ইসলামিক রোমান্টিক গল্প পর্ব ৬

ইসলামিক রোমান্টিক গল্প – ধার্মিক আদর্শ বউয়ের বখাটে স্বামী – পর্ব ৬

ইসলামিক রোমান্টিক গল্প – ধার্মিক আদর্শ বউয়ের বখাটে স্বামী – পর্ব ৬: বখাটে স্বামী ভেবে কত কিছুই না আফসোস করে বলেছিল কত কথা, কত অভিমান আর কান্না! কিন্তু সাইমা বুঝতে পেরেছে তার স্বামী মানুষ হিসেবে অনেক ভালো এবং নীতিবান। ঐ একটু ছ্যাকা খেয়ে ব্যাকা হয়েছে আর কি। দুজনে সমুদ্র ঘুরতে এসেছে। দেখা যাক কি হয়? তার স্বামী কি পুরাতন প্রেম পেয়ে কি করে?

পুরনো প্রেমের স্মৃতি

পাহাড়কে সমান্তরাল ভাবে কেটে অনেকটা নিচ দিয়ে সমুদ্র। ঠিক এমন টাই মনে হয়। সমুদ্রের মাঝে ছোট ছোট পাহাড় যেনো উঁচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। একটা জায়গায় নিচের দিকে সরু আর উপরের দিকে বেশ চওড়া পাহাড় টা। সাইমার ওখানে গিয়েই ছবি তুলার ইচ্ছে হয়।

চাদর আর জ্যাকেটটা খুলে একপাশে রেখে দেয় সাইমা। সজীবকে যাওয়ার আগে বলে যায়,

সাইমাঃ কয়েকটা ছবি স্মৃতি হিসেবে রাখতে চাই।

সজীবঃ যাবে ঠিক আছে, কিন্তু খবরদার বোট থেকে নামবেনা। কতটা গভীরতা ওখানে সেটা জানা নাই।

ওরা একটু ভোর ভোর এসেছে, তাই লোকজন একটু কম ছিলো বিধায় সাইমা পানিতে নামার সুযোগ পাচ্ছে। মানুষ বেশী থাকলে সাইমার ভেজা শরীর কাউকেই দেখতে দিত না সজীব।

রোশনির সাথেও আগে এইখানে এসেছিলো সে। রোশনি সমুদ্রে নামবে বলে সেদিন খোলামেলা ভাবেই এসেছিলো সজীবের সাথে। সজীব না চাইতেও রোশনির শরীরের দিকে চোখ যাচ্ছিলো। রোশনি শুধু হেসেই বলেছিলো,

রোশনিঃ বি কুল বেবি, এখানে এগুলো নরমাল। আমি এসব পোশাকেও অভ্যস্ত।

সজীব চোখ ফিরিয়ে নিয়েছিলো। পরে একসাথে অনেকক্ষণ সাঁতার ও কাটে। রোশনি অনেকটা সময় সাঁতার কাটার ছলে সজীব কে আঁকড়ে ধরে রেখেছিলো। সেদিনই প্রথম রোশনিকে এতো কাছ থেকে দেখে পাগল হয়ে গেছিলো সে।

হটাৎ ভাবনার ছেদ পড়ে, খেয়াল করে সাইমা কাঙ্ক্ষিত যায়গায় পৌঁছে সজীব কে ছবি তোলার জন্য ইশারা দিচ্ছে। সজীব ছবি তোলার পর সাইমা কে ইশারায় চলে আসতে বলে। তখন হালকা বাতাস বইছিলো, হটাৎ ঢেউ এসে সাইমার বোট উল্টে যায়। সাইমা যতটুকু সাঁতার জানে, হাত পা ছুড়তে থাকে। সজীব ভয়ে ক্যামেরা ফেলে দিয়ে সাঁতরাতে থাকে। অনেক টা পথ, ততক্ষণে সাইমা পানি গিলে ফেলেছে অনেক গুলো। সজীব সাইমাকে বলল,

সজীবঃ আমার গলা আটকে ধরে রাখো। তীরে নিয়ে যাবো আমি।

সাইমা সেটাই করলো। তীরের কাছাকাছি আসতে সাইমা সজীবের গলা ছেড়ে দেয়। হাসতে শুরু করে জোরে জোরে। আর অনেক জোরে বলে,

সাইমাঃ আমি ইচ্ছে করে লাফ দিয়েছিলাম সজীব। দেখলাম তুমি কতটা উতলা আমার জন্য?

জীবন উপভোগ

সজীবের খুব রাগ হলো, এসব বিষয় নিয়ে কেউ মজা করে। সাইমাকে ধাক্কা দিয়ে পানিতে ফেলে দেয়। আর বলে,

সজীবঃ তা কি প্রমাণ পেলে?

সাইমা হাসতে হাসতে বলে,

সাইমাঃ তুমি আমার জন্য সব করতে পারবে, এটাই বুঝলাম। তবে একটা শর্ত আছে, ওই পাহাড় যদি আমার আগে ছুঁতে পারো তাহলে তুমি জিতবে।

দূরে একটা পাহাড় দেখিয়ে দেয় সাইমা।

সজীবঃ তুমি এমনিতেই হারবে, কারণ লং ড্রেস, দুইয়ে ভেজা৷

সাইমাঃ হারতেই চাই, তবু ভালোবাসা জিতে যাক৷

দৌড়ে সজীবই জিতলো, কিন্তু সাইমা হাঁপিয়ে গেছে। চিল্লিয়ে বলল,

সাইমাঃ আমি যখন একাই বোটে ছিলাম তখন তুমি পুরনো স্মৃতিচারণ করছিলে, তাইনা! বুঝতেই পারছি, তুমি আগেও এখানে এসেছিলে। তা কোন ফিলিংসটা বেশী ছিলো, প্রাক্তন নাকি আমার,

সজীব কিছু না বলে ফিরে যাওয়ার দিকে ইশারা করে। রোদের তাপে ততক্ষণে সাইমার ড্রেস অনেকটা শুকিয়ে এসেছে। তবুও বলল,

সজীবঃ কিছুক্ষণের মাঝে লোকজন বেড়ে যাবে। যাও, চাদর জ্যাকেট পড়ে নাও৷

উত্তর পাইনি সজীব।

সজীবঃ যদি বলি তখনকার ফিলিংস বেশী ছিলো। কারণ সম্পর্কটা অবৈধ ছিলো। শয়তান কানের ভিতর ওয়াসওয়াসা বেশী দিতো। কি বলবে এখন?

সাইমাঃ বিশ্বাস হয়না!

রোমাঞ্চ প্রেম

ওরা হাটতে থাকে, সিড়ির উপরে বসার প্লান আছে। হাটতে হাটতে সজীব বলল,

সজীবঃ তুমি তো পুরনো হয়ে গেছো সাইমা, এখন যদি রোশনি কে পেতাম!

সাথে সাথে সজীবের উপরে কিল ঘুষি চালিয়ে দিলো সাইমা।

রাইশাঃ তোমার বোন টা খুব কপাল নিয়ে জন্মেছে বুঝলে! নইলে এতো ভালো বর পেলো কিভাবে! (রাইশা হাসতে হাসতে সাগর কে বললো)

সাগরঃ তা তুমি খুব আফসোস করছো, তাইনা! সেদিন গোয়েন্দাগিরি হবু ননদের জন্য না করে নিজের জন্য করলে খুব ভালো হতো, তাই-না!

রাইশাঃ আহহ সাগর, তুমি রেগে যাচ্ছ কেনো? আমি জাস্ট ফান করে বলেছিলাম।

সাগরঃ বুঝি বুঝি, মেয়েরা যে হিংসুটে হয়, সব বুঝি।

রাইশাঃ মোটেও হিংসে করে কথাটা বলিনি, আন্দাজি তুমি রাগ দেখাচ্ছো।

সাগরঃ রেগে গেলে তোমাকে খুব সুন্দর দেখায়, রাইশা।

রাইশাঃ তা কবে ঘরে তুলবে?

সাগরঃ তুলতেই তো চেয়েছিলাম, বোনটাই তো চলে গেলো হঠাৎ।

রাইশাঃ তোমার বোন দুই তিন বছর আসবেনা, এতো দিন তোমার ঘরে তুলবেনা সাগর?

সাগরঃ শান্ত হও, তুলবো। তবে আমাদের বাসায় তোমার নিজেকে চেঞ্জ করা লাগবে। যেমন ধরো তোমার ড্রেসআপ৷

রাইশাঃ বিয়ের আগে তো এসব শর্ত দাওনি! লুকিয়ে বিয়ে কি তাহলে এই জন্যই করেছিলে? যেনো শর্ত না মানতে পারলে তোমাকে ছেড়ে দিই।

সাগরঃ ছাড়বে কেনো? আমি জাস্ট তোমাকে ইসলামি ড্রেস পড়ার কথা বলছি।

রাইশাঃ তুমি জানোনা, আমি হিজাব দিলে আমার মাথা ব্যথা করে?

সাগরঃ বিয়ের পর মেয়েরা তো সাধারণত ঘরেই থাকে, মাঝে মাঝে বের হবো ঘুরতে। অল্প সময়ে তোমার মাথা ব্যথা করবেনা।

রাইশাঃ তুমি কি আমাকে ঘরমুখো করে রাখতে চাচ্ছো?

বিনোদন আড্ডা

অনেক্ষণ কথা কাটাকাটি করে রাইশা চলে যায়। সাগর শুধু ওর পথের দিকে তাকিয়ে থাকে। কবে যে বুঝবে মেয়েটা কে জানে!

সিড়ি বেয়ে উপরে উঠার সময় সাইমা বললো,

সাইমাঃ আমি রেলিং এর উপারে গিয়ে পাশের গাছ টা ধরে ছবি তুলবো। তুমি একটু সাহায্য করবে?

সজীবঃ সব সময় জেদ করো কেনো?

সাইমাঃ আরে পড়বো না, তোমার একটা হাত ধরে রাখবো।

বলতে বলতেই রেলিংটাকে টপকে নেয় সাইমা।

সজীবঃ তুমি এতো বাউন্ডুলে জানতাম না!

সাইমাঃ কি যে বলো, আমি বাইরে শান্ত শিষ্ট কিন্তু আমার ভাইয়ার সাথে যত রকম ইয়ার্কি করা যায় সব করেছি। কখনো বোরিং হয়নি ভাইয়ার জন্যই। কিন্তু তোমার সংসারেই বোরিং লাগে।

সজীব কিছু না বলে সাইমাকে রেডি হতে বলে, সাইমাও বিভিন্ন এংগেলে ছবি তুলে। এক ভাবে পোজ দিতে গেলে নিচ থেকে সমুদ্রের ঢেউ দেখা যায়। ওভাবে ঘুরে কয়েকটা ছবি তুলা মাত্র একজন কে দিয়ে আরোও কয়েকটা কাপল ছবি তুলিয়ে নেয়। হঠাৎ করেই সাইমা পা ফসকে গড়িয়ে পড়ে। মুখে শুধু “আআআ…” চিৎকার দেয়।

চলবে…

পরের পর্ব- ইসলামিক রোমান্টিক গল্প – ধার্মিক আদর্শ বউয়ের বখাটে স্বামী – পর্ব ৭

সকল গল্পের ধারাবাহিক সব পর্ব এখানে গিয়ে খুঁজুন – ধারাবাহিক পর্বের গল্প

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *