গজদন্তিনী – বিধবা মেয়ের প্রেমের গল্প

গজদন্তিনী – বিধবা মেয়ের প্রেমের গল্প: হঠাৎই এভাবে গজদন্তিনী জেগে যাবে কল্পনাও করি নি। উঠে নিজেকে আমার বুকে দেখে তাড়াতাড়ি করে সরে গেলো।


পর্ব ১

আমি আপনাকে বিয়ে করতে চাই, যদি আপনার কোনো আপত্তি না থাকে।

  • আমার কথা শুনে এতক্ষণ পর তানজু আমার মুখের দিকে তাকালো।
    বিধবার জন্য কি দয়া দেখাচ্ছেন? আমার কারো দয়া বা সহানুভূতির প্রয়োজন নেই।

আপনি ভুল ভাবছেন। আমি মোটাও আপনাকে দয়া বা সহানুভূতি দেখাচ্ছি না। আপনার প্রতি আমার কেমন জানি একটা মায়া জন্মেছে। শত চেষ্টায় ও সেই মায়া কাটিয়ে উঠতে পারছি না। অতঃপর বুঝতে পারলাম।
কি বুঝতে পারলেন?

এই মায়া কাটানোর থেকে আপনাকে নিজের করে নিয়ে মায়াটা আরও প্রখর করাই ভালো।
আপনার বোঝায় ভুল আছে। আপনি আমাকে এতদিন থেকেও চেনেন না যে আমার প্রতি আপনার গভীর মায়া জন্ম নিবে। মানুষ চেষ্টা করলে সব পারে। আপনিও চেষ্টা করুন মায়া কাটিয়ে উঠতে পারবেন।

  • কথাটা শেষ করেই তানজু ছাঁদ থেকে নেমে গেলো। আমিও ওর পিছনে পিছনে পা বাড়ালাম।

তানজু বাসায় ঢুকেই ওর বাবাকে বললো,

  • লোকটা যে আমায় বিয়ের জন্য বলবে সেটা কি তুমি জানতে বাবা?
    আজাদ সাহেব কিছুটা অপরাধী চেহারা নিয়ে বললো,
  • হ্যাঁ মা।

আজাদ সাহেবের কথায় মনে হচ্ছে তানজুর শরীরে আগুন জ্বলে উঠলো।

  • তুমি জেনেও ওনার সাথে আমায় কথা বলতে পাঠালে? আমি কি তোমাদের কাছে বোঝা হয়ে গেছি? যদি তাই হয় তবে বলে দিও আমি চলে যাবে। থাকবো না তোমাদের কাছে বোঝা হয়ে।

আজাদ সাহেব হয়তো কিছু বলবেন জন্য স্থির করছিলেন কিন্তু তানজু তার আগেই হনহন করে রুমে গিয়ে সজোরে দরজা আটকে দিলো।
আজাদ সাহেব মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে। আমি ওনার কাছে গিয়ে বললাম

  • আমার জন্য আপনাকে এসব শুনতে হলো। ক্ষমা করবেন। আমি আসি।

উনি কিছুই বললো, না। শুধু মাথা তুলে নিরব চোখে আমায় বিদায় জানালো।
আজাদ সাহেব আমার কলিগ। চাকরির শুরু থেকেই তার সাথে খুব সুন্দর একটা সম্পর্ক তৈরি হয়। সেই সুবাদে গতমাসে তার ছোট মেয়ে তাসমিন এর জন্ম দিনে আমায় দাওয়াত করেন। তখনই প্রথম দেখি তানজুকে। প্রথম দেখায় কেন জানি অদ্ভুত একটা ভালো লাগার আবেশে জড়িয়ে ফেলি নিজেকে।

এরপর দুই একদিন দেখা হয় তবে উনি আমায় দেখে নি। সবসময় মুখে একটা মনমরা ছাপ থাকে। কারণ টা জানার ইচ্ছে ছিলো খুব। কিন্তু কখনো সাহস করে কথা বলতে পারি নি।

এর মাঝে একদিনের পরিচয়ে তাসমিন এর অনেক টা বন্ধুর মতো হয়ে গেছি। ফেসবুকেও যুক্ত করে নিয়েছে আমায়।
যুগ পাল্টাচ্ছে, আমি চাকরি পাবার কিছু দিন আগে ফেসবুক চলাতে শুরু করি। কিন্তু তাসমিন কেবল নাইনে পড়ে এরমাঝেই সে ফেসবুক চালায়। সবই যুগের হাওয়া।

গতবার যখন তাদের বাসায় এসেছিলাম তখন তানজুকে দেখে মনে হয়েছিলো খুবই শান্ত শিষ্ট একটা মেয়ে। রাগ এর ছিটেফোঁটাও নেই তার মাঝে। কিন্তু আজ তার প্রতি আমার ধারণা সম্পূর্ণ পরিবর্তন হলো। ও তো সম্পূর্ণ রুপে পারমানবিক বোমা।

সেদিন তার মলিন মুখের গজ দাঁতের হাসির প্রেমে পড়েছিলাম কিন্তু আজ তার রাগের তীব্রতা দেখে সেই প্রেম যেন চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়তে শুরু করেছে।
সেদিন মনে মনে তাকে গজদন্তিনী নাম দিয়েছিলাম।

গতকাল আজাদ সাহেবকে ওনার মেয়ের প্রতি আমার অনুভূতি গুলো বলার পর ওনার মুখের মাঝে এক আবছা আলোর আভা দেখতে পেয়েছিলাম। কিন্তু একটু পরেই আবার সেই আলো অমাবস্যায় পরিনত হলো যখন সে বললো,

  • আমার মেয়েটা অভাগী সুমন সাহেব। অনেক ধুমধামে ওর বিয়োটা দিয়েছিলাম। কিন্তু বিয়ের মাত্র তিন মাসের মাথায় জামাই রোড এক্সিডেন্ট এর মারা যায়। তারপর থেকে আমার মায়ের মুখে আর হাসি দেখি না।

গতকালই একজন বাবার চোখের পানি দেখলাম। যে পানির জোয়ারে আমার মনের ভিতর বন্যা বয়ে গেলো।
সারা রাত ভেবে একটা জিনিসই পেলাম আমি যদি তানজুকে বিয়ে করি তবে তানজুকে একটা নতুন জীবন পাবে আর আজাদ সাহেব ও শান্তি পাবে। আমিও আমার অনুভূতির ঠিকানা খুঁজে পাবো।

তাই জন্য আজ তাদের বাসায় যাওয়া। কিন্তু যতটা সহজ মনে করেছিলাম বিষয় টা ততটা সহজ নয়। তার মনে তার মৃত স্বামীর জন্য যে ভালোবাসা সেটা অনেক প্রখর। কিন্তু আমাকেও যে আমার ভালোবাসা জয় করতেই হবে।

পরের দিন অফিস যাই নি। সকালে ঘুম থেকে উঠে হাটতে বের হলাম। গতকাল রাতেই ঠিক করে রেখেছিলাম আজ অফিসে যাবো না। তাই ঘুম থেকেও একটু দেরিতে ওঠা।

রাস্তায় হঠাৎই তাসমিনের সাথে দেখা হয়ে গেলো

  • তাসমিন তুমি এখানে?
    আমি তো এদিকে পড়তে আসি। আপনি এদিকে কেন? আপনার বাসা কি এই এলাকায়?
    হ্যাঁ। চলো কোথাও বসি। নাকি কি ব্যাস্ত তুমি?

না। আমার পড়া তো শেষ। এখন বাসায় যাচ্ছি। চলেন।
তাসমিন আমি একটা কফিশপে আসলাম। দুই কাপ কফি অর্ডার করলাম।
তো, তোমার কি অবস্থা? পড়ালেখার কি খবর?

আমার অবস্থা বাদ দেন। আপনার কি অবস্থা সেটাই বলুন। শুনলাম আপনি গতকাল আমাদের বাসায় গেছিলেন?
হুম। কিন্তু যেই কাজ গেছিলাম..
আমি জানি আপনি কেন গেছিলেন। আপনি যদি আপুকে বিয়ে করেন তাহলে কিন্তু আমার ভালোই হয়।
তাই বুঝি?

হ্যাঁ। আমি তো মনে মনে আপনাকে অলরেডি ভাইয়া ভেবেই নিয়েছি।
তাহলে আপনি বলছো কেন? তুমি বলবা।

ঠিক আছে। তবে ভাইয়া আপু যাই বলুক না কেন আমি তোমায় সাহায্য করবো। তুমি এগিয়ে যাও। জানো আপু প্রায় দিন একা একা কান্না করে। এসব আমার একদম সহ্য হয় না। খুব খারাপ লাগে। ভাবতাম যদি আপুর জন্য কিছু করতে পারতাম।

আচ্ছা তোমার বাবা কি পছন্দ করে বিয়ে দিয়েছিলো?
না, আপুরা ভালোবেসে বিয়ে করে।
ওহহ আচ্ছা। তাই জন্য তোমার আপু এতো বেশি কষ্ট পাচ্ছে।

হুম। আপুকে অনেক ( এর মাঝে আমার ফোন বাজতে শুরু করলো)
এক মিনিট, আমার কলিগের ফোন। আসসালামু আলাইকুম
ওপাশে থেকে রিয়ন ভাই বললো,

  • ওয়ালাইকুম আসসালাম। সুমন কই তুমি?

আমি তো বাসায় আছি। কেন?
আজাদ সাহেব খুব অসুস্থ হয়ে পড়ছে। তুমি প্লিজ তাড়াতাড়ি হসপিটালে আসবে?
আমি এখনি আসছি।

তাড়াতাড়ি কফির বিল দিয়ে তাসমিনকে নিয়ে হসপিটালে আসলাম।
রিয়ন ভাই বাইরে দাঁড়িয়ে আছে।

ওনার অবস্থা এখন কেমন?
তুমি আসছো। এখন ও পুরোপুরি ঠিক না। তুমি এখানে থাকতে পারবে? আমায় আবার অফিসে যেতে হবে।
সমস্যা নেই। আপনি যান। আমি আছি এখানে।

রিয়ন ভাই চলে যায়। এর মাঝেই গজদন্তিনী চলে আসছে। আসার সময় তাসমিন ওকে ফোন করে সবকিছু বলে।
মনে হয় সম্পূর্ণ রাস্তা কান্না করছে। চোখ লাল হয়ে গেছে।
বাবার কি অবস্থা এখন?

ডাক্তার ভিতরে আছে। চেকাপ করছে। আপনি শান্ত হয়ে বসুন।
তাসমিন কে বললাম ওকে নিয়ে বসতে।
ডাক্তার বের হলে জানতে পারলাম কোনো বিষয় নিয়ে খুব বেশি চিন্তা করার জন্য প্রেসার বাড়ার কারণে এমন অবস্থা হয়ে গেছে।

ডাক্তার একটা পেসক্রিপশন হাতে ধরিয়ে দিয়ে ঔষধ গুলো এনে রাখতে বললো,
আমি তাসমিন আর গজদন্তিনী ভিতরে গেলাম। আজাদ সাহেব কে ঘুমের ঔষধ দেওয়ার জন্য উনি গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।

আপনারা এখানে থাকুন আমি ঔষধ গুলো নিয়ে আসছি। আর আপনি বেশি কান্না করবেন না। ডাক্তার বললো, তো উনি আউট অব ডেঞ্জার। বেশি কান্না করলে আপনার শরীর খারাপ করবে পড়ে।

  • গজদন্তিনীর দিকে তাকিয়ে বললাম।
    ভাইয়া আমি তোমায় সাথে আসি?

না। তুমি এখানে থাকো আর উনি যেন কান্না না করে। আর কান্না করে রুম থেকে বের করে দিয়ে দরজা লক করে দিবা।
আমার মুখে এমন কথা শুনে নিমিষেই কান্না হাওয়া হয়ে গেলো।


পর্ব ২

ঔষধ গুলো কাছের ফার্মেসিতে পাওয়া না যাওয়ায় একটু দূরে চলে আসছি। ঔষধ গুলো প্যাক করা শেষ এখন হসপিটালের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিবো। হঠাৎই মোবাইলের চিরচেনা রিংটোন টা বেজে উঠলো
একটা অপরিচিত নাম্বার। ফোনটা রিসিভ করলাম

  • আসসালামু আলাইকুম।

একটা মেয়েলী কন্ঠে ভেসে আসলো

  • ওয়ালাইকুম আসসালাম। আপনি কোথায়? ডাক্তার এসে ঔষধ খুঁজছে।
    বুঝতে বাকি রইলো না যে এটা গজদন্তিনী।
    এই তো ঔষধ প্যাক করা শেষ। এখন যাচ্ছি।

একটু তাড়াতাড়ি আসবেন প্লিজ।
আমি এখনি আসছি। এটা কি আপনার নাম্বার?
হ্যাঁ – বলেই ফোনটা কেটে দিলো।

আসতে আসতে নাম্বারটা গজদন্তিনী দিয়ে সেইভ করে রাখলাম।
আজাদ সাহেবের জ্ঞান ফিরলো একটু আগেই। আমি গজদন্তিনী আর তাসমিন ওনার সামনে দাঁড়িয়ে আছি।
এখন আপনার কেমন অনুভূতি হচ্ছে?

  • আমি ওনাকে জিজ্ঞেস করলাম,
    একটু ভালো।

কি নিয়ে এতো চিন্তা করতে গেছলা তুমি? আজ যদি তোমার কিছু হয়ে যেতো তবে আমাদের কি হতো সেটা একবার ভেবে দেখেছ?

  • ছলছল চোখ নিয়ে গজদন্তিনী আজাদ সাহেবের উদ্দেশ্যে প্রশ্নটি ছুড়ে দিলো।
    আমার কি অন্য কোনো চিন্তা আছে মা। আমার তো সব চিন্তা তোদের নিয়ে – কাঁপা কাঁপা গলায় আজাদ সাহেব উত্তর দিলো।

ওনাদের এসব দেখে আমার কেমন যেনো বিরক্তি শুরু হলো। একজন অসুস্থ মানুষের সাথে অবান্তর কথা বলছে।
কি শুরু করছেন আপনি? ওনাকে একটু বিশ্রাম নিতে দিবেন তো। এসব বাসায় গিয়ে আলোচনা করবেন।
আমায় রিলিজ দিবে কখন?

আমি ডাক্তারের সাথে কথা বলে আসছি।
আমায় ডাক্তারের কাছে যাওয়া শুনে তাসমিন ও আমার সাথে আসতে চাইলো। কিন্তু গজদন্তিনী ওকে ওখানে রেখে আমার সাথে আসলো।

ডাক্তারের সাথে কথা বললাম। উনি আজকেই নিয়ে যেতে বললো, তবে একটু রেষ্টে থাকতে হবে।
ডাক্তারের কেবিন থেকে বের হয়ে গজদন্তিনী হনহন করে হাটতে শুরু করলো।
এই যে শুনছেন? – আমার ডাকে পিছনে ফিরে তাকালো।
কিছু বলবেন?

সেই সকালে আসছেন। চলেন কিছু খেয়ে নিবেন।
আমার ক্ষুধা নেই। আর বাবা তাসমিন ওরাও তো না খেয়ে আছে।

তাই জন্য তো বলছি। চলেন কিছু খেয়ে নিবেন আর ওনাদের জন্য পার্সেল করে নেওয়া যাবে।
আমি যাবে না। আপনি তাসমিন কে সাথে নিতে পারেন।
বিশ্বাস করতে পারেন কোনো অবান্তর কথা বলবো না। কোন সিচুয়েশনে কোন কথা বলতে হয় আর কিছু না হোক সেটা অন্তত জানা আছে আমার।

অনিচ্ছা সত্ত্বেও কি ভেবে আমার সাথে আসতে রাজি হলো।
সকালে গল্পের ধারায় তাসমিন একবার বলেছিলো গজদন্তিনীর বিরিয়ানি খুব পছন্দ। তাই ওকে নিয়ে একটা বিরিয়ানি হাউজে আসলাম।

ওয়াশ রুমে ফ্রেশ হয়ে সিটে বসলাম।
আপনি বিরিয়ানি খাবেন নাকি কাচ্চি।
আমি কিছু খাবো না। আপনি এতো করে বললেন জন্য আসলাম। ওদের জন্য প্যাক করে নিন তাহলেই হবে।

গজদন্তিনীর কথা শুনে মুচকি হেঁসে ওয়েটার কে দুই প্লেট বিরিয়ানি অর্ডার করলাম। রাগ আমার উপর আছে কিন্তু বিরিয়ানির উপর রাগ করে থাকতে পারবে না।
আপনাকে একটা কথা বলি?

যদি গতকালের বিষয়ে হয় তবে না বলাই ভালো হবে।
আরে না। ঐটা না। আপনার বাবা কে এক সপ্তাহ অফিসে যেতে দিবেন না। ওনার পুরোপুরি সুস্থ হওয়া দরকার। আর ওনার একটু খেয়াল রাখবেন।
হুম।
এর মাঝেই বিরিয়ানি চলে আসলো। আমার ভাবনাটাই ঠিক। বিরিয়ানির উপর রাগ করে থাকা কোনো সাধারণ মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়।
খাওয়া শেষ করে ওনাদের জন্য পার্সেল নিলাম।

হসপিটালে এসে দেখি তাসমিন বসে গেমস খেলছে। পরিবারের ছোট মেয়েরা সবসময় একটু বেখেয়ালি স্বভাবের হয়।
ডাক্তার সাথে কথা বলতে এতক্ষণ লাগলো বুঝি? – হাসতে হাসতে আমার দিকে তাকিয়ে কথাটা বললো, ওর মাঝে কোনো সিরিয়াসনেস না দেখে গজদন্তিনী চোখ রাঙিয়ে ওকে সাবধান করে দিলো।

এখন রাত প্রায় আটটা। আজাদ সাহেব কে নিয়ে বাসায় ফিরলাম। ওনাকে ওনার বিছানায় শুইয়ে দিয়ে আমি চলে আসলাম।
আসার সময় দরজা লক করার জন্য গজদন্তিনী নিজেই আসলো – আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ? সেটা কেন?
সারাদিন আমাদের সাথে থাকার জন্য।

একটা সুযোগ দিলে সারা জীবন থাকতে রাজি।
গজদন্তিনীর থেকে প্রতিত্তোরে কিছু আশা করছিলাম। কিন্তু আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বিরক্তিকর একটা ভাব নিয়ে দরজা লক করে দিলো।
রাতের আকাশ, নিস্তব্ধ শহর, এমন একটা পরিবেশ একা একা হাটার জন্য সব থেকে উত্তম।
রবী ঠাকুরের মল্লিকা বনে গানটা গুনগুন করছি আর হাঁটছি।

হঠাৎ ফোনের বিরক্তিকর টোন বেজে উঠে আমার সুন্দর মুহূর্ত উদযাপনে বাঁধা দিলো।
তাসমিন ফোন দিছে
হ্যাঁ বলো তাসমিন।

তুমি বাসায় গেছো ভাইয়া?
বাব্বাহ, আমার খোঁজ নেওয়া হচ্ছে দেখি।
আপু জানতে চাইলো তাই ( গজদন্তিনী হয়তো পাশেই ছিলো তাই তার নাম বলায় তাসমিন কে বকে চলে গেলো)
ওহহ আচ্ছা। বাসার কাছেই আছি তবে এখনো বাসায় যাই নি।

হুম। আচ্ছা সাবধানে যেও। আমি রাখলাম।
আচ্ছা।
সারাদিনের ক্লান্তি রাতের বেলায় পুরোপুরি অনুভব করা যায়। বিছানায় শরীর মেলিয়ে দিতেই গভীর ঘুমের আবেশে জড়িয়ে গেলাম। সারা রাত কোন দিকে গেলো বুঝতে পারলাম না।

সময়টা ঠিক আন্দাজ করতে পারছি না। ফোনটা এমন করে বাজছে মনে হচ্ছে দুধের শিশু সকাল বেলা মায়ের কাছে খাবার বায়না ধরেছে।
ঘুম ঘুম চোখে ফোনটা খুঁজে রিসিভ করলাম।
হ্যালো।

ভাইয়া তুমি এখনো ওঠো নি? অফিসে যাবা না?
কয়টা বাজে?
এই তো আট টা।
তাসমিনের কথায় বিছানা থেকে উঠে বসলাম।

এতটা বেলা হয়ে গেছে?
হ্যাঁ।
তুমি এতো সকালে ফোন দিলে যে নাকি এখনো তোমার আপু ফোন দিতে বলছে?
আসলে অনেক টা তাই। বাবা অফিস যেতে চাচ্ছে। তুমি প্লিজ বাবাকে একটু বলো।
আচ্ছা। ফোনটা ওনাকে দাও।

আজাদ সাহেবের সাথে কথা বলে ওনাকে বাসায় থাকতে বললাম।
নয়টার আগেই অফিসে যেতে হবে নয়তো বস আমার বেহাল অবস্থা করবে।
তারাহুরো করে বের হলাম। নাস্তা করারও সময় নেই।

এখন প্রায় বারোটা বাজে। কাল থেকে কিছু খাওয়া হয় না। পেটে তো ক্ষুধায় ইঁদুর দৌড়ে বেড়াচ্ছে। কাজেও মন বসছে না। টিফিন সময় আসতে এখনো প্রায় এক ঘন্টা বাকি।

ফোনটা হাতে নিয়ে গ্যালারি ফোনবুকে ঘোরাঘুরি করছি। যদি এতে সময়টা তাড়াতাড়ি কেটে যায়।
হঠাৎই চোখে গজদন্তিনী নামটা পড়লো।
ফোন দিবো কি?

কিন্তু ফোন দিয়ে কি বলবো?
সেটা পরে দেখা যাবে আগে ফোন তো দেই।
আসসালামু আলাইকুম

ওয়ালাইকুম আসসালাম। কিছু বলবেন?
আপনি আমার নাম্বার সেইভ করে রাখছিলেন?
না। তবে মনে রেখেছিলাম। কারণ আমি জানতাম আবার আমার কাছে ফোন আসবেই।
বাহ আপনি তো ভবিষ্যৎ বলতে পারেন দেখছি।

আপনার যদি দরকারী কোনো কথা থাকে তবে বলতে পারেন। নয়তো আমি ফোন কাটবো।
কি যেন বলতে ফোন দিলাম ভুলে গেছি।
অযথা ফোন দিবেন না। এটা আমার পছন্দ না। যত্তসব। – বলে মুখের ওপর ফোন কেটে দিলো।
এমন কেউ হয়? একটু সুখ দুঃখের কথা বলে সময়টা কাটিয়ে দিতাম। কিন্তু…
আর একবার ফোন দিবো?

যদি রেগে যায়?
আচ্ছা একটু রাগলে কি আর এমন হবে।
একবার রিং বেজে কেটে গেলো রিসিভ করলো না।

আবার দিবো কিন্তু সেই সময় গজদন্তিনী নিজেই ফোন দিছে।
এখন তো ভয়ে আমার হাতে কাঁপুনি শুরু হলো।


পর্ব ৩

কাঁপা কাঁপা হাতে ফোনটা রিসিভ করলাম
আপনার সমস্যা কি? বার বার ফোন দিচ্ছেন কেন?
গজদন্তিনী যে এতটা রেগে যাবে কল্পনাও করতে পারি নি। আমি তো শুধু দুই বার ফোন দিলাম। – আমতা করে বললাম।

আপনি প্রয়োজন ছাড়া কেন ফোন দিবেন?
আমি তো প্রয়োজনেই ফোন দিয়েছি।
ওহ আচ্ছা। কি প্রয়োজন?

বাচার জন্য তো বললাম প্রয়োজন। এখন কি বলবো? কি প্রয়োজন?
ওহ হ্যাঁ মনে পড়ছে
বলছিলাম আজাদ সাহেব এখন কেমন আছেন?

আজাদ সাহেবের কথা বলায় গলাটা শান্ত হয়ে গেলো – কিছুটা সুস্থ।
ওহ। ঔষধ গুলো ঠিক মতো দিচ্ছেন তো?
হ্যাঁ। আর কিছু বলবেন?
আপাতত তো কিছু খুঁজে পাচ্ছি না। পেলে ফোন দিবো।

গজদন্তিনীকে কথা বলার সুযোগ না দিয়েই কেটে দিলাম। যদিও বা ওর রাগ আমার মন ছুয়ে যায় কিন্তু এবার ওর রাগের পরিমাণ বাড়তে পারে তাই ফোন কেটে দেওয়া।

একটা মেয়ে তার বাবাকে যে পরিমাণ ভালোবাসে এবং যে পরিমাণ তার কষ্ট বুঝতে পারে যদি সেই পরিমাণ তার স্বামীকে বোঝার চেষ্টা করতো তবে পৃথিবীটা সুখের সমুদ্রে ভেসে থাকতো। কিন্তু এদের চোখে বাবা আর ভাই ছাড়া সব পুরুষ খারাপ।

অফিস শেষে সন্ধ্যার পর গজদন্তিনীর বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিচ্ছি। হঠাৎই গজদন্তিনী চোখে পড়লো।
এই অবেলায় আপনি একা এখানে কেন? – পিছনে থেকে হঠাৎ করে কথা বলায় চমকে গেছে।
বাবার জন্য ফল কিনতে আসছিলাম।

এর জন্য আপনাকে এই সময় বাইরে আসতে হবে?
তো কে আসবে?
আমায় বললেই তো হতো। আর আমি ফল নিয়েছি। চলেন আপনাকে ফল নিতে হবে না।
কিন্তু

আবার কিন্তু কিসের? আকাশের অবস্থাও ভালো না। যেকোনো সময় বৃষ্টি নামতে পারে চলেন।
গজদন্তিনীর চোখে একটু ভয় দেখলাম। ও কি আমায় ভয় পাচ্ছে? তাহলে তো ভালোই ভয় পেলে ওকে কেমন বাচ্চাদের মতো লাগে। হিহি।

নিয়ন আলোয় হাটছি। ইশশ যদি হাতটা ধরতে পারতাম।
হঠাৎই বৃষ্টি নামতে শুরু করলো। কোনো রকম কাক ভেজা হয়ে একটা ছাউনির নিচে আশ্রয় নিলাম। আগে থেকেই ওখানে দুই জন ছিলো।

বাসার কাছে এসেই বৃষ্টি নামতে হলো।
বৃষ্টি তো আর দেখতে পাচ্ছে না যে কে বাসার কাছে আর কে দূরে।
গজদন্তিনী আমার দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলো। কিন্তু আমি বুঝতে পারলাম না কি জন্য কথা না বলে চুপ হয়ে গেলো।

জানার জন্য আমিও পিছনে ফিরে তাকালাম। যে দুজন আগে থেকেই ছিলো তারা প্রেমিকযুগল। ছেলেটা মেয়েটাকে গভীর আবেশে বুকে জড়িয়ে নিয়েছে।
হঠাৎই ছেলেটার সাথে আমার চোখাচোখি হতেই ছেলেটা বললো, – ভাইয়া আপুরও বোধ হয় শীত করছে। আপনি আমার মতো করে ধরুন। আপনার এবং আপুর দুজনেরই শীত হাওয়া হয়ে যাবে।

আমি মুচকি হেঁসে বললাম – মন তো চায় ধরতে কিন্তু সেই কপাল তো উপরওয়ালা দেয় নি ভাইয়া। আপনি ধরে থাকুন
গজদন্তিনী রাগে ফোঁস ফোঁস করছে। কি জন্য রেগে গেলো কিছুই তো বুঝতে পারলাম না।

বৃষ্টি মোটামুটি থেমে গেলো। গজদন্তিনী আর এক মুহুর্ত না দাঁড়িয়ে হাঁটতে শুরু করলো।
গজদন্তিনী এই গজদন্তিনী – আমার ডাক শুনে দাঁড়িয়ে পড়লো।
কি বললেন আপনি?

একটু ধীরে হাঁটুন। আমি তো আপনার নাগালে পাচ্ছি না।
আপনি ওখানে কি বললেন?
কই কিছু না তো। যা বলার তা তো ঐ ছেলেটাই বললো,
আপনি কিছু বলেন নি?

উঁহু।
মন তো চায়। কিন্তু কপাল খারাপ এটা কে বললো, ?
ওহহ। তাহলে আপনার রাগের কারণ এইটা? আমি তো আপনাকে বলি নি। অন্য কাউকে বলছি।
তাহলে ঠিক আছে। আর আপনি আমার পিছনে আসছেন কেন?

আপনার বাবাকে দেখতে।
ওহ।
যাক বাবা এই যাত্রায় বেঁচে গেলাম।

একটু পরেই বাসায় এসে পৌঁছে গেলাম। আমায় দেখে তাসমিন তো খুশিতে আটখানা।
একি ভাইয়া তুমি তো পুরো ভিজে গেছো। তুমি দাঁড়াও আমি তোমার কাপড় চেঞ্জ এর ব্যাবস্থা করছি।
মেয়েটা খুবই চনচল। এক মুহুর্ত কোথাও স্থীর থাকে না।

একটু পর একটা শার্ট আর একটা লুঙ্গি নিয়ে হাজির হলো।
এগুলো কোথায় পেলে তুমি?
বাবার।

কিন্তু আমি তো লুঙ্গি পড়তে পারি না।
এত বড় হয়েছো লুঙ্গি পড়তে পারো না। আসো আমি শিখিয়ে দিচ্ছি।
পাশেই গজদন্তিনী ছিলো। তার দিকে তাকাতেই দেখি চোখ রাঙ্গিয়ে আছে।

থাক আপু লাগবে না। আমি তো এখনি চলে যাবো। তোমার বাবাকে ডেকে দাও।
তুমি বাবার রুমে যাও।
আচ্ছা।

আমি আজাদ সাহেবের রুমের দিকে পা বাড়ালাম। হঠাৎ উনি নিজেই দেখি বের হলো।
আপনি অসুস্থ শরীর নিয়ে বাইরে আসলেন কেন?

তোমার কন্ঠ শুনে বের হলাম। তুমি তো ভিজে গেছো। কাপড় টা বদলে নাও।
দরকার হবে না। আমি এখনি চলে যাবো।
বাইরে তো বৃষ্টি হচ্ছে।
আবার বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলো?

হুম। এবার অনেক জোরেই বৃষ্টি নামছে। তুমি বাসায় যেতে পারবে না ভাইয়া। আজ তোমায় এখানেই থাকতে হবে।
মজা করিও না। বৃষ্টি কমলেই আমি চলে যাবো।
আজ না হয় থেকেই যাও।
আমি থাকলে হয়তো কারো অসুবিধে হবে।

আমার কথা শুনে মুখ ভেঙচিয়ে গজদন্তিনী রুমে চলে গেলো।
সেদিন আর আসা হলো না। রাতে সেখানেই থাকতে হলো। খাওয়ার পর ড্রয়িং রুমে বসে আছি তাসমিন একটা বই দিয়ে গেলো – ভাইয়া এই বইটা পড়। খুব ভালো লাগবে।
তাই কি বই?

বরফ গলা নদী, জহির রায়হানের।
ভাবলাম বৃষ্টির দিনে নদীর গল্প পড়তে ভালোই লাগবে। আগে কখনো এসব উপন্যাস পড়া হয় নি।
তখন থেকে পড়া শুরু করলাম। যতই পড়ছি ততই গল্পের ভিতরে চলে যাচ্ছি। সময়ের দিকে কোনো খেয়াল নেই।
আপনি এখনো এখানে কেন? – গজদন্তিনীর হঠাৎ কথা বলায় চমকে উঠলাম।

ওহহ ভয় পাইয়ে দিলেন তো। এখন যদি আমার অসুখ বাধে তো কে সেবা করবে শুনি?
আমার কথা উপেক্ষা করে আবার বললো, – এখনো এখানে কি করছেন? রুমে গিয়ে শুয়ে পড়ুন।
তাসমিন একটা বই দিলো তো সেটাই পড়ছি। অনেক মজাদার।

ওহহ। আচ্ছা। পড়া শেষ হয়ে গেলে লাইট বন্ধ করে দিবেন।
আপনি কি এখনি ঘুমাবেন?
না কেন?

তাহলে বসুন না গল্প করি।
গজদন্তিনী এসে আমার পাশে বসলো। আমি কখনো ভাবি নি যে গজদন্তিনী আমার কথায় আমার সাথে গল্প করার জন্য বসবে।
আপনি বৃষ্টি পছন্দ করেন?

নাহ।
পৃথিবীর বেশির ভাগ মানুষের তো বৃষ্টি পছন্দ। আপনার না কেন?
মনে করুন ঐ কম ভাগ মানুষের দলে আমি।
কিন্তু পছন্দ না করার কারণ টা জানতে পারি?

এমনিতেই। তবে বাজ( বাজ কথাটা উচ্চারণ করার সাথে সাথে অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে বিরাট গর্জন করে একটা বাজ পড়লো। সাথে সাথেই গজদন্তিনী আমায় জড়িয়ে ধরলো। এতক্ষণে বুঝলাম বৃষ্টি কেন পছন্দ নয়। )
এভাবেই যদি জড়িয়ে থাকে দিবস রজনী
তবে পৃথিবী হোক বাজ রাজ্য।


৪র্থ পর্ব

তানজু যে এভাবে হঠাৎই আমায় জড়িয়ে ধরবে এটার জন্য মানসিক এবং শারীরিক কোনো ভাবেই প্রস্তুত ছিলাম না। প্রথম বার কোনো মেয়ের স্পর্শে আসলাম। এই হালকা শীতের মাঝেও শরীর ঘামতে শুরু করছে।

রেশটা কাটতেই তানজু সরে গিয়ে নিজেকে ঠিক করে নিয়ে উঠে দাঁড়ালো। আমি যে কিছু বলবো সেই সাহসটাও পাচ্ছি না। আমি এখনো ঘামছি। তানজু উঠেই চলে যেতে লাগলো।
চলে যাচ্ছেন যে?

এবার গজদন্তিনী দাঁড়িয়ে পড়লো কিন্তু কোনো কথা বললো, না।
দেখুন এটা একটা এক্সিডেন্ট। এতে লজ্জা পাওয়ার তো কিছু নেই।
আপনি কি আর কিছু বলবেন?

বলার তো অনেক কিছুই আছে। যদি বসতেন তাহলে কিছুটা গুছিয়ে বলার চেষ্টা করতাম।
তানজু গুটি গুটি পায়ে এসে বসলো। কিন্তু এবার একটু দূরত্ব রেখে বসলো।
দুজনেই চুপচাপ, কেউ কথা বলছি না। তানজু নিচের দিকে তাকিয়ে হাতের আঙুল দেখছে।

আমি হঠাৎই ওর কাছে এগিয়ে গিয়ে ওর হাত ধরে বললাম – সারা জীবন আপনাকে এভাবে আগলে রাখার অধিকার টা আমায় দিবেন? কখনো এতটুকু আচ লাগতে দিবো না। প্লিজ দিন না।
আমার এভাবে হঠাৎই তার হাত ধরে কথা বলায় গজদন্তিনী কিছুটা শক খেয়েছে মনে হয়। আমার দিকে একটু তাকিয়ে তার হাত সরিয়ে নিলো।

আবার উঠে দাড়ালো। চলে যাচ্ছে।
কিছু বললেন না যে?
আপনি ভালো করেই জানেন আমি কি বলতে পারি।

আমি কেন আপনাকে আপন করে পাবো না? আমার অপরাধ কি?
গজদন্তিনী মুচকি হাসলো- অপরাধ? আপনার অপরাধ সেটা কে বললো, ? অপরাধ আমার আমার কপালের।
আপনি শুধু শুধু নিজেকে দোষ দিচ্ছেন। এখানে তো আপনার কোনো হাত নেই।
দেখুন আপনি যতোই বলুন না কেন এটা সম্ভব নয়।

আপনি চাইলেই সম্ভব।
আমি তো চাই না। আর কখনো চাইবোও না। আর আপনার পরিবার কখনো এটা মেনে নিবে না।
আমার পরিবার কে আমি রাজি করাবো। শুধু আপনি…
আমায় দিয়ে দ্বিতীয় কাউকে ভালোবাসা সম্ভব নয়।

কেন নয়?
আমায় বিয়ে করলে সমাজের নব্বই শতাংশ মানুষ আপনাকে বাজে কথা বলবে।
আমি সমাজের নিয়মে চলি কিন্তু সমাজের কথায় না। মানুষ তো কত কিছু বলে। চাকরি না পেলে অপদার্থ, হতভাগা আরও কত কি। কই কেউ কি কোনো দিন দুই মুঠো ভাত কারো মুখে তুলে দেয়? আপনার মতো সমাজে আরও অনেক মেয়ে আছে। যদের স্বামী অকালে ঝরে পড়ে।

কই সমাজ তো তাদের কথা কখনো চিন্তা করে নি। শুধু খোঁটা দিতেই সমাজ বাকি কোনো কাজে সমাজ নয়। সমাজ যদি ভালোই চাইতো তবে খোঁটা দেওয়ার পরিবর্তে আপনাদের মনের অবস্থা বুঝতে চেষ্টা করতো।

আর আপনি বললেন না সমাজের নব্বই শতাংশ মানুষ সমালোচনা করবে বাকী দশ শতাংশ তো সাপোর্ট করবে সেখান থেকে যদি দুই জন অনুপ্রাণিত হয়ে আরও দুইজন বিধবা কে বিয়ে করে আবার স্বপ্ন দেখার সুযোগ করে দেয় তাহলে একটা সময় আপনার মতো কোনো নারী স্বপ্নহীনতায় ভুগবে না। সবাই নতুন করে বাঁচতে শিখবে।
কিন্তু আমি তো পারবো না।

আমার মন সব সময় তার কাছেই পড়ে আছে এবং থাকবে।
যে ( আমাকে আর কথা বলতে দিলো না)
আপনি দয়া করে এই বিষয়ে কথা বলা বন্ধ করুন।

আমি চাই না আর এই বিষয়ে কোনো কথা হোক।
গজদন্তিনী চলে গেলো। কিভাবে আমার অনুভূতি টা বোঝাবো যাওয়ার আগে একবার বললাম – দয়া করে আপনি একটু ভেবে দেখবেন।

আবার সোফায় বসলাম। হঠাৎ খিলখিল করে হাসতে হাসতে তাসমিন আমার সামনে এসে দাঁড়ালো।
বাহ ভাইয়া তুমি তো অনেক সুন্দর কথা বলতে পারো।
তুমি কই ছিলে?
আমি দরজার ওপাশে ছিলাম।

ভালোই হলো। তুমি দরজা টা লাগিয়ে দাও।
দরজা তো লক করাই আছে।
আমি চলে যাবো। তুমি লক করে দিও।

এতো রাতে? আর বাইরে খুব বৃষ্টি হচ্ছে। বাজ ও পড়ছে।
সমস্যা নেই যেতে পারবো। বৃষ্টির পানিতে যদি হৃদয় কিছুটা শান্ত হয়।
কিন্তু..
দরজা লক করে দাও।

তাসমিন কে আর কিছু বলতে না দিয়েই চলে আসলাম।
আমার মাঝে কি এমন কম আছে যে আমায় ভালোবাসতে পারবে না?
রাতে বৃষ্টিতে ভিজেই বাসায় আসলাম। আসলে গজদন্তিনীর সাথে কথা বলে আর কেন জানি থাকতে মন শায় দিলো না।

আম্মু গেইট খুলে একগুচ্চ কথা শুনিয়ে দিলো। আম্মু বকা সবসময় এক কানে শুনে অন্য কানে বের করে দেওয়া স্বভাব আমার। কখনো গায়ে মাখি না।
পরের দিন অফিসে গিয়ে দুপুরে যখন সবাই খাওয়ার জন্য ক্যানটিনে গেলো। তখন ভাবতে লাগলাম গতকাল রাতে চলে আসলাম এরপর একবার ও কেউ ফোন দিলো না। আসলেই মন থেকে গজদন্তিনী আমায় সহ্য করতে পরে না। শুধু শুধু ওকে বিরক্ত করি।

ফোনটা পকেটে থেকে বের করে দেখি সুইচ অফ। অন করতেই কয়েকটা ম্যাসেজ আসলো।
ম্যাসেজ টা সিন করতে যাবো সেই সময় তাসমিনের ফোন।
হ্যালো

কই ছিলা, তোমার ফোন বন্ধ কেন? সবাই কতো টেনশনে ছিলো জানো তুমি? – পাগলীটা একনিশ্বাসে অভিযোগের তালিকা পাঠ শেষ করলো। কান্নাও করছে।

মানুষ শুধু মাত্র তার নিজের মানুষের জন্য চোখের পানি ঝড়ায় তবে কি আমি তাদের….
সকালে তাড়াতাড়ি ফোন নিয়ে পকেটে রাখছি খেয়াল করি নি।
বাবা তোমায় দেখা করতে বলছে।
আচ্ছা।

মেয়েটা সত্যি পাগলী।
কিছুদিন গজদন্তিনীকে তেমন দেখা হয় না। মনটা তো খুব চায় কিন্তু ওকে বিরক্ত করতে চাই নি।
আজ শুক্রবার, বিকেলে হাটতে বের হইছি একটু। আচমকাই গজদন্তিনীর সাথে দেখা হয়ে গেলো।
ভালোই হলো আপনার সাথে দেখা হয়ে গেলো। আপনাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছিলো।
কেন?

সেই কেনোর মানে টা যদি আপনি বুঝতে পারছেন।
ভেবেছিলাম আপনার সাথে ভালো করে কথা বলবো কিন্তু আপনি সামনে আসলেই ঐ এক বিষয় নিয়ে পড়ে থাকেন।
গজদন্তিনী বিরক্তি নিয়ে হাটতে শুরু করলো। আমিও বকবক করছি আর তার পিছনে পিছনে হাঁটছি।
হঠাৎই একজন লোক সামনে এসে দাঁড়ালো।
তানজু কেমন আছো আর ও কে – লোকটা গজদন্তিনী জিজ্ঞেস করলো

গজদন্তিনী মাথা নিচু করে শুধু বললো, – উনি
থাক বলতে হবে না। তুমি যাও।
গজদন্তিনী চুপচাপ চলে গেলো।

একটু পরে জানলাম লোকটা পুলিশ যখন আমায় ইভটিজিং এর জন্য থানায় নিয়ে আসলো।
আমি তাদের এতো করে বোঝানোর চেষ্টা করলাম কিন্তু কিছুতেই কিছু হলো না।
আমি বার বার নিজেকে নিরপরাধ প্রমাণ করতে যাওয়া লোক টা সজোরে আমায় একটা থাপ্পড় দিলো।

বুঝতেই পারলাম না কি হতে কি হয়ে গেলো। লোকটা বার বার এসে শাসিয়ে যাচ্ছে – ইভটিজিং করার শক বের করবো তোর আজ।
স্যার বিশ্বাস করুন আমি ওনাদের চিনি। আর ওরাও আমায় চেনে।

তানজু যদি তোকে চিনতো তবে অবশ্যই আমায় বলত। এখন বাঁচার জন্য মিথ্যা বলছিস। এর জন্য তোকে কি করতে পারি ভাবতেও পারবি না।
বুঝতে পারলাম কিছুতেই কোনো কাজ হবে না। তাই শুধু শুধু আর নিজেকে নিরপরাধ প্রমাণ করতে গেলাম না। ভাগ্যে যা আছে তাই হবে।


পর্ব ৫

ইভটিজিং মামলায় এমন ভাবে ফাঁসিয়ে দিবো যে কোনো দিন আর কোনো মেয়ের দিকে তাকানোর সাহস পাবি না – অফিসার এভাবে একের পর এক হুমকি দিয়েই যাচ্ছে।
যখন বুঝতে পারলাম আমার কথার কোনো মূল্যায়ন হবে না তখন থেকে চুপচাপ শুধু তার কথা শুনেই যাচ্ছি। এখন উপরওয়ালা যা ভালো মনে করবেন তাই হবে।

একটু পরেই তাসমিনকে দৌড়ে থানার ভিতরে আসতে দেখলাম। আমায় দেখেই আমার কাছে চলে আসলো।
ভাইয়া তুমি ঠিক আছো তো? – মেয়েটা আজ দ্বিতীয়বার আমার জন্য কান্না করছে।
আমি ঠিক আছি। তুমি এখানে কেন?

আমাদের কথার মাঝেই সেই অফিসার চলে আসলো তাসমিন না তুমি? তানজুর ছোট বোন?
হ্যাঁ। আপনি ওকে ধরে আনছেন কেন?

ও তোমার বোনকে ইভটিজিং করছিলো তাই। তুমি চিন্তা করিও না ওকে এমন শায়েস্তা করবো কোনো দিন কোনো মেয়ের দিকে তাকানোর সাহস হবে না। যাই হোক, তোমার বাবা কেমন আছে?

উনি একটু অসুস্থ, নয়তো উনি নিজেই আসতেন। আর উনি কোনো ইভটিজার নয়। উনি আমাদের আত্মীয়। আপনি শুধু শুধু ওনাকে এভাবে আটকে রেখে কষ্ট দিচ্ছেন।
ওহহ আচ্ছা। তোমার আপু তো কিছু বললো, না।

আপু তো এটাও বলে নি যে উনি আপুকে ইভটিজিং করছে।
সেটা তুমি ঠিকই বলছো। চলো চা খেয়ে আসি, এরপর এসে ওকে ছেড়ে দিবো।
না ভাইয়া। আপনি ওকে আগে ছেড়ে দিন। বাসায় বাবা আপু খুবই চিন্তা করছে।

অফিসার একজনকে বললো, আমায় ছেড়ে দিতে। – যে কোনো সমস্যায় আমায় ফোন করিও এই নাও আমার কার্ড।
তাসমিন আচ্ছা বলে কার্ডটা নিয়ে নিলো।
মেয়েটার সাহস আছে বলতে হবে। একা একা থানায় পর্যন্ত চলে আসছে।
রিকশায় চুপচাপ বসে আছি। তাসমিনই প্রথম কথা বলা শুরু করলো – তোমাকে ওরা মেরেছে?

মুচকি হেঁসে বললাম – কই না তো। তবে একটু আদর যত্ন করেছে এই আর কি।
ইশ, খুব ব্যাথ্যা পেয়েছো তাই না? লাল হয়ে গেছে গাল।
তুমি শুধু শুধু কষ্ট পাচ্ছো। আর তুমি থানায় আসতে গেলে কেন?

তোমায় আটকে রেখেছে আর আমি আসবো না?
তোমায় কে বললো, আমায় আটকে রেখেছে?
আপু।

ওহহ আচ্ছা। তোমার আপু তো আসলো না। তোমার আপুও হয়তো চায় আমায় আটকে রাখুক।
এমন কিছু না।
মুচকি হেঁসে বললাম – আমি বাচ্চা না বুঝছো। উনি যদি নাই চাইবেন তাহলে কেন বললেন না যে সে আমায় চেনে?
তুমি ভুল বুঝছো ভাইয়া। ঐ অফিসার কে তুমি জানো?

নাহ। তবে তোমাদের আত্মীয় এটা বুঝতে পারলাম।
আপুর বড় দেবর। ভাইয়া মারা যাওয়ার পর আপু কিছু দিন ওখানে ছিলো। ওর ইচ্ছে ছিলো শেষ সময় পর্যন্ত ভাইয়ার স্মৃতি নিয়ে ঐ বাসায় থাকবে। কিন্তু কিছু দিন যেতেই এই জানোয়ারের কুনজর পড়ে আপুর উপর।

এরপর আপুর সাথে জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক করার চেষ্টা করে। কথাটা জানাজানি হওয়ার আগেই ওনারা আপুকে বাসা থেকে বের করে দেয়। তাই জন্য আপু তখন ওর সাথে কথা বলে নি। কিন্তু তোমার সাথে যা যা হয়েছে সব দেখেছে। বাসায় গিয়েই আমায় পাঠিয়ে দিলো তোমায় ছাড়ানোর জন্য।

জানো আপুও খুব কষ্ট পাচ্ছে।
তোমার আপুর তো চোখের বালি আমি। উনি আবার আমার জন্য কষ্টও পায়? এটা তো আমার সৌভাগ্য।
এরপর কিছুক্ষণ নিরবতা।
মামা সামনে ব্রেক করো।

কেন?
বাসায় যাবো না?
বাবা তোমায় নিয়ে বাসায় যেতে বলছে।
আজ না। অন্য দিন যাবো।

তুমি চুপচাপ এখানে বসে থাকো। মামা আপনি যান।
গজদন্তিনীর বাসায় আসলাম। আজাদ সাহেব ড্রয়িং রুমে পায়েচারি করছে। আমায় দেখেই এক প্রকার দৌড়ে আমার কাছে – তুমি ঠিক আছো তো?

আমি ঠিক আছি। আপনি এতটা উত্তেজিত হবেন না। আমার কিছু হয় নি।
আমার কথা শুনে গজদন্তিনী রুম থেকে বের হয়ে আসলো। কিন্তু কোনো কথা বলছে না।

গজদন্তিনীকে দেখে আজাদ সাহেব এবার তার সামনে গেলো – তোর জন্য আজ একটা সহজ সরল ছেলেকে জেলে যেতে হলো। কি দোষ ছেলেটার? ওতো তোকে ভালোবেসে নতুন করে বাঁচার জন্য তোর পিছনে ছুটছে। এটা কি খুব বড় অপরাধ?

আজাদ সাহেবের কথার মাঝে বাধা দিয়ে বললাম – আপনি শুধু শুধু ওনাকে কথা শোনাচ্ছেন। ওনার কোনো দোষ নেই। আমার বেশি বেশি করা উচিত হয় নি। এর জন্য আমি ক্ষমা চাচ্ছি।
আমার কথা শেষ হতেই গজদন্তিনী রুমে চলে গেলো।
ভাইয়া তুমি আমার রুমে আসো। ব্যাথার ক্রিম লাগিয়ে দেই।

দরকার হবে না। আমি বাসায় গিয়ে ঔষধ নিয়ে নিবো।
তুমি আসো তো।
তাসমিনের রুমে যাওয়ার সময় শুধু দেখলাম আজাদ সাহেব গজদন্তিনীর রুমে গেলো। একটু পরে আমায় বিশ্রাম নিতে বলে তাসমিন ও বের হয়ে গেলো।

এখন অনেক টা রাত হয়ে গেছে। তাসমিনের রুম থেকে বের হয়ে দেখি আজাদ সাহেব সোফায় বসে আছে। – আমি তাহলে এখন আসি?
চলে যাচ্ছো? আজ থেকে গেলে হতো না?
এমনিতেই অনেক কষ্ট দিলাম। আর না দেই। কাল অফিসে দেখা হবে ইনশাআল্লাহ।
কাল অফিস যাওয়ার দরকার নেই। দশটার দিকে তোমার আম্মুকে নিয়ে আমাদের বাসায় এসো।
কেন?

সেটা কালকেই বলবো না হয়।
আচ্ছা।
বাসায় আসলাম।

আম্মু আমার অবস্থা দেখে কান্না করা সারা। অনেক বুঝালাম যে কিছু হয় নি। কে শোনে কার কথা?
কান্নার জন্য বলতেও পাচ্ছি না যে আগামী কাল গজদন্তিনীর বাসায় যেতে হবে।
বেশ কিছুক্ষণ পর আম্মু একটু শান্ত হলো।

আম্মু, আগামী কাল তানজুর বাবা তোমায় দাওয়াত দিছে
তোকে তো কতদিন থেকে বলছি আমায় নিয়ে চল ওদের সাথে কথা বলি কিন্তু তুই তো আমার কথা গায়েই মাখিস না। যাই হোক এতদিনে ডাকলো।
হুম।

কাল তোর বিয়ের কথা বলবো যদি রাজি না হয় তাহলে কিন্তু আমি অন্য জায়গায় মেয়ে দেখবো।
আমার পাগলী আম্মু। সারা দিন শুধু বিয়ে বিয়ে। যাও ঘুমিয়ে পড়।
পরদিন সকালে আম্মু কে নিয়ে গজদন্তিনীর বাসায় আসলাম। কলিং বেল বাজানোর পর তাসমিন এসে দরজা খুলে দিলো। আম্মুকে সালাম দিয়ে আমাদের ভিতরে নিয়ে এসে বসতে বললো,

আজাদ সাহেব ভিতরেই বসে ছিলেন। এরপর শুরু হলো তাদের কথা বলা।
তারা কথা বলছে তো বলছেই। হঠাৎই আম্মু বললো, আপনার বড় মেয়ে কে দেখছি না যে? সুমন তো সব সময় ওর কথা বলেই আমার মাথা পাগল করে দিচ্ছে। কতদিন বললাম ওকে বাসায় নিয়ে আয় কিন্তু আমার কথা ও কখনো শোনেই না।

আম্মু আমায় ইশারায় বললো, বিয়ের কথা টা বলবো?
আমিও বললাম এতো তাড়া কিসের। আছি তো।
ও রুমে আছে। আপনার কাছে একটা রিকুয়েষ্ট করি বোন?

আম্মু কিছুটা অবাক হয়ে বললো, – এভাবে বলছেন কেন? আপনার যা ইচ্ছে বলুন।
আমার মেয়েটাকে আপনার বাড়িতে একটু ঠাই দিবেন? আমার মেয়েটা খুবই অভাগী ওকে আপনার আঁচলের নিচে ছায়া দিবেন? আমার অনুরোধ টা রাখবেন প্লিজ?

আমি যেন নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পাচ্ছি না। আজাদ সাহেব গজদন্তিনীর সাথে আমার বিয়ের কথা বলছে?
আম্মুর মুখ খুশিতে উজ্জ্বল হয়ে গেছে – আপনি তো আমার মনের কথা বললেন। আমিও তো এটাই বলবো জন্য এসেছিলাম।

আজাদ সাহেবের কথা শুনে খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেলাম কিন্তু পরক্ষনেই গজদন্তিনীর কথা মনে হতেই মুখে কিছুটা ফ্যাকাসে ভাব চলে আসলো। আজাদ সাহেব তো শুরু থেকেই আমায় জামাই করতে রাজি কিন্তু গজদন্তিনী তো রাজি না। জোর করে কি তাহলে তাকে বিয়ে দিবে?

জোর করে বিয়ে দিলে আমি কখনো বিয়ে করবো না। কারণ শারীরিক তৃপ্তির জন্য এই শহরে দেহের অভাব হয় না কিন্তু মানসিক তৃপ্তির জন্য একটা সুন্দর মনের বড়ই অভাব। আর যদি সেই মনটাই আমি না পাই তবে শূন্য দেহটা কোনো কাজের নয়। আমাকে গজদন্তিনীর সাথে আগে কথা বলতে হবে।


পর্ব ৬

আমার ভাবনায় ছেদ দিয়ে এক নীল পরী হাতে কফির ট্রে নিয়ে আমাদের সামনে এসে দাঁড়ালো। নীল শাড়ি নীল চুড়ি কপালে নীল টিপ। ক্ষনিকের মাঝে সব ভাবনা ভুলে গেলাম। শুধু একটা কথাই মনে হচ্ছে এই পরীটা আমার হতে যাচ্ছে। আজ নিজেকে খুবই ভাগ্যবান মনে হচ্ছে।

মা তুমি আসো আমার পাশে, তুই ঐদিকে যা – আমায় ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো।
আমি আগে থেকেই জানতাম গজদন্তিনীকে আম্মুর খুব পছন্দ হবে।
এমন একটা পরীকে আপনি ঘরে লুকিয়ে রেখেছিলেন, এটা কিন্তু খুব বড় অন্যায়।

তাসমিন এসে আমার পাশে বসতে বসতে বললো, – এই তো এখন আপনাদের সামনে প্রেজেন্ট করলাম।
গজদন্তিনী এই প্রথম মুখ খুললো – আন্টি আমি আপনার সাথে একটু কথা বলতে চাই।
পাগলী মেয়ে একটু কেন? সারাদিন তো আমার সাথেই গল্প করতে হবে। আচ্ছা চলো।

আম্মু আর গজদন্তিনী উঠে গজদন্তিনীর রুমে গেলো। আমি আর আজাদ সাহেব মানে আমার হবু শশুর মশাই আর শালিকা বসে আছি।
রুমে যাওয়া পর আম্মু আর গজদন্তিনীর কথোপকথনঃ-
আন্টি কিছু মনে না করলে একটা কথা বলি?

একটা কেন মা? তুমি যতগুলো খুশি বলো আমি শুনছি।
আপনি কি জানেন আমি বিধবা?
আম্মু গজদন্তিনীর কথা শুনে হাসলো – এই কথা বলার জন্য তুমি অনুমতি চাচ্ছো?
গজদন্তিনী আম্মুর হাসি দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে – আপনি হাসছেন কেন?

তুমি হাসার মতই কথা বলছো। সুমন ঠিকই বলে তুমি বাচ্চাদের মতো কথা বলো মাঝে মাঝে ৱ
গজদন্তিনীকে বাচ্চা বলার জন্য কিছুটা রেগে গেছে মনে হচ্ছে। প্রতিটা মেয়ে একটা নির্দিষ্ট বয়সসীমা পার করার পর যদি তাদের কেউ বাচ্চা বলে তাহলে তারা খুবই রেগে যায়।

যদিও বা বার্ধক্য পর্যন্ত বাচ্চাদের স্বভাব তাদের মাঝে বিরাজ করে। আর পুরুষ জাতি তাদের এই ছেলেমানুষীর কাছে বার বার পরাজিত হয়। রাগের গন্ডি পেরিয়ে নতুন করে মায়ায় জড়িয়ে পরে।
আম্মু হয়তো বুঝতে পারছে – সুমন আমার থেকে কিছুই লুকায় না। সব সময় সব কিছু আমার সাথে শেয়ার করে। আর তোমার ব্যাপারেও এমনটাই হয়েছে। তুমি বিধবা জেনেই আমি আসছি।

আপনি জেনে শুনে একজন বিধবার সাথে আপনার ছেলের বিয়ে দিবেন? সমাজ বাজে কথা বলবে না?
আমি আমার ছেলেকে খুব ভালো করে চিনি। ও যখন তোমায় বিয়ে করার সিন্ধান্ত নিয়েছে তবে সেটা ভেবেই নিয়েছে। আর বাকি থাকলো সমাজের কথা? আমার ছেলের সুখের কাছে সব কিছু তুচ্ছ। আর আমার বিশ্বাস ও তোমাকেও সুখে রাখবে।

গজদন্তিনী শুধু হুম বললো,
তুমি কি বিয়ে করতে চাচ্ছো না? নাকি সুমন কে তোমার পছন্দ নয়?
মুখে মিথ্যা হাসির আভা নিয়ে বললো, – তেমন কিছু নয়, শুধু আপনাকে আমার ব্যাপারে জানাতে চাচ্ছিলাম।
পাগলী মেয়ে একটা। চলো ওরা অপেক্ষা করছে। আর হ্যাঁ আন্টি টা এখনি ছাড়ো। আম্মু বলা অভ্যাস করে নাও।
আম্মু আর গজদন্তিনী বাইরে আসলো।

এতক্ষণ ধরে কি মহাভারতের কাহিনি শুনানো হলো? – আম্মুকে উদ্দেশ্য করে বললাম।
ও আমাদের মা মেয়ের ব্যাপার। তুই শুধু শুধু মাথা না ঘামালেও চলবে।
আমি মাথা নেড়ে শুধু হুম বললাম।

তোদের নিজেদের মাঝে যদি কোনো কথা থাকে তবে সেটা বলতে পারিস।
তাসমিন বললো, – ভাইয়া তোমরা ছাঁদে গিয়ে কথা বলো।
হুম তাই কর। আমরা বড়রা একটু কথা বলি।

বিয়ের কথা বলছে অথচ এখনো ছোট বলছে। বাবা মায়ের কাছে কখনো কোনো সন্তান বড় হতে পারলো না।
গজদন্তিনী আর আমি ছাঁদে দাঁড়িয়ে আছি। গজদন্তিনীই শুরু করলো – আপনার আম্মু অনেক ভালো মানুষ।
হুম। জানি, আমার নামে কি উল্টো পাল্টে কিছু বলছে?
কই না তো।

যাক বাবা বাঁচলাম। কোনো মেয়ের সাথে পরিচয় হলেই তাকে আমার নামে সব উল্টো পাল্টে কথা বলে আর তারা আমায় পঁচাতে থাকে।
তাই বুঝি?

গজদন্তিনী আমার কথা শুনে হাসতে শুরু করলো।
কন্যা তোমার এমন হাসির জন্য শতবার শহীদ হতে রাজি আছি।
আমি এতক্ষণ ওর দিকে তাকিয়ে আছি এটা বুঝতে পেরেই হাসি থামিয়ে দিলো।
এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?

আপনি পরীর থেকে কোনো অংশে কম নন।
পরী? ( তাচ্ছিল্যের সুরে বললো)
বিয়েতে আপনি রাজি তো?

আমাদের মেয়েদের কি আর নিজস্ব কোনো মতামত আছে? পরিবারের কাছে বোঝা হয়ে গেছি হালকা করতে পারলেই তারা স্বাধীন।
আপনি না চাইলে আমি বিয়ে করবো না। আপনি আপনার মতামত আমার সাথে শেয়ার করতে পারেন।

আমার এই বিয়েটায় বাবার তাসমিনের সুখ আটকে আছে। আজ আপনার মায়ের মুখেও সুখের ছায়া দেখলাম।
কে সুখী হবে সেটা আপনাকে ভাবতে হবে না। আপনি শুধু আপনার মন্তব্য টা আমায় বলুন।

জানেন খুব ভালোবেসেছিলাম অয়ন কে। একটা মুহূর্ত তাকে ছাড়া দম আটকে আসতো। আর আজ তাকে ছাড়া দিনের পর দিন কাটাতে হচ্ছে। আমি হয়তো ওকে ভুলতে পারবো না। আর আপনাকেও অতটা ভালোবাসতে পারবো না। কিন্তু আমি মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করবো। এতে যদি আপনি রাজি থাকেন তবে আমার কোনো আপত্তি নেই।
আপনার বাবা কি আপনাকে জোর করছে বিয়ের জন্য?

কই না তো। আম্মু চলে যাওয়ার পর বাবাই আমাদের মায়ের মতো করে আদর দিয়েছে। অপূর্ণতা বুঝতে দেয় নি। বাবার ও বয়স হয়েছে। বাবার ইচ্ছে আমায় আপনার সাথে বিয়ে দিলে আপনি তাদের যথেষ্ট খেয়াল রাখবেন। একটা অনুরোধ রাখবেন প্লিজ
বলুন

আমার আর আপনার মাঝে সম্পর্ক যাই হোকনা কেন। হয়তো তাড়াতাড়ি মানিয়ে নিতে পারবো না। কিন্তু আমি আপনার পরিবার এবং আপনি আমার পরিবারের কাছে সেটা প্রকাশ করবো না।
গজদন্তিনী কান্না করছে। সাহস হচ্ছে না। তবুও কাঁপা কাঁপা হাতে তার চোখের পানি মুছে দেওয়ার সময় লক্ষ করলাম ও কিছুটা কেঁপে উঠল।

এটা নিয়ে আপনাকে চিন্তা করতে হবে না। ইনশাআল্লাহ আমি সব কিছু ঠিক করে দিবো আর আমার ভালোবাসার প্রতি আমার পূর্ণ আস্থা আছে আমি আপনার অতীত ভুলিয়ে দিতে না পারলেও আমার স্থান আপনার মনে সবার উপরে করে নিতে পারবো। আর আপনার যদি মানসিক ভাবে প্রস্তুত হতে সময় লাগে তো বলতে পারেন

আমরা মেয়েরা সব সময় পুতুলের মতো আচরণ করেই অভ্যস্ত। নিজেকে প্রস্তুত করতে হয় না। পরিবার সমাজ সবার কাছে যখন আমরা সব সময় প্রস্তুত তখন নিজের কাছেও সেটাও এখন মানিয়ে নিয়েছি।
আমাদের কথার মাঝেই তাসমিন চলে আসলো- এই যে, অনেক রোমান্টিকতা হয়েছে নিচে ডাকছে। চলে আসুন।
তুমি যাও আমরা আসছি।

পকেট থেকে টিস্যু বের করে দিলাম – মুখটা মুছে নেন।
নিচে এসে খাওয়া করে বাসায় ফিরলাম। তবে আসার আগে আম্মুর হাতের রিংটা খুলে গজদন্তিনীর হাতে পড়িয়ে দিলো।

  • আমি তো ওকে গাধা থেকে মানুষ বানাতে পারলাম না। তবে তুমি আসলে মা মেয়ে মিলে ওকে মানুষ বানাবো কেমন?
    আম্মুর কথায় গজদন্তিনী শুধু মিথ্যা হাসির শায় দিলো।
    সবার থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসলাম। এখন ভাবনা একটাই ভালোবেসে ভেঙে যাওয়া মানুষটাকে ভালোবাসা দিয়েই পরিপূর্ণতা দিতে হবে।

পরের দিন অফিসে কাজ করছি। হঠাৎই আম্মু ফোন করে বললো, – তাড়াতাড়ি করে হসপিটালে আয়।
আম্মুর আবার এতো জরুরি তলব কেন হঠাৎ সেটাই তো বুঝতে পারছি না। আর এই সময় হসপিটালে কেন? আম্মুর কিছু হলো না তো?
হাতে কিছু কাজ ছিলো সেগুলো শেষ না করে হসপিটালের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম।


পর্ব ৭

হাঁফাতে হাঁফাতে হসপিটালের সামনে এসে আম্মুর নাম্বারে ফোন দিলাম – হ্যাঁ আম্মু কই তুমি?
আমি তানজু।

আপনার কাছে আম্মুর ফোন কেন? আম্মু কোথায়? সিরিয়াস কিছু হয়েছে কি?
আপনি কোথায় এখন?
আমি হসপিটালের সামনে। আপনারা কোথায়?
হসপিটালের সামনে একটা ডায়াগনস্টিক সেন্টার আছে না?
হ্যাঁ

আমরা ওখানে আছি।
ফোন কেটে দিয়ে দৌড়ে ডায়াগনস্টিক সেন্টারে আসলাম। এসে দেখি আম্মু আর গজদন্তিনী ওয়েটিং রুমে বসে গল্প করছে।

আম্মুর কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম – কি হয়েছে আম্মু? সব ঠিক আছে তো?
এমন হাফাচ্ছিস কেন? শান্ত হয়ে বস আগে।

আম্মুর পাশে বসলাম। গজদন্তিনী একটা পানির বোতল আমার দিকে এগিয়ে দিলো।
পানিতে চুমুক দিয়ে বললাম – এখন বলো তো কার কি হইছে?
কারো কিছু হয়নি তো।
তাহলে আমায় এভাবে আসতে বললা?

আমার ডায়াবেটিস টা একটু পরীক্ষা করা লাগতো আর একটু কাজ ও ছিলো তাই ডাকলাম।
ওহ খোদা। আমি ভাবলাম কি না কি। এখন নিজেকে ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চা মনে হচ্ছে।

আমার কথা শুনেই ফিক করে হেঁসে দিলো গজদন্তিনী। আমি এক মুহুর্তে সকল বিষাদ ভুলে গেলাম, কেটে গেলো সব ক্লান্তি, মন শুধু আজ চাইছে অপলক চেয়ে দেখি তার ঐ হাসি।
আম্মুর কথায় আমার ভাবনার ছেদ ঘটলো – সব সময় এভাবে হাসতে হবে কিন্তু, এভাবেই হেসে আমাদের ঘর আলোকিত করে রাখতে হবে। নয়তো তোমার নামে মামলা করবো কিন্তু হুম।

এবার আম্মুর কথা শুনে আমার হাসি পেলো। তারমানে আমার মতোই আম্মুও গজদন্তিনীর হাসি লক্ষ করছে।
গজদন্তিনীর দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলাম উনি একটু লজ্জাই পেয়েছে।
গজদন্তিনীকে লজ্জার সিচুয়েশন থেকে বাঁচাতে আম্মুকে বললাম – ব্লাড দিছো নাকি দাও নি?
একটু আগেই দিয়ে আসলাম।

ওহ আচ্ছা। রিপোর্ট তাহলে তো দিতে দেরি হবে। এখন তোমাদের কি কাজ আছে?
কি কাজ মানে? এখনই তো অনেক কাজ আছে। বিয়ের কেনাকাটা করতে হবে। তোর জন্য বসে বসে অপেক্ষা করছি কতক্ষণ ধরে।

আমি গজদন্তিনীর দিকে তাকালাম। সে যেন শুনেও কিছু শোনে নি। হাসিখুশি মাথা মুখটা ক্ষণিকের মাঝেই চুপসে গেলো আমার।
তোরা একটু বস আমি ওয়াশরুম থেকে আসছি।
আম্মু উঠে চলে গেলো।
আপনার মন খারাপ?

মিথ্যা হাসির ছলে – কই না তো।
আপনার মুখে স্পষ্ট ফুটে উঠেছে আপনার মন খারাপ।
এবার গজদন্তিনী আমার দিকে মাথা তুলে তাকালো। গজদন্তিনীর চোখ ছলছল করছে। বুকের ভিতটা কেমন যেন ধক করে উঠলো।

আপনি না চাইলে আমি কখনো আপনাকে বিয়ের জন্য জোর করবো না। আপনি প্লিজ আমায় বলুন আপনি কি চাচ্ছেন।
আমি বিয়ের রাজি আছি।

আপনার মুখ বলছে এক কথা আপনার মন বলছে অন্য কথা। প্লিজ আমায় দোটানায় রাখবেন না। আপনি যদি না চান তবে আমি আপনাকে কখনোই জোর করবো না। দূর থেকেই ভালোবেসে যাবো।
আমি চাই না আমার জন্য কেউ কষ্ট পাক।

আমিও চাই না আমার পাশে বউ রুমে একটা নিথর দেহ পড়ে থাক। আমি কষ্ট মেনে নিতে পারবো কিন্তু পেয়েও পেলাম না এটা মেনে নিতে পারবো না।
এরমাঝে আম্মু চলে আসলো। গজদন্তিনীও নিজের মুখটা টিস্যু দিয়ে মুছে ফেললো।

এরপর স্বাভাবিক ভাবেই আম্মুর সাথে চলে আসলাম। এরমাঝে একবার আম্মু গজদন্তিনীকে জিজ্ঞেস করলো – তোমার ছোট বোন কই? এখনো আসলো না তো।
এখনি আসবে হয়তো।

ওদের কথায় আমার কোনো মনোযোগ নেই। আমি শুধু একটা কথাই ভাবছি আমার কি এটা ভুল হচ্ছে?
আমি তো ওনাকে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখাতে চাচ্ছি। নতুন করে আবার হাসি ফিরিয়ে দিতে চাচ্ছি। তবে?
কিন্তু কারো মনের বিপক্ষে যাওয়া টাও তো ঠিক না। এখন কি করবো আমি?

একা একা মনের সাথে যুদ্ধ করেই যাচ্ছি। কিন্তু কিছুতেই কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পাচ্ছি না।
হঠাৎই কি যেন ভেবে আম্মুকে বললাম – আম্মু কেনাকাটা বাদ দাও।
কেন তোর আবার কি হলো?

আমি গজদন্তিনীর দিকে তাকিয়ে আছি, গজদন্তিনীও জিজ্ঞেসু সূচক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
চলো বাসায় চলো।
কেন?
কারো মনের বিরুদ্ধে যাওয়া ঠিক না। আমি কাউকে জোর করে ভালোবাসা আদায় করতে পারবো না।
তুই কি বলছিস? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।

আমি মুখ খোলার আগেই গজদন্তিনী আম্মুকে বললো, – কিছু না আম্মু, আপনি শাড়ি দেখুন। আমি একটু ওনাকে নিয়ে ঐদিকে শেরওয়ানী দেখি।
আম্মু হাসি মুখে বললো, – আচ্ছা মা। তাড়াতাড়ি আসবি কিন্তু।

আমি গজদন্তিনীর দিকে তাকিয়ে আছি। উনি ইশারায় আমায় ওনার সাথে আসতে বললো, কিন্তু আমি আম্মুর পাশেই বসে আছি।


পর্ব ৮

গজদন্তিনী এবার আমায় বললো, – কি হলো চলেন।
আপনি যান। আমি আম্মুর সাথে কথা বলবো।
কথা তো বাসায় গিয়েও বলতে পারবি। ও ডাকছে ওর সাথে যা না।
ঠিক তখনই তাসমিন এসে হাজির।

এই তো তাসমিন আসছে, আপনি তাসমিন কে নিয়ে যান আমি আম্মুর সাথে আছি এখানে।
আমার কথা শুনে গজদন্তিনী হঠাৎ রেগে গেলো। কিভাবে বোঝাবো তার রাগ অভিমান হাসি আমায় আরও বেশি করে মায়ায় আসক্ত করে।
তুমি তানজুর সাথে যা, আর তাসমিন তুমি আমার সাথে এখানে শাড়ি দেখো।
এবার গজদন্তিনী আমার হাত ধরে টেনে একটু সাইডে নিয়ে আসলো।

আপনার সমস্যা কি?
আমার তো কোনো সমস্যা নেই।
তাহলে আপনি কি বলতে নিছলেন?

আমি যা বলবে চাই সেটা আপনি ভালো করেই জানেন।
আচ্ছা আমার মতামতের কি আসে যায় বলুন? আপনি তো আপনার ভালোবাসা পাচ্ছেন তাই না?
আমি ঐসব লোকের মাঝে নই যারা বলে ভালো যখন বেসেছি তখন শুধু তোমাকেই প্রয়োজন। আমার কাছে ভালোবাসার মানেটা ভিন্ন, আমি চাই সে ভালো থাকুক সুখে থাকুক।

এখন সে যদি আমার কাছে নিজের সুখ খুজে পায় তবে তাকে পরম সুখের আবেশে জড়িয়ে রাখবো আর যদি আমার থেকে দূরত্ব বাড়িয়ে সুখী হয় তবে তার জীবন থেকে চিরতরে হারিয়ে যাবো।
ভালোবাসার মানুষ কে দূরে রাখতে কষ্ট হবে না আপনার?

কষ্ট সে তো সারাজীবনের সঙ্গী। সুখ তো ছলনাময়ী। আমার মতে পৃথিবীতে সুখ বলতে কিছুই নেই যেটা আছে সেটা সাময়িক প্রশান্তি মাত্র। আর কি লাভ ভালোবাসার মানুষকে কষ্ট দিয়ে সেই সাময়িক প্রশান্তি ভোগ করে। যখন সে আমায় মন থেকে চায় না।

আপনি সত্যি অনেক ভালো।
আমি ভালো কি না সেটা জানি না। কিন্তু আমি ঘুরিয়ে পেচিয়ে কথা বলতে বা শুনতে পছন্দ করি না। তাই আপনাকে বার বার জিজ্ঞেস করছি আপনার মতামত কি? আপনার ইচ্ছের বিরুদ্ধে আপনাকে হয়তো বিয়ে দিতে পারবে কিন্তু আমায় কেউ পারবে না।

আপনি যে বিয়ে টা ভেঙে দিতে চাচ্ছেন এতে আপনার আম্মু কতটা কষ্ট পাবে জানেন?
আমার আম্মু, আমি সামলে নিতে পারবো সে চিন্তা আপাতত আপনার না করলেও চলবে।

আমি চাই না আমার জন্য এমন পবিত্র একটা মানুষ কষ্ট পাক। আপনি চিন্তা করবেন না। আমি বিয়েতে রাজি না হলেও আপনার মায়ের জন্য এবং আমার পরিবারের জন্য আমি বিয়েতে রাজি। কারণ আমি তাদের কখনো কষ্ট দিতে চাই না। আর যদি আমার একান্ত মতামত জানতে চান তবে আমার বিয়ে করার বিন্দু মাত্র ইচ্ছে নেই। দয়া করে কিছু মাইন্ড করবেন না। কষ্ট পাবেন না।

গজদন্তিনী কি বলছে সেগুলো তে আমার কোনো মনোযোগ নেই। আমি বাইরে তাকিয়ে আছি। একটা ফুটফুটে বাচ্চা ফুল বিক্রি করছে। কিন্তু নাম মাত্র একজন বড়লোক যে মনের দিক থেকে নিকৃষ্টতর ছোট সে এক ধাক্কায় মেয়েটাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো। আর মেয়েটার সব ফুল মাটিতে লুটিয়ে পড়লো সাথে নিষ্পাপ ফুলটিও।

গজদন্তিনীকে কিছু না বলেই দৌড়ে বের হয়ে আসলাম। গজদন্তিনী হয়তো ভেবেছে আমি কষ্ট পেয়ে বের হয়ে আসছি। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে তার কোনো কথায় আমায় মনোযোগ ছিলো না। পথশিশু এবং অসহায় মানুষগুলোর জন্য মনের সিংহভাগ জায়গায় একটা গভীর ভালোবাসা জন্মেছে।

তাই তাদের দেখলেই মায়ার রাজ্যে হারিয়ে যাই।
আমি সেখানে পৌঁছানোর আগেই লোকটা চলে গেছে। নয়তো তাকে হয়তো কিছু কথা শুনিয়ে দিতাম। গিয়ে দেখি মেয়েটার হাতে কিছুটা ছিলে গেছে। ওকে নিয়ে পাশের ডিসপেনসারিতে আসলাম। আমি খেয়াল করি নি গজদন্তিনীও আমার পিছনে আসছে।

এখন একটা রেস্টুরেন্টে বসে আছি। আজ ফুলটার ফুলগুলো ফেলে দিয়ে হয়তো তার একবেলা ভালো করে খাওয়ার অধিকার টা কেড়ে নিয়েছিলো মানুষ রুপি জানোয়ার টা।
ওয়েটারকে অর্ডার দিয়ে বসে গল্প করছি মেয়েটার সাথে। একটু পরেই ওয়েটার খাবার নিয়ে আসলো।

পিচ্চিটা খাচ্ছে আর আমার সাথে গল্প করছে। কতো মায়াবী চেহারা মানুষ কিভাবে পারে এদের এভাবে অমানবিক নির্যাতন করতে। একটা ফুল নিলে কি তার সম্পদের কম পরে যেতো নাকি? সে তো চুরি করছে না ধনীদের মতো।

সৎভাবে একটু বাঁচার চেষ্টা করছে পেটভরা নয় দুবেলা দুমুঠো খাদ্য পাওয়ার জন্য এভাবে পরিশ্রম করছে। তারা তো তেমন কিছু চায় না শুধু একটু সহযোগিতা চায়। আমরা সেটার পরিবর্তে তাদের বরাবরই আঘাত দিয়ে যাই। মানুষ অহংকারে ভুলে যায় তার সৃষ্টির রহস্য। ভুলে যায় অহংকার শুধু মাত্র আল্লাহর জন্য। তিনি ছাড়া অন্য কেউ অহংকার করার অধিকার রাখে না।

হঠাৎ পাশে তাকিয়ে দেখি গজদন্তিনী আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
আপনি কখন আসলেন?
একটু আগেই।

সরি তখন ওভাবে চলে আসার জন্য। বসুন প্লিজ।
আমি উঠে মেয়েটার পাশে গিয়ে বসলাম।
মেয়েটা আমায় জিজ্ঞেস করলো – উনি কে স্যার?

আমি কিছুটা রাগী ভাব নিয়ে বললাম – আবার স্যার, যাও তোমার সাথে কথা নাই।
না না, ভাইয়া ভাইয়া।
হুম। Good girl। উনি হচ্ছে তোমার হবু ভাবি। আচ্ছা আপনি কি জানেন আমাদের বিয়ে কবে ঠিক করছে?
আগামী শুক্রবার।

আগামী শনিবার তুমি এবং তোমার সব বন্ধু নিয়ে আমার বাসায় চলে আসবা ঠিক আছে?
আইচ্ছা।
আহ কি সুন্দর জগত মাতানো হাসি।

এবার গজদন্তিনীর দিকে তাকালাম – আপনি তখন কি যেন বলছিলেন? আসলে ওর দিকে এতটাই মগ্ন ছিলাম যে আপনার কোনো কথাই শুনতে পাই নি। সরি। এখন বলুন আমি শুনছি।
সত্যি আপনি কিছুই শুনতে পান নি?

শুনতে পেলে কি আবার জিজ্ঞেস করি? এখন বলুন আমি শুনছি।
আমার বিয়েতে কোনো সমস্যা নেই। মন থেকে বলছি আমি বিয়েতে রাজি।
আপনি ঠিক বলছেন তো?
হ্যাঁ।

নিজের মনের মাঝে এক অদ্ভুত তৃপ্তির স্বাদ পেলাম।
হঠাৎই গজদন্তিনীর ফোন বেজে উঠলো আর এদিকে মেয়েটারও খাওয়া শেষ।
গজদন্তিনী উঠে গিয়ে কথা বললো, আমিও বিল দিয়ে বের হলাম।
আপনার ফোন কই?

পকেটে। কেন?
আম্মু নাকি অনেক বার ফোন দিছে।
ফোন সাইলেন্স ছিলো।
মেয়েটাকে সাথে নিয়ে শপিংমলে ঢুকলাম।

তোদের শেরওয়ানি দেখতে এতক্ষণ লাগলো? কই শেরওয়ানি?
আসলে আম্মু আমরা একটু বাইরে গেছলাম।
তাসমিন তাচ্ছিল্যের সুরে বললো, – মিথ্যা বলে যাওয়ার কি ছিলো? আমাদের বললে কি আমরা না করতাম নাকি?
এরপর তাসমিন আর আম্মুর সাথে মেয়েটার পরিচয় করিয়ে দিলাম।

গজদন্তিনী নিজেই পছন্দ করে তাকে একটা জামা কিনে দিলো আমাদের বিয়ের উপহার হিসাবে। আজ নিজেকে পৃথিবীর সব থেকে সুখী মনে হচ্ছে। এমন কাউকে জীবন সঙ্গী হিসাবে পাচ্ছি যে আমার মনের অনুভূতি বুঝতে পারে। ইনশাআল্লাহ দুজন মিলে আমাদের দিনপঞ্জিতে নতুন একটি দিবস আবিষ্কার করবো যেটা হবে শুধু মাত্র অসহায় এবং পথশিশুদের জন্য।

গজদন্তিনী আর আমায় শেরওয়ানি কিনতে বলে শুধু শাড়ি কিনেই আম্মু আর তাসমিন বাসায় চলে গেলো।


পর্ব ৯

গজদন্তিনী আর আমি রিকশায় পাশাপাশি বসে। আবহাওয়াটাও আজ যেন আমাদের সঙ্গ দিচ্ছে। অনুভূতির আকাশে আজ নতুন করে রংধনুর বিচরণ। ইশশ মালায়লাম রোমান্টিক মুভিগুলোর মতো যদি ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে সুন্দর একটা মিউজিক ভেসে আসতো!

চুপচাপ বসে আছেন যে? – গজদন্তিনীর কথায় ভাবনার ছেদ ঘটলো।
আজকের আবহাওয়া টা অনুভব করছি। আর তাছাড়া আপনিও তো চুপ করে আছেন।
আমি তো সচরাচর কম কথা বলি।

ওহহ আচ্ছা।
একটা প্রশ্ন করি?
একটা প্রশ্ন করবেন সেটার জন্য কি অনুমতির প্রয়োজন পড়ে নাকি?
না মানে

মুচকি হেঁসে বললাম – কোনো সমস্যা নেই যা ইচ্ছে বলুন।
আপনি কি সবার সাথে এমন ব্যবহার করেন?
কেমন?

ঐ বাচ্চার সাথে যেমন করলেন।
ওহহ। আপনাকে একটা কথা বলি, গরম পানি আছে না?
হুম
যে গরম পানি ডিমকে শক্ত করে আবার সেই গরম পানিই কিন্তু আলুকে নরম করে।
বুঝতে পারলাম না।

আচ্ছা বুঝিয়ে দিচ্ছি, আমি সেই গরম পানির মতো। যার সাথে যেমনটা করা প্রয়োজন তার সাথে ঠিক সেটাই করি। ঐ যে একটা প্রবাদ আছে না যে দেবতা যে ফুলে তুষ্ট আমি ঠিক সেই রকম।
আপনি মানুষটা সত্যি অদ্ভুত।

সেটা কতখানি সত্য বলতে পারবো না। নিজেকে বিচার করার ক্ষমতা আল্লাহ খুব কম মানুষের মাঝেই দিয়েছে।
এটা ঠিক বলছেন।
আচ্ছা আমরা এখন কোথায় যাচ্ছি?
আমার প্রিয় একটা রেস্টুরেন্টে। আপনাকে আমি ট্রিট দিবো।

আপনি আমায় ট্রিট দিবেন? আজ কি সূর্য পশ্চিম আকাশে উঠেছে?
কেন?
যে আমায় সহ্যই করতে পারে না সে আমায় তার প্রিয় রেস্টুরেন্টে নিয়ে যাচ্ছে। ভাবতেই কেমন কল্পনার রাজ্যে হারিয়ে যাচ্ছি।

গজদন্তি আমার কথায় কি যেন মনে করে চুপচাপ বসে রাস্তার পাশে তাকিয়ে আছে।
মেয়েদের মন বোঝার ক্ষমতা যদি পুরুষের থাকতো তবে হয়তো কোনো সংসারে বা সম্পর্কে কোনো দিন অশান্তি হতো না। এখনি হেঁসে কথা বললো, আবার এখনি চুপ।

রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে শেরওয়ানি কিনে গজদন্তিনীকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে বাসায় আসলাম। কিন্তু ট্রিট কেন দিলো সে কারণ টা অজানাই রয়ে গেলো। আমি ও জানতে চাই নি গজদন্তিনীও নিজে থেকে বলে নি।

বাসায় এসে শুয়ে শুয়ে গজদন্তিনীকে নিয়েই ভাবছি। হঠাৎই অফিসের বসের ফোন। রিসিভ করেই সালাম দিলাম।
সুমন সাহেব কেমন আছেন?
আলহামদুলিল্লাহ। আপনি?

শুনলাম বিয়ে করছেন? বিয়েটা করেন তারপর আপনি আপনি বুঝে যাবেন আমি কেমন আছি। যাই হোক আপনাকে যে জন্য ফোন দিলাম, এখন তো অফিসে কাজের বেশি চাপ নেই। তাই আপনাকে এই কয়দিনে অফিসে আসতে হবে না।

সুখের জীবন টা মানে ব্যাচেলর জীবন শেষ করতে যাচ্ছেন একটু মজা এবং আনন্দের মাঝেই শেষ করুন। কে বলতে পারে হয়তো এরপর আর কোনো দিন আনন্দের দেখাই পেলেন না। – বলেই স্যার হাসতে শুরু করলো।
স্যার আপনিও না খুব মজা করতে পারেন। এখনো বিয়েই করলাম না তার আগেই ভয় দেখাচ্ছেন।

আচ্ছা এখন রাখি তোমার ভাবী আসছে। ও আসলে মিছে মিছে ওর প্রশংসা করতে হবে। দেখা হচ্ছে বিয়ের দিন। আর একটা উপদেশ ভাই বিয়ের মজা ঐ বাসর রাতেই এরপর আর মজার ম কেও খুঁজে পাওয়া ভার। রাখলাম।
ফোনটা কেটে দিয়ে হোহো করে হাসতে লাগলাম। স্যার সত্যি পারেও।

দেখতে দেখতে বিয়ের দিন নিকটে চলে আসলো। আগামী কাল আমার বিয়ে। কেমন জানি মনের মাঝে সব কিছু অন্য রকম লাগছে।

আজাদ সাহেব থুক্কু বাবা ফোন করে ডাকলো তাই সকাল সকাল ওনাদের বাসায় আসলাম। গজদন্তিনীর কিছু জিনিস কিনতে হবে তাই জন্য ডেকেছে। আমি আর বাবা ড্রয়িং রুমে বসে গল্প করছি। উনি কাকে কাকে ইনভাইট করছে সেটাই আমায় বলছে

হঠাৎই শোরগোল করে একটা লোক চেঁচাতে চেঁচাতে ভিতরে আসলো। আমরা বাইরে যাবো জন্য দরজা খোলাই ছিলো।

লোকটাকে কেমন চেনা চেনা লাগছে। ওহ হ্যাঁ, ইনিই তো সেই লোকটা, আমায় থানায় ধরে নিয়ে গেছলো।
লোকটা গজদন্তিনীর নাম ধরে জোরে জোরে ডাকছে। আমরা তাকে এতো করে শান্ত করার চেষ্টা করলাম কিন্তু উনি আমাদের কোনো কথাই শুনছে না। গজদন্তিনী বাইরে আসতেই লোকটা গজদন্তিনীর সামনে গেলো- শুনলাম তুমি নাকি বিয়ে করছো?

গজদন্তিনী মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে। মুখে কোনো কথা নেই।
তুমি আমাদের বাড়ির বউ। তোমায় আগেও বলছি এখনো বলছি বিয়ে করলে শুধু আমাকেই করতে হবে।
পিছনে থেকে আমি বললাম – আর যদি আপনাকে বিয়ে না করে তো?

কোনো দিন সুখী হতে দিবো না। একটা কথা মনে রেখো আমি ছাড়া অন্য কাউকে যদি বিয়ে করো তবে তীলে তীলে জীবন শেষ করে দিবো তোমার।
লোকটা এমন কিছু কথা শুনিয়ে দিয়ে চলে গেলো। এরমধ্যে আমি শুধু কয়েকটা কথার প্রতিত্তোরে কথা বললাম। কিন্তু বাবা আর গজদন্তিনী কোনো কথাই বললো, না।

গজদন্তিনীর চোখের পাতায় পানি টলমল করছে। এই বুঝি কয়েকফোটা মুক্ত গড়িয়ে পড়লো।
দৌড়ে রুমে চলে গেলো গজদন্তিনী। আমার পাশেই ধপ করে বসে পড়লো বাবা।

আমি ওনার পাশে বসতেই উনি বলতে শুরু করলো – আমার মেয়েটার কপালে কি আল্লাহ সুখ লিখেন নি?
আপনি শুধু শুধু ঐ লোকটার কথায় এসব ভাবছেন। উনি কি করবে সেটা পরে দেখা যাবে।
তুমি জানো না। ও খুবই খারাপ প্রকৃতির মানুষ।

জয় কিন্তু সবসময় ভালোরই হয়। আপনি থাকুন আমি তানজুর কি করছে দেখে আসি।
রুমে এসে দেখি তানজু বসে বসে কান্না করছে। আমি ওর পাশে গিয়ে বসতেই আচমকাই ও আমায় জড়িয়ে ধরে বললো, – আমি চাই না আমার জন্য আপনার কোনো ক্ষতি হোক।

আমার আবার কে ক্ষতি করবে?
ও অনেক বাজে লোক। আপনি জানেন না ও আমার সাথে কি কি করছে।
হয়তো সবটা জানি না কিন্তু যেটা জানি সেটাই অনেক। আপনি রেডি হয়ে নেন আমরা বাইরে যাবো।
আমি যাবো না।

কেন যাবেন না? কে কি বললো, সেটা নিয়ে পড়ে থাকলে কি জীবন চলবে? আমি বাইরে বসে আছি আপনি ১৫ মিনিটের মধ্যে চলে আসুন।
কথাটা বলে আমি বাইরে এসে বাবার সাথে কথা বলছি।

রিকশায় বসে আছি। এই কয়েকদিনের মধ্যে আজই প্রথম গজদন্তিনীকে লজ্জা পেতে দেখলাম। আজ ও আমার পাশে বসতে এতটা লজ্জা পাচ্ছে কেন?
আজ আমার পাশে মনে হচ্ছে কোনো লজ্জাবতী লতা বসে আছে।

তখন একটু বেশি ইমোশনাল হয়ে গেছলাম জন্য আপনাকে জড়িয়ে ধরছিলাম। কিছু মনে করেন নি তো?
ওহ আচ্ছা। তাহলে লজ্জা পাওয়ার এটাই কারণ। আর আমি মাইন্ড করবো কেন? একটা মেয়ে তাকেই জড়িয়ে ধরে যাকে সে আপন মনে করে। যার বুকে নিজেকে নিরাপদ মনে করে। আমার তো আনন্দ হচ্ছে এটা ভেবে যে আপনি নিজের অজান্তেই আমায় আপনার আপন বানিয়ে ফেলেছেন।

গজদন্তিনীর লজ্জার পরিমাণ মনে হচ্ছে আরও বেরে গেলো।


পর্ব ১০

কেনাকাটা শেষ করে বাসায় ফিরছি। গজদন্তিনী চুপচাপ, গম্ভীর একটা ভাব নিয়ে আছে। হয়তো কোনো কিছু গভীর ভাবে চিন্তা করছে। নয়তো কোনো কিছু নিয়ে খুবই ভয়ে আছে।

আপনি কি কিছু ভাবছেন?
গজদন্তিনী আমার কথার উত্তর না দিয়ে রিকশাওয়ালা মামাকে বললো, – মামা। আমাদের এখানেই নামিয়ে দেন।
বাসা থেকে বেশকিছুটা পথ আগেই হঠাৎ গজদন্তিনী নামতে চাচ্ছে কেন? আমি তার কথার কোনো প্রতিত্তোর না করে রিকশা থেকে নেমে মামার ভাড়া দিয়ে দিলাম।

গজদন্তিনী আবার চুপচাপ হাঁটতে শুরু করলো।
কি হলো কথা বলছেন না যে?
গজদন্তিনী থামলো। আমার দিকে তাকিয়ে আছে এখন। আমার চোখের গভীরে কিছু হয়তো খুঁজছে। কিন্তু গজদন্তিনীর চোখ ছলছল করছে।

আমার খুব ভয় করছে।
গজদন্তিনী হঠাৎ কি নিয়ে খুব ভয় পাচ্ছে?
ভয়? কিসের ভয়? আমি তো আছি আপনার পাশে।

সেই জন্য তো ভয়টা পাচ্ছি। আমার জন্য না আবার আপনার কোনো ক্ষতি হয়ে যায়।
কি বলছেন? আপনার পাশে থাকলে আমার কি ক্ষতি হবে শুনি?
ঐ লোকটা
কোন লোকটা?

ঐ লোকটা আপনার ক্ষতি করবে
ওহহ আচ্ছা। আপনি ঐ অফিসারের কথা বলছেন? উনি আমাদের কিছুই করতে পারবে না। আপনি চিন্তা করবেন না।

আপনি জানেন না। ঐ বাজে লোকটা আমায় অনেক বার বলেছে তার সাথে তার বাড়িতে থাকতে। ওদের বাসা থেকে আসার পর উনি কয়েকদিন আমাদের বাসায় আসছিলো এসে আমায় অনেক বাজে কথা শুনিয়ে গেছে। বাবা কষ্ট পাবে জন্য আমি তাদের কিছু বলি নি। কিন্তু এখন আমার খুব ভয় করছে। আমি চাই না আমার জন্য আপনার মতো একজন ভালো মানুষের ক্ষতি হোক।

আমি গজদন্তিনীর হাতটা শক্ত করে ধরলাম। নিজের কাজে নিজেই অবাক হয়ে যাচ্ছি। আমার মাঝে এতো সাহস আসল কই থেকে যে আমি গজদন্তিনীর হাত ধরছি – আপনি চিন্তা করবেন না৷ উনি আমার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। আপনার সাথে সব সময় আমি আছি এবং থাকবো ইনশাআল্লাহ।

তানজু কিছু সময় আমার দিকে তাকিয়ে আমার হাতও শক্ত করে ধরলো।
পরের দিন পুরোটা সময় বিয়ের ধুমধামে কাটে গেলো। সারাটা সময় একটা দুশ্চিন্তায় ছিলাম। এই বুঝি লোকটা আসলো। কিন্তু লোকটা আর আসে নি।

বিয়ের সব কাজ শেষ করে বাসায় আসছি একটু আগেই।
গজদন্তিনী বউরুপে আমার রুমে বসে আছে। আজ আমি সুখী। ভালোবাসার মানুষকে নিজের করে পেয়েছি।
বাসার সকল আত্মীয় কে বিদায় করে রুমে আসলাম। রুমে আসতেই গজদন্তিনী উঠে এসে আমায় সালাম করলো।
এটা কি করছেন?

আপনাকে সালাম করলাম।
এমনটা আর কখনো করবেন না।
কেন?

শুধু মাত্র আল্লাহর সামনে ছাড়া অন্য কারো সামনে মাথা নত করবেন না। আর কখনো কাউকে পায়ে হাত দিয়ে সালাম করবেন না। ( এটা বাস্তব জীবনে আমার আব্বুর বক্তব্য। আমি আজ পর্যন্ত আমার আব্বুর পায়ে হাত দিয়ে সালাম করতে পারি নি )

গজদন্তিনী উঠে গিয়ে আবার বসলো।
আপনি কি এখনি ঘুমাবেন?
কেন?
চলেন ছাঁদে যাই।

এখন?
আপনার সমস্যা থাকলে যেতে হবে না। ঘুমাতে পারেন।
আচ্ছা চলেন।
একটা অনুরোধ করি?

এভাবে বলছেন কেন? যা বলতে চান বলুন।
না মানে, আমি আপনাকে কোলে তুলে নিয়ে যাই?
কথাটা বলে আমারই কেমন লজ্জা পাচ্ছে। আমি নিচের দিকে তাকিয়ে আছি কিন্তু আড় চোখ গজদন্তিনীকে দেখছি।
আপনার বউ, আপনি কোলে নিবেন নাকি হেঁটে নিয়ে যাবেন সেটা আপনার ইচ্ছে।
গজদন্তিনীর কথা শেষ হওয়ার পর আর কিছু বলার অপেক্ষা না করেই ওকে কোলে তুলে নিলাম।

ছাঁদে এসে গজদন্তিনীকে দোলনায় বসিয়ে দিলাম। আকাশের চাঁদ ঝলমলে আলো ছড়াচ্ছে। সেই আলোয় গজদন্তিনীকে আরও সুন্দরী লাগছে। আজ একটা পরীকে সারাজীবনের জন্য নিজের করে নিয়েছি।
চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছেন যে?

আপনাকে দেখছি। আপনার স্নিগ্ধতার সিক্ত হচ্ছি। আজ আপনার কাছে একটা জিনিস চাইবো দিবেন?
আমার কাছে কি এমন জিনিস আছে আপনাকে দেওয়ার মতো?
দেওয়ার মতো অনেক কিছু আছে কিন্তু সেগুলো আমি আর্জন করে নিবো শুধু এই একটা জিনিস আমি আপনার থেকে চেয়ে নিবো।

কি জিনিস?
আমি আপনার বন্ধু হতে চাই।
আমার কথা শুনে গজদন্তিনী একটু শব্দ করেই হাসলো – আপনি তো আমার স্বামী। আপনি আবার বন্ধু হতে চাচ্ছেন কেন?

স্বামী আর বন্ধু জিনিস দুটো আলাদা। আমি চাই না দুটো জিনিস দুজন মালিকানা পাক। তাই স্বামীর আগে আমি আপনার বন্ধু হতে চাই। বিয়ে না করেও জীবন কাটিয়ে দেওয়া যায় কিন্তু একজন বিশ্বস্ত সঙ্গী বা বন্ধু ছাড়া জীবন কাটানো অসম্ভব। তাই আমি আপনার বন্ধু হতে চাই। যার সাথে আপনি কোনো বাঁধা ছাড়াই সব কিছু শেয়ার করতে পারবেন।

ওহহ।
আমি আপনাকে আমার সব কিছু দিয়ে দিবো। বিনিময়ে আমি আপনার সব কিছু চাই। আপনি আমায় নিজের সব থেকে আপন মানুষ ভাববেন।
হুম। আপনি অনেক মিষ্টি একটা মানুষ। একটা সিদ্ধান্ত নিতে খুবই কষ্ট হচ্ছে। আপনি কি আমায় সাহায্য করবেন?

আপনাকে সাহায্য সমস্যা সব কিছু তো আমি নিজের করে নিয়েছি। আপনি বলুন।
আমার স্মৃতি গুলো কি যত্ন করে মনের মাঝে পুষিয়ে রাখবো নাকি ভুলে যেতে চেষ্টা করবো?

কাউকে জোর করে আটকে রাখা অপরাধ নয় আবার কাউকে ছেড়ে দেওয়াও অপরাধ নয় শুধু বুঝতে হবে আপনার কোনটা কোনটা বেশি প্রয়োজন। ভুলটা বেছে নিলে কষ্ট বাড়বে আর ঠিক জিনিস বেছে নিলে সুখ আর সুখ।
এরপর আর গজদন্তিনী কিছু বললো, না। আমিও গিয়ে গজদন্তিনীর পাশে বসে পড়লাম।

আমি এক এক করে আমার জীবনে ঘটে যাওয়া সকল সুন্দর সুন্দর গল্প বলতে লাগলাম।
কিছুটা সময় পর গজদন্তিনী হঠাৎই আমার কাঁধে মাথা রাখলো।
তাকিয়ে দেখি চোখ বুঁজে আছে। হয়তো ঘুম পেয়েছে, আমি একটু সরে এসে গজদন্তিনীর মাথা আমার কোলে নিলাম।

ঘুমন্ত পরীর দিকে তাকিয়ে চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।
এখন গভীর রাত গজদন্তিনীও গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন আর এদিকে আমি তার দিকে তাকিয়ে নিজের চোখের পিপাসা বাড়িয়েই চলছি। যতই দেখছি ততই গভীরে হারিয়ে যাচ্ছি।


শেষ পর্ব

গজদন্তিনী ঘুমানোর পর ওকে কোলে করে ছাঁদ থেকে রুমে নিয়ে আসলাম। অনুভূতি আজ আকাশ ছুঁই ছুঁই করছে।
পৃথিবীর নিয়ম টা বড়োই অদ্ভুত। ভালো মানুষ গুলোই সব থেকে বেশি কষ্ট পায়। নয়তো এমন ফুলের মতো একটা মেয়ের জীবন এতদিন আধারের তল দেশে নিমজ্জিত থাকতো না। চেষ্টা করবো তার জীবন থেকে সব আধার দূর নিলিমায় মিলিয়ে দিতে।

রুমে এসে গজদন্তিনীকে খাটে শুইয়ে দিয়ে একটা কাঁথা গায়ে মুড়িয়ে দিলাম। আমিও পাশে শুয়ে পড়লাম। কিন্তু ঘুম যেন আজ ছুটিতে গেছে আমার প্রিয়ায় কাছে আমাকে একা রেখে।

বিছানার নিচে থেকে ডায়েরি টা বের করলাম। আজ ডায়েরি দেখে বুক ভরে নিশ্বাস নিলাম। এতদিন গজদন্তিনীকে নিয়ে যতগুলো স্বপ্ন এই ডায়েরির বুকে একে রেখেছিলাম সব গুলো সত্যি করার সময় এসে গেছে।
ডায়েরির একটা কোনায় লিখে রাখলাম –
তুমি ঘুমালে নিস্তব্ধ আমার শহর

আমার আখি দুটি যেন নিথর পাহারাদার
গজদন্তিনীর দিকে তাকিয়ে থেকেই কবে যেন ঘুমিয়ে গেছি।
চারদিকে পাখির কিচিরমিচির শব্দ কানে আসছে। যদিও বা আমার এতো ভোরে ওঠার অভ্যাস নেই। কিন্তু বুকের উপর ভারী কিছু একটা অনুভব করলাম। অনেকটা ব্যাথাও হয়ে গেছে।

ঘুম ঘুম চোখ খুলে বুকের মাঝে গজদন্তিনীর আবছা চেহারাটা দেখে যেন নিজেই নিজেকে অবিশ্বাসের চাদরে মুড়াচ্ছি।
হাত দিয়ে চোখ গুলো মুছে তাকালাম। না আমি মিথ্যা না। আসলেই গজদন্তিনী আমার বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে। ক্ষণিকেই আমার সকল ব্যাথা সুখের জোয়ারে ভাসতে শুরু করলো।

চুলগুলো মনে হচ্ছে আমার পাগলীটাকে খুব বিরক্ত করছে। মুখের উপর এসে জায়গা করে নিয়েছে আর যাওয়ার নাম নেই। তবে অপরুপ চিত্র একে রেখেছেন কে যেন চুল দিয়ে। খুব করে ইচ্ছে করছে চুলগুলো নিজ হাতে সরিয়ে দিতে। নিজেকে আর কোনো ভাবেই আটকে রাখতে পারলাম না। চুলগুলো সরিয়ে দিয়ে কপালে মিষ্টি একটা ভালোবাসা একে দিলাম।

হঠাৎই এভাবে গজদন্তিনী জেগে যাবে কল্পনাও করি নি। উঠে নিজেকে আমার বুকে দেখে তাড়াতাড়ি করে সরে গেলো।
আমিও পাশ ফিরে শুয়ে পড়লাম। কিছুক্ষণ পরে কি যেন ভেবে আবার জড়িয়ে ধরলো পিছনে থেকে।
আমি গজদন্তিনীর দিকে ঘুরে বললাম – হঠাৎ জড়িয়ে ধরলেন যে?

আপনি তো কাল বললেন যে সেটাই রাখা উচিত যেটা আমার প্রয়োজন।
হুম তো?
তাই আমি আমার বর্তমানকে নিয়ে স্বপ্ন বুনতে চাই।

হুম।
তবে আপনাকে একটা কথা দিতে হবে
কি কথা?
আমার পুরোনো স্মৃতি হঠাৎ চোখে ভেসে উঠলে বা আমার মন খারাপ হলে ভালোবাসা দিয়ে সেটা ঠিক করে দিতে হবে।

গজদন্তিনীকে শক্ত করে জড়িয়ে নিয়ে বললাম – এটা আবার বলতে হবে? এটা তো আমার দায়িত্ব।
গজদন্তিনী আবার চুপচাপ হয়ে গেলো।
কি হলো আবার? – মুখের উপর হাত রেখে বুঝতে পারলাম কান্না করছে।
আজব তো কান্না করছেন কেন?

ঐ বাজে লোকটা যদি আপনার কোনো ক্ষতি করে?
ক্ষতি করার হলে তো কালকেই আসতো। কই আসছে?

ঝড়ের আগে আকাশ যেমন গম্ভীর থাকে এটাও তো তেমন হতে পারে
সবসময় উল্টো ভাবলে কি হয়? একটু পজিটিভ ভাবলেই তো হয়।
হুম।

এখন কান্না বন্ধ করেন নয়তো রুমের বাইরে রেখে আসবো।
গজদন্তিনী কান্না বন্ধ করে বললো, – ইস শখ কতো। এটা আমার রুম। আপনাকেই বের করে দিবো।
আমার ঘর এখন আপনার হয়ে গেলো?
হুম

আচ্ছা নেন। সব কিছু তো আপনাকে দিয়ে দিয়েছি। রুমটা রেখে আর কি লাভ।
হুম।
আচ্ছা আপনারা মেয়েরা কথায় কথায় এমন কান্না করেন কেন?

স্বাদে তো কান্না করি না। ভয়ে করছি। আর এমন ভাবে বললেন যেন আপনারা কান্না করেন না?
একটা নির্দিষ্ট সময় পর ছেলেদের চোখের পানি সাথে শারীরিক কষ্ট এবং ভয়ের সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়। তখন তাকে মারলে বা ভয় দেখালেও কখনো চোখের পানি কেউ দেখতে পারে না।

আপনি বলতে চাচ্ছেন ছেলেরা কান্না করে না?
কই আমি তো সেটা বলি নি। ছেলেদের চোখের পানির সম্পর্ক শুধু মাত্র মনের কষ্টের সাথে। যখন মনের কষ্ট অধিক হয়ে যায় তখন ছেলেদের চোখের পানি ঝড়ে সেটাও নিরালায়ে। কেউ হয়তো বা সেটার খবর কখনো পাবে না।
আর অল্প কষ্ট পেলে কান্না করেন না?

করি তো। সকলের সামনে কান্না করি। তবে সেটা হাসি মুখে।
আপনার সাথে কথায় হয়তো পারবো না। একটা কথা বলি?
অনুমতির প্রয়োজন আছে কি? সবই তো আপনার বলুন যা ইচ্ছে।
আমার অতীত থেকে বেরিয়ে আসতে অনেক সময় লাগবে।

কেউ কি আপনাকে জোর করছে? চাইলে হয়তো আপনার শরীরের সাথে শক্তি দেখাতে পারবো কিন্তু মনের সাথে শক্তি দেখানোর ক্ষমতা কারো নেই। আপনার যতটা সময় লাগে নেন আমার কোনো সমস্যা নেই। আপনি আপনার অতীত ভুলে যেতে না চাইলেও সমস্যা নেই। শুধু এতটুকু বলবো যে আপনার অতীত জীবনের সাথে আমার বর্তমানটা জড়াবেন না। তাহলে হয়তো খুবই কষ্ট পাবো।

আমি সত্যি অনেক ভাগ্যবতী। আপনার মতো এতো ভালো একজন মানুষ পেয়েছি। এতো সুখ কি আমার কপালে থাকবে?
সব কিছু তো উপর থেকে ঠিক করে রাখা। উনি যা ভালো চাইবে তাই হবে।
হুম।

আপনি চাইলে তুমি করে বলতে পারেন
না, আমি আপনিই বলবো।
কেন?

জানিনা তবে আপনি কথাটার মাঝে সম্মান ভালোবাসা অনুভূতি আবেগ সবকিছুই তুমির থেকে বেশি থাকে। তাই আমি আপনি বলেই ডাকবো।
আচ্ছা তাহলে আমিও আপনি বলেই ডাকবো। তবে
আমি আপনার যে একটা নতুন নাম দিয়েছি

কি? গজদন্তিনী!
আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে প্রশ্ন করলাম – আপনি কি করে জানলেন?
কোনো এক বৃষ্টি মুখরিত দিনে আপনি পিছনে থেকে গজদন্তিনী বলে ডেকেছিলেন মনে পড়ে? আমি জিজ্ঞেস করায় দ্বিতীয় বার আর বলার সাহস টা হয় নি আপনার।

এভাবে ধরা খেয়ে লজ্জায় নিজের মুখটা গজদন্তিনীর চুলের মাঝে গুঁজে দিলাম।
দিনগুলো এভাবেই কাটতে লাগলো। জানিনা কতটা পেরেছি তার অতীত থেকে তাকে আমার বর্তমানে নিয়ে আসতে। তবে এখন আর ক্লান্তিময় দুপুরে তাকে মন খারাপ করে একমনে একদিকে তাকিয়ে থাকতে দেখি না।

লেখা – Sumon Al-Farabi

সমাপ্ত

(পাঠক আপনাদের ভালোলাগার উদ্দেশ্যেই প্রতিনিয়ত আমাদের লেখা। আপনাদের একটি শেয়ার আমাদের লেখার স্পৃহা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আমাদের এই পর্বের “গজদন্তিনী – বিধবা মেয়ের প্রেমের গল্প” টি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম। ধন্যবাদ।)

আরো পড়ূন – কনডম – বাংলা গোয়েন্দা কাহিনী

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *