কনডম – বাংলা গোয়েন্দা কাহিনী: রাতের বিছানায় দুটোর জায়গায় তিনটে কনডম খরচ হয়েছিল? সৌম্য গভীরভাবে ভাবতে থাকে। না না, রাত্রে দুটোই খরচ হয়েছিল, আরেক দিন খরচের কথা মনে
করতে পারে না ও।
পর্ব ১
ওয়্যার ড্রপটা খুলে, কনডোমের বাক্সটা বার করে সৌম্য। তারপর বাক্সের ভেতরে থাকা প্যাকেটগুলো গুনতে থাকে। এক, দুই, তিন, চার, পাঁচ, ছয়, সাত। মোট সাতটা কনডম রয়েছে বাক্সের ভেতরে। সংখ্যাটা তারিখ সহকারে নিজের ডায়েরিতে নোট করে নেয় সৌম্য।
তারপর কনডমের বাক্সটা বন্ধ করে সেটা আগের জায়গায় রেখে দেয়। ঘড়িতে এখন একটা সাতাশ। দুপুর দুটোর মধ্যে ওকে বাড়ি থেকে বেরোতে হবে। বিকেল সাড়ে পাঁচটায়
ওর ফ্লাইট। এয়ারপোর্টে যাওয়ার আগে একবার অফিসেও ওকে ঘুরে যেতে হবে। বিছানার ওপরে লাগেজটা রাখা রয়েছে। ওয়্যার ড্রপের পাল্লাটা বন্ধ করে দেয় সৌম্য।
তারপর দ্রুত বাকি জামাকাপড় গুলো লাগেজের ভেতরে ঢুকিয়ে নেয়। সবশেষে কনডমের হিসেব রাখা ডায়েরিটা লাগেজের ভেতরে ঢুকিয়ে ও লাগেজের চেনটা বন্ধ করে দেয়। এরপর সোফায় বসে একটা সিগারেট ধরায়। কদিন ধরেই এই একটা বিষয় নিয়ে সৌম্য ভীষণ রকম চিন্তিত। কিছুতেই ও কনডমের হিসেব মেলাতে পারছে না।
- এসো, খেয়ে নাও চট করে, গোপালদা কিন্তু গাড়ি বার করে ফেলেছে।
শর্মিষ্ঠার ডাক শুনে এশট্রেতে সিগারেটটা ফেলে উঠে দাঁড়ায় সৌম্য। ঠিক তখুনি বাথরুমে একটা মোবাইল বেজে ওঠে। রিংটোন শুনে সৌম্য বুঝতে পারে যে শর্মিষ্ঠার মোবাইল বাজছে। এটাচ বাথরুমের দরজা খুলে ভেতরে ঢোকে ও। বেসিনের ওপরেই মোবাইলটা রাখা রয়েছে।
মিমি কলিং। মিমি হল শর্মিষ্ঠার ছোট বোন। মোবাইলটা
হাতে নিয়ে বাথরুম থেকে বেরিয়ে, ধীর পায়ে ডাইনিঙে
গিয়ে ঢোকে সৌম্য। শর্মিষ্ঠা এখনো কিচেনে।
- মিমির ফোন এসেছে
- শেলফের ওপরে রেখে দাও আমি কলব্যাক করে নেবো।
কিচেন থেকেই চেঁচিয়ে উত্তর দেয় শর্মিষ্ঠা। সৌম্য
ফোনটা শেলফের ওপরে রেখে, ডাইনিং টেবিলের
চেয়ারে এসে বসে। খানিক্ষনের মধ্যেই ভাতের থালা
হাতে হাসি হাসি মুখে কিচেন থেকে বেরোয় শর্মিষ্ঠা।
- কালো জিরে দিয়ে চারাপোনার ঝোল করেছি, চুপচাপ
খেয়ে নাও।
কথাটা বলতে বলতে ভাতের থালাটা ডাইনিং টেবিলের
ওপরে রাখে শর্মিষ্ঠা। - আবার চারাপোনার ঝোল? আমি কি অসুস্থ?
- অসুস্থ নও, তবে অসুস্থ হতে আর কতক্ষন? দিল্লিতে গিয়ে
সারাদিন তো শুধু ছাইপাশ গিলবে। এখন এটা খাও পেটটা
একটু ঠাণ্ডা থাকবে।
শর্মিষ্ঠা ভাতের থালার চারপাশে একে একে ডাল,
আলুভাজা আর মাছের ঝোলের বাটি সাজিয়ে দেয়।
- তুমিও খেয়ে নাওনা এখন?
- তুমি খেয়ে নাও এখন, আমি বরং মিমিকে একটা ফোন
করে আসি।
সৌম্য আর কথা বাড়ায় না। চুপচাপ ভাত খেতে থাকে।
শর্মিষ্ঠা শেলফের ওপর থেকে ফোনটা নিয়ে পাশের
ঘরে চলে যায়। সৌম্য একমনে খেতে থাকে আর কনডমের
হিসেব করতে থাকে।
গত সপ্তাহে রাত্রে শোওয়ার পরে বিছানায় দুইবার, আর
এই সপ্তাহে একদিন সকালে কিচেনের ভেতরে। মোট
তিনটে কনডম খরচ হয়েছে। নাকি চারটে খরচ হয়েছে?
একটু কনফিউসড হয়ে যায় সৌম্য। না না তিনটেই খরচ
হয়েছে। দশ প্যাকের বাক্সে তাহলে পড়ে রইল সাতটা।
নাকি রাতের বিছানায় দুটোর জায়গায় তিনটে কনডম খরচ
হয়েছিল? সৌম্য গভীরভাবে ভাবতে থাকে। না না,
রাত্রে দুটোই খরচ হয়েছিল, আরেক দিন খরচের কথা মনে
করতে পারে না ও।
হঠাৎ পাশের ঘর থেকে শর্মিষ্ঠার হাসির আওয়াজ ভেসে
এলো। সৌম্য কান পেতে শর্মিষ্ঠার কথা শোনার চেষ্টা
করে। কিন্তু কিছু টুকরো হাসির আওয়াজ ছাড়া কিছুই ওর
কানে আসে না।
শর্মিষ্ঠা বাইরে থেকে দেখতে একদম সাধারন আটপৌরে
মহিলা। কিন্তু আসলে ও তা নয়। ওর বাপের বাড়ি
দুর্গাপুরে। পড়াশোনা গ্র্যাজুয়েশন পর্যন্ত। পড়াশোনায় ও
কোনদিনই খুব একটা মনযোগী ছিল না। বরং ওর ভালো
লাগতো সিনেমা জগতের রংচঙে দুনিয়া। সারাদিন ও
সেই নেশাতেই বুঁদ হয়ে থাকত। সারাদিন আয়নার সামনে
দাড়িয়ে, পর্দার রঙিন নায়িকাদের সাথে ও নিজেকে মিলিয়ে দেখত। নানান কল্পনার রঙে নিজেকে ভাসিয়ে
দিত। কিন্তু সেই কল্পনার জগত ওর বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করতেই ওর বিয়ে হয়ে গেল
সৌম্যর সাথে।
সৌম্যদের বাড়ি বাঁকুড়া সদর থেকেও প্রায় পঞ্চাশ
কিলোমিটার দূরে গ্রামের ভেতরে। সৌম্য ওর থেকে
প্রায় বারো বছরের বড়। কিন্তু বিয়ের সময় শর্মিষ্ঠার
বাবা মা সৌম্যর বয়সের দিকে আর তাকায়নি। ভালো
ছেলে, ভালো পরিবার, ভালো চাকরি, এর থেকে আর
বেশি কিছু দেখার ওদের প্রয়োজন পড়েনি। বিয়ের পড়ে
শর্মিষ্ঠা প্রথম একবছর সৌম্যের গ্রামের বাড়িতেই থাকত।
প্রচণ্ড রক্ষণশীল পরিবারে নিজেকে মানিয়ে
নিতে গিয়ে হাফিয়ে উঠছিল শর্মিষ্ঠা। এর একবছর পড়ে
সৌম্য ওকে কলকাতায় নিয়ে আসে। শর্মিষ্ঠা যেন একটু
মুক্তির নিঃশ্বাস নেয়।
কিন্তু এখানে আসার কিছুদিনের
মধ্যেই ও বুঝতে পারে যে ওর স্বামী মহাশয়টিও ওর শ্বশুর
বাড়ির বাকি সদস্যদের মতই প্রচণ্ড রক্ষণশীল।
অথচ বিয়ের আগে শর্মিষ্ঠা ভেবেছিল যে, কলকাতায় গেলে
হয়ত ওর স্বামী ওকে আধুনিক পোশাক পরিচ্ছদ পড়তে আর
বাধা দেবে না।
কিন্তু শর্মিষ্ঠার সেই ভাবনার সাথে
বাস্তব মেলেনি। কলকাতায় গত পাঁচ বছরে, সৌম্য ওকে
সাধারন আটপৌরে শাড়ির বাইরে কোনদিন বেরোতেই
দেয়নি।
- একটু শুনবে? ডাল লাগবে একটু
- হ্যা, যাই।
পাশের ঘর থেকে চিৎকার করে উত্তর দেয় শর্মিষ্ঠা।
সৌম্য ভাত খাওয়া থামিয়ে, ভুরু কুঁচকিয়ে ডালের
অপেক্ষাতে বসে থাকে। খানিক্ষনের মধ্যেই শর্মিষ্ঠা
এসে উপস্থিত হয়। চুপচাপ কিচেনে ঢুকে, হাসি হাসি মুখে
সৌম্যর জন্যে ডাল নিয়ে আসে। ডাল দিয়ে ভাত মাখতে
মাখতে সৌম্য জিজ্ঞাসা করে-
- কি বলল মিমি?
- তেমন কিছু না।
গম্ভীর মুখে জবাব দেয় শর্মিষ্ঠা। - খুব হাসছিলে যে?
- ওর কথা শুনে হাসছিলাম। ও ওর বরের কথা বলছিল।
সৌম্য কোন উত্তর দেয় না, একমনে ভাত খেতে থাকে।
হঠাৎ করে পাশের ঘরে আবার শর্মিষ্ঠার মোবাইলটা
বেজে ওঠে। - আবার কে ফোন করল?
- মিমি বোধহয়। বাজুক, তুমি খাও
- মিমিকে বলো না এখানে চলে আসতে? তুমি একা একা
থাকবে… - না, তার দরকার হবে না। তিনটে রাতের তো ব্যাপার
- আমি না থাকলে, তিনটে রাত কাটবে তোমার?
শর্মিষ্ঠা কোন উত্তর দেয় না। শুধু একটা রহস্যের হাসি
হাসে। তারমধ্যেই পাশের ঘরে টুং শব্দে একটা এস এম এস
এসে ঢোকে। শর্মিষ্ঠা সাথে সাথে উঠে পাশের ঘরে
চলে যায়।
শর্মিষ্ঠার সাথে সৌম্যর বিয়ে হয়েছে প্রায় ছয় বছর হতে
চলল। কোন ইস্যু নেই এখনও পর্যন্ত।
সৌম্যই আটকে রেখেছে বিষয়টা। অফিসে আরেকটা প্রমোশন না হওয়া
পর্যন্ত সৌম্য এই বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত নেবে না। তবে
শর্মিষ্ঠা ওকে অনেকদিন ধরেই ওকে তাড়া দিচ্ছে।
কিন্তু সৌম্য ওর নিজের সিদ্ধান্তে অটল।
খানিক্ষনের মধ্যেই সৌম্য খাওয়া শেষ করল। বেসিনে ও
হাত মুখ ধুতে ধুতেই শর্মিষ্ঠা বেরিয়ে এলো। তারপর
তোয়ালেটা এগিয়ে দিতে দিতেই বলে উঠলো-
- এয়ারপোর্টে গিয়ে আমাকে কিন্তু ভিডিও কল করবে
- প্রতিবারই যখন বাইরে যাই, এয়ারপোর্টে ঢুকে আমাকে
ভিডিও করতে বলো কেন?
তোয়ালেতে মুখ মুছতে মুছতে জিজ্ঞাসা করে সৌম্য।
শর্মিষ্ঠা সৌম্যর হাত থেকে তোয়ালেটা নিয়ে
চেয়ারের ওপরে রেখে দেয়। তারপর সৌম্যর গলা জড়িয়ে
ধরে আদুরে গলায় বলে ওঠে-
- আমার বুঝি তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করে না?
- কিন্তু এয়ারপোর্টে কেন? ওখানে পৌছিয়ে রাতেও তো
ভিডিও কল করতে পারি? - না, যাওয়ার আগে একবার দেখতে চাই।
সৌম্য হাসে। স্ত্রীর কপালে একটা ভালবাসার চুম্বন
একে দেয়। তারপর ওকে ছেড়ে পাশের ঘরে গিয়ে ঢোকে।
এরপর ওয়্যার ড্রপ খুলে, একটা টাই বার করে গলায় পড়তে
থাকে। টাই পড়তে পড়তে ওর আবার কনডমের হিসেব না
মেলার কথাটা মনে পড়ে যায়। ও যখন কনডম কেনে, তখন ও
সবসময় দশটা প্যাকেটর বাক্স কেনে। গত ছয় বছরে
কোনদিন ও এই বিষয়টা নিয়ে মাথাই ঘামায়নি। কিন্তু
ওদের শেষ বিবাহ বার্ষিকীর দিন রাতে, ও কনডমের
প্যাকেট খুলে দেখে সেখানে মাত্র চার পিস কনডম পড়ে
রয়েছে। সেই মুহূর্তে ও এই বিষয়টা নিয়ে মাথা না
ঘামালেও, পরে ওর মনে হয়েছে যে বাক্সে আরও বেশি
কনডম থাকা উচিত ছিল। আর তারপর থেকেই ও কনডমের
হিসেব রাখতে শুরু করে। এখন ও প্রতিটা কনডমের হিসেব
একটা গোপন ব্যক্তিগত ডায়েরিতে ডেট অনুযায়ী লিখে
রাখে। আর এই হিসেব রাখা শুরু করতেই ও বুঝতে পারে যে
কনডমের হিসেব মিলছে না। প্রতি প্যাকেটেই একটা
দুটো করে কনডম হিসেবে কম পড়ছে অথবা বেশি থাকছে।
তবে এবার ওর কাছে পুরো বিষয়টা আস্তে আস্তে
পরিস্কার হয়ে আসছে। এবার ওর আর কনফিউসড হওয়ার
কোন জো নেই।
দ্রুত হাতে টাইটা পড়ে, লাগেজ নিয়ে ড্রইং রুমে
বেরিয়ে আসে সৌম্য। শর্মিষ্ঠা এসে মেইন দরজা খুলে
দেয়। জুতো মোজা পড়ে নিয়ে বাইরে লিফটের সামনে
এসে দাঁড়ায় সৌম্য।
- সাবধানে থেকো, আর অচেনা কাউকে ঘরে ঢুকতে দিও
না। এদিকে কিন্তু খুব হুলো বিড়ালের উৎপাত - তুমি এতো চিন্তা করো নাতো! এবার যাও, দিল্লিতে
গিয়ে মন দিয়ে কাজটা সেরে আসো যাতে প্রোমোশনটা
দ্রুত হয়।
সৌম্য হাসে। লিফটের বোতাম টিপতেই লিফট এসে
দাঁড়ায় ওর সামনে। শর্মিষ্ঠাকে বিদায় জানিয়ে সৌম্য
লিফটের ভেতরে ঢুকে যায়। লিফটের দরজা বন্ধ হতেই
শর্মিষ্ঠা ভেতরে চলে আসে। তারপর দরজা লক করে দ্রুত
পায়ে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ায়।
খানিক্ষনের মধ্যেই ফ্ল্যাটের নীচ থেকে সৌম্যর
গাড়িটা বেরিয়ে যায়। শর্মিষ্ঠা একটা স্বস্তির
নিঃশ্বাস ফেলে।
তারপর বেড রুমে ঢুকে মোবাইলটা
হাতে নিয়ে শুয়ে পড়ে। তারপর কনট্যাক্ত লিস্ট থেকে
মিমির নম্বরটা বার করে ডায়াল করে।
- হ্যালো
- হ্যা বলো, বেরিয়েছে তোমার স্বামী?
- হুম বেরিয়েছ
- আমি তাহলে যাই এখন তোমার কাছে?
- এসো
- উনি আবার ফিরে আসবেন নাতো?
- এয়ারপোর্টে গিয়ে ভিডিও কল করতে বলেছি সেইজন্যে
- তাহলে ভিডিও কলের পরে যাই?
- তুমি না বড্ড ভিতু। এখুনি এসো, ও আর এখন ফিরবে না।
তুমি নিশ্চিন্ত থাকো।
ওপর প্রান্ত থেকে পুরুষালি গলায় মোহময় হাসির
আওয়াজ ভেসে আসে। শর্মিষ্ঠা ফোনটা কেটে আয়নার
সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। তারপর বুকের ওপর থেকে শাড়ির
আঁচলটা সরিয়ে ফেলে। নিজের আঠাশ বছরের হিলহিলে
চেহারাটার দিকে মুগ্ধ বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকে।
তারপরে আটপৌরে শাড়িটা খুলে ঘেন্না ভরে ছুড়ে
ফেলে দেয় বিছানার ওপরে। এরপর খাটের বক্স থেকে
বার করে পছন্দের সেই নীল গাউনটা। চোখ বন্ধ করে
সারা শরীরে সেই গাউনটা বোলাতে থাকে। নিজেকে
কল্পনা করে বলিউডের সুন্দরী নায়িকাদের সাথে।
কি ছিপছিপে শরীর ওর, হিলহিলে কোমর, ঠিক যেন কোন
ফিল্মের নায়িকা। অথচ এই সবকিছুই গ্রাম্য তাঁতের
শাড়ির আড়ালে ওকে ঢেকে রাখতে হয়।
ওর এই অনন্যা সম্পদের কিছুই ও দুনিয়াকে দেখাতে পারে না। এসব
ভাবতে ভাবতেই ও নিজের শরীরটা বিছানায় এলিয়ে
দেয়। কখন যে চোখটা বুজে আসে ও কিছুই বুঝতে পারে
না।
হঠাৎ করে মোবাইলটা বেজে উঠতেই ওর তন্দ্রা ভেঙ্গে
যায়। লাফিয়ে উঠে মোবাইলটা হাতে নিতেই দেখে
সৌম্য কলিং। ভিডিও কল করছে, তারমানে এয়ারপোর্টে
পৌছিয়ে গেছে। ও তাড়াতাড়ি শাড়িটা পড়তে থাকে।
সৌম্যের ভিডিও কল বেজে বেজে থেমে যায়। শর্মিষ্ঠা
ভালোভাবে শাড়িটা পরে নিয়ে মোবাইল হাতে ড্রইং
রুমে গিয়ে বসে। তারপর সৌম্যকে ভিডিও কল করে।
- হ্যালো
- এতো দেরি হল কেন ফোনটা ধরতে?
- এই একটু বাথরুমে গেছিলাম।
শর্মিষ্ঠা ভালো করে সৌম্যর চারপাশটা দেখতে থাকে।
নাহ! এয়ারপোর্টেই ও আছে এখন। নিশ্চিন্ত হয় শর্মিষ্ঠা।
তারপর জরুরি কিছু কথা বলে ফোনটা কেটে দেয়।
এরপর বেডরুমে গিয়ে গায়ের শাড়িটা খুলে ছুড়ে ফেলে
দেয়। তারপর পরম যত্নে নীল রঙের ভেলভেটের গাউনটা
পরে নেয়। নিজের খোঁপা করে রাখা চুল খুলে ছড়িয়ে
দেয় পিঠের ওপরে। তারপর পরম যত্নে সারা মুখে প্রসাধন
করতে থাকে। প্রসাধন শেষ হলে ক্যাবিনেট খুলে বার
করে সৌম্যর হুইস্কির বোতলখানি। তারপর কাঁচের গ্লাসে
বরফের মধ্যে খানিকটা হুইস্কি ঢেলে নেয়। ব্লু- টুথ
স্পিকারে চালিয়ে দেয় ইংরাজি গান।
হুইস্কির গ্লাসে চুমুক দিতে দিতে একা একাই ড্রইং রুম জুড়ে নাচতে
থাকে। একটু পরেই কলিং বেল বেজে ওঠে। লুকিং
গ্লাসে চেহারা দেখে নিয়ে দরজা খুলে দেয় শর্মিষ্ঠা।
ভেতরে ঢুকে আসে সুঠাম শরীরের সুদর্শন যুবক। শর্মিষ্ঠা
ওর দিকে এগিয়ে দেয় হুইস্কির গ্লাস। মদ্যপান করতে
করতে দুজনে প্রানভরে নাচ করে। তারপর শর্মিষ্ঠা ওকে
নিয়ে বেডরুমে ঢোকে।
ওয়্যার ড্রপ থেকে কনডমের
বাক্সটা বার করে, এক পিস কনডম এগিয়ে দেয় যুবকটির
দিকে। তারপর উদ্দাম শরীরী খেলায় মেতে ওঠে দুইজন।
সৌম্যর তিন দিন পরে দিল্লি থেকে ফেরার কথা ছিল।
কিন্তু অফিসের কাজ মিটে যাওয়াতে পরদিন সকালেই ও
কলকাতার ফ্লাইট ধরে। দুপুর দুটো নাগাদ ও নিজের
ফ্ল্যাটে ফিরে আসে। ফ্ল্যাটের দরজায় কলিং বেল
টিপে দাড়িয়ে থাকে ও।
কিন্তু বেশ কিছুক্ষন দাড়িয়ে থাকার পরেও কেউ দরজা খোলে না। দরজা ভেতর থেকে
বন্ধ। আবার কলিং বেল টেপে ও। কিন্তু ভেতর থেকে
কোন সারা আসে না। অথচ দরজার কলাপসেবল গেট
খোলা। পরিস্কার বোঝা যাচ্ছে দরজা ভেতর থেকে বন্ধ।
বাইরে শর্মিষ্ঠার জুতো জোড়া রয়েছে। সৌম্যের কাছে
ফ্ল্যাটের গেটের আরেকটি চাবি রয়েছে। কিন্তু ভেতর
থেকে যদি ছিটকিনি তোলা থাকে সেক্ষেত্রে লক
খুললেও দরজা খোলা যাবে না।
এই রকম ঘটনা আজ পর্যন্ত কোনদিন হয়নি সৌম্যর সাথে। সৌম্য লাগেজ খুলে
ডুপ্লিকেট চাবিটি বার করে। তারপর লক ঘোরাতেই
ফ্ল্যাটের দরজা খুলে যায়।
সৌম্য দরজা ঠেলে ভেতরে ঢোকে। ভেতরে কেমন যেন একটা থমথমে পরিবেশ। সৌম্য
শর্মিষ্ঠার নাম ধরে ডাকে। কিন্তু কেউ সারা দেয় না।
সৌম্য লাগেজটা ভেতরে ঢুকিয়ে বেডরুমে গিয়ে ঢোকে।
বেডরুমে ঢুকেই থমকে দাঁড়ায় সৌম্য। খাটের মধ্যে চিৎ
হয়ে পড়ে রয়েছে শর্মিষ্ঠা। পরনে একটা বাংলা তাঁতের
শাড়ি।
মাথাটা খাট থেকে মাটিতে ঝুলছে। মুখটা হাঁ
করে খোলা, খোলা চোখ দুটো ঠিকরে বেরিয়ে এসেছে
কোটর থেকে, একসারি কালো পিঁপড়ে শর্মিষ্ঠার ঠোট
বেয়ে মুখের ভেতরে গিয়ে ঢুকছে। সৌম্য এগিয়ে যায়
শর্মিষ্ঠার দিকে। ওর পা দুটো কাঁপছে থরথর করে। বুঝতে
পারে শর্মিষ্ঠার দেহে কোন প্রান নেই। পকেট থেকে
মোবাইলটা বার করে সৌম্য। তারপর গুগল সার্চ করে
কসবা থানার ফোন নম্বরটা বার করে সেখানে ফোন করে।
পর্ব ২
গ্রিনল্যান্ড আবাসনের সামনেটা ভিড়ে ভিড়াক্কার হয়ে রয়েছে। দুখানা পুলিশের ভ্যান এসে দাঁড়িয়েছে বাড়ির সামনে। আবাসনের ভেতরে ইতিউতি জটলা। সিকিউরিটি গার্ডকে একটা চেয়ারে বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। সবার মনে একটাই প্রশ্ন যে এই রকম একজন সাধারন ঘরোয়া মহিলাকে কে খুন করল?
এরমধ্যেই একটা সাদা রঙের পুলিশি জিপ এসে থামলো আবাসনের বাইরে। নেমে এলেন পুলিশ অফিসার রাজবীর সান্যাল, ওরফে স্যাম। বয়স খুব বেশি হলে তিরিশ থেকে বত্রিশ, ফর্সা মুখে হালকা অযত্নে বেড়ে ওঠা দাড়ি। উচ্চতা প্রায় ছয় ফুট, পেটানো এথলেটিক চেহারা। স্লিম ফিট আকাশি হাফ শার্ট কনুইয়ের ঠিক ওপরে এসে থেমে গেছে। কালো প্যান্ট আর ঝকঝকে পালিশ করা বুট নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ালেন অফিসার স্যাম। সানগ্লাসটা খুলে একবার চারতলার দিকে দাঁড়ালেন। তারপর গটগট করে হেটে, লিফটে গিয়ে উঠলেন।
- আসুন স্যর
স্যাম লিফট থেকে নামতেই এগিয়ে এলেন সাব ইন্সপেক্টর সুজিত সমাদ্দার।
- ফটোগ্রাফার এসেছে?
- হ্যা স্যর, বডির ফটো তোলা হয়ে গেছে
- ওর হাসবেন্ড কোথায়?
- বসিয়ে রেখেছি স্যার
- আর কোন আত্মীয়স্বজন?
- মেয়েটির বাপের বাড়িতে খবর পাঠানো হয়েছে। ওরা আসছে
- কোথায় বাড়ি ওদের?
- দুর্গাপুর
- কে ফোন করেছিল ওদের?
- আমি
- জামাই বা শ্বশুর বাড়ি সমন্ধে ওদের কোন অভিযোগ আছে?
- না স্যর, কোন অভিযোগ নেই।
স্যাম ধীর পায়ে ঘরের ভেতরে গিয়ে ঢোকে। ড্রয়িং রুমের সোফায় মাথা নিচু করে বসে আছে সৌম্য। স্যাম খানিকক্ষণ দাড়িয়ে সৌম্যকে দেখে, তারপর বেডরুমের ভেতরে ঢুকে যায়। শর্মিষ্ঠার বডি এখনও খাটের ওপরে পড়ে রয়েছে। স্যাম বেশ কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মৃতদেহটি দেখতে থাকে। তারপর সমাদ্দারের সাথে কথাবার্তা শুরু করে।
- কোন জিনিস খোওয়া গেছে?
- মহিলার স্বামীর বয়ান অনুযায়ী কোন কিছু খোওয়া যায়নি
- বাড়িতে কাজের লোক কয়টি?
- সকালে একজন আসে
- ওকে থানায় তুলে নিয়ে আসো
- ঠিক আছে স্যর
- বডি এবার পোস্টমর্টেমে পাঠিয়ে দাও
- যেমন আপনি বলবেন।
সমাদ্দার ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যায়।
স্যাম ঘুরে ঘুরে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে ফ্ল্যাটটি দেখতে থাকে। দুটি ছেলে এসে শর্মিষ্ঠার মৃতদেহ নিয়ে চলে যায়। স্যাম বিছানাটা ভালো করে দেখে। তারপর ওয়াড্রবের পাল্লাটা খুলতেই একদম সামনে কনডমের প্যাকেটটি চোখে পরে।
- সমাদ্দার
স্যামের ডাক শুনে সমাদ্দার ঘরে এসে ঢোকে। - বলুন স্যর
- কনডমের প্যাকেটটা সিজ করো
- ঠিক আছে আছে স্যর
- মৃতার মোবাইল ফোনটা পেয়েছ?
- হ্যা স্যার। বডির একদম পাশেই পড়ে ছিল।
স্যাম আশ্চর্য হয়ে সমাদ্দারের দিকে তাকিয়ে থাকে মোবাইলের কথাটা শুনে।
- আজ সন্ধ্যের মধ্যে কল লিস্ট চাই
- হয়ে যাবে স্যর।
ঘরের ভেতরে ওয়াড্রব, একটা ড্রেসিং টেবিল আর একটা খাট রয়েছে। স্যাম মন দিয়ে খুঁটিয়ে সব কিছু পরীক্ষা করতে থাকে। তারপর-
- বেডরুমটা সিল করে দাও। আরো ভালোভাবে সবকিছু পরীক্ষা করার দরকার আছে।
বেডরুম থেকে বেরিয়ে বাথরুমে ঢুকল স্যাম। চারপাশ খুঁটিয়ে দেখতে গিয়ে বেসিনের নিচে একটা ডাস্টবিন চোখে পড়ল। - সমাদ্দার বিনটা নিয়ে বাইরে এসো।
সমাদ্দার ডাস্টবিনটা নিয়ে স্যামের পেছন পেছন বারান্দায় চলে যায়। তারপর মেঝেতে একটা খবরের কাগজ পেতে তার ওপরে ডাস্টবিনটা উপুর করে।
হাতে একটা গ্লাভস পড়ে নিয়ে সমাদ্দার ডাস্টবিনের নোংরা ঘাটতে থাকে। নোংরা ঘাটতে ঘাটতে একটা ব্যবহিত কনডম ও তুলে ধরে স্যামের দিকে।
স্যাম সাথে সাথে হাঁটু গেরে বসে পড়ে মাটিতে, তারপর খুঁটিয়ে কনডমটা দেখতে থাকে-
- ভেতরটা এখনও ভেজা স্যর
- তাইতো দেখছি সমাদ্দার। গত চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে এটা ব্যবহার করা হয়েছে।
স্যাম হাতে একটা গ্লাভস পড়ে নেয়। তারপর কনডমটা হাতে নিয়ে নেড়েচেরে দেখতে থাকে। - খুব গুরুত্বপূর্ণ এভিডেন্স সমাদ্দার। ভেতরের ফ্লুয়িডটা কার এটা জানা দরকার।
কনডমটা সমাদ্দারের হাতে দিয়ে ড্রয়িং রুমে বেরিয়ে আসে স্যাম। সৌম্য তখনও মাথা নিচু করে বসে আছে। স্যাম সৌম্যর উল্টোদিকের সোফাতে গিয়ে বসে।
- হ্যালো মিস্টার সেন।
সৌম্য চোখ তুলে তাকায় স্যামের দিকে।
- হ্যালো।
স্যাম খানিকক্ষণ তাকিয়ে থাকে সৌম্যর দিকে। তারপর-
- আপনি কখন দেখলেন বডিটা?
- দুপুর দুটো হবে তখন
- কোথায় গেছিলেন?
- দিল্লি থেকে ফিরলাম আজ
- কবে গেছিলেন?
- গতকাল বিকেল পাঁচটার ফ্লাইট ছিল
- আজ কলকাতায় কখন নামলেন ফ্লাইট থেকে?
- সকাল নয়টা
- এখানে তাহলে দুটোয় এলেন কেন?
- খুব ইম্পরট্যান্ট অফিসিয়াল কাজ ছিল। তাই এয়ারপোর্টে নামার পড়ে প্রথমে সোজা অফিসে চলে যাই। তারপর সমস্ত কাজ শেষ করে দুপুর একটা নাগাদ অফিস থেকে বেরোই। তারপর বাড়িতে এসে দেখি এই দৃশ্য। কথাগুলো বলতে বলতে সৌম্যর চোখ দুটো ছলছল করে ওঠে।
- আপনি কি এই রকম প্রায়ই বাইরে যান?
- হ্যা, মাঝেমধ্যেই আমাকে অফিসিয়াল ট্যুরে যেতে হয়
স্যাম খানিক্ষন কিছু চিন্তা করে। তারপর- - আপনার স্ত্রীর সাথে কারোর কোন অবৈধ সম্পর্ক আছে?
মুহূর্তের মধ্যে সৌম্যর মুখটা গম্ভীর হয়ে যায়। - তেমন কিছু থাকলে আপনি আমায় খুলে বলুন মিস্টার সেন
- আমার স্ত্রীর সাথে কারোর কোন সম্পর্কের কথা আমার জানা নেই
- ভেবে বলুন
- ভেবেই বলছি। আমার তেমন কিছু জানা নেই
- দরজার পাশে রাখা এই লাগেজটা কার?
- আমার
- এটা আমরা সিজ করছি
- সেকি? ওখানে আমার অনেক দরকারি জিনিস রয়েছে?
- আমাদের ইনভেস্টিগেশন শেষ হলে, লাগেজ সমেত আপনার সমস্ত দরকারি জিনিস আপনি ফেরত পেয়ে যাবেন
- কিন্তু…
স্যাম কঠোর দৃষ্টিতে তাকায় সৌম্যর দিকে। সৌম্য কিছু একটা বলতে গিয়েও থেমে যায়। - আমায় না জানিয়ে আপনি এখন কলকাতার বাইরে যাবেন না।
রুক্ষভাবে কথাটা বলে স্যাম উঠে দাঁড়ায়। সাথে সাথে সমাদ্দারও সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়। তারপর দুজনে ধীর পায়ে ফ্ল্যাটের বাইরে বেড়িয়ে আসে।
- স্যার, আপনি কি মহিলার স্বামীকে সন্দেহ করছেন?
- খুনি তো যে কেউই হতে পারে সমাদ্দার
- তা ঠিক। কিন্তু খুনের মোটিভ কি হতে পারে স্যার?
- চুরি ডাকাতি যে খুনের মোটিভ নয় সেটা মোটামুটি বোঝা যাচ্ছে
- এমনও তো হতে পারে যে ডাকাতি করতে এসে বাঁধা পেয়ে খুন করে ফেলেছে?
- সেক্ষেত্রে ঘরে ধস্তাধস্তির চিহ্ন থাকত। চেনা কেউ যদি ভয় পেয়ে খুন করে থাকে, তবে খুনের সাথে সাথে ওরা পালাবে
- যাওয়ার আগে ধস্তাধস্তির চিহ্নগুলোও তো মুছে দিয়ে যেতে পারে?
- সেই রকম ঠাণ্ডা মাথার খুনি হলে, চিহ্ন মোছার পরে মুল্যবান জিনিসপত্রও সাথে নিয়ে যেত। ঘরের ভেতরে কিন্তু প্রচুর দামি দামি সামগ্রি রয়েছে
- তারমানে বলছেন যে চুরি মোটিভ না?
- সম্ভবত তাই। কাজের লোকটিকে থানায় তুলে এনে জেরা করলে আরো নিশ্চিন্ত হওয়া যাবে।
লিফটে করে ওরা একতলায় নেমে আসে। ওরা নামার সাথে সাথে মর্গের ভ্যানটি স্টার্ট দিয়ে দিলো। স্যাম সেই দিকে একবার তাকিয়ে নিজের গাড়ির দিকে এগিয়ে গেল।
- মহিলার হাসবেন্ডের যাবতীয় ডিটেল আমার চাই সমাদ্দার। ও দিল্লি যাওয়া আসার যে ফ্লাইট ডিটেল দিলো সেটা মিলিয়ে দেখো। দিল্লিতে গিয়ে কোন হোটেলে ছিল, চেক ইন, চেক আউট, সব ডিটেল চাই। হোটেলে ও যে রুমে ছিল, সেই রুমের সামনের সিসিটিভি ফুটেজ চাই। আজ সকালে কলকাতা ফেরার পরে, ঠিক কয়টার সময়ে ও অফিসে ঢুকেছিল, কখন অফিস থেকে বেরিয়েছে তার একদম সঠিক তথ্য আমার চাই
- ওকে স্যর, সিসিটিভি ফুটেজ ছাড়া বাকি সব তথ্য আজ সন্ধের মধ্যেই পেয়ে যাবে
- গুড। আরেকটা কথা
- কনডমের ভেতরে যে ফ্লুয়িডটা রয়েছে সেটা মিস্টার সেনের কিনা এবং সেই কনডম মৃত মহিলার শরীরেই প্রবেশ করানো হয়েছিল কিনা, তার নিখুত তথ্য চাই
- ভদ্রমহিলার স্বামীর তাহলে মেডিক্যাল টেস্ট করাতে হবে
- করাও
- যদি রাজি না হয়? এইরকম একটা সেনসেটিভ টেস্ট?
- জোর করে রাজি করাও
- যদি এর বিরুদ্ধে কোর্টে মুভ করে?
- আমরা কোর্টকে জানাবো যে কেন এই টেস্টটা এতটা জরুরি
- ঠিক আছে স্যর
- আর হ্যা, সিকিউরিটি গার্ডকে রেজিস্টার সমেত থানায় তুলে নিয়ে আসো এখন।
- ঠিক আছে স্যর।
স্যাম গাড়িতে উঠতেই সিকিউরিটি গার্ডটিকে ধরে পেছনের পুলিশ ভ্যানে তোলা হল। জানালার কাঁচ নামিয়ে স্যাম একটা সিগারেট ধরালো, গোল্ডফ্লেক কিং সাইজ। সাধারণত স্যাম স্মোক করে না। কিন্তু ওর পকেটে সবসময় এক প্যাকেট গোল্ডফ্লেক থাকে। যখনি ও কোন গভীর চিন্তার জগতে প্রবেশ করে, তখুনি ওর সঙ্গী এই সিগারেটের প্যাকেটটি হয়। সিগারেটটা ধরিয়ে আস্তে আস্তে ধোঁওয়া ছাড়তে থাকে স্যাম। সানগ্লাসের ভেতর থেকে একমনে সেই ধোঁওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে ও। ঢুকে পরে খুনের কিনারার জটিল তত্বে।
পোস্টমর্টেম রিপোর্ট এখনও আসেনি। তবে স্যামের অভিজ্ঞতা থেকে মনে হয়েছে যে এটি হয়ত বালিশ চাপা দিয়ে খুন। গলা টিপে হত্যা করলে মৃত দেহের জিভ বাইরে বেরিয়ে আসত। এখানে জিভ মৃতদেহের মুখের ভেতরেই রয়েছে। চোখ দুটো ঠিকরে বাইরে বেরিয়ে এসেছে। সাধারণত বালিশ বা ওই ধরনের কিছু চাপা দিয়ে খুন করলে এইরকম দেখা যায়। আর মৃতদেহের চেহারা দেখে বোঝা যাচ্ছে যে খুন হয়েছে সাত আট ঘণ্টার মধ্যে। গতকাল খুন হওয়া বডি এটি নয়।
স্যামের গাড়ির পেছন পেছন পুলিশ ভ্যানটাও আসছে। সিকিউরিটিকে জেরা করলে হয়ত অনেক তথ্য পাওয়া যাবে। আর বিশেষ কিছু ভাবতে চায় না স্যাম। একদম সহজ কেস, রিপোর্ট গুলো হাতে পেলেই কেসটা ও সমাধান করে ফেলবে। বরং এর চেয়ে অনেক বেশি কঠিন ছিল বড়বাজার থানায় শিশু হত্যার সমাধান করা।
কসবা বাইপাস কানেক্টার ধরে গাড়ি কসবা থানার সামনে এসে থামল। স্যাম দ্রুত দরজা খুলে বেরিয়ে এলো। স্যামের গাড়ির ঠিক পেছনেই পুলিশ ভ্যানটা এসে থামল। সেখান থেকে সিকিউরিটি গার্ডটিকে টেনে নামানো হল। সেই দিকে একবার তাকিয়েই স্যাম থানার ভেতরে ঢুকে গেল। সিঁড়ি দিয়ে দোতলায় উঠে ডান দিকে গেলেই স্যামের কেবিন। নিজের কেবিনের দরজায় তালা মারার অভ্যাস স্যামের কোনদিনই নেই। আজকেও খোলা। দরজা ঠেলে স্যাম কেবিনের ভেতরে ঢুকে গেল। লাইট সকাল থেকেই জ্বলছে। ফ্যান চালিয়ে দিয়ে চেয়ারে গিয়ে বসল স্যাম। আর ঠিক পেছন পেছন সমাদ্দার সিকিউরিটি গার্ডটিকে নিয়ে স্যামের কেবিনে এসে ঢুকল।
সিকিউরিটিকে দেখে স্যাম সানগ্লাসটা খুলে টেবিলের ওপরে রাখল। তারপর চোখের ইশারা করতেই সিকিউরিটির ছেলেটি চেয়ারে গিয়ে বসলো। পাশের চেয়ারটিতে সমাদ্দার বসলো। ছেলেটির বয়স সাতাশ আঠাশ হবে। গ্রাম্য সাধারন চেহারা। কিন্তু চোখদুটি খুব চঞ্চল। স্যামের কেবিনে ঢোকার সাথেই কেবিনের চারপাশে একবার চোখ বুলিয়ে নিলো।
- রেজিস্টার খাতাটি দিন।
ছেলেটি একটি রেজিস্টার খাতা স্যামের দিকে এগিয়ে দেয়। স্যাম পাতা ওলাটাতে থাকে। খানিক্ষনের মধ্যেই স্যামের মুখটা কঠোর হয়ে ওঠে।
- জানুয়ারির পরে আর রেজিস্টার মেইনটেন হয়নি কেন?
ছেলেটি চুপ করে থাকে। - কি জিজ্ঞাসা করছি আপনাকে? জানুয়ারির পরে আর রেজিস্টার মেইনটেন করা হয়নি কেন?
- আজ্ঞে, কাজে গাফিলতি
- কাজে গাফিলতি না ইচ্ছাকৃত?
- আজ্ঞে গাফিলতি। এই ফ্ল্যাটবাড়িতে সবার সাথে সবার ঝামেলা। কেউ আর রেজিস্টার দেখতে চাইত না। তাই আমিও আর লিখতাম না।
- সিকিউরিটি রুমের চাবি দাও।
ছেলেটি পকেট থেকে একটা চাবির রিং বার করে। স্যাম চাবির রিঙটি সমাদ্দারের দিকে এগিয়ে দেয়।
- সিকিউরিটি রুম আমরা সিল করলাম। আপনাদের ফ্ল্যাটের সেক্রেটারিকে জানিয়ে দেওয়া হবে।
কথাটা শুনেই ছেলেটি একবার চোখ তুলে তাকাল স্যামের দিকে। তারপর মাথাটা নাড়িয়ে সম্মতি দিলো। - আপনার ডিউটি কতক্ষন?
- সকাল দশটা থেকে রাত্রি দশটা
- আর রাত্রি দশটার পরে?
- কেউ থাকে না স্যর
- কেন?
- এখানে ফ্ল্যাটে ফ্ল্যাটে খুব ঝামেলা স্যার। কেউ ঠিক মতন পয়সা দিতে চায় না। আগে রাতেও সিকিউরিটি থাকত। এখন সব বন্ধ।
- তুমি আজ ফ্ল্যাটে কখন এসেছ?
- সারে দশটা নাগাদ এসেছি
- আসার পরে অচেনা কেউ ফ্ল্যাটে ঢুকেছে?
- না স্যর
- মিস্টার সেন আজ কখন এসেছেন ফ্ল্যাটে
- দুটো আড়াইটে নাগাদ
- আর কাল কখন বেরিয়েছেন?
- এইরকমই, গতকাল দুটো আড়াইটে নাগাদ উনি বেরিয়েছিলেন
- উনি বেরনোর পরে ওনার ফ্ল্যাটে আর কেউ এসেছিলেন?
- না স্যার
- মিস্টার সেন বেরনোর পরে, বাইরের লোক কে কে এসেছে এই ফ্ল্যাটে?
- তিন তলার ফ্ল্যাটে একজন এসেছিলেন
- কখন?
- সারে চারটে পাঁচটা নাগাদ
- উনি গেলেন কখন?
সিকিউরিটির ছেলেটি খানিকক্ষণ কিছু একটা ভাবে। তারপর-
- মনে করতে পারছিনা স্যার উনি কখন বেরিয়েছেন।
স্যাম খানিকক্ষণ কঠিন মুখে ছেলেটির দিকে তাকিয়ে থাকে। তারপর- - তোমাকে আমরা হেফাজতে নিলাম
- আমি খুন করিনি স্যার, আমাকে কেন হেফাজতে নেবেন?
স্যাম কোন উত্তর দেয় না। সমাদ্দার চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়। তারপর সিকিউরিটি ছেলেটির কলার ধরে ওকে টেনে তোলে। ছেলেটি চিৎকার করতে থাকে “স্যর আমি খুন করিনি, আমি খুন করিনি”
স্যাম উঠে দাঁড়ায়। তারপর ছেলেটির চুলের মুঠি ধরে হিসহিসে গলায় বলে ওঠে- - ফ্লাটের নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলে তুমি। কিন্তু নিজের দায়িত্ব ঠিক মতন তুমি পালন করনি। তুমি যদি সজাগ থাকতে তাহলে হয়ত এই খুনটা হত না।
কথাটা বলেই স্যাম ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যায়। সমাদ্দার টানতে টানতে ছেলটিকে চালান ঘরের দিকে নিয়ে যায়। স্যাম দোতলার করিডরের দিকে হাটা লাগায়। ধীর পায়ে করিডরে এসে দাঁড়িয়ে একটা সিগারেট ধরায়। নীচ দিয়ে অসংখ্য গাড়ি বাইপাসের দিকে ছুটে চলেছে। সিগারেট খেতে খেতে একমনে কেসটা নিয়ে ভাবতে থাকে স্যাম। ঠিক তখুনি সুজিত সমাদ্দার পেছনে এসে দাঁড়ায়। - একটা কথা ছিল স্যর
- কি?
- কাজের মেয়েটি বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে
- সেকি?
- ওকে তুলে আনতে সাব ইন্সপেক্টর অসিত মালকে পাঠিয়ে ছিলাম। ও ফিরে এসেছে
- কি বলল অসিত মাল?
- মেয়েটা কাকুলিয়া বস্তিতে থাকত স্যর। দরজায় তালা মারা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সকালে কাজে বেরিয়েছিল। কিন্তু খুব দ্রুত কাজ থেকে ফিরে আসে। তারপর আবার হন্তুদন্ত হয়ে বেরিয়ে যায়। বেরনোর সময় কাধে একটা ব্যগ ছিল। একজনকে বলে গেছে যে নবদ্বীপ যাচ্ছে ওর মাসির বাড়ি। ওর মাসি নাকি গুরুতর অসুস্থ, হঠাৎ ফোন এসেছে তাই তাড়াহুড়ো করে ওকে যেতে হচ্ছে।
- বয়স কত মেয়েটির?
- সাতাশ আঠাশ হবে। স্বামী পরিত্যক্তা।
স্যাম সিগারেটে একটা গভীর টান দেয়। সৌম্য বলছে কিছু চুরি যায়নি। অথচ কাজের মেয়েটি আজ সকাল থেকেই গায়েব। পুরো বিষয়টা এবার গোলমেলে ঠেকছে। যতটা সহজ মনে হচ্ছিল, কেসটা ততটা সহজ নয়।
পর্ব ৩
- সমাদ্দার
- বলুন স্যর
- মোবাইলটা কি ফরেন্সিকে পাঠানো হয়েছে?
- এই এখুনি পাঠাবো স্যর
- তার আগে মোবাইলটা নিয়ে একবার আমার কেবিনে
আসুন - ঠিক আছে স্যর
- সন্ধে ছয়টার মধ্যে কিন্তু আমার কল ডিটেল চাই
- হ্যা স্যার, ওটা পেয়ে যাবেন
- ফটোগ্রাফার যে ডেড বডির ছবি তুলেছে, সেগুলো পেন
ড্রাইভে ভরে দিয়েছে? - হ্যা স্যর, অনেকক্ষণ
- গুড, মোবাইলের সাথে সেই পেন ড্রাইভটাও নিয়ে আসুন
- ওকে স্যর।
স্যাম ওর কেবিনে ঢুকে কম্পিউটার অন করে দেয়। পেছন
পেছম সমাদ্দারও মোবাইলটা নিয়ে ঘরে এসে ঢোকে।
স্যাম হাতে একটা গ্লাভস পড়ে নেয়। তারপর
প্লাস্টিকের সিল করা প্যাকেট থেকে মোবাইলটা বার
করে। তারপর পাশের বোতামটা টিপে মোবাইলটা অন
করে।
- মোবাইলটা ঠিক বডির কোথায় পড়ে ছিল?
- একদম পাশে, অন করা অবস্থায়
মোবাইলটা অন হওয়ার পরে, স্যাম নিজের বুড়ো আঙ্গুলটা
দিয়ে মোবাইলটা সোওাইপ করল। সাথে সাথে
মোবাইলের হোম পেজ খুলে গেল। স্যাম গ্যালারি ঘেটে
শর্মিষ্ঠার কতগুলো ঘরোয়া ছবি বার করল। খুব মন দিয়ে
ছবি গুলো দেখতে লাগলো। ইতিমধ্যেই সমাদ্দার
কম্পিউটারে পেন ড্রাইভ ফিট করে দিয়েছে। স্যাম
মোবাইল থেকে চোখ সরিয়ে পেন ড্রাইভের ছবি গুলো
দেখতে লাগলো। ছবিগুলো জুম করে মহিলার হাতের
আঙ্গুল, হাতের কবজি আর গলার কাছটা খুব মনোযোগ
সহকারে দেখতে লাগলো। খানিকপরে সমাদ্দার বলে
উঠলো-
- কিছু পেলেন স্যর?
- মৃতদেহের ডান হাতের আঙ্গুল থেকে দুইটি সোনার
আংটি এবং একটি হীরের আংটি খোওয়া গেছে। হাতের
চারটি সোনার বালা এবং গলায় একটা সোনার চেনও
খোওয়া গেছে - কি করে বুঝলেন?
স্যাম কম্পিউটারে মৃতদেহের আঙ্গুলের ছবিটি জুম করে
সমাদ্দারকে ডাকল।
- এই দেখুন, হাতের আঙ্গুলে আংটি পড়ার ছাপ একদম
স্পষ্ট। যারা সব সময় আংটি পড়ে থাকেন, তাদের হাতে
এই সাদা দাগটি থাকবেই। ভালো করে দেখুন, অনামিকা
থেকে শুরু করে পরপর তিনটে আঙ্গুলে এই ছাপটা আছে।
সমাদ্দার কম্পিউটারের স্ক্রিনে ঝুকে পড়ে ভালোভাবে
ছবিটা দেখে। তারপর-
- একদম ঠিক বলেছেন স্যর। কিন্তু কয়টি সোনার আংটি
আর কয়টি হীরের আংটি সেটা আপনি এতোটা
নিশ্চিতভাবে কিভাবে বলছেন? - মোবাইলের এই ছবিগুলো দেখো।
স্যাম মোবাইলটা সমাদ্দারের দিকে এগিয়ে দেয়।
- ভালো করে ছবিগুলো দেখো স্যাম। ঘরোয়া সমস্ত
ছবিতে দুটি সোনার আংটি, একটি হীরের আংটি, চারটি
বালা আর একটি চেন রয়েছে।
কিন্তু মৃতদেহের ছবি
দেখো? গাঁয়ে কোন সোনার গয়না নেই
- তাহলে কি কাজের মেয়েটাই খুন করে চুরি করে
পালালো? - সেই সিদ্ধান্তে এলে ব্যাপারটার সরলীকরণ হয়ে যাবে।
তবে কাজের মেয়েটা কিছু না কিছু জানে।
সমাদ্দার মোবাইলটা ফেরত দেয় স্যামকে। - একটা জিনিস লক্ষ করেছ সমাদ্দার?
- কি স্যার?
- মোবাইলটাতে কোন পাস ওয়ার্ড দেওয়া নেই
- সেটাই দেখলাম স্যর
- কল ডিটেল পেয়ে তারপর মোবাইলটি ফরেন্সিকে
পাঠাবে। মোবাইলের পাসওয়ার্ড আর প্যাটার্ন
সংক্রান্ত যাবতীয় ডিটেল আমার চাই। আপাতত এটি
আমার ড্রয়ারে রইল
- ঠিক আছে স্যর।
রাত্রি সারে আটটার সময় সমাদ্দার স্যামের চেম্বারে
এসে ঢুকল।
- সন্ধে ছয়টার সময় আপনার আসার কথা ছিল
- কল ডিটেল সন্ধে ছয়টার আগেই পেয়ে গেছি স্যর।
পোস্টমর্টেম রিপোর্টের অপেক্ষা করছিলাম। দুটো
রিপোর্ট একসাথে পেলে আপনার সুবিধা হবে কাজে।
স্যাম কোন উত্তর দেয়না শুধু নিজের হাতটা বাড়িয়ে
দেয়। সমাদ্দার দুটো মুখবন্ধ খাম এগিয়ে দেয় স্যামের
দিকে। স্যাম প্রথমে পোস্টমর্টেম রিপোর্ট খুলে পড়তে
থাকে। সমাদ্দার উল্টো দিকের চেয়ারে গিয়ে বসে।
পুরো রিপোর্টটা একমনে পড়ার পড়ে স্যাম সমাদ্দারের
দিকে তাকায়।
- শ্বাসরোধ করে খুন। আজ সকাল দশটা থেকে এগারোটার
মধ্যে ওনাকে খুন করা হয়েছে। পেটে এলকোহল পাওয়া
গেছে। খুন হওয়ার ঘণ্টা খানেক আগে ওনার সেক্সুয়াল
ইন্টারকোর্স হয়েছে। সেক্সুয়াল অর্গানে কোনো ইনজুরি
নেই। তাই সম্মতিক্রমে ইন্টারকোর্স হয়েছে বলে ধরা
হচ্ছে
- আমরা আশে পাশের লোকজনের কাছ থেকে যা
ফিডব্যাক পেয়েছি তাতে তো খুন হওয়া মহিলা অত্যন্ত
ঘরোয়া প্রকৃতির মহিলা ছিলেন। উনি এলকোহল খেতেন
বা অন্য পুরুষের সাথে ঘোরাফেরা করতেন এইরকম কোন
রিপোর্ট কিন্তু নেই স্যর
- রিপোর্টে তো অনেক কিছুই থাকে না সমাদ্দার।
পোস্টমর্টেম রিপোর্টটা বন্ধ করে এবার মোবাইল কল
ডিটেলটা খুলে বসে সমাদ্দার। খুব মন দিয়ে রিপোর্টটা
দেখতে থাকে স্যাম। তারপর পেন দিয়ে নম্বরগুলোতে
গোল গোল দাগ দিতে থাকে।
- একটা বিশেষ নম্বরে গত তিরিশ দিনে রোজ দুপুরে ফোন
গেছে। কলের সংখ্যা অগুন্তি। খুন হওয়ার আগের দিন
বেশ কয়েকবার ফোন গেছে। যেদিন খুন হয়েছে সেই দিন
কোন ফোন যায়নি।
স্যাম আবার হাতে গ্লাভস পড়ে নেয়। তারপর ড্রয়ার
থেকে শর্মিষ্ঠার মোবাইলটা বার করে। এরপর কল ডিটেল
থেকে সেই ফোন নম্বরটা বার করে, শর্মিষ্ঠার মোবাইল
থেকে সেটি ডায়াল করে। সাথে সাথে স্ক্রিনে ফুটে
ওঠে ‘মিমি। ’ রিং হওয়ার আগেই নম্বরটা কেটে দেয়
স্যাম।
- এটাতো কোন মেয়ের নম্বর স্যর?
- তাইতো দেখছি। এয়ার টেল সার্ভিস প্রভাইডার
- হ্যা স্যর
- এই নম্বর কার নামে রয়েছে তার নাম ঠিকানা এখুনি চাই
আমার - ঠিক আছে স্যর। আমাকে আধ ঘণ্টা সময় দিন। আমি থ্রু
লালবাজার, এয়ার টেলে কথা বলছি।
স্যাম মাথা নাড়ায়, তাই দেখে সমাদ্দার ঘর ছেড়ে
বাইরে চলে যায়। স্যামের মাথায় নানান সম্ভবনা
কিলবিল করতে থাকে। গা থেকে সোনার গয়না গায়েব
হওয়া, কাজের লোকের পালানো, তাই যদি হয় তবে
কাজের মেয়েটি খুন করেছে। আবার বিপরীত যুক্তিও
রয়েছে। সাধারন আটপৌরে মহিলার পেটে এলকোহল
পাওয়া, খুন হওয়ার আগে মৃতার কারোর সাথে যৌন সঙ্গম
করা, অথচ ওনার স্বামী তখন ফ্ল্যটে ছিলেন না। তাহলে
এই সিদ্ধান্তেও পৌঁছান যায় যে মৃতা কারোর সাথে
অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে ছিল। সেই প্রেমিকই মৃতাকে খুন
করে গয়না নিয়ে পালিয়েছে। কিন্তু এর বিপরীতেও
যুক্তি আছে। যদি প্রেমিক খুন করে থাকে তাহলে তার
কারন কি? শুধুমাত্র কয়েকটা গয়নার লোভে এইরকম অবৈধ
সম্পর্কের প্রেমিক কি খুনটা করবে? এটা ঠিক বিশ্বাস
হয়না। যদি গয়নার লোভে প্রেমিক খুন করে থাকে তবে
বুঝতে হবে সেই প্রেমিক খুব নিচু শ্রেনিতে বিলং করে।
যেমন মিস্ত্রি, লেবার, ড্রাইভার, সিকিউরিটি
গার্ড…এইসব।
- আসব স্যর?
- এসো সমাদ্দার।
সমাদ্দার কেবিনে ঢুকে উল্টো দিকের চেয়ারটায় গিয়ে
বসলো। - নম্বরটা ভিকি সিং বলে একজনের নামে রয়েছে।
ভবানিপুরের ঠিকানা - ওকে, ভিকি সিং ওরফে মিমি
- ওনার স্বামীরও যাবতীয় ডিটেল পাওয়া গেছে স্যর
- বলুন
- ফ্লাইট ডিটেল উনি যা দিয়েছেন একদম ঠিক।
হোটেলের চেক ইন, চেক আউট রেজিস্টারের ফটো কপি
পাওয়া গেছে। রাত আটটায় চেক ইন, ভোর ছটায় চেক
আউট - মাত্র এই কটা ঘণ্টার জন্যে উনি কি কাজে দিল্লিতে
গেছিলেন? - ওনার অফিসের সুত্রে যেটা জানতে পারা গেছে সেটা
হল দিল্লির এক বড় কাস্টমারের থেকে উনি পেমেন্ট
আদায় করতে গেছিলেন। তিনদিন হাতে সময় নিয়ে
গেছিলেন। কিন্তু যেদিন উনি দিল্লি পৌঁছান, সেদিন
রাতেই সেই কাস্টমার হোটেলে এসে পেমেন্ট দিয়ে
গেছেন। ওনার ঘরের সামনের সিসিটিভি ফুটেজ দু- তিন
দিনেই হাতে এসে পৌঁছাবে।
- ওনার ফ্লাইট কলকাতায় কখন ল্যান্ড করছে?
- সকাল নয়টার সময়
- অফিসে কখন ঢোকেন?
- নিউটাউনে ওনার অফিস। সারে নয়টার সময় সেদিন উনি
অফিসে ঢোকেন এবং দুপুর একটার সময় উনি অফিস থেকে
বেরোন। বায়োমেট্রিক রেকর্ড তাই বলছে।
স্যাম উঠে দাঁড়ালো। কেবিন থেকে বেরিয়ে করিডরে
একমনে পায়চারি করতে লাগলো। খানিকক্ষণ পড়ে
সমাদ্দার এসে উপস্থিত হল।
- সমাদ্দার, মোবাইল কল লিস্টের ছেলেটিকে তুলে নিয়ে
এসো। এখুনি। - ওকে স্যর।
সমাদ্দার বেরিয়ে গেল। স্যাম একটা সিগারেট ধরিয়ে
একমনে রাস্তার দিকে তাকিয়ে রইল। তারপর হঠাৎই নিচে
নেমে এলো। গাড়ির ড্রাইভার নিচেই একটা চেয়ারে বসে
আরও দুই তিনজন ড্রাইভারের সাথে গল্প করছে। স্যাম
ওকে ইশারা করতেই ও উঠে এলো।
ওদের গাড়িটা থানার
একদম গেটের সামনেই দাঁড়িয়ে আছে। স্যাম সোজা
হেটে গাড়ির পেছনর সিটে উঠে বসলো। ড্রাইভার গাড়ি
স্টার্ট করে দিলো।
- গ্রিনল্যান্ড
- জানি স্যার।
ড্রাইভারটি হাসল। স্যাম নিজেও হাসল একটু।
- কি করে জানলি তুই?
- এতদিন আপনার ডিউটি করছি এটা জানব না যে কখন
কোথায় আপনার যেতে ইচ্ছে করে?
স্যাম হাসল। যদিও ওর মাথায় এখন খুনের কেসটি ছাড়া
আর কিছুই ঘুরছে না। সাধারন খুনের কেসগুলোর সমাধান
করতে সাধারণত চার পাঁচদিন লাগে স্যামের। কিন্তু এটা
একটু জটিল মনে হয়েছে।
খুনের কোন মোটিভ এখনও
সেভাবে পাওয়া যাচ্ছে না। কয়েকটা আংটি আর সোনার
চেনের জন্যে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে মনে হচ্ছে না।
স্বামীর অনুপস্থিতিতে একজন সাধারন গৃহবধূর পেটে
এলকোহল পাওয়া এবং হত্যার আগে যৌন সঙ্গম পরিস্কার
অন্য দিকে ইঙ্গিত করছে।
মিনিট পনেরোর মধ্যে গ্রিনল্যান্ডের সামনে গাড়ি এসে
থামল। গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ালো স্যাম। ড্রাইভারকেও
ইশারা করল ওর সাথে আসার জন্যে।
ইশারা পেয়ে ড্রাইভারটিও নেমে এলো। লিফটে করে চার তলায় উঠে
এসে বেল টিপতেই সৌম্য এসে দরজা খুলে দিলো।
- আপনার বেডরুমটা আমি একটু তল্লাশি করবো।
সৌম্য খানিকক্ষণ স্যামের দিকে তাকিয়ে রইল। তারপর
বাইরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত করে ভেতরে ঢুকে গেল। কিন্তু
স্যাম কয়েক মুহূর্ত বাইরে দাঁড়িয়েই সটান ভেতরে ঢুকে
গেল। ভেতরে ঢুকতেই এলকোহলের বাজে গন্ধ স্যামের
নাকে এসে ধাক্কা মারল।
সোফার দিকে তাকাতেই চোখে পড়ল সৌম্য সেন্টার টেবিল থেকে একটা মদের
বোতল আর গ্লাস সরাচ্ছে। স্যামের সাথে চোখাচোখি
হতেই সৌম্য চমকে উঠলো। সৌম্যের হাতে একটা এক
লিটারের মদের বোতল। বোতলের তলায় আর সামান্যই মদ
পড়ে রয়েছে।
- আপনার বাড়িতে কি সবসময় মদের বোতল মজুত থাকে
মিস্টার সেন?
সৌম্য আমতা আমতা করে ওঠে-
- হ্যা থাকে
- আপনার স্ত্রী মদ্যপান করতেন?
- না।
স্যাম আর বিশেষ কথা বাড়ায় না। ড্রইং রুমের চারপাশটা
একবার চোখ বুলিয়ে বেডরুমের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।
বেডরুমটা গালা দিয়ে সিল করা আছে। গালার ওপরে
সমাদ্দারের সই সমেত থানার কাগজ ঝুলছে। স্যাম
নির্দেশ দিতেই গালা ভেঙ্গে ফেলল ড্রাইভার।
তারপর স্যামের হাত থেকে বেডরুমের চাবিটা নিয়ে ড্রাইভার
দরজাটা খুলে ফেলে। এরপর দুজনে ঘরের ভেতরে গিয়ে
ঢোকে। স্যাম বেডরুমের ছিটকিনিটা তুলে দেয়।
স্যাম প্রথমে বিছানার ওপরে উঠে বসে। মন দিয়ে
বিছানার চাদরটা পরীক্ষা করতে থাকে। তারপর চাদরটা
তুলে ফেলে তোশক, ম্যাট্রেস সব খুঁটিয়ে পরীক্ষা করে।
এরপর তোষক, ম্যাট্রেস সব তুলে ফেলে খাটের বক্সের
ডালাটা তুলে ধরে-
- ডালাটার ঠিক নিচেই যা যা আছে সব বার কর
- ঠিক আছে স্যার।
ড্রাইভার ডালার ঠিক নিচে হাত দিতেই সেই নীল রঙের
গাউনটা বেরিয়ে এলো। তারপরেই একটা জিন্স আর একটা
স্লিভলেস টপ বেরিয়ে এলো। - আর বার করিস না।
স্যাম গাউনটা নিয়ে নিজের নাকের সামনে ধরল।
মহিলাদের কসমেটিক্সের মিশ্রিত গন্ধ নাকে এলো।
এরপর স্যাম গাউনটির বিভিন্ন অংশ নাকের সামনে ধরতে
লাগলো। গাউনটির বুকের কাছে হালকা একটা জেন্স
পারফিউমের গন্ধ পাওয়া গেল। এরপর ড্রেসিং টেবিলের
পাল্লা খোলে স্যাম। একটা লেডিস পারফিউম ছাড়া আর
কোন পারফিউম চোখে পড়ল না। আর ঠিক তখনি স্যামের
মোবাইলটা বেজে উঠলো।
- স্যার সমাদ্দার বলছি
- বলো
- ভিকি সিং নামে ছেলেটাকে থানায় তুলে এনেছি
- ঠিক আছে, আমি যাচ্ছি এখুনি। আর হ্যা, আমি মৃতার
বেডরুমে রয়েছি। কাউকে পাঠাও এখুনি দরজা সিল করার
জন্যে - ঠিক আছে স্যার আমি এখুনি কাউকে পাঠাচ্ছি।
স্যাম আর ড্রাইভার দরজা খুলে বেডরুম থেকে বেরিয়ে
আসে। সৌম্য তখন সোফায় বসে ঢুলছে। ওদেরকে দেখেই
চমকে উঠে সোজা হয়ে বসে।
- আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞাসা করার আছে মিস্টার
সেন - হ্যা বলুন
- আপনার স্ত্রী, শাড়ি ছাড়া আর কি কি ধরনের পোশাক
পরতেন? - ওতো গ্রাম্য মহিলা, শাড়ি ছাড়া অন্য কিছুই ও পড়ত না।
এমনকি জীবনে কোনদিন সালোয়ার কামিজ বা নাইটি
পর্যন্ত পড়েনি
- ঠিক আছে, আমি এখন বেরচ্ছি। একটু পড়ে থানা থেকে
লোক এসে দরজাটা সিল করে দিয়ে যাবে - ঠিক আছে স্যার।
স্যাম বেরিয়ে আসে গ্রিনল্যান্ড এপার্টমেন্ট থেকে।
খানিক্ষনের মধ্যেই ওরা থানায় গিয়ে পৌছায়। থানায়
পৌছতেই সমাদ্দার এগিয়ে আসে।
- কিছু এভিদেন্স পেলেন স্যার?
- কেবিনে এসো।
স্যামের পেছন পেছন সমাদ্দার কেবিনে গিয়ে ঢোকে।
প্লাস্টিকের একটা প্যাকেট থেকে নীল গাউনটা বার
করে স্যাম। তারপর সেটা সমাদ্দারের দিকে এগিয়ে
দেয়।
- গাউনটা নাকের কাছে ধরো। দেখবে হালকা একটা
পারফিউমের গন্ধ পাবে।
গাউনটা নাকের কাছে ধরে সমাদ্দার। গাউনটির বিভিন্ন
অংশ নিজের নাকে ঘষতে থাকে।
- একটা হালকা পারফিউমের গন্ধ পাচ্ছি স্যার
- বলো জেন্স পারফিউমের গন্ধ
- হ্যা স্যার
- কারোর ড্রেসে এই রকম অতি হালকা এবং ছাপছাপ
পারফিউমের গন্ধ তখনি পাওয়া যায় যখন তাকে কেউ
জড়িয়ে ধরে। তাকে যে জড়িয়ে ধরল, সে যে পারফিউমটা
গাঁয়ে মেখেছে, সেই গন্ধটা তখন ড্রেসে লেগে যায়।
তুমি যে গন্ধটা পাচ্ছ সেটা সেই গন্ধ।
সমাদ্দার বিস্মিত মুখে স্যামের দিকে তাকিয়ে থাকে।
যতই ও স্যামের বিশ্লেষণ দেখছে ততই ও মুগ্ধ হচ্ছে।
- তারমানে একটা স্টোরি আমাদের সামনে ক্লিয়ার হল…
- কি স্টোরি স্যার?
- ভদ্রমহিলা ওনার স্বামী এবং সমাজের কাছে একজন
অতি ভদ্র এবং ঘরোয়া প্রকৃতির মহিলা সেজে থাকতেন।
বাস্তবে উনি তা ছিলেন না। বাস্তবে উনি নিজের
জীবনটাকে খুব খোলামেলা ভাবে উপভোগ করতেন।
গাউনটিতে যে হালকা কসমেটিক্সের গন্ধ লেগে আছে,
তার থেকে বোঝা যাচ্ছে গাউনটি হয়ত উনি গতকাল
দুপুরেই পরেছিলেন। কল রেকর্ড অনুযায়ী তারপরেই উনি
ভিকি সিংকে ফোন করে ডাকেন। ভিকি সিং ঘরে ঢুকে
মহিলাকে জড়িয়ে ধরে। এরপর দুজনে মিলে এরপর মদ্যপান
করে।
- কিন্তু স্যার, সিকিউরিটির বয়ান অনুযায়ী মিস্টার সেন
চলে যাওয়ার পড়ে ওনার ফ্ল্যাটে কেউ আসেনি - অন্য ফ্ল্যাটে তো এসেছে?
- হ্যা, সেই বয়ান দিয়েছে
- অন্য ফ্ল্যাটে যাওয়ার নাম করে যদি ভিকি সিং মৃতার
ফ্ল্যাটে আসে, সেটা সিকিউরিটির পক্ষে বোঝা সম্ভব
নয় - ঠিক বলেছেন স্যার। এছারা সিকিউরিটি ঢুকতে
দেখলেও কাউকে বেরোতে দেখেনি। তারমানে ভিকি
সিং রাতভর ফ্ল্যাটেই ছিল। সকালে ওরা সেক্স করে।
এরপর ভিকি সিং খুনটা করে ফ্ল্যাট ছেড়ে পালায়। এবং
সেটা সারে দশটায় সিকিউরিটি আসার আগেই
- ব্যাপারটা এতোটাও সরল নয় সমাদ্দার। কারন মৃতার
পড়নে তাঁতের শাড়ি ছিল।
আমার যতদূর অনুমান, ভিকি
বাড়িতে থাকতে ও তাঁতের শাড়িটা পড়েনি। প্রেমিকের
সামনে ও আধুনিক সাজগোজেই থাকবে, এটাই
স্বাভাবিক। ভিকি বেরিয়ে যাওয়ার পড়ে ও শাড়িটা
পড়েছে
- তারমানে বলতে চাইছেন যে ভিকি বেরিয়ে যাওয়ার
পড়ে খুনটা হয়েছে? - হয়ত। হয়ত বা নয়।
সমাদ্দার চুপ করে বসে ভাবতে থাকে। স্যাম একটা
সিগারেট ধরায়। তারপর-
- ভিকি সিংকে নিয়ে আসো।
মাথা ঝাকিয়ে চিন্তিত মনে বেরিয়ে যায় সমাদ্দার।
কেবিনটা সিগারেটের ধোঁওয়ায় ভরে ওঠে। খানিক্ষনের
মধ্যেই ভিকি সিংকে নিয়ে সমাদ্দার এসে উপস্থিত হয়।
ত্রিশ একত্রিশ বছর বয়সের তরতাজা যুবক। ফুলস্লিপ জামা
কনুই পর্যন্ত গোটান, বুকের দুটো বোতাম খোলা, সেখান
দিয়ে লোমশ বুক উকি মারছে। কায়দা করে কাটা ঝাঁকরা
চুল মনে করিয়ে দিচ্ছে যে ছেলেটি অত্যন্ত শৌখিন
প্রকৃতির এবং পকেটে পয়সাও যতেষ্টই রয়েছে। ছেলেটি
কেবিনে এসে ঢুকতেই সিগারেটের ধোওয়াকে ছাপিয়ে
ভুরভুর করে পারফিউমের গন্ধ ছাপিয়ে উঠলো।
স্যাম, একমনে চোখ বন্ধ করে পারফিউমের গন্ধটা
মেলানোর চেষ্টা করল। সমাদ্দার আর ভিকি সিং দুজনেই
স্যামের চোখ খোলার অপেক্ষাতে দাঁড়িয়ে রইল।
খানিকক্ষণ পড়ে স্যাম চোখ খুলে দুজনকেই বসতে নির্দেশ
দিলো। স্যাম কঠিন মুখে খানিকক্ষণ ভিকি সিং এর
দিকে তাকিয়ে রইল।
ভিকি সিং মাথা নিচু করে চুপচাপ
বসে রইল। বেশ খানিকক্ষণ এভাবেই কেটে গেল। অবশেষে
স্যাম প্রথম মুখ খুলল-
- শর্মিষ্ঠা দেবীকে কতদিন চেনেন আপনি?
ছেলেটি চুপ করে বসে থাকে। - দেখুন ভাল মুখে আপনাকে জিজ্ঞাসা করছি, সব রকম
সহযোগিতা করুন। নাহলে আপনাকে এরেস্ট করে আমরা
আপনাকে জেরা করবো। সেই অভিজ্ঞতা কিন্তু আপনার
ভালো হবে না - না না, আমি সব রকম সহযোগিতা করবো আপনাকে
- গুড, আপনি জানলেন কিভাবে যে শর্মিষ্ঠা দেবী খুন
হয়েছে? - ওই বাড়ির তিনতলায় আমার বন্ধু সাগর থাকে। ওই
আমাকে ফোন করে খবরটা দেয় - শর্মিষ্ঠা দেবীর সাথে আপনার আলাপ কিভাবে
হয়েছিল? - সাগরের বাড়িতে একটা অনুষ্ঠান ছিল, সেই অনুষ্ঠানে
আমি এবং শর্মিষ্ঠা দুজনেই আমন্ত্রিত ছিলাম। ওখানেই
আমাদের আলাপ।
স্যাম চুপ করে খানিকক্ষণ কিছু একটা ভাবে। তারপর-
- সাগর ফোন করে কি বলেছিল আপনাকে?
- বলল, শর্মিষ্ঠা খুন হয়েছে, আমি যেন কলকাতা ছেড়ে
পালাই - কেন? পালিয়ে যেতে বলল কেন?
- ও জানত আমাদের সম্পর্কের কথা। বেসিক্যালি আমি
ওর ফ্ল্যাটে যাবো বলেই সব সময় গ্রিনল্যান্ডে ঢুকতাম - কিন্তু ও পালিয়ে যেতে বলল কেন আপনাকে?
- ও বলল, পুলিশ শর্মিষ্ঠার কল লিস্ট দেখলেই আমি ধরা
পড়ে যাবো। তাই যেন আমি পালাই - খুন কি আপনি করেছেন?
- না, আমি কেন খুন করতে যাবো ওকে? আমি তো ওকে
ভালবাসতাম - তাহলে সাগর আপনাকে পালাতে বলল কেন?
- ও বলল যেহেতু আগের রাতে আমি ওখানে গেছিলাম
তাই পুলিশ আমাকেই সন্দেহ করে এরেস্ট করবে। তাই
আমি যেন পালাই। আসলে ও আমার বহু পুরনো বন্ধু, সবসময়
আমার ভালো চায় - আপনি কখন গেছিলেন ওই বাড়িতে?
- সারে চারটে নাগাদ
- বেরিয়েছেন কখন?
- রাত এগারোটা সারে এগারোটা হবে
- আপনাদের মধ্যে সেক্সুয়াল ইন্টারকোর্স হয়েছিল?
- হ্যা হয়েছিল
- কত বার?
- দুইবার
- কখন?
- যাওয়ার সাথে সাথে একবার, আরেকবার ফেরার আগে
- মানে বিকেল পাঁচটা নাগাদ এবং রাত্রি সারে দশটা
এগারোটা নাগাদ? - হ্যা, একদম তাই।
স্যাম এবার প্লাস্টিকের প্যাকেট থেকে নীল গাউনটা
বার করে ভিকির সামনে রাখে।
- দেখুনতো এটা চিনতে পারেন কিনা?
গাউনটার দিকে একঝলক তাকিয়েই ভিকি মাথা নাড়ায়। - কাল শর্মিষ্ঠা এই গাউনটাই পরেছিল
- আপনি যখন ফেরেন তখনও কি এই গাউনটা পরেছিলেন?
- হ্যা, ফেরার সময়েও এই গাউনটা শর্মিষ্ঠার পরনে ছিল।
স্যাম মাথা নিচু করে কিছুক্ষন চিন্তা করল। তারপর- - আমরা আপাতত আপনাকে গ্রেপ্তার করছি না। কিন্তু
তদন্তে আপনাকে সবরকম সহযোগিতা করতে হবে - আমি খুন করিনি স্যার, আপনি আমাকে বিশ্বাস করতে
পারেন। আর আমি সব রকম সহযোগিতা আপনাকে করবো - কাল সকালে সমাদ্দার আপনার বাড়িতে যাবেন। তারপর
আপনাকে ওর সাথে এক জায়গায় যেতে হবে। সেখানে
গিয়ে আপনি আমাদের সব রকম সহযোগিতা করবেন - নিশ্চই
- আসুন এবার।
ভিকি সিং চুপচাপ উঠে কেবিন ছেড়ে বেরিয়ে যায়। - সমাদ্দার
- বলুন স্যার
- ডাক্তারের সাথে appointment করুন। কাল সকালেই ভিকি
সিং এর মেডিক্যাল টেস্ট করান। কনডমের ভেতরের
ফ্লুয়িডটা কার এবার সেটা জানার সময় হয়েছে। আর হ্যা,
অসিত মালকে পাঠিয়ে কাল সকালেই সৌম্য সেনকে
থানায় তুলে আনুন। আমি থাকব না। আপনি ওকে হালকা কিছু জেরা করবেন। আর তারপরেই ডাক্তারের কাছে
নিয়ে গিয়ে চুপচাপ মেডিক্যাল টেস্ট করিয়ে নেবেন।
কাল বিকেলের মধ্যে আমার দুজনেরই রিপোর্ট চাই। - ঠিক আছে স্যার
- আর হ্যা, মিস্টার সেনের যে লাগেজটা আমরা সিজ
করলাম সেটা একবার নিয়ে এসো। সেটা দেখব একবার
এখুনি আনছি স্যার।
সমাদ্দার বেরিয়ে যায়। খানিক্ষনের মধ্যেই লাগেজ
নিয়ে ফিরে আসে। এরপর কেবিনের একপাশে লাগেজটা
খোলে সমাদ্দার। জামাকাপড়, শেভিং সেট, তোয়ালে,
তারপরেই বেরিয়ে আসে একটা খয়েরি রঙের ডায়েরি।
স্যাম উঠে গিয়ে সমাদ্দারের হাত থেকে ডায়েরিটা
নেয়।
- আর তো তেমন কিছু পাওয়া গেল না স্যার?
- এনার লাগেজ থেকে নিশ্চই ছুড়ি, বন্দুক এইসব পাওয়া
যাবে না? - তা ঠিক।
পর্ব ৪
পরদিন সকাল আটটার সময় সমাদ্দারকে ফোন করল স্যাম।
দু তিনবার রিং হওয়ার পরেই অপর প্রান্ত থেকে সমাদ্দার
ফোনটা রিসিভ করল।
- হ্যা স্যার বলুন
- সৌম্য সেনকে কখন তুলতে যাচ্ছেন?
- ওনাকে ফোন করে বাড়িতে থাকতে বলেছি। সকাল
নয়টা নাগাদ অসিত যাবে ওকে তুলতে। ডাক্তারের কাছে
সকাল দশটায় সময় করা হয়েছে। আর ভিকি সিং এর সময়
করা রয়েছে সকাল সারে এগারোটার সময় - ভেরি গুড, বিকেলের মধ্যে আমার রিপোর্ট চাই
- পেয়ে যাবেন স্যার
- আর হ্যা, ভিকি আর সৌম্য সেনের মেডিক্যাল টেস্টের
পরে ওদের থানায় এনে বসিয়ে রাখবেন। সৌম্য সেনকে
আজ এরেস্ট করা হতে পারে - ওর বিরুদ্ধে কোন প্রমান পাওয়া গেছে কি?
- এই মুহূর্তে কয়েকটা বিষয় ওর বিরুদ্ধে যাচ্ছে সমাদ্দার।
আমি এখন ফাইনাল এভিডেন্স সংগ্রহে বেরোচ্ছি। দুপুরে
আবার কথা হবে - ওকে স্যার।
ফোন রাখতেই স্যামের বাড়ির বাইরে গাড়ির হর্ন বেজে উঠলো। অনন্তকে কালকেই বলে রেখেছিল আজ সকাল
আটটার মধ্যে বাড়িতে আসার জন্যে। আজ ও সৌম্যর
অফিসে যাবে। বারান্দায় বেরিয়ে অনন্তকে একবার হাত
দেখায় স্যাম। তারপর দ্রুত তৈরি হয়ে নিয়ে বেরিয়ে
পড়ে। গন্তব্য নিউটাউনের একটি বিখ্যাত শপিং মল।
এই শপিং মল বিল্ডিং এর টপ ফ্লোরে সৌম্যর অফিস। সকাল
সাড়ে নয়টার মধ্যে ওখানে পৌছিয়ে, সেই সময়কার
অফিসের পরিস্থিতিটা বুঝে নিতে চাইছে স্যাম।
অনন্তকে দ্রুত ড্রাইভে করতে বলে ও। ড্রাইভার অনন্তও
যতটা সম্ভব দ্রুত গাড়ি চালাতে থাকে।
বাইপাসে গাড়ি উঠতেই স্যাম একটা সিগারেট ধরায়। আর
তারপরেই গভীর চিন্তার জগতে ও ডুব দেয়।
কাল রাতে সৌম্যের ডায়েরিটা হাতে পাওয়ার পড়ে কেসের
অনেকটাই যেন সমাধান হয়ে এসেছে। এখন শুধু প্রমানের
অপেক্ষা। সেই প্রমাণটা পেলেই সৌম্য সেনকে এরেস্ট
করতে আর কোন সমস্যা হবে না।
এইসব ভাবতে ভাবতেই ঠিক নয়টা কুড়ির সময় গাড়ি শপিং মলের সামনে এসে
দাঁড়ায়। স্যাম গাড়ি থেকে নেমে সানগ্লাসটা পড়ে নেয়।
শপিং মল কমপ্লেক্সে ঢুকে চারপাশটা খুঁটিয়ে দেখতে
থাকে। দুটো ব্লকের কমপ্লেক্স।
পাশাপাশি দুটো টাওয়ার উঠে গেছে। একটা টাওয়ারে শপিং কমপ্লেক্স
আরেকটা টাওয়ারে শুধু নানা কোম্পানির অফিস।
দুটো টাওয়ারের টপ ফ্লোর ব্রিজের মতন করে জোড়া রয়েছে।
যাতে একটি টাওয়ার থেকে আরেকটি টাওয়ারে চলে
যাওয়া যায়। পুরো কমপ্লেক্সটা সিসিটিভিতে মোড়া।
স্যাম অফিস টাওয়ারের দিকে এগিয়ে যায়। এই
টাওয়ারের একদম টপ ফ্লোরে সৌম্য সেনের অফিস। ঠিক
সারে নয়টার সময় স্যাম সৌম্য সেনের অফিসের গেটে
এসে উপস্থিত হয়। গেটের সামনে একজন সিকিউরিটি
গার্ড বসে রয়েছে। স্যাম এগোতেই সিকিউরিটি গার্ডটি
এগিয়ে আসে-
- কোথায় যাবেন
- ভেতরে, রিসেপশনে কথা বলব
- অফিস খোলেনি এখনও, দশটার সময় আসুন
- আমি কসবা থানা থেকে আসছি। কিছু ইনভেসটিগেশনের
প্রয়োজনে এসেছি - কিন্তু স্যার, আমি তো এই বিষয়ে কিছু বলতে পারবো না
- আপনি আপনার বসকে ফোন করুন, আমি কথা বলব
- ঠিক আছে স্যার।
সিকিউরিটির ছেলেটি ফোনে ওর বসকে ধরে।
- হ্যালো
- হ্যালো, আমি রাজবীর সান্যাল বলছি, কসবা থানা
- হ্যা স্যার বলুন
- আপনি জানেন যে সৌম্য সেনের স্ত্রী মার্ডার
হয়েছেন? - হ্যা স্যার জানি। আপনাদের থানা থেকে গতকালই
একজন অফিসার এসেছিলেন সৌম্যর ব্যাপারে খোঁজখবর
নিতে। ওনাকে আমরা সবরকম সহযোগিতা করেছি - সহযোগিতা না করলে আপনাদেরও বিপদে পড়তে হবে।
এনিওয়ে, আমি আপনাদের অফিসটা একটু ঘুরে দেখব এবং
মিস্টার সেনের কাজের জায়গাটাও আমাকে সার্চ করে
দেখতে হবে।
- কিন্তু
- আমার কাছে অফিসিয়াল নির্দেশ রয়েছে। আপনি যদি
আমাকে শান্তিতে কাজ করতে না দেন তাহলে আমাকে
বাহিনি নিয়ে আসতে হবে - না না, তার দরকার পড়বে না। আপনি ঘুরে দেখুন
অফিসটা।
দরজা ঠেলে অফিসের ভেতরে ঢুকে পরে স্যাম। অফিসের
সর্বত্র সিসিটিভি রয়েছে। স্যাম প্রত্যেকটা রুমের দরজা
খুলে খুলে দেখতে থাকে। রুমগুলোর ভেতরে কোন
সিসিটিভি নেই। সমস্ত ক্যামেরাই করিডরে এবং সাধারন
কর্মচারীরা যেখানে বসে কাজ করছে সেখানে রয়েছে।
ব্যাক্তিগত কেবিনগুলো সব ক্যামেরা মুক্ত। স্যাম সৌম্যর
কেবিনে গিয়ে ঢোকে। সমস্ত ড্রয়ার লক করা। একটা
আলমারি রয়েছে সেটাও লক করা। সিকিউরিটিকে
জিজ্ঞাসা করে স্যাম জানতে পারে যে সমস্ত লকের
চাবি সৌম্যর কাছে রয়েছে।
এরপর স্যাম অফিসের বোর্ড রুমে গিয়ে ঢোকে। বোর্ড রুমের ঢোকার মুখে ক্যামেরা
থাকলেও, বোর্ড রুমের ভেতরে কোন ক্যামেরা নেই।
স্যাম বোর্ড রুমটা খুঁটিয়ে দেখতে থাকে। বোর্ড রুমের
ভেতরে আরেকটা দরজা রয়েছে। স্যাম সেই দরজাটার
দিকে এগিয়ে যায়।
তারপর দরজার ফ্ল্যাশটা নিচে নামাতেই দরজাটা খুলে যায় এবং এক ঝলক তাজা রোদ
বোর্ড রুমের ভেতরে এসে ঢোকে। স্যাম দরজা খুলে
বাইরে বেরিয়ে আসে।
বাইরে বেরোতেই মাথার ওপরে খোলা আকাশ দেখতে
পায় স্যাম। বুঝতে পারে এটা হল দুটো টাওয়ারের
সংযোগকারী সেই ব্রিজটা। স্যাম চারপাশটা খুঁটিয়ে
দেখে, এখানে কোন সিসিটিভির বালাই নেই। কেউ
সহজেই এই ব্রিজটা ব্যবহার করে এই টাওয়ার থেকে অন্য
টাওয়ারে চলে যেতে পারে। স্যাম ব্রিজ ধরে অন্য
টাওয়ারের দিকে হাটা লাগায়। দুটি ছেলে মেয়েকে
ব্রিজের ওপরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সিগারেট খেতে দেখা
গেল। এতো উঁচুতে হওয়াতে এখানে হাওয়াও প্রচুর। স্যাম
দ্রুত গতিতে হেটে ওপর প্রান্তের টাওয়ারে গিয়ে
পৌছায়। ওপর প্রান্তেও বিরাট বড় দরজা। স্যাম দরজার
হাতল ধরে পুল করতেই দরজা খুলে যায়। স্যাম দরজার
ভেতরে গিয়ে ঢোকে। ভেতর গিয়ে ঢুকতেই বুঝতে পারে
এটি এই টাওয়ারের সিঁড়ির ঘর। চারপাশটা ভালো করে
দেখে নেয় স্যাম। কোথাও কোন সিসিটিভি নেই।
স্যাম দ্রুত গতিতে সিঁড়ি দিয়ে নামতে থাকে। কুড়ি তলার ওপর
থেকে নিচে নামতে মিনিট দশেক সময় লাগে ওর। নিচে
নেমে বাইরে বেরোতেই বুঝতে পারে এদিকটা
টাওয়ারের পেছন দিক। এদিকে কোন লোকজন নেই।
ক্যামেরা থাকার তো প্রশ্নই ওঠে না। একটু এগোতেই
কমপ্লেক্সের বাইরে বেরনোর পেছন দিককার গেট চোখে
পরে, কিন্তু গেটটা এখন বন্ধ। এবার পুরো বিষয়টাই
স্যামের কাছে পরিস্কার হয়ে যায়।
এয়ারপোর্ট থেকে ফেরার পরে সৌম্য সাড়ে নয়টার সময়
অফিসে ঢোকে। তারপর ও ক্যামেরাকে ফাকি দেওয়ার
জন্যে বোর্ড রুমে ঢোকে। সেখান থেকে আরেকটা দরজা
খুলে ব্রিজে গিয়ে পৌছায়। সেখান থেকে ওপর
প্রান্তের টাওয়ারে এসে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে আসে।
তারপর পেছনের গেট দিয়ে বাইরে বেরিয়ে যায়। এরপর
বাড়িতে ফিরে এসে স্ত্রীর সাথে ইন্টারকোর্স করে।
কিন্তু এরপর কনডমের হিসেব না মেলাতে পেড়ে এবং
কোন পাকা প্রমান হাতে আসাতে ও নিজের স্ত্রীকে
ঠাণ্ডা মাথায় খুন করে। খুনের পরে ও একই রাস্তা দিয়ে
আবার নিজের অফিসে ফেরত আসে।
ও আবার অফিসে ফেরত আসে। স্যাম এখন রক্তের স্বাদ
পাওয়া বাঘের মতন আক্রমনাত্মক হয়ে উঠেছে।
সিকিউরিটির ছেলেটিকে দেখে স্যাম উত্তেজিত ভাবে
বলে ওঠে-
- সিসিটিভি ফুটেজ কার কাছে রয়েছে?
- সার্ভিস ইঞ্জিনিয়ারের কাছে
- নিয়ে চলুন।
সিকিউরিটির ছেলেটি স্যামকে সার্ভিস
ইঞ্জিনিয়ারের ঘরে নিয়ে যায়। সার্ভিস ইঞ্জিনিয়ার
তখন সদ্য অফিসে এসেছে। বোতল খুলে তখন ও জল
খাচ্ছে। স্যাম আর সিকিউরিটি এইভাবে হঠাৎ করে ঘরে
ঢুকে পড়াতে ইঞ্জিনিয়ার বিরক্ত হয়ে ওঠে-
- কি হল এইভাবে দরজায় নক না করে ভেতরে ঢুকে পরলেন?
ছেলেটির কথা বলার ভঙ্গিমা অত্যন্ত কুৎসিত। স্যাম
পেছন ফিরে ঘরের দরজার ছিটকিনিটা তুলে দেয়। - একি! ছিটকিনি তুলে দিলেন কেন আপনি?
- গতকাল সকালের সিসিটিভি ফুটেজ দেখব
- কে আপনি?
উত্তেজিত ভাবে কথাটা বলে ওঠে ছেলেটি। - রাজবীর স্যানাল, কসবা থানা।
ছেলেটি খানিকক্ষণ তাকিয়ে থাকে স্যামের দিকে।
তারপর অত্যন্ত রুক্ষ স্বরে বলে ওঠে- - ওভাবে সিসিটিভি ফুটেজ দেওয়া যাবে না। আপনি
কোম্পানির হায়ার অথারিটির কাছে আপ্লাই করুন। ওরা
আমাকে নির্দেশ দিলে তবেই আমি ফুটেজ দিতে পারবো - আমার হাতে অতো সময় নেই ইঞ্জিনিয়ার
- সময় নিয়ে তারপর আসুন
- আর বেশি সময় দিলে ফুটেজ নষ্ট করে ফেলা হতে পারে।
ফুটেজ আমার এখুনি চাই - মগের মুলুক নাকি? যান, বেরোন এখান থেকে।
মুহূর্তের মধ্যে স্যামের চোয়াল দুটো শক্ত হয়ে ওঠে। ও
ছেলেটির চেয়ারের পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। তারপর এক
বিশাল লাথি বসিয়ে দেয় চেয়ারটির গাঁয়ে। চেয়ার
সমেত ছেলেটি ছিটকে পরে চার পাঁচ হাত দূরে। স্যাম
সাথে সাথে পকেট থেকে নিজের সার্ভিস পিস্তলটি
বার করে। তারপর ছেলেটির কলার টেনে তুলে ওর মাথায়
সেই পিস্তলটি ঠেকায়-
- চুপচাপ ফুটেজ দেখাবি তুই, নাহলে এখানেই তোর খুলি
উরিয়ে দেবো আমি। আমার নাম রাজবীর স্যান্যাল,
আমি তোর কি হাল করতে পারি সেই বিষয়ে তোর কোন
আইডিয়া নেই।
ছেলেটি আর কথা বারায় না। চুপচাপ কম্পিউটারের
সামনে গিয়ে বসে-
- কবেকার ফুটেজ দেখবেন?
- গতকাল সকাল সাড়ে নয়টা থেকে সারে দশটার ফুটেজ।
ছেলেটি সাড়ে নয়টা থেকে সারা অফিসের ফুটেজ
দেখাতে থাকে। ফুটেজে পরিস্কার দেখা যায় যে সৌম্য
ঠিক সাড়ে নয়টার সময় ওর লাগেজ সমেত অফিসে এসে
ঢুকল। ওর কাধে একটা ব্যাগও রয়েছে। অফিসে ঢুকে
সোজা নিজের কেবিনে ঢুকে গেল। নয়টা চল্লিশে
নিজের কেবিন থেকে বেরিয়ে বোর্ড রুমে গিয়ে ঢুকল।
কাধে একটা ব্যাগ।
স্যাম পুরো সিসিটিভি ফুটেজটা নিজের মোবাইলে
ভিডিও করে নিলো।
- আপনার ফুটেজের হার্ড ডিস্ক আমার চাই। এই সংক্রান্ত
থানার চিঠি আজকেই আপনাদের কাছে এসে পৌঁছাবে।
আর এর মধ্যে ফুটেজের যদি কোন ক্ষতি হয় তার জন্যে
আপনি দায়ি থাকবেন। মনে রাখবেন আপনাকে সমেত,
পুরো ফুটেজটাই আমি রেকর্ড করে নিয়ে গেলাম।
ছেলেটি মাথা নাড়ায়। স্যাম সানগ্লাসটা চোখে পরে
নেয়। তারপর লিফটে করে সোজা নিচে নেমে আসে।
- স্যার আসবো?
- এসো সমাদ্দার, বোসো।
সমাদ্দার ভেতরে ঢুকে স্যামের উল্টোদিকের চেয়ারে
গিয়ে বসে। - মেডিক্যাল টেস্ট হয়ে গেছে, দুজনকেই বাইরে বসিয়ে
রেখেছি - সমস্ত এভিদেন্স সৌম্যর বিপক্ষে। খুব সম্ভবত সৌম্যই
খুনি - কিভাবে?
- সৌম্যর লাগেজ থেকে যে ডায়েরিটা পাওয়া গেছে,
সেটা আমি গতকাল রাতে বাড়িতে নিয়ে যাই। খুব মন
দিয়ে ডায়েরির প্রতিটা পাতা আমি পড়তে থাকি।
এভাবে পড়তে পড়তে হঠাৎ একটি পাতাতে কনডম
সংক্রান্ত একটা হিসেব দেখতে পাই। সেখানে ডেট
অনুযায়ী কনডমের ব্যবহার এবং বাক্সের ভেতরে থাকা
কনডমের হিসেব রয়েছে। হিসেবে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে
যে প্রায়ই কনডমের হিসেবে গোলমাল হচ্ছে।
তাই যদি হয় তাহলে সৌম্য ওর বউকে সন্দেহ করবে এটাই স্বাভাবিক
- কিন্তু এখানে খুনের প্রমান পেলেন কোথা থেকে?
- সৌম্যর ডায়েরির হিসেব অনুযায়ী কনডম থাকার কথা
সাতটি। কিন্তু আমরা বাক্সে পেয়েছি চারটি কনডম।
কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় সৌম্যর ডায়েরিতে গতকালের
ডেট দিয়ে লেখা রয়েছে “বাক্সে পড়ে থাকা কনডমের
সংখ্যা চার। “ ও যদি গতকাল দুপুর দুটো নাগাদ বাড়িতে
ফিরে থাকে, সেক্ষেত্রে ওর স্ত্রী ততক্ষনে খুন হয়ে
গেছে। নিজের স্ত্রীর খুন হয়ে যাওয়া মৃতদেহ দেখার পরে
ও নিশ্চই তখন কনডমের হিসেব কষতে বসবে না? যতদূর
সম্ভব ও আগে কনডমের হিসেব করেছে, তারপরে খুনটা
করেছে
- একদম ঠিক
- এছারা ওর অফিসের সিসিটিভি ফুটেজ, ওর বিরুদ্ধে
গেছে সমাদ্দার। তুমি কাউকে ওর অফিসে পাঠিয়ে
গতকাল সকাল সাড়ে নয়টা থেকে দুপুর দুটো পর্যন্ত ফুটেজ
নিয়ে আসো - আমি এখুনি কাউকে পাঠাচ্ছি স্যার
- গুড সৌম্য সেনকে ভেতরে পাঠাও
- ঠিক আছে স্যর।
সমাদ্দার বেরিয়ে যায়। স্যাম একটা সিগারেট ধরায়।
কেবিনটা আবার ধোঁওয়ায় ভরে ওঠে। খানিক্ষনের মধ্যেই
সৌম্যকে নিয়ে সমাদ্দার ফিরে আসে। স্যাম চোখের
ইশারা করতেই সৌম্য চেয়ারটায় গিয়ে বসে। পাশের
চেয়ারে সমাদ্দার বসে। ধীরে সুস্থে সিগারেটটা শেষ
করে স্যাম সৌম্যের দিকে তাকায়-
- মিসেস শর্মিষ্ঠা সেনকে খুনের অভিযোগে আমরা
আপনাকে গ্রেপ্তার করছি - না স্যর, আমি আমার স্ত্রীকে খুন করিনি
- আপনার স্ত্রীর অন্য পুরুষের সাথে অবৈধ সম্পর্ক ছিল।
সেই রাগ থেকে আপনি আপনার স্ত্রীকে খুন করেন - মিথ্যে কথা, আমি আমার স্ত্রীকে খুন করিনি
- তাহলে আপনি আমাকে একটা প্রশ্নের উত্তর দিন
মিস্টার সেন - কি প্রশ্ন?
- আপনার কনডম সংক্রান্ত ডায়েরিতে আপনি গতকালের
ডেট দিয়ে লিখে রেখেছেন যে প্যাকেটে অবশিষ্ট
কনডমের সংখ্যা চার। আপনি কনডমের সংখ্যা কখন
গুনলেন মিস্টার সেন? স্ত্রীর মৃতদেহ দেখার পরে না
আগে?
সৌম্য খানিকক্ষণ মাথা নিচু করে বসে থাকে। তারপর
আস্তে আস্তে বলে ওঠে-
- মৃতদেহ দেখার পরে
- কখন?
- দুটোর সময়
- মিথ্যে কথা? মিথ্যে কথা বলছেন আপনি…
চিৎকার করে ওঠে স্যাম- - আপনার অফিসের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে
সকাল নয়টা চল্লিশে আপনি বোর্ড রুমে ঢুকেছেন। তারপর
ব্রিজ ব্যবহার করে উল্টো দিকের টাওয়ারে যান আপনি।
তারপর টাওয়ারের সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসেন
যাতে কোন ক্যামেরায় আপনাকে দেখা না যায় যে
আপনি অফিসের বাইরে যাচ্ছেন। তারপর বাড়িতে ফিরে
এসে কনডমের হিসেবে গোলমাল দেখে আপনি নিজের
স্ত্রীকে খুন করেন
- না স্যর, ব্যাপারটা যেমন ভাবছেন তেমন নয়
- তাহলে ব্যাপারটা কি? সত্যি কথা বলুন আপনি।
সৌম্য খানিকক্ষণ চুপ করে থাকে। তারপর- - আমি দিল্লি থেকে প্রায় কুড়ি লাখ টাকা ক্যাশ
পেমেন্ট নিয়ে এসেছিলাম। এতো টাকা ক্যাশ সাথে
থাকাতে আমি এয়ারপোর্ট থেকে সোজা অফিসে এসে
ঢুকি। তারপর হায়ার অথারিটির নির্দেশে আমি নয়টা
চল্লিশ নাগাদ টাকাটা জমা করতে অফিস থেকে বেরোই
- বোর্ড রুম দিয়ে কেন?
- আমরা যখন ক্যাশ নিয়ে বেরোই অফিস থেকে, তখন
আমারা পেছনের গেট ব্যবহার করি ফর সিকিউরিটি
রিসন
- তারপর?
- অফিস থেকে বেরিয়ে আমি স্টেট ব্যাঙ্ক, নিউটাউন
শাখায় যাই। সেখান থেকে বেরোতে বেরোতে আমার
প্রায় এগারোটা বেজে যায়। আর তারপরেই আমার
কনডমের হিসেবের কথা মনে পরে। মনের মধ্যে লুকিয়ে
থাকা সন্দেহটা আবার চাগার দিয়ে ওঠে। আমি ওলা বুক
করে পৌনে বারোটা নাগাদ বাড়িতে গিয়ে পৌছাই।
আস্তে করে দরজার লক ঘুরিয়ে ভেতরে ঢুকে দেখি
শর্মিষ্ঠার মৃতদেহ খাটের ওপরে চিৎ হয়ে পরে আছে।
আমি খুব ভয় পেয়ে যাই। বুঝতে পারি ওর প্রেমিকই খুনটা
করেছে। কিন্তু কনডমের হিসেব মেলানোর লোভটা
সামলাতে পারিনা। আমি ওয়াড্রব খুলে কনডমের
সংখ্যাটা গুনে নেই। তারপর চুপচাপ ফ্ল্যাটের লক বাইরে
থেকে টেনে দিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসি
- তখুনি পুলিশে ফোন করলেন না কেন?
- প্রথমত আমি খুব ভয় পেয়েছিলাম। দ্বিতীয়ত আমি ক্যাশ
জমা করার মতন একটা গোপন কাজে বেরিয়ে বাড়িতে
চলে এসেছি, এটা আমার অফিস জানতে পারলে আমার
রেকর্ডে রেড মার্ক পড়বে। তাই আমি দ্রুত আবার অফিসে
ফিরে যাই। সেখানে লাগেজ খুলে ডায়েরিতে কনডমের
হিসেবটা লিখি। তারপর বায়োমেট্রিক সিগনেচার করে
অফিস থেকে বেরিয়ে আসি। এরপর বাড়িতে এসে পুলিশে
ফোন করি।
স্যাম খানিকক্ষণ চুপ করে কিছু ভাবে। তারপর
সমাদ্দারের দিকে তাকিয়ে-
- নিউটাউন স্টেট ব্যাংকের ফুটেজ চাই। গতকাল সকাল
দশটা থেকে বারোটার - ঠিক আছে
- ফুটেজ না পাওয়া পর্যন্ত ওনাকে থানায় বসিয়ে রাখুন
- ঠিক আছে স্যার।
সমাদ্দারের পেছন পেছন সৌম্য বেরিয়ে যায়। স্যাম
করিডরে গিয়ে পায়চারি করতে থাকে। যদি সৌম্য সত্যি
কথা বলে, যদি ব্যাঙ্কের ফুটেজে ওকে ব্যাঙ্কের ভেতরে
দেখা যায়, তাহলে কে খুন করল? যদি ভিকি সিং সত্যিই
পরশু রাত এগারটায় বেরিয়ে যায় তাহলে খুনটা করল কে?
সকাল দশটা থেকে এগারোটার মধ্যে মৃতা খুন হয়েছেন।
নয়টা থেকে দশটার মধ্যে সেক্স করেছেন। তাহলে ধরে
নিতে হবে খুনি সকাল নয়টা থেকে এগারোটার মধ্যে
ফ্ল্যাটে ছিল। কে হতে পারে?
- সমাদ্দার? সমাদ্দার?
স্যামের চিৎকারে সমাদ্দার ছুটে আসে। - বলুন স্যার
- ভিকি সিংকে নিয়ে আসুন।
কথাটা বলেই স্যাম দ্রুত পায়ে নিজের কেবিনে এসে
উপস্থিত হয়। খানিক্ষনের মধ্যেই ভিকি সিং কেবিনে
এসে উপস্থিত হয়।
- পরশু যে দুবার আপনি শর্মিষ্ঠা দেবীর সাথে সেক্স
করেছিলেন, কনডম সমেত না কনডম ছাড়া? - কনডম সমেত। শর্মিষ্ঠাই কনডম দিয়েছিল
- ব্যবহারের পরে সেই কনডম দুটো কি করলেন আপনি?
- কাগজে মুড়ে জানালা দিয়ে বাইরে ছুড়ে দেই
- কল রেকর্ড অনুযায়ী আপনার সাথে শর্মিষ্ঠা দেবীর
রোজ কথা হত। কিন্তু যেদিন উনি খুন হলেন সেদিন
একবারও ওনাকে সকাল থেকে ফোন করলেন না কেন?
- আগের দিন রাতে, আমি আর শর্মিষ্ঠা প্রচুর মদ্যপান
করি। তাই পরদিন সকালে আমার ঘুম থেকে উঠতে দেরি
হয়ে যায় - কখন ওঠেন ঘুম থেকে?
- সাড়ে এগারোটা নাগাদ সাগর আমাকে ফোন করে ঘুম
থেকে তোলে। আর তারপরেই ও আমাকে শর্মিষ্ঠার খুন
হয়ে যাওয়ার কথাটা বলে - কি? কটার সময় সাগর আপনাকে শর্মিষ্ঠার মৃত্যুর খবরটা
দেয়? - সাড়ে এগারোটা হবে।
স্যাম গভীর দৃষ্টিতে ভিকির দিকে তাকিয়ে থাকে। ঠিক
সেই সময় সমাদ্দার এসে ঘরে ঢোকে- - স্যর একটা গুড নিউস আছে?
- কি?
- কাজের মেয়েটি এরেস্ট হয়েছে। সোনার গয়না সব
উদ্ধার হয়েছে - কোথায় ছিল এতদিন
- গোবিন্দপুর বস্তিতে ওর প্রেমিকের বাড়িতে গা ঢাকা
দিয়ে ছিল এতদিন। আজ সকালেই ইনফরমারের কাছ থেকে
খবর পেয়ে অসিত মাল ওকে এরেস্ট করে নিয়ে আসে - কোথায় এখন মেয়েটি?
- লক আপে ঢুকিয়ে দিয়েছি
- নিয়ে আসো জলদি, আর একে নিয়ে যাও
- ওকে স্যর।
ভিকিকে নিয়ে সমাদ্দার বেরিয়ে যায়। খানিক্ষনের
মধ্যেই কাজের মেয়েটিকে নিয়ে এসে উপস্থিত হয়।
- আমি খুন করিনি স্যার, দিব্যি বলছি
- খুন করিসনি তো কি করেছিস?
মেয়েটি ভয়ের চোটে কাঁদতে শুরু করে দেয়। সমাদ্দার
মেয়েটির ওপর চিৎকার করে ওঠে। বেশ খানিকক্ষণ পরে
মেয়েটি মুখ খোলে- - বৌদি আমার কাছে বাড়ির একটা ডুপ্লিকেট চাবি
দিয়ে রেখেছিল। আমি আমার সময় মতন এসে ঘরের কাজ
করে দিয়ে চলে যেতাম। সেদিন… - সেদিন কি?
- সেদিন অনেকবার বেল মারলাম। বৌদি দরজা খুলল না
কিছুতেই। আমি তখন ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে দরজা খুলে
ভেতরে ঢুকলাম। শোওয়ার ঘরে ঢুকে দেখি বৌদি চিৎ হয়ে
মরে পরে আছে। আমি খুব ভয় পেয়ে গেলাম। কিন্তু
বৌদির গায়ের গয়নাগুলো দেখে লোভ সামলাতে
পারলাম না। আমি সব গয়না খুলে নিয়ে দরজা টেনে
বেরিয়ে পরলাম
- কটার সময়?
- এগারোটা সাড়ে এগারোটা হবে
- তুমি জানতে না যে পালালে তোমাকেই সন্দেহ করা
হবে? - জানতাম, কিন্তু আমি সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় আমি তিন
তলার সাগরদার মুখোমুখি হয়ে যাই। তখন আমার মনে হয়
পুলিশ যখন আসবে, তখন তো সাগরদা পুলিশকে বলে দেবে
যে আমি ফ্ল্যাটে কাজে এসেছিলাম? তখন তো সব দোষ
আমার ঘাড়ে এসে পড়বে? সেই ভয়ে আমি পালাই।
- ঠিক আছে, তুমি যাও।
মেয়েটি চোখের জল মুছতে মুছতে উঠে বেরিয়ে চলে
গেল। সমাদ্দার মেয়েটিকে লকআপে ঢুকিয়ে আবার
ফেরত এলো।
- বোসো সমাদ্দার
- কনডমের ফ্লুয়িডের রিপোর্ট কখন আসবে?
- আজ সন্ধ্যায়
- আরেকজনের মেডিক্যাল করাতে হবে আপনাকে
- কার স্যার?
- তিনতলার সাগরের।
সমাদ্দার অবাক হয়ে স্যামের দিকে তাকিয়ে থাকে।
তারপর? - ওর বিরুদ্ধে কি এভিডেন্স আছে স্যর?
- সেটা আমি সন্ধ্যায় মেডিক্যাল রিপোর্ট হাতে
পাওয়ার পরেই বলব। তুমি এখন যাও, ঘাড় ধরে ছেলেটাকে
এখানে তুলে নিয়ে এসো। তারপর বেশ খানিকক্ষণ ধরে
ওকে জেরা করে ওকে হাসপাতালে নিয়ে যাও। তারপর
ফেরত এসে ছেলেটাকে থানায় বসিয়ে রাখো। সন্ধ্যার
মধ্যে আমার সবার মেডিক্যাল রিপোর্ট চাই। আর হ্যা,
সৌম্য, কাজের মেয়েটি, ভিকি আর সাগর, সবাইকে
আলাদা আলাদা রাখবে। কেউ জানো কারোর সাথে
কোন কথা বলতে না পারে
- ঠিক আছে স্যার
- আমি এখন বেরলাম সমাদ্দার। বাড়িতে গিয়ে একটু
ঘুমবো। দুই রাত্তির আমি ঘুমোতে পারিনি।
সমাদ্দার হাসে। ও জানে স্যাম যখন বাড়িতে ঘুমোতে
যায়, তখন ও তদন্তের সমাধান করে তবেই ঘুমোতে যায়।
স্যাম হালকা চালে থানা থেকে বেরিয়ে গাড়িতে উঠে
বসে। ড্রাইভার অনন্ত স্যামের দিকে তাকিয়ে হালকা
হেসে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে দেয়।
পর্ব ৫ (অন্তিম)
সন্ধে সাতটার সময়, স্যাম থানায় ফেরে। কেবিনের দরজা
ঠেলে নিজের কেবিনে ঢুকতেই সমাদ্দার এসে উপস্থিত
হয়। হাতে তিনটে মুখ বন্ধ খাম। স্যাম খাম তিনটে হাতে
নিয়ে একে একে রিপোর্ট গুলো বার করে। রিপোর্টগুলো
পড়ে স্যামের মুখে হাসি ফুটে ওঠে। তারপর-
- চারজনকেই কেবিনে নিয়ে এসো
- ঠিক আছে স্যর।
হাসি হাসি মুখে সমাদ্দার বেরিয়ে যায়। খানিক পরে
একে চারজন কেবিনে এসে ঢোকে। সৌম্য, ভিকি,
কাজের মেয়েটি এবং সাগর। স্যাম চোখের ইশারা
করতেই ওরা চেয়ারে বসে পরে। সমাদ্দার ওদের পেছনে
হাসি মুখে দাঁড়িয়ে থাকে। স্যাম ওদের প্রত্যেককেই
ভালো ভাবে একবার দেখে নেয়। তারপর-
- গতকাল সকালে দশটা থেকে এগারোটার মধ্যে মিসেস
শর্মিষ্ঠা সেন খুন হন। আর খুনি আপনাদের চারজনের
মধ্যেই একজন।
স্যাম সবার চোখে চোখ রাখে একবার করে। সবাই
নিরুত্তাম মুখে স্যামের দিকে তাকিয়ে থাকে।
কেবলমাত্র কাজের মেয়েটির চোখে মুখে একটু চাঞ্চল্য
লক্ষ্য করা যায়।
- আপনাদের মধ্যে যে খুনি সেকি নিজেই নিজের অপরাধ
স্বীকার করে নেবেন? নাকি আমাকেই স্বীকারোক্তি
আদায় করিয়ে নিতে হবে?
সবাই নিশ্চুপ। স্যাম আবার শুরু করে-
- শর্মিষ্ঠা দেবীর এবং সৌম্য বাবুর বিয়ে হয়েছে প্রায়
ছয় বছর আগে। সৌম্য বাবু এবং তার পরিবার অসম্ভব
রক্ষণশীল মানসিকতার। শর্মিষ্ঠা দেবী গ্রামের মেয়ে
হলেও নিজের জীবনটাকে উনি খোলামেলা ভাবে
উপভোগ করতে চান। কিন্তু সেটা না করতে পেড়ে
রক্ষণশীল ও গোঁড়া সৌম্য বাবুর সাথে দাম্পত্যে উনি
হাফিয়ে ওঠেন। অবশেষে নিজের এই জীবন থেকে মুক্তির
জন্যে উনি ধীরে ধীরে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন পুরুষের
সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। এভাবেই একদিন সাগর
বাবুর বাড়ির অনুষ্ঠানে ভিকি সিং এর সাথে ওনার
সম্পর্ক তৈরি হয়। ওনারা অবাধ মেলামেশা করতে
থাকেন। সৌম্য বাবু যখনি কোন অফিসিয়াল ট্যুরে যেতেন
ভিকি শর্মিষ্ঠার ফ্ল্যাটে এসে উপস্থিত হত। ফ্ল্যাটে
আসার সময় উনি সাগর বাবুর ফ্ল্যাটে যাচ্ছেন বলে
বাড়ির ভেতরে ঢুকতেন। যেদিন শর্মিষ্ঠা দেবী খুন হলেন
তার আগেরদিন বিকেলে, শর্মিষ্ঠা দেবীর ডাকে উনি
একই ভাবে ফ্ল্যাটে এসে উপস্থিত হন। স্বামীর
অনুপস্থিতিতে শর্মিষ্ঠা দেবীও রক্ষণশীল সাজগোজ
ছেড়ে খোলামেলা পোশাক পরে প্রেমিকের জন্যে
অপেক্ষা করতে থাকেন। ভিকি আসার পরে দুজনে মিলে
মদ্যপান করেন এবং উদ্দাম শরীরী খেলায় মেতে ওঠেন।
ওদের মিলনের সময় শর্মিষ্ঠা দেবী নিজেই সৌম্যর
কনডমের প্যাকেট থেকে দুখানি কনডম ভিকিকে ব্যবহার
করতে দেন। ব্যবহারের পরে ভিকি কনডম দুটি রাস্তায়
ফেলে দেন। রাত্রি এগারোটা নাগাদ ভিকি চলে
যাওয়ার পরে শর্মিষ্ঠা দেবী আবার রক্ষণশীল তাঁতের
শাড়ির মোড়কে ঢুকে যান।
কথাগুলো বলে ভিকি সিং এর দিকে তাকায় স্যাম।
- কি ভিকি সিং? ঠিক বলছি তো?
ভিকি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দেয়। স্যাম আবার শুরু করে- - বাড়ির ভেতরে যখনি কারোর সাথে যৌন মিলনে লিপ্ত
হতেন শর্মিষ্ঠা দেবী, প্রতিবারই সৌম্যর কনডমের বাক্স
থেকে প্রেমিককে কনডম বার করে দিতেন উনি। এর ফলে
কনডমের হিসেবে একটা গোলমাল হয়। সৌম্য যার ফলে
নিজের স্ত্রীকে সন্দেহ করতে শুরু করে এবং একটি
ডায়েরিতে কনডমের হিসেব লিখে রাখতেও শুরু করে।
গতকাল সকালে শর্মিষ্ঠা দেবীর ফ্ল্যাটে আরেকজন
প্রেমিক আসেন। শর্মিষ্ঠা দেবী তার সাথেও যৌনতায়
মেতে ওঠেন। কিন্তু সেই প্রেমিকটি একটি ভুল করে
বসেন। ব্যবহারের পরে উনি কনডমটি বাথরুমের ডাস্টবিনে
ফেলেন। এরপর কোন একটি ভীষণ কারনে প্রেমিকটি
শর্মিষ্ঠা দেবীকে বালিশ চাপা দিয়ে খুন করেন এবং
বাইরের দরজার লক টেনে দিয়ে চলে যান। ইতিমধ্যেই
কাজের মেয়েটি রোজকার কাজ করতে ফ্ল্যাটে এসে
উপস্থিত হয়। কিন্তু কারোর কোন সারাশব্দ না পেয়ে ও
ওর কাছে থাকা ফ্ল্যাটের ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে দরজা
খুলে ফ্ল্যাটে ঢোকে। এরপর বেডরুমে ঢুকে শর্মিষ্ঠা
দেবীর মৃতদেহ দেখতে পায়। গয়নার ওপরে কাজের
মেয়েটির বরাবর লোভ ছিল। ও চুপচাপ মৃতদেহের শরীর
থেকে গয়না খুলে নিয়ে ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে আসে।
ফ্ল্যাট থেকে বেরনোর সময় ওর সাথে সাগর বাবুর
মুখোমুখি হয়ে যায়। এরপর কাজের মেয়েটি ভয় পেয়ে
গয়না নিয়ে চম্পট দেয়।
কথাগুলো বলে স্যাম তাকায় কাজের মেয়েটির দিকে।
মেয়েটি ওর মাথা নিচু করে নেয়। স্যাম আরও বলতে
থাকে-
- এদিকে দিল্লির কাজ মিটিয়ে সৌম্য বাবু গতকাল
সকালেই ফিরে আসেন। ওনার কাছে প্রচুর ক্যাশ পেমেন্ট
ছিল। অফিসে ঢোকার পরে সেই ক্যাশ পেমেন্ট ব্যাঙ্কে
জমা করার জন্য উনি পেছনের সিঁড়ি দিয়ে অফিস থেকে
বেরোন। ক্যাশ জমা করার পরে, উনি ওনার স্ত্রীকে
হাতেনাতে ধরার জন্যে ওলা বুক করে নিজের ফ্ল্যাটে
এসে পৌঁছান। ফ্ল্যাটে ঢুকে উনি ওনার স্ত্রীর মৃতদেহ
দেখে চমকে ওঠেন। যেহেতু উনি অফিসের কাজে
বেরিয়ে এখানে এসেছিলেন তাই তখন আর উনি পুলিশে
ফোন করেন না। উনি চুপচাপ ফ্ল্যাট থেকে অফিসে
ফিরে যান। এরপর দুপুর একটা নাগাদ উনি বায়োমেট্রিক
ডিপারচার করে বাড়িতে ফেরেন এবং পুলিশে খবর দেন।
কথাগুলো বলে স্যাম সৌম্যর দিকে একবার তাকায়।
তারপর-
- এবার আমার কাজ হল, যে প্রেমিকটি সকালবেলা
শর্মিষ্ঠা দেবীর ফ্ল্যাটে গিয়ে ওনাকে খুন করেছে
তাকে গ্রেপ্তার করা।
কথাটা শুনেই উপস্থিত সবাই সোজা হয়ে বসে। স্যাম
সাগরের দিকে কঠিন ভাবে তাকায়-
- বলুন সাগরবাবু, কেন খুন করলেন শর্মিষ্ঠা দেবীকে?
সাগর চমকে ওঠে-
- আমি খুন করিনি
- আপনি খুন না করলে আপনি জানলেন কিভাবে যে
শর্মিষ্ঠা দেবী খুন হয়েছে? - আমি জানতাম না। পুলিশ আসার পরে আমি জানতে
পারি - মিথ্যে কথা। আপনি সকাল সাড়ে এগারোটার সময়
আপনার বন্ধু ভিকি সিংকে ফোন করে শর্মিষ্ঠা দেবীর
খুনের সংবাদ জানান। শুধু তাই নয়, আপনি ওকে কলকাতা
ছেড়ে পালানোর পরামর্শও দেন - মিথ্যে কথা
- মোবাইলের কল লিস্টই প্রমান যে সকাল সারে
এগারোটার সময় আপনি ভিকি সিংকে ফোন করেছিলেন - হ্যা, ফোন করেছিলাম, কিন্তু শর্মিষ্ঠার খুন হয়ে
যাওয়ার কথা আমি বলিনি - আপনি অযথা মিথ্যে বলছেন সাগর। ভিকির মোবাইলটি
আমরা বাজেয়াপ্ত করেছি। আপনার হয়ত জানা নেই যে
ওর মোবাইলে সমস্ত কথাবার্তা নিজে থেকে রেকর্ড
হয়ে যায়। আমরা সেখান থেকে আপনার এবং ভিকির
সমস্ত কথা শুনেছি। যেখানে সকাল সাড়ে এগারোটার
সময় আপনি ভিকিকে ফোন করে শর্মিষ্ঠা দেবীর খুনের
কথা জানাচ্ছেন এবং ওকে পালানোর পরামর্শ দিচ্ছেন।
কি করে তখন আপনি জানলেন যে শর্মিষ্ঠা দেবী খুন
হয়েছ? বলুন? বলুন সবার সামনে
- মিথ্যে, সব মিথ্যে।
চিৎকার করে ওঠে সাগর। স্যাম সাথে সাথে চেয়ার
ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে সাগরের চুলের মুঠি চেপে ধরে।
তারপর ওর গালে একটা সপাটে থাপ্পর মেরে হিসহিসে
গলায় বলে ওঠে- - শর্মিষ্ঠা দেবীর বাথরুমে যে কনডমটা পাওয়া গেছে,
তার ভেতরের ফ্লুয়িডটা আপনার ছিল সাগর। মেডিক্যাল
রিপোর্ট তাই বলছে। সেই কনডমটা শর্মিষ্ঠা দেবীর
শরীরেও প্রবেশ করানো হয়েছিল। শর্মিষ্ঠা দেবীর
দেহরসও সেই কনডমের গায়ে পাওয়া গেছে। এর থেকে
এটাই প্রমানিত হয় যে আপনি এবং শর্মিষ্ঠা দেবী
সেদিন যৌন সঙ্গম করেছিলেম এবং তারপরেই আপনি
ওকে খুন করেন। আপনি ধরা পরে গেছেন সাগর, নিজেকে
এরপর যত লোকানোর চেষ্টা করবেন আপনি ততই নিজের
জালে নিজে জড়াবেন। বলুন আপনি কেন খুন করলেন?
বলুন?
প্রবল চাপের মুখে সাগর টেবিলের ওপরে ঝুকে পরে। ওর
মুখটা ধীরে ধীরে কঠিন হয়ে ওঠে। এক অদ্ভুত জিঘাংসা
ওর চোখে মুখে এসে জমা হয়। তারপর ধীরে ধীরে সব কথা
বলতে থাকে-
- শর্মিষ্ঠা একজন চরিত্রহিনা মহিলা ছিল। বহু পুরুষের
সাথে বিভিন্ন সময় ওর সম্পর্ক ছিল। এমনকি আমার বন্ধু
ভিকিকেও ও নিজের জালে ফাঁসিয়ে নিয়েছিল। ভিকির
সাথে ওর সম্পর্ক তৈরি হওয়ার পরেই আমার মধ্যেও ওকে
শারিকিক ভাবে পাওয়ার একটা চাহিদা তৈরি হয়।
আমিও তখন ওর পেছনে সময় দিতে শুরু করি। এরপর ভিকির
পাশাপাশি ও আমার সাথেও শারিরিক সম্পর্কে জড়িয়ে
পরে। আমি প্রানভরে ওর শরীরের আস্বাদ নিতে থাকি।
ওর পেছনে খরচাও করতে থাকি দেদার। এমনকি ওকে
একটা হীরের নেকলেসও আমি উপহার দেই। এরপরেই আমি
চাপ দিতে থাকি ভিকিকে ছেড়ে বেরিয়ে আসার জন্যে।
কিন্তু ও ভিকিকে ছাড়তে কিছুতেই রাজি ছিল না।
এরপর
গতকাল সকালে শারিরিক সম্পর্কের পরে, আমি ওকে
চেপে ধরি শুধুমাত্র আমার সাথেই সম্পর্ক রাখার জন্যে।
কিন্তু ও রাজি হয়না। উল্টে ও আমায় জানায় যে একটা
সময়ের পরে ও আর ভিকি বিয়ে করবে। আমার মাথায়
আগুন জ্বলে ওঠে। আমি আমার হীরের নেকলেস ফেরত
চাই। কিন্তু ও সেটা ফেরত দিতে অস্বীকার করে।
সেই
সময় প্রবল কথা কাটাকাটির মধ্যে আমি উত্তেজনার বশে
ওকে বালিশ চাপা দিয়ে খুন করি।
কথাগুলো বলতে বলতে রাগে উত্তেজনায় সাগরের মুখ
লাল হয়ে ওঠে।
- খুনটা করেই আমি নিজের ভুল বুঝতে পারি। কিন্তু কি
করবো বুঝে উঠতে পারি না। সিঁড়ি দিয়ে বারবার ওপর
নিচ করতে থাকি। এরপর হঠাৎ করে দেখতে পাই
শর্মিষ্ঠার কাজের মেয়েটি হন্তদন্ত হয়ে নিচে নামছে।
আমাকে দেখেই ও চমকে ওঠে। বুঝতে পারি ও ফ্ল্যাটে
ঢুকেছিল। ও সব জেনে গেছে। সাথে সাথে আমি
ভিকিকে ফোন করে পালাতে বলি। আমি জানতাম কল
রেকর্ড ধরে পুলিশ ভিকির কাছে পৌঁছাবেই। আর ও যদি
কলকাতা ছেড়ে পালায় তাহলে, পুলিশের দৃঢ় সন্দেহ হবে
যে ভিকিই শর্মিষ্ঠাকে খুন করে পালিয়েছে।
কথাগুলো বলে খানিকক্ষণ চুপ করে থাকে সাগর। তারপর-
- হ্যা, আমিই খুনি, আমিই খুন করেছি শর্মিষ্ঠাকে। ওর মতন
ধোঁকাবাজ মেয়ের মরে যাওয়াই ভালো।
কথাগুলো বলে, টেবিলে মাথা রেখে হাত দিয়ে দুমদুম
করে টেবিলে কয়েকটা ঘুসি চালাল সাগর। তারপর
মাথাটা টেবিলে রেখেই স্থির হয়ে বসে থাকলো।
- কেউ তার নিজের জীবন কিভাবে বাঁচবে সেটা একান্তই
তার ব্যক্তিগত বিষয়। আপনার যদি তার জীবনযাপন পছন্দ
না হয়, তবে সেই সম্পর্ক থেকে সরে আসাই ভালো। আর
হ্যা, নিজের প্রেমিকার পেছনে খরচা করলেই সেই
প্রেমিকা কারোর ব্যাক্তিগত সম্পত্তি হয়ে যায় না। তাই খরচ করার আগে বুঝেসুঝে খরচ করাই শ্রেয়। কারোর
প্রেমিকা যদি সম্পর্ক থেকে সরে যেতে চায়, তাকে খুন
করা আর পাঁচটা খুনের মতই ঘৃণ্য একটা খুন। এক্ষেত্রে খুনি
কোনরকম সহানুভুতি পাওয়ার যোগ্য নয়।
কথাগুলো বলে স্যাম পকেট থেকে একটা সিগারেট বার
করে ধরালো। তারপর সিগারেটের ধোঁওয়া ওপরে
ফ্যানের দিকে ছেড়ে বলে উঠলো-
- মিসেস শর্মিষ্ঠা সেনকে খুনের অভিযোগে আমি সাগর
দাসকে গ্রেপ্তার করলাম। আর মৃতদেহের গায়ের গয়না
চুরির অভিযোগে কাজের মেয়ে কমলা কুইল্যাকেও
গ্রেপ্তার করলাম।
কথাগুলো বলেই স্যাম কেবিন ছেড়ে বেরিয়ে আসে।
বেরনোর সময় সমাদ্দার একটা স্যালুট করে স্যামকে।
গাড়িতে ড্রাইভার অনন্ত অনেকক্ষণ ধরেই অপেক্ষা
করছিল। স্যাম গাড়ির পেছনের সিটে উঠে বসে। বসেই
শ্রেয়ার নম্বরটা ডায়াল করে। দুইবার রিং বাজার পরেই
শ্রেয়া অপর প্রান্ত থেকে ফোন তোলে-
- হ্যালো
- রেডি হয়ে নাও
- হব না
- কেন?
- দুই দিন পরে আমাকে ফোন করার সময় হল?
স্যাম হাসে। - পুলিশ অফিসারের গার্লফ্রেন্ড তুমি। এইটুকু অপেক্ষা
তো করতেই হবে।
শ্রেয়াও হাসে- - সেই জন্যেই তো এখন ফোনটা ধরলাম। বলো কোথায়
যাবে? - অনেকদিন গান শুনি না। আজ একটু গান শুনতে যাবো
- সামপ্লেস এলস?
- একদম। আধ ঘণ্টার মধ্যে পৌঁছচ্ছি।
- এসো, আমি অপেক্ষা করছি।
স্যাম ফোনটা কেটে দেয়। গাড়ি ততক্ষনে বাইপাসে উঠে
পড়েছে। ঠাণ্ডা হাওয়ায় স্যামের চুল বাতাসে উড়তে
থাকে। হাত দিয়ে নিজের চুলটা ঠিক করে নেয় স্যাম।
তারপর মৃদু হেসে অস্ফুটে নিজের মনেই বলে ওঠে ‘কনডম।’
লেখা – লামিয়া লিয়া
সমাপ্ত
(পাঠক আপনাদের ভালোলাগার উদ্দেশ্যেই প্রতিনিয়ত আমাদের লেখা। আপনাদের একটি শেয়ার আমাদের লেখার স্পৃহা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আমাদের এই পর্বের “কনডম – বাংলা গোয়েন্দা কাহিনী” গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম। ধন্যবাদ।)
আরো পড়ূন – ইচ্ছাধারী নাগ – মানুষরূপী ভয়ংকর সাপের গল্প