দুষ্টু বউয়ের গল্প – পাগলীটা আমায় খুব বেশি ভালবাসে: বউয়ের ভালোবাসা প্রতিটি স্বামী আশা করে। তবে আমার বউয়ের ভালবাসা কোন ধরনের বা লেভেলের তা নিয়ে আমি এখনো ভাবি। হাসি কষ্টের এই ছোট্র সংসারে সে আমার পুরোটা হৃদয় জুড়ে আছে। আজ তাই আমাদের স্বামী স্ত্রীর ভালবাসার গল্পটা আপনাদের শুনাব। চলেন দেখি পাগলি বউটা কি কাণ্ড করে আমার সাথে।
দুষ্টু বউয়ের কাণ্ড
স্ত্রীঃ এই কি হলো তোমাকে কখন উঠতে বলেছি উঠতেছো না কেন?
স্বামীঃ আমি হুম। (ঘুমানোর ভান করে)
স্ত্রীঃ কি হল উঠবা নাকি সব পানি তোমার উপর ঢেলে দেবো?
স্বামীঃ সোনা একটু পরে উঠছি, প্লিজ।
স্ত্রীঃ চুপ।
স্বামীঃ ওমাগো, এটা কি করলা তুমি?
স্ত্রীঃ যা করেছি বেশ করছি।
স্বামীঃ এই তোমার মাথায় কি প্রবলেম আছে?
স্ত্রীঃ না তো।
স্বামীঃ যাও বলছি আমার সামনে আর আসবা না।
স্ত্রীঃ তোমার অফিসে যাওয়ার সময় হয়ে গেছে?
স্বামীঃ যাইতে বলছি না তোমাকে? (একটু রাগ হয়ে)
কিছু না বলে চুপচাপ চলে গেল। পানি দিয়ে সত্যিই আমাকে চুবাইছে। তাই রাগটা কন্টোল করতে পারিনি। এখন নিজেরই খারাপ লাগছে। এইভাবে বলা ঠিক হয়নি। যাই গিয়ে দেখি, বউটা কি করছে?
বিছানা ছেড়ে উঠলাম। চুপিচুপি রান্না ঘরে উঁকি দিলাম। দেখি মায়ের সাথে রান্না করছে। এই সেরেছে, মা আছে এখন কি করি? তাই বাথরুমে চলে গেলাম। ফ্রেস হয়ে টেবিলে এসে দেখি খাবার আগে থেকেই দিয়ে রেখেছে। তাই গিয়ে খেতে বসলাম। মা আছে তবুও ওর দিকে একবার তাকালাম। ওর চোখের ভাষা বলছে আজ হবে তোমার চান্দু। তাই আর না তাকিয়ে খাওয়াতে মন দিলাম।
ভেবেছিলাম আজ তরকারিতে লবণ বা মরিচ বেশি দিবেই! ঠিক তাই করেছে মরিচ বেশিই দিয়েছে।
আমিঃ একটু কৌশলে আম্মুকে জিজ্ঞেস করলাম, তোমার প্লেটে যে তরকারি আছে সেটা তে কি ঝাল লাগছে?
আম্মুঃ নাহ তো কেনো?
আমিঃ নাহ এমনি।
বউ আমার কাজটা ঠিক করলো না। আমাকে যে তরকারি দিয়েছিলো রাগে সেটাতে সব মরিচ ঢেলে দিয়েছে মনে হলো।
হায়রে কপাল সহ্য করে খেয়ে উঠলাম! তারপর অফিসের জন্য রেডি হলাম, কিন্তু আমার বউটা একবারো কাছে আসলো না। দরজার কাছে গিয়ে মাকে বলে চলে এলাম।
বউকে নিয়ে ভাবনা
অফিসে এসে কি আর কাজ করতে মন বসে? পাগলিটার কথা খুব মনে পড়ছে। একবার ফোনও দিল না। প্রতিদিন কতোবার ফোন দেয়। আহারে একটু বেশি রাগ করছে মনে হয়। এসব ভাবছি দ্যান হঠাৎ পাগলিটার ফোন আস্লো , ফোনটা রিসিভ করলাম।
বউঃ মা কথা বলবে? বলেই ফোনটা মাকে দিয়ে দিল।
মাঃ হ্যালো.. বাবা শোন।
আমিঃ হ্যা মা বলো?
মাঃ আমি আর তোর বাবা তোর বড় বোনের বাসায় যাচ্ছি। ওদের বাড়ি থেকে বার বার ফোন করছে।
আমিঃ আচ্ছা যাও। আর ভালো ভাবে যেও!
মাঃ হুম। তুই তাড়াতাড়ি বাসায় চলে আসিস কেমন? বউমা একা বেশিক্ষণ থাকতে পারবে না?
আমিঃ ওকে।
বিকেল ৫টা, অফিস থেকে বের হলাম। হঠাৎ আমার কাছের বন্ধু ছাদিক এর সাথে দেখা হয়ে গেল। দ্যান বন্ধুকে পেয়ে ভুলেই গেছি যে বাসায় যেতে হবে। হাজার হলেও বন্ধু, তার পর আবার অনেকদিন পরে দেখা। গল্প করতে করতে কখন ৭টা বেজে গেছে বুঝতেই পারিনি। দ্যান বন্ধুর কাছ থেকে বিদায় নিলাম।
বাসায় আসার সময় মনে পড়ল আজতো মা আমাকে তাড়াতাড়ি আসতে বলেছিল। আমার পাগলি বউটা তো একাই আছে। না জানি কি করছে। আর আমার যে কি হবে আজকে ? এসব ভাবতে ভাবতে বাসার গেটে চলে আসলাম।
দুষ্টু বউয়ের অভিমান
দ্যান কলিংবেলে চাপ দিলাম। আবার দিলাম। আবার দিলাম। কি বেপার ঘুমায় গেল নাকি। নাতো ও কেন এই সময় ঘুমাবে। ১৫মিনিট হয়ে গেল। তবুও দরজা খুলছে না। তাই দরজা ধাক্কাইতে লাগলাম কিন্তু ওপার থেকে বউ বলছে—
বউঃ যতই ধাক্কা দাও লাভ হবে না।
আমিঃ কেন?
বউঃ আমি খুলবো না তাই।
আমিঃ কি হয়েছে জানু? খুলবা না কেন?
বউঃ এটা তোমার শাস্তি।
আমিঃ কিসের শাস্তি গো?
বউঃ আবার আদর করে জানু গো ডাকা হচ্ছে?
আমিঃ তাহলে কি বলে ডাকবো?
বউঃ যতই ভালোবাসা দেখাও না কেনো কোনো লাভ নাই। আমি খুলবো না।
আমিঃ জানু প্লিজ।
বউঃ সকালে বকা দেয়ার সময় মনে ছিল না?
আমিঃ সকালে কই বকা দিলাম।
বউঃ ভাবছিলাম খুলবো, কিন্তু মিথ্যা বলার জন্য আর খুলবোই না।
আমিঃ না সোনা, ওমন বলে না। খুলে দাও। আর কখনো বকা দেবো না প্রমিস।
বউঃ না, পারবো না।
কি করি এখন? হঠাৎ মাথায় একটা আইডিয়া এল। দেখি এটাতে কাজ হয় কিনা!
আমিঃ তুমি থাকো? আমি চলে যাচ্ছি। যতদিন মা-বাবা আসবে না আমিও আসবো না।
বউঃ যাও, ধরে রেখেছি নাকি।
আমিঃ ওকে। বলে কিছুক্ষণ দাড়াই থাকলাম। দেখলাম ও দরজা খুলেছে।
আমাকে দেখেই জড়িয়ে ধরলো আর বললো-
বউঃ আমাকে একা রেখে কোথায় যাবা তুমি?
আমিঃ কোথাও না।
বউঃ কি বললা তুমি?
আমিঃ না এমনি মানে, এই রাতে আবার কোথাই যাবো? দরজা খুলছিলেনা, তাই ঐটা বললাম। বউ সাথে সাথে রাগে মুখটা লাল করে ফেললো। তারপর একটা কিস করে চলে গেল। আসলে মেয়েদের যে কি দিয়ে বানাইছেন একমাত্র আল্লাহ জানেন। কখন তাদের কি হয় বলা যায় না।
মিষ্টি বউয়ের আবদার
একটু পরে বউ কেমন জানি কবি ভাব নিয়া কাছে এসে কইল-
বউঃ এই যে ফ্রেস হয়ে আসো?
আমিঃ হুম যাচ্ছি।
ফ্রেশ হৃয়ে এসে দেখি ও টিভি দেখছে। টিভি দেখতে দেখতে ৯টা বেজে গেছে।
বউঃ হঠাৎ বউ বললো আমি যদি এখন কিছু চাই দিবা আমায়?
আমিঃ আচ্ছা বল আগে?
বউঃ না, আগে বল দিবা?
আমিঃ আচ্ছা দেব।
বউঃ তুমি যখন অফিস থেকে আসলা তখন দেখলাম আকাশে সুন্দর চাঁদ উঠেছে।
আমিঃ তো এখন আমি কি করব? আকাশের চাঁদ এনে দেব? পারব না। শুধু আমি না কেউই পারবে না।
বউঃ না, মানে আমি চাঁদ চাইনা। চাঁদটা দেখতে চাই!
আমিঃ ওহ।
বউঃ চলো না ছাদে যাই।
আমিঃ না। এখন ছাদে যাওয়া যাবে না!
বউঃ চলো না, প্লিজ।
আমিঃ উহু যাওয়া যাবে না।
এবার বউ গাল ফুলিয়ে বসে আছে। কি আর করবো? এমনি সকালে একবার রাগ করেছিল, এখন আবার মন খারাপ করে বসে আছে। তাই আর পারলাম না।
আমিঃ আচ্ছা সোনা, চলো রাগ করেনা জানু।
বউঃ খুশিতে আমাকে জড়িয়ে ধরল।
আমিঃ আর মায়া দেখাতে হবেনা চলো।
দুষ্টু বউয়ের গল্প চাঁদ দেখে ছাদের উপরে
দুজনে ছাদে বসে আছি। আসলেই চাঁদটা খুব সুন্দর। আর আমার পাগলিটাও।
আবার আমার বউ বলল- একটা কথা বলি?
আমিঃ বলো।
বউঃ আমি না আরেকটা জিনিস চাই?
আমিঃ বলে ফেল। আমি পূরণ করব।
বউঃ একটা গান শোনাবে আমায়। না বলবা না কিন্তু!
আমিঃ নাহ পাড়বো না!
বউঃ পারতে হবে নাহলে এক ধাক্কা দিবো। আর ছাদের নিচে চলে যাবা।
আমিঃ অমাইজ্ঞো ই কিতা খয় বা এটা তো বউ নয় যেনো মিস ডাইনি।
বউঃ কি হলো শুনাও?
আমিঃ হুম!
বউঃ আচ্ছা শুরু কর…
আমিঃ আরে ভাই টিকাটুলির উপর নাকি হল রয়েছে সেখানে নাকি আমার বউ ফিল্ম দেখতে যাবে!
বউঃ এইটা কি শুনাইলা মাইর খাবার ইচ্ছে হচ্ছে তাই না?
আমিঃ হ দাও না একটু মাইর.. দেখি কেমন লাগে।?
বউঃ যাহ শয়তান, ভালো গান শুনাবা নাকি?।
আমিঃ ওয়েট। মনে করি, আমার বউয়ের জন্য কোন গানটা গাওয়া যায়। হুম মনে পড়ছে ..
আজ তোমার মন খারাপ মেয়ে,
তুমি আনমনে বসে আছো।
আকাশ পানে দৃষ্টি উদাস
আমি তোমার জন্য এনে দেব
মেঘ………………………………………
দেখলাম পাগলিটা মন দিয়ে আমার কাধে মাথা রেখে গান শুনছে। পাগলিটা খুব ভালোবাসে আমায়। আমি বাসিনা তা না, আমিও ভালবাসি বলেই ভালবেসে বিয়ে করেছি তাকে।
অনেক সুখেও আছি আমরা।
গান শুনতে শুনতে পাগলী বউটা ঘুমিয়ে পড়েছে।
তারপর বউটাকে কোলে করে রুমে নিয়ে গেলাম আর বিছানায় শুইয়ে দিলাম।
দ্যান মন প্রাণ ভরে তাকে দেখতে থাকলাম!
দেখতে দেখতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম নিজেই বুজলাম না।