শুধু তোমায় ঘিরে (১ম খণ্ড) – ভালোবাসার রোমান্টিক কথা

শুধু তোমায় ঘিরে – ভালোবাসার রোমান্টিক কথা: আমার এবার খুব ভয় লাগছে গেলো কোথায় তিশা? এমনিতে নতুন জায়গা অন্ধকার হয়ে আসছে যেকোনো সময় ঝড় শুরু হবে। আমরা সবাই মিলে ওকে খুজে চলেছি পাচ্ছি না ডাকছি তার ও সাড়া নেই।


পর্ব ১

কলিংবেল বাজতেই দৌড়ে গিয়ে দরজাটা খুলে দিলাম আমার সামনে থাকা মানুষটিকে দেখে ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠলো আমার। কিন্তু সে হাসিটা বেশিসময় টিকলো না।
সামনে থাকা মানুষটি আমাকে ধমক দিয়ে বলে উঠলেন এই মেয়ে যা পারিস না তা করতে যাস কেনো শাড়ি পড়েছিস নিজের পেটটা ঢাকতে পারিসনি?

ওনার কথা শুনে আমার চোখ বেড়িয়ে আসার উপক্রম হয়েছে আর কোনো দিকে না সোজা আমার পেটের দিকেই চোখ পড়তে হলো!
কি হলো আমাকে কি ভেতরে যেতে দিবি নাকি মূর্তির মতো সামনে দাড়িয়ে থাকবি?

আমি মুখে ভেংচি কেটে সরে দাড়ালাম আর সে আমার দিকে একবার তাকিয়ে ভেতরে ঢুকলো। ধুর এতো কষ্ট করে শাড়িটা পড়লাম মনে উৎসাহ নিয়ে দরজাটা খুললাম কিন্তু ওই ইতরটা আমার আনন্দে এক বালতি পানি ঢেলে সব শেষ করে দিলো! কোথায় মিষ্টি করে জানতে চাইবে কেমন আছি কখন এসেছি তা না করে আমাকে কথা শুনালো। একে তো একটু শাস্তি দিতেই হবে আমাকে এড়িয়ে চলা তাইনা।

আপন মনেই বিড়বিড় করে চলেছি তখনি খালামনি ডাকলো এই মেঘা ওখানে দাড়িয়ে কি করছিস এদিকে আয়। হুম বলো খালামনি?
যা না মা তাসিনের জন্য এক কাপ কফি বানিয়ে ওর ঘরে দিয়ে আয় ছেলেটা বিকেলে কফি খেতে ভালোবাসে। পারবি না?
কেনো পারবো না খালামনি খুব পারবো।
আচ্ছা যা তাহলে দেরি হলে আবার খাবে না।

রান্নাঘরে এসে আপন মনে কফি বানাচ্ছি হঠাৎ মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি চাপলো কফির মধ্য গুনে গুনে পাঁচ চামচ লবন দিয়ে দিলাম। আমাকে কথা শুনানো তাইনা এবার বুঝবে এই মেঘাকে বকলে কি হতে পারে।

ওহ আপনাদের তো পরিচয়টা দেওয়া হয়নি। আমি মেঘা আফরোজ বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে আমি অনার্স ১ম বর্ষের ছাত্রী। একটু আগে যে আমাকে কথা শুনিয়ে গেলো সে আমার খালামনির ছেলে তাসিন আহমেদ এ বছরি মাস্টার্স কমপ্লিট করেছে। ওও আর একটা কথা তাসিন সম্পর্কে আমার ভাই হলেও সে আমার ক্রাশ। বাকী সব গল্পে জানতে পারবেন।

কফির কাপটা হাতে নিয়ে দরজার বাইরে দাড়িয়ে উকি মারছি কিন্তু রুমে কাউকে দেখতে পাচ্ছি না কিছু না ভেবেই রুমে ঢুকে পড়লাম। কফির কাপটা খাটের পাশে টেবিলে রাখতে যাবো তখনি তাসিন ভাইয়া ওয়াশরুমের দরজা খুলে বের হলো। আমি ওনার দিকে হা করে তাকিয়ে আছিগোসলের পর কোনো ছেলেকে এতো সুন্দর লাগে বুঝি! খালি গায়ে গলায় টাওয়েল ঝুলানো ভেজা চুলগুলো লেপ্টে আছে কপালে। উফ আমি আবারো ক্রাশ খেলাম ওনাকে এভাবে দেখে। উনি আমার সামনে হাতের তুরি বাজাতের হুস ফিরলো আমার।

মেঘা কারে রুমে আসতে হলে যে পারমিশন নিতে হয় সেটা জানিস না তুই? কিছুটা রেগেই বললো।
আর এভাবে হা করে তাকিয়ে আছিস কেনো শুনি?

না মানে কফিটা দিতে এসেছিলাম রুমে কাউকে দেখতে না পেয়ে কফিটা রেখে যাচ্ছিলাম।
তো রেখে যা বিদায় হো। চুল ঝারতে ঝারতে।

ভাইয়া আপনি আমার সাথে একটু ভালো করে কথা বলতে পারেন না? সবার সাথেই তো হেসে কথা বলেন শুধু আমার সাথে কথা বলার সময় আপনার মুখ থেকে তেতো কথা বের হয়। মুখ গোমড়া করে বললাম।

ওনার চোখ দেখেই তো ভয় করছে আমার এভাবে কেউ তাকায় আমার ভয় লাগে না বুঝি, আস্তো বজ্জাত একটা কেনো যে বেছে বেছে এর উপরেই ক্রাশ খেলাম আমি।
যাই হোক কফিটা আগে খাও ভাইয়া মজা বুঝবে, ইস কি যে করবে ভেবেই হাসি পাচ্ছে।
মেঘা কফিটা কি ঠান্ড হয়ে গেলে দিবি আমাকে?

না না এই নিন, কফিটা হাতে ধরিয়ে দিয়ে মিটমিটে হেসে বেড়িয়ে আসতে নিলে তাসিন ভাইয়া ডাকলো মেঘা শোন। আমি অধির আগ্রহে ঘুরে বললাম জ্বি ভাইয়া।
শোন তোকে যেনো আর কখনো তোকে শাড়ি পড়তে না দেখি।
আমি কপালে ভাজ ফেলে বললাম কেনো?
তোকে শাড়ি পড়লে পেত্নির মতো দেখতে লাগে তাই।
কিহ আমি পেত্নি?
তোকে এতো কথা বলতে বলিনি পড়তে বারণ করেছি পড়বি না তাছাড়া শরীরের অর্ধেক অংশ তো বের করেই রাখিস।
ওনার কথা শুনে খুব রাগ হলো আমার ব্যাটা শয়তান আমাকে বলে পেত্নির মতো দেখতে লাগে আমি শরীরের অংশ বের করে রাখি!
আমি আর কিছু বললাম না রেগে বেড়িয়ে আসলাম রুম থেকে।

নিচে নামার জন্য শিরিতে পা রাখতেই তাসিনের চিৎকার শুনতে পেলাম। ঠিক চিৎকার নয় জোরে জোরে মা বলে ডাকছে। তবে কেনো ডাকছে তা আর বুঝতে বাকী রইলো না আমার।
খালামনি রুম থেকে দ্রুত বেড়িয়ে তাসিনের রুমে গেলো আমিও গেলাম তবে রুমে ভেতরে নয় দরজার আড়ালে দাড়ালাম।
কি হয়েছে তাসিন এভাবে ডাকছিস কেনো?
তাসিন কফির কাপটা খালামনির সামনে ধরে বললো কফিটা কে বানিয়েছে? রেগে বললো।
খালামনি হেসে বললো কেনো রে ভালো হয়নি বুঝি আসলে বাচ্চা মেয়ে তো বুঝতে পারেনি।
বাচ্চা মেয়ে মানে?
হ্যা রে মেঘা বানিয়েছে।
তাসিন এবার আরো রেগে গেলো মা তুমি ওকে কেনো আমার জন্য কফি বানাতে দিয়েছো আর কি বললে ও বাচ্চা মেয়ে? ও যথেষ্ট বড় হয়েছে মা!
রাগ করিস না বাবা এবারের মতো খেয়ে নে।
কি করে খাবো তোমার সে বাচ্চা ভাগ্নিটা কি করেছে জানো লবন দিয়ে কফি করে এনেছে। চোয়াল শক্ত করে বললো।

রাতে সোফায় পায়ের উপর পা তুলে বসে মটু পাতলু কার্টুন দেখছি আমার আবার কার্টুন দেখতে খুব ভালো লাগে। এই কার্টুন দেখার কারনে মায়ের কাছেও অনেক বকা খেয়েছি।
হঠাৎ কেউ এসে আমার কার্টুন দেখার ১৩ টা বাজিয়ে চ্যানেল পাল্টে দিলো। আমি রেগে পাশে তাকাতে নিজেই ভয়ে চুপসে গেলাম তাসিন রাগি চোখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আমি ঢোক গিলে একটু পিছিয়ে বসলাম।
ভা ভাইয়া আপপনি এভাবে কেনো তাকিয়ে আছেন?
আমার কথার উত্তর না দিয়ে উনি আমার ডান হাতটা চেপে ধরলেন। দাতে দাত চেপে বলে উঠলেন আমার কফিতে লবন মিশিয়েছিলি কেনো?
এইরে এবার আমি কি বলবো দেখে তো মনে হচ্ছে খুব রেগে আছে। আমি ভয়ে ভয়ে বলালাম আমি ভেবেছিলাম কফিতে হয়তো লবন দিতে হয় তাই দিয়েছিলাম। সত্যি বলছিস তো? না হ্যা হ্যা সত্যি বলছি।
উনি আমার দিকে সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আমার হাত ধরে উঠে দাড়িয়ে সামনে হাটতে লাগলো।
আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন?

তুই আজকে আমাকে এতো টেষ্টি কফি খাইয়েছিস আমারো তো তোকে কিছু খাওয়ানো উচিৎ তাইনা।
মনেহ! না না ভাইয়া আমি কিছু খাবো না, ছাড়ুন আমাকে আমার ঘুম পেয়েছে।
চুপ আর একটা কথা বলবি তো খবর আছে। ধমক দিয়ে বললো।

আমি চুপ হয়ে গেলাম। উনি আমাকে ছাদে এনে এক বক্স আইসক্রিম আমাকে দিয়ে বললো, নে এটা তোর জন্য এনেছি তুই তো আইসক্রিম খেতে ভালোবাসিস তাইনা। নে শুরু কর।

আইসক্রিম দেখে আমার মনটা খুশিতে নেচে উঠলো, তবে একটা কথা ভাবছি উনি এতো নরমাল ভাবে কথা বলছে কেনো এই আইসক্রিমে কোনো গন্ডগোল নেই তো?

কি হলো মেঘা নে শুরু কর।
না আমি খাবো না এখন খেতে ইচ্ছে করছে না।
উনি মুখটা গোমড়া করে বললো আমি এনে দিয়েছি বলে খাবি না তাইনা?

ওনার এমন ফেস দেখে আমি কিছু না বলেই আইসক্রিমের বক্সটা ওনার হাত থেকে নিয়ে খুলে এক চামচ মুখে দিতেই আমার চোখ বড়বড় হয়ে গেলো।

এটা তো আইসক্রিম নয় যেনো মরিচের গুড়োর গোডাউন মিশিয়ে দিয়েছে এতে।
কিরে মেঘা আইসক্রিমটা টেষ্টি না?

আমি মুখটা বন্ধ করে রাগি চোখে তাকালাম। উনি আমাকে অবাক করে দিয়ে আমার গাল চেপে ধরলো আর কয়েক চামচ আমার মুখের মধ্য পুরে দিলো।
আমি কি করবো নিজেই বুঝতে পারছি না তাসিনকে জব্দ করতে গিয়ে নিজেই জব্দ হলাম।
ঝালে আমার গাল জ্বলে যাচ্ছে ওখানে আর এক মুহুর্ত না দাড়িয়ে একছুটে নিচে নেমে আসলাম।
আমার এমন করুন অবস্থা দেখে তাসিন হেসে কুটিক


পর্ব ২

নিচে নেমে একনাগারে পানি খেয়ে চলেছি ঝালটা যেনো কিছুতেই কমছে না তাসিনের মতো ঝালটাও হয়তো আমার সাথে শত্রুতা করছে। ফ্রিজ খুলে মিষ্টি বের করে গপাগপ ৪ টা খেয়ে নিলাম উহ এখন মনে হচ্ছ কিছুটা ঝাল কমেছে। বেসিনের সামনে দাড়িয়ে নিজেকে আয়নায় দেখে এত্তো বড় একটা হা করলাম! এ কি হয়েছে আমার ফেসের? পুরো মুখটা টমেটোর মতো ফুলে গিয়েছে হায় আল্লাহ এ কি হলো আমার!

সবটা হয়েছে ওই হারামি বজ্জাত তাসিনের জন্য। তোকে তো আমি চরম শাস্তি দিবো দেখে নিস তুই হুহহ।

রাতে ঘুমিয়ে আছি মনে হচ্ছে যেনো কেউ আমার মুখে ঠোঁটে হাতের ছোয়া দিয়ে চলেছে আমি চোখ খুলতে চেয়েও যেনো পারছি না। মনে হচ্ছে আমার চোখ জোড়া চেপে ধরে রাখা হয়েছে। ছোয়াটা আরো প্রকট অনুভব করতে লাগলাম, আমার ঠোঁটে নরম কিছু ছুয়ে দিলো মুহুর্তেই ঘুমের ঘোরেই কেপে উঠলাম আমি। ধপ করে চোখটা খুলে লাফিয়ে উঠে বসলাম।

চোখ ডলতে ডলতে চারিদিকে চোখ বুলিয়ে নিলাম কই কেউ তো নেই এখানে! কিন্তু এ কিসের ছোয়া অনুভব করলাম আমি? মনে হলো যেনো কেউ পরম আবেশে আমার ঠোঁটে মিষ্টির উষ্নতা দিলো।
কিন্তু রুমে তো আমি ছাড়া আর কেউ নেই। ধুর কি এতো ভাবছি হয়তো সপ্নো দেখেছি আমি। আবারো বালিশে মুখ গুজে ঘুমের দেশে পারি দিলাম।

দরজার আড়াল থেকে কেউ একজন আমাকে গভীর ভাবে দেখছিলো এতোক্ষণ। সে আর কেউ নয় আমার একমাত্র ক্রাশ তাসিন।

সে মনে মনে বললো এই মেয়েটা পারেও বটে এখনি কি ওর ঘুমটা ভাঙার ছিলো! আবার দেখো কি সুন্দর ভাবে নিশ্চিন্তে মুহুর্তেই ঘুমিয়ে পড়লো। আজ তোমাকে বেশি শাস্তি দিয়ে ফেলেছি এর জন্য আমি অনুতপ্ত। কি করবো বলো বিকেলে যে তোমাকে শাড়িতে দেখে আমার মাথাটাই ঘুরে গিয়েছিলো। অপ্সরীর মতো লাগছিলো তখন তোমাকে। তোমাকে ওভাবে দেখলে যে আমি নিজেকে সামলাতে পারবো না তাইতো শাড়ি পড়তে বারন করলাম। জানি না কেনো তোমাকে এতো ভালো লেগে গেলো আমার তুমি আশেপাশে থাকলে যে আমার তোমাতে হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে তাইতো দুরে দুরে থাকতে চাই।

তোমার ওই গোলাপি ঠোঁটের মিষ্টি হাসি, ঘন কালো চুল, তোমার চাহনি যে আমাকে গভীর ভাবে আকৃষ্ট করে মেঘকন্যা। আমার সপ্নোগুলো যেশুধু তোমায় ঘিরে।

খুব সকালেই ঘুমটা ভেঙে গেলো সকাল বললে ভুল হবে তখন ৫:৪২ বাজে ভোর বললেই চলে। আমার অবশ্য এমন সময়েই ঘুম ভেঙে যায়। বিছানা ছেড়ে ওয়াশরুমে গিয়ে অজু করে নিলাম তারপর নামাজটা আদায় করলাম। মুহুর্তেই যেনো মনটা ফুরফুরে হয়ে গেলো আমার হয়তো নামাজ পড়ার কারনেই।

এখন ফ্রেস লাগছে নিজেকে।
ব্যালকনিতে গিয়ে দাড়ালাম চারিদিকে পাখিদের কিচিমিচি শব্দ হালকা মৃদু বাতাস এসে গায়ে আচড়ে পড়ছে। আবছা আলো থেকে আস্তে আস্তে পরিষ্কার হতে লাগলো মনোমুগ্ধকর একটা দৃশ্য। কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থেকে রান্নাঘরে গেলাম যদি কিছু বানাতে পারি। আমি অবশ্য তেমন কিছু রান্না করতে পারি না মা কখনো রান্না করতে দেয় না যেটুকু শিখেছি খালামনির থেকেই।

রান্নাঘরে গিয়ে দেখি খালামনি আমার আগেই হাজির। পাশে গিয়ে দাড়িয়ে বলে উঠলাম। আচ্ছা খালামনি তুমি কি গো এতো সকালে কেনো উঠেছো? পাগলি মেয়ের কথা শোনো এতো সকাল কিরে ৭:৩০ প্রায় বেজে গিয়েছে। তুই এতো সকালে উঠে এখানে আসলি কেনো? আমি তো সকালেই উঠি ভাবলাম ব্রেকফাস্টটা আজ আমি তৈরি করবো কিন্তু কি হলো তুমি আমার ভাবনাকে পিসে মেরে দিলে। ইনোসেন্ট ফেস করে।
আমার কথা শুনে খালামনি শব্দ করে হেসে উঠলো।
হেসে বললো, মেঘা তোকে এসব করতে হবে না তুই বরং একটা কাজ কর তাসিনকে ডেকে তোল গিয়ে ওর নাকি কি কাজ আছে আজ তাড়াতাড়ি বেরোবে।

আমি যাবো না খালামনি তোমার ছেলে আস্তো একটা বজ্জাত তাকে আমি ডাকতে পারবো না।
কেনো ও আবার কি করেছে? কি করেনি তাই বলো।

কি করেছে? ওই তো কালনা না খালামনিকে বলা যাবে না আরো হাসবে। কিছুনা।
হুম যা না মা ওকে ডেকে দে। কি আর করা খালামনির কথা ফেলতোও পারবো না তাই গেলাম।

দরজাটা চাপানো ছিলো খুলে ভেততে ঢুকলাম, তাসিন বেঘোড়ে ঘুমাচ্ছে ওর মুখে তাকিয়ে কেমন যেনো একটা মায়া কাজ করছে আমার মাঝে, এক অদ্ভুত অনুভূতির সৃষ্টি হচ্ছে। কতোটা ইনোসেন্ট হয়ে ঘুমাচ্ছে তাসিন ইচ্ছে করছে ওর গালটা একটু ছুয়ে দিতে। হঠাৎ ই কালকের কথা মনে পড়লো আমার মুহূর্তেই কিছুটা রাগে ভর করলো আমার উপর।
ব্যাটা বজ্জাত আমাকে মরিচের গুড়ো খাওয়ানো তাইনা। আমার মতো একটা বাচ্চার এতো কিউট একটা চেহারার ১২ টা নয় ১৩ টা নয় পুরোই ১৪ টা বাজিয়ে দিয়েছিলো। আপনাকে তো আমিওয়াশরুম থেকে এক বালতি পানি এনে বালতির পুরো পানি টুকু দিলাম তাসিনের গায়ে ঢেলে।

গায়ে পানি পড়ায় ধরফরিয়ে উঠে বসলো তাসিন। এই কে কে? মাাাা আমার গায়ে পানি পড়লো কি করে! বিরক্তি মাখা মুখে চোখ বন্ধ করে মা মা করছেন।

ওনার এমন কান্ড দেখে আমি জোরে জোরে হাসতে লাগলাম। পানিতে একদম ভেজা কাক হয়ে গিয়েছে আমি যেনো কোনো ভাবেই হাসিটা থামাতে পারছিলাম না।

আমাকে হাসতে দেখে তাসিনের আর বুঝতে বাকী ওইলো না ঠিক কি ঘটেছে। হঠাৎ আমার হাতে টান পড়লো কিছু বুঝে উঠার আগেই তাসিন ভাইয়া আমাকে বিছানায় ভেজা জায়গাটাতে শুইয়ে আমার হাত চেপে ধরলো। এমন কিছু যে হবে আমি ভুলেও ভাবিনি যখন বুঝতে পারলাম ঠিক কি হলো আমার সাথে তখনি চোখদুটো রসগোল্লার মতো বড়বড় হয়ে গেলো আমার। নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে চলেছি কিন্তু ওনার শক্তির কাছে পেরে উঠছি না।

তাসিন ভাইয়া পাশের টেবিলে থাকা পানির জগটা নিয়ে পুরো পানিটা আমার উপর ঢেলে দিলো। আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম! কি হচ্ছেটা কি ওনাকে ফাসাতে গিয়ে প্রতি বারি আমি ফেসে যাচ্ছি কেনো?

আমাকে আরো বেশি অবাক করে দিয়ে তাসিন ভাইয়া একটা শয়তানি হাসি দিয়ে আমার কাছাকাছি আসতে লাগলো ভয়ে চোখ খিচে বন্ধ করে ফেললাম।

উনি আমার কানের কাছে মুখ এসে ফিসফিসিয়ে বললো, মেঘা তুই এতো বোকা কেনো বলতো জানিস তো তুই আমার কাছে হেরে যাবি তারপরেও লাগতে আসিস কি ফল পেলি এখন হুমম?
ওনার নিশ্বাসটা আমার ঘারে এসে পড়ছিলো বার বার শরীরটা কেপে উঠছিলো আমার।
আস্তে করে বললাম ভাইয়া উঠতে দিন আমাকে। চোখ বন্ধ করেই বললাম।

কি করে উঠতে দিবোরে তোকে তোর এই ভেজা ভেজা মুখটা থেকে তো নিজের চোখটা সরাতে পারছি না। তুই আজকে এমন একটা বোকামো না করলে যে অনেক কিছুই মিস করে যেতাম রে মেঘকন্যা। আজকের সকালটা সত্যি আমার জন্য স্পেশাল। মনে মনে বললো।

ক কি হলো ভাইয়া আমার হাতটা ছাড়ুন।
তাসিনের হুস ফিরলো তখন সাথে সাথে আমার হাতটা ছেড়ে দিলো আমি এক ঝটকায় উঠে বসলাম ইসস আমিও যে ভিজে গিয়েছি কি ভাবলাম আর কি হলো।
রাগে গজগজ করতে করতে তাসিনকে বললাম কি করলেন এটা আপনি হ্যা এই সকালে দিলেন তো আমাকে ভিজিয়ে।
বারে নিজেরটা খুব বুঝিস দেখছি আমাকে যে বিছানা সহ ভিজিয়ে দিলি তার কি হবে? আর যদি কখনো আমাকে জব্দ করতে আসিস তার আগে নিজের কি হবে সেটা ভেবে নিবি কেমন। আমার নাক টেনে বললো।
উঠে দাড়িয়ে বললাম আমি আর থাকবোই না এ বাড়িতে আজি চলে যাবো।
বলেই হনহন করে বেড়িয়ে এলাম।

তাসিন ভাবছে, এইরে পাগলিটা ক্ষেপেছে সত্যি চলে যাবে না তো আবার!

আজ ৩দিন হলো এ বাড়িতে এসেছি সেদিন চলে যেতে চেয়েছিলাম খালামনি যেতে দেয়নি। ১১ টার দিকে চিপস খাচ্ছি আর আমার ফেভারিট কার্টুন মটু পাতলু দেখছি। খালামনি কোনো এক দরকারে বেড়িয়েছে। আর আমার একমাত্র ক্রাশ মানে ওই বজ্জাত তাসিন নিজের রুমে বসে ল্যাপটপ গুতিয়ে চলেছে।

কলিংবেলের শব্দে খুবই বিরক্ত হলাম আমি আমাকে কি কার্টুন টাও দেখতে দিবে না। বার বার বেজে চলেছে বিরক্ত হয়ে গিয়ে দরজা খুলে দিলাম।

একটা ছেলে দাড়িয়ে আছে লম্বা ফর্সা এমনকি দেখতেও খারাপ না। আমার দিকে একধ্যানে তাকিয়ে আছে। ব্যাপারটাতে খুবই বিরক্ত আমি, এই যে ভাইয়া কাকে চাই? আমার কথা হয়তো তার কানে ঢুকছে না তাই একটু জোরেই বললাম ও হ্যালো কাকে চাইছেন আপনি?

ছেলেটি একটু নরে উঠলো একটু হেসে বললো তাসিন আছে বাসায়?
কেনো ওনাকে আপনার কি দরকার হুম?
আমি তাসিনের ফ্রেন্ড আবির, ও কি আছে?
তখনি তাসিন ভাইয়া বলে উঠলো আরে আবির তুই কখন এলি দরজায়, দাড়িয়ে আছিস কেনো ভেতরে আয়।
আবির আমাকে পাশ কাটিয়ে ভেতরে ঢুকলো। দুজনে গিয়ে সোফায় বসলো। আমার যে এখন আর মটু পাতলু দেখা হবে না বেশ বুঝতে পারছি। দরজাটা আটকে রুমের দিকে পা বাড়ালাম।

তাসিন ভাইয়ার ফ্রেন্ড আবির ডাকলো, এই যে ম্যাম আমাকে একটু পানি খাওয়াতে পারবেন।
কেনো পারবো না একটু কেনো একগ্লাস খাওয়াবো। চলবে?
আবির হেসে বললো হ্যা চলবে।
পানিটা এনে ওনাকে দিলাম তাসিন কেমন যেনো রেগে তাকালো আমার দিকে আজব তো! উনি এভাবে তাকিয়ে আছে কেনো আমি তো এখন কিছু করিনি।

আবির আমাকে গ্লাসটা দিয়ে বললো ধন্যবাদ আপনাকে।
আমি কিছু না বলেই গ্লাসটা রেখে রুমে চলে আসলাম।
প্রায় ১ঘন্টা পরে তাসিন আমার রুমে এসে গম্ভীর গলায় বললো মেঘা তোর জামাকাপর গুছিয়ে নে তোকে বাড়িতে রেখে আসবো।
ওনার এমন কথা শুনে আমি অবাক হয়ে বললাম কেনো ভাইয়া মা ফোন দিয়েছিলো?
মেঘা আমি যা বলছি সেটা কর ৩০ মিনিটের মধ্য রেডি হয়ে নিচে আয়। আর শোন আবির কিছু জানতে চাইলে বলবি মা বাবার জন্য খারাপ লাগছে তাই চলে যাচ্ছি।

আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে উনি বেড়িয়ে গেলো। কি হলো হঠাৎ এ বজ্জাতটার আমাকে চলে যেতে বলছে। ঠিকআছে যাবো চলে থাকবো না আর এখানে। রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে আমার তাসিনকে হাজারটা গালি দিতে দিতে ব্যাগটা গুছিয়ে নিলাম।

পর্ব ৩

রেস্টুরেন্টে মুখোমুখি বসে আছি আমি আর তাসিন ভাইয়া উনার ব্যাপারটা ঠিক বুঝতে পারছি না। আমিও মুখ গোমড়া করে চুপচাপ বসে আছি একটা কথাই আমি বুঝতে পারি না কোনো ছেলের সাথে যখন আমি একটু কথা বলি তখন এই বজ্জাত তাসিনটা কোথা থেকে উদয় হয়!
কিছুক্ষণ আগে

ভার্সিটি থেকে ক্লাস শেষ করে বাড়িতে ফিরছিলাম রাস্তায় দাড়িয়ে ছিলাম রিক্সার জন্য কেউ একজন মেঘা বলে ডাকায় পেছনে ফিরে তাকালাম। তাসিন ভাইয়ার ফ্রেন্ড আবির হাসি মাখা মুখে আমার দিকে চেয়ে আছে। কিছুটা বিরক্ত লাগলেও বুঝতে দিলাম না, মুখে হাসি ফুটিয়ে বললাম, আরে ভাইয়া আপনি এখানে?
হুম আমারো সেই প্রশ্ন তুমি এখানে দাড়িয়ে আছো কেনো?

আমার তো ক্লাস ছিলো শেষ করে বাসায় যাচ্ছি।
ওও আচ্ছা, তুমি সেদিন হঠাৎ চলে গেলে কেনো বলোতো আমি তাসিনের বাড়িতে ২ দিন ছিলাম ভেবেছিলাম তোমার সাথে ভালো ভাবে পরিচিত হবো।

কেনো রে আমার সাথে পরিচয় হয়ে তোর লাভ কি শুনি এখন তো মনে হচ্ছে সেদিন তোর জন্যই তাসিন ভাইয়া আমাকে বাড়িতে রেখে এসেছিলো। মনে মনেই বললাম।
কি হলো মেঘা কিছু বলছো না যে?

এমনিতেই পড়া মিস যাচ্ছিলো তাই চলে এসেছি।
ওহ, এনিওয়ে চলো তোমাকে পৌছে দেই।
এবার খুব রাগ হলো আমার আমি একা যেতে পারিনা নাকি? এই লোকটার মতলোব তো ঠিক লাগছে না!, না ভাইয়া আমি যেতে পারবো।

তখনি হঠাৎ তাসিন বাইক নিয়ে আমাদের সামনে এসে দাড়ালো, গম্ভীর গলায় বললো মেঘা জলদি বাইকে ওঠ। ওনার কথায় আমি কিছুটা অবাকি হলাম হুট করে এসেই বাইকে উঠতে বলছে কেনো? আবির বললো আরে তাসিন তুই এখানে? তোর সাথে আমি পরে কথা বলবো আবির, মেঘা তোকে উঠতে বলেছি শুনতে পাসনি? ধমক দিয়ে বললো কথাটা।
আমিও আর উপায় না পেয়ে উঠে পড়লাম বাইকে।

তারপরেই এই রেস্টুরেন্টে এনে বসিয়েছে আমাকে। কিন্তু তার মুখে একটি কথাও নেই। মুখটা বোমের মতো ফুলিয়ে রেখেছে। এমন নিরবতা আমার সহ্য হচ্ছে না ইচ্ছে করছে ওনার মুখের বোমটা কিছু একটা দিয়ে মেরে ফাটিয়ে দিতে। অবশেষে নিরবতা ভেঙে আমি বললাম ভাইয়া আমাকে এখানে এনে বসিয়ে রেখেছেন কেনো? আমার ইচ্ছে হয়েছে তাই বসিয়ে রেখেছি। ইচ্ছে হলেই বসিয়ে রাখতে হবে নাকি? রেস্টুরেন্টে এনে বসিয়েছেন খাবার অর্ডার করেন নি কেনো? দুপুর পার হয়ে যাচ্ছে আমার ক্ষিদে পায় না বুঝি।

উনি আমার মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে উঠে গেলেন, আজব তো কোনো কথা না বলে আবার কোথায় গেলেন উনি!
৪/৫ মিনিট পর আবার আমার সামনে এসে আগের ন্যায়ে বসে পড়লেন। সাথে সাথে দুজন ওয়েটার এসে গুনে গুনে ৫/৭ টা খাবার আইটেম আমার সামনে টেবিলে সারিবদ্ধ ভাবে রেখে গেলেন। আমি জাস্ট হা হয়ে গেছি বিষ্মিত চোখে তাকিয়ে বললাম এতো খাবার কে খাবে ভাইয়া? উনি গম্ভীর মুখে উত্তর দিলেন আমার সামনে যে বসে আছে যার ক্ষিদে পেয়েছে সে খাবে।
কিহ এতো খাবার আমি খাবো! ইম্পসিবল। আমাকে কি রাক্ষস মনে হয় আপনার?

চুপ আর একটা কথা বললে সব গুলো খাবার জোর করে খাওয়াবো। সো কথা না বলে চুপচাপ সব গুলো। খাবার শেষ করবি। রেগে বললো।

এই বজ্জাতটার আজ হলো কি আমি তো কোনো ভুল করিনি তাহলে এমন কেনো করছে?
উনি আবারো ধমকে বললেন মেঘা খাওয়া শুরু করতে বলেছি।
কি আর করা খেতেই হবে কেনো যে ক্ষিদে পেয়েছে বলতে গেলাম। এখন নিজের উপরেই রাগ হচ্ছে আমার।

অল্প কিছু খাওয়ার পর আর পারছি না খেতে করুন দৃষ্টিতে তাকালাম তাসিনের দিকে। হয়তো ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছে ওয়েটারকে ডেকে সব সরিয়ে নিলো আর ইশারায় কি যেনো বললো। একটু পরে ওয়েটার চকলেট ফ্লেভারের একটা আইসক্রিম বক্স রেখে গেলেন। ওটা দেখেই আমার সেদিন রাতের কথা মনে পরে গেলো। এই তাসিনের মাথায় কি চলছে কে যানে।

মেঘা আইসক্রিমটা তোর জন্য আর শোন চিন্তার কিছু নেই আজ কিছু মেশানো নেই এতে।
আমি আর দমে থাকতে পারছি না আর কতোক্ষণ এখানে বসিয়ে রাখবে আমাকে! কেনোই বা এনেছে সেটাও বলছে না। এসব ভাবছি তখনি তাসিন বলে উঠলো, আবিরের সাথে তোর কিসের এতো কথা?
দেখা হলো তাই কথা বলেছি আর আমি তো নিজে থেকে কথা বলতে যাইনি উনি এসেছেন।
ও তাই, তাহলে তুই চলে আসলি না কেনো সেখান থেকে?

হ্যা চলেই তো যাচ্ছিলাম তখনি তো আপনি আসলেন।
তাসিন একটু চুপ থেকে কিছু একটা ভাবলো তারপর বললো, ঠিকআছে আজকের মতো কিছু বললাম না আর যেনো কখনো তোকে আবিরের সাথে কথা বলতে না দেখি শুধু আবির কেনো কোনো ছেলের সাথেও যেনো না দেখি।

উনার কথার আগামাথা কিছুই বুঝলাম না আমি! আবির তো ওনারি ফ্রেন্ড তাহলে কথা বলতে না করছে কেনো আর অন্য কোনো ছেলের সাথে কথা বললে উনার কি প্রবলেম?
মেঘা তোর ছোট মাথায় এতো কিছু ঢুকবে না তাই এতো ভেবে লাভ নেই। শুধু এটা মাথায় রাখ কোনো ছেলের সাথে কথা বলা চলবে না।

যা বাবা উনি মন পড়তেও পারে নাকি আমি কি ভাবছি সেটাও বুঝে ফেললো। আমি একটু কঠোর গলায় বললাম আমার যার সাথে ইচ্ছে কথা বলবো আপনার কথা কেনো শুনতে যাবো আমি। উনি আমার দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকালো দাতে দাত চেপে টেবিলে চাপর মেরে বললো, কি বললি আবার বল তো।
উনার এমন চাহনিতে আমি ভয়ে চুপসে গেলাম তাসিনের এ রুপ আমি আগে কখনো দেখিনি।
ক কিছু না ভাইয়া আ আমি বাড়ি যাবো মা হয়তো টেনশন করছে।

উনি স্বাভাবিক কন্ঠে বললেন ঠিকআছে তুই বাইরে গিয়ে দাড়া আমি আসছি। আমি মাথা নাড়িয়ে বেড়িয়ে এলাম।
বাড়ির সামনে আমাকে নামিয়ে দিয়ে একটা প্যাকেট ধরিয়ে দিলেন আমার হাতে।
ভাইয়া কি আছে এতে?
আইসক্রিম, তখন তো খেলি না তাই নিয়ে আসলাম। এখন ভেতরে যা। আপনি চলুন ভেতরে মা খুব খুশি হবে আপনাকে দেখলে। আমার একটা জরুরি কাজ আছে পরে আসবো। বলেই উনি বাইক নিয়ে চলে গেলেন। আর আমি বোকার মতো উনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে ভেতরে চলে আসলাম।

রাতে শুয়ে শুয়ে ভাবছি তাসিনকে আজকে অন্য রকম লাগলো। এমন ভাবে কথা বললো আমি যেনো তার নিজের কেউ। আচ্ছা উনার প্রতি আমার যেমন একটা অনুভূতি কাজ করে, তেমনটা কি উনারো হয়? না না এসব কি ভাবছি আমি, হয়তো আমাকে বোন ভেবেই শাসন করেছে।

তাসিন ছাদে দাড়িয়ে আছে আনমনে ভাবছে, মেঘাকে আমি কি করে আমার মনের কথা বলবো ও কি আমার হৃদয়ের অনুভূতি বুঝবে? আবিরের সাথে ওর কথা বলাটা আমার সহ্য হচ্ছিলো না তাই তো রেগে ওকে নিয়ে আসলাম। ও কি একটুও বুঝতে পেরেছে কেনো করলাম আমি এটা? আমি ভালোবেসে ফেলেছি ওকে একটা মুহূর্ত চলবে না ওকে ছাড়া আমার।
আবির সেদিন বলছিলো মেঘাকে ওর প্রথম দেখেই ভালোলেগে গেছে। নাহ আমাকেই কিছু করতে হবে আগে মেঘার মনের কথাটা আমাকে জানতে হবে তারপর না হয়, আবিরকে সামলাবো।
কিন্তু কিভাবে জানবো মেঘার ও আমার মতো ফিল হয় কি না?, ইয়েস পেয়েছি রিশা, হ্যা ওর সাহায্য নিতে হবে আমার।

তাসিন নিজের ফোনটা বের করে রিশাকে কল দিলো, রিসা ফোনটা ধরতেই তাসিন বললো।
রিশা আমি যা বলছি চুপচাপ শোনো
তাসিন রিশাকে সবটা বুঝিয়ে দিয়ে ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটিয়ে বললো মেঘারে তোকে আমি আর অন্য কারো হতে দেখতে পারবো না। আমি জানি না তোর মনে কি আছে কিন্তু এখন জানাটা যে খুবই প্রয়োজন।

পর্ব ৪

রাতে ঘুমিয়ে আছি হঠাৎই ফোনটা বেজে উঠলো ফোনের রিংটন কানে বাজতেই একরাশ বিরক্ত নিয়ে নিজের কান চেপে ধরলাম। বার বার বেজে চলেছে উফফ ইচ্ছে করছে ফোনের ওপাশে যে আছে তাকে তুলে একটা আছার মারি। আমার এতো ভালো ঘুমটা নষ্ট করে দিলো। অবশেষে ঘুমু ঘুমু চোখে ফোনটা ধরলাম।
ওপাশ থেকে বলে উঠলো যাক বাবা ধরেছিস ফোনটা।
কন্ঠস্বরটা অচেনা নয় আমার এমনিতেই রাগ হচ্ছিলো এখন যেনো আরো দ্বীগুন বেড়ে গেলো রাগটা। রাগান্বিত কন্ঠে বললাম তিশা তুই!

হুমম আমি। কেমন আছিস জানেমান? ওই হারামি তুই আমাকে ফোন দিসোস কেন তোর সাথে আমার কোনো কথা নেই রাখ ফোনটা। আরে আরে মেঘা রেগে যাচ্ছিস কেনো আমি কি করেছি। কি করিস নি তাই বল হারামি পেত্নি এমনিতে তো আমাকে একা রেখে উধাউ হয়েছিস তারউপর আমার এতো সাধের ঘুমটা নষ্ট করলি ইচ্ছে তো করছে তোকে গিলে খেতে। দাতে দাত চেপে বললাম।

তিশা জোরে হেসে উঠে বললো কাল তোর সামনে স্ব শরীরে হাজির হবো তখন আমাকে যা খুশি করিস কেমন। তোর আমার সামনে আসতে হবে না এতোদিন কোনো খোজ নেই এখন আসছে ঢং করতে।
মেঘা রাগ করিস না সোনা কাল এসে বলবো সব। ওই তুই ফোনটা রাখতো আমাকে যদি আবার ফোন দিস না তোকে আমি সত্যি গিলে খাবো দেখে নিস তুই। বলেই ফোনটা কেটে দিলাম। ফোনটা বালিশের নিচে রেখে শুয়ে পড়লাম। আবারো ফোনটা বিকট আওয়াজে বেজে উঠলো রাগে আমার শরীর জ্বলে যাচ্ছে, তিশার বাচ্চা তোর খবর আছে এখন।

ফোনটা রিসিভ করেই, ওই হারামি কুত্তা বিলাই তোরে ফোন দিতে না করছি না আবারো দিসোস ক্যান।
স্টপ মেঘা কাকে কি বলছিস তুই? এইরে এ তো তিশা নয় কাকে কি বলছি আমি! ফোনটা সামনে এনে স্ক্রিনে ক্রাশ লিখে সেভ করা নাম্বার দেখতে পেলাম, জ্বিভ কেটে মনে মনে বলছি হায় আল্লাহ আমি তো ভেবেছিলাম তিশা ধুর কি না কি বলে ফেললাম। কিন্তু উনি এতো রাতে কেনো ফোন দিয়েছে আমাকে?

ভাইয়া আপনি! হ্যা আমি, ফোনটা ধরেই কি সব বলছিলি তুই? আসলে ভাইয়া আমি ভেবেছিলাম তিশা তাইতো ওসব। কারো ফোন রিসিভ করার আগে যে নাম্বারটা দেখে নিতে হয় সেটা তোর মাথায় নেই? ওহ থাকবেই বা কিভাবে ওই গোবর পোড়া মাথায় তো বুদ্ধি বলতে কিছুই নেই।

কি বললেন আপনি আমার মাথায় বুদ্ধি নেই? রেগে বললাম।
থাকলে কি ফোন ধরে কেউ পাগলোর প্রলাপ বকে। একশো বার বকবো হাজার বার বকবো আপনার কি তাতে। আর আপনি কেনো এতো রাতে কল দিয়েছেন আমাকে? এটা তো খুবই বুদ্ধিমানের কাজ মাঝ রাতে কোনো মেয়েকে ফোন দেওয়া তাইনা?

আমি তো অন্য কাউকে দেই নি আমি আমার
কি হলো থেমে গেলেন কেনো কি আপনার হুমম?
কিছু না আচ্ছা তুই ঘুমিয়ে পর কেমন রাখছি।

উনি ফোনটা কেটে দিলো আমি ফোনের দিকে তাকিয়ে ভাবছি তাসিন কি বলতে চেয়ে বললো না? হঠাৎ করে এতো রাতে ফোন কেনো দিলো, উফ মেঘা তোর এখন এতো ভেবে কাজ নেই তোর মাথায়, এই মুহুর্তে ঘুম ঘুর ঘুর করে চলেছে। সব ভাবনা গুলো সাইডে রেখে হারিয়ে গেলাম ঘুমের রাজ্যে।

ভার্সিটিতে পাশাপাশি বসে আছি আমি তিশা। আমি মুখ ফুলিয়ে বসে আছি আর তিশা বেচারি আমার মান ভাঙাতে ব্যাস্ত।

মেঘা জানু শোন না আমি তো তোর সাথে যোগাযোগ করতামি আমার ফোনটা খারাপ হয়ে যাওয়াতে সব সেভ নাম্বার গুলো কিভাবে যেনো ডিলিট হয়ে গিয়েছিলো তারজন্যই পারিনি। ও তাই বুঝি? আমিও তো ট্রাই করেছি বন্ধ ছিলো কেনো সিমটাও কি খেয়ে ফেলেছিস? ওখানে নেট খুবই কম পায় তাই হয়তো বন্ধ পেয়েছিস। কাল রাতে কোথায় পেলি আমার নাম্বার ভুতে দিয়ে এসেছিলো? ভুতে কেনো দিতে যাবে আম্মুর ফোনে যে তোর নাম্বারটা সেভ ছিলো এটা আমার মনে ছিলো না কাল আম্মুর ফোন ঘাটতে গিয়ে পেয়েছি।

হয়েছে তোর রেকর্ড এখন বন্ধ কর আমাকে আর কিছু বলতে আসবি না। বলে গিয়েছিলি গ্রামে ১০ দিনের বেশি থাকবি না কিন্তু কি করলি পুরো ১৮ দিন কাটিয়ে এলি ভাবা যায়! নাকি বোনের বিয়ের সাথে নিজেরও করে নিয়েছিস হুমম?

কি বলছিস মেঘা তোকে না জানিয়ে বিয়ে কখনোই না বুঝলি। আমার ৫টা না ১০টা না একটা মাত্র বেস্টি সেটা হলি তুই বুঝেছিস মেঘকন্যা।
ওই হারামি খবরদার ওই নামটাতে ডাকবি না। ওই নামটা তুলে রেখেছি কারো জন্য শুধু সেই ডাকবে।
তিশা মুখ ভেঙিয়ে বললো তা যাহার জন্য তুলে রাখিয়াছো নামটা তাহার সন্ধান কি পাইয়াছো তুমি?
হয়তো পেয়েছি। কিহ পেয়েছিস কে সে নাম কি, কি করে সে আমাদের ভার্সিটির কেউ? উত্তেজিত হয়ে।
উফফ আল্লাহ শুরু হয়ে পেত্নির বকবকানি।

পেত্নি বলিস আর যাই বলিস আমি কিছু মনে করবো না বলনা এখন।
এখন নয় আগে তো আমি সিওর হই তারপর বলবো। চলতো ক্যানটিনে যাই তোর ফোনের চোটে সকালে কিছু খেতেও পারিনি। হুম চল।

২ দিন পর আমি আর তিশা ভার্সিটি থেকে বেড়িয়ে রাস্তা দিয়ে হাটছি আর গল্প করছি। হঠাৎই চোখ পড়লো রাস্তার পাশের ফুচকার দোকানটাতে। পা টা স্থির করে দাড়িয়ে পড়লাম সেখানে তাসিন ভাইয়া! উনি ওখানে কি করছে সাথে ওই মেয়েটাই বা কে? তিশা আমাকে দাড়াতে দেখে পাশে এসে দাড়ালো, কিরে মেঘা দাড়িয়ে পড়লি কেনো চল। আমি কিছুই বলছি না চুপ করে ওইদিকে তাকিয়ে আছি। আমাকে আরো অবাক করে দিয়ে তাসিন ভাইয়া মেয়েটাকে ফুচকা খাইয়ে দিলো মেয়েটাও দিলো। কেনো জানিনা চরম রাগ হলো আমার তাসিনের উপর, মনের ভেতরের কেমন যেনো একটা কষ্টের অনুভব করছি।

এই মেঘা কি হলো তোর কথা বলছিস না কেনো? তিশার কথায় নরে উঠলাম আমি কিছু না বলে তিশাকে রেখেই তাসিনের সামনে গিয়ে দাড়ালাম।
তিশাও কিছু বুঝতে না পেরে আমার সাথে আসলো।

আমাকে দেখে তাসিন ভাইয়া হেসে বললো আরে মেঘা তুই এখানে? উনার হাসি মাখা মুখটা দেখে ইচ্ছে করছে উনার মাথাটা ফাটিয়ে দিতে। আমি নিজের রাগটা প্রকাশ না করে বললাম। ভাইয়া উনি কে? মেয়েটাকে ইশারা করে।
আমার কথায়, তাসিন ভাইয়া যেনো উৎসাহ পেলো হাসিটা আরো প্রকট করে বললো, ওর নাম রিশা আর ও আমার
কি আপনার?

নাহ তোকে বলা যাবে না তুই মাকে কখন বলে দিবি তার ঠিক নেই। তখনি মেয়েটি তাসিনের কাধে হাত রেখে ন্যাকা ভাবে বললো তাসিন চলো তো লেট হয়ে যাচ্ছে তুমি না বললে আমাকে ঘুরতে নিয়ে যাবে।
আমি যেনো আকাশ থেকে ধপাস করে মাটিতে পড়লাম বলে কি এই মেয়েটা তাসিন ওকে ঘুরতে নিয়ে যাবে। রাগে আমার শরীরের রক্ত টকবক করে উঠছে। পাশে থাকা তিশার হাতটা চেপে ধরলাম আমি, চেপে ধরায় ও আহ করে উঠলো।
তাসিন আমার দিকে তাকিয়ে বললো মেঘা বাড়িতে যা কেমন বলেই মেয়েটির হাত ধরে বললো রিশু পাখি চলো।
উনার মুখে পাখি শব্দটি শুনে আমার মুখটা অটোমিটিকলি হা হয়ে গেলো। আমাকে রেখেই তাসিন ওই শাঁকচুন্নিটা বাইকে উঠিয়ে চলে গেলো।

রাতে রুম অন্ধকার করে চুপচাপ বসে আছি। কিসের যেনো একটা অভাব অনুভব করছি। তাসিন ভাইয়াকে ওই মেয়েটির সাথে দেখার পর থেকেই একটা অস্থিরতা কাজ করছে আমার ভেতরে। তাসিনের সাথে মেয়েটাকে দেখে কেনো সহ্য করতে পারছিলাম না আমি? তাসিন ভাইয়াকে আমার ভালো লাগতো কিন্তু এখন তো মনে হচ্ছে এটা শুধু ভালোলাগা নয়। এর থেকেও গভীর কিছু। হ্যা আমি ভালোবেসে ফেলেছি তাসিনকে। কিন্তু তাসিনকে আজ ওই মেয়েটার সাথে যেভাবে দেখলাম তাতে তো মনে হচ্ছে তাসিনের মনে ওই রিশা শাঁকচুন্নিটা বাসা বেধে বসেছে। তাহলে কি আমি হারিয়ে ফেলবো উনাকে!

আমার ফোনটা বারবার বেজে চলেছে সেদিকে আমার কোনে খেয়াল নেই আমি যে তাসিনের ভাবনাতে ডুবে আছি।
ওদিকে তাসিন আমাকে ফোন দিয়ে না পেয়ে চিন্তিত হয়ে পড়লো। নিজে নিজেই বলছে কি হলো মেঘার ফোনটা তুলছে না কেনো! নাকি আমার ওপর রাগ করে ধরছে না। আবারো দিয়ে দেখিরিং তো হয়ে যাচ্ছে এতো তাড়াতাড়ি তো মেঘা ঘুমায় না। আচ্ছা আজকে কি আমি একটু বেশি করে ফেলেছি?

মেঘা ফোনটা ধরলে না হয় কিছু একটা বুঝতে পারতাম। কি যে করি এখন। আজ ওকে দেখে অন্য রকম লাগছিলো দেখেই মনে হচ্ছিলো আমার সাথে রিশাকে যেনো ওর সহ্য হচ্ছিলো নানাহ এভাবে চললে তো ও আমাকে ভুল ও বুঝতে পারে তারথেকে বরং ওকে আমার মনের অনুভূতি গুলো জানিয়ে দিবো। কিন্তু মেঘা ও কি আমার ডাকে সাড়া দিবে? ধেত যা হবে পরে দেখবো আগে তো ওকে মনের কথাটা জানাই।

এ যেনো এক অদৃশ্য ভালোবাসার চাঁদর জড়িয়ে আছে দুজনে। একে ওপরকে ভালোবাসে অথচ দুজনের মনকেই বিষন্নতার সংকোচ ঘিরে রেখেছে।

পর্ব ৫

আজ শুক্রবার ভার্সিটি অফ নিজেকে রুমের চার দেওয়ালের মাঝেই বন্দি রেখেছি। খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া বের হই না। আমার পছন্দের মটু পাতলু কার্টুনটাও এখন আর দেখতে ইচ্ছে করে না। আজকাল নিজেকে একা রাখতেই ভালো লাগে। ফ্লোরে বসে আছি খাটের সাথে মাথা ঠেকিয়ে মনটা বিষন্নতায় ছেয়ে আছে। হঠাৎ দরজার টোকা পড়লো, মা ডাকছে।

মেঘা দরজা আটকে রেখেছিস কেনো কটা বাজে দেখেছিস ব্রেকফাস্ট করতে হবে না? দরজাটা খোল।
উঠে গিয়ে দরজা খুলে দিয়ে এসে বসে পড়লাম বিছানায়। মা আমার সামনে এসে দাড়ালো।

কি হয়েছে মেঘা আজ কদিন ধরে দেখছি তুই সেই আগের মতো নেই হাসিস না ঠিক করে কথাও বলিস না কি হয়েছে বলতো?
আমার কিছু হয়নি মা তুমি অযথাই টেনশন করছো।

মা কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বললোকিছু না হলেই ভালো আয় তো ব্রেকফাস্ট করবি তোর বাবা তোর জন্য বসে আছে।

বাবা এখনো খায়নি কেনো?
সপ্তাহে এই একটি দিন তোর বাবা বাসায় থাকে তোকে ছাড়া একা খাবে ভেবেছিস।
ঠিকআছে মা তুমি যাও আসছি আমি।

মা চলে গেলো মনটা খারাপ থাকলেও বুঝতে দেওয়া যাবে না। গিয়ে বাবা মায়ের সাথে হাসি মুখেই ব্রেকফাস্টটা করে নিলাম। খাওয়া শেষে উঠে আসতে নিলে মা বললোমেঘা আজ তোর খালামনির বাসায় যাবো তৈরি হয়ে থাকিস একটু পরেই বের হবো।

খালামনির বাসায় যাওয়ার কথা শুনে নিমিষেই মনটা খারাপ হয়ে গেলো। কিছু না বলেই নিজের রুমে চলে আসলাম। দরজাটা আটকে ব্যালকনিতে গিয়ে বসলাম।
চোখটা বন্ধ করে ভাবতে লাগলাম ৩ দিন আগের কথা।

রবিবার ছিলো সেদিন যেদিন ফুচকার দোকানে তাসিন ভাইয়া আর ওই মেয়েটিকে দেখেছিলাম। তাসিন ভাইয়াকে সেদিন রিশার সাথে দেখার পরে মন খারাপ হয়েছিলো তারপরেও মানিয়ে নিয়েছিলাম।

সোমবারে তিশার সাথে কিছু কেনাকাটা করার জন্য শপিংমলে গিয়েছিলাম। শপিংমলে ঢুকতেই একটা দোকানের পাশে দেখতে পেলাম তাসিন আর রিশাকে। দুজনে খুব কাছাকাছি ছিলো ওদের সাথে আরো একটি ছেলেও ছিলো ওরা খুব হাসাহাসিতে মেতে ছিলো। ওদেরকে ওভাবে দেখে খুব খারাপ লেগেছিলো তখন। মনে হয়েছিলো আমার বুকে কেউ ধারালো ছুরি বিধিয়ে দিয়েছে। এক অন্য রকম কষ্টের অনুভব করেছিলাম,
তখন মনে হয়েছিলো তাসিন তো অন্য কাউকে ভালোবাসে, তাসিনকে ঘিরে যে সপ্নো বুনেছিলাম আমি সেটা না হয় চাপা পড়েই থাক। ওদের দিকে একধ্যানে তাকিয়ে ছিলাম তিশা কিছুটা জোরেই বলল উঠলো
এই মেঘা হলোটা কি তোর হুটহাট দাড়িয়ে পরিস কেনো?
কিছু না চল। নিজেকে স্বাভাবিক রেখে।

তিশা আমাকে যখন ডেকেছিলো তাসিন শুনতে পেয়ে পাশে তাকিয়ে আমাকে দেখেছিলো অনেক বার ডেকেছিলো আমি শুনি নি। কেনো জানি একটা চাপা অভিমান হয়েছিলো তাসিনের উপর। এই তিন দিনে তাসিন অনেকবার ফোন দিয়েছে রাস্তায়ও কথা বলার চেষ্টা ও করেছে কিন্তু আমি কথা বলিনি। কেনোই বা বলবো কথা বললে হয়তো আমার আরো বেশি কষ্ট হবে তার থেকে বরং নিজেকে একা রাখি এটাই ভালো হবে।

মায়ের ডাকে ভাবনার জগৎ থেকে বেড়িয়ে এলাম। দরজার ওপাশ থেকে চেঁচিয়ে ডাকছে উঠে গিয়ে খুলে। দিলাম।
কিরে মেঘা তুই এখনো তৈরি হসনি কি করলি এতোক্ষণ বলতো? যা জলদি তৈরি হয়ে নে।
মা আমি যাবো না তুমি আর বাবা যাও।
সেকিরে কেনো যাবিনা?

এমনি ইচ্ছে করছে না যেতে।
ইচ্ছে করছে না মানে!তুই না গেলে তোর খালামনি রাগ করবে আর কথা না বাড়িয়ে যাতো রেডি হয়ে নে।
মায়ের জোড়াজুড়িতে বাধ্য হয়েই যেতে হচ্ছে, তবে আমি ঠিক করে নিয়েছি তাসিনের সাথে কোনো কথা বলবো না।
মা আমি খালামনি বসে আছি খালামনির রুমে বাবা আর খালু একটু বেড়িয়েছেন। আমি চুপচাপ বসে আছি খালামনি আমাকে চুপ থাকতে দেখে বললো
মেঘা তোর কি মন খারাপ?
কই নাতো আমি ঠিকআছি খালামনি।

আমার তো মনে হচ্ছে তুই ঠিক নেই কেমন চুপচাপ হয়ে গেছিস চেহারাটাও ফ্যাকাসে দেখাচ্ছে।
মা ও তখন বললোআপা তুমি একদম ঠিক বলেছো আমিও ওর মাঝে পরিবর্তন দেখতে পারছি।
তখনি তাসিন ভাইয়া মা মা করে ডাকতে ডাকতে রুমে ঢুকলো আমি কিছুটা চমকে উঠলাম উনার কন্ঠ শুনে।
তাসিন ভাইয়া হয়তো বাড়িতে ছিলো না মাত্রাই আসলো, রুমে ঢুকেই উনি যেনো চুপ হয়ে গেলো আমার দিকে তাকিয়ে। আর আমি উনাকে দেখে আরো চমকালাম।

একি অবস্থা হয়েছে তাসিনের? চুলগুলো এলোমেলো চোখের নিচে কালি পড়ে গেছে উনি কি ঘুমায় না নাকি? চেহারার মধ্য উজ্জ্বলতার ছিটেফোঁটাও নেই। মনে মনে বলছিলাম।

আবারো উনার প্রতি অভিমানটা আমার ওপর যেকে বসলো নামিয়ে নিলাম চোখটা। উনি আমার দিকে কেমন যেনো অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলেন আমি অন্য দিকে তাকাতেই উনি মায়ের সাথে কথা বলে চলে গেলেন। আমার ভিতরটা ফেটে যাচ্ছিলো, খুব ইচ্ছে করছে উনার এলোমেলো চুলগুলো একটু ছুয়ে দিতে।

খালামনি আজ আমাদেরকে যেতে দেয়নি যদিও থাকার ইচ্ছে ছিলো না কিন্তু সবার কথার জন্য থাকতে হলো।
রাতে তখন ১১ টা বাজে ভালো লাগছিলো না। ভাবলাম ছাদে গেলে খোলা আকাশের নিচে হয়তো ভালো লাগবে। তাই রুম থেকে বেড়িয়ে ছাদে উঠার শিরিটার কাছে আসতেই কেউ আমার হাতটি জোরে চেপে ধরলো। আমি কিছু বুঝে উঠার আছেই সে আমাকে পাশের রুমটাতে নিয়ে দরজা আটকে দিলো। এতোক্ষণে যেনো বুঝতে পারলাম কি হলো আমার সাথে।

আমি নিজের হাতটা ছাড়ানোর চেষ্টা করছি সামনে থাকা লোকটির মুখ অন্ধকারে দেখতেও পারছি না, ভয়ে আমার গলাটা শুকিয়ে আসছে। রুমটা অন্ধকার জানালা দিয়ে বাইরের কিছুটা আলো এসে সামনের মানুষটির মুখে পড়াতে আমি চরম আকারে অবাক হলাম সাথে রাগ ও হলো তার ওপর।
ভাইয়া আপনি!আমাকে এভাবে নিয়ে আসলেন কেনো ছাড়ুন আমাকে।

উনি আমার ঠোঁটে আঙ্গুল দিয়ে চুপ থাকতে বললেন। তাকিয়ে রইলেন আমার দিকে যেনো কতোদিনের তৃষ্না মিটাচ্ছেন আমাকে দেখে। বাইরের আলো এসে আমার মুখে পড়ায় উনি ভালো ভাবে দেখতে পারছেন।
আমার মোটেও সহ্য হচ্ছিলো না উনি আমার হাতটা এখনো চেপে ধরে আছেন। আমি নিজেকে ছাড়ানের জন্য ব্যাস্ত হয়ে পড়লাম। হঠাৎই তাসিন আমাকে দেওয়ালের সাথে চেপে ধরলেন উনার একহাত আমার কোমড়ে অন্য হাত দেওয়ালে রেখে আমার দিকে তাকিয়ে শান্ত কন্ঠে বললেন।
মেঘা তুই কি আমাকে মেরে ফেলতে চাস?

আমি বিষ্মিত চোখে তাকালাম উনার দিকে আবছা আলোতেই বুঝা যাচ্ছে চোখে পানি টলমল করছে। কিন্তু উনি এ কথা কেনো বললো? উনার নিশ্বাস আমার মুখে পড়ছিলো। কেমন যেনো অস্বস্তিকর একটা পরিবেশ।
আমাকে চুপ থাকতে দেখে তাসিন উনার দুহাতে আমার দুগালে হাত রেখে আমার কপালে নিজের কপাল ছুইয়ে বললো
মেঘা তুই তো এতোটাও ছোট নয় একটা বার কি সত্যিটা যাচাই করতে পারতি না? আমার মনে কি আছে সেটা কি একটি বার জানতে চেয়েছিস তুই? কখনো কখনো যে চোখের দেখাটাও ভুল হতে পারে এটাও কি বুঝিস না? তোর এমন অবহেলা অভিমানটা যে আমার ভিতরটা তিলে তিলে ক্ষতোর সৃষ্টি করছে।

তাসিনের বলা কথাগুলো যেনো আমার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে কি বলে চলেছে উনি এসব? আমি প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে চেয়ে রইলাম উনার দিকে।
উনি আবারো বলতে লাগলো

আমি যে ঘুমাতে পারি না মেঘা। জানিস এই খান টায় ঠিক এই খানে(বুকের বা পাশে আমার হাতটি চেপে ধরে) প্রচন্ড আকারে চিনচিন ব্যাথা অনুভব করি। মনে হয় যেনো কেউ আমার হৃদপিন্ডটা আমার থেকে আলাদা করে নিয়েছে। আমার পুরোটা জুরে যে শুধু একটি রমনির বসবাস, সে যে প্রতিটি মুহুর্তে আমাকে মুগ্ধ করে। আমি চাই খুব করে চাই সে আমার বুকে এসে আমার এ অসহ্য যন্ত্রণা টা কমিয়ে দেক।
আমার মনে অনেক গুলো প্রশ্ন জটলা পাকিয়ে চলেছে। তাসিনের বলা সব কথা, গুলো যেনো আমাকে ঘিরেই ছিলো। তাহলে কি উনিও আমাকে ভালোবাসেন? কিন্তু ওই মেয়েটা সে কে ছিলো উনার।

আমার হাত তাসিন নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বললেন
মেঘা আমি জানি তুই কি ভাবছিস। তোর ভাবনার উত্তরটা আমিই দিচ্ছি। রিশা আর আমাকে যেভাবে যেটুকু দেখেছিস পুরোটাই আমাদের প্ল্যান ছিলো। রিশা আমার ফ্রেন্ডের গার্লফ্রেন্ড। আমি শুধু তোর মনের অনুভূতি টুকু জানার জন্য ওর সাথে তোর সামনে মিশেছিলাম। কিন্তু আমি ভাবিনি তুই এ ব্যাপারটা এতোটা সিরিয়াস ভাবে নিবি।
এ তিনটা দিন আমার তিনটা বছরের মতো কেটেছে তোর সাথে একটু কথা বলার জন্য দমটা যেনো বন্ধ হয়ে আসছিলো আমার।
আমি তোকে অনেক ভালোবাসি মেঘা, আমার জীবনের থেকেও বেশি।

আমার চোখ থেকে ফোটা ফোটা পানি গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়তে লাগলো নিজের হাতটা তাসিনের থেকে ছাড়িয়ে কষিয়ে একটা চর বসিয়ে দিলাম তাসিনের গালে। উনি হয়তো ভাবতেই পারেনি আমি এমন একটা কাজ করবো। উনি নিজের গালে হাত দিয়ে অবাক চোখে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে। আমি কান্নাটা আর চেপে রাখতে পারলাম না ফুপিয়ে কেঁদে উঠলাম।

কান্নারত অবস্থাতেই তাসিনের শার্টের কলার চেপে ধরে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলতে লাগলাম
আ আমাকে কি আপনার পুতুল মনে হয়েছিলো হ্যা? এতো কিছু বুঝেন আর এটা বুঝেন না একটা মেয়ে হয়ে কি করে ভালোবাসি কথাটি বলবে? অনুভূতি বুঝতে চেয়েছিলেন আপনি! তার জন্য, এতো নাটকের কি দরকার ছিলো?
সারাসরি বললেই পারতেন ভালোবাসেন আমাকে তারপর না হয় দেখতেন আমার অনুভূতি কি ছিলো। আপনার কোনো ধারনা আছে কি ভাবে কাটিয়েছি আমি এ কটি দিন!

মেঘা প্লিজজ আমাকে একটু বুঝার চেষ্টা কর। সত্যিই আমি বুঝতে পারিনি রে। জানিস এখন আমি খুববব খুশি এটা জেনে আমার মেঘা পাখি টাও যে আমাকে অনেক বেশি ভালোবাসে। আমার গালে হাত রেখে বললো।
আমি একঝটকায় উনার হাত আমার গাল থেকে সড়িয়ে দিয়ে বললামছুবেন না আপনি আমাকে। আমাকে এতো এতো কষ্ট দিয়ে কাঁদিয়ে এখন এসেছে ভালোবাসা দেখাতে।

তাসিন আমাকে একটানে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নিলেন এতোটাই কাছে নিয়েছেন আমি উনার বুকের টিপটিপ শব্দটা টের পাচ্ছি। উনি আমাকে বুকের জড়িয়ে ধরে আমার কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিসিয়ে বললেনআর কষ্ট দিবো না তোমাকে এখন থেকে শুধু ভালোবাসবো তোমায়। আমি যে অজস্র সপ্নো বুনে রেখেছি এ বুকে সবটাই শুধু তোমায় ঘিরে মেঘকন্যা।

তাসিনের আবেগময় কথাগুলোতে আমার চোখের পানি যেনো বাধ মানছে না একহাতে তাসিনের শার্টে খামচে ধরে উনার বুকে মাথা রেখে অঝরে কান্না করে চলেছি।
আমার সারা শরীর যেনো অবস হয়ে আসছিলো আস্তে আস্তে চোখটা বন্ধ হয়ে গেলো আমার। নিজের সব ভার ছেড়ে দিলাম তাসিনের উপর। তারপর কি হয়েছিলো জানি না।
পরের দিন সকালে

পর্ব ৬

পরের দিন সকালে জানালার পর্দা ভেদ করে আসা রোদের আলোটা আমার মুখে পড়তেই ঘুমটা ভেঙে গেলো। মাথাটা কেমন ভারি ভারি লাগছে। চোখ মেলে তাকাতেই আমি কিছুটা অবাক হলাম। এটা তো তাসিনের রুম এখানে আমি কি করে এলাম! হঠাৎ করেই কাল রাতের কথা মনে পড়ে গেলো আমার আমি তো শিরির পাশের ওই রুমটাতে ছিলাম তাসিনের সাথে।

তখনি পাশে থেকে তাসিনের গলা শুনতে পেলাম।
এই যে ম্যাম কি এতো ভাবছেন হুমম? কেউ যে পাশে বসে আছে সেদিকে একটু তাকান। এমনিতে কাল রাতে যা ভয় পাইয়ে দিয়েছিলেন আমাকে।

তাসিনের কথায় আমার ঘোর কাটলো আমি ডানদিকে ঘুরে তাকাতেই তাসিনের হাসি মুখটা দেখতে পেলাম।
আপনি এখানে কেনো?

যাহ বাবা বলে কি এ মেয়ে!আমার রুম আমার বিছানা দখল করে বলছে আপনি এখানে কেনো। এইজন্যই কারো উপকার করতে নেই।

কি উপকার করেছেন আমার!আর আমি আপনার রুমে ঘুমাচ্ছিলাম কেনো?
কাল রাতে তো সেন্সলেস হয়ে আমার বুকেই লুটিয়ে পড়লি জানিস কতোটা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম আমি! জোরে জোরে তোকে ডাকছিলাম কিন্তু কোনো সারা পাইনি। ভয়ে আমার কলিজাটা কেঁপে কেঁপে উঠছিলো।
আমি যে তো
তাসিন ভাইয়া আরো কিছু বলতে নিলে মা আর খালামনি রুমে ঢুকলো উনি আর কিছু না বলে থেমে গেলো।

মা আর খালামনি দুজনে আমার পাশে বসলেন মা আমার মাথায় হাত রেখে বললেন
মেঘা এখন কেমন লাগছে শরীর ঠিক লাগছে এখন?

আমি কি বলবো ভেবেই পাচ্ছি না, এমনিতেই তাসিনের রুমে আছি তার উপর আবার মা এ কথা বলছে। তাহলে কি তাসিন সব বলে দিয়েছে সবাইকে?

আমি কিছু বলছি না দেখে খালামনি বললো
মেঘা তুই কিরে হ্যা রাতেও কি তোর বাচ্চাদের মত ছুটতে হয়? কি করতে গিয়েছিলি ওই রুমে? তাসিন যদি ওদিকটাতে না যেতো তাহলে তুই ওইখানেই পড়ে থাকতি।
মা বলে উঠলো
কি হয়েছিলো রে মেঘা, হঠাৎ সেন্সলেস হয়ে পড়ে ছিলি কেনো ভয় পেয়েছিলি কিছু দেখে?

মা খালামনি তো একের পর এক প্রশ্ন করেই চলেছে কি উত্তর দিবো এদেরকে? অসহায় দৃষ্টিতে তাসিনের দিকে তাকালাম। ওমা উনি দেখছি মিটমিট করে হাসছে!উনার এমন হাসি দেখে কিছুটা রাগ হচ্ছিলো আমার।
উনার জন্যই তো এমন টা হয়েছে আর এখন আমার এই করুন অবস্থা দেখে মজা নিচ্ছেন উনি। আমারো সুযোগ আসবে তখন আমিও মজা নিবো হুহ।

তাসিন নিজের হাসি হাসি মুখটা একটু কালো করে মা আর খালামনিকে বললো,
আচ্ছা মা তোমরা কি করছো হুম এখনি সব জানতে হবে তোমাদের? দেখছো না মেঘা চুপ করে আছে হয়তো কথা বলতে ভালো লাগছে না।

ঠিকআছে পরে শুনে নিবো মেঘা তুই রেস্ট কর। মা বললো।
মা আমি এখন ঠিকআছি।

তখনি খালামনি বললো
কোনো কথা নয় চুপচাপ শুয়ে থাক শরীরের কি অবস্থা করেছিস সে দিকে খেয়াল করেছিস।
এতো পড়লাম আর এক বিপদে আমি এখানেই শুয়ে থাকবো নাকি! খালামনিকে বললামআচ্ছা রুমে গিয়ে রেস্ট করি এটা তো ভাইয়ার রুম। খালামনি চোখ পাকিয়ে বললেন
তাতে কি হয়েছে তাসিন কি তোকে খেয়ে ফেলবে আর ও তো একটু পরেই বেড়িয়ে যাবে।
খালামনি আর মা চলে গেলো আমি বোকার মতো ওদের যাওয়ার দিকেই তাকিয়ে রইলাম। তখনি তাসিন আমার মাথায় একটা চাটি মেরে আমার গা ঘেষে বসে পড়লেন।

আমি উনার দিকে তাকাতেই উনি একটা চোখ টিপ মারলো। আমি একটু সরে এসে বসতে নিলে উনি আমার কোমড়টা জড়িয়ে ধরে আরো কাছে টেনে নিলো। হঠাৎ এভাবে ছোয়াতে কিছুটা কেঁপে উঠলাম।
কি করছেন ভাইয়া! ছাড়ুন আমাকে।

উনি আমার ঠোঁটে আঙ্গুল দিয়ে
উহু আমাকে আর কখনো ভাইয়া বলবি না কেমন।
আমি উনার চোখের দিকে একবার তাকিয়ে চোখটা নামিয়ে নিলাম। মাথা নিচু করেই বললাম।
আচ্ছা মা খালামনিকে কি বলে বুঝিয়েছেন আপনি?

কি আর বলবো, তোর মা মানে আমার খালামনিকে বলছি খালামনি তোমার মেয়ে আমাকে হারানোর বিরহে কাতর হয়ে পড়েছিলো তাই তো ওর আজকে এই অবস্থা। বাকা হেসে বললো।

আমি রাগি চোখে তাকালাম উনার দিকে
আরে আরে আমার মেঘকন্যা যে রেগে গিয়েছে। উফফ মেঘা তোর এই রাগি ফেসটাকে কি দারুন দেখাচ্ছে। ইচ্ছে করছে টুপ করে খেয়ে ফেলি।

এবার আমার চরম রাগ হয়ে গেলো নিজেকে জোর করে ছাড়িয়ে দুরে সরে আসলাম রেগেই বললাম
আপনি কি আসল কথাটি বলবেন?

ওকে ওকে বলছি এতো হাইপার হচ্ছিস কেনো, কাল রাতে তোর ওমন অবস্থাতে খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম আমি কি করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না তাই মাকে আর খালামনিকে ডেকেছিলাম। আমার মায়ের তো ডাক্তারি বিষয়ে কিছুটা ধারনা আছে। মা কি যেনো একটা ওষুধ খাইয়ে দিয়েছিলো তোকে।
ওনারা জানতে চায়নি আমি আর আপনি ওখানে কি করছিলাম?

হুম জানতে চাইবে না আবার। আমি বলেছি আমি ছাদের দিকে যাচ্ছিলাম কিছু পড়ে যাওয়ার আওয়াজ পেয়ে ওই রুমে গিয়ে দেখেছি তুই পড়ে আছিস।

কি এতো বড় একটা মিথ্যে বলে দিলেন!
তাহলে কি সত্যিটা বললে ভালো হতো ঠিকআছে বলে দিচ্ছি মাকে ডাকি কেমন।
না না কিছু বলতে হবে না। আচ্ছা আমি আপনার রুমে কেনো?
নিয়ে এসেছি এখানে তাই।
নিয়ে এসেছেন মানে কিভাবে?
কিভাবে আবার কোলে তুলে।

কিহহ আমাকে আপনি কোলে তুলে নিয়ে এসেছেন!
হুমম আমার মেঘকন্যা। আমার গাল টেনে বললেন।

আমাকে মেঘকন্যা কেনো বলছেন?
তোর খুব ইচ্ছে তোর সে তোকে আদর করে এ নামে ডাকবে। আমিই তো তোর সে তাইনা!
আপনাকে আমার সে মানতে বয়েই গেছে। ভেংচি কেটে বললাম। তারপর সেখান থেকে উঠে আসতে নিলে তাসিন আমার হাত টেনে ধরলেন আমি তাকাতেই, মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বললোসত্যিই ভালোবাসি তোকে। আমি প্রতিউত্তরে কিছু বললাম না হেসে চলে আসলাম।

আমার দিনগুলো ভালোই কাটছে তাসিনের সাথে। আমাদের সম্পর্কের কথা শুধু তিশা জানে।
রাতে ঘুম আসছিলো না তাই বসে ম্যাগাজিন পড়ছিলাম হঠাৎ ফোনের ম্যাসেজ টন বেজে উঠলো ফোনটা ড্রেসিংটেবিলের ওপর রাখা ছিলো সিম কোম্পানির ম্যাসেজ ভেবে উঠলাম না। প্রায় ৫ মিনিট পর আবারো ম্যাসেজ আসলো। এবার না উঠে পারলাম না হয়তো তাসিন ম্যাসেজ করছে।

ম১ম ম্যাসেজ এ লেখা, মেঘা ৫ মিনিটের মধ্য ছাদে আয়। ২য় টাতে লেখা, কি হলো কোথায় তুই আমি কিন্তু তোর রুমে চলে আসবো এখন।
ম্যাসেজ দুটো পড়ে আমি কিছুটা অবাক হলাম এটা তো আমাদের বাড়ি তাসিন আমাদের ছাদে এতো রাতে কি করে আসলো!মোবাইলে টাইম দেখলাম ১১ টা বেজে ৫৪ মিনিট। আমি তাসিনের নাম্বারে ডায়েল করতে যাবো আবারো ম্যাসেজ আসলোএবার কিন্তু আমি সত্যিই তোর রুমে আসবো।

আমি আর দেরি না করে ফোনটা বিছানার ওপর রেখে ছাদে চলে আসলাম। কিন্তু একি ছাদে তো লাইট দেওয়া থাকে এতো পুরোই অন্ধকার। তাসিন কোথায়!
অন্ধকারে কিছু দেখতেও পারছি না ফোনটাও আনি নি যে উনাকে ফোন দিবো।
আচমকা কেউ আমাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো আমি চমকে উঠেও নিজেকে সামলে নিলাম কারন এ ছোয়াটা যে আমার খুব পরিচিত। উনি আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘাড়ে থুতনি রেখে বললেন
কি ব্যাপার মেঘা পাখি ভয় পাও নি?

ভয় কেনো পাবো আপনার ছোয়াটা যে আমার খুবই চেনা।
উনি আর কিছু না বলে আমাকে ওভাবেই জড়িয়ে ধরে কিছুটা সামনে এগোলেন হঠাৎই লাইট জ্বলে উঠলো।
সামনে চোখ পড়তেই আমি চরম পর্যায় অবাক হলাম।

গাদা ফুল আর গোলাপের পাপড়ি দিয়ে বড় করে লাভ আকানো তার মধ্য গোলাপের পাপড়ি দিয়ে গোটা গোটা অক্ষরে লেখাহ্যাপি বার্থডে টু ইউ মেঘকন্যা।

আমি বিষ্ময় চোখে ঘাড় ঘুড়িয়ে তাসিনের দিকে তাকালাম। আজ আমার বার্থডে আমিই তো ভুলে গিয়েছি তাসিন ঠিক মনে রেখেছে! উনি ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটিয়ে আমাকে ছেড়ে দিয়ে পাশে রাখা চেয়ার টা থেকে একগুচ্ছো গোলাপ হাতে নিয়ে মৃদু হেসে বললেন, শুভ জন্মদিন মেঘা।

আমার চোখের কোনে পানি জমে গেলো এটা দুঃখের নয় সুখের। আমি মুচকি হেসে হাত বাড়িয়ে তাসিনের হাত থেকে ফুলগুলো নিয়ে বললামধন্যবাদ আপনাকে আমাকে এতো সুন্দর ভাবে উইস করার জন্য।
ধুর পাগলি নিজের মানুষকে ধন্যবাদ দিতে হয় নাকি। তারথেকে বরং অন্য কিছু দাও।
অন্য কিছু কি দিবো?
উমম আমি কি বলবো তুমি জানো।
আচ্ছা পরে না হয় কিছু দিয়ে দিবো।

তাসিন আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো কিছু বললো না।

উনি নিজের হাতটি বাড়িয়ে দিলেন আমার দিকে আমি মুচকি হেসে তাসিনের হাতে হাত রাখলাম।
চলো এবার কেকটা কাঁটা যাক অনেক দেরি হয়ে গেছে।
আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে বললাম
এতো কিছু কিভাবে করলেন আপনি?

তাসিন মুচকি হেসে আমাকে পাশের বিল্ডংটা দেখিয়ে বললোওই বিল্ডিংটাতে আমার একটা ফ্রেন্ড থাকে ওর সাহায্য নিয়েই করেছি।
কে বলেছে এতোটা, রিস্ক নিয়ে এসব করতে যদি কোনো অঘটন ঘটে যেতো!
ঘটে তো নি তাছাড়া আমাদের ভালোবাসার প্রথম সিজন চলছে আর এটা তোমার প্রথম বার্থডে এই সিজনে আর আমি এটুকু করবো না তা কি করে হয় হুমম।
ভালোবাসার প্রথম সিজন মানে? ভ্রু কুঁচকে বললাম।

এমনি এমনি তো বলি না গোবর আছে তোমার মাথায়। প্রথম সিজন মানে হলো আমাদের এ নতুন পথচলা তো মাত্র শুরু হলো আর আমাদের এ নতুন সম্পর্কে এটাই প্রথম জন্মদিন ছিলো তোমার বুঝলে এবার?
হুমম বুঝেছি।
পরবর্তী সিজন গুলো কি বলবো? বাকা হেসে বললো।
আমি উনার দিকে তাকিয়ে উনার এমন হাসি দেখে বললাম না থাক আমার আর জানতে হবে না।
উনি জোরে হেসে উঠলেন আমার কথায়।
আজব তো হাসছেন কেনো পাগলের মতো?

তোমার প্রেমে আমি আমি পাগল হয়ে গেছি গো তাই হাসছি।
তারপর দুজনে মিলে কেক কেটে ছাদে কিছু ক্ষণ সময় কাটিয়ে তাসিন চলে গেলো আমিও রুমে চলে আসলাম।

আমি আর তিশা ভার্সিটি থেকে বেড়িয়ে রিক্সার জন্য দাড়িয়ে আছি। আমাদের সামনে একটা গাড়ি এসে দাড়ালো আমরা দুুজনেই তাকিয়ে আছি সেদিকেই। গাড়ির দরজাটা খুলে বেড়িয়ে আসলো আবির। আমাদের সামনে এসে বললো

হেই মেঘা কেমন আছো?
আমি কেমন আছি তা জেনে আপনি কি করবেন?
কি আর করবো কিছুই না।
ঠিকআছে তাহলে যেখানে যাচ্ছিলেন সেখানেই যান।
আমি তো তোমার কাছেই এসেছি।

কেনো!কি দরকার আমার কাছে?
তুমি যাকে ভালোবাসো সে কখন কোথায় যাচ্ছে কি করছে তার খেয়াল কি রাখো তুমি?
কি বলতে চাইছেন আপনি?
তাসিন আর তোমার সম্পর্কের কথাটা আমি জানি। আর এটাও জানি তাসিন তোমাকে ঠকাচ্ছে।
কি বলছেন কি আপনি! তাসিন না আপনার ফ্রেন্ড ওকে নিয়ে আপনি উল্টো পাল্টা বকছেন?
হুম ও আমার ফ্রেন্ড কিন্তু তোমার সাথে ও প্রতারণা করছে এটা জেনেও আমি চুপ থাকবো।
আমার গলাটা যেনো শুকিয়ে আসছে আবির তাসিন সম্পর্কে কি বলে চলেছে এসব! তিশাও অনেকটা অবাক হচ্ছে এসব শুনে। তিশা আবিরকে বললো

শুনুন তাসিন ভাইয়াকে আমি চিনি আর যতটা জানি উনি মেঘাকে খুব ভালোবাসে ঠকানোর তো প্রশ্নই আসে না।
আবির মৃদু হেসে বললো

ঠিকআছে আমার সাথে চলো তোমরা নিজের চোখেই দেখবে।
আমি যেনো নরতে পারছিলাম না কিন্তু আমাকে তো যেতেই হবে আমার বিশ্বাস আছে তাসিন এমন কিছু করবে না।
আমি আর তিশা আবিরের সাথে একটা রেস্টুরেন্টের সামনে আসলাম ভেতরে ঢুকে একটু আড়াল থেকে আবির আমাকে সামনে তাকাতে বললো।

আমি সামনে তাকিয়ে নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। এ কি দেখছি আমি! আমার হাত পা থরথর করে কাপতে লাগলো পড়ে যেতে নিলে তিশা আমাকে ধরে ফেললো।
আবির পাশে থেকে বলে উঠলো কি এবার বিশ্বাস হলো তো আমার কথা?
আমি আর একমুহুর্ত ওখানে দাড়ালাম না বেড়িয়ে আসলাম তিশাও আমাকে পেছন পেছনে আসলো।

পর্ব ৭

নিজের রুমে গুটিশুটি মেরে চুপটি করে বসে আছি তিশা ও আমার পাশে বসে এটা সেটা বুঝিয়ে চলেছে। ওর কোনো কথাই যেনো আমার কানে যাচ্ছে না শুধু রেস্টুরেন্টের সেই দৃশ্য চোখে ভেসে উঠছে।
আমরা যখন রেস্টুরেন্টে গিয়ে তাসিনকে দেখলাম উনি তখন একটি মেয়ের সাথে পাশাপাশি চেয়ারে বসে ছিলেন, এমনকি তাসিন নিজের হাতের বাহুতে মেয়েটিকে জড়িয়ে রেখেছিলেন, মেয়েটির হাত ধরে কিছু একটা বুঝাতে ব্যস্ত ছিলেন উনি। ওমন দৃশ্য দেখে যতোটা অবাক হয়েছিলাম তার থেকে বেশি অবাক হয়েছি ওই মেয়েকে দেখে সে আর কেউ নয় রিশা ছিলো। যাকে তাসিন বলেছিলো উনার ফ্রেন্ড এর গার্লফ্রেন্ড।
আচ্ছা তাসিন কি সত্যিই এমনটা করতে পারে? উনি তো আমাকে খুব ভালোবাসে উনার আচরনে কখনো মনে হয়নি যে উনি আমাকে ঠকাবেন।

এরকম আরো নানা ধরনের কথা ভেবে চলেছি আমি। তিশা আমার কাধ ঝাকিয়ে বললো
এই মেঘা আমি কি বলছি শুনতে পাচ্ছিস?
আমি কিছুটা নড়েচড়ে উঠলামহ্যা তিশা বল।

দেখ মেঘা হয়তো আমাদের দেখার কোনো ভুল হয়েছে তাসিন ভাইয়া এমন সেটা আমি মানতে পারছি না।
আমিও তো মানতে পারছি না তিশা কিন্তু নিজের চোখেই তো দেখলাম।
তুই নিজেকে স্বাভাবিক রাখ এখনি ভেঙে পড়লে চলবে না। আচ্ছা আঙ্কেল আন্টি কোথায়?
বাবা মা আমাদের গ্রামের বাড়িতে গিয়েছে। রাতেই ফিরে আসবে।

আমার ফোনের রিংটন বেজে উঠলো হাতে নিয়ে তাসিনের নাম্বার দেখে কেটে দিয়ে ফোনটা অফ করে রাখলাম। হ্যা এখনো উনার প্রতি আমার বিশ্বাসটা আছে মন বলছে আমার দেখার পেছনে লুকিয়ে আছে অন্য কোনো কারন। কিন্তু প্রবলেম একটাই আমার মনের মেঘটা যে সড়াতে পারছি না রাগ নয় অভিমান কাজ করছে তাসিনের উপর। তবে আশ্চর্যের ব্যাপার হলো আমার চোখ থেকে আজ এক ফোটাও পানি ঝড়ছে না। শুধু বুকের ভিতরে বয়ে চলেছে তাসিনের প্রতি অভিমানের ঝড়।

মেঘা তাসিন ভাইয়া ফোন দিয়েছিলো তাইনা?
হুম
তো কেটে দিলি কেনো আমার মনে হয় ভাইয়ার সাথে তোর কথা বলা উচিৎ আসল ব্যাপারটা কি সেটা জানা দরকার তোর।
আমার এখন কথা বলতে ভালো লাগছে না তিশা।
ঠিকআছে আমাকে দে আমি কথা বলে দেখছি।
না তুই কিছুই বলবি না তোকে যদি তাসিন ফোন দেয় ধরবি না। আমিও কোনো যোগাযোগ করবো না দেখতে চাই উনি সত্যিই আমাকে ভালোবাসে, নাকি ওই রিশাকে।

আজ ৪ দিন হলো তাসিনের সাথে একটি বারো যোগাযোগ করিনি খুব কষ্ট হচ্ছে কথা না বলে থাকতে। তবে এই ৪ দিনে তাসিনও এতোটুকু যোগাযোগের চেষ্টা করে নি আমার সাথে আমার ফোনটা না হয় অফ রেখেছি উনি কি পারতো না তিশাকে ফোন দিতে বা আমাদের বাড়িতে আসতে। কিন্তু উনি কিছুই করেনি।

তাহলে আমার দেখাটা কি সেদিন সত্যি ছিলো!আমার বিশ্বাসটাকে এভাবে ভেঙে দিলো তাসিন!

কষ্ট আর অভিমান গুলো যেনো আজ চোখের পানি হয়ে বয়ে চলেছে কিছুতেই চোখের পানি আটকাতে পারছি না। আমি যে তাসিনকে অনেক ভালোবাসি কি করে থাকবো আমি ওকে ছেড়ে। নাহ আমাকে তাসিনের সাথে কথা বলতেই হবে আমার জানতে হবে উনি কেনো করলেন আমার সাথে এমন।

ফোনটা অন করতেই পরাপর তাসিনে কয়েকটা ম্যাসেজ আসলো ওপেন করতেই দেখলাম, ১ম ম্যাসেজে লেখা, এই মেঘা পাখি কি হয়েছে তোমার ফোন কেটে দিয়ে অফ করলে কেনো? ২য় ম্যাসেজে লেখা, আমি ভালো নেই গো তোমার ভয়েসটাকে খুব মিস করছি তোমার সাথে খুনশুটি পূর্ণ ঝগড়াগুলোকে অনেক বেশি মনে পড়ছে। ৩য় ম্যাসেজটি দেখে আমি চমকে উঠলাম আজ সকালের ম্যাসেজ এটা ওটাতে লেখা ছিলো, মেঘা তুমি কিভাবে পারলে আমার এমন অবস্থার কথা শুনে দুরে থাকতে একটি বারো কি মনে হয়নি আমাকে দেখতে আসার কথা? আল্লাহ কেনো বাচিয়ে রাখলো আমাকে। আমি যে তোমার অবহেলা গুলো আর নিতে পারছি না।

আমি কি করবো ভেবে পাচ্ছি না তাসিন এমন ম্যাসেজ কেনো করেছে উনার কিছু হয়নি তো? মুহুর্তেই আমার আত্তাটা কেপে উঠলো। তাসিনের নাম্বারে ডায়েল করলাম বারবার নেটওয়ার্ক বিজি দেখাচ্ছে। কিছু না ভেবেই খালামনির নাম্বারে ফোন দিলাম ২ বার রিং হওয়ার পর রিসিভ হলো। ওপাশ থেকে কিছু বলার আগেই আমি বললামখালামনি তাসিন ভাইয়া কোথায়? কি হয়েছে উনার?
মেঘা তুই! কেনো তুই জানিস না কিছু?
নাতো কি হয়েছে বলোনা?

৩দিন আগে তাসিনের এক্সিডেন্ট হয়েছে অবস্থা ভালো ছিলো না তবে আল্লাহর রহমতে এখন ও ভালো আছে আজি হসপিটাল থেকে বাড়িতে নিয়ে যাবো ওকে। তোর মা বাবা ও এসে দেখে গিয়েছে আর তুই একটিবারো আসলি না তাসিন অনেক বার খোজ করেছে তোর।

আমার কানে যেনো আর কোনো কথা ঢুকছে না ফোনটা হাত থেকে ছিটকে পড়লো। চিৎকার করে মাকে ডাকতে লাগলাম। মা দৌড়ে রুমে এসে আমার পাশে বসে বললো
কি হয়েছে মেঘা ডাকছিস কেনো? এমন অস্থির দেখাচ্ছে কেনো তোকে?

আমি শান্ত কন্ঠেই বললাম মা তাসিন ভাইয়ার যে এক্সিডেন্ট হয়েছে আমাকে বলো নি কেনো?

কি করে বলবো তোর দুদিন পর পর কি হয় কে জানে সারাক্ষণ দরজা লাগিয়ে বসে থাকিস। তাসিনের যেদিন এক্সিডেন্ট হলো সেদিনি তোকে বলতে এসেছিলাম তুই কি বলেছিলি, মা আমার সাথে কোনো বিষয়ে কোনো কথা বলবে না আমাকে একা থাকতে দাও তখন আমাকে আর কিছু বলতে না দিয়ে জোর করে বের করে দিয়ে দরজাটা আটকে দিয়েছিলি।

তাসিনের সামনে বসে উনার মুখের দিকে তাকিয়ে বসে আছি উনি ঘুমাচ্ছিলেন। মুখটা শুকিয়ে গেছে কপালে আর পায়ে ব্যান্ডেজ তাসিনের এমন অবস্থা দেখে আমার ভেতরটা কেপে উঠছে বার বার মনে হচ্ছে উনার এমন অবস্থার জন্য আমি দায়ী। আমার সেদিনি উচিৎ ছিলো তাসিনের মুখোমুখি হয়ে সবটা ক্লিয়ার করা।
আজ বুঝতে পারছি তাসিন কেনো আবিরের সাথে কথা বলতে না করেছিলো।

তাসিনের মুখের দিকে চেয়ে আছি চোখ থেকে নিরবে পানি পরছে উনার হাতের উপর পানি পড়তেই হাতটি কিছুটা নড়ে উঠলো। চোখ মেলে তাকালো আমার দিকে। আস্তে করে বলে উঠলো
কি দেখতে এসেছো আমি মরে গিয়েছি কিনা?

উনি যে অভিমান থেকে কথাটা বলেছে এটা বেশ বুঝতে পারছি। অভিমান হওয়ারি কথা সবটা না জেনে শুধু নিজের দিকটা ভেবে উনার থেকে দুরে ছিলাম এমনকি এই খারাপ মুহুর্তেও উনি আমাকে পাশে পায়নি। আমি ভাঙা কন্ঠে বললাম

এমন কথা বলবেন না প্লিজ আমি সত্যি আপনার এক্সিডেন্টের কথা জানতাম না।
ও আচ্ছা তাই জানতে না তুমি? বাহ খুব ভালো কথা বললে! বলেই উনি মুখ ঘুড়িয়ে নিলেন।
আমার বুকের ভেতরে মোচর দিয়ে উঠলো, তখনি রিশা তাসিনের ফ্রেন্ড রোহান আর তিশা আসলো। তিশা আমার কাছে এসে দাড়াতেই ওকে জড়িয়ে কাঁদতে লাগলাম।

তাসিনের ফ্রেন্ড রোহান তাসিনের পাশে গিয়ে বসে ওর কাধে হাত রেখে বললো
তাসিন মেঘাকে ভুল বুঝিস না ওর জায়গায় তুই থাকলে হয়তো তুইও এমনটাই করতি।
মানে? তাসিন প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকালো রোহানের দিকে।

তখন রিশা বললো মানেটা আমি বলছি ভাইয়া। সেদিন রেস্টুরেন্টে আপনি যে আমাকে জড়িয়ে ধরেছিলেন মেঘা ওটা দেখে নিয়েছিলো কিন্তু কি হয়েছিলো কেনো মেঘা এসব না জেনেই ভুল বুঝেছিলো আপনাকে।
তাসিন বললোতাহলে এখন কেনো এসেছে চলে যেতে বলো ওকে এখান থেকে।

তিশা বললো ভাইয়া দুজনেই যদি এমন করেন কিভাবে সব ঠিক হবে বলুন তো। আজকে সকালে রিশা আপুর সাথে আমার দেখা হয়েছিলো সেদিন আমিও দেখেছিলাম আপনাদেরকে একসাথে। আজ যখন রিশা আপুর সাথে দেখা হলো ওনাকে মেঘার ভুল বোঝার কথাটা বলেছি। পরে রিশা আপুর থেকেই জানতে পারলাম রিশা আপুকে আপনি ছোট বোনের মতো জানেন আর রোহান ভাইয়া কোনো কারনে কথা, বলছিলো না তাই রিশা আপু খুব ভেঙে পড়েছিলো। আপনি হয়তো রিশা আপুকে নিজের বোন মনে করে ওনাকে ওভাবে শান্তনা দিচ্ছিলেন।
আর ওই সময়টার সুযোগ নিয়ে অন্য কেউ মেঘাকে ভুল বুঝালো।

আমি এসব জানার আগেও আপনাকে অবিশ্বাস করিনি এমন কি মেঘারও বিশ্বাস ছিলো আপনার উপর। মেঘাকে কিছুক্ষণ আগে আমি সবটা বলেছি। ভাইয়া, ওকে আপনি ভুল বুঝবেন না ও যে অনেক ভালোবাসে আপনাকে। আর ও সত্যিই জানতো না আপনার এক্সিডেন্টের কথা।
তিশা কি বললে তুমি কে সুযোগ নিয়েছিলো?

তারপর তিশা আবিরের বলা সবকিছু বললো। তাসিন খুব রেগে গিয়েছিলো এসব শুনে। রোহান বললো
তাসিন এখন রাগার সময় নয় আমরা বাইরে যাচ্ছি তুই মেঘার সাথে কথা বল।
আমি চুপচাপ মাথা নিচু করে চোখের পানি ফেলছি
ওরা বেড়িয়ে যাওয়ার সময় রিশা আমার কাছে এসে বললো
মেঘা নিজেরটা বুঝে নিতে শেখো সেদিনি যদি সামনে গিয়ে সবটা শুনতে তাহলে আজ তোমাদের এমন ভুল বুঝাবুঝি হতো না। তোমাদের রিলেশন তো বেশি দিনের নয় এখনি যদি এমন হয় তাহলে সামনে এগোবে কি করে হুম। আর শোনো তাসিন ভাইয়ার মতো মানুষ হয় না আমি ওনাকে নিজের ভাইয়ের মতোই জানি বুঝেছো। এখন কথা বলো তোমরা আসছি আমি।

আমি এখনো মাথা নিচু করে বসে আছি তাসিন শোয়া থেকে উঠতে চেষ্টা করছে পায়ে ব্যাথা পেয়ে আহ শব্দ করে উঠলো। আমি উঠে গিয়ে ওনাকে ধরে বসালাম তারপর সরে আসতে নিলে উনি আমার হাত ধরে পাশে বসালেন। আমার চোখের পানি মুছে দিয়ে বললেন
এই পাগলি এমন কাজ কেউ করে হ্যা? জানো কতোটা কষ্ট হয়েছিলো আমার। সেদিন আমার সামনে গিয়ে সবটা জানতে চাইতে তা না করে কোনো যোগাযোগ না করেই নিজের ফোনটাই অফ করে রেখে দিয়েছিলে।
সেদিন তোমার বাবা মা ও দেখতে এসেছিলো তুমি আসোনি তখন মনে হয়েছিলো আল্লাহ কেনো বাচিয়ে রাখলো আমাকে।

চুপ এমন কথা আর বলবেন না আমি আর কখনো ভুল বুঝবো না আপনাকে।
দেখাই যাবে কি করো, তবে একটা কথা আমি সুস্থ হই তারপর আবিরকে দেখে নিবো।

তাসিনের খুব কাছেই বসে আছি আমার হাত তাসিনের হাতের মুঠোয় হঠাৎই খালামনি রুমে ঢুকলো আমি তাড়াতাড়ি সরে আসতে নিলে খালামনি ধমকের স্বরে বললেন
একদম আমার ছেলের হাত ছাড়বি না ওখানেই বসে থাক চুপ করে।

খালামনির কথায় আমি আর তাসিন দুজনেই শকড। খালামনি হেসে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো
আর যদি আমার ছেলের থেকে দুরে থাকিস তাহলে তোর খবর আছে।
তাসিন বললোমা তুৃমি কি বলছো!
কি বলেছি হুম শোন তোকেও বলি আমার মেয়েটাকে আগলে রাখবি সবসময়।
আমি আর তাসিন বোকার মতো চেয়ে আছি খালামনি বুঝতে পেরে বললো
এতো অবাক হওয়ার কিছু নেই আমি সব জানি রোহান আমাকে একটু আগে সবটা বলেছে।
মা তুমি আমাদের বিষয়টা মেনে নিয়েছো।

শুধু আমি না তোর বাবাও মেনে নিয়েছে এখন মেঘার বাবা মাকে বলতে হবে।

আমি কিছুই বলছি না দেখে খালামনি আমার কপালে একটা চুমু খেয়ে বললেন
ইসস আমার বাচ্চা মেয়েটা এখন আমার ছেলের বউ হবে ভাবা যায়!হেসে বললো।

তাসিন বাকা হেসে বললো মা আমার মনে হয় কি জানো তোমার এই বাচ্চা মেয়েটিকে আমার বিয়ে করা ঠিক হবে না।
আমি তাসিনের দিকে তাকালাম খালামনি বললো
তাসিন এ কি বলছিস তুই!

কেনো বলবো না বলোতো এতো বোকা কেউ হয় কি না কি দেখে নিজে তো কষ্ট পেলো আমাকেও কষ্ট দিলো,
হয়েছে এসব আর বলিস না দেখছিস না ও মন খারাপ করে আছে।
মা একটা কাজ করো টিভিটা অন করে মটু পাতলু দেখতে দাও ওকে মন এমনিতেই ভালো হয়ে যাবে।
আমি রাগি চোখে তাসিনের দিকে তাকাতেই তাসিন জোরে হেসে উঠলো।

পর্ব ৮

প্রায় ১মাস লেগেছে তাসিন পুরোপুরি সুস্থ হতে এক্সিডেন্টে পায়ের আঘাতটা বেশি লাগায় হাটতে প্রবলেম হতো এখন তাসিন ভালোভাবেই হাটতে পারে।

আমাদের সম্পর্কের ব্যাপারে এখন আমার বাবা মা ও জানে বাবা রাজি ছিলো না তার কথা ছিলো নিজেদের মধ্য নতুন করে কোনো সম্পর্ক গড়া যাবে না। পরে মায়ের অনেক বুঝানো আর আমার জেদের কাছে হার মেনে বাবা রাজি হয়েছে।

তমা আপু (তাসিনের বড় বোন) ৫ বছর পর আজ কানাডা থেকে দেশে ফিরছেন। তমা আপু ওনার হাজবেন্ডের সাথে ওখানেই থাকেন ওনার একটা মেয়ে আছে নাম অরিন। অরিনের বয়স সাড়ে তিন বছর জন্মের পর এই প্রথম অরিনকে নিয়ে দেশে আসছেন।

সকাল ৮টা বেজে ৪৪ মিনিট আমি রেডি হচ্ছিলাম ভার্সিটি যাবো বলে দরজায় টোকা পড়তেই ঘাড় ঘুড়িয়ে তাসিনকে দেখলাম ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটিয়ে হাত ভাজ করে দরজায় হেলে দাড়িয়ে আছে।
আমি উনার সামনে গিয়ে বললাম
কি ব্যাপার এতো সকালে আপনি আমাদের বাড়িতে যে?
কেনো আসতে পারি না বুঝি!

সে কথা বলেছি নাকি। কোনো ফোন না দিয়ে এতো সকালে এসেছেন তাই বলছি।
ফোন কেনো দিতে হবে!আমার খালামনির বাড়িতে যখন খুশি আসবো আর তাছাড়া কিছুদিন পর আমার শশুর বাড়ি হতে চলেছে এটা। দেখি সরো ভেতরে যেতে দাও তুমি তো বসতে বলবে না আমি নিজেই বসছি।
ঢং। মুখে ভেংচি কেটে।

ইসসস মেঘাপাখি এভাবে মুখ বাকা করো না গো তোমাকে যে আরো বেশি সুইট লাগে দেখতে। খাটে বসে বললো।

আমি আর কিছু না বলে আমার কাজে মন দিলাম। তাসিন বলে উঠলোমেঘা আজ ভার্সিটি যেতে হবেনা ১১ টার সময় এয়ারপোর্ট যেতে হবে আপুদের রিসিভ করতে।

তো যাবেন এর সাথে আমার ভার্সিটি না যাওয়ার কি সম্পর্ক?
তুমিও যাবে আমার সাথে আপু তোমাকেও নিয়ে যেতে বলেছে।
আমি যাবো না।
কেনো যাবে না কেনো?
এমনিতেই।
আপু মন খারাপ করবে মেঘা প্লিজ না করো না।
ঠিকআছে যাবো।

হুমম যাবো।
নাস্তা করার জন্য মা ডাকতে আসলে আমি আর তাসিন গিয়ে নাস্তা করে নিলাম। তাসিন মায়ের সাথে কথা বলছিলো আমি রুমে চলে আসলাম। একটু পর তাসিন আসলো
মেঘা তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নাও ১০ টায় বের হবো।

আচ্ছ। তারপর নীল রং এর একটা চুড়িদার পড়ে নিলাম চুলগুলো ছেড়ে দিলাম। তাসিন ব্যালকনিতে বসে ছিলো আমি সামনে গিয়ে বললাম আমি রেডি।
তাসিন আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।
কি হলো এভাবে কি দেখছেন?

আমার মেঘকন্যাকে দেখছি! নীল রংটা যেনো তোমার সৌন্দর্যকে আরো ফুটিয়ে তুলেছে। মেঘের নীল আবরণ গায়ে মেখে যেনো এক নীলপরী দাড়িয়ে আছে আমার সামনে। আমার দিকে চেয়ে ঘোড় লাগা কন্ঠে বললো।
আমি মুচকি হেসে সেখান থেকে সরে আসতে নিলে উনি আমার হাত ধরে হেচকা টানে নিজের কোলে বাসিয়ে কোমড় জড়িয়ে ধরে আমার চুলে মুখ গুজলো। আমার সাড়া শরীরে যেনো কারেন্ট বয়ে চলেছে আপনা আপনি হাত পা কাপতে লাগলো।
উনি ওভাবেই চুলে মুখ গুজে আস্তে করে বললো
কাপছো কেনো মেঘাপাখি আমি তো কিছুই করিনি এখনো, আর তুমি এখনি কাপাকাপি শুরু করে দিয়েছো।
আ আপনার এখন ললেট হচ্ছে না?

উহু একটু লেট হলে ক্ষতি নেই। এই নীলপরী তুমি সাজো না কেনো হুম সব সময়, এতো সিম্পল কেনো থাকো?
আমার সাজতে ভালো লাগে না।

ঠিকআছে সাজতে হবে না শুধু তোমার ওই মিষ্টি ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক দাও। কি দিবে না?
আচ্ছা দিবো এখন তো ছাড়ুন।

তাসিন আমার কপালে একটা চুমু দিয়ে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বললো
হুম দিলাম ছেড়ে তবে আমার মাথাটা যে ঘুড়িয়ে দিয়েছো তুমি তার কি হবে হুমম।
তাসিনের থেকে ছাড়া পেয়ে যেনো হাপ ছেড়ে বাচলাম আমি। কিছুটা দুরে এসে বললাম
কিছুই হবে না এবার চলুন তো পরে আমাকেই কথা শুনাবেন যে আমার জন্য দেরি হয়েছে।

আমি আর তাসিন দাড়িয়ে আছি অপেক্ষা করছি আপুদের আসার। কিছুক্ষণ পরেই বের হলো তমা আপু ইমরান ভাইয়া(তমা আপুর হাজবেন্ড)আর ভাইয়ার কোলে কিউট একটা ছোট্ট মেয়ে। আপু এসেই আমাকে জড়িয়ে ধরলো।
কেমন আছো আপু?
খুব ভালো আছি। তুুই কেমন আছিস?

আমিও ভালো আছি।
তারপর ভাইয়ার সাথে কথা বললাম অরিনকে নেওয়ার জন্য তাসিন হাত বাড়িয়ে বললো
এই যে আমার কিউট আম্মুটা এসো।

আমি তাসিনের পাশেই ছিলাম অরিন তাসিনের দিকে তাকিয়ে আবার আমার দিকে তাকালো তারপর ওর ছোট্ট হাত বাড়িয়ে দিলো আমার দিকে। ওর এমন কান্ড দেখে আপু আর ভাইয়া হেসে দিলো তার তাসিন মুখটা গোমড়া করে বললোআপু আমি যে ওর মামা হই সেটা ওকে বলোনি?

আমি অরিনকে কোলে নিয়ে ওর গালে একটা চুমু দিয়ে বললামও তো এখনো ছোট কে কি হয় এখনি বুঝবে নাকি। দেখেছো তো আপু তোমার ভাই হিংসে করছে অরিন আমার কোলে এসেছে বলে!
ইমরান ভাইয়া হেসে বললো

হিংসে তো আমার হচ্ছে গো শালিকা ভেবেছিলাম দেশে ফিরে শালিকার আদর যত্ন নিবো, তা আর হতে দিলো কই আমার শালাবাবু আগেই আমার একটি মাত্র শালিকাকে হাত করে নিলো।
তমা আপু বলে উঠলো

বাসায় তো চলো আগে এখানে আর কতক্ষণ দাড়িয়ে কথা বলবে।
আপু আর ভাইয়া আগেই গাড়িতে বসেছে অরিন এখনো আমার গলা জড়িয়ে আছে। তাসিন একটু কাছে এসে অরিনকে বললো
এই যে মিষ্টি আম্মুটা এটা কি ঠিক হলো বলো মামাকে রেখে মামিকে চিনে নিলে আগে।
অরিন আধো আধো স্বরে বলে উঠলোমা মা।

ওর মুখে মামা ডাক শুনে তাসিন তো খুব খুশি
দেখেছো মেঘা ও তোমার কোলে আছে ঠিকি কিন্তু ডাকলো আগে আমাকেই।

তমা আপুর রুমে অরিনের পাশে বসে ওর ছোট সিল্কি চুলে হাত বুলাচ্ছি আপু আর ভাইয়া নিচে। তাসিন রুমে আসলো
মেঘা তুমি এখানে আর আমি সারা বাড়িতে খুজে বেড়াচ্ছি।
কেনো কি দরকার?
দরকার হলেই খুজতে হবে নাকি এমনি খুজতে পারি না বুঝি!
হুম পারেন এখন কথা কম বলেন অরিন ঘুমাবে।

তাসিন আমার পাশে বসে অরিনকে দেখিয়ে বললো
মেঘা আমাদেরও এমন একটা কিউট বেবি আসবে তাইনা।
এই আপনার কি আর কোনো কাজ নেই? এখনি এসব কথা কেনো আসছে!
বারে প্রবলেম কি বললে! মেঘা তুমি কি লজ্জা পাচ্ছো? বাকা হেসে বললো।

একদমি না আপনি এখন যান তো ওকে ঘুম পাড়াতে হবে।
আচ্ছা যাচ্ছি শুধু আমার মিষ্টি আম্মুটার কথা ভেবে যাচ্ছি। অরিনের গালে হাত দিয়ে।
উনি চলে যাওয়ার পর নিজেই হাসতে লাগলাম পাগল একটা, আর এই পাগলটাকেই আমি অনেক বেশি ভালোবাসি।

আজ আমরা গ্রামে মামা বাড়িতে যাচ্ছি তমা আপুর কথাতেই যাওয়া হচ্ছে। এই ইটে ঘেরা শহরে আপুর একদমই ভালোলাগছিলো না শুধু আপুর কথা বললে ভুল হবে আমারো ভালো লাগে না। গ্রামের প্রাকৃতিক পরিবেশে একটু খানি নিশ্বাস নিতে পারলে কার না ভালোলাগে!

রিশা আপুর সাথেও আমার এখন খুব ভালো সম্পর্ক হয়ে উঠেছে। আমাদের যাওয়ার কথা শুনে রিশা আপুও যাবে সাথে রোহান ভাইয়া।

তিশাও যাবে ও প্রথমে রাজি হচ্ছিলো না, ওর কথা হলো তমা আপু আর ইমরান ভাইয়া, রিশা আপু আর রোহান ভাইয়া, তুই আর তাসিন ভাইয়া যাবি তোদের মাঝে আমি যাবো না। তোরা যা ঘুরে আয় আমি অন্য কখনো যাবো।
আমিও ছাড়ার পাত্রী নই তিশাকে তো আমি নিবোই। অবশেষে তাসিন তিশাকে রাজি করিয়েছে।
অনেক দুরের পথ তাই গাড়ি নেওয়া হয়নি আপু আর ভাইয়া তাসিনকে বলছে বাসে করেই যাবে। এমনিতেই দুরের পথ বাসে গেলে মন্দ হয় না।

একটু আগেই আমরা বাস থেকে নেমেছি। মামা গাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে তার জন্যই অপেক্ষা করছি সবাই। অরিনকে কোলে নিয়ে তিশা আর আমি দুষ্টুমিতে মেতে আছি। হঠাৎ আয়ান ভাইয়া(মামাতো ভাই) আমাদের সামনে এসে দাড়িয়ে তাসিনকে উদ্দেশ্য করে বললো
সরি তাসিন একটু লেট করে ফেলেছি।

(তাসিন আর আয়ান ভাইয়া সেম বয়সি তাই তুই করেই বলে)
আরে সরি বলার কি আছে আমারা একটু আগেই নেমেছি।
আয়ান ভাইয়া আপু ইমরান ভাইয়ার সাথে কথা বলে আমার মাথায়, টোকা দিয়ে বললো
কিরে মেঘ তুই তো দেখছি অনেক বড় হয়ে গেছিস। হেসে বললো।

উফ ভাইয়া তুমি এখনো সেই আগের মতো মেঘ বলবে আমাকে মেঘা বলতে কি কষ্ট হয় হুম?
তোকে মেঘ বলতেই ভালো লাগে আমার। আচ্ছা এদের তো চিনতে পারলাম না!তিশা রিশা আপু আর রোহান ভাইয়াকে দেখিয়ে বললো।

তারপর তাসিন পরিচয় করিয়ে দিলো ওদের সাথে।
আয়ান ভাইয়া তিশার দিকে একটু তাকিয়ে থেকে আমার কানে কানে বললো
মেঘ তোর ফ্রেন্ডটা দেখতে খারাপ না।
ভাইয়া একদম নজর দেবে না বলে দিচ্ছি।

নজর তো লেগেই গিয়েছে রে মেঘ। মনে মনে বললো।
তাসিন আয়ান ভাইয়াকে ধাক্কা দিয়ে বললো
আয়ান তোর আনমনে ভাবনা চিন্তা গুলো বাড়িতে গিয়ে করিস ভাই এবার তো চল।
তাসিন আমি কিছুই ভাবছি না ওকে!তিশার দিকে তাকিয়ে বললো।
তসিন তিশাকে বললো
শালিকা একটু সাবধানে থেকো কেমন গ্রামের হাওয়া কিন্তু একটু বেশি উড়ে যেও না যেনো।
বেচারি তিশা কিছু না বুঝেই হুম বলে অরিনকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লো আর আয়ান ভাইয়া অবাক হয়ে তাসিনের দিকে তাকিয়ে বললো।
কে শালিকা কি ভাবে কিছুই তো বুঝলাম না!

পর্ব ৯

রাতে ছাদে বসে সবাই মিলে আড্ডা দিচ্ছিলাম। চারিদিকে বাতাস বয়ে চলেছে আজ মনে হচ্ছে যেনো প্রাণ খুলে নিশ্বাস নিতে পারছি। পরিবেশটা খুব সুন্দর ছিলো বাড়িটা একটু পুরোনো হওয়ায় যেনো আরো ভালো লাগছে। আশেপাশের গাছগুলো একই তালে বাতাসে দোল খেয়ে যাচ্ছে আর মাথার ওপরে রয়েছে পূর্ণ চাঁদ, সব মিলিয়ে জাস্ট অসাধারণ লাগছে।

এবাড়িটা আমার নানাভাইয়ের করা নানাভাই নানু বেচে নেই শুধু এ বাড়িটাই তাদের স্মৃতি হিসেবে রয়েছে। আমার একটাই মামা। এখানে মামা মামি আর ওনাদের ২ছেলেমেয়ে আয়ান ভাইয়া আর অর্পাকে নিয়ে থাকেন।
আয়ান ভাইয়া মাস্টার্স কমপ্লিট করেছে তাসিনের সাথেই আর অর্পা নবম শ্রেণীতে পড়ে।

আমার পাশে তিশা বসে আছে অন্যপাশে অর্পা। তাসিন রোহান ভাইয়ার পাশে থেকে উঠে এসে আমার কানের কাছে মুখ এনে আস্তে করে বললো
এই মেঘাপাখি আজ সারাদিনে তোমাকে একটুও একা পাইনি এবার তো এই আড্ডা মহল ভেঙে আমাকে একটু সময় দাও।

তিশা জোরেই বলে উঠলো
ভাইয়া এটা কিন্তু ঠিক হচ্ছে না। ওর কানে কানে কি বলছেন জোরে বলুন আমরাও শুনি।
আয়ান ভাইয়া বলে উঠলো
তাসিন আমি না এখনো ভাবতে পারছি না মেঘ আর তোর ব্যাপারটা।
তোর আমাদেরকে নিয়ে আর ভাবতে হবে না নিজের টা ভাব।

সারাদিন জার্নি করে এসে সবাই কিছুটা ক্লান্ত আপু আর ইমরান ভাইয়া আগেই নিচে চলে গিয়েছি অর্পা ও গিয়েছে। গ্রামে রাত ৮টা বাজতেই যেনো সব শান্ত হয়ে যায় এখন ১০:৪৩বাজে মনে হচ্ছে যেনো মধ্য রাত এখন। আমরাও নিচে চলে আসলাম রিশা আপু তিশা আর আমি একি রুমে থাকবো। রুমে এসে রিশা আপু শুয়ে ঘুমিয়ে পড়লো হয়তো ক্লান্ত থাকায় ঘুমিয়ে পড়েছে। তিশা আর আমি শুয়ে শুয়ে গল্প করছি হঠাৎ আমার ফোন বেজে উঠলো তাসিন ফোন দিচ্ছে রিসিভ করে কিছু বলার আগে উনি বললেন
মেঘাপাখি খুব মিস করছি তোমায়।

আমরা অনেক দুরে আছি নাকি মিস করার কি আছে!

মা ঠিকি বলে তুমি সত্যি এখনো বাচ্চাই আছো। কেনো যে এই বাচ্চাটার প্রেমে পড়তে গেলাম।
ওওও আমি বাচ্চা তাইনা ঠিকআছে রাখুন কথা বলতে হবে না বাচ্চার সাথে।
আরে আমি তো মজাযাহ কেটে দিলো! এখন কি করি আমি?
আমি ফোন কাটতেই তিশা খিলখিল করে হেসে উঠলো।
ওই তুই হাসছিস কেনো? রেগে তাকিয়ে।

হাসবো না! ভাইয়া তোকে বাচ্চা বলে ডাকলো। বলেই আবারো হাসতে লাগলো।
তিশা হাসবি না বলে দিচ্ছি না হলে তোকে রুম থেকে বের করে দিবো।

না না আর হাসবো না আমাকে বের করিস না মেঘা এমনিতে কেমন যেনো গা ছমছমে একটা পরিবেশ মনে হচ্ছে।
হুমম ঘুমিয়ে পড় এখন তা হলে জানিস তো গ্রামে পুরোনো সব বাড়িতে
ব্যাস কাজ হয়ে গেলো তিশা ঝরের গতিতে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে চোখটা বুঝে নিলো, আমারি তো এখন হাসি পাচ্ছে পুরোই বাচ্চাদের মতো গুটিশুটি মেরে শুয়ে পড়লো তিশা।

তাসিন বার বার ফোন দিয়েই চলেছে নিজে তো ঘুমাবেই না আমাকেও ঘুমাতে দিবে না। বিরক্তি নিয়ে ফোনটা ধরলাম
কি হয়েছে কি আমাকে ঘুমাতে দিবেন না আপনি?

আমার ঘুম কেড়ে নিয়ে নিজে ঘুমাবে এটা তো হতে পারে না।
আমি আবার কি করলাম!

অনেক কিছু করেছো। এখন জলদি রুম থেকে বেড়িয়ে এসো তো।
কেনো এতো রাতে বের হবো কেনো?

এসোই না তারপর বলছি।
ঠিকআছে আসছি।
রুম থেকে বেড়িয়ে একটু এগোতেই কেউ হুট করে আমাকে কোলে তুলে নিলো। আমি ভয় পেয়ে চোখ জোড়া খিঁচে বন্ধ করে নিলাম।
মেঘা আমি ভয় পাওয়ার কিছু নেই তাকাও।

আমি আস্তে আস্তে চোখ খুলে তাসিনের হাসি মুখটা দেখতে পেলাম। উনার বুকে কয়েকটা কিল মেরে বললাম
এভাবে কেউ কোলে নেয় কতোটা ভয় পেয়েছিলাম জানেন! এমনিতে নতুন জায়গা।
সরি মেঘাপাখি আমি বুঝতে পারিনি তুমি ভয় পেয়ে যাবে।
হুম হয়েছে নামান আমাকে।
উহু এখন নামাচ্ছি না, বলেই সামনে হাটতে লাগলো।
তাসিনে শার্ট খামচে ধরে আছি, পরে যাবো তো।

আমার গলাটা ধরো তা না হলে তুমি পড়বে না আমি ফেলে দিবো।
আমি দুহাতে তাসিনের গলা জড়িয়ে ধরলাম। তাসিন আমাকে ছাদে এনে নামালো

এখানে কেনো আনলেন?
তোমায় সাথে নিয়ে গায়ে চাঁদের আলো মাখবো তাই। দেখো কি সুন্দর চাঁদ আকাশে, অবশ্য আমার সামনে থাকা চাঁদটা তার থেকে বেশি সুন্দরী।

এই আমি আপনার সাথে কথা কেনো বলছি তখন আমাকে বাচ্চা বলেছেন আমি এখানে থাকবো না গেলাম।
আমার হাত ধরে একটানে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নিলেন
কোথাও যাওয়া চলবে না এখন আমার কাছেই থাকবে তুমি এমনিতে আজ সারাদিনে তোমাকে কাছে পাইনি।
উনার প্রতিটি গরম নিশ্বাস এসে পড়ছিলো আমার মুখে বার বার কেঁপে কেঁপে উঠছিলাম আমি। উনি আমার কোমড়টা জড়িয়ে আরো কাছে টেনে নিলো।

এবার যেনো আমার দম বন্ধ আসার উপক্রম হয়েছে নিশ্বাসটাও ভারি হয়ে আসছিলো। নিজেকে ছাড়ানোর জন্য ছটফট করছি কিন্তু উনার শক্তির কাছে পেরে উঠছি না। উনি আমার ঘারে মুখ গুজে নেশা ধরা কন্ঠে বলতে লাগলো
মেঘাপাখি এতো ছটফট করছো কেনো চুপচাপ থাকো না।

বলেই আমার ঘারে আলতো করে নিজের ঠোঁঠ ছোয়ালো। আমার কি হলো জানিনা আমি দুহাতে আকড়ে ধরলাম তাসিনকে। উনিও পরম আবেশে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন। তারপর আমাকে ছেড়ে উনার দুহাতে আমার মুখটা ধরলেন। আমি চোখ বন্ধ করে নিলাম খুব লজ্জা লাগছিলো আজ তাসিনের দিকে তাকাতে।
এই মেঘা চোখ খোলো তাকাও।

আমি চোখ খুলে তাকিয়ে আবারো নামিয়ে নিলাম। উনি মুচকি হেসে আমার দুগালে চুমু খেলো। তাসিনের প্রতিটি ছোয়াতে আমি কেঁপে উঠছি। তাসিন নেশাময় কন্ঠে বলতে লাগলো
কি আছে গো তোমার মাঝে নিজেকে যে হারিয়ে ফেলছি আমি। ইচ্ছে করছে সারাটি জীবন দুজন এভাবেই থাকি কেনো এতো পাগল করলে মেঘাপাখি!

তাসিনের কথার কোনো উত্তর দিলাম না আমি শুধু উনার চোখের দিকে তাকালাম। অন্য রকম এক নেশা দেখতে পেলাম উনার চোখে।
তাসিন আস্তে আস্তে আমার ঠোঁটের দিকে অগ্রসর হতে লাগলো তারপর নিজের ঠোঁট দ্বারা আকড়ে ধরলো আমার ঠোঁট জোড়া ডিপলি কিস করতে লাগলো ঠোঁটে।

প্রায় ৫ মিনিট পর ছেড়ে দিলো আমি ঘন ঘন নিশ্বাস ফেলতে লাগলাম উফ আর একটু হলে দমটাই হয়তো আটকে যেতো। আমি নিজেকে উনার থেকে ছাড়িয়ে কিছুটা দুরে এসে হাপাতে লাগলাম।
উনি এসে আমার পাশে দাড়িয়ে আমার হাত ধরে বললেন
সরি মেঘা, আমি এমনটা করতে চাইনি কিন্তু কি যে হয়ে গেছিলো আমার সামলাতে পারিনি নিজেকে। এই মেঘা তুমি কি রাগ করেছো?

আমি উনার দিকে ঘুরে চোখের দিকে তাকিয়ে বললাম।
সরি কেনো বলছেন আমি রাগ করিনি তো।
সত্যিই বলছো? বিশ্বাস করো মেঘা আমি
ওনাকে থামিয়ে বললাম
আমি সত্যিই রাগ করিনি।

ছাদের কার্নিশে হেলান দিয়ে বসে আছি তাসিন আমার কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে আমার এক হাত উনার বুকের সাথে মিশিয়ে রেখেছে অন্য হাতে উনার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।
মেঘা একটা কথা বলবো?
হুমম বলুন।

আমি যদি কখনো হারিয়ে যাই আমাকে খুজবে তুমি অপেক্ষা করবে আমার জন্য?
তাসিনের বলা কথা আমার বুকের ভেতরটা ধপ করে উঠলো
আপনি এসব কি বলছেন কোথাও যাবেন না আপনি আমাকে ছেড়ে।
যাবো না তো তারপরেও বলোনা কি করবে তুমি?

জানিনা কি করবো তবে এটুকু বলতে পারি আপনাকে ছাড়া আমার জীবন টা অন্ধকার হয়ে যাবে। আমি কোনো ভাবেই হারাতে চাই না আপনাকে। ধরা গলায় বললাম।
তাসিন দ্রুত উঠে আমার গালে হাত দিয়ে
এই পাগলি একদম কাঁদবে না আমি তো এমনি বলেছি।

আমার চোখ থেকে কয়েকফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো। তাসিনের বুকে মাথা রেখে বললাম
আমাকে একা করে কোথাও যাবেন না আপনি কোথাও না। আমি যে খুব ভালোবেসে ফেলেছি আপনাকে।
যাবো না পাগলিটা কোথাও যাবো না আমিও যে ভীশন ভালোবাসি তোমাকে।
দেখি চোখ মুছো তো এমন একটা সময়ে কেউ কাঁদে! নাকি আরো আদর করতে হবে হুমম?
ধেত কিসের মধ্য কি বলে আদর কে চেয়েছে?

ভবিষ্যৎ এ আমাদের যে কিউট প্রিন্স বা প্রিন্সেস আসবে তাদের আম্মু চেয়েছে। হেসে বললো।
আপনি না সত্যিই খুব দুষ্টু আগ বাড়িয়ে বলেন সব সময়।
উনি আমার কথায় জোরে হেসে উঠলো আমাকে একহাতে জড়িয়ে নিয়ে বললো
আমার হবু বউ কেই তো বলি অন্য কাউকে তো বলছি না।

পরের দিন বিকেলে সবাই ঘুরতে বেড়িয়েছি। চারিদিকে সবুজের সমারোহ, নানা রকম পাখির ডাক ভেসে আসছে কানে। বিকেলের গোধুলি আলোতে ঝলমল করে উঠছে গাছের পাতাগুলো। তমা আপু ইমরান ভাইয়া কিছুটা সামনে আমাদের থেকে। রিশা আপু আগে কখনো গ্রামের এমন পরিবেশ দেখেনি এমন মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখে রিশা আপু আনন্দে আত্তহারা। এতোটাই লাফালাফি করেছে যে আকাবাকা রাস্তায় আনমনে হাটতে গিয়ে পরে গিয়ে পায়ে খুব ব্যাথা পেয়েছে। পরে রোহান ভাইয়া রিশা আপুকে নিয়ে একজায়গায় বসে আমাদের বললো ঘুরে আসতে।

আমি তিশা একসাথে হাটছি তিশা তো ওর ফোনের ম্যামরি টা ফুল করে ফেলেছে ছবি তুলতে তুলতে। তাসিন আয়ান ভাইয়া আমাদের পেছনেই হাটছে। তিশা বললো
মেঘা ভাইয়া কি বলবে বলতো উনাকে রেখে তুই আমার সাথে হাটছিস।
কিছুই বলবে না আর তোকে একা রেখে আমি উনার সাথে হাটবো নাকি।
আয়ান ভাইয়া তিশার পাশে এসে বললো
এই যে ম্যাম ওদেরকে একটু আলাদা সময় কাটাতে দিন।

আমি কি করবো মেঘাই তো শুনছে না।
একটা কাজ করি আপনি আমার সাথে চলুন।

আপনার সাথে যাবো কেনো আমি একা চলতে পারিনা নাকি।
হুম অবশ্যই পারেন আমি তো বলিনি একা চলতে পারবেন না।

তাসিন আয়ান ভাইয়াকে মাথায় চাটি মেরে বললো
আমার আর মেঘার তো ভালোই লাগছে তিশা আর তোর সাথে থাকতে। তাহলে তোর এতো প্রবলেম কিসের শুনি?
শোন তাসিন আমার কোনো প্রবলেম নেই আমি তো জাস্ট তোদের দিকটা ভেবেই বলেছি।
আমি হেসে বললামআচ্ছা ভাইয়া আমার না একটু সন্দেহ হচ্ছে।
কিসের সন্দেহ?

এই যে কাল আসার পর থেকেই তোমার চোখটা ঘুরে ফিরে আমার বেস্টুর দিকেই যাচ্ছে। তুমি কি আমাদের প্রাইভেসি দিতে চাচ্ছো নাকি নিজে নিতে চাচ্ছো কোনটা হুমম?
তিশা আমার দিকে একটু রেগে তাকালো। তাসিন হেসে বলে উঠলো
মেঘা ঠিক বলেছো তুমি। কি ব্যাপার আয়ান এমন কিছু নয় তো?

এমন কিছু হলেও ক্ষতি নেই রে বরং ভালোই হতো। আড় চোখে তিশার দিকে তাকিয়ে।
তিশা এবার রেগে সামনে হাটতে লাগলো। আমি আর তাসিন আয়ান ভাইয়ার কথায় অবাক হয়েছি ঠিকি তবে তিশা এভাবে যাওয়া দেখে দুজনেই হেসে উঠলাম।

আর আয়ান ভাইয়া সেতো তিশার দিকেই তাকিয়ে আনমনে বলতে লাগলোএকে তো রাগলে আরো কিউট লাগে।

পর্ব-১০

রাতের খাবার খেয়ে রুমে এসে আমি রিশা আপু আজকের তোলা ছবিগুলো দেখছিলাম তখনি তিশা হনহন করে রুমে ঢুকলো বিড়বিড় করতে করতে ধপ করে আমার পাশে বসলো ওকে দেখে মনে হচ্ছে কোনো বিষয় নিয়ে রেগে আছে।
তিশা আমার দিকে ঘুরে বলতে লাগলো
এই মেঘা আমার ফেসটা কি পিচ্চি বাবুদের মতো দেখতে? আমার চোখ দুটো কি গুলির মতো?
না একদম না! কে বলেছে তোকে?

একটা বাদর বলেছে। নিজেকে কি ভাবে কি হ্যা হিরো? হুহ হনুমান একটা। আবার আমাকে কি বলে জানিস বলে এই যে পিচ্চি তুমি যে এখনো সিংগেল আছো সে জায়গাটা কি আমার জন্য রেখে দিয়েছো! আমি সিংগেল থাকলে ওই হনুমানটার কি শুনি? বলে কিনা তার জন্য জায়গা রেখেছি।

তিশা যে ব্যাপক রেগে আছে বেশ বুঝতে পারছি ও রেগে গেলেই এমন ননস্টপ কথা বলতে থাকে। কিন্তু রাগলো কার ওপর হনুমান বাদর কাকে বলছে! আয়ান ভাইয়া নয়তো? তিশাকে বললাম
এতো রেগে আছিস কেনো কে এসব বলেছে তোকে?

কে আর বলবে তোর ওই হনুমান ভাই আয়ান না কি নাম সে বলেছে। আমার এতো সুন্দর চোখ আর ওই বাদরটা বলে গুলির মতো। বলে দিস তোর ওই ভাইকে এই চোখ দেখে কতো ছেলে ক্রাশ খায়। ইচ্ছে তো করছে হনুমানটাকে পচাঁ পানিতে চুবাতে।

ওর এমন কথা গুলো শুনে রিশা আপু তো হা করে বসে আছে আমার খুব হাসি পাচ্ছিলো ভাইয়া পিচ্চি বলেছে তাতে এতো রাগ কিন্তু এখন কি করছে পুরোই তো পিচ্চিদের মতো মুখ ফুলিয়ে রেখেছে। রিশা আপু আমার দিকে তাকালো আমিও তাকালাম তারপর দুজনেই একসাথে ফিক করে হেসে উঠলাম। আমাদের হাসতে দেখে তিশা রাগি লুকে আমাদের দিকে তাকিয়ে
মেঘা হাসছিস কেনো তোরা এভাবে?

হাসবো না এই সামান্য কিছু কথাতে কেউ এতো রাগ করে! ভাইয়া তো মজা করেছে এটাও বুঝিস না গাধা।
ওওও এখন আমি গাধা হয়ে গেলাম তাইনা? আর তোর ভাইয়া তো খুব ভালো! তুই আমার বেস্টি হয়ে আমাকে সাপোর্ট না করে নিজের ভাইকে করছিস।

রিশা আপু হাসি থামিয়ে বললো
আরে তিশা রাগ করে না বোনটি তুমি যদি এসব কথায় এমন ভাবে রেগে যাও তাহলে তো আয়ান ভাইয়া আরো বলবে।

তিশা আর কিছু না বলে বেড়িয়ে গেলো রুম থেকে। রিশা আপু বললো
মেঘা ওর সাথে যাও কোথায় গেলো দেখো নতুন জায়গা তারপর রাত ভয় পেতে পারে।
আমি রিশা আপুর কথায়। বাইরে এসে তিশাকে কোথাও দেখছি না। তাসিন পেছন থেকে বললো
মেঘা কাউকে খুজছো?

হ্যা। তিশা কোন দিকে গেছে দেখেছেন?

হুম দেখলাম আপুর রুমের দিকে গেলো। দেখে মনে হলো রেগে আছে কিছু বলেছো নাকি?
তাসিনকে তিশা আর আায়ান ভাইয়ার কথা গুলো বললাম সব শুনে তাসিন ও হাসছে।
মেঘা আমার কি মনে হয় জানো আয়ান তিশাকে পছন্দ করে।

আমারো সেটাই মনে হয় আসার পর থেকেই তো আয়ান ভাইয়া তিশাকেই ফলো করে সব সময়।
যদি তাই হয় ভালোই হবে মানাবে ওদের।

হুহ আর মানা। তিশা তো আজ আয়ান ভাইয়ার ওপর চরম ক্ষেপেছে ওর জেদ অনেক দেখেন কাল সকালেই বলে না বসে এখানে আর থাকবে না।

আজকে আমাদের প্ল্যান নদীর পাড়ে ঘুরতে যাবো আসলে নদী নয় একটা নালা বললেই চলে এটা পদ্মা নদীরি একটা শাখা। তমা আপু আজ আসেনি, ইমরান ভাইয়া সহ আমরা সবাই এসেছি। তিশা সবার ওপর রেগে থাকলেও আমার ওপর রেগে থাকতে পারে না এখন আমার সাথে ভালো ভাবেই কথা বলছে। আয়ান ভাইয়া তো এখনো ওকে এটা সেটা বলে খুচিয়ে চলেছে আর তিশা সবার সামনে কিছু বলতে না পেরে রাগে ফুসছে।
মেঘা তোর ভাইকে থামতে বলবি আমি কিন্তু ফিরে যাবো এমন করলে।

আচ্ছা রাগ করিস না আমি দেখছি।

আয়ান ভাইয়ার কাছে গিয়ে বললাম
ভাইয়া কি শুরু করেছো বলোতো তিশা কিন্তু রেগে যাচ্ছে।
ওকে রাগাতে আমার বেশ লাগছে। রাগি চোখে যখন তাকায় উফফ দারুন লাগে দেখতে।
কি ব্যাপার ভাইয়া তুমি ওর প্রেমে পড়ে যাও নি তো?
তা আর বলতে সেই প্রথম দেখাতেই প্রেমে পড়ে গিয়েছি। আনমনেই বললো।
আমি তো অবাক হয়ে জোরেই বলে উঠলাম
ভাইয়া সত্যি বলছো!

এই রে কি বলে ফেললাম এখন তো মেঘ সবাইকে বলে দিবে। মনে মনে বললো।
কি হলো ভাইয়া!
আরে মেঘ আমি তো মজা করে বলেছি তাছাড়া কিছু না।

তাসিন আয়ান ভাইয়ার কাধের ওপরে হাত দিয়ে হেসে বললো
বুঝেছো মেঘা আমি কিন্তু সত্যিই আয়ানের চোখে কারো জন্য অন্য রকম ছায়া দেখেছি। আর সেটা হলো তিশা আয়ান আমাদের কাছে লুকাস না বল সত্যিটা?

আয়ান ভাইয়া কিছুটা লজ্জা পেয়ে মাথা চুলকে বললো
আসলে তাসিন তোরা ঠিকি ধরেছিস আমি
ভাইয়া তুমি কি মেয়ে যে লজ্জা পাচ্ছো থাক আর বলতে হবে না উত্তরটা পেয়ে গেছি।

আমি আর তাসিন আয়ান ভাইয়ার সাথেই কথা বলছিলাম হঠাৎ করেই চারিদিকে দমকা হাওয়া বইতে লাগলো আকাশে কালো মেঘ জমেছে। আয়ান ভাইয়া তাসিনকে বললো
তাসিন এখন বাড়িতে ফিরতে হবে যেকেনো মুহুর্তে ঝড় হতে পারে। রোহান আর রিশাকে ফোন দিয়ে এখানে আসতে বল। ইমরান ভাইয়াও দৌড়ে আসলো।

মেঘা, তিশা তোমাদের এখানে আসেনি?

তিশা তো আপনার সাথেই ছিলো ভাইয়া এখানে আসেনি তো!
তাহলে কোথায় গেলো! আমার সাথেই ছিলো আমি তোমার আপুর সাথে ফোনে কথা বলছিলাম তারপর পেছনে ঘুরে ওকে না পেয়ে ভাবলাম তোমাদের সাথে আছে। আচ্ছা রোহানদের সাথে নেই তো?
তখনি রোহান ভাইয়া রিশা আপু আসলো তিশা ওদের সাথেও নেই।
আয়ান ভাইয়া উত্তেজিত হয়ে বললো।

তিশা তো ওদের সাথেও নেই কোথায় গেলো?

আমার এবার খুব ভয় লাগছে গেলো কোথায় তিশা? এমনিতে নতুন জায়গা অন্ধকার হয়ে আসছে যেকোনো সময় ঝড় শুরু হবে। আমরা সবাই মিলে ওকে খুজে চলেছি পাচ্ছি না ডাকছি তার ও সাড়া নেই। আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছিলো তিশাকে না পেয়ে।

তাসিন আমাকে বললো
মেঘা দুশ্চিন্তা করো না তিশা এদিক ওদিক কোথাও আছে আমরা দেখছি।
তিশার কিছু হয়নি তো? কাঁদো কাঁদো গলায়।

ধুর কি সব ভাবছো ও ঠিক আছে। তুমি রিশা আর ইমরান ভাইয়ার সাথে ওই বড় গাছটার নিচে গিয়ে দাড়াও আমরা দেখছি।

আয়ান ভাইয়া পাগলের মতো খুজে চলেছে তিশাকে ভাইয়ার চোখ দুটো লাল টকটকে হয়ে গিয়েছে মুখে স্পষ্ট ভয়ের ছাপ। তাসিন আয়ান ভাইয়াকে বললো
আয়ান তিশা পাশের জঙ্গলের দিকে যায়নি তো?

আয়ান ভাইয়া একটু কেপে উঠে বললো
হতেই পারে তাসিন আমি যাচ্ছি জঙ্গলের দিকে।
আয়ান ভাইয়া তাসিনকে কিছু বলতে না দিয়ে ছুটে গেলো জঙ্গলের দিকে।
আরে আয়ান কি করছিস একা যাস না দাড়া আমিও যাবো। চেঁচিয়ে বললো তাসিন।
আয়ান ভাইয়া না দাড়িয়ে ঢুকে গেলো জঙ্গলে।

তাসিন ফিরে এসে ইমরান ভাইয়াকে বললো
ভাইয়া আপনি মেঘা আর রিশাকে নিয়ে বাড়িতে চলে যান আমরা তিশাকে খুজে নিয়ে আসছি।
না আমি যাবো না তিশাকে ছাড়া আমি কোথাও যাবো না।

পাগলামো করো না মেঘা বাতাস বাড়ছে তোমরা যাও আমরা যেভাবেই হোক তিশাকে নিয়ে ফিরবো।
তাসিন জোর কোরেই পাঠিয়ে দিলো আমাদের। আমি তো ভয়ে কেঁদেই চলেছি।

ওদিকে তিশা জঙ্গলের মধ্য এদিক ওদিকে ছুটে বাইরে বেরোনোর পথ খুজছে কিন্তু এতো বাতাস আর অন্ধকার হয়ে যাওয়ার কারনে পথ খুজে পাচ্ছে না। এতোটাই ভয় পেয়েছে যে চিৎকার করে কাউকে ডাকার শক্তিটাও পাচ্ছে না। বাতাস বেড়েই চলেছে সাথে বৃষ্টি হচ্ছে গাছপালা গুলো একটার ওপর আর একটা এসে আছড়ে পড়ছে। তিশা কোনো পথ না পেয়ে কাঁদতে কাঁদতেই একটা বড় গাছের নিচে গুটিশুটি মেরে বসে পড়লো।

তাসিন আর রোহান ভাইয়া একসাথে তিশাকে খুজছে, আয়ান ভাইয়া কোথায় আছে ওরা সেটাও জানে না প্রবল বেগে ঝড়ো হাওয়া বইছে সাথে বৃষ্টি। রোহান ভাইয়া তাসিনকে বললো
তাসিন এখন কি করবো তিশাকে তো কোথাও পাচ্ছি না সন্ধে পাড় হতে চললো।

আমিও বুঝতে পারছি না এটুকু সময়ে মেয়েটা গেলো কোথায়! বাতাসের কারনে তো এগোতেও পারছি না তেমন কিছু দেখাও যাচ্ছে না। তোর ফোনের ফ্লাস লাইট অন কর আমার টার চার্জ শেষ।
আয়ান ভাইয়া পাগলের মতো খুজছে তিশাকে হঠাৎ পায়ে কিছু একটা বাধলো ফোনের আলোটা নিচে ধরে দেখলো তিশার গায়ে যে ওড়না ছিলো ওটা পড়ে আছে। মুহুর্তেই চমকে উঠলো উনি। ওড়নাটা হাতে নিয়ে
এটা তো তিশার ওড়না!এখানে পড়ে আছে কেনো ওর বড় কোনো বিপদ হয়নি তো? নাহ এ আমি কি ভাবছি ওর কিছু হতে পারে না।

আয়ান ভাইয়া সামনে এগোতে লাগলো কিছুটা দুরে ফোনের ফ্লাসের আলো পড়তেই সাদা কিছু চকচক করে উঠলো। আয়ান ভাইয়া দ্রুত সেদিকেই এগিয়ে গেলো। সেখানে আসতেই আয়ান ভাইয়া স্বস্থির নিশ্বাস ফেললো। আর একটু এগিয়ে বড় গাছটার নিচে গিয়ে হাটু ভেঙে বসে পড়লো আয়ান, তিশা হাটুতে মুখ গুজে ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে। গায়ে থাকা সাদা রং এর টপসটা ভিজে লেপটে আছে শরীরে।

আয়ান নিজের হাতে থাকা ওড়নাটা তিশার গায়ে মেলে দিয়ে কাপা কাপা গলায় ডাকলো
ত তিশাা

তিশা পরিচিত কারো কন্ঠ শুনে নিজের মাথাটা ওপরে তুললো। ফোনের আলোটা আয়ানের মুখে পড়েছে তিশা সামনে আয়ানকে দেখে হু হু করে কেঁদে উঠলো।
আয়ান কিছুটা রেগেই বললো
এই মেয়ে তোমার কোনো কমন সেন্স নেই? ঝড়ের মধ্য জঙ্গলে কি করতে এসেছো তুমি? তোমার কোনো ধারনা আছে কতোটা টেনশন হচ্ছিলো আমার। শুধু আমার কেনো বাকী সবাই কতোটা দুশ্চিন্তায় আছে জানো তুমি? কি হলো কথা বলছো না কেনো?

আয়ান ভাইয়ার এমন ধমকানিতে তিশা কেঁপে উঠলো।
আয়ান ভাইয়া মনে মনে বলছে
ধেত আয়ান কি করছিস তুই মেয়েটা এমনিতে ভয় পেয়ে আছে।

আয়ান দুহাতে তিশার গালে হাত রেখে নরম স্বরে বললোসরি তিশা আমার মাথা ঠিক ছিলো না। জানো কতোটা ভয় পেয়ে গেছিলাম তোমাকে না পেয়ে। তিশা কিছুই বলছে না এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আয়ানের দিকে।
হঠাৎই বিদ্যুৎ চমকে উঠলো তিশা ভয় পেয়ে জাপটে জড়িয়ে ধরলো আয়ান ভাইয়াকে।

তিশা এভাবে জড়িয়ে ধরায় আয়ান ভাইয়ার বুঝতে কয়েক সেকেন্ড সময় লাগলো ঠিক কি ঘটলো!বুঝতে পেরে মুচকি হেসে আয়ান ভাইয়াও তিশাকে আলতো করে জড়িয়ে ধরলো।
প্রিয় মানুষটিকে যদি এমন অযুহাতেও একটু খানি কাছে পাওয়া যায় ক্ষতি কি তাতে!

তিশা আয়ান ভাইয়াকে এভাবে জড়িয়ে ধরে লজ্জিত বোধ করছে উনাকে ছেড়ে মাথা নিচু করে আস্তে করে বললো
সরি আসলে
সরি কেনো বলছো আমি কিছু মনে করি নি।
তিশা একদম ভিজে গিয়েছে আয়ান ভাইয়া নিজের গায়ে থাকা শার্টটি খুলে তিশার গায়ে জড়িয়ে দিলো। তিশা অবাক চোখে তাকিয়ে বললো
ভাইয়া আমার লাগবে না আপনি গায়ে পড়ে নিন শার্টটা।
চুপ কোনো কথা নয় দেখি আমার হাত ধরো বের হতে হবে এখান থেকে।

আয়ান ভাইয়ার হাত ধরে তিশা উঠে দাড়ালো এখনো বৃষ্টি পড়ছে বাতাস অনেকটাই কমে এসেছে। আয়ান ভাইয়া নিজের ফোন হাতে নিয়ে দেখলো চার্জ আছে ৩%। চিন্তায় পড়ে গেলো অন্ধকারে কিভাবে বের হবে এখান থেকে। একটু ভেবে তাসিনকে কল দিলো অফ পেয়ে রোহান ভাইয়াকে কল দিতে গিয়ে দিলো না। ম্যাসেজ এ লিখে দিলো তিশাকে পেয়েছে ওরা যেনো চিন্তা না করে।

বৃষ্টি কমে গিয়েছে ফোনটা অফ হয়ে গিয়েছে এই অন্ধকার জঙ্গল থেকে এখন কোনো ভাবেই বের হওয়া সম্ভব নয়। তিশার দিকে তাকিয়ে দেখলো ও কাঁপছে চুপচাপ দাড়িয়ে আছে।

তিশা একটা কাজ করো তোমার গায়ের ওড়নাটা খুলে চিপে মাথাটা মুছে নাও আর শার্টটাও চিপে আবার গায়ে জড়িয়ে নাও।

তিশা তাই করলো তারপর কাপা কাপা গলায় আস্তে করে বললো।
ভ ভাইয়া ধন্যবাদ।

কেনো? ভ্রু কুঁচকে বললো।
এ একা একা খুব ভয় লাগছিলো আ আমার।
এখন ভয় লাগছে না?
উহু।
আয়ান ভাইয়া গাছে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে ছিলো তিশার হাত ধরে রেখেছিলো। খেয়াল করলো তিশার হাত খুব গরম উনি তিশার কপালে হাত দিয়ে দেখলো কপালটাও অনেক বেশি গরম।

একি তিশার তো জ্বর এসে গেছে কি করি এখন? এখন তো বের হওয়ার ও উপায় নেই সকাল না হওয়া অবদি। ওর হাত ধরেই বুঝতে পারছি ও কাপছে এভাবে থাকলে তো জ্বরটা আরো বেড়ে যাবে।

এসব ভাবতে ভাবতে মনে হলো তিশা মাটিতে পড়ে যাচ্ছে। আয়ান ভাইয়া আর কিছু না ভেবে তিশাকে কাছে এনে শক্ত করে জড়িয়ে নিলো নিজের সাথে। আয়ান ভাইয়া খালি গায়ে থাকায় তিশা উষ্ন ছোয়া পেয়ে উনার বুকের সাথে আরো মিশে গেলো।

লেখা – মেঘা আফরোজ

চলবে

(পাঠক আপনাদের ভালোলাগার উদ্দেশ্যেই প্রতিনিয়ত আমাদের লেখা। আপনাদের একটি শেয়ার আমাদের লেখার স্পৃহা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আমাদের এই পর্বের “শুধু তোমায় ঘিরে – ভালোবাসার রোমান্টিক কথা” গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম। ধন্যবাদ।)

আরো পড়ূন – শুধু তোমায় ঘিরে (শেষ খণ্ড) – ভালোবাসার রোমান্টিক কথা

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *