The Mummy – নতুন ভুতুড়ে মমির গল্প

The Mummy – ভুতুড়ে মমির গল্প: ঢং ঢং ঢং শব্দ আসছে ভিতরের ঘরের ঘড়িটা থেকে। তার মানে রাত ১২ টা বেজে গেছে। খাবার মুখে দিতে যাব ঠিক সেই মূহুর্তে আমার ফোনটা বেজে উঠল। আরে ডা. জন এখন এত রাতে কেন আবার কল দিচ্ছেন?


মমির সত্য কিছু রহস্যের সাথে কিছু কাল্পনিক ভয়ানক ঘটনা মিশিয়ে লিখতে বসেছি। জানিনা শেষ পর্যন্ত গল্পটা পাঠকদের মনে জায়গা করে নিতে পারবে কিনা। গল্পের সব চরিত্র এবং জায়গার নাম কাল্পনিক। কেউ গল্পের মধ্যে ব্যবহিত চরিত্রের নাম বা জায়গার নাম নিয়ে কোন প্রশ্ন তুলবেন না।

আজ থেকে প্রায় ৫ হাজার ৬০০ বছর আগে মমি খুঁজে পাওয়া যায় সর্ব প্রথম মিশরে। এখন পর্যন্ত অনেক মমি মিশর সহ পৃথিবীর বেশ কিছু শহরে খুঁজে পাওয়া গেছে। তবে সব থেকে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল তুতেন খামেনের মমি।

ফারাওদের ১৮ তম রাজবংশের রাজাদের মধ্যে তুতেন খামেন ছিলেন ১১ বা ১২ তম। তুতেন খামেনের মমির সাথে মিশে আছে বেশ কিছু রহস্যময় মৃত্যু, যে মৃত্যুর রহস্য আজ খুঁজে পাওয়া যায়নি। তুতেন খামেনের মমি খুঁজে পেতে যারা কাজ করেছিলেন, তাদের মধ্যে প্রায় ৮০% লোক রহস্য জনক ভাবে অল্প বয়সে মারা যান।


মূল গল্প শুরু………..

প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগে কাজ করার সুবাদে বিভিন্ন স্থানে যেতে হয় শতহাজার বছর আগের পুরানো দ্রব্য এবং জিনিস পরিদর্শন করার জন্য। যদিও আমরা প্রাচীনপুরানো দ্রব্য সংগ্রহ করি, তবে সেটা আমার কাজ নয়। আমি পরিদর্শন করে ফিরে যাওয়ার পর প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগ থেকে লোক পাঠানো হয় সেগুলো নিয়ে যাওয়ার জন্য।

ডা. জন গতকাল টেলিফোন করে আমাকে জানায় তিনি একটি মমির সন্ধান পেয়েছেন। মমির কফিনটা দেখতে বেশ অদ্ভুত। কফিনটা এখন পুরোপুরি ভাবে সিল করা আছে। কফিনটা খুলার জন্য যত দ্রুতসম্ভব আমাকে তার গবেষনাগারে যেতে বলেন।
গতকাল হাতে বেশ কিছু কাজ ছিল, যার কারণে আমার যাওয়া হয়নি। তাই আজ খুব সকাল সকাল বেড়িয়ে পড়লাম ডা. জনের গবেষনাগারের উদ্দেশ্যে।

প্রায় ৪৫ মিনিট ড্রাইব করার পর সকাল ৯.৩০ মিনিটে ডা. জনের গবেষনাগারে পৌছালাম। ডা. আমার জন্য সদর দরজার বাহিরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিলেন। ডা. জন আমাকে দেখে কিছুটা এগিয়ে এসে বললেন
ডা. জন আসুন মি. নীল [ আমার নাম] ভিতরে আসুন। বলুন কি খাবেন? চা নাকি কফি?
না, এখন কিছু খাব না। মমির কফিনটা কোথায়?

ডা. জন মমির কফিনটা পাশের রুমে রাখা আছে। একদল ডাকাত মমির কফিনটা খুলতে না পেরে আমার কাছে নিয়ে এসেছিল গতকাল সকালে। কফিনটা দেখে বেশ পুরানো মনে হয়েছিল। যার কারণে দেরি না করে, তাদের কিছু টাকা দিয়ে কফিনটা আমি রেখে দেই।
খুব ভাল করেছেন। এবার মমির কফিনের কাছে নিয়ে চলুন।

ডা. জন আমাকে নিয়ে পাশের রুমে রাখা মমির কফিনের কাছে গেলেন। মমির কফিনটা দেখে আমি বেশ অবাক হলাম। এমন কফিন আগে কোনদিন দেখেছি বলে মনে হয় না। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগে কাজ করছি প্রায় ৫ বছর যাবত, অনেক মমি এবং কফিন দেখেছি। কিন্তু এমন অদ্ভুত কফিন কোনদিন দেখা হয়নি।

কফিনটা দেখে মনে হচ্ছে ভিতরে নিশ্চয়ই কোন রাজা, মহরাজার মমি রয়েছে। তাছাড়া কফিনটা বিশাল আকৃতির কম করে ১৫ ফুট হবে।
ডা. জন মি. নীল আপনি কফিনের উপরি ভাগে খেয়াল করে দেখুন। কোন একজন ব্যাক্তির ছবি খুদাই করা আছে।
হ্যা দেখেছি। আমার মনে হচ্ছে এটা কোন সাধারণ মমি নয়।

ডা. জন হ্যা সেটা আমারও মনে হচ্ছে। গতকাল যখন আমি প্রথম কফিনটা দেখি, তখন আমি কফিনটা দেখে অভাক হয়ে যাই।
ছবিটার নিচের দিকে খেয়াল করে দেখুন, কিছু একটা লিখা আছে। কিন্তু মনে হচ্ছে না এমন লিপির ভাষা পৃথিবীতে প্রচলিত আছে।

ডা. জন সমস্যা নেই। আমি আমার লেংগুয়েজ ট্রান্সলেটার দিয়ে যে কোন ভাষার অনুবাদ করতে পারব।
ঠিক আছে, তবে এখনি কাজটা সেড়ে নিন।

ডা. জন নিজের আবিষ্কিত লেংগুয়েজ ট্রান্সলেটার দ্বার জানতে পারেন, এই লিপি গুলো প্রায় ৪ হাজার ৫০০ বছর আগে ব্যাবহিত হত ”রেগুইন” নামক জাতির মানুষদের মধ্যে। কফিনের নিচের দিকে মিরাং লিপিতে লিখা আছে ”রাজা রেগুইন রুতেন”। ডা. জন আর জানতে পারেন রাজা রেগুইন রুতেন, রেগুইনু রাজ্যের ৩য় বা ৪র্থ শাসক ছিলেন।

ডা. জন আমার উদ্দেশ্যে বলতে লাগলেন………
ডা. জন তবে একটা বিষয় নিয়ে বেশ কটকা লাগছে। খেয়াল করে দেখুন কফিনটার চারপাশে কোবরার ছবি খুদায় করা আছে।
হ্যা ঠিক বলেছেন। কিন্তু এই কোবরার মানে কি হতে পারে?
ডা. জন হতে পারে কোন বিপদ চিহ্ন বা এমনি কোন কারুকাজ।

আচ্ছা যাই হোক। সব কিছু জানতে হলে কফিনটা খুলে মমিটা বের করতে হবে।
বেশ কিছুক্ষণ চেষ্টা করার পর মমির কফিনটি খুলতে আমরা সক্ষম হলাম। কিন্তু বিষ্ময়কর বিষয় হল লোহার কফিনের ভিতরে আর একটি কফিন বিদ্যমান রয়েছে। প্রথম কফিনের মত এই কফিনটি লোহার তৈরি কফিন নয়। ২য় কফিনটি পুরোপুরি স্বর্ণ মিন্ডিত চাকচমক যুক্ত একটি কফিন।

২য় কফিনটি খুলেও কাঙ্কিত মমি আমরা খুঁজে পেলাম না। ২য় কফিনের ভিতরে ভিন্ন ধর্মি এক প্রকার কাল ধাতু দিয়ে তৈরি আর একটি কফিন এবং একটি বই পরে আছে। ৩য় কফিনের উপরে খুদায় করা ছবিটা দেখে আমরা ভয়ে কিছুটা পিছিয়ে গেলাম। ১ম এবং ২য় কফিনে একরকম ছবি খুদায় করা ছিল।

কিন্তু ৩য় কফিনে পুরোপুরি ভিন্ন একটি ছবি খুদায় করা। ছবিটাতে একটি ৫ মাথা সমৃদ্ধ সাপের মাথায় বসে আছে রাজা ”রেগুইন রুতেন”। তাহলে কি এই রাজা সাপেদের পোষক ছিলেন? উপ আর চিন্তা করতে পারছি না। মনে হচ্ছে ৩য় কফিনটা খুলা কোন ভাবে ঠিক হবে না। যদি ৩য় কফিনটা কোন ভাবে খুলে যায় তবে খুব খারাপ কিছু ঘটবে। হয়ত তার ইঙ্গিত দেওয়া আছে কফিনের উপর খুদায় করা সাপ দ্বারা।

ডা. জন আমাদের কি কফিনটা খুলা উচিত হচ্ছে?
ডা. জন কিছু বুঝতে পারছি না। এক এক করে যত কফিন গুলো খুলছি তত সব কিছু রহস্যময় এবং ভয়ানক হয়ে উঠছে।
হ্যা আমিও সেটাই চিন্তা করছি। আমার মতে কফিনটা আর খুলার দরকার নেই। যেমন আছে তেমন পরে থাকুক।

ডা. জন ঠিক আছে।
তাহলে আমি এখন আসি, আমার অফিসে যেতে হবে। এখানে এমনিতে অনেক সময় নষ্ট হয়ে গেছে।
ডা. জন ঠিক আছে বিদায়।

ডা. জন কে বিদায় জানিয়ে আমি আমার অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। অফিসে প্রবেশ করার পর একজন স্টাপ আমাকে জানালেন মিস. মীরা আমাকে ডেকে পাঠিয়েছেন উনার কেবিনে। বুঝতে পারছি না মীরা আমাকে এই অসময়ে কেন ডেকে পাঠালেন? তবে অবাক হওয়ার কিছু নেই। কারণ মিস. মীরা কোন সমস্যায় পরলে আমাকে নিয়ে সেটার সমাধান করে থাকেন।

মীরার কেবিনের বাহিরে দাঁড়িয়ে বললাম…….
ভিতরে আসতে পারি মিস. মীরা?

মিস. মীরা আরে মি. নীল আসুন আসুন। এতক্ষণ ধরে আপনার কথাই চিন্তা করছিলাম।
আমাকে জরুরি তলপ করার পিছনে কোন কারণ আছে কি মিস. মীরা।
মিস. মীরা নিশ্চয়ই, আপনি জানেন না আমি আপনাকে বিনা কারণে বিরক্ত করিনা।
ঠিক আছে, বলুন কি কারণে ডাকলেন।

মিস. মীরা কান্দিকাল অধিবাসিদের খবরে গতকাল আমরা শহরের ৫৫ কি.মি দক্ষিণে কান্দিকালু পাহাড়ে গিয়েছিলাম। তারা আমাদের জানায় ( বেশ কিছুদিন ধরে রাতে পাহাড়ের এক নির্দিষ্ট স্থানে কিছু লোক মাটি সড়াত। তারা যখন বিষয়টা বুঝতে পারে তখন অনেক দেড়ি হয়ে গেছে। রাতের আধারে যারা পাহাড়ের মাটি সরাত তারা ছিল আসলে একদল ডাকাত।)

কিছুক্ষণ খুঁজার পর আমরা কিছু মূল্যবান দ্রব্য সামগ্রী খুঁজে পাই। আমাদের ধারণা সেখানে একটা বিশাল মমির কফিন ছিল। তার সাথে ছিল পৃথিবীর বেশ কিছু মূল্যবাদ সম্পদ।

মিস. মীরার কথা শুনে আমি এতটুকু অবাক হলাম না। কারণ আমি সব কিছু আজ সকালে নিজের চোখে দেখে আসলাম। যদি আমি মিস. মীরাকে সবকিছু বলি তবে প্রত্নতত্ত্বের লোকেরা গিয়ে মমির কফিন খুলে মমি বাহিরে বের করে নিয়ে আসবে। তাতে করে ভয়ংকর কিছু ঘটতে পারে মমিটা দ্বারা। যার কারণে মিস. মীরাকে কিছুতে বুঝতে দেওয়া যাবে না কফিন সহ মমিটা আছে ডা. জনের কাছে।

আমি চুপ করে আছি দেখে মিস. মীরা বলেন………
মিস. মীরা কি হল মি. নীল? আপনি এত কি চিন্তা করছেন?
কি চিন্তা করব আবার? আপনার কথা দ্বারা পরিষ্কার বুঝা যাচ্ছে আমরা সবকিছু যদি উদ্ধার করতে পারতাম, তবে আমাদের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অনেক নাম হত।

মিস. মীরা হ্যা সেটাই বলতে চেয়েছি আপনাকে। আপনি এই বিষয়টা একটু দেখবেন।
ঠিক আছে, আমি আমার সব গুপ্তচরদের কাছে লাগিয়ে দিব। এখন আামকে বিদায় দিন অনেক কাজ পরে আছে।

মিস. মীরা ঠিক আছে আপনি এখন আসতে পারেন।
মিস. মীরাকে বিদায় জানিয়ে আমি আমার কেবিনে গেলাম। নাহ আর দেড়ি করা যাবে না। এমনি অনেক সময় নষ্ট হয়েছে তার মধ্যে আবার অনেক কাজ পরে আছে।

পর্ব ২

অফিস থেকে বের হতে আজ একটু বেশি দেড়ি হয়ে গেছে। বাড়ি পৌঁছে দেখি রাত ১১.৪৫ বেজে গেছে। অফিসে আজ দুপুরে কি না কি খেয়েছিলাম মনে নেই। খুদায় পেঠ ছুছু করছে, যার কারণে কোন রকম ৫ মিনিটে ফ্রেস হয়ে খাবার টেবিলে গেলাম।

ধ্যাত আর পারলাম না মাকে নিয়ে। আমার জন্য খাবার নিয়ে বসে থাকতে থাকতে টেবিলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পরেছে। এর কোন মানে হয়? কত দিন বলেছি আমি আসতে দেড়ি করলে খেয়ে শুয়ে পরিও। আর আমার খাবারটা টেবিলে রেখে দিও আমি এসে খেয়ে নিব। কিন্তু কিছুতেই মা আমার কথা গুলো শুনে না।
মা উঠ, উঠ মা।

মা এইত বাবা উঠছি। আজ এত দেড়ি হল কেন? [ ঘুম জড়ানো কন্ঠে উত্তর দিল।]
হ্যা মা আজ একটু দেড়ি হয়ে গেল, অফিসে প্রচুর কাজের চাপ ছিল তাই।
মা ঠিক আছে, আমি খাবার থালায় দিচ্ছি তুই খেতে শুরু কর।
ঢং ঢং ঢং শব্দ আসছে ভিতরের ঘরের ঘড়িটা থেকে। তার মানে রাত ১২ টা বেজে গেছে। খাবার মুখে দিতে যাব ঠিক সেই মূহুর্তে আমার ফোনটা বেজে উঠল। আরে ডা. জন এখন এত রাতে কেন আবার কল দিচ্ছেন?

কল রিসিব করে হ্যাল বলতে যাব তার আগেই ডা. জন বলতে লাগলেন….
ডা. জন মমির কফিন থেকে প্রচুর আলো বের হচ্ছে। আর ভিতর থেকে এক ভয়ানক আওয়াজ ভেঁসে আসেছে বাহিরে। কি করব কিছু বুঝতে পারছি না। [ ডা. জনের কথা শুনে মনে হল তিনি প্রচুর ভয় পেয়ে আছেন।]
আপনাকে কিছু করতে হবে না। আপনি দ্রুত পাশের রুমে চলে যান, আমি এখনি আসছি।

ডা. জন ঠিক আছে মি. নীল, আপনি একটু তাড়াতাড়ি আসুন।
মা কার ফোন ছিল? আর এত রাতে কোথায় যাওয়ার কথা বলছিস?
মা ডা. জন ফোন করেছিল। জরুরি একটা কাজের জন্য আমাকে এখনি যেতে হবে। আমি না গেলে কাজটা সম্পন্ন হবে না।
মা যা ইচ্ছা কাজ হোক, এতরাতে কোথাও যেতে দিচ্ছিনা তোকে।
মা প্লিজ একটু বুঝার চেষ্টা কর।

মাকে অনেক কষ্টে বুঝিয়ে বের হলাম ডা. জনের গবেষনাগারের উদ্দেশ্যে। পুরো রাস্তা খালি থাকার কারণে মাত্র ২০ মিনিটে পৌছে গেলাম ডা. জনের গবেষনাগারে।
এখন ইলেট্রিসিটিতো নেই তবে ডা. জনের গবেষনগারের চারপাশ এমন নীল আলোয় আলোকিত হল কি করে? কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর বুঝতে পারলাম কোন একটা রুম থেকে প্রচুর নীল আলোর প্রতিফলন ঘটছে।

যার কারণে পুরো গবেষনাগার নীল আলোয় আলোকিত হয়ে উঠেছে। আর এক মুহূর্ত দেড়ি না করে, ডা. জনের রুমে প্রবেশ করলাম। কিন্তু অনেক খুঁজাখুঁজির পরেও ডা. জনকে তার রুমের কোথাও খুঁজে পেলাম না। ডা. জনের জন্য চিন্তা হচ্ছে, ডা. জনের আবার কিছু হয়ে গেল নাতো? প্রত্যেকটা রুম খুঁজার পরেও ডা. জনকে খুঁজে পেলাম না। তবে মমি রাখা রুমটা এখন দেখা হয়নি। মমি রাখা রুমে প্রবেশ করে আমি আঁতকে উঠলাম। এ কি হচ্ছে?

৩য় কফিন থেকে প্রচুর পরিমানে নীল আলো বের হচ্ছে। আলোর কারণে চারপাশের কোন কিছু দেখা যাচ্ছে না। আমি কিছু টা এগিয়ে গেলাম, প্রখর আলোয় আমার চোখ দুটো ব্যথা করছে।

অনেকক্ষণ পর মমির কফিন থেকে আলো বের হওয়া বন্ধ হল। এবার রুমের সব কিছু ঠিক ভাবে দেখা যাচ্ছে। খেয়াল করে দেখলাম ডা. জন কফিন থেকে বের করা বইটা হাতে নিয়ে কফিনের থেকে কিছুটা দূরে অজ্ঞান অবস্থায় পরে আছেন। আমার গাড়ি থেকে পানির বোতল নিয়ে এসে ডা. জনের নাকেমুখে ছিঁটিয়ে দিলাম।

কিন্তু ডা. জনের জ্ঞান ফিরে আসল না। ডা. জনের শরীরে হাত দিয়ে দেখি হাত পা একেবারে ঠান্ডা হয়ে গেছে। যেভাবে হোক ডা. জনের শরীরের তাপ ফিরিয়ে আনতে হবে। নইলে ডা. জনের কিছু একটা হয়ে যেতে পারে। ডা. জনের হাত পায়ে আমার হাত দিয়ে ঘর্ষণ করতে লাগলাম। শরীর কিছুটা গরম হওয়ার পর ডা. জনের জ্ঞান ফিরে আসল। এখন ডা. জনের চোখে মুখে ভয়ের চাপ স্পষ্ট ফুটে আছে। ভয়ে ভয়ে ডা. সংকর বলতে লাগলেন…….
ডা. জন ভয়ঙ্কর! মমিটা খুব ভয়ঙ্কর।

এখন সবকিছু আগের মত হয়ে গেছে। আর মমিটাকে এই রুমে তালা বদ্ধ করে দিচ্ছি। তারপর আপনাকে আপনার বাড়িতে পৌছে দিয়ে, আমি আমার বাড়িতে যাব। আর একটা কথা কাল সকালে আবার চলে আসবেন না গবেষনাগারে। এই কয়দিন আপনি পুরোপুরি বিশ্রাম নিবেন।
ডা. জন ঠিক আছে মি. নীল।

মমির রুমটা তালা বদ্ধ করে ডা. জনকে নিয়ে উনার বাড়িতে পৌছালাম। ডা. জনকে উনার স্ত্রীর কাছে দিয়ে আমি বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। ডা. জনকে নিয়ে আসার সময় বেশ অসস্থি হচ্ছিল। মনে হচ্ছিল কেউ আমাদের অনুসরণ করছে। কিন্তু অনেক খুঁজার পরেও আশেপাশে কোন যানবাহন বা মানুষ খুঁজে পেলাম না।

হয়ত মনের ভুল ছিল। কিছুক্ষণ ড্রাইব করার পর বাড়িতে পৌছালাম। ততক্ষণে রাত ৩.৩০ মিনিট বেজে গেছে। এখন বিদ্যুত আসারা নাম গন্ধ নেই। ফোনের প্লাস জ্বালিয়ে কোন ভাবে নিজের রুমে প্রবেশ করলাম। কিছুক্ষণ শুয়ে থাকার পর গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলাম।

২ দিন পর……

সকাল বেলা ব্রেকফাস্ট করে অফিসে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছি। হঠাৎ করে টেলিফোনটা বেজে উঠল… কিরিং………. কিরিং………….. কিরিং…………
অপর পাশের ব্যক্তির কন্ঠ শুনে বুঝতে আর বাকি রইল না, ডা. জন টেলিফোন করেছেন।

হ্যা ডা. জন আপনার শরীরের কি অবস্থা?
ডা. জন আমি ভাল আছি। কিন্তু মি. নীল সর্বনাশ হয়ে গেছে।

কেন? কি হয়েছে ডা. জন? [ কিছুটা বিষ্মিত হয়ে]
ডা. জন মমিটা ডাকাতি হয়ে গেছে। আমি আজ সকালে গবেষনাগারে এসে দেখি গবেষনাগারের লক ভাঙ্গা। পরে যখন মমির রুমে প্রবেশ করি, তখন দেখি মমি উদাও।

কি বলছেন আপনি? যদি মমিটা কোন ভাবে ডাকাতরা খুলে পেলে, তবে ডাকাত দলের জীবন সংশয় হতে পারে।
ডা. জন হতে বাকি নেই মি. নীল।
মানে?
ডা. জন আপনি হয়ত এখন টেলিভিশনের সামনে বসেননি। টেলিভিশন খুলে আপনি ব্রেকিং নিউজটা দেখুন একবার।

আর এক মুহূর্ত দেড়ি না করে আমি টেলিভিশনটা খুললাম। এটা কি করে সম্ভব? প্রত্যেকটা টিভি চ্যানেলের ব্রেকিং নিউজে দেখাচ্ছে………..
এক রাতে ১৭ জন ডাকাতের রহস্যময় মৃত্যু। পুলিশ জানায় ১৭ জন ডাকাতের লাশের পাশে মূল্যবান এক প্রকার ধাতুর তৈরি একটি কফিন পাওয়া গেছে। ডাকাত দল কোন এক স্থান থেকে কফিন ডাকাতি করে। এবং কফিনটা খুলার সময় অজ্ঞাত কারণে তাদের প্রান হারায়। ধারণা করা হচ্ছে এই কফিনে কোন এক রাজার মমি ছিল। কিন্তু অনেক খুঁজাখুঁজির পরেও, কফিন ছাড়া, অন্য কোন কিছু আশেপাশের এলাকায় খুঁজে পাওয়া যায়নি।

নিউজটা দেখে আমার মাথা গুরে গেল। আমাদের সেদিনের ভয়ানক সন্ধেহটা তবে সত্যি ছিল। আমরা সেদিন যদি কফিনটা খুলতাম, তবে ডা. জন এবং আমার অবস্থা ডাকাতদের মত হত। মনের মধ্যে হাজার প্রশ্ন জাগছে রেগুইন রুতেনের মমি এখন কোথায় আছে? মমি কি করে নিজে থেকে চলতে পারে? একটা মৃত মানুষের মমি কিভাবে এত গুলো ডাকাতকে মেরে পেলতে পারে? নাকি এই মমির পিছনে রয়েছে হাজার অজানা রহস্য?

আজ অফিসে সকাল ৯.০০ টার আগে পৌছানোর কথা ছিল আমার। কিন্তু ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি প্রায় ১০ টা বেজে গেছে। এতক্ষণে অফিসে বিষয়টা নিয়ে হয়ত হৈইছৈই পরে গেছে। না আর দেড়ি করা উচিৎ হবে না, এখনি বের হতে হবে অফিসের উদ্দেশ্যে।

যা ভেবেছিলাম তাই। অফিসে পৌছে দেখি সবার মধ্যে আলোচনার বিষয়বস্তু ডাকাত দলের মৃত্যু এবং মমি। মীরা আমার দিকে কিছুটা এগিয়ে এসে বলল………
মিস. মীরা মি. নীল বেশ কিছুদিন যাবত মনে হচ্ছে আপনি কোন একটা বিষয় নিয়ে খুব চিন্তিত। তাছাড়া আপনি এই কয়দিন সময় মত অফিসে আসেননি। যদি আপনার কোন সমস্যা থাকে, তবে আমার কাছে বলতে পারেন।

আসলে আপনার কাছে বিষয়টা লুকানো আর ঠিক হবে না। আপনি আমার কেবিনে আসুন আমি সব কিছু খুলে বলছি।
মিস. মীরাকে শুরু থেকে সব কিছু খুলে বলতে শুরু করলাম। সব কিছু শুনার পর মিস. মীরা আমার উপর কিছুটা রেগে গেলেন।

মিস. মীরা আপনি কি ভাবেন নিজেকে? আপনি একজন মহান ব্যাক্তি, বাকি সবাই খুব খারাপ তাই না? আপনি যদি আমাকে বিষয়টা বলতেন, তবে কি আমি এই বিষয়টা অফিসে জানিয়ে দিতাম? আপনি যদি এমন কিছু ভেবে থাকেন তবে আপনার ভাবনাটা সম্পূর্ণ ভুল। শুনে রাখুন আমিও আপনার মত একজন মানুষ, আমার মধ্যেও পজিটিভ চিন্তা ভাবনা রয়েছে।
দুঃখিত মিস. মীরা। আসলে মমি এবং কফিনটা খুব ভয়ঙ্কর ছিল। যার কারণে আমি আপনাকে কিছু জানাইনি।

মিস. মীরা আপনার কথা এবং ডাকাতদের মৃত্যুর খবর শুনে আমার মনে হচ্ছে মমিটা কোন সাধারণ মমি নয়। মমিটা গতরাতে এতগুলো ডাকাত কে মেরেছে। হয়ত দুদিন পর সাধারণ মানুষদের মারতে শুরু করবে। যত দ্রুত সম্ভব মমিটাকে আমাদের থামাতে হবে।

হ্যা ঠিক বলেছেন। কিন্তু এই মমির গতিবিধি আমাদের জানা সম্ভব নয়। সে যদি নিজে থেকে আমাদের সামনে না আসে, তবে আমরা তাকে কোন ভাবে খুঁজে পাব না।

মিস. মীরা তা হয়ত ঠিক। কিন্তু কোন উপায় নিশ্চয়ই আছে মমিটা খুঁজে বের করার। আমাদের শুধু উপায়টা একটু কষ্ট করে খুঁজে বের করতে হবে।
আর হ্যা, আপনাকে এখন যেতে হবে আমার সাথে।
কোথায়?

মিস. মীরা মমির কফিন পরিদর্শন করার জন্য। আপনি আসার কিছুক্ষণ আগে উপর মহল থেকে চিঠি আসে কফিনটা নিয়ে আসার জন্য।
ঠিক আছে চলুন।
গতকাল অফিসের গাড়িটাতে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিয়েছিল। যার কারণে বাহন হিসাবে আমার গাড়িটাকে বেঁচে নিলেন মিস. মীরা।

চুপচাপ গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছি। মিস. মীরা আমার পাশের সীটে বসে আছেন। কার মুখে কোন কথা নেই। হঠাৎ করে মীরার দিকে আমার নজর গেল। বাহিরের দিকে তাকিয়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্ উপভোগ করছেন মীরা। মীরার চুল গুলো বারবার প্রচন্ড বাতাসে এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে মীরা চুল গুলো ঠিক রাখার বৃথা চেষ্টা করছেন। কি অপরূপ লাগছে এখন মেয়েটাকে। অথচ অফিসে এই মেয়েটি হয়ে উঠে রাগি বদমেজাজি।
হঠাৎ করে মীরার ধাক্কা খেয়ে হুশে ফিরলাম।

মিস. মীরা কি দেখছেন আমার দিকে? তাছাড়া এভাবে অন্য মনস্ক হয়ে গাড়ি চালালে দূর্ঘটনা হতে পারে।
এইত প্রাকৃতিক সৌন্দর্ দেখছিলাম। আর দুর্ঘটনা হতে দিন। [ মুখ ফসকে বেরিয়ে গেল।]
মিস. মীরা দেখুন আমার এখন বিয়েটিয়ে কিছু হয়নি। এখনি পরপারে যাওয়ার ইচ্ছা আমার একদম নেই। যদি সখ থাকে তবে আপনি যেতে পারেন।

না না আমি কেন যাব? আসলে আমি বলতে চেয়েছিলাম দুর্ঘটনা হবে না। কিন্তু………..
মিস. মীরা হয়েছে হয়েছে আর কিন্তুর মানে বলতে হবে না। এবার আপনি ঠিক ভাবে গাড়ি চালিয়ে আমাকে উদ্ধার করুন।
কি মেয়েরে বাবা? জীবনে এমন রাক্ষুসে মেয়ে আমি আর কখন দেখিনি। আর কোনদিন দেখব বলেও মনে হয়না। মীরাকে আর কিছু না বলে আপন মনে গাড়ি ড্রাইব করতে শুরু করলাম।

পর্ব ৩

প্রায় ১ ঘন্টা ৩০ মিনিট পর আমরা ঘটনা স্থলে পৌছালাম। চারদিকটা একটু ভাল করে ঘুরে দেখছি । চারপাশে ঘন নির্জন জঙ্গল। এখানে কোন মানুষজন আসে বলে মনে হচ্ছেনা। জায়গাটা নির্জন বলে হয়ত এখানে ডাকাতরা ঘাটি গড়েছিল। বেচারারা যদি জানত কফিনটা খুললে তাদের জীবন সংশয় হতে পারে, তবে কোন দিন কফিনটা খুলত না। আবার মনে হচ্ছে দুষ্ট প্রানীর এমনটাই হওয়া উচিত। যদিও একটু আপসোস হচ্ছে হাজার হোক তারা মানুষ ছিল।

মিস. মীরা কফিন পরিদর্শন শেষে আমার দিকে কিছুটা এগিয়ে এসে বললেন
মিস. মীরা এখানে আমাদের কাজ শেষ, এবার ডা. জনের গবেষনাগারে যাব আমরা।
ডা. জনের গবেষনাগারে কেন? [ কিছুটা অবাক হয়ে।]
মিস. মীরা ভয় পাবেন না। আমি শুধু ১ম এবং ২য় কফিনটা একটু দেখতে চাই।
ঠিক আছে চলুন।

ডা. জনের গবেষনাগারে পৌছানোর পরে…………
এতক্ষণ তাপমাত্রা স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু ডা. জনের গবেষনাগারে প্রবেশ করার পর খুব গরম লাগছে। মনে হচ্ছে তাপমাত্রা ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়ে গেছে।

মিস. মীরা মনে হচ্ছে গবেষনাগারে অস্বাভাবিক কিছু হয়েছে।
মিস. মীরা আমার মনে হচ্ছে ডা. জন কোন কিছু নিয়ে গবেষনা করছেন। যার কারণে এখানে তাপমাত্রা বেরে গেছে।
ডা. জনের রুমে প্রবেশ করলে সব কিছু বুঝতে পারব।

ডা. জনের রুমে প্রবেশ করতে যাব ঠিক সেই মূহুর্তে হাওয়ার বেগে কিছু একটা আমাদের ধাক্কা দিয়ে দূরে ছিটকে ফেলে দিল। মীরা পরে গিয়ে প্রচুর আঘাত পেয়েছে হাতে। কিন্তু ডা. জনের রুম থেকে কি এমন দ্রুত গতিতে বেরিয়ে আসল? তবে কি ডা. জনের আবার কোন বিপদ হল? মীরাকে টেনে তুলে ডা. জনের রুমে দ্রুত প্রবেশ করলাম। ডা. জনের রুমে প্রবেশ করে দেখি ডা. জন আহত অবস্থায় মেঝেতে পরে আছে। আমি মিস. মীরার উদ্দেশ্যে বললাম……..
মিস. মীরা আপনি আমার গাড়িটা বাহির থেকে ভিতরে নিয়ে আসুন। ডা. জনকে নিয়ে এখনি হাসপাতালে যেতে হবে।
মিস. মীরা ঠিক আছে।

ডা. জনকে হসপিটাল নিয়ে যাচ্ছি। ডা. জনের অবস্থা খুব আশঙ্কাজনক। শরীরের প্রত্যেকটা অঙ্গ কেউ যেন ছুড়ি দিয়ে কেটে চিহ্ন বিচ্ছিহ্ন করে দিয়েছে। পুরো শরীর দিয়ে রক্ত বেরিয়ে আসছে বিরামহীন ভাবে। যদি আর কিছক্ষণ এভাবে চলতে থাকে তবে রক্ত শূন্যতায় ডা. জনের মৃত্যু ঘটবে। যেভাবে হোক ডা. জনকে বাঁচাতে হবে।
কয়েক মিনিটের মধ্যে নিকটস্থ হাসপাতলে ডা. জনকে নিয়ে পৌছালাম। ডা. জনের অবস্থা দেখে ডাক্তাররা কিছুটা ভয় পেয়ে গেলেন। ডাক্তাররা দ্রুত ডা. জনকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে গেলেন। একজন ডাক্তার আমার সাথে কিছু বলার জন্য এগিয়ে আসলেন।

ডাক্তার ডা. জনের এমন খারাপ অবস্থা কি করে হল?
ডা. জনের এমন অবস্থা কিভাবে হল আমি কিছু জানিনা। আমি যখন উনার রুমে কোন একটা কারণে প্রবেশ করি, তখন ডা. জনকে দেখি মেঝেতে রক্তাক্ত অবস্থায় পরে আছেন। ডা. জনের এই অবস্থা দেখে যত দ্রুত সম্ভব আমি এখানে নিয়ে আসি।
একজন নার্স এসে আমাদের জানালেন………..
নার্স ডা. জনের অ নেগেটিভ রক্ত প্রয়োজন। কিন্তু আমাদের কাছে অ নেগেটিভ রক্ত নেই। আপনারা যত দ্রুত সম্ভব রক্তের ব্যাবস্থা করুন।

আমার রক্ত অ নেগেটিভ, যত রক্ত লাগে আমার থেকে নিন। আপনারা আমার রক্ত নেওয়ার ব্যাবস্থা করুন।
ডাক্তার ঠিক আছে, আপনি আমার সাথে আসুন।
ডাক্তার আমার থেকে যতেষ্ট পরিমান রক্ত নিলেন ডা. জনের জন্য। আমার রক্তে যদি ডা. জন বেঁচে যান, তবে নিজেকে অনেক ভাগ্যবান মনে করব।

প্রায় ১ ঘন্টা ৪৫ মিনিট ধরে অপারেশন চলার পর, ডাক্তাররা অপারেশন থিয়েটার থেকে বেরিয়ে আসলেন। আমি ডাক্তারদের উদ্দেশ্যে বললাম……
ডাক্তার ডা. জনের কি অবস্থা?

ডাক্তার ডা. জনের বিষয়ে এখন আমরা কিছু বলতে পারছি না। তিনি এখন কোমায় আছেন ২৪ ঘন্টার মধ্যে জ্ঞান ফিরে আসবে। তবে তিনি যদি কোমা থেকে ফিরে আসতে না পারেন। তবে জানিনা থাকে বাঁচানো সম্ভব হবে কিনা। ডাক্তারের কথাটা শুনে বুকের ভিতরটা কেপে উঠল। ডা. জন আমার অনেক ভাল বন্ধু, সে এভাবে চলে যেতে পারে না। খুব কষ্ট হচ্ছে, মনের অজান্তে দুটি চোখ অশ্রু সিক্ত হয়ে উঠল। এখন ডা. জনের পরিবারকে কোন কিছু জানানো হয়নি। যত দ্রুত সম্ভব তার পরিবারকে দূর্ঘটনার কথা জানাতে হবে। তার আগে মিস মীরাকে অফিসে পৌছে দিয়ে আসতে হবে।

মীরার উদ্দেশ্যে বললাম……
মিস মীরা চলুন আপনাকে অফিসে পৌছে দিয়ে আসি। আপনাকে অফিসে পৌছে দিয়ে আবার মি. জনের বাড়িতে খবরটা জানাতে হবে।
মিস. মীরা ঠিক আছে চলুন। আমি পরে আবার আগামীকাল এসে ডা. জনকে দেখে যাব।
ডাক্তার আপনি একটু ডা. জনের খেয়াল রাখবেন। আমি ডা. জনের পরিবারকে হাসপাতালে পাঠিয়ে দিচ্ছি।
ডাক্তার ঠিক আছে।

ডাক্তারকে বিদায় জানিয়ে মিস. মীরাকে নিয়ে অফিসে পৌছলাম। এবার আমাকে যত দ্রুত সম্ভব ডা. জনের পরিবারকে বিষয়টা জানাতে হবে। ডা. জনের যে কোন সময় জ্ঞান ফিরে আসতে পারে। জ্ঞান ফিরে কাছের মানুষদের পাশে পেলে মনের ভয়টা দূর হয়ে যাবে।

পরের দিন সকাল বেলা……..
কিছুক্ষণ আগে হাসপাতাল থেকে টেলিফোন এসেছিল। একজন ডাক্তার আমাকে জানান কিছুক্ষণ আগে ডা. জনের জ্ঞান ফিরে এসেছে। ডা. জন আমাকে কিছু বলতে চান। আমি যেন খুব দ্রুত হাসপাতালে পৌছাই। হালকা নাস্তা করে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পরলাম হাসপাতালের উদ্দেশ্যে। একবার মনে হয়েছিল মিস. মীরাকে সাথে নিয়ে যাই।

আবার ভাবলাম থাক শুধু শুধু মীরাকে এই বিষয়ে জড়িয়ে কাজ নেই। হাসপাতালে পৌছে দেখি ডা. জনের পাশে উনার পরিবারের সদস্যরা দাঁড়িয়ে আছেন। দেখে মনে হচ্ছে ডা. জন এখন মোটামোটি সুস্থ, তবে গতকাল ছিল ঠিক এর বিপরিত অবস্থা। ডা. জন আমাকে দেখে বললেন…….
ডা. জন এদিকে এসে বসুন মি. নীল। [ ডা. জনের কথা গুলো গলায় আটকে আসছে। মনে হচ্ছে উনার কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে।]
ডা. জন আপনি এখন কোন কথা বলবেন না। আপনার শরীর এখন পুরোপুরি ভাবে ঠিক হয়নি।
ডা. জন সবাই একটু বাহিরে যাও, মি. নীলের সাথে আমার কিছু কথা আছে। [ ডা. জন আমার কথায় কান না দিয়ে সবাইকে বাহিরে যেতে বললেন। হয়ত গতকাল কি কি হয়েছিল আমার কাছে বলতে চান।]
ডা. জন আমাকে একটু বলবেন গতকাল ঠিক কি হয়েছিল।

ডা. জন আমি আমার রুমে বসে ২য় কফিন থেকে পাওয়া বইটা পড়ছিলাম। বইটা পড়ে আমি পূর্বে ঘটে যাওয়া ভয়ঙ্কর অজানা রহস্যময় কিছু বিষয় সম্পর্কে জানতে শুরু করি। বইটার প্রথম ভাগে রাজা রেগুইন রুতেনের পরিচয় লিখা ছিল। রাজা রেগুইন রুতেন ১২৩৩ খ্রিষ্টপূর্বে জন্ম গ্রহন করেন। রাজা রেগুইন রুতেনের পিতার নাম ছিল রাজা মিরাও রুতেন। রাজা রেগুইন রুতেন নিজের নামানুসারে নতুন একটি ধর্ম চালু করেন যার নাম ছিল রেগুইনাম।

প্রজারা রাজা রেগুইন রুতেনের নতুন ধর্ম মেনে না নিলে, প্রজাদের উপর নেমে আসে অমানবিক অত্যাচার। তবে সবচেয়ে বিস্ময়কর বিষয় হল রাজা রেগুইন রুতেন মাত্র ২২ বছর বয়সে রহস্যজনক ভাবে মৃত্যু বরণ করেন। এর কিছুদিন পর আবার রেগুইন রুতেনের সেনাপতি এবং মন্ত্রির রহস্যজনক ভাবে মৃত্যু ঘটে। বইটার পরের পৃষ্টা পড়ে আমি চমকে যাই। বইটার পরের পৃষ্টাতে লিখা ছিল রাজা রেগুইন রুতেন ছিলেন সাপেদের পোষক। যা আমরা পূর্বে সন্ধেহ করেছিলাম। আমি আর জানতে পারি সেনাপতি এবং মন্ত্রির মৃত্যু হয় সাপেদের তীব্র বিষে।

তার মানে দাঁড়ায় রাজ রেগুইন রুতেনের মৃত্যুর পিছনে সেনাপতি এবং মন্ত্রির বড় হাত ছিল।
ডা. জন ঠিক বলেছেন মি. নীল।
কিন্তু আপনার এই অবস্থা কি করে হল?

ডা. জন আমি যখন পরের পৃষ্টা উল্টাতে বইয়ে হাত দিলাম, ঠিক সেই মূহুর্তে চারপাশ থেকে প্রচুর বেগে গরম বাতাস রুমে প্রবেশ করতে থাকে। বইয়ের পাতা গুলো নিজে থেকে একের পর এক উল্টোতে শুরু করে। রুমের চারপাশ কোয়াশায় ঢেকে যায়। ১ মিটার দূরে কি আছে সেটা পর্যন্ত দেখা যাচ্ছিল না। হঠাৎ করে আমার সামনে সাদা কাপড় পেঁচানো বিশ্রি ভয়ংকর মমিটা এসে দাঁড়ায়। মমিটা দেখে ভয়ে আমার প্রান বেরিয়ে যাচ্ছিল।

রুম থেকে বাহিরে বের হওয়ার জন্য দৌড় দিলাম, কিন্তু মমিটা আমাকে বাহিরে যেতে দিল না। তার হাত দিয়ে আমাকে আঘাত করে মেঝেতে পেলে দিল। তার পর আমার আর কিছু মনে নেই, চোখের সামনে নেমে এল ঘন কাল অন্ধকার। [ ডা. জন কথা গুলো বলার সময়, স্পষ্ট তার চোখে মুখে ভয়ের চাপ ফোঁটে উঠল।

বইটা এখন কোথায় আছে?
ডা. জন আমার রুমে হয়ত এখন বইটা পরে আছে।
ঠিক আছে, আমি গবেষনাগার থেকে বইটা নিয়ে আসব।
ডা. জন ঠিক আছে, কিন্তু সাবধান। সেখানে কিন্তু আবার মমি আসতে পারে।
দেখা যাক কি হয়। তবে এখন আমি বের হলাম, আপনি বিশ্রাম নিন।

ডা. জনের কাছে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে পরলাম গবেষনাগারের উদ্দেশ্যে। ডা. জনের কথা শুনে বেশ ভয়ানক মনে হল মমিটাকে। আল্লাহর রহমতে আমরা যদি গতকাল ঠিক সময়ে গবেষনাগারে না পৌছাতাম, তবে ডা. জন হয়ত আজ বেঁচে থাকতেন না। তবে মমিটা নিয়ে বেশ চিন্তা হচ্ছে, গতকাল ডা. জনকে আক্রমন করেছে। যে কোন সময় আমাকে আক্রমন করতে পারে।

ভিসিডি প্রেয়ারটা চালিয়ে গান শুনতে শুনতে ড্রাইভিং করে এগিয়ে যাচ্ছিলাম। কোন একটা কারণে কিছুটা বাম দিকে আমার চোখ গেল। তাকিয়ে দেখি বেশ কিছু লোক জড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে আছে রাস্তার পাশের একটা দোকানের সামনে। গাড়িটা থামিয়ে ভিড় টেলে এগিয়ে গিয়ে দেখি ১০১২ বছরের একটি ছেলে রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে পরে আছে। দেখে মনে হচ্ছে ছেলেটাকে মমি আক্রমন করেছিল, সারা শরীরে ডা. জনের শরীরের মত ক্ষত দেখা যাচ্ছে। একজন ভদ্রলোক জানান, পাশের বাসা থেকে চিৎকারের আওয়াজ শুনে উনারা বাসায় প্রবেশ করেন।

বাসায় প্রবেশ করে উনারা দেখতে পান ছেলেটির বুকে বসে একটি লোক ছেলেটিকে ধাড়ালো কিছু একটা দিয়ে আচড়াচ্ছিল। যখন উনারা বাসায় প্রবেশ করেন তখন হঠাৎ করে লোকটি অদৃশ্য হয়ে যায়। তাছাড়া উনারা বাসায় প্রবেশ করার পর প্রচুর গরম অনুভব করেন। সব কিছু শুনে আমি বেশ বুঝতে পারলাম ছেলেটার মৃত্যুর কারণ, ভয়ঙ্কর মমিটা। যে ভাবে হোক মমিটাকে খুব দ্রুত থামাতে হবে। এভাবে চলতে থাকলে এই শহরের মানুষের জীবন যাত্রা অসহ্য হয়ে উঠবে।

বেশ কিছুক্ষণ পর ডা. জনের গবেষনাগারে পৌছালাম। গতকালের মত আজকেও গবেষনাগারে প্রচুর গরম অনুভব করছি। তাহলে কি মমিটা গবেষনাগারের আশে পাশে কোথাও রয়েছে? সাবধাণে আমাকে গবেষনাগারের ভিতরে প্রবেশ করতে হবে। একপা দুইপা করে যত এগিয়ে যাচ্ছি ভয়টা তত বেরে যাচ্ছে। অবশেষে কোন বিপদ ছাড়াই ডা. জনের রুমে পৌছাতে সক্ষম হলাম।

এবার বইটা খুঁজে বের করার পালা। ডা. জন বলেছিলেন বইটা উনার রুমে রয়েছে। ডা. জনের রুমে বইটা খুঁজে না পেয়ে প্রত্যেকটা রুম তন্য তন্য করে খুঁজে দেখলাম, কিন্তু কোথাও বইটা খুঁজে পেলাম না। মনে হচ্ছে বইটাকে গতকাল মমি নিয়ে গেছে। জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে দেখি ডা. জনের বাগানের ফুল গুলো খুব সুন্দর ভাবে ফোটে আছে।

ফুল আমার খুব ভাল লাগে, ফুল গুলা আর কাছে থেকে দেখার জন্য জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। মনে হচ্ছে ফুল গাছের নিচের দিকে বইয়ের মত কিছু একটা পরে আছে। দ্রুত বাহিরে গেলাম কি পরে আছে দেখার জন্য। আরে এটাতো সেই বই যেটা এতক্ষণ ধরে খুঁজে আমি হয়রান হচ্ছিলাম। উফ অবশেষে বইটা খুঁজে পেলাম। আল্লাহ্ তোমার কাছে হাজার হাজার শুকরিয়া।

গবেষনাগারে আর এক মূহুর্ত দেড়ি না করে অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। মিস. মীরাকে সাথে নিয়ে বইটা খুলব এবং সব কিছু জানার চেষ্টা করব। গতকাল ৪র্থ পৃষ্টা খুলার সাথে সাথে ডা. জনের গবেষনাগারে অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটতে শুরু করে। কি এমন রয়েছে বইটির ৪র্থ পৃষ্টাতে আমাকে জানতে হবে।

পর্ব ৪ ও শেষ পর্র

অফিসে পৌছে মিস. মীরাকে খুঁজতে খুঁজতে আমি হয়রান হয়ে যাচ্ছি। কিন্তু কোথাও মীরাকে খুঁজে পাচ্ছি না। অবশেষে অফিসের এক্টিভিটি চ্যাক করে জানতে পারলাম মিস. মীরা আজ অফিসে আসেননি।

বিষয়টা ভাবতে একটু অবাক লাগছে । যে মেয়ে ১০৭ ডিগ্রি জ্বর নিয়ে অফিসে চলে আসত, সে আজ কেন অফিসে আসল না? মিস. মীরাকে আবার মমি আক্রমন করেনিতো? না এমন কিছু হবে না। এমন কিছু হলে এতক্ষণে জানতে পারতাম। তবে মিস. মীরা অফিসে না আসার পিছনে কোন কারণ নিশ্চয়ই রয়েছে। অবশেষে ইচ্ছা না থাকা সত্তেও মিস মীরার বাসায় এসে পৌছালাম। কয়েকবার কলিং বেল চাপার পর মীরার মা এসে দড়জা খুললেন। `
মীরার মা আরে নীল তুমি? এসো ভিতরে এসো।

মীরা কোথায় আন্টি? মীরা আজ অফিসে জাননি কেন? [ ভিতরে প্রবেশ করতে করতে জিজ্ঞাসা করলাম।]
মীরার মা গতকাল রাতে মীরা কিছু একটা দেখে বেশ ভয় পেয়েছিল। সকালে মীরা অফিসে যেতে চেয়েছিল। কিন্তু আমি তাকে যেতে মানা করেছিলাম। ভাবলাম মীরা হয়ত মানসিক ভাবে অসুস্থ সে একটু বিশ্রাম গ্রহন করুক।
আন্টি আপনি একদম ঠিক কাজ করেছেন। [ মীরার মায়ের কথা শোনে মনে হচ্ছে মমীকে গতকাল রাতে মীরা দেখেছে।]
মীরার মা ঠিক আছে বাবা, তুমি বস আমি মীরাকে ডেকে দিচ্ছি।

এই মমিটাকে এবার থামাতেই হবে। প্রথমে ডাকাত দল, পরে ডা. জন, তারপর সেই ছেলেটি, আর গত রাতে মীরার বাড়িতে । সাড়া শহরে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। সন্ধার পরে মানুষজন ঘরের বাহিরে বের হতে ভয় পাচ্ছে।
কয়েক মিনিট পর মিস. মীরা পাশের রুম থেকে বেরিয়ে আসল।
মিস. মীরা আরে মি. নীল আপনি? হঠাৎ কি মনে করে?

দুঃখিত অফিসে আপনাকে খুঁজে না পেয়ে বাসায় আসতে হল। ডা. জনের গবেষনাগার থেকে মমির ২য় কফিনে পাওয়া বইটা নিয়ে এসেছি। বইটা থেকে অনেক রহস্যময় বিষয় জানার আছে। কাজটা নিজে করে নিতাম কিন্তু ভাবলাম আপনাকে নিয়ে কাজটা করলে সহজ হবে।

মিস. মীরা আপনি একদম ঠিক কাজ করেছেন। কিন্তু বইটা কোথায়?
এইযে বইটা। [ বইটা ব্যাগ থেকে বের করে মীরার সামনে রাখলাম]
মিস. মীরা ঠিক আছে আপনি বইটা পড়া শুরু করুন।

বইটা উল্টানোর পর প্রথম পৃষ্টাতে সেই পাঁচ মাথা স্রমৃদ্ধ ভয়ংকর সাপের ছবিটা দেখতে পেলাম। ছবিটা দেখতে এতটা ভয়ংকর লাগছে, না জানি বাস্তবে সাপটা কতটা ভয়ংকর। প্রথম পৃষ্টা থেকে পড়তে শুরু করলাম। ডা. জন যেমনটি বলেছিলেন ঠিক তেমনটি রয়েছে প্রথম ৩ পৃষ্টাতে। এবার ৪র্থ পৃষ্টাতে কি এমন রয়েছে দেখতে হবে। ডা. জনের সাথে অনেক কিছু ঘটে গেছে এই ৪র্থ পৃষ্টার কারণে।

মিস. মীরা সাবধাণ। ৪র্থ পৃষ্টাতে কি আছে আমরা দেখতে যাচ্ছি। এখান আমাদের সাথে যে কোন কিছু হতে পারে।
মিস. মীরা ঠিক আছে, আমি তৈরি।

৪র্থ পৃষ্টাটা উল্টানোর জন্য মনের মধ্যে জোড় পাচ্ছি না, বেশ কিছুটা ভয়ও করছে। ডা. জন যেহেতু মমি দ্বারা আক্রান্ত হয়েছিলেন এই ৪র্থ পৃষ্টা উল্টাতে গিয়ে। আমাদের সাথেও খারাপ কিছু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

ভয়ে ভয়ে ৪র্থ পৃষ্টাটা উল্টানোর জন্য বইয়ে হাত দিলাম। হঠাৎ করে মিস. মীরা আমাকে জোড়ে ধাক্কা দিয়ে কিছুটা দূরে পেলে দিলেন। মিস. মীরাও আমার সাথে কিছুটা দূরে গিয়ে পরলেন। আমরা মেঝেতে ছিটকে পরার কয়েক সেকেন্ড পরে, উপরের বিশাল ঝাড়বাতিটা বিকট আওয়াজে নিছে পরে ভেঙ্গে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গেল।

মিস. মীরা দুঃখিত! আপনাকে নিয়ে দূরে না পরলে, আমাদের উপর বিশাল ঝাড়বাতিটা আছড়ে পরত। বিশাল ঝাড়বাতিটা আমাদের শরীরে পরলে আমাদের জীবন সংশয় হত।
আপনি দুঃখিত বলে কেন আমাকে লজ্জা দিচ্ছেন? আপনি যদি সময় মত আমাকে ধাক্কা দিয়ে দূরে না সরাতেন, তবে এখন পর্যন্ত বেঁচে থাকতাম কিনা জানিনা।

মিস. মীরা একটা বিষয় আমি বুঝতে পারছি না। বইটাতে কি এমন রয়েছে, যা আমাদের কে জানতে দিতে চাইছে না মমিটা।
আমার ভাবনাতেও এটা রয়েছে। আমাকে যেভাবে হোক জানতে হবে কি আছে ৪র্থ পৃষ্টাতে? যদি ৪র্থ পৃষ্টা উল্টাতে আমার প্রান চলে যায়, আমার আপসোস নেই। মিস. মীরা আপনি এখান থেকে চলে যান। আমি চাইনা আমার জন্য আপনি কোন বিপদে পরেন।

মিস. মীরা না আমি যাবনা। যদি কিছু হয় তবে দুজনের একসাথে হবে।
প্লিজ আমার কথা একটু বোঝার চেষ্টা করুন।
মিস. মীরা বোঝার কিছু নেই। আপনি বইটা পড়া শুরু করুন।

যানি আর জোর করে কাজ হবে না। মীরা একবার যা বলে বসে তা সে করবেই।
৪র্থ পৃষ্টাটা উল্টানোর জন্য আবার বইয়ে হাত দিলাম। এখন আর আগের মত ভয় হচ্ছে না। যা ভাগ্যে আছে তাই হবে। মমি চাচ্ছে না ৪র্থ পৃষ্টা থেকে শুরু করে পুরো বইয়ে কি আছে আমরা জানতে পারি। হয়ত এমন কোন রহস্য রয়েছে বইটাতে যা জানলে মমির ক্ষতি হতে পারে।

অবশেষে অনেক বাঁধার পর ৪র্থ পৃষ্টাটা খুলতে সক্ষম হলাম। ৪র্থ পৃষ্টাটা উল্টানোর সাথে সাথে বই থেকে বেগুনি আলো বের হতে শুরু করছে। আলো উজ্বাল থেকে উজ্বলতর হচ্ছে।

বেশ কিছুক্ষণ পর বইটা শান্ত হয়ে উঠল। বইয়ের পাতায় চোখ পরতেই আমি চমকে উঠলাম। আরে এটা কি করে সম্ভব? বইটার ৪র্থ পাতায় ডা. জন এবং আমার ছবি দেখতে পাচ্ছি। ছবি দুটির নিছে লিখা আছে সেনাপতি নীলেন্দ্র এবং মন্ত্রি জানাকিং। সেনাপতির ছবিটা আমার মুখের সাথে পুরোপুরি মিলে যাচ্ছে। এবং মন্ত্রির ছবিটা ডা. জনের সাথে পুরোপুরি মিলে যাচ্ছে। খেয়াল করে দেখলাম মীরা একবার আমার দিকে তাকাচ্ছে আবার বইয়ের পাতায় তাকাচ্ছে।
বইটা পড়তে শুরু করলাম

জানি রাজা রেগুইন রুতেনের মমি কোননা কোনদিন মুক্ত হবে। নেমে আসবে সাধারণ মানুষের উপর আবার সেই অমানবিক অত্যাচার। রাজা রেগুইন রুতেন আবার ফিরিয়ে নিয়ে আসবে সেই ভয়ঙ্কর সাপদের জাতিকে। যে সাপেরা ধংস করে দিতে চেয়েছিল পৃথিবীর প্রত্যেকটি মানুষকে। যদি সময় মত সেনাপতি এবং মন্ত্রি রাজা রেগুইন রুতেনকে হত্যা না করতেন, তবে সাপেদের জাতি চিরদিন থেকে যেত পৃথিবীতে। সেনাপতি এবং মন্ত্রির মৃত্যুর পিছনে রয়েছে সাপেদের অন্য এক জাতির হাত। পরবর্তিতে সেই সাপেদের জাতিকে আমরা ধংস করতে সক্ষম হই।
বইয়ের পরের পৃষ্টা……..
৫ম পৃষ্টাটা উল্টিয়ে পরতে শুরু করলাম।

যখন যখনি পৃথিবীতে পাপের শুরু হয়েছে, তখনি সৃষ্টিকর্তা কোন না কোন শক্তি দ্বারা সেই পাপের বিনাশ করেছেন। রেগুইন রুতেন একবার ধংস হয়েছিল আবার ফিরে আসবে। ২য় বার যখন ফিরে আসবে, তখন দুনিয়ার প্রত্যেকটা মানুষকে মেরে পেলতে শুরু করবে। ফিরিয়ে আনবে সেই ভয়ংকর সাপের জাতিকে।

সাপেরা পৃথিবীকে নরকে পরিনত করে দিতে থাকবে । সাপেদের বিষাক্ত বিষে আকাশ বাতাস বিষাক্ত হয়ে উঠবে। মানুষের বেঁচে থাকাটা অসম্ভব হয়ে উঠবে। সাপেদের নীল বিষ মানুষের নিশ্বাসের সাথে দেহে প্রবেশ করবে এবং সকল মানুষ সেই বিষের প্রভাবে মৃত্যুর মুখে পতিত হবে।
মিস. মীরা কি ভয়ংকর এই রেগুইন রুতেন।

শুধু ভয়ংকর নয়। রেগুইন রুতেন বেশ নিচু মন মানসিকতার মানুষ ছিল। নিচু মন মানসিকতার মানুষ ছাড়া কেউ পৃথিবীর মানুষকে ধংস করে দেওয়ার চিন্তা করতে পারে না।

মিস. মীরা মনে হচ্ছে মাত্র ২ টি পৃষ্টা পড়ার বাকি আছে। প্রথমে আমি ভেবেছিলাম এই বইয়ে রেগুইন রুতেন কে ধংস করার উপায় খুঁজে পাব। কিন্তু এখন আমরা তেমন কিছু খুঁজে পেলাম না।
হয়ত পরের ২ পৃষ্টাতে রয়েছে রেগুইন রুতেনকে ধংসের উপায়।

পৃষ্টা ৬
রা প্রায় অসম্ভব। রেগুইন রুতেন কে ২য় বার ধংস করার প্রায় অসম্ভব ২টি পথ রয়েছে।
পথ ১
যদি কোন ভাবে সেনাপতি নীলেদ্র এবং মন্ত্রি জনাকিং ফিরে আসে। তবে তারা দুজন পারবে রেগুইন রুতেনের মমিকে ধংস করতে। কিন্তু সেটা কোন ভাবে সম্ভব নয়। কোন মানুষের একবার মৃত্যু ঘটলে, সে আর পৃথিবীতে ২য় বার ফিরে আসতে পারে না।
পথ ২য়

সেনাপতি এবং মন্ত্রি ফিরে আসতে পারবে না এটা সত্যি। কিন্তু কোন মানুষের চেহারার সাথে যদি সেনাপতি এবং মন্ত্রির চেহারা মিলে যায়। তবে সেই ২ জন ব্যাক্তি পারবে রেগুইন রুতেনের মমিকে ধংস করতে।
শেষ পৃষ্টাটা উল্টানোর জন্য বইয়ে হাত দিলাম। কিন্তু কোন ভাবে শেষের পৃষ্টাটা উল্টাতে পারছিলাম না। বইটা নিজে থেকে বড় হতে শুরু করল। বেশ কিছুক্ষণ এই প্রক্রিয়া চলার পর, বইটা একটি বড় বইয়ে রূপ নিল।

আবার কিছুক্ষণ চেষ্টা করার পর বইয়ের পৃষ্টা গুলো উল্টাতে সক্ষম হলাম। কিন্তু বিস্ময়কর বিষয় হল সব পৃষ্টা ফাঁকা। কোন পৃষ্টাতে লিখা খুঁজে না পেয়ে বইটার সব পাতা একবারে উল্টানোর চেষ্টা করছি, কিন্তু তা সম্ভব হচ্ছে না। পাতা গুলো যেন একটির সাথে আর একটি জুড়ে আছে, কোন ভাবে পাতা গুলো ছাড়ানো যাচ্ছে না।

আবার যখন একটি একটি করে পাতা উল্টানোর চেষ্টা করলাম। তখন পাতা গুলো উল্টাতে সক্ষম হলাম। এর মানে হল সব গুলো পাতা আমরা একবারে উল্টাতে পারব না, হয়ত বইটা আমাদের পরীক্ষা নিচ্ছে।

কিছু পাতা উল্টানোর পর, হঠাৎ করে বইয়ের পাতা গুলো নিজে থেকে উল্টাতে শুরু করল। আবার কিছুক্ষণ পর বইয়ের পাতা উল্টানো থেমে গেল। তাকিয়ে দেখি উল্টে থাকা পৃষ্টাতে লিখা প্রয়োজন ছাড়া আর একটা পাতা উল্টাবে না।
মিস. মীরা আমার মনে হচ্ছে, যতটুকু আমরা জানতে পেরেছি তার থেকে বেশি এখন জানা দরকার নেই।
হ্যা, কিন্তু শেষের পাতা গুলোতে নিশ্চয় কিছু রয়েছে।

মিস. মীরা তবে একটা বিষয় বেস বুঝতে পারছি। আপনার এবং ডা. জনের চেহারা নীলেদ্র এবং জানাকিংয়ের চেহারার সাথে পুরোপুরি মিল রয়েছে।

আমি সেটাই চিন্তা করছি। বইয়ের নির্দেশনা অনুযায়ি আমরা মমিকে ধংস করতে সক্ষম হব।

বই এবং মমির বিষয় নিয়ে বেশ কিছুক্ষণ কথা বলার পর, খেয়াল করে দেখলাম মীরার মা আমাদের জন্য কিছু খাবার নিয়ে আসছেন।

আরে আন্টি আপনি কেন শুধু শুধু কষ্ট করতে গেলেন?
মীরার মা কিছুক্ষণ আগে কিছু একটা ভেঙ্গে যাওয়ার শব্দ শোনলাম। এখানে কিছু ভেঙ্গেছে কি? [ আমার কথার উত্তর না দিয়ে মীরার মা কিছুটা বিস্মিত হয়ে শব্দটার কথা জিজ্ঞাসা করল।
মীরা আসলে মা ঝাড়বাতিটা ভাল ভাবে লাগানো হয়নি। ঝাড়বাতিটা হঠাৎ করে নিচে পরে ভেঙ্গে গেছে।
মীরার মা তোদের কোন ব্যথা লাগেনিতো?
মীরা না মা।

খাবার গুলো খেয়ে মীরাকে বিদায় জানিয়ে বাসায় পৌছালাম। কিন্তু বাসায় এসেও শান্তি পাচ্ছি না বারবার বইয়ের কথা গুলো মনে পড়ছে। যদি সাপেদের জাতিকে রেগুইন রুতেন ফিরিয়ে নিয়ে আসে তবে সব মানুষের জীবনে নেমে আসবে ঘন কাল অন্ধকার। প্রত্যেকটা দিন সাপেদের দ্বারা মরতে হবে প্রত্যেকটা মানুষকে।

কয়েক দিন পর
আজ কিছু লোকে এসেছিলেন মমির বিষয়ে আমাদের জানাতে।

উনারা জানান সন্ধার দিকে যখন আমরা কাজ শেষে বাড়ি ফিরছিলাম, তখন একটা মমি রাস্তার পাশে পরে থাকতে দেখি। আমরা মমিটা দেখে খুব ভয় পেয়ে যাই। কারণ আমরা জানতাম মমির কারণে বেশ কিছু মানুষের রহস্যজনক ভাবে মৃত্যু ঘটেছে। মমি দেখে আমরা থানায় ফোন করে বিষয়টা জানায়।

কিন্তু পুলিশ অফিসার আপনাদের কাছে সবকিছু জানাতে বলেন।
লোক গুলোর কথা মত আমরা তৎকণাত ঘটনা স্থলে পৌছালাম। আশে পাশে বেশ কিছুক্ষণ খুঁজার পরেও কোন মমি খুঁজে পেলাম না। আমি আগেই জানতাম পাব না। কিন্তু মমির সব কিছু অফিসের লোকদের বললে সবাই আমাকে পাগল বলত। যার কারণে বিষয়টা নিজের মধ্যে লুকিয়ে রাখলাম।

ঘটনাস্থল থেকে অফিসে ফিরতে রাত ১২ টা বেজে গেল। শরীরটা খুব ক্লান্ত লাগছে। সেই সকাল ৯.০০ থেকে এখন পর্যন্ত কাজ করে চলেছি, এতক্ষণ কাজ করলে কার শরীরে ক্লান্তি না আসবে? ছুটি না হওয়া সত্তেও স্যারের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে বাড়িতে পৌছালাম। না আর তাকিয়ে থাকতে পারছি না, চোখ গুলো নিজে থেকে বন্ধ হয়ে আসছে। আর এক মূহুর্ত দেড়ি না করে শুয়ে পরলাম।

সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেস হয়ে অফিসে যাওয়ার জন্য তৈরে হচ্ছিলাম। কোন একটা কারণে টেবিলে রাখা সেই বইটার দিকে চোখ গেল। বইটার পাতা গুলো উল্টে আছে, হয়ত বাতাসে পাতা গুলো উল্টে গেছে। বইটা বন্ধ করতে বইটার কাছে গিয়ে বইটাতে হাত দিলাম। কিন্তু একটা বিষয় বেশ অদ্ভুত লাগল। যে পাতাটা উল্টে আছে সে পাতাটা আগে পড়েছি বলে মনে হচ্ছে না।

পাতাটা পড়ার পর মনের মধ্যে কিছুটা শন্তি অনুভব করলাম। রেগুইন রুতেনকে ধংস করার উপায় পেয়ে গিয়েছি।
রেগুইন রুতেন সাপদের খুব ভালবাসেন। নিজের শাসন কালে নিজের সর্বস্ব দিয়ে তিনি সাপেদের রক্ষা করতেন। এই দূর্বলতা দিয়ে রেগুইন রুতেনকে ধংস করতে হবে। আমি ইচ্ছা করলে এখন রেগুইন রুতেনকে নিয়ে আসতে পারব না। কিন্তু যদি কোন সাপকে আমি মেরে ফেলতে চাই, তবে সে নিশ্চয় আসবে এখানে সাপটিকে বাঁচাতে।

তবে সবচেয়ে সমস্যার বিষয় হল বইটিতে লিখা আছে রেগুইন রুতেনকে রাতে ধংস করা যাবে না আবার দিনেও ধংস করা যাবে না। এমন একটা সময় রেগুইন রুতেনকে ধংস করতে হবে যখন রাত বা দিন কোনটি বিরাজমান থাকবে না।
কিছু বুঝতে পারছি না রাত বা দিন ছাড়া আবার কিছু হয় নাকি? দিন শেষ হলে নেমে আসে রাত, রাত শেষ হলে নেমে আসে দিন। তাহলে কি এটা শুধু একটা ধাধা? নাকি সত্যি এমন কোন সময় রয়েছে। উপ কিছু মাথায় আসছে না।

বিকালে.
অফিস থেকে মীরাকে নিয়ে ডা. জনের গবেষনাগারে পৌছালাম। সব কিছু মীরাকে বলেছি, এবার ডা. জনকে প্রথম থেকে বইয়ের ব্যাপারে সব কিছু জানাতে হবে।

ডা. জনের রুমে প্রবেশ করে দেখি ডা. জন রুমে বসে নিউজ পেপার পড়ছেন।
ডা. জন আরে আপনারা ভিতরে আসুন।
কেমন আছেন ডা. জন?

ডা. জন খুব ভাল। মনে হচ্ছে কোন প্রয়োজনে এখানে ছুটে এসেছেন।
হ্যা প্রয়োজন নিশ্চয় রয়েছে। আমি এখন যা আপনাকে বলতে যাচ্ছি তা শোনে আপনি চমকে যাবেন। আমরা মমিকে ধংস করার উপায় খুঁজে পেয়েছে।
ডা. জন কি বলছেন? মমিকে ধংস করার উপায় খুঁজে পেয়েছেন? [ বিস্মিত হয়ে]
হ্যা।

ডা. জন তাহলে বলুন কিভাবে মমিকে ধংস করতে পারব। [ আগ্রহ নিয়ে]
ডা. জনকে শুরু থেকে সব কিছু খুলে বললাম।
ডা. জন কিন্তু রাতদিন ছাড়া কিছু হয় নাকি?

আমিও সেটা চিন্তা করে চলেছি সকাল থেকে। কিছু বুঝতে পারছি না দিন এবং রাত ছাড়া অন্য কোন সময় আছে কিনা।
মিস. মীরা হ্যা আছে।
আছে? কিন্তু সেই সময়টা কখন আসে?

মিস. মীরা আমরা রাত শেষ হওয়ার পর বলি সকাল, সকাল শেষ হওয়ার পর বলি দুপুর, দুপুর শেষ হলে বলি বিকাল, বিকাল শেষ হলে বলি সন্ধা। রাত না আবার দিনও না সেই সময়টা হল সন্ধ। সন্ধায় রাতের কিছুটা আধার থাকে আবার দিনের কিছুটা আলো থাকে। সন্ধাকে রাত দিন কোনটায় বলা যায় না।

আপনি একদম ঠিক বলেছেন। আমি এভাবে আগে কখন চিন্তা করে দেখিনি।
ডা. জন তাহলে আজ দিনটা হবে মমির শেষদিন।
না ডা. জন মমিকে এখানে নিয়ে আসার জন্য কিছু সাপ প্রয়োজন। আর একটা বিষয় আপনাদের বলা হয়নি।
ডা. জন কি বিষয়?

মমিকে সাপের দ্বারা এখানে নিয়ে আসা সম্ভব। কিন্তু রেগুইন রুতেনের মমিকে ধংস করতে হলে শিখতে হবে অশুভ আত্না ধংশের মন্ত্র।
মিস. মীরা সেই মন্ত্র আমরা কোথায় পাব?
বইটার শেষ পাতা পড়ে দেখুন।

মিস. মীরা এখানে দেখছি অশুভ আত্না ধংসের মন্ত্র লিখা আছে।
হ্যা আমাদের সবাইকে এই মন্ত্র শিখতে হবে। তার পর মমিকে এখানে আমন্ত্রন করে ধংস করে দিতে হবে।
ডা. জন ঠিক আছে, আমি সাপের ব্যবস্থা করছি।

পরের দিন বিকালে

ডা. জন মনে হচ্ছে সূর্য আর কয়েক মিনিটের মধ্যে পশ্চিম দিগন্তে অস্ত যাবে।
হ্যা, আমাদের কাজ শুরু করা যাক। আপনি সাপ গুলোকে বিদ্যুতিক বক্সের উপর রাখুন। পরে যখন সন্ধা হয়ে আসবে তখন আপনি বিদ্যুত সংযোগ দিবেন।
ডা. জন ঠিক আছে।

সাধারণত কোন সাপের শরীরে বিদ্যুতিক সখ লাগে না। কিন্তু ডা. জন এমন একটা যন্ত্র আবিষ্কার করেছেন, যার দ্বারা যে প্রানীকে বিদ্যুতিক সখ দেওয়া সম্ভব। একটু খারাপ লাগছে সাপ গুলো বিনা কারণে বিদ্যুতিক সখে মারা পরবে। কিন্তু আমাদের কাছে এ ছাড়া কোন উপায় নেই।

দেখতে দেখতে সন্ধা নেমে আসল। ডা. জন সাপগুলোকে সখ দিতে যাবেন ঠিক সেই মুহূর্তে অদ্ভুত সব ঘটনা ঘটতে শুরু করল। মনে হচ্ছে রেগুইন রুতেনের আগমন ঘটতে চলছে। ডা. জনকে বললাম আপনি সাপগুলোকে শখ দিন।

ডা. জন শখ দিতে যাবেন ঠিক সেই মূহুর্তে আওয়াজ আসল সাবধান সাপেদের কোন ক্ষতি করবি না। যদি সাপেদের কোন ক্ষতি হয় তবে আমি তোদেরকে ধংস করে দিব। পিছনে তাকিয়ে দেখি ভয়ংকর চেহারার একটা মমি দাঁড়িয়ে আছে। তবে এটা রেগুইন রুতেনের মমি? রেগুইন রুতেনেরর এই দুর্বলতা কাজে লাগিয়ে তাকে ধংস করতে হবে।
মাথায় একটা বুদ্ধি এল সাপেদের ধংস না করে মমিকে ধংস করার হয়ত সম্ভব হবে।

ডা. জন আপনি সখ দিন। [ চোখ দিয়ে ইসারা করে বুঝালাম শুধু সখ দেওয়ার বাহানা করতে।]
মমি না সাপেদের কোন ক্ষতি করবি না। আমি তোদের ধংস করে দিব যদি সাপেদের কোন ক্ষতি হয়।
ডা. জন আমি সখ দিলাম সাপেদের। [ এই বলে কিছুটা সখ দিল। সখের আঘাতে সাপগুলো লাফিয়ে উঠল।]
মমিআ……..
. আর সখ কষ্ট দিবি না। যা করার আমাকে কর, কিন্তু সাপেদের ছেড়ে দে।
ঠিক আছে। তাহলে রেগুইন রুতেন আপনি এখানে বসুন।

রেগুইন রুতেনে আমার কথা শোনে মেঝেতে বসে পরল। আর বেশি সময় নেই আমাদের কাছে, যা করার দ্রুত করতে হবে। অশুভ আত্না ধংসের মন্ত্র পড়তে শুরু করলাম। মন্ত্রের শক্তিতে রেগুইন রুতেনের দেহ আস্তে আস্তে বালি হয়ে যেতে শুরু করল। এক পর্যায়ে রেগুইন রুতেনের মমি সম্পূর্ণ বালিতে পরিনত হল।

রেগুইন রুতেনের জন্য খুব কষ্ট হচ্ছে। সত্যি তিনি সাপেদের যোগ্য রাজা ছিলেন। নিজেরে জীবন দিয়ে যে রাজা প্রজাদের রক্ষা করে সেইতো প্রকৃত রাজা। যদি রেগুনই রুতেন মানুষের কোন ক্ষতি না করে সাপেদের পালন করত তবে তার নাম জগৎ জুড়ে থাকত।

সাপগুলোর দিকে খেয়াল করে দেখি সাপ গুলোর চোখ দিয়ে পানি ঝড়ছে। সাপেদের চোখ দিয়ে পানি ঝড়তে কোনদিন দেখিনি। পৃথিবিতে হয়ত আমরা তিন জন প্রথম ব্যাক্তি যারা এমন বিস্ময়কর ঘটনা ঘটতে দেখলাম। নিজের অজান্তে দুচোখ দিয়ে দুই ফোটা পানি রেগুইন রুতেনের দেহাবশেষে গড়িয়ে পরল।
ভাল থাকুক রেগুইন রুতেন ভাল থাকুক সাপেদের জাতি…

লেখা – নাজমুল হোসেন

সমাপ্তি

(পাঠক আপনাদের ভালোলাগার উদ্দেশ্যেই প্রতিনিয়ত আমাদের লেখা। আপনাদের একটি শেয়ার আমাদের লেখার স্পৃহা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আমাদের এই পর্বের “The Mummy – ভুতুড়ে মমির গল্প” গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম। ধন্যবাদ।)

আরো পড়ূন – Ex girl friend story – মামা এবার খেলা হবে

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *