বউকে ভালবাসার উপায়

বউকে ভালবাসার উপায় – জীবন পাল্টে যাবে আপনার

বউকে ভালবাসার উপায় – জীবন পাল্টে যাবে আপনার: আমার লেখাপড়া শেষ। চিন্তা করলাম, একটা চেম্বার খুলব। কিন্তু শহরে তো অনেক ডাক্তার আছে, তাই গ্রামকে নিয়ে একটু ভাবলাম। আমার গ্রাম যদি সুখে থাকে তাহলে শহরও সুখি হবে। কারণ একটা জাতিকে পরিবর্তন করতে পারে একজন মা ই। তাই আমার ভাবনা হলো গ্রামই পরিবর্তন করবে শহর আর শহর পরিবর্তন করবে দেশ।

বউয়ের স্বপ্ন

কথা মত কাজ। গ্রামে এসেই একটা চেম্বার খুলে ফেললাম। যাই হোক, আজ চেম্বার খুলতে একটু দেরি হল প্রায় ১০:৩০ বেজে গেছে। চেম্বারের সামনে দেখলাম বোরকা পরা একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ঠিক বুঝা যাচ্ছে না যুবতী না বৃদ্ধা। চেম্বার খুলে ভিতরে গিয়ে বসলাম। মেয়েটিও বসল। মেয়েটি তার হাত দেখাল, অনেকটা কেটে গেছে। আমি স্যাভলন দিয়ে পরিষ্কার করতে লাগলাম আর জিজ্ঞেস করলাম কেমনে কাটল?

মেয়েটি বলতে চাচ্ছিল না। আমি বললাম- ডাক্তার আর উকিলের কাছে সব কিছু সত্যিটা মন খুলে না বললে কাংখিত ফল পাওয়া যায়না, আপা। আপনি বলতে পারেন নির্ভয়ে!

মেয়েটি কিছুটা থেমে বলা শুরু করল- যখন আপা বলছেন তখন মনের কথাগুলো বলি। আসলে বলতে খুব ইচ্ছে হয় কিন্তু বলার জায়গা খুজে পাইনা। মেয়ে হলেও বিয়ের আগে আমি আমার মতো স্বাধীনভাবে চলতাম। কখনো কারো কথা শুনিনি। খুব আদুরে ছিলাম। কেউ কিছু বলতও না। কলেজে ছেলেদের মেরেছিও। কেউ দেখে বলতনা আমি একজন মেয়ে।

কলেজ শেষে, একটা বড় পরিবারে বিয়ে হল আমার। বিয়ে হয়েছে খুব বেশিদিন হয়নি। যখন বিয়ে হল, বাড়ি থেকে আসার সময় ভাবি বলেছিল – এবার নিজেকে নিজের কথা ভাবতে দিস। শ্বশুর বাড়িতে আমার স্বামীর গাড়িতে এসেছি। ড্রাইভার চালাচ্ছিল। পিছনে আমি আর আমার বর বসে আছি।

বাড়ি ছেড়ে এভাবে অচেনা যায়গায় যেতে বেশ ভয় লাগছে। যত এগোচ্ছি তত শুণ্যতা অনুভব করছি। এই প্রথম, আমার ভিতরে এত ভয় কাজ করছে। কিন্তু পাশে বসে থাকা মানুষটিকে আড় চোখে একটু একটু করে দেখছি আর মনে মনে ভাবছি, সব ছাড়লেও হয়ত এমন কাউকে পেয়েছি যে আমার সব শুণ্যতা একাই পূরণ করবে।

যাইহোক, শ্বশুর বাড়ি গিয়ে কত মানুষ আর কত ভিড়! সবাই আমাকে নিয়ে আনন্দে মাতোয়ারা! কিন্তু আমি যে শূণ্যতা অনুভব করছি তা কেউ বুঝতে পারছেনা। স্বামীটাও বাড়ি এসে কই যেন চলে গেছে। ভাবলাম, ছেলে মানুষ সে কি আর আমার পাশে বসে থাকলে চলে?

মনকে বোঝাচ্ছি কিন্তু মন বলছে আমার বরটাকে দেখলে একটু শান্তি হতো। এত শত অপরিচিত লোকের ভিড়ে কাকে মনের কথা বলব বুঝতে পারিনি। কি আর করা, নিজের কথা নিজের মাঝেই রাখলাম। এভাবেই শুরু হল আমার নিশ্চুপ হয়ে মনের কথা লুকানোর পালা।

স্বামীর অবহেলা

এরপর আমার বাসর হল। বান্ধবী আর ভাবিরা কত কিছুই না বলত এই রাতটা নিয়ে। অনেক স্বপ্নও ছিল আমার। অনেকক্ষণ ধরে বসে আছি। সারাদিনের ক্লান্ততা শেষে যখন বাসর ঘরে একা একা বসে আছি তখন আমার বেশ ঘুম পাচ্ছিল।

হুট করে আমার স্বামী এসে বলল-
স্বামীঃ একি! ‘তুমি এখনো ঘুমাওনি।’

আমিঃ না মানে তোমার জন্য অপেক্ষা করছিলাম।

স্বামীঃ আমার জন্য আর অপেক্ষা না করে নিজের মত নিজের সব কাজ করবে। এ বিয়েটা আমার জন্য কষ্টকর। আমি অন্য কাউকে ভালবাসি।

এই বলে নিজের মত শুয়ে পড়ল। মুখ থেকে সিগারেট এর গন্ধ আসছে। অসহ্য হলেও সহ্য করতে হল আমাকে। আমিও কাউকে ভালবাসতাম। আসলে এটা প্রেম ছিলনা কিন্তু ভাল লাগত কাউকে। কিন্তু যখন কবুল বলেছি তখন থেকে স্বামী ভক্ত হয়ে গেছি। কিন্তু সে যে আমাকে বউ হিসাবে মানতে পারেনি। শত চেষ্টা করেও আমি তার মনে জায়গা করে নিতে পারিনি। একদিনের দুরন্ত আর ডানপিঠে মেয়েটি আজ বড়ই নিশ্চুপ। কাউকে কিছু বলতে পারিনা। ভাবলাম, বাবা-মাকে বলব কিন্তু কাকে নিয়ে বলব ‘সে তো আমারই স্বামী।’

যদি ছাড়া ছাড়ি হয়ে যায়, আমি মুখ দেখাতে পারব না। এরপর সে সংসার জীবনে আমার উপর বেশ অত্যাচার শুরু করে। প্রতিদিন রাত করে বাসায় ফেরে। গত রাতে একটু বেশি রাত করে বাসায় ফিরল। তাই আজ সকালে একটু দেরি করে ডাকছিলাম। আমি উঠে খাবার রেডি করে স্বামীর পাশে গিয়ে ওর মাথায় হাত দিয়ে দেখলাম শরীরটা বেশ গরম। আমি বললাম, এই জ্বর আসছে নাকি তোমার। ডাক্তার ডাকব নাকি! সে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল ৩০মিনিট লেট। রাগ করে বলল, তুই এতক্ষণ কি করছিলি? একটু আগে ডাকলিনা কেন?

আমি বললাম, তুমি ঘুমাচ্ছ। গত রাতে একটু দেরি করেই আসছিলে, তাই। সে বলল, আমি দেরি করে আসি কি, না আসি তুই বলার কে? এই বলে আমাকে ঠেলে দিয়ে উঠে গেল। ঠিক তখনই আমি পরে যাই এবং পাশের টেবিলের সাথে ধাক্কা লেগে হাতটা কেটে যায়। ধারালো কিছুতে কাটলে কষ্ট কম হয়। কিন্তু এটা সহ্য করতে না পেরে জোরে বললাম, ‘তোমার কি করেছি আমি? সবসময় আমাকে এভাবে কষ্ট দাও।’

এটুকু বলাতেই অনেক মার খেতে হল। প্রতিদিন মার খেতে হয় কিন্তু আজ পিঠে একটু বেশিই ব্যথা লাগল। নিচু হয়ে কাজ করতে পারছিনা। ও কিছু টাকা দিয়ে ডাক্তারের এখানে আস্তে বলল। বাসায় অনেক কাজ পড়ে আছে। প্লিজ, এমন কিছু ঔষধ দিন যাতে দ্রুত ব্যথা কমে যায়।

আমি কিছুক্ষণ নির্বাক দৃষ্টিতে ভেবে বললাম, কিছু মনে না করলে আপনার স্বামীকে একবার ডাকবেন। এরপর তার স্বামী আসল। দুজনেই আমার সামনে বসে আছে। পাঠক আপনাদের বলছি, প্লিজ কোনো ছেলে কিছু মনে করবেন না কারণ আমিও একজন ছেলে। প্লিজ, কোনো মেয়ে কিছু মনে করবেন না কারণ একজন মেয়েই আমার মা। আপনাদের মত কোন মেয়েই আমার বোন।

বউকে ভালবাসার উপায়

তার স্বামীকে আর তাকে উদ্দেশ্য করে আমি বলা শুরু করলাম। দয়া করে কিছুক্ষণের জন্য সকল চিন্তা বাদ দিয়ে আমার কথাগুলো একটু মনোযোগ দিয়ে শুনুন।

মেয়ে মানে কি জানেন? কলেজে পড়ুয়া যে যুবুতি মেয়ে নিজের যৌবনের গৌরব দেখায়, দিন শেষে সে যদি ভাবে শূন্য ছাড়া কিছুই পাবেনা। আমরা ছেলেরা যে কষ্ট সহ্য করতে পারি মেয়েরা তা পারেনা। না খেয়ে রাস্তায় শুয়ে থাকলে আমাদের যা কষ্ট হয় তার চেয়ে বহুগুণ বেশি কষ্ট হয় মেয়েদের। ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের জীবনটা সামান্য মাত্র। সত্যি কথা বলতে, মেয়েদের নিজের বলতে কিছুই থাকে না।

একবার আপনার স্ত্রীকে নিয়ে ভাবুনতো। সেকি কোনো অপরাধ করেছে নাকি তার কোনো ভুল ছিল নাকি সে আপনার জীবনে কোনো অমঙ্গল ডেকে এনেছে। কথাটা নিয়ে ভাবুন এর উত্তর আপনি নিজেই পাবেন। একটি সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়ে হয়েও আজ সে কতটা অসহায় আপনার কাছে। একবার ভেবে দেখুন তো কিভাবে একটি মেয়ে তার জীবনের প্রথমাংস ফেলে রেখে একজন অপরিচিত মানুষের মাঝে নিজেকে খুজে বেড়ায়। আর মৃত্যুর স্বপ্ন দ্যাখে।

বুঝলাম, একটা ছেলে সারা দিন বাড়ির বাইরে কাজ করে। কিন্তু বাড়ি ফিরে সে যদি মনে করে ‘বউ কিছু করেনা শুধু বসে বসে খায়।’ তাহলে বলব, এক সপ্তাহ বাসায় থাকুন আর বউয়ের কাজগুলো করে দেখুনতো আসলেই সারাদিনে সে কোনো কাজ করে না, করে না। আসলে এ কথাগুলো মুখে বললে বুঝবেন না। এখন তো বাসায় আছেন। ঘরোয়া কাজ করে মেয়েদের কষ্ট একটু বুঝতে চেষ্টা করুন।

মেয়েরা অসহায় হতে পারে, তবে জেনে রাখুন আপনার সুখের মূলেই কিন্তু একজন মেয়ে মানুষের ভূমিকা অপরিসীম। মেয়েদের মধ্যে সৃষ্টিকর্তা এমন কিছু দিয়েছে ‘যার একটু হাসিতে, একটু কথায়, একটু ছোয়াতে, একটু দেখাতেই আপনি সারা দিনের ক্লান্তি দূর করতে পারেন।

একটা অসুস্থ মানুষকে সুস্থ করার জন্য মেডিসিনের চেয়েও কার্যকরী হলো সেবা, ভালবাসা। সুস্থ হয়ার জন্য এগুলোই কাজ করে অনেক বেশি। সে জন্যই হাসপাতালগুলোতে এত নার্স। মেয়েদের ভালবাসার বাহিরে সুখ খুজে দেখেন, কিছু পান কি! কিছুই পাবেন না। কারণ আপনার সুখের মূল হয়ত মা, হয়তো বোন, হয়ত বউ।

বউকে আবিষ্কার করুন

এবার আসি আসল কথায়- কাউকে যদি আপনি সত্যিই ভালবাসতেন তাহলে নিজের বউকে এত কষ্ট দিতেন না। প্রেম মানে gf-bf নয়। আসলে আপনি যা করছেন সেটা বলে টাইম পাস। এ পৃথিবীর প্রথম সম্পর্ক স্বামী-স্ত্রীর। এই ভালোবাসার মধ্যে যতটা সুখ আছে তা অন্য কোথাও পাবেন না। আর কেবলমাত্র একজন স্ত্রীই আপনাকে এ সুখ দিতে পারে।

এ অপরুপ পৃথিবীতে সৃষ্টিকর্তা এমনি এমনি কিছুই সৃষ্টি করেননি। ভাবতে শিখুন, বুঝতে শিখুন। নতুনের মাঝে নিজেকে খুজে পেতে শিখুন। দেখবেন, আপনার দুঃখ, হতাশা, গ্লানি, ক্লান্তি সব দূরে চলে যাবে। দিন শেষে আপনাকে এটা মানতেই হবে ‘সংসার সুখি হয় রমনীর গুণে।’

আপনার সংসার চালাতে হয়তো একবার রান্না করতে চার কৌটা চাল লাগে। সেই চার কৌটা চাল থেকে এক মুষ্টি তুলে জমা রাখার নাম মেয়ে।
এক মুষ্টি চাল আজকের ক্ষুদার কাছে কিছুই না। কিন্তু এভাবে এক মুষ্টি করে রাখলে পরবতীতে দুদিন চলে যাবে।

ভাবতে শিখুন। যখন রাগ হয় চোখে চোখ রেখে কথা বলুন। যদি বউয়ের চোখে চোখ রাখার পর মারতে ইচ্ছে করে তাহলে মারবেন।

এখানে একটা বিষয় ভেবেছেন কি? যে বউকে আপনি ১০টা ঘুষি মারলেন সে বউয়ের কি কোনো শক্তিই নেই আপনাকে দুইটা ঘুষি মারার। কিন্তু সে কি তা করে! না, করে না। কারণ সে আপনাকে শ্রদ্ধা করতে জানে, আপনাকে ভালোবাসতে জানে। এরই নাম মেয়ে।

শেষ কথা

আবারও বলছি, যদি সুখ শান্তি বলে কিছু পেতে চান বউয়ের চোখে চোখ রাখুন। নিজেকে তার ভালোবাসায় সিক্ত করুন। দেখবেন আগের সবকিছু ভুলে পৃথিবীটা আপনার সাথে নতুন সাজে সেজেছে।

আমার বলা শেষ হলে, ছেলেটি তার বউয়ের হাত ধরে চলে গেল। আর বলল কোন মেডিসিন নয় নিজের ভালবাসা দিয়ে তার ব্যথা সারাব, কথা দিলাম।

আরো পড়ুন: দুষ্টু বউয়ের গল্প – পাগলীটা আমায় খুব বেশি ভালোবাসে

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *