মিস্টার সাইকো – Bengali Psycho Storie

মিস্টার সাইকো – Bengali Psycho Storie: রাতে দিয়া শুয়ে আছে হুড়মুড় করে দিহান দিয়ার ঘরে ঢুকলো। আচমকা দিহান কে দেখে দিয়া চমকে ঊঠলো। টেবিল থেকে ওড়নাটা নিয়ে দেহে জড়িয়ে নিলো।


১ম পর্ব

~ একটা মেয়ে হয়ে তুই ধুমপান করিস কিভাবে?

দিহানের কথা চমকে উঠলো দিয়া।

~ তুমি যা ভাবছো তেমন কিছু না। জিজুর সিগারেট এটা। উনি নিচে গেছে বাবা দেখলে লজ্জায় পড়বে তাই আমার কাছে এটা দিয়ে গেছেন।

~ এখন তো বানিয়ে বানিয়ে কথা বলবিই। কিন্তু আমিও ছেড়ে দেবার পাত্র না।
এই বলে পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে দিয়ার ছবি তুলে নিলো।

~ এই ছবি দিয়ে তুমি কি করবে দিহান ভাই?

~ সারা দুনিয়াকে দেখাবো। যারা তোকে ভদ্র বলে জানে তাদের কাছে তোর মুখোশ উন্মোচন করব। তুই কতটা সাধু সেটা সবাইকে জানাতে তো হবে নাকি?

~ দেখো দিহান ভাই তুমি কিন্তু একটা ছোট্ট বিষয় নিয়ে বাড়াবাড়ি করছো। আমি তো বললাম এটা জিজুর সিগারেট।

~ নিজেকে বাচানোর জন্য কত কথায় না বলছিস। আমি এখন যায়। নেট ফুরিয়ে গেছে। আগে নেট কিনবো তারপর তোকে সবার সামনে তুলে ধরবো। দুইদিনে তুই সেলিব্রিটি হয়ে যাবি ভাবতে পারছস বিষয়টা?

দিহানের এমন আচরণ সব সময় দিয়াকে কষ্ট দেই। দিয়ার ছোটোখাটো ভুল গুলো সবার সামনে তুলে ধরে সব সময় ওকে অপমান করতে চায়।

ওহো পরিচয় দেওয়াই তো হয়নি।

দিয়া বাবা মায়ের দ্বিতীয় সন্তান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলায় অনার্স করছে। দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। আর দিহান হলো দিয়ার মামাতো ভাই।

ছুটিতে দিয়া বাড়িতে এসেছে। এদিকে বাড়ি আসতে না আসতে সাইকোটা ফুফুর বাড়ি হাজির।

এইতো এখনকার ঘটনায় দেখলেন। দিয়ার জিজু মানে দিয়ার বড় আপু হিয়ার বর সেজান আর দিয়া ছাদে বসে গল্প করছিলো। এমন সময় শ্বশুর মশায়ের ডাক পড়ে। সিগারেট হাতে করে শ্বশুরে সামনে জাওয়াটা লজ্জার বিষয় সাথে সাথে শ্বশুরকে অপমানও করা হয়। তাই সেজান। সিগারেট টা দিয়ার হাতে দিয়ে

~ এটা ধরো।দেখি তোমার বাবা কি জন্য ডেকেছেন?

সেজান নিচে যেতেই দিহানের এন্ট্রি হয় ছাদে। দিয়ার হাতে সিগারেট দেখেই এসব কান্ড করে বসে।

দিয়া বারবার বলার পরের কোনো কথা কানে না নিয়ে দিহান বাড়ি থেকে বের হতে ফ্লেক্সিলোডের দোকান থেকে ডাটা কিনে নেয়। ফেইসবুকে ঢুকেই দিয়ার সিগারেট খাওয়া ছবি পোস্ট করে ক্যাপশন দেয়

হাই বন্ধুরা

এটা আমার ফুফাতো বোন দিয়া। সিগারেট খেতে খুব ভালোবাসে। আজকে আমাকে ডেকে বলল” দিহান ভাই আমি সেলিব্রেটি হতে চাই তুমি আমার এই একটা ছবি তুলে ভাইরাল করে দাও”। তাই তার কথা মত কাজ করলাম। আশা করি পোস্ট টি শেয়ার করে আমার ফুফাতো বোন কে সেলিব্রিটি করে দিতে সাহায্য করবেন।

দিহান বাড়িতে ফিরে দেখে। দিয়া ওর বাবা আরমান আহমেদের সামনে গালে হাত দিড়িয়ে কান্না করছে আর কিছু একটা বলার চেষ্টা করছে। কিন্তু আরমান আহমেদ বলছে

~ ছিহ তোমাকে মেয়ে বলতে আমার ঘৃণা হচ্ছে। শহরে লেখা পড়া করতে পাঠিয়েছি। ভেবেছি মানুষের মত মানুষ হবে। কিন্তু না তুমিতো ছেলেদের ক্যারেক্টার নিয়ে বসে আছো।

দিয়া কান্না করতে করতে বলতে লাগলো
~ বাবা তুমি যা ভাবছো তার কোনো সত্যতা নেয়।

~ কিসের সত্যতার কথা বলছিস তুই। একটা মেয়ে হয়ে সিগারেট খাওয়া ছবি ফেইসবুকে পোস্ট দিয়েছিস কিভাবে?

~ বাবা আমি কিছুই করিনি যা করেছে সব দিহান ভাই।

আরমান আহমেদ দিয়ার গালে আবার একোটা চড় দিয়ে দিলো।
~ দোষ করবি নিজে আর দোষী করতে চাইবি আরেকজন কে?
দুর হয়ে যা আমার চোখের সামনে থেকে।

দিয়া একবার ওর জিজুর দিকে তাকালো যার অর্থ” জিজু আপনার সম্মান বাচানোর জন্যই তো আমি সিগারেটটা নিয়ে ছিলাম। কিন্তু এই ছোট্ট বিষয় নিয়ে কি একটা হয়ে গেলো দেখুন। আপনিতবে সব জানেন। বাবাকে কিছু একোটা বলুন।”

কিন্তু একজনের চোখের ভাষা আরেকজন বোঝে কিভাবে। দিয়া এবার দিহানের দিকে ঘৃণার দৃষ্টিতে তাকিয়ে নিজের ঘরের দিকে কান্না করতে করতে দৌড়ে চলে গেলো।

হিয়া অনেক্ষণ দরজা ধাক্কানোর পর দিয়া দরজা খুললো
দরজা খুলে আপুর বুকে ঝাপিয়ে পড়ে কান্না করতে লাগলো দিয়া।

হিয়া দিয়াকে নিয়ে যেয়ে খাটের উপর বসালো।

~ তুই কি বিশ্বাস করিস আপু আমি এমন কাজ করেছি?

~ সয়ং তুই এসে যদি বলিস সিগারেট খেয়েছিস আমি তবুও বিশ্বাস করবো না। তাছাড়া তোর জিজু আমাকে কথাটা জানিয়েছে। কিন্তু বাবার সামনে কিছু বলতে পারেনি লজ্জায়। জামাই বলে কথা।

~ আপু এই সামান্য বিষয়টা নিয়ে দিহান ভাই এমন কাজটা কিভাবে করলো বলতে পারিস? আমিতো ছাদেই ওনাকে সব বলেছিলাম। কিন্তু কে শোনে কার কথা। আমাকে নাকি সেলিব্রেটি বানিয়ে ছাড়বে।

~ তুই মন খারাপ করিস না। সব ঠিক হয়ে যাবে।

~ কিভাবে ঠিক হবে আপু? ভালো কাজ মানুষ মনে রাখে না। কিন্তু আমার এই ছোট্ট কাজটা সবাই মনে রাখবে। আমাকে নিয়ে মজা করবে।

~ কেও কিচ্ছু করবেনা। মনে রাখিস তুই আমার বোন।
কেও তোকে কিছু বললে তাকে আমার সাথে মোকাবেলা করা লাগবে।

~ কিন্তু ওই সাইকোটা ছবিটা ফেইসবুকে ছড়িয়ে দিয়েছে। আমার ক্যাম্পাসের বন্ধুবান্ধব যদি এটা দেখে আমি মুখ দেখাবো কিভাবে।

~ তুই এতো চিন্তা করিস না তো বোন। এই তোকে ঘুম পাড়িয়ে দিই।

হিয়া দিয়াকে শুয়ে দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। আর হিয়া বলছে

~ জানিস আপু আমার এই ছোট্ট মনটা একজনকে ছাড়া কিছুই ভাবে না। তিল তিল করে গড়ে তোলা আমার এই ভালো বাসা। মনটা চায় সারাজীবন তার সাথে কাটাবো কোনো এক পবিত্র সম্পর্কে কোনো এক পবিত্র বন্ধনে। কিন্তু তার কাজকর্ম সব কিছুই তাকে ভালোবাসার বিপরীতে যায়। আমাকে কষ্ট দিয়ে সে কি মজা পায় আমি বুঝিনা।

~ কাওকে ভালোবাসলে তার দেওয়া কষ্ট গুলোও মেনে নেওয়া শিখতে হয়। এতে সে একসময় দেখবি আর কষ্ট দিতে পারবে না। শুধু ভালোবাসবে।

~ কিন্তু তার দেওয়া কষ্ট যে সমাজের সবাই দেয়। আমিতো চাই সে একা কষ্ট দিক। কিন্তু সে আমাকে প্রচার করায়। যাতে করে সবাই আমাকে অপমান করতে পারে।

~ তুই দিহানকে ভালোবাসিস না?

হিয়ার কথা শুনে দিয়া ফুপিয়ে ওঠে।

~ বিশ্বাস কর আপু আমি কোনোদিন ওকে ভালোবাসতে চাইনি। কিন্তু কিভাবে যে কি হয়েগেছে আমি নিজেই বুঝতে পারিনি।

~ নিজের মনের কথাটা বলছিস না কেন? সময় থাকতে সব বলে দে?

~ সব সময় আমার সাথে দুঃব্যবহার করে। আমি কিভাবে ওকে বলবো আমার মনের কথা। দেখা যাবে সেই কথাটাও রেকর্ড করে ফেইসবুকে ছেড়ে দিবে। আমি পৃথিবীর কাওকে ভয় পাইনা। কিন্তু ওই সাইকোটা কে দেখলে আমার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যায়।


পর্ব ২

~ যদি বলি তোর সাথে কয়েকজনের শারীরিক সম্পর্ক রয়েছে?

~ এসব তুমি কি বলছো দিহান ভাই? কেন তুমি এই সাইকোগিরি করছো আর নিজেকে খারাপ বানাচ্ছো।

~ আমি কোনো সাইকোগিরি করছিনা। দিস ইজ মাই ক্যারেক্টর। যেটা থেকে আমি বের হতে চাইনা।

~ একটা মেয়েকে এ ধরনের বাজে কথা বলার শাস্তি কি নিশ্চয় তোমার জানা আছে?

~ আমাকে পুলিশে দিবি? ওকে দেখবো কেমনে পারিস আমাকে পুলিশে দিতে হাহা।

~ সকালে ওমন একটা কান্ড করেছো দিহান ভাই।
বার বার কিন্তু আমি ছেড়ে দেব না বলে দিচ্ছি!

~ তুই কথা না ঘুরিয়ে বল।
কয়টা ছেলের সাথে তোর শারীরিক সম্পর্ক রয়েছে?

~ দিহান ভাই!
গায়ের সমস্ত শক্তি দিয়ে দিহান কে থাপ্পড় দিলো দিয়া।
~ নিজের অধিকারের গন্ডি পার করতে এসো না।

~ গন্ডির কি দেখেছিস তুই? আমি এমন এমন কাজ করতে পারি যা ভাবলে তোর অজ্ঞান হবার মত অবস্থা হবে।

~ প্লিজ দিহান ভাই আমাকে তুমি ছেড়ে দাও।
তোমার কষ্ট গুলো আমার বুকে লাগে।

যেই বুকে তোমার নামের ফুল ফুটে রয়েছে তার ভিতর কেন তুমি বারবার কাটার আঘাত করো?
আমারো তো একটা মন আছে। আমিও তো তোমার মতই একটা মানুষ।

আমারো যে কষ্ট অনুভুত হয়।
প্লিজ দিহান ভাই দোহায় তোমার আমাকে আর কষ্ট দিও না। সকালে জিজুর সিগারেট ধরে রাখা নিয়ে আমার সম্মানের অর্ধেক তো শেষ করেই দিয়েছো।
আর কত কষ্ট দিবা তুমি দিহান ভাই?

দিয়া দিহানে সামনে হাটু গেড়ে অনুনয় করতে লাগলো। আর কান্না করতে লাগলো।

~ কষ্ট?
আমি তোকে কখন কষ্ট দিলাম?

~ তুমি যেগুলো করো এগুলো কি?

~ আমি আবার কি করলাম?

~ না দিহান ভাই তুমি কিছু করোনি।
দিয়া এখন দিহানের সাথে তর্কে জড়াতে গেলো না।
বেশি তর্কে চলে গেলে আবার দিহান কি না কি করে বসে তার ঠিক ঠিকানা নেয়।
তাই চেপে গেলো।
বসা থেকে উঠে আবার দিহান কে বলল

~ জানো দিহান ভাই।
কিছু অনুভূতি আছে যেগুলো প্রকাশ করতে মন চাই।
ওভার লোড জিনিস টা বোঝো তো? সেই অনুভূতি গুলো ওভারলোড হয়ে গেলে বের করে দিতে হয়। আমি সেগুলো যে আর চেপে রাখতে পারছিনা।
কিন্তু তোমার এই ভিলেনগিরি সব সময় আমাকে বাধা দেয়। তোমার নামের ফুল গুলো কি কোনোভাবেই পূর্ণতা পাবেনা?

~ আমার নামের ফুল মানে?

দিহানের কথায় থতমত খেলো দিয়া।
মুখ ফসকে কি না কি বলে ফেলেছে।

এখনি কথা ঘুরিয়ে নিতে হবে তা নাহলে দিহান যদি দিয়ার কথার মানে বুঝে যায় তাহলে হয়তো ওকে আরো বড় বড় কষ্ট পোহাতে হবে।
যার কোনো কিছুই দিয়া চায়না।
তাই কথার মোড় ঘুরানোর জন্য বলল

~ তুমি আমার মামাতো ভাই।
তোমার প্রতি আমার একটা মায়া আছে না? সেটাই ফুলের মাধ্যমে ব্যাখ্যা দিলাম আর কি।

~ আমি বুঝিনি আমাকে ভালো করে বোঝা।

~ অন্য কোনোদিন বোঝাবো দিহান ভাই। আমি এখন নিচে যায়।

~ কিন্তু আমার প্রশ্নের উত্তর দিস নি তুই?

দিয়া দিহানের সাথে এসব ফালতু বিষয়ে কথা বলার প্রয়োজনীয়ত দেখলোনা। তাই ছাদ থেকে নিচের দিকে পা বাড়ালো।
কিন্তু সাইকো থেকে এতো সহজে পার পাওয়া সম্ভব না।
দিয়া উল্টো দিকে ফিরে হাটা দিতেই।

দিহান দিয়ার হাত ধরে হেচকা টান দিলো।
দিয়া নিজেকে সামলাতে না পেরে দিহানের বুকে গিয়ে আছাড় খেলো।

দিয়ার দেওয়া ধাক্কা সামলাতে না পেরে দিহানও নিচে পড়ে গেলো।

নিচে দিহান আর দিহানের বুকে পড়ে আছে দিয়া। দিয়া সবসময় চায় দিহানের বুকটাতে বাস বাধতে। যে বাসা কোনো ঝড় তুফানেও ভেঙে যাবে না। কারণ দিহান তার ভালোবাসা দিয়ে দিয়াকে আগলে রাখবে।

কিন্তু কথায় আছে কিছু স্বপ্ন স্বপ্ন হিসেবেই মানায়। বাস্তবে তা সম্ভব হয়ে ওঠেনা। কারন আপনি যাকে অনুভুতি প্রকাশ করবেন সে যদি সেটা গ্রহনে না করে তাতে সমস্যা নেয় কিন্তু সেই অনুভূতিটার সম্মান করাটা খুব জরুরী।

যেটা দিহান পারবেনা।

দিয়ার ধারণা মনের কথা ওকে বললে ঢাক ঢোল পিটিয়ে দিয়াকে সবার কাছে কালার করে দেওয়ার চেষ্টা করবে।
তাই না বলায় রয়ে যাচ্ছে দিয়ার অনুভূতি গুলো।

দিহানকে ঘিরে গড়ে ওঠা অনুভূতিগুলো। নিজের ভালোবাসা গুলো।

নিজের সুখ খুজতে চেষ্টা করে দিহানের মাঝে। কিন্তু সে কষ্ট ছাড়া কিছুই দিতে পারে না দিয়াকে।


৩য় পর্ব (অন্তিম)

রাতে দিয়া শুয়ে আছে হুড়মুড় করে দিহান দিয়ার ঘরে ঢুকলো। আচমকা দিহান কে দেখে দিয়া চমকে ঊঠলো। টেবিল থেকে ওড়নাটা নিয়ে দেহে জড়িয়ে নিলো।

~ দিদিদিহান ভাই। এতো রাতে এখানে ককেন এসেছো।
দিয়া ভয়ে কাপতে লাগলো। কারণ দিহান কে দেখে মনে হচ্ছে ও নিজের ভিতর নেয়।

~ তোর কাছে আসলাম দিয়া। একটু ভালোবাসতে আসলাম। দিবি একটু ভালোবাসতে?

দিহান কথা বলার সময় মুখ দিয়ে উদ্ভট গন্ধ বের হচ্ছিলো। দিয়া যা বোঝার বুঝে গিয়েছে। দিহান মদ খেয়ে এসেছে।

~ দিহান ভাই আর কত ভিলেন গিরি করবা? সকালে সিগারেট খাওয়া নিয়ে সন্ধ্যায় আমার সতিত্ব নিয়ে মজা করেছো। এখন আবার কি চায় তোমার?

~ তোকে চাই। তোকে ভালোবাসতে চাই। আমার ভালোবাসার সমুদ্রে তোকে ডুবাতে চাই।

দিহানের কথা শুনে দিয়া কেপে উঠলো। দিহানের মতিগতি অন্যরকম লাগছে দিয়ার কাছে।

~ দদিহান ভাই ননিজেকে সামলাও। তুমি নিজের মধ্যে নেয়।
তুমি মদ খেয়েছো। প্লিজ এখান থেকে চলে যাও।

~ আজকে তোকে ভালো না বেসে আমি যাবো না।

~ দিহান ভাই তুমি আমাকে ভালোবাসো না এটা আমি জানি। আর যদি ভালোবেসেও থাকতে তাহলেও চলে যাও আমার ঘর থেকে। আমার তোমাকে এই অবস্থায় দেখে খুব ভয় হচ্ছে। প্লিজ চলে যাও।

~ আমাকে ভয় পাচ্ছিস কেন জান। আমিতো তোকে ভালোবাসি। ভালোবাসার মানুষকে কেও ভয় পায় নাকি?

~ কিন্তু তুমি আজ। তোমার মধ্যে নেয় দিহান ভাই। দুইটা বছর ধরে তুমি তোমার সাইকোগিরি দেখিয়ে গেছো। আমি কিছু মনে করেনি। আজকে সকালের ঘটনাও ভুলে গেছি।সসন্ধ্যার ঘটনাটাও। কিন্তু এখন সত্যি আমার খুব ভয় হচ্ছে।

দিহান একপা দুপা করে দিয়ার দিকে এগিয়ে আসে। দিয়া পালাতে চেষ্টা করে কিন্তু দিহান ওকে ধরে ফেলে।

দিয়া নিজেকে দিহানের থেকে বাচানোর জন্য শেষ চেষ্টা করতে চিৎকার দিতে চায়। কিন্তু তার আগেই দিহানের ঠোঁট জোড়ে দিয়ার ঠোঁট জোড়াকে আটকে ধরে। দিয়া কোনো ভাবেই নিজেকে দিহানের থেকে আলাদা করতে পারে না।

কিছু সময় পর ক্লান্ত দিহান দিয়ার বিছানায় ঘুমিয়ে পড়ে।
দিয়া গায়ে চাদর জড়িয়ে ওয়াসরুমে ঢুকে পড়ে। সাওয়ার ছেড়ে দিয়ে সাওয়ারের নিচে বসে মুখ চেপে কাদতে থাকে।

দিয়ার ভালোবাসা আজকে হেরেগেছে সাইকো দিহানের কাছে।

সকালে….

দিহানের ঘুম ভেঙ্গে নিজেকে দিয়ার ঘরে দেখে খুব অবাক হয়। কিন্তু আসেপাশে দিয়াকে দেখে না। ওয়াসরুম থেকে পানি পড়ার শব্দ পায়। বিছানা থেকে নেমে নিজের দিকে তাকিয়ে দিহান যেন আসমান থেকে পড়ে।

~ ছিহ এটা আমি কিভাবে করতে পারলাম। ছিহ। নিজের প্রতি ঘৃণা হচ্ছে আমার। যাকে দুরে রাখতে গিয়ে নিজেকে সাইকো সাজিয়েছি আজ তার সাথেই আমি? ছিহ। মরে যেতে ইচ্ছা করছে আমার। আমি এই মুখ দেখাবো কি করে দিয়াকে।

নিজের প্রতি ঘৃণা নিয়ে ওই সকালেই দিহান নিজের বাড়িতে চলে গেলো।

হিয়া এসে দিয়ার ঘরে এসে দিয়াকে পেলো না। ওয়াসরুমে পানির শব্দ শুনে ভাবলো ওখানেই আছে। তাই কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলো হিয়া। ৫মিনিট ১০ মিনিট করে ৪০ মিনিট পার হয়ে গেলো তবুও দিয়া ওয়াসরুম থেকে বের হলো না।এবার হিয়ার মনে সন্দেহ হতে লাগলো।তাই দিয়াকে ডাকতে লাগলো। দরজা ধাক্কা দেওয়ার পরও যখন দেখলো দিয়ার কোনো সাড়াশব্দ নেয়তখন সেজান আর ওর বাবাকে ডাক দিলো।

ওয়াসরুমের দরজা ভেঙ্গে। দেখলো দিয়া গায়ে বিছানার চাদর গায়ে জড়িয়ে সাওয়ারের নিচে পড়ে আছে। হিয়া দিয়া বলে চিৎকার করে ওঠে।সবাই মিলে ধরাধরি করে দিয়াকে বেডে শুয়ায়ে দেয়।
বাবা আর সেজান বের হলে হিয়া দিয়াকে ড্রেস পরিয়ে দেয়।

কিছুক্ষণের মধ্যে ডাক্তার চলে আসে। চেকাপ করে বলে দিহার অবস্থা খুব খারাপ। সারারাত সাওয়ারের নিচে ছিলো হয়তো এখনি হাসপাতালে নিতে হবে। সবাই দিয়াকে নিয়ে হাসপাতালে যায়।

সাতদিন পর দিয়া পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠে। কিন্তু মনের অসুস্থতা দুর করা সম্ভব না। দিহান যে মনের অসুখ লাগিয়ে দিগে চলে গেছে।

এই মধ্যে দিয়ার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা দিয়া হিয়াকে বলেছে।

একমাস পর….

দিয়া এই একমাস সবার কাছথেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে। প্রয়োজন ছাড়া কথা বলে না। দিয়ার এমন অবস্থা দেখে হিয়াও যেতে পারে না। মা বেচে থাকলে হয়তো দিয়াকে মানসিকভাবে এতোটা ভেঙে পড়তে দিতো না।

হিয়ার সাথে রান্নার সাহায্য করছিলো দিয়া। হঠাৎ মাথা ঘুরে পড়ে যায় দিয়া। কোনোরকমে দিয়াকে ঘর পর্যন্ত নিয়ে যায়। চোখে মুখে পানি দিতেই দিয়া মিটিমিটি চোখ করে তাকায়।

~ কি রে দিয়া হঠাৎ তোর কি হলো?

দিয়া কিছু জবাব না দিয়ে দৌড়ে ওয়াসরুমের দিকে গিয়ে গড়গড় করে বমি করতে থাকে।
বমি করতে করতে দিয়া ক্লান্ত হয়ে যায়।

হিয়া~ খুব কষ্ট হচ্ছে বুঝি।

~ হ্যা আপু। মনে হচ্ছে পেটের সব কিছু বের হয়ে আসবে।

হিয়া কিছুটা ভেবে দিয়াকে বললো
~ তোর কি এই মাসে মান্থলি মিস হয়েছে?

~ হ্যা কিন্তু কেন?

দাড়া একটু পর বুঝতে পারবি। এই বলে হিয়া নিজের ঘরে গিয়ে একটা প্যাকেট এনে দিয়াকে বলল
~ নে নেটা দিয়ে টেস্ট কর।

~ কি টেস্ট করবো।

হিয়া দিয়াকে বুঝিয়ে বললো প্রেগ্ন্যাসি টেস্ট করার কথা। দিয়া প্রথম নারাজ হলেও সেদিনের কথা মনে হতেই প্যাকেট টা হাতে নেয়। হিয়া ওয়াসরুমের বাইরে আসলে দিয়া দরজাটা আটকে দেয়।

কিছুক্ষণ পর দিয়া বের হয়ে বিষন্ন মুখে বলে

~ পজিটিভ দেখাচ্ছে।

~ তাহলে চল। এখনো সময় আছে। এভর্সনটা করিয়ে আসি।

~ না আপু। আমি এটা করতে পারবোনা। মানছি দিহান ভাই পৃৃথিবীর সবচেয়ে নিকৃষ্ট কাজ করেছে। তবে সন্তানটা তো আমারও আমি কোনো ভাবেই একে মেরে ফেলতে পারবোনা।
আত তাছাড়া দিহান ভাইকে তোমরা বলবা। ওতো ওই রাতেই বলেছিলো আমাকে ভালোবাসে।

~ ও যেটা বলেছিলো সেটা তো নেশারঘোরে। সত্যিটা হলো ও তোকে কোনোদিন বিয়ে করবে না।

হিয়া দিয়াকে অনেক্ষণ বোঝানোর পর রাজি করাতে পারলো এভর্সন করাতে।

গাড়ি নিয়ে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে বের হলো দুইবোন আর সেজান।

মাঝরাস্তাই হিয়ার ফোনে ওর ফুফু অর্থাৎ দিহানের মা ফোন করলো।

~ দিহানকে হাসপাতালে ভর্তি করেছি। ডাক্তার বলেছে হাতে বেশি সময় নেয়। মা তোরা দয়া করে তাড়াতাড়ি চলে আয়।

ফোনটা রেখে হিয়া সেজানকে গাড়ি ঘুরিয়ে ফুফুর বলা হাসপাতালে রওনা হয়।

কেবিনের বাইরে থেকে দিয়া দিহানকে দেখে। একজনের বেশি কেও ঢুকতে পারবেনা তাই বাইরে আছে সবাই। ভিতরে আছে সেজান।

দিয়ার কাধে হিয়া হাত রাখে

~ দিহান হয়তো আর বাচবেনা।

~ ও মরলে আমার কি?

~ অনেক কিছু। তাহলে শোন ও মরলে তোর কি কি

“দুই বছর আগে তুই যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাস তখন ও আমাকে ফোন দিয়ে বলে
~ আপু আমার দিয়া তো চান্স পেয়েছে।এখন থেকে আমরা চুটিয়ে প্রেম করবো। আমি আমার মনের কথা ওকে বলে দেব। অনেক অপেক্ষা করেছি আর না। আজকেই তোমাদের বাড়িতে যাচ্ছি।

আমাদের বাড়িতে আসার পথে মাথা ঘুরে পড়ে যায়। সেদিন তো ওকে দেখতে তুইও গেছিলি। কিন্তু সবাইকে একটা জিনিস জানালেও তোকে জানানো হয়নি। সেটা হলো অর ব্রেইনটিউমার। যেটা অপারেশন করলে ওর মরার চান্স ৯০%।
তখন ও আমার সাথে একটা কথা বলেছিলো

~ আপু আমি অপারেশনটা করবো না। এমনিতেও তো মারা যাবো। তবে মারা যাওয়ার আগে দিয়ার মন থেকে আমার নামটা মুছে দিতে চাই। আমি নিজেকে সাইকো বানাবো ওর কাছে। এমন এমন ভিলেনি করবো যাতে করে আমার নামটা ওর মন থেকে চলে যায়।

সেদিন সিগারেট খাওয়া নিয়ে তোর ভার্জিনিটি নিয়েও কথা বলেছিলো সেগুলোও আমাকে জানিয়েছিলো।
তার পর রাতে তোর সাথে যা হয়েছিলো সকালে যাওয়ার সময় আমাকে বলেগিয়েছিলো। আমি ওকে থাপ্পড় মারি কিন্তু ও আমার পা জড়িয়ে ধরে বলে

~ আপু আমি আমার জ্ঞান থাকতে আমার ভালোবাসাকে নষ্ট করবো তুমি ভাবলে কি করে। কালকে একটা কষ্টেই মদ খেয়েছিলাম যে আমার দিয়াকে কোনোদিন আমার বউ রূপে পাবো না। আমি যে এই দুনিয়ায় কয়দিনের অতিথি মাত্র। কিন্তু সকালে নিজেকে দেখে খুব ঘৃণা হচ্ছিলো আপু। আমি নিজেই আমার পবিত্র ভালোবাসাকে অপবিত্র করে ফেলেছি।

এই বলে দিহান আমাদের বাড়ি থেকে চলে আসে ঐদিন”

দিয়া হাটু গেড়ে বসে চিৎকার করে কাদতে থাকে আর নিজের চুল ছিড়তে থাকে। কেও ওর কান্না থামাতে পারে না।

কিছুক্ষণ পর দিয়াকে দিহানের কেবিনে পাঠানো হয়।

~ কেন করলে দিহান ভাই? কেন? কেন নিজের মনের কথা বলোনি?

দিহানের কথা বলতে খুব কষ্ট হচ্ছে। তবুও কথা বলছে। প্রিয়তমার সাথে এটাই হয়তো শেষ কথা।

~ বলে কি হতো। মরে তো যাবো। ভেবেছিলাম তোকে আমার প্রতি ঘৃণায় পরিপূর্ণ করে দেব কিন্তু উপর আল্লাহ হয়তো এটা চায়নি। তাই আজকে আপু তোকে সব কিছু বলে দিয়েছে।

~ দিহান ভাই তুমি বাবা হবে। তোমার সন্তান আমার গর্ভে।

~ এভর্সনটা করিয়ে নিস।

~ আজকে যেহেতু সব জেনেগেছি আর আর কোনো সংশয় নেয়। আমাদের বাচ্চা বড় হবে। বৈধতা অবৈধতার দেয়াল পার করে আমাদের মেয়েকে আমি বড় করবো। তবে মনে রেখো ম এর বিয়েই বড় বিয়ে যেটা তোমার সাথে আমার অনেক আগেই হয়ে গেছে।

দিহান মুচকি হেসে দিহার কপালে একটা চুমু দিয়ে বলে।

ভালো থাকিস দিয়া। আমাদের মেয়েকে বড় ডাক্টার করবি।
এজীবনে তোকে না পেলাম তো কি হয়েছে। মৃত্যুর পর তোর অপেক্ষায় থাকবো।

দিয়ার সামনেই দিহান শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করে।

২৫ বছর পর…

“আজকে তোমার মেয়ে ডাক্তার হয়েছে দিহান ভাই। আমি তোমার কথা রেখেছি। ওকে এয়ারপোর্টে আনতে যাচ্ছি। তোমার কাছে যে খুব যেতে ইচ্ছা করে দিহান ভাই।”

ডায়েরি লিখে দিয়ানাকে আনার জন্য এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে রওনা দেয় দিয়া।

সব জায়গায় পূর্ণতা আসেনা। কিছু জায়গায় অপূর্ণতার মধ্যেও পূর্ণতা আছে। মায়ের কাছে সন্তান সন্তানই হয়। সমাজের কাছে হয়তো বৈধ্য অবৈধ্যর ধারণা থেকেই যায়।

লেখনীতেঃ রাফিজা আখতার সাথী

সমাপ্ত

(পাঠক আপনাদের ভালোলাগার উদ্দেশ্যেই প্রতিনিয়ত আমাদের লেখা। আপনাদের একটি শেয়ার আমাদের লেখার স্পৃহা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আমাদের এই পর্বের “মিস্টার সাইকো – Bengali Psycho Storie” গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম। ধন্যবাদ।)

আরো পড়ূন – সেলিব্রেটি ভাবি – জনপ্রিয় টিকটক স্টারের গল্প

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *