Ex girl friend story – মামা এবার খেলা হবে

Ex girl friend story – মামা এবার খেলা হবে: বউ নিয়ে বাসায় ফিরলাম। বউকে কোলে করে রুমে নিয়ে যেতে হবে এটাই নাকি নিয়ম। আগে কখনো বিয়ে করিনিতো তাই জানিনা। হিহিহি!


পর্ব ১

বড় ভাইয়ের বউকে দেখতে গিয়ে চোখ কপালে উঠে গেলো।
এটা কে?

সেই নিলিমা। যাকে হারাইছি ৪ বছর আগে।
কিন্তু নিলিমার সাথে আমার ভাইয়ের বিয়ে কিভাবে?
মেয়েটা আমাকে দেখে রীতিমতো চমকে গেছে।
মেয়েটা ঘামতে শুরু করছে সাথে আমিও।
কারন দুজন দুজনকে এখনো ভালোবাসি শুধু রিলেশনটাই নাই।

ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে দেখি সে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে।
থাকারই কথা।
কারন নিলিমাকে যে দেখবে তারই পছন্দ হবে।
ভদ্র চুপচাপ ও নিরব প্রকৃতির মেয়ে। সেই সাথে রূপবতী তো আছেই।
কলেজে ফার্স্ট ইয়ারে উঠেই তার উপর ক্রাশ খাইছিলাম।
কিন্তু সমস্যা ছিলো সে আমার সিনিয়র পুরা এক ইয়ারের।
তখন সে সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে।

তার পেছনে ঘুরঘুর করতাম যেটা তার মোটেও ভালো লাগতো না। তবে আমিও হাল ছেড়ে দেইনি।
প্রতিদিন তার জন্য অপেক্ষায় থাকতাম রাস্তার পাশে।
কিন্তু সে ফিরেও দেখতোনা।
আচ্ছা চলুন অতীতে ফিরি নইলে বুঝবেন না।

রাস্তার পাশে প্রতিদিন অপেক্ষায় থাকার পরও তার সাথে কথা বলতে পারতাম না।
মেয়েটা কলেজে এসে মাঝে মাঝে আমার দিকে রাগি লুক নিয়ে তাকিয়ে থাকতো তবে বুঝতাম না কেনো তাকাতো।
আমি আমার মতো তার জন্য অপেক্ষা করতাম।
কলেজেও নজরে রাখতাম কখন কি করে।

কিন্তু এভাবে আর কতদিন।
বুঝে গেছিলাম মেয়েটির সাথে আমার আর কথা বলা হবেনা।
তাই ভাবলাম মেয়েটাকে একবার বলেই দেখি কি হয়।

সেদিন সকাল সকাল বের হয়ে রাস্তার পাশে অপেক্ষা করছিলাম। যেহেতু সে আমার সিনিয়র তাই কলেজে বলার কোনো উপায় ছিলোনা বড় ভাইয়েরা তো আছেই।

মেয়েটা ধীর পায়ে এগুতে লাগলো।
আমার হার্টবিট বাড়তে লাগলো।
মেয়েটা কাছে আসতেই বলে দিলাম,
~ apu i love you

বিশ্বাস করুন মেয়েটা এমন ভাবে তাকাইছিলো সেদিন যে আমি প্রথমবার সরাসরি তার চোখের দিকে তাকিয়ে ভয় পেয়ে গেছিলাম।
আর কোনো কিছু শোনার অপেক্ষা না করেই দৌড়।
কিন্তু বেশিক্ষন দৌড়াতে পারিনি।
আনমনে দৌড়ানোর সময় একটা বাইক এসে মেরে দিয়ে যায় আমাকে। রাস্তার মাঝখানে পড়ে ব্যাথায় কোকাচ্ছি।

অনেকটা কেটে গেছে। মাথাও ফেটে গেছে। উঠতে পারতেছিনা।
চোখ বন্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত শুধু নিলিমাকেই দেখেছিলাম আর চোখ খোলার পরও তাকেই দেখলাম।
মেয়েটা হাসপাতালে নিয়ে আসছে।
আমার মাথার পাশে বসে বসে কাদতেছে।
মেয়েটারর মায়াবি মুখটা এখনো আমার চোখে ভাসে।
সেদিন কিছু বলতে পারিনি তবে বুঝে গেছিলাম মেয়েটও আমাকে ভালোবাসে।
যাওয়ার আগে নিলিমা একটা কথাই বলে গেছিলো সেদিন।
এরপর থেকে সাবধানে চলবা আর আপু বলছো কেনো?
তাইতো ওভাবে তাকাইছিলাম।

আর আমি তার চাহনী দেখে সোজা হাসপাতালে।
রিলেশন ছিলো এক বছর।
তার বাবার ট্রান্সফার আর তার পরিক্ষার পর অন্য যায়গায় চলে যাওয়া এই দুটা কারনেই ব্রেকআপ হয়েছিলো আমাদের?
এটাই ভাবছেন?

না আসলে এসবের কিছুই না।
সে আরেকটা ছেলের সাথে মেলামেশা করতো যেটা আমার মোটেও ভালো লাগতো না।
অনেকবার মানা করার পরও সে শুনেনি।
একদিন বলেই দিয়েছিলাম কি এমন রিলেশন তোমাদের যার জন্য সেদিন একটা থাপ্পড় মেরে ব্রেকআপ করে দিছিলো।

অনেক কষ্ট পাইছিলাম সেদিন।
তার কিছুদিন পর দেখলাম সত্তিই ছেলেটার সাথে রিলেশন আছে তার। আর কি আমি ছেড়ে দিলাম এই শহড়।

চলে আসলাম ঢাকা।
তারপর কেটে গেছে ৪ বছর।
নিলিমার সাথে আর দেখাও হয়নি কথাও হয়নি।
তবে ফেসবুক আইডিটা ছিলো।
প্রতিদিন তার টাইমলাইন ঘুরে আসতাম। আর দেখতাম মেয়েটা ছবি আপলোড দিছে সেই ছেলেটাকে সাথে নিয়ে।

চলুন বাস্তবে ফিরি। অতিত খুবই বোরিং বাস্তবটা উত্তেজনায় ভরপুর।
আব্বুর ডাকে ঘোর কাটলো,
~ সানভি কেমন লেগেছে তোর? (আব্বু)
~ আব্বু বিয়েটা ভাইয়ার তাকে জিজ্ঞেস করলেই পারো। (আমি)
ভাইয়া আমার দিকে রাগি লুক নিয়ে তাকালো।
আমি আপন মনে হাসতে লাগলাম।

আমার আর নিলিমার সম্পর্কটা ক্রস কানেকশন
প্রথমে বড় আপু তারপর গার্লফ্রেন্ড। তারপর এক্স গার্লফ্রেন্ড আর আজকে ভাবি।
হিহিহি।

ভাবি কেনো বললাম জানেন?
কারন মেয়েটাকে সবারই পছন্দ হয়েছে।
হঠাৎ আমি তাকালাম নিলিমার ঠিক পেছনে তার ছোট বোন নিলা। অনেক বড় হয়ে গেছে আর নিলিমার মতোই সুন্দরি।

মেয়েটা আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
আমিও একদৃষ্টিতে তাকিয়ে ভাবছি দুই ভাই এক বাড়িতেই বিয়ে করবো।
তবে নিলিমার দিকে তাকিয়ে আরেকটা জিনিস ভাবিয়ে তুললো
~ ছেলেটার কি হলো? তাহলে কি ব্রেকআপ হইছে।
কাজের চাপে লাস্ট ২ মাস নিলিমার প্রোফাইল চেক ই করা হয়নি।
সে যাই হোক।
আব্বু রাফিকে বললো,
~ তোরা যা কথা বল আলাদা রুমে।
রাফি আবার আমাকে নিয়ে গেলো।

বলেনতো কেমন লাগে,
আমি রুমের সামনে দাড়িয়ে আছি হঠাৎ নিলা আসলো,
~ ভাইয়া একা দাড়িয়ে যে? (নিলা)
~ কি করবো বলো তাদের সাথে তো আর যেতে পারবোনা। (আমি)
~ আচ্ছা চলুন আপনাকে পুরো বাড়িটা ঘুরিয়ে দেখাই। (নিলা)
~ আচ্ছা চলো।

মেয়েটার পেছন পেছন হাটতে লাগলাম।
মেয়েটা সবকিছু দেখাতে লাগলো।
সবশেষে গেলাম ছাদে।
~ আচ্ছা তোমার নামটা কি? (আমি)
~ নিলা।

~ ভালো নামতো। (আমি)
~ জ্বি ভাইয়া আপনার নামটা কি? (নিলা)
~ সানভি। (আমি)
~ কি বললেন? (নিলা)

~ সানভি। (আমি)
~ কঠিন নাম সহজে উচ্চারন করা যায়না। তবে আপনার নামটা কিউট আছে। (নিলা)
~ আচ্ছা তুমি কোন ক্লাসে পড়ো? (আমি)
~ ইন্টার সেকেন্ড ইয়ার। (নিলা)
~ আচ্ছা তোমার নাম্বারটা দাওতো। (আমি)
~ কেনো? (নিলা)

~ এমনি দাও। (আমি)
~ সরি ভাইয়া নাম্বার দিতে পারবোনা। (নিলা)
~ আচ্ছা সমস্যা নাই। (আমি)
~ তবে ফেসবুক আইডি পেতে পারেন। (নিলা)
এতো মেঘ না চাইতেই জল।

কথা বলা শেষ করে নিচে নামতেই ধাক্বা খেলাম নিলিমার সাথে।
~ সরি আমি আসলে দেখিনাই। (আমি)
~ ইটস ওকে। (নিলিমা)
তার হাতের আলতো স্পর্শ মনটাকে আবারো আঘাত করলো। শুকিয়ে যাওয়া ক্ষতটা আবারো ভিজে উঠলো।
চোখ জলে ভিজে উঠার আগেই চলে আসলাম।


পর্ব ২

তার হাতের আলতো স্পর্শ মনটাকে আবারো আঘাত করলো। শুকিয়ে যাওয়া ক্ষতটা আবারো ভিজে উঠলো।
চোখ জলে ভিজে উঠার আগেই চলে আসলাম।
বাসা থেকে বের হয়ে গাড়িতে বসলাম গিয়ে।
সবাই কথা বলতেছে ভিতরে।
আব্বু কিছুক্ষন তাকিয়ে ছিলো আমার দিকে তবে কিছু বুঝতে পারেনি তার আগেই চলে এসেছি।

লাস্ট যেদিন তার হাত ধরে হাটছিলাম সেদিন খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছিলো আর বলেছিলো ভালোবাসি। কখনো ছেড়ে যাবোনা।
অথচ সেই আজ কত দুরে।
আজ অনেক দিন পর সেই আলতে স্পর্শে অনেক সৃতি মনে পড়ে গেলো।
চোখটা ভিজে গেছে।

হাহাহা ৪ বছরেও নিজেকে বদলাতে পারিনি।
এখনো বাচ্চাদের মতো কান্না করি। ইমোশনগুলা আর গেলো না। গাড়িতে বসে ভাবছি নিলিমার কথা।
কিছুদিন পরই সে আমার ভাবি হয়ে যাবে।
তখন সামলাবো কিভাবে নিজেকে?
বাসায়ই থাকবোনা তখনই ভালো হবে।

বসে বসে অতীত আর ভবিষ্যত নিয়ে ভাবতেছি হঠাৎ নিলা মেয়েটা এসে ডাক দিলো,
~ ভাইয়া? (নিলা)
কোনমতে চোখটা মুছে উত্তর দিলাম,
~ হ্যা বলো। (,আমি)
~ নাম্বারটা ……(নিলা)
~ ০১৭৯৫৮৩**৪১(আমি)
~ আমি কল দিবো রাতে। (নিলা)
~ আচ্ছা দিয়ো। (আমি)

মেয়েটা চলে গেলো। নিলিমার তো বিয়ে হয়ে যাবে।
আমাকেও বিয়ে করতে হবে।
বিয়ে তো নিলাকেই করবো আর সেটা একসাথেই।
তারপর রোমান্স করবো নিলিমাকে দেখিয়ে দেখিয়ে।

আমি কেনো একা থাকবো।
সে তো কখনো কষ্ট পায়নি আমি কেনো পাবো?
আমাকে ছেড়ে দেওয়ার পর তার জিবনে অন্যকেউ ছিলো।
আর তাকে ছেড়ে দেওয়ার পর এখন তার বিয়ে।
খারাপ থাকার তো কোনো কারনই নাই।
তার একাকীত্ব দুর করার জন্য সবসময় কেউ না কেউ ছিলোই। তবে আমি কেনো আজো একা আছি। কেনো নিজে নিজেই কষ্ট পাচ্ছি।

সে পারলে আমি কেনো পারবোনা।
আর সবচেয়ে বড় কথা হলো নিলাকে ভালো লাগছে।
মেয়েটাও আমাকে পছন্দ করে মনে হয়।
এই সুযোগে বিয়েটাও সেরে ফেলা যাবে।
একাও থাকতে হবেনা কষ্টও পেতে হবেনা।

~ কিরে চলে আসলি কেনো? (আব্বু)
~ এমনি। (আমি)
সবাই গাড়িতে উঠলো। ড্রাইভার গাড়ি স্টার্ট করলো।
~ ভাইয়া মেয়ে পছন্দ হইছে তো? (অথৈ)
~ আমি কি বলবো তোদের পছন্দ হইছে নাকি সেটা বললেই হয়। (রাফি)
~ আমাদের তো অনেক পছন্দ হইছে। কিরে সানভি তোর কেমন লাগছে মেয়েটাকে? (আম্মু)
হিহিহি যে মেয়ের ভালোবাসার জন্য আজো চোখের পানি ফেলি। আর আমাকে বলতেছে মেয়েকে কেমন লাগছে।

~ মেয়ে তো দেখতে সুন্দর আছে আর ভাইয়ার সাথে মানাবেও ভালো। (আমি)
~ তাহলে হয়েই গেলো। রাতে ওদের ফোন দিয়ে জানাবো বিয়ের কথা। (আব্বু)
~ সেটাই ভালো হবে। আমিও একটা ভাবি পাবো। (অথৈ)
~ কিরে তুই কবে বিয়ে করবি? (অথৈ)
~ করবো করবো কিছুদিন পর। সবকিছু গুছিয়ে নেই তারপর। কিন্তু তার আগে তোকে বিয়ে দিয়ে দিবো। (আমি)
~ আম্মু দেখো কি বলে। (অথৈ)
~ হাহাহা।

ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে দেখলাম মিটি মিটি হাসতেছে।
সবারই পছন্দ হইছে অনেক। কোনো ঝামেলা করে লাভ নাই। ভাইয়ার সাথে বিয়ে হচ্ছে হোক।
আর এমনিতেও আমি আর ওকে বিশ্বাস করতে পারবোনা।
যতই ভালোবাসি বিশ্বাস একবার ভেঙে গেলে আর জোড়ক লাগেনা।
তবে মেয়েটার ছলছল চোখের চাহনী আমাকে কষ্ট কেনো দিতেছে।

বাসায় এসে রুমে গিয়ে ফোনটা রেখে গোসল করতে গেলাম।
নিজেকে সামলাতে হবে। এতো ইমোশনাল হলে চলবেনা।
একটা মায়াজাল আমাকে জড়িয়ে রেখেছে।
না পারি ভুলে থাকতে না পারি ফিরতে।
সব রাস্তা যে বন্ধ।
নিরব অনুভূতিই বেশি কষ্ট দেয়।

গোসল শেষ করে বাইরে আসলাম।
অনেক বার ভাবলাম আর ভাববোনা তার কথা তারপরও পারলাম না। কেনো জানি তার কথাই ভাবতে ইচ্ছা করছে।
কেনো যে দেখা হইছে আল্লাহই জানে।
কখনো ভাবিনি এভাবে দেখা হয়ে যাবে।
যাই হোক দেখা হইছে এরপর কথা হবে।
আরো অনেক কিছুই হয়তো হবে। তবে তার আগেই নিলাকে নিলের করে নিবো।
যাতে কষ্টটা কমে যায়। আর নিলাকে ভালোবাসতে পারলে তো কথাই নাই। তখন আর মনে থাকবেনা নিলিমা কে।

রাতে খাওয়া শেষ করে ছাদে দাড়িয়ে আছি।
সিগারেট জিনিসটা ছাড়া আমি আর আমার গল্প দুইটাই অসম্পূর্ণ।

প্যাকেট থেকে সিগারেট বের করে কেবল ধরাইছি।
সেই সময় ফোন আসলো,
~ হ্যালো। (আমি)
~ আসসালামু আলাইকুম। (ওপাশ থেকে)
~ ওয়ালাইকুম আসসালাম। (আমি)
~ জ্বী চিনতে পারছেন আমাকে? (ওপাশ থেকে)
~ সরি কে আপনি? (আমি)

~ নিলা………
~ ওহ সরি তুমি? (আমি)
~ হুমম। (নিলা)
~ তো কেমন আছো বলো। (আমি)
~ জ্বি ভালো আপনি? (নিলা)
~ হুমম ভালো। (আমি)
~ আপনি কি ফ্রি আছেন? (নিলা)
~ হ্যা কেনো? (আমি)

~ না মানে কালকে দেখা করতাম একটু। সময় হবে? (নিলা)
~ জ্বি কোথায় দেখা করবা বলো। (আমি)
~ আচ্ছা সকালে * এই যায়গায় আইসেন। (নিলা)
~ ঠিক আছে। (আমি)
তারপর আরো কিছুক্ষণ কথা বলে কলে কাটলাম।
কিন্তু বুঝতে পারতেছিনা নিলা কেনো কালকে ডাকলো,
সে কি একা আসবে নাকি নিলিমা ও সাথে আসবে?


পর্ব ৩

যদি একা আসে তাহলে তো ভালো আর যদি নিলিমাকে নিয়ে আসে তাহলে তো সমস্যা। হয়তো অনেক কিছু গোলমাল হয়ে যাবে।
নিলিমাকে একা পেয়ে হয়তো কথা বলার ইচ্ছাটা প্রচন্ড বেড়ে যাবে। বলতে পারবো কি? অনেক কথাই তো জমে আছে।

আর কয়েকটা প্রশ্ন যেগুলার উত্তর না জানলে হয়তো জিবনটা এরকম কষ্টের মধ্যেই কাটবে।

এখন আর এসব চিন্তা করে লাভ নেই।
যা হওয়ার তা হবেই৷ দেখাই যাকনা কি হয়। একটা রাত পরই দেখা হচ্ছে।
সিগারেটটা শেষ করে রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লাম।

পরের দিন সকালে ঘুম ভাঙতেই খেয়াল করলাম
৮ টা বেজে গেছে।
৯ টায় যেতে হবে। তারাতারি উঠে ফ্রেশ হয়ে নিলাম।
তারপর হাল্কা নাস্তা খেয়ে বেরিয়ে পড়লাম।
পাশ দিয়ে রিক্সা চলে গেলো কয়টা।
আমি হাটতেছি আর ভাবতেছি যদি সত্তিই ভাইয়ার সাথে নিলিমার বিয়ে হয় তাহলে কি আমি এক বাড়িতে থাকতে পারবো?

নাকি নিজেকে সামলাতে না পেরে?
সে কি পারবে সামলাতে?
তার তো কোনো সমস্যা হবেনা। কারন একটার পর একটা তার লাইফে আছেই।
সেখানে আমি থাকলেই কি আর না থাকলেই কি।

এসব কিছু ভাবতে ভাবতে চলে আসছি জায়গাটায়।
কিন্তু কেউ নাই এখানে। নিরিবিলি একটা জায়গা।
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি আরো ৬ মিনিট সময় বাকি আছে।
হালকা রোদ্দুর হালকা ছায়া ভালোই লাগছে আজ প্রকৃতিকে। কিন্তু কেনো জানি মনটা উদাস।
আবার অস্থিরতা কাজ করছে কে আসবে সেটা ভেবে।
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি ৯০১।
দুরে তাকিয়ে দেখি শাড়ি পড়া দুইটা মেয়ে আসতেছে।
তার মানে নিলিমা ও আছে।

নিজেকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করলাম।
মাথা নিচু করে আছি।
দুজনে এসে আমার সামনে দাড়াতেই আমি মাথা নিচু করে ফেললাম।
কি করবো? কি বলবো?

কিছু বুঝতেছিনা সব জগা খিচুরি হয়ে গেছে।
মস্তিষ্ক মনে হয় বিকল হয়ে যাবে এবার।

~ সানভি ভাইয়া আপু আপনার সাথে কথা বলবে তাই আপনাকে ডাকা। (নিলা)
~ কি কথা বলেন ভাবি। (আমি)
~ নিলা তুই একটু ওদিকে যা। (নিলিমা)
~ আচ্ছা যাচ্ছি (নিলা)
~ জ্বি ভাবি বলুন কি বলবেন? (আমি)
~ তুমি ভাবি কেনো বলতেছো? (নিলিমা)

~ তো কি বলবো? কয়দিন পর তো আপনার বিয়ে আমার ভাইয়ের সাথে তখন তো ভাবি বলতেই হবে তাই এখন থেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছি আরকি। (আমি)
~ হ্যা কয়দিন পর বিয়ে। এখনো তো আর বিয়ে হয়নি তাইনা? (নিলিমা)
~ হয়নি তবে খুব শিঘ্রই হবে। (আমি)
~ আচ্ছা যেটা বলতে আসছিলাম। (নিলিমা)
~ জ্বি ভাবি বলুন। (আমি)

~ i am sorry i am sorry for everything তোমার সাথে অনেক খারাপ করেছি আমি তার জন্য মাফ চাইতে এসেছি।
আমাকে মাফ করে দিয়ো। (নিলিমা)

~ আরে ভাবি এটা কোনো কথা? আমি আপনাকে অনেক আগেই মাফ করে দিয়েছি আর আপনি যেহেতু আমার ভাবি তাই আর কিছু মনে রাখার দরকার নেই তাইনা? (আমি)
~ দেখো সানভি আমি সত্তিই চাই তোমাকে কিন্তু এখন আর সম্ভব না। (নিলিমা)
~ জ্বী ধন্যবাদ। তবে সম্ভব থাকলেও আর আমাকে পাবেন না। (আমি)
~ ঠিক অাছে বেশি কথা বলতে পারবোনা নিলা আছে। শুধু এটুকুই বলবো মাফ করে দিয়ো। (নিলিমা)
~ জি ভাবি অবশ্যই। (আমি)

দুজন নিজেদের চোখের পানি মুছে আবার স্বাভাবিক হয়ে গেলাম। নিলাকে ডাক দিলাম,
~ নিলা এদিকে আসো। (আমি)
নিলা আমাদের কাছে আসলো।

~ কথা বলা শেষ? (নিলা)
~ হ্যা তোমার আপুও না! বিয়েই হয়নি এখনো আর এখনি ভাইয়ার খোজ নিতে চলে আসছে। ওহ সরি ভাইয়ার নাম্বারটা তো দিলাম ই না। (আমি)
~ হুমম। (নিলিমা)
~ ০১৮৬৯৪৫২১**(বিঃদ্রঃ এটা আমার নাম্বার লাস্টে ** বসানো ডিজিটাল নাম্বার )

~ আচ্ছা সানভি ভাইয়া শুনুন আপনার সাথে আমার কিছু কথা আছে(নিলা)
~ হ্যা বলো। (আমি)
~ আপনি কবে বিয়ে করবেন? (নিলা)
~ ভাবতেছি ভাইয়ার সাথে একসাথে বিয়ে সেরে ফেলবো। দেখি ভালো মেয়ে পাই কিনা? (আমি)
~ খুজেন পেয়ে যাবেন। (নিলিমা)
~ হ্যা দেখি যদি আপনার মতো কাওকে পাই তাহলে তো ভালোই হতো। হাহাহা। (আমি)
~ হুমম(নিলিমা)
~ আচ্ছা আমি যাই আমার একটা কাজ আছে। (আমি)
~ একটা কথা ছিলো। (নিলা)
~ কি কথা বলো। (আমি)
~ এখন না পরে বলবো। (নিলা)
~ আচ্ছা ভাবি আসি তাহলে। (আমি)

বলেই চলে আসলাম। বুঝতে পারলাম নিজেকে সামলে নিতে কোনো সমস্যা হবেনা কারন আমি নিলিমার চোখে ভালোবাসা দেখিনি। তার চোখ আজ কথা বলেনি।
হ্যা সে কেদেছে। কিন্তু এটাও মনে রাখতে হবে মেয়েরা ছিচকাদুনে। অল্পতেই কাদতে পারে। আমরা ছেলেরা পারিনা।
আমাদের ইমোশন মেয়েদের চাইতে বেশি তবে সেটা প্রকাশ করিনা। আমরা কাদি আড়ালে লুকিয়ে কেউ দেখেনা।

হাটতে ইচ্ছা করতেছে না। রিক্সা নিলাম।
সারা রাস্তা ভাবলাম আজকে রাতে বাবাকে বলবো আমি নিলাকে বিয়ে করবো তাদের বাসায় প্রস্তাব দিতে।
আমি একা থাকলে সিওর কিছু একটা ঘটবেই।
যদি নিলা সাথে থাকে তাহলে অনেকটা সামলে নিতে পারবো।
মেয়েটার চোখে ভালোবাসা দেখেছি আমি।


পর্ব ৪

বাসায় ঢুকে আগে আম্মুর রুমে গেলাম।
গিয়ে দেখি আম্মু আর অথৈ বসে অাছে রুমে।
আমি রুমে ঢুকে আম্মুকে বললাম,

~ আম্মু ক্ষুদা লাগছে। (আমি)
~ টেবিলে খাবার রাখা আছে খেয়ে নি। (আম্মু)
~ তোমার হাতে খাবো। খাইয়ে দিবা? (আমি)
~ দেখ পাগল ছেলে কি বলে? এতো বড় হয়ে গেছে এখনো আম্মুর হাতে খেতে হবে। (আম্মু)
~ তুমি খাইয়ে দিবা কি না বলো? (আমি)

~ ভাইয়া তোর জন্য একটা খুশির খবর আছে। (অথৈ)
~ কি খবর? (আমি)
~ তোকে খাইয়ে দেওয়ার জন্য একটা লোক আনবো ভাবতেছি। ভাবি বানিয়ে বিয়ে করবি? (অথৈ)
~ আগে তোর বিয়ে দিবো তারপর আমি করবো। (আমি)
~ আম্মু এবার কিন্তু ওকে মারবো আমি। (অথৈ)
~ আম্মু তুমি খাইয়ে দিবা কি না তাই বলো। (আমি)
~ আচ্ছা দিতেছি। (আম্মু)

~ আমি কি করলাম তাহলে? আমাকেও খাইয়ে দিতে হবে। (অথৈ)
~ আচ্ছা দুজনকেই খাইয়ে দিবো দাড়া খাবার আনতেছি। (আম্মু)

আম্মু রুম থেকে বের হতেই অথৈর গাল ধরে জোরে টেনে দিলাম।
অথৈর সবচেয়ে অপছন্দের কাজ এটা।
অথৈ রেগে গিয়ে আমার চুল টেনে দিলো।
ভাই বোনের ঝগড়ার মধ্যে মন খারাপ উধাও হয়ে গেলো।
আর আম্মুর হাতে খাবার খেয়ে নিলিমার কথা ভুলেই গেলাম।

আমার মন খারাপ থাকলেই চানাচুর খাই নয়তো আম্মুর হাতে খাবার খাই।
মন খারাপ কোথায় চলে যায় নিজেও জানিনা।
খাওয়া শেষ করে ঘুমালামম একটু।
বিকেলে ঘুম ভাংতেই দেখলাম নিলা কল দিয়েছিলো।
আমি উঠে ফ্রেস হলাম।
তারপর ছাদে গিয়ে কল দিলাম নিলাকে।
~ হ্যালো। (নিলা)

~ হ্যা কল দিয়েছিলে দেখলাম। (আমি)
~ হ্যা কেনো সমস্যা আছে আপনার? (নিলা)
~ সমস্যা কেনো থাকবে? (আমি)
~ তাহলে? (নিলা)
~ কিছুনা বলো কি বলবে? (আমি)
~ না বলবো না। (নিলা)
~ কেনো বলবা না? (আমি)

~ কারন আপনি তখন আমারর কল রিসিভ করেন নাই। আমি অনেক রাগ করছি তাই এখন বলবো না। (নিলা)
~ আমি তখন ঘুমাচ্ছিলাম তাই রিসিভ করতে পারিনি। (আমি)

~ আমি জানিনা এতোকিছু আমি রাগ করছি এখন যদি আপনি রাগ ভাঙাতে পারেন তাহলে কথাটা বলবো নয়তো বলবোনা। (নিলা)

~ আচ্ছা একটা কথার উত্তর দাওতো। (আমি)
~ কি কথা? (নিলা)
~ তুমি বিয়ে করবা কবে? (আমি)
~ সেটা আব্বু আম্মু জানে। (নিলা)
~ আমাকে বিয়ে করবে? (আমি)
~ মানে? (নিলা)
~ মানে বিয়ে করবে আমাকে? তোমার আপু আর আমার ভাইয়া আমি আর তুমি, করবে বিয়ে? (আমি)
~ জানিনা। (নিলা)

~ আরে রাগ করলা নাকি? আমিতো মজা করতেছিলাম। (আমি)
~ ওহ। রাগ করিনি আমি ভাবছিলাম সিরিয়াসলি বলছেন। (নিলা)
~ আরে নাহ। তোমার তো বিয়ের বয়স ই হয়নি। (আমি)
~ কিহ? আমার ১৮ বছর হয়েছে আরো দু মাস আগেই। (নিলা)
~ তারপরও তুমিতো পিচ্চি এখনো কেমন জানি বাচ্চা বাচ্চা লাগে। (আমি)

~ আপনার সাথে কোনো কথা নাই। (নিলা)
~ আচ্ছা ঠিক আছে বাচ্চা না বুড়ি ঠিক আছে? (আমি)
~ ধুর রাখলাম বাইই। (নিলা)
বলেই কল কেটে দিলো।
হাহাহা মেয়েটাকে রাগিয়ে বেশ মজাজা পাইলাম।
তবে আরেকটা জিনিস বুঝলাম মেয়েটা আমাকে ভালোবাসে।
আর বিয়ের প্রস্তাব দিলেও কোনো সমস্যা নাই।
যেহেতু আমিও জব করি তাই কোনো সমস্যা হবেনা।

কথা বলতে বলতে রাত হয়ে গেছে খেয়ালই করিনি।
রাতের আকাশ বরাবরই আমার ভালো লাগে।
কেনো জানি অন্ধকার খুব পছন্দ আমার।
সবাই যেখানে দিনের বেলায় ঘুরাঘুরি করে আমি সেখানে রাতে ঘুরি।
রাতটাই কেনো জানি ভালোলাগে।
পকেট থেকে সিগারেট বের করে কেবলই সিগারেট ধরাইছি এমন সময় অথৈ ছাদে চলে আসছে।

~ ভাইয়া তুই আবার সিগারেট খাচ্ছিস? (অথৈ)
~ আচ্ছা ফেলে দিতেছি। (আমি)
~ সবকয়টা আমাকে দে। (অথৈ)
~ কেনো? (আমি)
~ দিতে বলছি দে। (অথৈ)
আমি প্যাকেটটা ওর হাতে দিলাম।
ও সবকয়টা সিগারেট বের করে একটা একটা করে সবকয়টা ভেঙে ফেললো।

~ এবার টাকা দে। (অথৈ)
~ ধর ১০০ টাকা নে। (আমি)
~ উহু ১০০০ লাগবো একটা ড্রেস দেখছি ১০০০ টাকা শর্ট আছে তুই দিবি এখন। (অথৈ)
~ কিহ ১০০০ দিতে পারবোনা(আমি)
~ দাড়া আম্মুকে ডাকতেছি। আম্মুুুউউ। (অথৈ)
~ আরে থাম থাম দিতেছি। (আমি)
~ বিকাশ করলাম? (আমি)
~ আচ্ছা খরচ সহ দিবি। (অথৈ)
~ আচ্ছা দিতেছি তাও এবারের মতো মাফ কর। (আমি)
~ আচ্ছা। আর তোর আর নিলার ব্যাবস্থা আমি করতেছি দাড়া। (অথৈ)
~ মানে? (আমি)

~ মানে আমি সব শুনছি আর এবার তোর ও একটা ব্যাবস্থা হয়ে যাবে টাকা তো আর এমনি এমনি নিলাম না। সিগারেট খাওয়ার অপরাধে ১০০০ টাকা নিলে হারাম হয়ে যাবে তাই একটা কাজ করে দিয়ে তারপর নিবো(অথৈ)

বলেই দৌড়ে চলে গেলো।
আমি মনে হয় এবার গেলাম।
জানিনা কি বলবে ও। সবার আদর পেয়ে একদম মাথায় উঠে গেছে। এখন সিওর আব্বুকে গিয়ে বলে দিবে আমার আর নিলার কথা।
আল্লাহ এবারের মতো বাচিয়ে দাও।


পর্ব ৫

অথৈ নিচে চলে গেলো। মাথা ঘুরতেছে আমার৷
ও সব বলে দেওয়ার আগে আমাকে বলতে হবে নয়তো আব্বু অন্য কিছু মনে করবে তখন আবার ঝামেলা হতে পারে।

তারাতারি করে নিচে নেমে আসলাম।
আব্বুর রুমে গিয়ে দেখি আব্বু আর আম্মু দুজনেই বসে আছে।
আমি গিয়ে বললাম,
~ আব্বু একটা কথা ছিলো। (আমি)
~ কি কথা বল। (আব্বু)
~ আব্বু আসলে কিভাবে যে বলি। (আমি)
সত্তিই অনেক লজ্জা লাগতেছে।
নিজের বিয়ের কথা নিজে গিয়ে বলবো।
~ এতো ভাবার কি আছে যা বলার বলে দে। (আব্বু)
~ আব্বু আসলে আমি বিয়ে করতে চাই। (আমি)
~ কি বুঝিনাই আবার বল। (আম্মু)
~ বিয়ে করবে বিয়ে। লুকিয়ে লুকিয়ে আর কয়দিন প্রেম করবে? (অথৈ)
এইবার মনে হয় সব গেলো।

আব্বু প্রেম ট্রেম একদম পছন্দ করেনা।
~ মানে কি? এতোদিন কি ও তাহলে প্রেম করছে আমাদের না জানিয়ে? (আব্বু)
~ কেউ কি জানিয়ে প্রেম করে নাকি? (অথৈ)
~ তা মেয়েটা কে শুনি? (আব্বু)
~ নিলা। (অথৈ)
~ কোন নিলা? (আব্বু)
~ আমার বড় ভাইয়ের হবু বউয়ের বোন। (অথৈ)
~ সানভি আমি কখনো ভাবিনি তুই এমন একটা কাজ করবি।
যা আমার সামনে থেকে। (আব্বু)
~ আব্বু আমি প্রেম করিনাই শুধু ভালো লাগছে তাই বলতে আসছিলাম যে ভাইয়ার সাথে একসাথে বিয়েটা সেরে ফেললে কেমন হয়। (আমি)
আব্বু ধমক দিয়ে বললো,
~ চুপ কর বেয়াদব। কথা বলবিনা একদম চুপচাপ নিজের রুমে যা। (আব্বু)

আব্বুর কথামতো রুমে চলে আসলাম।
কিন্তু কেমন জানি লাগতেছে আব্বু কি করবে কে জানে।
দেখে তো খুব রেগে আছে মনে হলো।
থাকলে থাকুক তাতে আমার কি?
বিয়ের বয়স তো হইছেই আর বেকার তো বসে নেই।
বিয়ে করাবেই না কেনো?
বিয়ে না করালে পালিয়ে যাবো তবুও নিলিমার সাথে এক বাড়িতে একা থাকা সম্ভব না।
কখন কি ঘটে বলা যায়না।

এখন নিলাই সব। নিলাকে নিয়েই স্বপ্ন দেখতে হবে।
তাকে নিয়েই বাচতে হবে।
বসে বসে এসব ভাবতেছি এমন সময় অথৈ রুমে ঢুকলো।
~ ভাইয়া ব্যাড নিউজ আছে। (অথৈ)
~ কি ব্যাড নিউজ? (আমি)
~ আরে তোর ও বিয়ে হয়ো যাবে এবার। (অথৈ)
~ মানে? (আমি)
~ মানে হলো আব্বু আর আম্মুর কথা শুনে যেটা বুঝলাম সেটা হলো কালকে আব্বু আর আম্মু আবার যাবে ওদের বাসায়। আর তারপর নিলা ভাবির সাথে তোমার বিয়ে ঠিক করবে। (অথৈ)
~ কিহ? সত্তি? (আমি)
~ হ্যা সত্তি তবে আমার মন খারাপ। (অথৈ)
~ কেনো? তোর তো খুশি হওয়ার কথা একসাথে দুইটা বিয়ে হবে বাড়িতে। আনন্দ করবি মজা করবি। (আমি)
~ আরে ধুরর রাখ তোর মজা। আমার ইনকাম সোর্স বন্ধ হয়ে গেলো। এখন হাত খরচ কই পাবো? (অথৈ)
~ মানে কি? (আমি)

~ মানে আর কি? তুই সিগারেট খাইতি আর আমি ওখান থেকে ইনকাম করতাম। এখন তো সব বন্ধ হয়ে যাবে। ভাবি তোকে তো আর সিগারেট খেতে দিবেনা। (অথৈ)
~ আচ্ছা বোন আমার কষ্ট পাসনা। তোকে প্রতিমাসে দু হাজার করে টাকা দিবো। (আমি)
~ কিন্তু কেনো দিবি? (অথৈ)
~ আজকে আমার সব কাপড় তুই ধুয়ে দিবি তাই। (আমি)
~ আমি পারবোনা এর আগেও তুই বলছিলি কিন্তু টাকা দিস নাই। (অথৈ)
~ এবার দিবো সত্তি। (আমি)
~ কসম?
~ কসম।

অথৈ কে প্যান্ট শার্ট বের করে দিয়ে দরজা বন্ধ করলাম।
উপরের দিকে তাকিয়ে দেয়াল দেখতেছি।
হঠাৎ বা দিকে চোখ পড়তেই পুরনো ডায়রিটা চোখে পড়ে গেলো।
ডায়রিটা বের করলাম।
ধুলো জমে গেছে প্রতিটা পৃষ্টায়।
এটা তো শুধু ডায়রি। আমার মনেই তো ধুলো জমে গেছে।

ডায়রিটা মুছে আবার রেখে দিলাম জায়গামতো।
কারন এটা খুললে আবার নিলিমার সৃতিতে জড়িয়ে যাবো।
এর চাইতে ভালো নাই খুললাম।
নিজেকে কেনো আটকে রাখবো তার কাছে।
সে তো বন্দি নেই। মুক্ত পাখির মতো হাসছে।
তবে আমি কেনো বিরহ ব্যাথায় কষ্ট পাচ্ছি এখনো?
জানি এর কোনো উত্তর আমার কাছে নেই তাই নিজেকে প্রশ্ন করে বৃথা সময় নষ্ট ছাড়া আর কিছুই না।

কি ভেবে আবারো ছাদে গেলাম।
গিয়ে নিলাকে কল করলাম,
দু বার রিং হতেই কলটা রিসিভ হলো,
~ হ্যালো। (আমি)
~ হ্যা বলো। (ওপাশ থেকে)
আমি তখনও বুঝে উঠতে পারিনি এটা নিলা নয় নিলিমা।
তাই আবার বললাম,
~ কি করো? (আমি)
~ আমি নিলিমা।
কথাটা শুনার পর বুঝতে পারলাম
এটা নিলিমা নিলা নয়। হঠাৎ করে বুকের ভেতর ছ্যাত করে উঠলো। মনে হলো ইমোশন গুলা সব উপরের দিকে উঠে আসতেছে।
একেকটা দির্ঘশ্বাস যেনো সব ইমোশন বের করে দিচ্ছে।
আমি কোনোমতে বললাম,
~ নিলা কোথায়? (আমি)
~ আব্বুর রুমে। (নিলিমা)
~ ওহ ওকে একটু ডেকে দাও কথা আছে ওর সাথে। (আমি)
~ কি কথা আমাকে বলো। (নিলিমা)

সুযোগ পাইছি এবার। কষ্ট দিছো আমাকে তুমি এইবার তোমাকে জ্বালাবো আমি।
দেখি কতটা সহ্য করতে পারো।
আমি কোনোকিছু না ভেবে বলেই দিলাম,
~ নিলার সাথে আমার বিয়ে নিয়ে কথা হবে কালকে তাই ওর সাথে কিছু কথা ছিলো একটু ফোনটা ওকে দেওয়া যাবে? (আমি)
~ নিলার সাথে তোমার বিয়ে মানে? তোমার মাথা ঠিক আছে? (নিলিমা)
~ আমার মাথা হাত পা সব ঠিক আছে। (আমি)
এবার ওর কান্নামিশ্রিত কন্ঠটা শুনলাম।
~ সানভি তুমি কি সিরিয়াসলি বিয়ে করবা? (নিলিমা)

~ হুমম বিয়ে তো করতেই হবে তাইনা। তো ভাবলাম একসাথেই করে ফেলি। একসাথে থাকতে না পারলাম বিয়ে তো করতে পারবো তাইনা? (আমি)
ওর ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্নার আওয়াজটা আমাকেও কষ্ট দিতে লাগলো তবে পুরনো কথা মনে পড়ে আর কষ্ট লাগে না।
যতটা পেইন সে আমাকে দিছে।
আমার সামনে দিয়ে বাইকে করে ঘুরছে দেখিয়ে দেখিয়ে প্রেম করছে। তখন তো তার কষ্ট হয়নি আজ কেনো হচ্ছে।
সেতো খুশি থাকার কথা।
সে যেমন ছেলে চাইতো তেমন ছেলেই পেয়েছে।
টাকাওয়ালা হ্যান্ডসাম।
বলতে দ্বিধা নেই আমার বড় ভাই আমার চাইতেও ভালো দেখতে আর অনেক রোমান্টিক ও।
তাহলে কেনো পারছেনা সে তাকে নিয়ে সুখে থাকতে।
এসব ভাবতে ভাবতে ফোনের দিকে তাকালাম,
~ হ্যালো। (আমি)
~ আচ্ছা আমি নিলাকে ফোন দিতেছি কথা বলো। (নিলিমা)
~ আচ্ছা ঠিক আছে। (আমি)

দুমিনিট পর নিলার কন্ঠ শুনতে পেলাম।
~ আবার ফোন কেনো দিছেন? (নিলা)
~ একটা কথা জানার ছিলো? (আমি)
~ কি কথা? (নিলা)
~ আমাকে বিয়ে করবা? (আমি)
~ কি বলেন এগুলা? (নিলা)
~ যা বলি তার উত্তর দাও। নয়তো অন্য মেয়ে দেখতে হবে। (আমি)
~ অন্য মেয়ের দিকে তাকালে না চোখ উপড়ে তুলে নিবো। (নিলা)
~ হাহাহা তার মানে বিয়ে করবা? (আমি)
~ আমার লজ্জা লাগতেছে। রাখি বাই। (নিলা)
~ আরে শুনো আরেকটা কথা জানার ছিলো। (আমি)
~ কি কথা? (নিলা)

~ তোমার বয়ফ্রেন্ড আছে? (আমি)
~ বিয়ের প্রোপোজাল দিয়ে এখন আসছে বয়ফ্রেন্ড আছে নাকি জানতে। (নিলা)
~ সরি আসলে আমি জানতাম না তোমার বয়ফ্রেন্ড আছে। আমি মানা করে দিতেছি বাবা কে। (আমি)
~ বেশি বুঝেন কেনো এতো? শুনেন আমার বয়ফ্রেন্ড নাই। (নিলা)
~ ….
ফোনটা কেটে গেলো।
লজ্জা পাইছে। আপন মনে হেসে উঠলাম।
মনে হয় এইবার সত্তিই নিলার প্রেমে পড়ে গেছি।

পর্ব ৬

উত্তেজনা কাজ করছে ভিতরে। কী হবে কালকে সেটাই দেখার। তবে মনে হয়না খারাপ কিছু হবে। কারন ভাইয়ার সাথে নিলিমার বিয়ে ঠিক হতে পারলে আমার সাথে নিলার কেনো হবেনা?
এতো চিন্তা করে লাভ নেই৷ এর চাইতে ভালো ঘুমিয়ে পড়ি।
যা হয় কালকে দেখা যাবে।

পরের দিন সকালে ঘুম ভাঙলো আব্বুর ডাকে।
~ এইযে উঠেন। সকাল হয়ে গেছে। (আব্বু)
~ আব্বু এতো সকালে ডাকতেছো কেনো? (আমি)
~ ৯ টা বাজে এখনো সকাল? (আব্বু)
~ ওহহো অফিসের সময় হয়ে গেছে। (আমি)
~ আজকে অফিসে যেতে হবেনা। (আব্বু)
~ কেনো? (আমি)
~ আপনার জন্য মেয়ে দেখতে যাবো উঠেন তারাতারি। (আব্বু)
~ কোন মেয়ে? (আমি)
~ আছে একজন৷আমার বন্ধুর মেয়ে। তুই যা করছোস কখন আবার কার সাথে পালিয়ে যাস বলা তো যায়না তাই তোর ও বিয়ে করাবো তোর ভাইয়ের একসাথে। (আব্বু)
~ কিন্তু আমিতো নিলাকে (আমি)
~ নীলাকে কি? (আব্বু)
~ কিছুনা। (আমি)
~ তারাতারি আয় সবাই অপেক্ষা করতেছে তোর জন্য। (আব্বু)
~ আচ্ছা তুমি যাও আমি আসতেছি। (আমি)

আব্বু আবার কি শুরু করলো?
আল্লাহই ভালো জানে কোনন মেয়েকে আবার ধরে আনবে।
যাই হোক আমি ডিরেক্ট বলে দিবো আমার পছন্দ হয়নি।
নিলাকে ছাড়া কাওকেই বিয়ে করবোনা আমি এটাই ফাইনাল।
গোসল করে তৈরি হয়ে বের হলাম।
আব্বু আম্মু আর অথৈ বসে আছে নিচে।
নিচে যেতেই অথৈ আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।

বোনটাও যা হইছে। সবার আদর পেয়ে একদম দুষ্ট হয়ে গেছে।
আব্বু আম্মু আমাকে দেখে বের হতেই অথৈকে বললাম,
~ ওই তুই তো বললি নিলার সাথে আমার বিয়ে। (আমি)
~ আমি শুধু শুনছি তোকে বিয়ে করাবে। আমি ভাবছি নিলার সাথেই করাবে। তাই বলছি। আমি কি জানতাম নাকি যে আব্বুর বন্ধুর মেয়ের সাথে তোর বিয়ে ঠিক করবে? (অথৈ)
~ ভালো করছোস। আমার লাইফটা শেষ হয়ে যাবে যদি নিলাকে বিয়ে না করতে পারি। মেয়েটাকে অনেক ভালোবেসে ফেলছি। (আমি)
~ হুম তাতো বাসবেই। আমার বড় ভাইয়ের বউয়ের ছোট বোন বলে কথা ভালোবাসতে হবেনা। তবে আফসোস তোর বিয়ে অন্য কারো সাথে। (অথৈ)
~ হুহ এতো কথা না বলে চল এখন দেখি কোন পেত্নির সাথে বিয়ে করায়। (আমি)
~ হিহিহি চল। (অথৈ)

কথা বলতে বলতে গিয়ে গাড়িতে উঠলাম।
ড্রাইভার নাই তাই নিজেকেই ড্রাইভ করতে হবে।
সবাই গিয়ে পেছনে বসলো।
নিজেকে ড্রাইভার ড্রাইভার মনে হচ্ছে।
অথৈ কে ডাক দিয়ে সামনে আনলাম।
~ কি ব্যাপার? (অথৈ)
~ কি আর ব্যাপার সবাই পেছনে বসলে নিজেকে ড্রাইভার মনে হয় তাই তোকে সামনে আনলাম। (আমি)
~ আচ্ছা চল।
~ কিন্তু যাবোটা কোথায়? (আমি)
~ আব্বু ভাইয়া জিজ্ঞেস করতেছে কোথায় যাবে। (অথৈ)
~ কোথায় আবার সে যাকে ভালবাসে তার বাসায়। লুকিয়ে প্রেম করার শাস্তি স্বরুপ তাকে বিয়ে করানো হবে। (আব্বু)

আব্বুর কথা শুনে সেই লেভেলের খুশি লাগতেছে।
মিথ্যা বললো কেনো তাহলে?
মজা নিছে আমার সাথে। আমিও শোধ নিবো এর।
আমাকে টেনশন এ রেখে মজা নেওয়া।

নিলিমার বাসার সামনে এসে গাড়ি থামালাম।
তারপর আব্বুর পেছন পেছন বাসায় ঢুকলাম।
কেনো জানি অনেক লজ্জা লাগতেছে।
বুঝলাম সেদিন ভাইয়ার ও সেম অবস্থা হইছিলো।
বাসারর ভিতর ঢুকে একজোড়া চোখ খুজতে লাগলাম।
কিন্তু কোথাও পেলাম না চোখ জোড়াটা।

আব্বুর সাথে গিয়ে বসলাস সোফায়,
~ কেমন আছেন? (আব্বু)
~ জি আলহামদুলিল্লাহ আপনি? (নিলার আব্বু)
~ জি ভালো। রাতে যা বললাম সেটার ব্যাপারে কথা বলতেই আসলাম। (আব্বু)
~ মেয়েকে দেখুন তারপর নাহয় কথা বলি। (নিলার আব্বু)
~ হুমম ডাকুন মেয়েকে। (আব্বু)
~ নিলা এদিকে আয়তো মা। (নিলার আব্বু)

ভিষন অস্তিরতা কাজ করতেছে মেয়েটাকে দেখার জন্য।
মনটা ভিষন ব্যাকুল হয়ে পড়ছে।
হঠাৎ দড়জা ঠেলে বেড়িয়ে এলো সে।
কালো শাড়িতে হালকা মেকআপ আর হালকা লিপস্টিকে
অন্যরকম লাগছিলো তাকে। ইচ্ছে হচ্ছিলো এখনই হাতটা ধরে ফেলি সারাজিবনের জন্য। বাইরে কি ঘটছে সেদিকে আমার ভ্রুক্ষেপ নেই। আমি হারিয়ে গেছি নিলাতে।
কেউ পারবেনা আর আমায় সামলাতে।

ঘোর কাটলো অথৈর ডাকে,
~ এই ভাইয়া। (অথৈ)
~ হ্যা কি বল। (আমি)
~ এদিকে আয়। (অথৈ)
~ হুম কি বল। (আমি)
~ ভাবিকে নিয়ে রুমে যা কথা বল। (অথৈ)
~ আচ্ছা।

বুঝিনা কেনো আলাদা রুমে যেতে হবে।
দেখছিলাম তাকে। দেখতে থাকিনা।
কেনো বারবার যেতে হবে আলাদা রুমে।
ঘোরটাই কেটে গেলো।

তবে আজকে তো সে নেশার মতো কাজ করছে যতবার দেখতেছি ততবারই মাতাল হয়ে যাচ্ছি।
পারফিউমের গন্ধে অবস্থা অনেকটাই খারাপ।
চলে আসলাম আলাদা রুমে। জানিনা আব্বু কি বলছে আমিতো শুধু দেখছিলাম তাকে।
যাই হোক,
নিলার দিকে তাকিয়ে দেখলাম সে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে। ভালো করে তাকিয়ে লক্ষ্য করলাম শাড়ির কুচিটা এলোমেলো হয়ে আছে।
তার মানে সে শাড়ি পড়তে জানেনা।
আমিও তো পড়াতে পারিনা কি হবে তাহলে?
ধুরো এতো রোমান্টিক হয়ে কি হবে।
সে নিজেই শিখেখে যাবে।

দুজনেই চুপচাপ। এ যেনো নিরবতা পালন করছি এমন কিছু।
কি বলবো কি বলালা উচিত কিছুই বুঝতে পারতেছিনা।
মেয়েটাও চুপ করে আছে।
সব দ্বিধা ভেঙে আমিই প্রশ্ন করলাম,
~ বিয়েটা করতে তুমি রাজি? (আমি)
সরাসরি প্রশ্ন করায় তার মুখটা কেমন যেনো লাল হয়ে গেলো। আমিও আছি বোকার মতো সরাসরি প্রশ্ন করে বসলাম সে বিয়ে করতে রাজি কিনা।
এখন কি বলবো?
হার্টবিট অলরেডি অনেকটাই বেড়ে গেছে।
এবার আর তাকে প্রশ্ন না করে নিজেই বলতে লাগলাম।
~ তোমাকে সেই প্রথম দিন দেখেই প্রেমে পড়ে গেছি। যেহেতু ভাইয়ার বিয়ে আর মাত্র ১৫ দিন বাকি তাই প্রেম করার সুযোগ নাই। খুব ইচ্ছা ছিলো প্রেম করে বিয়ে করবো। চলোনা এই বাকি ১৫ টা দিন প্রেম করি তারপর বিয়ে। যদি থাকো রাজি বিয়ে ঠিক করবো আজি? Nila Will You Marry me? (আমি)
~ yes i will (Nila)

কথাটা বলেই লজ্জায় আমার বুকে মুখ লুকালো।
সিওর হয়ে গেলাম মেয়েটাও আমাকে ভালোবাসে।
মেয়েটাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম।

হঠাৎ অনুভব করলাম মেয়েটা কাদতেছে,
~ কি হলো কাদতেছো কেনো? (আমি)
~ জানেন আমিও আপনাকে প্রথম দেখেই প্রেমে পড়ে গেছি।
আমি ভেবেছিলাম পালিয়ে বিয়ে করবো কিন্তু আমাদের তো বিয়ে ঠিক হয়ে গেলো এখন কি হবে? (নিলা)
ও আল্লাহ আম্রে উঠাইয়া নাও। মেয়ে বলে কি?

মেয়েটার কোমড়ে হাত রেখে টান দিতেই নিলা আমার বুকের সাথে এসে আটকে গেলো।
এমন সময় দড়জায় টোকা পড়লো,
উফফ এখনি আসতে হলো,
নিলার কানে কানে বললাম,
~ তোমাদের বাসায় প্রাইভেসি নাই। (আমি)
মেয়েটা খিলখিল করে হাসতে লাগলো।
আমি দড়জা খুলে দেখলাম বাইরে নিলিমা দাড়িয়ে,

পর্ব ৭

নিলিমা আমাকে দেখে কেমন জানি হয়ে গেলো।
ঝটপট ভিতরে ঢুকে গেলো।
আর আমিও কিছু না বলে বাইরে চলে আসলাম।
হবু বউয়ের সামনে এক্স গার্লফ্রেন্ডকে কি বলবো।
আমি এসে বসলাম আব্বুর পাশে। তারা কথা বলতেছে হাসতেছে। মনে হয় বিয়েটা কনফার্ম।
~ সানভি তোর মত কি? (আম্মু)

~ আমি কি বলবো তোমরা যা বলবে তাই হবে। (আমি)
~ তাহলে আর কি আগামি মাসের ১২ তারিখ তোদের বিয়ে। (আব্বু)
~ আচ্ছা আব্বু আমি আসতেছি আমার একটু কাজ আছে। (আমি)
~ আমিও যাবো চল। (অথৈ)
~ আচ্ছা যা। (আব্বু)

সালাম দিয়ে বাইরে চলে আসলাম।
~ কিরে ভাইয়া তোর কি মন খারাপ? (অথৈ)
~ না মন খারাপ কেনো হবে। যাকে চাইছি তার সাথেই তো বিয়ে মন খারাপ কেনো হবে? (আমি)
~ জানিনা বাট মনে হচ্ছে মন খারাপ।

~ আরে নাহ মন খারাপ না এমনিই মাথা ব্যাথা করতেছে। (আমি)
~ তবে যাই বলস না কেনো নিলা ভাবির চাইতে নিলিমা ভাবি দেখতে সুন্দর। (অথৈ)
~ বলছে তোরে? নিলা দেখতে সুন্দর। নিলিমার চাইতে একটু খাটো শুধু আর কিছুনা। (আমি)
~ ওই হলো। নিজের বউয়ের প্রসংসা আর করতে হবেনা। (অথৈ)
~ হুহ বাদ দে। ভাবতেছি তোর জন্যও ছেলে দেখবো। একসাথে তিনটা বিয়ে হবে বাড়িতে খরচ কম হবে। (আমি
~ ভাইয়া খারাপ হয়ে যাবে কিন্তু। আমি এখন বিয়ে করবোনা ঠিক আছে? (অথৈ)?
~ তাহলে ঠিক আছে যখন ইচ্ছা করিস এখন চুপ থাক। (আমি)
~ ওকে।

বাসায় এসে গোসল করলাম।
ভালো লাগতেছেনা কেনো জানি।
একটা ঘুমের ট্যাবলেট খেয়ে ঘুম দিলাম।
কিন্তু বেশিক্ষন ঘুম হলোনা।
ফোন কলের শব্দে ঘুম ভেঙে গেলো।

নিলার কল,
~ হ্যালো। (আমি)
~ হুমম কি করেন? (নিলা)
~ এইতো ঘুমাচ্ছিলাম তুমি? (আমি)
~ ভাবতেছি। (নিলা)
~ কি ভাবো? (আমি)

~ কত তারাতারি কত কিছু হয়ে গেলো তাইনা? (নিলা)
~ হুমম অনেক কিছু হয়ে গেছে। (আমি)
~ সামনে তো আরো অনেক কিছু হবে। (নিলা)
~ হুমম এখন বলো কি জন্য কল দিছো। (আমি)
~ আজকে একটু ঘুরতে বের হবো তোমার সাথে তাই। (নিলা)
~ ভাবিকে নিয়ে আসবা? (আমি)
~ না। একাই আসবো। আর আপু তো শপিংয়ে গেছে তোমার ভাইয়ের সাথে। (নিলা)
~ কিহ? (আমি)
~ হ্যা এতো অবাক হওয়ার কি আছে? আর ১৪ দিন পরই তো বিয়ে। এখন থেকে শপিং করবে না তো কখন করবে? (নিলা)

~ আমি এই জন্য অবাক হইনি। অবাক হইছি তুমি এখনো শপিংয়ে যাও নাই তাই(আমি)
~ আমি কি একা একা শপিংয়ে যাবো নাকি? (নিলা)
~ না একা কেনো যাবা? এখন আমার সাথে যাবা রেডি হয়ে নাও তারাতারি। (আমি)
~ সত্তিই নিয়ে যাবেনন? (নিলা)
~ না মিথ্যা মিথ্যা নিয়ে যাবো। তুমি রেডি হয়ে নাও তারাতারি।
৩ টা বাজে ৩০ মিনিটের মধ্যে আসবা। (আমি)
~ আচ্ছা আপনি দাড়ান টংয়ের দোকানে আমি আসতেছি। (নিলা)
~ আচ্ছা তারাতারি আসবা। (আমি)
~ ঠিক আছে বাই।

রেডি হয়ে মামার দোকানে গিয়ে দেখি সব বন্ধুরা আড্ডা দিতেছে। কাজের চাপে পড়ে অনেকদিন আড্ডা দেওয়া হয়না।

গিয়ে বসলাম ওদের সাথে,
~ কিরে কি খবর? তোকে তো আর দেখাই যায়না। (রাফি)
~ হুমম কেমনে দেখবি সারাদিন তো অফিসেই থাকি। (আমি)
~ হুম তা ঠিক তবে বাবার এতো টাকা কি করবি? তোর চাকরি করার কি দরকার? (নিল)
~ শোন ভাই তোদের বাবার টাকা আছে তোরা বসে বসে খা আমারে জ্ঞান দিসনা। (আমি)
~ আচ্ছা ঠিক আছে। আজকে রাত নয়টায় পার্টি আছে তুই আসবি। (রাফি)
~ কিসের পার্টি? (আমি)
~ আমার গার্লফ্রেন্ডের বার্থডে। (রাফি)
~ আচ্ছা আসবো। (আমি)

বাইরের দিকে তাকিয়ে দেখি নিলা আসতেছে।
~ দোস্ত একটা জিনিস বলা হয়নি। (আমি)
~ কি?
~ ১২ তারিখ আমার বিয়ে। সবাই আসবি কার্ড পাঠাই দিবোনি। (আমি)
~ কস কি? কেমনে কি?

~ আরে বলিস না বড় ভাইয়ের জন্য মেয়ে দেখতে গিয়া এক বাড়িতে দুইটারে পছন্দ হইছে। কি আর করার আব্বা বিয়া করাইবো এখন। (আমি)
~ হ ভালো সবাই দেখি বিয়া করতাছে। তুই বিয়ে করলে আর দুইজন বাকি। (রাফি)
~ হাহাহা আচ্ছা দোস্ত থাক রাতে কথা হবে। নিলা আসতেছে। (আমি)
~ সানভি? নিলা মানে? (রাফি)
~ তোকে রাতে সব বলবো। এখন যাই বাই। (আমি)

নিলা এসে দাড়িয়ে আছে খেয়ালই করিনি।
দৌড়ে গিয়ে রিক্সায় উঠলাম।
~ সরি অনেক দিন পর বন্ধুদের সাথে দেখা হওয়ার কারনে একটু আড্ডা দিলাম। (আমি)
~ হুম ঠিক আছে। তবে এতো কাছে কেনো বসছেন? দুরে যান। (নিলা)

নিলার কথায় কিছুটা অপ্রস্তুত হলাম।
কিছু বলতে পারলাম না আর। একটু বাইরের দিকে চেপে বসলাম।
তার কথায় পুরো বোকা বনে গেছি।
বাইরের দিকে তাকিয়ে আছি।
হঠাৎ নিলা টানন দিয়ে তারর দিকে টেনে নিলো।
তারপর আমার কাধে মাথা রাখলো।
চোখ বন্ধ করে আছে।
কয়েক সেকেন্ড থ মেরে কাহিনী বুঝলাম।
তারপর নিলার হাত ধরে তার মায়াবি মুখটার দিকে তাকালাম।
মেয়েটা লজ্জায় এখনো চোখ খুলতে পারছেনা।
~ হইছে এবার চোখ খুলো। (আমি)
~ না খুলবোনা। (নিলা)

~ কেনো? (আমি)
~ আমার লজ্জা লাগে। (নিলা)
~ হায়রে এতো লজ্জা আসে কোথা থেকে? (আমি)
~ জানিনা বাট আমি চোখ খুলতে পারবোনা। (নিলা)
~ আচ্ছা আমি চোখ বন্ধ করতেছি এবার খুলো। (আমি)
~ আচ্ছা। (নিলা)

নিলা চোখ খুলতেই আমি হেসে উঠলাম।
কেমনে এতো লজ্জা পায় বুৃঝিনা।
~ আপনি চোখ বন্ধ করেননাই কেনো? (নিলা)
~ চোখ বন্ধ করলে কি এই লজ্জা মাখা মুখটা দেখতে পারতাম? (আমি)~
~ ধুর আপনার সাথে আর কথাই বলবোনা। (নিলা)

রিক্সা চলছে তার গতিতে আর আমরা আমাদের।
ব্যাস্ত শহড়ে প্রিয় মানুষের সাথে রিক্সায় বসে এমন খুনশুটিই বা কয়জন করতে পারে?
রিক্সা আর কাপল মানেই রোমান্টিক অনুভুতি।
যেটা বাইক কিংবা বড় গাড়িতে পাওয়া যায়না।
জ্যামে পড়লেও কোনো সমস্যা নেই। একটু ফাকা পেলেই বেরিয়ে যায় রিক্সা। এজন্য রিক্সাই বেটার।

নিলাকে নিয়ে গেলাম শপিং মলে।
~ বলো কি কি কিনবা? (আমি)
~ বেশি কিছু লাগবোনা এখন। অনেক সময় পড়ে আছে তখন আসবো এখন একটা শাড়ি কিনবো তারপর দুজনে মিলে কিছুটা সময় কাটাবো। (নিলা)
~ আচ্ছা চলো। (আমি)

একটা কালো শাড়ি কিনলাম।
আর আমার জন্য একটা শার্ট পছন্দ করলো তিনি।
কি আর করার কিনতে হলো।

শপিং শেষ করে রেস্টুরেন্টে বসলাম।
ক্ষুদা লাগছে অনেক।

খাবারের অর্ডার দিয়ে বসে আছি নিলাকে নিয়ে।
হঠাৎ বা দিকে তাকাতেই দেখি ভাইয়া আর নিলিমা।
দুজনে বেশ হেসে হেসে কথা বলতেছে।
তাহলে নিলিমা আমাকে দেখলেই চুপচাপ আর মনমরা হয়ে যায় কেনো?
এমনিতে তো বেশ ভালোই হাসছে ঘুরছে কথা বলছে সবার সাথে।
নিলা লক্ষ্য করলো ব্যাপারটা আমি ওই দিকে তাকিয়ে আছি।
~ আরে আপু আর ভাইয়া না? (নিলা)
~ হুম সেটাই তো দেখতেছি। (আমি)

~ আপনি বসুন আমি আসতেছি। (নিলা)
বলেই ওদিকে চলে গেলো।
কিছু বলার সুযোগই দিলোনা।
ও গিয়ে কি জানি বললো,
একটু পর ভাইয়া ডাক দিলো।
আমি গিয়ে বসলাম ওখানে।

~ এখানে কি করস? (ভাইয়া)
~ তুমি কি করো? (আমি)
~ আমিতো তোর ভাবিকে নিয়ে শপিংয়ে আসছিলাম। ক্ষুদা লাগছে তাই এখানে আসলাম। (ভাইয়া)
~ আমিও সে কারনেই আসছি।

খাবার এসে গেছে।
নিলা আর ভাইয়া বেশ খুশি। তারা কিছু জানেনা তাই।
চুপ হয়ে গেছি আমি আর নিলিমা। খাচ্ছি কম আর ভাবছি বেশি। কি একটা গন্ডগোল লেগে গেলো আমার জিবনে।

এক্স গার্লফ্রেন্ড ভাবি হতে চলেছে। আর প্রতিদিন তার সাথেই বারবার দেখা হচ্ছে। না পারছি নিজেকে আটকাতে না পারছি কিছু বলতে।
নিলিমাকে ছেড়ে এবার নিলার দিকে তাকালাম।
বেশ হাসিখুশি মেয়েটা।
মেয়েটার হাসিটা পাগল করার মতো।
এই টানেই পড়ে থাকতে চাই। আর চাইনা পুরনো মায়ায় বন্দী থাকতে।

পর্ব ৮

নিলিমাকে ছেড়ে এবার নিলার দিকে তাকালাম।
মেয়েটা বেশ হাসিখুশি। হাসিটা পাগল করার মতো।
কেমন একটা মায়া মায়া ভাব তার হাসিতে।
এই হাসির মায়ায় ই বন্দী হতে চাই।
পুরনো মলিন সৃতির পাতায় নিজেকে বন্দী রাখতে চাইনা।

সে তো আমার মনের কথা বুঝেনি। বুঝেনি আমার ভালোবাসা তাহলে কেনো পড়ে থাকবো তাকে নিয়ে?
এখন আমার ইচ্ছা শুধুই তাকে জ্বালানো আর কিছুনা।
এখনো এতোটাও নিলার মায়ায় পড়িনি তাই হয়তো পারতাছিনা। তবে পারবো তাকে দেখিয়ে দিবো। তাকে ছাড়া আমি অচল না। অবশ্য দেখানোর খুব বাকিও নাই। বিয়েটা তো কনফার্ম।

~ কিরে খাচ্ছিস না কেনো? (ভাইয়া)
~ কই খাচ্ছি তো। (আমি)
~ বুঝতে পারছি। তোরা থাক। নিলিমা চলো আমরা অন্য কোথাও যাই। (ভাইয়া)
~ ওকে চলো। (নিলিমা)

অর্ধ কান্নামিশ্রিত চোখে আমার দিকে তাকালো নিলিমা।
আমি নিলার হাত চেপে ধরলাম তাকে দেখানোর জন্য।
নিলা চোখ বড় বড় করে তাকালো। আমি আরো শক্ত করে চেপে ধরলাম তার হাত। নিলিমার চোখে ক্ষোভ। কষ্ট হচ্ছে নাকি জ্বলছে?
যাই হোক তার চোখে জল দেখে মনটা একটু হলেও শান্তি পেলো। জানিনা কেনো তবে প্রতিশোধ নিতে আমার খারাপ লাগছেনা। পৈশাচিক আনন্দ হচ্ছে। সে ও তো করছে।
আমার ভালোবাসা ইমোশন সব নিয়ে খেলছে। তখন সেও মজা নিছে এখন নাহয় কিছুটা সময় আমিও খেললাম।

নিলিমা চলে গেছে ভাইয়ার সাথে। নিলা হাত ধরে টানাটানি করতেছে। তাকিয়ে দেখলাম বেশ শক্ত করে ধরেছি।
ইশশশ কাচের চুড়িটা আর একটু হলে হাতটা কেটে ফেলতো।
লাল হয়ে গেছে।

তাকিয়ে দেখি তার চোখেও জল।
মেয়েদের চোখে এতো জল কোথা থেকে আসে কে জানে।

~ সরি সরি। খেয়াল করিনি। ব্যাথা পাইছো তুমি? (আমি)
নিলা মাথা নাড়িয়ে বললো,
~ না!
অথচ তার চোখ দেখে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে সে ব্যাথা পাইছে।
হাতটা আলতো করে ধরলাম।
এবার হাতটা কাছে টেনে নিয়ে আলতো করে একটা কিস করলাম।
এবার চোখ দিয়ে পানি বেরিয়ে গেছে তার।
লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলছে অলরেডি।

সত্তি বলতে তার এই লজ্জামাখা চেহারাটা দেখতে আমার সবচেয়ে বেশি ভালোলাগে। নিজেকে হারিয়ে ফেলতে ইচ্ছা করে। তার চোখের দিকে তাকালে বুঝতে পারি এতো কতটা গভীরতা আছে। যেখানে আমি একবার পড়ে গেলে যখন তখন হারিয়ে যাবো।
সত্তিই কিছু মানুষের চোখ আছে যেগুলা অত্যন্ত গভীর এবং মায়া ভরা।
একটা মানুষকে বশ করার জন্য শুধু চোখের দিকে তাকিয়ে তার মায়াভরা হাসিটাই যথেষ্ট।
পাগল করার মতো চাহনি নিলার।

~ এইযে কোথায় হারালেন আবার? (নিলা)
~ তোমার চোখে। (আমি)
~ কিসব বলেন আপনি বুঝিনা কিছুই। (নিলা)
~ আমি প্রেমের ভাষায় কথা বলি। আমাকে ভালোবাসো সব বুঝতে পারবে। (আমি)
~ ঠিক আছে শিখিয়ে দেন কিভাবে ভালোবাসতে হয়। (নিলা)
~ শিখাবো? (আমি)
~ হ্যা। (নিলা)

~ সত্তিই শিখাবো? (আমি)
~ হ্যা শিখান। (নিলা)
~ ভেবে বলো শিখাবো? (আমি)
~ না। আপনার সাথে থাকলে এমনেই শিখে যাবো। (নিলা)
~ ওহ আচ্ছা তাই নাকি তাহলে তো সাথে সাথেই থাকা লাগবো। (আমি)
~ হুমম এবার চলুন সন্ধা হয়ে গেছে বাসায় যেতে হবে। (নিলা)
~ হুম আচ্ছা আসো। (আসি)

বিল দিতে গিয়ে শুনলাম ভাইয়া বিল দিয়ে গেছে।
বাহ ভালো কাজ করছে। কিছু টাকা বেচে গেলো।

বাইরে এসে রিক্সা নিতে গেলে নিলা বাধা দিয়ে বললো,
~ রিক্সা না হেটেই যাবো। (নিলা)
~ ১ ঘন্টা সময় লাগবে হাটলে। (আমি)
~ তো চলুন এক ঘন্টা হাটবো আপনার সাথে। আমার কোনো সমস্যা নাই। (নিলা)

আপন মনে হেসে উঠলাম। মেয়েটা মনে হয় প্রেমের ভাষা শিখার চেষ্টা করতেছে।
চেষ্টা করতে থাকুক ক্ষতি কি।
ব্যাস্ত রাস্তার পাশে হেটে চলেছি দুজন।
নিলার হাতের সাথে আমার হাতের ছোঁয়া লাগছে বারবার।
অনুভবব করতেছি তাকে। ভেতর থেকে কেমন একটা ফিল হচ্ছে বলে বুঝানো যাবেনা।
বারবার ছোয়া লাগছে কিন্তু হাত ধরছিনা,
দেখি নিলা কি করে। আমি চাই সে আমার হাতটা ধরুক এবার। হঠাৎ নিলা আমার হাতটা ধরে ফেললো।

মাথাটা নিচু করে হাটছে সে। আমি হাটছি উপরের দিকে তাকিয়ে। রাতের আকাশ দেখতেছি আর হাটতেছি।
কতক্ষন হইছে জানিনা দুজনে হাটতেছি।
এখনো হাত ছাড়েনি নিলা ছাড়িনি আমিও।
ব্যাপারটা কিছুটা এরকম তুমি না ছাড়লে আমিও ছাড়বোনা।
মেইন রোড ছেড়ে এবার বাসার রাস্তায় হাটতেছি।
নিলা হাটতে পারছেনা। একটু পর পর দাড়িয়ে পড়ছে।
বুঝতে পারলাম কষ্ট হচ্ছে হাটতে।

~ কি হইছে? (আমি)
~ পা ব্যাথা করতেছে। হাটতে পারছিনা। (নিলা)
~ রিক্সা নিবো? (আমি)
~ নাহ। (নিলা)
~ তাহলে? (আমি)
~ কষ্ট হলেও হাটবো আপনার সাথে সারাটা রাস্তা। বাকি জিবনটা তো আপনার সাথেই হাটতে হবে। এখন থেকেই নাহয় শুরু করে দেই। (নিলা)
~ তুমি অলরেডি প্রেমের ভাষা শিখে গেছো। (আমি)
~ হয়তো। কিন্তু আমি সত্তিই চাই আপনার সাথে জিবনের বাকি রাস্তাটা পার করতে। (নিলা)

এবার আর কোনো কথা না বলে নিলাকে কোলে তুলে নিলাম। পুতুলের মতো মেয়েটা বুকে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে চুপচাপ শুয়ে আছে।
লজ্জায় কাপছে মেয়েটা কিছুটা ভয়েও।

ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলো,
~ এটা কি করলেন? (নিলা)
~ বাকি রাস্তাটা তো আমার সাথেই হাটবে। এখন যদি পায়ে ব্যাথা করে তাহলে বাকি রাস্তা কিভাবে হাটবে? তাই একটু সাহায্য করলাম তোমাকে। (আমি)
~ মানুষ দেখছে তো। (নিলা)
~ এটা মেইন রোড না। আশেপাশে একটাও মানুষ নাই। (আমি)
~ তারপরও আমার লজ্জা লাগতেছে। আমি হেটে যাবো নামিয়ে দিন আমাকে। (নিলা)
~ লজ্জা লাগলে চোখ বন্ধ করে থাকো। (আমি)

নিলাও চুপ আমিও চুপ।
নিশব্দে হেটে চলেছি আমি।
আকাশে মেঘ জমেছে শুধু বৃষ্টি নামাটাই বাকি,
~ তুমি চাইলে বৃষ্টি মেঘও ছিলো রাজি অপেক্ষা শুধুই বর্ষণের।

হঠাৎ ঝুম করে বৃষ্টি নেমে গেলে খারাপ হতোনা।
আজ হঠাৎ বৃষ্টিটাকে খুব মিস করতেছি।
যদি বৃষ্টি নামতো।

মনে মনে পার্থনা করতেছি যাতে বৃষ্টি নামে।
হঠাৎ মেঘের গর্জনে নিলা আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।
তারপর শুরু হলো বৃষ্টি।
আল্লাহকে মনে মনে ধন্যবাদ জানালাম।
নিলা মেঘের গর্জনে এখনো ভয়ে চুপসে আছে।
সেই সাথে অঝড়ে বৃষ্টি। দুজনে ভিজে একাকার।
ইচ্ছে হচ্ছে নিলাকে একটা কিস করি। কিন্তু না বিয়ের আগে কিস করবোনা।

আর তো কয়টা দিন। তারপর নাহয় একসাথে বৃষ্টিতে ভিজা যাবে। হাজারবার কিস করলেও কোনো বাধা থাকবেনা।
কিন্তু আজকে না। আজকে নিজেকে সামলাবো যেভাবেই হোক। নিলা আর আমি দুজনেই ভিজে গেছি। মেয়েটা বৃষ্টিতে ভিজে কাপতেছে।
ঠান্ডা লাগতেছে মনে হয়।

সামনেই একটা চায়ের দোকান।
নির্জন রাস্তা। রাতের বেলা খুব কম মানুষই থাকে সেখানে।
দোকানে গিয়ে দাড়ালাম।
নিলা ছাড়ছেনা আমাকে।
নিচে নামিয়ে দিয়েছি কিন্তু এখনো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে।
দোকানে আরেকজোড়া প্রেমিক প্রেমিকা। তারা এক কাপে দুজনে চা খাচ্ছে।

~ নিলা? চা খাবা? (আমি)
~ না আপনি খান আমি এভাবেই থাকবো। (নিলা)
~ আচ্ছা থাকো আমি চা খাই তাহলে। (আমি)
~ হুমম। (নিলা)
~ মামা এক কাপ দুধ চা। (আমি)

ঝুম বৃষ্টি আর মামার চা বানানোর টুংটাং শব্দ খারাপ লাগছেনা। অন্যরকম অভিজ্ঞতা।
চা খেতে খেতে নিলাকে প্রশ্ন করলাম,
~ ঠান্ডা লাগছেনা? (আমি)
~ হুম একটু। (নিলা)

ফোনটা বের করে দেখলাম ৮ টা বেজে গেছে।
রাফিকে কল দিলাম,
~ কিরে কই তুই? (রাফি)
~ সরি ভাই আমি যেতে পারবোনা। তোরা ইনজয় কর। আমার কাহিনি বিয়ের দিন বলবো তোকে। (আমি)

~ কিন্তু আসবিনা কেনো? (রাফি)
~ একটু প্রবলেম এ আছি। (আমি)
~ কি প্রবলেম? (রাফি)
~ আরে ওরকম কিছুনা। তোকে বলবোনি বিয়ের দিন। (আমি)
~ আচ্ছা। (রাফি)

ফোনটা রাখতেই একটা গাড়ি এসে দাড়ালো দোকানের সামনে।
গাড়ির কাচ খুলে ভাইয়া ডাক দিলো,
~ কিরে এখানে কি করস? (ভাইয়া)
~ আরে বৃষ্টির মধ্যে আটকে গেছি। (আমি)
~ গাড়িতে উঠ। (ভাইয়া)

সালার এই নিলিমার সাথে বারবার দেখা কেনো হয়।
নিলা এখনো ছাড়েনি আমাকে। আর মনে হয় ছাড়বেও না এমন একটা ছক কষেছে মাথায়।
নিলাকে আবার কোলে তুলে নিলাম।
গাড়িরর ভিতর থেকে ভাইয়া আর ভাবি মানে নিলিমা দুজনেই দেখছে ব্যাপারটা। নিলিমার অবস্থা করুন।
ওর চেহারাটা দেখে হাসি পাচ্ছে।

নিলাকে গাড়িতে নিয়ে বসালাম।

এখনো ছাড়েনি আমাকে। তার এখন লজ্জা লাগতেছে না?
ভাই আর তার বড় বোনের সামনে সে আমাকে জড়িয়ে ধরে আছে। এমনিতে তো অল্পতেই লজ্জায় লাল হয়ে যায়।
ভাইয়া গাড়ি চালাচ্ছে।
হঠাৎ সামনে তাকিয়ে দেখি নিলা গাড়ির ভিতরের গ্লাসটায় তাকিয়ে আমাদের দেখছে।
দেখছে দেখুক তাতে আমার কি?
আমিতো ভালোবেসে ফেলছি নিলাকে

পর্ব ৯

হঠাৎ সামনে তাকিয়ে দেখি নিলা গাড়ির ভিতরের গ্লাসটায় তাকিয়ে আমাদের দেখছে।
দেখছে দেখুক তাতে আমার কি?
আমিতো ভালোবেসে ফেলছি নিলাকে।
নিলা চোখ বন্ধ করে আমাকে জড়িয়ে ধরে আছে।
ভাইয়া গাড়ি চালানোতে ব্যাস্ত আর নিলিমা আমাদের দেখছে।
আমি নিলার কপালে হাত রাখলাম।
হালকা জ্বর জ্বর মনে হলো।
সারা শরির ভেজা তার।

শার্টটা খুলে নিজের হাতে তার মাথা মুছে দিলাম।
গ্লাসে তাকিয়ে দেখি নিলিমার চোখে পানি।
বৃষ্টির পানি নাকি? বুঝলাম না কিছুই।
কাদতে থাকুক। কেবল তো শুরু। অারো অনেক কাদতে হবে। সবকিছুর শোধ নিবো তারপর দুরে সরে যাবো।

খেয়াল করলাম নিলা কাপতেছে। কি করবো বুঝতাছিনা।
বাসার সামনে এসে থামলো ভাইয়া।
~ সানভি তুই নিলিমা আর নিলাকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে আয়। (ভাইয়া)
~ আচ্ছা। (আমি)

ভাইয়া নেমে গেলো। আমি নিলার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে সামনে গিয়ে বসলাম।
নিলিমা পাশে বসা নিলা পেছনে।
নিলা চোখ বন্ধ করে সুয়ে আছে।
মনে হচ্ছে দুইটা মেয়েই আমার। কিন্তু আমিতো একজনকে চাই। আমিতো নিলাকে চাই নিলিমাকে না।
আমি সামনে তাকিয়ে গাড়ি চালাচ্ছি। নিলিমা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।
হয়তো ভাবতেছে কিভাবে এতোটা কঠর হলাম।
কিন্তু সে তো জানেনা তার ছেড়ে যাওয়া আমাকে কতটা কষ্ট দিছে। কষ্ট পেতে পেতে আজ আর তার কষ্ট আমাকে কাদায় না। তবে কিছু সৃতি আছে যেগুলা মনে পড়লে না চাইলেও চোখে জল চলে আসে।

নিলার বাসার সামনে এসে গাড়ি দাড় করালাম।
তারপর আমি গাড়ি থেকে নেমে গাড়ি আনলক করলাম।
নিলিমা বের হয়ে বাসার ভিতরে ঢুকে দাড়ালো।
এবার আমার পালা। নিলাকে আবার কোলে তুলে নিলাম।
নিলিমা তাকিয়ে দেখতাছে আমাদের। নিলার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলাম। মেয়েটা লজ্জা পেয়ে আমার বুকে মুখ লুকালো।

বাসার ভিতর এসে নিলাকে নামিয়ে দিলাম।
তারপর নিলিমাকে বললাম,
~ ভাবি নিলা তো বৃষ্টিতে ভিজছে আর শরিরে হালকা জ্বর জ্বর ভাব। একটু মেডিসিন খাওয়াই দিয়েন ওকে। (আমি)
~ আচ্ছা। (নিলিমা)

নিলিমা দ্রুত ভিতরে ঢুকে গেলো। আমিও নিলাকে বিদায় দিয়ে চলে আসলাম।
বাসায় এসে ফ্রেস হয়ে একটু বিশ্রাম নিলাম।
রাতে খাবার টেবিলে বসতেই আব্বু প্রশ্ন করলো,
~ দিনকাল কেমন চলে? (আব্বু)
~ এইতো আব্বু ভালো। (আমি)
~ আর আপনার কেমন? (আব্বু)
~ আমারো ভালো। (ভাইয়া)
~ দুজনেরই বিয়ে। ওদের ভালো কাটবোনা তো কি আমার ভালো কাটবো? (অথৈ)
~ আব্বু ওর ও বিয়ে দিয়ে দাও। দিনকাল ওর ও ভালো কাটুক। ওর এতো কষ্ট আর সহ্য হয়না। (আমি)
~ থাম সবাই। আমার কথা শুন। (আব্বু)
~ হুমম আব্বু বলো। (আমি)
~ বিয়ের তো আর কয়টা দিন বাকি।

তো সব কাজ কে করবে? (আব্বু)
~ অথৈ। (আমি)
~ আমি মানে? (অথৈ)
~ তোর বিয়ের সময় আমরা শোধ করে দিবো ঠিক আছে। ? (ভাইয়া)
~ আচ্ছা ডেকোরেশন এর লোক দিয়ে করিয়ে নিবো কিন্তু কাউকে তো সাথে থাকতে হবে তাইনা? ((আব্বু)
~ কেনো তুমি কি করবা? (আমি)
~ আমি কি করবো বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিবো। (আব্বু)
~ একটা কাজ করা যায়। (আমি)
~ কি কাজ? (আব্বু)
~ তুমি আর তোমার বন্ধুরা মিলে কাজ করবা। আড্ডাও হবে কাজ ও হবে। (আমি)
~ এতো ভালো কাজ আমার করতে হবেনা। সানভি তুই বাসা সাজানোর কাজটা দেখবি আর তুই দেখবি রান্নার দিকটা। (আব্বু)
~ আচ্ছা। (আমি)

এইটা কিছু হলো? নিজের বিয়েতে নিজেকেই কাজ করতে হবে। ধুরর ভাল্লাগেনা আর। ভাবছিলাম বিয়ের আগে বউকে নিয়া সেই মজা করবো। সেটা আর হলোনা। কি আর করার কাজে লেগে পড়তে হবে দুইদিন পর থেকে।

খাওয়া দাওয়া শেষ করে রুমে এসে শুয়ে পড়লাম।
পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে নিলাকে কল করলাম।
রিং হচ্ছে কিন্তু ধরছেনা। আল্লাহই জানে কি হইছে আবার।
কালকে যেরকম ভিজছে বৃষ্টিতে। জ্বর না আসলে হলো।
তিন চার বার কল দিয়েও কোনো রেসপন্স না পেয়ে উঠে ফ্রেস হলাম।
রুমে এসে দেখি ফোনে দুবার কল করেছিলো নিলা। এবার রিং হওয়ার সাথে সাথেই কল ধরলাম।
~ হ্যালো। (আমি)
~ কই ছিলেন? (নিলা)

~ এইতো ফ্রেস হলাম তুমি কই ছিলে? কল দিছিলাম ধরোনাই কেনো? (আমি)
~ আমিও ফ্রেস হলাম। (নিলা)
~ ওহ আজকে দেখা করতে পারবা? (আমি)
~ হুমম পারবো। (নিলা)
~ তোমার জ্বর কমছে? (আমি)
~ না কালকের মতোই হালকা বেশি না। সমস্যা নাইই। (নিলা)
~ মেডিসিন নিবা। (আমি)
~ লাগবোনা। (নিলা)
~ যা বলছি করবা আর দুপুরে নামাজ পড়ে এসে সরাসরি দেখা করবো। (আমি)
~ ঠিক অাছে লেকের ধারে আসবেন। (নিলা)
~ ওকে। (আমি)
~ বাই। (নিলা)

ফোনটা রেখে আবার ঘুম।
কিন্তু বেশিক্ষণ ঘুমাতে পারলাম না।
আম্মু এসে ডেকে গেছে। খাওয়া হয়নাই এখনো।
ভালো লাগতেছে না। তাই খাওয়া হয়নাই।
ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি ১২২৪।
আজান দিতেছে। নামাজে যেতে হবে।
তারাতারি গোসল করে পান্জাবি পড়ে বের হয়ে গেলাম।

নামাজ শেষ করে লেকের ধারে গেলাম।
নিলা আসেনি এখনো। বসে আছি একা একা।
ক্ষুদা লাগছে প্রচুর। গতকাল রাতে খাইছি সকাল থেকে কিছু খাওয়া হয়নি।
একা একা বসে থাকতে ভালো লাগতেছে না।
অপেক্ষা জিনিসটা এতো কষ্ট দেয় কেনো কে জানে।
তবুও ভালো লাগতেছে নিলাকে নিয়ে রেস্টুরেন্টে যাবো।
যেই পরিমান ক্ষুদা লাগছে তাতে বেশিক্ষন না খেয়ে থাকলে মরে যাবো মনে হয়।
আমি ক্ষুদা সহ্য করতে পারিনা।

বসে বসে পুকুরে ঢিল ছুড়তাছি। নিরব পরিশেষ মানুষজন নাই। নাই কোনো কোলাহল। পানিতে ঢিল ছুড়ার সাথে সাথে শব্দ হচ্ছে। হঠাৎ পেছনে তাকিয়ে দুরে নিলাকে দেখতে পেলাম। নিজের অজান্তেই মুখে হাসি ফুটে উঠলো।

নিলা আমার পাশে এসে বসলো,
হাতে একটা ব্যাগ। জানিনা কি আছে ব্যাগের ভিতর।
আমার কাছেও একটা জিনিস আছে। গাছের পাশে লুকাই রাখছি। পান্জাবির পকেট নাই।
~ পান্জাবিতে আপনাকে ভালো লাগতেছে। (নিলা)
~ তোমাকে শাড়িতে ভালো লাগে। (আমি)

~ আপনার জন্য একটা জিনিস আনছি। (নিলা)
~ সেটা তো দেখতেই পাচ্ছি। কিন্তু জিনিসটা কি? (আমি)
~ চোখ বন্ধ করেন। (নিলা)
~ মেরে ফেলবা নাকি? (আমি)
~ আপনি চোখ বন্ধ করেন নয়তো দিবোনা। (নিলা)
~ আচ্ছা ঠিক আছে বন্ধ করলাম। (আমি)

নাকে বিরিয়ানির গন্ধ পাইতেছি।
কৌতুহল কাটিয়ে চোখ খুলেই ফেললাম।
যা ভাবছি তাই। নিলা বিরিয়ানি আনছে।
~ তুমি কেমনে জানলে বিরিয়ানি আমার প্রিয়। (আমি)
~ আমি জানিনা তো। আপুকে জিজ্ঞেস করছিলাম কি রান্না করবো সে বললো বিরিয়ানি। তাই আরকি রান্না করলাম। (নিলা)

নিলিমা তো জানে আমার বিরিয়ানি পছন্দ।
কতশত বার তার সাথে বসে বিরিয়ানি খাইছি।
আজকে তার ছোট বোনের সাথে বসে খাবো।

~ নেন খান। (নিলা)
~ আমি খেতে পারবোনা। (আমি)
~ কেনো? (নিলা)
~ তুমি খাইছে দিবা। (আমি)
~ আমি পারবোনা। (নিলা)
~ তাহলে আমিও খাবোনা। (আমি)
~ ঠিক আছে হা করুন। (নিলা)

নিলা আমাকে খাইয়ে দিতে লাগলো।
বিরিয়ানি মুখে দিতেই বুঝলাম এটা নিলিমা রান্না করছে।
তার হাতের রান্না অনেকবার খাইছি আমি।
বিরিয়ানিতেও সে ঝাল বেশি দিবে।
আর যখন প্যাকেট করবে তখন লেবুর রস দিয়ে অনেকটা টক বানিয়ে ফেলবে।
এই স্বাদটা কখনো ভোলা যাবেনা।
নিলা হেল্প করছে রান্না করতে কিন্তু ঝাল আর লেবুর রসটা নিলিমা দিছে।

অদ্ভুত একটা স্বাদ। চোখে পানি চলে আসছে।
অনেকদিন পর নিলিমার হাতের বিরিয়ানি খেলাম আবার।
নিলা আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
~ আপনার কি ঝাল লাগছে? (নিলা)

পর্ব ১০

অদ্ভুত একটা স্বাদ। চোখে পানি চলে আসছে।
অনেকদিন পর নিলিমার হাতের বিরিয়ানি খেলাম আবার।
নিলা আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
~ আপনার কি ঝাল লাগছে? (নিলা)
~ হুমম। পানি আনছো? (আমি)
~ হ্যা এই নিন। (নিলা)

বোতলটা এগিয়ে দিলো নিলা।
ধরা পড়ে যাওয়ার আগে নিজেকে সামলে নিলাম।
বারবার কেনো নিলিমার কথাই মনে পড়ে।
নিলাকে তো ভালোবাসি তাহলে নিলিমার সৃতি কেনো কাদায়।

উত্তরটা আমার অজানা নয় তবুও বারবার বোকার মত নিজেকেই প্রশ্ন করে বসি।
উত্তর তো এটাই যে,
কিছু মানুষ আছে যাদের কে একটা সময় অনেক ভালোবাসা হয়।
কিন্তু মানুষটা বুঝে না। তখন আমরা অনেক কষ্ট পাই। আস্তে আস্তে কষ্টের মাত্রাটা কমে আসে। আমরাও একা পথ চলা শিখে নেই। বুঝতে পারি ওপাশের মানুষটা আমাকে চায়না তাহলে কেনো বারবার তার পিছনে ছুটবো? তাকে ভেবে কেনো কষ্ট পাবো?
এভাবে একটা সময় আমাদের ভিতর আর তার প্রতি কোনো ফিলিংস থাকে না। সত্তিই কোনো ফিলিংস থাকেনা।

আর কান্না পায়না তার কথা মনে হলে। বরং হাসি পায়, নিজেকে অনেক বোকা মনে হয়। নিজের কর্মকান্ডগুলো নিজের পাগলামির কথা মনে পড়ে তখন সত্তিই আমরা হাসি।
কারন তখন আমরা নিজেদের নিয়ে ভাবতে শিখে গেছি।
বাচতে শিখে গেছি একা একা।

বাইরে বাইরে আমরা অনেক হ্যাপি হয়তো ভিতরেও।
তবে অনেকটা মৃত মানুষের মতো হয়ে যাই।
আমরা হাসি,খেলি, বন্ধুদের সাথে ঘুরতে যাই,পার্টি করি।
সারাদিন আমরা সব করি। কিন্তু রাত হলে না?
সেই মানুষটার কিছু সৃতি চোখের সামনে ভেসে উঠে।
তখন কান্না পায়না দির্ঘশ্বাস উঠে আসে।

ঠিক তখন নিজেকে কি বুঝাই জানেন?
আজকে অনেক ক্লান্ত লাগতেছে ঘুমিয়ে পড়ি।
এভাবেই চলে দিন। কিন্তু এমনও কিছু সৃতি আছে যেগুলা মানুষকে কাদায়।
ঠিক সেই সৃতিগুলোর মধ্যে এটা একটা।
তাই আমি কাদি। তাই তার কথা বারবার মনে পড়ে।

~ কি ব্যাপার খাচ্ছেন না কেনো? (নিলা)
~ কই খাইতেছি তো। (আমি)
~ সেই কখন থেকে দেখতেছি ভাবতেছেন। কী ভাবেন এতো? (নিলা)
~ ভাবতেছি কবে এই মেয়েটাকে নিয়ে একসাথে থাকবো। দুজনে মিলে রান্না করবো তারপর খাবো। (আমি)

~ আর তো মাত্র কয়দিন। এতো তারাহুরো কেনো? (নিলা)
~ আমার তো মনে হচ্ছে এখনি বিয়ে করে ফেলি। (আমি)
~ আমার মনে হচ্ছে এখন না আরো একবছর পর করি। (নিলা)
~ কেনো একবছর পর কেনো? (আমি)
~ এই একবছর প্রেম করবো তারপর বিয়ে। (নিলা)
~ ঠিক আছে তাহলে আব্বুকে বলি এখন বিয়ে করবোনা(আমি)
~ আরে না এমনি বলছি। (নিলা)

~ বুঝি বুঝি সবই বুঝি। (আমি)
~ কি বুঝেন? (নিলা)
~ এইযে তুমি ভয় পাইতেছো একবছরে যদি অন্যকারো হয়ে যাই। (আমি)
~ ঘোড়ার ডিম বুঝেন। (নিলা)
~ ওইটা আবার কি? খায় না পড়ে? (আমি)
~ বুঝবেন না কি করে। (নিলা)

~ বুঝাই বলো। (আমি)
~ বিয়ের পর বলবো। (নিলা)
~ নাহ এখন শুনবো। (আমি)
~ বলছি না বিয়ের পর বলবো। (নিলা)
বলেই রাগি লুক নিয়ে তাকালো।
হায় হায় মেয়ে দেখি রাগ ও করতে পারে।
রাগলে তো দারুন লাগে।

চোখগুলা গোল আলুর মতো হয়ে যায়।
বাচ্চাদের মতো লাগে।
~ তুমি রাগ ও করতে পারো? (আমি)
~ আমি কি এলিয়েন যে রাগ করতে পারবোনা? (নিলা)
~ না। আসলে আমি ভাবছিলাম তুমি রাগ করতে পারোনা। (আমি)
~ শুনেন আমি অনেক রাগি ঠিক আছে? বিয়ের পর দেইখেন? (নিলা)
~ আচ্ছা দেখা যাবে কত রাগ আছে তোমার। (আমি)

~ আচ্ছা এইবার সরুন। ঘেষতে ঘেষতে তো একদম কাছে চলে এসেছেন। (নিলা)
~ তো আমার বউ আমি কাছে আসবোনা? (আমি)
~ শুনেন এখনো বিয়ে হয়নাই ঠিক আছে? (নিলা)
~ আচ্ছা ঠিক আছে হয়নাই হবে তো তাইনা? (আমি)
~ আগে হোক তারপর কাছে আইসেন। (নিলা)
~ বাহ। কালকে তো এমনভাবে জড়িয়ে ধরে ছিলা যেনো আমাদের ৫~ ৭ বার বিয়ে হইছে। আর আজকে তো চিনতেছোই না। (আমি)

~ আরে কালকের কথা বাদ। ভয় পাইছিলাম তাই ছাড়িনি। নইলে আপনার মতো বান্দরকে কে জড়িয়ে ধরবে? (নিলা)
~ কি আমি বান্দর? (আমি)
~ না তো কি? দেখেন হাত ধরে ফেলছেন। (নিলা)
~ আচ্ছা ঠিক আছে ছাড়লাম। যাও আর ধরবো না। (আমি)
~ হুমমম(নিলা)

আমি একটু দুরে সরে বসলাম।
এবার নিলা ঘেষতে লাগলো।
~ কি ব্যাপার এদিকে আসতেছো কেনো? (আমি)
~ এমনি ওখানে রোদ তাই এদিকে আসলাম। (নিলা)
~ নিলা একটা জিনিস দেখাবো দেখবা? (আমি)
~ কি? (নিলা)
~ ওইযে দেখো মাকড়শা। (আমি)
~ …
নিলা চিৎকার করে উঠেই আমার দিকে আসলো।
ওকে দেখে আমিও উঠে দৌড় দিলাম।
নিলা আমার পেছনে দৌড়াইতাছে।
আর চিৎকার করতেছে।

আমি ভাবলাম আমি কেনো দৌড়াইতাছি।
আমি দাড়াতেই নিলা এসে জড়িয়ে ধরলো।
~ নিলা ছাড়ো আমাকে? (আমি)
~ না মাকড়শা। (নিলা,)
~ আমাদের তো এখনো বিয়েই হয়নাই৷জড়িয়ে কেনো ধরছো? (আমি)
~ হয়নাই তো হবে। (নিলা)
~ আগে হোক তারপর ধইরো। (আমি)
~ প্লিজ আমি ভয় পাই মাকড়শা। (নিলা)
~ আরে নাইতো এমনি বলছি। (আমি)
~ না আছে। (নিলা)

~ আরে দেখো নাই? (আমি)
~ তারমানে আপনি মিথ্যা বলে আমাকে ভয় দেখাইছেন। (নিলা)
~ হুমম মাঝে মাঝে একটু আধটু মিথ্যা বললে কিছু হয়না। (আমি)
~ আপনি থাকেন আমি গেলাম। (নিলা)
~ আরে ঔষুধ গুলা তো নিয়ে যাও। (আমি)
নিলা ঔষুধ গুলা নিয়ে দ্রুত হেটে চলে গেলো।

পর্ব ১১

পেছন থেকে তার চলে যাওয়া দেখতে লাগলাম।
বেশ রাগি মেয়েটা। প্রথমে তো ভাবছিলাম শান্তশিষ্ট ভদ্র একটা মেয়ে। এখন তো দেখি পুরা উল্টা৷ রাগের ডিব্বা একটা।
আমি একটা রিক্সা নিয়ে নিলার পেছনে পেছনে যেতে লাগলাম।
মামাকে বললাম আস্তে চালাতে।
মামাও বুঝে ফেললো ব্যাপারটা। আস্তে আস্তে রিক্সা চালাতে লাগলো।
নিলা একটু পর পর পেছনে তাকিয়ে দেখছে।
আমি বললাম,
~ এইযে মিস রিক্সায় উঠেন। এভাবে আর কতক্ষণ হাটবেন? (আমি)
~ আপনার সাথে যাবোনা আমি। আপনি একাই যান। (নিলা)
~ সত্তিই যাবেনা? (আমি)
~ না। (নিলা)
~ এই মামা জোড়ে টানো তো একাই যাবো। (আমি)

হঠাৎ নিলা রিক্সায় উঠে বসলো।
মাঝখানে ব্যাগ দিয়ে রাখছে। দুইবার ব্যাগ সরানোর চেষ্টা করলাম কিন্তু সফল হতে পারিনি। প্রতিবারই হাত সরিয়ে দিছে।
বুঝলাম রাগ করছে। এখন রাগ কিভাবে ভাঙাবো?
দেখি হাত ধরে রাগ ভাঙে কিনা।
নিলার হাত ধরতেই ঝটকা মারলো।
~ এরকম কেনো করতেছো? (আমি)
~ তো কিরকম করবো? (নিলা)
~ এই সামান্য বিষয় নিয়ে এই রিয়েক্ট? ওকে। (আমি)
~ মামা রিক্সা থামাও। (আমি)

রিক্সা থেকে নেমে ভাড়াটা দিয়ে বললাম,
~ উনি যেখানে যেতে চায় সেখানে নামিয়ে দিয়ো।
বলেই সামনের গলি দিয়ে হাটতে লাগলাম।
সন্ধা হয়ে গেছে বাসায় আসতে আসতে।
বাসায় এসে ফোনটা অফ করলাম। রাগ হইতেছে প্রচুর।
সামান্য বিষয় নিয়ে কেউ এতো রিয়েক্ট করে?
যাই হোক দুইদিন আর ফোন অন করবোনা।
সারারাত ফোন বন্ধ করে রাখলাম,
পরের দিন ঘুম থেকে উঠে ফোন অন করে দেখি অনেকগুলা মিসড কল।
নিলা কল দিছিলো এর মধ্যে আবার নিলিমার কল ও আছে দেখতেছি।

নিলিমার নাম্বারে কল ব্যাক করলাম,
~ হ্যালো। (নিলিমা)
~ হ্যা কল দিছিলা? (আমি)
~ হুমমম
~ কেনো?
~ এমনি একটা কথা বলার ছিলো। (নিলিমা)
~ কি কথা বলো। (আমি)
~ আসলে আমি চাইনা তুমি নিলাকে বিয়ে করো। (নিলিমা)
~ কেনো? (আমি)

~ জানিনা আমি মেনে নিতে পারছিনা তোমাদের তুমি প্লিজ বিয়েটা করবানা। (নিলিমা)
~ তুমিও তো আমার ভাইকে বিয়ে করতেছো আমি কি কিছু বলছি? দেখো সবকিছু ফাইনাল আর আমিও নিলাকে ভালোবাসি আর ওকেই বিয়ে করবো। (আমি)
~ কিন্তু সানভি আমি
~ তুমি আমার ভাবি। 😀(আমি)
~ সানভি মাফ করা যায়না আমাকে? (নিলিমা)
~ কিসের জন্য? (আমি)
~ তোমাকে কষ্ট দিছিলাম এজন্য। (নিলিমা)

~ ভাবি এইটা কোনো কথা বললেন? সেই কবে কি হইছে সেটা নিয়ে এখনো পড়ে আছেন? আমি ওইসব ভুলে গেছি অনেক আগেই। (আমি)
~ তুমি বিয়েটা কইরো না প্লিজ। ( নিলিমা)
~ ফোন রাখুন নিলা কল দিতেছে। (আমি)
কলটা কেটে দিলাম। আর নিলিমার নাম্বারটা ব্লকলিস্টে রেখে দিলাম। ও এরকম করলে হয়তো সত্তিই বিয়েটা করা হবেনা।
রিস্ক নিতে চাইনা কোনো।

নিলাকে কল দিলাম,
~ কি হইছে কল দিছিলা কেনো? (আমি)
~ ফোন বন্ধ ছিলো কেনো? (নিলা)
~ চার্জ ছিলোনা। (আমি)
~ মিথ্যা। (নিলা)

~ মিথ্যা কেনো বলবো? (আমি)
~ কারন রাগ করে আছেন তাই। (নিলা)
~ রাগ তো তুমি করে আছো আমি না। (আমি)
~ হ্যা আমি রাগ করছিলাম কিন্তু পরে আবার আপনি রাগ করছেন। (নিলা)
~ তো কল দিছো কেনো ওইটা বলো। (আমি)
~ ভালোবাসি তাই। (নিলা)

~ হুমম কালকে মামার সামনে রিক্সায় বুঝিয়ে দিছো কতটা ভালোবাসো। (আমি)
~ আরে তখন তো রেগে ছিলাম তাই। (নিলা)
~ ভালো করছো। আচ্ছা রাখি আমি পরে কথা হবে। (আমি)
~ নাহ এখন কথা বলবো। (নিলা)
~ ব্রাশ করবো। (আমি)
~ পরে আগে ভালোবাসি বলবেনন তারপর। (নিলা)
~ পারবোনা।

~ তার মানে আপনি আমাকে ভালোবাসেন না? (নিলা)
~ জানিনা। (আমি)
~ ঠিক আছে যান রাখেন কথা বলতে হবেনা বাই। (নিলা)
~ ভালোবাসি। (আমি)
~ কাকে? (নিলা)
~ আপনাকে। (আমি)
~ হুহ।

~ হু কি? (আমি)
~ আপনার মাথা। (নিলা)
~ শুনো আজকে রাতে তোমার বাসায় যাবো আমি। (আমি)
~ কেনো? (নিলা)
~ একটা কাজ আছে। (আমি)
~ কি কাজ? (নিলা)

~ যখন যাবো তখন দেখে নিয়ো। (আমি)
~ না এখন বলতে হবে। (নিলা)
~ আরে বলা যাবেনা এখন সারপ্রাইজ হিসেবে থাকুক। (আমি)
~ তো কখন আসবেন? (নিলা)
~ সবাই যখন ঘুমাবে তখন। (আমি)
~ কেনো সবাই ঘুমানোর পর কেনো? (নিলা)
~ বুঝোনা কেনো? (আমি)
~ না। কেনো বলেন। (নিলা)
~ সারাদিন আর কথা হবেনা যা হওয়ার রাতে।
বাই রাখলাম। (আমি)

ফোনটা কেটে দিয়ে অফ করে ফেললাম।

পর্ব ১১

পেছন থেকে তার চলে যাওয়া দেখতে লাগলাম।
বেশ রাগি মেয়েটা। প্রথমে তো ভাবছিলাম শান্তশিষ্ট ভদ্র একটা মেয়ে। এখন তো দেখি পুরা উল্টা৷ রাগের ডিব্বা একটা।
আমি একটা রিক্সা নিয়ে নিলার পেছনে পেছনে যেতে লাগলাম।
মামাকে বললাম আস্তে চালাতে।
মামাও বুঝে ফেললো ব্যাপারটা। আস্তে আস্তে রিক্সা চালাতে লাগলো।
নিলা একটু পর পর পেছনে তাকিয়ে দেখছে।
আমি বললাম,
~ এইযে মিস রিক্সায় উঠেন। এভাবে আর কতক্ষণ হাটবেন? (আমি)
~ আপনার সাথে যাবোনা আমি। আপনি একাই যান। (নিলা)
~ সত্তিই যাবেনা? (আমি)
~ না। (নিলা)
~ এই মামা জোড়ে টানো তো একাই যাবো। (আমি)

হঠাৎ নিলা রিক্সায় উঠে বসলো।
মাঝখানে ব্যাগ দিয়ে রাখছে। দুইবার ব্যাগ সরানোর চেষ্টা করলাম কিন্তু সফল হতে পারিনি। প্রতিবারই হাত সরিয়ে দিছে।
বুঝলাম রাগ করছে। এখন রাগ কিভাবে ভাঙাবো?
দেখি হাত ধরে রাগ ভাঙে কিনা।
নিলার হাত ধরতেই ঝটকা মারলো।
~ এরকম কেনো করতেছো? (আমি)
~ তো কিরকম করবো? (নিলা)
~ এই সামান্য বিষয় নিয়ে এই রিয়েক্ট? ওকে। (আমি)
~ মামা রিক্সা থামাও। (আমি)

রিক্সা থেকে নেমে ভাড়াটা দিয়ে বললাম,
~ উনি যেখানে যেতে চায় সেখানে নামিয়ে দিয়ো।
বলেই সামনের গলি দিয়ে হাটতে লাগলাম।
সন্ধা হয়ে গেছে বাসায় আসতে আসতে।
বাসায় এসে ফোনটা অফ করলাম। রাগ হইতেছে প্রচুর।
সামান্য বিষয় নিয়ে কেউ এতো রিয়েক্ট করে?
যাই হোক দুইদিন আর ফোন অন করবোনা।
সারারাত ফোন বন্ধ করে রাখলাম,
পরের দিন ঘুম থেকে উঠে ফোন অন করে দেখি অনেকগুলা মিসড কল।
নিলা কল দিছিলো এর মধ্যে আবার নিলিমার কল ও আছে দেখতেছি।

নিলিমার নাম্বারে কল ব্যাক করলাম,
~ হ্যালো। (নিলিমা)
~ হ্যা কল দিছিলা? (আমি)
~ হুমমম
~ কেনো?

~ এমনি একটা কথা বলার ছিলো। (নিলিমা)
~ কি কথা বলো। (আমি)
~ আসলে আমি চাইনা তুমি নিলাকে বিয়ে করো। (নিলিমা)
~ কেনো? (আমি)
~ জানিনা আমি মেনে নিতে পারছিনা তোমাদের তুমি প্লিজ বিয়েটা করবানা। (নিলিমা)
~ তুমিও তো আমার ভাইকে বিয়ে করতেছো আমি কি কিছু বলছি? দেখো সবকিছু ফাইনাল আর আমিও নিলাকে ভালোবাসি আর ওকেই বিয়ে করবো। (আমি)
~ কিন্তু সানভি আমি।
~ তুমি আমার ভাবি। (আমি)
~ সানভি মাফ করা যায়না আমাকে? (নিলিমা)
~ কিসের জন্য? (আমি)

~ তোমাকে কষ্ট দিছিলাম এজন্য। (নিলিমা)
~ ভাবি এইটা কোনো কথা বললেন? সেই কবে কি হইছে সেটা নিয়ে এখনো পড়ে আছেন? আমি ওইসব ভুলে গেছি অনেক আগেই। (আমি)
~ তুমি বিয়েটা কইরো না প্লিজ। ( নিলিমা)
~ ফোন রাখুন নিলা কল দিতেছে। (আমি)
কলটা কেটে দিলাম। আর নিলিমার নাম্বারটা ব্লকলিস্টে রেখে দিলাম। ও এরকম করলে হয়তো সত্তিই বিয়েটা করা হবেনা।
রিস্ক নিতে চাইনা কোনো।

নিলাকে কল দিলাম,
~ কি হইছে কল দিছিলা কেনো? (আমি)
~ ফোন বন্ধ ছিলো কেনো? (নিলা)
~ চার্জ ছিলোনা। (আমি)
~ মিথ্যা। (নিলা)

~ মিথ্যা কেনো বলবো? (আমি)
~ কারন রাগ করে আছেন তাই। (নিলা)
~ রাগ তো তুমি করে আছো আমি না। (আমি)
~ হ্যা আমি রাগ করছিলাম কিন্তু পরে আবার আপনি রাগ করছেন। (নিলা)
~ তো কল দিছো কেনো ওইটা বলো। (আমি)
~ ভালোবাসি তাই। (নিলা)
~ হুমম কালকে মামার সামনে রিক্সায় বুঝিয়ে দিছো কতটা ভালোবাসো। (আমি)
~ আরে তখন তো রেগে ছিলাম তাই। (নিলা)
~ ভালো করছো। আচ্ছা রাখি আমি পরে কথা হবে। (আমি)
~ নাহ এখন কথা বলবো। (নিলা)
~ ব্রাশ করবো। (আমি)

~ পরে আগে ভালোবাসি বলবেনন তারপর। (নিলা)
~ পারবোনা।
~ তার মানে আপনি আমাকে ভালোবাসেন না? (নিলা)
~ জানিনা। (আমি)
~ ঠিক আছে যান রাখেন কথা বলতে হবেনা বাই। (নিলা)
~ ভালোবাসি। (আমি)
~ কাকে? (নিলা)
~ আপনাকে। (আমি)
~ হুহ।

~ হু কি? (আমি)
~ আপনার মাথা। (নিলা)
~ শুনো আজকে রাতে তোমার বাসায় যাবো আমি। (আমি)
~ কেনো? (নিলা)
~ একটা কাজ আছে। (আমি)
~ কি কাজ? (নিলা)
~ যখন যাবো তখন দেখে নিয়ো। (আমি)
~ না এখন বলতে হবে। (নিলা)
~ আরে বলা যাবেনা এখন সারপ্রাইজ হিসেবে থাকুক। (আমি)
~ তো কখন আসবেন? (নিলা)
~ সবাই যখন ঘুমাবে তখন। (আমি)
~ কেনো সবাই ঘুমানোর পর কেনো? (নিলা)
~ বুঝোনা কেনো? (আমি)
~ না। কেনো বলেন। (নিলা)
~ সারাদিন আর কথা হবেনা যা হওয়ার রাতে।
বাই রাখলাম। (আমি)

ফোনটা কেটে দিয়ে অফ করে ফেললাম।
একটু ভয়ে ভয়ে থাকুক দেখুক কেমন লাগে।
বাকিটা রাতে হবে।

পর্ব ১২

সারাদিন ফোন বন্ধ করে রাখলাম। রাখি একটু চিন্তায়।
তারপর হুট করে সারপ্রাইজটা দিয়ে দিবো।
সন্ধা হতেই সব অ্যারেন্জমেন্ট করে ফেললাম।
তারপর আস্তে আস্তে পা বাড়ালাম নিলার বাসার দিকে।
ওর বাসার সবাই জানে যে এসব আমি করছি। ওরাও হেল্প করছে শুধু নিলা জানেনা।
আমি নিলার বাসায় গিয়ে চুপ করে ওর রুমের ভিতর ঢুকে পড়লাম।
গিয়ে লুকিয়ে পড়লাম ওর খাটের নিচে।
কি করবো আর কোনো জায়গা নাই লুকানোর মতো।
আটটা বেজে গেছে নিলা আসেনি এখনো।
কিছুক্ষন পর নিলা আসলো।
এসে বিছানায় বসলো।

আমি চুপচাপ বসে আছি। নড়াচড়া করলাম না।
নিলা বারবার জানালার দিকে যাচ্ছে আবার বিছানায় আসছে।
বিছানার নিচে এতো মশা
কামড়ে সব লাল বানায় দিলো তারপরও দাত চেপে বসে আছি।
ওখানে কতক্ষন ছিলাম মনে নাই হঠাৎ ঘুমিয়ে গেলাম।

ঘুম ভাঙতেই দেখি লাইট অফ। ফোনেরর দিকে তাকিয়ে দেখি ১১৪৭ বাজে।
আর নিলার কল আসছিলো অনেকগুলা।
ভাগ্যিস ফোন সাইলেন্ট করা ছিলো নইলে ধরা খেয়ে যেতাম।
আস্তে আস্তে খাটের নিচ থেকে বের হয়ে আসলাম।
ডিম লাইটের আলোয় মেয়েটা ঘুমাচ্ছে।
আমি লাইটটা অফ করে দিলাম।

জানালার পর্দাটা সরিয়ে দিতেই চাঁদের আলো এসে পড়লো নিলার মুখের ওপর।
কেমন যেনো নিল সাদা একটা আবরন। অদ্ভুত সুন্দর লাগছে ওকে। আমি ওর পাশে বসে এমন মায়াভরা একটা মুখ দেখতে পারবো ভাবিনি কখনো। আমার জন্য এটা উপড়ি পাওয়া।
ফোনের দিকে আবার তাকালাম ১১৫৬ বাজে।
নাহ আর দেরি করা উচিত হবেনা।
নিলা গভির ঘুমে অাছে।
আরো একটু সতর্কতার জন্য আরেকটু চেক করে নিলাম।
না সত্তিই ঘুমিয়ে গেছে।

নিলাকে কোলে তুলে নিলাম।
আস্তে আস্তে মেয়েটা নড়ে উঠলো।
এতো কম ওজন হবে ভাবিনি। খুব সহজেই তুলে ফেললাম।
ভালোও হইছে বিয়ের পর যখন কোলে নিবো তখন আর প্রবলেম হবেনা।
নিলাকে নিয়ে ছাদে উঠলাম।
নিলিমা বাদে সেখানে সবাই আছে। নিলাকে নিয়ে এই অবস্থায় গিয়ে বেশ লজ্জার মধ্যে পড়ে গেলাম।
আমি ভাবছিলাম এখনো কেউ আসেনি কিন্তু এখানে তো সবাই আছে।
ধুরর কি যে করিনা আমি।

~ আসলে ও ঘুমিয়ে আছে তো তাই। (আমি)
~ ঠিক আছে সমস্যা নেই। (মুচকি হেসে বললো নিলার মা)
১২০১ বাজতেই সবাই চিৎকার করে উঠলো,
Happy Birthday Princes Nila
মেয়েটা ভয় পেয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে আছে। আমি কি করবো বুঝতেছিনা। অবস্থা স্বাভাবিক হতেই নিলা আমাকে ছেড়ে দিলো তারপর কেক কাটলো।
~ ভাবিকে দেখছিনা যে? (আমি)
~ ওর মাথা ব্যাথা করতেছে তাই ঘুমিয়ে গেছে ওকে আর ডাকিনি। (নিলার আম্মু)
~ ওহ।

কিছুক্ষন পর সবাই চলে গেলো শুধু আমি আর নিলা আছি।
নিলা দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরলো। তারপর মারতে লাগলো আমাকে,
~ একি মারছো কেনো? (আমি)
~ তো কি করবো? আপনি অনেক পচা। (নিলা)
~ কেনো আমি আবার কি করলাম? (আমি)
~ জানেন কতটা টেনশনে ছিলাম আর আব্বুর সামনে এসব কি? (নিলা)
~ কোনসব? (আমি)
~ ওইযে কোলে করে আনলেন কেনো? (নিলা)

~ তুমি কিভাবে জানলা? ওয়েট তুমি কি জেগে ছিলা? (আমি)
~ হুমম জেগে ছিলাম যখন কোলে তুললেন তখন ঘুম ভেঙে গেছিলো। (নিলা)
~ তার মানে তুমিও খেলছো। (আমি)
~ তো আপনি এতোসব করলেন আমি কি শুধু চুপ করে শুয়ে থাকতে পারবোনা? আর আমার তো ভালোই লাগতেছিলো। (নিলা)
~ মানে কি? দাড়াও দেখাচ্ছি মজা। (আমি)
আলতো করে নিলার হাতটা ধরলাম।
নিলা কেমন শিউরে উঠলো।

জোরে একটা টান দিতেই নিলা আমার কাছে চলে আসলো।
অনেকটা কাছে। নিলাকে কোলে তুলে নিতেই বুঝলাম মেয়েটা কাপতেছে।
চাদের আলোয় আবার সেই অসম্ভব সুন্দর মেয়েটাকে দেখছি আমি।
হঠাৎ ছাদে কারো প্রবেশে নিলাকে নামিয়ে দিলামম আমি।
তাকিয়ে দেখি নিলিমা।
ইসসস ছেড়ে দিয়ে কি ভুলটা করলাম আরেকটু দেখলে ও ভালো হতো। বেশ জ্বলতো।

~ কি হচ্ছে এখানে এসব? (নিলিমা)
~ আপু কিছুনা
~ চুপ। তুই রুমে যা।
~ কিন্তু
~ যেতে বলছি যা।
একটু ধমকের সুরে বললো নিলিমা।
আবার কি গন্ডগোল করবে কে জানে।
নিলা মাথা নিচু করে চলে গেলো।
~ সানভি কি হচ্ছে এসব? (নিলিমা)
~ কি হবে? একটু প্রেম করছিলাম আরকি। (আমি)
~ আমি বলছিলাম বিয়েটা না করতে। আর তুমি কি করছো? (নিলিমা)
~ দেখো বিয়ে করা না করাটা আমার পার্সোনাল ব্যাপার। এখন তোমার বোন ও যদি তুমি ইচ্ছে করো বিয়েটা ভেঙে দিতেই পারো তবে আমি তোমাকে বিয়ে করবোনা। নিলাকে ভালোবেসে ফেলেছি আমি। (আমি)
~ সানভি মনে পড়ে কি? এমন একটা রাত আমাদের কাটানোর কথা ছিলো। তুমি বলেছিলে কোনো এক বার্থডে এভাবে উইস করবে। ভুলে গেছো সব? (নিলিমা)
~ ভুলিনা বলেই আমার ইচ্ছাটা পুরন করে নিলাম শুধু মানুষটা ভিন্ন। আর এসব কথা ব্রেকআপেরর সময় মনে ছিলোনা?
ব্রেকআপের পরতো একদিনও জিজ্ঞেস করোনি কেমন আছি আমি? তখন তো একবারো এসব কথা মনে হয়নাই তাহলে এখন কেনো? তখন অগোছালো ছিলাম তাই? (আমি)

নিলিমা চাপচাপ দাড়িয়ে আছে। বুঝলাম কাদতেছে মেয়েটা।
আমিও কিছু বলবো না আর। যা সত্তি সেটাই বলেছি কেদে কি লাভ? বুঝতে পারলাম না তারও তো বিয়ে হচ্ছে। আমার জ্বলেনা তাহলে তার কেনো জ্বলে?
বুঝিনা এমন কেনো মেয়েরা?

পর্ব ১৩

নিলিমার ওপর রাগ আর একটু বিরক্ত লাগে আমার। ছাদের কোনে গিয়ে সিগারেট ধরালাম। নিলিমার এতেও জ্বলে,
প্রশ্ন করে উঠে,
~ সিগারেট কেনো খাচ্ছো? (নিলিমা)

~ এমনি। এর কারনও বলতে হবে নাকি? (আমি)
~ না। এমনি জিজ্ঞেস করলাম। (নিলিমা)
~ দেখো নিলিমা একটা কথা বলি, আমিও বিয়ে করতেছি আর তুমিও করতেছো তাহলে সমস্যাটা কোথায়? কই আমারতো সমস্যা হচ্ছেনা। (আমি)
~ জানিনা কিন্তু তুমি অন্যকারো হয়ে যাচ্ছো এটা আমি মেনে নিতে পারতেছিনা। (নিলিমা)
~ হাহাহা। তুমিতো বারবার অন্যকারো হয়ে গেছো, আমি কি বলেছি কিছু? (আমি)
~ সানভি পুরনো কথা কেনো টানছো? (নিলিমা)

~ কারন তুমি মনে করিয়ে দিচ্ছো তাই। তোমার প্রত্যেকটা কথা বিষের মতো লাগে আমার। যাই বলো সেই পুরনো কথাই মনে পড়ে যায়। তুমি প্লিজ আর আমাকে কিছু বইলো না। তুমিও বিয়ে করো আমিও করি। পুরনো সব শেষ এখানেই, আগে যা হইছে সব ভুলে যাও। নতুন করে শুরু করো। (আমি)
~ সানভি তুমি এসব কী বলছো? (নিলিমা)
~ যা সত্তি তাই বলছি। আমি আসি এখন। (আমি)

সানভি ছাদ থেকে নেমে আসতেই নিলিমা কেদে উঠে।
নিজের ভুলের জন্যই হারিয়ে ফেলছে আজ সানভিকে।
আজ তার চোখের সামনেই অন্য মেয়ের সাথে প্রেম করে বেড়াচ্ছে আর বিয়েটাও তাকেই করবে। সবচেয়ে বড় কথা হলো মেয়েটা তারই বোন। মেনে নেওয়া খুব কঠিন।

আমিও এটাই চাই, তার জ্বলুক। জ্বলতে জ্বলতে পুরে যাক তার হ্রদয় যেমনটে আমার পুড়েছে।
নিচে নামতেই নিলা আমার হাত ধরে ফেললো,
~ আপু কি বললো? (নিলা)

~ বললো যে রোমান্স একটু কম করতে। (আমি)
~ ছি কি বলেন এসব? (নিলা)
~ সত্তিই ভাবি আমার বেশ ভালো। (আমি)
~ যান এবার গিয়ে শুয়ে পড়ুন। (নিলা)
~ কোথায়? তোমার রুমে? (আমি)
~ না সামনের ঘরে। (নিলা)
~ তোমার সাথে থাকিনা। (আমি)
~ বিয়ের পর থাইকেন এখন যান। (নিলা)

নিলা কিছুটা ধাক্কা দিয়ে রুমে পাঠিয়ে দিলো আমাকে।
দরজা বন্ধ করার আগে বললাম,
~ নিলা একটা পাপ্পি দিয়ে যাও। (আমি)
~ হবেনা। (নিলা)
~ একটা দিবা শুধু। (আমি)
~ আমি পারিনা। (নিলা)
~ তাহলে আমি করবো? (আমি)
~ না করতেছি। (নিলা)

নিলা আমার ঠোটের ওপর হাত রেখে একটা কিস করে দৌড়ে পালালো।
কি দুষ্ট মেয়েরে বাবা। একটা কিস করতে বলছি আর কি কিস করলো। এসব বুদ্ধি হূট করে কিভাবে আসে বুঝিনা।
মেয়েটার সাথে যতই সময় কাটাচ্ছি ততই তার মায়ায় জড়িয়ে যাচ্ছি। তার কাজগুলো মনে রাখার মতোই। আমিও বা কম কিসে? একসাথে দুইটা মেয়েকে হ্যান্ডেল করতে হচ্ছে।

আবার নিলিমার কথা উঠে আসতেই বুকের ভিতর চিনচিনে ব্যাথাটা একটু মোচড় দিলো। মনে পড়ে গেলো সেই সৃতি গুলা যেগুলা নিলার সাথে কখনো হবেনা। এমন কিছু জিনিস আছে যা নিলা কখনো করতে পারবেনা। প্রত্যেকটা মানুষের আলাদা আলাদা বিশেষত্য থাকে যা অন্য মানুষের থাকেনা।
তেমনি নিলিমার অনেক জিনিস ছিলো যা নিলার মধ্যে নেই।

এসব না ভেবে ঘুমিয়ে গেলাম।
ভোর হতেই বের হয়ে গেলাম। বিয়ের আগে শ্বশুড় বাড়িতে থাকার কথা মানুষ শুনলে খারাপ বলবে তাই।
৮ টা বাজতেই নিলা কল দিলো,
~ কই আপনি এখন? (নিলা)
~ বাসায় কেনো? (আমি)
~ চলে আসছেন কেনো? (নিলা)

~ আরে বিয়ের আগে শ্বশুড় বাড়ি থাকলে মানুষ কি ভাববে? তাই চলে আসলাম। (আমি)
~ আমি খিচুরি রান্না করতে চাইছিলাম আপনার জন্য। আর আপনি চলে আসলেন? ( কাদো কাদো কন্ঠে বললো নিলা)
~ এক কাজ করো তুমি রান্না করে নিয়ে আসো। আজকে তো বের হতেই হবে। শপিং করতে হবেনা? আর দুদিন পর বিয়ে। (আমি)
~ আচ্ছা ঠিক আছে। রাখি এখন তাহলে। (নিলা)
~ আচ্ছা।

মেয়ে মানুষ এতো সহজে কাদে কিভাবে?
এজন্যই হয়তো ছলনা করতে পারে। চোখের জলই তাদের অস্র। খুব সহজেই বিশ্বাস করানোর জন্য এই চোখের পানিই যথেষ্ট আর কিছু লাগেনা।

যাই হোক। ফ্রেস হয়ে এসে খাওয়া দাওয়া করলাম।
বাড়িতে ব্যাস্ততা প্রচুর। বাড়ি সাজানো হচ্ছে ডেকোরেশন এর লোক এসেছে আজকে। হই হুল্লোড় চিৎকার চেঁচামেচিতে পুরো বাড়ি মাথায় উঠেছে।
খাওয়া দাওয়া করে গাড়ি নিয়ে বের হয়ে পড়ে সানভি আর রাফি মানে সানভির বড় ভাই।

সব শপিং আজকেই শেষ করতে হবে। এরপর আর সময় কই?
দুজনে বের হয়ে পড়লাম। বাসার সামনে থেকে নিলিমা আর নিলাকেও নিয়ে নিলাম।
সামনে ভাই আর ভাবি আর পেছনে আমি আর নিলা।
নিলা খিচুরির টিফিন বের করতেই মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি চাপলো।
এই সুযোগে নিলিমাকে আরেকটু জ্বালানো যাক।
নিলাকে বললাম খাইয়ে দিতে।

ভাইয়া গাড়ি চালানোতে ব্যাস্ত। আর ওদিকে নিলিমা লুকিং গ্লাসে আমাদের দেখছে।
নিলা খাইয়ে দিতেই ওর হাতে আলতো করে কামড় দিলাম।
নিলা একটু হাসলো তারপর আবারর খাইয়ে দিতে লাগলো। আমি আবার কামড় দিলাম।
নিলা লজ্জা পাচ্ছে আর আমি মজা নিতেছি। ওদিকে নিলিমা রাগে ফুলছে শুধু। রাগলে নিলিমাকে অনেক ভালো লাগে তবে আমার হাসি পায় এখন। সেও তো পারে ভাইয়ার জন্য কিছু রান্না করে আনতে।

আমি খাওয়া শেষ করে নিলার আঙুল চুষতে লাগলাম।
নিলিমার দিকে তাকিয়ে দেখি চোখ দিয়ে জল বেরুবে বেরুবে অবস্থা। নাহ আর জ্বালানো যাবেনা। এরপর সমস্যা হয়ে যাবে।

অনেক কিছু কিনলাম। পকেট প্রায় ফাকা হয়ে গেলো।
মেয়েদের এতো জিনিস যে লাগে! সকালে আসছি অথচ দুজনের শপিং এখনো শেষ হয়নি। সন্ধে হয়ে আসলো প্রায়।
বিরক্ত লাগেনা এদের? সারাদিন ধরে শুধু ঘুরাচ্ছে। ইচ্ছে হচ্ছে পুরো মলটাই কিনে নিবে আজকে।
অবশেষে সন্ধে ৮ টায় তাদের শপিং শেষ হলো।
দুজনকে বাসার সামনে এনে নামিয়ে দিলাম।
যাওয়ার আগে নিলা ডেকে একটা পাপ্পি দিয়ে বিদায় জানালো।
গতকালকেরটা আজকে দিয়ে দিলো হিহিহি।
বেচারা ভাইয়াকে কেও কিছু দিলোনা।

পর্ব ১৪

ভাইয়া আর আমি বাসায় চলে আসলাম।
বাসার কাজ অনেকটা হয়ে গেছে মাঝখানে বাকি কালকের দিন। তারপরই বিয়ে। রাতে খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।

দেখতে দেখতে মাঝখানের দিনটাও ব্যাস্ততার মাঝখানেই কেটে গেলো।
আজ বিয়ে অথচ আমার মনেই হচ্ছেনা আজকে আমার বিয়ে।
ওদিকে সারা বাড়িতে হই হুল্লোড়। অথৈ একটু পর পর এসে জ্বালাচ্ছে অথচ আমার হঠাৎ মনে হচ্ছে জিবনের একটা পার্ট আজকে হারিয়ে ফেলবো। আজকে তো খুশি থাকার কথা, তবে আমার কেনো জানি কষ্ট হচ্ছে।
স্বাভাবিক কি? নাকি অস্বাভাবিক কিছু?
বুঝার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছি। নিলিমার কথা খুব মনে পড়ছে। সত্তিই খুব ভালোবাসতাম মেয়েটাকে হয়তো এখনো বাসি তাইতো কষ্ট হচ্ছে। তবে ওর চাইতে নিলাকে বেশি ভালোবেসে ফেলেছি।
যাই হোক যা হওয়ার হয়ে গেছে এসব ভেবে কাজ নেই।

সন্ধে হয়ে আসতেই রওনা দিলাম আধা ঘন্টার রাস্তা মাত্র।
গাড়ি নিয়ে গেলে আরো কম সময় লাগে।
পৌছে গেলাম খুব তারাতারি। বাড়িটা সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। হয়তো মেয়েটাও আজ সুন্দর করেই সেজেছে। আমার জন্যই সেজেছে। ভাবতেই অবাক লাগছে বিয়ে করতে চলে আসলাম। ভাইয়া আর আমি একসাথে বিয়ে করতে আসছি সবার কাছে কেমন ব্যাপারটা জানিনা তবে আমার লজ্জা লাগছে।

খাওয়া দাওয়া শেষে বিয়ের কাজ শুরু হলো,
সামনে বসে আছে নিলা আর নিলিমা। আর পাশাপাশি আমি আর ভাইয়া। নিলিমার দিকে তাকিয়ে দেখলাম চোখে জল আর নিলার চোখে মুখে লজ্জা আর হালকা হাসির ছাপ।
দুজনের মনে দুরকম কিছু চলছে বুঝতে পারি।
নিলার দিকে তাকিয়ে আরো একবার মুগ্ধ হলাম।
চোখ সরাতে ইচ্ছে করছেনা তবে কি করবো? এতো মানুষের মাঝে এভাবে তাকিয়ে থাকলে সবাই কি ভাববে?

চোখ নামিয়ে নিলাম। নিলিমার দিকে তাকিয়ে দেখি কেমন মায়াভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।
ইচ্ছে হচ্ছিলো জড়িয়ে ধরে মেয়েটাকে বলি আমিও তোমাকে চাই। কিন্তু জেদটা তখনই নাড়া দিয়ে উঠল আবারো।

আর নিলাকে ছাড়াও আমার পক্ষে সম্ভব না।
এরকম হাজারো চিন্তা ভাবনা ঘুরতে লাগলো মাথায়।
বিয়ের কাজও সম্পূর্ণ হলো। কবুল বলার সময় নিলিমার দিকে তাকিয়ে দেখলাম কাদতেছে। সবাই ভাবতেছে একটা কারনে কাদছে কিন্তু আমিতো জানি কান্নার আরেকটা কারনও রয়েছে। ক্ষতটা আমার বুকেও আঘাত করছে।
সে অন্য কারো হয়ে যাবে যতই জেদ হোক ভালোতো বাসতাম তাকে কষ্ট আমারো হচ্ছে তবে নিলার দিকে তাকিয়ে সব ভুলে যাচ্ছি বারবার।

এরপর কি হবে? বিয়েতো হয়েই গেলো।
বউ নিয়ে বাসায় ফিরলাম। বউকে কোলে করে রুমে নিয়ে যেতে হবে এটাই নাকি নিয়ম। আগে কখনো বিয়ে করিনিতো তাই জানিনা। হিহিহি!
নিলাকে কোলে করে রুমের এসে নামিয়ে দিলাম। সবাই রুমে ঢুকলো আমি বাইরে বেরিয়ে আসলাম লজ্জা লাগছিলো অনেক। নিলার কেমন লাগছে এখন? এতগুলা অচেনা মানুষ ঘিরে আছে তাকে আমার থাকাটা জরুরি ছিলো।

এদিকে আমারতো জ্বলছে একটু একটু নিলিমার কথা ভেবে।
ওকে নিয়ে তো কত স্বপ্ন দেখেছিলাম। বিয়েটা তো ওকেই করতে চেয়েছিলাম কিন্তু তার একটা ভুল সিদ্ধান্ত সবকিছু বদলে দিলো। আজ সে আমার ভাবি। চাইলেও আর সেই নাম নিলিমা বলে ডাকতে পারবোনা। ডাকতে হবে ভাবি বলে।

তুমিতো ভাবছো আমি নিরব। আমার নিরবতা টা দেখলে কিন্তু ভেতরের অস্থিরতা টা কখনো দেখলে না তুমি। বুঝলেও না কখনো আর কখনো বুঝার সুযোগটাও পাবেনা। আমার অস্থিরতা বোঝার একজন পেয়ে গেছি, যেমনটা তুমিও পেয়েছো। ভাইয়া তোমাকে অনেক ভালোবাসবে অনেক।
ভালো থেকো তুমি।

ভাবতে ভাবতে চোখের কোনে জল এসে গেছিলো।
আসলে যতই ভুলে গিয়ে ভালো থাকার অভিনয় করিনা কেনো ভালোবাসার মানুষকে কখনো ভুলে গিয়ে ভালো থাকা যায়না। যেটা হয় শুধুই অভিনয় আর এই অভিনয়ের ভালো থাকার ওপরেই অনেক মানুষ বেচে আছে। অনেক সত্য চাপা পড়ে যাচ্ছে এই অভিনয়ের ভালো থাকার ওপর।
আমাদের সত্যিটাও চাপা পড়ে গেছে। কেউ জানেনা আমি নিলিমাকে ভালোবাসতাম। সবাই বের হয়ে যেতেই বন্ধুগুলা আসলো।
এসেই রুমে ঢুকিয়ে দিলো।

১২ টা বেজে গেছে প্রায়। দরজা বন্ধ করে গুটি গুটি পায়ে আগানোর চেষ্টা করছি কিন্তু আজ হঠাৎ ভয় লাগছে মেয়েটাকে।
কি হবে এসব ভেবে ঘাম ছুটে গেছে আমার।
এতোদিন তো খুব কাছে যাওয়ার চেষ্টা করতাম, আজ কাছে পেয়েও ভয় লাগছে কেনো?
সব ভয় কাটিয়ে মেয়েটার পাশে বসলাম।
মেয়েটার গালে হাত রেখে বললাম,
~ ওযু করে এসো, নামাজ পড়বো দুজনে।

মেয়েটা চুপচাপ উঠে গেলো। আমার উদ্দেশ্য দুইটা।
প্রথমত নামাজ পড়বো দুজনে আর দ্বিতীয়ত মেয়েটার এই মেকআপে ভরা মুখটা আমি দেখবোনা আর। এমনিতেই অনেক ভালো লাগে ওকে।
মেকআপ করে আসল সৌন্দর্যটা ঢাকা পড়া মেয়েটাকে আমি দেখতে চাইনা।

নিলা আসতেই আমিও ওযু করে আসলাম।
জায়নামাজ টা নিচে রেখে দুজনে পাশাপাশি দাড়ালাম তারপর নামাজটা আদায় করে নিলাম।
মনটা ফ্রেস হয়ে গেলো। সব দুঃখ কষ্ট সব অতিত ভুলে নামাজ দিয়ে দুজনের নতুন জিবন শুরু করলাম।

নিলার মাথায় হাত রাখতেuই লজ্জায় লাল হয়ে গেলো।

পর্ব ১৫

নিলার মাথায় হাত রাখতেই লজ্জায় লাল হয়ে গেলো।
আমি নিলার হাত ধরে বললাম,
~ আজকে কি পাবো ওইটা? (আমি)
~ কোনটা? (নিলা)
~ যেটার জন্য এতোদিন অপেক্ষা করে ছিলাম? (আমি)
~ আপনার ইচ্ছা। (নিলা)
~ তুমি এমন করলে কিভাবে হবে? (আমি)
~ আমি আবার কি করলাম? (নিলা)
~ লজ্জা কেনো পাচ্ছো? এতোদিন তো খুব মজা নিলা আর আজকে লজ্জা পাচ্ছো? (আমি)
~ কি বলেন এগুলা? (নিলা)
~ দাড়াও দেখাইতেছি কী বলি।

বলেই নিলাকে কোলে তুলে নিলাম। নিলা লজ্জায় চোখ বন্ধ করে আছে। ওর চোখের পাতায় একটা কিস করলাম।
নিলা শক্ত করে অামার গলাটা চেপে ধরলো।
~ ছাদে যাবা? (আমি)
~ হুমমম।
~ আচ্ছা চলো।

নিলাকে কোলে নিয়েই ছাদে উঠলাম।
কিন্তু একি? ছাদে তো আরো দুজন চলে এসেছে আগে থেকেই।
ভাইয়ার বুকে মাথা রেখে নিলিমা হাসছে আর কথা বলছে।
এই দৃশ্য দেখে বুকের ভিতর চিনচিনে ব্যাথাটা আবার নাড়া দিতে লাগলো। আমার কাছেও তো নিলা আছে তবে তার জন্য জেলাস কেনো লাগছে?

আমাকে নিজেকে সামলাতে হবে। আরো শক্ত করতে হবে নিজেকে।
নিলাকে নিয়ে ছাদে উঠতেই ভাইয়া পেছনে তাকালো,
~ কিরে তোরা এখানে? (ভাইয়া)
~ আমিও তো সেটাই বলি তুমি এখানে? (আমি)
~ তোর ভাবিকে নিয়ে চাদ দেখতে এলাম। (ভাইয়া)
~ আমিও আমার বউকে নিয়ে এলাম। (আমি)
~ হাহাহা আয় বস। (ভাইয়া)
~ না আমি ওদিকে বসি তুমি প্রেম করো। (আমি)

আমাদের কথা শুনে নিলিমা পেছনে তাকালো।
নিলা আমারর কোলে আর নিলিমা তাকিয়ে আছে আমার মুখের দিকে।
নিলাকে নিয়ে ছাদের ও পাশটায় গেলাম।
নিলাকে নামিয়ে দিয়ে ওর কানে কানে বললাম,
~ আমাদের ছাদে বাসর করার প্লানটা গেলো। (আমি)
~ তো রুমে চলুন। এখানে ভাইয়া আপু আছে ওদের সামনে প্রেম করা যাবেনা। (নিলা)
~ কথা খারাপ বলোনি। দেখি ভাইয়াকে পাঠাতে পারি কি না? (আমি)
~ দরকার নেই আপনি রুমে চলুন। আজকে আপনার পাওয়ার দেখবো। খুব তো বলতেন। (নিলা)
~ কি বলতাম? (আমি)
~ কিছুনা চলুন তো। (নিলা)

নিলা একপ্রকার টেনে হিচরে নিয়ে আসলো আমাকে রুমে।
নিলিমা এক সেকেন্ডের জন্যও নজর সরায়নি আমার কাছ থেকে।
মেয়েটার কি জ্বলছে?
হয়তো।

নিলা রুমে এসে দরজা বন্ধ করে দিলো।
তারপর মাথার চুলগুলা ছেড়ে দিলো। আমার পছন্দের জিনিস তার এলোমেলো চুল।
লোভ সামলাতে পারলাম না। চুলে নাম ডুবিয়ে দিলাম।
মাতাল করা গন্ধে পাগল হয়ে গেলাম।
কেমন একটা নেশায় আছি মনে হচ্ছে।

নিলার ঘারে কিস করতেই নিলা আমার পিঠ খামচে ধরলো।
নিলাকে ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে দিলাম
তারপর তার কাছে চলে গেলাম। নিশ্বাসের শব্দটা যেনো আমারই এমন মনে হচ্ছে। তার হার্টবিটের শব্দটা যেনো আমার হ্রদপিন্ড থেকে বের হচ্ছে এরকম মনে হচ্ছে।
বাকিটা ইতিহাস বইয়ের ৭২৪ নং পৃষ্টা থেকে পড়ে নিয়েন।

পরের দিন সকাল হতেই নিলাকে পাশে দেখলাম না।
প্রতিটা মেয়ের মতো সে ও তার বাসর শেষে সকাল বেলা গোসল করতে গেছে।
মুচকি হেসে ঘুম থেকে উঠলাম।
এরকম মুচকি হেসে ঘুম থেকে উঠা মানে আজকের সারাদিন ভালো কাটবে।
হঠাৎ মাথায় একটা দুষ্টু বুদ্ধি চাপলো।
বাথরুমে নক করলাম।

নিলা বুঝতে পেরে দরজা খুলে দিলো।
ভিতরে ঢুকে যা দেখলাম তার জন্য প্রস্তুতই ছিলাম।
হিহিহি।
নিলাকে রাতে দেখা হয়নি ভালো ভাবে।
এখন দেখে নেইই ইচ্ছেমতো।

একসাথে গোসল করে বের হলাম।
নিলা একটা কিস করে চলে গেলো।
আমি জিজ্ঞেস করলাম কোথায় যাও?
সে বললো রান্নাঘরে।

বিয়ের প্রথম দিনই সে বাড়িটাতে আপন করে নিয়েছে এতেই অনেক কিছু।
পাচ মিনিট পর নিলা আবার চলে আসলো,
~ কি হলো চলে আসলে কেনো? (আমি)
~ আম্মু অনেক পচা। (নিলা)
~ কেনো আম্মু আবার কি করলো? (আমি)
~ বকা দিছে। বলে আমি রান্নাঘরে কেনো এসেছি। (নিলা)
~ হিহিহি আম্মু এমনই। যতদিন সুস্থ আছেন তোমাকে কাজ করতে দিবেনা কিন্তু তুমি সবসময় আম্মুর সাথেই থাকবে।
তার দেখাশোনা করবে। (আমি)
~ আচ্ছা করবো। (নিলা)

সকালের খাবার টেবিলে দেখলাম নিলিমা খুব চন্চল।
সেই ৪ বছর আগের মতো চন্চলতা আজ তার মধ্যে দেখতে পাচ্ছি যেমনটা দেখেছিলাম রিলেশন শুরু হওয়ার আগে।
হয়তো বিয়ের পর সব সামলে নিয়েছে। মেয়েরা অনেক কিছু সামলে নিতে পারে। সেও পেরেছে হয়তো।

খাওয়া ~ দাওয়া শেষ করার পর সবাই যার যার রুমে চলে গেলো।
অনেক মানুষ আসলো নতুন বউ দেখতে।
এটাই স্বাভাবিক। দুই বউকেই সবার পছন্দ হইছে।
মানুষ তো আর গুন খুজেনা এখন দেখে বাইরের সোন্দর্য। যা দুইটা মেয়ের মধ্যেই আছে।
নিলিমা একটু বেশি সুন্দর এটা সবসময়ই বলি আমি। তবে নিলাও কম না। চশমা পড়লে মেয়েটাকে অনেক কিউট লাগে।

সারাদিন ব্যাস্ততার মধ্যেই কাটলো।
নিলার বাসা থেকে লোক আসছে। তাদের দেখাশোনা নিলার দেখাশোনা সব তো আমাদেরই সামলাতে হলো।
সন্ধে হতেই ওদের বাড়িতে গেলাম।
গিয়ে দেখলাম।

পর্ব ১৬ (অন্তিম)

নিলাদের বাড়িতে গিয়ে দেখলাম তার সব কাজিনরা একসাথে গোল হয়ে বসে আড্ডা দিতেছে। আমাদের দেখে তারা এগিয়ে আসলো। গতকাল এতো ব্যাস্ততা গেছে যে কারোর সাথে পরিচয় ই হয়নি। আজকে হয়ে যাবে সমস্যা নেই। নিলা আমার হাত চেপে ধরে হাটতে লাগলো।
বিয়ের প্রথম দিনগুলির মতো যদি সবসময় হতো তাহলে হয়তো কারো জিবনে দুঃখ আসতোনা।

ঘরে ঢুকে শ্বাশুড়িকে সালাম করলাম। ভাইয়াও করলো।
তারপর যার যার মতো নিজেদের রুমে। নিজেদের রুম বলতে আমি নিলার রুমে আর ভাইয়া ভাবির রুমে।

মেয়েদের ঘরগুলা এতো গোছালো হয় কেনো?
তবে রুমটাতে একটা জিনিস বেশ অবাক করার মতো।
যা অন্য মেয়েদের রুমে থাকবেই, অথচ নিলার রুমে নেই।
বুঝতেই পারছেন কসমেটিকস এর কথা বলছি। খুব বেশি কিছু নেই। দুই একটা জিনিস মাত্র যেখানে অন্য মেয়েদের ঘরে গেলে মনে হয় এক বস্তায় আটবে না এরকম।
যাই হোক না থাকলে তো আমারই ভালো আমার টাকা বেচে যাবে।
আরেকটু সিওর হওয়ার জন্য নিলাকে প্রশ্ন করলাম,
~ নিলা তুমি কি কসমেটিকস ব্যাবহার করোনা নাকি? (আমি)
~ নাহ। ওসব জিনিস আমার ভালোলাগেনা। (নিলা)
~ কি বলো? তুমিতো পুরাই আলাদা। অন্যরা তো কসমেটিকস এর জন্য পাগল আর তোমার ঘরে কিছুই নেই সেরকম। (আমি)

~ কোনো এক জায়গায় পড়েছিলাম, তোমার যা আছে তাই নিয়ে সন্তূষ্ট থাকো। অন্যের মতো হতে চেওনা, তুমি নিজের মতো হও। সেজন্যই ওসব ব্যাবহার করিনা আল্লাহ যা দিয়েছেন তাতেই খুশি আমি। কৃত্রিম কিছু তৈরি করার ইচ্ছা নাই। (নিলা)
~ আলহামদুলিল্লাহ। বউ আমার বুদ্ধিমতি সাথে রুপবতীও। (আমি)
~ ফ্রেস হয়ে নিন। খাওয়ার জন্য ডাকছে। (নিলা)
~ আচ্ছা। (আমি)

ফ্রেস হয়ে এসে খাওয়ার জন্য গেলাম।
সবাই একসাথে বসে খাওয়া ~ দাওয়ার পর আমাদের ধরে নিয়ে গেলো ছাদে।
সব কলেজ পড়ুয়া ছেলে মেয়ে। কয়েকটা স্কুলেও পড়ে।
সকলের সাথে পরিচিত হলাম। তারপর শুরু হলো খেলা।
তারা ডেয়ার দিবে আর সেটা আমাদের করতে হবে।
কি একটা ঝামেলায় পড়লাম বলুন তো। এখন যদি ডেয়ার দেয় ছাদ থেকে লাফ দিতে হবে তাহলে কি হবে? সবে একদিন হলো বিয়ে করলাম।

কিন্তু এরকম কিছু হলোনা উল্টা নিলিমাকে জ্বালানোর মতো একটা ডেয়ার পেলাম।
আমার ডেয়ারটা হলো নিজের বউকে লিপ কিস করা।
শুনেই মনটা আনন্দে ভরে উঠলো,
আমি আর কি করবো নিলাকে কিস করার জন্য প্রস্তত হলাম যদিও সবার সামনে লজ্জা লাগছে তারপরও নিলিমাকে আরেকটু জ্বালানো যাবে সেটা ভেবেই আস্তে করে নিলিমার ঠোটের কাছে চলে গেলাম।

তারপর আলতো করে একটা চুমু খেলাম।
নিলিমা লজ্জা পেয়ে উঠে চলে গেলো।
আমিও উঠে আসলাম। তবে নিলিমা যে তাকিয়ে ছিলো সেটা বেশ ভালো করেই লক্ষ্য করেছি। মেয়েটাকে জ্বালাইতে এতো ভালোলাগে কেনো কে জানে?

যাই হোক রুমে এসে দেখলাম নিলা বিছানায় সুয়ে আছে।
আমি কাছে গিয়ে বললাম,
~ কি হলো? চলে আসলে যে? ( আমি)
~ তাহলে কি করবো? (নিলা)
~ সবাই অপেক্ষা করছে যে। (আমি)
~ আমি যাবোনা আর। ওইসব ছেলে মেয়েদের সামনে ছি ছি লজ্জা লাগছে আমার। (নিলা)
~ লজ্জা কেনো লাগছে? (আমি)
~ আপনি তখন কি করলেন? (নিলা)
~ কি করেছি? (আমি)
~ জানেন না কি করেছেন? (নিলা)
~ না তো কি করলাম? (আমি)
~ দাড়াও দেখাচ্ছি।

এবার নিলা আমাকে কিস করে বললো,
~ এটা করেছেন। যান এখন ওদের কাছে। (নিলা)
~ যাবোনা। (আমি)
~ তো কি করবেন? (নিলা)
~ বউয়ের সাথে থাকবো আবার কি করবো? (আমি)
~ খুব আসছে বউয়ের সাথে থাকবে। বউ নেই আপনার সিংগেল আপনি ঠিকাছে? (নিলা)
~ হুমম বিবাহিত সিংগেল। (আমি)

হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠতেই দেখলাম নিলিমা কল করেছে,
আমি কেটে দিলাম। আবার কল দিলো এবারও কেটে দিলাম।
পরেরবার ধরলাম,
~ হ্যালো?
~ ছাদে আসো এখনই তোমার সাথে কথা আছে আমার।
~ কেনো? কি কথা?
~ আসো বলতেছি।

~ নিলা আমি একটু আসতেছি ছাদ থেকে।
~ আচ্ছা
নিলিমার আবার আমার সাথে কি কথা থাকতে পারে?
দেখি ছাদে গিয়ে কি বলে। মেয়েটার ভালোই জ্বলছে।
হায়রে Ex তোরে জ্বালাইতে জ্বালাইতে আমার জিবনটা পুরা শেষ।

ছাদে গিয়ে দেখলাম সবাই হমচলর গেছে, ছাদের এক কোনে নিলিমা দাড়িয়ে আছে। আমি বেশ অবাক হলাম এতো তারাতারি সবাই চলে গেলো কেনো? নাকি তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে? কে জানে কোনটা তবে যাই হোকনা কেনো এসব নিলিমা করছে এটা সিওর।

আমি পেছনে গিয়ে দাড়ালাম নিলিমার তারপর বললাম,
~ ভাবি ডেকেছেন? (আমি)
~ সানভি আমি তোমার ভাবি না। (নিলিমা)
~ একদিন হলো বিয়ে হইছে আজকেই এসব কি বলেন? (আমি)
~ দেখো সানভি ফাইজলামি বাদ দাও, একটু সিরিয়াস হও। (নিলিমা)
~ ঠিক আছে বলুন কি বলবেন। (আমি)
~ আমাকে নিয়ে পালাতে পারবা? (নিলিমা)

নিলিমার এই কথাটায় বেশ অবাক হলাম। আজ বিয়ের পর আমার সাথে পালাতে চাচ্ছে কেনো? তার বর আছে। আর সে যদি এই কথাটা আমাকে আর ১০ দিন আগেও বলতো আমি মেনে নিতাম হয়তো সে আমাকে বুঝিয়ে বললে আমি বুঝেও যেতাম তবে আজ বিয়ের পর?
এসব কখনোই সম্ভব না তার আরো একটা কারন নিলা যাকে হ্রদয়ের বাকি জায়গাটুকু দিয়ে দিছি এখন নিলার এই প্রস্তাব কখনোই মেনে নেওয়া সম্ভব না।

~ কি হলো চুপ করে আছো কেনো? আমার কথার উত্তর দাও। (নিলিমা)
~ দেখো নিলিমা তুমি যা বলছো তা কখনোই সম্ভব না এখন। তুমি এই কথাটা আমাকে ১০ দিন আগে বললেও আমি মেনে নিতাম। সত্তি সত্তি তোমার হাত ধরে পালিয়ে যেতাম, তখনো নিলাকে ভালোবাসিনি আমি। আর এখন? তোমার স্বামি আমার ভাই, তোমার বোন আমার বউ। তুমি জানো? আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। নিলাকেও অনেক ভালোবাসি তবে তোমার মতো কাওতেই ভালোবাসতে পারবোনা। তোমার চাইতে একটু কম থেকেই যাবে, কোনো একটা জায়গায়। আমি শুধু এটুকুই বলবো তুমি ভাইয়াকে নিয়ে ভালো থাকো আর আমি নিলাকে নিয়ে। (আমি)

~ সানভি তুমি আমাকে ভালো থাকতে দিচ্ছো? আমি যখনই তোমাকে ভুলতে চাই তখনই তুমি আমার সামনে আসো। নিলার সাথে এমন কিছু করো যেটা আমার অতিত মনে করিয়ে দেয়। ভুলতে পারিনা। কষ্ট হয় বুঝোনা? (নিলিমা)

~ তোহ এখন কি চাও সেটা বলো। কি করলে তুমি ভালো থাকবা ভাইয়াকে নিয়েই। (আমি)
~ পালাতে তো পারবা না তাইনা? (নিলিমা)
~ হুমম।

~ তাহলে তুমি এই শহড় ছেড়ে দাও। নিলাকে নিয়ে ঢাকা চলে যাও যেখানে থাকো ওখানেই। (নিলিমা)
~ কিন্তু নিলা আমার সাথে গেলে আব্বু আম্মুর দেখাশোনা কে করবে? (আমি)
~ সানভি আমি আছি। তুমি জানো আমি কেমন মেয়ে। কখনো সামান্য কষ্টও পেতে দিবোনা আব্বু আম্মুকে। (নিলিমা)
~ ঠিক আছে তাহলে তুমি যা বলবে তাই হবে। আমিও চাই সবাই ভালো থাকুক। আর মাফ করে দিয়ো তোমাকে এতোদিন জ্বালানোর জন্য। (আমি)
~ মাফ আমাকে করে দিয়ো। সেদিন ব্রেকআপ না করলে আজ এখানে দাড়াতে হতোনা। নিজের মনকে প্রশ্ন করেছিলাম বারবার কেনো করলামম এরকম উত্তর পাইনি। (নিলিমা)
~ হইছে ছাড়ো এসব কথা। আমি যাচ্ছি। (আমি)

বলেই ছাদ থেকে নেমে এলাম। ভিষন কান্না পাচ্ছে নিলিমার কথা শুনে। ভালোবাসতাম মেয়েটাকে, প্রচুর পরিমান ভালোবাসতাম। সারাদিন যাই করিনা কেনো দিনশেষে ঠিকই ভাবতাম মেয়েটা ঠিক আছেতো?

কেটে গেলো আরো কিছু দিন।
বিয়ের সব ঝামেলা শেষ হয়েছে গতকাল।
ভাবতেছি আজ সন্ধায় ঢাকা চলে যাবো।
কাওকে জানাইনি কিছু, এমনকি নিলাও জানেনা।
এই কয়দিন নিলিমাকে আর বিরক্ত করিনি। সব কিছু চুপচাপ। আজ সকালে খাওয়ার টেবিলে সবাই যখন উপস্থিত হলো তখন কথাটা বলেই ফেললাম,
~ আব্বু আমাকে ঢাকা যেতে হবে। (আমি)
~ কেনো? (আব্বু)

~ আমার ছুটি শেষ তাই যেতে হবে। (আমি)
~ কিন্তু আরো কয়দিন তো বাকি ছিলো? (আব্বু)
~ হ্যা কিন্তু জরুরি কাজ পড়ে গেছে তাই যেতেই হবে আব্বু। (আমি)
~ আমি ভাবছিলাম তুই আমার জায়গায় নিজে কাজ করবি। (আব্বু)
~ আব্বু ভাইয়া আছে। ভাইয়া করবে। আমাকে যেতেই হবে। (আমি)
~ আচ্ছা যা, আমি আর কি বলবো। তা বউমাকে নিয়ে যাবি নাকি রেখে যাবি? (আব্বু)
~ নিয়ে যাবো ভাবছি। এখন তোমরা যা বলবা সেটাই হবে। (আমি)

~ নিয়ে যাওয়াটাই ভালো হবে। তুই ওখানে একা থাকবি আর নিলাও তো একাই থাকবে। এর চাইতে ভালো নিয়েই যা। (আব্বু)
~ ঠিকআছে আব্বু। (আমি)
~ কবে যাবি ভাইয়া? (অথৈ)
~ এইতো আজকে সন্ধায়। (আমি)
~ ওহ।

লক্ষ্য করলাম নিলা আর নিলিমা দুজনেই আমার দিকে তাকিয়ে আছে। নিলা তো জানেই না এসব। অবাক হওয়ারই কথা। তবে নিলিমা কি ভাবতেছে সেটাও আমি জানি।
ও ভাবতেছে ছেলেটাকে বললাম আর সব মেনে নিলো।
আসলে আমি এমনই, সেই প্রথম থেকেই নিলিমার অন্যায় আবদার বাদে সব কথাই আমি রেখেছি আজ এটাও রাখলাম। সন্ধে হলেই ফিরে যাবো ঢাকা রেখে যাবো সব সৃতি।

খাওয়া শেষ করে রুমে আসতেই নিলা বললো,
~ আমরা কেনো যাবো? এখানেই তো ভালো। সবাই আছে কত মজা হয় সবার সাথে থাকতে। (নিলা)
আমি নিলার হাত ধরে একটা চুমু খেয়ে বললাম,
~ নিলা আমাদের ঢাকা যাওয়াটা খুব দরকার। তুমি না করোনা প্লিজ। (আমি)
~ ঠিক আছে সব আপনার ইচ্ছা। (নিলা)

নিলিমার সাথে সারাদিন আর দেখা হয়নি আর হয়তো কথাও হবেনা। সন্ধে হয়ে গেছে সবকিছু গুছিয়ে নিয়েছি এবার রওনা দিতে হবে। নিলিমাকে দেখলাম দরজার সামনে দাড়িয়ে আছে। আজই শেষ হতে চলেছে নিলিমা নামের কালো অধ্যায়টা। তার কথাতেই।

নিলিমার চোখ জল। সবার সামনে লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করছে কিন্তু আমি তার সবকিছু বুঝতে পারি আজও।

তার চোখের কোনে জলটা কেও ধরতে না পারলেও আমি ঠিকই পেরেছি। কোনো এক কারনে আমার হ্রদয়টাও আজ ক্ষত ~ বিক্ষত। পরাজিত সৈনিকেরর মতো আমিও যে আত্মসমর্পন করে নিয়েছি। আজ হঠাৎ মনে হচ্ছে হয়তো নিলিমাকে বিয়ে করলেও পারতাম। মেয়েটাকে তো ভালোবাসতাম খুব।

গাড়ি ছেড়ে দিছে। চোখের সামনের মানুষগুলা আস্তে আস্তে দুরে চলে যাচ্ছে। অস্পষ্ট হয়ে উঠছে সবকিছু।
নিলা আমার কাধে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে আছে।
মেয়েটার নিষ্পাপ ভালোবাসার জন্যই তো নিলিমা নামের অধ্যায়টা ঘুচে গেলো।
সত্যিই আজ শেষ হয়ে গেলো নিলিমা নামের কালো অধ্যায়টা।
Ex নামক কালো ছায়াটা আর কালো করতে পারবেনা আমাদের জিবন। তবুও সে ছিলো, আছে, থাকবে।
হয়তো মনের একটা কোনে অযত্নে থেকে যাবে। পরিষ্কার করা হবেনা। তবুও থেকে যাবে। কারন Ex দের ভোলা যায়না কখনো। ভুলে থাকার অভিনয় করা যায় মাত্র। আর সেই অভিনয়ে আমরা বেশ দক্ষ।

লেখকঃ সানভি আহমেদ সাকিব

সমাপ্ত

(পাঠক আপনাদের ভালোলাগার উদ্দেশ্যেই প্রতিনিয়ত আমাদের লেখা। আপনাদের একটি শেয়ার আমাদের লেখার স্পৃহা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আমাদের এই পর্বের “Ex girl friend story – মামা এবার খেলা হবে” গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম। ধন্যবাদ।)

আরো পড়ূন – গোধূলির অপরপ্রান্তে – Bhalobasar kichu golpo

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *