিটা একদম কলিজায় গিয়ে লাগলো আই এম ক্রাসিত। সেটা বড় কথা নয় কথা হচ্ছে উনি জেগে আছেন আমি যে এত অত্যাচার করছি তবুও উনি কোন রিয়েক্ট করছেন না কেন?
অবশ্য এর থেকে শতগুন বেশি অত্যাচার আমার উপর করেছেন। বেটা গন্ডার একটা। এমা ছি ছিআমি কেন গন্ডারের বউ হতে যাব? আমি তো। এবার উনি মুখ খুললেন। আমার ঘারে মুখ গুঁজে দিয়ে বললেন
~ রিভেঞ্জ নিচ্ছ? অভিমান এখনো কমে নি? আর কত চিমটি কাটবে? একটু পর তো হাত ব্যাথা করবে।
বাবাগো বাবা ভাবা যায় এগুলা? আমি কয়েকবার চিমটি কাটবো তাই আমার হাত ব্যাথা হয়ে যাবে আর উনার বুকটা ফেটে রক্ত বের হবে হবে ভাব তাতে কিছুই যায় আসে না এত ভালুপাসা আমি রাখব কই? কেউ কি হেল্প করবে প্লিজ? যাই হোক বদহজম করতে চাই না। এমনিতেই আমার শরীর দুর্বল। এক ধাক্কায় সরিয়ে দিয়ে উঠে বাথরুমে দিলাম দৌড়।
ব্রেকফাস্ট রেড়ি করে টেবিলে দিয়েছে। উনাকে ডাকতে যাব তার আগেই দেখি ফরমাল ড্রেসে একদম রেড়ি হয়ে টেবিলে হাজির। আমার দিকে তাকিয়ে বলল
~ কুইকলি ব্রেকফাস্ট করে রেড়ি হও অফিসে যাব।
~ আমি কেন?
~ আমার সাথে কাজ করবে।
~ আমার তো পড়াশূনাই শেষ হয় না নি।
~ কোন ইয়ার?
~ 2nd year
~ you are too late আমি বিজনেসে জয়েন করেছি যখন HSC দিয়েছি।
~ আমি কি আপনার মত নাকি?
~ আমার বউ আমার মতই হতে হবে।
উনার সাথে অফিসে ঢুকছি উনি তো সালামের উত্তর দিতে দিতে হাপিয়ে যাচ্ছেন। আমার তো উনার হয়ে উত্তর দিয়ে হেল্প করতে ইচ্ছে করছে। অনেক দিন পর অফিসে আসার ফলে এই অবস্থা হয়ত। সবাই উনাকে রেখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি যেন কোন এলিয়েন। উনি সবাইকে ডাকলেন। সবাই উপস্থিত হতেই উনি বলে উঠলেন
“Hey, all my stuff আসসালামু আলায়কুম। অনেক দিন পর আপনাদের সাথে দেখা। আজ আমি আপনাদের সাথে একজনকে ইন্ট্রোডিউস করানোর জন্য ডেকেছি। She is Mrs Labiba tanveer khan Khan group of industry ‘s malkin and My life line আজ থেকে এই অফিসে জয়েন করছে। এবার থেকে আপনাদের সাথে কাজ করবে।”
অনেকেই আমার সাথে পরিচিত হতে কথা বলতে এলো। সবাই চলে যাওয়ার পর উনি আমাকে নিয়ে তার কেবিনে গেলেন। কেবিনে ২ টা ডেস্ক দেখে তো আমি অবাক। এক কেবিনে দুজনের বসার ব্যবস্থা করা।
আমাকে নিয়ে চেয়ার টেনে বসিয়ে দিয়ে বললেন
~ এইটা তোমার ডেস্ক। আমার কাছাকাছি রাখার জন্য এই ব্যবস্থা। অন্য কোথাও দিলে তো আমার চোখের আড়াল হয়ে যাবে। দেখতে পারব না। তাই এই কেবিনেই ব্যবস্থা করলাম।
~ তা তো বুঝলাম। কিন্তু আমি যে কিছুই বুঝি না। কিভাবে কাজ করবো আমি?
~ করতে বলিনিতো দেখতে বলেছি। দেখবে আর শিখবে। শেখার পর করবে। বুঝলে?
~ হামম।
বাসায় এসে দেখি জোহান এসেছে। আমাকে দেখেই দোলা আমার সাথে রুমে এল।
~ আপুই
~ হামম
~ একটা কথা বলার ছিল।
~ বল
~ না মানে
~ নির্ভয়ে বল।
~ হামম। আমি না একজনকে পছন্দ করে ফেলেছি।
~ সেটা তোর ভাব সাব দেখেই বুঝেছি। ছেলেটা কে?
~ লাল শার্ট পড়া ছেলেটি।
~ জোহান ভাইয়া? আর ইউ সিরিয়াস? এক ধাক্কায় পছন্দ করে নিলি? তুই জানিস তোর কত বড় হবে?
~ ভাইয়াও তো তোমার বড়। শুধু কি আমি পছন্দ করেছি নাকি উনিও তো আমাকে পছন্দ করেছেন।
~ বলেছে তোকে?
~ হা। তুমি যাওয়ার পর পর ই এসেছেন। তার পর এসেই আমাকে আই লাভ ইউ বলেছেন
~ আমি
অনেক দিন কলেজ ছুটিতে থাকার পর আজ কলেজ যাচ্ছি। ফিলিংস ই অন্যরকম। শরীরটা খারাপ যাচ্ছে কয়েকদিন ধরে তবুও কলেজে এসেছি। ১ম ক্লাস করার সময় কেমন জানি লাগছে বমি বমি পাচ্ছে। স্যার কে বলে বাথরুমে এলাম। বাট বমি হলো না। বাথরুম থেকে ক্লাসের দিকে যাচ্ছি। মাথাটা কেমন করছে আর কিছু খেয়াল নেই।
চোখ খুলে দেখি আমি হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছি। সেবা আর পপি আমার হাত ধরে আছে। আপেল, আবিদ, রাকিব দাড়িয়ে আছে। আমি এখানে কিভাবে এলাম জিজ্ঞাসা করতেই পপি বলে উঠে
~
“তুই তো জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলি। আমরা তো ভয় পেয়ে যাই। তারপর তোর মম কে ফোন করি। তোর মম তোর ভাইকে পাঠিয়ে দেয়। উনিই তোকে হসপিটালে এনেছে। আমরাও তোকে ছাড়িনি। সাথে সাথে চলে এসেছি। ভাইয়া ডক্টরের সাথে কথা বলতে গিয়েছে।”
~ কোন ভাইয়া?
~ তানভীর নাম বলল তো।
আমার এই মুহুর্তে খুবই কান্না পাচ্ছে। কোন এঙ্গেলে উনাকে আমার ভাই মনে হয়? হায় আল্লাহ সবাই শুধু উনাকে আমার ভাই বলে। আমার ভাইয়া জামাই টা আসে না কেন এখনো।
উনি এসেই আমাকে তুলে বসিয়ে জড়িয়ে ধরে আমার ঠোঁটে নিজের ঠোট পুরে দিলেন। এত তাড়াতাড়ি ঘটনা টা ঘটল যা আমার মাথার উপর দিয়ে গেলো। আমি বার বার ছাড়ানোর চেষ্টা করছি। রুম ভর্তি মানুষের সামনে এমন করবে কে জানে? লজ্জায় আমি শেষ। আমাকে ছেড়ে উনি দুহাতে আমার মুখ তুলে ধরলেন। তার চোখে জল চিক চিক করছে।
~ বউপাখি থ্যাংক ইউ। ভালোবাসি বউ পাখি। অনেক ভালবাসি। আমাকে এত সুখ দেওয়ার জন্য হলেও তোমায় ভালবাসি। আমার জীবনে আসার জন্য হলেও ভালবাসি। আমাকে বাবা হবার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য হলেও ভালবাসি। আমার বন্ধু দের উদ্দেশ্যে করে বলল এইযে শেলক ~শালিকারা চল আমার বাসায়। মামা খালা হওয়ার আনন্দে কত মিষ্টি খেতে পার তাই দেখব।
৪ বছর পর …
আজ আমার ছোট্ট বোনের বিয়ে। দোলা আর জোভানের এক হওয়ার দিন। ৪ বছর চুটিয়ে প্রেম করার পর আজ তারা সফল হতে যাচ্ছে। সবাই তাদের জন্য দোয়া করবেন। কিন্তু আমার টুইন পুচকে দুটো গেল কই?
~ এই শোন না
~ বলো
~ তোমার বেবি দুটো গেল কই?
~ জানিনাতো।
~ জানিনাতো বললেই হয় নাকি? চল দেখি কোথায় গেল
গিয়ে দেখি লাবিব দোলার কোলে আর তয়্যিইবা জোহানের কোলে। আমাদের দেখে দৌড়ে এসে বলতে লাগলো
~ মম তুমিও কি বিয়ে করেছ?
~ হা সোনা।
~ আমলা দেতলাম নাতো। মিতা কতা বলছো। চল তোমায় বউ সাতিয়ে দেই। তুন্তু বল(বর) তে হবে
তানভীরঃ তোমাদের পাপা হাজির তোমাদের মম কে বিয়ে করার জন্য। এই আবার চল বিয়ে করি। কবে যে বিয়ে করেছিলাম মনেই নেই
ও আমার আল্লাহ বলে কি? দুই বাচ্চার মা হওয়ার পর বিয়ে? কিন্তু অগত্যা জোরাজুরি তে আমার আবার বিয়ের পিড়িতে বসতে হল। বর কিন্তু আমার আগের টাই হুহু। লাইক বলিউড হিরো।
লেখা – লাবিবা তানহা লিজা
সমাপ্ত
(পাঠক আপনাদের ভালোলাগার উদ্দেশ্যেই প্রতিনিয়ত আমাদের লেখা। আপনাদের একটি শেয়ার আমাদের লেখার স্পৃহা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আমাদের এই পর্বের “পাজরের টানে – Gopon valobashar kotha bangla” গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম। ধন্যবাদ।)
আরো পড়ূন – পাজরের টানে (১ম খণ্ড) – Gopon valobashar kotha bangla