এ কেমন ভালোবাসা (১ম খণ্ড) – New bangla love story

এ কেমন ভালোবাসা – New bangla love story: আমি যে বিবাহিত। অন্য একজনের ঘরের বৌ আমি। আমি চাইনা শ্রাবন ভাই কখনো ওর মনের কথা আমার কাছে প্রকাশ করুক। কারন আমি ওকে ফিরিয়ে দিতে পারবো না হয়তো।


পর্ব ১

একদম অপরিচিত একটি ঘরে বসে আছি আমি বধুর সাজে। বধুর সাজে বললে হয়তো ভুল হবে কারন আমার শরীরে কোনো সাজ নেই। শুধু একটি শাড়ি কাপড় আর মুখে একটু ক্রিম ছাড়া।

একটু আগেই বিয়ে হয়েছে আমার। আর এখন আমি যে ঘরটায় বসে আছি এটাই হলো আমার নতুন ঠিকানা আমার শশুড়বাড়ি। ছোট বেলা থেকেই অনেক সপ্ন ছিলো আমার। আমি অনেক বড় হবো অনেক পড়াশোনা করবো ডাক্তার হবো আরো কতো কি। কিন্তু ওইযে কথায় বলেনা যে সপ্ন কখনোই সত্যি হয়না তার প্রমাণ গুলো আমি খুব সহজেই পেয়ে গেলাম।

আজ থেকে প্রায় ৩ বছর আগের কথা কতইনা সুখি ছিলাম আমি আমার পরিবারের সাথে। মা বাবা আর আমরা দুটি বোন যেনো একে অপরের প্রান ছিলাম। কিন্তু হঠাৎ আমাদের পরিবারটা ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেলো একটি অচেনা অজানা ঝড়ে। আমার পরিবারের সবাই ছিলো অনেক ধার্মিক।

আমার বাবা একজন হুজুর আর মা অনেক ছেলে মেয়েকে বিনা পয়সায় কোরআন শিখিয়েছেন। আমরা সবাই নামাজ রোজা পর্দা সব কিছু ঠিক মতোই করতাম। শুধু আমার বড় বোনটা একটু অন্য রকম ছিলো। নামাজে অলসতা পর্দা অপছন্দ আরো অনেক অমিল ছিলো আমাদের মাঝে।

কিন্তু আপু সব সময় বাবার ভয়ে কখনো নিজের ইচ্ছা গুলোকে প্রকাশ করতো না। অনিচ্ছা সত্যেও নামাজ পরতো পর্দাও করতো।
কিন্তু আমায় অনেক ভালবাসতো আমার বোন। সব সময় যখন যা চাইতাম তাই দিতো। মা বাবা কখনো আমায় কোনো কারনে বকা দিলে ও মাঝখানে বাধা হয়ে দারাতো। কিন্তু হঠাৎ ওর ব্যাবহারে পরিবর্তন দেখা যায়। ও কেমন অন্যমনস্ক থাকতো।

ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করতো না। আমায় আগের মতো ভালও বাসতো না। আমার বয়স তখন ১২ বছর। আমি কিছু বুঝতাম না ও কেনো এমন করে কিন্তু ওর পালটে যাওয়ায় অনেক কষ্ট পেতাম। মাঝে মাঝে দেখতাম মা আপুর সাথে কি নিয়ে যেনো রাগারাগি করতো আমি কিছুই বুঝতাম না শুধু দর্শকের মতো চেয়ে চেয়ে দেখতাম।

তারপর একদিন স্কুল থেকে বাড়ি এসে দেখি মা অনেক কান্নাকাটি করছে আর আব্বু অনেক রেগে চোখ লাল করে মন খারাপ করে বসে আছি। আমি কিছুই বুঝিনি কি হয়েছে তাই আপুকে ডাকতে আপুর ঘরে যাই কিন্তু না আপু বাড়িতে কোথাও ছিলো না।

পরে যানতে পারি আপু নাকি কোনো ছেলেকে ভালবাসতো আর তার সাথেই পালিয়ে গেছে। গ্রামের সবাই আমার আব্বুকে অনেক সম্মান করতো ভালবাসতো কিন্তু আপুর কারনে সবাই এখন আমাদের নানান কথা শোনায়।
আব্বু অনেক রাগি তাই আপু যেদিন চলে গিয়েছিল সে দিনই আব্বু বলে আজ থেকে আমার একটি মেয়ে আমার বড় মেয়ে মারা গেছে। এবাড়িতে ওর আর কোনো জায়গা নেই।

সেদিনের পর থেকে আমি আর আপুকে কখনো দেখিনি জানি না ও কোথায় আছে কেমন আছে বেচে আছে নাকি মরে গেছে।

সেদিনের পর থেকে আমি আমার মাকে কখনো আর মন ভরে হাসতে দেখিনি। মাঝে মাঝেই দেখতাম আম্মু লুকিয়ে লুকিয়ে কান্না করছেন। আমারও অনেক কষ্ট হতো কিন্তু প্রকাশ করতে পারিনি কখনো। আপু চলে যাওয়ার পর আমি একদম একা হয়ে যাই। যতক্ষণ সময় বাসায় থাকতাম মনে হতো আমি যেনো জেলখানার কয়েদি।

এভাবেই কেটে গেলো ৩ টি বছর। আমি তখন ক্লাস ৮ম এ পড়ি। আমার পড়াশোনার প্রতি অনেক আগ্রহ ছিলো। কখনো ইচ্ছা করে স্কুল কামাই দিতাম না। অনেক সপ্ন দেখতাম আমি ডাক্তার হবো অনেক অনেক পড়াশোনা করবো। কিন্তু আমার পরীক্ষার পর আব্বু এসে আমায় বলেন আমার আর পড়াশোনা করতে হবে না আমায় বিয়ে দিয়ে দিবেন।

বিয়ের কথা শুনে যতটানা কষ্ট পেয়েছিলাম তার চাইতে বেশি কষ্ট হয়ে ছিলো পড়াশোনা বন্ধ করার কথা শুনে। কিন্তু আমি আব্বুর মুখের ওপর কিছু বলতে পারিনি আরালে অনেক কেঁদেছিলাম।
তারপর একদিন হঠাৎ করে আম্মু আমায় বললেন রেডি হতে আমায় আজ ছেলেপক্ষ দেখতে আসবে আব্বুর আদেশ। তাই আর কোনো উপায় না পেয়ে রেডি হলাম।

সন্ধ্যার সময় পাত্রপক্ষ আমাদের বাড়িতে এলো আমাকে তাদের সামনে নিয়ে যাওয়া হলো। আমাকে দেখেই তাদের পছন্দ হলো। আমার আব্বু আম্মু ভালো ভাবে কোনো খোজ খবর না নিয়েই বিয়েতে মত দিয়ে দিলেন। আমি তখনো বুঝিনি আমার বিয়ের জন্য আব্বু আম্মু কেনো এতো তারা দিচ্ছেন।

তারপর সেদিন রাতেই মানে আজ রাতেই আমায় দেখতে গিয়ে বিয়ে করে নিয়ে আসলেন। আমি এখনো আমার স্বামীকে দেখিনি। আসার সময় মায়ের মুখে শুনেছি উনি নাকি মাদ্রাসায় পড়েছেন আবার স্কুলেও পরেছেন। উনারা এক ভাই এক বোন। উনি বড় আর ওনার বোন ছোট।

খট করে দরজা খোলার শব্দে আমি বাস্তবে ফিরে এলাম। ওনাকে দেখলাম দরজা লাগিয়ে আমার দিকে এগিয়ে আসছেন।

আমি ভয়ে কাপা কাপা কন্ঠে ওনাকে সালাম দিলাম। কিন্তু উনি সালামের উত্তর না দিয়ে সোজা আমার কাছে এসে আমার শাড়ির আচল মাথা থেকে ফেলে দিলেন। আমি এমন ব্যাবহারে অনেক অবাক আর ভয় পেলাম। এই প্রথম আমি ওনাকে দেখলাম।

৫ ফুট ৭ ইঞ্চি লম্বা গায়ের রঙ শ্যাম বর্নের। দেখতে খারাপ নয়। কিন্তু আমি একটি জিনিসে অবাক হলাম যে উনি মাদ্রাসার ছাত্র হওয়া সত্যেও ওনার দাঁড়ি নাই কেনো। একদম ক্লিন সেভ।
তারপর উনি আমায় আবারো অবাক করে দিয়ে বললেন,

দেখো আমার একদম ন্যাকামি পছন্দ নয় আমার সামনে কখনো ন্যাকামি করতে আসবে না এখন যাও চুপ করে শুয়ে পরো। আমি ওনার কথার উত্তরে বললাম, ,

আমায় ক্ষমা করবেন যদি কিছু মনে না করেন একটা কথা বলবো?
উনি কিছুটা বিরক্তি নিয়ে বললেন হুমম বলো কি কথা?
তারপর আমি বললাম, ,

আজ আপনার সাথে আমার বিয়ে হয়েছে তাই আজ থেকে আমি আপনার স্ত্রী আর আপনি আমার স্বামী আসুন আমরা নতুন জীবন শুরু করার আগে দুরাকাত নামাজ পড়ি।
আমার কথার উত্তরে উনি বললেন,

দেখো তোমায় বিয়ে করেছি বলে এই নয় যে তোমার কথায় আমার চলতে হবে। আমার ঘুম পেয়েছে আমি ঘুমাবো তুমি যা খুশি করো গে হুহহ।

এই কথা গুলো বলে উনি শুয়ে পরলেন। আমি ওনার এমন আচরণে অনেক কষ্ট পেলাম কিন্তু কিছু বললাম, না চুপ করে বাথরুমে গিয়ে একটু কান্না করে মনটাকে শান্ত করে ওজু করে নামাজ আদায় করলাম,

আপুরা জানিনা কেমন হলো তারাতারি লিখতে গিয়ে বানান ভুল হয়ে থাকলে সবাই একটু কষ্ট করে পড়ে নিও আর কেমন লাগলো গল্পটা জানিও। সবার সারা পেলেই পরের পর্ব পোস্ট করবো ইনশাআল্লাহ।


পর্ব ২

তারপর বাথরুমে গিয়ে একটু কান্না করে মনটাকে শান্ত করে ওজু করে এসে নামাজ পড়ে নিলাম।
নামাজ শেষে মোনাজাতে আল্লাহর দরবারে দুহাত তুলে চোখের পানি নিয়ে দোয়া করলাম আমার নতুন জীবনের সুখের জন্য।

আর স্বামী ও সংসারের সকলের মন জয় করে চলার তৌফিক দেওয়ার জন্য।
মোনাজাত শেষ করে জায়নামাজ তুলে রেখে আমি বিছানার কাছে গিয়ে দেখি উনি ঘুমিয়ে গেছেন। আমি এখন কি করবো কিছু বুঝতে পারছি না।

অনেক চিন্তার পর আমি অন্যদিক দিয়ে উঠে ওনার পাশে শুয়ে পরলাম অন্যদিকে মুখ করে। কিন্তু আমার চোখে ঘুম নেই অতিতের কথা গুলো আবার চোখের পাতায় ভেসে উঠলো।
আমায় যখন ওনাদের সামনে এনে বসানো হয় তখন আমার শাশুড়ি মা আমায় অনেক প্রশ্ন করেন।

রান্না জানি কিনা? হাতের কোনো কাজ জানি কি না? লেখা পড়ায় কেমন? ইত্যাদি ইত্যাদি। আমি ওনার সব গুলো প্রশ্নের উত্তর দিয়ে ছিলাম যে আমি রান্নাবান্না কিছুই জানি না। হাতের কোনো কাজও জানি না। পরিবারের সবার ছোট বলে কেউ কখনো আমায় দিয়ে কোনো কাজ করায় নি।

কিন্তু পড়াশোনায় আমি আলহামদুলিল্লাহ অনেক পারদর্শী। আমার শাশুড়ি তখন আমায় জিগ্যেস করেছিলেন আমি আরো পড়াশোনা করতে চাই কিনা। আমি তখন খুশি মনে বলে ছিলাম হ্যা আমি পড়াশোনা করতে চাই। আমার শাশুড়ি মুচকি হাসি দিয়ে বলে ছিলেন বিয়ের পর আমায় স্কুলে ভর্তি করে পড়াবেন।

তারপর বাসার সব কাজ উনি আমায় শেখাবেন।
তারপর আমার হাতে ১০০১ টাকা দিয়ে উনি আংটি পরিয়ে দেন আর কিছুক্ষণের মধ্যেই বিয়ে করিয়ে নিয়ে আসেন। আমার আব্বু আম্মু একবারের জন্যে তাদের খোজ খবরও নিতে পারেন না তারা আসলে কেমন।

(দুঃখিত আমি আমার পরিচয় দিতে ভুলে গেছিলাম।

আমার নাম বৃষ্টি আমার বড় বোনের নাম কাজল। আর আমার স্বামীর নাম শুনেছি রাজু। আমার বয়স এখন ১৬ বছর। )
তারপর আমায় নিয়ে রাত ১১ টার সময় আমার নতুন ঠিকানা আমার শশুড়বাড়ি আসা হয়।

বাড়িটা অনেক সুন্দর। বাড়ির সামনে বড় একটা গেইট। গেইটের ভিতরে ঢুকলেই সামনে একটা বড় উঠান। তারপর ঘরের দরজা ঘরের মধ্যে মোট ৫ টা রুম তার একটাতে আমার শশুড় শাশুড়ি থাকেন একটাতে আমার ননদীনি থাকে আর একটাতে আমার উনি আর আমি। বাকি দুটো রুমের একটা গেস্টরুম আর একটা মেহমানদের বসার জন্যে রাখা হয়েছে।

হঠাৎ আমার ধ্যান ভাঙলো উনার ডাকে,
~ ঐ ঘুমাইছো নাকি?

~ জি আমায় কি কিছু ব বলবেন? ( কাপা কাপা কন্ঠে)
~ দেখি ওঠো তো তারপর গিয়ে টেবিলের ওপর ঔষধ রাখা আছে একটা ঔষধ খেয়ে আসো। (রাজু)
আমি উঠে বসতে বসতে বললাম, ,
~ কি কিসের ও ঔষধ? আমার তো কিছু হয়নি তহলে ঔষধ খাবো কেনো?

~ ঐ তোমার সাহস তো কম না তুমি আমার মুখে মুখে তর্ক করো। আমি খেতে বলেছি যাও খেয়ে আসো তারাতারি। ( খুব রেগে গিয়ে কথা গুলো বললেন উনি)
আমি ওনার কথার উত্তরে কিছু বলার আর সাহস পেলাম না। খুব ভয় পেয়ে গেছি তাই তারাতারি গিয়ে টেবিলের ওপর থেকে ঔষধ খেয়ে নিলাম।

তারপর ঔষধটার পিছনের লেখা গুলো পড়ে আমি তো ভয়ে শেষ। এটা আসলে পরিবার পরিকল্পনার ঔষধ। আমি প্রচন্ড রকম ঘামতে শুরু করলাম ভয়ে। পিছনে ঘুরে ওনার কাছে যাওয়ার সাহস নাই আমার খুব বেশি ভয় করছে।

আমায় এভাবে দারিয়ে থাকতে দেখে উনি আচমকা আমায় ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে দিলেন। প্রচন্ড কষ্টে যন্ত্রণায় আমি একসময় অজ্ঞান হয়ে গেলাম।

তারপর কি হয়েছে আমি কিছুই জানি না। যখন জ্ঞান ফিরলো তখন কোনো মতে চোখ খুলে ঘরির দিকে তাকিয়ে দেখি রাত ৪ টা বাজে। আমার সারা শরীরে অনেক ব্যাথা অনুভব করছি। তবুও অনেক কষ্টে উঠে বসলাম। ওনার দিকে তাকিয়ে দেখি উনি আরামে ঘুমাচ্ছে।

আমি উঠে কাপর ঠিক করে অনেক কষ্টে বাথরুমে গিয়ে গোসল করে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। সাথে চোখের নোনা পানিও ঝরতে লাগলো অঝোর ধারায়। উনি আমার সাথে এমন আচরণ কেনো করলো আমি বুঝতে পারছি না কিছুতেই। যেনো আমি ওনার কত বছরের শত্রু তাই আমায় কষ্ট দিয়ে এভাবে প্রতিশোধ নিচ্ছে উনি।

তারপর আমি জায়নামাজ বিছিয়ে নামাজে দারালাম। কিন্তু দারিয়ে নামাজ পরার মতো শক্তিও আমার শরীরে নাই তাই বাদ্ধ হয়ে বসে নামাজ পরলাম।

নামাজ শেষ করে উঠে আমি উনার কাছে গিয়ে আস্তে করে ডাক দিলাম।
~ এইযে শুনছেন, শুনছেন ওঠেন প্লিজ এখন ফজরের আজান হবে গোসল করে মসজিদে যান।
আমার কথা শুনে উনি প্রচন্ড রাগ নিয়ে আমার দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,

~ ঐ তোমার সাহস হলো কি করে আমার ঘুম নষ্ট করার। আজকে প্রথম তাই কিছু বললাম, না নেক্সট টাইম যেনো এমন ভুল না হয়। আমার যখন খুশি আমি তখন ঘুম থেকে উঠবো সরো এখন থেকে।

বলেই আমায় একটা ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দিয়ে উনি অন্য দিকে ঘুরে ঘুমিয়ে পরলেন। আমি ওনার আচরণে শুধু অবাকই হচ্ছি আর অনেক কষ্টও পাচ্ছি। তারপর দেখি চারিদিক থেকে ফজরের আজান ভেসে আসছে। আমি নামাজ পড়ে নিলাম তারপর একগ্লাস পানি খেয়ে বাইরে বের হলাম।
আমার শাশুড়ি মা কে দেখে সালাম দিলাম
~ আসসালামু আলাইকুম মা।

~ ওয়ালাইকুমুসসালাম। তুমি উঠে পরেছো বৌমা। রাজু কই ও নিশ্চয়ই ওঠেনি?
~ জি মা উনি ঘুমোচ্ছে ডাকতে নিশেধ করেছেন।

~ বলতে হবে না আমি জানি বৌ মা ও সকাল ১০~ ১১ টার আগে ঘুম থেকে ওঠে না।
~ মা কিছু যদি মনে না করেন একটা কথা বলি?
~ হুমম বলো কি কথা?

~ মা আমি আসলে বলছিলাম যে উনি নামাজ পড়েন না?
~ কি বলবো বলো বৌ মা আগে নামাজ পড়তো কোরআন পড়তো। অনেক ভালো ছিলো ওর বড় বড় দাড়ি ছিলো। কিন্তু এখন একদম পাল্টে গেছে ছেলেটা।

~ কেনো মা কি এমন হয়েছিলো যে উনার মাঝপ এতো পরিবর্তন?
~ জানি না মা ও কেনো এমন হলো জানিনা। আচ্ছা চলো এখন রান্না করতে হবে সবার জন্য। অনেক কাজও বাকি।
~ হুমম চলুন মা আমায় সব শিখিয়ে দিবেন আমি চেষ্টা করবো শিখতে।
~ হ্যা চলো।

তারপর আমি আর আমার শাশুড়িমা রান্না ঘরে রান্না করতে গেলাম। শাশুড়ি মা আমাকে পরটা বেলতে দিলেন। কিন্তু আমিতো কখনো বেলুনি ধরেও দেখিনি কি ভাবে বেলতে হয়।
আমার চুপ করে বসে থাকা দেখে আমার শাশুড়ি মা বললেন
~ কি হলো বৃষ্টি পরটা বেলছো না কেনো?

~ ইয়ে মানে মা বলছিলাম কি আমি তো কখনো এগুলা করিনি তাই বুঝতে পারছি না কি করে পরটা বেলতে হয়। আপনি যদি একটু কষ্ট করে শিখিয়ে দিতেন মা।

~ আচ্ছা আমি তোমায় এক বারই দেখিয়ে দিবো আর তোমাকে একবার দেখেই বেলতে হবে বুঝেছো।
~ জি মা আমি চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।

তারপর আমার শাশুড়িমা আমার দেখিয়ে দিলেন পরটা বেলা। আমি ভালো করে মনোযোগ দিয়ে দেখে পরটা বেলার চেষ্টা করলাম কিন্তু কিছুতেই ভালো হচ্ছে না। আমার শাশুড়ি তেমন কিছু বললো, না যেমন বেলেছি তেমনই নিয়ে ভেজে নিলো শুধু মুখটা বাংলার পাঁচ করে রেখেছেন।

তারপর পরটা বানানো হয়ে গেলে শাশুড়ি মা আমায় বললেন সবাইকে ডাকতে। আমি প্রথমে আমার ননদীনির ঘরে গেলাম ওকে ডাকতে। বয়সে ও আমার ২ বছরের বড়। নাম মিম।

~ আপু মিম আপু এই মিম আপু মা আপনাকে ডাকছে ওঠেন আপু।
~ ওফ ভাবি প্রথম দিনেই চলে এসেছো আমার ঘুমের বারোটা বাজাতে। যাও তো আমি পরে উঠবো আর একবারো আমায় ডিস্টার্ব করবা না।

আমি আর কিছু না বলে চলে এলাম। এসে দেখি আমার শশুড় মশাই মসজিদ থেকে নামাজ পড়ে আসছেন। আমি তাকে দেখে সালাম দিলাম
~ আসসালামু আলাইকুম আব্বু। কেমন আছেন?

~ ওয়ালাইকুমুসসালাম মা। আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। আমার আম্মাজানটা দেখি এতো তারাতারি উঠে পরেছে। তা আম্মাজান আমি যদি তোমায় আম্মাজান বলে ডাকি তোমার কোনো অসুবিধা নাই তো?
~ এসব কি বলেন আব্বু আপনার যা মন চায় আপনি আমায় তাই বলেই ডাকবেন আমিতো আপনার মেয়েই হই আব্বু।

~ এইনা হলো আমার মা। আচ্ছা মা যাও তো আমার জন্যে একটু চা বানিয়ে নিয়ে আসো।
~ জি আব্বু যাচ্ছি।

তারপর আমি রান্না ঘরে গিয়ে আমার শাশুড়ি মাকে বললাম, মিম আপুর কথা আর আব্বুর কথা। আমার কথা শুনে আমার শাশুড়িমা বললেন মিম এমনই দুই ভাই বোন একদম একি সভাবের। তারপর চা বানাতে গেলেন তখন আমি বললাম,

~ মা আব্বুর জন্যে চা টা আমি বানাই? আমি চা বানাতে পারি। এটা আমি শিখেছিলাম আপনি শুধু বলে দেন আব্বু মিষ্টি কেমন খায় চায়ে।

তারপর আমার শাশুড়ি মা আমায় সব দেখিয়ে দিলেন আমি চা বানিয়ে নিয়ে শশুড় আব্বুর কাছে নিয়ে গেলাম। উনি চা খেয়ে অনেক প্রসংশা করলেন আমায় মাথায় হাত বুলিয়ে দোয়া করলেন। তারপর আমার শাশুড়ি মা রাজুর জন্যে চা নিয়ে যেতে বললেন সে নাকি ঘুম থেকে উঠে চা খান।
আমি ভয়ে ভয়ে ওনার জন্যে চা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। ভয়ে আমার হাত পা কাপছে,


পর্ব ৩

আমি ভয়ে ভয়ে এগিয়ে যাচ্ছি ওনার জন্যে চা নিয়ে। ভয়ে আমার হাত পা কাপছে জানিনা কপালে কি আছে।
তবুও মনে সাহসের সঞ্চয় করে রুমের মধ্যে প্রবেশ করলাম, দেখি উনি শুয়ে শুয়ে গান শুনছেন। আমি চায়ের কাপটা উনার দিকে এগিয়ে দিয়ে কাপা কাপা কন্ঠে বললাম,
~ আ আপনার চ চা

উনি কোনো কথা না বলে আমার হাত থেকে চায়ের কাপটা নিয়ে চুমুক দিলেন। এদিকে আমার তো ভয়ে আত্মা শুকিয়ে যাচ্ছে না জানি চা খেয়ে কি বলেন।

তারপর চায়ে চুমুক দিয়েই ছুরে ফেলে দিলেন দুরে আর বললেন~
~ এটা কি চা না সরবত? আমি একদম ধোয়া ওঠা গরম চা ছারা খাই না আর এটা তো একদম ঠান্ডা হয়ে গেছে।
আমি ওনার এমন রাগি চেহারা দেখে ভয়ে দুপা পিছিয়ে গিয়ে কাপছি। উনি এক লাফে খাট থেকে উঠে এসে আমার হাত পিছনে মুরিয়ে ধরে বললেন

~ এর পর থেকে আমার জন্যে কিছু আনতে যেনো মনে থাকে আমি ঠান্ডা কিছু খাই না সব গরম চাই। নইলে তোর খবর আছে। বলেই আমার হাতটা জোরে ছুরে মেরে উনি হনহন করে বেরিয়ে গেলেন আর আমি হাতের ব্যাথায় কুকিয়ে উঠে কান্না করে দিলাম। অনেক ব্যাথা লাগছে হাতে।

পরিবারের ছোট মেয়ে হওয়ায় কখনো কেউ আমার গায়ে হাত তোলেনি। আর আজ বিয়ের পরের দিনই স্বামীর হাতের মার খেতে হলো জানি না কপালে কি আছে। আসলে আমারই ভুল আমারই চেক করে দেখা উচিৎ ছিলো চা টা গরম আছে কিনা।

তারপর আমি চোখের পানি মুছে ভাঙা কাপের টুকরো গুলো পরিস্কার করলাম। তারপর সেগুলো ঝুরিতে ফেলে দিয়ে শাশুড়ি মার কাছে গেলাম।

~ রাজু উঠেছে বৃষ্টি? চা টা খেয়েছে কি?
~ জি মা উনি উঠেছেন কিন্তু!
~ কিন্তু কি বৃষ্টি?

~ আসলে মা চা টা ঠান্ডা হয়ে গিয়ে ছিলো আর আমিও ঠিক খেয়াল করিনি তাই উনি চা খাননি।
~ কি বলো বৃষ্টি রাজু তো বেশি গরম চা খেতে পারে না ও তো চা সব সময় ঠান্ডা করেই খায়। তাহলে আজকে কেনো খেলো না? যাই হোক চায়ের কাপ কই আনোনি?

~ আসলে মা চা উনি খায়নি তাই আমি চা টা খাওয়ার জন্যে ওনার হাত থেকে নিয়ে টেবিলে রাখতে গিয়ে আমার হাত থেকে পরে গিয়ে ভেঙে গেছে। সরি মা আসলে আমি বুঝিনি আমার কাছ থেকে এ ভাবে ভেঙে যাবে আর হবে না মা। (ইচ্ছা করে মিথ্যা বললাম, কারন আমি চাই না আমার সাথে ওনার এমন আচরণের কথা কেউ জানুক)

আমার শাশুড়ি মা আমার কথা গুলো শুনে কিছু বললেন না শুধু বললেন মিম আপুকে ডেকে নিয়ে আসতে সবাই এক সাথে নাস্তা করবো।

তাই আমি মিম আপুকে ডাকতে যাওয়ার জন্যে যেই পিছনে ঘুরেছি ওমনি দেখি উনি দারিয়ে আছেন। ওনার চোখ রাগে রক্তলাল হয়ে আছে। ওনাকে এভাবে দারিয়ে থাকতে দেখে তো আমার প্রান যায় যায় অবস্থা। আমি তারাতারি ওনার পাস কাটিয়ে মিম আপুর রুমের দিকে পা বারাতেই উনি আমার হাত চেপে ধরলেন তারপর শাশুড়ি মাকে বললেন

~ আম্মু মিমকে তুমি ডেকে আনো আমার একটা জিনিস পাচ্ছি না ওটা বৃষ্টি বের করে দিবে। এই বলেন আমার হাত ধরে টানতে টানতে উনি আমার আমাদের রুমে নিয়ে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলেন।

তারপর আমার দিকে রাগি লুক নিয়ে এগিয়ে আসতে লাগলেন আর আমি পিছাতে লাগলাম। এক সময় আমি দেওয়ালের সাথে আটকে গেলাম। তারপর উনি আমার একদম সামনে এসে ওনার হাত দিয়ে আমার গাল দুটি অনেক শক্ত করে চেপে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বলতে লাগলেন,

~ ঐ তোর সমস্যা কি হমম তুই আম্মুর কাছে মিথ্যে বললি কেনো। ভাল সাজতে চাস তাই না সবার কাছে ভাল হওয়ার খুব শখ না তোর। এবার দেখ তোকে আমি কিভাবে সবার কাছে খারাপ বানাই দেখবি।

ওনার কথার উত্তরে আমি কিছুই বলতে পারছি না শুধু দুচোখ দিয়ে অঝোর ধারায় পানি গরিয়ে পরছে।
আমার চোখে পানি দেখে উনি আমাকে ছেরে দিয়ে টেবিলের ওপর থেকে গ্লাস নিয়ে আছার মেরে ভেঙে রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন। আর আমি ওখানেই বসে বসে কাঁদতে লাগলাম। আমি কিছুতেই বুঝতে পারছি না উনি কেনো এমন করছেন আমার সাথে আমি ওনার কি ক্ষতি করেছি।

তারপর উঠে বাথরুমে গিয়ে মুখে একটু পানি দিয়ে বাইরে বের হলাম। আর তখনি দেখি আমার শাশুড়ি মা আমায় ডাকতে রুমে এসেছেন। রুমে গ্লাস ভাঙা দেখে উনি বললেন~

~ একি বৃষ্টি গ্লাসটা এভাবে ভাঙলো কি করে?
~ আ আসলে মা খুব পানি পিপাসা পেয়ে ছিলো তাই তারাতারি পানি খেতে গিয়ে হাত ফসকে পরে গেছে সরি মা আমায় ক্ষমা করবেন।

~ একটু কি দেখে শুনে কাজ করতে পারোনা বাপু সকাল সকাল দুটি জিনিস ভাঙলে। এই বলেই শাশুড়ি মা মুখ বাকা করে রুপ থেকে চলে গেলেন। আর আমি একটা দির্ঘ্যশ্বাস ফেলে কাঁচের টুকরা গুলো পরিস্কার করলাম।
তারপর সবাই সকালের নাস্তা শেষ করলাম।

দুপুরে আমার বাড়ি থেকে সবাই আমায় নিতে এলো আজ আমায় আর উনাকে নিয়ে যাবেন আমাদের বাড়ি আবার দুদিন পর এই বাড়ির লোকেরা গিয়ে আমাদের নিয়ে আসবেন অনেক দিনের জন্য।

দুপুরের রান্নার জন্যে আমি আমার শাশুড়ির সাথে কাজে অনেক হেল্প করলাম। রান্নাবান্না শেষ হলে সব গুছিয়ে রাখলাম টেবিলে। তারপর ফ্রেশ হয়ে বসে রইলাম আব্বু আসার অপেক্ষায়। দুপুরে আমার বাড়ি থেকে আব্বু খালা খালু ফুফু ফুফা ফুফাতো ভাই বোন সবাই এলো আমায় নিতে।

তারপর খাওয়া দাওয়া শেষ করে আমায় আর ওনাকে নিয়ে রওনা হলাম বাড়ির উদ্যেশ্যে। এর মধ্যে আর ওনার সাথে আমার কোনো কথা হয়নি। আমি শুধু চিন্তা করছি আমার বাড়িতে গিয়ে উনি না জানি কি করেন সবার সাথে কেমন আচরণ করেন। মনে মনে আল্লাহর কাছে অনেক দোয়া করছি। তারপর আমরা বাড়ি এসে পৌঁছালাম, ,


পর্ব ৪

আমি শুধু চিন্তা করছি আমাদের বাড়িতে গিয়ে উনি না জানি সবার সাথে কেমন আচরণ করেন। আর মনে মনে আল্লাহর কাছে অনেক দোয়া করছি। তারপর আমরা আমাদের বাড়িতে পৌঁছে গেলাম।
উনি আসার সময় অনেক বড় একটা রুই মাছ মিষ্টি পান সুপারি এগুলো নিয়ে আসলেন সাথে অনেক ফলমুলও আছে। তারপর বাড়িতে ঢুকেই উনি আমার আম্মু কে সালাম করলেন তারপর জিগ্যেস করলেন কেমন আছেন আম্মু?

আমি ওনার এতো সুন্দর রুপ দেখে শুধু অবাকই হচ্ছি। একটা মানুষ কি ভাবে দুইরকম হতে পারে।
তারপর উনি সবার সাথে অনেক সম্মান দিয়ে হেসে হেসে কথা বললেন। আমার কথাও অনেক বললেন সুনাম করে। যেনো আমাদের মাঝে কতো মিল। আমি ওনার এমন আচরণ দেখে অনেক আনন্দীত হচ্ছি। নাজানি উনি ওনার ভুল বুঝতে পেরেছেন। উনি আমায় আর হয়তো কষ্ট দিবেন না।

ভেবেই অনেক ভালো লাগছে আমার। তারপর অনেক গল্প করে সময় কাটলো সবার কিন্তু এর মাঝে আমার সাথে ওনার এক বারো কথা হয়নি। শুধু কয়েক বার চোখাচোখি হয়েছে আর যতো বারই চোখাচোখি হয়েছে উনি একটা রহস্যময় হাসি দিয়েছেন। যে হাসির রহস্য আমি কিছুই বুঝতে পারিনি।

তারপর সবাই রাতের খাওয়া দাওয়া শেষ করে যার যার রুমে ঘুমোতে গেলো। আমায় আর ওনাকেও আমার রুমে যেতে বললো, আম্মু। আমি কোনো কিছু না বলে আমার রুমে চলে আসলাম। সাথে প্রচন্ড ভয়ও কাজ করছে আমার না জানি উনি আজ কেমন আচরণ করেন আমার সাথে। আমি রুমে আসার কিছুক্ষন পর উনিও রুমে এলেন। আর এসেই দরজা লাগিয়ে দিলেন। তারপর জোরে ফ্যান চালিয়ে দিলেন যেনো ফ্যানের শব্দের কারনে আমাদের কথার শব্দ বাইরে না যায়।

তারপর উনি সেই রহস্যময় হাসি দিয়ে আমার দিকে এগুতে লাগলেন আর আমি পিছাতে লাগলাম। এক সময় আমি দেওয়ালের সাথে আটকে গেলাম আর উনি জোরে একটা হাসি দিয়ে আমার গাল শক্ত করে চেপে ধরলেন আর দাতে দাঁত চেপে বলতে লাগলেন,

~ কি ভেবেছিস তুই যে আমি তোকে ভালবাসবো। হসহাহাহাহা এই রাজু ভালবাসবে তোকে অসম্ভব। বাইরে তো নাটক করলাম যাতে কেউ টের না পায় তোর সাথে আমি কেমন আচরণ করি। আমি কোনো দিনো তোকে ভালবাসবো না তুই তো শুধু আমার ভোগের সামগ্রী মাত্র। হাহাহা

ওনার কথা গুলো শুনে আমি যেনো আকাশ থেকে পরলাম। আমার চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় পানি পরছে। কিন্তু না আমায় এভাবে চুপ করে থাকলে হবে না। আমায় জানতে হবে কি করেছি আমি উনি কেনো এমন করেন আমার সাথে। তাই চোখ মুছে ওনাকে জিগ্যেস করলাম

~ কি ক্ষতি করেছি আমি আপনার। কি এমন দোষ আমার? কেনো করছেন আমার সাথে এমন? উত্তর দিন? কেনো বিয়ে করেছেন আমায়? জবাব দিন আমায় যদি এভাবে কষ্টই দিবেন তাহলে কেনো বিয়ে করেছেন আমায় বলুন আমায় বলুন? আমি আর সহ্য করতে পারছি না।
আমার কথার উত্তরে উনি দাঁতে দাঁত চেপে বললেন

~ ঐ বাপের বাড়ি এসে অনেক সাহস হয়েছেনা তোর। কি ভেবেছিস তুই তোর বাপের বাড়ি আছি বলে তুই যা প্রশ্ন করবি আমি তারই উত্তর দেবো তোকে? হুহহ কক্ষনো না। আমি তোকে কখনোই ভালো বাসবো না সারাজীবন এমন ভাবেই কষ্ট দিবো তোকে। মেয়ে মানুষ আমি ঘৃণা করি।

এই কথা গুলো বলেই উনি আমার আচল টেনে ফেলে বিছানায় ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলেন। তারপর শুরু করলেন ওনার পশুর মতো আচরন। আমি সহ্য করতে না পেরে এক সময় জ্ঞান হারালাম। যখন জ্ঞান ফিরলো তখন দেখি আমি ফ্লোরে পরে আছি গায়ের কাপর কিছু ঠিক নেই। শরীরে এক ফোটাও শক্তি নেই।

যেনো অবস হয়ে গেছে সারা শরীর। অনেক কষ্টে আস্তে আস্তে উঠে বসলাম তারপর বিছানায় তাকিয়ে দেখি উনি মহা আরামে ঘুমাচ্ছেন। ঘড়িতে দেখি ভোর ৫ টা বাজে। তাই তারাতারি অনেক কষ্টে উঠে বাথরুমে গেলাম তারপর শাওয়ার ছেরে দিয়ে কষ্টের নোনা জলে বুই ভাসালাম।

অনেক কষ্ট হচ্ছে আমার আর সাথে অনেক রাগও হচ্ছে মা বাবার ওপর। তারা কেনো এমন করলেন আমার সাথে। কেনো ভালো করে খোঁজ খবর না নিয়ে আমায় এমন একটা পশুর সাথে বিয়ে দিলেন।

এভাবে আধ ঘন্টা গোসল করার পর আমি কাপড় চেঞ্জ করে বাইরে বের হোলাম। তারপর নামাজ আদায় করলাম। মোনাজাতে অনেক কাদলাম। জানি না আমি সারাজীবন কি করে সংসার করবো এমন একজন লোকের সাথে।

তারপর বাইরে বের হলাম। বাইরে বের হতেই আমার ফুফাতো বোনেরা এসে আমার সাথে দুষ্টমি শুরু করলো। আমি সবার সাথে হেসে হেসেই কথা বলছি কারন আমি চাই না কেউ জানুক আমার আর ওনার ব্যাপারে। যতই হোক উনি আমার স্বামী।

আম্মু চা বানিয়ে আমার হাতে এনে দিলেন তারপর বললেন উনাকে নিয়ে দিয়ে আসতে। আমার আর সাহস নেই একা ওনার কাছে যাওয়ার তাই বুদ্ধি করে আমার ফুফাতো বোনকে সাথে নিয়ে গেলাম চা দিতে।
গিয়ে দেখি উনি ঘুম থেকে উঠেছেন আমার শাশুড়ি মায়ের সাথে ফোনে কথা বলছেন। আমাদের দেখে উনি বললেন

~ আচ্ছা আম্মু এখন ফোনটা রাখি বৃষ্টি চা নিয়ে এসেছে আমার জন্যে পরে কথা হবে আবার।
তারপর আমার হাত থেকে চায়ের কাপ নিয়ে উনি চা তে চুমুক দিয়ে বললেন
~ বুঝলে আফসিয়া ( আফসিয়া আমার ফুফাতো বোনের নাম)তোমার বোন এই দু দিনেই আমার অভ্যাস খারাপ করে দিয়েছে। ওর সুন্দর হাতের মিষ্টি চা খাইয়ে।

মুখে সেই রহস্যময় হাসি নিয়ে কথা গুলো বললেন উনি। ওনার কথা শুনে আমার কাজিন বজ্জাত আফসিয়া তো হেসেই শেষ যেন ওরে কেউ বিয়ের প্রস্তাব দিছে।
তারপর ফাজিল আফসিয়া বললো,
~ আহা গো আমার দুলাভাই টা দু দিনেই আমার বোনটার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে গো কি ভালবাসা দেখে হিংসা হয় গো।

আমার বজ্জাত আফসিয়ার কথাগুলো শুনে মনে মনে তাচ্ছিল্যের হাসি এলো। ভালবাসা হাহাহা সেটা বোধহয় আমার জন্যে নাই কারো কাছে একমাত্র আল্লাহ ছারা।
তারপর উনি চা খাওয়া শেষ করে বাথরুমে ঢুকলেন ফ্রেশ হতে। আমি আফসিয়াকে নিয়ে বাইরে আসছি আর বজ্জাতটা আমার মাথা খাচ্ছে শয়তানি করে করে।

ওর আর দোষ কি ওতো আর জানেনা ওর বোনটা আসলে কতটা কষ্টে আছে জানলে কখনোই এমন করতো না। আসলে আফসিয়া আমার ছোট বেলা থেকেই খেলার সাথি আমায় অনেক ভালবাসে ও। ওকেও আমি অসম্ভব ভালো বাসি। তাই ওর আনন্দ দেখে আমারও আনন্দ লাগছে আমি যেনো ভুলেই গেছি রাতের কথা।
হঠাৎ বজ্জাত আফসিয়াটা বলে উঠলো

~ ঐ আপু ঐ তোমার গালে এটা কিসের দাগ গো দেখি দেখি। এই বলেই আমার গালে হাত দিতে গেলো আর আমি পিছিয়ে এলাম। কারন আমার গালে প্রচন্ড ব্যথা।

কিন্তু আমি এটা কাওকে বুঝতে দিতে চাই না। আমার পিছিয়ে যাওয়া দেখে ফাজিলটা বলে উঠলো ওহ হো বুঝেছি বুঝেছি আমার দুলাভাইয়ের ভালবাসার দাগ ওটা হিহিহি। ওর কথা শুনে আমার বুকের মাঝে চিনচিন ব্যাথা অনুভব হলো। হুহ ভালবাসা আমি তো ওনার জীবনের বড় শত্রু মনে হয় আর ভালবাসা সেটা আবার কি। মনে মনে বললাম, ।


পর্ব ৫

আফসিয়ার কথা শুনে আমার বুকের মাঝে চিনচিন ব্যাথা অনুভব হতে লাগলো। হুহহ যার আচরণে সব সময় মনে হয় আমি তার সব থেকে বড় শত্রু তার নাকি আমি ভালবাসা। বললাম, মনে মনে।
তারপর আম্মুর ডাকে আমার ধ্যান ভাঙলো

~ বৃষ্টি এই বৃষ্টি কতো বেলা হয়েছে দেখেছিস জামাই বাবাজীকে নিয়ে সকালের খাবার খেতে আয়। যা তারাতারি ডেকে নিয়ে আয় আমি খাবার রেডি করছি টেবিলে।

আম্মুর কথার উত্তরে আমি শুধু মাথা ঝাকিয়ে সায় দিলাম তারপর আফসিয়াকে বললাম,
~ ঐ আপু আমার সাথে একটু চলনা তোমার দুলাভাইকে ডেকে আনি। ☺
আমার কথার উত্তরে বজ্জাতটা বললো,

~ এএএ সুয়ামী হলো ওনার আর ডাকতে যাবো আমি।
আমিতো আমার জানেমান স্বামীকে ডাকতে যাবো তোমার বর তুমি ডাকো গিয়ে হুহহ আার তাছারাও আমি কারো মাঝে কাবাব মে হাড্ডি হতে চাই না হিহিহি।

বজ্জাতটার কথা শুনে গা জলে যায় এতো দুষ্টু হয়েছে না কি বলবো। অবশ্য ওরি বা দোষ কি আমিও তো ওর সাথে এমনই করি।

তারপর আর কোনো কথা না বলে আমি উনাকে ডাকতে রুমের দিকে পা বারালাম। রুমে গিয়ে দেখি উনি ফ্রেস হয়ে এসে শুয়ে কানে হেডফোন গুজে গান শুনছেন।
আমি ওনাকে কয়েক বার ডাক দিলাম
~ এইযে শুনছেন আম্মু আপনাকে খেতে ডাকছে শুনছেন?

উনি কানে হেডফোন থাকার কারনে হয়তো আমার কোনো কথাই শুনতে পাচ্ছে না তাই উত্তরও দিচ্ছে না। আর চোখ বন্ধ করে আছে বলে বুঝতেও পারছে না আ
মি কিছু বলছি। তাই বাদ্ধ হয়ে ওনার হাতে ধাক্কা দিলাম ভয়ে ভয়ে তারপর বললাম,
~ এইযে শুনছেন আ আপনাকে আ আ আম্মু ডা ডাকছে। কাপা কাপা কন্ঠে।
উনি আমার কথা শুনে কান থেকে হেডফোন খুলে বললো, চলো যাচ্ছি। সাভাবিক ভাবেই বললো, কথাটা।

ওনার উত্তর শুনে আমি আর দেরি না করে তারাতারি পা চালালাম দরজার দিকে তখনি উনি আমায় পিছন থেকে হাত ধরে একটানে দেওয়ালের সাথে চেপে ধরে বললেন
~ তখন কি বলছিলে যেনো আমার শালীকা আফসিয়াকে তোমার গালে ওটা আমার আদর ভালবাসার দাগ তাই না?

~ ওনার কথা শুনে আমি বড় বড় করে ওনার দিকে তাকিয়ে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললাম,
~ কই আ আমি তো এ এমন কিছু বলিনি ঐ ফাজিল আ আফসিয়াটা এমন উল্টাপাল্টা বকছিলো। কি কিন্তু আপনি জানলেন কি করে?

আমার কথার উত্তরে উনি কিছু বললো, না শুধু একটা রহস্যময় হাসি দিয়ে দরজা দিয়ে বেরিয়ে চলে গেলো। আর আমি ওনার চলে যাওয়ার দিকে অবাক হয়ে চেয়ে রইলাম। কি হলো কিছুই বুঝলাম না তবে ওনার হাসিটা আমায় অনেক ভাবালো।

খাওয়ার টেবিলে উনি বলে উঠলেন
~ আম্মু আমার কিছু কথা ছিলো?
আম্মু ওনার কথা শুনে বলল

~ বলো বাবা কি কথা? খাওয়াটা শেষ করে বলো?
উনি বললো,
~ সমস্যা নাই আম্মু আসলে আসলে আমি আজকেই বৃষ্টিকে নিয়ে চলে যেতে চাইছি। কাল থেকে অফিসে জয়েন করতে হবে তো তাই।

~ কিন্ত বাবা তোমরা তো মাত্র কালই এলে আজকে চলে যাবে মানে? ঠিক আছে আমি তোমায় আটকাবো না কিন্তু আজকে এখানে থেকে কাল সকালে যেও বৃষ্টিকে নিয়ে কেমন? আমি কিন্তু কোনো না শুনবো না।
~ ঠিক আসে আম্মাজান তাই হবে আমি এখান থেকে কালই যাবো বৃষ্টিকে নিয়ে কিন্তু হ্যা খুব ভোরে।
~ আচ্ছা সে দেখা যাবে পরে এখন চুপচাপ খেয়ে নাও তো। (আম্মু)

আমি এতক্ষণ চুপচাপ আম্মু আর ওনার কথা শুনছিলাম। আমার যেনো কেমন লাগছে ওনার কথা শুনে কারন আমি যতদূর জানি ওনার এখনো ৭ দিন ছুটি আছে অফিসের। তাহলে উনি মিথ্যে কেনো বললো, । আম্মুকে সত্যিটা বলতেও পারছি না। আবার অনেক ভয়ও করছে।

তারপর খাওয়া দাওয়া শেষ করে উনি সবার সাথে অনেক আনন্দ করে হাসাহাসি করে কাটালেন সারাদিন এর মাঝে আমার সাথে ওনার কোনো কথা হয়নি শুধু চোখাচোখি হয়েছে কয়েক বার আর যতবারই চোখাচোখি হয়েছে ততোবারই উনি কেমন যেনো করে আমার দিকে তাকিয়েছিল আমি খুব ভয় পেয়েছি ওনার চাহনিতে।


পর্ব ৬

সারাদিন ভালো ভাবেই কেটে গেলো আমার আমি ভুলেই গেলাম ওনার খারাপ আচরণের কথা।
তারপর রাতে সবাই খাওয়া দাওয়া শেষ করে যার যার রুমে চলে গেলাম।

আমি যাওয়ার আগেই উনি রুমে গিয়েছেন। তাই আমি একটু ভয়ে ভয়ে রুমে ঢুকলাম। রুমে ঢুকে দেখি উনি রুমে নেই। তাই বাথরুমের কাছে গিয়ে বোঝার চেস্টা করলাম উনি বাথরুমে কি না?

আমি যখনি বাথরুমের সামনে গিয়ে দারালাম ওমনি উনি দরজা খুলে বের হলেন। আমি আচমকা ওনাকে বাথরুম থেকে বের হতে দেখে ভয়ে পরে যেতে নিলাম আর ওমনি উনি আমার হাত ধরে ফেললেন। তারপর বললেন
~ কি বৌ আমাকে ছারা একা ঘরে ভাললাগছে না বুঝি তাই আমার কাছে বাথরুমেই চলে এসেছো? মুখে সেই রহস্যময় হাসি।

আমি ওনার কথা শুনি সোজা হয়ে দারিয়ে কাঁপা কাপা কন্ঠে বললাম,
~ আ আমি আসলে ইয়ে মানে আসলে আমি বাথরুমে মা মানে,
আমার কথা শেষ হওয়ার আগেই উনি বলে উঠলেন

~ আর বলতে হবে না সোনা আমি বুঝেছি তো তুমি আমায় ছারা একা থাকতে পারছো না বেবি।
ওনার এমন আচরন দেখে কেনো জানি না আমার খুব ভয় হতে লাগলো। জানি না উনি কেনো এমন করছেন আমার সাথে তবে বুঝতে পারছি এগুলো সব ওনার অভিনয়।

আমি আর কোনো কিছু না বলে সোজা বাথরুমে ঢুকে গেলাম। তারপর বাথরুমের দটজা লাগিয়ে ভয়ে কাপতে লাগলাম।

একটু পর বাথরুম থেকে বের হয়ে দেখি উনি ঘুমিয়েছেন। আমি ওনাকে ঘুমোতে দেখে অনেক খুশি হলাম মনে মনে। তারপর পা টিপে টিপে আস্তে আস্তে খাটের অন্যপাশে গিয়ে আস্তে করে শুয়ে পরলাম।
কখন ঘুমিয়ে পরেছি জানিনা কিন্তু যখন ঘুম ভাঙলো তখন আমি অবাক হয়ে গেলাম।

কারন আমি ঘুম থেকে উঠে তাকিয়ে দেখি আমি ফ্লোরে শুয়ে আছি আর উনি আরামে বিছানায় ঘুমোচ্ছেন। আমি চিন্তায় পরে গেলাম কারন আমি তো ওপরে ঘুমিয়েছিলাম নিচে কি করে এলাম।

তারপর বুঝলায় হয়তো উনিই আমাকে এখানে শুইয়ে দিয়েছেন। মনে মনে একটু খুশিই হলাম যে আজকের মতো অন্তত ওনার পশু রুপের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছি।

তারপর তারাতারি উঠে বাথরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে ওজু করে বের হলাম। তারপর ফজরের নামাজ আদায় করলাম। ওনাকে ডাকার মতো সাহস আমার নেই তাই না ডেকেই আমি দরজা খুলে বের হয়ে আম্মুর কাছে গেলাম।

আম্মুর কাছে গিয়ে দেখি আম্মু রান্না করার জন্য সব রেডি করছেন। আমি গিয়ে আম্মুকে বললাম,
~ আম্মু এতো সকাল সকাল রান্না করছো কেনো?

আমার কথার উত্তরে আম্মু বললেন
~ জামাই বাবাজি বলেছে কালকে অনেক সকালে বাসায় যাবে তোকে নিয়ে তাই রান্না শুরু করলাম। না খাইয়ে তো আর যেতে দিতে পারি না তোদের।

আমি আম্মুকে বললাম, আম্মু কোনো কাজে হেল্প করতে হবে নাকি বলো আমি করে দিচ্ছি।
আমার কথা শুনে আম্মু মিষ্টি হাসি দিয়ে বললেন

~ না রে মা কিছু করতে হবে না তোর। শশুড়বাড়িতে তো আর বসিয়ে রাখবে না ওখানে কাজ করিস। আর সব সময় সবার মন জুগিয়ে চলার চেষ্টা করবি। কখনো যেনো কোনো নালিশ শুনতে না হয় আমাদের।

আমি আম্মুর কাথার উত্তরে কোনো কথা বললাম, না শুধু একটা দির্ঘ্যশ্বাস ফেললাম।
তারপর রান্নাবান্না শেষ হলে আম্মু বললো, রাজুকে ডেকে নিয়ে আসতে সকালের নাস্তা করার জন্য


পর্ব ৭

তারপর আম্মুর রান্নাবান্না শেষ হলে আম্মু আমায় বললো, রাজুকে ডেকে এনে সকালের নাস্তা করতে। আমি আম্মুর কথা মতো ওনাকে ডাকতে রুমে গেলাম।
রুমে গিয়ে দেখি উনি ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে প্রায় রেডি হয়েই বসে আছেন।
আমি ওনাকে কিছু বলবো তার আগে উনি আমায় দেখে বলে উঠলেন

~ শাশুড়ি আম্মা খেতে ডেকেছে তাই তো? আমি এখনি যাচ্ছি আর তুমি ততক্ষণে সব গুছিয়ে রেডি হয়ে নাও বাসায় যাওয়ার জন্য। কথা গুলো বলেই উনি হনহন করে বেরিয়ে গেলেন আমার আর কোনো কিছু বলার সুযোগই দিলেন না।

আমি আর কি করবো ওনার কথা মতো সব গোছাতে শুরু করলাম। তারপর সব কিছু গোছানো হয়ে গেলে ডাইনিংরুমে গেলাম। আমায় দেখে আম্মু বললো,

~ বৃষ্টি মা খেতে বোস পেট ভরে খেয়ে তারপর শশুড়বাড়ি যাবি তার আগে না। দুদিনেই আমাদের এতটা পর করে দিলিরে মা। যে জামাই কে খেতে পাঠিয়ে শশুড়বাড়ি যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে নিলি না খেয়েই।
আমি আম্মুর কথার উত্তরে বললাম,

~ আমি যে শশুড়বাড়ি যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছিলাম তা তুমি জানলে কি করে আম্মু?
আমার কথা শুনে আম্মু কিছু বলার আগেই রাজু বলে উঠলেন

~ আমি আম্মুকে বলেছি তোমার কথা গুলো যে তুমি রুমে গিয়ে আমায় বলছো তারাতারি খেয়ে আসতে তুমি রেডি হচ্ছেো বাসায় যাবে তাই। এই কথা গুলো বলেই উনি একটা শয়তানি হাসি দিয়ে আমায় চোখ টিপ দিলেন।
আমি ওনার কথার পর আর কিছু বললাম, না চুপচাপ খেয়ে উঠে সবার কাছে থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসলাম শশুড়বাড়িতে।

পুরো রাস্তায় ওনার সাথে আমার কোনো কথাই হয় নি। আমি পুরোটা রাস্তা কান্না করতে করতে এসেছি। বাবা মা কে ছেরে আসতে অনেক কষ্ট হচ্ছিলো আমার তাই আর তাছারা আমি এটাও জানি না শশুড়বাড়ি আসার পর আমার ভাগ্যে আর কি কি আছে।

বাসার সামনে এসে বেল চাপতেই মিম আপু এসে দরজা খুলে দিলো। আমি মিম আপুকে দেখে সালাম দিলাম তারপর জিগ্যেস করলাম কেমন আছে?

আমার কথার উত্তরে মিম আপু শুধু বললো, ভালোই
বলেই মুখ বাকা করে চলে গেলো। আমি আর কিছু না বলে শাশুড়ি মাকে দেখে সালাম দিলাম তারপর জিগ্যেস করলাম কেমন আছেন মা?

শাশুড়ি মা বললো, এই তো আছি ভালই।
তারপর সবার সাথে কম বেশি কথা বলে আমি নিজের রুমের দিকে পা বারালাম। আমি আসার অনেক আগেই উনি রুমে এসেছেন।

রুমে গিয়ে দেখি উনি চুপ করে বসে কি যেনো ভাবছেন। আমি ওনাকে কিছু না বলে রুমে এসে যেই না বাথরুমের দিকে পা বারিয়েছি ওমনি উনি এসে আমার হাত ধরে টান দিয়ে দেওয়ালে চেপে ধরে বললেন
~ ঐ তোর খুব সাহস হয়েছে তাই না? বড্ড বার বেরেছিস তুই। বাবার বাড়ি গিয়ে তো তোকে একদম অন্যরকম লাগছিলো কি হাসি খুশি হুহহ।

তোর সব হাসি আজ আমি বের করবো বলেই মিথ্যে বলে তোকে নিয়ে এসেছি বাসায়। বলেই আমায় আরো জোরে চেপে ধরলেন উনি দেওয়ালের সাথে আমি আর সহ্য করতে না পেরে ওনাকে শরীরের সব শক্তি দিয়ে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলাম। তারপর কান্না করতে করতে বললাম,
~ কি করেছি আমি? কি অপরাধে এভাবে কষ্ট দিচ্ছেন আমায়? কি ক্ষতি করেছি আমি আপনার? আমি আর সহ্য করতে পারছি না।

আমায় যদি আপনি সহ্য করতে নাই পারেন তাহলে কেনো বিয়ে করেছেন আমায়। তারিয়ে দিন আমায় আমি আর থাকতে চাই না এখানে।
আমার কথা শুনে উনি তেরে এলেন আমার দিকে তারপর আমার চুলের মুঠি ধরে বিছানায় ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলেন আর পিঠের উপর কয়েকটা কিল ঘুসি মেরে রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন।

আমি ওনার মার খেয়ে আর সহ্য করতে না পেরে জ্ঞান হারালাম। কতক্ষণ জ্ঞান ছিলো না আমার জানি না। যখন জ্ঞান ফিরলো তখন তাকিয়ে দেখি আমার পাসে আমার শাশুড়িমা বসে আছেন মুখ বাকা করে আর শশুড় মশাই দারিয়ে আছেন পাশেই।

আমার জ্ঞান ফেরা দেখে শশুড় মশাই বললেন
~ আম্মাজান কি হয়েছে তোমার তুমি এমন জ্ঞান হারালে কি করে? আমি অফিস থেকে এসে দেখি ডাক্তার তোমায় দেখে গেলেন। কি হয়েছে মা রাজু কিছু করেছে কি? মেরেছে তোমাকে?

আমায় সত্যি করে বলো সব।
শশুড় মশাইয়ের কথার উত্তরে আমি কিছু বলার আগেই আমার শাশুড়ি বলে উঠলেন
~ রাজু আবার কি করবে শুনি। আমার রাজুর মতো ছেলেই হয় না। কি জানি কি করেছে এই মেয়েটা ওদের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে আমার রাজুকে। তাই তো ও এতো রেগে আছে।

কি অলক্ষুণে মেয়েকে বৌ করে এনেছি রে বাবা আসার পর থেকে কিছু না কিছু করেই চলেছে। এই কথা গুলো বলেই শাশুড়ি মা আমার শশুড় কে জোর করে রুম থেকে নিয়ে চলে গেলেন।

আমি আমার শাশুড়ির কথা গুলো শুনে যেনো বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম। কি বললেন উনি আমি ওনার ছেলের সাথে কিছু করেছি। আমি অপয়া? কষ্টে বুকটা ছিরে যাচ্ছে আমার।

এ কোথায় পাঠালো আমার আমার মা বাবা। আমি এখানে সারাজীবন কি করে থাকবো?
রাতে অনেক জ্বর এলো আমার। জ্বর আর শরীরের ব্যাথায় আমার বিছানা ছেড়ে ওঠার ক্ষমতাও নেই। থরথর করে কাপছি আমি। কথাও বলতে পারছি না।

এমন অবস্থায় উনি আমার সাথে একটুও দয়া না দেখিয়ে পশুর মতো ঝাঁপিয়ে পরলো আমার ওপর। আমি আর সহ্য করতে পারলাম না তাই আবারও জ্ঞান হারালাম। যখন জ্ঞান ফিরলো তখন নিজের দিকে তাকিয়ে দেখি। শরীরের কাপড় কিছুই ঠিক নেই আর সারা শরীর অসম্ভব ব্যাথা। আমি অনেক কষ্টে উঠে বাথরুমে গিয়ে শাওয়ার ছেরে কান্না করতে শুরু করলাম।

অনেকক্ষণ কান্না করার পর ফ্রেশ হয়ে বের হলাম তারপর টেবিলে খাবার রাখা দেখে আর সহ্য করতে না পেরে সব খাবার খেয়ে নিলাম। তারপর ঔষধ খেলাম।
এখন একটু ভালো লাগছে কিন্তু শরীরের ব্যাথা এখনো আছে।
একমাস পর,


পর্ব ৮

একমাস পর,
আমি আব্বুর বাসা থেকে শশুড়বাড়ি বাড়ি এসেছি আজ একমাস হলো। এই একমাসে বদলে গেছে অনেক কিছুই। বদলে গেছি আমিও।

আমি ভুলে গেছি আগের মতো মন খুলে হাসতে। ভুলে গেছি সব সময় হাসি খুশি থাকতে। ভুলে গেছি একটু শান্তিতে ঘুমোতে। ভুলে গেছি পেট ভরে একটু খাবার খেতে। চেহারায় এসেছে নানা রকম অসুস্থতার ছাপ।

চোখের নিচে পরেছে কালি। মুখ খানা শুকিয়ে চেহারা নষ্ট হয়ে গেছে অনেকটাই। এগুলো হওয়ার অনেক কারন আছে। কারন গুলো যেনো অন্য কোনো মেয়ের সাথে এমন না হয় সব সময় এই দোয়াই করি।
একমাস আগে সেই দিন উনার হাতের মার খাওয়ার পর থেকে প্রায় প্রতিদিনই আমার কপালে খাওয়ার চেয়ে স্বামীর হাতের মাইর জুটেছে বেশি।

আর তার সাথে রয়েছে শাশুড়ি আর ননদের খোচা মারা কথা আর অসহ্য জালাতন। কখনো কখনো আমার আব্বু আম্মুর ওপর খুব রাগ হয় কারন তাদের জন্যেই আজ আমার এই অবস্থা। কিন্তু আমি নিজের ভাগ্যকে মেনে নিয়েছি কারন সবার কপালেই তো আর সুখ থাকে না হয়তো আমার কপালেও ছিলো না তাই এমন হয়েছে আমার সাথে। কারন কখনও কোনো মা বাবা তো আর ইচ্ছা করে সন্তানের খারাপ চাইবে না।

আমার শশুড়বাড়িতে একমাত্র আমার শশুড় মশাই আছেন যার কাছ থেকে আমি ভালবাসা বৈকি কখনো কষ্ট পাইনি। আমার কষ্ট দেখে আমার শশুড় আব্বুও অনেক কষ্ট পান কিন্তু আমার শাশুড়ি মায়ের ভয়ে কিছু করতে পারেন না।
এই একটা মাসে আমার শাশুড়ি আর ননদ আমায় তাদের নতুন রুপ দেখিয়েছেন। আমাকে দেখলে কেউ বলবে না যে আমি এ বাড়ির বৌ। সবাই ভাববে আমি যেনো এই বাড়িটার কাজের মেয়ে।

আমার আব্বু আম্মু আমার এতো কষ্টের ব্যাপারে এখনো কিছুই জানেন না। আমিই জানাইনি তাদের। কারন তারা আমায় তাদের থার থেকে নামিয়ে তাদের দ্বায়িত্ব পালন করেছেন। এখন আমি আমার সংসার টাকে শত কষ্টেও আগলে রেখে নিজের কর্তব্য পালন করবো ইনশাআল্লাহ।

সারাদিন শাশুড়ি ননদের কটু কথা আর কাজের মেয়ের মতো খাটানো শেষে রাতে তাদের ছেলের অত্যাচার মাইর পশুর মতো আচরণের সাথে আমি যেনো রোবট হয়ে মানিয়ে নিয়েছি সব।
এই একটা মাস আমার কি ভাবে কেটেছে তা শুধু আমি আর আমার শশুড় আব্বু জানেন। আমার শশুড় আব্বু আমার কষ্ট দেখে আমায় একদিন চুপ করে বললেন

~ বৃষ্টি মারে তুই চলে যা মা নইলে শেষ হয়ে যাবি তুই এই সকল অমানুষ দের অত্যাচারে। তোর কষ্ট আমার আর সহ্য হয়না রে মা। তুই যদি বলিস তাহলে আমি তোর মা বাবাকে চুপ করে কল দিয়ে বলবো তোকে এই নরক থেকে নিয়ে যেতে। তোর এই কষ্ট আমি আর সহ্য করতে পারছি নারে মা।

আমি আমার শশুড়ের কথার উত্তরে মুচকি হেসে বলে ছিলাম
~ আব্বু আপনি আমায় এখান থেকে চলে যেতে বলছেন। আপনার কথা মতো আমি যদি চলেও যাই কি গেরান্টি আছে আমার বলতে পারেন আব্বু?

আমি হয়তো এদের হাত থেকে বাচার জন্যে এখান থেকে চলে যাবো। আমার কষ্টের কথা শুনে আমার আব্বু আম্মু আপনার ছেলের থেকে হয়তো আমায় ছারিয়ে নিবেন কিন্তু তারপর! তারপর কি হবে বলতে পারেন আব্বু? তারপর শুরু হবে আমার একটা অনিশ্চিত জীবন আমি কি আর কখনো পারবো আমার সেই আগের জীবনে ফিরে যেতে?

আর কখনো কি পারবো অন্য কারো ঘরের বৌ হয়ে যেতে? পারবো না আব্বু আমি আর কারো ঘরের বৌ হয়ে যাওয়ার সাহস টুকুও হারিয়ে ফেলেছি। আর তাছারা আমি যদি এখান থেকে চলে যাই চিরদিনের মতো। তাহলে কতোদিন আমার আব্বু আম্মু আমায় পুষবে বলতে পারেন আব্বু? হয়তো আমি যাওয়ার একমাসো পার হবে না তারা আমায় আবার বিয়ে দিবে অন্য কোনো ঘরে।

আর আমি হয়তো বাদ্ধ মেয়ের মতো এই বিয়েটার মতো ঐ বিয়েটাকেও মেনে নিবো। কিন্তু তারপর! তারপর যদি সেই শশুড়বাড়ির লোকেরা এই বাড়ির থেকেও আরো বেশি খারাপ হয় তখন?
এই বাড়িতে এসে তবুও আমি আপনার মতো একজন বাবা পেয়েছি। কিন্তু ওখানে যদি তাও না পাই তাহলে কি হবে বলতে পারেন আব্বু?

আপনার ছেলে যেমনই হোক আব্বু সে আমার স্বামী। আর আমি তার বিয়ে করা বৌ আমি কখনোই তাকে ছেরে যাবো না সে যোমনই হোক না কেনো। আপনি শুধু আমার জন্যে দোয়া করবেন আব্বু আমি যেনো আপনার ছেলের মনে আমার জন্যে ভালবাসার সৃষ্টি করতে পারি। সবার মন জয় করতে পারি। আর কিছু চাওয়ার নাই আমার।

আমার কথা গুলো এতক্ষণ আমার শশুড় আব্বু চুপ করে মন দিয়ে শুনছিলেন। তারপর আমার মাথায় হাত বুলিয়ে কান্না করে বললেন
~ মারে আমি মন থেকে তোর জন্য দোয়া করি রে মা আল্লাহ যোনো তোর মনের সকল আসা পুরোন করে। তুই ভাবিস না রে মা আল্লাহ তোর এই ধৈর্য্যের ফল তোকে অবশ্যই দিবেন ইনশাআল্লাহ। আর এ বাড়ির সকলেও বুঝবে তোর মর্যাদা।

এই কথা গুলো বলে আব্বু চলে যান।
এতক্ষণ জানার পাসে দারিয়ে ভাবছিলাম এই কথা গুলো। হঠাৎ রুমের মধ্যে কিছু ভাঙার শব্দে ধ্যান ভাঙলো আমার।

আমি জানালার দিক থেকে চোখ সরিয়ে রুমের দিকে তাকিয়ে দেখি রাজু একটা কাঁচের গ্লাস ভেঙে আমার দিকে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে। ওর চোখ থেকে যেনো আগুন বের হচ্ছে। ওর এমন চাহনি দেখে আমার গলা শুকিয়ে গেলো। আমি বুঝতে পারছি না কি হলো হঠাৎ উনি এমন করছেন কেনো। আমি গুটি গুটি পায়ে একটু এগিয়ে এসে ওনাকে ভয়ে ভয়ে জিগ্যেস করলাম

~ কি কি কি হয়েছে আপনার গ্লা গ্লাসটা ভাঙলেন কেনো এ ভাবে। (কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললাম, )
আমার কথার উত্তরে উনি আমার দিকে ধেয়ে এসে একটা থাপ্পড় মারলেন আমি ওনার থাপ্পড় খেয়ে তাল সামলাতে না পেরে সেই ভাঙা গ্লাসটার ওপরে গিয়ে পরলাম। আর একটা কাঁচের টুকরো আমার ডান হাতে বিধে গেলো।

সাথে সাথে আমি আল্লাহ গো বলে কান্না করতে শুরু করলাম। আর উনি রুম থেকে হনহন করে বেরিয়ে চলে গেলো। আমি কিছুই বুঝলাম না উনি কেনো এমন করলেন আমার সাথে কি বা করেছি আমি।
উনি চলে যাওয়ার একটু পরেই আমার শাশুড়ি রুমে ঢুকলেন তারপর আমায় বসে বসে কান্না করতে দেখে বললেন

~ এই মেয়েটাকে যখন দেখো তখনি কিছু না কিছু একটা করবেই গ্লাস গুলো যেনো ওর বাপের বাড়ি থেকে নিয়ে এসেছে যে যখন ইচ্ছা ভাঙবে। আবার ঢং দেখেও বাচিনা বাপু আমার এতো সুন্দর গ্লাসটা ভেঙে আবার কান্না করছে হুহহ

এই কথা গুলো বলেই শাশুড়ি মা মুখ ভেংচিয়ে চলে গেলেন। আমি ওনার এমন কথা শুনে শুনে এতো দিনে অভ্যাস হয়ে গেছি। তাই কিছু না ভেবে ধিরে ধিরে উঠে হাত থেকে চোখ বন্ধ করে একটানে কাঁচের টুকরো টা বের করে ফেললাম তারপর হাতটা ভালো করে পরিস্কার করে কাপড় দিয়ে ব্যান্ডেজ করলাম। তারপর গ্লাস ভাঙা টুকরো গুলো বেলচায় তুলে বাইরে ঝুরিতে ফেলে দিলাম।

এভাবেই কেটে গেলো আরো ১০~ ১২ দিন।
তারপর হঠাৎ একদিন রাজু এসে সবাইকে বললো, ওর নাকি বিদেশ যেতে হবে অফিসের কাজের জন্য। ওখানে গিয়ে ওর ২ মাস থাকতে হবে।

পরশু দিনই ফ্লাইট। আর আমাকে বললো, এই দুই মাস আমি যেনো বাপের বাড়ি গিয়ে থাকি। তারপর রাজু যখন দেশে ফিরবে তখন যেনো আবার আসি। আমি ওনার কথা শুনে মনে মনে অনেক আনন্দিত হলাম দুটি মাস অন্তত একটু শান্তিতে থাকতে পারবো আল্লাহর দয়ায়। রাজুর কথা মতো সবাই রাজি হলো। আমার শশুড় আব্বুও অনেক খুশি হলো আমি বাড়ি গিয়ে একটু শান্তিতে থাকবো এটা ভেবে।
তারপর আমি যখন রুমে গেলাম তখন ওনাকে সাহস করে বললাম,

~ আপনাকে একটা কথা বলার ছিলো আমার। আসলে আমি তো বাবার বাড়ি চলে যাবো কিন্তু অনেক দিন হলো আমার মুখে দেওয়ার ক্রিম শেষ হয়ে গেছে তাই বলছিলাম যে যদি একটা ফেয়ার & লাভলি এনে দিতেন,
আমার কথা উত্তরে উনি এমন একটা কথা বললেন যে আমি মনে হয় আকাশ থেকে পরলাম। পায়ের নিচের মাটি সরে গেলো আমার

উনি বললেন
~ আগে যদি জানতাম বিয়ের পরে বৌয়ের জন্যে এতো টাকা খরচ করতে হবে তাহলে আগের মতোই থাকতাম। এভাবে একজনের পিছনে টাকা খরচ করার চেয়ে বাজারের মেয়েদের পিছনে খরচ করলে অন্তত একেক দিন একেক জনকে পেতাম ইচ্ছা মতো।

কথা গুলো বলেই উনি রুম থেকে বেরিয়ে চলে গেলেন। আর আমি হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে ভাবতে লাগলাম যে উনি এতটাই খারাপ ছি ভাবতেও ঘৃণা হচ্ছে যে উনি আমার স্বামী। বিয়ের পর আজকে প্রথম আমি কিছু চাইলাম ওনার কাছে আর উনি এটা কি বলে গেলেন আমায় ছি ছি ছি।

নিজের ওপর নিজেরই ঘৃণা হতে লাগলো যে আমি এমন একজন মানুষের বৌ যে কিনা সামান্য একটা ক্রিম এর জন্যে বৌ এর সাথে পতিতাদের তুলনা করে ছিঃ। আর তার মানে সে বিয়ের আগে পতিতালয়ে যেতো ছি ছি ছি। বিয়ের পর থেকে ওনার আচরণে জন্যে কখনো ওনার ওপর আমার ভালবাসার সৃষ্টি হয়নি। আর আজকে এই কথা গুলো শোনার পর শুধু ঘৃণা ছারা আর কিছু আসছে না ওনার ওপর আমার।

রাতে বাসায় আসার সময় উনি আমার জন্যে ফেয়ার & লাভলি নিয়ে এসে ছুরে দিলেন। আমি ওনার সাথে কোনো প্রকার কথা বললাম, না। কথা বলার রুচি হারিয়ে ফেলেছি আমি।
সকালে উঠে সব কিছু গুছিয়ে দিলাম উনি সবার কাছে থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলেন বিদেশ। কিন্তু আমায় কিছু বললো, না শুধু বললো, বাবার বাড়ি চলে যেতে।

দুপুরে আব্বু এসে আমায় নিয়ে আসলেন বাড়িতে। আমার শাশুড়ি ননদ আব্বুর সামনে এমন আচরণ করলেন যেনো আমি তাদের কলিজা আমায় ছারা বাড়ি ফাকা হয়ে যাবে। একটা মানুষ কতটা অভিনয় করতে পারে তা এদের দেখেই বোঝা যায়।

বাড়ি এসে সবার সাথে হাসি মুখে কথা বলে কাটালাম সারাদিন। কাওকে একবারের জন্যেও বুঝতে দিলাম না আমার মনের অবস্থা। আম্মু অবশ্য অনেক বার আমার অবস্থা দেখে বলেছে আমি সুখে নেই। আমায় এমন দেখাচ্ছে কেনো। আমি বার বার কোনো না কোনো ছুতায় আম্মুর কথা এরিয়ে গিয়েছি।

পরের দিন সকালে আম্মুর সাথে রুটি বানাচ্ছি ইচ্ছা করে। এমন সময় আম্মু হঠাৎ বলে উঠলো
~ এই বৃষ্টি দেখি দেখি তোর ঘারের পিঠে ওগুলো কিসের দাগ? হাতের তো এগুলা কিসের দাগ মা? আমায় সত্যি করে বল কোনো মিথ্যা বলবি না।
আমি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না।

এতো দিনের জমানো কষ্ট গুলো ঠুকরে বের হয়ে আসতে চাইলো আম্মুর বুকে মাথা গুজে জোরে কান্না শুরু করলাম। তারপর বিয়ের রাত থেকে শুরু করে সকল কথা একে একে বললাম, আম্মুকে। আম্মু আমার কথা শুনে সেও আমার সাথে কান্না করতে শুরু করলো। এমন সময় পিছনে আব্বুও সব কথা শুনে ফেলেছে। আব্বু অনেক রেগে গিয়ে বললেন।

~ আমি বৃষ্টিকে আর ঐ নরকে পাঠাবো না। ওকে ছারিয়ে নিবো ওদের থেকে। তুই আগে কেনো বলিসনি রে মা তোকে ওরা এতটা কষ্ট দেয়? তুই ভাবিস না তোকে আমি আবার বিয়ে দেবো অনেক ভালো পরিবার দেখে।
আব্বুর কথার উত্তরে আমি কান্না থামিয়ে বললাম,

~ ওনেক করেছো তোমরা আমার জন্যে আর করতে হবে না আব্বু। একবার বিয়ে দিয়েই আমার এই অবস্থা আরেক জায়গায় বিয়ে দিলে তারা যে ভালো হবে তার কোনো গ্যারান্টি আছে কি তোমাদের কাছে?

তোমরা আমায় বিয়ে দিয়ে অনেক উপকার করেছো আর করতে হবেনা সে ভাল হোক খারাপ হোক সে আমার স্বামী আর মেয়েদের জীবনে বিয়ে একবারই হয়। আমাকে নিয়ে তোমাদের চিন্তা করতে হবে না শুধু দোয়া করো আমার জন্যে। আর আমি চাইনা আমার শশুড়বাড়ির কেউ জানুক যে আমার আমার শশুড়বাড়ির এসব কথা তোমাদের বলেছি এই টুকু দয়া আমায় করো তোমরা প্লিজ।

তারপর আমার কথা শুনে আব্বু আম্মু আর কোনো কথা বলার সাহস পেলো না। শুধু আমার মতো তারাও চোখের জলে বুক ভাসালো। ওইযে কথায় বলেনা ভাবিয়া করিও কাজ করিয়া ভাবিও না। আসলেই কথাটা ঠিক এখন আর কেঁদে লাভ কি যা হওয়ার তা তো হবেই।

এভাবে কেটে গেলো ৩ টা দিন। আব্বু অফিস থেকে ফিরে আম্মুকে ডেকে বললো,
~ এই বৃষ্টির মা শুনো তো একটু বৃষ্টিকে নিয়ে আসো তোমাদের সাথে কথা আছে।
আম্মু আর আমি আব্বুর কাছে এগিয়ে গেলাম তারপর আম্মু বললো,
~ কি হয়েছে কি কথা বলো শুনি?

~ আরে আমার শালিকা মানে বৃষ্টির খালামনি কল করেছিলো বৃষ্টির বিয়েতে আসতে পারেনি তাই অনেক আফসোস করলো আর বৃষ্টি এখানে দুই মাস থাকবে শুনে অনেক বায়না করলো যে তুমি যেনো বৃষ্টিকে নিয়ে ওদের ওখানে গিয়ে কিছু দিন থেকে আসো।

বৃষ্টি সেই ৭ বছরের থাকতে গিয়েছিলে আর তো যাও নি তাই। আর তাছারা ওখানে গেলে বৃষ্টি মার মনটাও একটু ভালো লাগবে।
আব্বুর কথা শুনে আম্মুও রাজি হয়ে গেলো আর আমি কি বলবো আমিও হ্যা বলে দিলাম।

জানিনা খালামনির বাড়িতে কি অপেক্ষা করছে আমার জন্যে হয়তো আরো বেশি কষ্ট বা কারো বুক ভরা ভালবাসা। জানি না কি হবে সেখানে আমার সাথে কে অপেক্ষা করে আছে আমার জন্যে পৃথিবীর সব ভসলবাসা নিয়ে,


পর্ব ৯

জানিনা কি অপেক্ষা করছে সেখানে আমার জন্যে। কারো বুকভরা ভালবাসা নাকি আরো কষ্ট।,
পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই রেডি হয়ে নিলাম আমি আর আম্মু খালার বাড়ি যাওয়ার জন্য। বাসে করে যেতে হয় মোট ৪ ঘন্টার রাস্তা। রেডি হয়ে আব্বুর থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে পরলাম আমি আর আম্মু।

আমি প্রথম যখন খালার বাড়ি গিয়েছিলাম তখন আমার বয়স ছিলো ৭ বছর। এর পর আর কখনো যাওয়া হয়নি। আসলে আমাদের বাড়ি অনেক দুরে হওয়ায় সে ভাবে কারো যাওয়া আসা হয়না।

আমার খালামনির দুই ছেলে মেয়ে। মেয়ের নাম শম্মি আর ছেলের নাম #শ্রাবণ। শ্রাবণ ভাইয়া আমার ৪ বছরের বড়। আর শম্মি আমার ৫ বছরের ছোট। শ্রাবন ভাই এসেছিলো আজ থেকে প্রায় ৪ বছর আছে। তখন আমি ক্লাস ৪র্থ শ্রেনীতে পড়ি।

শ্রাবন ভাইয়া অনেক মজার একজন মানুষ সব সময় লাফালাফি দুষ্টুমি আর মজা করে কাটায়। আমাদের বাড়িতে এসে দুই দিন ছিলো আর এই দুইদিনেই বাড়িটাকে আনন্দের কারখানা বানিয়ে দিয়েছিলো। সব সময় আমার পিছু লেগে থাকতো। আমিও কম কিসের আমি অনেক দুষ্টুমি করতাম ভাইয়ার সাথে।

কিন্তু সে আমি আর এই আমির মাঝে এখন অনেক ফারাক। আমি এখন হাসতে ভুলে গেছি ভুলে গেছি দুষ্টুমি করতে। সব সময় মন মরা হয়ে থাকা যেনো আমার অভ্যাসে পরিনতো হয়েছে। এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে বাস থেকে নামার সময় হয়ে গেছে আমি টেরই পাই নি।

আমি আর আম্মু বস থেকে নেমে একটা রিক্সা নিয়ে সোজা গিয়ে খালামনির বাসার সামনে নামলাম।
খালামনির বাসাটা আগের থেকে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। এখন অনেক সুন্দর লাগছে বাসাটাকে। সামনে গেইট, গেইট দিয়ে ভিতরে ঢুকলেই অনেক সুন্দর একটা ফুলের বাগান। প্রায় সব রকমের ফুলই রয়েছে বাগানটায়। দেখেই মনটা জুরিয়ে গেলো।

আমাদের দেখেই খালামনি ছুটে এসে আম্মুকে শক্ত করে জরিয়ে ধরলো। তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
~ বৃষ্টি মা আমার, আমার মামনিটা কত্ত বড় হয়েছে গো। কতো দিন পর তোকে দেখছি বলতো মা। অনেক শুকিয়ে গেছিস। ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া মনে হয় কিছু করিস না। দারা এখানে যে কদিন থাকবি তোকে খাইয়ে খাইয়ে একদম মোটা বানিয়ে দেবো।

খালামনির কথা শুনে আমি কিছু বললাম, না। শুধু বললাম, কেমন আছো খালামনি।
খালামনি মুচকি হাসি দিয়ে বললো, তোকে দেখার পর কি কেউ খারাপ থাকতে পারে? একটু অসুস্থ ছিলাম আমার বৃষ্টি মামনিটাকে দেখে সুস্থ হয়ে গেছি।

তারপর আমি আম্মুকে খালামনির সাথে ভিতরে যেতে বললাম, আর আমি বাগানে একটু বসনো এটা বললাম, । আম্মু আর খালামনি বাসার ভিতরে চলে গেলো আর আমি বাগানের সব ফুল গুলো ছুয়ে ছুয়ে দেখতে লাগলাম।
আমি কালো বোরখা পড়া তাই বোঝা যাচ্ছে না আমি কে। আম্মু আর খালামনি বোরখা খুলতে বলেছিলো কিন্তু আমি বলেছি পরে খুলবো তোমরা যাও।

আমি ফুল গুলো ছুয়ে ছুয়ে দেখছি আর মনটা খুশিতে ভরে উঠছে। আসলে আমি ফুল অনেক ভালবাসি তাই। এমন সময় আমার সব আনন্দ মাটি করে দিয়ে কোথা থেকে যেনো একটা বজ্জাত খাটাশ মার্কা গন্ডার এসে আমার হাত ধরে জোরে জোরে ষারের মতো চেচাতে লাগলো চোর চোর চোর বলে। আমি কি বলবো ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে দারিয়ে রইলাম।

ঐ বজ্জাত ষারটার চেচাঁমেচি শুনে বাসা থেকে আম্মু আর খালামনি বেরিয়ে এলেন। তাদের দেখে ঐ বজ্জাত ষারটা বলতে লাগলো

~ ~ আম্মু তোমায় কতবার বলেছি বলোতো যে গেইট কখনো খোলা রাখবে না। তাহলে আমার সাধের ফুলের বাগানের বারোটা বাজবে। যখন তখন যার যেমন ইচ্ছা এসে ফুল নিয়ে যাবে আবার গরু ছাগলেরও তো অভাব নাই। এই যে দেখো আমি যদি এখন সময় মতো না আসতাম তাহলে এই বোরখা পরা কে হতে পারে যাই হোক এই বোরখা পড়া ষারনীটা এতক্ষণ আমার সব ফুল চুরি করে নিয়ে যেতো। দরি আনো তারাতারি এই ষারনীটাকে বাধতে হবে।

আমি আম্মু আর খালামনি ঐ ষাড়টার কথা শুনে হা করে তাকিয়ে আছি কারো মুখে কোনো কথা নেই।
হঠাৎ আম্মু হো হো করে হেসে দিলো আর খালামনি এসে ঐ ষাড়টার কান ধরে বললো,

~ ঐ শ্রাবন ছার বৃষ্টিকে। সেই কখন থেকে মেয়েটাকে যা নয় তাই বলে যাচ্ছিস। আরে গাধা তুই কি ভুলে গেছিস আজকে তোর বড় খালামনিদের আসার কথা ছিলো। সে নয় ভুলে গেছিস কিন্তু আমার পাসে তোর খালামনিকে তো দেখছিস নাকি।

এবার ঐ ষাড় ব্যাটায় আমার হাত ছেরে দিয়ে চিল্লাতে লাগলো
~ ইসসস আম্মু কানটা ছেরে কথা বলো প্লিজ। আমার প্রেস্টিজের তো ফালুদা বানাই দিলা এই ষাড়নীটা আর খালামনির সামনে।

এবার আর আমি চুপ করে থাকলাম না বলে উঠলাম
~ আম্মু আমি এখানে থাকবো না এই কোথাকার কোন বজ্জাত খাটাশমার্কা ষাড় এসে কখন থেকে আমায় যা নয় তাই বলে যাচ্ছে। আমি থাকবো না এখনি চলে যাবো এখান থেকে।

আম্মু কিছু বলবে কি হাসি যে থামছেই না। কখন থেকে পাগলের মতো হেসেই চলেছে যেনো তার নতুন করে বিয়ে ঠিক হইছে থুক্কু কি কই এসব আবল তাবল।
এবার ঐ শ্রাবণ ষাড়টা চেচিয়ে বললো,

~ ঐঐঐ বৃষ্টি না টিষ্টি কি বললি তুই আমি ষাড়? আমি যদি ষাড় হই তাহলে তুই ষাড়নী ছাগলি পাগলি গন্ডারনী ব্লা ব্লা ব্লা।
এবার আমাদের কান্ড দেখে আম্মুর সাথে খালামনিও হাসিতে যোগ দিলো তারপর কিছু না বলে আম্মুকে নিয়ে বাসার মধ্যে চলে গেলো।

আর আমি এদের এমন কান্ড দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম।
আমার এমন চুপ করে তাকিয়ে থাকা দেখে শ্রাবন বলে উঠলো

~ ঐ কালো পেত্নী এমন খাম্বার মতো দারিয়ে না থেকে আমার ফুল গাছের এখান থেকে সর জলদি।
আমি আর রাগ কন্ট্রোল করতে পারলাম না শরীরের সব শক্তি দিয়ে বজ্জাত ষাড়টার পায়ে দিলাম একটা পারা তারপর এক দৌড়ে বাসার মধ্যে হাসতে হাসতে চলে গেলাম। এবার দেখো কেমন লাগে।

বেচারা আমার হীল জুতার লাথি খাইয়া ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে দারিয়ে আমি দৌড়ে যাওয়া দেখে হাসতে লাগলো। আমি বাসার মধ্যে ঢুকে দেখি আম্মু আর খালামনি যেনো কি নিয়ে কথা বলছে কিন্তু আমাকে দেখেই কথা বলা বন্ধ করে দিলো। তারপর আমি আর কিছু না বলে খালামনি একটা রুম দেখিয়ে দিলো বললো, সেখানে আমি আর শম্মি থাকবো সেখানে চলে গেলাম তারপর বোরখা খুলে হাত মুখ ধুতে বাথরুমে ঢুকলাম।

আমি পরেছি লাল টুকটুকে একটা থ্রিপিজ। অনেক সুন্দর হাতের কাজ করা।
বাথরুম থেকে বেরিয়ে দেখি আম্মু বসে আছে আমার অপেক্ষায়। আমায় দেখে আম্মু বললো,
~ তোর খালামনি খেতে ডাকছে চল তোকে নিয়ে যাবো বলে বসে আছি।

তারপর আমি আর আম্মু খাওয়ার জন্য ডাইনিংরুমে গেলাম গিয়ে দেখি ঐ ষাড়টাও খেতে বসেছে আর ষাড়ের মতো গিলছে। আমাকে দেখে খালামনি বললো,
~ বাব বাহ আমাদের বৃষ্টি মাকে তো দেখছি অনেক সুন্দর দেখতে হয়েছে। বোরখা পরা ছিলো তাই বুঝিনি। খালামনির কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথে শ্রাবন ভাইয়া বলে উঠলো

~ ঐ কালো পেত্নীটা লাল পরী হলো কি ভাবে? একটু আগে যে ফুল চোর কালো পেত্নীটাকে ধরেছিলাম এটা কি সেইই? এখন তো দেখছি পেত্নীর আরালে লাল পরী ছিলো
শ্রাবনের কথা শুনে আম্মু আর খালামনি হেসে দিলো। আর আমি মুখ ভেঙচি দিয়ে চেয়ার টেনে বসে পরলাম খাবার খেতে।

খেতে খেতে শ্রাবন ভাই এর দিকে তাকিয়ে দেখি ঐ ষাড়টা হা করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমার অনেক রাগ হলো এটা দেখে তাই পা দিয়ে আবার দিলাম একটা লাথি আর সঙ্গে সঙ্গে আবার বেচারা ষাড়টা চেচিয়ে উঠলো। আর আমি শয়তানি হাসি দিলাম।

ষাড়টার চেচানো দেখে আম্মু বললো, কি হয়েছে শ্রাবণ বাবা তুমি এমন করে চিৎকার করলে কেনো?
বেচারা বললো, কিছু না এমনি। আর রাগি লুকে আমার দিকে তাকালো।

তারপর আমরা যে যার মতো খাওয়ায় ব্যাস্ত হয়ে পরলাম। আম্মু খালামনিকে জিগ্যেস করলো
~ কিরে পারুল ( আমার খালামনির নাম পারুল) শম্মি মাকে দেখছি না যে কোথায় ও?
~ ও আসলে কোচিং এ গেছে একটু পরেই চলে আসবে। যাওয়ার আগে বার বার তোমাদের কথা জিগ্যেস করছিলো তোমরা কখন আসবো।


পর্ব ১০

খাওয়া দাওয়া শেষ করে হাত ধোয়ার জন্যে ব্রেশিনে গেলাম। গিয়ে দেখি ঐ হনুমানটা দারিয়ে দারিয়ে হাসছে। আমি ওর হাসির কোনো কারন খুজে পেলাম না।

তাই ওর দিকে ধ্যান না দিয়ে হাত ধুতে লাগলাম। হাত ধোয়া শেষ করে যেই না আমি পাসে রাখা তয়লার সাথে হাত মুছতে যাবো ওমনি দেখি ইয়া বড় একটা তেলাপোকা তয়েলার সাথে। আমি তো একটা চিৎকার দিয়ে দৌড়ে গিয়ে আম্মুকে জরিয়ে ধরলাম। আর ঐ বজ্জাত টা ৩২ টা দাঁত বের করে হাসছে আর হাত তালি দিচ্ছে।
আমার চিৎকার করা দেখে খালামনি আর আম্মু একসাথে জিগ্যেস করলো কি হয়েছে আমার। আমি কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললাম,

~ আম্মু গো হাত মোছা তয়লার সাথে ইয়া বড় তে তেলাপোকা।
আমার কথা শুনে খালামনি শ্রাবন ভাইয়ার কান ধরে বললো,

~ বৃষ্টি মা আমাদের বাসায় কোনো তেলাপোকা নাই ঐ তেলাপোকাটা এই ফাজিলটার প্লাস্টিকের তেলাপোকা। ঐটা দিয়ে ও শম্মিকেও অনেক ভয় দেখায় এখন তোর পিছনেও পরেছে। ঐ শ্রাবণ ক্ষমা চা বলছি আমার বৃষ্টি মায়ের কাছে। আর তোর ঐ তেলাপোকাটা ফেলেদে কোথাও যা। খালামণির কথার উত্তরে শ্রাবণ ভাই বললো,
~ ইশশশ আম্মু তুমি যখন তখন আমার কান ধরো কেনো এভাবে বলো তো আমার তো প্রেস্টিজ বলে কিছু একটা আছে নাকি?

শ্রাবণ ভাই এর কথা শুনে আমরা সবাই হেসে দিলাম। শ্রাবণ ভাইয়া সত্যিই অনেক মজার মানুষ কিন্তু খুব দুষ্টু। হিহিহি
এখানে আসার পর আমি যেনো আমার জীবনে ঘটে যাওয়া গত দেরমাস এর ঘটনা গুলো ভুলেই গেছি। অনেকদিন পর এমন হাসি খুসি থাকছি আমি।

তারপর আমি শম্মির রুমে গিয়ে শুয়ে পরলাম ভাল লাগছে না তাই অনেকটা পথ জার্নি করেছি তাই হয়তো।
কিছুক্ষন পর শম্মি এলো এসেই আমাকে দেখে কাধের ব্যাগটা রেখে দৌড়ে এসে আমায় জরিয়ে ধরলো। তারপর হাপাতে হাপাতে বলতে লাগলো

~ বৃষ্টি আপু তুমি কেমন আছো বলো? কত্ত দিন পর দেখছি তোমায়? জানো আজকে আমি কোচিং এ গিয়ে পড়ায় মনই দিতে পারিনি তোমায় কখন দেখবো সেই খুশিতে। ইশশ আমার আপুটাকে কি মিষ্টি দেখতে গো একদম ভারতের নায়িকা শুভশ্রীর মত। সত্যিই আপু তোমায় না একদম লাল পরী লালপরী লাগছে গো এই জামাটায়। উমমমমমমাহ আপু।

শম্মির এমন কান্ড দেখে আমি হাসতে হাসতে শেষ। মেয়েটা সত্যিই অনেক ভালবাসে আমায়। ওর সাথে প্রায় প্রতিদিনই আমার কথা হতো ফোনে। আর শেষ বার দেখা হয়েছিল ১ বছর আগে। তখন শম্মি আর খালামনি আমাদের বাড়িতে বেরাতে গিয়েছিল তখন।

শম্মির কথা শেষ হলে আমিও ওকে চুমো দিয়ে বললাম,
~ উমমমাহ আমার মিষ্টি আপুটা দেখি এই একবছরে অনেক বড় হয়েছে আর সুন্দরীও বটে। আমি তো ভালোই আছি এখন বলো তুমি কেমন আছো আমার কিউটি আপুটা।
~ আমিও অনেক ভালো আছি আপু আর এখন থেকে আরো বেশি ভালো থাকবো আমার বৃষ্টি আপু এসেছে যে আর কি খারাপ থাকতে পারি।

তারপর আমরা এভাবে অনেক গল্প করলাম মজা করলাম আমি আর শম্মি। তারপর আজান হলে নামাজ পরলাম এক সাথে। বিকেলে ছাদে গেলাম শম্মির সাথে। ছাদে গিয়ে দেখি ছাদের এক কোনায় অনেক সুন্দর একটি দোলনা পারা রয়েছে। আমি কোনো কিছু না ভেবে সোজা গিয়ে ঐ দোলনায় বসে পরলাম। আর শম্মি ওমনি বলে উঠলো

~ বৃষ্টি আপু দোলনা টাতে বোসো না ভাইয়া জানলে অনেক বকবে।
~ কেনো দোলনায় বসলে বোকবে কেনো ঐ ষাড়টা।

~ আরে আপু ষাড় কোথায় পেলে আমি তো বলছি শ্রাবণ ভাইয়া বকবে।
~ আরে আমার মিষ্টি আপুমনিটা তোমার ঐ শ্রাবন ভাইয়াই তো আস্ত একটা ষাড় গরু। হিহিহি
আমার কথা শুনে শম্মি হো হো করে হাসতে হাসতে বললো,

~ আপু ভাইয়ার নামটা কিন্তা মন্দ দাও নি ওর সাথে অনেক মানাইছে ষাড় নামটা। হিহিহি
শম্মি হাসতে হাসতেই চেচিয়ে উঠলো আর ওর চেচানো দেখে আমি ওর দিকে তাকিয়ে দেখি আ্রাবন ভাই ওর কান ধরে আছে আর রেগে যেনো চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে।

( শ্রাবণ ভাইয়ের গায়ের রং ফর্সা হাইট ৫ ফুট ৮ ইঞ্চি, মুখে খোচা খোচা দাড়ি। সব মিলিয়ে বলতে গেলে অনেক সুন্দর দেখতে শ্রাবন ভাইকে)

তারপর রাগে ফোস ফোস করতে করতে শ্রাবন ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
~ ঐ কালো পেত্নী লালপরী কি বললি তুই আমার নামে আমি ষাড়? আর তোর সাহস তো কম নয় তুই আমার প্রিয় দোলনায় বসেছিস যেখানে আমি ছারা অন্য কাওকেই বসতে দেইনা সে খানে। আর ঐ শম্মি তোর সাহস দেখেও আমি অবাক হচ্ছি তুই ঐ লালপরীটার সাথে যোগ দিয়ে আমায় ষাড় বলছিস।

শ্রাবণ ভাই এর রাগ দেখে আমার রাজুর কথা মনে পরে গেলো। রাজু আমার সাথে কি কি আচরণ করেছে সব মনে পরতে লাগলো। আমি আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারলাম না। চোখের পানি ছেরে দিয়ে একদৌড়ে রুমে চলে আসলাম।

আর ও দিকে শ্রাবন ভাই আমার কান্না করে এভাবে চলে যাওয়া দেখে শম্মির কান ছেরে বললো,
~ কি হলো বৃষ্টির ও এভাবে চলে গেলো কেনো আর কান্নাই বা করলো কেনো আমি তো শুধু একটু মজা করছিলাম। ও কি সিরিয়াসলি নিলো নাকি মজা করা টা।

তারপর শ্রাবণ ভাই আর শম্মি দুজনে আমার রুমে এসে দেখে আমি শুয়ে শুয়ে কান্না করছি। আমার এভাবে কান্না করা দেখে যেনো শ্রাবনের বুকটা ফেটে যাচ্ছে। ওর কেনো এমন হচ্ছে ও জানে না। আমার কান্না দেখে আর সহ্য করতে না পেরে শ্রাবন ভাই রুম থেকে বেরিয়ে বাইরে চলে গেলো।
আর শম্মি আমার পাশে বসে আমায় বলতে লাগলো

~ বৃষ্টি আপু ঐ বৃষ্টি আপু তুমি এভাবে কাঁদছো কেনো আরে ভাইয়া তো এমনি আমাদের সাথে মজা করছিলো তাই এভাবে কাঁদে নাকি কেউ। এই আপু থামো না প্লিজ তোমার কান্না আমার ভালো লাগছে না আমিও কেঁদে দিবো কিন্তু হুমম

শম্মির কথা শুনে আমি ওকে জড়িয়ে ধরে কান্না করা শুরু করলাম। শম্মি তো আর জানে না আমি আসলে কেনো কাদছি। অনেক কষ্ট হচ্ছে আমার গত দিন গুলোর কথা মনে করে।
আম্মু আর খালামনিও বাসায় নেই পাসের বাসায় বেরাতে গেছে।

তারপর মনটাকে শান্ত করে কান্না থামালাম আমি। তারপর শম্মিকে বললাম,
~ আরে পাগলি আমি শ্রাবন ভাইয়ের কথায় কিছু মনে করিনি। আসলে আমার শরীরটা ভালো লাগছিলো না তাই কাদছিলাম। এখন ঠিক আছে।

তারপর আমরা অনেক গল্প গুজব করে কাটালাম সারাদিন রাতে সবাই খেয়ে দেয়ে যার যার মতো শুয়ে পরলাম। এর মাঝে আর শ্রাবনের সাথে আমার কোনো কথা হলো না। দুই একবার চোখাচোখি হয়েছে শ্রাবন ভাই এর চাহনীতে যেনো অপরাধবোধ কাজ করছে।
তারপর সবাই ঘুমিয়ে পরলাম। সকালে,


পর্ব ১১

সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নামাজ পড়ে নিলাম। শম্মি এখনো ঘুমোচ্ছে আমি আর ওকে ডাকলাম না। মেয়েটা কালকে অনেক রাত পর্যন্ত জেগে ছিলো তাই।

তারপর দরজা খুলে বেরিয়ে দেখি আম্মু আর খালামনিও উঠে পরেছে। আমায় দেখে খালামনি বললো,
~ বৃষ্টি মামনি তুমি এত সকালে উঠে পরেছিস। আয় হালকা কিছু খেয়ে নে।
খালামনির কথার উত্তরে আমি কিছু বলার আগেই আম্মু বললো,

~ কাকে যে কি বলিস রে পারুল বৃষ্টি খাবে এত সকালে কিছু তাহলেই হলো। খাওয়া নিয়ে সব সময় ওর সাথে আমার যুদ্ধ করতে হয়েছে আগে জানিস। কিন্তু ওর বিয়ের পর, এতো টুকু বলেই আম্মু জিভে কামড় দিয়ে চুপ করে গেলো।

আর আমারো মনে পরে গেলো রাজু আর আমার শাশুড়ি ননদের কথা গুলো। আমি আর কিছু না বলে ওখান থেকে বাইরে চলে এলাম। মনটা খুব খারাপ হয়েছে তাই ফুলের বাগানে এসে বসে পরলাম চুপ করে।
বসে বসে ভাবতে লাগলাম রাজুর কিছু আচরণের কথা। একদিন রাজু অফিস থেকে এসে আমায় রুমে ডাকলো। আমি তখন ভয়ে ভয়ে ওর কাছে গেলাম আর ও আমায় বললো,

~ কালকে আমার কিছু বন্ধু আর কাজিন আসবে আমার বৌ দেখতে চেয়েছে তাই। ওরা সকাল ১০ টার দিকে আসবে তুমি এই শাড়িটা পরে রেডি হয়ে থেকো আর শুনো ওদের সাথে হেসে হেসে কথা বলবে কোনো ন্যাকামি যেনো না দেখি। বলেই একটা প্যাকেট আমার দিকে ছুরে দিলো।

আমি প্যাকেটটা হাতে নিয়ে খুলে দেখি ওটাতে অনেক পাতলা একটা শাড়ি। ওটা পরলে শরীরের প্রায় সবই বোঝা যাবে। তাই আমি কাপা কাঁপা কন্ঠে ওনাকে বললাম,

~ আমায় ক্ষমা করবেন আমি আপনার বন্ধুদের সামনে যেতে পারবো না। আর এই শাড়িটা পরে তো প্রশ্নই আসে না। আমি ছোট বেলা থেকেই যতটা পারি পর্দা করি দয়া করে এভাবে আমার পর্দা নষ্ট করবেন না।
আমার কথার উত্তরে উনি আমায় সজোরে একটা চর মেরে বললেন

~ তুই পড়বিনা মানে তোকে এটা পড়তেই হবে আর আমার বন্ধুদের সামনেও যেতে হবে। আর কোনো কথা যেনো না শুনি এই ব্যাপারে। যা এখান থেকে।
আমি কিছু বলিনি ওনার কথার উত্তরে শুধু চোখের জল ফেলে আমার শাশুড়ি মাকে বলেছিলাম গিয়ে। কিন্তু আমার কথা শুনে আমার শাশুড়ি মাও রাজুর মতো কথাই বলেছিলো। আর সাথে ননদের খোচা মারা কথা তো আছেই।

পরের দিন সকালে রাজু তার ৭ জন বন্ধুকে নিয়ে বাসায় আসে। আমি তখন আমার রুমেই ছিলাম। তারপর রাজু আমায় এসে ঐ শাড়িটা পড়ে রেডি হতে বলে চলে যায় বন্ধুদের কাছে।

কিন্তু আমি যাইনি ওদের সামনে। রুমের দরজা ভিতর থেকে বন্ধ করে বসে ছিলাম চুপচাপ। কারন আমি কোনো ভাবেই এতো গুলো লোকের সামনে বেপর্দা হয়ে যেতে পারি না। এটা অসম্ভব তাতে আমার যা খুশি হোক।

আমি যাচ্ছি না দেখে রাজু আমায় ডাকতে আসে কিন্তু আমি দরজা খুলিনি কারন আমি জানি দরজা খুললে ও যেভাবেই হোক আমায় নিয়ে যাবেই। আমি দরজা খুলিনি বলে রাজু আমায় অনেক গালাগালি করে খুব খারাপ ভাষায়। তারপর আমার শাশুড়ি মাও আমায় অনেক ডাকে ওদের সামনে যাওয়ার জন্য। কিন্তু তবুও আমি যাইনি। তারপর ওর বন্ধুরা যখন সবাই চলে যায় তখন আমি দরজা খুলি।

আর দরজা খোলার সাথে সাথে রাজু রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দেয়। তারপর প্যান্ট এর বেল খুলে আমার এলোপাথাড়ি মারতে থাকে। আমার পুরো পিঠ জুরে সেই মাইরের দাগ আছে এখনো কিন্তু সেটা কেউ জানেনা।
রাজুর মাইড় সহ্য করতে না পেরে সেদিন ওর পায়ে পরে কেঁদে ছিলাম আমি।

কিন্তু ও তখন আমায় লাথি দিয়ে রুম থেকে চলে যায়। আর আমি ফ্লোরে পরে থেকে কান্না করি। সেদিন আমার শাশুড়ি ননদ আমায় না বাচিয়ে বরং মুচকি হেসেছিলো। তারপর মুখ ভ্যাংচি দিয়ে চলে যায়। সেদিন রাতেও আমার অনেক জ্বর হয় শরীরের ব্যথায়।

আব্বু আম্মুকে আমি সব কথা বললেও বলিনি শুধু এই ঘটনাটা আর আমায় ক্রিম নিয়ে পতিতাদের সাথে তুলোনা করার কথাটা।

এগুলো ভাবতে ভাবতেই আমার চোখ বেয়ে অঝোর ধারায় পানি পরছে। কোনো দিকে কোনো নজর নেই আমার। কখন যে আমার পাসে এসে কেউ দুই হাত দুরে বসেছে আমি খেয়ালই করিনি। হঠাৎ তার ডাকে ধ্যান ভাঙলো আমার।

~ এই যে লালপরীটা আমার ফুলের বাগানে বসে কি ভাবছেন শুনি। শ্রাবণ
শ্রাবন ভাইয়ার কথা শুনে আমি তারাতারি চোখ মুছে বললাম,
~ কিছু না এমনি আসলে ফুল আমার খুব ভালো লাগে তো তাই ফুলের সাথে একটু সময় কাটাচ্ছিলাম এই আরকি।

আমার কথা শুনে শ্রাবন ভাই লাফ দিয়ে উঠে একটি বড় সাদা গোলাপ ছিড়ে এনে আমার দিকে বারিয়ে দিয়ে বললো,
~ I am so sorry বৃষ্টি। প্লিজ আমায় ক্ষমা করে দাও। কালকে মজা করে একটু বেশিই খারাপ ব্যাবহার করেছিলাম তোমার সাথে। তুমি যে আমার কথায় এভাবে কষ্ট পেয়ে কাদনে আমি জানতাম না। মাফ করে দাও আমায় প্লিজ।

শ্রাবন ভাইয়ের কথা শুনে আমি হেসে দিলাম তারপর বললাম,
~ আরে ধুর আমি তোর ওপর কোনো রাগ করিনি। আসলে তখন শরীরটা ভালো লাগছিলো না তাই ওভাবে চলে গিয়েছিলাম। মাফ চাওয়ার কিছু নেই। আর তুই না আমার বড় তাহলে বয়সে ছোট কারো কাছে ক্ষমা চাইতে লজ্জা করেনা তোর। হিহিহি

আমার কথা শুনে শ্রাবন ভাই বললো, আচ্ছা ঠিক আছে আর ক্ষমা চাইবো না। আপনার হাসি মুখটা দেখলাম এটাই অনেক। কিন্তু আমার একটা শর্ত আছে।
~ শর্ত! কি শর্ত আবার শুনি?

~ বলছি যে লালপরী ম্যাডাম আপনি কি আমার সব থেকে বেষ্ট ফ্রেন্ড হবেন? আপনার সকল সুখ দুঃখের কথা আমার সাথে শেয়ার করবেন আর আমি আপনার সাথে শেয়ার করবো? বলেন হবেন কি লালপরী ম্যাডাম?
শ্রাবন ভাইয়ার কথায় আমি হো হো করে হেসে দিলাম তারপর বললাম,

~ জি অবশ্যই হবো কেনো নয়। তবে আমায় এই লালপরী ডাকাটা বন্ধ করতে হবে বুঝলেন?
~ সরি লালপরী এই ডাকটা তো আর বন্ধ হবে না এটা আপনার সাথে সেট হয়ে গেছে। যদি চান তবে কালো পেত্নী বলেও ডাকতে পারি আপনাকে

~ কি আমি কালো পেত্নী? তবেরে দারা গরু তোর একদিন কি আমার একদিন ষাড় একটা।
শ্রাবন ভাইয়া হাসতে হাসতে দৌড়ে পালালো আর আমিও হাসতে লাগলাম অতিত ভুলে।


পর্ব ১২

তারপর শ্রাবণ ভাইয়া হাসতে হাসতে বাসার ভিতর দৌড়ে পালালো। আর আমিও ওর অবস্থা দেখে হাসতে লাগলাম।
তারপর হাতের গোলাপ ফুলটা নিয়ে রুমে এলাম। এসে দেখি শম্মি নামাজ পড়া শেষ করে জায়নামাজ গোছাচ্ছে।

আমার দিকে তাকিয়ে শম্মি বললো, শুভ সকাল বৃষ্টি আপুমনি। আমিও ওকে জরিয়ে ধরে বললাম, শুভ সকাল আমার সুইট আপুটা। তখন আমার হাতে ঐ সাদা গোলাপটা দেখে শম্মি বললো,

~ এই আপু তুমি কি এই গোলাপটা ভাইয়া সব চাইতে প্রিয় গাছ থেকে ছিরছো না কি? জানো এই গাছটা ভাইয়ার সব থেকে প্রিয় গাছ। ঐ গোলাপ গাছটার কাছেও কাওকে যেতে দেয়না ও। আর তুমি একটা ফুল ছিরে ফেলছো? আল্লাহ ভাইয়া জানতে পারলে তুলকালাম হবে বাসায়।

শম্মির কথা শুনে আমি হাসি দিয়ে বললাম,
~ আরে ধুর পাগলি কি বলছো এসব আমি কেনো ফুল ছিতে যাবো? এই ফুলটা তো,
আমার কথা বলা শেষ হওয়ার আগেই আমার পেছন থেকে কেউ একজন বলে উঠলো।

~ আরে ঐ ফুলটা গাছ থেকে বাতাসে পরে গিয়েছিল তাই বৃষ্টি কুরিয়ে নিয়েছে ফুলটা। শ্রাবন
শ্রাবন ভাইয়ার এমন কথা শুনে আমি চোখ বড় বড় করে ওর দিকে তাকালাম আর শ্রাবন ভাই আমায় ইশারা করে কি যেনো বুঝাতে চাইলো কিন্তু আমি কিছুই বুঝলাম না। তবুও আর কিছু না বলে চুপ করে রইলাম।

তারপর সবাই এক সাথে সকালের খাবার খেতে বসলাম। আর তখনি খালামনি শ্রাবণ ভাইয়াকে বললো,
~ এই শ্রাবন আজকে কি তোর কলেজ আছে? বা কোনো কাজ আছে?

~ না আজ সারাদিন আমি একদম ফ্রি আছি। কিন্তু কেনো বলোতো?
~ আসলে বৃষ্টি আর তোর খালামনি এসেছে আজ দুদিন হলো কিন্তু সব সময় শুধু ঘরের মাঝেই বসে আছে। তোর খালামনিকে তাও আমি আসেপাশের বাসা গুলো থেকে ঘুরিয়ে এনেছি কিন্তু বৃষ্টি মা একদম কোথাও যায় নি। তাই বলছি যে আজকে বৃষ্টি কে নিয়ে কোথাও থেকে একটু ঘুরে আয় ওর মনটা একটু ফ্রেশ হবে।

খালামনির কথা শুনে শ্রাবণ ভাই যেনো আনন্দে লাফাতে লাগলো। আর বললো,
~ আরে আগে বলবে না আম্মু এই কথাটা। ঐ লালপরী খেয়ে দেয়ে তারাতারি রেডি হয়ে নাও তোমায় নিয়ে ঘুরতে যাবো একটা অনেক সুন্দর জায়গায়।

~ সে কিরে এই লাল পরী নামটা আবার কার? (খালামনি)
~ আরে বুঝতে পারলেনা আম্মু ভাইয়া বৃষ্টি আপুকে লালপরী ডাকছে। কালকে আপু লাল ড্রেস পরেছিলো না তখন থেকে। শম্মি

~ ওহ তাই বল অবশ্য আমাদের বৃষ্টি মা কিন্তু সত্যিই পরীর মতো সুন্দরী। একদম ডানাকাটা পরী। (খালামনি)
ওদের এই কথা গুলো শুনে আম্মু শুধু হাসছে কোনো কথা বলছে না। আমি এসব কথা শুনে শম্মিকে বললাম,
~ শম্মি তারাতারি খাও তারপর চলো দুজন রেডি হই একসাথে।
~ শম্মি রেডি হয়ে কি করবে? (শ্রাবন)

~ কি করবে মানে শম্মিও যাবে আমাদের সাথে ঘুরতে।
~ না গো বৃষ্টি আপু আমি যেতে পারবো নাগো দুদিন পর আমার মাসিক পরীক্ষা আছে অনেক পড়া বাকি। তোমরা যাও আমি বরং পরে যাবো। শম্মি

কি আর করার খাওয়া দাওয়া শেষ করে রেডি হয়ে নিলাম। তারপর বাইরে বের হয়ে দেখি শ্রাবন ভাই হিরো সেজে বসে আছে। কালো রংয়ের একটি টি শার্ট সাথে ম্যাচিং প্যান্ট হাতে ঘড়ি চোখে সানগ্লাস। সব মিলিয়ে একদম ফাটাফাটি লাগছে দেখতে।
আমায় দেখে শ্রাবন ভাই বললো,

~ ওরে আমার লালপরী রে আপনি আবার সেই কালো পেত্নী সেজেছেন? তবে এটাই মেয়েদের আসল ভূষণ।
তারপর আমরা সবার কাছে থেকে বিদায় নিয়ে ঘুরতে বের হলাম।
শ্রাবন ভাইয়া একটা সি এন জি রিজাব করলো। সি এন জি টার পিছনে আমি বসলাম আর সামনে ড্রাইভার এর সাথে শ্রাবন ভাইয়া বসলো।

শ্রাবন ভাইয়ার এই জিনিসটা আমার অসম্ভব ভালো লাগলো। খালাতো বোন হলেও ও আমার পাশে বসেনি অনেক ভালো লাগলো এটা দেখে। তারপর সি এন জি টা গিয়ে একটা অনেক সুন্দর জায়গায় দারালো। আমি আর শ্রাবন ভাই দুজনেই নেমে পরলাম। শ্রাবণ ভাই ভারা মিটিয়ে আমায় ইশারা করে সামনের দিকে হাটতে বললো, ।

আমি আর শ্রাবন ভাই পাশাপাশি হাটছি কিন্তু দুজনের মাঝে প্রায় ৩ ফুটের দুরত্ব। আমরা হাটতে হাটতে একটা গেইটের ভিতর ঢুকলাম। ভিতরে ঢুলে দেখি চারিদিকে শুধু ফুল আর ফুল বাগানে ভরা। যেনো আমি ফুলের রাজ্যে চলে এসেছি। কিন্তু বেশি মানুষজন নেই। হয়তো সকাল বলে মানুষের ভির কম। একদিক দিয়ে ভালই হয়েছে।

তারপর শ্রাবন ভাই আমায় নিয়ে একটা নিরিবিলি জায়গায় বসতে বললো, আমিও গিয়ে বসে পরলাম। শ্রাবন ভাই আমায় বললো,
~ ঐ কালো পেত্নী এখানে দুমিনিট বসে থাক আমি তোর জন্যে মজার আইসক্রিম নিয়ে এখনি আসছি। আমি মাথা নারিয়ে সায় দিলাম।

তারপর ৫ মিনিট পরেই শ্রাবন ভাই আমার জন্যে একটা বড় আইসক্রিমের বাটি, বাদাম, আর অনেক গিলো চকলেট নিয়ে এলো। আমি তো এসব দেখে আনন্দে লাফাতে শুরু করলাম। তারপর শ্রাবনের হাত থেকে আইসক্রিম এর বাটিটা নিয়ে আসেপাশে দেখলাম কেউ নেই তাই মুখ খুলে খেতে শুরু করলাম। শ্রাবন ভাই কি করছে আমার সেদিকে কোনো খেয়ালই নেই।

একটু পর আইসক্রিম খেতে খেতে শ্রাবন ভাই এর দিকে তাকিয়ে দেখি ও মুগ্ধ নয়নে আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। আমি ওর চাহনিতে একটু লজ্জা পেলাম। তারপর কাশি দিয়ে বললাম,

~ ঐ ষাড় এমন করে তাকিয়ে কি দেখছিস রে আমার যদি পেট খারাপ হয়না তাহলে তোর খবর আছে।
আমার কথা শুনে শ্রাবনও একটু লজ্জা পেলো তারপর বললো,
~ কিছু হবে না রে পাগলি। এবার বল এখন তোর কি করতে ইচ্ছা করছে?
আমি একটু ভেবে বললাম,

~ আমার না এখন খুব গান শুনতে ইচ্ছা করছে রে। আমি কিন্তু গান শুনিনা বেশি কিন্তু এখন শুনতে মন চাইছে। কিন্তু এখানে গান পাবো কোথায়।
আমার কথা শুনে শ্রাবণ ভাই একটা মুচকি হাসি দিলো তারপর গান গাইতে শুরু করলো
হও যদি ঐ নীল আকাশ

আমি মেঘ হবো আকাশের
হও যদি অথৈ সাগর
আমি ঢেউ হবো সাগরের
হও যদি ঐ হিমালয়

তোমাকে করবো আমি জয়
তোমাকে চাই তোমাকে
তুমি যে আর কারো নয়।
বলতে পারি আমি নির্ভয়ে

তুমি আছো হৃদয়ে,
বলতে পারি আমিই নির্ভয়ে
তুমি আছে হৃদয়ে।
ওওওও তুমি হলে ঐ অরন্য
আমি হবো সবুজ,

ওও তোমার প্রেমে মন দুরন্ত
তোমার কাছেই অবুঝ।

হও যদি ঐ হিমালয়
তোমাকপ করবো আমি জয়

তোমাকে চাই তোমাকে
তুমি যে আর কারো নয়
বলতে পারি আমি নির্ভয়ে

তুমি আছো হৃদয়ে
বলতে পারি আমি নির্ভয়ে
তুমি আছো হৃদয়ে।

শ্রাবন ভাইয়ার কন্ঠটা অনেক সুন্দর একদম শিল্পীদের মতো। গানটা গাওয়ার সময় শ্রাবন ভাই একনজরে আমার দিকে চেয়ে গেয়েছে গান। আমিও ওর মুখের দিকে তাকিয়েই গানটা শুনছিলাম। গানটা শেষ হলে আমি ওকে বললাম,

~ ওয়াও শ্রাবন ভাই তোর গলা তো সত্যিই অনেক সুন্দর আর গানটাও কিন্তু অনেক সুন্দর ছিলো। তোকে তো কিছু পুরস্কার দেওয়া দরকার। কি দেই কি দেই? হুমম পেয়েছি এই নে এই বাকি আইসক্রিম টুকু তোর জন্যে। এই না না কি করছি আমি এটা তো আমার এঠো করা আইসক্রিম তুই তো খেতে পারবি না। তাহলে এই নে এই চকলেট দুটা তোর।

আমার কথা শুনে শ্রাবন ভাই চকলেট টা সরিয়ে দিয়ে আমার হাত থেকে আইসক্রিম এর বাটিটা নিয়ে আমার এঠো করা চামচ দিয়ে আমি যেখান থেকে খেয়েছি ঠিক ঐ খান থেকে খেতে শুরু করলো। আমি ওর এমন আচরন দেখে একটু অবাক হলাম। পরে ভাবলাম হয়তো আমার মতো শ্রাবণ ভাইও আইসক্রিম খুব ভালবাসে তাই এভাবে খেলো।

তারপর আমরা অনেক্ষন ঘুরাঘুরি করে দুপুরের আগেই বাসার দিকে রওনা হলাম। আর আমরা যখন মাঝ পথে ঠিক তখনই এক্সিডেন্ট হলো, ,


পর্ব ১৩

আমরা যখন মাঝ পরে ঠিক তখনই এক্সিডেন্ট হলো আমাদের সামনের রিক্সাটা। খুব একটা ক্ষতি হয়নি কিন্তু বেচারা রিক্সাওয়ালাটার হাতে ও মাথায় একটু করে ছিলিয়ে গেছে। শ্রাবন ভাই সি এন জি থামিয়ে দৌড়ে ঐ রিক্সাওয়ালাটার কাছে গিয়ে নিজের রুমাল দিয়ে তাটাতারি মাথা বেধে দিলো। তারপর তাকে রাস্তার পাসের একটা ঔষধের দোকানে নিয়ে গিয়ে সব জায়গায় ব্যান্ডেজ করে দিলো।

রিক্সাওয়ালা শ্রাবন ভাই এর মাথায় হাত রেখে অনেক দোয়া করলেন। আমি সব কিছু দুর থেকে দেখছি। আমার মনের মাঝে শ্রাবনের জন্যে একটা ভাললাগা তৈরি হলো সাথে অনেক শ্রদ্ধা। খুব ভালো লাগছে ওকে দেখে আমি এক নজরে ওর দিকে চেয়ে আছি। হঠাৎ ও আমার সামনে এসে হাত নারিয়ে বললো,

~ এই লালপরীটা এভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছে কেনো? আমি কি কিছু করেছি নাকি?
শ্রাবন ভাই এর কথায় আমি একটু লজ্জা পেলাম তারপর বললাম,

~ ইয়ে মানে না মানে আমি আসলে দেখছিলাম তুমি কি ভাবে ঐ লোকটাকে সাহায্য করলে অনেক ভালো লাগছিলো আমার।
এই এই তুই কি বললি এখনি আমায় তুমি করে বললি? নাকি আমি ভুল শুনলাম?

~ এএএ আমায় কিসের ঠ্যাকা পরছে রে তোকে তুমি বলতে যাবো। তোর কানে সমস্যা আছে ডাক্তার দেখা।
তারপর শ্রাবন ভাই মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে সি এন জি তে উঠে পরলো সামনে। কিছুক্ষনের মধ্যেই আমরা বাসায় পৌঁছে গেলাম।

তারপর আমি শম্মিকে চকলেট বাদাম আর একটা মাঝারি সাইজের বাটি আইসক্রিম আসার সময় কিনে এনেছি সেটা দিলাম। শম্মি তো অনেক খুশি ও গুলা পেয়ে। আমায় জরিয়ে ধরে চুমো খেলো পাগলি টা। তারপর সারাদিন অনেক হাসি আনন্দে কেটে গেলো।
রাতে শুয়ে থেকে শম্মি আমায় জিগ্যেস করলো

~ আপু তোমরা বেরাতে গিয়ে কোথায় কোথায় ঘুরলে গো আর কি কি খেলে?
~ আমরা অনেক সুন্দর একটা ফুল দিয়ে ঘেরা পার্ক হবে হয়তো সেখানে গিয়েছিলাম। আর খেয়েছি হলো চকলেট বাদাম আর আমার সব থেকে প্রিয় খাবার আইসক্রিম।
~ ভাইয়া কি কি খেয়েছে আপু?
~ কেনো আমি যা যা খেয়েছি শ্রাবন ভাইও তাই তাই খেয়েছে।

~ মানে তুমি বলতে চাইছো শ্রাবন ভাইয়া আইসক্রিমও খেয়েছে?
~ হ্যা খেয়েছে তো অনেক খানিই খেয়েছে। কেনো বলোতো?
~ ঐ বৃষ্টি আপু তুমি শিওর তো শ্রাবন ভাই আইসক্রিম খাইছে?
~ আরে আর কতোবার বলবো হ্যা খেয়েছে। কিন্তু এই একি কথা তুমি বার বার জিগ্যেস করছো কেনো বলোতো?

~ আপু শ্রাবন ভাইয়া কিন্তু একদম আইসক্রিম খায় না। ওর নাকি আইসক্রিমের গন্ধ শুকলেই বমি আসে আর তুমি বলছো ও অনেক খানি আইসক্রিম খেয়েছে। তাই তো আমি বার বার জিগ্যেস করছি।

শম্মির কথা শুনে আমি একটু অবাক হলাম। কারন শ্রাবণ যে ভাবে আইসক্রিম খাচ্ছিলো তাতে তো মনে হলো ও সব চাইতে প্রিয় খাবার খাচ্ছে কিন্তু শম্মি বলছে ও আইসক্রিম পছন্দই করে না। মাথায় কিছু আসছে না আমার।
তারপর এভাবে আনন্দে খুশিতে কেটে গেলো ৭ টা দিন। আমি এই ৭ দিনে আমার গত দের মাসের সব কথা একেবারেই ভুলে গেছি।

সব সময় হাসি খুশি দুষ্টুমি তে মেতে আছি সবার সাথে। আমি আর শ্রাবন ভাই অনেক ভালো বন্ধু হয়ে গেছি। সব সময় দুজন ঝগড়া করি কিন্তু কেউ একটু চোখের আরাল হলে ভালো লাগে না।
৭ দিন পর বিকেল বেলা
আমি শম্মি আর শ্রাবন ছাঁদে দারিয়ে আছি। অনেক গল্প করছি বাদাম খাচ্ছি দুষ্টুমি করছি। আমি শ্রাবন ভাইকে বললাম,

~ ঐ শ্রাবণ ভাই একটা গান ধরতো খুব গান শুনতে ইচ্ছা করছে। আমার সাথে শম্মিও তাল মিলিয়ে বললো,
~ হ্যারে ভাইয়া অনেক দিন হলো তোমার গান শুনিনা একটা গান গাও না প্লিজ ভাইয়া।

শ্রাবন ভাইয়া আমাদের কথার উত্তরে বললো,
~ ঠিক আছে গান শোনাতে পারি কিন্তু আমার একটা শর্ত আছে? যদি তোরা রাজি থাকিস তাহলেই গাইবো। বল রাজি তো?

~ ঐ গান শুনতে আবার কোনো শর্ত লাগে না কি হুমম। আচ্ছা বল দেখি কি শর্ত?
~ আমি গান গাইবো আর তোদের আমায় বাদাম ছিলিয়ে খাওয়াতে হবে। যতক্ষণ আমি গান গাইবো ততক্ষণে তোরা আমার জন্যে বাদাম এরাবি। বল রাজি?

আমি আর শম্মি একসাথে বললাম, ওকে আমরা রাজি।
তারপর শ্রাবণ ভাই গান ধরলো
ভালবাসি হয়নি বলা তবু ভালবাসি
পাশাপাশি হয়নি চলা তবু পাশাপাশি
তোমায় নিয়ে ফুলে ফুলে

সপ্ন উরাই আকাশ নীলে
তোমাতে বিভোর থাকি আমি বারো মাসি
ভালবাসি হয়নি বলা তবু ভালবাসি

পাশাপাশি হয়নি চলা তবু পাশাপাশি।
সূর্য হয়ে ছরাও তুমি মিষ্টি রোদের আলো
এক নিমিষে দাও সরিয়ে আমার আধার কালো। ।

তুমি আছো দু চোখে তাই সপ্ন রাশি রাশি। ।
ভালবাসি হয়নি বলা তবু ভালবাসি
পাশাপাশি হয়নি চলা তবু পাশাপাশি
একটু শীতল ছায়া তুমি ক্লান্ত পথের শেষে হাত বারিয়ে ডাকো আমায়
ঘুম পারানির দেশে। ।

তোমার ছোয়ায় দুঃখ গুলো হয় যে পরবাসি।
ভালবাসি হয়নি বলা তবু ভালবাসি
পাশাপাশি হয়নি চলা তবু পাশাপাশি। ।

গানটা শেষ করেই শ্রাবন ভাইয়া আমার দিকে কেমন যেনো একটা মায়াভরা দৃষ্টিতে তাকালো। তারপর মুচকি একটা হাসি দিলো। আমি ওর চাহনির কোনো রহস্যই বুঝলাম না।
তারপর শ্রাবন ভাইয়া বললো, কই এখন দে আমার বাদাম কই?

আমি বাদাম গুলো মুঠো ভরে নিয়ে বললাম, এই নে তোর বাদাম
শ্রাবন ভাইয়া যেইনা হাত বারিয়ে বাদাম নিতে যাবে ওমনি আমি সব গুলো বাদাম নিজের মুখে পুরে নিলাম তারপর হাসতে হাসতে দিলাম এক দৌড়।

শ্রাবণ ভাইয়া আমার এমন কান্ড দেখে তো অবাক সাথে হাসতে হাসতেও শেষ। শম্মিও হো হো করে হেসে যাচ্ছে।
শ্রাবণ ভাইয়া আস্তে করে বললো, পাগলি একটা আমার। লালপরী পেত্নী পাগলি শুধুই আমার। 😍😍😘😘
এভাবেই হাসি উল্লাসে কেটে গেলো আরো ১ টি দিন।

দুপুরে সবাই একসাথে খাবার খাচ্ছিলাম। হঠাৎ আম্মু বললো,
~ পারুল আমরা এখানে এসেছি আর ৯ দিন হলো কালকে চলে যাবো আর থাকা যাবে না। বাসায় তোর দুলাভাই একা রয়েছে। আর বৃষ্টির শশুড়বাড়ির লোকেরাও তো যদি আসে তাই আমরা কালকেই চলে যাবো।

~ আম্মুর কথা গুলো শুনে আমার এতদিনের ভুলে যাওয়া স্মৃতি গুলো সব চোখের সামনে ভেসে উঠলো। রাজু আর তার মা বোন এর অত্যাচারের কথা। আমি খাবার ছেরে উঠে হাত ধুয়ে ছাদে চলে গেলাম। ছাদে গিয়ে আমি একনাগাড়ে কেঁদেই চলেছি পুরনো সব কথা মনে করে।

হঠাৎ শ্রাবন ভাই আমার পাশে এসে দারিয়ে জিগ্যেস করলো
~ বৃষ্টি কিছু যদি মনে না করো একটা কথা জিগ্যেস করবো তোমায়?
~ আমি চোখ মুছে শ্রাবনের দিকে তাকিয়ে বললাম, বলো কি জানতে চাও?

~ আমি জানতে চাই তোমার শশুড়বাড়ির সবাই কেমন? তোমার স্বামী কেমন? বলো আমায় প্লিজ?
আমি আর সহ্য করতে পারলাম না ছাদের এক কোনায় বসে পরে হো হো করে কেঁদে দিয়ে সব কিছু বলতে শুরু করলাম। শ্রাবনকে সব বলে দিলাম যেগুলো আব্বু আম্মুকেও বলিনি সেগুলোও ওকে বললাম, । তারপর অঝোড় ধারায় কান্না করতে লাগলাম আমার বুকটা যেনো ফেটে যাচ্ছে।

শ্রাবন ভাইয়া অনেক জোরে ছাদের দেওয়ালে একটা ঘুশি মারলো আমি ওর ঘুশি মারা দেখে ওর দিকে তাকালাম
তাকিয়ে দেখি ওর চোখ রক্তবর্ন হয়ে গেছে রাগে সারা মুখ একদম লাল হয়ে গেছে রাগে সাপের মতো ফোস ফোস করছে। তারপর শ্রাবণ ভাই আমায় অবাক করে দিয়ে বললো,
~ আমি ওকে খুন করে ফেলবো। এত্ত বড় সাহস ঐ রাজুর যে ও তোমার গায়ে হাত তোলে ওকে আমি খুন করে ফেলবো।

আমি শ্রাবন ভাইয়ার এমন কথা শুনে অবাক হয়ে বললাম,
~ এসব কি বলছো শ্রাবন ভাই। তোমার মাথা ঠিক আছে তো? আর আমায় কষ্ট দিয়েছে বলে তুমি তাকে খুন করবে কেনো?

~ তোমায় কেউ কষ্ট দিলে আমি তাকে সত্যিই খুন করে ফেলবো কারন আমি তোমাকে,
~ তুমি আমাকে কি শ্রাবন ভাই? বলো কি বলতে গিয়ে থেমে গেলে?
শ্রাবন ভাইয়া আর কোনো কথা না বলে ছাদ থেকে চলে গেলো। আর আমি অবাক হয়ে ওর চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম।

আমি বুঝতে পেরেছি শ্রাবন ভাইয়া আমায় পাগলের মতো ভালবাসে কিন্তু সেটা প্রকাশ করছে না। আসলে আমিও তো শ্রাবনের প্রতি দুর্বল হয়ে পরেছি কিন্তু না এটা তো কখনোই সম্ভব নয়। আমি বিবাহিত অন্য এক বাড়ির বৌ আমি। আমি কাওকে ভালবাসতে পারি না। সে অধিকার আমার নাই।


পর্ব ১৪

আমি বুঝতে পেরেছি শ্রাবন আমায় অনেক ভালবাসে কিন্তু সেটা প্রকাশ করতে পারছে না। আমিও তো ওকে এ কদিনে অনেক ভালবেসে ফেলেছি কিন্তু এটা কখনোই সম্ভব নয়। আমি কখনোই শ্রাবনের হতে পারবো না।

আমি যে বিবাহিত। অন্য একজনের ঘরের বৌ আমি। আমি চাইনা শ্রাবন ভাই কখনো ওর মনের কথা আমার কাছে প্রকাশ করুক। কারন আমি ওকে ফিরিয়ে দিতে পারবো না হয়তো। আবার গ্রহনও করতে পারবো না। এসব ভাবতে ভাবতে আমার দুচোখ বেয়ে অঝোর ধারায় পানি পরছে। এমন সময় দেখি আজান হচ্ছে চারো পাসে তাই চোখ মুছে নিচে চলে এলাম। তারপর ওজু করে নামাজ পড়ে নিলাম।

নামাজ শেষ করে উঠেছি তখনই আম্মু এসে বললো, সব কিছু আজকেই গুছিয়ে রাখতে কালকে বাসায় যাবো সকালে। আমি আম্মুর কথার উত্তরে কিছু বললাম, না শুধু মাথা নেরে সায় দিলাম।
তারপর আবার ছাদে চলে গেলাম কিছু ভালো লাগছে না আমার। ভাবতেই ভয় হচ্ছে যে আবার আমি সেই পরিবারে ফিরে যাবো যেখানে কষ্ট ছারা কিছু নেই আমার জন্যে।

হঠাৎ পিছন থেকে শ্রাবন ভাই এসে কাশি দিয়ে বললো,
~ বৃষ্টি তোমাকে আমার কিছু বলার আছে। এখন না বললে হয়তো আর কখনো বলতে পারবো না।
শ্রাবন ভাইয়ার এমন কথা শুনে আমার বুকের মাঝে হার্ট বিটটা যেনো ১০০ গুন বেরে গেলো কারন আমি জানি ও আমায় কি বলতে চাচ্ছে।

আমি আর কিছু বলতে পারছি না চুপ করে আছি। আমার চুপ করে থাকা দেখে শ্রাবন ভাই বলতে শুরু করলো
~ বৃষ্টি তুমি হয়তো আন্দাজ করতে পেরেছো আমি তোমায় কি বলতে চাই। সেটা আমি ভালো করেই বুঝতে পারছি। কিন্তু তুমি হয়তো দোটানায় পরেছো কারন তুমি বিবাহিত তাই সেটাও আমি বুঝতে পারছি।

কিন্তু আমি সত্যিই তোমায় অনেক ভালবাসি বৃষ্টি। তোমায় আমি ভালবাসি আজ থেকে ৩ বছর আগে থেকেই। যখন আমি তোমাদের ওখানে বেরাতে গিয়েছিলাম আমি তখনই তোমায় ভালবেসে ফেলি। কিন্তু সেই ভালবাসাটা আমার কাছে আরাল হয়ে ছিলো এতো দিন।

আমি সেই ভালবাসাটাকে বুঝিনি। কিন্তু এই কদিনে আমি সেটা হারে হারে বুঝে গেছি যে তোমায় আমি কতটা ভালবাসি। আমি তোমায় বিয়ে করতে চাই বৃষ্টি। তুমি ফিরে এসো আমার কাছে ঐ জানোয়ারটার কাছ থেকে। পৃথিবীর সব সুখ এনে দেবো তোমায় আমি কথা দিলাম।

I love u বৃষ্টি জান আমার। i love u so much জান। এই কথা গুলো বলতে শ্রাবন ভাই কান্না করে দিলো। আর হাটু গুরে বসে পরলো আমার সামনে।

আমি শ্রাবন ভাইয়ের কথার কোনো উত্তর দিতে পারলাম না। দৌড়ে নিচে চলে এলাম তারপর দরজা লাগিয়ে বিছানায় পরে কান্না করতে লাগলাম। আমি কি করবো এখন? কি করা উচিত আমার? কিছুই বুঝতে পারছি না। শুধু বুক চিরে কান্না আসছে আমার। আমি কেঁদেই চলেছি আপন মনে। আমার জীবনটা কেনো এমন হলো। কি করবো এখন আমি?


পর্ব ১৫

কি করবো আমি? কি করা উচিৎ আমার? আমিও তো শ্রাবনকে ভালবেসে ফেলেছি কিন্তু এটা কখনোই সম্ভব নয় কারন আমি অন্য কারো ঘরের বৌ।

অনেক কান্না করলাম আমি তারপর অনেক ভেবে দেখলাম আমার জীবনে হয়তো শ্রাবনের ভালবাসার প্রয়োজন ছিলো তাই আল্লাহ আমার জন্যে ওকে পাঠিয়েছেন। আমিও তো ভালো বেসেছি ওকে। কিন্তু সেটা প্রকাশ করতে পারছি না।

তারপর আজান হলে ওজু করে নামাজ পড়তে বসলাম। নামাজ শেষে মোনাজাতে আল্লাহর কাছে দোয়া করলাম কেদে কেঁদে। মোনাজাতে বললাম,
~ হে আল্লাহ আপনি আমার মনের অবস্থা সবই জানেন। আমি বুঝতে পারছি না আমি এখন কি করবো? কি করা উচিৎ আমার? আপনি আমায় পথ দেখান আল্লাহ।

আমার ভবিষ্যতে কি আছে আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। আমায় পথ দেখান খোদা। আমি ভুল করেই হোক বা ইচ্ছা করেই হোক আমি শ্রাবনকে অনেক বেশি ভালবেসে ফেলেছি। শ্রাবনও আমায় অনেক ভালবাসে পাগলের মতো। কিন্তু আমি তো বিবাহিত কি করে আমি শ্রাবনের ডাকে সারা দিবো খোদা তুমি বলে দাও আল্লাহ।

এমন করে আরও অনেক দোয়া করলাম মোনাজাতে। তারপর রুম থেকে বের হলাম বের হয়ে দেখি আম্মু আর খালামনি বোরখা পড়ে রেডি হয়েছে সাথে শ্রাবন ভাইয়া আর শম্মিও আছে। আমাকে দেখে খালামনি বললো,
~ বৃষ্টি তারাতারি রেডি হয়ে আসো আমরা সবাই মিলে শপিং এ যাবো। তোমায় আর বুবুকে কিছু কিনে দিবো।
খালামনির কথা শেষ হলে আম্মু বললো,

~ বৃষ্টি দেখনা তোর খালামনি কি শুরু করেছে। আমি বার বার বলছি কিছু দিতে হবে না কিন্তু পারুল কথাই শুনছে না।
আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই শম্মি এসে আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলো রুমে বোরখা পড়ে রেডি হতে। আমি আর কি করার রেডি হয়ে সবার সাথে মার্কেটে গেলাম।

যাওয়ার পথে বার বার আমার সাথে শ্রাবনের চোখাচোখি হলো। ওর চোখ বলে দিচ্ছে ও আমার কাছে থেকে উত্তর চাইছে। কিন্তু আমি কি উত্তর দিবো ওকে সেটাই এখনো বুঝে উঠতে পারিনি।

তারপর মার্কেটে গিয়ে খালামনি প্রথমে আম্মুর জন্যে একটা অনেক সুন্দর শাড়ি পছন্দ করে কিনে দিলেন। তারপর আম্মু শম্মিকে একটা সুন্দর ড্রেস কিনে দিলেন। তারপর খালামনি আমায় বললেন কিছু পছন্দ করতে।
আমার সামনে অনেক গুলো থ্রি পিছ রাখা হলো। সব গুলোই সুন্দর কাজ করা।

কিন্তু আমার সে দিকে কোনো খেয়ালই নেই। আমি শুধু চিন্তা করছি শ্রাবণকে নিয়ে। আমি কিছু পছন্দ করছিনা দেখে খালামনি আমায় বললো,
~ কি রে বৃষ্টি মা দেখ কোনটা ভালো লাগে তোর ওটাই নিবো। দেখে বল কোনটা পছন্দ হয়েছে।

আমি খালামণির কথা শুনে থ্রি পিছ গুলো এমনিই দেখছি কোনো রিয়াকশন নাই আমার মাঝে।
হঠাৎ শ্রাবন ভাই পাস থেকে দোকানদারকে বললো, একটা থ্রি পিছ বের করতে। দোকানদার থ্রি পিছটা আমার সামনে দিলো। গোলাপী রঙের কাপড়ের মাঝে সাদা পাথরের কাজ করা অনেক সুন্দর একটা থ্রি পিছ।

শ্রাবন ভাইয়া খালামনিকে বললো,
~ আম্মু দেখো এই থ্রি পিছটা বৃষ্টিকে দারুন মানাবে পড়লে তাই না। একদম ওর সাথে মিলে যাবে।
শ্রাবনের কথা শুনে খালামনি বলে উঠলো

~ সত্যিই রে শ্রাবন অনেক সুন্দর একটা থ্রি পিছ বের করেছিস তো খুজে। আসলেই বৃষ্টি মাকে অনেক ভালো লাগবে এটা পরে। কিন্তু বৃষ্টি মা তোমার কি এটা পছন্দ হয়েছে নাকি আরো কিছু দেখবে?
আমি খালামনির কথায় বললাম,
~ খালামনি আসলেই এই থ্রি পিছটা অনেক সুন্দর আমার পছন্দ হয়েছে আমি এটাই নিবো।

আমার কথা শুনে সবাই অনেক খুশি হলো। আর শ্রাবন ভাই তো মনে হচ্ছে বিশ্ব জয় করে নিয়েছে।
তারপর আম্মু শ্রাবন ভাইকে বললো, কিছু নিতে। কিন্তু শ্রাবন ভাই কিছুই নিবে না।
তবুও আম্মুর জোরাজুরিতে রাজি হলো। তারপর একটা দোকানে গিয়ে এমনি সব টি শার্ট নেরেচেরে দেখতে লাগলো কিন্তু পছন্দ করছে না কিছু।

তখন আমার চোখ গেলো একটা কালো রঙের টি শার্ট এর দিকে। অনেক সুন্দর টি শার্টটা। আমি ওটা দেখাতে বললাম, । দোকানদার সামনে এগিয়ে দিলে আমি আম্মুকে বললাম,

~ আম্মু দেখতো এই টি শার্ট টা কেমন লাগে?
আম্মু কিছু বলার আগেই শ্রাবন বলে উঠলো
~ আমি এটাই নিবো খালামনি। অনেক সুন্দর টি শার্টটা।

তারপর আমরা সবাই বাসায় চলে এলাম। রাতে সবাই খাওয়া দাওয়া করে আম্মু আর আমি সব গোছগাছ করে রাখলাম। সকালেই চলে যাবো তাই।
তারপর সবাই যার যার মতো শুয়ে পরলাম। কিন্তু আমার আর শ্রাবনের কারো চোখেই ঘুম নেই।

আমি আছি শ্রাবন কে কি উত্তর দেবো সেই চিন্তায় আর শ্রাবম আছে আমার কাছে কি উত্তর পাবে ও সেই চিন্তায়।
সারারাত আর খুম হলো না একটুও। সকালে তারাতারি উঠে নামাজ পড়ে নিলাম। তারপর শেষ বারের মতো ছাদে গেলাম।

ছাদে গিয়ে সেই দোলনাটায় বসে পরলাম। কিছু ভালো লাগছে না আমার মনটা কেমন যেনো করছে। বুকের মাঝে চিনচিনে ব্যাথা অনুভব হচ্ছে কেনো জানিনা।
হঠাৎ দেখি শ্রাবন ভাইও ছাদে এসেছে। আমি শ্রাবন ভাইকে দেখেই মাথা নিচু করে দারিয়ে গেলাম দোলনা থেকে একটু সরে।

আমার এমন কান্ড দেখে শ্রাবন ভাই বললো,
~ দোলনা থেকে উঠলে যে?
~ আ আসলে তুই তো এই দোলনায় কাউকে বসতে দিসনা তাই।

~ আরে পাগলি আমার সবার সাথে কি তোমার তুলনা নাকি? আমার সব কিছুর ওপর তোমার ১০০০ গুন বেশি অধিকার আছে। আমি তোমায় ভালবাসি অনেক অনেক অনেক বেশি ভালবাসি বৃষ্টি। তুমি কি আমায় একটুও ভালবাসো না? আমার জন্যে কি তোমার মনে একটুও জায়গা নেই বৃষ্টি?

আমি আর ছাদে দারিয়ে থাকতে পারলাম না। শ্রাবণ ভাই কে পাস কাটিয়ে নিচে চলে এলাম। কি উত্তর দিবো ওকে আমি? আমি তো নিজেই জানিনা কি করবো আমি।

তারপর আম্মু আমায় দেখে বললো, তারাতারি খেয়ে রেডি হতে। বাসায় যাবো বাস ৮ টায় ছারবে।
তারপর আমি কিছু খেতে পারলাম না। কেনো জানিনা চলে যাবো ভেবে অনেক কষ্ট হচ্ছে আমার।
তারপর রুমে গিয়ে রেডি হয়ে নিলাম। শম্মি এসে আমায় রেডি হওয়া দেখে জরিয়ে ধরে কান্না করা শুরু করলাো।


পর্ব ১৬

শম্মি এসে আমার রেডি হওয়া দেখে দৌড়ে এশে জরিয়ে ধরে কান্না করতে লাগলো। আমিও আর চুপ থাকতে পারলাম না। শম্মিকে জরিয়ে ধরে ফুপিয়ে কাঁদতে লাগলাম। বুকের ভিতরটা যেনো অজানা এক চাপা কষ্টে ফেটে যেতে চাইছে আমার।

আমাদের কান্নার শব্দ পেয়ে আম্মু আর খালামনি রুমে আসলেন তারপর তারাও কাঁদতে লাগলেন। যেনো আমরা চিরদিনের জন্য চলে যাচ্ছি। এভাবে অনেক্ষণ কান্না করার পর সবাই শান্ত হলাম। কিন্তু শ্রাবনকে কোথাও দেখতে পেলাম না।

তারপর খালামনি আর শম্মির থেকে বিদায় নিয়ে আমরা বাড়ির পথে রওনা দিলাম। ( পারুল খালামনির স্বামী দেশের বাইরে থাকেন তাই তার সাথে দেখা হয়নি কখনো)

গাড়িতে ওঠার সময় আম্মু খালামনিকে শ্রাবনের ব্যাপারে জিগ্যেস করলো যে শ্রাবন কোথায়?
খালামনি জানালো আমরা চলে যাবো এটা শ্রাবন সহ্য করতে পারবে না তাই ও আগেই বাসা থেকে বেরিয়ে গেছে।

খালামনির মুখে এই কথাটা শুনে বুকের বা পাস টায় চিন চিন করে উঠলো। সত্যিই শ্রাবন আমায় অনেক ভালবাসে। কিন্তু আমারি বা কি করার আছে।
তারপর আমরা যথা সময়ে বাসায় পৌঁছে গেলাম।

বাসায় এসে আমি কারো সাথে কোনো কথা বললাম, না। শুধু আব্বুকে সালাম দিয়ে সোজা নিজের রুমে গিয়ে বোরখা খুলে শুয়ে পরলাম। আর সাথে সাথে ভাবনার সাগরে ডুবে গেলাম। শ্রাবনের সাথে কাটানো প্রতিটি মুহুর্তের ছবিগুলো যেনো ভেসে উঠছে চোখের সামনে। কখনো একা একাই হাসছি ওর দুষ্টুমির কথা ভেবে আবার কখনো মন খারাপ হয়ে যাচ্ছে ওর কান্না করে লাভ ইউ বলার কথা মনে পরে।

হঠাৎ আমার ফোনটা বেজে উঠলে আমি ভাবনার জগত থেকে ফিরে আসি। তারপর ফোনটা হাতে নিয়ে দেখি কোনো নাম্বার নেই শুধু প্রাইভেট নাম্বার লেখা আছে।

আমি ফোন রিসিভ করে সালাম দিলাম। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো কারো কোনো সারা শব্দ পেলাম না। আমি কিছুক্ষন হ্যালো হ্যালো করে ফোন কেটে দিলাম। তারপর নাম্বারটা চেক করতে গিয়ে দেখি কোনো নাম্বারই নেই। একটু অবাক হলাম এমনটা দেখে। তারপর ফোনটা রেখে বাথরুমে গেলাম ফ্রেশ হতে।

ফ্রেশ হয়ে বাইরে এসে ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখি ১৪ টা মিসড কল একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে।
দেখতে দেখতে আবারো ফোনটা বেজে উঠলো। আমি ফোনটা রিসিভ করে সালাম দিয়ে বললাম,
~ আসসালামু আলাইকুম। কে বলছেন?

~ ওয়ালাইকুুমুসসালাম। কেমন আছো বৃষ্টি। কখন থেকে কল দিয়ে যাচ্ছি ধরছিলেনা কেনো? জানো আমার কতো টেনশন হচ্ছিল। বাসায় পৌঁছেছো কি? কি করছো এখন? বাসের মধ্যে কোনো সমস্যা হয়নি তো? তুমি ঠিক আছো আমার জানটা?

কন্ঠটা শুনে যেনো আমার হার্টবিট হাজার গুন বেরে গেলো। আমার শ্রাবন আমায় কল দিয়েছে।
~ এতো গুলো প্রশ্ন এক সাথে করলে উত্তর দিবো কি ভাবে শুনি? আর আপনার কি আমার কথা মনে আছে যে কল দিয়েছেন? আসার সময় তো একটু দেখাও দিলেন না। (অভিমানি কন্ঠে বললাম, )

~ ওরে লালপরী জানটা আমার তুমি কি জানো আমার কতটা কষ্ট হচ্ছিল। আমি কি করে দেখতাম আমায় ছেরে তোমার চলে যাওয়া? সহ্য করতে পারতাম না আমি তাই তো আগেই চলে গিয়েছিলাম বাসা থেকে। কতোটা কষ্ট হয়েছে আমার সেটা শুধু আল্লাহ জানেন। আমি কতো কেদেছি জানো তুমি সোনা আমার।

~ এখন কেমন আছিস? আর আমরা বাসায় পৌঁছেছি রাস্তায় কোনো সমস্যা হয়নি আল্লাহর রহমতে।
~ আলহামদুলিল্লাহ। তোমায় ছারা যেমন থাকতে পারি ঠিক তেমনই আছি জান। অনেক ভালবাসি তোমায়। কতটা ভালবাসি বোঝাতে পারবো না।

~ আচ্ছা শ্রাবন ভাই তুই কি আমায় একটু আগে একটা প্রাইভেট নাম্বার থেকে কল দিয়েছিলি?
~ কই নাতো? আর ওমন কোনো নাম্বারও তো আমার কাছে নাই, কেনো কি হয়েছে?

~ কিছু না আসলে একটু আগে একটা প্রাইভেট নাম্বার থেকে কল আসছিলো। রিসিভ করলাম কিন্তু কেউ কোনো কথা বললো, না পরে কেটে দিয়েছি। আচ্ছা এটা কি তোর নাম্বার?
~ হ্যাঁ এটা আমার নাম্বার তুমি তো আমার নাম্বার নাওনি তাই আমিই দিয়ে দিলাম। কথা বলতে পারবো কি? সময় হবে আমার সাথে কথা বলার আমার লালপরীটার?

~ হ্যা হবে ইনশাআল্লাহ। আমি তাহলে নাম্বারটা সেভ করে রাখি। আচ্ছা এখন রাখছি আল্লাহ হাফেজ পরে কথা হবে ইনশাআল্লাহ।
তারপর ফোনটা কেটে দিলাম। মনটা কেনো জানিনা অনেক ভালো লাগছে শ্রাবনের সাথে কথা বলার পর থেকে।

এভাবেই কেটে গেলো ৩ টা দিন। সারাদিনে শ্রাবনের সাথে আমার ৩~ ৪ বার কথা হয়। আর ও আমায় প্রতিবার কথা বলার সময় কম করে হলেও ৫০ বার ভালবাসি বলে। আমার মুখ থেকে একবার শোনার জন্য পাগল হয়ে থাকে কিন্তু আমি বলিনা।

আমরা দুরে থেকেও সব সময় দুজন দুজনের ভাবনায় ডুবে থাকি। আমি পৃথিবীর সব ভুলে গিয়ে শুধু ওর কথাই ভাবি সারাক্ষণ। আর নামাজ পরে দোয়া করি যেনো যেটাতে আমার মঙ্গল হবে আল্লাহ খুশি হবেন সেটাই হয় আমার জীবনে।
শ্রাবনদের বাসা থেকে এসেছি আজ ৭ দিন। দুপুরে নামাজ পরে খাওয়া শেষ করে রুমে শুয়ে আছি। শ্রাবন কল দিলে ওর সাথে কথা বলছি

~ আসসালামু আলাইকুম
~ ওয়ালাইকুুমুসসালাম। কেমন আছো লালপরী জান আমার?
~ হুমম আলহামদুলিল্লাহ ভালো। তুই কেমন আছিস?

~ এতক্ষণ কেমন ছিলাম জানিনা কিন্তু এখন আলহামদুলিল্লাহ অনেক ভালো আছি তোমার কন্ঠ শোনার পর।
~ বাসার সবাই কেমন আছেন? খালামণি শম্মি?
~ ওরাও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছে। একটা গুড নিউজ আছে।
~ তাই তা কি গুড নিউজ শুনি?

~ আমি কালকে আসছি তোমার বাসায়। আর থাকতে পারছি না তোমায় না দেখে।
~ এএএএ আমি সামনেই যাবো না তোর আমায় দেখবি কি করে।

~ আমি জানি বৃষ্টি তুমি মুখে কিছু না বললেও আমায় অনেক ভালবাসো শুধু তোমার মুখ থেকে এই কথাটা শোনার বাকি। আর তুমি আমার সাথে দেখা না করে থাকতেও পারবে না বুঝলে আমার লালপরী জানপাখি টা।
~ হ তোর মাথা হাদারাম একটা।


পর্ব ১৭

~ আমি জানি বৃষ্টি তুমি মুখে যাই বলোনা কেনো তুমি আমায় অনেক ভালবাসো। শুধু এই কথাটা তোমার মুখ থেকে শোনার বাকি আমার। আর তুমি আমার সাথে দেখা না করে থাকতেই পারবেনা আমার লালপরী জানপাখি টা।
~ হ কইছে তোরে হাদারাম একটা।

তারপর দিন দুপুরে শ্রাবন ভাই আমাদের বাসায় এলো। আমি ওর সাথে কি করে দেখা করবো বুঝতে পারছি না। বুকের মাঝে হার্টবিটটা যেনো লাফালাফি করছে।

সাথে একটু একটু লজ্জার পাহাড়ও আছে। আমি বাসার ছাদে বসে আছি। ছাদ থেকে দেখলাম শ্রাবন বাসার মদ্ধে ঢুকছে। কিন্তু ও আমায় দেখেনি। ওকে দেখে আমার হৃদয়টা যেনো বুক ফেটে বেরিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছি।

কিছুক্ষণ পর আম্মুর ডাক পরলো। আম্মু আমায় ডেকে বলছে শ্রাবনের কথা। নিচে যেতে বলছে আমায়। আমি কি করবো বুঝতে পারছি না কেমন জানি ভয় ভয় করছে। শেষ মেষ নিচে নামার জন্যে যেইনা ছাদের গেটের কাছে এসেছি ওমনি দেখি শ্রাবন আমায় নিচে নিয়ে যেতে ছাদে এসেছে। আমি তো ওকে দেখে কথা বলা ভুলে গেছি।

আমায় হা করে তাকিয়ে থাকা দেখে শ্রাবন বললো,
~ এই যে মাই লালপরীটা এভাবে তাকিয়ে কি দেখছেন শুনি আমার বুঝি লজ্জা করে না।

~ ক কই কি দেখছি আমি হুমম। তো তোকে দেখার আবার কি আছেরে ষাড় একটা(কাপা কাপা কন্ঠে)
~ হ্যা হ্যা জানি তো আর বলতে হবে না আমার অপেক্ষায় এতক্ষন পথ চেয়ে বসে ছিলেন আমি দেখিনি ভেবেছেন হুমম। ছাদে থেকে উকি মেরে বার বার কাকে খুঁজছিলেন শুনি?

এই রে এই ব্যাটা ষাড়টা কি করে জানলো এসব মনে মনে বললাম, ।
~ হ্যা হ্যা জানে জানে এই ষাড়টা তার ষাড়নিটার মনের সব কথাই জানে। কারন সেতো ঐ সুন্দর মনেই বাস করে তাইনা?

ইইইশশ আমার বয়েই গেছে এই বজ্জাত ষারটার ষাড়নি হতে যা যা ভাগ।
বলেই আমি নিচের দিকে দিলাম এক দৌড়। আমার এমন করে দৌড় দেওয়া দেখে তো শ্রাবন ভাই হাসতে হাসতে শেষ।

তারপর শ্রাবন ভাই আমাদের বাসায় ৩ দিন থাকলো। এই তিন দিনে আমরা সব সময় ঝগড়া করতাম। তবে কেউ কারো চোখের আরাল হলে মনটা কেমন আনচান আনচান করতো। এর মাঝে শ্রাবন ভাই অনেক চেষ্টা করেছে আমার মুখ থেকে ভালবাসি কথাটা শুনতে কিন্তু আমি লজ্জায় বলতে পারিনি।

আজ শ্রাবন ভাই চলে যাবে। সবার মন খারাপ আর আমি তো মনে হয় পাগলপারা। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো শ্রাবন ভাই সকাল থেকে আমায় এরিয়ে চলছে। একটা কথাও বলেনি আমার সাথে এমন কি মুখের দিকেও ফিরে তাকায় নি। আমি বুঝতে পারছি না ও কেনো এমন করছে। ওর অবহেলা আমায় অনেক কষ্ট দেয় ও কি তা বোঝে না

তারপর সকাল ১০, ৩০ টায় শ্রাবন ভাই আম্মু আর আব্বুর কাছে থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলো। যাওয়ার সময় শুধু একবার আমার চোখের দিকে তাকিয়েছিল। চোখে যেনো পানি টলমল করছিলো সাথে আমার জন্যে অফুরন্ত ভালবাসা। কিন্তু কোনো কথাই বললো, না আমার সাথে সোজা বের হয়ে চলে গেলো।

শ্রাবন চলে যাওয়ার পর আমি আমার রুমে এসে মন খারাপ করে বসে রইলাম। বেস কিছুক্ষণ পর আমার ফোন বেজে উঠলো। স্ক্রিনে দেখি শ্রাবনের নাম্বার। তারাতারি রিসিভ করলাম
~ হ্যালো আসসালামু আলাইকুম।

~ ওয়ালাইকুমুসসালাম। বৃষ্টি!
~ হুমম
~ রাগ করেছো আমার ওপর জান?

~ রাগ করবো কেনো আমি আপনার কে যে যাওয়ার সময় আমায় বলে যেতে হবে?
~ তুই যে আামার কি রে পাগলি তা যদি বুঝতি তাহলে এই প্রশ্নটা করতি না। আমি কেনো আসার আগে তোমায় বলে আসিনি তা আমিই জানি।

~ কেনো কথা বললে না শুনি?
~ তোমার সাথে কথা বলে আমি কখনোই তোমায় ছেরে আসতে পারতাম না। তুমি জানোনা কতটা কষ্ট হচ্ছিল আমার। তোমায় যে বড্ড বেশি ভালবাসি জান। তাই তো কথা বলতে পারিনি হয়তো পাগল হয়ে যেতাম।

~ কি হলো কিছু বলছো না যে বৃষ্টি?
~ i love u শ্রাবন

~ i really love u my ষাড়।

~ আল্লাহ তোমার দরবারে শত কোটি শুকরিয়া। আমি পেরেছি আমার ভালবাসা জয় করতে। i love u বৃষ্টি i love u so much,
তারপর এভাবেই চলতে থাকলো আমার আর শ্রাবনের ভালবাসার দিন গুলি।

আমরা সব সময় ফোনে কথা বলতাম। অনেক বেশি ভালবেসে ফেলেছি দুজন দুজনকে। কিন্তু আমাদের মাঝে কখনোই কোনো বাজে কথা হতো না। শুধু দুষ্টু মিষ্টি ঝগড়া ছারা।
এভাবেই কেটে গেলো ১৭ দিন। আমি ভুলে গেছি অতিতের সব স্মৃতি।

দুপুরে শুয়ে আছি তখন আম্মু আমার রুমে এলো। তারপর আমার পাশে বসে বললো,
~ বৃষ্টি তোর শাশুড়ি মা ফোন করেছিলো। বললো, কাল বিকেলে ওরা তোকে নিতে আসবে। কালকে নাকি রাজু দেশে ফিরবে তাই।

আম্মুর কথা শুনে আমার মাথায় যেনো আকাশ ভেঙে পরলো। যে অতিত ভুলে আমি এতো আনন্দে মেতে আছি সেই অতিত আবার আমার জীবনে ফিরে আসতে চলেছে।
আমায় চুপ থাকতে দেখে আম্মু বললো,

~ এবার শশুড়বাড়ি যা। তারপর যদি দেখিস সবাই সেই আগের মতই ব্যাবহার করছে তাহলে আমরা আর দেরি করবো না ছারিয়ে আমবো তোকে ওদের থেকে। এবারি শেষ যাওয়া হবে তোর ঐ বাড়িতে। দেখ কি হয়।
এই কথা গুলো বলেই আম্মু চলে গেলো রুম থেকে। আর আমি ডুব দিলাম অতিতের ভাবনায়।
হঠাৎ আমার ফোনটা বেজে উঠলো শ্রাবন ফোন করেছে।

~ আসসালামু আলাইকুম
~ ওয়ালাইকুমুসসালাম। কেমন আছো জান?
~ আলহামদুলিল্লাহ ভালো। তুমি?

~ আলহামদুলিল্লাহ এতক্ষণ কেমন ছিলাম জানিনা এখন আমার জানের কন্ঠ শুনে ভালোই আছি।
~ শ্রাবণ ভাই! কালকে আমায় নিতে আসবে শশুড়বাড়ির লোকেরা।

~ তুমি আবার ঐ জানোয়ারদের ওখানে যাবে বৃষ্টি? ভুলে গেছো ওদের সব অত্যাচারের কথা? আমি তোমায় ভালবাসি তোমায় বিয়ে করতে চাই বৃষ্টি। তুমি রাজুকে ডিভোর্স দিয়ে দাও। আমি আগামি শুক্রবারই তোমায় বিয়ে করবো।

~ না শ্রাবন এভাবে হয়না আমি কালকে যাবো ঐ বাসায়, এটাই হবে আমার শেষ যাওয়া ঐ বাসায়। তারপর আমি সত্যিই রাজুকে ডিভোর্স দিয়ে চলে আসবো একেবারে তোমার বৌ হতে। কিন্তু কালকে আমার যেতেই হবে ঐ বাসায়। তুমি চিন্তা করোনা জান আমার কিছু হবে না আল্লাহর রহমতে।

~ ঠিক আছে যাও তাহলে। তুমি ওখান থেকে ফিরে এলেই আমি সবাইকে জানাবো আমাদের কথা তারপর বৌ করে সারাজীবনের মতো আমার করে নিবো তোমায়।

তারপর ফোন কেটে দিলাম।
পরের দিন বিকেল বেলা আমি আমার শশুড় শাশুড়ির সাথে শশুড়বাড়ি এলাম।


পর্ব ১৮

তারপর বিকেলে আমার শশুড় শাশুড়ি এসে আমায় নিয়ে গেলেন শশুড়বাড়িতে। আসার সময় আম্মু আমায় জরিয়ে ধরে অনেক কেঁদেছিলেন আর আমিও অনেক কেঁদেছি। জানিনা কি আছে আমার কপালে শশুড়বাড়িতে।

শশুড়বাড়িতে পৌঁছে গেলাম আমরা ৫০ মিনিট এর মাঝেই।
বাসায় ঢুকেই আমার শাশুড়ি মা মুখ বাকা করে চলে গেলেন আমি ওনার এমন করার কোনো কারনই খুজে পেলাম না।

তারপর আমার শশুড় মশাই আমার কাছে এসে মাথায় হাত দিয়ে বললেন
~ যাও মা নিজের রুমে যাও। আল্লাহ তোমার

মঙ্গল করবেন ইনশাআল্লাহ। এই কথা গুলো বলেই শশুড় মশাই মুচকি হাসি দিয়ে নিজের রুমে চলে গেলেন।
আমি ওনার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম কিছুক্ষন কিছু বুঝলাম না ওনার কথার মানে।
তারপর আমি নিজের রুমের দিকে পা বারালাম।

রুমের দরজা খুলে দেখি রুমটা পুরোই অন্ধকার হয়ে আছে। কিছুই দেখা যাচ্ছে না। আর অনেক সুন্দর একটা গন্ধে ভরে আছে রুমটা। আমি অন্ধকারে হাতরে গিয়ে রুমের লাইট জালালাম। তারপর পিছন দিকে ঘুরেই আমি যেনো আকাশ থেকে পরলাম।

আমার সামনে রাজু হাটু গেরে বসে আছে। রাজুর হাতে একগুচ্ছ লাল গোলাম। আর চোখে রয়েছে অফুরন্ত মায়া। এর আগে আমি কখনোই রাজুর এমন রুপ দেখিনি। আমি কি সপ্ন দেখছি নাকি সত্যিই কিছুই বুঝতে পারছি না।
আমায় হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে রাজু বললো,

~ I love u বৃষ্টি। তোমার সাথে খারাপ ব্যাবহার করতে করতে কখন যে তোমায় ভালবেসে ফেলেছি জানি না। যখন তোমায় রেখে দুরে চলে গেলাম তখন বুঝেছি এই ভালবাসার অনুভূতিকে। i love u bristi i love u so much,
এই কথা গুলো বলেই রাজু উঠে দারালো তারপর ফুলের গুচ্ছটা খাটের ওপর রেখে আমার দিকে একটি প্যাকেট এগিয়ে দিয়ে বললো,

~ বৃষ্টি এটাতে তোমার জন্যে একটা ড্রেস আছে বোরখা টা খুলে এটা পড়ে আসো যাও।
আমি ওনার কথার কোনো উত্তর দিতে পারছিনা শুধু হা করে সব দেখছি। পুরো রুমটা নানা রকম ফুল দিয়ে সাজানো। দেখে মনে হচ্ছে বাসর ঘরে আছি। আমার চুপ থাকতে দেখে রাজু আমার হাত ধরে বললো,

~ ঐ বৃষ্টি কি হলো যাও এই ড্রেসটা পড়ে আসো। আজ আমাদের সত্যিকারের নতুন জীবন শুরু হবে। আজ আমাদের আসল বাসর হবে। যে বাসরে থাকবে শুধু ভালবাসা কোনো অত্যাচার নয়। তারাতারি যাও না লক্ষিটি আমার কত দিন হলো তোমায় মন ভরে দেখিনা।

এই কথা গুলো বলেই উনি আমায় ঠেলে অন্য রুমে পাঠিয়ে দিলো ড্রেসটা পরার জন্য। আমি ঐ রুমে গিয়ে বোরখা খুলে ভাবতে লাগলাম কি হচ্ছে এসব আমার সাথে? এটা কে? এটা কি সত্যিই সেই রাজু? যে কিনা আমায় সব সময় কষ্ট দিতো মারধর করতো।

এসব ভাবতে ভাবতে আমি প্যাকেটটা খুললাম। প্যাকেটটার মধ্যে অনেক সুন্দর একটি ল্যাহেঙ্গা। গোল্ডেন কালারের ওপর লাল রঙের কাজ করা। ড্রেসটা অসম্ভব সুন্দর। কিন্তু আমার সেদিকে মনযোগ নেই। আমি তো এখন ভাবনার অথৈ সাগরে ভাসছি। কি হতে চলেছে আমার সাথে?

তারপর আমি ড্রেসটা পড়ে নিলাম একদম ফিট হয়েছে আমার সাথে। তারপর রুম থেকে ভয়ে ভয়ে রাজুর রুমের সামনে এলাম। আমায় দরজায় দেখেই রাজু একবার পা থেকে মাথা পর্যন্ত চোখ বুলিয়ে নিলো। তারপর আমার কাছে এগিয়ে এসে আমায় কোলে তুলে নিলো। তারপদ দরজা এক হাত দিয়ে বন্ধ করে দিলো।

আমায় কোলে করে নিয়ে গিয়ে আয়নার সামনে বসিয়ে দিলো। তারপর নিজে হাতে সাজাতে লাগলো আমায়। গলায় হাড় কানে দুল হাতে চুড়ি কপালে টিকলি আর সব শেষে খোপায় বেলি ফুলের মালা পরিয়ে দিলো। তারপর আমায় বললো,
~ এখন একটু কাজল দাও তো সাথে হালকা লিপস্টিক আর ছোট্ট একটা টিপও পড়বে। এগুলো আমি দিতে পারি না তাই তুমি দাও।

আমি কিছুই বুঝতে পারছি না সব কিছু কেমন সপ্নের মতো লাগছে আমার কাছে। তবুও চোখে হালটা কাজল আর ঠোঁটে লিপস্টিক কপালে টিপ পরলাম। রাজু এবার আমায় সামনে দার করিয়ে পা থেকে মাথা পর্যন্ত নেশা ভরা চোখে দেখলো। তারপর বললো,

~ আমার বৃষ্টিকে দেখছি একদম লালপরীর মতো লাগছে। যেনো কোনো ডানা কাটা লালপরী দারিয়ে আছে আমার সামনে।

রাজুর মুখে লালপরী শব্দটা শুনে আমার বুকের বাম পাসটা কেঁপে উঠলো। আমার শ্রাবনের কথা মনে পরে গেলো।

আমি তো আজ এখানে এসেছিলাম রাজুর থেকে বিদায় নিতে। শ্রাবন তো আমার জন্যে অপেক্ষা করছে হয়তো। আমি যে শ্রাবণ কে অনেক ভালবাসি। কিন্তু রাজু হঠাৎ এমন ব্যাবহার কেনো করছে আমার সাথে। রাজুকি তাহলে সত্যিই ভালো হয়ে গেছে? নাকি আবার কোনো গেইম খেলছে আমার সাথে?
কি করবো আমি? কি করা উচিৎ এখন আমার?


পর্ব ১৯

কি করবো আমি কি করা উচিত এখন আমার। আমি কিছুই বুঝতে পারছি না কি হচ্ছে আমার সাথে।
হঠাৎ রাজু এসে পিছন থেকে আমায় জরিয়ে ধরলো। আর ওর জরিয়ে ধরাতে আমি ভাবনার জগত থেকে ফিরে এলাম। তারপর রাজু আমার কানে কানে বললো,

~ বৃষ্টি আমি জানি তুমি আমায় কখনোই ক্ষমা করতে পারবে না। আমি তোমার সাথে বিয়ের পর যে আচরণ করেছি তাতে আমায় ক্ষমা না করাটাই সাভাবিক কিন্তু তবুও তোমার স্বামী হিসাবে তোমার কাছে আমি ক্ষমা চাই বৃষ্টি। প্লিজ আমায় ক্ষমা করে দাও। কথা দিচ্ছি আর কখনো তোমায় কোনো কষ্ট দিবো না আমি। i love u বৃষ্টি i am really love u বৃষ্টি।

এই কথা গুলো বলেই উনি আমায় অনেক শক্ত করে জরিয়ে ধরলেন। আমি যেনো বোবা হয়ে গেছি কি করবো কি বলবো কিছুই বুঝতে পারছি না। যেন একটা রোবট হয়ে গেছি। শুধু দুচোখ বেয়ে অঝোর ধারায় পানি পরছে। এই পানি কিসের তাও আমি জানি না। আমার চোখের পানিতে রাজুর শার্ট ভিজে গেলো। রাজু আমায় ছেরে দিয়ে মুখের দিকে তাকিয়ে বললো,

~ এই বৃষ্টি এই তুমি এভাবে কাঁদছো কেনো বলোতো। আমি তো বললাম, তোমায় আর কখনো কষ্ট দিবো না শুধু ভালবাসবো তবুও কেনো কাঁদছো সোনা বলো আমায়।

আমি নিজেই জানি না আমি কোনো কাঁদছি। সারা পৃথিবী কেমন অন্ধকার হয়ে আসছে আমার আমি যেনো দারিয়ে থাকতে পারছি না। রাজুর বুকে ঢলে পরে জ্ঞান হারালাম।

যখন জ্ঞান ফিরলো তখন দেখি আমি বিছানায় রাজুর বুকে শুয়ে আছি। রাজু ঘুমিয়েছে। আমি একটু নোরে উঠতেই রাজুর ঘুম ভেঙে গেলো তারপর আমায় বললো,
~ বৃষ্টি তোমার জ্ঞান ফিরেছে? যানো কতটা টেনশন হচ্ছিল আমার। এই গত এক মাসে আমি বুঝেছি তোমায় কতটা ভালো বেসে ফেলেছি আমি।

আমি যখন বিদেশ যাই তখন প্রতিটা মূহুর্তে আমার তোমার কথা মনে পরতো। অনেক ইচ্ছা করতো তোমার সাথে একটু কথা বলতে কিন্তু কোনো একটা অপরাধ বোধ থেকে বাধা দিতো মন তোমায় কল দিতে।

তবুও একদিন আর সহ্য করতে না পেরে তোমায় একটা প্রাইভেট নাম্বার থেকে কল দিয়েছিলাম কিন্তু কথা বলার সাহস হয়ে ওঠেনি। শুধু তোমার কন্ঠটা শুনেই মনটা শান্ত করেছিলাম। অনেক ভালবেসে ফেলেছি তোমায় বৃষ্টি।

আমি রাজুর কথা শুনে শুধু অবাকই হচ্ছি। তার মানে সেদিন যে কলটা এসেছিল সেটা রাজু করেছিলো? এতই যখন ভালবাসে আমায় তখন এভাবে এতদিন কেনো কষ্ট দিলো আমায় ও? এর উত্তর আমায় জানতেই হবে। আমি রাজুকে জিগ্যেস করলাম
~ কি কিছু যদি মনে না করেন আপনাকে একটা কথা জিগ্যেস করবো?

~ একটা কেনো তোমার যত খুশি আমায় প্রশ্ন করতে পারো। বলো কি জানতে চাও?
~ আপনি যদি আমায় ভালই বাসেন তাহলে এতদিন ঐ রকম ব্যাবহার কেনো করতেন আমার সাথে? কি দোষ ছিলো আমার আমি জানতে চাই? উত্তর দিন আমায় কেনো কেনো ওমন করতেন আমার সাথে?

আমার এই প্রশ্ন গুলো শুনে রাজু কিছুক্ষন মন খারাপ করে বসে রইলো। তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলতে শুরু করলো
~ তাহলে শোনো আমার ঐরকম বাজে ব্যাবহারের কারন।

আমি যখন ক্লাস ৫ম এ পড়ি তখন আমার ক্লাসে ভর্তি হয় আমার দুর সম্পর্কের খালাতো বোন মার্জিয়া।
মার্জিয়াকে আমার খুব ভালো লাগতো। আমরা সব সময় একসাথে থাকতাম। হাসি মজা দুষ্টুমি করে কাটতো আমাদের দিন গুলি।

এভাবেই আমরা একসময় HSC পরীক্ষা শেষ করলাম। তারপর আমাদের প্রায় ১৫ দিন আর দেখা হয়নি। মার্জিয়া ওর গ্রামের বাড়ি বেরাতে গিয়েছিল। আর তখনি আমি বুঝতে পারি আমি মার্জিয়াকে অনেক ভালবেসে ফেলেছি। সারাক্ষণ ছটফট করতে থাকি ওর সাথে দেখা করার জন্যে।
ওদিকে মার্জিয়াও আমায় ভালবেসে ফেলেছিল। মার্জিয়াও অনেক ছটফট করতে থাকে আমার সাথে দেখা করার জন্যে।

তারপর ১৫ দিন পর মার্জিয়ার সাথে আমার দেখা হওয়ার কথা। তাই সকালে উঠিই কোনো মতে খেয়ে দেয়ে রেডি হয়ে বেরিয়ে পরি কলেজের উদ্যেসে। আমরা দুজনেই একি কলেজে ভর্তি হয়েছিলাম। সেদিন ছিলো আমাদের প্রথম কলেজের দিন।

আমি মার্জিয়ার সাথে দেখা করবো বলে দারিয়ে ছিলাম কলেজের গেটে। প্রায় ১৫ মিনিট পর মার্জিয়া এসে আমায় দেখে হাত ধরে একটি নির্জন যায়গায় নিয়ে যায়। তারপর আমায় অনেক শক্ত করে জরিয়ে ধরে কান্না করে বলে ও আমায় ভালবাসে। আমিও ওকে জরিয়ে ধরে বলি যে আমিও ওকে অনেক ভালবাসি। এভাবেই চলতে থাকে আমাদের ভালবাসার দিন গুলো।

কলেজে যখন প্রথম পরীক্ষা ছিলো আমাদের সেদিন মার্জিয়া পরীক্ষা দিতে আসে না। আমি কোনো মতে পরীক্ষা শেষ করে মার্জিয়া কেনো আসেনি তাই জানতে মার্জিয়ার বাসায় যাই।
ওর বাসায় গিয়ে দেখি বাসার সবাই কান্নাকাটি করছে। আমি খালাকে জিগ্যেস করি কেনো এভাবে কাঁদছে ওরা? আর মার্জিয়া কোথায়?

তখন খালা আমায় বলে মার্জিয়ার বিয়ে হয়ে গেছে একটু আগে। ছেলেপক্ষ দেখতে এসেই বিয়ে করে নিয়ে গেছে।
খালার কথা শুনে যেনো আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পরে। মার্জিয়া কি করে অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারে?
আমি খালাকে জিগ্যেস করি মার্জিয়া বিয়েতে রাজি ছিলো কি না?

তখন খালা জানায় ছেলেপক্ষ অনেক বড় ঘরের লোক আর মার্জিয়াও ওদের অনেক পছন্দ করেছে তাই মার্জিয়ার ইচ্ছেতেই বিয়ে হয়েছে ওর।

আমার যেনো পায়ের নিচের মাটি সরে যায় এসব কথা শুনে। মার্জিয়া কি করে পারলো আমায় রেখে অন্য কারো বৌ হতে? ও কি আমায় কখনো ভালবাসেনি তবে? সবই কি তাহলে ওর অভিনয় ছিলো?

তারপর আমি সেখান থেকে ফিরে আসি বাসায়। অনেক কেঁদে ছিলাম আমি মার্জিয়ার জন্যে অনেক ভালবাসতাম ওকে আমি।
সেদিনের প্রায় ২৫ দিন পর একদিন আমার ফোনে একটা অচেনা নাম্বার থেকে কল আসে। আমি যখন কলটা রিসিভ করি তখন ঐ পাস থেকে বলে

~ কেমন আছো রাজু?
~ মার্জিয়া তুমি?
~ চিনতে পেরেছো আমার কন্ঠ তাহলে?

~ এটা কি বলো জান আমার তোমার কন্ঠ আমি চিনবো না? এক শতাব্দী পরেও যদি কথা হয় তবুও চিনতো তোমায় আমি। কিন্তু তুমি আমার সাথে কেনো এমন করলে মার্জিয়া বলো আমায়? কি দোষ করেছিলাম আমি। কেনো তুমি অন্য কাওকে বিয়ে করলে। তুমি কি আমায় ভালবাসতে না?
আমার কথার উত্তরে মার্জিয়া খিলখিল করে হেসে দিয়ে বললো,

~ হাহাহাহা আমি কি পাগল নাকি হুমম যে তোমার মোতো একটা বেকার ছেলেকে বিয়ে করবো। আমার অনেক দিনের সপ্ন ছিলো আমি বড় লোকের বাড়ির বৌ হবো আর সেই সপ্ন আমি পুরো করেছি। আমার শশুড়বাড়ির লোক অনেক বড়লোক। আর তোমার সাথে তো আমি শুধু টাইমপাস করতাম ভালবাসা ছিলোনা কখনো। সে যাই হোক তোমার সাথে ভালবাসার অভিনয় করে অনেক মজা পেয়েছি। ক্ষমা করে দিও পারলে। আর ভালো থেকো বাই।

এটা বলেই মার্জিয়া ফোন কেটে দেয়। আমি অনেক বার ওকে কল দেওয়ার চেষ্টা করি কিন্তু ও আমায় ব্লক করে দিয়েছিলো। তখন রাগ করে আমি আমার ফোনটাই আছার মেরে ভেঙে ফেলি। সেদিনের পর থেকে আমি ঘৃণা করি সকল মেয়ে মানুষকে।

তোমার সাথে এতদিন যে খারাপ আচরণ গুলো করেছি সেগুলো ঐ রাগ থেকেই ছিলো। কিন্তু কখন যে তোমায় ভালবেসে ফেলেছি নিজেও জানি না। প্লিজ বৃষ্টি ক্ষমা করে দাও আমায়। এখন আমি শুধু তোমায় ভালবাসি আর কাওকে না।
ওনার কথা গুলো শুনে আমি মুখের ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। কি বলবো বুঝে উঠতে পারছি না।

মানুষটা সত্যিই অনেক কষ্ট পেয়েছে জীবনে কিন্তু আমার শ্রাবন সেও তো আমায় পাগলের মতো ভালবাসে আর আমিও তাকে ভালবাসি। কি করবো আমি এখন? কোন দিকে যাবো আমি? নিজের ভালবাসার কাছে যাবো নাকি ভালবাসা কোরবানি দিয়ে শরীরের সম্পর্ক ও স্বামীর সম্পর্ককে গ্রহন করবো আমি? কি করবো এখন আমি?


পর্ব ২০

আমি রাজুর কথা শুনে কি উত্তর দিবো কিছুই বুঝতে পারছি না। অনেক খারাপ লাগছে রাজুর জন্যে আমার। ঐ মার্জিয়া মেয়েটার জন্যে ও কতইনা কষ্ট পেয়েছে। সত্যিকারের ভালবাসা এভাবে ঠকালো ঐ মেয়েটা।

খুব রাগ হচ্ছে আমার মার্জিয়ার ওপর। আজ ঐ মেয়েটার জন্যে আমার জীবনটা এমন একটা জায়গায় এসে দারিয়েছে যেখান থেকে আমি না পারছি ফিরতে না পারছি থাকতে। কি করবো আমি কিছুই মাথায় আসছে না।
আমার চুপ থাকতে দেখে রাজু বলতে শুরু করলো

~ বৃষ্টি প্লিজ আমায় ক্ষমা করে দাও। আমি জানি আমি তোমার সাথে যেমন আচরণ করেছি তাতে আমি ক্ষমা পাওয়ার যোগ্য নই তবুও আমায় কি একটা সুযোগ দেওয়া যায় না বলো? ভুল তো মানুষই করে কিন্তু ভুল শোধরানোর একটা সুযোগ কি দেওয়া উচিৎ না বলো? প্লিজ বৃষ্টি চুপ করে থেকোনা আমার প্রশ্নের উত্তর দাও।
আমি ওনার কথার উত্তরে শুধু বললাম,

~ আমার একটু সময় চাই। শরীরটা ভালো লাগছে না একটু ঘুমোতে চাই আমি।
এই বলেই শুয়ে পরলাম আর রাজু একটা দির্ঘ্যশ্বাস ফেলে বাইরে চলে গেলো।

রাজু চলে যেতেই আমি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না। অঝোর ধারায় পানি পরতে লাগলো দুচোখ বেয়ে। কেনো হচ্ছে আমার সাথে এমন? কি পাপ ছিলো আমার যে আমার সাথেই এমন হলো। কি করবো আমি এখন। মার্জিয়ার কাছ থেকে রাজু যে কষ্টটা পেয়েছে সেটা জানার পর সেই একি কষ্ট কি করে দেবো আমি ওকে? শত হলেও ও আমার স্বামী।

আর রাজুকে কষ্ট দিতে না চাইলে যে আমার শ্রাবনকে কষ্ট দিতে হবে আমায়। আমি কি করে আমার শ্রাবনকে কষ্ট দিবো। ওকে যে আমি অনেক ভালবাসি।

এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে গেছি জানি না। যখন ঘুম ভাঙলো তখন ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি রাত ৩, ০০ বাজে। আর রাজু আমার পাশেই শুয়ে ঘুমিয়ে আছে। আজকে রাজুর চেহারাটা অনেক নিষ্পাপ লাগছে। খুব মায়া হচ্ছে আমার রাজুর কথা ভেবে ঐ মার্জিয়া নামের মেয়েটি কতটা কষ্ট দিয়েছে লোকটাকে আহারে।

তারপর আমি বিছানা ছেড়ে উঠে বাথরুমে গিয়ে ওজু করে এলাম। তারপর তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ে মোনাজাতে আল্লাহর কাছে দোয়া চাইলাম কেঁদে কেঁদে। কি করবো আমি পথ দেখাও খোদা।

ফজরের আজান হলে আমি রাজুকে ডাকলাম নামাজ পড়ার জন্য। আমি ডাক দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজু উঠে নামাজ পড়তে গেলো। এ যেনো অন্য এক রাজু। যাকে ঘৃণা করা যায় না। কিন্তু ভালও বাসতে পারবো না কখনো। কারন আমার মনটা যে অন্য কেউ আগেই দখল করে নিয়েছে।

ফজরের নামাজ শেষ করে আমি বাইরে বের হলাম। রান্না ঘরে গিয়ে দেখি আমার শাশুড়ি মা রান্নার আয়োজন করছেন। আমি ওনাকে সালাম দিলাম তারপর হাতে হাতে সব কাজ করতে লাগলাম। আমার শাশুড়ি মা আমার সাথে তেমন কথা বলছেন না। কেমন যেনো মুখ বাকা করে আছেন। যেনো আমি অনেক বড় কোনো ক্ষতি করেছি ওনার। আমি ইচ্ছা করে ওনার সাথে কথা বলার চেষ্টা করছি আর উনি আমায় এরিয়ে যাচ্ছেন মুখ বাকা করে।

রাজু নামাজ পড়ে বাসায় এলে আমি রাজুর জন্যে চা বানিয়ে নিয়ে গেলাম। আজ কেনো জানি না রাজুকে আমার ভয় করছে না। হয়তো ও নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে তাই।
তারপর আমি চা নিয়ে রাজুর সামনে বারিয়ে দিয়ে বললাম,
~ আপনার চা।

আমার হাত থেকে চা নিয়ে রাজু বললো,
~ বৃষ্টি এখানে বসো। তোমার সাথে আমার কথা আছে।
~ কি কি কথা বলেন আমি এখানেই ঠিক আছি। আর বাইরে অনেক কাজ আছে আমার। (একটু ভয় পেয়ে বললাম, )

~ তুমি কি আমায় দেখে এখনো ভয় করছো বৃষ্টি? ভয় পেওনা প্লিজ আমি তোমার গায়ে আর একটা আঙ্গুলেরও টোকা দিবো না তুমি নির্ভয়ে বসো এখানে।

আমি ওনার থেকে একটু দুরে সরে বসলাম। উনি আমার কান্ড দেখে মুচকি হাসলেন তারপর চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে আমার দিকে বারিয়ে দিয়ে বললেন
~ এই নাও তুমি অর্ধেক চা খেয়ে তারপর আমায় দাও। আমি বাকি অর্ধেক খাবো।

~ কিন্তু আমি খেলে তো চা টা এঠো হয়ে যাবে। আর তাছারা এটা আপনার জন্যে এনেছি আপনি খান আমি পরে খেয়ে নিবো।
~ আরে পাগলি স্বামী স্ত্রী এঠো খেলে তাদের মাঝে ভালবাসা বারে। তাই তুমি আগে খেয়ে দাও তারপর আমি খাবো।

রাজুর কথাটা শুনে আমার বুকের মাঝে ধুকপুক করে উঠলো শ্রাবনের কথা মনে পরে। শ্রাবন আমার এঠো করা আইসক্রিম কতো তৃপ্তি নিয়ে খেয়েছিলো। ও তো আমায় পাগলের মতো ভালবাসে।

রাজু আবার আমার সামনে চায়ের কাপটা বারিয়ে দিলো। তখন আমার ধ্যান ভাঙলো। আমি আর কি করার চায়ের কাপটা নিয়ে এক চুমুক খেয়ে টেবিলে রেখে দৌড়ে চলে এলাম বাইরে।
আমার এমন কান্ড দেখে রাজু হাসতে হাসতে বললো,
~ হাহাহাহা পাগলি একটা লজ্জা পেয়ে পালালো।

কিন্তু রাজু তো আর জানে না আমি কেনো এভাবে পালিয়ে এলাম। আমার শ্রাবনের কথা প্রতিটা মূহুর্তে মনে পরছে কিছুতেই ভুলতে পারছিনা। তাই রাজুর সামনে কান্না করার আগেই পালিয়ে এলাম।
আমি শশুড়বাড়িতে এসেছি আজ ২০ দিন হোলো। এর মাঝে একটিবারো শ্রাবনের সাথে কথা হয়নি আমার।

কারন শশুড়বাড়ি আসার সময় আমি আমার ফোনটা বাড়িতেই রেখে এসেছিলাম। আর সেটা শ্রাবনও জানে ওকে বলেই রেখে এসেছি। এই দিন গুলোতে আমি এক মূহুর্তের জন্যেও শ্রাবনকে ভুলতে পারিনি। দুরে থাকায় ওর প্রতি আমার ভালবাসাটা যেনো আরো ১০০ গুন বেরে গেছে।

রাজুর সাথে আমি এখানে স্বামী স্ত্রীর মতো করে সংসার করছি ঠিকি কিন্তু রাজুকে চুল পরিমানও ভালবাসতে পারিনি। তবে এ কদিনে ওর ব্যাবহারে ওর প্রতি আমার মায়া তৈরি হয়ে কিছু।
আজকে আমায় নিতে আসবে আব্বু আম্মু। অনেক দিন পর বাড়ি যাবো শ্রাবনের সাথে কথা বলবো তাই মনটা অনেক খুশি খুশি লাগছে।

বিকেলে আব্বু আর আম্মুর সাথে বাড়ি যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে রুম থেকে বের হচ্ছিলাম। ঠিক তখনই রাজু এসে আমায় শক্ত করে জরিয়ে ধরলো। তারপর বললো, বৃষ্টি তারাতারি ফিরে এসো প্লিজ। তোমায় ছারা এ বাড়ি ঘর সব শূন্য শূন্য লাগবে আমার। প্লিজ জান তারাতারি এসো। এই বলেই কপালে একটা ভালবাসার পরস একে দিলো। আমি কিছু বললাম, না শুধু মাথা নেরে সায় দিলাম। তারপর আব্বু আম্মুর সাথে বাড়িতে চলে এলাম,


পর্ব ২১

তারপর আব্বু আম্মুর সাথে আমি বাসায় চলে এলাম।
বাসায় এসেই বোরখা খুলে আম্মুকে ডেকে আমার ফোনটা চাইলাম। আম্মু আমার ফোনটা হাতে দিতে দিতে বললো,

~ জানিস বৃষ্টি শ্রাবন প্রতিদিন একবার হলেও ফোন করে আর তোর কথা জানতে চায়। আমাদের সকলের কথাও জিগ্যেস করে। আজকে সকালেও ফোন করেছিলো। তোর কথা জিগ্যেস করলো আমি বলেছি আজকে তোকে নিয়ে আসবো। তারপর কম করে হলেও ছেলেটা ৫ বার কল দিয়েছে। আর বার বার জিগ্যেস করেছে তোকে নিয়ে এসেছি কিনা।

আম্মুর কথা শুনে আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললাম,
~ আচ্ছা দেখছি আমি কথা বলছি তুমি যাও।

তারপর আম্মু চলে গেলে আমি ফোনটা চালু করে দেখি ৩২ টা মিসড কল। শ্রাবন এতোবার কল করেছে আমায়?
তারপর আমি শ্রাবনের নাম্বারে কল দিলাম আর সাথে সাথেই রিসিভ হলো। আমি বললাম,
~ আসসালামু আলাইকুম।

~ ওয়ালাইকুমুসসালাম। কেমন আছো জান? এতো দিন কি একটিবারও আমার কথা মনে পরেনি তোমার? কতদিন হলো তোমার কন্ঠ শুনবো বলে আমি পাগল হয়ে আছি। তুমি কি একটুও বোঝো না আমায়?
শ্রাবনের কথার উত্তরে আমি বললাম,

~ শ্রাবণ ভাই তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে। প্লিজ আমার কথা গুলো ধৈর্য্য সহকারে শুনবে আর সব কথা শোনার পরেই উত্তর দিবা কেমন?

~ কিছু কথা কেনো জান তুমি যা খুশি আমায় বলো। কতো দিন হলো তোমার কথা শুনিনা জানো। আজকে তোমার কন্ঠটা শুনে যেনো দেহে প্রান ফিরে পেলাম। বলো কি বলবে সোনা।
শ্রাবন ভাইয়ের কথা শুনে আমার বুকটা ফেটে যাচ্ছে কি করে ওকে বলবো এই কথা গুলো আমি ভেবেই পাচ্ছি না। ও যে আমায় পাগলের মতো ভালবাসে কি করে কষ্ট দিবো ওকে আমি?

তবুও নিজেকে শক্ত করে বলতে শুরু করলাম।
~ শ্রাবন ভাই দয়া করে আমার কথা গুলো শেষ হওয়ার আগে তুমি কোনো প্রশ্ন বা কথা বলবা না। আমার কথা শেষ হলেই তুমি কথা বলবা প্লিজ।

~ বলো শোনা আমি তোমার কথাই শুনবো কিছু বলবো না জান বলো তুমি কি বলতে চাও।
~ শ্রাবন ভাই আমি ঠিক কি ভাবে তোমায় কথা গুলো বলবো ভেবে পাচ্ছি না। কিন্তু এই কথা গুলো এখন না বললে হয়তো অনেক দেরি হয়ে যাবে। আর আমিও চাই না এভাবে তুমি আর আমি পাপিষ্ঠ হই। তাই কোনো প্রশ্ন করবানা আগে আমার কথা গুলো মন দিয়ে শুনবা।

তুমি হয়তো জানো আমি অনেক ছোট বেলা থেকেই ইসলামী সব শরীয়তের ভেতর থেকে বড় হয়েছি। পর্দা করে চলেছি সবার সাথেই। শুধু একটি ভুল করেছি আর সেটা হোলো তুমিও আমার জন্যে পর পুরুষ তাই তোমার সামনেও আমার পরিপূর্ণ পর্দার দরকার ছিলো। কিন্তু আমি সেটা করিনি বা আমার আব্বু আম্মু কখনো সেটা আমায় বলেনি। আর সেই ভুলের কারন সরুপ এখন আমাদের এই প্রেমের সম্পর্ক গরে উঠেছে। যা এক কথায় হারাম সম্পর্ক।

~ তুমি এসব কি বলছো জান আমি,
~ শ্রাবন ভাই প্লিজ আমার কথা গুলো আগে শেষ করতে দাও এর মাঝে কোনো কথা বোলোনা প্লিজ।
~ আচ্ছা ঠিক আছে বলো আমি শুনছি
~ দেখো শ্রাবন ভাই আমি বিবাহিত।

বিয়েটা যে ভাবেই হয়ে থাকুক না কেনো এটা বৈধ সম্পর্কই। আমার স্বামী খারাপ হোক আর ভালো হোক তবুও আমাকে ভালবাসার বা আমি ভালবাসার ওপর শুধু তারই অধিকার রয়েছে। আর তোমার সাথে আমার যে সম্পর্ক টা গড়ে উঠেছে সেটা শয়তানের পক্ষ হতে আসে যার নাম হলো প্রেম। আর বিয়ে ছারা প্রেম ভালবাসা এক কথায় হারাম। সেটা আমরা যতই পবিত্র রাখিনা কেনো।

রাজুর খারাপ আচরণের কারনে আর তোমার বন্ধুর মতো পাশে থেকে আমায় সব কষ্ট ভুলিয়ে রাখার কারনে হয়তো শয়তানের ওয়াসওয়াসায় পরে আমরা এই হারাম সম্পর্কে জরিয়ে গেছি। তাই এখনো সময় আছে আমাদের এই সম্পর্কটা ত্যাগ করা উচিৎ। তাই তুমি আমায় ভুলে যাও আর নিজের মতো করে জীবন সাজাও। আর পারলে আমায় ক্ষমা করে দিও শ্রাবন ভাই।

আমার কথার উত্তরে শুধু কান্নার শব্দ পাচ্ছি আমি শ্রাবন ভাইয়ের। পাগলের মতো কাঁদছে শ্রাবন। এদিকে ওকে এই কথা গুলো বলতে আমার বুকটাও ফেটে যাচ্ছে কষ্টে। কিন্তু এ ছারা আমার যে আর কোনো উপায় নেই। হঠাৎ শ্রাবন ভাই কান্না থামিয়ে বলতে শুরু করলো

~ ঐ জান তুমি আমার সাথে মজা করছো তাই না? আমি জানি আমার লালপরী আমার জান কখনোই আমাকে ভুলে যাওয়ার কথা বলতেই পারে না। প্লিজ জান তুমি এমন দুষ্টুমি করো না আমার সাথে যে দুষ্টুমি আমি সহ্য করতে পারবো না।

আমি মরে গেলেও তোমায় কখনোই ভুলতে পারবো না। তুমি কল্পনাও করতে পারবে না যে আমি তোমায় কতোটা ভালবাসি। আমি তোমার সাথে এমন হারাম সম্পর্কে থাকতে চাই না। আমি আজকেই আম্মু আব্বু খালামনি আর খালুজানকে বলবো আমাদের বিয়ের কথা। তোমার আমার বিয়ে হয়ে গেলেতো আর কোনো সমস্যা নাই বলো।

তখন তো এটা আর হারাম সম্পর্ক থাকবে না তাই না? তখন তুমি হবে আমার বৌ আর আমি তোমার বৈধ স্বামী। আমি আজকেই বলবো আম্মু আব্বুকে। তুমি ঐ রাজুকে ডিভোর্স দাও আজকেই। (কথা গুলো বলার সময় শ্রাবন পাগলের মতো করছিলো। যেনো কেউ ওর কলিজায় আঘাত করেছে)

~ না শ্রাবন ভাই এটা হয়না। আমি রাজুকে ছারতে পারবো না। ও যেমনই হোক না কেনো ও আমার স্বামী। আর তাছারা রাজু নিজের ভুল গুলো বুঝতে পেরেছে। ও অনেক ভালো হয়ে গেছে। আমি ওকে ছারতে পারবো না। আর বিয়ে জীবনে একবারই। আমার বিয়ে হয়ে গেছে শ্রাবন ভাই তুমি আমায় ভুলে যাও। ভালো মেয়ে দেখে বিয়ে করে নতুন জীবন শুরু করো।

~ তুমি এসব কি বলছো জান আমার। আমি তোমায় ছারা আমার জীবন ভাবতেই পারি না। আমি তোমার জায়গা অন্য কাওকে কখনোই দিতে পারবো না। আমার মন জুরে শুধুই তুমি। বিয়ে আমি তোমাকেই করবো অন্য কাওকে না। আর তুমি এতটা স্বার্থপরের মতো কথা বলছো কি করে বৃষ্টি। রাজুর একটু ভালো ব্যাবহার পেয়ে এভাবে ভুলতে চাও আমায়? কি ভুল করেছি আমি? তোমায় ভালবাসা কি আমার ভুল ছিলো?

~ আমি এতো কিছু জানি না। আমি রাজুকে ছারতে পারবো না। ও আমার বৈধ স্বামী আর আমি রাজুর বৈধ বৌ। তাই আমি আর তোমার সাথে এ বিষয়ে কথা বলতে চাই না। পারলে আমায় ক্ষমা করো। ভালো থেকো। আল্লাহ হাফেজ।
বলেই ফোনটা কেটে মোবাইল বন্ধ করে দিলাম। তারপর খাটে শুয়ে বালিশের মধ্যে মুখ গুজে অঝোর ধারায় কাঁদতে লাগলাম।

এতোটা কষ্ট হচ্ছে আমার মনে হচ্ছে কেউ শরীরের চামড়া তুলে মরিচ লাগিয়ে দিয়েছে। শ্রাবনের কান্নার শব্দ যেনো বার বার আমার কানে বেজে চলেছে।

আমি যেনো ওকে কষ্ট দেই নি কষ্ট দিয়েছি নিজেকে। বুক ফেটে যাচ্ছে কষ্টের আগুনে। আমিও যে কখনোই শ্রাবনকে ভুলতে পারবো না। রাজুর সাথে সংসার করবো ঠিকি কিন্তু কখনো হয়তো রাজুকে ভালবাসতে পারবো না। আমার জীবনের প্রথম ও শেষ ভালবাসা শুধুই আমার শ্রাবন। কিন্তু আমি সেটা আর কোনোদিন প্রকাশ করবো না।

আমি আর শয়তানের ধোকায় পরে নিজেকে আর শ্রাবনকে হারাম সম্পর্কে জরাতে দিবো না। ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করবো শ্রাবনকে।
আমার চোখের পানিতে ভিজে যাচ্ছে বালিশ তবুও কান্না থামার নামই নেই। আমি জানি শ্রাবন হয়তো এখন পাগলের মতো করে কাঁদছে। অনেক খারাপ আর স্বার্থপর ভাবছে আমায়।

অনেক ঘৃণা হচ্ছে হয়তো আমার প্রতি ওর। তবুও আমি ওকে ভুলে যেতে চাই। ভুলে যেতে চাই এই কিছুদিনের ভালবাসা। মুছে দিতে চাই সকল সম্পর্ক যা শয়তানের তরফ থেকে এসেছে। কিন্তু আমি সত্যিই কি পারবো কখনো ভুলতে শ্রাবন কে? পারবো কি রাজুকে মন থেকে ভালবাসতে? কে বলে দেবে আমায় কে কে,


পর্ব ২২

আমি ভুলে চাই শ্রাবনের ভালবাসাকে। ভুলে যেতে চাই এই কিছু দিনের অবৈধ সম্পর্ককে। মুছে দিতে চাই মন থেকে চিরদিনের মতো।

কিন্তু আমি সত্যিই কি পারবো আমার প্রথম ভালবাসা শ্রাবনকে ভুলে যেতে? পারবো কি ওর সাথে কাটানো প্রতিটা মূহুর্তের কথা মন থেকে মুছে ফেলতে। কে উত্তর দেবে আমার এই প্রশ্ন গুলো কে কে,

হঠাৎ দরজায় নক করার শব্দে ধ্যান ভাঙলো আমার। দরজার ঐ পাস থেকে আম্মু ডাকছেন
~ বৃষ্টি এই বৃষ্টি দরজা খোল তোর সাথে আমার কিছু কথা আছে। দরজাটা খোল ঘুমিয়ে পরলি নাকি?

আম্মুর কথা শুনে আমি তারাতারি চোখ মুখ মুছে নিজেকে সামলে নিলাম। তারপর দরজা খুলে দিলাম। আম্মু আমার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষন তারপর বললো,
~ বৃষ্টি তুই কি এতক্ষণ কান্না করছিলি নাকি? চোখ মুখ এমন লাগছে কেনো তোর?

~ কো কোই না নাতো। আমি ঠিক আছি। তুমি কি যেনো বলবে বলছিলে বলো। আসো ভিতরে এসে বসে বলো।
তারপর আম্মু রুমের মাঝে ঢুকে খাটে বসলেন আর আমাকে সামনে বসালেন। তারপর বল্লেন
~ বৃষ্টি আমি তোকে কিছু কথা জিগ্যেস করবো। তুই আমার কাছে কোনো রকম মিথ্যে বলবি না সব সত্যি কথা বলবি বল। কথা দে আমায়?

~ কি জানতে চাও আম্মু বলো আমি কিছু লুকোবো না তোমার কাছে।
~ তুই কি শ্রাবনকে ভালবাসিস?

আম্মুর মুখে এমন প্রশ্ন শুনে আমার বুকের মাঝে যেনো মোচর দিয়ে উঠলো। আম্মু কি করে জানলো এসব কথা?
~ কি হলো চুপ করে কি ভাবছিস বৃষ্টি আমার প্রশ্নের উত্তর নে কোনো কিছু লুকাবি না বলেদিলাম।
আমি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না। এতদিনের জমানো কষ্ট গুলো বের হয়ে এলো দুচোখ বেয়ে। হাও মাও করে কান্না করে দিলাম আম্মুর বুকে মাথা গুজে।

আম্মু কিছু বললো, না শুধু মাথায় হাত বোলাতে লাগলো।
আমি এভাবে অনেকক্ষন কান্না করলাম আম্মুর বুকে। আমার চোখের পানিতে আম্মুর জামা ভিজে গেলো। তারপর নিজেকে শান্ত করে চোখ মুছে আম্মুকে বললাম,

~ আম্মু আমি শ্রাবন ভাইকে ভুলে যেতে চাই। এই সম্পর্কটা ঠিক নয় আম্মু। শ্রাবন আমার জীবনে একটা স্বপ্ন যে স্বপ্ন আমি পুরোন করতে চাই না। কারন এই স্বপ্নটা শয়তানের পক্ষ হতে এসেছে। এতোদিন আমি রাজুর খারাপ ব্যাবহারের কারনে শয়তানের ধোকায় পরে এই সম্পর্কটায় জরিয়ে গিয়ে ছিলাম। কিন্তু এখন যখন বুঝতে পেরেছি তখন আর কোনো ভাবেই আমি শ্রাবনের সাথে এই হারাম সম্পর্কে থাকতে চাই না।

আমার স্বামী যেমনটাই হোক না কেনো তবুও সে আমার পবিত্র সম্পর্কের স্বামী। যে সম্পর্ক আল্লাহর পক্ষ হতে এসেছেন। তাই আমি আর কোনো ভুল করতে চাই না। আমি ভুলে যাবো শ্রাবন কে মুছে ফেলবো মন থেকে ওর সকল স্মৃতি।
আম্মু আমার কথা শুনে আমার মাথায় হাত রেখে বললেন

~ বৃষ্টি মারে এখানে তোর কোনো ভুল নাই রে মা। সব দোষ আমার আর তোর আব্বুর। আমরা যদি সব কিছু ভালো মোতো খোঁজ খবর নিয়ে তারপর তোকে বিয়ে দিতাম তাহলে তোর ঐ রকম কষ্ট সহ্য করতে হতো না। আর তুই এমন সম্পর্কেও জরাতি না।

আমরা পারিনি রে মা একজন ভালো বাবা মায়ের দ্বায়িত্ব পালন করতে পারিনি আমরা। কিন্তু আজকে আমার এটা ভেবে গর্ব হচ্ছে যে আমি তোর মতো একজন নেক সন্তান আমার গর্ভে ধারণ করেছি। দেখিস রে মা তুই জীবনে অনেক সুখি হবি। আল্লাহ তোকে অনেক সুখি করবেন। কখনো ধৈর্য্য হারা হোস না বৃষ্টি।

সব সময় সকল বিষয়ে আল্লাহর ওপর ভরসা রাখবি। মনে রাখবি আল্লাহর হুকুম ছারা একটা পাতাও নরে না। আর আল্লাহ যা করেন তা আমাদের সকলের ভালোর জন্যই করেন ইনশাআল্লাহ। শ্রাবন অনেক ভাল ছেলে ও কখনোই তোর খারাপ চাইবে না। দেখিস ও সব বুঝবে। কখনোই এই সম্পর্কের দাবি নিয়ে তোর সামনে আসবে না।

~ তুমি কি করে জানলে আম্মু শ্রাবনের ব্যাপারে এসব কথা?
~ শ্রাবন আমার নাম্বারে কল করে ছিলো তারপর আমায় বললো,
~ আসসালামু আলাইকুম খালামনি।

~ ওয়ালাইকুমুসসালাম। শ্রাবন বাবা কেমন আছো তুমি? তোমার আম্মু শম্মি ওরা কেমন আছে?
~ জি আলহামদুলিল্লাহ সবাই ভালো আছে খালামনি। খালামনি তুমি একটু বৃষ্টির রুমে যাও। দেখো বৃষ্টি হয়তো কান্না করছে। ওকে শান্ত করো। আর চিন্তা করতে মানা করো। ও সুখে থাক ভালো থাক এটুকুই যথেষ্ট আর কিছু চাই না আমি। ও যেমন চায় তেমনটাই হবে। ওকে বলে দিও। আচ্ছা খালামনি এখন আল্লাহ হাফেজ পরে কথা বলবো।

এই কথা গুলো বলেই আমাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ফোন কেটে দিয়েছে শ্রাবন। (আম্মু)
~ কিন্তু আম্মু শ্রাবন তোমাকে এই কথা গুলো বললো, কেনো? তুমি কি আগে থেকেই সব জানতে?

~ হ্যা আমি আগে থেকেই সব জানতাম। শ্রাবন আমায় সব বলেছিলো। আমি তোদের আচরণে অনেক আগেই টের পেয়ে ছিলাম। তাই শ্রাবনকে জিগ্যেস করায় ও সব বলেছিলো আমায়।

আমি তো মনে মনে ঠিক করে ছিলাম এবার তুই শশুড়বাড়ি থেকে ফিরে এলে যদি এবারও ঐ বাড়ির লোকেরা তোর সাথে খারাপ ব্যাবহার করে। তাহলে রাজুর কাছ থেকে তোকে ছারিয়ে নিয়ে শ্রাবনের সাথে বিয়ে দিবো। কিন্তু তুই তো আর চাস না শ্রাবনের হতে?

~ আম্মু বিয়েটা যেভাবেই হোকনা কেনো আর রাজু যেমনই হোকনা কেনো রাজু আমার স্বামী। ইসলামী শরিয়ত অনুযায়ী রাজু ছারা অন্য সকল পুরুষ আমার জন্যে হারাম। আর তাছারা মেয়েদের বিয়ে জীবনে একটাই। আমি রাজুর স্ত্রী আমি সেটা ভুলে শয়তানের ওয়াসওয়াসায় পরে এতোদিন যে ভুলের মাঝে ছিলাম তা মুছে ফেলতে চাই হৃদয় থেকে। রাজুকেই ভালবাসতে চাই আম্মু।

~ ইনশাআল্লাহ তুই পারবি বৃষ্টি। আল্লাহ তোর নেক আশা অবশ্যই পুর্ন করবেন দেখিস।
এবার বল তোর শশুড়বাড়ির লোক এখন কেমন? এবার ওরা তোর সাথে খারাপ আচরণ করেনিতো? রাজু কি তোকে আবার মার ধর করেছে?

~ না আম্মু উনি অনেক ভালো হয়ে গেছেন। নিজের ভুল বুঝতে পেরেছেন। আমার কাছে ক্ষমা পর্যন্ত চেয়েছেন। এবার উনি একেবারেই পাল্টে গেছে। একজন ভালো স্বামীর মতো আচরণ করেছেন আমার সাথে। আলহামদুলিল্লাহ

~ আলহামদুলিল্লাহ আলহামদুলিল্লাহ আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহর কাছে কোটি শুকরিয়া আল্লাহ রাজুকে হেদায়েত করছেন বলে। তোরা অনেক সুখি হবি দেখে নিস ইনশাআল্লাহ।
তারপর ইশার আজান হলে আম্মু নামাজে চলে গেলেন। আর আমিও নামাজে দারালাম।


পর্ব ২৩

তারপর রাতের খাবার খেয়ে আমি রুমে এসে শুয়ে পরলাম। তারপর ফোনটা ওয়ান করলাম।
ফোন ওয়ান করার সাথে সাথে ৪ টা sms এলো। সেগুলো তে লেখা~
১/ বৃষ্টি আমি জানি তুমি মন থেকে আমায় কখনোই ভুলতে পারবে না। কিন্তু আমি তোমায় কথা দিলাম যে তুমি যেনো আমায় সত্যিই মন থেকে ভুলে যেতে পারো সেই ব্যাবস্থা আমি করবো।

২/ জানো বৃষ্টি তোমার কথা গুলো শুনে আমার অনেক কষ্ট হচ্ছিল। মনে হচ্ছিল যেনো কেউ আমার কলিজাটা টেনে ছিরে নিচ্ছে। এই অল্প সময়েই অনেক বেশি ভালবেসে ফেলেছি তোমায়। তাই হয়তো তোমায় আর পাবনা ভেবে এতটা কষ্ট পাচ্ছি।

৩/ তোমার সাথে কথা বলার পর অনেক ভেবে দেখলাম যে তুমি যা বলছো সবই ঠিক বলেছো। সত্যিই আমরা দুজন দুজনকে যতই ভালবাসি না কেনো আমাদের সম্পর্কটা অবৈধ। তবুও মন যে মানতে চায় না। এখন আল্লাহর কাছে একটাই দোয়া করি যে আল্লাহ আমাদের দুজন দুজনকে ভুলে যাওয়ার তৌফিক দান করুক। আমিন

৪/ জানো বৃষ্টি আমি হয়তো মৃত্যুর আগে পর্যন্ত তোমায় ভুলতে পারবো না। কিন্তু তোমায় আমি কথা দিচ্ছি যে আমি এমন কিছু করবো যাতে করে তুমি আমায় ঘৃণা করো আর ভুলে যাও।

তোমায় আমি কতটা ভালবাসি বোঝাতে পারবো না। কিন্তু তোমার সুখের জন্য আমি সব করতে পারবো। তাই খুব তারাতারি তুমি আমায় ভুলে যাবে আর রাজুকেই মন থেকে ভালবাসবে দেখে নিও। জীবনের শেষ বারের মতো একটি কথা বলি I love u jaan, I love u so much

শ্রাবনের sms গুলো পড়ে আমার চোখের পানি যেনো বাধ মানছে না। তবুও নিজেকে সামলে নিলাম তারপর শ্রাবনের সব sms নাম্বার সব কিছু ডিলিট করে দিলাম। আমি চাই না ওর কোনো স্মৃতি আমার কাছে থাকুক। তাহলে হয়তো ওকে আমি ভুলতে পারবো না কখনো।
তারপর আমি ইচ্ছা করেই রাজুকে ফোন করলাম। একবার বাজার সাথে সাথেই ফোন রিসিভ হলো
~ হ্যালো।

~ আসসালামু আলাইকুম।
~ ওয়ালাইকুুমুসসালাম। বৃষ্টি কেমন আছো তুমি?
~ জি আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আপনি কেমন আছেন?

~ তুমি ছারা ভালো থাকি কি করে বলো তো? কেনো যে বাপের বাড়ি চলে গেলে। আমার কিছুই ভাল লাগছে না।
~ যখন যেমনই থাকুন না কেনো সব সময় সবার আগে বলবেন আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। না হলে আল্লাহ নারাজ হবেন। আর আপনি যদি চান তাহলে আমায় কালকেই নিয়ে যান।
~ সত্যি বৃষ্টি তুমি আসবে? আমি যদি কালকে আনতে যাই তাহলে তুমি আসবে?

~ হুমম আসবো। কারন আপনি আমার স্বামী আর আপনার কথাই আমার জন্যে শেষ কথা।
~ তাহলে আমার অফিস ছুটি আছে ১০ দিনের। তাই আমি চাচ্ছি তোমায় নিয়ে কোথাও থেকে একটু বেরিয়ে আসতে। এক কাজ করলে কেমন হয় বলো তো?
~ জি বলুন কি কাজ?

~ আমি ভাবছি তোমায় নিয়ে ছুটিতে তোমার খালার বাসায় বেরাতে যাবো। যেখানে তোমরা গিয়েছিলে ৩ মাস আগে। তুমি গিয়ে আমার শাশুড়ি আম্মুকে বলো আমরা আগামি পোরশু দিনই যাবো ওখানে।

রাজুর কথা শুনে আমার বুকের ভিতরটা কেঁপে উঠলো। রাজু হঠাৎ শ্রাবনদের ওখানে কেনো যেতে চাইছে। আর আমি শ্রাবনের সাথে আর দেখা করতে চাই না। কি করবো এখন আমি?
~ কি হলো বৃষ্টি চুপ করে আছো কেনো? কিছু তো একটা বলো?

~ না মানে ইয়ে মানে বলছি যে এতো জায়গা থাকতে আপনি হঠাৎ ওখানে যেতে চান কেনো?
~ যেতে চাই কেনো মানে? আরে ওটা আমার খালা শশুড়বাড়ি আমার ১০০ বার যাওয়ার অধিকার আছে ওখানে। আর তাছারা আমার খুব ইচ্ছা করছে ওখানে যেতে।

~ আচ্ছা ঠিক আছে আমি আম্মুকে বলবো। এখন অনেক রাত হয়েছে ঘুমিয়ে পড়ুন সকালে ফজরের নামাজের সময় মসজিদে যাবেন।

~ ওক্কে ম্যাডাম যো আপকি মারজি।
~ হুমম আল্লাহ হাফেজ।
~ আল্লাহ হাফেজ জানু।


পর্ব ২৪

তারপর আমি রাজুর ফোন কেটে দিয়ে ভাবতে লাগলাম যে বাংলাদেশে এত জায়গা থাকতে রাজু হঠাৎ শ্রাবনদের ওখানেই কেনো যেতে চায়? তাহলে কি রাজু আমার আর শ্রাবনের ব্যাপারে কিছু জানতে পেরেছে?
নানা রাকম চিন্তা ভাবনায় রাত কাটলো আমার।

সকালে ফজরের নামাজ শেষ করে আম্মুর কাছে রান্না ঘরে গেলাম। গিয়ে দেখি আম্মু সকালের নাস্তা রেডি করছেন। আমায় দেখে আম্মু বললো,

~ কিরে বৃষ্টি ওখানে দারিয়ে আছিস কেনো কিছু বলবি?
~ হুমম কিছু বলবো। তোমার সাথে কিছু কথা আছে আম্মু।
~ এদিকে আয় বল কি কথা?

~ আম্মু কাল রাতে তোমাদের জামাইয়ের সাথে কথা বলছিলাম। তো তোমার জামাই বললো, তার নাকি ১০ দিনের ছুটি আছে তাই সে এই ছুটিতে খালামনিদের ওখানে বেরাতে যেতে চায় আমায় নিয়ে।
~ কি বলিস এ সব বৃষ্টি বাংলাদেশে এতো জায়গা থাকতে রাজু হঠাৎ তোর খালামনিদের ওখানেই যেগে চায় কেনো?

~ আমি জানি না আম্মু কেনো উনি ওখানেই যেতে চায়। তবে উনি আজকেই আসবেন আর আমায় নিয়ে কালকে খালামনিদের ওখানে যাবেন। তুমি খালামনিকে ফোন করে বলে দাও আমাদের যাওয়ার কথা।

আমার কথা শুনে আম্মুর মুখ শুকিয়ে গেলো আমি তা ভালো করেই বুঝতে পারছি। আমারও যে ভয় করছে না তা নয়। কিন্তু আমায় ভয় করলে চলবে না। নিজেকে শক্ত রাখতে হবে আমায়।

তারপর আম্মু খালামনিকে ফোন করে বলে দিলো আমাদের যাওয়ার কথা। খালামনি তো শুনে অনেক খুশি। হয়তো শ্রাবনের কানেও গেছে কথা গুলো। জানিনা শ্রাবন কি ভাবছে।

তারপর আমরা সকালের নাস্তা করলাম। ১২, ০০ টার সময় রাজু এলো আমাদের বাসায়। সঙ্গে করে অনেক কাপড় চোপড়ও নিয়ে এসেছে। রাজু একদম প্রস্তুত হয়ে এসেছে খালামনির বাসায় যাওয়ার জন্যে।

দুপুরের খাবার শেষ করে আমি আর রাজু আমার রুমে এলাম। রাজু পিছন থেকে আমায় জরিয়ে ধরে বললো,
~ বৃষ্টি তুমি যানো এই দুদিন আমি তোমায় কতটা মিস করেছি। আমি শুধু ছটফট করছিলাম যে কখন এখানে তোমার কাছে আসবো। অনেক ভালবাসি তোমায় বৃষ্টি।
আমি কিছু বলছি না শুধু মাথা নারিয়ে সায় দিচ্ছি।

সারাদিন কোনো রকমে কেটে গেলো। রাতে রাজু বললো, সব জামা কাপড় গুছিয়ে রাখতে সকালে রওনা হবো। আমিও সব জামা কাপড় গুছিয়ে রাখলাম। তারপর রাতের খাবার খেয়ে সবাই ঘুমিয়ে পরলাম।

সকালে ফজরের আজানের সময় উঠে ফ্রেশ হয়ে রাজুকে ডেকে মসজিদে পাঠালাম তারপর আমি নামাজ পড়ে নিলাম।

রাজু এলে দুজনে এক সাথে কোরআন পড়লাম। তারপর বাইরে বের হয়ে খাওয়া দাওয়া শেষ করে রেডি হয়ে নিলাম শ্রাবনদের ওখানে যাওয়ার জন্যে।

সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে রওনা হলাম খালামনির বাড়ির উদ্যেশে। নানা রকম চিন্তা এসে ভর করেছে মাথায়। কি হবে ওখানে গেলে কিছু মাথায় আসছে না।
দীর্ঘ ৪ ঘন্টা পর আমরা সেই চিরচেনা গেইট এর সামনে গিয়ে দারালাম। আর বুকের মাঝে ধুকপুকানি ১০০ গুন বেরে গেলো।

দুইবার বেল টিপতেই শম্মি এসে গেইট খুলে দিলো। তারপর আমায় দেখে জরিয়ে ধরলো। তারপর রাজুকে সালাম দিয়ে জিগ্যেস করলো আমরা কেমন আছি। শম্মির কথার উত্তরে আমি কিছু বলার আগেই রাজু বলে উঠলো।

~ আমরা তো ভালোই আছি কিন্তু তুমি মনে হয় আমার একমাত্র আদরের শালীকা তাই না শালি?
রাজুর কথায় শম্মি হেসে বললো,
~ জি দুলাভাই মুই আন্নের ১০ টা না ৫ টা না একটা মাত্র শালীকা।

তারপর ওখানে একটু হাসাহাসি করে আমরা ভিতরে ঢুকলাম। সেই চিরচেনা ফুলের বাগানটা চোখে পরতেই বুকের মাঝে ব্যাথা অনুভব হতে লাগলো। কতো স্মৃতি জরিয়ে আছে এই ফুল বাগানটায়।
তারপর আমরা বাসার মধ্যে ঢুকলাম। আমাদের দেখে খালামনি এগিয়ে এলেন। রাজু খালামনিকে সালাম দিয়ে জিগ্যেস করলো

~ আসসালামু আলাইকুম খালামনি কেমন আছেন?
~ এইতো বাবা আলহামদুলিল্লাহ ভালো। তোমরা কেমন আছো?
~ জি আলহামদুলিল্লাহ ভালো।

~ ছুটিতে এখানে এসে অনেক ভালো করেছো বাবা। আমার অনেক ভালো লাগছে তোমাদের দেখে। যাও বাবা রুমে গিয়ে একটু ফ্রেশ হয়ে নাও আমি তোমাদের জন্যে খাবার রেডি করছি। অনেক দুর থেকে যার্নি করে আসছো খাবে তারাতারি যাও। শম্মি ওদের গেস্ট রুম টাতে নিয়ে যা।

তারপর শম্মি আমাদের একটা সুন্দর রুমে নিয়ে গেলো। আমরা দুজনই জামা কাপড় চেঞ্জ করে ফ্রেস হয়ে নিলাম। তারপর বাইরে এলাম। এতক্ষণ হলো এসেছি কিন্তু শ্রাবনকে দেখছি না কোথাও আমার চোখ দুটো যেনো ওকেই খুঁজছে।

তারপর আমরা খেতে বসলাম। বিভিন্ন কথা বলতে বলতে রাজু হঠাৎ বলে উঠলো
~ খালামনি আমার শালা ওহ সরি মানে আমার শুমুন্দি শ্রাবন ভাই কোথায়? তাকে দেখছি না যে আসার পর থেকে?

~ ভাইয়া তো ওর বন্ধুর বিয়েতে গেছে। আজকে ওর এক বন্ধুর বিয়ে সেখানে গেছে ও। (শম্মি বললো, )
~ তাই নাকি আমাদের রেখেই বিয়ে খেতে গেলো শ্রাবন ভাই এটা তো ঠিক কথা নয়। আজকে আসুক শুমুন্দির সাথে ঝগড়া করমু। ( রাজু)
আমি কিছু বলছি না শুধু চুপচাপ খাচ্ছি আর ওদের কথা শুনছি।


পর্ব ২৫

তারপর আমরা খাওয়া দাওয়া শেষ করে উঠে পরলাম। খালামনি শম্মিকে বললো,
~ শম্মি বৃষ্টি আর তোর দুলাভাইকে নিয়ে বাগানে গিয়ে গল্প কর। আমি এগুলো পরিস্কার করি।
তারপর আমি রাজু আর শম্মি মিলে বাগানে চেয়ার নিয়ে গিয়ে বসলাম। আমার কিছুই ভালো লাগছে না। মনের ভিতর কিসের যেনো ভয় অনুভব হচ্ছে।

আমরা বসে গল্প করছি এরই মাঝে গেইটের শব্দ। শম্মি উঠে বললো,
~ নিশ্চয়ই শ্রাবন ভাইয়া এসেছে। আমি গেইট খুলে দিয়ে আসছি।
রাজু শম্মিকে থামিয়ে দিয়ে বললো,
~ ঐ শালিকা তুমি বসো আমি খুলে দিচ্ছি।

এই কথা বলেই রাজু এগিয়ে গেলো গেইটের দিকে। আর এদিকে আমার বুকের মাঝে যেনো কিসের ভয়ে তোলপাড় হয়ে যাচ্ছে।
রাজু গেইট খুলে দিয়েই শ্রাবনকে বললো,
~ কে আপনি? এখানে কি চাই?

~ শ্রাবন মুচকি হেসে উত্তর দিলো। যা চাই তা তো পাবো না তাই আপাতত ভিতরে আসার অনুমতি চাই দুলাভাই।
শ্রাবনের কথা শুনে রাজু হাহা করে হেসে দিলো। তারপর শ্রাবনের সাথে হ্যান্ডসেট করে ভিতরে নিয়ে এলো।

শ্রাবন ভিতরে এসেই আমার দিকে চোখ পরতেই থমকে গেলো। হা করে মায়া মায়া চোখে তাকিয়ে রইলো আমার দিকে।
আমি ব্যাপারটা বুঝতে পেরে পরিস্থিতি সাভাবিক করতে শ্রাবনকে উদ্যেশ করে বললাম,

~ কি রে শ্রাবন ভাই কেমন আছিস? আমাদের রেখেই বন্ধুর বিয়ে খেয়ে এলি? তা তোর বিয়ে খাবো কবে বলতো? ( কথা গুলো বলার সময় কেনো জানিনা আমার হাত পা কাঁপছিল)
আমার কথা শুনে হয়তো শ্রাবন ভাইও বুঝতে পারলো কেনো এমন বলছি আমি। তাই শ্রাবন ভাইও হাসি দিয়ে রাজুকে বললো,

~ বলছি যে রাজুভাই আমি না বিয়ে বাড়িতে একটা মেয়েকে দেখেছি আর মেয়েটাও বার বার ইচ্ছা করে আমার সাথে কথা বলছিলো আবার একসাথে ছবিও উঠেছি। দেখুন তো আমার সাথে মানাবে কি না। ভাবছি একেই বিয়ে করে আনবো। কত দিন আর একা থাকবো বলেন?

শ্রাবনের এমন কথা শুনে রাজু হাসতে লাগলো আর শম্মি দৌড়ে গিয়ে শ্রাবনের ফোন নিয়ে ছবি গুলো বের করলো। তারপর আমার কাছে এসে দেখাতে লাগলো।

একটি মেয়ের ছবি। দেখতে সুন্দরী। হাইট হয়তো ৫ ফুট গায়ের রং ফর্সা হালকা পাতলা দেখতে। সুন্দর মানাবে শ্রাবনের সাথে।
শম্মি বললো,

~ ওয়াও ভাইয়া আপুটাতো সত্যিই অনেক সুন্দরী রে। আমার পছন্দ হয়েছে। তবে একটা কথা আমার বৃষ্টি আপুর মতো সুন্দর না হুমম।
রাজু শম্মির কথা শুনে উত্তর দিলো

~ আরে শালিকা আমার, দেখতে হবে না বৌটা কার। আমার বৌ বলে কথা সবার সেরা তো হবেই।
শ্রাবন কিছু বলছে না শুধু চুপচাপ দারিয়ে আছে। আর বার বার আমায় দেখছে আরচোখে।
তারপর আমরা ওখানে অনেক্ষণ সময় একসাথে গল্প করলাম। শ্রাবন বার বার কথার ছলে আমায় দেখছিলো। কিন্তু রাজুকে বুঝতে দেয় নি কিছু।

তারপর সন্ধ্যা হলে আমরা বাসার ভিতর চলে এলাম। আসার সময় আমি হঠাৎ সিরিদিয়ে উঠতে পরে যেতে নিই। আর ওমনি শ্রাবন আমার হাত ধরে ফেলে তারপর রেগে গিয়ে বলে
~ দেখে চলতে পারিস না এখন পরে গেলে কি হতো।
তখনই রাজু এসে শ্রাবনকে বলে

~ আরে কিছুই হতো না আমি আছি তো আমি ওকে কোলে করে নিয়ে যেতাম শালাবাবু।
শ্রাবন রাজুর কথা শুনে আমার হাত ছেরে দিয়ে বাসার ভিতর চলে যায়। আর রাজু আমার হাত ধরে বাসায় ভিতর প্রবেশ করে।

তারপর রাতে একটু আকটু গল্প করে খাওয়া শেষ করে সবাই ছাদে যাই।
খালামনিও আছে আমাদের সাথে। সবাই গোল হয়ে বসে গল্প করছি এমন সময় খালুজানের ফোন আসে আর খালামনি চলে যায় নিচে।

তারপর রাজু বলে
~ আসো আমরা সবাই মিলে একটা খেলা খেলি।
~ আমি বলি কি খেলা খেলবেন?
রাজু বলে গান গাওয়া খেলা দারুন হবে।

রাজুর কথা শুনে শম্মি আনন্দে লাফিয়ে উঠে বলে
~ ওয়াও দুলাভাই আমার মনের কথাটা বলেছেন। কত্ত দিন হলো শ্রাবন ভাইয়ের গলায় একটু গান শুনি না। শ্রাবন ভাইয়া অনেক সুন্দর গান গায়।

শম্মির কথার উত্তরে রাজু বললো,
~ ওয়াও তাই নাকি শালি? তাহলে তো আর কথাই নাই শালাবাবু গান ধরোতো একটা সুন্দর দেখে।
রাজুর কথায় শ্রাবন বলে

~ গানের শুর হারিয়ে গেছে কি গান গাইবো।
শ্রাবনের এমন কথা শুনে রাজু বলে ওঠে
~ এতো কিছু জানি না তারাতারি গান ধরো শালা বাবু। আমি তোমার দুলাভাই তোমায় আদেশ করছি গান গাও বলছি তারাতারি।

রাজুর সাথে শম্মিও বার বার গান গাইতে বলছে শ্রাবনকে। তারপর আমিও বললাম,
শ্রাবন ভাই গা না একটা গান আমারও খুব শুনতে ইচ্ছা করছে।
আমাদের কথা শুনে শ্রাবন ভাই উঠে আমাদের থেকে একটু দুরে গিয়ে বসে গান গাইতে শুরু করলো

দুরে কোথাও আছি বসে

হাত দুটো দাও বারিয়ে।
বিরহ ছুতে চায় মনের দুয়ার
দুচোখ নির্বাক আসোনা ছুটে।

তুমি এলে রংধনু রং ঢেলে দেয়
তুমি এলে মেঘেরা বৃষ্টি ঝড়ায়
এমনের আহলাদ আসো না ছুটে।

দুরে কোথাও আছি বসে
হাত দুটো দাও বারিয়ে। ঐ
অনুরাগে ঝরে চাঁদও আজ

এ লগনেও এলেনা
অনুভব নিশ্চুপ আজ
কথা যে বলে না

ভালো যদি বাসো তুমি আমাকে
ছুটে চলে আসো না।
দুরে কোথাও আছি বসে
হাত দুটো দাও বারিয়ে। । ঐ
নীল আচল নির্মল হাওয়া
এ লগনেও এলেনা

অচেতন থাকে এমন নিষ্প্রাণ যত ভাবনা
ভালো যদি বাসো তুমি আমাকে
ছুটে চলে আসো না

দুরে কোথাও আছি বসে
হাত দুটো দাও বারিয়ে
বিরহ ছুতে চায় মনের দুয়ার

দুচোখ নির্বাক আসো না ছুটে। ঐ ঐ
গান টা গাওয়া শেষ হলে রাজু আর শম্মি মিলে হাত তালি দিলো আমিও দিলাম কিন্তু বুকের মাঝে অনেক কষ্ট অনুভব হতে লাগলো আমার। কারন আমি জানি এই গানটা শ্রাবন আমার জন্যেই গেয়েছে।

গান শেষ হলে শ্রাবন অন্য দিকে ঘুরে চোখ মুছলো। এটা অন্য কেউ না দেখলেও আমার চোখ এরালো না।
তারপর সবার সাথে হেসে হেসে কথা বলে যার যার মতো শুতে চলে আসলাম।


পর্ব ২৬

ছাদে থেকে যারা যার মতো ঘুমোতে চলে আসলাম।
রুমে আসার পর রাজু হঠাৎ করে বলে উঠলো

~ বৃষ্টি শ্রাবন ভাইয়া অনেক সুন্দর গান গায় তাই না? সত্যিই ওর কন্ঠ অনেক সুন্দর।
রাজুর কথার উত্তরে আমি কিছু বললাম, না শুধু মাথা নেরে সায় দিলাম।

ফজরের নামাজের সময় উঠে আমি ফ্রেস হয়ে ওজু করে এসে রাজুকে ডাক দুলাম নামাজের জন্যে। রাজু উঠে নামাজ পরতে বের হলো তখনি দেখে শ্রাবন ভাইও নামাজে যাচ্ছে। তাই রাজুও শ্রাবন ভাই এর সাথে নামাজে গেলো।

ওরা চলে যাওয়ার পর আমিও নামাজ পড়ে নিলাম। তারপর শম্মির কাছে গেলাম। গিয়ে দেখি শম্মি নামাজ পড়ে পড়তে বসেছে। আমি শম্মির কাছে গিয়ে অনেক রকম গল্প করলাম। কথা বলার এক পর্যায়ে শম্মি বললো,
~ জানো বৃষ্টি আপু শ্রাবন ভাইয়া না গতবার তুমি আর খালামনি চলে যাওয়ার কিছু দিন পর থেকে অনেক আনন্দে থাকতো।

সব সময় হাসি খুশি থাকতো। কিন্তু কিছু দিন হলো ওর যেনো কি হয়েছে। সব সময় মন মরা হয়ে থাকে কারো সাথে প্রয়োজনের বেশি কথা বলে না। আর সেদিন রাতে তো আমি ভাইয়া কে কান্না করতেও দেখেছি। পরে যখন আমি জিগ্যেস করি তখন ভাইয়া বলে চোখে নাকি পোকা গিয়েছিল। কিন্তু আমার মনে হয় ভাইয়া আমায় মিথ্যে বলেছে। নিশ্চয়ই আমার ভাইয়াটার কিছু হয়েছে। ওর এমন অবস্থা দেখে আমার ভালো লাগে না কিছু।

শম্মির কথা গুলো শুনে আমার বুকের মাঝে যেনো পাথর চাপার মতো কষ্ট হতে লাগলো। আমি জানি আমার জন্যেই শ্রাবনের এই পরিবর্তন। আমাকে যে করেই হোক কিছু একটা করতে হবে।

তারপর আমি শম্মিকে নিয়ে রুম থেকে বাইরে এলাম। সকাল ৮, ০০ টা বেজে গেলো কিন্তু রাজু বা শ্রাবন কারো দেখাই মিলছে না। অন্যদিন তো ৬, ০০ টার মধ্যেই নামাজ শেষ করে ফিরে আসে তাহলে আজ এতো দেরি করছে কেনো?

আমার যেনো কেমন ভয় হতে লাগলো। মনটা অনেক ছটফট করছে। ওদের কেউ ফোনও নিয়ে যায় নি যে ফোন করে জানবো কোথায় আছে। চিন্তায় আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে। ঘড়ির কাটাও যেনো থেমে আছে।
তারপর সকাল ৯, ৩৫ মিনিটে রাজু আর শ্রাবন বাসায় ফিরলো। দুজনের মুখেই দুষ্টু হাসি। আমি রাজুর কাছে গিয়ে জিগ্যেস করলাম,

~ কোথায় গিয়ে ছিলেন আপনারা। এতো দেরি হলো কেনো? প্রতিদিন তো সকাল ৬, ০০ টার মাঝেই চলে আসেন। তাহলে আজ কই গেছিলেন?
আমার কথা শুনে রাজু হো হো করে হেসে দিয়ে বললো,

~ বৃষ্টি এসব কথা আমায় না জিগ্যেস করে আমার শালাবাবুকে জিগ্যেস করো। আমার নিয়ে ও ওর ভবিষ্যত নায়িকা কে দেখাতে নিয়ে গেছিলো। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো এতক্ষণ থাকার পরেও বেচারা শালাবাবু একটি বারও হবু বৌটাকে দেখতে পারলো না।
আমি রাজুর কথা শুনে কিছুই বুঝতে পারছি না। শুধু হা করে তাকিয়ে আছি। আমার এমন ভাবে তাকিয়ে থাকা দেখে রাজু বললো,

~ ঐ বৃষ্টি তুমি আমার দিকে এ ভাবে তাকিয়ে আছো ক্যান হুমম। শ্রাবন ভাই আমায় নিয়ে গিয়েছিল পুরো এলাকাটা ঘুরে দেখতে সাথে আমাদের হবু ভাবিকেও দেখাতে। কিন্তু ভাবিকেতো আর দেখলাম না তবে এলাকার জায়গা গুলো অনেক সুন্দর।

শম্মি আমায় পিছন থেকে ডেকে বললো,
~ আপু দুলাভাইকে নিয়ে খেতে আসো। অনেক বেলা হয়েছে।

শম্মির কথা শুনে আমি আর রাজু দুজনেই খেতে বসলাম। খালামনি পরিবেশন করছেন খাবার। খাওয়ার ফাকে শ্রাবনের দিকে তাকিয়ে দেখি শ্রাবন ফোনে কি যেনো করছে আর মুচকি মুচকি হাসছে। এটা দেখে কেনো জানি না আমার ভিতরে ভিতরে অনেক রাগ হতে লাগলো। কিন্তু প্রকাশ করলাম না।

খাওয়া দাওয়া শেষ করে সবাই উঠে গেলো। রাজুও রুমে চলে গেলো। শ্রাবন ভাইও চলে গেলো। কিন্তু ভুল করে ওর ফোনটা টেবিলের ওপর ফেলে গেলো। আমি এদিক সেদিক তাকিয়ে ফোনটা নিলাম। তারপর খুজতে খুজতে দেখি একটা নাম্বার “জান” লেখা দিয়ে সেভ করা। সেই নাম্বার থেকে অসংখ্য sms রয়েছে কাল থেকে আজ প্রর্যন্ত প্রায় ৫০ টা sms।
আমি দুটা sms পড়লাম তাতে লেখা

~ হাই জানু। তুমি জানো সেদিন প্রথম তোমায় বিয়ে বাড়িতে দেখেই আমি তোমার ওপর ফিদা হয়ে যাই। তবে আমি প্রেম করবো না তোমার সাথে যত তারাতারি সম্ভব বিয়ে করো আমায়। আমি জানি তুমিও আমায় ভালো বাসো।

এই sms টা ঐ নাম্বার থেকে এসেছে। আর এটার বিপরীতে শ্রাবন ভাই sms করছে
~ ওহ জান আমার আমিও তোমায় যত তারাতারি সম্ভব বিয়ে করতে চাই। সমনে মাসে আব্বু দেশে ফিরলেই বিয়ের প্রস্তাব পাঠাবো তোমার জন্যে ইনশাআল্লাহ। আমার বৌ হওয়ার জন্যে রেডি থাকো।
এই sms টা পড়ে আরেক টা sms বের করতে যাবো ঠিক তখনি শ্রাবন এসে আমার হাত থেকে ফোনটা কেরে নিয়ে বললো,

~ ঐ তোর সাহস তো কম না তুই আমার ফোন না বলে ধরছিস ক্যান? জানিস না কারো কোনো কিছু নেওয়ার বা দেখার আগে তার অনুমতি নিতে হয়। (কথা গুলো শ্রাবণ ভাই খুব রেগেই বললো, )
তারপর আমার হাস থেকে ফোনটা কেরে নিয়ে চলে গেলো। আমি শুধু একটা কথাই বললাম, “sorry” আমার কথার কোনো উত্তর দিলো না শ্রাবন।

কেনো জানি না শ্রাবনের এমন ব্যাবহারে আমার অনেক কষ্ট হতে লাগলো। সামান্য ফোনটা ধরেছি বলে ও এই ভাবে আমার সাথে কথা বলতে পারলো কি করে?

এভাবেই কেটে গেলো ৭ টা দিন। এই সাত দিনে শ্রাবন ভাই আমার সাথে ভালো করে কথা বলেনি। সব সময় হাসি খুশি থেকেছে ফোন নিয়ে। আর আমার সাথে খারাপ আচরণ করেছে। আমায় সব সময় এভয়েড করেছে। কিন্তু রাজুর সাথে খুব মিল হয়েছে ওর।

আজ আমরা বাসায় ফিরবো খালামনিদের বাড়ি থেকে। তাই সব কিছু গুছিয়ে নিয়েছি। আমি জানি আজ হয়তো আমরা যাওয়ার আগেই শ্রাবন ভাইয়া কোথাও চলে যাবে। কারন আমার চলে যাওয়া ও যে সহ্য করতে পারে না তাই।

কিন্তু আমার সব কিছু ভুল প্রমান করে শ্রাবন বাসাতেই থাকলো কোথাও গেলো না। আর বেশ হাসি মুখেই থাকলো যেনো ওর একটুও খারাপ লাগছে না আমি চলে যাবো জেনেও।

তারপর আমরা সকলের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ির পথে রওনা হোলাম। শ্রাবন ভাই আমাদের বাসে তুলে দিলো। কি সুন্দর হাসি খুশি মুখ করে। আমার শ্রাবন ভাই এর এমন আচরন দেখে খুব কষ্ট লাগছে।

কেনো ও বদলে গেলো? তাহলে কি ও সত্যিই আমায় ভুলে গেছে আর ঐ মেয়েটাকে ভালবেসেছে?
এটা হলে তো আমার খুশি হওয়ার কথা কিন্তু আমি কেনো জানি না খুশি হতে পারছি না।
তারপর বিকেলের দিকে আমরা বাসায় এসে পৌঁছালাম।

লেখা – সোনালী

চলবে

(পাঠক আপনাদের ভালোলাগার উদ্দেশ্যেই প্রতিনিয়ত আমাদের লেখা। আপনাদের একটি শেয়ার আমাদের লেখার স্পৃহা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আমাদের এই পর্বের “এ কেমন ভালোবাসা – New bangla love story” গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম। ধন্যবাদ।)

আরো পড়ূন – এ কেমন ভালোবাসা (২য় খণ্ড) – Bangla Love Story Status

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *