বন্ধু যখন বর

বন্ধু যখন বর – বাসর রাতে উঠবে শুধু ঝড় | Basor Raat Story

বন্ধু যখন বর – বাসর রাতে উঠবে শুধু ঝড়: বাসর রাত নিয়ে কতই না মধুর স্বপ্ন থাকে? নতুন মানুষকে জানা, চেনার, লজ্জা, ভয় কত অনুভূতি। কিন্তু বান্ধবী যখন বউ হয় তখন কি আর এসব থাকে? চেনা মানুষটিকে আর লজ্জা, ভয় কোন কিছুই পেতে দেখা যায় না। উল্টো শাসন আর শোষণ এর স্বীকার হতে হয়। এমনি এক দুষ্টু মিষ্টি রোমান্টিক ভালবাসার গল্প এটি। চলুন শুরু করা যাক-

বন্ধুর সাথে বাসর রাত

আমি সাথি। আজই আমার বিয়ে হয়েছে। আর আমি এখন বাসর ঘরে। বাসর ঘরে একা একা বসে আছি। অনেকক্ষণ হয়ে গেলো বর মহাশয়ের নিউজ পাচ্ছি না। ওহ মেকাপটা কেমন যেন অস্বস্তি লাগছে! আমি গ্রামের মেয়ে, তাই মেকাপের সাথে ততোটা পরিচিত না। যার সাথে বিয়ে হয়েছে তাকে খুব চিনি আমি। আমার বন্ধু। ওর নাম টিপু। আসুক একবার নাক মুখ ছিড়ে দিবো!

দরজা খোলার শব্দ। টিপু আসলো মনে হয়। এসে বললো,

বরঃ কি রে ঘোমটা দিস নাই কেনো? জানিস না, বাসর রাতে ঘোমটা দিয়ে থাকতে হয়। আর মুখে এত আটা ময়দা মেখেছিস কেনো? কি রকম পেত্নী পেত্নী লাগছে?
বউঃ উফফ টিপু, চুপ করবি! তোরেও তো টেপার মত লাগছে।

টিপুঃ তুই এটা বলতে পারলি, সাথি?
সাথিঃ এবার প্লিজ, কান্না করিস না। এমন ভ্যাঁকান্না ছেলে জীবনে দেখি নাই আমি! আমি ফ্রেশ হয়ে আসি।

বাপরে ফ্রেশ হতে এত টাইম লাগলো ভাবতেই পারছি না। এত সাজানোর কি দরকার ছিলো! রুমে এসে দেখি পুটুস শুয়ে আছে।

সাথিঃ এই শুনছিস!
টিপুঃ হম্মম, বল।

সাথিঃ ঘুমাবো আমি।
টিপুঃ তো ঘুমা।

সাথিঃ আমি তো দুইটা বালিশ না হলে ঘুমাতে পারি না, জানিস না?
টিপুঃ প্লিজ সোনা, আমার বালিশটা নিস না।

সাথিঃ দে তো ভেড়া। ড্রামা বাদ দে, ঘুম আসছে।

নিলাম বালিশটা কেড়ে। দুইটা বালিশ মাথার নিচে না দিলে ঘাড় ব্যথা করবে প্রচুর। টিপু বসে আছে। আমি শুয়ে পড়লাম।

সাথিঃ কিরে টিপু, ঘুমা?
টিপুঃ আমাকে অসহায় পেয়ে আমার বালিশ কেড়ে নিলি তোর তো জাহান্নাম নসিব হবে।

সাথিঃ ওলে বাবালে অবিশাপ দিচ্ছো। আচ্ছা ওয়েট। এই নে তোর বালিশ।
টিপুঃ ওয়াও থ্যাংকস ইয়ার। তোর এই ঋণ আমি কখনো ভুলবো না, দেখিস।

সাথিঃ ওকে এবার তুই ঘুমা।

টিপু শুয়ে পড়লো। এবার আমি কি করবো? উচু জায়গায় না ঘুমালে তো ঘাড়ের অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে। অনেকক্ষণ ধরে ভাবছি কি করা যায়? ইয়াপ আইডিয়া। আমার বালিশটা নিয়ে টিপুর বুকের উপর রাখলাম তারপর মাথা রেখে ঘুমিয়ে গেলাম। বাহ আমার মাথায় কত্তো বুদ্ধি?

কেউ আমার কপালের চুল সরিয়ে দিচ্ছে। হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল। তাকিয়ে দেখি টিপুর হাত আমার চুলে।

সাথিঃ উ উ উ!
টিপুঃ কি হইছে, কথা না বলে উ উ করিস কেনো?

সকালে ব্রাশ না করে কথা বলি না কারো সাথে নিজেকে কেমন অপরিষ্কার লাগে। টিপু আমার গাল ধরে ওর মুখের কাছে নিয়ে যাচ্ছে। কি করবে? কিস করবে না তো। ওহহ শিট! কি ডিসগাস্টিং ব্যাপার। একখানি ঝটকা দিয়ে টিপুকে সরিয়ে বাথরুমে ব্রাশ করতে দৌড় দিলাম।

বান্ধবী বউয়ের সাথে খুনসুটি

বিকেলে দেখি, টিপু শুয়ে আছে। মোবাইল টিপছে মনে হয়। তাও জিজ্ঞেস করলাম,

সাথিঃ কিরে টিপু, কি করিস?
টিপুঃ চোখ কানা, দেখিস না কি করছি?

সাথিঃ না, আজ তো বৌভাত। সবাই অনুষ্ঠানে আর তুই একা শুয়ে আছিস। তাই জিজ্ঞেস করলাম।
টিপুঃ ভাল্লাগছে না।

সাথিঃ চল, উঠ বলছি।

টিপুর হাত ধরে টানতে লাগলাম। কিন্তু আমার হাত সরিয়ে দিলো। কয়েকজন আমাকে ডাকতে আসায় আমি টিপুকে কিছু না বলে ওদের সাথে চলে গেলাম!

রাতে খাওয়া দাওয়া করে ফেবু নিয়ে বসলাম। টিপু এখনো রুমে আসে নি। কয়েকজন কংগ্রাচুলেশনস জানিয়েছে আমাকে। রিপ্লাই করলাম তাদেরকে। টিপু এসে গেছে হাতে একটা এক্সট্রা বালিশ নিয়ে। ভ্রু কুচকে বললাম,

সাথিঃ এটা কেনো আনলি! বালিশ তো পেয়ে গেছি।
টিপুঃ এটাই মাথায় দিবি। জলহস্তিনী বুকের উপর রেখে আমি ঘুমুতে পারবো না।

সাথিঃ আমি জলহস্তিনী?
টিপুঃ কেন সন্দেহ আছে?

সাথিঃ কি বললি, কুমির!

বলেই পাশে থাকা বালিশটা ওর দিকে ছুড়ে দিলাম। ওর হাতে থাকা বালিশটা আমার দিকে ছুড়ে দিলো। টিভিতে দেখানো প্রোগ্রামের মত আস্তে না। এমন জোরে মেরেছে আমার নাকে লেগেছে অনেক।

সাথিঃ আওওও….

বন্ধুত্ব ও ভালবাসা

টিপু ছুটে এলো আমার কাছে। পাগলের মত দেখাচ্ছে ওকে। ওর উপর আমার তেমন ভালোবাসার ফিলিংস নেই। কিন্তু প্রিয় বন্ধুকে হারাতে চাইনি আর অন্য একটা অচেনা মানুষের সাথে থাকতে পারবো না বিধায় ওকে বিয়ে করা। আমি জানি টিপু আমায় ভালবাসে। এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ নাকে ব্যথা করে উঠলো। ওদিকে টিপু কি বলছে একটাও ব্যথার জ্বালায় কানে যাচ্ছে না। অনেকক্ষণ পেরিয়ে গেল নাক ধরে বসে আছি। টিপু আমার সামনে মাথা নিচু করে বসে আছে।

সাথিঃ ওই টিপু….

চোখ তুলে যখন তাকালো আমার দিকে দেখি চোখ দুটো লাল টমেটোর মত হয়ে গেছে। উফ কি ভ্যাঁকান্না ছেলে রে।

সাথিঃ সরি!
টিপুঃ আমি এখন ঠিক আছি। ঘুমিয়ে পড়। কালকে তো আমাকে আর তোকে আমার বাপের বাড়ি যাওয়ার দিন।

সাথিঃ আচ্ছা।

বাড়ি এসে খুব ভালো লাগছে আমার। গ্রামের আলো বাতাসের আসলেই তুলনা নেই! অনেক লোক আসছে টিপুকে দেখতে। টিপুকে আমার ফ্রেন্ড থেকে বরে রূপান্তরিত হয়ে কেমন লাগছে, সেটা দেখতে।

রাতে এলাম দু’জন ঘুমাতে। কানে হেডফোন লাগিয়ে হৃদয় খানের ফিরে তো পাব না গানটা শুনতে লাগলাম। হঠাৎ আমার কান থেকে একটা স্পিকার খুলে ওর কানে লাগিয়ে গান শুনতে লাগলো।

সাথিঃ ওই ওই তুই তোর কানে ওটা লাগালি কেনো রে?
টিপুঃ তোর সব জিনিসের আমার অধিকার আছে।

ওর কথা শুনে অবাক হয়ে গেলাম। এটা বলা স্বাভাবিক। কিন্তু আমার কি প্রবলেম হচ্ছে টিপুর কাছে যেতে! কিসের জড়তা কাজ করছে আমার ভিতর। ওর সাথে মিশতে পারছি না কেনো আমি! তাহলে কি বন্ধুকে কখনো বর ভাবা যায় না! আমি কেনো তাহলে টিপুকে বিয়ে করলাম? কেনো ওর লাইফটা আমি ধ্বংস করলাম?

সাথিঃ কি টিপু বাবু, কোথায় হারিয়ে গেলা?

টিপুর চোখের দিকে তাকালাম। স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে ও আমার কাছে আসতে চাইছে। কিন্তু ওকে কি করে বোঝাই আমি এসবের জন্য রেডি না। আমার সময় লাগবে। আমার জড়তা কাটাতে পারছি না আমি। টিপুকে বললাম – আমার শরীর খারাপ করছে। আমি ঘুমাবো। ওর দিকে আর না তাকিয়ে পাশ ফিরে শুয়ে পড়লাম।

বন্ধুত্বের বন্ধন

পরদিন দুপুরবেলা…

সাথিঃ এই টিপু জানিস, আজ না সুপারমুন দেখা যাবে!
টিপুঃ মানে?

সাথিঃ আরে চাঁদকে ৩০গুন বড় দেখা যাবে।
টিপুঃ ওকে, দেখব তাহলে।

রাত ৭:৫২,

সাথিঃ কিরে টিপু চাঁদ তো অন্যদিন যা দেখি আজকেও তাই দেখছি।
টিপুঃ তাই তো। তোদের এখানে কোনো পুকুর নেই যেখানে পুকুরের পানিতে চাঁদ দেখা যায়?

সাথিঃ আছে। যাবি?
টিপুঃ হুমমমমমমমমম।

চারিদিকে নিরবতা। আমার ভয় লাগছে। হরর ফিল্মসের মত এখন যদি কোনো ভূত দেখি তাহলে একদম শেষ।

টিপুঃ ওয়াও। দেখ সাথি কি সুন্দর দেখাচ্ছে চাঁদটাকে পানিতে।
সাথিঃ হুম দেখ। আমার শীত লাগছে।

টিপুঃ আমার চাদরের মধ্যে আয়।
সাথিঃ না থাক।

টিপুঃ আরে আয় না।

টেনে নিয়ে নিল চাদরের মধ্যে। কেমন জানি, অস্বস্তি লাগছে। আবার কেমন জানি ভালো লাগছে। হঠাৎ কিছু একটার শব্দে প্রচন্ড ভয়ে সিনেমার মত টিপুকে জড়িয়ে ধরে চোখ বন্ধ করে ফেললাম।

টিপুঃ কি হলো? ভয় পাইছো? আমি তো আছি তোমার সাথে, তাইনা। চলো ঘরে যাই। মশা কামড়াচ্ছে। (লজ্জা সহকারে বললাম)
সাথিঃ হুমম, যাই চল।

স্বামীর অধিকার

বাড়িতে এসে আম্মার বকা খেতে হলো।

আম্মাঃ কিরে সাথি, তোর কি জীবনে আক্কেল হবে না? নতুন বিয়ে হয়েছে। আর এই হলদে গায়ে পুকুরে জঙ্গলে ঘুরে বেড়াচ্ছিস।
সাথিঃ আম্মা তুমি মনে হয় ভুলে গেছো আমার এখনো আক্কেল মাড়ি ওঠে নাই।

আম্মাঃ চুপ কর। এবার গেলে তোর কি করি দেখবি? এখন জামাইকে নিয়ে খেতে আয়।
সাথিঃ আচ্ছা।

হালার টিপু, আমার বকা খাওয়া দেখে হাসছিলো। ইয়া জোরে একটা চিমটি দিয়ে দিলাম দৌড়।

সাথিঃ এটা আমার বকা খাওয়া দেখে হাসার জন্য…. হিহি
টিপুঃ এই দাঁড়া, জলহস্তিনী।

রাতে…

সাথিঃ আজ রাতে খুব জ্যোৎস্না তাই না কুটুস?
টিপুঃ হুম তো?

সাথিঃ এমন জ্যোৎস্না রাতে ডাবলরা কি করে জানিস?
টিপুঃ জানতে চাই না। ঘুমা।

টিপু একদম কাছে চলে এসেছে আমার।

সাথিঃ আমি এসবের জন্য রেডি না, টিপু। আমার সময় চাই। প্লিজ, আমায় জোর করিস না, তুই।

বলেই কেঁদে দিলাম। টিপু আমার দিকে থেকে অন্যপাশে ফিরলো।

বন্ধুর প্রতি অভিমান

পরদিন আমার শ্বশুরবাড়ি আসলাম। দুদিন পর শাশুড়ি আম্মার সাথে বসে কথা বলছিলাম। তিনি হঠাৎই আমাকে জিজ্ঞেস করলেন,

শাশুড়িঃ বউমা টিপুর সাথে তোমার কি কোনো ঝামেলা হয়েছে?
সাথিঃ না তো, আম্মা। কেনো?

শাশুড়িঃ তাহলে ও রাজশাহী এমএ করতে যাচ্ছে কেনো?
সাথিঃ কি বললেন আপনি? ও রাজশাহী যাচ্ছে? কই, আমাকে তো কিছু বলে নি।

শাশুড়িঃ হুম ৭দিন পরই তো যাবে বললো। কেন জানি মনে হচ্ছে ওর কিছু একটা হয়েছে। তুমি একটু দেখো না, ওর কি হয়েছে?
সাথিঃ জ্বী আম্মা।

টিপু রাজশাহী যাচ্ছে কেনো? আমার থেকে দূরে থাকার জন্য? ওহ তাহলে তো ভালোই। নিজেকে গোছানোর জন্য একটু সময় পাব। কিন্তু ওটা শোনার পর থেকে আমার এমন হচ্ছে কেনো? কেমন অসহায় লাগছে? রাতে টিপু ফিরলে ওকে জিজ্ঞেস করলাম,

সাথিঃ শুনলাম, রাজশাহী চলে যাচ্ছো?
টিপুঃ হ্যা।

সাথিঃ আমাকে জানালে না যে!
টিপুঃ জানিয়ে কি হবে? আমাকে কি যেতে দিবি না? আটকে রাখবি?

সাথিঃ হ্যা রাখবো।
টিপুঃ কেনো?

সাথিঃ আমি তোমার স্ত্রী।
টিপুঃ ওহহ আচ্ছা বুঝলাম। এখন ঘুমা।

বন্ধু যখন বর

টিপু এমন বিহেভ করলো কেনো? আমার এত খারাপ লাগার কারণ কি? কেনো মনে হচ্ছে ওকে যেতে না দিয়ে আটকে রাখি। কেনো কি জন্য? ওহহ বুঝেছি আমি ওকে ভালবাসি। ও কখনো কোনোদিন আমাকে ছেড়ে যাওয়ার কথা বলেনি তাই বুঝিনি ওর মূল্য কতখানি। আজ যখন যাওয়ার কথা বলছে তখনি বুঝছি ওর মূল্য কতখানি। কিন্তু টিপু কি সত্যি চলে যাবে?

পাঁচদিন কোনো রকমে কেটে গেল। টিপুকে কিছু বলতে যেয়েও পারছি না বলতে। সেই জড়তা কাজ করছে নিজের মধ্যে। যাওয়ার আগের দিন বলেই দিলাম,

সাথিঃ টিপু, রাজশাহী না গেলে কি খুব লস হবে?
টিপুঃ লাভও কিছু হবে না, তাইনা।

আসলে আমি……

পাশের রুম থেকে শাশুড়ি আম্মা ডাক দিলেন।

টিপুঃ যা, মা ডাকছে।
সাথিঃ কিন্তু আমার এখন কথাগুলো বলা জরুরি।

টিপুঃ আগে মায়ের কথা শুনে আয়।

কিছু বলতে চেয়েও পারলাম না। কিছুক্ষণ পর রুমে এসে দেখলাম টিপু ঘুমিয়ে গেছে। নাহ আমার ভালো লাগছে না। আমার নিজের দোষে টিপু চলে যাচ্ছে আমাকে রেখে। নিজেকে অনেক বোঝলাম টিপুকে আমার মনের কথা বললে ও আমাকে ছেড়ে যাবে না। ঘুমন্ত টিপুর কানের কাছে গিয়ে বললাম – আমাকে ছেড়ে যাস না, টিপু। আমি তোকে ভালবাসি। ঘুমন্ত চেহারার কোনো পরিবর্তন হলো না। প্রচন্ড হতাশা হয়ে শুয়ে পড়লাম। ঘুম আসলো তিনটারও পরে…!

বন্ধু বরের কাছে ছুটে চলা

সকালে ধড়ফড়িয়ে ওঠে পড়লাম। টিপুকে খুজলাম পাশে। নাহ নেই। ব্রাশ করে এস দেখি ব্যাগ রেডি করছে। বিবর্ণ মুখে ওর সামনে গিয়ে বসলাম।

টিপুঃ তোর তো খুশি হওয়ার কথা। মন খারাপ কেনো? স্মাইল প্লীজ!

বৃথাই হাসি আনার চেষ্টা করলাম। ১০টায় ট্রেন। ৯ টার দিকেই বের হয়ে গেলো টিপু। আমি ওকে আটকাতে পারলাম না। পারলাম না ওকে আমার মনের কথা বলতে। নিজের ওপর রাগ হচ্ছে। হেডফোনে গান দিলাম প্রচন্ড জোরে। “কি ভুলে গেছো ভুলে আমায়? আড়ালে একা! হৃদয়ে দেয়াল তুলে তোমার হারালে কোথায়? আমার আকাশে আজ বরিস্বরন কালো মেঘে ঢাকা এ মন। ফিরে তো পাবো না তোমাকে কভু আর হবে না তুমি আমার। খুলে মনদ্বার ভাঙামনও আমার খোঁজে তোমাকেই বারেবার। “

নাহ অসহ্য লাগছে। দুঃখের সময় এমন গান শুনলে দুঃখ পাচগুন বেড়ে যায়। আমারও তাই হলো আমি টিপুকে ফিরে পেতে চাই। ঘড়ির দিকে তাকালাম ৯:৪৫ মিনিট। আমি যাব টিপুকে ফিরিয়ে আনতে। কিছু টাকা নিয়ে দিলাম দৌড়। স্টেশনে আসতে আসতে বেজে গেলো ১০:০৫। গাড়িতে মাত্রই হুইসেল দিলো। ছেড়ে দেবে এখনি। কোন বগিতে খুঁজবো আমি ওকে। সিনেমার কাহিনি মনে পড়ছে। ভাবতে ভাবতে দিলো ট্রেন ছেড়ে। সামনের দুইটা বগি দেখা এখনো বাকি। মন বলছে একটাতে টিপু আছে। ট্রেন এখনো বেশি জোরে ছাড়ে নি। আস্তে আস্তে দৌড়াতে লাগলাম। সামনেই তো প্লাটফর্ম শেষ। হে আল্লাহ আমাকে সাহায্য করুন।

হঠাৎ দেখি দরজা দিয়ে কেউ হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। আমার কত্তদিনের শখ এমন চলন্ত ট্রেনে কারো হাত ধরে উঠার। অবশ্য একবার ছেড়ে যাওয়া বাসে উঠেছিলাম। বাসের হেল্পার আমাকে টেনে তুলেছিলো। এমন ভাবতে ভাবতে লোকটার হাত ধরে উঠে পড়লাম ট্রেনে। একেবারে ফিল্মি কায়দায়। হঠাৎই মনে হলো এ কার বুকে মাথা রেখেছি আমি? লোকটাকে ঢাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেখলাম ওটা আর কেউ না আমার টিপু! আমার এত্ত আনন্দ লাগছে বলে বোঝাতে পারবো না। আনমনেই টিপুকে আবার জড়িয়ে ধরলাম। কতক্ষণ ধরে আছি জানি না। টিপুর ডাকে বাস্তবে ফিরলাম।

টিপুঃ এই যে ম্যাম এবার তো ছাড়ুন। সামনে স্টেশনে নামতে হবে যে।
সাথিঃ কেনো?

টিপুঃ আমি তো সামনের স্টেশন পর্যন্ত টিকিট কেটেছি, তাই!
সাথিঃ মানে কি? তুই রাজশাহী যাবি না?

টিপুঃ কিভাবে যাব বলেন মহারাণী! সোনা বাবু যে আমাকে যেতে মানা করেছে।
সাথিঃ আমি কখন মানা করলাম?

টিপুঃ কেনো মনে নেই? ওই যে কাল রাতে বললি আমাকে ছেড়ে যাস না, টিপু। আমি…..

ওটুকু বলার আগেই ওর মুখ চেপে ধরলাম আর বললাম,

সাথিঃ আমি তোকে ভালবাসি।

টিপু আমার চোখের দিকে তাকাতেই লজ্জায় লাল হতে লাগলাম। এ মুখ যে কোথায় লুকাই! ওহহ ভুলেই গেছি ছেলেদের বুক তো রয়েছেই তার প্রিয়তমার লজ্জা মাখা মুখ লুকানোর জন্য। আমিও লুকাই হিহি…

লেখা:- যারিন রাইসা (অস্পর্শী অপরাজিতা)

আরো পড়ুন- বাসর রাত গল্প – দুষ্টু হিটলার বউ ইজ্জত শেষ করে দিল

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *