বিয়ের গল্প: আম্মু লাঞ্চের জন্য আমায় ডাকছে। ফোনের নিতম্বে চার্জার পিন ঢুকিয়ে খেতে আসলাম। ডাইনিং এ বসতে বসতে আম্মুকে বললাম, “আব্বুকে দেখছিনা কেন? খাবে কখন?”
আব্বাজানের কথা বলতেই আম্মু আচমকা তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলো। দাঁত কিড়মিড়িয়ে আমার উদ্দেশ্যে বললো “তোকে খেতে ডেকেছি সোজাসুজিভাবে খাবি। বেশি কথা বললে তোরও খাওয়াদাওয়া বন্ধ করে দিবো।”
বুঝতে পারলাম আজকে এই দম্পতি’র তুমুল ঝগড়া হয়েছে। এমতাবস্থায় বেশি ভুমিকা করা ঠিক হবেনা। চুপচাপ খেয়ে কেটে পরাটাই শ্রেয়।
আম্মুর কথা শুনে হঠাৎ করে আব্বু বিদ্যুৎ গতীতে খাবার ডাইনিংএ হাজির হলো।
রাগে ক্ষোভে মুখ অগ্নিশর্মা করে আমার উদ্দেশ্যে বললো “তোর আম্মা কি বললো রে? আমার খাওয়াদাওয়া সে বন্ধ করে দিছে? দেখি কার খাওয়া কে বন্ধ করে।” তড়িঘড়ি করে বসতে বসতে আব্বু নিজেই প্লেটে ভাত তরকারি নিতে থাকলো। আম্মু আব্বুর দিকে না তাকিয়ে আমার প্লেটে ভাত তরকারি সার্ভিসিং করছে।
খেতে খেতে হঠাৎ করে আব্বাজান চেঁচিয়ে উঠলো। টেবিলে মৃদু থাবা দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললো “এগুলা খাবার নাকি অন্যকিছু! তোর আম্মু কি রান্না করছে এসব? ভালোমতো লবণ হয়নি, ঝাল হয়নি। নাহ, আমি আর এসব খেতে পারবোনা। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তোর বিয়েটা সেরে ফেলতে হবে। তারপর বউমার হাতের আপডেট রান্না খাবো।”
আব্বুর কথা শুনে আমার বুকটা হালকাভাবে কেঁপে উঠলো। রাগের মাথায় আব্বু যা বলে তাই করে। মাথায় অতিরিক্ত রাগ থাকার কারণে আব্বু সংসারের অনেক ক্ষতি করেছে। কিন্তু এবার বোধহয় একটা ভালো কাজ করবে। আব্বুর মুখ থেকে আমার বিয়ের ব্যপারে কথা উঠেছে মানে, এই বিয়ে আর ঠেকায় কে!
মনে মনে একটা পৈশাচিক হাসি দিলাম। আব্বাজানকে সাপোর্ট দিয়ে আমি আসতে গলায় বললাম “তরকারিতে আসলেই লবন একটু কম দিয়েছো আম্মা”
অতপর আম্মু বিস্ফারিত চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বললো “কি বললি? আজ তুইও তোর আব্বু’র হয়ে কথা বলছিস? বাপ ছেলে মিলে এখন আমার জীবনটা খেয়ে নেও।”
কথাগুলো বলেই আম্মু রাগের মাথায় আমার আর আব্বাজানের প্লেটে বড় চামচ দিয়ে দুই চামচ লবন ঢেলে দিলো। তারপর বললো “এখন একটু চেখে দেখো তো,লবন ঠিক হইছে কি না।”
আম্মুর কর্মকাণ্ড দেখে আব্বাজানের রাগের পরিমাণ আরও দ্বিগুণ বেড়ে গেলো। দাঁত কিড়মিড়িয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললো “দেখছিস দেখছিস,তোর বিয়ের কথা বলতেই মহারাণী ভেবেছে সে মুক্তি পেয়ে গেছে। বউমা’র ঘাড়ে সংসারের সব কাজ চেপে দিয়ে সে ড্যাংড্যাং করে পায়ের উপর পা দিয়ে ঘুমাতে চায়। নাহ আমি তা হতে দিবোনা।”
চোখদুটো আম্মুর দিকে নিয়ে আব্বু আবারও বললো “শুনে রাখো রিসাতের আম্মা, যতদিন না আমি ইন্তেকাল হয়ে যাচ্ছি, ততদিন তোমাকেই রান্না করে খাওয়াতে হবে। এটাই আমার শেষ কথা। আমার ছেলের বিয়ে দিবো আর তুমি বউমাকে কাজের মেয়ের মতো খাটাবে? তা আমি কিছুতেই হতে দিবোনা। যতদিন আমি বেঁচে আছি ততদিন আমি আমার ছেলের বিয়ে দিচ্ছিনা। তুমি তোমার রান্নাটা ভালোভাবে শিখে নিবে।”
কথাগুলো বলেই আব্বু সেখান থেকে উঠে ফটাফট নিজের ঘরে চলে গেলো। আব্বুর কথা শুনে আমি অজ্ঞান হয়ে ফ্লোরে ধপাস করে পড়ে গেলাম। এখন সবাই আমার মুখে পানি ছিটাছিটি করছে। একটু পরে আমার জ্ঞান ফিরবে। তারপর আবার আব্বার কথা মনে পরলে সাথেসাথে অজ্ঞান হয়ে যাবো।
যতদিন না আমার বিয়ে দিচ্ছে, ততদিন এই ‘হঠাৎ করে অজ্ঞান হওয়া’ রোগটা আর সারবেনা।
আরো পড়ুন: পালিয়ে বিয়ে – কাজি সাহেব যখন শশুর