শুধু তোমায় ঘিরে (শেষ খণ্ড) – ভালোবাসার রোমান্টিক কথা

শুধু তোমায় ঘিরে – ভালোবাসার রোমান্টিক কথা: তিশাকে টেনে নিজের বুকে জড়িয়ে আয়ান ভাইয়া বললো, জানো তিশা আমি না এখনো ভাবতে পারছি না আমি কাউকে ভালোবাসি। তোমাকে দেখার আগে কখনো এমন হয়নি আমার। তোমাকে দেখার পর থেকে বুকে এক অন্য রকম অনুভূতি হয়েছিলো, তখনি মনের কোনে তোমাকে নিয়ে সপ্নো বুনতে শুরু করেছি।


পর্ব-১২

বাসের সিটে হেলান দিয়ে বসে আছি আমার পাশে তিশা। আমাদের পেছনের সিটেই তাসিন আর আয়ান ভাইয়া বসেছে। দুজনের মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছে না। গুম হয়ে বসে আছে দুজনে।

বাসে উঠে আমি জানালার পাশটায় বসে তিশাকে আমার পাশেই বসিয়েছি তাসিন তো সেই রকম বিরক্ত ওকে কেনো বসতে না দিয়ে তিশাকে বসালাম। আর আয়ান ভাইয়া তো তার থেকেও বেশি বিরক্ত ইসস কতো আশা করে ছিলো তিশার পাশে বসবে।

তাসিন উঠে দাড়িয়ে আমার কানে কানে বললো
মেঘা এটা কি করলে বলোতো! তিশাকে আয়ানের পাশে বাসতে দাও আমি তোমার পাশে বসবো।
চুপচাপ বসে থাকুন কাল রাতে রোহান ভাইয়ার সামনে যা করেছেন এটা তারই শাস্তি।

শাস্তি তো অনেক ধরনের আছে মেঘাপাখি। ওদেরকে একটু সুযোগ করে দাও।
ওদের সুযোগ দেওয়ার কথা বলছেন নাকি নিজের হুমম?
তিশা বলে উঠলো
ভাইয়া যাই বলেন কাজ হবে না আমি ওই হনুমানটার পাশে বসবো না।

শালিকা এটা কিন্তু খুব অন্যয় আমার হবু বউকে আমার কাছে বসতে দিচ্ছো না।

আমি তাসিনের এমন সব কথায় মিটমিট করে হেসে চলেছি। আয়ান ভাইয়া হয়তো আমার ওপর খুব রেগে আছে একটা কথাও বলছে না। আচ্ছা আমি তো ভুল করছি আসলেই তো তিশা আয়ান ভাইয়াকে একসাথে বসতে দিলে ভালো হবে। হয়তো তিশাও মনে মনে এটাই চাইছে বলতে পারছে না।

আমি উঠে দাড়িয়ে তিশাকে বললাম
তিশা একটু পা টা সরাতো আমাকে বের হতে দে।
বাস ছেড়ে দেবে কোথায় যাবি তুই?
বের হই তারপর দেখ কোথায় যাই।

তিশা পা সরাতে আমি বের হয়ে তাসিনদের সিটের সামনে দাড়ালাম। তাসিন গাল ফুলিয়ে বসে আছে আয়ান ভাইয়া আমার দিকে একবার তাকিয়ে অন্য দিকে তাকালো। দু ভাইয়ের থেকে কেউ কম নয় দেখছি।
আয়ান ভাইয়াকে উদ্দেশ্য করে বললাম
ভাইয়া ওঠো তো আমি এখানে বসবো।

দুজনেই যেনো ভূত দেখেছে এমন ভাবে তাকালো আমার দিকে। তিশাও অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
একটু নিচু হয়ে আয়ান ভাইয়াকে বললাম
সরি ভাইয়া তাসিনকে শাস্তি দিতে গিয়ে তো তোমাদের শাস্তি দিতে পারিনা তাইনা। যাও তিশার পাশে বসো আমি এখানে বসছি।
আয়ান ভাইয়া হেসে দিয়ে বললো
এইতো আমার বোনের মতো কাজ করেছিস।

হয়েছে যাও বসো ওই সিটে।
তিশা বলে উঠলো
মেঘা এটা কি হলো আমাকে একা রেখে তুই ওখানে বসছিস কেনো?
একা কোথায় আয়ান ভাইয়া বসছে তোর পাশে। শোন সামনে তাকিয়ে চুপচাপ বসে থাক পিছনে তাকাবি না।
তিশা মুখ ভেংচি দিয়ে ঘুরে বসলো।

এই যে পিচ্চি সরো আমাকে ওপাশে বসতে দাও।

বলেছি না পিচ্চি বলবেন না। আপনি অন্য সিটে গিয়ে বসুন এখানে আমি একাই বসবো।
বাসে আমার জন্য এই একটাই সিট খালি আছে বুঝলে। কথা না বাড়িয়ে বসতে দাও।
তিশা দেখলো সত্যি কোনো সিট ফাকা নেই তাই সরে জানালার পাশ ঘেষে বসে পড়লো।
আয়ান ভাইয়া একটু হেসে ওর পাশেই বসলো।

এদিকে তাসিন এখনো গাল ফুলিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে বসে আছে।
আমি তাসিনের হাতের ওপর হাত রাখলাম উনি তাকালো না। বা বাহ কতো অভিমান!
শুনুন না আর অভিমান করতে হবে না আমি আপনার পাশেই তো বসেছি।
কেনো বসেছো যাও আমাকে তো শাস্তি দেবে তুমি।
আমি কিন্তু তমা আপুকে ডাকবো এখন এমন করলে।
না থাক আমাদের মাঝে আপুকে জড়াবে কেনো।

হুম। আপনি এই সিটে আসুন তো আমি জানালার পাশে বসবো।
তাসিন কোনো কথা না বলে উঠে আমাকে বসতে দিয়ে উনি আমার পাশে বসলো।
বাস ছেড়ে দিয়েছে তাসিন কোনো কথা বলছে না। আমি উনার হাত জড়িয়ে বললাম
প্লিজজ এমন ভাবে থাকবেন না কথা বলুন।
কি বলবো?
যা ইচ্ছে বলুন।

উনি মুচকি হেসে আমার কোমড় জড়িয়ে নিজের কাছে নিয়ে বললো
আই লাভ ইউ মেঘাপাখি।

উনি যে এ সমনে এ কথা বলবেন সেটা আমার ভাবনার বাহিরে ছিলো। আমি তাসিনের কাধে মাথা রেখে বললাম
আপনি না সত্যি একটা পাগল।

হুমম পাগল। তোমার প্রেমে পাগল আমি।

তিশা জানালার দিয়ে বাইরে তাকিয়ে বসে আছে আয়ান ভাইয়া তিশার হাতের ওপর হাত রাখলো। তিশা কেপে উঠে তাকালো। নিজের হাতটা ছাড়ানোর জন্য চেষ্টা করছে আয়ান ভাইয়া আরো শক্ত করে ধরে বললো
হাতই তো ধরেছি এমন করছো কেনো হুম?
কেনো ধরবেন আমার হাত ছাড়ুন।

ভালোবাসি তাই ধরেছি।
তিশা আর কিছু বললো না ওভাবেই বসে থাকলো। আয়ান ভাইয়া তিশার দিকে আরে একটু চেপে বসলো
ভেবেছো কিছু?
কি ভাববো!
ওই যে ওটাই শুন্যর বাইরে আসা যায় নাকি।

জানিনা। বলেই বাইরে তাকালো।
আয়ান ভাইয়াও আর কিছু বললো না তিশার হাত ধরেই বসে রইলো। কিছুক্ষণ পর খেয়াল করলো তিশা সামনের দিকে বার বার ঝুকে পড়ছে। আয়ান ভাইয়া আমাকে ডাকলো। আমি তাসিনকে ছেড়ে উঠে দাড়িয়ে বললাম
কি হলো ভাইয়া ডাকছো কেনো?

মেঘ তিশার কি গাড়িতে ঘুমানোর অভ্যাস আছে?
হ্যা ভাইয়া ও দুরে কোথাও জার্নি করলেই ঘুমিয়ে পরে।
ওও আচ্ছা ঠিকআছে তুই বসে পর।

তিশা ঘুমে পড়ে যেতে নিলে আয়ান ভাইয়া ওকে এক হাতে আগলে নিলো। একটু পর ভাইয়া খেয়াল করলো তিশার মাথাটা উনার কাধে। ভাইয়া মুচকি হেসে ওকে আরো একটু জড়িয়ে নিলো। ওর মুখের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললোইসস আমার পিচ্চিটাকে ঘুমের মধ্য আরো মায়াবি লাগছে, ভালোবাসি তোমাকে ঘুমপরী।

৬ঘন্টা পর আমরা ঢাকায় এসে পৌছোলাম তিশা তখনো ভাইয়ার কাধে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছিলো। তাসিন ভাইয়াকে বললো
একটু পরে তো নামতে হবে ওকে ডেকে তোল এবার।

আয়ান ভাইয়া তিশাকে ডেকে তুললো, তিশা ঘুম ভেঙে দেখলো ও আয়ান ভাইয়ার খুব কাছে আর উনার কাধে মাথা রেখে ঘুমিয়েছিলো। ও কিছুটা লজ্জা পেয়ে একটু সরে আসলো। আয়ান ভাইয়া হেসে বললো
পিচ্চি এতো ঘুম কই পাও শুনি? সারাটি পথ ঘুমিয়ে কাটালে আর আমার কাধ টাও ব্যাথা করে দিয়েছো।
আমি বুঝতে পারিনি ঘুমের ঘোড়ে কখন আপনার কাধে মাথা রেখেছি, সরি।
এ তো আর নতুন নয়!আমার কি মনে হচ্ছে জানো তুমি ইচ্ছে করেই ঘুমিয়েছো যেনো আবারো আমার কাছে আসতে পারো। বাকা হেসে বললো।

তিশা রাগি চোখে তাকালো ভাইয়ার দিকে ওর এমন রাগি ফেস দেখে ভাইয়া হাসতে লাগলো। আমি ভাইয়াকে বললাম
ভাইয়া বাড়িতে গিয়ে হেসো বাস থেকে নামতে হবে উঠো এখন।

রাতে রুমে বসে পড়ছিলাম তখন তিশা ফোন দিলো
হ্যা তিশা বল।
মেঘা তোকে একটা কথা বলার জন্য ফোন দিয়েছি।
কি কথা?
আগে বল হাসবি না।
আচ্ছা হাসবো না বল।

আ আমি আয়ানকে খুব মিস করছি রে।
আমার সত্যিই হাসি পাচ্ছিলো কিন্তু এখন হাসা যাবে না হাসিটা চেপে বললাম
সে তো করবি যাকে ভালোবেসে ফেলেছিস তাকে মিস করাটাই স্বাভাবিক তাইনা।
ম মমানে মেঘা কি বলছিস ততুই?

হয়েছে আর ন্যাকামো করতে হবে না। তিশা তুই আমাকে কি ভাবিস বলতো আমি বুঝিনা কিছু? শোন তিশা আয়ান ভাইয়া তোকে ভালোবাসে তা আমি তাসিন জানি আর তুই ও যে ভাইয়াকে ভালোবেসে ফেলেছিস সেটাও আমি বুঝতে পেরেছি। সো এতো রং ঢং না করে ভাইয়াকে মনের কথা বলে দে।
তুই সব জানিস!

হুমম জানি। এখন ফোন রাখ তাসিন কল দিচ্ছে।
তিশা কেটে দিলো আমি তাসিনের ফোন রিসিভ করে তিশার কথা গুলো বললাম। হঠাৎই তাসিনের পাশে জোরে আওয়াজ হলো
কিসের আওয়াজ হলো আপনার পাশে?

কিসের আবার তিশার বাদরটা তিশা ওকে মিস করছে শুনে লাফিয়ে উঠেছে। বেড সাইড টেবিলে গ্লাস ছিলো ওটা পরে ভেঙে গিয়েছে।

আমি জোরে হেসে উঠলাম তাসিনও হাসছে।

আয়ান ভাইয়া তাসিনের থেকে ফোনটা নিয়ে আমাকে বললো
মেঘ তিশার বাড়ির ঠিকানাটা দে না বোন আমি এখনি দেখা করবো ওর সাথে।
ভাইয়া মাথা ঠিক আছে তোমার! প্রায় ১১ টা বাজে এখন ওদের বাড়িতে কি করে যাবে তুমি? আমি তোমাকে কাল ওর সাথে দেখা করিয়ে দিবো।

কাল না আমি আজ দেখা করবো ও আমাকে মিস করছে ভাবতে পারছিস মেঘ! দে না ঠিকানাটা।
তাসিন ফোন নিয়ে বললো
তোমরা পারো মেঘা তুমি তো আমাকে পাগল করেছো এখন তোমার ফ্রেন্ড আমার ভাইটাকে পাগল করলো।
পাগল হতে কে বলেছে আপনাদের হ্যা।

কে বলেছে আচ্ছা সেটা পরে বলবো। শোনো তিশাদের বাড়িটা তো আমাদের এখান থেকে কাছেই আমি আয়ানকে দিয়ে আসবো। তিশাকে আগেই কিছু বলো না।
কিন্তু তিশার বাড়ির কেউ দেখলে কি হবে?

সেটা নিয়ে ভেবো না রাখছি এখন ওকে পৌছে দিয়ে কল দিবো।
আমার তো টেনশনে ঘাম হচ্ছে না জানি ভাইয়াটা তিশার সাথে কি ভাবে দেখা করবে!

তিশার রুমটা দোতলায় তাসিন আগে গিয়েছে তাই চিনতে প্রবলেম হয়নি। তাসিন ভাইয়া নিচে থেকে আয়ান ভাইয়াকে উপরের ওঠার ব্যবস্থা করে দিয়ে চলে আসলো। আয়ান ভাইয়া উঠে তিশার রুমের ব্যালকনিতে দাড়ালো দরজাটা লক করা।

এখন আমি কি করি দরজাটা তো ভেতর থেকে লক করা মনে হচ্ছে! দরজাটা নক করে দেখি একবার।
আয়ান ভাইয়া এগিয়ে দরজায় হাত দিতেই কিছুটা ফাকা হয়ে গেলো
বাহ দরজাটা তাহলে খোলাই ছিলো উফ আয়ান তোর ভাগ্যটা খুব ভালো। মনে মনে বললো।
আয়ান ভাইয়া ভেতরে ঢুকলো
একি তিশা কোথায়! তাসিন আমাকে ভুল রুমে পাঠায় নি তো?
তখনি ওয়াশরুমের দরজা খোলার শব্দ পেয়ে আয়ান ভাইয়া ঘুরে তাকালো।
তিশা বের হয়ে আয়ান ভাইয়াকে নিজের রুমে দেখে চমকে গেলো। অবাক হয়ে বললো
একি আপনি এতো রাতে আমার রুমে! জোড়েই বললো কথাটা।
আয়ান ভাইয়া দ্রুত গিয়ে তিশার মুখটা চেপে ধরে বললো
আরে এতো জোড়ে কথা বলছো কেনো আমি শুনতে পাই তো নাকি। বলেই মুখে থেকে হাত সড়িয়ে নিলো।
আপনি এখানে কেনো আর কি ভাবে আসলেন?

কি ভাবে এসেছি সেটা তোমার না জানলেও চলবে। আমি এখানে এসেছি আমার পিচ্চিটাকে দেখতে সে নাকি আমাকে খুব মিস করছে।

তিশা বিড়বিড় করে বললোহারামি মেঘাটা বলে দিয়েছে আমি উনাকে মিস করছি, তোকে পাই সামনে একবার।
কি হলো বিড়বিড় করে কাকে বকছো?

কাউকে না। আপনার দেখা হয়েছে এখন যান আপনি।
দু মিনিট হলো না এসেছি এটুকু দেখাতে মন ভরে নাকি। বলেই তিশার হাত ধরে নিজের কাছে নিয়ে আসলো।
আমাকে এভাবে ধরেছেন কেনো ছাড়ুন।

এমন ভাবে বলছো যেনো আমার কাছে আগে আসোনি!
ছাড়ুন অস্বস্তি লাগছে।

আয়ান ভাইয়া ওকে ছেড়ে দিয়ে বললো
হুম ছাড়লাম। আচ্ছা তিশা সত্যি খুব মিস করছিলে আমায়?
উহু একটুও না। নিচে তাকিয়ে।

ওওও তাহলে আর কি আমি বরং চলেই যাই কেউ তো আমাকে মিস করে না আর ভালোবাসা তো কতো দুরে।
তিশা তাকালো ভাইয়ার দিকে, ভাইয়া তিশাকে বাই বলে ব্যালকনির দিকে যেতে নিলে তিশা দ্রুত পায়ে এগিয়ে ভাইয়াকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।

ভাইয়া ভেবেছিলো তিশা উনাকে ডাকবে কিন্তু এভাবে যে জড়িয়ে ধরবে ভাবতে পারেনি হা করে পাথরের মতো দাড়িয়ে আছে।

তিশা ওভাবেই জড়িয়ে ধরে বললো ভালোবাসি আয়ান খুব ভালোবেসে ফেলেছি আপনাকে।
আয়ান ভাইয়ার ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠলো উনি ঘুরে দাড়িয়ে তিশার দুগালে হাত দিয়ে বললো
আমি জানি তো তুমি আমাকে ভালোবাসো তোমার সেদিনের শুন্য বলার পিছনে যে এটাই ছিলো আমি বুঝতে পেরেছিলাম। শুধু অপেক্ষায় ছিলাম তোমার মুখ থেকে ভালোবাসি কথাটি শোনার জন্য। বলেই তিশার কপালে ঠোঁট ছোয়ালো।

তিশা মুচকি হেসে বললো হনুমান একটা সব জেনেও এমন ঢং করছিলেন এ কয়দিন।
হ্যা গো পিচ্চি।

তিশাকে টেনে নিজের বুকে জড়িয়ে আয়ান ভাইয়া বললো, জানো তিশা আমি না এখনো ভাবতে পারছি না আমি কাউকে ভালোবাসি। তোমাকে দেখার আগে কখনো এমন হয়নি আমার। তোমাকে দেখার পর থেকে বুকে এক অন্য রকম অনুভূতি হয়েছিলো, তখনি মনের কোনে তোমাকে নিয়ে সপ্নো বুনতে শুরু করেছি। এখন আমার সব চাওয়া পাওয়া সপ্নো শুধু তোমায় ঘিরে।

পর্ব ১৩

নিজের রুমে দুগালে হাত রেখে বসে আছি তিশা পাশে থেকে বলে উঠলো
মেঘা এভাবে বসে থাকার মানেটা কি বলবি আমায়? কোনো প্রবলেম হয়েছে কি?
হুম প্রবলেম রে তিশা বড় প্রবলেম।

কি হয়েছে বল না?
তিশা কাল খালামনিরা আসবে আমার আর তাসিনের বিয়ের ডেট ঠিক করতে!
কিহ এ তো খুব ভালো কথা! তোর এখন উড়াধুরা ডান্স করার কথা আর তুই মুখটা পেচার মতো করে বসে আছিস। তুই কি এটাকেই প্রবলেম বলছিস?
হুমম
ওই হারামি এতে প্রবলেমের কি আছে শুনি? তুই আর তাসিন ভাইয়া দুজন দুজনকে ভালোবাসিস তাহলে বিয়ে যত তাড়াতাড়ি হবে ততই ভালো তাইনা।

এই বিয়ের কথা শুনেই তো ভয়ে আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে।
কিসের এতো ভয়? ভ্রু কুঁচকে বললো তিশা।

জানি না কেমন যেনো একটা নার্ভাসনেস কাজ করছে।
তিশা আমার কথায় জোরে জোরে হাসতে লাগলো।

ওই পেত্নি হাসছিস কেনো তুই?
হাসবো না তো কি কাঁদবো! ভালোবাসিস যাকে তাকেই তো বিয়ে করবি তাহলে এতো ঢং করার কি আছে হুম?
হেসে নে বেশি করে হেসে নে আমারো সময় আসবে।

আমার টা পরে ভাবিস আগে বল শপিং এ কবে যাবি? উফ মেঘা আমি তো ভাবতে পারছি না তোর বিয়ে হবে!
এই তোর মাথা ঠিক আছে তিশা? নাকি আয়ান ভাইয়া তোর মাথাটা পুরোই চিবিয়ে খেয়েছে! কাল বিয়ের দিন ঠিক করবে তারপর তো শপিং এর কথা আসবে আর তুই আগেই লাফাচ্ছিস।

আমার মাথা তোর ওই বাদর ভাই চিবিয়ে খাবে! কি যে বলিস না তুই উল্টো আমি তার মাথা চিবিয়ে খাবো।
হুম খেতেও পারিস পেত্নি বলে কথা! আহারে আমার ভাইটা শেষ পর্যন্ত একটা পেত্নির প্রেমে পড়লো।
মেঘা ভালো হচ্ছে না কিন্তু। বলেই আমাকে মারতে লাগলো।

তখনি কেউ বলে উঠলো
এটা কি করছো পিচ্চি আমার বোনটাকে মেরে ফেলবে নাকি? ওকে ছেড়ে আমাকে মারো আমি কিছু মনে করবো না।
আয়ান ভাইয়া হেসে কথাগুলো বলে খাটে পা ঝুলিয়ে বসে পড়লো।

তিশা চুপ করে দাড়িয়ে পড়লো আর আমি ভাইয়াকে বললাম
দেখেছো তো ভাইয়া তিশা বিয়ের আগেই ননদের ওপর টর্চার করছে।
আমি মটেও টর্চার করিনি তুই আমাকে ও কথা কেনো বললি।

ব্যাস আবার লেগে গেলো আমাদের। আয়ান ভাইয়া দুহাতে কান চেপে ধরে জোরে বললো
তোরা থামনি! আমার কানের তো ১২ বেজে গেলো তোদের ঝগড়াতে। আর এই যে পিচ্চি কম কম কথা বলতে পারো না। তিশাকে বললো।

হ্যা এখন তো সব আমার দোষ তাইনা। আর কতবার না বলেছি আমাকে পিচ্চি বলবেন না।
তো কি বলবো পিচ্চির আম্মু বলবো? তাহলে তো তার ব্যবস্থা জলদি করতে হবে তাইনা? চোখ মেরে বললো।
তিশা কিছু না বলে রেগে অন্য দিকে ঘুড়ে দাড়ালো।

আয়ান ভাইয়া আমাকে বললো
মেঘ চোখটা একটু বন্ধ কর তো।

কেনো ভাইয়া?
যা বলেছি কর। আমি বলার আগে চোখ খুলবি না।
ঠিকআছে করলাম।

আমি চোখ বন্ধ করতেই আয়ান ভাইয়া তিশাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো। তিশা চমকে উঠলো হঠাৎ এভাবে ধরায়। ভাইয়া তিশার কানে কানে ফিসফিসিয়ে বললো
তুমি কি যানো তোমার এমন রাগি চেহারাটা দেখতে কতটা সুইট লাগে মন চাইছে খেয়ে ফেলি তোমায়, বলেই তিশার গালে একটা চুমু খেয়ে ছেড়ে দাড়ালো।

আর তিশা ও তো বরফের মতো শক্ত হয়ে চোখ বড় বড় করে দাড়িয়ে আছে। আমি সবটাই দেখেছি ভাইয়া যখনি ওকে ছাড়লো আমি আবার চোখ বন্ধ করে নিলাম।
মেঘ এবার চোখ খুলতে পারিস।

হুম কাজ তো শেষ তাইনা। বলেই মুচকি মুচকি হাসতে লাগলাম।
ওরে পাজি তুই দেখেছিস!

কই না তো আমি কিছু দেখিনি।
তিশার কাছে গিয়ে ওর হাতে একটা চিমটি কেটে বললাম
কিরে পেত্নি তোর বকবকানি গুলা কোথায় গেলো এখন।

তিশা বিষ্ফোরিত চোখে আমার দিকে তাকালো তারপর আয়ান ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললো
ভাই বোন সব গুলো এক রকম। বলেই বেড়িয়ে গেলো।

খালামনি খালু তমা আপু ইমরান ভাইয়া এসেছে বিয়ের দিন ঠিক করতে। তাসিন আসেনি তবে আমাকে জালিয়ে মারছে বার বার ফোন দিয়ে।

কি হয়েছে এত বার ফোন দিচ্ছেন কেনো?

ইচ্ছে করছে তাই। আমাকে ওরা কেনো নিলো না বলোতো কোথায় ভেবে রেখেছিলাম তোমাকে আজ একটু দেখবো।
কেনো আগে দেখেন নি বুঝি?
৫দিন হয়েছে দেখি না ভাবতে পারছো মেঘাপাখি! আমার তো এখনি ছুটে আসতে মন চাইছে। আচ্ছা কি পড়েছো তুমি আজকে শাড়ি পড়েছো?

পড়তে চাইনি তমা আপু জোর করে পড়িয়ে দিলো।
হুম ভালো হয়েছে এখনি আমাকে ছবি পাঠাবে।

ছবি তুলতে আমার ভালো লাগে না জানেন না আপনি?
ওহ, তাহলে ভিডিও কলে এসো, খুব দেখতে ইচ্ছে করছে তোমাকে তারপর আবার শাড়ি পড়েছো না জানি কতটা সুন্দর লাগছে তোমায়।
এত দেখতে হবে না পরে দেখবেন।

হুমম কি আর করা কপাল খারাপ হলে যা হয় ঠিকআছে পরেই দেখে নিবো।
অরিন আমার কাছেই ছিলো আমাদের কথার মাঝেই ও বললো
মামি ওইতা কি? একটা সোপিস দেখিয়ে।

তাসিন হেসে বললো বাহ আমার অরিন আম্মুটা মামি বলতে শিখে গিয়েছে! ওকে আমার হয়ে একটা পাপ্পি দিয়ে দাও তো মেঘাপাখি।

আমি খালামনির পাশে বসে আছি খালামনি একটা আংটি আমার আঙ্গুলে পড়িয়ে দিলো। তমা আপুও নানা রকম কথা বলে চলেছে। বাবা আর খালু অন্য সোফায় বসে কথা বলছে। ইমরান ভাইয়া তমা আপুকে বললো
তাসিনকে নিয়ে আসলে ভালো হতো ও তো আসতেই চেয়েছিলো।
তমা আপু বললো
বাবা না করলো আসতে। বললো আজ তো দিন তারিখ দিবো আজ ওর গিয়ে কাজ নেই।
অবশেষে বিয়ের ডেট দেওয়া হলো আজ থেকে ১০ দিন পর। আপুরা চলে যাবে তাই বিয়েটা তাড়াতাড়ি সেরে ফেলবে।

মায়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছি মা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে
মেঘা তোর কি মন খারাপ মা? এভাবে এসে কোলে শুয়ে পড়লি যে!
এমনি ভালোলাগছিলো না।
কেনো রে তাসিন কি কিছু বলেছে তোকে?

না মা উনি কি বলবেন। আচ্ছা মা বিয়ে হলে মেয়েদের নিজের বাড়ি ছেড়ে কেনো চলে যেতে হয়?
এবার বুঝতে পারলাম আমার মেয়েটার মন খারাপ কেনো। মারে এটাই যে নিয়তি মেয়েদের নির্দিষ্ট ঠিকানা তো তার শশুর বাড়ি সব মেয়েকেই যে তা মেনে নিতে হয়। ওই বাড়ি এবং বাড়ির মানুষগুলো কেই আপন করে নিতে হবে।
মা তোমাকে আর বাবাকে ছেড়ে আমি যাবো না।

পাগলি মেয়ের কথা শোনো। তোকে কি অচেনা কোনো পরিবারে দিচ্ছি আমরা তোর খালামনি খালু ওরা তোকে কখনো কিছুতে বাধা দিবে না আর তাসিন ও তো আরো বাধা দিবে না। তোর যখন মন চাইবে চলে আসবি।
আচ্ছা মেঘা এখনি তুই এসব নিয়ে মন খারাপ করছিস কেনো বলতো। এখনো তো ১০ দিন দেরি আছে।
আমার এখনি খারাপ লাগছে মা।

বাবা তখনি রুমে এসে বললো
আমার মেঘা মায়ের কি জন্য খারাপ লাগছে? মায়ের পাশে বসতে বসতে বললো।
মা বাবাকে বললো সব। বাবা হেসে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো
মেঘা এত তাড়াতাড়ি আমিও তোমার বিয়েটা দিতে চাইনি।

তোমার খালু বললো তমা আর ইমরান এক মাসের বেশি থাকবে না তাই বিয়ের কাজটা সেরে ফেলতে চায়। ওদের দিকটাও তো দেখতে হবে। তমা তাসিনের একমাত্র বোন ওকে ছাড়া কিভাবে হবে।
মা বললো
অনেক রাত হয়ে গিয়েছে মেঘা যা গিয়ে ঘুমিয়ে পর এখন।

বাবাও বললো
হ্যা মেঘা মা যাও ঘুমিয়ে পড়ো বেশি রাত জাগা ভালো নয়।
আমি উঠে বাবা মা দুজনের গালে চুমু দিয়ে রুমে চলে আসলাম।

পরের দিন সকালে ঘুম ভাঙলো ফোনের রিংটনে। আমার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটানো মানে চরম বিরক্তিকর একটা ব্যাপার। ফোনটা রিসিভ করে ঘুম ঘুম কন্ঠে বললাম।
ওই কেরে আমার ঘুমটা ভাঙিয়ে দিলি।

ওপাশ থেকে তাসিন হেসে বললো
তোমার হাফ হাজবেন্ড গো মেঘাপাখি। ইসস এত সুন্দর করে ঘুম জড়ানো কন্ঠে কেউ কথা বলতে পারে আমার জানা ছিলো না। তোমার আর কি কি গুন আছে বলোতো যা আমি জানি না।
উনার কথা শুনে চোখ মেলে ভালো ভাবে তাকালাম ভ্রু কুঁচকে বললাম।

আমার কোনো গুন নেই আপনি এত সকালে কেনো ফোন দিয়েছেন বলুন।
কেনো হবু বউকে ফোন দিতে হলে সকাল বিকেল রাত লাগে নাকি যখন তখন দেওয়া যায়।
তাই বলে এত সকালে আমার ঘুমটা ভাঙাবেন আপনি?

তুমি তো সকালেই উঠো আজ এখনো ঘুমিয়ে ছিলে সেটা আমি বুঝবো কি করে।
হয়েছে আসল কারনটা কি বলুন?

কারনটা হলো ১০ টার মধ্য রেডি হয়ে থেকো শপিং এ যেতে হবে হাতে সময় নেই বেশি। আপু বলছিলো শপিং এর ঝামেলাটা আগে শেষ করবে।
আজকেই শপিং করবো!

না বিয়ের পরের দিন গিয়ে বিয়ের শপিং করো মাথা মোটা একটা। আজকে না গেলে সময় হবে না হাতে মাত্র ৯ দিন আছে দেখতে দেখতে চলে যাবে।

আপনি আমাকে মাথামোটা বললেন! মুখ ফুলিয়ে বললাম।

হায় আল্লাহ এই মেয়ে কি কিছুই বুঝে না। আচ্ছা সরি গো আমার ভুল হয়ে গিয়েছে আর বলবো না।
হুম, শুনুন না তিশা যাবে না আমাদের সাথে?

তুমি কি ভেবেছো আয়ান ওকে বলেনি, তুমি রেডি থেকো আমি গিয়ে নিয়ে আসবো তোমাকে তিশাও টাইমলি শপিং মলে পৌছে যাবে।

ঠিকআছে রাখছি এখন।

রাখছি মানে! সকালে যে সুইট মর্নিং দিতে হয় জানো না। ওটা দিয়ে তারপর রাখবে।
আমি খুব ভালোভাবেই বুঝতে পারছি উনি কি চাইছেন। আমি মজা করে বললাম
সুইট মর্নিং দিয়ে কি করে খায় না মাথায় দেয়?
মেঘা ফাজলামো কেনো করছো দাও না।

ফাজলামো কেনো করবো বলুন না কি করে?
কি করে তাইনা কাছে পাই তারপর বুঝাবো।
আমি আর কিছু বললে রেগে যেতে পারে তাই কিছু না বলে ফোনটা কেটে দিলাম।

পর্ব ১৪

শপিং মলে তিশার জন্য অপেক্ষা করছি ওর আসার কোনো খবর নেই। আয়ান ভাইয়াকে বললাম
ভাইয়া কোথায় তোমার পিচ্চি আসছে না কেনো?

একটু আগেও ফোন দিয়েছিলাম বললো আর ৫ মিনিট লাগবে।
পেছন থেকে তিশা বলে উঠলো
আমি চলে এসেছি মেঘা সরি রে একটু লেট হয়ে গেলো।

একটু না ম্যাম পুরো ১৫ মিনিট লেট করেছেন আপনি। আয়ান ভাইয়া বললো।
তাতে কি হয়েছে। তাসিন ভাইয়া আপনি বলুন না একটু লেট হলে কি হয়।

কিছুই হয় না গো শালিকা এবার চলো আপু অলরেডি শাড়ি দেখা শুরু করে দিয়েছে।

আমি তাসিন আগে আগে হাটছি আর তিশা আয়ান ভাইয়ার মাথা নষ্ট করে ফেলছে হাজারটা কথা বলে। আয়ান ভাইয়া তিশাকে বললো
তিশা এত কথা তুমি কি করে বলো হ্যা এটা শপিং মল কম কথা বলো।

তারমানে আমার কথা বলা আপনি পছন্দ করেন না তাইনা। যান আপনার সাথে আমি আর কথা বলবো না।
আরে এভাবে বলছো কেনো। এই তিশা আমি তো জাস্ট কম কথা বলতে বলেছি রাগ কেনো করছো।
তিশা মুখ ভেঙ্গিয়ে আগে আগে হাটতে লাগলো। আয়ান ভাইয়া নিজে নিজেই বলতে লাগলো
এ মেয়ে আসলেই একটা পিচ্চি।

বিয়ের সব কিছু কেনাকাটা শেষ করে বের হচ্ছিলাম হঠাৎ করেই আবির এসে আমাদের সামনে দাড়ালো। আমি তাসিনের হাতটা চেপে ধরলাম আবিরকে দেখে। আবির হেসে তাসিনকে বললো
কেমন আছিস তাসিন? শুনলাম বিয়ে করছিস কই আমাকে তো ইনভাইট করলি না।

তাসিনের দিকে তাকালাম উনার চোখ দুটো লাল হয়ে গিয়েছে আমার হাতটা আরো চেপে ধরেছে, উনি যে এ মুহুর্তে নিজের রাগটা কনট্রোল করতে চাইছে বুঝতে পারছি। তাসিন মুখে জোরপূর্বক হাসি ফুটিয়ে বললো
আমি খুব ভালো আছি। আর আমি যাকে তাকে তো আমার বিয়েতে ইনভাইট করি না।
তাসিন আমি তোর কলেজ ফ্রেন্ড ছিলাম।

ফ্রেন্ড কে ফ্রেন্ড! তোর মতো একটা বিশ্বাসঘাতক আমার ফ্রেন্ড হতে পারে না।
আবির নিজের মাথাটা নিচু করে একটু হেসে আমার দিকে তাকিয়ে বললো
তো মেঘা বিয়েটা তাহলে তাসিনকেই করছো!

তাসিন এবার রেগে গিয়ে কিছু একটা বলতে নিলে আমি উনাকে থামিয়ে বললাম
চলুন এখান থেকে আপুরা গাড়িতে ওয়েট করছে।
তিশাও বললো
হ্যা ভাইয়া চলুন।

আয়ান ভাইয়া কিছু বুঝতে না পেরে তিশাকে বললো
ব্যাপার কি বলোতো কে এই ছেলে?
আমি আপনাকে পরে সব বলবো। আপনি তাসিন ভাইয়াকে নিয়ে চলুন এখান থেকে।
আমরা তাসিনকে নিয়ে চলে আসলাম সেখান থেকে।

আবির ওখানে দাড়িয়ে একটা শয়তানি হাসি দিয়ে বললো
তাসিন আমাকে তুই অপমান করলি তাও আবার মেঘার সামনে এটা তো আমি মেনে নিতে পারি না রে দোস্ত। আমিও দেখবো মেঘাকে তুই নিজের করিস কিভাবে। মেঘাকে যে আমার হতে হবে আর সে ব্যবস্থাটাই করবো।

আপুরা অন্য গাড়িতে গিয়েছে, আর আমরা ৪ জন একটাতে আয়ান ভাইয়া ড্রাইভ করছে তিশা ভাইয়ার পাশে। আমি আর তাসিন পেছনে বসেছি।

তাসিন চুপচাপ বসে আছে, মনে হচ্ছে কিছু ভাবছে। আমি উনার হাতের ওপর হাত রাখলাম উনি তাকালেন আমার দিকে
আপনি কি কোনো কিছু নিয়ে চিন্তিত?
আবির হঠাৎ কোথা থেকে আসলো বলোতো মেঘা, ও আবার নতুন করে কিছু করবে নাতো!
আপনি ওই পাজি লোকটাকে নিয়ে এখনো ভাবছেন!

চিন্তা হচ্ছে মেঘা আবির একরোখা একটা ছেলে ও যা চায় তা নিজের করেই ছাড়ে আর ও তোমাকে চায় মেঘা ও যদি
উনাকে থামিয়ে আমি বললাম
চাইলেই হবে নাকি হুম আপনার থেকে আমাকে আগেও দুরে সরাতে চেয়েছিলো পেরেছে কি। এখনো পারবে না, আমি শুধু আপনারি থাকবো। আবির যাই করুক না কেনো আমার বিশ্বাসকে ভাঙতে পারবে না।
তাসিন আমাকে এক হাতে জড়িয়ে নিয়ে বললো
তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচতে পারবো না মেঘাপাখি কখনো ছেড়ে যেয়ো না আমাকে।

কোথায় যাবো আপনাকে ছেড়ে, আমি বাঁচতে পারবো নাকি আপনাকে ছাড়া।
তিশা সামনে থেকে হেসে বললো
মেঘা আমরা কিন্তু সবটা শুনেছি।

আমি কিছুটা হেসে বললাম

কি আর শুনেছিস আর আমি যে দেখেছি। তাইনা ভাইয়া?
আয়ান ভাইয়া মুচকি হেসে বললো
ওইটা তো কিছুই না আরো দেখবি? তিশার দিকে আড় চোখে তাকিয়ে।
তিশা বিরক্তি নিয়ে বলে উঠলো
আল্লাহ কেনো যে আমাকে এই ভাইবোনের হাতে ফেললে। মেঘা তুই কি আসলেই আমার বেস্টু নাকি শুধু এই বাদরটার বোন বলতো?

আমি বলতে নিলে তাসিন আমাকে থামিয়ে বললো
তিশা, মেঘা সবার আগে আমার বউ বুঝলে তারপর অন্য কিছু।

আয়ান ভাইয়া তিশাকে বললো
আমাকে বাদর বলছো তাইনা মনে রেখো পরে পুষিয়ে নিবো। আর শোনো আমার জন্য তোমার উপকারী হয়েছে মেঘ তোমার বেস্টু ছিলো আছে এবং থাকবে। তোমরা জা হতে চলেছো তাহলে তো তোমাদের দুজনেরি উচিৎ আমাকে আর তাসিনকে এক্সট্রা গিফ্ট দেওয়া। কি বলিস তাসিন।

তুই ঠিক কথা বলেছিস আয়ান কি মেঘা দেবে তো, তিশা তুমিও দেবে তো?
আমরা দুজনে একসাথে বললাম
বাদরদের জন্য আমরা এক্সট্রা কোনো গিফ্ট রাখি না।

আমাদের কথা শুনে দুজনেই হেসে উঠলো, তাসিন বললো
আয়ান দেখেছিস এদের ফ্রেন্ডশিপ! ঝগড়াও করবে আবার একে ওপরের সাপোর্ট ও করবে।
তিশা বললো
অফকোর্স করবো আমাদের ফ্রেন্ডশিপ সব থেকে আগে তাইনা মেঘা।
হুমম একদম ঠিক বলেছিস তিশা।

আয়ান ভাইয়া মুখটা গোমড়া করে বললো
তাসিনরে এ মেয়ে জাতিকে বোঝা বড়ই কষ্টকর।

বিয়ের আর মাত্র ৪ দিন বাকী সবই ঠিকঠাক চলছিলো। সাড়াদিন ভালো কাটলেও রাতে কেমন যেনো একটা ভয় কাজ করে আর সে ভয়টা আবিরকে নিয়ে। কিন্তু সে কথা তাসিনকে কখনো বুঝতে দেই না উনি আরো বেশি চিন্তা করবে।

রাতের খাবার খেয়ে রুমে এসে দেখলাম ফোন বাজছে, হাতে নিয়ে তাসিনের নাম্বার দেখে ফোনটা ধরলাম। আমি বলার আগেই তাসিন বলে উঠলো
মেঘাপাখি কোথায় ছিলে তুমি? কখন থেকে ফোন দিচ্ছি।

রাতের খাবার খেয়ে মাত্র রুমে আসলাম এসেই আপনার ফোন ধরলাম। কি করছেন?
কি আর করবো অপেক্ষার প্রহর গুনছি।
কিসের অপেক্ষা?

তোমাকে পাবার অপেক্ষা। দিনগুলো যাচ্ছে না মনে হচ্ছে।
কিন্তু আমার তো মনে হচ্ছে দিনগুলো ঝড়ের গতিতে ছুটছে।
তাসিনের সাথে আরো কিছুক্ষণ কথা বললাম। তারপর তিশাকে ফোন দিয়ে ওর সাথে কথা বলে ঘুমিয়ে পড়লাম।

ঘুমের মধ্যেই অনুভব করলাম কারো ঠান্ডা হাত আমার মুখে স্পর্শ করছে, এ ছোয়াটা আমার পরিচিত নয়। ঘুম ভেঙে গেলো আমার ধপ করে চোখ খুললাম। চোখ খুলেই দেখলাম এক জোড়া চোখ আমার দিকে গভীর ভাবে চেয়ে আছে তবে অন্ধকার থাকায় লোকটাকে চিনতে পারছি না। গলাটা ধরে আসছিলো আমার খুব ভয় করছিলো। কোনো ভাবে ভয়টা কাটিয়ে চিৎকার দিতে যাবো ওমনি লোকটি একটা রুমাল দিয়ে আমার মুখ চেপে ধরলো। আমি আর কিছু বলতে পারলাম না আস্তে আস্তে চোখ জোড়া বন্ধ হয়ে গেলো আমার।

যখন চোখ খুলে তাকালাম নিজেকে ছোট একটা ঘরে চেয়ারে হাত বাধা মুখে কাপর বাধা অবস্থায় আবিষ্কার করলাম নিজেকে। ঘরে তেমন কিছুই নেই একপাশে একটা টেবিল রাখা সামনে চেয়ার, সে চেয়ারে আমাকে বেধে রাখা হয়েছে। চারিপাশটাতে চোখ বুলিয়ে কাউকে দেখতে পাচ্ছি না। খুব ভয় করছিলো আমার গলাটা শুকিয়ে আসছিলো। কে আমাকে এখানে এনেছে এ কোথায় আছি আমি? এখন কয়টা বাজে তাও বুঝতে পারছি না। মা বাবার কথা খুব মনে পড়ছে। তাসিনের কথা ভেবে বুকটা কেপে উঠলো উনি হয়তো পাগল হয়ে যাবে আমাকে না পেয়ে। আমার গাল বেয়ে চোখের পানি গড়িয়ে পড়ছে।

হঠাৎ দরজা খোলার আওয়াজ পেয়ে সেদিকে তাকালাম একটা লোক রুমে ঢুকলো হাতে কিছু খাবার নিয়ে একে আগে কখনো দেখিনি। লোকটি টেবিলে খাবার রেখে আমার হাতের বাধন খুলে দিলো তারপর মুখের কাপরটা খুলে দিয়ে বললো
ম্যাম খাবার টা খেয়ে নিন।

কে আপনি আমাকে কোথায় নিয়ে এসেছেন? জোরেই বললাম।
আমি কে আর আপনি কোথায় আছেন সেটা না জানলেও চলবে আগে খাবারটা খেয়ে নিন না হলে স্যার আমাকে আস্তো রাখবে না।
স্যার! কে আপনার স্যার?

এত কিছু বলতে পারবো না ম্যাম খেয়ে নিন আপনি।
খাবো না আমি, কে আপনার স্যার আমার সামনে আসতে বলুন তাকে।
লোকটি আমার কথার কোনো উত্তর না দিয়ে পকেট থেকে ফোন বের করে কাউকে ফোন দিলো
স্যার, ম্যাম বলছে খাবে না আপনাকে সামনে আসতে বলছে।

ওকে স্যার।
লোকটি আমাকে কিছু না বলে বেড়িয়ে গেলো বাইরে থেকে দরজাটা আটকে দিয়ে গেলো।
আমি কি করবো কিছুই মাথায় আসছে না টেবিলে রাখা খাবারটা ফেলে দিলাম নিচে। ঘরটা ছিলো টিনের চালের চারপাশে ইটের দেয়াল তবে শুধু দরজা ছাড়া কোনো জায়গাতে ফাকা নেই। এখন দিন নাকি রাত বুঝারো উপায় নেই। মনে হচ্ছে জায়গাটা খুব নির্জন পাখির ডাক ছাড়া কিছুই শুনতে পাচ্ছি না। হয়তো চিৎকার করলেও কোনো লাভ হবে না। ঘরের এদিক ওদিকে ছুটোছুটি করে বের হওয়ার কোনো পথ পেলাম না, কাঁদতে কাঁদতেই নিচে বসে পড়লাম আমি।
কিছুক্ষণ পর দরজা খোলার আওয়াজ পেয়ে তাকালাম সেদিকে। সামনে দাড়িয়ে থাকা লোকটিকে দেখে চোখ বড় বড় হয়ে গেলো আমার বিষ্ময় কন্ঠে বলে উঠলাম
আ আপনি এখানে!


পর্ব ১৫

আ আপনি এখানে!

আমার সামনে থাকা মানুষটি আর কেউ নয় আবির ছিলো। আবির মুচকি হেসে আমার সামনে এসে বসে বললো
হুমম আমি। এই তুমি কাঁদছো কেনো মেঘা! কান্না অফ করো একদম কাঁদবে না তোমাকে কাঁদতে দেখলে যে আমার কষ্ট হয়।
আমি একদৃষ্টিতে আবিরের দিকে চেয়ে আছি ভাবছি মানুষ নিজের স্বার্থের জন্য কতটা নিচে নামতে পারে। আমি চেঁচিয়ে বললাম
আমাকে এভাবে নিয়ে এসেছেন কেনো আপনি?

জানতে চাও কেনো এনেছি। এনেছি কারন আমি তোমাকে ভালোবাসি তোমাকে আমার করে পেতে চাই।
ছিহ এত জঘন্য আপনি আমার ঘৃণা লাগছে আপনাকে দেখে, আপনার লজ্জা করলো না নিজের বন্ধুকে ঠকাতে!
আবির জোরে হেসে উঠে বললো
বন্ধু, আরে সে তো কলেজ লাইফে ছিলো এখনো থাকতো বাট সে আমার বন্ধুক্তর মর্যাদা দেয়নি। ওকে আমি বলেছিলাম তোমাকে ভালোবাসার কথা কিন্তু ও কি করলো নিজের করে নিলো তোমায়। আমার সামনে তাসিন তোমাকে পেয়ে যাবে আমি তাকিয়ে তাকিয়ে দেখবো সেটা কি করে হয় বলো। আমি যা একবার চাই তা নিজের করেই ছাড়ি।
আপনার মন মানষিকতা এত নিচ যা আমি ভাবতেও পারছি না। জোর করে যে কারো ভালোবাসা পাওয়া যায় না সেটা জানেন না আপনি? ভালোয় ভালোয় আমাকে যেতে দিন তা না হলে তাসিন যদি একবার জানতে পারে আপনাকে আর নিজের পায়ে দাড়ানোর অবস্থাতে রাখবে না।

তাসিন কোনো ভাবেই জানতে পারবে না। আর কি বললে জোর করে ভালোবাসা পাওয়া যায় না! আমি তো জোর করছি না তোমায় তোমার যখন ইচ্ছে ভালোবেসো আমায়। তোমাকে যে আমার হতেই হবে মেঘা শুধু আমার।
আপনি সে সপ্নটাই দেখুন আমি মরে গেলেও আপনার হবো না। আমি তাসিনকে ভালোবাসি আর ওকেই ভালোবেসে যাবো। আপনার মতো মানুষ রুপি জানোয়ারকে শুধু ঘৃণা করা যায় বুঝেছেন আপনি।

আবির রেগে গিয়ে একহাতে আমার গাল চেপে ধরে বললো
কি বললে তুমি আমি জানোয়ার! এতক্ষণ ভালোভাবে কথা বলেছি বলে ভেবো না আমি হাত গুটিয়ে বসে থাকবো আজকেই বিয়ে করবো তোমাকে আমি তারপর দেখবো তাসিনের প্রতি তোমার ভালোবাসা কোথায় থাকে।
আমার গাল এত জোরে চেপে ধরেছিলো যে খুব ব্যাথা পাচ্ছিলাম আমি চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়তে লাগলো। আবির আমাকে ছেড়ে দিয়ে গালে হাত রেখে বললো
সরি সরি সোনা খুব লেগেছে তোমার, কেঁদো না প্লিজ আর এমন করবো না।

আমি একঝটকায় আবিরের হাতটি সরিয়ে জোরে একটা থাপ্পড় মেরে বললাম
আপনার ওই হাত দিয়ে আমাকে টার্চ করবেন না। ঘৃণা করি আমি আপনাকে।

আবির আমার দিকে তাকিয়ে শয়তানি হাসি দিয়ে উঠে বেড়িয়ে গেলো বাইরে থেকে দরজাটা আটকে দিলো।
আমি যে আর পারছি না সহ্য করতে। আবির কি বলে গেলো আজি বিয়ে করবে! আমি নিজেকে কি করে বাঁচাবো, আমি কি আর কখনো দেখতে পাবো না আমার তাসিনকে!

ওদিকে আমাকে না পেয়ে বাবা মা খুব কাঁন্নাকাটি করছে তাসিন তো পাগল প্রায় অবস্থা। সারা শহরে পাগলের মতো খুজছে তাসিন আমাকে। একসময় হতাস হয়ে তাসিন বাড়ি ফিরে গেলো আয়ান ভাইয়াও সাথে ছিলো। তাসিনদের বাড়ির সকলে আমাদের বাড়িতে ছিলো তখন, তিশা মায়ের পাশে চুপচাপ বসে আছে। বাড়িতে যেতেই মা দৌড়ে এসে তাসিনের সামনে দাড়ালো
তাসিন খোজ পেলে আমার মেয়ের? বলোনা বাবা চুপ করে কেনো আছো। কোথায় আমার মেঘা? মা তাসিনকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো।

তাসিনের চোখ থেকে নিরবে পানি পড়ছে। সে যে ছেলে চাইলেও চিৎকার করে কাঁদতে পারছে না। তাসিন মাকে শান্তনা দিয়ে বললো
খালামনি কেঁদো না আমি মেঘাকে ঠিক খুজে বের করবো। দেখি বসো তো এভাবে কাঁদলে তোমার শরীর খারাপ করবে তো।

তমা আপু এগিয়ে এসে মাকে রুমে নিয়ে গেলো খালামনিও গেলো সাথে।
তাসিন তিশাকে বললো
তিশা মেঘা কাল কাখন কথা বলেছে তোমার সাথে?

১০:৩০ এর পর কথা বলেছিলো আর কথা হয়নি।
তাসিন দুহাতে নিজের মুখ ঢেকে সোফায় বসে পড়লো।

আয়ান ভাইয়া উনার পাশে এসে বললো
তাসিন হঠাৎ করে মেঘ কোথায় গেলো! তোর কি কাউকে সন্দেহ হয়?
সন্দেহ তো হচ্ছেই আবির ছাড়া এ কাজ অন্য কেউ করেনি আবির আমার মেঘাকে কিডন্যাপ করেছে।
তিশা বললো
আমারো তাই মনে হচ্ছে। আবির এখন কোথায় সেটা জানা দরকার।
তাসিন তিশাকে বললো
তিশা আমি আবিরের খোজ ও করেছি পাইনি আর এ জন্যই বেশি সন্দেহ করছি। যদি আবির থাকে এর পেছনে ছাড়বো না আমি ওকে। ও আমার কলিজাতে হাত দিয়ে পারবে না বাঁচতে।

দুহাতে মুখ চেপে অঝরে কাঁন্না করছি বড্ড অসহায় লাগছে নিজেকে। আবির কি করে পারলো এমন একটা কাজ করতে।

দরজা খোলার শব্দ পেয়ে মাথা তুলে তাকালাম সেদিকে। আবির আর সেই লোকটি দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলো আবিরের হাতে কয়েকটা ব্যাগ। আবির আমার দিকে ব্যাগ গুলো এগিয়ে দিয়ে বললো
মেঘা এতে শাড়ি আর কিছু গহনা আছে এগুলো পড়ে জলদি তৈরি হয়ে নাও।
এগুলো পড়তে যাবো কেনো আমি! পড়বো না আমি এসব।

মেঘা রাগিয়ো না আমাকে তার ফল কিন্তু ভালো হবে না যা বলেছি চুপচাপ সেটা করো। একটু পরেই কাজী সাহেব আসবে দেরি করলে চলবে না।

আমার আত্তাটা কেপে উঠলো কাজীর কথা শুনে জোড়ে চেঁচিয়ে বললাম
আপনাকে আমি কখনোই বিয়ে করবো না কখনোই না প্রয়োজনে নিজেকে শেষ করে দিবো।
বিয়ে তো তুমি আমাকে করবেই মেঘা আর আজি করবে। ভালোয় ভালোয় বলছি শাড়িটা পড়ে নাও।
পড়বো না শাড়ি।
আবির ওই লোকটিকে বললো
আছাদ তুই বাইরে গিয়ে দাড়া।

লোকটি মাথা নাড়িয়ে চলে গেলো। আমার ভয়টা এখন ক্রমশ বেড়ে চলেছে আবির কি করতে চাইছে লোকটিকে বাইরে পাঠালো কেনো! ভয়ার্থ চোখে চেয়ে আছি আবিরের দিকে।
আবির দরজাটা আটকে আমার কাছে এসে বললো
এতক্ষণ তো ভালো ভাবে বলেছি শোনো নি।

এবার আমি নিজে তোমাকে শাড়ি পড়িয়ে দিবো। কই উঠো শাড়িটা পড়তে হবে তো। বলেই ওনার হাতের ব্যাগগুলো আর নিজের ফোনটা টেবিলে রাখলো।
আমি একটু পিছিয়ে গেলাম। আমি যে আর এ নরক থেকে বের হতে পারবো না বেশ বুঝতে পারছি। তাই মনে মনে ভেবে নিলাম নিজেকেই শেষ করে দিবো। তাসিনকে ছাড়া অন্য কাউকে আমি বিয়ে করবো না আর এই আবিরকে তো কখনোই না।

আবিরকে বললাম
ঠিকআছে আমি শাড়িটা পড়ে নিচ্ছি আ আপনি বাইরে যান।
আবির খুশি হয়ে বললো
এইতো গুড গার্ল। আমিও চাইনা বিয়ে করার আগে তোমাকে সেভাবে টার্চ করতে। এখন লক্ষি মেয়ের মতো রেডি হয়ে নাও।

অন্যের ভালোবাসাকে কেড়ে নিচ্ছেন আবার বলছেন বিয়ের আগে টার্চ করবেন না! নিজেকে মহৎ মানুষ ভাবেন তাইনা। তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললাম।

মেঘা আমিও তোমাকে ভালোবাসি। তাসিনের থেকে বেশি ভালো রাখবো তোমায় আমি।
আমি আর কিছু বললাম না মুখটা ঘুড়িয়ে নিলাম, এই বদ লোকটির সাথে আর একটি কথা বলতেও আমার রুচিতে বাধছে।

আমি বাইরে যাচ্ছি রেডি হও মেঘা। বলেই বেড়িয়ে গেলো।

কিছুসময় বসে থেকে উঠে দাড়ালাম এই মুহুর্তে যে আমার ওই বদ লোকটির কথা মতো কাজ করতে হবে। তবে বিয়ে আমি ওকে করবো না সুযোগ বুঝে এর হাত থেকে বাঁচতে হবে আমায়

টেবিলে রাখা ব্যাগগুলোতে হাত রাখতেই সেখানে রাখা ফোনের দিকে চোখ পড়লো আমার। মুহুর্তেই আমার মনের কনে এক অন্য রকম আশা সৃষ্টি হলো। এটাই এখন আমাকে বাঁচতে সাহায্য করবে, দেরি না করে ফোনটা হাতে নিলাম তাসিনকে ফোন দিবো।

কিন্তু এর লকটাই যে খুলতে পারছি না। কি করবো এখন? আচ্ছা এটা তো আবিরের ফোন আমার নাম দিয়ে লক দেয়নি তো? আমি এম লিখতেই লকটা খুলে গেলো।

তাড়াতাড়ি তাসিনের নাম্বারটা তুলে ডায়েল করলাম। একবার রিং হতেই রিসিভ হলো। কানে ভেসে আসলো সেই চিরোচেনা কন্ঠস্বর। ওপাশ থেকে কান্না রত কন্ঠে বললো
হ্যালো কে বলছেন?

উনার এমন কন্ঠ শুনে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলাম না ফুপিয়ে কেঁদে উঠলাম। ওপাশ থেকে তাসিন উত্তেজিত হয়ে বলে উঠলো
মেঘাপাখি তুমি! কোথায় আছো তুমি কাঁদছো কেনো? এই মেঘা বলো না সোনা কোথায় আছে তুমি? উনি কেঁদে কেঁদেই বলছিলো।

আ আমাকে ন নিয়ে যান তাসিন। আআমি জানি না এটা ককোন জায়গা। কাপা কাপা গলায় বললাম।
কেঁদো না মেঘা। এটা বলো কে তোমাকে নিয়ে গিয়েছে আর এ নাম্বারটা কার?

আ আবির নিয়ে এসেছে এটা আবিরের নাম্বার নিজের ফোনটা ভুলে আমার এখানে রেখে গিয়েছে।
তাসিন একটু চুপ থেকে বললো
ওই জানোয়ারকে তো আমি মেরেই ফেলবো। মেঘা তুমি কেঁদো না। শোনো ফোনথেকে আমার নাম্বারটা ডিলিট করে যেখানে ছিলো রেখে দাও। আমি এই নাম্বারটা ট্র্যাক করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তোমাকে খুজে বের করার ব্যবস্থা করছি।

যা করার তাড়াতাড়ি করুন আবির আমাকে শাড়ি গহনা দিয়ে গেছে আজি নাকি আমাকে বিয়ে করবে।
আমার কলিজাটাকে ও কেড়ে নেবে এতই সোজা নাকি। তুমি চিন্তা করো না মেঘাপাখি আমি বেঁচে থাকতে তোমাকে ও কোনো ভাবেই পাবে না।

কেউ আসছে হয়তো আমি রাখছি।

বলেই ফোন কেটে তাড়াতাড়ি নাম্বারটা ডিলিট করে আগের জায়গাতে রেখে শাড়িটা হাতে নিয়ে নাড়তে লাগলাম।
আবির ঘরে ঢুকে বললো
এখনো শাড়িটা নেড়ে যাচ্ছো কেনো পড়তে বলেছি না। ধমক দিয়ে বললো।
আমি কিছুটা কেঁপে উঠে বললাম
আমার খুব ক্ষুদা পেয়েছে।

আবির আমার দিকে একটু তাকিয়ে থেকে হেসে বললো
ঠিকআছে আমি খাবার পাঠিয়ে দিচ্ছি ততক্ষণে রেডি হও তুমি। বলে টেবিলের ওপর থেকে ফোনটা নিয়ে আমার দিকে তাকালো আমি নিচের দিকে তাকালাম, ভয় লাগছে বুঝে ফেললো নাতো আবার?
আড়চোখে দেখলাম আবির ফোনটা পকেটে রাখলো তারমানে বুঝতে পারেনি। যাক বাবা বাঁচা গেলো।
আমি আস্তে করে বললাম
আগে খাবার নিয়ে আসুন খেয়ে তারপর রেডি হবো।

আচ্ছা তুমি যা বলবে সেটাই হবে আমি খাবার আনতে যাচ্ছি।
আবির দরজা আটকে বেড়িয়ে গেলো আমি ধপাস করে চেয়ারে বসে ভাবতে লাগলাম তাসিন কি পারবে আমাকে খুজে বের করতে? আমার মন বলছে পারবে। আমাকে এখন নিজেকে স্বাভাবিক রেখে আবিরের সাথে মিল দিয়ে থাকতে হবে।

পর্ব ১৬

শাড়ি পড়ে বসে আছি আমার সামনে বসে আছে আবির কিছুটা দুরে কাজী বসে কি যেনো লিখছেন আর দরজার পাশে আছাদ নামের লোকটি সহ আরো। দুজন দাড়িয়ে আছে।

কি যে ঘটতে চলেছে তা আমি নিজেও জানি না। তাসিন তো এখনো এসে পৌছালো না তাহলে কি তাসিন ব্যর্থ হলো আমাকে খুজে বের করতে? আমি কি আর কখনোই দেখতে পারবো না তাসিনকে? উনাকে ছাড়া এ জীবন আমি কাটাতে পারবো না কোনো ভাবেই না। কিন্তু এখন কি করবো আমি, কি করে বাঁচাবো নিজেকে?

আনমনে কতশত কথা ভেবে চলেছি সব কিছু যেনো পাকিয়ে যাচ্ছে, ভাবনার ছেদ ঘটিয়ে আবির বললো
মেঘা কি ভাবছো এত হুম এখন কিছুই ভাবতে হবে না। নাও ধরো এটাতে সই করে দাও। একটা কাগজ এগিয়ে দিয়ে।
কিসের কাগজ এটা?

বারে আমাদের বিয়ে হতে চলেছে রেজিস্ট্রি পেপারে সই করতে হবে না। কথা না বাড়িয়ে জলদি কাজটা সেরে ফেলো তো।

আমার বুকের ভেতর ধক করে উঠলো এই মুহুর্তে কি করা উচিৎ কিছুই মাথায় আসছে না আমার। আমার এখনো মনে হচ্ছে তাসিন আসবে আমার ভালোবাসা টানে সে আসবে আমাকে নিতে। হঠাৎ করেই মাথায় একটা বুদ্ধি এলো হয়তো এ কাজটা করলে বিয়েটা এখনি হবে না। ভাবনা অনুযায়ী কাজ করলাম আবির আমার পাশেই ছিলো নিজের সবটা ভার ছেড়ে চোখ বন্ধ করে দিয়ে লুটিয়ে পড়লাম মাটিতে। আবির তাড়াহুড়ো করে আমার গালে হাত দিয়ে বার বার ডেকে চলেছে
মেঘা এই মেঘা কি হলো তোমার চোখ খোলো।

আছাদ বলে উঠলো
স্যার, মনে হচ্ছে ম্যাম সেন্সলেস হয়ে পড়েছে।
আছাদ তাড়াতাড়ি পানি আনো ফাস্ট।

আমি চোখ বন্ধ করেই ভাবছি পানি আনো আর যাই করো এত তাড়াতাড়ি আমি চোখ খুলছি না।

আমি ওভাবে থাকা অবস্থাতে থাকতেই বাইরে কিছুর শব্দ হলো। আবির নিচু স্বরে বললো
আছাদ কিসের শব্দ হলো বাইরে কি কেউ আছে?

না স্যার এখানে তো কারো আসার কথা না। আমি দেখছি বাইরে গিয়ে। আছাদ দরজাটা খুলতেই দুজন লোক সামনে এসে দাড়ালো। আছাদ দরজাটা তাড়াতাড়ি আটকাতে নিলে ওই দুজনের মধ্য একজন বলে উঠলো
দরজা আটকে কোনো লাভ নেই এই এড়িয়া টা পুলিশে ঘিরে নিয়েছে। কোনো চালাকি করার চেষ্টা করবেন না কেউ।
কথাগুলো আমার কানে আসতেই চোখ মেলে তাকালাম আমি আমার ভেতরে আশার আলো ফুটে উঠলো।
আবির যে চরম অবাক হয়েছে তা মুখ দেখেই বুঝতে পারছি। আবির ওই লোকদেরকে বললো
ও হ্যালো ফাজলামো পেয়েছেন আপনারা? পুলিশ ঘিরে নিয়েছে মানেটা কি! ঝামেলা না করে কেটে পড়ুন এখান থেকে।

তখন পেছন থেকে কেউ বলে উঠলো
হুম আবির কেটে তো পড়বেই। এবার তুই কি করে বাঁচবি সেটা ভেবে নে।
আমার চোখমুখ মুহূর্তেই উজ্জ্বল হয়ে উঠলো। তাসিনের কন্ঠস্বর শুনে। মুখে হাসি ফুটে উঠলো আমার।
আবির তো তাসিনকে দেখে চরম শকড খেয়েছে
তাসিন তুই!

হ্যা আমি কি ভেবেছিলি আমার মেঘাকে কিডন্যাপ করে ওকে নিজের করে নিবি? ভাবাটা সহজ করাটা খুবই কঠিন। তুই বড্ড ভুল করে ফেলেছিস আবির আমার মেঘাকে তুই কাঁদিয়েছিস আমি তো মেরেই ফেলবো তোকে। বলেই এগিয়ে আসতে নিলে আবির নিজের পকেট থেকে একটি ছুরি বের করে আমার গলায় চেপে ধরে বললো
তাসিন আর এক পা এগোলে মেঘার গলায় আমি আঘাত করবো।

আবির মেঘাকে ছেড়ে দে বলছি ওর গায়ে এতটুকু আঘাত যেনো না পড়ে।
তুই এদেরকে নিয়ে চলে যা তাসিন তাহলে আমি ওর কোনো ক্ষতি করবো না।

অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি তাসিনের দিকে। তাসিন চোখের ইশারায় আমাকে চুপ থাকতে বললো।
হঠাৎ করেই তাসিনের পাশে থাকা একটি লোক আবিরের হাত বরাবর গুলি করলো, আবিরের হাত থেকে ছুরিটা পড়ে যেতেই আমি দ্রুত উঠে গিয়ে তাসিনকে জড়িয়ে ফুপিয়ে কেঁদে উঠলাম। তাসিনও আমাকে নিজের সাথে জড়িয়ে নিলো। আমার মাথায় একটা চুমু খেয়ে বললো
মেঘাপাখি ভয় নেই আর কেঁদো না প্লিজ।

আয়ান ভাইয়া বাবা খালু এগিয়ে আসছে আমাদের দিকে আমি তাসিনকে ছেড়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরলাম।
বাবার চোখেও পানি চিকচিক করছিলো।

আমি বাবার বুকে মাথা রেখেই দাড়িয়ে রইলাম।

পুলিশ আবিরের সাথে যারা ছিলো ওদেরকে ধরলো আবির পালাতে গিয়েও পারে নি তাসিন ওকে ধরে মারতে লাগলো। মারতে মারতে বললো
আবির তোকে আমি ভরসা করতাম বন্ধুর স্থান দিয়েছিলাম তোকে আমি আর তুই আমার বুকে আঘাত করলি। আমার জানের দিকে হাত বাড়ালি তুই। তোর হাতটাই আজ আমি গুড়িয়ে ফেলবো। বলেই একটা ইট হাতে তুলে নিলো।

আবির মিনতির স্বরে বললো
তাসিন ক্ষমা করে দে আমায় আমিও যে মেঘাকে ভালোবাসি তাই তো এমনটা করেছি।
ভালোবাসা! কিসের ভালোবাসা তুই শুধু নিজের স্বার্থে এ কাজ করেছিস। ওকে ভালোবেসে কিছু করিসনি তুই যা করেছিস আমাকে হারানোর জন্য করেছিস।

আমার ভুল হয়েছে তাসিন আমাকে ছেড়ে দে কথা দিচ্ছি তোদের মাঝে আমি আর আসবো না।
বেঁচে থাকলে তো আসবি। বলেই হাতে থাকা ইট দিয়ে আবিরে হাতে আঘাত করতে লাগলো। এই মুহুর্তে তসিনকে আমি নিজেই চিনতে পারছি না। চোখ দিয়ে মনে হচ্ছে আগুন বের হচ্ছে উনার। একের পর এক আঘাত করছে আবিরকে।
পুলিশ ও উনাকে থামাতে পারছে না, আমি গিয়ে তাসিনের হাত ধরে বললাম। তাসিন উনি মরে যাবে থামুন এখন। আয়ান ভাইয়া বাবা মিলে তাসিনকে সরিয়ে আনলো। আবির মাটিতে পড়ে আছে রক্তাক্ত অবস্থাতে।
আমি তাসিনের হাত ধরে বললাম

প্লিজজ আপনি শান্ত হন আমি ঠিক আছি তো দেখুন আবির কোনো ক্ষতি করতে পারে নি আমার।
তাসিন আমার দিকে একটু তাকিয়ে থেকে আমার হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বললো
তোমাকে না পেলে আমি মরেই যেতাম মেঘা। তোমাকে বু্ঝাতে পারবো না কি অবস্থা হয়েছিলো আমার।
আবির এবং তার সঙ্গীদের পুলিশের হাতে তুলে দিয়ে আমাকে নিয়ে বাড়ি ফিরে আসলো।

আজ আমার আর তাসিনের গায়ে হলুদ। সবুজ পাড়ের হলুদ শাড়িতে সাজিয়েছি নিজেকে সাথে কাঁচা ফুলের গহনা। সন্ধার পর আমাকে হলুদের স্টেজে নিয়ে বসানো হলো, মা আর তিশার মা তিশাকে এনে আমার পাশে বসিয়ে দিলো। তিশা ও আজ আমার মতো করেই সেজেছে তবে তা নিজের ইচ্ছেতে নয় আয়ান ভাইয়ার ইচ্ছেতে। ভাইয়া নাকি বলেছে সেম আমার মতো করে সাজতে এমনকি স্টেজে আমার পাশে বাসতে হবে। তিশা আমার পাশেই বসা মুখটা বেলুনের মতো ফুলিয়ে রেখেছে।

এই তিশা এভাবে মুখ ফুলিয়ে রেখেছিস কেনো তুই?

তো কি করবো তুই বল। কোথায় ভাবলাম তোর গায়ে হলুদে সব কিছুর গোছগাছ আমি করবো কিন্তু কি হলো ওই বাদরটার কড়া নির্দেশ আমাকে নাকি তোর পাশেই এমন সং সেজে বসে থাকতে হবে। আর দেখ তোর মা আমার মা মিলে আমাকে বসিয়ে দিলো। কিছু জানতে চাইলে মা বললোতিশা, মেঘা তোর বেস্ট ফ্রেন্ড তাই ওর পাশে থাকবি তুই। \

আয়ান ভাইয়া তো এখানে নেই দেখবেও না তুই কি করছিস। আর তোর মা তো ঠিকি বলেছে আমার পাশেই থাকবি তুই।
দেখবে না আবার। আমার কি মনে হচ্ছে জানিস আয়ান এখানে সিসি ক্যামেরা সেট করে রেখেছে। আমি কখন কি করছি সব কিভাবে যেনো জেনে যাচ্ছে। বাকী রইলো তোর পাশে বসার কথা এটাই তো বেশি ভাবাচ্ছে আমাকে।
তিশার কথা শুনে হেসে উঠলাম আমি
মেঘা হাসবি না একদম। কোন দুঃখে যে তোর ভাইয়ের প্রেমে আমি পড়েছিলাম। ইনোসেন্ট ফেস করে বললো।
দুঃখে নয় গো তিশামনি সুখে প্রেমে পড়েছিলে। গাল টেনে বললাম।

সবাই একে একে আমাকে হলুদ লাগাতে লাগলো। আর আমার সাথে তিশাকেও। এতে আমি আর তিশা দুজনেই অবাক! তিশা আমাকে বললো
এই মেঘা গায়ে হলুদ তোর, তাহলে তোর সাথে আমাকে এভাবে বসিয়ে হলুদ মাখাচ্ছে কেনো বলতো?
আমি কি ভাবে বলবো কিছুই তো বুঝতে পারছি না।
স্টেজের পাশে থেকে কেউ বলছে বাহ এমন বিয়ে দেখা ভাগ্যের ব্যাপার দুজন বেস্ট ফ্রেন্ডের একসাথে বিয়ে হতে চলেছে।
কথাগুলো আমার আর তিশার দুজনেরি কানে আসলো। দুজনেই চোখ বড় বড় করে একে ওপরের দিকে তাকিয়ে মা বলে চিৎকার করে উঠলাম।

আমাদের চিৎকারে সবাই চুপ হয়ে গেলো আমার মা তিশার মা এসে আমাদের পাশে দাড়ালো। মা বললো
কি হলো তোদের মেঘা কোনো প্রবলেম হয়েছে কি?
আমি কিছু বলার আগেই তিশা বলে উঠলো

প্রবলেম তো অবশ্যই আন্টি। বিয়ে মেঘার আর আজ গায়ো হলুদ ও ওর তাহলে আমাকে কেনো বসিয়েছেন এখানে আর আমাকে হলুদ দেওয়া হচ্ছে কেনো?
তিশার মা হেসে বললো
ওও এই কথা। শোন তোকেও হলুদ দেওয়া হচ্ছে তার কারন মেঘার সাথে কাল তোর ও বিয়ে হবে।
আমি তো অবাক হয়ে হা করে বুঝার চেষ্টা করছি তিশার মা ঠিক কি বলেছে, আর তিশা বিষ্মিত কন্ঠে বললো
মা কি বলছো তুমি! আমার বিয়ে! কার সাথে?

কেউ স্টেজের নিচে থেকে আনন্দ মাখা স্বরে বলে উঠলো
তিশা আমার ছেলের সাথে বিয়ে হবে তোমার।
আমি আর তিশা সেদিকে তাকালাম, তিশা বললো
আ আন্টি আপনি!
আন্টি নয় শাশুড়ি মা হতে চলেছি তোমার।

পর্ব ১৭

তিশা অবাক চোখে একবার ওদিকে তাকাচ্ছে তো একবার আমার দিকে তাকাচ্ছে। তিশাকে যে বললো তিশা আমার ছেলের সাথে বিয়ে হবে তোমার সে আর কেউ নয় আয়ান ভাইয়ার মা ছিলেন। আমি মামিকে বললাম
মামি কি ভাবে কি হলো আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না!
মামি মুচকি হেসে বললো

তোরা যেদিন গ্রাম থেকে চলে এসেছিস আয়ান সেদিনি আমাকে বলেছিলো যে ও তিশাকে ভালোবাসে। ব্যাস তোর মায়ের সাথে কথা বলে তিশার বাবা মার সাথে যোগাযোগ করে ওদের বিয়েটাও একি দিনে ঠিক করে ফেললাম। কি তিশা মা আমার ছেলেকে এখন বিয়ে করতে কোনো আপত্তি নেই তো তোমার?
তিশা কিছু না বলে মুচকি হাসলো শুধু।

একটু আগেই আমাদের হলুদ দেওয়া শেষ হয়েছে। আমি আর তিশা দুজনেই আমার রুমে চলে এলাম চেন্জ করবো বলে। তিশার ফোন বেজে উঠলো। তিশা ফোনের দিকে তাকিয়ে আবার নিজের কাজে মন দিলো।
কিরে তিশা কে ফোন দিচ্ছে ধরছিস না কেনো?
কে আবার তোর ভাই দিচ্ছে।

আমার ভাই তোর তো হবু বর। ফোনটা ধরে কথা বল।
ধরবো না আমাকে সবটা আগে কেনো জানালো না।
আয়ান ভাইয়া এবার আমার ফোনে ফোন দিচ্ছে আমি রিসিভ করলাম
হ্যা ভাইয়া বলো।

মেঘ তিশা কোথায় ও ফোন ধরছে না কেনো?
ও আমার পাশেই আছে তোমার ফোন ধরবে না বলছে।

আয়ান ভাইয়া আর কিছু না বলে ফোন কেটে দিলো। আমি ফোনটা হাতে থেকে রাখতে নিলে তাসিনের ফোন আসলো, হাসি মুখে রিসিভ করে বললাম
হুম বলুন
মেঘাপাখি বাগানে এসো ৫ মিনিটের মধ্যে।
বাগানে কেনো?
এসোই না তারপর বলবো।

ঠিকআছে চেন্জ করে আসছি।
এই না যেভাবে আছো সেভাবেই আসবে।

তাসিনের কথা মতো তিশাকে বলে ওভাবেই বাগানের দিকে গেলাম। বাগানে এসে তাসিনকে কোথাও না দেখে ফিরে আসতে নিলে কেউ আমাকে আচমকা পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো। আমি মুচকি হেসে বললাম
লুকিয়ে ছিলেন তাইনা?

তুমি বুঝলে কি করে আমি ধরেছি তোমায়?
আপনার ছোয়া চিনতে আমার ভুল হয় না।

উনি আমাকে সামনে ঘুড়িয়ে অপলক তাকিয়ে রইলেন আমার দিকে।
কি দেখছেন ওভাবে?

আমার হলুদ পরীকে দেখছি। বলেই আমার দুগালে হলুদ মাখিয়ে দিলো।
একি আপনার হাতে হলুদ ছিলো!

হুম ছিলো তো আমার বউকে আমি হলুদ মাখাবো না এটা কি করে হয় বলো, তাইতো চলে আসলাম হলুদ মাখাতে। তুমি আমাকে হলুদ মাখাবে না?
আমি তো হলুদ আনি নি।
উনি কিছু না বলে মুচকি হেসে আমার গালের সাথে উনার গাল ঘষে বললো
এইতো তোমার ছোয়া হলুদ আমাকেও ছুয়ে দিয়েছে।
আমি একটু হেসে বললাম
হয়েছে এখন ছাড়ুন কেউ দেখলে কি ভাববে।

দেখলে দেখুক আমার বউকে আমি ধরে রেখেছি তাতে কার কি হুম। বলেই আমার কোমড়টা জড়িয়ে আরো কাছে টেনে নিলো।

আমি কিছুটা কেঁপে উঠে বললাম
ছাড়ুন না তিশাকে একা রুমে রেখে এসেছি ও পরে আমাকে পচাবে।
তিশা একা নেই গো মেঘাপাখি। আয়ান আছে ওর কাছে ও তোমাকে কিছু বললে তুমিও বলতে পারবে।
আমি অবাক চোখে তাসিনের দিকে তাকিয়ে বললাম
আয়ান ভাইয়াও এসেছে আপনার সাথে!

হুম এসেছে। তিশা হয়তো রাগ করে আছে ওর ওপর আগে থেকে কিছু বলে নি তাই আয়ান তার পিচ্চির রাগ ভাঙাতে এসেছে।

আর আপনি কি করতে এসেছেন? মাথা নিচু করে।
আমি তো আমার বউকে হলুদ মাখাতে এসেছি আর
আর?

উনি আলতো করে আমার ঠোঁটে একটা কিস দিয়ে হেসে বললো
এটা দিতে এসেছি।

তিশা গা থেকে ফুলের গহনা গুলো খুলছিলো মাথার ফুলগুলো চুলে পেচিয়ে যাওয়াতে খুলতে পারছিলো না। দরজা খোলার আওয়াজ পেয়ে তিশা ভেবেছে আমি এসেছি। তিশা পেছনে না তাকিয়ে নিচের দিকে তাকিয়েই বললো
মেঘা এসেছিস, আমার চুলের থেকে ফুলগুলো ছাড়িয়ে দেনা।

আয়ান ভাইয়া রুমে ঢুকে আস্তে করে দরজা আটকে দিয়ে তিশার পেছনে গিয়ে ওর মাথা থেকে যত্ন সহকারে ফুল খুলে দিলো।

মেঘা তুই না তাসিন ভাইয়ার সাথে দেখা করতে গেলি তাহলে এত তাড়াতাড়ি ফিরে
তিশা এটুকু বলতেই আয়নার দিকে তাকাতেই আয়ান ভাইয়াকে দেখে চোখ বড় বড় হয়ে গেলো। পেছনে ঘুরে রেগে বললো
আপনি এখানে কেনো?

আয়ান ভাইয়া মৃদু হেসে বললো
আমার পিচ্চি বউটা রাগ করেছে তার রাগ ভাঙাতে এসেছি।
এখানে আপনার বউ নেই যান এখান থেকে।
আছে তো আমার বউটা এখানেই আছে। বলেই তিশার হাত টেনে ওর কোমড় জড়িয়ে ধরলো।
কি করছেন কি ছাড়ুন আমাকে, আর শুনুন আপনার বউ বলে কেউ নেই এখানে।

আমার পিচ্চিটা দেখছি খুব রেগে আছে, রাগ করলে যে তোমায় আরো সুন্দর লাগে। আজ তো মারাত্মক সুন্দর লাগছে তোমার এই হলুদে রাঙানো মুখটি দেখতে। উফ কি বলবো জাস্ট অসাধারণ।

একদম ঢং করবেন না, ছাড়ুন আমায়। বলেই ছুটার জন্য চেষ্টা করতে লাগলো তিশা।
তিশা এমন কেনো করছো! আমি তো তোমার পর কেউ নয় যে তোমাকে ছুলে প্রবলেম আছে।
বিয়ের কথাটা কি একবার আমাকে জানানোর দরকার মনে করেন নি আপনি?

আমিই তো জানতাম না আজ দুপুরেই জানতে পেরেছি তাসিন আর মেঘার সাথে আমাদের বিয়েটাও ঠিক করা হয়েছে।
যখন জেনেছেন তখন বললে কি হতো?

এমনি বলিনি। কেনো তুমি কি চাও না আমাদের বিয়েটা হোক?
তিশা আয়ান ভাইয়ার দিকে তাকালো তারপর বললো
চাই না এ কথা কখন বলেছি!

বলো নি তো তাহলে এমন কেনে করছো?

করবো না! নিজের বিয়ে তার শপিং টাও করতে পারলাম না আরো কত কি ভেবে রেখেছিলাম কিছুই হলো না। মুখ গোমড়া করে।

আয়ান ভাইয়া তিশার গাল টেনে বললো
মেঘার জন্য যা যা কেনা হয়েছে তোমার জন্য সেম সেগুলোই কেনা হয়েছে আর এসব কিছু করেছে আমার মা তোমার মা আর তমা আপু মিলে। মেঘার জন্য যেগুলো কেনা হয়েছে শাড়ি গহনা কসমেটিকস ইত্যাদি সব তো তোমার আর মেঘ এর পছন্দের ছিলো তার জন্যই তমা আপু সাথে থেকে ওগুলোই ডাবল করে আনিয়েছে।
তিশা কিছুই বলছে না মাথা নিচু করে আছে। আয়ান ভাইয়া ওর মুখে হাত রেখে বললো
আমার পিচ্চিটা কি এখনো রেগে থাকবে আমার ওপর?
উহু একটুও রেগে নেই, শুধু অভিমান হয়েছিলো।

তাই বুঝি তাহলে অভিমানটা আরো একটু ভাঙিয়ে দেই কি বলো? বাকা হেসে।
তিশা আয়ান ভাইয়ার এমন হাসি দেখে মুচকি হেসে ভাইয়ার বুকে মুখ লুকালো।

আজ সকাল থেকেই সারা বাড়ি মেতে আছে বিয়ের আমেজে। বিয়ে কমিউনিটি সেন্টারে হবে আমাকে আর তিশাকে পার্লার থেকে সাজিয়ে সেখানেই নিয়ে এসেছে। তিশা আর আমি দুজনেই পাশাপাশি বসে আছি। দুর থেকে কেউ দেখলে হয়তো বুঝতে পারবে না কোনটা কে দুজনেই একি রকম ভাবে সেজেছি।

চারিদিক থেকে একের পর এক ছবি তুলেই যাচ্ছে ব্যাপারটিতে আমি কিছুটা বিরক্ত হলেও তিশা খুন এনজয় করছে।
হঠাৎই তিশা বলে উঠলো
এই মেঘা আয়ান বললো আমাকেও নাকি তাসিন ভাইয়াদের বাড়িতেই তোলা হবে।
হ্যা মা ও তাই বললো। বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সব একি সাথে হবে।
ওয়াও খুব ভালো হবে বুঝলি আমি তোকে কাছে পাবো আর তুই আমাকে।

আমরা দুজন পাশাপাশি বসে এমন নানা রকম গল্প করে চলেছি। আমি সত্যি এখনো ভাবতে পারছি না আমার আর আমার বেস্টির একসাথে বিয়ে হবে এমনকি একি বাড়িতে দুজনে বউয়ের সাজে ঢুকবো।

একটু আগেই বরযাত্রী চলে এসেছে। অনেক লোকজন থাকায় তাসিনকে ভালো ভাবে দেখতে পাইনি। তমা আপু ইমরান ভাইয়া এসে কথা বলে গিয়েছে আমাদের সাথে। রোহান ভাইয়া কোনো একটা কাজে দেশের বাইরে আছে তাই আসতে পারে নি তবে রিশা আপু এসেছে বরযাত্রীর সাথে। রিশা আপু অরিনকে নিয়ে আমাদের কাছে আসলো। হাসি মুখে বললো
বাহ মেঘা তিশা দারুন লাগছে তোমাদের। আজকে তাসিন ভাইয়া, আয়ান ভাইয়া দুজনেই হার্টআ্যটাক না করে দেখো।

আমি কিছুটা হেসে বললাম
করলে করবে ওদেরকে একরুমে বন্দি করে আমি আর তিশা জমিয়ে আড্ডা দিবো, চাইলে তুমিও জয়েন করতে পারো কি বলিস তিশা?
হুম রিশা আপু মেঘা একদম ঠিক কথা বলেছে।
রিশা আপু উচ্চস্বরে হেসে উঠে বললো
দেখাই যাবে কে কোথায় থাকে সময় তো হোক।

কিছুক্ষণ আগে আমাদের বিয়ে পড়ানোর কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। সবার খাওয়া দাওয়া শেষ হলে তাসিন আয়ান ভাইয়ার পাশে নিয়ে আমাদের বসালো। তাসিন আড়চোখে আমাকে দেখছে এ নিয়ে ইমরান ভাইয়া তাসিনকে খুচিয়ে আস্তে করে বললো
শালাবাবু বউটা তোমারি এত লোকের মাঝে এভাবে না দেখে বাসর ঘরে বসে দেখো।
ইমরান ভাইয়ার কথাটা আমার কানেও আসলো ইসস কি যে লজ্জার ব্যাপার এই তাসিনটাও না দেখার কি আছে এত!

অবশেষে আসলো বিদায়ের পালা মনটা আপনা আপনি খারাপ হয়ে গেলো। আমার চোখের কোনে পানি জমে গিয়েছে মায়ের জলে ভেজা চোখে তাকিয়ে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলাম না মাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠলাম মা ও কাঁদছে। বাবা ও পাশে এসে আমার মাথায় হাত রাখলো বাবার দিকে তাকাতেই বাবা হাসি মুখে আমাকে বোঝালো। হাসি মুখে থাকলেও বাবার চোখেও পানি চিকচিক করছে সেটা আমার চোখ এড়ায় নি।

বাবা আমাকে তাসিনের হাতে তুলে দিলো আমি তখনো ফুপিয়ে কেঁদে চলেছি। আজ বুঝতে পারছি আপন মানুষদেরকে ছেড়ো যাওয়াটা কতটা কষ্টের। বাবা মায়ের আদর ভুল করলে বকা দেওয়া নানা রকম খুনশুটি সব আজ চোখে ভেসে উঠছে আমার।

তিশাও খুব কাঁন্না করেছে। সন্ধা ৭:৩০ এর পর আমাদেরকে গাড়িতে তুলে দিলো। কিছুক্ষণের মধ্য আমরা তাসিনদের বাড়িতে এসে পৌছোলাম। খালামনি আর মামি মিলে আমাকে আর তিশাকে হাসি মুখে বরণ করে ঘরে তুলে নিলো। আমাদের দুজনকেই নিয়ে সোফায় পাশাপাশি বসালো। এই বাড়িটা তো আমার কত চেনা কিন্তু আজ মনে হচ্ছে আজই প্রথম এলাম এ বাড়িতে। বিয়ে শশুর বাড়ি ব্যাপারটা আসলেই অদ্ভুত সবটাই কেমন যেনো এলোমেলো মনে হয়।

পর্ব ১৮

তমা আপু আর রিশা আপু একটু আগেই আমাকে বাসর ঘরে বসিয়ে রেখে গেছে। পুরোঘর জুরে যেনো ফুলের সমারোহ, আচ্ছা বাসর ঘরে এত ফুল দিতে হয় বুঝি! দেখে মনে হচ্ছে এটা একটা রুম নয় ফুলের গালিচা। চারিপাশে গোলাপ রজনীগন্ধা বেলি ফুলে ভর্তি, তবে অসম্ভব সুন্দর লাগছে পুরো রুমটা। বিছানার ঠিক মাঝখানটায় বসে আছি, ছড়িয়ে রাখা গোলাপের পাপড়ি হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করছি।

আমার ভেতরে কেমন যেনো একটা অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে কেমন যেনো একটা লজ্জাবৃত অনুভূতি।
হঠাৎ দরজা খোলার আওয়াজ পেয়ে চোখ তুলে তাকালাম তাসিন হাসি মুখে রুমে ঢুকে দরজাটা লক করলো। আমার হার্টবিট বেড়ে গিয়েছে এই প্রথম তাসিনের সামনে এতটা নার্ভাস লাগছে আমার। উফফ এমনিতেই এত ভারি শাড়ি গহনাতে হাপিয়ে উঠেছিলাম এখন তো আরো অস্বস্থি লাগছে। আমি আর উনার দিকে তাকিয়ে থাকতে পারলাম না নামিয়ে নিলাম চোখটা।

তাসিন আমার পাশে এসে বসলো আমার ডান হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে মুচকি হেসে বললো
আমার মেঘকন্যা কি আজ আমাকে দেখে ভয় পাচ্ছে হুমম! এসি চলছে তারপরেও ঘামছো কেনো?

এই মেঘাপাখি কথা বলছো না কেনো? আচ্ছা তোমাকে আজ এত সাজতে কে বলেছে বলোতো? জানো তোমাকে বধু বেশে দেখে আমার হার্টবিট থেমে গিয়েছিলো। উফ আমি তো নিজের চোখই সড়াতে পারছিলাম না হা করে দেখছিলাম তোমায়। আর এখন যেভাবে আছো নিজেকে তো কনট্রোল করাই দায় হয়ে পড়েছে গো। বলেই আমার হাতে চুমু খেলেন।

উনি একটু থেমে বললেন
মেঘাপাখি যাও চেন্জ করে এসো সারাদিন এভাবে থেকে নিশ্চই কষ্ট হচ্ছে তোমার।
আমি কিছু না বলে মাথা নাড়িয়ে বিছানা থেকে নেমে পড়লাম, যাক বাবা অবশেষে এই শাড়ি গহনার দোকান নিজের থেকে আলাদা করার সুযোগ হলো।

একটু এগোতেই আমার হাতে টান পড়লো, পেছনে তাকাতেই তাসিন হেসে বললো
একটু দাড়াও।

তারপর উনি নিজের ফোনটা বের করে এসে আমাকে পেছন থেকে একহাতে জড়িয়ে ধরে আমার কাধে থুতনি রাখলো। আমি উনার এমন স্পর্শে কেঁপে উঠে চোখ বন্ধ করে নিলাম।
মেঘাপাখি চোখ খোলো সামনে তাকাও।

আমি চোখ খুলে সামনে তাকাতেই উনি নিজের ফোনে ওভাবেই কয়েকটা ছবি তুলে নিলো।
ফোনটা পকেটে রেখে আমাকে দুহাতে জড়িয়ে বললো
এই ছবি গুলো আমাদের বিয়ে এবং বাসর রাতের অন্যতম স্মৃতি হয়ে থাকবে সারাজীবন। এখন যাও আলমারি তে শাড়ি রাখা আছে ফ্রেস হয়ে চেন্জ করে এসো।

আমার মুখ থেকে কেনো জানিনা আজ কথাই বের হচ্ছে না, উনি আমাকে ছেড়ে দিতেই আলমারি থেকে শাড়ি নিয়ে ওয়াশরুমে গেলাম।

তিশা আর আয়ান ভাইয়াকেও আমাদের পাশের রুমটাই দেওয়া হয়েছে, এমনকি আমাদের রুম আর ওই রুমটাও সেম ভাবে সাজানো হয়েছে। তিশা পুরো রুমটা তে চোখ বুলিয়ে মুচকি হেসে বললো
বাহ রুমটা তো খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে।

তিশা বিছানা থেকে নেমে পুরো রুমটা ঘুড়ে ঘুড়ে দেখতে লাগলো। তারপর বিছানার একপাশে এসে বসে পড়লো মুখে বিরক্তির ছাপ ফুটিয়ে বিড়বিড় করে বলতে লাগলো
উফ আর কত ক্ষণ এমন সং সেজে থাকবো। ওই বাদরটা করছে কি হ্যা, তমা আপু তো বলে গেলো উনি না আসা পর্যন্ত এসব খুলতেও পারবো না।

একটু পরেই দরজা ঠেলে রুমে ঢুকলো আয়ান ভাইয়া। তিশা রেগে তাকালো, আয়ান দরজাটা লক করে তিশার দিকে তাকিয়ে হেসে বললো
কি ব্যাপার পিচ্চি রেগে আছো কেনো?

তিশা এবার আরো রেগে গেলো
আপনাকে না বলেছি আমাকে পিচ্চি বলবেন না।
আয়ান ভাইয়া তিশার পাশে গিয়ে ওর গা ঘেষে বসে পড়লো তিশা সরে যেতে নিলে ভাইয়া ওর কোমড় জড়িয়ে ধরে বললো
আচ্ছা আর পিচ্চি বলবো না এখন থেকে বউ বলে ডাকবো। এখন বলো তো রেগে কেনো আছো?
রাগবো না! এখন আসার সময় হলো আপনার তাইনা?
ইসস বউ আমার খুব মিস করছিলো বুঝি আমাকে!

মটেও না, সারাদিন এমন সং সেজে আছি আমি আর পারছি না এভাবে থাকতে এমনিতেই শাড়ি পড়ার অভ্যাস নেই আমার। তমা আপু বলে গিয়েছে আপনি না আসা পর্যন্ত যেনো এভাবেই থাকি।
ওও এই কথা! থাকো না এভাবে খুব সুন্দর লাগছে তোমায়। বাইরে সবার মাঝে তো চুরি করে দেখেছি তোমাকে এখন একটু মন ভরে দেখতে দাও।

তিশা এবার মুখ ফুলিয়ে বললো
সত্যিই আমি হাপিয়ে উঠেছি, প্লিজজ একটু বুঝুন।
আয়ান ভাইয়া হেসে তিশার গাল টেনে বললো
ঠিকআছে যাও চেন্জ করে এসো।

তিশা খুশিতে লাফিয়ে উঠলো। তাড়াহুড়া করে ওয়াশরুমে চলে গেলো।
আরে তিশা শাড়িটা তো নিয়ে যাও চেন্জ করে পড়বে কি।
তিশা ওয়াশরুম থেকেই বললো।
দিয়ে যান শাড়িটা।

আয়ান ভাইয়া আলমারি থেকে একটা প্যাকেট বের করে তিশাকে ওটা দিয়ে খাটে এসে বসলো।
কিছুক্ষণ পর তিশা দরজাটা একটু ফাকা করে ইনোসেন্ট ফেস করে বললো
শুনুন না আমি শাড়িটা পড়তে পারছি না কাউকে একটু ডেকে দেবেন।
আয়ান ভাইয়া তিশার দিকে একটু তাকিয়ে থেকে বললো
তুমি শাড়ি পড়তে পারো না!
উহু
আচ্ছা বাইরে এসো আমি হেল্প করছি।
কিহহ!আপনি কেনো কাউকে ডেকে দিন।

এই যে ম্যাম রাত এখন ১ টার মত বাজে সারাদিন ঝামেলার মধ্য থেকে কেউ জেগে নেই। আর তাছাড়া আমি পড়ালে প্রবলেম কি? তুমি তো আমার বউ এখন তাইনা।
নাহ আপনার থেকে আমি পড়বো না।

ঠিকআছে পড়তে হবে না শাড়ি না পড়েই থাকো।
তিশা চোখ বড়বড় করে তাকালো
ওভাবে তাকানোর কি আছে আর আমার কাছে কিসের এত লজ্জা শুনি। মনে নেই জঙ্গলে এক রাত আমার বুকে কিভাবে লেপ্টে ছিলে তুমি। বাকা হেসে বললো।

তিশা আর কিছু বললো না ও জানে এখন আরো কিছু বললে আয়ান ভাইয়া ওকে আরো লজ্জায় ফেলবে। তাই কিছু না বলে চুপচাপ শাড়িটা গায়ে পেচিয়ে বেড়িয়ে এসে ভাইয়ার সামনে দাড়ালো।
ভাইয়াও মুচকি হেসে তিশাকে শাড়িটা পড়তে সাহায্য করলো। তারপর শাড়ির আচলটা তিশার মাথায় তুলে দিয়ে ওর কপালে একটা চুমু একে দিয়ে বললো
ভালোবাসি বউ অনেকটা ভালোবাসি তোমায়।

তিশা মুচকি হেসে বললো
আমিও অনেক ভালোবাসি তোমাকে।
তিশার মুখে তুমি ডাক শুনে আয়ান ভাইয়া চমকে উঠে তিশার গালে দুহাত রেখে বললো
আমার বউটা আমাকে তুমি করে বললো!আমি ভাবতে পারছি না। দারুন একটা উপহার দিলে তুমি আমাকে। আমারো তো কিছু দিতে হবে তাহলে বলো কি চাও?

সারাজীবন এভাবে ভালোবেসে পাশে থেকো এটাই চাই আমি।
তা তোমাকে বলতে হবে না গো পিচ্চ বউ। বলেই তিশাকে বুকে জড়িয়ে নিলো।

আমি ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে তাসিনকে কোথাও দেখতে পাচ্ছি না। দরজাটা তো ভেতর থেকে লক করা গেলো কোথায়! আমি ব্যালকনির দিকে পা বাড়াতেই তাসিন রুমে ঢুকলো, হেসে উঠে বললো
হলো তাহলে তোমার এত সময় লাগলো কেনো?
কোথায় এত সময় নিয়েছি।

তাসিন আমার সামনে এসে একটু ঝুকে বললো
এই তুমি শাড়ি পড়া শিখেছো কেনো বলো তো? আমার কত ইচ্ছে ছিলো বাসর রাতে বউকে নিজের হাতে শাড়ি পড়িয়ে দিবো।

আমি উনার দিকে হা করে তাকালাম বলে কি উনি! আমি সরে এসে দাড়ালাম ওখান থেকে।
তাসিন হঠাৎই আমাকে কোলে তুলে নিলো।
কক কি করছেন আপনি!
কি করছি আমার মেঘকন্যাকে কোলে নিলাম।

উনি আমাকে খাটে বসিয়ে দিলেন তারপর সোজা হয়ে আমার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো।
মেঘাপাখি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দাওতো।
আমি উনার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি আর উনি অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।
কি দেখছেন ওভাবে?

আমার মিষ্টি বউকে দেখছি। এত মায়া কেনো গো তোমার মুখে চোখই সাড়াতে পারি না। মেঘা জানো আমি না এখনো বিশ্বাস করতে পারছি না তোমাকে আমি নিজের করে পেয়েছি। আজ আমি খুব খুব খুব খুশি তোমাকে পেয়ে। আমি তোমাকে সব সময় আগলে রাখবো আমাকে একা ফেলে কখনো কোথাও যাবে না বলো। আমার সপ্ন গুলো শুধু তোমায় ঘিরে সব আমি পূরণ করতে চাই তোমার হাত ধরে।

উহুম কোথাও যাবো না। আপনার ছায়া হয়ে থাকবো আমি সব সময়।
তাসিন আমার কোমড় জড়িয়ে আমার পেটে মুখ গুজলো আমি কেঁপে উঠে একহাতে উনার চুল আকড়ে ধরলাম। উনি পেটে মুখ গুজেই বললো
আমাকে এখনো আপনি করে বলবে তুমি?

তাসিনের ঠোঁটেট ছোয়া আমার পেটে স্পর্শ করছিলো আমি বার বার কেঁপে উঠছি। আস্তে করে বললাম
আপনি করে বলাতেও একটা অন্য রকম সুখ আছে। এখন প্লিজ উঠুন না।
তাসিন আমার কথায় উঠে বসলো আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বললো
তোমার যেভাবে ইচ্ছে ডেকো আমার কোনো প্রবলেম নেই।

আমাদের ভালোবাসা অবশেষে পূর্ণতা পেলো। চারটি হৃদর পেলো তাদের একে ওপরের ভালোবাসার মানুষকে। তিশা আর আমার বন্ধুক্ত যেনো আরো গভীর হয়ে উঠেছে নতুন এ সম্পর্কের মাধ্যমে।

পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে নিজেকে তাসিনের বুকে পেলাম। চোখ তুলে তাকালাম তাসিনের দিকে উনি তখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। কি নিষ্পাপ দেখতে লাগছে উনাকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে উনার কপালে নিজের ঠোঁট ছোয়ালাম। তারপর উঠে ফ্রেস হয়ে নিচে চলে এলাম। খালামনি আমাকে দেখে মুচকি হেসে কাছে এসে বললো
মেঘা এত তাড়াতাড়ি উঠে এলি যে?

খালামনি তুমি তো জানো আমি সকালেই উঠি মাঝে মাঝে দেরি হয় শুধু।
খালামনি মুখ গোমড়া করে বললো
তুই এখনো আমাকে খালামনি বলে ডাকবি?

আসলে খালামনি ডেকেই তো অভ্যস্ত আমি।
এখন থেকে অভ্যাস পাল্টা মা বলে ডাকবি আমায় কেমন।
আচ্ছা ডাকবো তবে একটু সময় লাগবে যে।
খালামনি হেসে আমার কপালে চুমু দিয়ে বললো
ঠিকআছে।

এর মাঝেই অরিন এসে আমাকে বললো
মামি মামি তোমাকে ডাকছে।

আমি নিচু হয়ে বসে ওর গালে হাত দিয়ে বললাম
কে ডাকছে আমাকে?

আর একটা নতুন মামি।

খালামনি বললো
তিশা ডাকছে হয়তো যা গিয়ে শুনে আয়।

আমি মাথা নাড়িয়ে তিশার রুমের সামনে এসে দরজা নক করে তিশাকে ডাকলাম। তিশা ভেতর বললো
মেঘা ভেতরে আয়।

আমি ভেতরে গিয়ে ওকে দেখে হাসতে লাগলাম। ও মুখ ফুলিয়ে বললো
ওই পেত্নি দাত কেলিয়ে হাসছিস কেনো?

হাসবো না! তুই শাড়িটা এভাবে পেচিয়ে আছিস কেনো?

তুই তো জানিস আমি শাড়ি পড়তে পারি না, একটু হেল্প কর না।

আমি ভ্রু কুঁচকে দুষ্টু হেসে তাকিয়ে বললাম
তাহলে রাতে কিভাবে পড়েছিলি নাকি
মেঘা ভালো হবে না কিন্তু। আয়ান উঠার আগে দেনা পড়িয়ে।

বা বাহ এক রাতেই বাদর থেকে আমার ভাইয়াটা আয়ান হয়ে গেলো!
মেঘা শাড়িটা পড়াতে সাহায্য করবি তুই?

আরে রেগে যাচ্ছিস কেনো, দে পড়িয়ে দিচ্ছি।
ওকে শাড়িটা পড়িয়ে বললাম
ভাইয়াকে ডেকে তোল এখন আমি গেলাম।

কোথায় যাবি তাসিন ভাইয়ার কাছে? হেসে বললো।
না গো তিশাবেবি নিচে যাচ্ছি।
ওও আমি আরো ভাবলাম!

কি ভাবলি?
নাহ কিছু না চল আমিও যাবো তোর সাথে।
হুম চল।

পর্ব ১৯ (শেষ পর্ব)

অবশেষে বিয়ের সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষ হলো আজ বউ ভাতের অনুষ্ঠান একটু আগেই শেষ হয়েছে। আজও তিশাকে আর আমাকে পুতুলের মতো সেজে বসে থাকতে হয়েছে। রুমে এসে কিছুটা ফ্রেস হয়ে নিলাম, কেমন যেন একটা খুশি খুশি লাগছে বাড়িতে যাবো ভেবে। তাসিনের কিছু কাপর গুছিয়ে নিলাম।

আয়নার সামনে দাড়িয়ে চুল ঠিক করছিলাম তখনি তাসিন রুমে ঢুকলো আর এসেই আমাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে চুলে মুখ গুজে দিলো।

কিছুটা কেঁপে উঠে বললাম
যখন তখন এভাবে জড়িয়ে ধরেন কেনো?
আমার বউকে আমি ধরবো তাতে তোমার কি।

আমার আবার কি দরজাটা খোলা আছে ছাড়ুন এখন।
থাক খোলা কেউ আসবে না এদিকে। বলেই ঘাড়ে চুমু খেলো।

ছাড়ুন না আমাদের বাড়িতে যেতে হবে তো ফ্রেস হয়ে রেডি হয়ে নিন।
আয়ান ভাইয়া রুমে ঢুকছিলো আমাদের এভাবে দেখে ঘুরে দাড়িয়ে বললো
ওপস সরি সরি ভুল সময়ে চলে এসেছি।

তাসিন সাথে সাথেই আমাকে ছেড়ে দিলো আমি অন্য দিকে ঘুরে দাড়ালাম। ইসস এই তাসিনটাও না, আয়ান ভাইয়ার সামনে কি লজ্জাতেই না পড়তে হলো এখন।

তাসিন আয়ান ভাইয়ার মাথায় চাটি মেরে বললো
ওই শালা কারো রুমে আসতে হলে নক করতে হয় জানিস না?
রোম্যান্স করতে হলে দরজাটা লক করতে হয় তুই সেটা জানিস না!
কি জন্য এসেছিস সেটা বল?

তোদেরকে ডাকতে এসেছি, তিশা আর আমি রেডি তোদেরকে যেতে বলেছে।
আচ্ছা যা আসছি আমারা।

আয়ান ভাইয়া বেড়িয়ে যেতে গিয়ে আবার ফিরে এসে তাসিনকে বাকা হেসে বললো
আবার আটকে পড়িস না যেনো। বলেই ভাইয়া হাসতে হাসতে বেড়িয়ে গেলো।

তাসিন আর আমাকে বাবা বাড়িতে নিয়ে এসেছে, তিশা আর আয়ান ভাইয়াকে তিশাদের বাড়িতে নিয়ে গিয়েছে।
৩ দিন বাড়িতে থেকে তাসিনদের বাড়িতে এসেছি আজ তিশারাও এসেছে।

রাতে খাবার পর সবাই ড্রয়িং রুমে বসে আছি। তিশা আমার পাশেই বসে আছে। মামা মানে আয়ান ভাইয়ার বাবা বললো
আয়ান বিয়ের সব ঝামেলা তো শেষ এখন তো আমাদের ফেরা দরকার।
খালামনি বললো
ভাইয়া তোমরা তো ঢাকাতেই থাকতে পারো।
হুম পারি কিন্তু গ্রামের মায়া যে ছাড়তে পারি না।

তিশা আমার হাতটি চেপে ধরে মন খারাপ করে বললো
মেঘা আমি তোদের ছেড়ে কি করে থাকবো। এত দুরে থাকলে বাবা মাকে কে দেখবে।
মন খারাপ করিস না আমি মামাকে বলছি।
মামাকে উদ্দেশ্য করে বললাম
মামা আমার কিছু বলার ছিলো।

হ্যা বল কি বলবি?
বলছিলাম কি তিশার তো আর কোনো ভাই বোন নেই ও একাই ও যদি এত দুরে চলে যায় ওর বাবা মা ওকে না দেখে কি ভাবে থাকবে। তাছাড়া ও তো ঢাকাতেই পড়াশুনা করছে।

খালামনি বললো
মেঘা ঠিকি বলেছে ভাইয়া, তোমরা ঢাকাতেই থাকো।
মামা অনেক ভেবে বললো
ঠিকআছে আমাদের যে নতুন বাড়িটা এখানে ভাড়া দেওয়া আছে আয়ান আর তিশা আপাততো ওই বাড়িতে থাকবে আর ৬ মাসের মধ্য গ্রামের সব ঠিকঠাক করে আমরাও চলে আসবো।

পরের দিন মামারা গ্রামের বাড়িতে চলে গেলো, আয়ান ভাইয়াও তিশাকে নিয়ে ভাইয়াদের নতুন বাড়িতে চলে গেছে। কেমন যেনো ফাকা ফাকা লাগছে তিশাকে খুব মিস করছি। দুপুরে রুমে শুয়ে আছি তখন তমা আপু অরিনকে নিয়ে রুমে আসলো।

মেঘা শুয়ে আছিস যে শরীর খারাপ লাগছে?
না আপু এমনি শুয়ে আছি। উঠে বসে বললাম।

আপু আমার পাশে বসলো আমি অরিনকে কোলে নিয়ে ওর চুলে হাত বুলাচ্ছি। তমা আপু বললো
তিশাকে মিস করছিস তাইনা?

হুম আপু।
মন খারাপ করিস না বেশি দুরে তো না ওরাও আসবে মাঝে মাঝে আর তাসিনকে বলবি তোকেও নিয়ে যেতে। যাই হোক শোন আমরা ২ দিন পরেই কানাডাতে ফিরে যাচ্ছি তুই কিন্তু আমার পাগল ভাইটার খেয়াল রাখবি খুব ভালোবাসে রে ও তোকে।

আপু তোমরা এত তাড়াতাড়ি ফিরে যাবে! সামনের মাসে না যাওয়ার কথা ছিলো!
হুম ছিলো কিন্তু তোর ভাইয়ার জরুরী ফোন এসেছে যেতেই হবে।
আরো একা হয়ে যাবো তোমরা চলে গেলে, অরিনকে খুব মিস করবো আপু।
তাসিন দরজার সামনে থেকে বলে উঠলো
তাহলে ছোট্ট আর একটা অরিন আনার ব্যবস্থা করতে হবে তাহলে আর আমার এই অরিনটাকে এত মিস করবে না। অরিনকে কোলে নিয়ে।

তমা আপু হেসে বললো

তাসিন ভুল বলেনি মেঘা ভেবে দেখিস।
আমি প্রথমে ভালো ভাবে বুঝতে না পারলেও এখন বেশ বুঝতে পারছি উনি কি বলেছেন, আপুর সামনে কিভাবে বললো এ কথা!

আমি তাসিনের দিকে চোখ বড়বড় করে তাকাতেই উনি আমার দিকে তাকিয়ে দাত কেলিয়ে একটা হাসি দিলো।
তমা আপুর সামনে কিছুই বললাম না। আপু আরো কিছুক্ষণ কথা বলে চলে গেলো। আপু যাওয়ার পর তাসিন দরজাটা লক করে দিয়ে এসে আমার গা ঘেষে বসলো। আমি রাগি চোখে তাকিয়ে বললাম
আপুর সামনে ওসব কি বলছিলেন হুমম?

তাসিন আমাকে এক হাতে জড়িয়ে কাছে নিয়ে বললো
কেনো গো মেঘাপাখি খারাপ কি বলেছি আমি তো চাই আমাদের
উনাকে থামিয়ে বললাম
থাক আর বলতে হবে না বুঝেছি আমি।
কি বুঝেছো বলো?
বলবো না।

তাসিন আস্তে আস্তে আমার আরো কাছে আসতে লাগলো আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই আমার ঠোঁট জোড়া নিজের আয়ত্তে নিয়ে নিলো। আমিও আর বাধা দিলাম না উনি নিজের অধিকারেই তো আমার কাছে এসেছে।
আজ আমি তিশার বাসায় এসেছি তাসিন অফিসে যাওয়ার সময় দিয়ে গিয়েছে। বিকেলে ফেরার সময় নিয়ে যাবে। অনেকদিন পর তিশাকে পেয়ে জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছি। আয়ান ভাইয়াও তখন বাসায় ছিলো না।

বিকেলে তাসিন আর আয়ান ভাইয়া দুজনেই বাসায় আসলো। আরো কিছুক্ষণ থেকে বাড়িতে চলে এলাম।

৪ বছর পর

উফ এত জোড়ে ডাকছো কেনো আমি শুনতে পাই তো নাকি?
তোমাকে জোড়ে ডাকতেই আমার ভালো লাগে।

হয়েছে কি জন্য ডাকছো বলো?

র সময় তোমাকে না দেখে গেলে আমার দিনটাই যে খারাপ যায়। আমাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে।
তৃধা দরজায় দাড়িয়ে খিলখিল করে হেসে উঠে বললো
বাবাই তুমি আম্মুকে আদর করে দিচ্ছো?

তাসিন আমাকে ছেড়ে দিলো, আমি হেসে বললাম
এবার মেয়ের প্রশ্নের উত্তর দাও।

তাসিন তৃধাকে কোলে নিয়ে ওর গালে চুমু দিয়ে বললো
শুধু আম্মুকে নয় এই যে আমার সুইট মামনিটাকে ও আদর করে দিয়েছি।
বাবাই আম্মু না আমাকে চকলেট খেতে দেয় না।

চকলেট খাওয়া তো ভালো নয় তাই তো আম্মু খেতে দেয় না তোমাকে।
তাহলে আর খাবো না।

তাসিন তৃধাকে আমার কোলে দিয়ে বললো
মেঘাপাখি বিকেলে আয়ান আর তিশা আসবে মনে আছে তো?
তোমার থেকে বেশি মনে আছে।

হ্যা মনে তো থাকবেই তিশাকে পেলে তো তুমি আমাকেই ভুলে যাও।
তিশা আমার বেস্ট ফ্রেন্ড ওর জায়গায় ও আছে তোমার জায়গায় তুমি।

হুম বুঝলাম আচ্ছা আমি বের হচ্ছি। মামনি আম্মুকে বিরক্ত করবে না কেমন। তৃধার গালে হাত দিয়ে বললো।
আচ্ছা বাবাই।
বিকেলে আয়ান ভাইয়া তিশা এসেছে, আয়ান ভাইয়ার কোলে গলা জড়িয়ে আছে তিশা আর আয়ান ভাইয়ার ছেলে আরিয়ান। আরিয়ান তৃধার থেকে অল্প কিছুদিনের বড়। তিশা এসেই আমাকে জড়িয়ে ধরলো।
কেমন আছিস মেঘা?
খুব ভালো আছি। তুই কেমন আছিস?

আমি ও ভালো আছি।
তৃধা খালামনির কোলে ছিলো তিশাকে দেখে দৌড়ে এসে ওকে জড়িয়ে ধরে বললো
আন্টি তোমাকে অনেক মিস করি আমি।

তিশা ওকে কোলে নিয়ে বললো
তাই বুঝি! তাহলে আন্টিকে পাপ্পি দিয়ে দাও।

তৃধা তিশার গালে চুমু দিতেই আরিয়ান দৌড়ে এসে বললো
আমার আম্মুকে পাপ্পি দিয়েছো এখন আমাকেও দিতে হবে।
ওর কথা শুনে আমরা সবাই হেসে উঠলাম।

তিশারা আজ আমাদের বাড়িতেই আছে। রাতে বিছানা ঠিক করছিলাম তাসিন রুমে আসলো
মেঘা তৃধা কোথায়?

কোথায় আবার তিশাকে পেলে ও তো আমাকে ভুলেই যায়।
আনতে যাও নি? খাটে বসে বললো।

গিয়েছিলাম তোমার মেয়ে আসবে না আরিয়ানের সাথে খেলছে। আয়ান ভাইয়া বললো ঘুমিয়ে গেলে দিয়ে যাবে।
মেঘা আমি একটা কথা ভাবছি।
কি কথা?

ভাবছি তৃধার তো খেলার সঙ্গী নেই একটা সঙ্গী এনে দিলে কেমন হয় বলো।
আমি তাসিনের দিকে তাকালাম ওর হাসি দেখেই বুঝতে পারলাম কি বলছে। আমি কিছু না বলে সেখান থেকে সরে আসতে নিলে তাসিন আমার হাত ধরে নিজের কাছে নিয়ে নিলো। আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বললো
মেঘাপাখি তোমাকে যত দেখি তারপরেও মন ভরে না শুধু তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে তোমার ওই মায়াভরা মুখটির দিকে।
আমি কিছুটা হেসে বললাম
এত ভালোবাসো কেনো আমায়?

আমার মেঘকন্যাকে তো ভালো বাসতেই হবে। তৃধা আসার আগে তোমায় ঘিরেই ছিলো আমার সব কিছু। বিয়ের রাতে কি বলেছিলাম মনে আছে?

বলেছিলাম তোমার হাত ধরেই আমি সব সপ্ন পূরণ করতে চাই। আজ দেখো সত্যি আমার সপ্নগুলো পূরণ হচ্ছে তোমাকে পেয়েছি আমি, তোমার মত ছোট্ট মেঘাকে মানে আমাদের মেয়ে তৃধাকে পেয়েছি। জানো মেঘা তৃধা যখন বাবাই বাবাই বলে ডাকে তখন যে কি ভালো লাগে বলে বুঝাতে পারবো না তোমাকে।

আগে শুধু তোমায় ঘিরে ছিলো আমার সুখ দুঃখ আনন্দ আর এখন তোমাদের দুজনকে ঘিরেই আমার জীবন।
আমি খুব মন দিয়ে তাসিনের কথা গুলো শুনছিলাম, চোখের কোনে পানি জমে গিয়েছে আমার। খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম তাসিনকে।

তাসিনও দুহাতে আগলে নিলো আমায়। বুকে মাথা রেখেই বললাম,
ভালোবাসি তোমাকে তাসিন খুব ভালোবাসি।
আমিও তোমায় অনেক অনেক ভালোবাসি মেঘাপাখি।

কিছুকিছু ভালোবাসা আছে যা একে ওপরের প্রতি আকৃষ্ট করে ঠিকি কিন্তু সারাজীবন একসাথে চলতে পারে না, আবার কিছুকিছু ভালোবাসা আছে যা একে ওপরকে বাচতে শেখায় জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত দুজন দুজনের পাশে থাকবে প্রতিটি সপ্ন পূরণ করবে একে ওপরের হাতে হাত রেখে পাশাপাশি থেকে। সব বাধা বিঘ্ন অতিক্রম করে পাশে থাকবে এটাই তো ভালোবাসার অন্যতম অধ্যায়।

লেখা – মেঘা আফরোজ

সমাপ্ত

(পাঠক আপনাদের ভালোলাগার উদ্দেশ্যেই প্রতিনিয়ত আমাদের লেখা। আপনাদের একটি শেয়ার আমাদের লেখার স্পৃহা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আমাদের এই পর্বের “শুধু তোমায় ঘিরে – ভালোবাসার রোমান্টিক কথা” গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম। ধন্যবাদ।)

আরো পড়ূন – শুধু তোমায় ঘিরে (১ম খণ্ড) – ভালোবাসার রোমান্টিক কথা

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *