ইসলামিক রোমান্টিক গল্প পর্ব ৫

ইসলামিক রোমান্টিক গল্প – ধার্মিক আদর্শ বউয়ের বখাটে স্বামী – পর্ব ৫

ইসলামিক রোমান্টিক গল্প – ধার্মিক আদর্শ বউয়ের বখাটে স্বামী – পর্ব ৫: কেউ খারাপ হয়ে জন্মায় না, কোন না কোন কারণে মানুষ খারাপ হয়। সাইমাও বুঝতে পেরেছে সজীব মানে তার স্বামী জীবনে অনেক আঘাত পেয়েছে যা তাকে খারাপ পথে নিয়ে গেছে। প্রেমের ডায়েরী পড়ে বুঝতে পেরেছে সে। একটু নরম ও মিষ্টি ব্যবহার করা শুরু করেছে সজিবের সাথে। তবে একটা প্রশ্ন আছে আসলে কি সজীব খারাপ ছেলে নাকি সবাই ভুল ভাবে?

স্বামীর উদারতা

সজীবঃ ডায়েরিটা আমি কতো খুঁজেছি জানো! ওটা তোমার কাছে গেলো কিভাবে! নাকি চুরি করেছো?

সজীব সাইমার হাত থেকে ডায়েরিটা কেড়ে নেয়। আর একটু রাগী ভাবে কথা গুলো বললো।

সাইমা শান্ত হয়ে একটু চিন্তা করে মিষ্টি গলায় জবাব দেয়,

সাইমাঃ ডায়েরির লাস্ট কথাগুলো জানুয়ারীর এক তারিখে। সেদিন কার কার সাথে কথা বলেছিলেন, আপনিই ভেবে বলুন। কারণ সেদিনই তো আপনার ডায়েরিটা চুরি হয়ে গেছে।

সজীব একটু ভেবে বললো,

সজীবঃ সেদিন রাইশার সাথে ঘুরেছি, ও চুরি করেছে তাহলে!

সাইমা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে,

সাইমাঃ কি যা তা বলছেন? কোন রাইশা?

সজীবঃ তোমার এক বছরের জুনিয়র, তোমার ডিপার্টমেন্টের।

সাইমাঃ ভাইয়ার হবু স্ত্রীর নামও তো রাইশা। তারমানে কি ওই আপনার সাথে ঘুরেছে?

সজীবঃ ওহহ, এই জন্যই তোমার ভাইয়া ঝামেলা ছাড়া বিয়েতে রাজি হয়ে গিয়েছে?

সাইমাঃ সবই তো বুঝলাম, তাহলে আমার বাবাকে টাকা দিয়েছিলেন কেনো?

সজীবঃ আমি দিই নি। তোমার বাবাই চেয়ে নিয়েছে। উনার ব্যবসায় ক্ষতি হয়েছিলো, অনেক টাকার ঋণ হয়ে গেছে। যদিও পরে দিয়ে দিবে বলেছে।

সাইমাঃ অথচ আমি বাবা কে ভুল বুঝেছিলাম!

সজীবঃ গবেট যে!

সাইমাঃ কিহহহ!

সজীবঃ ভুল শুনো নি, সত্যিই তুমি গবেট।

সাইমাঃ হ্যাঁ, আমি গবেট। তাহলে পতিতালয় কেনো যেতে তুমি?

সজীবঃ সবই জেনে ফেলেছো দেখছি?

সাইমাঃ এটা আগে থেকেই জানতাম। কিন্তু ডায়েরি তে পতিতালয় কেনো যেতে লিখা নেই।

সজীবঃ বিশেষ করে নতুন যারা আসতো ওদের কিনে নিয়ে মুক্ত করে দিতাম। আর সারা রাত থাকতাম ওদের জীবনী শুনার জন্য। তাছাড়া একজন পুরনো মেয়ে ছিলো। ওর বাচ্চা ছোট। ওতটুকু বাচ্চাকে রেখে অন্য পুরুষের সাথে রাত যেনো না কাটাতে হয়। সেটার জন্যও ওকে টাকা দিতে হত।

সাইমাঃ আর আমার ছবি তোমার ঘরে কে টাঙিয়েছে?

সজীবঃ তোমার আম্মু দিয়েছে আমার আম্মু কে। উনিই টাঙিয়েছেন। তাছাড়া তোমাকে পছন্দ করি ভেবে আম্মু বিয়ের প্রস্তাব দেননি । আমি জানতাম ও না তোমাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে। যখন আম্মু বিয়ে করতে বলছিলো আমি না করে দিয়েছিলাম। কিন্তু তোমার ছবি দেখার পর আর না করে উপায় ছিলো না আমার। হাজার হোক সুপ্ত ভালোবাসা বলে কথা!

সাইমার চোখ দিয়ে পানি বেরিয়ে যায়। এটা খুশিতে নাকি কষ্ট তে সেটা নিজেও জানেনা। সজীব ওর দিকে তাকিয়ে বললো,

সজীবঃ কাঁদছো কেনো?

সাইমা কিছুই না বলে সজীবের বুকে মাথা রাখে। কিছুক্ষণ দুই হাত দিয়ে শক্ত করে চেপে ধরে রাখার পর নিজে থেকেই দূরে সরে যায়।

সজীব তাচ্ছিল্যের সুরে বললো,

সজীবঃ মেয়ে মানুষের মন বোঝা বড় দায়! এরা কখন যে কি চায় এরা নিজেও জানেনা!

বউয়ের কান্না

দেখতে দেখতে বিয়ের একটা বছর পার হয়ে যায়। সাইমার অনার্স শেষ হয়ে যায়। সজীব দুজনের জন্যই অষ্ট্রেলিয়া যাবার ব্যবস্থা করে। কয়েকটা বছর থাকবে সেখানে। সাথে সাইমার মাস্টার্স আর নিজের পিএইচডি নেওয়ার প্লান করে। আর যদি রোশনির দেখা মিলেও যায়, ওর মুখোমুখি হতেই হবে।

সাইমাকে পাসপোর্ট আর ভিসা দেখানোর পর সাইমার মুখটা মলিন হয়ে যায়।

সজীবঃ তুমি খুশি হও নি?

সাইমাঃ তুমি যাচ্ছো তোমার প্রাক্তন কে খুঁজতে। এটা জানার পর কোন বউ খুশি হবে শুনি!

সজীবঃ ডিয়ার এক্স কে বলবো, তোমার পরিবর্তন এর জন্য আমি আমার স্বপ্ন পূরণ করতে পারিনি ঠিকই, কিন্তু তার বদলে সুন্দরী বউ তো পেয়েছি।

সাইমাঃ বলা টা কি খুব জরুরী?

সজীব কথা না বলে চলে যায়। একটা সুপ্ত প্রতিশোধ মনের ভিতর কাজ করে। কিভাবে পূরণ না করে থাকবে সে!

রাতে কান্নার শব্দে সজীবের ঘুম ভাঙে। বেলকনিতে সাইমা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। সজীব সাইমার কোমর পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে। মাথাটা সাইমার ঘাড়ে রেখে বললো,

সজীবঃ বাবুই পাখি ময়না একটু কথা কওনা! মেলা থেকে কিনে দিবো বিচ্ছাতু পাতার গয়না।

সাইমা চোখ বড় করে তাকায়, তখন সজীব আবার বলে,

সজীবঃ সুন্দর চোখ দুটো তে কান্না মানায় না! বিয়ের সময় ও তো এমন করে কাঁদোনি, তাহলে আজ কেনো?

সাইমাঃ তখন হারানোর কিছু ছিলো না, মনের ভেতর চাপা ক্ষোভ থেকে বিয়ে টা করেছিলাম। তবে আজ ভয় লাগছে। ওই বিদেশীর জন্য যদি আমায় ভুলে যাও।

সজীবঃ আশ্চর্য তো! ও কি এতদিন আনম্যারিড আছে নাকি! সেই ২০১২ সালের কথা, আর এখন ২০২০।

সাইমা একটু শান্ত হয়। এরপর বলে,

সাইমাঃ তোমার দেওয়া বিচ্ছাতু পাতার গয়না পড়ে তোমার বুকেই ঘষে দিবো। মজা হবে তাইনা!

দুজনেই কিছুক্ষণ হাসে, এরপর ভালো মেয়ের মতো সজীবের বুকে মাথা রেখে রাত টা পার করে দেয়।

প্রথম হানিমুনে

মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয় একটি পাবলিক গবেষণা বিশ্ববিদ্যালয়। এটা ১৮৫৩ সালে প্রতিষ্ঠিত, এই বিশ্ববিদ্যালয়টি অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় প্রাচীনতম এবং ভিক্টোরিয়ার সর্বপ্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয়। এর প্রধান ক্যাম্পাসটি মেলবোর্ন জেলার উত্তরের অভ্যন্তরীণ শহরতলির পার্কভিলে অবস্থিত, ভিক্টোরিয়া জুড়ে আরও অনেকগুলো ক্যাম্পাস আছে। সব গুলো দেখতে এতো সুন্দর যে চোখ জুড়িয়ে যায়। আর এর নীতি বাক্য টাও সুন্দর “আমি ভবিষ্যতের প্রজন্মের সম্মানে বড় হতে পারি।

এই ইউনিভার্সিটি তে প্রধান ১০ টা ডিপার্টমেন্ট আছে। তার মাঝে ফ্যাকাল্টি অব সাইন্স একটা। এই ডিপার্টমেন্ট এ আন্ডারগ্রাজুয়েট আর পোষ্টগ্রাজুয়েট মিলিয়ে প্রায়ই ১০০০০ স্টুডেন্ট। স্কুল অফ বায়োসাইন্সে সাইমা মাস্টার্স আর সজীব পিএইচডি করবে। কাছাকাছি টপিক নিলে দুজনের রিসার্চ করা সুবিধা হবে ভেবে একই ডিপার্টমেন্ট বেছে নেয় দুজনে।

এক সপ্তাহ পরে ওরা ওদের গন্তব্যস্থলে পৌঁছায়। পূর্ব পরিচিত এক বন্ধুর মাধ্যমে একটা ফ্লাট ভাড়া করে রেখেছিলো। সেখানেই ওঠে ওরা।

দুজনেই আগে রুম গুছিয়ে ফ্রেশ হয়ে নেয়। ডিনার শেষে ক্লান্ত শরীর বিছানায় এলিয়ে দেয়। মুহুর্তে ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে যায় দুজনেই।

পরেরদিন দুজনে নিজেদের ভর্তি কার্যক্রম শেষ করে। ক্লাস শুরু হতে কয়েকটা দিন বাকি। আশেপাশে যে কয়েকটি যায়গা চিনে তা এখুনি ঘোরার সময়। পরে ব্যস্ততার জন্য আর সুযোগ নাও হতে পারে৷

পরেরদিন খুব ভোরে ব্রেকফাস্ট করে গ্রেট অসিয়ান রোড মেলবোর্ন এর উদ্দেশ্যে একটা কার ভাড়া করে। গাড়ি টা শহর থেকে বেরিয়ে বনের ভেতরে ঢুকে , চারিদিকে যেমন গাছ তেমন কিছু নাম না জানা কিছু প্রাণী ও দেখে। গাছের উপরে বসে পাতা খাচ্ছে। সাইমার এই প্রথম কোথাও ঘুরতে আসা বলে ভালোই উপভোগ করছে। বেশ অনেক টা পথ যাবার পর, এক পাশে পাহাড় আরেকপাশে সমুদ্র। সজীব গাড়ির জানালা খুলে দেয়।

নতুন ভালোবাসার ছোঁয়া

প্রাকৃতিক বাতাস সাইমার হৃদয় জুড়িয়ে যায়। বুক ভরে শ্বাস নেওয়া যায় । গাড়িটা যেখানে থাকে সেখান থেকে অনেক টা পথ সিড়ি বেয়ে নিচে নামতে হবে।

উপরে দাঁড়িয়ে বেশ কিছুক্ষণ গল্প করে, কিছুক্ষণ পর সজীব বললো,

সজীবঃ তুমি সাঁতার জানো!

সাইমাঃ হুম, কেনো?

সজীবঃ চলো, সমুদ্রে নামি।

সবাই বোট নিচ্ছে সাঁতার কাটবে বলে। সজীব ও দুইটা বোট নিয়ে নেয়। সাইমা বললো,

সাইমাঃ এমন ড্রেস পড়ে কিভাবে নামবো?

সাইমা লং স্কার্ট আর গেঞ্জি পড়েছে। এর উপরে হিজাব পড়েছে। গায়ে জ্যাকেট দিয়েছে আবার একটা হালকা চাদর ও গায়ে দিয়ে আছে। সজীব ও জিন্সের সাথে শার্ট, তার উপর জ্যাকেট পড়েছে।

সজীব একবার তাকিয়ে বললো,

সজীবঃ আরে কিছু হবেনা, তুমি তো বোটের উপরেই থাকবে।

সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসে ওরা, অনেক টা লম্বা সিড়ি রেলিং দিয়ে বাঁধানো। কেউ যদি ইয়ার্কি করতে গিয়ে উপর থেকে লাফ দেয় নির্ঘাত মরবে না হয় পঙ্গু হয়ে যাবে।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি, সাগরের বুকে যেনো দালান দাঁড়িয়ে আছে। সাইমার খুব ইচ্ছে করছে জায়গা গুলো হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখতে। মাথায় বুদ্ধি ও চলে আসে, বোট তো আছেই, সাঁতার কেটে হলেও যাবো।

চলবে….

পরের পর্ব- ইসলামিক রোমান্টিক গল্প – ধার্মিক আদর্শ বউয়ের বখাটে স্বামী – পর্ব ৬

সকল গল্পের ধারাবাহিক সব পর্ব এখানে গিয়ে খুঁজুন – ধারাবাহিক পর্বের গল্প

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *