ভালোবাসার গল্প – রোমান্টিক কষ্টের কাছে আসার অসমাপ্ত প্রেম কাহিনী: পৃথিবীর বুকে কত নাম না জানা প্রেম ও ভালোবাসার গল্পের অসমাপ্ত কাহিনী পড়ে আছে আমরা কি তা জানি? ভালোবাসা কি আর কিভাবে ভালবাসতে হয় ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আমাদের অক্লান্ত চেষ্টা। কিন্তু যুগে যুগে থেকে যাওয়া কিছু ভালবাসার গল্প কাহিনী আমাদের সবচেয়ে ভালভাবে এগুলো উপলদ্ধি করতে শেখায়। যেন মনে হয় এইতো আমার সাথে এরকম ঘটনা ঘটে গেল।
যাইহোক এমনি এক কষ্ট মিষ্টি প্রেম ভালোবাসার ঘটনা নিয়ে আজকে আমরা প্রকৃত ভালবাসাকে বুঝতে চেষ্টা করব। তার আগে একটু জেনে নেই ভালোবাসা সম্পর্কে বিজ্ঞান কি বলে?
ভালোবাসা কি ও গল্প সহ বর্ণনা
ভালোবাসা অর্থ সকল অনুভূতির মিলন। ঘৃণা বাদে অন্য সব সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, পাওয়া না পাওয়া ইত্যাদি সকল অনুভূতির সমন্বয় হলো ভালবাসা। প্রেম মানে ঐ ভালোবাসায় তবে এটা নিদির্ষ্ট করে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ যা পুরুষ ও নারীর মাঝে থাকে। শরীরে অক্সিটোসিন হরমোন আমাদের কারো প্রতি আকর্ষণ তৈরি করতে প্রধান কাজ করে।
In English – Love (valobasa) means the feelings of life and biological hormonal effect mainly love hormone (oxytocin). The love story (valobasar golpo) means the story of these feelings. The scientists say that – love is nothing but a lot of hormonal feelings.
তো এখন আমরা একটি অসমাপ্ত কষ্ট সুখ নিয়ে সত্যিকারের ভালোবাসার ঘটনা শুনব। চলুন তবে শুরু করা যাক। গল্পটি লিখেছেন – তাসনিম সারা
ভালোবাসার স্মৃতি
শ্রাবণ মাস। আকাশে ঘন কালো মেঘ। এরই মধ্যে চলছিল ঘনঘন বৃষ্টি। ঠিক শ্রাবণের কোনো এক বৃষ্টিস্নাত দিনে প্রথম দেখা হলো পলাশ ভাইয়ের সাথে।
তখন অবশ্য আমি তাকে চিনতাম হবু দুলাভাই হিসেবে। তবে তার আরো একটা পরিচয় আছে। আর সেটা হলো, সে আমার একমাত্র ফুফাতো ভাই। কিন্তু এ কথাটা আমাকে কেউ কখনো বলেনি।
কথাটা না বলার একটি মাত্র কারণ হলো, আমি আমার বাবা’র দ্বিতীয় স্ত্রীর মেয়ে ছিলাম।
বাবা একবার আসাম গিয়ে আমার অনাথ এবং অপরূপা সুন্দরী মা কে পেয়ে বিরাট একটা ভুল করে ফেলেছিলেন। এই ভুলের ফসল হলাম আমি।
মা প্রতিজ্ঞা করেছিল সে কখনোই বাবা’র সংসারে অশান্তি হতে দিবে না। কিন্তু মেয়ে মানুষের যখন তখন প্রতিজ্ঞা দেয়া সাজে না।
আমার সাড়ে তিন বছর বয়সে মায়ের সার্ভিকাল ক্যান্সার ধরা পড়লো এবং না চাইতেও মা কে তখন তার প্রতিজ্ঞা ভাংতে হলো।
মায়ের বিয়োগের পর বাবা’র সংসারে আমার জায়গা হলো, জায়গা মূলত বাড়িটাতেই হলো।
কেউ মন থেকে আমায় মেনে নিতেই পারলো না। তবে হ্যাঁ, একজন আমাকে মনে প্রাণে আপন করে নিয়েছিল। আর সে হলো আমার মায়ের মতো বড় বোন হিয়া আপা।
সে আমায় বড্ডো ভালোবাসতো।
আমার নাম লাবণ্য। অথচ এই নাম আপার পছন্দ হলো না। সে তার নামের সাথে আমার নাম মিলিয়ে রাখলো রিয়া।
হিয়া আপাই আমার সুখ দুঃখের একমাত্র সাথী।
আমি ছিলাম তার কথা জমা রাখার ব্যাংক। আমার কাছে থেকে সে কিছুই লুকাতে পারতো না।
প্রথম প্রেমের গল্প কথা
বাড়ির সবাই কতদিন তাকে বলেছিল, আমাকে যাতে মাথায় না তোলে। পাছে আমি ক্ষতি করে দিতে পারি। তখন সবার সামনে সে আমায় বুকে জড়িয়ে বলতো,
হিয়া আপাঃ ও আমার আত্মা। আত্মা কখনো কারো ক্ষতি করতে পারেনা।
আমি যখন দশম শ্রেণির ছাত্রী তখন আপা এসে বললো,
হিয়া আপাঃ তোর হবু দুলাভাই কে দেখবি?
আমি এক গাল হা করে বললাম,
আমিঃ হবু দুলাভাই, কি আপা?
আপা আমার মাথায় গাট্টা মেরে বললো,
হিয়া আপাঃ বোকা, হবু দুলাভাই হলো যে ভবিষ্যতে বোনের স্বামী হবে।
আমি মাথা নেড়ে বললাম,
আমিঃ হু দেখবো।
বৃষ্টি মুখর সেই সন্ধ্যায় ছাদে দেখলাম, আমার হবু দুলাভাই পলাশ ভাই কে।
লম্বা চওড়া সুদর্শন পুরুষ পলাশ ভাই। যাকে এক দেখাতেই যে কারো ভালো লেগে যাবে।
আমিও শুরুতে হা করেই তাকিয়ে ছিলাম তার দিকে।
পলাশ ভাই আমার বিনুনি টেনে বলেছিল,
পলাশ ভাইঃ শালি মানে বুঝিস তো লাবণ্য? আধি ঘারওয়ালি, আমার তো কপাল খুলে গেলো। এক সুন্দরী আমার বউ হবে, আরেক সুন্দরী আমার শালিকা!
আমি কোনো প্রতিক্রিয়া করিনি। কিন্তু হিয়া আপা বড্ড লজ্জা পেয়েছিল।
পলাশ ভাইয়ের হাতে চিমটি কেটে বলেছিল,
হিয়া আপাঃ বাচ্চাটার সামনে কিসব বলছো?
পলাশ ভাই প্রাণখোলা হাসি হেসেছিলেন সেদিন।
আমাকে বলেছিলেন,
পলাশ ভাইঃ লজ্জা পেলে তোর আপা কে রূপকথার পরী লাগে, তাইনা লাবণ্য?
আমি মাথা নেড়ে হু বলেছিলাম। লজ্জায় আপার গাল দুটো লাল টুকটুকে হয়েছিল।
এরপর থেকেই আপা আর পলাশ ভাইয়ের অঘোষিত প্রেম আমার চোখের সামনেই দেখতাম।
ভালোবাসার মানুষ
পলাশ ভাই নানা বাহানায় আমাদের বাড়িতে চলে আসতো। আর আপাকেও খুশি খুশি লাগতো। সবসময় আপার মুখে একটা হাসি হাসি ভাব। আমার খুব ভালো লাগতো দেখতে।
আমার এসএসসির পর আসাম থেকে খবর এলো, আমার মায়ের নাকি বাবা-মায়ের খোঁজ এত বছর পর পাওয়া গেছে। কিন্তু ওনারা মেয়েকে না পেয়ে নাতনিকে দেখতে চান।
হিয়া আপা আমাকে মোটেই যেতে দেবেন না। বাবা এসে গম্ভীরমুখে বললেন,
বাবাঃ লাবণ্যর ওপর ওনাদের অধিকার আছে। আর বেশী দিনের জন্য তো সে যাচ্ছে না। চলে আসবে আবার।
হিয়া আপা মৌন সম্মতি দিলেন। কিন্তু আমি চলে আসবার সময় আমার গালে হাত বুলিয়ে বললেন,
হিয়া আপাঃ আমার কেন যেন মনে হচ্ছে তোকে আর দেখা হবে না রিয়া! তুই জলদি ফিরিস কেমন? আর আমাকে প্রতিদিন স্মরণ করিস।
আমি তখনও মাথা নেড়ে হু বললাম।
নানা-নানী আমায় পেয়ে যত্নের অভাব করলেন না।
তাদের একমাত্র অবলম্বন যে আমিই এটা জানতে পেরে আমার মন নরম হয়ে গেলো।
নানা-নানী বাবাকে রিকোয়েস্ট করে আমাকে আসামে এক নামিদামি কলেজে ভর্তির ব্যবস্থা করলেন।
হিয়া আপা এই খবর শুনে ফোন করলো। বললো,
হিয়া আপাঃ তুইও আমায় ছেড়ে চলে গেলি রিয়া?
আমি আশ্বাস দিয়ে বললাম,
আমিঃ আপা, চিন্তা করো না। আমি জলদিই ফিরবো।
আপা বিষন্ন গলায় বললেন,
হিয়া আপাঃ তোকে বড় দেখতে ইচ্ছা হয় রে..
সিদ্ধান্ত নিলাম আপার সাথে গিয়ে দেখা করে আসবো। কিন্তু লেখাপড়ার চাপে সম্ভব হলো না।
কয়েকমাস পর খবর এলো আমাকে এক্ষুণি যেতে হবে। বাড়ি থেকে গাড়ি পাঠানো হলো।
এতো জরুরি অবস্থা দেখে আমি ভয়ই পেয়ে গেছিলাম।
কাপড় চোপড় নেয়ার আর সুযোগ হয়নি।
অভিমানী ভালোবাসার বিদায়
বাড়িতে নেমেই দেখি লোকে গিজগিজ করছে পুরো বাড়ি।
আমায় দেখেই কিছু মহিলা সিঁড়ির কাছে দাঁড়িয়ে ফিসফিসিয়ে বলছে,
মহিলারাঃ প্রকৃতি প্রতিশোধ নিয়ে ছাড়ে। এই বাচ্চা মেয়েটার সাথে সোজা অন্যায় করেছিল হিয়ার মা?
আমি তাদের কথা বুঝতে পারলাম না।
মোটা ফ্রেমের চশমাটা হাতে নিয়ে তাড়াহুড়ো করে ঘরে ঢুকে গেলাম।
আপার ঘরের কাছে জটলা বেশি। ঘরটার কাছে আসতেই ধুপ কাঠির তীব্র গন্ধ নাকে আসলো। আর বড় মায়ের বিলাপ।
দরজার কোণ ঘেঁষে দাঁড়াতেই আমার সারা শরীর ঝাঁকুনি দিয়ে উঠলো। আমি বুঝতে পারলাম না আপাকে মেঝেতে কেনো শুইয়ে রাখা হয়েছে?
ধীর পায়ে ঘরে প্রবেশ করতেই বড় মা ছুটে এসে আমার পায়ের কাছে বসে বললেন,
বড় মাঃ লাবণ্য, তুই একবার ওকে ডাক না? ও তোর সব কথা শুনবে দেখিস, ও উঠে পড়বে। ডাক না মা? আমার ওপর রাগ করে থাকিস না রে, ও না তোকে কত ভালোবাসতো?
চাচি মুখে আঁচল চেপে কেঁদে কেঁদে বললেন,
চাচিঃ বুবু হিয়া আর নেই। এটা বুঝতে পারছো না কেনো?
বড় মা তাকে ধমক দিলেন তারপর আমাকে টেনে নিয়ে আপার কাছে বসালেন।
আমি অবাক হয়ে আপার জীর্ণশীর্ণ মুখটা দেখছিলাম। অতো সুন্দরী মেয়েটার চোখের নিচে কালি, ঠোঁট শুকিয়ে কেমন হয়ে গেছে আর উজ্জ্বল চেহারাটা কালো লাগছে।
আপার সারা মুখে হাত বুলিয়ে আস্তে করে ডাকলাম,
আমিঃ আপা দেখো, আমি এসেছি। তুমি কি চোখ খুলবে না? রাগ করে থেকোনা, আপা। তুমি না লক্ষী মেয়ে?
আপা আমার ডাকে সাড়া দিলো না।
বড় মায়ের কান্নার গতি দ্বিগুণ হলো, আপা কে গোসলের জন্য নেয়া হলো।
আমি নিশ্চুপ হয়ে মেঝেতেই বসে রইলাম।
আপার লাশ নিয়ে যাওয়ার পর চোখে পড়লো আপার পা যেদিকে ছিলো সেদিকটায় সুক্ষ রক্তের কিছু দাগ।
লোকে তো বলছে আপা বিষ খেয়েছিল। তবে রক্ত এলো কোথা থেকে?
এমন চিন্তা মাথায় এলেও এ নিয়ে ভাবতে ইচ্ছা করলো না।
কষ্টের কান্নার আহাজারি
সন্ধ্যাবেলা বড় মা কে ঘুম পাড়িয়ে আপার ঘরটায় গেলাম। ওর বালিশে মুখ গুঁজতেই চোখ দিয়ে পানি গড়াতে শুরু করলো।
এই তো আমার আপার গায়ের সুবাস সারা ঘরে, এই বালিশে।
আপা তো আমাকেই জড়িয়ে আছে। কিন্তু মন বললো এগুলো নিছকই কল্পনা।
বালিশে মুখ চেপে চিৎকার করে কাঁদলাম।
কতক্ষণ পর মাথায় কারো হাতের ছোঁয়া পেয়ে সম্বিত ফিরে এলো, মাথা তুলে দেখলাম বাবা।
চোখের পানি মুছে বালিশ কোলে নিয়ে বসে পড়লাম।
বাবা মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
বাবাঃ হিয়া তোমার জন্য একটা চিঠি রেখে গেছে, লাবণ্য।
মাথা নিচু করে জিজ্ঞেস করলাম,
আমিঃ আপনি পড়েছেন?
বাবা কিছু বললো না।
আমার দিকে চিঠিটা বাড়িয়ে বললো,
বাবাঃ হিয়া বিশাল দায়িত্ব দিয়ে গেছে তোমার ওপর। ওর বিশ্বাস তুমি এই দায়িত্ব পালন করবে। আর আমিও জানি তুমি হিয়ার কথা ফেলতে পারবে না।
একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বাবা চলে গেলেন।
ভালোবাসার কষ্টের চিঠি
আমি চশমাটা চোখে দিয়ে চিঠিটা পড়তে শুরু করলাম।
স্নেহের লাবণ্য,
তোকে কখনো এই নামে ডাকিনি। এই জন্য তোর খুব মন খারাপ হতো, তাই না? কিন্তু কি করবো বল? লাবণ্য বলে ডাকলে তোকে পর পর মনে হতো। তাই তো নাম দিলাম রিয়া, হিয়ার বোন রিয়া। জানিস, তোর বোন বিরাট একটা ভুল করে ফেলেছে রে। এই ভুলের মাশুল হিসেবে প্রাণ দিয়ে দেয়াই শ্রেয় মনে হয়েছে। তুই চলে যাবার পর শাকিলের সাথে আমার সখ্যতা গড়ে ওঠে, শাকিল আমার ক্লাসমেট। ছেলেটা বড্ড সুন্দর দেখতে। ওর ওই চেহারার প্রেমে পড়ে আমি পলাশ ভাই কে ভুলতে বসলাম। পলাশ ভাই কে আর ভালো লাগতো না আমার।
আমি জানি, তুই থাকলে আমায় ভুল ঠিক বুঝিয়ে দিতে পারতি। কিন্তু তুই তো ছিলি না। সেদিন ইউনিভার্সিটি তে একটা প্রোগ্রাম উপলক্ষে আমার আর শাকিলের একটা পারফর্মেন্স ছিলো। পারফর্মেন্স শেষে শাকিল আমায় প্রপোজ করে বসলো। আমিও পাগলপারা হয়ে সম্মতি দিলাম। আমাদের সম্পর্কের কথা কেউই জানতো না। এদিকে আমি পলাশ ভাইকে কি বলবো বুঝতে পারলাম না। তবে কথা বলা কমিয়ে দিলাম তার সাথে। দিনে দিনে তার ওপর বিরক্তি এসে যাচ্ছিলো ওদিকে শাকিলের সাথে সম্পর্ক গভীর হয়ে গেছিলো আমার। বায়োলজিক্যাল ভালোবাসার কাছে আটকে গেলাম আর প্রকৃত ভালোবাসা ভুলে যাচ্ছি ধিরে ধিরে। শরীরের হরমোনগুলোকে কি দোষ দেব নাকি নিজেকে? কিন্তু হরমোন ছাড়া তো ভালবাসা হয় না, অক্সিটোসিন হরমোন আছে বলে তো ভালোবাসা আছে!
এই এক সপ্তাহ আগে আমি জানতে পারলাম, শাকিলের অস্তিত্ব আমার মাঝে বেড়ে উঠছে। আমি ভয় পেয়ে ওকে কথাটা জানাতেই ও সম্পূর্ণ অস্বীকার করলো এবং আমার সাথে সম্পর্ক ভেঙে দিলো। জানিস, এই সময়টাতেও পলাশ ভাই আমার হাত ছাড়লো না। সে সবটা মেনে নিলো। কিন্তু আমি মানতে পারলাম না, আমার মতো অপরাধীর এই পৃথিবীতে বাঁচার অধিকার নেই। রিয়া তোকে বড্ডো মনে পড়ছে রে, তোকে বুকে জড়িয়ে কাঁদলে বুঝি একটু হালকা লাগতো! কিন্তু কি করবো এটাই আমার শাস্তি।
রিয়া তুই আমাকে কথা দে আমি চলে যাবার পর তুই আমাদের পরিবারটাকে দেখে রাখবি। আর পলাশ ভাইকে বিয়ে করে নিবি? আমি জানি, এই পৃথিবীতে ওনাকে তোর চাইতে কেউ ভালোবাসতে পারবে না। উনি খুব ভালো রে, ওনার অর্ধাঙ্গিনী হওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। আমি জানি, তুই আমার কথা ঠিক রাখবি। আর আমাকে মাফ করে দিস।
আমি চিঠি পড়ে বুঝতে পারলাম না, কি করবো?
পলাশ ভাই একবারও আপার লাশ দেখতে আসেন নি, আমি কি তার খবর নেবো?
কিন্তু নেবো কেনো?
উনি তো আপা কে ভালোবাসতেন, আমার ডাকে উনি আসবেন কেনো?
ভালোবাসার খোঁজে
পলাশ ভাইকে খোঁজা, বড় মা কে সামলানো, বাসা চেইঞ্জ এতো এতো ঝামেলায় আমার ইয়ার লস দিতে হলো।
আমরা আমাদের নিজেদের বাসা ছেড়ে উত্তরায় একটা ভাড়া বাসায় উঠলাম।
তিন রুমের ছোটখাট বাসাটায় অনায়াসে সংসার সাজিয়ে নিলাম আমরা।
ওহ হ্যাঁ নানা-নানীও আসাম থেকে চলে আসলেন।
বড় মা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছিলেন। নানীমা নিজের মেয়ের মতো তাকে যত্ন আর্তি করতে লাগলেন।
আমি কাছের একটা প্রাইভেট কলেজে ভর্তি হলাম।
বাবাই আমাকে নিয়ে যাওয়া আসা করতেন। আমি একটা জিনিস সুক্ষভাবে খেয়াল করে দেখলাম, আমার ব্যাপারে বাবা বড্ড দায়িত্বশীল হয়ে পড়েছিলেন।
প্রতিদিন আনা নেয়া, আমার কি কি লাগবে, আমার প্রাইভেট শিডিউল এমনকি আমার পরীক্ষার তারিখ অবধি তার নোটবুকে টুকে রাখা শুরু হলো।
আমার অনেকবার মনে হয়েছে ওনাকে জিজ্ঞেস করে দেখি, পলাশ ভাই কেনো আসেনি? আমাকে নিয়ে আপনি এতো ভাবছেন কেনো?
কিন্তু জিজ্ঞেস করা হতো না, কোথায় যেন আটকাতো!
আমার জীবন নিয়মতান্ত্রিক হয়ে গেলো, প্রতিদিন ঘুম থেকে ওঠা, বড় মা কে ফ্রেশ করানো, তাকে নাশতা খাইয়ে দেয়া, তারপর কলেজে চলে যাওয়া।
সপ্তাহে তিনদিন আমার সব প্রাইভেট ছিলো আর বাকি তিনদিন ফ্রী।
প্রাইভেট ডে গুলোতে রাত এগারোটা বেঁজে যেত প্রাইভেট পড়তেই। তাই এসে ক্লান্ত শরীরে শুয়ে পড়তাম। সেদিন আর কোনো দিকে খেয়াল করার সুযোগ নেই।
বাকি দিনগুলোতে সব পড়াশোনা শুরু হতো সন্ধ্যা থেকে।
আমি পড়াশোনার ব্যাপারে আগে থেকেই সিন্সিয়ার ছিলাম। কিন্তু এখন শুধু একটাই পরিবর্তন হয়েছে সেটা হলো আমি হাসিখুশি থাকতে বেমালুম ভুলে গেছি।
আগে পড়ার ফাঁকে আপার সাথে দুষ্টুমি হতো। এখন হয়তোবা আপার কথা মনে করে অনায়াসে চোখ দিয়ে দু ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ে এর বেশি কিছু নয়।
এভাবেই কেটে গেলো একটা বছর।
এর মাঝে আমি পলাশ ভাইকে খোঁজা জারি রাখলাম। কিন্তু একা মানুষ কি করে?
সত্যিকারের ভালোবাসার কথা
আমি কখনো ফুপ্পিকে দেখিনি। পলাশ ভাইরা কোথায় থাকতো তা জানি না। পলাশ ভাই কই পড়ে, কিসে পড়ে কিছুই জানিনা। আর তার উপর আমায় সবসময় বাবা নিয়ে যাওয়া আসা করেন।
ওনাকে খোঁজার আশা যখন ছেড়ে দিয়েছি। তখনি একদিন বাবা আমার ঘরে এলেন।
আমি তখন পড়ছিলাম। উনি এসে আমার বিছানায় বসে পড়লেন।
আমি জিজ্ঞেস করলাম,
আমিঃ কিছু বলবেন?
বাবা আস্তে করে জবাব দিলেন,
বাবাঃ হু।
আমি বই বন্ধ করে ঘুরে বসলাম।
আমিঃ বলুন?
বাবাঃ তুমি আমাকে বাবা ডাকো না কেনো, লাবণ্য?
আমি বিস্মিত হলাম, এতদিন পর এই প্রশ্ন?
নিজেকে স্বাভাবিক রেখেই পাল্টা জিজ্ঞেস করলাম,
আমিঃ হঠাৎ?
বাবাঃ তুমি আমার বড্ডো প্রিয়, জানো? তুমি একদম তোমার মায়ের মতো দেখতে। তোমার মায়ের সাথে আমার ভুল সময়ে দেখা হলো।
আভা ছিলো বড্ডো চুপচাপ, সাদাসিধে ধরণের৷
আমি যখন তাকে বললাম, আমার দুঃখ সুখের সাথী হবে?
তখন সে বিনা বাক্য ব্যয়ে রাজি হয়ে গেলো। শুধু বললো, আমাকে কখনো কষ্ট দেবেন না, প্লিজ!
আমি ওকে পেয়ে আমার এ পক্ষের স্ত্রী-সন্তানকে ভুলে গেছিলাম একপ্রকার।
কিন্তু যখন আমার ফেরত আসবার সময় হলো ঠিক তখনই আমার টনক নড়লো। ততদিনে অনেক দেরী হয়ে গেছে।
তোমার অস্তিত্ব এসে গেছে ওর মাঝে।
আমি বুঝে উঠতে পারলাম না, কি করবো?
এই সমস্যার সমাধানও তোমার মা ই করে দিলেন।
ওকে ছেড়ে আমি চলে আসলাম আমার ঠিকানায়। তবে এখানে এসে শান্তিতে থাকতে পারছিলাম না কিছুতেই!
কতবার চেষ্টা করেছি ওর সাথে যোগাযোগ করার। কিন্তু ও নিজেই সব যোগাযোগ বন্ধ করে দিলো।
নতুন বিয়ের গল্প
বহুদিন পর লোকজন ধরে খবর পেলাম পৃথিবীতে ভূমিষ্ঠ হয়েছে আমার আরেক কন্যা সন্তান। তোমাকে একটাবার দেখবার জন্য হৃদয় চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যেত।
কিন্তু কিছু করার ছিলো না।
তোমার বয়স যখন সাড়ে তিন তখন হঠাৎ আভার খবর এলো, সে আমায় ডেকে পাঠালো।
মৃত্যু পথ যাত্রী আভা তোমাকে আমার কোলে দিয়ে বললো, লাবণ্যকে দেখে রেখো। আমি প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করলাম, এর শাস্তি ওকে দিও না?
তোমায় নিয়ে বাড়িতে চলে আসলাম আমি। কিন্তু অহনা তোমায় মানতে পারলো না। সে হুমকি দিলো হিয়াকে নিয়ে চলে যাবে।
আমি সংসার বাঁচাতে আভাকে দেয়া প্রতিজ্ঞা ভুলে অহনা কে নতুন প্রতিজ্ঞা করে বসলাম। বললাম, ও যতদিন না চাইবে ততদিন আমি তোমাকে বাবার আদর স্নেহ দেবো না।
আমি তাই মেনে নিলাম।
কিন্তু তোমাকে নিয়ে আমার ভয় হতো মা।
আদর ভালোবাসা না পেলে তুমি বেঁচে থাকবে কি করে?
আমার এই ভয় কে দূর করে দিলো হিয়া।
সে তোমাকে মা-বাবা দু’জনের আদরই দিলো।
মাঝেমধ্যে তোমাদের সম্পর্ক দেখে আমার খুব অবাক লাগতো। খুশিও হয়েছিলাম খুব।
জানো মা, আমার অনেক ইচ্ছে করতো তোমাকে আদর করে খাইয়ে দিতে, তোমার সাথে খেলা করতে, অফিস শেষে মুঠোভর্তি চকলেট নিয়ে আসতে। কিন্তু দায়িত্বের বাঁধনে আমি আবদ্ধ হয়ে গেছিলাম।
ভালোবাসার আবদার
আল্লাহর কাছে দোয়া করছিলাম সব ঠিক হোক। তুমি আমাকে বাবা বলে ডাকো, অহনা তোমাকে স্বীকৃতি দিক।
সব ঠিক হলো কিন্তু হিয়া টা হারিয়ে গেলো।
এটা তো আমি চাইনি।
আমি কিছু বলার মতো খুঁজে পেলাম না।
কিছুটা সময় চুপ থেকে বাবা ই আবার বললেন, আমি যদি তোমাকে পলাশের খোঁজ দেই তা’হলে তুমি কি আমাকে বাবা বলে ডাকবে?
আমি অবাক হয়ে বাবা’র দিকে তাকালাম।
আমিঃ আপনি পলাশ ভাইয়ের খোঁজ জানেন?
বাবাঃ হ্যাঁ।
আমিঃ আপনি জানেন পলাশ ভাই কেনো হিয়া আপাকে শেষ বার দেখতে আসেনি? পলাশ ভাই এতদিন কোথায় ছিলো? আমাদের সাথে যোগাযোগ নেই কেনো?
বাবাঃ আমি কিচ্ছু জানিনা মা, কিচ্ছু জানিনা। শুধু জানি, পলাশ কোথায় জব করে?
আমিঃ আপনি এগুলো না জানলে পলাশ ভাইয়ের জব সম্পর্কে জানলেন কি করে?
বাবাঃ তোমাকে কলেজে নামিয়ে দেবার পর একদিন আমি ওকে একটা কোচিং সেন্টারে যেতে দেখেছি। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি ও ওখানে ক্যামিস্ট্রি পড়ায়।
আমিঃ উনি তো আপনার বোনের ছেলে। তা’হলে আপনাদের যোগাযোগ নেই কেনো?
বাবাঃ আসলে পলাশের মা মানে দিশা আপা আমার নিজের বোন না। আমার মায়ের কোনো মেয়ে ছিলো না। এজন্য আপা কে পালিত নিয়েছিল। সম্পত্তি নিয়ে ছোট ঝামেলা করার পর আপা অভিমান করে চলে যায়। আর আমাদের সাথে যোগাযোগ করেনা।
আমিঃ ছোট চাচা তো সব সম্পত্তিই পেলো। তা’হলে এখন যোগাযোগ করেন না কেনো?
বাবাঃ আমি ওদের খোঁজ পাই না, মা।
আমিঃ মানুষ চাইলেই পারে।
আমার কথা শুনে বাবা মাথা নিচু করে থাকলেন।
আমি আর কিছু বললাম না। সে এত ঝামেলায় থাকে আসলে তাকেও তো দোষ দেয়া যায় না।
ভালবাসার দৃষ্টি
পরদিন কলেজ শেষে আমি কোচিং সেন্টার টায় গেলাম। কিন্তু পলাশ ভাইয়ের দেখা পেলাম না। ওখানে দায়িত্ব রত একজন টিচার বললেন, পলাশ ভাই এখন শুধু এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের স্পেশাল ব্যাচ পড়ান। আর ভর্তি পরীক্ষা যারা দেবে তাদের পড়ান।
দু’টো ব্যাচই সন্ধ্যার পর।
তারমানে ওনার দেখা পেতে হলে আমাকে সন্ধ্যায় আসতে হবে?
আমি সেদিনকার মতো বাড়ি চলে গেলাম।
রাতে বান্ধবী ফোন করে বললো,
বান্ধবীঃ আমাদের এখন থেকেই কোচিং করা উচিৎ। তা’হলে চাপে থেকে পড়াশোনার গতিটা ঠিক থাকবে।
আমি যথেষ্ট চাপের মধ্যেই ছিলাম। কিন্তু আমার পলাশ ভাইয়ের সাথে দেখা করার দরকার ছিলো। তাই ভাবলাম, ঐ কোচিংটায় ভর্তি হয়ে যাই।
বাবা’র সাথে আলোচনা করে এক সপ্তাহের মাঝেই কোচিংয়ে ভর্তি হয়ে গেলাম।
বেছে বেছে ঐ দিন গুলোতেই ক্লাস সিডিউল নিলাম। যেদিন করে পলাশ ভাই পড়াতে আসেন।
টাইম ম্যাচ করে নেয়ার পরেও কোনো কারণে আমি আসলে পলাশ ভাইয়ের দেখা পাচ্ছিলাম না। উনি ক্লাস করাতো, আমি ওনার কন্ঠ শুনতাম। কিন্তু আমারও ক্লাস চলায় আমি বাইরে বেরিয়ে ওনার সাথে দেখাটা করতে পারছিলাম না। আর আমার ক্লাস শেষ হতে হতে উনি টিউশনি তে চলে যেতেন।
এত কাছাকাছি থেকেও ওনার সাথে দেখা হচ্ছে না। এই ব্যাপারটায় আমি বিরক্ত হয়ে উঠছিলাম।
আমার ইয়ার ফাইনাল এসে গেলো দেখতে দেখতেই। কোচিংয়ে ডেইলি পরীক্ষা হচ্ছে।
ক্যামেস্ট্রি পরীক্ষার দিন আমাদের রুমে ডিউটি পড়লো পলাশ ভাইয়ের।
উনি আমাকে দেখে খানিকটা অবাকই হলেন।
ওনাকে দেখে আমি লিখতেই ভুলে গেলাম এক্সাইটমেন্টে।
তাড়াহুড়ো করে যা তা লিখে আগেই বের হয়ে অফিস রুমের কাছাকাছি দাঁড়িয়ে থাকলাম। প্রায় পনেরো মিনিট পরে সবার পরীক্ষা শেষ হলে উনি যখন খাতা গুনছেন তখন আমি ফাঁকা ক্লাস রুমটায় ঢুকে গেলাম।
উনি আমার দিকে না তাকিয়েই বললেন,
পলাশ ভাইঃ কিছু বলবে লাবণ্য?
আমার কান্না এসে যাচ্ছিলো। আমি জড়ানো গলায় বললাম,
আমিঃ আপনি আপাকে দেখতে আসেননি কেনো, পলাশ ভাই?
উনি খাতা গুছিয়ে নিয়ে বললেন,
পলাশ ভাইঃ তুমি দশ মিনিট দাঁড়াতে পারবে? এখানে কথা বলতে চাইছি না।
আমি মাথা নেড়ে সম্মতি দিলাম।
উনি অফিস রুমে খাতা রাখতে গেলেন।
কষ্টের জীবন
এক দেড় বছরে মানুষটা কতখানি পরিবর্তন হয়েছে, চেহারা ভেঙেছে, চোখের নিচে কালি।
চুলগুলো কেমন উসকোখুসকো হয়ে আছে আর মুখ ভর্তি দাড়ি, শার্ট টাও কোঁচকানো।
পলাশ ভাইয়ের এই বেশভূষা দেখে আমার চোখে পানি এসে গেলো।
উনি আসার আগে আগেই চোখ মুছে নিলাম।
উনি দশ মিনিটের মাঝেই ফিরে এলেন।
পলাশ ভাইঃ চলো, বাইরে একটা চা’য়ের দোকান আছে ওখানটায় বসি?
আমি ওনার পিছুপিছু যেতে থাকলাম। এর মাঝে ফোন করে বাবা কে বলে দিলাম একটু দেরি করে নিতে আসতে।
চা’য়ের দোকানে বসে উনি জিজ্ঞেস করলেন,
পলাশ ভাইঃ কেমন আছো, লাবণ্য?
আমি ওনার দিকে তাকিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করলাম,
আমিঃ আপনি কেমন আছেন, পলাশ ভাই? এতদিন যোগাযোগ করেন নি কেনো?
পলাশ ভাইঃ সুযোগ হয়নি।
আমিঃ সুযোগ হয়নি?
পলাশ ভাইঃ তোমরা তো আগের বাসা ছেড়ে দিয়েছো।
আমিঃ আপনি আপাকে দেখতে এলেন না কেনো? আমার আপনাকে কতকিছু বলবার ছিলো, পলাশ ভাই।
পলাশ ভাইঃ আমি গেছিলাম, লাবণ্য। কিন্তু আমাকে ঢুকতে দেয়া হয়নি। ছোট মামা তো আমাদেরকে পছন্দ করতেন না। তাই উনি ঢুকতে দেননি। আমি অনেক রিকোয়েস্ট করেছিলাম কিন্তু কাজ হয়নি।
ওনার চোখেমুখে বিষন্নতা ফুটে উঠলো।
আমি ওনার কথা শুনে কেঁদে ফেললাম।
আমিঃ সবকিছু কেমন হয়ে গেলো, পলাশ ভাই। এমনটা তো হওয়ার কথা ছিলো না। খুব কষ্ট হয় আমার জানেন?
পলাশ ভাইঃ এটাই বাস্তবতা লাবণ্য। মানুষ কখনো পরিপূর্ণ সুখ পেতে পারেনা। জীবন চলার পথে একবার হোঁচট খেতেই হয়৷
ভালো লাগা ও ভালোবাসার শুরু
ওনার সাথে আরো অনেক কথা হলো।
কথার মাঝেই বাবা এসে গেলেন, পলাশ ভাই কে বুকে জড়িয়ে ওনার সে কি কান্না!
অনেক রিকোয়েস্ট করার পরেও ওনাকে বাসায় নিয়ে যাওয়া গেলো না।
পরে ওনার ঠিকানা নিয়ে আমরা চলে আসলাম।
এর পর থেকে আমি প্রতিদিনই পলাশ ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ করতে থাকলাম।
কোচিং শেষে ওনার জন্য দাঁড়িয়ে থাকতাম।
উনি হেসে বলতেন, এভাবে প্রতিদিন গল্প করে সময় ব্যায় করলে আমাকে আর টিউশনি দেবেনা কেউ।
আমি বলতাম, আমাকেই পড়াতে আসবেন।
উনি হাসতেন।
এরকম করেই কেটে গেলো আরো কয়েকটা মাস। আমার মনে এবং মস্তিষ্কে আপার লেখা একটা কথাই গেঁথে গেলো “আমি জানি এই পৃথিবী ওনাকে তোর থেকে বেশি কেউ ভালোবাসতে পারবে না।”
মাঝেমধ্যে ভাবতাম, আমি কি ওনাকে ভালোবেসে ফেলেছি? কিন্তু এটা কি করে হয়?
উনি তো আমর আপাকে ভালোবাসেন। আপা যতই বলুক, আমার ওনার জীবনের সাথে জড়ানো ঠিক হবেনা।
আমি পড়ে গেলাম সংশয়ে। আমি জানতাম, ওনার সঙ্গ আমার বড্ডো প্রিয়।
ঠিক করলাম ওনার সাথে আর দেখা করবো না। আর অপেক্ষা করবো না প্রতিদিন।
এক সপ্তাহ আসলেই অপেক্ষা করা ছেড়ে দিলাম। কিন্তু মনটা অশান্ত হয়ে উঠতে শুরু করলো।
প্রেমের সন্দেহ
সপ্তাহ খানেক বাদে আবার আমাকে অপেক্ষা করতে দেখে পলাশ ভাই জিজ্ঞেস করলেন,
পলাশ ভাইঃ কি ব্যাপার এতদিন খবর ছিলো না কেনো?
আমি জবাব না দিয়ে ওনার দিকে তাকিয়ে ছিলাম। মনে হচ্ছিল, মানুষটার চেহারা দেখে চোখ দুটো জুড়িয়ে গেছে।
মনের অশান্তি আর নেই।
কিন্তু আমি যে ওনাকে ভালো বেসে ফেলেছি এটা ওনাকে বুঝতে দেয়া যাবে না।
এটাসেটা বলে কথা কাটিয়ে দিলাম।
জীবন নিজস্ব গতিতেই চলছে আমাদের। কিছুদিন পর পলাশ ভাই ব্যস্ত হয়ে গেলেন।
কোচিংয়ে ব্যাচ বাড়লো ওনার। এখন দিনের বেলা করেও ক্লাস নিতে শুরু করলেন উনি।
আমাদের চা আড্ডার সময় কমে আধ ঘন্টা হয়ে গেলো।
আগে যেমন সকল বিষয়ে গল্প হতো এখন সেটা বন্ধ হয়ে গেলো। উনি শুধু পড়াশোনা নিয়ে কথা বলেন।
আমার তাতেও কোনো আপত্তি নেই।
আমার মুখের হাসি ফেরত আসলো।
সবচাইতে প্রিয় বান্ধবী টিকে মনের কথা সব বলে দিলাম।
ও পলাশ ভাইকে দেখলেই আমাকে চিমটি কেটে এটাসেটা বলে ক্ষেপা তো।
ও সহ ঠিক করলাম আমরা ক্যামেস্ট্রি পলাশ ভাইয়ের কাছেই পড়ব। কিন্তু পলাশ ভাইকে বলার পর উনি এটাসেটা কারণ দেখিয়ে না করে দিলেন।
প্রচন্ড কষ্ট পেলাম আমি, অভিমানে পলাশ ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিলাম।
একদিন আমার বান্ধবী এসে বললো, ও নাকি একটা মেয়ের সাথে পলাশ ভাই কে প্রায় ই দেখে।
ওদের চাল চলন দেখে মনে হয় ওরা একে অপরকে ভালোবাসে।
এটা শুনে আমার পায়ের নিচে থেকে যেন মাটি সরে গেলো।
আমি নিজেও একদিন পলাশ ভাইকে একটা মেয়ের সাথে রাস্তায় দেখলাম, কষ্টের চাইতে রাগ হলো বেশী।
ওদের ওপর নজর রাখতে শুরু করে দিলাম।
এদিকে পলাশ ভাইয়ের সাথে আমার কোনো যোগাযোগ নেই। ভেবেছিলাম, ওনাকে মেয়েটার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবো কিন্তু ইচ্ছে করলো না।
আমার বান্ধবী বললো মেয়েটার খোঁজ নে। তারপর মেয়েটার সাথে দেখা করে জানতে চা আসলে ওদের সম্পর্ক আছে কি না!
আমিও ভাবলাম, খোঁজ নেয়া দরকার।
ভাবনানুযায়ী মেয়েটার খোঁজ চললো এবং মেয়েটার পরিচয় জানতে পেরে আমি অবাকের শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গেলাম।
এই মেয়ে আর কেউ নয় শাকিলের ছোট বোন মিফতা।
প্রেমের প্রতিশোধ
মনে বিভিন্ন প্রশ্নের উদ্রেক হলো। পলাশ ভাই কি জানেন মিফতা শাকিলের বোন? উনি কি জেনে বুঝে প্রেম করছেন নাকি কোনো উদ্দেশ্য আছে?
এবার আমি চুপ থাকা ঠিক মনে করলাম না।
সরাসরি পলাশ ভাইয়ের সাথে কথা বলা দরকার আমার।
আবার সন্ধ্যায় কোচিংয়ের পর অপেক্ষা করলাম।
পলাশ ভাই আমাকে দেখে গম্ভীর হয়ে বললেন,
পলাশ ভাইঃ তুমি এতদিন পর আবার কেনো?
আমি ওনার কাছে গিয়ে বললাম,
আমিঃ আমার আপনার সাথে কথা আছে, বাসায় চলুন।
পলাশ ভাইঃ আমার সময় নেই। আমি যেতে পারবো না।
আমিঃ আপনি মিথ্যে বলছেন। প্লিজ, পলাশ ভাই বাসায় চলুন?
পলাশ ভাইঃ সম্ভব না। ফিরে যাও তুমি।
এটা বলে উনি চলে গেলেন।
আমি দমে গেলাম না। প্রতিদিন অপেক্ষা করতে থাকলাম। কিন্তু উনি আমাকে উপেক্ষা করে চলে যাচ্ছিলেন।
একদিন সিদ্ধান্ত নিলাম ওনার বাসাতেই চলে যাবো এবং আমি তাই ই করলাম।
আকাশের অবস্থা তেমন ভালো নয়। কেমন গুমোট মেরে আছে।
যখন তখন বৃষ্টি নামতে পারে।
একপ্রকার রিস্ক নিয়েই ওনার বাড়িতে পৌঁছালাম।
আমাকে দেখে উনি অবাক এবং রাগ হলেন।
ধমক দিয়ে বললেন,
পলাশ ভাইঃ এই ভর সন্ধ্যাবেলা তুমি আমার বাসায় কি করছো?
আমি ওনার কথার জবাব না দিয়ে ঘরের ভেতরে ঢুকে আগে প্রশ্ন করলাম,
আমিঃ শাকিলের বোনের সাথে আপনার কিসের সম্পর্ক?
উনি গম্ভীর হয়ে বললেন,
পলাশ ভাইঃ তুমি আমাকে ফলো করছো?
আমিঃ হ্যাঁ করছি।
পলাশ ভাইঃ কেনো করছো?
আমিঃ আপনি আগে বলুন শাকিলের বোনের সাথে আপনার কিসের সম্পর্ক?
পলাশ ভাইঃ ও আমার ফিয়ন্সে।
আমিঃ আপনি জেনে বুঝে ওকে বিয়ে করছেন?
পলাশ ভাইঃ মানে?
আমিঃ আপনি শাকিল কে চেনেন না? আপনি কি করে ওর বোনকে বিয়ে করতে চাইছেন? আপনি না আপাকে ভালোবাসতেন?
পলাশ ভাইঃ ভালোবাসতেন নয় ভালোবাসি।
আমিঃ এক মিনিট আপনি আপাকে ভালোবাসলে মিফতা কে বিয়ে করছেন কেনো? আপনার উদ্দেশ্য কি?
পলাশ ভাইঃ তুমি চলে যাও, লাবণ্য।
আমিঃ কেনো চলে যাবো আমি? আপনি মিফতা কে কেনো বিয়ে করছেন বলুন?
পলাশ ভাইঃ তোমাকে জবাব দিতে আমি বাধ্য নই।
আমিঃ আপনাকে জবাব দিতে হবে পলাশ ভাই। আপনি কেনো মিফতা কে বিয়ে করছেন? আপনি সবটা ভুলে গেছেন নাকি এর পেছনে অন্য কারণ? এই আপনার ভালোবাসা ছিঃহ্!
পলাশ ভাইঃ আমি কিচ্ছু ভুলিনি, কিচ্ছু না। চেঁচিয়ে উঠলেন উনি।
আমিঃ পলাশ ভাই আপনি প্রতিশোধের জন্য কি বিয়েটা করছেন?
পারিবারিক ভালোবাসা
এবারে উনি চুপ করে গেলেন।
ওনার মৌনতা অনেক কিছুই বুঝিয়ে দিলো।
আমাদের চেঁচামেচি শুনে একজন মধ্য বয়সী মহিলা দৌড়ে এলেন ঘরটায়।
ব্যতিব্যস্ত হয়ে বললেন,
মহিলাঃ বাবা পলাশ কি হয়েছে? ও কে?
মহিলা কে দেখে বুঝতে অসুবিধা হলো না ইনিই পলাশ ভাইয়ের মা।
পলাশ ভাই স্বাভাবিক হয়ে ওনার কাছে গিয়ে বললেন,
পলাশ ভাইঃ কিছু হয় নি, মা। ও হলো লাবণ্য, মেজ মামার মেয়ে।
ফুপ্পি অবাক হয়ে আমাকে দেখলেন। তারপর ভেতরে এসে আমাকে ইশারায় কাছে ডাকলেন।
আমি ওনার সামনে যেতেই আমার মাথায় হাত রেখে বললেন,
ফুপিঃ তুই রিয়া? এতবড় হয়েছিস, তুই?
আমি নিজেও অবাক। আমার এই নামটা উনি জানলেন কি করে?
উনিই আবার বললেন,
ফুপিঃ হিয়া তোর কথা অনেক বলতো জানিস? তোর সাথে ওর ছবিও দেখিয়েছিলো। ঐ দেখ?
পলাশ ভাইয়ের ঘরে বা পাশের দেয়ালটার দিকে ইশারা করলেন। আমি ঘাড় ফিরিয়ে দেখলাম আমার আর আপার একটা ছবি ফ্রেমে বাঁধিয়ে লাগানো।
আমি এবার পলাশ ভাইয়ের দিকে তাকালাম। উনি মাথা নিচু করে রাখলেন।
ফুপ্পি আমাকে আবার বললেন,
ফুপিঃ হিয়া এটা দিয়েছিলো ওকে। মেয়েটা বড্ডো ভালো ছিলো। মারা যাবার আগে আমাকে কি বলেছিল জানিস? বলেছিল কখনো ও না থাকলে তোকে যাতে আমরা আপন করে নেই। তোর মাঝে নাকি ওরই প্রতিচ্ছবি আছে।
তখন তো আমরা বুঝিনি ও আমাদের মাঝে আর বেশিদিন নেই।
ফুপ্পি আঁচল মুখে গুঁজে কেঁদে ফেললেন।
ফুপ্পির আসার ফলে মিফতার ব্যাপারটা দমে গেলো।
ফুপ্পি আমাকে নিয়ে গল্প করতে বসে গেলেন।
অদৃশ্য সাইকো
আটটার দিকে বাবা ফোন করায় ওনাকে বললাম,
আমিঃ এখানেই চলে আসতে।
বাবাও দেরি না করে সোজা চলে আসলেন।
ভাই-বোনের আবার মিল হলো।
চলে আসার পূর্ব মুহুর্তে আমি পলাশ ভাই কে গিয়ে বললাম,
আমিঃ প্লিজ, না জেনেবুঝে কোনো ভুল করবেন না। আমার আপনার সাথে কথা আছে। একটাবার শুনবেন, প্লিজ।
উনি হ্যাঁ বা না কিছু বললেন না। কিন্তু মনে হলো আমার কথা উনি একবার শুনবেনই।
মাঝপথে প্রচন্ড ঝড় বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলো।
বাবা অফিসের গাড়ি করে এসেছিলেন, গাড়িতে থাকায় আমরা ভিজলাম না ভাগ্যিস!
বাসার কাছাকাছি আসার পর বাবা আমাকে জিজ্ঞেস করলেন,
বাবাঃ লাবণ্য, তুমি কি পলাশ কে ভালোবাস?
আমি মাথা নিচু করে থাকলাম। কোনো জবাব দিলাম না।
কি বলা উচিৎ বাবা কে খুঁজে ই পেলাম না যেন!
পরেরদিন পলাশ ভাই কোচিংয়ে ক্লাস নিতে আসেন নি আর না ঐ মেয়েটা।
আমি আমার বান্ধবী জুহি সহ শাকিলের বাসায় গেলাম। কিন্তু বাড়িটায় তালা লাগানো।
আশেপাশের মানুষদের জিজ্ঞাসাবাদ করায় তারা বললো শাকিলরা নাকি রাতারাতি গায়েব।
আমরা অবাক হয়ে গেলাম। রাতারাতি মানুষ গায়েব কি করে হয়?
অন দ্য ওয়ে আমরা শাকিলের ভার্সিটি গিয়ে খোঁজ লাগালাম। ওর কয়েকজন বন্ধু বললো কয়েকজন পাতি রাজনৈতিক নেতাদের সাথে দু’দিন আগে শাকিলের ঝামেলা হয়।
টাকা পয়সা সম্পর্কিত ঝামেলার কারণে ওকে শাসিয়ে যায় ওরা। তারপর থেকেই শাকিলদের কোনো খোঁজ নেই। আমার সন্দেহ হলো এই সব ঘটনা পলাশ ভাই জানেন।
আমি জুহিকে বাড়ি পাঠিয়ে পলাশ ভাইয়ের বাসায় চলে গেলাম। ফুপ্পি বললো, সকালেই সে বেরিয়ে গেছে কোনো কাজে।
এই কথা শুনে আমি পড়লাম অকুল দরিয়ায়।
ফুপ্পি বারবার জিজ্ঞেস করছিলেন, কোনো সমস্যা কি না।
আমি ওনাকে নোটস্ নেবার কথা বলে কাটিয়ে দিলাম। তারপর মনে হলো উনি ওনার কোনো ক্লোজ ফ্রেন্ডের বাসায় যেতে পারে নিশ্চয়ই?
ফুপ্পিকে জিজ্ঞেস করায় সে বললো, জিসান নামক একজন বন্ধু আছে ওর। আজ সকালেও ওর সাথেই কথা বলে বেরিয়েছে।
পাগলামি ভালোবাসা
আমি চটজলদি ফোন নাম্বার টা নিয়ে নিলাম।
বেরিয়ে এসে জিসান ভাই কে কল করলাম।
প্রথমবার আমার পরিচয় পাওয়া মাত্রই উনি ফোন কেটে দিলেন। আমি লাগাতার ফোন দেবার পরও সে যখন রিসিভ করলো না। তখন একটা মেসেজ পাঠিয়ে দিলাম “প্লিজ ভাইয়া, একবার রিসিভ করুন জরুরি কথা আছে।”
দু মিনিট পর সে নিজেই কল করলো।
রিসিভ করে আমি জিজ্ঞেস করলাম,
আমিঃ পলাশ ভাইয়ের কোনো খোঁজ জানেন, ভাইয়া?
উনি না করে দিলো।
আমি অনুনয় করলাম অনেক। বেশ কিছুক্ষণ চুপ থেকে উনি বললো,
জিসানঃ জলদি আমার ফ্ল্যাটে চলে যাও। পলাশ ওখানেই আছে। আমার সন্দেহ হচ্ছে ও কিছু ভুল করতে যাচ্ছে। আমি তোমাকে এ্যাড্রেস মেসেজ করে দিচ্ছি?
আমি বললাম, ভাইয়া প্লিজ আপনিও চলুন? আমি তাকে আটকাতে পারবো না।
জিসানঃ আচ্ছা ঠিকাছে। তুমি কোথায় আছো বলো, আমি আসছি?
আধঘন্টার মধ্যেই উনি চলে আসলেন। আমরা দু’জনে মিলে ওনার ঐ ফ্ল্যাটের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম।
ফ্ল্যাট টা শুনশান একটা জায়গায়, সহজে কেউ আসবে না এরকম।
জিসান ভাই এবং আমি দু’জনেই কয়েকবার পলাশ ভাই কে কল করলাম। কিন্তু রিসিভ হলো না।
একবার মনে হলো উনি কি এখানে আছেন?
লোকেশন ট্রেস করে এখানেই পাওয়া গেলো।
নিচ তলায় সব ইউনিটের দরজা গুলিতে তালা লাগানো।
আমরা দোতলায় উঠলাম চেক করার জন্য।
ওখানেই একটা ইউনিটের দরজা ভেতর থেকে লক পাওয়া গেলো।
কলিংবেল বাজালাম আমরা কয়েকবার। কিন্তু দরজা খুললো না।
ওপাশে থেকে গোঙ্গানীর শব্দ আসছিলো। জিসান ভাই এক্সট্রা চাবি দিয়ে দরজা টা খুললো।
দরজা খুলে আমরা অবাক। ড্রয়িংয়েই একটা চেয়ারে মিফতা কে বাঁধা। ওর মুখেও কাপড় লদিয়ে বেঁধে রাখা। আর তার পাশেই ড্রিংকস করছে পলাশ ভাই।
চোখগুলো টসটসে লাল।
রহস্যময় ভালোবাসা
আমাদের দেখেও তার ভাবান্তর হলো না। সে সিগারেটে টান দিয়ে ভেঙ্গে ভেঙ্গে বললো,
পলাশ ভাইঃ তোরা এইখানে কি করিস?
জিসান ভাই ওনার কাছে গিয়ে বললো,
জিসানঃ তুই এই মেয়েকে বেঁধে রেখেছিস কেনো? আর ড্রিংকস করিস তুই কবে থেকে?
উনি হাসলেন কিন্তু জবাব দিলেন না।
আমি গিয়ে মিফতা’র হাত-মুখের বাঁধন খুলে দিলাম।
মিফতা আমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে কেঁদে বললো,
মিফতাঃ ও নাকি আমাকে রেপ করতে নিয়ে এসেছে।
পলাশ ভাই বসা থেকে উঠে দাঁড়ালেন। চেঁচিয়ে বললেন,
পলাশ ভাইঃ এ্যাই তুই ওকে খুলেছিস কেনো? এতবড় সাহস তোর?
মিফতা আমার জামা শক্ত করে চেপে ধরলো।
আমি জিসান ভাই কে ইশারা করায় উনি পলাশ ভাইয়ের হাত টেনে ধরলেন। আমি মিফতা কে অন্য একটা রুমে নিয়ে গেলাম। তারপর ওকে পানি দিয়ে বললাম,
আমিঃ তুমি ফ্রেশ হও। আর ভেতর থেকে দরজা লাগিয়ে দাও। আমি যতক্ষণ না বলবো দরজা খুলবে না।
মিফতা আমার হাত চেপে ধরে বললো,
মিফতাঃ নাহ্ প্লিজ তুমি যেও না?
আমি বললাম,
আমিঃ চিন্তা নেই। আমরা আছি, কিন্তু তুমি এখানে কেনো?
মিফতা কেঁদে বললো,
মিফতাঃ পলাশ আমাকে বেড়াতে নিয়ে যাবে বলে এখানে নিয়ে এসেছে।
পুরো ব্যাপারটা বুঝে কোনো স্টেপ নেয়ার আগেই ও আমায় বেঁধে ফেলে।
আমিঃ তোমার ফ্যামিলি কই?
মিফতাঃ আমার ভাইয়ার কারণে কি যেন সমস্যা হয়। পরে বাবা ওকে নিয়ে গ্রামের বাড়ি চলে যায়।
আমি আর মা খালা বাসায় চলে যাই কাল।
আমার পরীক্ষা জন্যে বাবা নেয়নি আমাদের।
আমিঃ বুঝতে পেরেছি। তুমি দরজা লাগিয়ে বসো। আমি আসছি।
কষ্টের প্রেমের যন্ত্রণা
বাইরে বেরোতেই পলাশ ভাই ছুটে আসলেন। আর চেঁচাতে লাগলেন,
পলাশ ভাইঃ লাবণ্য কই নিয়ে গেলি। ঐ বাস্টার্ড শাকিলের বোন টাকে? আজ ওরে রেপ করে আমি আমার হিয়ার মৃত্যুর প্রতিশোধ নিবো।
আমার প্রচন্ড রাগ হলো। আমি বললাম,
আমিঃ আপনি অমানুষ হয়ে গেছেন, পলাশ ভাই।
সে পাগলের মতো হেসে আমার বাহু চেপে ধরে বললো,
পলাশ ভাইঃ হ্যাঁ হয়েছি। আর আমাকে অমানুষ বানাইছে ঐ শাকিল। আমি আমার হিয়ার মৃত্যুর প্রতিশোধ নিবোই *গী টাকে রেপ করে।
জিসান ভাই আমাকে ছাড়িয়ে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলেন পলাশের গালে।
পলাশ কয়েক কদম পেছনে সরে গেলো। জিসান ভাই চিল্লিয়ে বললেন,
জিসানঃ কি পরিমাণ নিচ হইছিস তুই! পলাশ ছিঃহ্! হিয়া স্বেচ্ছায় শাকিলের কাছে নিজেকে সঁপে দিয়েছিল। আর তুই অমানুষের মতো একটা মেয়ের সম্মান নিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছিস? এজন্যই তুই আমার ফ্ল্যাটের চাবি নিয়েছিলি? আর কেউ খোঁজ করলে কিছু না বলতে বলেছিলি? হায় রে আমি ভাবলাম, তুই তোর মাইন্ড ফ্রেশ করার জন্য ঘুরতে চাইছিলি।
পলাশ ভাই মেঝেতে পা ছড়িয়ে বসে বিড়বিড় করতে লাগলেন। আমি তো হিয়ার মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে এসেছিলাম রে, প্রতিশোধ নিতে এসেছিলাম।
আমি ধীর পায়ে এগিয়ে ওনার কাছে বসলাম।
বললাম,
আমিঃ পলাশ ভাই আপার সাথে যেটা হয়েছে সেটা ঠিক হয়নি। তীব্র অপরাধবোধে আপা নিজের প্রাণ বিসর্জন দিয়েছে। এখানে এক তরফা শাকিলেরও দোষ নেই। শাকিল আপাকে বাচ্চা সমেত মেনে নেয়নি। এটা শাকিলের ত্রুটি। এখানে শাকিলের পরিবারের কোনো দোষ নেই, মিফতার তো না ই। একটা মেয়ের সম্মান হারানোর যন্ত্রণা কত খানি তার প্রমাণ আপা দিয়ে গেছেন, হোক তা স্বেচ্ছায়! আপনি তো সবই বোঝেন পলাশ ভাই। তা’হলে এই ভুল আপনি কি করে করতে পারলেন?
পলাশ ভাই আমার দিকে তাকালেন। তাকিয়েই থাকলেন কতটা সময় তারপর আচমকা কেঁদে উঠলেন।
আহাজারি করে বলতে শুরু করলেন,
পলাশ ভাইঃ হিয়া কে ছাড়া থাকতে আমার বড্ডো কষ্ট হয় রে রিয়া। আমার নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়। ওকে আমি কতই না ভালোবাসতাম, ও কি করে শাকিলের কাছে গেলো? যাক, আমি তবুও মেনে নিয়েছিলাম। কিন্তু এরপর ও যেটা করলো? শুরু থেকে আমাকেই কেনো কষ্ট পেতে হলো রে? জানিস, আমার কষ্ট আরো বেড়ে যায় যখন আমি তোকে সামনে দেখি। আমি তো হিয়াকে ছাড়া আর কাউকে আমার জীবনে ভাবতে পারতাম না। সেই আমার মনে তুই এসে গেলি কেনো হঠাৎ? বল রিয়া, কেনো এলি তুই? আমাকে কেনো তোরা এভাবে কষ্ট দিস? তোকে না পারি আগলে নিতে না পারি যেতে দিতে, আর না পারি হিয়াকে ভুলতে। কি করবো আমি বলে দে?
কাঁদতে কাঁদতে উনি হেলে পড়লেন আমার বাহুতে, মাথা ঠেকিয়ে ফুঁপিয়ে গেলেন।
সিনেমাটিক জীবন
আমি নিস্তব্ধ হয়ে গেলাম, উনি আমাকে নিয়েও ভাবতে শুরু করেছেন।
আসলেই আমার আসা তার জীবনে বড় অভিশাপ কি?
কাঁদতে কাঁদতে উনি একসময় ঘুমিয়ে গেলেন।
বিকেল হয়ে গেছে, জিসান ভাইকে বলে ওনাকে গাড়িতে নেয়ার ব্যবস্থা করলাম।
মিফতা ওনার এই হাল দেখে জানতে চাইলো কি হয়েছে?
বাধ্য হয়ে ওকেও সবটা বলতে হলো শুধু আমার ব্যাপার টা রেখে।
সব শুনে ও কাঁদলো বললো,
মিফতাঃ আমার ভাই এমনটা করতে পারে ভাবিই নি। তোমরা প্লিজ ওকে মাফ করে দিও। ওর হিসাব আল্লাহই ওকে দেবে।
আমরা ওকে ওর খালা বাসায় নামিয়ে দিয়ে বললাম, এসব যাতে ভুলে যায় আর পলাশ ভাইকেও মাফ করে দেয়।
পলাশ ভাই কে জিসান ভাইয়ের বাসায় নিয়ে যাওয়া হলো। কারণ ওনাকে ড্রাংক অবস্থায় দেখে ফুপ্পি কষ্ট পাবে।
ওনাকে নামিয়ে আমি বললাম, আমায় যাতে ফুপ্পির বাসায় নামিয়ে দেয়।
ফুপ্পির বাসার সামনে নেমে ওনাকে বললাম, পলাশ ভাই কে যাতে সেন্স ফেরার পর আগেই কিছু না বলা হয়।
আর ওনাকে অনেক ধন্যবাদও দিলাম।
জিসান ভাই আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
জিসানঃ তোমার মতো লক্ষী মেয়ে’র সংস্পর্শ যাতে সবাই পায়। খুব ভালো থেকো বোন।
আমি ওনাকে আবারও থ্যাংক্স দিয়ে চলে আসলাম।
ফুপ্পি আমায় দেখে অস্থির হয়ে জানতে চাইলেন,
ফুপিঃ পলাশ কে পেয়েছিস, কোথায় ছেলেটা?
আমি বললাম, জিসান ভাইয়ের বাসায় সে। খুব ইম্পর্টেন্ট কাজ করছে, সে নাকি বিসিএস দেবে? তারই প্রিপারেশন এর জন্য পড়াশোনা।
ফুপিঃ হায় রে, সারাদিন তো বই খুলে বসে থাকে, এখন বন্ধুর বাসাতেও?
আমিঃ আরেহ্ গ্রুপ স্টাডি।
ফুপিঃ তা ফোন করে জানাবে না?
আমিঃ ব্যস্ত তো ফুপ্পি। এই দেখো ফোন করতে না পরলেও আমায় পাঠালো তোমার খোঁজ নিতে।
এভাবে ফুপ্পিকে ভুলিয়ে ভালিয়ে খাবার আর ঔষধ টা দিয়ে দিলাম।
বাবা এর মাঝে কয়েকবার ফোন করে খবর নিয়েছেন৷
ফুপ্পির এখানে আছি শুনে আশ্বস্ত হলেন উনি।
কষ্ট ও সুখের স্মৃতি
সন্ধ্যার দিকে রিকশা নিয়ে বাড়ি চলে গেলাম।
শান্তি লাগছিল না পলাশ ভাইয়ের খোঁজ না পাওয়া অবধি।
আপার চিঠি আর ছবিটা নিয়ে কতক্ষণ বেলকোণীতে বসে কাটালাম। ভাবছিলাম মানুষ মৃত্যুর পূর্বে কতই না কথা বলে যায়?
আপা কি সুন্দর ওদেরকে বলেছে আমি তার প্রতিবিম্ব স্বরূপ।
তার কথাকে সত্যি করতে বুঝি সৃষ্টি কর্তাও আমার মনে ঐ মানুষগুলোর প্রতি এতো ভালোবাসার জন্ম দিয়েছেন?
এসব ভাবনার মাঝেই জিসান ভাই ফোন দিলো।
জানালো পলাশ ভাই জেগেছেন দশ টার দিকে। কিন্তু তার নেশাগ্রস্ত অবস্থায় হওয়া কোনো ঘটনা মনে নেই। তবে উনি বারবার বলছেন মিফতার সাথে কি কোনো বাজে বিহেইভ করেছি? তুই আমাকে কোথায় পেলি?
জিসান ভাই ওনাকে এটাসেটা বুঝিয়ে বাড়ি পাঠিয়েছেন।
কিন্তু আমার মন বলছে উনি খোঁজ লাগিয়েই ছাড়বেন। হয়তো মিফতার সাথে দেখা করে ওকে স্যরি বলবেন।
মৃদু হাসলাম আমি উনি হয়তো কিছু কিছু কথা জেনে যাবেন। কিন্তু আমাকে নিয়ে ওনার ভাবনার স্বীকারোক্তি কখনোই ওনার মনে পড়বে না। আর উনি কখনো হয়তো জানতেও পারবেন না।
তবে আমি সরে যাবো তার জীবন থেকে, সব শ্রাবণ মেঘ তো আর প্রণয়ের বারিধারা নিয়ে আসেনা!
কিছু মেঘ প্রলয়কারী ঘূর্ণিঝড় নিয়ে আসে।
ওনার প্রতি আমার প্রেম ওনার অগোচরেই শ্রাবণ মেঘের প্রলয় কারী ঝড়ের সৃষ্টি করুক আমি একদমই তাকে এর আঁচ লাগতে দেবো না।
পরবর্তী একসপ্তাহ আমি খুব কষ্ট করে নিজেকে সামলালাম। তবে আমার মন যে ওনার স্বীকারোক্তির পর অতিশয় উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছিল তা বুঝতে দেরী হয়নি।
এই এক সপ্তাহ আমি ভুল করেও ওনার সামনে যাইনি। ওনার দিকে তাকাইনি অবধি।
ওনার কথা ভেবে ভেবে খুব কান্না পেয়েছিল। কিন্তু নিজের মনকে বুঝিয়েছি। চোখ দিয়ে পানি বেরোতো দেইনি।
না বলা ভালোবাসার গল্প
প্রায় একসপ্তাহ তিনদিন পর হুট করেই স্পেশাল ক্লাসে ওনার সাথে আমার দেখা হয়ে গেলো।
উনি আমায় দেখে হেসে বললেন,
পলাশ ভাইঃ তুমি কি কোনো কারণে আমার ওপর রাগ? সামনে আসোনা কেনো?
আমি এ কথার জবাব না দিয়ে বললাম,
আমিঃ আপনার মধ্যে চেঞ্জেস দেখতে পারছি।
উনি আবার একটু হাসলেন।
বললেন, হ্যাঁ দাড়ি সাইজ করেছি, নিয়মিত গোসল দিচ্ছি, কাপড় চোপড় আয়রন করে পরছি। আগের জীবনে ফেরবার চেষ্টা সবই আমার বন্ধুর তাগদায়।
আসলে জীবন টা তো নষ্ট করার জিনিস না। খারাপ সময় মনে না রেখে ভালো সময়গুলোকে স্মৃতির পাতায় বন্দী করে রাখাই হলো জীবন।
হিয়া হারিয়ে যাবার কষ্ট আছে কিন্তু সেই কষ্টকে পুঁজি করে জীবন নষ্ট না করাই উচিৎ মনে হচ্ছে।
এই এক সপ্তাহে নিজেকে একটু পরিবর্তন করলাম। মিফতার সাথে সম্পর্ক ভেঙে দিয়েছি।
মেয়েটা খুব মিষ্টি আর ইন্ট্যালিজেন্ট। ব্রাইট ফিউচার ওর বুঝলে?
আমিঃ বুঝলাম।
পলাশ ভাইঃ তুমি কি পড়াশোনায় খুব বিজি?
আমিঃ কেনো?
পলাশ ভাইঃ চোখের নিচে কালি পড়েছে আবার শুকিয়ে গেছো।
আমিঃ ঐ আরকি! সামনেই তো পরীক্ষা।
পলাশ ভাইঃ হুম। আচ্ছা চলো আজ একটু বসি? সমস্যা আছে কি?
আমি স্মিত হেসে বললাম,
আমিঃ নাহ্ চলুন।
আমাদের অনেক কথা হলো সেদিন।
খুব ইচ্ছে করলো জিজ্ঞেস করতে, আমার সামনে আসলে আপনার কি আবার কষ্ট হচ্ছে? আমি কি চলে যাবো? আচ্ছা আপনার কষ্ট না হলে ভালোবাসার গল্প কথা বলি? মেনে নেবেন?
কিন্তু জিজ্ঞেস করা হলো না।
প্রথম প্রেম
এরপর সত্যিই লেখাপড়ায় ব্যস্ত হয়ে গেলাম, পলাশ ভাই আমাকে দু মাস ক্যামেস্ট্রি পড়ালেন।
ওনাকে ভুলতে আর পারলাম কই?
উনি বরং মনে ভালোবাসার আগুনে ঘি ঢাললেন আরো বেশী।
সাহসী হয়ে গেলাম এবং এইচএসসি পরীক্ষা’র লাস্ট দিন আমি থাকতে না পেরে ওনাকে আমার মনের কথা জানিয়ে দিলাম।
উনি কোনোরূপ প্রতিক্রিয়া দেখালেন না তবে হ্যাঁ আমাদের যোগাযোগ বন্ধ হলো তিনদিনের জন্য।
এই তিনদিন আমি হাজারবার ওনার কথা ভেবে লজ্জা, ভয় আর অপরাধবোধে মরতে থাকলাম।
একদিন খুব ভোরে একটা খারাপ স্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙে গেলো। দেখলাম পলাশ ভাই আমার সামনে দাঁড়ানো। আমি ওনার নাম ধরে ডাকতেই উনি হাতটা বাড়িয়ে দিলেন। কিন্তু আমি যখন ছুঁতে যাবো তখন উনি হঠাৎ মিলিয়ে গেলেন।
এই স্বপ্নের মানে কিছুতেই বুঝতে পারলাম না।
এটা নিয়েই ভাবছিলাম তখন ওনার ফোন থেকে ফোন আসলো। উনি আমার সাথে তক্ষুনি দেখা করতে চাইলেন।
আমি জানিনা কেনো এটা শোনার পর বাবার রুমে চলে গেলাম, বাবা বেলকোণীতে বসে ছিলেন।
বাবা’র পায়ের কাছে বসে ভেজা কন্ঠে বললাম, বাবা পলাশ ভাই চলে যাচ্ছেন।
বাবা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, কোথায়? কে বললো?
আমি বললাম, কেউ বলেনি বাবা। উনি আমার সাথে দেখা করতে চাইছেন। আমার মন বলছে বাবা উনি আমাকে ছেড়ে কোথাও চলে যাবেন। আচ্ছা বাবা, আমি যদি ওনাকে চাই তা’হলে আপনি মেনে নেবেন?
বাবা আমার মাথায় হাত রেখে বললেন, অবশ্যই মা।
অসমাপ্ত ভালোবাসা
আমিঃ বাবা চলুন না ওনার কাছে যাই? আপনি বললে উনি আর যাবে না বাবা। প্লিইজ?
বাবা সহ ফুপ্পির বাসায় চলে আসলাম।
দরজা খোলাই, ফুপ্পি সোফায় বসে মুখে আঁচল চেপে কাঁদছেন।
ফুপ্পি আমায় দেখেই দৌড়ে আসলেন। কেঁদে উঠে বললেন,
ফুপিঃ জানিস রিয়া, পলাশ এই সক্কাল সক্কাল ব্যাগ গোছাচ্ছে কোথায় যেন যাবে! আমাকেও নিচ্ছে না। তুই কিছু বল ওকে?
আমার রক্ত হীম হয়ে গেলো। আমি জানতে চাইলাম উনি কোথায়?
ফুপ্পি ঘরের দিকে ইশারা করলেন।
আমি ছুটে গেলাম। দরজার সামনে আসতেই দেখলাম উনি লাগেজের জিপ আটকাচ্ছেন।
আমি দরজায় হেলান দিয়ে নিজেকে সামলে আস্তে করে বললাম,
আমিঃ কই যাচ্ছেন, পলাশ ভাই?
উনি চকিতেই তাকালেন।
পলাশ ভাইঃ ওহ্ তুমি এসেছো?
আমিঃ আপনি কেনো যাচ্ছেন, পলাশ ভাই? আপনি প্লিজ যাবেন না। ফুপ্পির কি হবে?
পলাশ ভাইঃ মা কে তুমি দেখে রেখো রিয়া।
আমিঃ কেনো যাচ্ছেন? কবে ফিরবেন?
পলাশ ভাইঃ কবে ফিরবো জানিনা রিয়া। আমি একজন খুব খারাপ ছেলে জানো? কিন্তু কি করবো আমিও তো মানুষ। মস্তিষ্ক তা আর নিতে পারছে না।
আমিঃ প্লিজ পলাশ ভাই যাবেন না। আমরা কি করে থাকবো?
পলাশ ভাইঃ স্ট্রং হও রিয়া। তোমার ওপর অনেক দায়িত্ব।
এই অপরাধী আমি’র কখনো নিজের সাথে লড়বার শক্তি হলে ফিরে আসবো।
ভালোবাসার কাছে আসার স্বপ্ন
আমি অনুনয় করে বললাম, আমি সত্যি আর আপনাকে ভালোবাসার কথা বলবো না পলাশ ভাই, প্লিজ আপনি যাবেন না। আমি মরে যাবো।
আমি কেঁদে ফেললাম।
কিছুটা সময় চুপ থেকে…..
পলাশ ভাই আমার সামনাসামনি এসে দাঁড়ালেন। দু’জনের মাঝে দশ আঙ্গুলের দূরত্ব, আমার গালে হাত দিয়ে ভাঙ্গা কন্ঠে বললেন, জানো রিয়া একবার হিয়া বলেছিল তুমি ওর ই প্রতিচ্ছবি। কখনো যদি ও না থাকে তা’হলে যেন তোমাকে আপন করে নিই। তোমার মাঝেই ও বেঁচে থাকবে বাকিটা জীবন।
তোমার মাঝে নাকি সম্মোহন শক্তি আছে।
কথাটা আমি বিশ্বাস করিনি কখনোই।
কিন্তু তোমার সাথে মেশার পর বুঝতে পেরেছি হিয়া ভুল বলেনি।
আমি আমার কান্না যথাসম্ভব নিয়ন্ত্রণ করে বললাম, আমি আপার জায়গা কখনোই নিবো না, পলাশ ভাই। মন চাইলে আমাকে হৃদয়ের একাংশে ঠাঁই দিবেন।
পলাশ ভাইঃ ভালোবাসা কখনো নিঃশেষ হতে পারেনা রিয়া। হিয়া’র প্রতি আমার ভালোবাসাও কখনো ফুরিয়ে যাবে না। আমার মনটা আমায় তোমাকে নিয়ে ভাবতে বাধ্য করছে কিন্তু সাথে সাথেই একটা ভয় আমার মনটাকে গ্রাস করে ফেলছে। আমি একদম ভালো থাকতে পারছি না রিয়া।
আমার এই ভয় টাকে বিলীন করার একটাই উপায় তোমার থেকে দূরে যাওয়া।
আমিঃ নাহ্ পলাশ ভাই, প্লিজ। কিসের ভয় আপনার?
পলাশ ভাইঃ সব কথা জানতে হয়না, রিয়া। তুমি খুব ভালো থাকবে কেমন? আমার নিজেকে গুছিয়ে নেয়া দরকার, ভাগ্যে থাকলে আবার দেখা হবে। তখনএ আমি তোমাকে একদম কাছ ছাড়া করবো না।
কপালে আলতো করে চুমু দিয়ে উনি লাগেজ নিয়ে বেরিয়ে গেলেন।
আমি চিৎকার করে ডাকলাম ওনাকে কিন্তু উনি ফিরে তাকালেন না আর।
ওনার অস্তিত্ব চোখের সামনে থেকে সম্পূর্ণ বিলীন হওয়ার পর আমার চোখের পানি পড়াও থেমে গেলো।
বিড়বিড় করে উচ্চারণ করলাম, আমি আপনার জন্য অপেক্ষা করবো, পলাশ ভাই। নিশ্চয়ই আপনার সাথে আবার দেখা হবে কোনো এক শ্রাবণে।
~সমাপ্ত~
আরো পড়ুন- অভিমানী প্রেমের গল্প – প্রকৃত ভালবাসা
আমাদের চ্যানেলের ভিডিও দেখুন