আমার তুমি আছো (সিজন ১: ১ম খণ্ড) – Abegi moner kichu kotha

আমার তুমি আছো – Abegi moner kichu kotha: আমি আনন্দে আত্মহারা হয়ে বিছানা থেকে নেমে পিয়াস ভাইয়ার সামনে দাঁড়িয়ে কিছু বলতে গেলেই পিয়াস ভাইয়া আমার গালে সজোরে থাপ্পড় মারে। ওই মহিলা আমাকে মারার কারণ জানতে চাইছে কিন্তু পিয়াস ভাইয়া আমাকে একের পর এক থাপ্পড় মেরেই যাচ্ছে। একসময় আমি লুটিয়ে পড়লে পিয়াস ভাইয়া শান্ত হয়।


পর্ব ১

পিয়াস ভাইয়া আমার হাত ধরে টেনে এনে খালাম্মার পায়ের কাছে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো। খালাম্মা আমায় ধরে তুললো। আমি খালাম্মাকে দেখে আরো বেশি ফুঁপিয়ে কেঁদে ফেললাম।

~ এটা কি ধরনের অসভ্যতা পিয়াস? সদ্য বিয়ে করে আনা মেয়ের সাথে কেউ এমন ব্যবহার করে না কি? তোমার বুদ্ধি কি সব লোপ পেয়েছে?
~ তুমি বউ চেয়েছিলে না? এই মেয়েকে তো বউ করে আনতে চেয়েছিলে এই বাড়ির। সেলিব্রেট করো তোমার আশা তো পূরণ হয়েছে।

~ কি আবোল তাবোল বলছো তুমি? ও শুধু এই বাড়ির বউ না তোমার স্ত্রী। ঠিক ভাবে ব্যবহার করো?
~ মা প্লিজ, তুমি চেয়েছো এই মেয়েটা তোমার বাড়ির বউ হবে। তাই তোমার কথা রাখার জন্যই আমি এই বিয়ে করেছি। আর স্ত্রীর কথা বলছো! আমি তো ও কে স্ত্রী হিসেবে মানিই না। তাই এই নিয়ে তুমি আর একটা কথাও বলবে না।

খালাম্মা কিছু বলার আগেই পিয়াস ভাইয়া রুম থেকে বেরিয়ে যায়। আমি খালাম্মাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকি। খালাম্মা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে আমার মুখ দু হাতে তুলে ধরেন।
~ ওসব কিছু না। তুই তো পিয়াসকে জানিস। ও রেগে গেলে ওর মাথার ঠিক থাকে না। কি বলতে কি বলে ফেলে। তুই কিছু ভাববিনা সব ঠিক হয়ে যাবে। দেখি মেয়েটা আমার কেঁদে কেঁদে চোখ মুখ একদম ফুলিয়ে ফেলেছে।

ওয়ার ড্রপ থেকে একটা গাঢ় সবুজ রং এর শাড়ি আমার হাতে ধরিয়ে দিল।
~ যা তো যা গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নে তাড়াতাড়ি। অনেক রাত হয়েছে। আমি সবার খাওয়ার ব্যবস্থা করি।

আমি আলো। কিছুক্ষন আগে আমার বিয়ে হয়। আজকে সকালেও আমি জানতে পারি নি আমার আজ বিয়ে। প্রতিদিনের মতো আজও আমি ভার্সিটি গিয়েছিলাম। সারাদিন ভালোই কেটেছিলো। তবে একটু অবাক হয়েছিলাম কারণ আজকে ভার্সিটি যাওয়ার পথে আর বাড়িতে ফেরার পথে পিয়াস ভাইয়া কে কোথাও আমি দেখিনি। বাড়িতে যখন আসলাম তখন আমাকে কিছু না জানিয়েই আমার ছোট আম্মু আমাকে শাড়ি গহনা পরিয়ে দিলেন। আমাকে হাত ধরে নিয়ে চলে গেলেন।

যেখানে নিয়ে গেলেন সেখানে দেখলাম জায়গাটা কতো সুন্দর ফুল দিয়ে সাজানো চারিদিকে আলোর রোশনাই। আর এক কোণে আমার ছোট আব্বু এক গাল হাসি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে জানালো হলো আজ আমার বিয়ে হবে। খুব রাগ হলো আমাকে না জানিয়ে কেনো বিয়ে দিচ্ছে। ছোট আম্মু যখন জানালো আমার বিয়ে পিয়াস ভাইয়ার সাথে হচ্ছে তখন নিজেকে শান্ত করলাম।

কারণ আমার আব্বু আম্মু বেঁচে থাকলে আমাকে এই পিয়াস ভাইয়ার সাথেই বিয়ে দিতো। পিয়াস ভাইয়ার আম্মু আর আমার আম্মু বন্ধু হলেও ওদের সম্পর্ক বোনের মতো ছিলো। ছোটবেলায় আমি তো পিয়াস ভাইয়ার বাড়িতেই থাকতাম। আমি জানি না আমি পিয়াস ভাইয়ার সাথে সংসার করতে পারবো কি না!
আমি খালাম্মার দেওয়া শাড়িটা পড়ে নিলাম। চুল গুলো ছেড়ে মুখে হালকা মেকাপ দিয়ে গহনা গুলো পরে নিলাম। দরজায় তিনটে টোকা পড়তে দেখি ভাবী আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে। ভাবী এসে আমার চুলগুলো খোঁপা করে দিয়ে বেলীফুলের মালা দিয়ে দিলো।

~ বাহ.. আমাদের আলোকে তো আজ ভীষণ মিষ্টি লাগছে। পিয়াস তো মনে হয় তোমার দিক থেকে চোখ ফেরাতেই পারবে না।
ভাবী আমার মুখটা ধরে বললো। আমি ভাবীর থেকে সরে গেলাম।
~ কি যে বলো না ভাবী।
~ থাক হয়েছে আর লজ্জা পেতে হবে না। আসো খেতে হবে তো না কি।

আমি আর কিছু না বলে ভাবীর পিছু পিছু ডাইনিং টেবিলের কাছে গেলাম। পিয়াস ভাইয়াকে দেখলাম খেয়ে উঠে চলে গেলো। এই বাড়ির সব কিছুর সাথে আমার পরিচিত থাকলেও আজ কেমন জানি অচেনা অচেনা লাগছে। হয়তো আজ থেকে আমি এই বাড়ির বউ তাই।
~ আলো, কি ভাবছিস মা? আয় বস?

খালাম্মা আমাকে চেয়ারে বসালেন এবং নিজেও বসলেন। আমার পাশেই ভাবী বসলো। খাওয়া শেষে ভাবী আমাকে পিয়াস ভাইয়ার রুমে দিয়ে গেলো। আগে যখন এই বাড়িতে আসতাম তখন পিয়াস ভাইয়ার রুমটাতেই সারাক্ষণ থাকতাম। এই রুমটাকে নিজের মনের মতো করে সাজাতাম। পিয়াস ভাইয়া মাঝে মাঝে রেগে যেতো কারণ তার অনেক দরকারী কাগজ পত্র আমি এলোমেলো করে দিতাম। তখন বকা দিলেও একটুও ভয় পেতাম না। কিন্তু আজ কেমন যেনো ভয় লাগছে, পিয়াস ভাইয়া কেও আর এই রুম টা কেও। ~ কি রে তুই? তুই এখানে কি করছিস?

হঠাৎ এমন গম্ভীর আওয়াজে আমি দরজার দিকে তাকাই। পিয়াস ভাইয়া দরজা লক করে দিয়ে আমার দিকে এগিয়ে আসছে। আমি বেশ ভয় পেয়ে যাই। দ্রুত বেড থেকে নেমে দাঁড়াই। পিয়াস ভাইয়া পুনরায় ঝাঁঝিয়ে ওঠে।
~ কি হল শুনতে পাচ্ছিস না তোকে কি জিজ্ঞাসা করছি আমি?

~ জ্বী ভাইয়া.. আমাকে তো ভাবী দিয়ে গেলো। আর তাছাড়া আমি আপনার রুম ছাড়া কোথায় থাকবো!
~ তুই জাহান্নামে থাক। আমার রুম ছাড়া বাড়িতে আর কোন রুম নেই হুম? আগে যেই রুমে থাকতিস সেখানে গিয়েই থাকবি বুঝেছিস।

~ কিন্তু ভা.. ই.. ভাইয়া আমা.. দের তো বিয়ে হয়েছে। আমরা তো সা.. স্বামী.. স্ত্রী, এক রুমেই তো আমরা থাক.. বো।
মাথা নিচু করে চোখ বন্ধ করে ভয়ে ভয়ে কথাগুলো বলে পিয়াস ভাইয়ার দিকে তাকালাম। পিয়াস ভাইয়া আমার হাত টা কে পেছনে মুচড়ে ধরলো।
~ ও বুঝলাম, তুই অধিকার ফলাতে এসেছিস তাই তো! স্ত্রীর অধিকার। ভালো করে মাথায় ঢুকিয়ে নে আমি তোকে কখনো স্ত্রীর অধিকার দেবো না।

আমি নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে পিয়াস ভাইয়াকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দি। চিৎকার করে বললাম,
~ কি শুধু তখন থেকে বলে চলেছেন আমাকে স্ত্রীর অধিকার দেবেন না? আমাকে স্ত্রী হিসেবে মানেন না? যদি স্ত্রীর অধিকার নাই দেবেন তাহলে বিয়ে করেছেন কেন? বলুন.. বলুন আমার জীবনটা কেন নষ্ট করলেন আপনি?
পিয়াস ভাইয়া আমার গালে সজোরে থাপ্পড় মারলে আমি পড়ে যেতে গেলেই আমার হাতটা ধরে নেয়। পিছনে মুচড়ে ধরে আমার গাল দুটো চেপে ধরে।

~ হুসসস, আস্তে গলা নামিয়ে কথা বল আলো। জানিস না আমার সাথে আমার মা বাবা ছাড়া আর কেউ উঁচু গলায় কথা বলার সাহস পায়না। তোর এতো সাহস আসে কোত্থেকে হুম।
~ আমাকে ছাড়ো পিয়াস ভাইয়া আমার ব্যাথা লাগছে।

~ লাগুক ব্যাথা, তোর আমি বেশি ব্যাথা আমি পেয়েছি এবং এখনো পাচ্ছি। তুই কি করে ভাবলি শুধু মা বললো বলেই তোকে আমি বিয়ে করেছি! না রে আলো, তুই যদি ওটাই ভাবিস তাহলে খুব ভুল ভাবছিস।

~ মা, ন, মানে…
~ হা হা হা, তুই আমার কাছে একটা রাস্তার মেয়ে ছাড়া আর কিছুই না। তুই যা কিছু করেছিস সব কিছুর শাস্তি আমি তোকে দেবো। তুই ভাবতেও পারছিস না আলো তোর জীবনে কি ঘটতে চলেছে! পিয়াস ভাইয়া আমাকে ছেড়ে দিলে আমি ফ্লোরে বসে পড়ি। চোখের কোণ বেয়ে যে নোনা পানি গড়িয়ে পড়লো তার কয়েকটা ফোঁটা গুনে নিলাম। নিজের মুখে একবার বলে নিলাম।
~ আমি রাস্তার মেয়ে পিয়াস ভাইয়া! তুমি আমাকে এই কথা বলতে পারলে?

আমি উঠে দাঁড়িয়ে পিয়াস ভাইয়ার মুখোমুখি হলাম।
~ আমি যদি রাস্তার মেয়ে হয়ে থাকি তাহলে তুমি আমাকে কেন বিয়ে করলে? শাস্তি দিতে চাও তো আমায় এমনিই শাস্তি দিতে পারতে। পরিবার এর সবাই ভাবছে আমরা সুখি দম্পতি হবো কিন্তু তারা তো জানে না তুমি আমার জীবন নষ্ট করতে চাও। কেনো পিয়াস ভাইয়া কেনো? সেদিন কি সব দোষ আমার ছিলো বলো?

~ এই শোন আমি তার কৈফিয়ত তোকে দেবো না। আর জীবন কোথায় নষ্ট করলাম তোর! তুই তো নষ্ট হয়েই গেছিস।
~ আমি নষ্টা তো, হ্যা তাই আমি নষ্টা মেয়ে। আর আমার এই নষ্ট হয়ে যাওয়ায় কারণ তুমি।

পিয়াস ভাইয়া আমার গালে সজোরে থাপ্পড় মারলো। আমি ফ্লোরে পড়ে গেলাম। পিয়াস ভাইয়া আমাকে টপকেই চলে গেল। আমার চোখ বেয়ে পানি ঝাঁপাতে লাগলো। ইচ্ছা করছে নিজেকে মাটির সাথে মিশিয়ে নি। পিয়াস ভাইয়া তাহলে এতোদিন ধরে আমার সম্পর্কে এইসব ভেবে এসেছে। আমাকে শাস্তি দিতে চায়!


পর্ব ২

সকালের রোদ চোখে মুখে এসে পড়ায় আমার ঘুমটা ভেঙ্গে যায়। আমি উঠে বসি কিন্তু আমি ফ্লোরে বসে আছি কেন? মনে পড়ে যায় আমার কাল রাতের ঘটনা। চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে আসে। রুমে কোথাও পিয়াস ভাইয়াকে দেখতে পাচ্ছি না। রুমের বাইরে বেরিয়ে এলাম। এক পা এগিয়ে আসলে শুনতে পাই খালাম্মা আর পিয়াস ভাইয়ার গলা।

~ মা প্লিজ এবার আমাকে রেহাই দাও তুমি। বিয়ে করতে বলেছো করেছি। আর কোন নাটক আমি করতে পারবো না।
~ এটা কি কথা বলছিস তুই বাবা। আলো যে এই বাড়ির বউ। বৌভাতের অনুষ্ঠান তো করা লাগবে। দেখ এতোদিন ধরে আমাদের আত্মীয়রা আলোকে আমার মেয়ে হিসেবে জেনে এসেছে। এখন তো ওর আর একটা পরিচিয় হয়েছে সবাইকে জানাতে হবে তো।
~ তুমি যা ইচ্ছা করো। তবে এই বাড়িতে কোন রিসেপশান পার্টি হবে না। আমি কাউকে জানাতে চাই না ও এ বাড়ির বউ।
~ আমি বুঝতেছিনা তোর আলোর প্রতি এতো রাগ কিসের?

বুঝতেই পারছি খালাম্মা আর পিয়াস ভাইয়ার সাথে ঝামেলা হচ্ছে। আমি দ্রুত পায়ে নীচে এলাম।
~ থাক না খালাম্মা। বৌভাতের অনুষ্ঠান করা লাগবে না। তাছাড়া পিয়াস ভাইয়া যখন চায় না তখন..।
~ আলো মা তুইও এমন কথা বলছিস? আরে ও তো পাগল হয়ে গেছে ওর মাথার ঠিক আছে না কি। খালাম্মা আমার মুখটা ধরে বাম দিকের গালে আর ঠোঁটের কোণে হাত দিলেন। আমার ব্যাথা লাগলেও আমি সহ্য করে মুচকি হাসি দিই। খালাম্মার হাত দুটো নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে নি।

~ থাক না খালাম্মা পিয়াস ভাইয়াকে একটু সময় দাও।
খালাম্মার চোখের কোণে একটু পাণি চিকচিক করছে। পিয়াস ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,
~ পিয়াস তুমি এতোটা নীচে নেমে গেছো! বিয়ে করে আনতে না আনতেই তুমি ফুলের মতো মেয়েটার গায়ে হাত তুললে? আমার তো তোমাকে..।

~ না খালাম্মা তুমি ভুল করছো তিয়াস ভাইয়া আমার গায়ে হাত তোলে নি। আমি তো এইসব গহনা পড়ে শুয়ে ছিলাম। হাতের এই চুড়িটা দেখছো এর মধ্যে লেগে গালটা কেটে গেছে হয়তো। পিয়াস ভাইয়া কিছু করে নি।

আমার কথা শুনে খালাম্মা বিশ্বাস করলো কি না জানি না। তবে পিয়াস ভাইয়াকে আর কিছু বললো না। পিয়াস ভাইয়া বোধহয় একটু স্বস্তি পেলো। খালাম্মা আর কিছু না বলে চলে গেলো। আমিও রুমে চলে এলাম তবে পিয়াস ভাইয়ার রুমে না আগে যেখানে থাকতাম সেই রুমে। রুমে এসে দেখলাম রুমটা বেশ যত্ন করে সাজিয়ে রেখেছে। এটা যে খালাম্মার কাজ তা বুঝলাম। আমি বেশি কিছু না ভেবে ওয়াশরুমে চলে এলাম। ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এসে ওয়ার ড্রপ খুলে দেখলাম থ্রী পিছ এ ভর্তি।

আগে যখন এখানে থাকতাম তখন বাবাই মানে পিয়াস ভাইয়ার বাবা আমার জন্য নিয়ে এসে দিতেন। আমি এখন তার মধ্যে থেকে একটা গাঢ় নীল রং এর থ্রী পিছ পরে নিলাম। বাম সাইডের ড্রয়ারটা খুলতেই আমার মেকাপের জিনিসপত্র গুলো পেয়ে গেলাম। চোখে মোটা করে কাজল লাগালাম। গালটা দেখে নিজেরি ভালো লাগছে না তাই ওই জায়গাটা একটু কনসিলার দিয়ে ঢেকে দিলাম। ইসস যদি এই কনসিলার দিয়ে মনের দাগটা ঢাকা যেতো! চুলগুলো এলো করে কানে ঝুমকো পড়লাম। হাত ভর্তি নীল কাঁচের চুড়ি পড়লাম। এই সেই চুড়ি পিয়াস ভাইয়া আমাকে পরিয়ে দিয়ে কপালের মাঝখানে ভালোবাসার পরশ এঁকে দিয়েছিলো। এখন ভাবলে গায়ে কাঁটা দেয়।

নীচে নামতেই দেখি ভাবী নাস্তার প্লেট রেডী করছে। আমি ভাবীর গলা পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলাম আগের মতোই। ভাবী আমার হাত ধরে সামনে নিলো আমি হেসে ভাবীর গাল টিপে ধরলাম।
~ ভাবী গুড মর্নিং,
~ কি ব্যাপার হুম এতো খুশি দেখছি।

~ খুশি তো আমি খুব খুশি। এই দেখো এই চুড়ি গুলো আমাকে পিয়াস ভাইয়া দিয়েছিল।
~ ওহ তাই সে তো জানি। কিন্তু কাল কি দিয়েছে বলো বলো!
~ কাল কি দিবে আবার!
~ কেনো ভালোবাসা দেয়নি?

~ উফ ভাবী তুমি না একটা যা তা।
আমি আর ভাবী এইসব কথা বলে নিজেদের মধ্যে হাসাহাসি করলে খালাম্মা দেখে খুশি হয়। খালাম্মা আমার হাতে কফির কাপ ধরিয়ে দেয়।
~ আচ্ছা হাসি থামা এবার। যা এটা নিয়ে পিয়াসকে দিয়ে আয়।
~ ঠিক আছে খালাম্মা।

~ আরে সাবধানে যা ছুটিস না পড়ে যাবি তো। একছুটে চলে এলাম পিয়াস ভাইয়ার রুমে। পিয়াস ভাইয়া তখন চুলে চিরুনি বুলাচ্ছিল।
~ ভাইয়া এইনাও তোমার কফি।
আমি কফির কাপটা নামিয়ে রেখে পিয়াস ভাইয়ার তোয়ালেটা বেডের ওপর রাখা দেখে সেটাকে নিয়ে মেলার জন্য হাতে তুলে নিয়ে বলি।
~ ওহ তোমাকে কতোবার বলছি এই ভিজে তোয়ালে নিয়ে বেডের ওপর রাখবে না। দেখো বেড কফারটা কেমন স্যাঁতস্যাত করছে। তুমি তো আমার কোন কথাই শোন না।

পিয়াস ভাইয়া আমাকে তার দিকে ঘুরিয়ে নিলো। অগ্নিদৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি পিয়াস ভাইয়ার চোখে চোখ রেখে একটা ঢোক গিললাম। এই রে আমি কি করলাম এটা। আমি তো ভুলেই গেছিলাম এখন তো আমাকে পিয়াস ভাইয়া পচ্ছন্দ করে না। আমার হাত বেয়ে তরল কিছু গড়িয়ে পড়ছে আমি বুঝতে পারছি। কানে আওয়াজ আসছে আমার কাঁচের চুড়ির মটমট আওয়াজ। আমি শুধু পিয়াস ভাইয়ার চোখের দিকে তাকিয়ে আছি।

~ তোকে বলেছি না তুই আমার সাথে স্ত্রীর অধিকার ফলাতে আসবি না। আবার ভুল করছিস আলো। তুই কি ভেবেছিস তুই মা কে ওই মিথ্যা কথা বলে আমাকে বাঁচিয়েছিস বলে আমি তোকে মেনে নেবো! তোর কাছে ঋণী হয়ে থাকবো তাহলে ভুল ভাবছিস!
আমার দুটো হাত সামনে নিয়ে এলে আমি হাত দুটো দেখে ভয় পেয়ে যাই দুটো হাতে একটাও চুড়ি নেই। মাথাটা ঝিমঝিম করছে, ছোট থেকে রক্ত দেখলেই আমার মাথা ঘোরে। পিয়াস ভাইয়া গরম কফিটা আমার হাতে ঢেলে দেয়। আমি চিৎকার করে উঠলে আমার মুখটা চেপে ধরে।

~ চুপপ, চিৎকার করিস না আলো। মনে আছে ছোটবেলায় একবার আমার হাত থেকে কাঁচের গ্লাস পড়ে ভেঙ্গে গিয়েছিলো। আর তাতে তোর পা কাঁচের টুকরোয় কেটে গিয়েছিলো। আমি কিন্তু ইচ্ছা করে করিনি তা সত্ত্বেও মা আমাকে মেরেছিল আর তুই হাসছিলি।
পিয়াস ভাইয়া এগুলো কি বলছে। আমার মাথায় তো কিছুই ঢুকছে না।

~ কি বলছেন আপনি পাগল হয়ে গেছেন না কি?
~ হুম আমি পাগল হয়ে গেছি এখন যাবি তো গিয়ে আমার মাকে বলবি, খালাম্মা তোমার ছেলে আমার হাত কেটে দিয়েছে। অবশ্য তোর মতো মেয়েরা তো এইসব ভালোই পারে।

পিয়াস ভাইয়া আমাকে ছেড়ে দিয়ে চলে যায়। আমি মেঝেতে বসে পড়ি। হাতের যন্ত্রনার থেকেও বুকের যন্ত্রণাটা যেনো বেশি হচ্ছে। পিয়াস ভাইয়া আসলে ঠিক কি করতে চাইছে আমার সাথে?

পর্ব ৩

আচ্ছা এই কি সেই পিয়াস ভাইয়া যে কিনা আমার একটু কিছু হলেই বাড়ি মাথায় করতো? হ্যা সেবার যখন আমার পা কেটেগিয়েছিল তখন এই পিয়াস ভাইয়া সারা রাত আমার পা ধরে বসে কেঁদেছিলো। আর আজ সে আমাকে এতোটা কষ্ট দিচ্ছে। হাত দুটো দেখে একটু মায়া হলো না পিয়াস ভাইয়া তোমার? তুমি তো জানো আমার শরীর থেকে রক্ত বের হলে আমি কেমন দূর্বল হয়ে যাই। এতো যন্ত্রণা আমি সহ্য করতে পারি না গো। আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করি। ওয়াশরুমে গিয়ে হাত দুটো পানিতে ডুবিয়ে রাখলাম। আজ আমার চোখের পানিটাও বাঁধ মানছে না।

~ আলো এই আলো কি হয়েছে রে? পিয়াস ওইভাবে চলে গেলো কেন?
আমি ভাবীর গলা শুনে চোখে মুখে পানি ছিটিয়ে ট্যাপ বন্ধ করে তোয়ালে নিয়ে বেরিয়ে এলাম।
~ আলো সবকিছু ঠিক আছে তো? আর এইখানে কফি পড়ে আছে কেন! তোর চুড়ি গুলো এইভাবে ভাঙ্গলো কে!
আমি কি বলবো ভাবীকে বুঝতে পারছি না। কি করে বলি যে পিয়াস ভাইয়া এইসব করেছে। আমি ভাবীকে ওই জায়গাটা থেকে একটু পিছিয়ে নিয়ে আসি।

~ ও, তে, মন, কিছু না ভাবী, আ, সল, আসলে কফিটা পড়ে গেলো তো আর এই চুড়ি গুলো, চুড়ি গুলো,।
~ থাক আলো আর কিছু বলিস না আমি সব বুঝতে পারছি। তুই যখন সত্যিটা বলবিনা তখন আর বানিয়ে বানিয়ে কিছু বলিস না।
আমি ভাবীর কথা শুনে ভাবীকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলাম। ভাবী আমার মাথায় হাত রাখলেন।

~ আমি জানি না আলো পিয়াস তোর সাথে কেন এমন করছে? আমি যখন প্রথম এই বাড়ির বউ হয়ে এসেছিলাম তখন তোর সাথে পিয়াসের সম্পর্ক কতো অন্যরকম ছিল। কতো কেয়ার করতো তোর। আর এখন বিশেষ করে লাস্ট তিনটা মাস ওর কি হয়েছে আমি কিছুই বুঝতেছিনা।
~ আমি ও কিছু জানি না ভাবী কিছু জানি না। পিয়াস ভাইয়া তো আমাকে সহ্য করতেই পারছে না এখন। ~ আচ্ছা আর কাঁদিস না। নীচে চল নাস্তা করবি।
~ ভাবী, ভাবী তুমি আমাকে কথা দাও এখনের ব্যপারটা তুমি খালাম্মাকে কিছু জানাবে না বলো?

~ ঠিক আছে জানাবো না।
ভাবীর সাথে নীচে আসলাম। আমাকে আর ভাবীকে দেখে খালাম্মা এগিয়ে এলেন।
~ কই ছিলি তোরা? আয় নাস্তা শুরু কর।
আমার হাত ধরে চেয়ারে বসালেন। আমার প্লেটে খাবার তুলে দিলেন।
~ এই নে আলো তোর পচ্ছন্দের ছিট রুটি বানিয়েছি।

আমি খালাম্মাকে দেখে হাসলাম। খালাম্মা আমার পাশে চেয়ার টেনে বসলো।
~ আজকে তোকে আমি নিজের হাতে খাওয়াবো।
~ হুম আলোকেই খাওয়াও আমি তো কেউ না।
ভাবী অভিমানের সুরে এভাবে বলাতে খালাম্মা মুচকি হাসি দিয়ে আমাদের দুজনকেই খাওয়াচ্ছেন।

~ খুব খারাপ লাগছে রে কোন অনুষ্ঠান করতে পারলাম না।
~ থাক না খালাম্মা পিয়াস ভাইয়াকে তুমি নয় পরে বুঝিয়ে বলবে।
~ হ্যা মা আলো ঠিক কথা বলেছে পরে পিয়াস এর সাথে আমরা কথা বলবো এ ব্যপার নিয়ে। আর তাছাড়া বাবা আর ওর বড়ো ভাইয়া ওনারা ফিরে আসুক তখন দেখবে আমরা সবাই মিলে বললে ও রাজী হয়ে যাবে।

~ হুম তাই হবে।
আমি বেশকিছুক্ষণ চুপ থাকলাম।
~ খালাম্মা আমি বলছিলাম কি যখন কোন অনুষ্ঠান হচ্ছে না, আমাকে ভার্সিটি যেতে দিবে?
মানে আমি চাইছি পড়াশোনা টা কমপ্লিট করতে। আর তাছাড়া আর এক মাস পর আমার ফাইনাল পরীক্ষা তাই..।
~ আলো তুই কি বলছিস। তুই পড়াশোনা করবি তাতে আমি অনুমতি দেওয়ার কে! আলো লেখাপড়া নিয়ে আমি কোন আপোষ করবো না তুই যা।
খালাম্মার কথা শুনে আমি তো আকাশের চাঁদ হাতে পেলাম। খালাম্মাকে জড়িয়ে ধরলাম।

~ ইউ আর সুপার খালাম্মা। আমি তাহলে আসছি।
একছুটে রুমে এসে আমার ব্যাগে পেন খাতা ঢুকিয়ে নিলাম। আয়নায় নিজেকে দেখে নিলাম। সব কিছু পারফেক্ট। খালাম্মা যাওয়ার সময় গাড়ি নিয়ে যেতে বলছিলেন কিন্তু আমি না করে দিলাম। কারণ আমার রিকশায় করে ভার্সিটি যেতে বেশ লাগে।
ভার্সিটি তে আসতেই আমার বান্ধবী তানিয়া আমার দিকে এগিয়ে এলো। হালকা হাসি দিয়ে জড়িয়ে ধরলো।

~ আমি খুব খুশি শুনলাম কাল না কি পিয়াস ভাইয়ার সাথে তোর বিয়ে হয়েছে? আমি তো আজকে তোকে ডাকতে গিয়েছিলাম তখন শুনলাম। তুই খুব ভাগ্যবতীরে, যা কে ভালোবাসলি তাকেই পেলি।
~ আমাকে যে পিয়াস ভাইয়া ভালোবাসেনারে। তানিয়া আমাকে ছেড়ে দিয়ে হাত দুটো ধরলো।
~ কি বলছিস তুই? মজা করছিস না কি রে! পিয়াস ভাইয়া তোকে অনেক ভালোবাসে আমি জানি।
~ না রে ভালোবাসেনা। আমাকে পচ্ছন্দ করে না এখন আর। জানি না কেন!
~ আমি জানি তোকে ভালোবাসে বলেই বিয়ে করেছে। তুই কাঁদিস না সব ঠিক হয়ে যাবে।

তানিয়া আমাকে সান্ত্বনা দিয়ে নিয়ে এলো ক্লাস রুমে। রুমে আসতেই আমাদের দিকে নেহা এগিয়ে এলো।
~ কি রে আজ তুই ভার্সিটি আসলি যে? হিসাব মতো তোর তো আজকে বৌভাত!
আমি নেহাকে কি বলবো। কিছু তো একটা বলতে হবে। সত্যি টা তো বলা যাবে না। তানিয়াকে সব বলা গেলেও এই নেহাকে সব কিছু বলা যায় না। ও যেনো একটু অন্যরকম। আমি কিছুটা শান্ত হয়ে ধীর গলায় বললাম।
~ বড়ো ভাইয়া, বাবাই ওনারা তো এখন দেশে নাই তাই ওনারা ফিরলে অনুষ্ঠান হবে।
নেহা আমার কথা বিশ্বাস করলো কি না জানি না তবে মুখ ভঙ্গি করে বললো।

~ কি জানি ব্যপার বুঝলাম না। হুট করেই বিয়ে করলো। এখন আবার,।
~ আচ্ছা ছাড় না এসব, এক্ষুনি স্যার চলে আসবেন। বন্ধ কর এসব কথাবার্তা।
তানিয়া ধমকের স্বরে কথা গুলো নেহাকে বললে নেহা নিজের সিটে গিয়ে বসে। আমার পিঠে হাত রেখে আমাকে সান্ত্বনা দেয়।
স্যার এতোক্ষণ লেকচার দিয়ে গেলেও আমার কোনো কিছু কানে ঢুকছে না। আমি শুধু ভাবছি পিয়াস ভাইয়া কি করবে আমার সাথে! ভার্সিটির ক্লাস শেষ আমি আর তানিয়া হাঁটছি তখন নেহা এসে ঠোঁট বাঁকিয়ে বললো।

~ কি রে আলো তুই কি একাই যাবি না কি?
~ কেনো দেখতে পাচ্ছিস না আমি আছি তো!
~ আমি সেটা বলছিনা তানিয়া। পিয়াস ভাইয়ার সাথে ওর তো যাওয়া উচিৎ এখন। তোর সাথে তো সবসময় যায়।
~ পিয়াস ভাইয়ার কি আর কোন কাজ কাম নাই? বিয়ে করেছে বলে আলোকে নিয়ে সবসময় ঘুরবে।
তানিয়া আমার হাত ধরে নিয়ে নেহার সামনে থেকে বেরিয়ে আসলো।

~ এই নেহাটা না বড্ড পাজী, সবসময় এর না তার পিছনে কাঠি করে যাচ্ছে।
~ তানিয়া ছাড় না আমি নেহার কথা কিছু মনে করিনি তুই ছাড় না।
তানিয়া আর কিছু বলে না। আমরা দুজনে গল্প করতে করতে রাস্তার মোড়ে আসি। হঠাৎ তানিয়া একটা ছেলেকে দেখে আমাকে নিয়েই তার কাছে যায়।
~ আরে তানভীর তুই? তুই কবে আসলি?

~ আমি তো গত পরশু আসছি। তোদের বাড়িতেই যাচ্ছিলাম ভাবলাম তোকে পিক করে নিয়ে এটসাথে চলে যাবো। ~ ওহ ভালো করেছিস। আলো এটা আমার কাজিন তানভীর সিঙ্গাপুর থেকে স্টাডি কমপ্লিট করে আসছে। আর তানভীর এটা আমার বেস্টফ্রেন্ড আলো।
~ হায়।
~ হ্যালো।

~ চল তাহলে তোর বেস্টফ্রেন্ডকে বাড়িতে ছেড়ে দিয়ে আসি। তোরা তো একসাথে যাচ্ছিলি।
~ হুম ওর বাড়ি গেলে হয়তো এক পথে যাওয়া যেতো কিন্তু এখন।
~ না ঠিক আছে, তিনিয়া তুই বাড়ি চলে যা আর আমি রিক্সা ধরে চলে যাচ্ছি।

আমার কথা শুনে তানিয়া আমাকে বললো,
~ তানভীর না আসলেও তোকে একাই যেতে হতো। আমাকেও এখন থেকে একাই যেতে হবে। তুই চল তোকে একটু এগিয়ে দি।
আমাদের কথা শুনে তানিয়ার কাজিন তানভীর বললো ও যাবে আমাদের সাথে। আমি ভাবলাম অনেকটা লেট যখন হয়ে গেছে বাস ধরে নি। বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়ালাম, তানিয়া বললো সে না কি আমাকে তুলে দিয়ে তবে যাবে আর এটা সে প্রতিদিন করবে। বিকাল হয়ে গেছে, ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা বাতাস বইছে, আর আমার চুলগুলোও উড়ছে, আমি বার বার আমার চোখে মুখে পড়া চুলগুলোকে কানের পাশে গুজে দিচ্ছি কিন্তু আবার সেই একি। হঠাৎ তানভীর আমার চুলে হাত দিলো।
~ সো বিউটিফুল, আলো তোমার চুল গুলোতো বেশ সুন্দর কোমড় অব্দি। আই লাইক ইট।

আমি একটা হাসি দিয়ে ওর কাছ থেকে সরে এলাম। বাস আসতে আমি বাড়িতে চলে এলাম। আমি আসতেই খালাম্মা আমাকে ধরে নিলেন।
~ দেখো কে এসেছেন?
আমি দেখলাম ছোট আব্বু আর ছোট আম্মু এসেছেন। আমি দৌড়ে ছোট আম্মুর কোলে বসে পড়লাম।
~ আমার আম্মু টা কেমন আছে?

~ একটুও ভালো না। তোমরা ভীষণ পচা। সারাদিন আমাকে একটা কল দাও নি। জানো সকালে তোমাদের কথা ভেবে আমি কতো কষ্ট পাচ্ছিলাম!
আমি গাল ফুলিয়ে কথা গুলো বলে উঠতে গেলে ছোট আব্বু আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।
~ রাগ করছো কেনো তোমার ছোট আম্মু তো বললো বিকালে তোমাকে গিয়ে সারপ্রাইজ দেবে।

আমরা সবাই গল্প করছি ভাবী মিষ্টি চা নিয়ে এসে আমাদের সাথে বসলেন। অনেক হাসছিলাম আর মজা করছিলাম। হঠাৎ ছোট আম্মু বলে উঠলেন।
~ আলোর মধ্যে আপুর মিল পাওয়া যায় তাই না। ওর হাসিটা তো আপুর মতোই লাগে।
এমন কথায় আমার কষ্ট লাগলো সবাই কিছুক্ষণের জন্য নিরব হয়ে গেল। নিরবতা ভেঙে ছোট আব্বু বলে উঠলো।
~ এবার তাহলে আমরা আসি। ওই তো পিয়াস বাবা চলে এসছে।

পিয়াস ভাইয়া ছোট আম্মু আব্বুর সাথে কথা বললো। আমি কতো করে বললাম ওদেরকে থাকার জন্য কিন্তু ওরা চলেই গেলো। মন খারাপ হয়ে গেল। সবাই চলে গেলে আমি রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নি। তাড়াতাড়ি বেড়িয়ে পড়ার চেষ্টা করি তা না হলে পিয়াস ভাইয়া চলে এসে আমাকে দেখলে রাগারাগি করবে। শাড়ির কুঁচিটা ঠিক করে নিয়ে মুখ তুলে দেখি পিয়াস ভাইয়া দরজা লক করছে। ভয়ে শাড়ির আঁচলের খুঁট ধরে নি। পিয়াস ভাইয়া আমার দিকে এক পা এক পা করে এগিয়ে আসছে। আমি ভয়ে ভয়ে পিছোতে গিয়ে বিছানায় বসে পড়ি। পিয়াস ভাইয়া আমার মাথায় হাত বুলাচ্ছে।
~ আজকে ভার্সিটি গিয়েছিলি তাই না আলো?

~ জী, জ্বী, ভাই, ভাইয়া,।
আমার সব চু্লটাকে নিয়ে গোল করে হাতের মুঠোয় শক্ত করে ধরে নেয়। আমার ভয় হচ্ছে এই বুঝি টেনে ধরে।
~ তোকে কতোবার বলছি আলো চুল খুলে বাইরে যাবি না।
বলেই আমার চুলটা টান দিয়ে ধরে। আমি সামান্য ব্যথায় চোখ বুজিয়ে ফেলি। আমি দু হাত দিয়ে পিয়াস ভাইয়ার হাত দুটো ধরি।
~ আমার ভুল হয়ে গেছে ভাইয়া ছেড়ে দাও। আর চুল খুলে বাইরে যাবো না।

পিয়াস ভাইয়া আমার চুলটাকে শরীরের সব শক্তি দিয়ে টান দেয়। আমার চোখে পানি চলে আসে।
~ আলো এই নিয়ে বিশবার তোকে বলেছি। কিন্তু সেই এক কথা বলে বারবার ভুল করছিস।
আমাকে বিছানায় ফেলে দিয়ে আমার চুল দুটো টেনে ধরে। আমি ব্যথায় ছটফট করলেও ছাড়ে না।

~ তোর চুলের প্রশংসা শুনতে ভালো লাগে তাই না রে! আর তাই জন্যই তোকে বারবার মানা করা সত্ত্বেও সেই এক কাজ করিস। আলো তোর চুলটাই যদি না থাকে তাহলে তো কেউ কোন প্রশংসা করবে না তাই না!
~ পিয়াস ভাইয়া ছেড়ে দাও না গো আমাকে। আমি আর এই ভুল করবো না। প্লিজ ছেড়ে দাও পিয়াস এমন করো না। পিয়াস ছাড়ো আমাকে।

আমার চিৎকার করে কান্নার আওয়াজ ওর কানে গেলো না। আমার হাজার কাকুতি শুনলো না। চোখের পানিও তার মন গলাতে পারলো না। চিৎকার করতে করতে একটা সময় ফুঁপাতে শুরু করলাম। পিয়াস ভাইয়া আমার চুলেতে এলোমেলো কাঁচি চালিয়ে পাঁচ মিনিট পর কাঁচি ফেলে দিয়ে আমাকে টেনে তুললো। আমার মুখের ওপর পরা চুল গুলো কানের পাশে গুজে দিয়ে আয়নার সামনে নিয়ে গেলো।

পর্ব ৪

আমার মুখের ওপর পরা চুল গুলো কানের পাশে গুজে দিয়ে আয়নার সামনে নিয়ে গিয়ে দাঁড় করালো। ঝাপসা চোখে দেখতে পেলাম চুলটা আমার ছোট হয়ে কাঁধের কাছে এসে ঠেকেছে। আরো বেশী কান্নায় ভেঙ্গে পড়লাম। পিয়াস ভাইয়া আমার চিবুকটা উঁচু করে ধরলো।
~ আলো ইউ আর লুকিং গর্জিয়াস! লুক লাইক এ্যঞ্জেল! বেবি ডোন্ট ক্রাই!
এবার আমাকে তার দিকে ঘুরিয়ে নিলো। বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে দু চোখের পানি মুছে দিয়ে জড়িয়ে ধরলো। আমি এবার ফুঁপাতে শুরু করলাম।

~ শোন কারুর অধিকার নেই তোকে দেখার। ওই ছেলেটা তোর চুল স্পর্শ করেছে তাই না রে? অধিকার নেই তবুও অধিকার দেখিয়েছে। তোর সব কিছু স্পর্শ করার অধিকার আমার, ইউ নো দ্যাট! সো স্টপ ক্রাইং।
আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফ্লোরে ফেলে চলে যায়। আমি বসে পড়ি চিৎকার করে কাঁদি। দু হাতে আমার কেটে দেওয়া চুল গুলো তুলে নি। কাটা চুলগুলো দেখে কান্নাটা আরো বেশী বেড়ে যায়। এই কি সেই পিয়াস ভাইয়া! যার কাছে নিজের চুল কাটার অনুমতি নিতে হতো!

আকাশটা মেঘলা একটু পর বোধহয় বৃষ্টি নামবে! একছুটে ছাদে চলে আসি। ঠান্ডা বাতাস বইছে, মনে হচ্ছে বৃষ্টির সাথে ঝড় হবে! ভালোই হলো আমি তাহলে আজকে ভিজবো। আনন্দে দু হাত মেলে দিয়ে আকাশের দিকে চেয়ে ঘুরতে লাগলাম।

হঠাৎ দেখলাম পাশের বাড়ির একটা ছেলে আমাকে দেখছে, একটু থেমে গেলাম। তারপর আবার ঘুরতে লাগলাম এবার চুলগুলো একটু বেশি প্রসারিত করলাম। ছেলেটা এখনো আমাকে দেখেই যাচ্ছে। দেখলে দেখুক আমার কি! আমি তো আর ক্ষয়ে যাচ্ছি না। অনেকক্ষণ ঘোরার পর এবার আমি ছেলেটার দিকে মুখ করে ছাদের রেলিং ধরে দাঁড়ালাম। শুধু ছেলেটা আমাকে কেনো দেখবে আমিও দেখবো।

হঠাৎ দেখলাম ছেলেটা চলে গেলো, তাহলে আমি এভাবে দেখাতে হয়তো চলে গেলো! যাক তাহলে আমাকে ভয় পেয়েছে, মুচকি হাসলাম। হঠাৎ আমার চুলে টান পড়লো। কি হলো কি সে আটকালো! ঘুরতেই দেখি পিয়াস ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে আছে চোখ দুটো লাল হয়ে আছে। আমি হাতটা ছাড়িয়ে দিয়ে চুলটাকে হাত খোঁপা করে ফেলি। একটু হাসার চেষ্টা করি।

~ আরে পিয়াস ভাইয়া! তুমি এখানে কি করো? বুঝেছি তুমিও আমার মতো বাতাস খেতে আসছো! 😋
আমার এমন কথায় পিয়াস ভাইয়া বোধহয় আরো বেশী রেগে গেলো।
~ এক থাপ্পড় মারবো। 😠

~ আমি কি করলাম 😯
পিয়াস ভাইয়া আমার চুলটা খুলে দিয়ে আমার পেছন দিকে থেকে আমার চুলে নাক ডুবালো।
~ তোর চুলের গন্ধটা বেশ 😘
~ ওহহ আমি কাল হেয়ার স্পা করেছি ☺
পিয়াস ভাইয়া আমাকে ছেড়ে দিয়ে আমার হাতটা চেপে ধরলো।

~ আউচ, পিয়াস ভাইয়া ব্যাথা পাচ্ছি তো।
~ ওই ছেলেটা তোকে দেখছিলো কেন?
~ আমি কি জানি! ভালো লাগছিলো তাই দেখছিলো 😁
~ থাপড়ে তোমার গাল লাল করে দেবো ফাজিল মেয়ে কোথাকার 😤
এইকথা বলেই পিয়াস ভাইয়া পুনরায় আমার চুলে নাক ডুবালো।

~ আমি চাই না তোকে কেউ দেখুক। তোকে দেখার অধিকার শুধু আমার বুঝেছিস। তুই কেনো বুঝিস না আলো আমি তোকে, তোকে আমি,।
পিয়াস ভাইয়া আমাকে ছেড়ে দিয়ে চলে যেতে গেলে আমি হাতটা ধরে নি।
~ আমাকে কি বলো?

~ কিছু না। এ্যই শোন তোর চুলটা খুব সুন্দর। চুল খুলে কখনো বাইরে, ছাদে কোথাও যাবি না। আর কি যেনো বলছিলি হেয়ার স্পা! পার্লারে যাবি না একদম। তুই চুলে যা কিছু মাখবি আমায় বলবি আমি তোকে এনে দেবো।
পিয়াস ভাইয়া একদমে কথা গুলো বলে থামলো। আমার তো সব মাথার ওপর দিয়ে গেলো। তবুও আনমনে বলে ফেললাম।

~ কিন্তু পিয়াস ভাইয়া আমার তো ইচ্ছা ছিল চুল টাকে কেটে একটা স্টাইলিশ লুক দেওয়ার 😌
আমার কথা শুনে পিয়াস ভাইয়া একপ্রকার ঝাঁঝিয়ে উঠলেন।
~ আলো আমার কথার অবাধ্য হবি না বলে দিলাম। আমি যা বলছি তাই করবি। তুই এই চুল গুটিয়ে রাখবি কাটবি না বুঝলি। তোর লম্বা চুল আমার দারুণ লাগে। তুই তো আমার কেশবতী কন্যা রে।
পিয়াস ভাইয়ার কথা শুনে আমি হাসলাম ঠিকি কিন্তু বুকের ভিতর টা কেমন করে উঠলো।

না নাহ, না, এ আমার পিয়াস ভাইয়া হতে পারে না। আমার পিয়াস ভাইয়া এ কাজ করতে পারে না। আমার চুল গুলো কেটে দিয়েছে পিয়াস ভাইয়া, আমার চুল গুলো,! কোলের ওপর সমস্ত কাটা চুলের টুকরো গুলো তুলে নিলাম। বিছানার সাথে মাথাটা হেলান দিয়ে রাখলাম। চোখ ঝাঁপিয়ে শুধু পানি গড়িয়ে পড়ছে। কেনো জানি এখনো আমি বিশ্বাস করতে পারছি না। আমার লম্বা চুল টা এতো ছোট হয়ে গেছে! সারা শরীর যেনো অবশ হয়ে আসছে। হঠাৎ দরজা বন্ধ করার আওয়াজ শুনে তাকালাম। পিয়াস ভাইয়াকে দেখে আমার ঘৃণা লাগছে। মানুষটাকে আর দেখতে ইচ্ছা করছে না।
~ তুই এখানে বসে আছিস যে?

আমি পিয়াস ভাইয়াকে আপাদমস্তক দেখে মুখটা অন্যদিকে করে নি।
~ কথা কানে যাচ্ছে না তোর?
আমি নিরব থাকি কিছু বলি না। বেশকিছুক্ষণ পিয়াস ভাইয়া আমাকে দেখতে থাকে। আমার হাতটাকে শক্ত করে ধরে টেনে তুলে।

~ কানে কি তুলো গুজে রেখেছিস না কি? আমি তোকে কিছু জিজ্ঞাসা করছি আলো। একঘন্টা হতে চললো তুই এখনো ঠায় বসে আছিস?
আমার হাতটা ছেড়ে দিলে আমি একটু টলে যাই। কাঁদিও না ফুঁপাইও না শুধু চোখের কোণ বেয়ে পানি গড়িয়ে আসে। পিয়াস ভাইয়ার দিকে তাকাই না দৃষ্টি অন্যদিকে স্থির রাখি। আমার হাত দুটো ধরে ঝাঁকাতে লাগলো।
~ ওই নাটক করছিস! নাটক! আরে তুই কথা বলছিস না কেন?

পিয়াস ভাইয়া চিৎকার করে কথাগুলো বলে আমার গাল দুটো চেপে ধরে।
~ কষ্ট হচ্ছে না রে তোর? খুব কষ্ট হচ্ছে বুঝি! কোথায় কষ্ট হচ্ছে তোর! আমাকে বল বল না আমাকে? তোর কষ্ট আমি দূর করে দিব।
পিয়াস ভাইয়া কথাগুলো বলছে আর আমার শরীরে এমন ভাবে হাত দিচ্ছে যে আমি এবার আর স্থির হয়ে থাকতে পারলাম না। পিয়াস ভাইয়াকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলাম।

~ কেন এমন করলে? কেন? আমার চুল কেটে দিয়ে কি লাভ হলো তোমার? বলো, বলো না কেন এমন করলে?
চিৎকার করে কথাগুলো বলে কাঁদতে কাঁদতে ফ্লোরে বসে পড়লাম। পিয়াস ভাইয়া আমার চুলটা শক্ত করে ধরলো।
~মেরে ফেলো, আরে মেরে ফেলো না আমায়, নাও দুহাতে গলা টিপে শেষ করে দাও আমায়।
পিয়াস ভাইয়ার হাত দুটো ধরে নিজের গলাটা চেপে ধরলাম। চিৎকার করতে করতে কাশি শুরু হয়ে গেলো আমার। পিয়াস ভাইয়া আমাকে ধাক্কা মারতেই আমি একটু ছিটকে সরে গেলাম।

~ এই কি করেছি আমি তোর হুম কি করেছি? সামান্য চুল কেটেছি।
~ এটা তোমার কাছে সামান্য কিছু হতে পারে কিন্তু এটা আমার মতো মেয়েদের কাছে অসামান্য জিনিস। পৃথিবীর প্রত্যেকটা নারীর চুলটাই তার অলঙ্কার। নারী জাতির কেশেতেই বেশ। আজকে তুমি আমার চুল কেটে আমার সম্মানে আঘাত করেছো প্রতিটা নারী জাতিকে অপমান করেছো। তোমার মা,।
আর বলতে পারলাম না গালে সজোরে থাপ্পড় পড়ে গেলো। আমাকে চুলের মুঠি ধরে তুললো পিয়াস ভাইয়া। এক হাতে চুলের মুঠি আর এক হাতে গাল চেপে ধরলো। আমার মাথাটা ঝিমঝিম করছে শরীর টা দূর্বল লাগছে।

~ আরে তুই এতো কথা কেন বলছিস? আরে আমি তো তোর চুলটাই কেটেছি। আজ কেটেছি কাল বড়ো হয়ে যাবে। কিন্তু আমার বুকের ভিতর এর যন্ত্রণাটা হ্যা বল! আরে বল না আমার সাথে যা কিছু করেছিস আমার বিশ্বাস ভেঙ্গেছিস। এতো সহজে কি করে ছাড়ি তোকে? সব হিসাব বরাবর করবো চিন্তা করিস না বুঝেছিস।
আমাকে ছেড়ে দিয়ে দরজা খুলে দেয়।

~ ওই অনেক হয়েছে এবার আমাকে শান্তিতে একটু ঘুমাতে দে। নে চল বেড়িয়ে যা আমার রুম থেকে, চল বেরো।
আমি চোখের পানি মুছে নিয়ে বেরোতে যাচ্ছি।
~ ওই দাঁড়া আমার রুমটা পরিস্কার করে দিয়ে তো যা। এইসব আবর্জনা গুলো উঠিয়ে নিয়ে যা।
আমি হাঁটু মুড়ে বসে ফোঁপাতে ফোঁপাতে শাড়ির আঁচলের মধ্যে চুলের টুকরো গুলো তুলে নিয়ে বেড়িয়ে আসি।

নিজের রুমে এসে দরজা বন্ধ করে বিছানার মাঝখানে বসি। চুলের টুকরো গুলো হাত বুলিয়ে দেখতে থাকি। খুব কষ্ট হচ্ছে এই সময় আমার আম্মুকে কাছে পেতে ইচ্ছে করছে। ও আম্মু তুমি আমার চুলে আর তেল মাখাতে পারবে না। দেখো না দেখো! আচ্ছা আমার আম্মুর মতো তোরাও কি আমাকে ছেড়ে গেলি। বেশ তোদের প্রতি আর মায়া দেখাবো না যা চলে যা তোরা সবাই চলে যা। কাউকে চাই না আমি কাউকে না। আমি বিছানা থেকে নেমে পড়লাম। রাগে দুঃখে চুলের টুকরো গুলো কে জানলা দিয়ে ফেলে দিলাম। সকাল হলে ঝাঁট দিয়ে চলে যাবে আবর্জনার স্তূপে। গ্ৰিল ধরে দাঁড়িয়ে দেখছি ল্যাম্পপোস্টের আলো পড়া ফাঁকা রাস্তাটা।

অনুভব করছি আমার ঠোঁট টা যেনো কেউ কেটে দিচ্ছে। যন্ত্রণায় ছটফট করছি, চোখের কোণ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে। আমি একটুও নড়তে পারছি না। চোখ খুলে চমকে যাই আমি। পিয়াস ভাইয়া আমার ওপর নিজের শরীরের ভার ছেড়ে দিয়েছে। আমার ঠোঁট দুটো নিজের ঠোঁটে নিয়ে রেখেছে। যন্ত্রণায় আমি ছটপট করছি। কারণ পিয়াস ভাইয়া আমার ঠোঁট টা কামড়ে ধরেছে। অনেকক্ষণ পর আমি মুক্তি পেলাম। আমার ঠোঁট ছেড়ে দিলেও আমার ওপর থেকে সরলো না।

গলায় একের পর এক গভীর চুমু দিচ্ছে। আমার সারা শরীরে শিহরণ বয়ে গেলো। আমি আমার হাতের মুঠোয় পিয়াস ভাইয়ার মাথার চুল ধরে নিলাম। পিয়াস ভাইয়া জোরে কামড় বসালো আমি আর পারলাম না চিৎকার করে উঠলাম। কিন্তু পিয়াস ভাইয়া আমাকে ছাড়লোনা গলায় তিন চারটে কামড় দিয়ে আমাকে ছেড়ে উঠে বসলো।
~ কি করছিলে পাগল হয়ে গেছ নাকি!
আমি কথাটা বলে ঠোঁটে হাত দিয়ে দেখি রক্ত। পিয়াস ভাইয়া আমার মুখের কাছে মুখ নিয়ে আসলো। হিসহিসে গলায় বলে উঠলো।

~ কাউকে জানাবি না যেনো তোর চুল আমি কেটেছি। মেরে ফেলবো তোকে আমি।
পিয়াস ভাইয়া কথাগুলো বলে চলে যায়। আমি বিছানার চাদর খামচে ধরি। মাথায় ঢুকছে না কিছু পিয়াস ভাইয়ার মাথায় কি চলছে! এতো ভয়ঙ্কর হয়ে গেল কেন পিয়াস ভাইয়া!

পর্ব ৫

ঘুম ভাঙলে আমি রুমটা দেখে চমকে উঠি। এই রুমে তো আমি কাল ছিলাম না! এটা তো পিয়াস ভাইয়ার রুম। চারদিকে চোখ বুলিয়ে দেখতে দেখতে চোখ যায় পিয়াস ভাইয়ার দিকে। পিয়াস ভাইয়া তোয়ালে দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসছে। আমার কেমন জানি ভয় করছে আমি পা গুটিয়ে বসি। পিয়াস ভাইয়া আমার কাছে চলে এসছে। আমি কালকে রাতের কথা ভেবে আরো বেশি ভয় পাই চোখ বন্ধ করে নি। সাত আট সেকেন্ড পর চোখ খুলতেই দেখি পিয়াস ভাইয়া আমার সামনে নেই। আমি আর এক মুহূর্ত দেরী না করে ওয়াশরুমে চলে আসি। একটা লম্বা শাওয়ার নিয়ে বেড়িয়ে আসি। তোয়ালে দিয়ে চুলের পানি মুছতে গেলে মনে পড়ে যায় কাল রাতের ঘটনাটা। চোখটা ঝাপসা হয়ে আসছে।

~ ড্রামা কুইন পাঁচ মিনিটের মধ্যে নীচে আয়। আর বেশি দেরী হলে তোর খবর আছে।
গম্ভীর গলায় কথা গুলো বলে পিয়াস ভাইয়া চলে গেলো। আমি তোয়ালেটা রেখে চুলে চিরুনি করতে গেলে ঠোঁটটা দেখে চমকে উঠি। ঠোঁট টা লাল হয়ে আছে কামড়ানোর দাগ স্পষ্ট। গলাতেও লাল কামড়ানোর দাগ। ইসস কি করি এখন! এই অবস্থায় তো কারুর সামনে যেতে পারবো না! ভার্সিটি তো দূর ভাবী খালাম্মা এদের
সামনেই বা যাবো কি করে! আমাকে কিছু একটা করতে হবে। আইডিয়া কনসিলার আর লিপস্টিক দিয়ে ঢেকে নি। ওয়ার ড্রপ খুলতে গেলে মনে পড়ে যায় এই রুমে তো আমার কোন মেকাপের জিনিস নেই। কি আর করবো এমন জায়গার দাগ চুল দিয়েও তো ঢাকতে পারবো না! ওদিকে পিয়াস ভাইয়া পাঁচ মিনিটের মধ্যে যেতে বললো। গুটি গুটি পায়ে মুখ নীচু করে সিঁড়ি দিয়ে নীচে নামলাম। সামান্য মুখটা তুলে দেখি খালাম্মা আমাকে দেখে হাসছেন। পিয়াস ভাইয়া আমার কোমড় জড়িয়ে ধরলো। আমি অনেকটা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম। পিয়াস ভাইয়ার হলোটা কি! আজ হঠাৎ এমন ভোল বদল! পিয়াস ভাইয়া গলা ঝাড়তে আমি পিয়াস ভাইয়ার থেকে চোখ সরিয়ে নিলাম।

~ আলো চল মার কাছ থেকে সালাম নিয়ে আমাদের নতুন জীবন শুরু করি।
আমার মাথায় তো বাজ পড়ার মতো অবস্থা। আমি স্বপ্ন দেখছি না কি! আমি কি এখনো ঘুমাচ্ছি! খালাম্মা আমাদের দিকে এগিয়ে এলেন। পিয়াস ভাইয়া আর আমি খালাম্মাকে সালাম করলাম। খালাম্মা আমাদের দুজনের মাথায় হাত বুলিয়ে কপালে চুমু দিলেন।
~ তোমরা সুখী হও অনেক সুখী। আমি এটাই চেয়েছিলাম।

~ হুম মা আলোকে আমি আর কোন কষ্ট পেতে দিবো না। ওকে আমি অনেক সুখে রাখবো।
আমি তো একটার পর একটা শক খাচ্ছি। কি হচ্ছে এগুলো। হঠাৎ করে পিয়াস ভাইয়া এমন আচরণ করছে কেনো! হঠাৎ ভাবী আমার হাত ধরে কিচেন রুমে নিয়ে আসে।
~ আচ্ছা এবার বুঝছি কাল রাতে খাবার কেনো খেলে না।

~ মা, মানে, কি বলছো ভাবী?
তাহলে কি ভাবী বুঝে গেলো আমার চুল কেটে দেওয়ার কথাটা!
~ আরে মানে, মানে কেন করছো! তুমি তো কাল যা খেয়েছো তাতেই তোমার পেট ভরে গেছে।
~ কি খেয়েছি ভাবী?
~ কেনো স্বামীর আদর!
~ কি যা তা বলছো ভাবী? ধূরর তুমি না।

বেরিয়ে আসতে গেলে ভাবী হাত ধরে।
~ আলো রে কাল যে কিছু হয়েছে সেটা তো তোর ঠোঁট আর গলাতেই স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।
বলেই ভাবী হেসে উঠলো। আমি গলাতে হাত দিলাম। এইরে যা ভেবেছিলাম ঠিক তাই। ভাবী তো অন্যকিছু ভাবছে। এইসব কিছুই হয়নি।
~ লজ্জা পাচ্ছিস কেন আলো? তোর তো খুশি হবার কথা। তোকে যে পিয়াস মেনে নিয়েছে। স্ত্রীর অধিকার দিয়েছে।

আমি ভাবীর কথার মাথা মুন্ডু কিছুই বুঝলাম না। পিয়াস ভাইয়া আমাকে মেনে নিলো কখন! কাল রাতে যা হয়েছে। ভাবী আমাকে তার দিকে ঘুরিয়ে নিলো।
~ শুনলাম কাল না কি তুই তোর বন্ধুদের সাথে খেয়খেয়ে এসেছিলি বলে রাতে আর খেলি না। আমাকে বলে যেতে পারতিস। পিয়াস বললো বলেই তো জানতে পারলাম। আলো তুই চুল কেটেছিস কবে?

প্রথমত ভাবীর কথাগুলো আমার সব মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছে। এখন চুল কাটার কথা বলছে, সত্যিটা জানালে আমাকে পিয়াস ভাইয়া মেরে ফেলবে।
~ কি রে আলো বল?
~ ভাবী আমি, আমি কাল কেটেছি বাড়ি আসার সময়।

~ কেনো কাটলি? তোকে যে বড়ো চুলেই বেশ মানায়। কাটলি যখন তখন অল্প একটু কাটতে পারতিস।
আমি বুঝতে পারছি ভাবী কষ্ট পেয়েছে কিন্তু আমি ও যে! কি করি আমি!
~ আরে তোরা নাস্তা করবি তো।
খালাম্মার ডাকে আমি আর ভাবী ডাইনিং টেবিলে চলে এলাম। পিয়াস ভাইয়া আমাকে হাত ধরে তার পাশে বসালো। আমার মুখের সামনে খাবার তুলে ধরলো। আমি পিয়াস ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছি। আর পিয়াস ভাইয়া মুচকি হাসছে।
~ আলো আর আমার ছেলেটাকে দেখিস না রে খেয়ে নে।

আমি চোখ নামিয়ে খাবার খেয়ে নি। আমি চুপচাপ খেতে থাকি পিয়াস ভাইয়া খাওয়াতে থাকে। আমি কি বলবো আমার তো কিছু মাথায় ঢুকছে না। এসব কি হচ্ছে পিয়াস ভাইয়া আমাকে খাইয়ে দিচ্ছে! আমাকে মেনে নিয়েছে!
~ তাহলে ছয় মাস পর ফিরবি তাই তো?

~ হ্যা মা। আর ছ মাস পর ফিরেই রিসেপশান পার্টি হবে। পিয়াস ভাইয়া কোথায় যাবে? ছয় মাস পর ফিরবে! আমি তো কিছুই জানলাম না।
~ আলো তোর খাওয়া শেষ হাত মুখ ধুয়ে সাফ করে নে। আমরা এবার বেরোবো।
আমি পিয়াস ভাইয়াকে কিছু বলার আগেই ফোন কানে দিয়ে বেড়িয়ে গেলো। খালাম্মা আমায় জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন।
~ যাক শেষমেষ সব কিছু ভালো হলো। আমি এবার নিশ্চিন্ত হতে পারলাম। শোন মা পিয়াস যখন তোকে মেনে নিয়েছে ওর মন মতো চলিস। সাবধানে থাকবি।
বলেই আমর কপালে চুম্বন দিলেন।
~ আমি কোথায় যাবো খালাম্মা?

~ ঢাকায় যাচ্ছিস। তোর বাবাই এর ওখানকার বিজনেসটা পিয়াস দেখবে। তাই তোরা ছয় মাসের জন্য ঢাকায় যাচ্ছিস।
~ আমি ঢাকায় যাচ্ছি, তাও আবার ছয় মাসের জন্য!
বুকের ভিতর টা মোচড় দিয়ে উঠলো। কি হতে চলেছে। আমি কোথাও যাবো না, কোথাও না। খালাম্মা কে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললাম।
~ আমি কোথাও যাবো না তোমাদের ছেড়ে।

~ আরে পাগলী কাঁদছিস কেন। তুই তো ছ মাস পর ফিরেই আসবি। মাত্র তো ছয় মাস দেখতে দেখতে কেটে যাবে।
খালাম্মা আমাকে সান্ত্বনা দিচ্ছে। ভাবী আসতে ভাবীকে জড়িয়ে ধরলাম।

~ ওই পাগলী কতো ভালো বলতো একা থাকবি বেশিক্ষণ টাইম স্পেন্ড করতে পারবি। তুই না বড্ড বোকা জানিস তো! এইরকম সুযোগ কেউ হাত ছাড়া করে? আমাকে দেখ না বিয়ের পর তোর বড়ো ভাইয়াকে কতো পেয়েছি, যখন গেছে আমাকে একাই থাকতে হচ্ছে দেখ। সেই তুলনায় অনেক ভালো বুঝলি।
আমি আর কিছু বলতে পারলাম না মনের মধ্যে একটা অজানা ভয় বাসা বাঁধছে। খালাম্মা আর ভাবীকে ধরে গাড়িতে বসে খুব কাঁদলাম।

চলে এলাম রাজশাহী থেকে ব্যাস্ত শহর ঢাকায়। গাড়ি এসে থামলো একটা বাড়ির সামনে। এই বাড়িটা না কি তৈরী হয়েছে বাবাই আর আমার আব্বুর পরিকল্পনায়। সত্যি বাড়িটা খুব সুন্দর। দু তলা বিশিষ্ট, একটা ব্যালকেনী আছে সেখানে অনেক ফুল গাছ টবে। আমার তো খুব ভালো লাগছে। আমার মনে হয় বাড়িটা কেউ রোজ এসে দেখা শুনা করে সব কিছু পরিস্কার চকচক করছে। পিয়াস ভাইয়া আমাকে এসে ধরলো। কারণ আমি কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে ছিলাম না ছুটাছুটি করে রুম গুলো দেখছিলাম।

~ আলো কেমন লাগছে?
~ মাইন্ডব্লোয়িং পিয়াস ভাইয়া! আগে যদি জানতাম যে ঢাকায় বাড়িটা এতো সুন্দর অনেক আগেই এখানে চলে আসতাম। পিয়াস ভাইয়া আমাকে ছাড়ো না আমি একটু ছাদে ঘুরে আসি।
~ আলো তুই তো এখন এখানেই থাকবি তোর যখন ইচ্ছা তখন ছাদে যাস। এখন ফ্রেশ হয়ে নে আমি খাবার নিয়ে আসছি।

পিয়াস ভাইয়া বেড়িয়ে যায়। আমি ফ্রেশ হয়ে নি। সোনালী পাড় দেওয়া ডিজাইন করা সাদা শাড়ি পড়ে নি। কেনো জানি মনটা খুব ভালো লাগছে। ব্যালকেনীতে দাঁড়িয়ে আলোকিত শহর ঢাকাকে দেখছি।
এর মাঝেই পিয়াস ভাইয়া খাবার নিয়ে চলে এসেছে। প্লেটে খাবার দিয়ে পিয়াস ভাইয়া আমার সামনে তুলে ধরে। আমি চমকে উঠে ব্যালকনী থেকে চলে এসে সোফায় বসি। পিয়াস ভাইয়া চলে এসে প্লেটটা হাতে দেয়। খাওয়া শুরু করি। কেউ কোন কথা বলি না চুপচাপ খেয়ে যাই।

~ খালাম্মা কে কল করছিলে?
~ হুম করেছি।
~ আমি কথা বলবো।
~ পরে বলবি।

পিয়াস ভাইয়ার গম্ভীর স্বরে কথা বলাতে আমি একটু ভয় পেয়ে যাই। সাহস করে আমি আর কিছু বলি না। খাওয়া শেষে আমি প্লেট গুলো নিয়ে নীচে চলে আসি। কিচেন রুমে প্লেট গুলো রাখতে গিয়ে দেখলাম সব আছে, গুছানো কিচেন রুম। আমি প্লেট গুলো ধুয়ে রাখলাম। ফ্রিজে দেখলাম পানি থেকে শুরু করে সবজী মাছ মাংস ফল সব আছে।

তার মানে পিয়াস ভাইয়া আগে থেকেই সব ঠিক করে রেখেছে। কিছুই বুঝতে পারছি না! কাল রাতে অতো কিছু করলো আর আজ সকালে এতো পরিবর্তন!
না না আমি কিছু আর ভাববো না। যা হচ্ছে ভালোই হচ্ছে। আমি তো চাই পিয়াস ভাইয়া আমাকে স্ত্রীর অধিকার দিক ভালোবাসা দিক। আমার তো পিয়াস ভাইয়া ছাড়া কেউ নেই। হয়তো পিয়াস ভাইয়া তার ভুল বুঝতে পেরেছে।

গুটি গুটি পায়ে রুমে এলাম। পিয়াস ভাইয়া তখন বিছানায় বসে ল্যাপটপে কাজ করছে। আমি যাবো কি যাবো না এই ভেবে আস্তে আস্তে গিয়ে বিছানার একপাশে শুয়ে পড়লাম। ভয় হচ্ছে এই না পিয়াস ভাইয়া আমাকে রুম থেকে বের করে দেয়। অনেকক্ষণ হয়ে গেল কিছুই হলো না বুকে একটু সাহস এলো। সারাদিনের জার্নি করে এসে বিছানায় শুতেই চোখে আধো ঘুম এলো।

হঠাৎ আমার পিঠে হাতের স্পর্শ পেলাম। কিন্তু আমি একটুও নড়লাম না। এরপর আমার পিঠে ঠোঁটের স্পর্শ পেয়ে চোখ খুলে তাকালাম। সোজা হতেই পিয়াস ভাইয়া আমার ঠোঁট আঁকড়ে ধরলো।
আমি কেঁপে উঠলাম।
তাহলে কি সত্যিই পিয়াস ভাইয়া আমাকে মেনে নিলো! পিয়াস ভাইয়া আমাকে স্ত্রীর অধিকার দিলো! শেষমেষ আমি কি সুখ পেলাম!

পর্ব ৬

পিয়াস ভাইয়া আমাকে যদি মেনেও নেয়, কিন্তু যে কাজ করেছে সেগুলোর! বিয়ের প্রথম রাতেই গায়ে হাত তুলেছে, নষ্টা মেয়ে বলেছে, মাথার চুল কেটে দিয়েছে, আমি কিছু বলবো না। হ্যা আমি ভালোবাসি, পিয়াস ভাইয়াকে নিজের থেকেও বেশী ভালবাসি, তাই বলে এতোদিনের করা অন্যায় এই সব ক্ষমা করা যায় কি! না আমি পিয়াস ভাইয়াকে এতো সহজে ক্ষমা করবো না।

পিয়াস ভাইয়া আমার শাড়ির আঁচল সরিয়ে ব্লাউজের হুক খুলতে গেলে আমি পিয়াস ভাইয়ার হাতটা সরিয়ে দি। ধাক্কা দিলে পিয়াস ভাইয়া বিছানায় শুয়ে পড়ে আমি উঠে বসি।
আমি ভাবলাম পিয়াস ভাইয়া হয়তো এমন করছি কেন তার কারণ জানতে চাইবে! হয়তোবা নিজের করা কাজ গুলোর জন্য ক্ষমা চাইবে অনুশোচনা করবে! কিন্তু তা না করে আমাকে আরো অবাক করে দিলো। আমার কোমর জড়িয়ে টানতে গেলে আমি ছাড়িয়ে বিছানা থেকে নেমে দাঁড়াই। পিয়াস ভাইয়া উঠে বসে জোর শব্দ করে হাসে।

~ ওহ সরি তোর রেট টা জানা হয়নি! কতো তোর রেট? যাই হোক তোর যা রেট তার থেকেও আমি বেশি দিব কাছে আয়।
এই কথা শুনে আমার পায়ের তলার মাটি সরে যায়। চোখের কোণ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে।
~ পিয়াস ভাইয়া কি বলছো তুমি? তুমি এতোটা নীচ কবে থেকে হয়ে গেলে? নিজের বিয়ে করা স্ত্রীকে কেউ এভাবে বলে!
~ চুপ কর তো, তোর মতো বাজারে মেয়েছেলেকে স্ত্রী বলতে ঘেন্না হয়।

পিয়াস ভাইয়ার কথা শুনে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলাম না। থাপ্পড় মারার জন্য হাত তুলতেই পিয়াস ভাইয়া আমার হাত পেছনে মুচড়ে ধরে। আমি ছাড়ানোর চেষ্টা করলে আমাকে দেওয়ালের সাথে চেপে ধরে।
~ দিন দিন সাহসটা তোর খুব বেড়ে গেছে আলো। ভুলে যাস না এই বাড়িতে শুধু তুই আর আমি আছি তোকে মেরে ফেললেও কেউ তোকে বাঁচাতে আসবে না।
আমার চুলের মুঠি টা আরো শক্ত করে চেপে ধরে তার দিকে ঘুরিয়ে গলা টিপে ধরে।

~ ওই বাড়িতে মা ভাবী ছিল বলে তোর সাথে কিছু করতে পারি নি। আমি তোর এমন অবস্থা করবো যে তোর মতো কাজ কেউ করতে চাইলে তোর কথা ভেবে ভয় পাবে। আমাদের মান সম্মান ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছিস। আরে মা ভাবী তোকে এতো ভালোবাসে তোর পরিবার আর তুই শেষে কিনা ছিহ্, এই তোকে ধরতেও আমার ঘেন্না হয় বুঝেছিস।

আমাকে ছেড়ে দিলে আমি ফ্লোরে লুটিয়ে পড়ি। প্রচন্ড পরিমাণে কাশতে থাকি আর দম বন্ধ হয়ে আসে। চারদিকে ধোঁয়াশা লাগছে।
~ এই তোর কি দাম আছে রে? শরীর টা তো বেচে দিয়েছিস। হ্যা রে এখনো যাস তো ওইখানে? এই যে তোকে ঢাকায় নিয়ে চলে আসলাম যেতে পারবি না তো আর! কষ্ট হবে তো তোর, তোর কাস্টমার গুলো অন্য কারো কাছে যাবে। ওয়েট আলো চিন্তা করিস না এখানেও পতিতালয় আছে। আমি কাল তোকে দেখিয়ে দিয়ে আসবো। তারপর তুই একাই যেতে পারবি। আর হ্যা নাহলে একটা কাজ করতে পারিস, এই বাড়িটা তো ফাঁকাই আছে তুই এখানেও তোর কাস্টমার দের ডেকে নিতে পারিস। আরে তুই সুন্দরী ফিগার ভালো আছে, ঢাকা শহরে যে নামী দামী হোটেল আছে ওর সামনে দাঁড়াবি অনেক কাস্টমার পেয়ে যাবি।

আমি কিছুই বলতে পারছি না গলা ব্যথা করছে, দমবন্ধ হয়ে আসছে। পিয়াস ভাইয়া আমাকে ভুল বুঝছে। কিন্তু আমি কিছু বলতে পারছি না। ~ বেশ্যা মেয়েছেলে কোথাকার।

আমি চোখ বন্ধ করে নিলাম। পিয়াস ভাইয়া কথাটা বলেই আমার মুখে থুতু ছিটিয়ে বেড়িয়ে গেল।
আমি আর সহ্য করতে পারলাম না চিৎকার করে কেঁদে ফেললাম। এতো অপমান কেন? কি দোষ আমার? যে কাজ আমি করিনি তার শাস্তি আমাকে কেন পেতে হবে?

চার মাস আগে……..
বই টা বন্ধ করে শুতে যাবো এইসময় আমার ফোনটা বেজে উঠলো। রাত এখন 12:30, এতো রাতে কে কল দিতে পারে! ফোনটা হাতে তুলতেই দেখি আমার কাজিন জুঁই এর ফোন। ব্যস্ত হয়ে কল রিসিভ করলাম। হ্যালো বলতেই ওর কান্নার শব্দ শুনতে পেলাম।
~ জুঁই কি হয়েছে তোর কাঁদছিস কেন? বাড়িতে কোন বিপদ হয়েছে না কি? ছোট আব্বুর কিছু হয়েছে নাকি?

~ আ… পপ… আপু আমার সব শেষ রে, আমার সব শেষ। আমি আর কাউকে মুখ দেখাতে পারবো না।
~ কি বলছিস তুই! কি হয়েছে খুলে বল আমায়।
~ তুই কাল সকালেই বাড়ি চলে আয়। আর আমার কসম তুই কাউকে কিছু জানাবি না।

~ আচ্ছা ঠিক আছে। কিন্তু,
তার আগেই লাইন টা কেটে দিলো। ইচ্ছা করছে এখনি বাড়ি চলে যাই। কিন্তু সবাই ঘুমোচ্ছে আর যদিও যাই বলতে তো পারবো না সত্যিটা। তার থেকে বরং কাল সকালেই যাই। অস্থিরতার সাথে কাটলো রাতটা। সকালে উঠে খালাম্মাকে বললাম ছোট আব্বু ছোট আম্মুর জন্য মন কেমন করছে তাই চলে যাবো। গেটের বাইরে এসে রিক্সা ধরবো পিয়াস ভাইয়া আমার সামনে এসে দাঁড়ায়।
~ আলো দশ মিনিট দে আমি তোকে বাড়িতে দিয়ে আসছি।

~ না ভাইয়া বাড়িই তো যাবো তোমাকে যেতে হবে না। আমি গিয়ে তোমাকে কল দিব।
বাড়ি চলে আসলাম, বেল টিপতেই জুঁই দরজা খুলে দিলো। আমি কিছু বলতে যাবো ও আমাকে হাত ধরে রুমে নিয়ে এলো। ওর চোখ মুখ দেখে বুঝতে পারছি ও সারারাত কেঁদেছে। আমাকে দেখে জড়িয়ে কিছুক্ষণ কাঁদলো। আমিও ও কে কাঁদতে দিলাম। জানি না ওর মনে কি ঝড় চলছে তবুও কেঁদে যদি একটু হাল্কা হয়। তাহলে তাই হোক না। কিছুক্ষণ পর আমাকে ছেড়ে দিয়ে হাত দিয়ে পানি মুছে নিলো। নিজে থেকেই বলা শুরু করলো।

~ আপু আমি আশিক নামের এক ছেলের সাথে রিলেশনে জড়িয়ে পড়েছি। ও আমার ক্লাসমেট, আমি প্রথম থেকেই ওর প্রতি একটু দুর্বল। জানো তো আপু ও আমাদের ভার্সিটির সব মেয়ের ক্রাশ। ও নিজে থেকেই আমাকে প্রপোজ করে। আমি না করতে পারি নি। রিলেশনে জড়িয়ে পড়ি।
জানো আপু আমি যে ওর সাথে প্রেম করি সেটা আমার ক্লাসের কিছু মেয়েরা সহ্য করতে পারতো না। তারা পেছনে অনেক কথা বলতো। আবার কিছু মেয়ে সামনে এসে বলতো আমি তো স্মার্ট না, আমার ভাগ্য ভালো তাই আশিকের মতো ছেলের সাথে প্রেম করতে পারছি। ওরা সব সময় আমাকে বেহেনজী বলতো খুব কষ্ট হতো। আমি আশিককে এই সব ব্যাপারে বললে বলতো আমি তো খুব সুন্দরী তাই ওরা জেলাস ফিল করে। ভালোই চলছিলো জানো আপু, আমার অনেক কেয়ার করতো। আমি তখন সুখের জোয়ারে ভাসছিলাম বুঝতে পারি নি এরপরে কি হতে চলেছে।

একদিন সকালে আশিক কল দিয়ে বললো বিকালে রেডী থাকতে আমাকে নিয়ে বেরোবে। আমি ওর সাথে বিকালে বেড়িয়ে পড়লাম। ও আমাকে একটা কফি ক্যাফেতে নিয়ে গেল। সেদিন ও কে কেমন জানি লাগছিল, বারবার আমার শরীরে এমন ভাবে টাচ করছিলো আমার ভালো লাগছিলো না। বারবার আমার বুকে হাত দিচ্ছিল কোমড়ে হাত দিচ্ছিল। আমি মানা করতে আমাকে রেখে একাই চলে গেলো।

আমি কান্না করতে করতে বাড়ি চলে আসি। পরের দিন ভার্সিটি গেলে ও আমাকে ইগনোর করে। ফোন করলে ফোন ধরে না, এস এম এস এর রিপ্লাই দেয় না, এইভাবে এক সপ্তাহ কাটার পর ভার্সিটির সবাই বলছে আশিক আমাকে ছেড়ে অন্য মেয়ের সাথে রিলেশন করছে। খুব কষ্ট হল ছুটে চলে গেলাম আশিকের বাড়িতে। আশিক বাবা মা এর একমাত্র ছেলে কিছু দিন হলো ওর বাবা মা সিলেট গেছে তাই জেনেই আমি যাই। আমি যেতে ও আমাকে তাড়িয়ে দিতে চায়। ও বলে আমার মতো বেহেনজীর সাথে ও রিলেশন রাখবে না। আমি কাঁদতে কাঁদতে ওর পায়ে পরে গেলাম, ভিক্ষা চাইলাম ওর ভালোবাসার।

ও আমাকে বললো আমি ওর জন্য কি করতে পারি? আমি বললাম ও যা বলবে তাই। ও আমার শরীর টা চাইলো জানো আপু আমার শরীর টা। আমি প্রথমে বললাম এইসব ঠিক না ও বললো তাহলে ও আমার সাথে রিলেশন কন্টিনিউ করতে পারবে না। আর এটাও বললো এখন এমন কোন কাপল নেই যারা কিছুই করেনি। হুম আমি রিলেশন টিকিয়ে রাখতে আমার সর্বস্ব বিলিয়ে দি।
জুঁই এবার থামলো, ওর চোখের কোণ বেয়ে নোনা পানি গড়িয়ে এলো। আমি এতোক্ষণ ওর কথা শুনছিলাম। এবার আমার বুকের ভিতর টা মোচড় দিলো। ও র হাত ধরে বললাম।

~ তাহলে তুই কি প্রেগনেন্ট?
ও আবার শান্ত কন্ঠে বলা শুরু করলো।
~ না আপু। সেদিন আমাদের মাঝে প্রোটেকশন ছিলো। ও যদি রিলেশন ব্রেক করেদিতো তাহলেও আমি বেঁচে যেতাম।
ওর কাছে আমাদের সেদিনের ফিজিক্যালি ইন্টিমেড হয়ার ভিডিও আছে। এখন যদি আমি ওর কথামতো না চলি ও এটা ভাইরাল করে দেবে।
আমি অবাক হয়ে বলি,
~ কি চাইছে এখন ও?

~ ও চায় আমি নিষিদ্ধ গলিতে গিয়ে শরীর বেচে আসি। আজকে রাত 9 টায় আমাকে টাইম দিয়েছে আমাকে যেতে হবে। এই কথা শুনে আমার পায়ের তলার মাটি সরে গেল। জুঁইকে নিজের দিকে ফিরিয়ে নিলাম।
~ তুই এইসব কি বলছিস! আর তোকে ওইরকম একটা জায়গায় গিয়ে ওই কাজ কেন করতে হবে? এটা কি ধরনের ব্ল্যাকমেল!
~ হুম আপু ওর না কি অনেক টাকার দরকার। ওর বাবা মা টাকা দেবে না বলেছে তাই আমাকে এই কাজ করতে হবে।

~ টাকার প্রয়োজনে! কতো টাকা দরকার ওকে তুই টাকা দিয়ে দে।
~ আমি প্রথমে বলেছিলাম। কিন্তু যেই দাম বলেছে দিতে পারবো না।
~ কতো?
~ 5 লক্ষ টাকা।

~ কি বলছিস!
~ আমার সব শেষ আমি কি করবো আপু?
কান্নায় ভেঙে পড়ে জুঁই। আমি সান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করি। পিয়াস ভাইয়াকে বলবো!
~ জুঁই তুই চুপ কর। আমি কিছু একটা করছি আমি পিয়াস ভাইয়াকে বলছি দেখি কি করা যায়। জুঁই আমাকে জড়িয়ে ধরলো।
~ আপু আপু দোহাই তোমার কাউকে কিছু জানিও না।

আমি ওকে শান্ত করে বেড়িয়ে আসি রুম থেকে। আর ভাবতে থাকি কি করে ওই ছেলের হাত থেকে ও কে বাঁচাই!
অনেক সময় পার হয়ে গেল দুপুরবেলা খাওয়ার জন্য জুঁইকে ডাকতে গিয়ে চিৎকার করে উঠি। ছোট আব্বু ছোট আম্মু ছুটে আসে। জুঁই তখন সিলিং ফ্যানের সাথে ঝুলছে।

সব কিছু থমকে যায়। বাড়িতে শোকের ছায়া নেমে আসে। রাত 8 :30 নাগাদ আমি জুঁই এর রুমে বসে আছি। ওর ফোন টা হাতে নিয়ে দেখি আশিক নামের ছেলেটার অনেক এস এম এস। ইন বক্স খুলে দেখতে থাকি।

—-বাবু অ্যাম রিয়েলি সরি। ভুল করেছি তোমায় এখানে আসতে হবে না ওই কাজের জন্য শুধু একবার এসো। আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাইবো।
ছেলেটা কি সত্যিই তার ভুল বুঝেছে। কিন্তু জুঁই যে আর নেই ছেলেটা কি তা জানে! জুঁই এর ফোনটা নিয়ে বেড়িয়ে পড়ি। পিয়াস ভাইয়া জিজ্ঞাসা করলো।
~ কোথায় যাবি?
~ একটা কাজ আছে সেরে আসছি।

পর্ব ৭

আমি আশিকের সাথে দেখা করবো, কিন্তু কোথায়! এর উল্লেখ তো করেনি। কল তো করা যাবে না মেসেজে দি। সেন্ড করার সাথে সাথেই রিপ্লাই আসলো।
—- যেখানে ডেকেছিলাম সেখানেই এসো, তোমায় কারণ বলবো।

যেখানে ডেকেছিলো মানে ওই নিষিদ্ধ গলিতে! কি করবো, আমার যাওয়াটাও যে প্রয়োজন। গলির সামনে এসে দাঁড়াতেই বুকের মধ্যে ভয়ের সঞ্চার হল। সাহস করে গলিতে ঢুকেই পড়লাম। কতগুলো লোক আমাকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, তাদের তাকানো টা ভালো লাগছে না। ভয় লাগছে যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব এই ছেলেটাকে খুঁজে বের করতে হবে। কল দিচ্ছি আর হাঁটছি, ছেলেটা রিসিভ করলো। আমি কিছু বলার আগেই সে বললো আমার সোজা যে সিঁড়িটা দেখা যাচ্ছে ওই সোজা উঠে আসি, লাইনটা কাট হয়ে গেল।

সিঁড়ি দিয়ে উঠতেই একটা অন্ধকার রুম দেখতে পাই। ফোনের ফ্লাশিং লাইট অন করার আগেই আমার হাত মুখ কেউ বেঁধে দেয় চিৎকার করতে পারি না। আমাকে ফেলে দিলে আমি কিছুর ওপর পরে যাই, সঙ্গে সঙ্গে রুমের লাইট জ্বলে ওঠে। আমার সামনে দাঁড়িয়ে পাঁচজন পুরুষ আর একজন মহিলা খুব হাসছে। অল্পবয়সী পুরুষ টাকে দেখে বুঝতে পারি এটাই সেই আশিক স্মার্ট, হ্যান্ডসাম।
মহিলাটি আশিককে একটা টাকার বান্ডিল ধরিয়ে দেয়।

~ আজকে তুই যেটা চেয়েছিলি তার থেকেও বেশী দিলাম। খাসা মাল আছে, কাস্টমার অনেক দাম দেবে।
~ মাশি তুমি কোন চিন্তা করো না। আরো নিয়ে আসবো। তুমিও খুশি, আমিও খুশি।
আশিক চলে যায়, ও একটুও বুঝতে পারলো না আমি জুঁই না। আমি ভেবেছিলাম ও হয়তো সত্যি ওর ভুল বুঝতে পেরেছে, জুঁই এর মৃত্যুর কথা ওকে জানাতে এসেছিলাম। তার মানে ওই ছেলেটা অনেক দিন ধরেই এই নোংরা কাজের সাথে যুক্ত আছে। জুঁই কে বিক্রি করে দিতো! ওহ গড আমি এখন কি করবো! আমি যে ফেঁসে গেছি, এখান থেকে বাঁচবো কি করে আমি! আমার হাত আর মুখ খুলে দেয় ওই মহিলাটি।

~ আরে কেউ এতো জোড়ে বাঁধে না কি, হাত দুটো যে লাল হয়ে গেছে আহারে!
আমার কেন জানি ওই মহিলার কথা শুনে একটু সাহস হলো। আমি ওনার হাত দুটো ধরে কেঁদে ফেলি।
~ মাশি আমাকে যেতে দিন। আমি বাড়ি যাবো।

~ হা হা হা কি বাড়ি যাবি? আরে এটাই তো তোর বাড়িরে। তোকে যে আমি কিনে নিয়েছি।
~ প্লিজ আমি আপনার পায়ে পড়ি যেতে দিন আমাকে।
~ শোন এখানে একবার এলে আর বেরো না যায় না রে। এই সব কান্না বন্ধ কর আর কাজে লেগে পড়।
লোকগুলো আর মহিলাটি বলেই বেরিয়ে যায়। আমি কি করবো এবার হ্যা কি করবো! আমার ফোনটা, ফোনটা কোথায়! ফোনটা নেই। ফ্লোরে বসে পড়ি। আমি শেষ, কি হবে আমার! না আমি এতোসহজে হার মানবো না। আমি এখান থেকে বেড়িয়ে যাবো। দরজা ধাক্কাতে লাগলাম কিন্তু কেউ খুললো না। কাঁদতে কাঁদতে দরজায় হেলান দিয়ে বসে পড়লাম।

চোখ খুলে দেখি আমি ফ্লোরে শুয়ে আছি। দ্রুত উঠে দাঁড়ালাম। দরজায় বার কয়েক ধাক্কা দিলাম। ছুটে চলে গেলেন দরজার কাছে দরজাটা খুলতেই সকালের মিষ্টি রোদ টা আমার মুখে এসে পড়লো।
নাহ যে ভাবেই হোক আমাকে বেরোতে হবে। দরজা আবার ধাক্কা দিলাম। বেশ কয়েকবার ধাক্কা দেওয়াতে কেউ একজন দরজা টা খুলে দিলো। একটা মেয়ে এগিয়ে এলো। তাকে দেখে কিছু বলতে যাবো তার আগেই সে আমার হাতে একটা চাবি ধরিয়ে দিল।

~ এই নে চাবিটা ধর। ওই দেখ আলমারি ওখানে সবকিছু জিনিস পেয়ে যাবি। তৈরী হয়ে নিচে আয়।
মেয়েটি চলে যায়। হুম এটাই সুযোগ, এই সুযোগ কাজে লাগাতে হবে একবার নীচে যেতে পারলেই দৌড়ে চলে যাবো। দরজাটা তো খোলাই আছে। আর এক মুহূর্ত দেরী না করেই সিঁড়ি বেয়ে নীচে নামলাম। সোজা ছুটতে লাগলাম, কিন্তু একি কোনটা দিয়ে এসেছিলাম সেটাই তো আর খুঁজে পাচ্ছি না। এক জায়গায় দাঁড়িয়ে ছুটতে গেলেই কেউ আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে গিয়ে ফেলে দেয় কারুর পায়ের কাছে। মুখ তুলে দেখি সেই মহিলা। আমার গাল দুটো চেপে ধরে।
~ পালানোর চেষ্টা করছিলি? তোকে বললাম না এখানে একবার এলে আর বেরোনো যায় না।

~ আমি হাত জোড় করছি আপনার কাছে আমাকে ছেড়ে দিন।
কান্না করতে থাকি। একটা মেয়ে এসে আমাকে ধরে।
~ এই ওকে নিয়ে গিয়ে তোদের মতো সাজিয়ে দে। কিছুক্ষণ পর কাস্টমাররা এসে যাবে। দাম উঠবে অনেক দাম হা হা হা।
মেয়েটা আমাকে এক প্রকার জোর করেই টেনে নিয়ে গেল। আমি তার কাছে হাত জোড় করে পায়ে পরে গেলাম।
~ আপু আমাকে এখান থেকে যেতে দিন। আমি এইসব কাজ করবো না। আমাকে মুক্তি দিন।

~ কেঁদে লাভ নাই। তুই কেঁদে কেঁদে মইরা গেলেও তোরে কেউ বাঁচাবানা। এখানে যখন আইসা পরছোস তখন তোরেও শরীর বিলাতে হইবো।
কথাগুলো বলে মেয়েটা আমাকে জোর করেই একটা পাতলা ফিনফিনে শাড়ি পড়িয়ে আমাকে বসিয়ে দেয়।
~ আর শোন তোর কাম হইলো বাবুদের খুশি করা। যতো খুশি করতে পারবি ততো দাম পাইবি।
মেয়েটা চলে যায়। আমি পা দুটো গুটিয়ে জড়োসড়ো হয়ে মাথা নীচু করে বসে থাকি। দুচোখ পানিতে ভরে ওঠে আমার জীবন শেষ আর কখনো বেরোতে পারবো না।
কিছুক্ষণ পর ওই মহিলা ঘরে আসে বুঝতে পারি ওনার গলার আওয়াজে। সাথে কাউকে নিয়ে আসেন তাকে বলছেন।

~ স্যার দেখুন খাস মাল আছে। অনেক তৃপ্তি পাবেন, মন ভরিয়ে দেবে আপনার। আপনার মতো সুদর্শন পুরুষকে এই মেয়েই খুশি করতে পারবে। আরে আগের জনতো অনেক তৃপ্তি পেয়েছে।
কথাশুনে আমি ভয়ে কুঁকড়ে যাই। একবার মুখে তুলে তাকাতেই আমি খুশিতে অবাক হয়ে যাই। আমি ভাবতেই পারছি না পিয়াস ভাইয়া আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। তার মানে আমি এখান থেকে মুক্তি পাবো।

আমি আনন্দে আত্মহারা হয়ে বিছানা থেকে নেমে পিয়াস ভাইয়ার সামনে দাঁড়িয়ে কিছু বলতে গেলেই পিয়াস ভাইয়া আমার গালে সজোরে থাপ্পড় মারে। ওই মহিলা আমাকে মারার কারণ জানতে চাইছে কিন্তু পিয়াস ভাইয়া আমাকে একের পর এক থাপ্পড় মেরেই যাচ্ছে। একসময় আমি লুটিয়ে পড়লে পিয়াস ভাইয়া শান্ত হয়।
~ আপনি কেন মারছেন মেয়েটাকে ওভাবে?
~ আপনি টাকা পেয়ে গেছেন তো। তাই আমি যা ইচ্ছা করতে পারি। ও কে আমি এখান থেকে নিয়ে যাবো।
~ তার জন্য তো ওই মেয়েটাকে আপনাকে কিনতে হবে?

~ এই কার্ড এর ঠিকানায় কাউকে পাঠিয়ে দেবেন টাকা পেয়ে যাবেন।
পিয়াস ভাইয়া আমাকে তুলে নিয়ে বেরিয়ে আসে। গাড়ির ভেতর ছুঁড়ে ফেলে আমি জ্ঞান হারাই।
চোখ মেলে তাকাই, দু হাত দিয়ে চোখ কচলিয়ে পুনরায় তাকাই। আমি একটা রুমে আছি কিন্তু এই রুমটা যে বাড়ির কোন রুম নয় একটু হলেও বুঝতে পারছি। উঠে বসতেই মাথাটা ভারী লাগলো। চারদিকে চোখ বুলিয়ে দেখতে লাগলাম। আমি একটা হোটেলের রুমে আছি। হঠাৎ পিয়াস ভাইয়ার চোখে চোখ পড়ে যায়। পিয়াস ভাইয়া সোফায় বসে মুখ দিয়ে সিগারেটের ধোঁয়া বের করছে। আমি বিছানা থেকে নেমে টলমলে পায়ে পিয়াস ভাইয়ার দিকে এগিয়ে যাই। ফ্লোরে বসে পরে পিয়াস ভাইয়ার পায়ে মাথা দিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠি।

~ আমি তো ভেবেছিলাম আমি আর কখনো ওখান থেকে বেরোতে পারবো না। আমার খুব কষ্ট হচ্ছিল ওখানের লোক গুলো কি বাজে ভাবে তাকাচ্ছিলো আমার দিকে। জানো পিয়াস ভাইয়া ওই আশিক বলে ছেলেটা ও,
আর কিছু বলতে পারলাম না তার আগেই পিয়াস ভাইয়া আমাকে পা দিয়ে ধাক্কা মারলো আমি ছিটকে পড়ে গেলাম। পিয়াস ভাইয়া আমাকে চুলের মুঠি ধরে তুলে বিছানায় ছুঁড়ে ফেললো।

সিগারেট টা ফেলে দিয়ে পায়ে মাড়িয়ে আমার কাছে এগিয়ে এলো। আমি উঠে বসে পিয়াস ভাইয়ার হাত টা ধরলাম।
~ আমার কথাটা শোন না পিয়াস ভাইয়া।

~ চুপপ কোন কথা বলিস না। আমি সব বুঝতে পারছি। তুই কাল কি কাজে বেরোলি। আচ্ছা এবার বুঝছি তুই বাড়ি আসার জন্য কেন ছটফট করছিলি! আমার বাড়িতে থাকলে তো রাতে বেরোতে পারতিস না। আলো জুঁই তোর বোন, আজ আত্মহত্যা করলো। বাড়ির সবাই দেখ শোকাহত আর তুই কি না ছিঃ,
~ না পিয়াস ভাইয়া তুমি ভুল বুঝছো, অনেক বড়ো ভুল। জুঁই এর সুইসাইড এর কারণ আমি জানি। ওই আশিক বলে ছেলেটা জুঁই কে,
আবার থাপ্পড় গালে। আমি এবার শক্ত হয়ে বসে থাকি থাপ্পড় টা জোরেই লাগে। পিয়াস ভাইয়ার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি।

~ তুমি আমাকে মারো পিয়াস ভাইয়া মারো। আমি মার খেতে রাজি আছি কিন্তু তার আগে আমার সব কথাটা শোনা তোমার দরকার। পিয়াস ভাইয়া আমার বাহু চেপে ধরে।
~ এই তুই কি বলবি? কি বলার আছে তোর? জুঁই এর সুইসাইড এর কারণ সেটা আমরা সবাই জানি। জুঁই সেটা সুইসাইড নোটে লিখে গেছে। আর জুঁই মারা গেছে তার বয়ফ্রেন্ড এর সঙ্গে ব্রেকাপ হয়েছে বলে। আরে ওই মেয়েটাতো পাগলী ছিল সামান্য কারণে কেউ সুইসাইড করে। কি জানিস তো আলো ভালোবাসা এমনি হয়।
পিয়াস ভাইয়ার মুখে এই কথা শুনে অবাক হয়ে যাই। জুঁই সুইসাইড নোটে সামান্য এই কথাটা লিখে গেছে। আমি এতো বোকামির কাজ করলাম। নোটের লেখাটা একবার পরে দেখতে পারতাম। আমার মাথায় যে কি চাপলো! আমি কেন এলাম! আমার কথাতো আর কেউ বিশ্বাস করবে না।

~ কি রে কি ভাবছিস। ভেবেছিলি জুঁই এর ওপর দিয়ে কেসটা চালিয়ে দিবি। ভাবলি ও তো মরে গেছে তোর কাজ আরো সুবিধা হলো। ছিহ্ আলো ছিঃ আমার ঘেন্না হচ্ছে।
পিয়াস ভাইয়া আমার মুখোমুখি বসে। হাত দিয়ে চোখের পানি মুছে দেয়।
~ তারপর বল আলো কতদিন ধরে চলছে এসব?

~ না পিয়াস ভাইয়া তুমি আমাকে বিশ্বাস করো।
আমার গালে এক থাপ্পড় পড়লো। গাল দুটো চেপে ধরলো আমি ব্যথায় কুঁকিয়ে উঠলাম।
~ মিথ্যা বলিস না আলো। আচ্ছা তুই আমাকে একটা কথা বল তুই কিজন্য এই দেহ ব্যবসা শুরু করলি? তোকে আমি অপশন দিচ্ছি, অপশন A-টাকার প্রয়োজনে : অপশন B-শরীরের জালা মেটাতে?

আমি পিয়াস ভাইয়ার মুখ থেকে এমন কথা শুনে মুখের ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। এগুলো কি বলছে পিয়াস ভাইয়া!
~ ঠিক বলেছিস আলো ভুল করেছি, বড়ো ভুল। জানিস আলো তোকে আমি ভালোবাসি, ইয়েস আই অ্যাম ইন লাভ। এখন ভালো যখন তোকে বেসেছি তোর সব কিছু জানার, তোর ইচ্ছার, তোর চাহিদার একটু খেয়াল রাখলে এই তোকে বাইরে গিয়ে কষ্ট করতে হতো না।
পিয়াস ভাইয়া আমাকে ভালোবাসে। যাক এর জন্য আমি জানতে পারলাম পিয়াস ভাইয়া অন্য কাউকে না আমাকে ভালোবাসে। কিন্তু পিয়াস ভাইয়া এগুলো কি বলছে!

লেখা – সুশমিতা জানা

চলবে

(পাঠক আপনাদের ভালোলাগার উদ্দেশ্যেই প্রতিনিয়ত আমাদের লেখা। আপনাদের একটি শেয়ার আমাদের লেখার স্পৃহা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আমাদের এই পর্বের “আমার তুমি আছো – Abegi moner kichu kotha” গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম। ধন্যবাদ।)

আরো পড়ূন – আমার তুমি আছো (শেষ খণ্ড) – Abegi moner kichu kotha

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *