আমার মায়াবতী (১ম খণ্ড) – লোভনীয় প্রেমের গল্প

আমার মায়াবতী – লোভনীয় প্রেমের গল্প: এতো সুন্দর করে হাসে, এককথায় কারোর হার্ট অ্যাটাক করতে হলে ইশানের হাসিই যথেষ্ট। মানুষটার হাসিতে এককথায় মারা যাবে তবে সে কোনো কষ্ট নিয়ে নয় বরং খুশি মনে।


পর্ব ১

~ আরু, এখানে মাত্র অল্প একটু খাবার। বেশি কথা না বাড়িয়ে জলদি খেয়ে উঠো বলছি।

মা, নাইমা বেগমের ভারী গম্ভীর কন্ঠে আরু নিচের দিকে তাকিয়ে ভাতের মধ্যে সমানে আঙ্গুল চালাচ্ছে।

যা দেখে মা আবারো ধমকে বলে উঠলেন,
~ কি হলো? এভাবে বসে আছো কেন? খেতে বলেছি না তোমাকে? সব সময় শুধু তোমার এক অজুহাতে খাবার না খাওয়ার ধান্দা, তুমি এখন বড় হয়েছো আরু!

যথেষ্ট বুঝতে শিখেছো! কোনটা ভালো আর কোনটা মন্দ তার তফাত বুঝো তুমি। এভাবে দিন দিন তোমার খাবারের প্রতি অনিহা আমি কিন্তু আর একদম সহ্য করবো না বলে দিলাম। খাও বলছি তাড়াতাড়ি, আর নয়তো,

মামা(আরিফ চৌধুরী)~ আহ্ বোন! কি হচ্ছে টা কি হ্যাঁ, মেয়েটাকে এভাবে বকছিস কেন? ওর হয়তো খাবারটা পছন্দ হয়নি, তাই খেতে পারছে না, (আরুর মাথায় হাত বুলিয়ে) আরু মা কি হয়েছে রে?

খাবার টা কি পছন্দ হয়নি বুঝি? কি খাবি তুই একবার আমায় বল মা! আমি এই এক্ষুনি অর্ডার করে আনিয়ে দিচ্ছি, বুঝলি তো মা ঐ যে একটা অনলাইনে ফুড পান্ডার এ্যাপ আছে না?

ওখানে কত ভালো ভালো খাবার যে পাওয়া যায়! তুই একবার খেলেই বুঝতে পারবি, আহ্ কি স্বাদ,

মামি (আঁখি বেগম): আহ্ কি শুরু করলে তুমি একটু চুপ থাকো না, এই আরু কি হয়েছে আমার পরীটার?

খাবার কি পছন্দ হয়নি? আমি কি আবার একটু মাংস রান্না করে নিয়ে আসবো,

আরু মায়ের দিকে একবার আড় চোখে তাকিয়ে ঢোক গিললো। মা এখনো তাকিয়ে আছে দেখে চোখ সরিয়ে নিয়ে বলল,

~ ন..না মামি! তুমি বসো তো এখানে। কোত্থাও যেতে হবে না তোমায়! আর মামা তোমাকেও ফুড পান্ডা থেকে অর্ডার করতে হবে না, (খাবারের দিকে একবার তাকিয়ে শুকনো হাসি দিয়ে)আমি খেয়ে নিচ্ছি, খাবার তো খুব ভালো হয়েছে খেতে।

আমি খাচ্ছি তোমারাও খাওনা, খাচ্ছি আমি।
মামিঃ (চিন্তিত কন্ঠে) সত্যি ভালো হয়েছে তো?
আরুঃ ভীষণ ভালো হয়েছে।

মাঃ (কড়া গলায়) তাড়াতাড়ি খেয়ে নাও। দশ মিনিটের মধ্যে শেষ করবে।

আরু অসহায় দৃষ্টিতে একবার মায়ের দিকে তো একবার খাবারের দিকে তাকিয়ে চাপা কন্ঠে বলল,

~ মা,
~ তাড়াতাড়ি খেতে বলেছি।
আরু আর কথা না বাড়িয়ে তাড়াতাড়ি খেতে শুরু করলো।

আরুশি মাহমুদ, ছোট করে হোক বা আদর করে সবাই তাকে আরু বলেই ডাকে। খুবই চঞ্চল এবং ছটফটা স্বভাবের মেয়ে।

সে যেখানেই থাকুক না কেন সবাইকে একদম মাতিয়ে রাখে। এককথায় বলতে গেলে যেমন দুষ্টু তেমন মিষ্টি। মা~ বাবার একমাত্র সন্তান আরু।

বছর দুই হলো বাবা ক্যান্সারে মারা গেছেন। সেই থেকেই আরু আর তার মা মামার বাড়িতে থাকে। থাকে বললে ভুল হবে একরকম জোর করেই রেখেছেন আরিফ সাহেব।

নাইমা তার একমাত্র ছোট বোন, আরুর বাবা মারা যাওয়ার পরে ওদের জীবনে যেন কাল নেমে এসেছিলো। আজ যে তারা আবার ভালো আছে সবই তার ভাই আরিফ চৌধুরীর জন্য।
আরুর দুধে~ আলতা গায়ের রং।

একদম ধবধবে সাদা নয়। সাদার মধ্যে খানিক হলুদ মিশ্রিত। চোখ দুটো বেশ বড় আর টানা টানা, ভ্রু টা একদম আর্ট করা। হালকা জোড়া ভ্রু। ঠোঁট দুটো পাতলা, আর লিপস্টিক ছাড়াই বেশ গোলাপি।

মাথার চুল কোমরের অনেক নিচে চলে গিয়েছে, এককথায় খুবই নিখুঁত এক অসাধারণ মেয়ে।

মামাঃ হ্যাঁ রে ইশান ভার্সিটি কখন যাবি?
ইশানঃ (আড়চোখে একবার আরুকে দেখে) এই তো বাবা খানিক্ষন বাদেই,

~ ওহ্। আচ্ছা আরুদের নবীন বরন অনুষ্ঠান কবে হবে?
~ (খাবারটা মুখের সামনে ধরে) আর চার দিন বাদেই।
~ বাহ্ বেশ। নবীন বরনের কাজ কি শুরু হয়ে গিয়েছে?

~ হ্যাঁ বাবা। কাজ তো আরো কয়েকদিন আগে থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছে।

~ গুড! তোমাদের ভার্সিটিটা বেশ নাম করা। কাজ হোক বা সুনামে সবদিক থেকেই পার্ফেক্ট, আরুকে তোমার ভার্সিটিতে ভর্তি করাতে পেরে খুব ভালো কাজই হলো বলো?

মামিঃ হ্যাঁ গো। তুমি একদম ঠিকই বলেছো।

আরুঃ (ভালো হয়েছে না ছাই! এটা মানুষ নাকি রাক্ষস মাঝে মাঝে চিন্তায় পরে যাই। আর সে চিন্তা থেকে মুক্তি পেতেও আমার তিন চার দিন লেগে যায়। তবুও চিন্তার যেন শেষ হয়না)

ইশান চৌধুরী, আরিফ চৌধুরীর এবং আঁখি বেগমের একমাত্র সন্তান সে। পোলাতো নয় যেন আগুনের গোলা। প্রকৃতি যেন সব সৌন্দর্য এই ছেলের মাঝেই ঢেলে দিয়েছেন।

প্রয়োজনের চেয়েও বেশি ধবধবে সাদা গায়ের রং। মাথার সিল্কি চুল গুলো সবসময়ই কপালের উপর পরে থাকে। চোখ গুলো হালকা ছোট। ঠোঁট দুটো ডার্ক রেড।

চোখের ভারি পল্লবে সৌন্দর্য আরো দশগুন করে বাড়িয়ে দেয় যেন। ঠোঁটের কোনে ছোট একটা তিল রয়েছে। খুব কাছ থেকে না দেখলে সচারাচর চোখে পরেনা।

এতো সুন্দর করে হাসে, এককথায় কারোর হার্ট অ্যাটাক করতে হলে ইশানের হাসিই যথেষ্ট। মানুষটার হাসিতে এককথায় মরা যাবে তবে সে কোনো কষ্ট নিয়ে নয় বরং খুশি মনে।

আরু একমাত্র তার মা আর এই ইশানকেই যমের চেয়েও বেশি ভয় পায়। মেয়েটা সব কিছুতে খুব এগিয়ে থাকলেও খাবার এবং পড়াশোনা এই দুটোতে কিছুতেই এগোতে পারে না।

পড়াশোনাটা চেষ্টা করলে ভালো করতে পারলেও খাবারের ব্যপারটা সে কিছুই করতে পারেনা। ইশান হলো ভার্সিটির টপ স্টুডেন্ট আর আরু হলো মাঝামাঝি। ইশান গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করে একই ভার্সিটিতে মাস্টার্স করছে।

আজ সকালের ব্রেকফাস্টে সবাই নিজের নিজের পছন্দের খাবার খেতে পারলেও আরুর জন্য ভাত আর মাছ বরাদ্দ রয়েছে। কেননা সে গতকাল থেকে না খেয়ে রয়েছে আর যতবার জিজ্ঞেস করা হয়েছে ততবারই সে বলেছে খেয়েছি।

তাই আজ শাস্তি স্বরুপ ভাত আর মাছ খেতে হবে।

আরু হঠাৎ চিৎকার করে টেবিল ছেড়ে উঠে দাড়ালো। সবাই আরুর চিৎকার শুনে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে।
মা বললেন,

~ আরু কি হয়েছে?

মামাঃ কি হয়েছে আরু চিৎকার করলি কেন?
ইশান তাকিয়ে আছে ব্যাপারটা বোঝার জন্য।
আরু মুখ চেপে বলে উঠলো,

~ মা, মা দেখো.. মাছটা কেমন করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।
আরুর কথা শুনে সবাই বোকার ন্যায় তাকিয়ে আছে। সবাই একসাথে বলে উঠলো,

~ কি!
মা রাগান্বিত কন্ঠে বললেন,
~ আরু কি ফাজলামো শুরু করলে? খেতে বসো বলছি!
আরু ঠোঁট উল্টে বলল,

~ মা সত্যি বলছি। দেখনা তুমি, মাছটা কেমন করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে! আমি খাবো না,
মামাঃ মাছ আবার কি করে তাকিয়ে থাকে? এটা কি বেঁচে আছে নাকি রে!এটা তো রান্না করা মাছ।

ইশান মনে মনে হাসলো। আবার খাবার খাওয়ায় মনোযোগ দিয়ে বলল,
~ হায়রে ড্রামা কুইন, না খাওয়ার যত উদ্ভট অজুহাত এর কাছেই আছে!

মাঃ ভাইজান দেখো তুমি। দেখো মেয়ে কি বলে! মানে খাবার না খাওয়ার জন্য যে আর কি কি অদ্ভুত কথা এই মেয়ে বলবে আল্লাহ জানে, এখন কি বলে বসলো

মাছ নাকি তার দিকে তাকিয়ে আছে,
মামি হাসি চেপে রাখতে না পেরে ফিক করে হেসে দিয়ে বলল,
~ হ্যাঁ রে আরু, এসব উদ্ভট কথা কোথা থেকে পাশ বলতো?
মা রেগে গিয়ে বললেন,

~ খেতে হবে না তোমায়! শুধু খাবার না খাওয়ার ধান্দা। আজ থেকে আগামী তিন দিন তুমি না খেয়ে থাকবে! তারপর আমিও দেখবো কি করে না খেয়ে থাকতে পারো।

এই বলেই নাইমা বেগম উঠে চলে গেলেন।
মামাঃ আরে তুই আবার কোথায় যাচ্ছিস, বোন……!
মামিঃ আরু দিলিতো মাকে রাগিয়ে!

আরু মনে মনে একবার লুঙ্গি ড্যান্স মেরে মায়ের যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো। মা যা বলে গেলেন সেটা যদি সত্যিই হয়ে থাকে তাহলে তো আরুর চেয়ে খুশি আর কেউ হবে না।

খেতে হবে না ভাবতেই আবার লুঙ্গি ড্যান্স দিতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু মা এভাবে রাগ করে চলে যাওয়াতে মন খারাপও খানিক হলো।

মনে মনে বলল,

~ এই মাও না হয়েছে একরকম! বাবা মারা যাওয়ার পর থেকেই কেমন হুটহাট করে খুব রেগে যায়। নাহ্ এখন আর মায়ের রুমে গিয়ে কাজ নেই। তাহলে আরো বকা খেতে হবে। তার থেকে বরং ভার্সিটি থেকে ফিরে মায়ের রাগ ভাঙ্গানো যাবে।


পর্ব ২

ক্যান্টিনে মুখ কালো করে বসে আছে আরু। তার ঠিক সামনে বসে আছে ইশান। চোখে মুখে রাগ তার স্পষ্ট।

চোখ পাকিয়ে আরুর দিকে তাকিয়ে আছে। টেবিলে অনেক ধরনের খাবার সাজিয়ে রাখা। এগুলো এখন সব খেতে হবে বলে ইশানের কড়া হুকুম।
কিছুক্ষণ আগে,

মাত্র একটা ক্লাস করেই তিক্ত হয়ে উঠেছে আরু। সকালে ওভাবে খাবার না খাওয়ার জন্য মাথাটা কেমন ভন ভন করে ঘুরছে! এখন ওরা নতুন স্টুডেন্ট বিধায় ক্লাস গুলোর ইম্পরট্যান্টস তেমন না

থাকলেও ইশানের কড়া হুকুম, ক্লাস হোক বা না হোক ক্লাসের মধ্যেই বসে থাকবি, বাহিরে আজায়রা ঘুরে বেড়াতে দেখলেই খবর আছে!

আর ছেলেদের থেকে একশো হাত দুরে থাকবি ব্লা ব্লা ব্লা,
কনা(আরুর বেস্ট ফ্রেন্ড)~ দোস্ত কি হয়েছে তোর? শরীর খারাপ লাগছে নাকি?

আরু চোখ মুখ একবার মালিশ করে বলল,
~ পানি হবে তোর কাছে?

~ হ্যাঁ হ্যাঁ, (পানির বোতলটা এগিয়ে দিয়ে) এই নে।
আরু পানির বোতলটা নিয়ে ঢকঢক করে সবটুকু পানি খেয়ে বোতলটা খালি করে দিলো। ছোট একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বোতলটা এগিয়ে দিতেই কনা ভ্রু নাচিয়ে বলল,

~ এখন বলতো কি হয়েছে? নিশ্চয়ই আজও না খেয়ে বেরিয়েছিস? তাই এখন শরীর খারাপ লাগছে! আচ্ছা তোকে আর কতো বলবো বল, অন্তত খাবারটা ঠিক করে খাবি! কিন্তু কে শুনে কার কথা! এখন যদি তুই হঠাৎ অসুস্থ পড়িস তখন আন্টির কি হবে ভেবেছিস একবারও?

আরুর কাছে এই মুহুর্তে কনার প্রত্যেকটা কথাই খুব বিস্বাদ লাগছে। তাই কিছু না বলেই ওখান থেকে উঠে চলে গেলো। উদ্দেশ্য বাসায় ফিরবে, কিন্তু তার শরীর জানান দিচ্ছে সে এখন জ্ঞান হারাবে।

কোনো শক্তিই পাচ্ছে না হাটার, তবুও হাঁটছে, দুনিয়া উল্টে যেন বমি পাচ্ছে। আচমকা কারোর হেচকা টানে মনে হলো যেন ভিতর থেকে সব বেরিয়ে আসার উপক্রম।

চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে নিলো। তাকে টেনে এনে ক্যান্টিনে বসিয়ে নিজের ইচ্ছে মতো খাবার অর্ডার দিলো ইশান।
দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

~ এই খাবার গুলো সব এক্ষুনি ফিনিশ করবি। কোনো সাউন্ড যেন না শুনি!

আরুর মুখ হা করে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে অসহায় মুখ করে বলল,
~ কিহ্হ্! এই এত্তো গুলো খাবার আমি খাবো?

~ হ্যাঁ তুই খাবি, একদম এক একটা ধরে ধরে ফিনিশ করবি, ফাস্ট, শুরু কর!

~ (ঢোক গিলে) ভাইয়া, ব..বলছিলাম যে,
ইশান ধমকে উঠে বলল,

~ ফাস্ট, যে কয়টা কথা বলবি গুনে গুনে ঠিক সেই কয়টা খাবার বেড়ে যাবে। সো লেটস ফিনিশ ইট।

আরুর ইশানের কথা গুলো শুনে কান্নাই পেয়ে গেলো। বলে কি এই ছেলে! যে কয়টা কথ বলবে সে কয়টা খাবার গুনে গুনে বেড়ে যাবে? আচ্ছা আমি যদি এখন বলি,

~ ভাইয়া আমি বাসায় যাবো! প্লিজ আমাকে যেতে দিন!
তাহলে উনি মোট কত গুলো খাবার অর্ডার দিবেন? হঠাৎ হাতের কর গুনতে শুরু করলো।

গুনে গুনে মোট বিশটা হলো। আঁতকে উঠে বলে উঠলো,
~ আসতাগফিরুল্লাহ!

মনে মনে বলল~ বিশটা খাবার অর্ডার দিলেতো খেতে খেতেই মরে যাবো! এরা তো দেখি এই খাবার খাওয়ার অত্যাচারেই আমায় মেরে ফেলবে।

ইশান ভ্রু কুঁচকে বলল,
~ কি প্রবলেম তোর? খেতে বলেছি না চুপচাপ? আবার মনে মনে কি বকবক করে আসতাগফিরুল্লাহ বলে উঠলি?

শোন আরু তুই যদি ভাবিস যে তুই মনে মনে বকবক করলে আমি শুনবো না তাহলে তোর জন্য এক বালতি সমবেদনা! আমি ঠিক বুঝি তুই মনে মনে যা বলিস। সো কথা না বাড়িয়ে খেতে শুরু কর!

~ (এহহ হুকুমদারী আসছে আমার! সারাদিন বকাঝকা করে উড়িয়ে দিয়ে এখন আবার খাবার খাওয়াতে নিয়ে আসছে।

বান্দর কোথাকার একটা। মিষ্টি কথা বলার জো নেই মুখে। মামি বোধহয় জন্মের সময় মুখে মধুর জায়গায় ভুল করে তিতাকরলার জুস খাইয়েছে)

~ কি হলো খাচ্ছিসনা কেন? খাবি, নাকি আমি অন্য ব্যবস্থা নিবো?
আরু অসহায় মুখ করে বলল,

~ এমন করেন কেন? খাচ্ছি তো,
~ হু ফাস্ট,
আরু মুখটা বাংলার পাঁচের মতো করে খেতে শুরু করলো।

তার খাবার খাওয়ার ধরন দেখে কেবল এটাই মনে হচ্ছে কেউ যেন তাকে জোর করে তিতাকরলার জুস খেতে দিয়েছে।

বেচারী না পারছে উঠে দৌড়ে পালাতে। কারন সে খুব ভালো করেই জানে এই মানুষটার থেকে পালানো তো দুর পালানোর কথা মাথায় আনাও যেন ঘোর অন্যায়।

পরে এমন ভাবে আষ্টেপৃষ্ঠে ধরবে যেন শরীর ২০৬ টি হাড়ের সব গুলোই মটমট করে ভেঙ্গে যাচ্ছে।

ইশান আরুকে বাসার কারোর সামনে কখনোই বকে না, কারন সে খুব ভালো করেই জানে আরুকে বাবা মায়ের সামনে একটা ধমক দিলেও তার দশগুণ তার সহ্য করতে হবে।

মামা মামি আরুকে খুব ভালোবাসে। যদিও আরুর মা সবসময় ইশানের পক্ষ নিয়েই কথা বলে তবুও মামা মামির জন্য তার বকাঝকাও বেশি শুনতে হয়না আরুর।

তাই ইশানের যত টর্চার সব তার বাবা মায়ের আড়ালে।
আরু একটু একটু করে প্রায় অনেক গুলো খাবার খেয়ে নিয়েছে। তার দ্বারা যে আর সম্ভব হচ্ছেনা।

খাবার গুলো খেতে খেতে যে হাঁপিয়ে উঠছে মেয়েটা। আর একটু খেতে নিলেই সব যেন উল্টে বের হয়ে আসতে চাচ্ছে। ইশান সেটা বুঝতে পেরে বলল,
~ পেট ভরেছে…?

আরু মুখ কুঁচকে বলল,
~ ওভারলোড হয়ে গিয়েছে।

ইশান মনে মনে খানিক হেসে ফোনের দিকে তাকিয়ে বলল,
~ ওও, আচ্ছা শোন, এখন এখান থেকে উঠে সোজা বাসায় চলে যাবি। ওকে?

আরু মাথা নেড়ে বলল,
~ হু।
~ গেটের বাইরে গাড়ি রাখা আছে, আমি ড্রাইভারকে বলে রেখেছি, তোকে বাসায় দিয়ে আসবে।

~ (আমি যাবনা আপনার গাড়িতে), হু।
~ ওকে যা। আর বাসায় গিয়ে ফোন করে বলবি ঠিক মতো পৌঁছেছিস কি না! ওকে?

~ (এহহ ঢং! আমি কখনোই যাবো না ঐ গাড়িতে, আবার উনাকে ফোন করে জানাতে হবে, বেটা খাটাশ একটা।

খাইয়ে খাইয়ে একদম অর্ধেক জীবনের দফারফা করে দিলো), হু।
ইশান ধমকে উঠে বলল,

~ কি হু হু করছিস? যা বলেছি সব মগজে ঢুকেছে নাকি সব জগা খিচুড়ি পাকিয়ে ফেলেছিস!
ইশানের কথায় আরু ভ্রু কুঁচকালো।

কিছু একটা বলতে চাইলো কিন্তু বলতে পারলো না। ইশান কথা থামিয়ে দিয়ে আরুকে যেতে বলে নিজেও চলে গেলো ভার্সিটির ভিতর।

মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মাঝে যেন মিলিয়ে গেলো মানুষটা। আরুও আর বসে রইলো না। উঠে বাসার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লো।

ঘড়িতে ঠিক পাঁচটার উপর মাঝারি কাটা টা স্থির হয়ে আছে। রুমের মধ্যে কতক্ষণ পায়চারি করে ছাদে চলে আসলো আরু। একবার মায়ের রুমে উঁকি মেরেছিলো। দেখলো মা ঘুমচ্ছেন তাই আর ডিস্টার্ব করলো না।

ছাঁদটাকে আরুর ছাঁদ বলে একদমই মনে হয়না।

চারপাশে অসংখ্য ফুলের গাছ। এতো এতো ফুলের নামও আরুর জানা নেই। তবে ইশান অবশ্য তাকে একদিন এই সব ফুল গুলোর নাম বলেছিলো, যদিও আরু সেটা কনফিউশানের ভারে জগা খিচুড়ি পাকিয়ে ফেলেছে বলে ইশানের ধারনা।

আরু ধীর পায়ে এগোচ্ছে আর প্রতিটি ফুল আলতো করে ছুঁয়ে দিচ্ছে আর আপন মনেই হেসে উঠছে। এ বাড়ির পেছনের দিকটাতেও অবশ্য অনেক বড় গার্ডেন আছে।

সেখানে এর থেকেও বেশি ফুলের গাছ সাথে অনেক ধরনের ফলের গাছও বিদ্যমান। তবুও মামির ইচ্ছেতে ছাঁদের প্রায় অর্ধেকের বেশি জুড়েই ফুল গাছ গুলো দিয়ে ভরে রেখেছে।

যদিও দেখতে মন্দ লাগেনা বরং বেশ ভালোই লাগে। বাতাসের সাথে পুরো বাড়ি জুড়েই ফুলের সুগন্ধে মৌঁ মৌঁ করে। আরুর মাঝে মাঝে এই গন্ধে মাতাল হতে বড্ড ইচ্ছে করে।

আচমকা আরুর ভাবনার প্রহর কাটলো ইশানের থাপ্পড়ের জোরে, ঘটনার আকষ্মিকতায় টাল সামলাতে না পেরে ফ্লোরে গিয়ে পড়লো।


পর্ব ৩

ইশানের এমন থাপ্পড়ের টেস্ট আরুকে অনেকবারই করতে হয়েছে। তবে তার জন্যও যথেষ্ট কারন বিদ্যমান থাকতো। কিন্তু আজ কি করলো সেটাই তার মাথায় আসছেনা।

আর আজকের থাপ্পড়ের ধরনটাও ভিন্ন বলে ঠাওর হচ্ছে আরুর কাছে। ইশানের চোখের দিকে তাকাতেই প্রান পাখি উড়ে যাওয়ার দশা হলো। চোখ দুটো তার ভয়ংকর রকমের লাল হয়ে আছে।

চোখে মুখে আতংকের ছাপ! দেখে মনে হচ্ছে তার সব থেকে প্রিয় জিনিসটা সে এইমাত্র হারিয়ে এসেছে।

ইশানের চোখে মুখের আতংকের ছাপ নিমিষেই ভয়ংকর রাগের রুপ ধারন করলো। আরুকে এক প্রকার টেনে তুলে শক্ত করে তার বাহু চেপে ধরলো। আরু ব্যাথায় কুকিয়ে উঠলো কিন্তু তাতে ইশানের কোনো ভাবান্তর হলো বলে মনে হচ্ছে না।

ইশান রাগে কটমট করতে করতে বলল,
~ খুব সাহস বেড়েছে তোর তাই না? খুব সাহস, (আরো শক্ত চেপে ধরে)এতো সাহস আসে কোথা থেকে তোর হ্যাঁ? বল…(চিল্লিয়ে)! পা ভেঙ্গে ঘরে রেখে দিবো একদম!

আরু কোনো মতে ঢোক গিলে চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে নিলো। এই মুহুর্তে ইশানের চোখে চোখ রাখার মতো সাহস তার নেই! ভয়ে তার শরীর কাঁপছে।

কোনো রকম কাঁপা কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করলো,
~ আ..আমি ক..ক..কি করেছি ভ..ভভাইয়া,
ইশান দাঁতে দাঁত চেপে আরো শক্ত করে চেপে ধরে বলল,
~ কি করেছিস তুই জানিস না?

আরু আবারো ব্যাথায় কুকিয়ে উঠলো, নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার বৃথা চেষ্টা করে বলল,
~ আহ্, ভাইয়া আমার হাতে লাগছে!

~ লাগুক, আরো লাগুক, তোর সাহস কি করে হয় আমার কথার অমান্য করার? বল, (চিল্লিয়ে) আমি তোকে বলেছিলাম না গাড়িতে করে বাড়ি ফিরবি, আর বাসায় ফিরে আমাকে কল করে জানাবি ঠিক ঠাক পৌঁছেছিস কিনা?

না তুই গাড়িতে করে ফিরেছিস আর না তুই আমায় ফোন করে জানিয়েছিস তুই বাসায় ফিরলি কি না! যেখানে বাসায় ফিরতে আধঘন্টা সময়ের বেশি লাগার কথা নয় সেখানে তিন তিনটা ঘন্টা পেরিয়ে গেলো আর তুই..

~ (রেগে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে) তুই জানিস আমি কতটা টেনশনে ছিলাম? ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করতে বলল,

~ স্যার আরু ম্যাম আমাকে বোকা বানিয়ে একাই চলে গিয়েছে!
তারপর যখন তোকে ফোনে ট্রাই করলাম ফোন বার বার সুইচডঅফ বলছে! ডাফার একটা! না পারছিলাম ভার্সিটি থেকে বের হতে আর না পারছিলাম শান্তি মতো ওখানে দু’দন্ড বসতে! আর এই ইডিয়ট এখানে বসে বাগান বিলাস করছে।

আরু ইশানের কথা গুলোয় কি রিয়েক্ট দিবে বুঝতে পারলো না, ফ্যালফ্যাল করে কতক্ষণ তাকিয়ে থেকে ভাবলেশহীন ভাবে তার গালে আর বাহুতে হাত বুলাচ্ছে। দেখে মনে হচ্ছে ইশানের কোনো কথায়ই তার মাথার মধ্যে ঢুকেনি।

ইশান আরুর এমন ভাব দেখেই তেড়ে যেতে আরু চোখ বড় বড় করে দু পা পিছিয়ে দু’হাত দিয়ে চোখ চেপে ধরে বলতে লাগলো,
~ ভাইয়া প্লিজ মারবেন না, মারবেন না! সত্যি বলছি আর কখনো এমন করবো না!

সব সময় আপনার কথা মতো চলবো, আপনি যা বলবেন তাই শুনবো, প্লিজ প্লিজ প্লিজ..মারবেন না!

আরু এক শ্বাসে কথা গুলো বলে ফেললো। অনেক্ষন বাদেও যখন কোনো শব্দ টের পেলোনা তখনই চোখ খুলে তাকালো। চারপাশে একবার চোখ বুলিয়ে বলল,

~ একি! ইশান ভইয়া কোথায় গেলো? চলে গেলো? ভাইয়া, ভ..ভাইয়া?

(আস্তে আস্তে করে দুবার ডেকে)…চলে গিয়োছে বোধহয়, বেটা রাক্ষস একটা! (গালে হাত ডলে) এমন জোরে থাপ্পড় টা মারলো মনে হলো যেন কোনো ভূমিকম্প হয়ে গেলো শরীরের উপর থেকে।

খাটাশ টা নিজেকে যে কি মনে করে আল্লাহ জানে। সবসময় উনার কথায় কেন চলতে হবে শুনি! দুনিয়াতে কি মাইনষের অভাব লাগছেনি বাল! এমন জোরে মারলো, গালটা পুরো ফাটিয়ে দিলো!

~ মা আসবো?

নামাজ শেষ করে উঠলেন সবে নাইমা বেগম। মেয়েকে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মুচকি হেসে হাতের ইশারায় কাছে ডাকলেন।

আরুও খুশি হয়ে মায়ের কাছে গিয়ে মায়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো। নাইমা বেগম হাত তুলে মোনাজাত করে মেয়ের মাথায় হাত রাখলেন। মৃদু কন্ঠে বলে উঠলেন,

~ কি হয়েছে আমার মা’টার? মনটা খারাপ মনে হচ্ছে?

~ না মা মন খারাপ না। কেন জানিনা খুব অস্থির লাগছিলো। তাই ভাবলাম তোমার কোলে কিছুক্ষণ মাথা রেখে শুয়ে থাকলে ভালো লাগবে।

মা ব্যস্ত কন্ঠে মেয়ের কপালে, গালে হাত রাখতে রাখতে প্রশ্ন করলেন,
~ শরীর ঠিকাছে তো মা…?

আরু মায়ের কথার জবাব না দিয়ে পাশ ফিরে মাকে জড়িয়ে ধরে ছোট একটা নিশ্বাস ফেলে বলল,
~ মা..! আমার কিচ্ছু হয়নি।

তুমি আমার মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দাওতো। আমি একটু ঘুমোয়ই,

নাইমা বেগম মানুষ টা আরুর মতোই খুব চন্ঞ্চল ছিলেন বরাবরই। সেই ছোট বেলা থেকেই সবার সাথে মজা দুষ্টমিতে মেতে থাকতো। আরুর এই চন্ঞ্চল স্বভাবটা তার মায়ের থেকেই প্রাপ্ত। সেই ছোট মেয়েটা একদিন হঠাৎ করেই বড় হয়ে গেলো।

বিয়ে হলো সংসার হলো, তারপর…! সংসারটাকে পরিপূর্ণ করে আরুর জন্ম হলো। বেশ ভালো দিন কাটাচ্ছিলেন তারা। কোনো কিছুর অভাব ছিলো না জীবনে।

মস্ত বড় বাড়ি, পাঁচ ছ’খানা গাড়ি, নাম করা বিজনেস ম্যান ছিলেন আরুর বাবা। সব কিছু যেন একটু বেশিই ছিলো। কিন্তু প্রকৃতি যে তাদের আর সঙ্গ দিলো না!

একদিন তারা হঠাৎ করেই জানতে পারলো আরুর বাবার ব্লাড ক্যান্সার লাস্ট স্টেজ চলছে, বাঁচার কোনো আশা নেই।

মুখের কথা মুখেই রইলো! হাতে গোনা মাত্র ১৫ দিনের মাথায় আরুর বাবা মারা গেলেন! স্বামী কে হারিয়ে নাইমা বেগম যেন দিশেহারা হয়ে গেলেন। থমকে গেলো তার পৃথিবী, একদিকে স্বামী কে হারানোর যাতনায় কাতর আর অন্যদিকে স্বামীর তিল তিল করে গড়ে তোলা সমস্ত কিছু যেন এক নিমিষেই শেষ হয়ে গেলো।

মাত্র ছয় মাসের ব্যবধানে তাদের রাস্তায় নেমে আাসার পর্যায় হলো। মেয়েকে নিয়ে কোথায় যাবে কি করবে কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলেন না নাইমা বেগম।

মাঝে মাঝে খুব ইচ্ছে হতো মরে যেতে কিন্তু শুধু মাত্র মেয়েটার মুখের দিকে তাকিয়ে খুব করে বেঁচে থাকতে ইচ্ছে হতো। মেয়েকে নিয়ে এক অন্য রাজ্যে পাড়ি জমাতে ইচ্ছে করতো, যেখানে কোনো কষ্টই মা মেয়েকে ছুঁতে পারবে না। গত দুই বছর ধরে মানুষ টা কেমন একটা গম্ভীর হয়ে গেলো।

খুব অল্পতেই ভীষণ রেগে যান আবার কোনো একটা স্বাভাবিক বিষয়েও খুব আপসেট হয়ে পড়েন। আরু মাঝে মাঝে তার মাকে বুঝতে পারেনা, খুব করে চায় তার মা যেন সব সময়ই খুব হাসি খুশি থাকে, খুব ভালো থাকে, কোনো কষ্টই যেন তার মাকে ছুঁতে না পারে।

কিন্তু মেয়েটা বরাবরই ব্যর্থ হয়, তার মায়ের মতো সে তার মাকে কষ্ট থেকে আড়াল করতে পারেনা। তবুও চেষ্টা করে তাইতো তার মাকে হাসাতে সে যত সব উদ্ভট কথা আবিষ্কার করে বেড়ায় যেমন রান্না করা মাছ তার দিকে তাকিয়ে থাকে।

মায়ের ডাকে আরুর ভাবনায় ছেদ পড়লো। মুখ উঁচিয়ে দেখলো মা প্রশ্নসূচক মুখ করে তাকিয়ে আছে। মা আবার বললেন,
~ এশার নামাজ পড়েছো?

আরু না সূচক মাথা নাড়তে মা আবার প্রশ্ন ছুড়লেন,
~ কেন পড়োনি?

আরু হাত পা গুটিয়ে উঠে বসলো। মায়ের দিকে মুখ করে বলল,
~ ঐ যে বললাম খুব অস্থির লাগছিলো। তাই নামাজ না পড়েই তোমার কাছে চলে আসলাম!

মা তছবি টানতে টানতে মুচকি হাসলেন, মাকে হাসতে দেখে আরুও মনে মনে খানিক হাসলো।

মা মুখ তুলে বললেন,
~ তো এখন কি অস্থিরতা কমেছে?

আরু হালকা হেসে মাথা নাড়লো। তার মানে কমেছে,
মা আবার বললেন,

~ তাহলে এবার আমার লক্ষী মেয়ে হয়ে নামাজ টা পড়ে নাও গিয়ে?
~ ওকে মা।

আরু উঠে যেতে নিলে মা পিছু ডাকলেন। আরু তাকাতেই মা তাকে আলতো আদর করে কপালে একখানা চুমু দিয়ে বললেন,
~ এখন যাও।

আরুও হাসি মুখে উঠে চলে গেলো। এটা হলো আরুর অভ্যাস, প্রত্যেক বেলা নামাজের আগে মায়ের কাছ থেকে এই আদর মাখা চুমুটা না খেলে তার নাকি নামাজে মন বসে না।

রাত ~ ১০ টা বেজে ১৭ মিনিট। ঘড়িতে একবার চোখ বুলিয়ে আবার ফোনের দিকে স্থীর দৃষ্টি রেখে ফেসবুক স্ক্রোলিং করাতে ব্যস্ত হয়ে গেলো আরু,

, দুই সেকেন্ডের মাথায় মনে হলো ফোনটা তার হাতে নেই, ভালো করে একবার তাকাতে দেখলো হ্যাঁ সত্যিই তো, ফোনটা তো নেই হাতে, পেছন তাকাতে দেখলো ইশান চোখ মুখ কঠিন করে তার ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে,

, পাঁচ সেকেন্ড ফোনের দিকে স্থীর দৃষ্টি রেখে মুখ তুলে তাকালো আরুর দিকে, আরুর পরনে সাদা কূর্তী, লম্বা চুল গুলো উঁচু করে কাঠি দিয়ে আটকানো, চোখে মুখে অল্প সল্প একটা তৈলাক্ত ভাবে আরো আকর্ষণীয় করে তুলেছে মুখ খানা।

ঘটনার আকস্মিকতায় ভ্রু~ টা খানিক কুঁচকে আছে।

ইশান আগের থেকে চোখ মুখ আরো কঠিন করে আরুর দিকে তাকালো। দাঁতে দাঁত চেপে মাথায় এক চাটি মেরে বলল,
~ এই রানভীর টা কে? কিসের এতো প্রেমালাপ তার সাথে! বলেছি না ছেলেদের থেকে একশো হাত দুরে থাকবি!


পর্ব ৪


আরু মাথায় হাত ডলে ভ্রুটা আরেকটু কুঁচকে ইশানের দিকে তাকালো। ইশানের পরনে নেভি ব্লু টি~ শার্ট আর এ্যাশ কালারের শর্ট প্যান্ট এ শরীরটা যেন ঝলমল করছে,

, মাথার এলোমেলো চুল গুলো আর চেহারায় ফুটে ওঠা সারাদিনের ক্লান্তির ছাপ যেন মানুষটাকে নেতিয়ে দিচ্ছে।

দেখে তো কেবল এটাই মনে হচ্ছে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধে গিয়েছিলে সবে সবে ফিরেছে। খুব টায়ার্ড, এই মুহুর্তে এক গ্লাস পানি উনার জন্য খুব দরকার।

আরু ইশানের কথার জবাব না দিয়ে গ্লাসে পানি ঢেলে সামনে ধরলো। ঠোঁট উল্টে বলল,

~ পানিটা খেয়ে নিন,
ইশান ভাবলেশহীন ভাবে আরুর দিকে তাকালো।

প্রথম দফায় অবশ্য তার অবাক হওয়া মুখটা আরুর প্রত্যাশা ছিলো কিন্তু ইশান খুব স্বাভাবিক ভাবেই পানিটা খেয়ে নিলো। কারন ইশানের খুব ছোট ছোট ব্যপার গুলো যেটা তার মায়ের চোখেও পড়েনা সেটা আরু বুঝে নেয়।

কি করে বুঝতে পারে ইশানের জানা নেই তবে এই মানুষটাই যে তার খুব ছোট থেকে ছোট ব্যাপার গুলো নজরে রাখে, এটাই যে সবচেয়ে বড় পাওয়া। ব্যস আর কি চায়,

!নিজেকে আর ভাবনায় বিভোর না করে কটমট চোখে আরুর দিকে তাকিয়ে বলল,

~ নিজেকে কি দ্বিপীকা পাদুকন মনে করিস নাকি? সত্যি করে বলতো এই রানভীর টা কে..? আর তোকে কেন মেসেজ করে! এই আরু, প্রেম~ ট্রেম করিস না তো আবার?

ইশানের শেষের কথাটায় আরুর ভীষণ হাসি পাচ্ছে, একদম পাগল হয়ে বাড়ি মাথায় তুলে হাসতে ইচ্ছে করছে তার যাকে বলে দমফাটানো হাসি। তবে এই মুহুর্তে সেটা সম্ভব না জেনেই নিজের ইচ্ছে টা কে দমিয়ে রেখে স্বাভাবিক কন্ঠে বলল,

~ আমি চিনি না ভাইয়া!রানভীর সিং এর নাম আর পিক দেখে ভেবেছিলাম হয়তো সত্যি সত্যি রানভীর সিং।

তাই আগ বাড়িয়ে মেসেজ দিয়েছিলাম! কিন্তু পরে দেখলাম যে ছেলেটা বাংলায় টাইপ করে! সেটা দেখে তো একপ্রকার হার্ট ব্রেকই হয়ে গেল আমার!

ইশান আরুর কথা শুনে হাসবে না কাঁদবে ঠিক বুঝে উঠতে পারলোনা। আবার এক চাটি মেরে বলল,

~ ডাফার একটা, তোর কমন সেন্স দেখে তো রীতিমতো আমার বমি পাচ্ছে! পরে যখন জানতে পারলি এটা তোর ঐ প্রতিবন্ধী রানভীর সিং নয় তখন আনফ্রেন্ড কেন করলি না?

আরু ভ্রু কুঁচকে মাথায় হাত দিয়ে বলল,
~ এই এক মিনিট, আপনি আমার রানভীর সিং কে প্রতিবন্ধী বললেন!

ইশান মুখ কুঁচকে বলল,
~ হ্যাঁ, বলবো না কেন? প্রতিবন্ধী কে প্রতিবন্ধী বলতে দোষ কি?
~ (বান্দরের নাতি! আমার রানভীর সিং মোটেই প্রতিবন্ধী নয়, বেটা খাটাশ তুই প্রতিবন্ধী সাথে তর বউও প্রতিবন্ধী)

~ কি হলো চুপ করে আছিস কেন? বল, কেন ঐ প্রতিবন্ধী কে আনফ্রেন্ড করলি না..?

~ করেছি তো আনফ্রেন্ড! তবুও মেসেজ দেয় কি করবো!
ইশান এবার রেগে গিয়ে ধমক দিয়ে বলে উঠলো,

~ তাহলে ব্লক করতে পারলি না? যত্তসব আবাল পাবলিক!
কথাটা বলেই ফোনটা খাটের উপর ছুড়ে মেরে হনহন করে বেরিয়ে গেলো। আরু মুখ কুঁচকে একবার ইশানের যাওয়ার পানে তো একবার নিজের পড়ে থাকা ফোনটার দিকে তাকালো।

~ এই ছেলের মাথায় নির্ঘাত কোনো সমস্যা রয়েছে! বান্দরের নাতি, পেত্নীর জামাই, পেঁচা কোথাকারে, বলি কি আর সাধে?

(ফোনটা হাতে উঠিয়ে), আহারে আমার ইনোসেন্ট ফোনটা, না সোনা কাঁদে না! ব্যাথা পেয়েছো? কত জোরে ছুড়ে মারলো বেটায়, মনে হয় যেন ওর শশুরের টাকায় কিনে আমায় সে নিজ হাতে গিফট করেছে, ফাজিল, খচ্চর ছেলে!

আবার বলে কি না আবাল পাবলিক! বেটা তুই আবাল, তোর বউ আবাল, তোর গুষ্টি…না না না! এটার মধ্যে মামা মামিও পরে! থুক্কু!

আরু আর কনা ভার্সিটির বিশাল খোলা মাঠে দাঁড়িয়ে আছে। তাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছে একটি ছেলে। সেই আধঘন্টা যাবত কিছু বলার প্রয়াস চালাচ্ছে কিন্তু কোনো ভাবেই সে সফল হতে পারছে না!

ছেলেটাকে এভাবে কাচুমাচু করতে দেখে একরাশ বিরক্তি যেন চেপে বসেছে, পারে তো গালে লাগিয়ে দেয় এক চড়!

ছেলেটাকে দেখতে মন্দ নয়, বেশ হ্যান্ডসাম, দেখে তো মনে হচ্ছে ডাক্তারি পেশার স্টুডেন্ট, ব্রাউন কালারের শার্ট~ টার উপর সাদা এপ্রোন জড়ানো!

গলায় ঝুলিয়ে রেখে আইড়ি কার্ড সাথে ডক্টরদের কিছু সল্প যন্ত্র, আপাতত নাম না মনে পড়ায় যন্ত্র বলেই মন কে শান্তনা দিলো আরু। চোখে চশমা লাগানো যার ফলে কিছু টা বোকাসোকা লাগছে, মাথার চুলগুলো বেশ কোঁকড়ানো।

সব মিলিয়ে ছেলেটাকে বেশ মানিয়েছে এ পেশায়!কিন্তু ছেলে এভাবে চুপ করে থাকাতে কোনো কিছুই মনে ধরাতে পারছে না সে, তাই বিরক্তি নিয়েই ভ্রু কুঁচকে কথা ঝাড়লো

,
~ কি সমস্যা হ্যাঁ? সেই কখন থেকে পথ আটকে দাঁড়িয়ে আছেন যে? কিছু বললে বলুন আর নয় তো পথ ছাড়ুন, যত্তসব!

ছেলেটা শুকনো ঢোক গিললো। কনার দিকে একবার তাকিয়ে আরুর দিকে তাকালো। একটা কৃত্রিম হাসি দিয়ে বলল,
~ হাই, আমি পিয়াস।

ছেলেটার কথায় আরু ভ্রু টা আরেকটু কুঁচকে বলল,
~ আপনি পিয়াস হোন বা পিয়াসা হোন, আমরা কি করতে পারি?
আরুর কথায় ছেলেটা যেন ভ্যাবাচ্যাকা খেলো।

তার নাম নিয়ে যে আরু এভাবে মজা নিবে ভাবনায় ছিলো না তার। চশমাটা একবার পেছনে ঠেলে বলল,
~ তুমি আরু তো! তাই না?

ছেলেটার মুখে নিজের নামটা শুনে আরু চোখ সরু করে তাকালো। কিছু বলতে যাবে তার মাঝেই ছেলেটা আবার বলে উঠলো,
~ আসলে আরু, আমার কনার সাথে একটু কথা ছিলো, বাট ওও~
~ কনার সাথে? (অবাক কন্ঠে)

~ (কনার দিকে একবার তাকিয়ে) হু,
আরু এবার ছেলেটাকে ছেড়ে কনাকে লক্ষ করলো। কনা একরকম তার পেছনে লুকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, ভয়ে ওর চোখ মুখ কুঁচকে রয়েছে, রীতিমতো কাঁপছে মেয়েটা! কিন্তু কেন…?

আরু এতক্ষণ কনাকে খেয়াল না করলেও এখন বেশ অবাকই হচ্ছে! এর আবার কি হলো?

~ কনা তুই উনাকে চিনিস?
কনা আড়চোখে একবার ছেলেটাকে দেখে নিয়ে বলল,
~ ন..না আরু আ..আমি উনাকে চ..চচিনি না…!

~ চিনিস না ভালো কথা। কিন্তু তুই উনাকে দেখে এমন কাঁপা কাঁপি শুরু করলি কেন? কি প্রবলেম,

~ ব..বলছিলাম কি আরুঃ ! আমাদোর ক্লাসে ল..লেট হচ্ছে,
আরু এবার চোখ বড় বড় করে ঘড়ির দিকে তাকালো। আঁতকে উঠে চারাপাশে একবার নজর দিয়ে বলল,

~ ওও নো! ক্লাস~ টাইম যে চলে যাচ্ছে, আমার তো মনেই নেই! (ঐ পেত্নীর জামাইটা না আবার দেখে নেয়, তাহলে কপালে খারাবি আছে)। কনা চল তাড়াতাড়ি,

কনা আরুর থেকেও বেশি তাড়া দিয়ে বলল,
~ হ্যাঁ তাড়াতাড়ি চল।

দুজনেই একপ্রকার দৌড়ে চলে গেলো। আর বেচারা পিয়াস পুরো কথাটা বলতে না পেরে হতাশ হয়ে ফিরে গেলো।

তিন টা ক্লাস করে দুজনেই বের হয়ে আসলো। আর এনার্জি রাখতে পারবেনা বলেই এমন ডিসিশন! ক্যান্টিনে গিয়ে বসতেই একটা ছেলে এসে টেবিল ভর্তি খাবার দিয়ে গেলো! এটা দেখে আরু এবং কনা দুজনেই বেশ অবাক। আরু কপালের ভাজ সরু করে বলল,

~ excuse me!আপনি ভুল টেবিলে খাবার দিয়েছেন! আমরা এখনো কিছু অর্ডার করিনি,

ছেলেটি স্বাভাবিক ভঙ্গিতে খাবার গুলো রাখতো রাখতো বলল,
~ জ্বি আপু, এগুলো ইশান ভাইয়া অর্ডার করে রেখেছিলেন আপনার জন্য, আপনি এখানে আসলেই যেন আপনাকে দেওয়া হয়, সেটাই বলেছে।

~ হোয়াট!ইশান ভাইয়া?
~ জ্বি আপু,
~ (শালার কপাল বটে, এই লোক টা আমায় কোথাও একটু শান্তি দিবেনা! )

ছেলেটির কথা শুনে কনা দাঁত কেলিয়ে আরুর দিকে তাকালো। তাতে যেন আরুর রাগ আরো কয়েকগুন বেড়ে গেলো। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

~ হ্যাঁ এতক্ষণ পর্যন্ত তোর এই বত্রিশ পাটিই মিসিং ছিলো। এখন সেটাও ষোলো কলায় পূর্ণ হলো, ইডিয়ট দাঁত কেলানো বন্ধ কর আর নয়তো দেখবি প্রিয়াঙ্কা চোপড়া এসে তোর নুন লেবু যুক্ত দাঁত দেখলে তুলে নিয়ে যাবে।


পর্ব ৫

আরুর কথায় কনা ফিক করে হেসে দিলো। আরুর কাঁধে হালকা ধাক্কা দিয়ে বলল,

~ হু হু বুঝিতো, সব বুঝি!
~ ঠাড়ায় থাপ্পড় লাগামু এবার। চুপচাপ সব খাবার গুলো খেয়ে ফিনিশ কর আর নয়তো আন্টিকে গিয়ে বলে দিবো, তুই ঐ হাড়ের ডাক্তারের সাথে প্রেম করস!

কনা আরুর কথায় বিষম খেলো। অসহায় মুখ করে বলল,
~ বিশ্বাস কর আরু আমি উনার সাথে প্রেম করিনা, উনিই কাল এসে আমাকে ডেকে নিয়ে গেলেন, তারপর সবা…

এটুকুনি বলেই নিজের মুখ চেপে ধরলো কনা। আরু তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে কতক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলে উঠলো,

~ তার মানে ঐ হাড়ের তোকে লাইক করে? আর তুই সেটা আমাকে বলিসনি?
~ না আরু ব..বিশ্বাস কর,

~ বিশ্বাস করবো! তাও আবার তোকে? কখনোই না, এখন তাড়াতাড়ি করে বলে ফেল আমাকে না জানিয়ে আর কি কি করেছিস!
কনা অসহায় মুখ করে তাকালো। আরু ভ্রু নাচাতেই বলল,
~ সত্যি বলছি রে, আমি কিচ্ছু করিনি!

আরু কঠিন গলায় বলল,
~ ঐ হাড়ের ডাক্তার তোকে ভালোবাসে?
কনা মাথা নাড়লো। তার মানে ভালোবাসে,

~ প্রপোজ করেছে?
কনা আবারো মাথা নাড়লো, তার মানে প্রপোজও করেছে!

আরু এবার ভ্রু কুঁচকে তাকালো! কনা নিচের দিকে তাকিয়ে বলল,
~ গত কালই প্রপোজ করেছে, তবে বিশ্বাস কর আমি কিন্তু রাজি হয়নি! তোকে আজই বলতাম কিন্তু, তখন আবার উনাকে দেখে,
,
আরু কনার গালে লাগিয়ে দিলো এক থাপ্পড়! কনা কাঁদ কাঁদ মুখ করে তাকিয়ে রইলো আরুর দিকে, হঠাৎ আরুর হাতে থাপ্পড় খাবে ভাবেনি মেয়েটা, কনার কাঁদো কাঁদো মুখটার দিকে একবার তাকিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে আবার ছেড়ে দিয়ে বলল,

~ বলদ কোথাকারে, এতো কিউট একটা ছেলে তোকে প্রপোজ করলো, কোথায় তুই আহ্লাদে আধখানা হয়ে এক্সেপ্ট করবি তা না! কালই তুই উনাকে হ্যাঁ বলবি। ওকে?

কনা গালে হাত রেখে শ্বাস টেনে বলল,
~ কিন্তু আরু, বাসায় জানতে পারলে যে খুব প্রবলেম হবে..!
আরু নিশ্চিন্ত একটা ভাব নিয়ে বলল,

~ ধুর, আমি থাকতে আমার বেস্টির কোনো প্রবলেম হবে!প্রশ্নই আসে না!
~ সত্যিই..!

~ হ্যাঁঁ চোনা, (গাল টেনে)! এবার খাবার গুলো চটপট ফিনিশ করো তো দেখি,

~ আরুঃ ! ইশান ভাইয়া জানতে পারলে,
~ (ধমক দিয়ে) ইশান ভাইয়ার নাম নিবি তো, খাবার আরো কয়েকগুন বাড়িয়ে দিবো!

কনা আর কথা বাড়ালো না! আরুর থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিয়ে ভালো মেয়ের মতো খাবারের প্রতি মনোনিবেশ করলো!


লাইব্রেরিতে বসে বই পড়ছে দুজনে। আরু খুব মনোযোগ দিয়ে পড়ার চেষ্টা করছে কিন্তু বার বার কনার খোঁচানিতে বেচারি বিরক্ত হয়ে দিলো এক ধমক। ধমক খেয়ে কনা কাচুমাচু করে বলল,
~ আমার ভিশন ভয় করছে দোস্ত!

~ ভয়? কিসের ভয়? উফফ…! কনা তোকে বলেছি না চাপ নিস না! আমি সব ম্যানেজ করে দিবো।

কনা চাপা গলায় বলল,
~ আরে আমি কি আমার কথা বলেছি নাকি? আমি তো তোর কথা বলছি?
আরু কপাল কুঁচকে বলল,
~ মানে? আমি কি প্রেম করি নাকি?

কনা মুখ বাকিয়ে বলল,
~ তুই আর প্রেম? লাইক সিরিয়াসলি?

আরু চোখ পিট পিট করে ঠোঁট উল্টে কতক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল,
~ কেন কি প্রবলেম? আমি কি মানুষ না? নাকি আমার মন নেই,
কনা মুখ টিপে হেসে বলল,

~ ইশান ভাইয়া থাকতে আরু করবে প্রেম? যেদিন এটা হবে সেদিন তো আমি লুঙ্গি ডান্স মারুম।

~ হ্যাঁ রে, তুই এটা ঠিকই বলেছিস! ঐ খাটাশ ~ থুক্কু ভাইয়া, উনি যতদিন আমার লাইফে আছে, ততদিন প্রেম কি আমার দেখতে হবে না! উনার যেদিন বিয়ে হবে না? দেখিস সেদিন আমি উনার বাসর ঘরে গিয়া নাগিন ডান্স দিয়া আসমু হুহ!

কনা হেসে ফেললো। বলল,
~ হ্যাঁ রে~ আমিও সেটাই বলছি! তুই যে তখন খাবার গুলো খেলি না, সব তো আমাকেই খাওয়ালি! এটা যদি ইশান ভাইয়ার কানে একবার যায় তো….

কনার কথা শেষ না হতেই আরু তার মুখ চেপে ধরলো। চারপাশে একবার চোখ বুলিয়ে বলল,

~ আবে ডাফার, চুপ কর! চারপাশে ইশান ভাইয়ার চেলা ফেলার অভাব নেই, শুনে ফেললে ইশান ভাইয়ার কানে তুলে দিবে! আর ইশান ভাইয়া একবার জানতে পারলে আমায় কাঁচা গিলে খাবে!
কনা জিভ কেটে ভ্রু উঁচিয়ে বলল,

~ ইশশ! সরি সরি সোনা! আমার একদম মাথায়ই ছিলো না!
~ হু ঠিকাছে! আর কথা না বাড়িয়ে এবার বইয়ে মন দে।
~ হু!
আরু আবার বইয়ে মুখ গুঁজল। খানিকবাদে তার মনে হতে লাগলো তার ঠিক সামনে কেউ দাঁড়িয়ে আছে, কিন্তু মুখ তুলে তাকানো সাহস তার হচ্ছে না! বাই এনি চান্স এটা যদি ইশান হয়?

? ভয়েই গলা শুঁকিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু না তাকালেও যে কপালে দুঃখ নির্ধারিত। মনে মনে কতক্ষণ দোয়া দুরুদ পরে একটু একটু করে মুখ তুললো।

ছেলেটার পায়ের দিকে তাকাতেই দেখলো একটা চামড়ার স্যান্ডেল পরে আছে, পা থেকে দেখতেই মনে হলো, না এটা ইশান নয়, কারন ইশান তো সকালে এই গেটআপে বের হয়নি।

ছেলেটা পরনে একটা খয়েরী রঙের জিন্স, যার কালার উঠে যাওয়াতে অন্যরকম ফ্যাকাশে লাগছে। গায়ে জড়ানো সবুজ টী~ শার্টের উপর একটা পাতলা চাদর।

চেহারাটায় একটা তেল চকচকে ভাব রয়েছে। আর অন্যদিকে ইশান তো আজ কালো প্যান্টের সাথে অফ হোয়াইট টি~ শার্ট আর তার উপর কালো জ্যাকেট পরেছিলো, দেখতে তো পুরো চকলেট বয় টাইপ লাগছিলো। তাকে দেখে অবশ্য প্রথম দফায় আরু ক্রাশ খেয়েছে কিন্তু পরের দফায় বিরক্ত হয়ে মনে মনে খানিক বকে দিলো,

~ ইতর ছেলে এতো সুন্দর হওয়ার দরকারটা কি ছিলো হ্যাঁ?

~ তার উপর এমন ড্রেসআপ, আচ্ছা ভার্সিটি কি পড়তে যাওয়া হয় নাকি মেয়েদের দেখাতে যাওয়া হয় দেখো দেখো আম আ ক্রাশ বয়,

আর ঐ সিল্কি চুল গুলো নিয়ে তার কি যে ঢং, উনার ঐ টুকু চুল নিয়ে যা ঢং করে তা তো পুরো বছরে আমার এতো বড় চুল নিয়েও করতে পারিনা, এতো ঢং দেখলে তো ইচ্ছে করে,

ছেলেটার ডাকে ভাবনার সুঁতো কাটলো আরুর। ছেলেটির দিকে মুখ উঁচিয়ে তাকাতেই ছেলেটি দাঁত কেলিয়ে আবার বলল,
~ ভাবি। ভাই আপানারে ডাকতাছে,

ছেলেটির কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে এলো আরুর। একবার আশেপাশে চোখ বুলালো, ব্যাপার টা কি? ছেলেটা কি ওকেই বলছে নাকি অন্য কাউকে! নাহ্ অন্য কাউকে বলছে বলে তো মনে

হয়না, কারন আশে পাশে যারা আছে তারা যথেষ্ট দুরে আর ছেলেটার যদি অন্যকাউকে বলতেই হয় তাহলে তার মতো করেই তাদের সামনে ঠিক এই রকম দুরত্ব নিয়ে দাঁড়িয়ে বলতে হবে।

আরু কনার দিকেও একবার দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো। ছেলেটা কি তাহলে কনাকে বলছে? কিন্তু ছেলেটার স্থীর দৃষ্টি যে বার বার তার দিকেই তাকাচ্ছে।

আরুর কুঁচকানো ভ্রু টা খানিক কুঁচকে বলল,
~ ভাবি…! কে ভাবি? আপনি কাকে বলছেন? আর কে আপনি ভাইয়া?

আরুর কথা শুনে ছেলেটা আবারো দাঁত কেলালো। বলল,
~ ভাবি আপনাকেই বলতাছি। ভাই আপনাকে ডেকে পাঠায়ছে!

আরু এবার বেশ বিরক্ত হলো। ছেলেটি কে সে চিনে না! এর আগে কখনো দেখেছে বলেও মনে হচ্ছে না। তাহলে তাকে ভাবি বলার কারন টা কি হতে পারে? আর অযথা ভাবিই কেন ডাকবে?

ও কি ছেলেটির ভাইয়ের বউ নাকি? এই আজায়রা ঝামেলা গুলো যে শুধু তার কাছেই কি করে এসে জোটে ভেবে পায়না আরু।

এসব যদি একবার ইশানের কানে যায় তাহলে সে নিশ্চিত আরুকে খুন করবে, সাথে করে এই ছেলের ঐ বেচারা ভাইটিকেও যে কি না তাকে মনে মনে বউ ভাবতে শুরু করেছে।

আরু একবার কনার দিকে তাকালো। কনাও ভ্রু কুঁচকে ছেলেটির দিকে তাকিয়ে আছে! হয়তো সেও বোঝার চেষ্টা চালাচ্ছে। আরু কনার থেকে দৃষ্টি সরিয়ে ছেলেটির দিকে

তাকালো। ছেলেটি এখনো দাঁত কেলিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে। ছেলেটির এভাবে দাঁত কেলানো দেখে আরুর ভীষণ বলতে ইচ্ছা করছে,

~ (বেটা এভাবে দাঁত কেলাচ্ছিস কেন? এখানে কি ক্লোজ আপের এ্যাড চলছে নাকি? )
আপাতত নিজের ইচ্ছেটাকে দমিয়ে রেখে বলল,

~ সরি ভাইয়া আমি আপনাকে চিনি না! আর আপনার ভাইকেও চিনি না। আপনি হয়তো ভুল করছেন, আমার এখনো বিয়ে হয়নি! শুধু শুধু ভাবি,

আরুর কথার মাঝেই ছেলেটি দাঁত কেলিয়ে বলে উঠলো,
~ না ভাবি! আপনি আমাকে চিনবেন না, আমি সাগর। ভাইয়ের কাছে একটা কাজে আসছি, তাই ভাই কইলো আপনাকে ডাইকা নিতে।
কনা ভ্রু কুঁচকে বলল,

~ আরে ভাই, এতো ভাই ভাবি করছেন কেন? কে আপানর ভাই শুনি?

ছেলের এবার দিগুণ দাঁত কেলিয়ে বলল,
~ ইশান ভাই।


পর্ব ৬

সাগরের মুখে ইশানের নামটা শুনতেই বিষম খেলো আরু। কনা মুচকি হেসে বলল,
~ হু, আপনি ঠিক জায়গাতেই এসেছেন।

কনার কথায় যেন সাগরের উৎসাহ আরো কয়েক ডজন করে বেড়ে গেলো। মাথা চুলকে আবার এক দাঁত কেলানো হাসি দিয়ে বলল,
~ ভাবি তারাতারি চলেন, ভাই অনেক্ষন ধইরা ওয়েট করতাছে, নবীন বরনের অনুষ্ঠানের অনেক কাজ বুঝেনই তো, তাই কাজ রাইখা আসতে পারবোনা বইলাই আমারে পাঠাইলো।

আরুর ভিতর থেকে কোনো কথা বের হচ্ছেনা। কনার দিকে করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে কতগুলো শুকনো ঢোক গিললো।

ভয়ে গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছে, না জানি তখন খাবার না খাওয়ার কথা গুলো জেনে গেলো কি না! এখন যদি তার শাস্তি স্বরুপ ইশান তাকে গিলে খায়, খেতেই পারে, ইশান বার বার যেভাবে রাক্ষসের মতো করে ক্ষেপে যায় তাতে করে গিলে খাওয়াটা কোনো বড় ব্যাপার হবে না তার কাছে।

কনার হাতের ছোঁয়ায় ঘোর কাটে আরুর। কনা তার হাতের উপর হাত রেখে বলল,

~ আরু এখনো কি ভাবছিস_যা তাড়াতাড়ি!
আরু আবারো একটা শুকনো ঢোক গিললো। সাগরের দিকে একবার তাকাতেই ছেলেটা দাঁত কেলিয়ে হাটা ধরলো।

ছেলেটার এভাবে দাঁত কেলানোতে আরুর কেবল কাটা গায়ে নুনের ছিটা বলেই ঠাওর হচ্ছে। অন্যের দুঃখেও ছেলেটা কি দারুন ভাবে দাঁত কেলিয়ে যাচ্ছে। আর কিছু না ভেবে উঠে ছেলেটার পিছনে হাটা ধরলো আরু।

অতিরিক্ত ভয়ের দরুন সব কিছু মাথার উপর থেকে যাচ্ছে। এখানে আসতে আসতে মুখস্থ করা সব কটা দোয়া পরে শেষ করেছে, এখন আপাতত আল্লাহ আল্লাহ বলে জিকির করে মনে মনে আওড়াতে লাগলো ইশানের প্রশ্নে কি জবাব দিলে ঠাস ঠাস করে থাপ্পড় খেতে হবে না!

সাগর ক্রমাগত দাঁত কেলাচ্ছে। সাগরের এভাবে দাঁত কেলানোতে ইশানের কোনো ভাবান্তর নেই। মানুষ টা বিরক্ত হচ্ছে বলেও মনে হচ্ছে না! হয়তো সে সাগরের এই দাঁত কেলানো দেখে দেখে

অভ্যস্ত_। প্রথম প্রথম হয়তো তার এই স্বভাবের জন্য বেশ কয়েকটা চড় থাপ্পড় খেতে হয়েছিলো। কিন্তু তবুও এই সাগর নামের ছেলেটির কোনো পরিবর্তন ঘটাতে পারেনি নিশ্চিত।

সাগর দাঁত কেলিয়ে বলে উঠলো,
~ ভাই, আমি বলছিলাম না আমি ভাবিরে না দেইখাই চিনতে পারমু। দেখেন ভাই ঠিকই আমি ভাবিরে চিনে নিয়ে আসলাম।
সাগরের কথায় ইশান মুখ উঁচিয়ে তাকালো।

নিচের ঠোঁট দিয়ে উপরের ঠোঁট টা হালকা চেপে ধরে সাগরের দিকে তাকালো। ভাবলেশহীন ভাবে বলল,

~ গুড জব সাগর, এখন তুই তারাতারি যা, তোর তো ফি_কমপ্লিট করতে হবে! যা…

সাগর জিভ কেটে দাঁত কেলিয়ে বলল,
~ ইশশ রে ভাই এমদম ভুলে গেছি! আসি ভাই! ভাবি আসলাম। ভালো থাকবেন।

বলেই হাওয়ার গতিতে চলে গেলো ছেলেটি! শেষ বার ছেলেটার মুখে ভাবি ডাকটা শুনে মেজাজটা তার চরমে উঠে আকাশ ছুঁই ছুঁই করছে। কোথায় সে কি না ভাবলো ছেলেটা তার ভাইয়ের বউ ভেবে তাকে ভাবি ডাকছে, আর শেষে কি না ভাই ভাবি সব ঠিক থেকেই বের হলো তার ভাই এই খাটাশ ছেলে।

বয়েই গেছে এর বউ হতে! প্রশ্নই আসে না!যে ছেলে কথায় কথায় থাপড়ায় উল্টায় দেয় তাকে বিয়ে করার চেয়ে ভালো হবে কচু গাছের সাথে গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলে পড়া। সাগরের মাথার তার যে কয়েটকা লুজ তাতো ওর দাঁত কেলানো দেখেই মনে হয়!

আর তাকে অকারনেই ভাবি ভাবি করে মরার জন্য ঠিক কতোগুলো তার লুজ হতে পারে সে ভাবনায়ই ডুব দিতে নিলে করোর ডাকে ভাবনায় ছেদ ঘটিয়ে বের হয়ে আসলো।

ইশান তো তার সামনেই দাঁড়িয়ে আছে, তাহলে পেছন থেকে কে ডাকলো? পেছনে তাকানোর সুযোগ না দিয়েই ছেলেটি তাদের সামনে এসে দাঁড়ালো।

আরু তার পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখতে লাগলো, ছেলেটাও ঠিক ইশানের মতোই ড্রেসআপ পড়ে আছে কিন্তু কেন? , ইশানের ড্রেসআপের সাথে মিল থাকার দরুন ছেলেটা পেছন থেকে দেখলে প্রথমে ইশান বলেই দারুন এক ভুল করতে পারবে সবাই।

তবে গায়ের রংটা একদম পার্ফেক্ট, ইশানের মতো ধবধবে নয়, মাথার চুল গুলোও বেশ সিল্কি তবে ইশানের গুলো আরো বেশি সুন্দর,

চোখ দুটো অনেকটা ইশানের মতোই তবে ভ্রুটা খানিক মোটা, সব মিলিয়ে পার্ফেক্ট, কিন্ত কে উনি? চেনা চেনা লাগছে বলে মনে হচ্ছে। আরুর ভাবনার প্রহর কাটলো ইশানের হেঁচকা টানে। এই ছেলেরও কোনো তাল গোল নেই।

তার যখন যেটা ইচ্ছে তখন সেটা করবে নাকি? ভয়ের চোটে যদি এখন হার্ট অ্যাটাক হয়ে যেতো তার দায় কে নিতো? ভয়ে চোখ দুটো খিঁচে বন্ধ করে নিলো আরু। কিছু একটা বলতে যাবে তার আগেই বিকট এক শব্দে চমকে উঠলো।

শব্দের উৎস বরাবর তাকাতেই দেখলো একটা ছেলে চিত হয়ে শুয়ে দুহাত দিয়ে ডান হাঁটুটা চেপে ধরে কাতরাচ্ছে। ঘটনাটা এতো তাড়াতাড়ি ঘটে গেলো যে সবই তার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। ইশান এখনো আরুকে ঝাপটে ধরে দাঁড়িয়ে আছে।

আর ইশানের পাশের ছেলেটা তাদের আড়াল করে দাঁড়িয়ে আছে, কিন্তু কেন? হচ্ছে টা কি এখানে? মাথার মধ্যে যেন সবটা দলা পাকিয়ে আটকে যাচ্ছে।

ছেলেটি এবার মুখ খুলল, ইশানের কাধে হাত দীর্ঘশ্বাস ফেলে তার পাশে দেয়াল বরাবর তাকিয়ে বলল,
~ জাস্ট একটুর জন্য,

ছেলেটির নজর অনুসরণ করে ইশানও সেদিকে তাকালো। আর দুজনকেই একদিকে তাকাতে দেখে আরু কপাল কুঁচকে সেদিকে তাকালো। দেয়ালের দিকে চোখ পড়তেই ভিতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো তার

দেয়ালের বুকে বিঁধে আছে একটা ধারালো ছুরি, প্রায় অর্ধেকের বেশিই বিঁধে গিয়েছে।

তার মানে এই ছুরিটা আরুর দিকেই তেড়ে আসছিলো, আর তাই ইশান তাকে হেঁচকা টানে সরিয়ে নেওয়াতে সেটা তার গায়ে লাগতে গিয়েও লাগলো না কারন এই ছেলেটি ইশান এবং আরু দু’জনকেই ঝাপটে ধরে সাইডে সরে গেলো। আর ছুরিটা সোজা গিয়ে বিঁধলো দেয়ালের মাঝে।

নিচে পড়ে থাকা ছেলেটি আবারো কুকিয়ে উঠলো। ইশান আরুকে ছেড়ে ছেলেটির কাছে দৌড়ে গিয়েই তার মাথা জাগিয়ে ধরলো, সাথে ছেলেটিও গেলো, ইশান ছেলেটির মাথা আরেকটু তোলার চেষ্টা করে পাশের ছেলেটাকে বলল,

~ শিহাব ওর মাথা থেকে প্রচুর ব্লেডিং হচ্ছে, এক্ষনি হসপিটালে নিতে হবে।

আরুও দৌড়ে গিয়ে শিহাবের পিছনে দাঁড়ালো।
শিহাব ব্যস্ত কন্ঠে বলে উঠলো,

~ হ্যাঁ হ্যাঁ, এই রাতুল, শান্ত, সাকিব, তাড়াতাড়ি ধর নিরবকে।
যাদের নাম ধরে ডাকা হলো, সবাই একপ্রকার দৌড়ে এসে নিরবকে ধরলো। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হলো হসপিটালের জন্য বেরিয়ে পড়লো সবাই।

আশে পাশের মানুষ গুলো বেশ জড়সড় হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো। তাদের মধ্যে দুটি মেয়ে দ্রুত পায়ে এগিয়ে এসে আরুর কাঁধে হাত রেখে বলল,

~ আরু তুমি ঠিকাছো তো?

মেয়েটার মুখে নিজের নাম শুনে অবাক চোখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে মাথা নাড়লো। তার মানে সে ঠিকাছে।

আরুর উত্তর শুনে পাশে থাকা মেয়েটি আরুর অন্য হাতটা ধরে বলল,

~ থ্যাংক গড! আরেকটু হলেই যে কি হতে যাচ্ছিলো, ভাবতেই গায়ে কাটা দেয়!

মেয়েটার কথা শুনে ইশান পেছন থেকে বলে উঠে,
~ কিভাবে কি হলো বলতো? আমি এখনো কিছু বুঝতে পারছিনা!
ইশানের কথায় প্রথম মেয়েটি বলল,

~ আমি বলছি,
একটু দুরে কয়েক টুকরোতে পরিনত হওয়া ভাঙ্গা টেবিলটা দেখিয়ে বলল,

~ এটার উপর উঠে ঐ(উপরের দিকে ইশারা করে) ফুলের দড়িটা কাটছিলো। টেবিলটা অনেক পুরনো তো বুঝলি তাই হয়তো ভার টা নিতে পারেনি। ভেঙ্গে একদম নিচে, আর এভাবে পড়ে যাওয়াতে ছুরিটা,

দ্বিতীয় মেয়েটা বলল,
~ বেচারার পা টা বোধহয় ভেঙ্গেই গিয়েছে!

ইশান একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। মেয়ে দুটোর দিকে তাকিয়ে বলল,
~ হু, আচ্ছা এতো টেনশন করিস না, আরেকটু সাবধানে কাজ করতে হবে!

একটা ছেলে এগিয়ে এসে বলল,
~ ভাইয়া আমরা কি কাজ শুরু করবো?

ইশান একটা শুকনো হাসি দিয়ে বলল,
~ হ্যাঁ হ্যাঁ অবশ্যই, যাও যাও সবাই কাজে লেগে পড়ো। নুর, মাহিয়া তোরাও যা!

দুজনেই একটা শুকনো হাসি দিয়ে যে যার কাজে মন দিলো। আরু এখনো ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে, ব্যাপারটা একটু একটু করে সামনে আসছে আর আরুর ভয়টাও যেন ধীরে ধীরে বেড়ে যাচ্ছে!

ওতো উঁচু থেকে টেবিলটার পায়া ভেঙ্গে ছেলে টা নিচে পড়লো। ছেলেটার পা টা তো ভাঙ্গলোই সাথে মাথাটাও ফেটেছে! প্রচুর ব্লেডিংও হয়েছে!

ফ্লোরের দিকে তাকাতেই মাথাটা কেমন ভার হয়ে এলো। রক্ত দেখে প্রচুর গা গোলাচ্ছে, সামনে তাকাতে দেখলো ইশান তার দিকেই আসছে! তারপর?

তারপর আর কিছু মনে নেই! শরীরের ভার ছেড়ে দিয়ে ফ্লোরে লুটিয়ে পড়লো আরু।


পর্ব ৭

চোখ খুলতেই নিজেকে একটা গাড়ির মধ্যে আবিষ্কার করলো আরু। মাথাটা এখনো ভার ভার লাগছে, মনে হচ্ছে যেন তার মাথার দুপাশে আরো দুটো এক্সট্রা মাথা লাগানো হয়েছে!

কি বিশ্রী ব্যাপার, একটা মানুষের তিনটা মাথা, ভাবতেই কেমন ভয়ংকর লাগছে। মাথাটা হালকা জাগিয়ে এদিক ওদিক তাকালো। আশে পাশে কেউ নেই।

আচ্ছা কোনো ভাবে কি সে কিডন্যাপ হয়েছে? হায় আল্লাহ, আমি কিডক্যাপ হয়েছি! এখন যদি কিডন্যাপার আমায় মেরে কোথাও ফেলে রেখে যায়? আমার মা!

আমাকে মেরে ফেললে আমার মায়ের কি হবে? (ভাবতেই কান্না পেয়ে গেলো)কিভাবে এখন এখান থেকে পালানো যায় ভাবতে লাগলো! হঠাৎ কি মনে করে গাড়িটা ভালো করে দেখতে লাগলো! খুব চেনা চেনা বলে ঠাহর হচ্ছে!

কিন্তু কিছুতেই মনে করতে পারছেনা, আচ্ছা কিডন্যাপার কি আমার কোনো পরিচিত? হতেই পারে, তাই হয়তো গাড়িটা এতো চেনা চেনা লাগছে, যদি পরিচিত হয় তাহলে তার হায়ে পায়ে ধরে কান্নাকাটি করলে নিশ্চিত যেতে দিবে, আরু এবার নিজের দিকে তাকালো।

তার হাতে পায়ে তো কোনো কিছু দিয়ে বাঁধাও নেই! ইশশ কিডন্যাপারো কি বোকা, কিডন্যাপ করেছে অথচ এভাবে হাত পা না বেঁধেই চলে গেলো৷।

এটা ভেবেই খানিক হেসে নিলো আরু। যেহেতু হাত পা বাঁধেনি সেহেতু এখান থেকে পালানো একটা চেষ্টা তো করাই যায়, তাহলে আর কিডন্যাপারের হাতে পায়ে ধরে কান্নাকাটি করে চোখ মুখ ফুলাতে হবে না! হি হি।

গাড়ির দরজার দিকে হাত বাড়াতেই কেউ অন্যপাশ থেকে কেউ গাড়ির দরজা খুলে ভিতরে বসে পড়লো। দরজাটা আটকানোর শব্দে আরু চমকে উঠে চুপচাপ সিটের সাথে লেগে বসলো। হঠাৎ কেউ চলে আসবে বুঝতেই পারেনি বেচারি! ভয়ে হাত পা মৃদু মৃদু কাঁপছে!

যদি সে এখন তাকে মেরে দেয়? আচ্ছা এই ঘর দুপুরে কাউকে মারতে মানুষটার ভয় করবে না?

ধুর খুনিদের আবার ভয় কিসের, তাছাড়া ওরা খুন করতেও কি টাইম দেখে নাকি? আমিও না কি ভাবছি বোকার মতো? এখন আমার চিৎকার করা উচিৎ? না…!

! চিৎকার করলে যদি আবার গলায় ছুরি বসিয়ে দেয়! ইয়া মাবুদ রক্ষা করো! না না না, আপাতত চিৎকার করার প্লান ক্যানসেল! অন্য কোনো প্লান? হ্যাঁ__হাতে পায়ে ধরে কান্নাকাটি করা যায়। তাহলে এই খুনির মনটা গলেও যেতে পারে!

যেই ভাবা সেই কাজ, উদ্দেশ্য এখন এই কিডন্যাপারের হাতে পায়ে ধরে কান্নাকাটি করা।

মুখটা কাঁদো কাঁদো করে নেওয়া উচিৎ, রেডি 1, 2, 3, পাশে ঘুরে সিটের সাথে হেলান দেওয়া মানুষটার মুখটা দেখতেই চিৎকার করে আবার সিটের সাথে লেপ্টে বসলো, গেলো গেলো, গেলো! সব প্লান ধুয়েমুছে গেলো!

এটা তো কোনো কিডন্যাপার নয়, স্বয়ং ইশান ভাইয়া!

কি বুদ্ধির বহর, বুদ্ধির যে ‘ব’ টাও তার মাঝে নেই তা বেশ বুঝতে পারলো। নিজের বোকামির জন্য নিজের গালেই যে চড় বসাতে ইচ্ছে করছে। মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে কত কি ভেবে ফেললো। ইশান যদি কোনো ভাবে এসব আন্দাজও করতে

পারে, তাহলে নির্ঘাত ধরে বেঁধে পাবনায় পাঠিয়ে দিবে, পাঠিয়ে দিবে কি বলছে, নিজে দায়িত্বে নিয়ে গিয়ে রেখে আসবে।

আরুর হঠাৎ চিৎকারে ইশান তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো। তার দিকে একটু ঝুকে এসে কপালে হাত ঠেকিয়ে বলল,

~ চিৎকার করছিস কেন? শরীর এখন কেমন লাগছে?
আরু চোখ পিট পিট করে আঁড়চোখে ইশানের দিকে তাকালো। মুখে শুকনো হাসি দিয়ে বলল,

~ ভালো ল, লাগছে ভাইয়া।

ইশান কতক্ষণ ভ্রু উঁচিয়ে তাকিয়ে থেকে ভাবলেশহীন ভাবে বলল,
~ ক্যান্টিনের খাবার গুলো কনাকে কেন খাইয়েছিস __?

ইশানের প্রশ্নে বিষম খেলো আরু, কাশতে কাশতে ইশানের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিলো। মনে মনে দোয়া পড়তে পড়তে নখ কাটতে লাগলো। কিছুক্ষণের জন্য ব্যাপরটা যে মাথা থেকেই বেরিয়ে

গিয়েছিলো। এবার কি হবে? নিশ্চিত ছেলেটা তাকে নুন মরিচ ছাড়াই কাঁচা গিলে খাবে!

আরুকে চুপ থাকতে দেখে ইশান এবার আরুর দিকে ঘুরে বসলো, ইশানের হঠাৎ ঘুরে বসাতে আরুর কাঁপা~ কাঁপি শুরু হয়ে গেলো। আপাতত কি বলে বাঁচা যায় ভয়ের চোটে তো কিছু মাথায়ই আসছে না!

কি ভয়ংকর ব্যাপার, মানুষ যখন অতিরিক্ত ভয় পায় তখন মাথা থেকে সব কিছুই উবে যায়। আরুর সাথেও বর্তমানে এটাই হচ্ছে। আচ্ছা অতিরিক্ত ভয়ের দরুন যদি সে এখন জ্ঞান হারায় তাহলে নিশ্চিত এই রাক্ষসের থেকে মুক্তি মিলবে।

উদ্দেশ্য এখন সে জ্ঞান হারাবে কিন্তু তার সামনে বসে থাকা মানুষটা কিছুতেই তা হতে দিবে না! চোখ মুখ কঠিন করে তাকিয়ে আছে ইশান। পারলে তো গিলে খায় বলে আরুর ধারণা,
ইশান ধমকের সুরে আবারো বলে উঠলো,

~ কি হলো কথা বলছিস না কেন? বল…!
ইশানের ধমকে বেচারি কেঁপে উঠলো। ভয়ে চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে নিয়ে বলল,

~ ভ, ভাইয়া ওওর ন, ন, নাকি খুব ক্ষিধে পেয়েছিলো। ত, ততাই__

আরুর কথা শুনে ইশান মুখ কুঁচকে বলল,

~ সো হোয়াট? ক্ষিধে পেয়েছে বেশ ভালো কথা, ক্যান্টিনে অঢেল পরিমানে খাবার ছিলো! সেখানে অর্ডার করে খাবে_! তোর খাবার কেন খেলো?

ইশানের এমন উত্তরে আরু ঢোক গিললো।
~ (এই রে এখন আমি এই রাক্ষসকে আর কি বলবো? ধুর বাল, এতো ব্রিলিয়ান্ট হওয়ার কি দরকার ছিলো?

মিথ্যে কথা বললেও বুঝে যায়!যত্তসব আজায়রা, আমার মতো হালকা পাতলা ব্রিলিয়ান্ট হলেই হতো! দুজনে মিলে মিশে ভালোই যেতো।

ইশানের থাপ্পড় খেয়ে ভাবনার সুঁতো ছিড়ে লন্ড ভন্ড করে বেরিয়ে আসলো বেচারী। কাঁদো কাঁদো মুখ করে ইশানের দিকে তাকাতেই আবার মাথা নিচু করে নিলো!

! আবার সেই লাল করা চোখ, খুব কান্না পেয়ে যাচ্ছে, একদম হাত পা ছড়িয়ে বাচ্চাদের মতো করে করে কান্না যাকে বলে, এর আগেও তো মামুষটার থেকে কারনে অকারনে খুব বকা খেয়েছে, আর থাপ্পড় গুলো একটার সাথে আরেকটা ফ্রী বলেই মনে হয়েছে!

! যেমন দোকানে কোনো কিছু কিনতে গেলে দেখা যায় একটা কিনলে আরেকটা ফ্রী, সেভাবেই! তাহলে আজ হঠাৎ কি হলো তার, চোখ দুটো ভরে উঠলো, টুপ করে দু ফোঁটা জল গড়িয়ে পরলো।

আরুর চোখে জল দেখেই ইশানের বুকের ভিতরটা ছ্যাত করে উঠলো। আরুর দিকে এগিয়ে এসে দু’গালে হাত রেখে মুখ উঁচিয়ে ধরলো। মেয়েটা যে সত্যিই কাঁদছে _হঠাৎ কি হলো ওর!

আরুর চোখের জল দেখে ইশানের বার বার এটাই মনে হচ্ছে তার বুকের বা পাশ টা তে কেউ ক্রমাগত ছুরিঘাত করছে। জড়ানো গলায় জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিয়ে বলল,

~ আরু? কি হয়েছে তোর!কাঁদছিস কেন? শরীর খারাপ লাগছে? আচ্ছা ব্যাথা পেয়েছিস? বল! ক, কোথায় ব্যাথা পেয়েছিস! ত, তাকা আমার দিকে, দেখ একদম কাঁদবিনা বলে দিলাম!একদম ন, ন, না!

ইশান আরুকে ছেড়ে দিয়ে গাড়ি থেকে বের হয়ে গেলো। গাড়ির সাথে জোরে নিজের হাতটা বারি দিয়ে দু বার নিশ্বাস
ফেললো। এই মুহুর্তে নিজের উপরই যে খুব রাগ হচ্ছে! এমনিতেই মেয়েটার শরীর ঠিক নেই!

! তার উপর_ কি দরকার ছিলো থাপ্পড় দেওয়ার! রাগে নিজের মাথার চুল নিজেরই ছিঁড়তে ইচ্ছে করছে। এই রাগেরও বলি হারি যায়, একবার উঠলে কিছুতেই কন্ট্রোল হয় না!

হঠাৎ তার ফোনটা বেজে উঠলো। ফোনটা হাতে উঠিয়ে নিয়ে দেখলো স্ক্রিনে বড় বড় অক্ষরে ভেসে উঠলো মনি, মানে আরুর মা।
~ হ্যাঁ, মনি বলো?
~ ইশান, বাবা তোরা কোথায়? এখনো আসছিস না!
~ এই তো মনি আমার কাজ শেষ_আরুও আমার সাথেই আছে। আমরা পাঁচ মিনিটের মাথায় বের হচ্ছি।

~ আচ্ছা বাবা! আর হ্যাঁ শোন না?
~ হ্যাঁ বলো?

~ বলছিলাম যে, আজ মেয়েটা কে পারলি কিছু খাওয়াতে?
মনির কথা শুনে ইশান ছোট করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
~ না মনি! আসলে আজ একটু বেশিই বিজি ছিলাম, তাই তোমার মেয়েকে সামনে বসে খাওয়াতে পারিনি! আর সেই সুযোগে তোমার মেয়ে সব খাবার তার ফ্রেন্ডকে খাইয়েছে!

~ এই মেয়েকে নিয়ে যে আমি কি করবো_
~ আহা মনি তুমি এতো কেন ভাবছো?

এতো টেনশন করার কিছু নেই, আমি থাকতে তোমার মেয়ে না খেয়ে থাকবে! হতেই পারেনা!আমি ঠিক ওকে খাইয়ে দিবো। টেনশন করো না একদম।

~ হ্যাঁ রে,
~ হু! আচ্ছা এখন রাখলাম!
~ ওকে! সাবধানে ফিরিস কেমন?
~ হু!
ইশান ফোন কেটে গাড়ির মধ্যে ঢুকে বসলো। ততক্ষণে আরুও চোখের জল মুছে শান্ত মেয়ের মতো চুপচাপ বসে আছে।

ইশান একবার আঁড়চোখে তাকিয়ে সিটের সাথে হেলান দিয়ে বসতেই আরু তাকে খামচে ধরলো। ইশান সেদিকে তাকাতে দেখলো আরুর পাশ থেকে কেউ জানালায় নক করছে।

বেচারি হঠাৎ ভয় পেয়ে গেলো। ব্যাপারটা বুঝতে পেরে মনে মনে হেসে ফেললো ইশান। আরুর সিটের দিকে ঝুঁকে গাড়ির জানালা খুলে দিলো, বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটি একটা হাসি দিয়ে দুটো

বিরিয়ানির প্যাকেট আর দুটো কোকের বোতল প্যাকেট সহ এগিয়ে দিয়ে বলল,

~ সরি ইয়ার একটু লেট হয়ে গেলো! প্রিন্সিপালের রুমে মিটিং ছিলো রে তাই, বের হতে হতে__! এই নে তোর খাবার।
ইশান মুখে হালকা হাসি জুড়ে বলল,

~ থ্যাংক্স রে, আর হ্যাঁ শোন, কবির স্যারকে বলে দিস আমি বাসায় চলে যাচ্ছি! বাকি কাজ কাল কমপ্লিট করবো।

ছেলেটা মাথা নেড়ে চলে গেলো। ইশান এখনো আরুর দিকে ঝুঁকে রয়েছে! দুই সেকেন্ডের জন্য তার মাথা থেকেই বেরিয়ে গিয়েছিল আরুর দিকে এভাবে ঝুকে আসাতে আরুর কপাল তার বুকের সাথে লেপ্টে রয়েছে!

! হঠাৎ মনে পড়াতেই তাড়াহুড়ো করে সরে গেলো! আরুর দিকে আঁড়চোখে একবার তাকাতেই দেখলো আরু চোখ বন্ধ করে আছে, মৃদু কাঁপছে মেয়েটা।

এই মুহুর্তে আরুর নিজেকে বড্ড মাতাল বলে মনে হচ্ছে! ইশানের শরীরের গন্ধে ভীতরে কেমন ঢেউ খেলে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে! যার দরুন হাত পা~ ও সঙ্গ দিয়ে মৃদু কেঁপে উঠছে।

ইশানের গলার আওয়াজে চোখ খুলে নড়েচড়ে বসলো।
ইশান শান্ত কন্ঠে বলল,

~ এখানে তোর পছন্দের বিরিয়ানি আছে, সাথে কোলড্রিংকসও..। খেয়ে নে ঝটপট,

আরু ভ্রু কুঁচকে তাকালো! আবার সেই খাবার।
এখন না খাওয়ার জন্য কোনো অজুহাতও দেখানো যাবে না! তাহলেই আবার ধুম ধারাক্কা থাপ্পড় খেতে হবে। তাই বাধ্য মেয়ের মতো চুপচাপ খেয়ে নিলো।

_আরুর খাওয়া শেষ হতেই গাড়ি স্টার্ট দিলো ইশান। গাড়ি চলাকালীন কেউই কোনো কথা বলেনি! আরু জানালা খুলে সেদিকে মুখ করে বসে রইলো আর ইশান কয়েরবার আঁড়চোখে তাকে দেখে নিলো।

হঠাৎ গাড়ির ব্রেক কষতেই দুজনে সামনের দিকে খানিক ঝুঁকে গেলো আরু সিট বেল্ট খুলে আঁড়চোখে একবার ইশান কে দেখে নিয়ে নেমে গেলো।

ইশানও অন্যপাশ দিয়ে বের হয়ে ফোন হাতে কাকে যেন কল করায় ব্যস্ত হয়ে গেলো। আরু আর দাঁড়িয়ে না থেকে সামনের দিকে পা বাড়াতেই দাঁড়িয়ে পড়লো।

চারপাশে একবার চোখ বুলালো। এটা তো তাদের বাড়ি নয়!


পর্ব ৮

এটা তো তাদের বাড়ি নয়, বরং তাদের বাড়ির মতোই দেখতে আরেকটা বাড়ি, কিন্তু ইশান তাকে নিয়ে এখানে কেন এলো?

? ভুল করে কি তাদের বাসা বুঝে অন্য কোথাও চলে আসলো নাকি? পেছন মুড়ে ইশানকে খুজতে লাগলো, দেখলো একটু দুরে দাঁড়িয়ে ফোনে কারোর সাথে কথা বলছে, কোনো কথা না বলে ইশানের পেছন গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো,

ইশান কথা শেষ করে পেছন তাকাতেই দেখলো আরু দাঁড়িয়ে, ফোনটা পকেটে রাখতে রাখতে বলল,
~ কি রে দাঁড়িয়ে আছিস যে_?

আরু ইশানের কথায় ভ্রু কুঁচকালো,
~ (তাহলে কি করবো? রাস্তায় ঘুমিয়ে পড়বো? )__এটা কোথায় আসলেন? আমি তো চিনি না! তাহলে দাঁড়িয়ে থাকবো না কি করবো?

ইশান আশেপাশে তাকিয়ে বলল,
~ ঠিক বাড়িতেই তো আসলাম।
~ মানে, কি বলছেন ভাইয়া? মাথা ঠিকাছে তো?

~ (মাথায় হাত দিয়ে), হ্যাঁ মাথা তো ঠিকই আছে!

~ আরে আমি এই ঠিকের কথা বলিনি। আমরা মামুর বাড়িতে না এসে ভুল বাড়িতে এসেছি! নিজের বাড়ি নিজেই ভুলে গেলেন!

ইশান আরুর মাথায় চাটি মেরে বলল,

~ আরে আহাম্মক এটা বড় খালার বাসা, আজ লিনা আপুকে দেখতে আসবে_ভুলে গেলি?

আরু জিভ কেটে ইশানের দিকে তাকালো। মাথায় হাত ডলে একটু হাসার চেষ্টা করে বলল,

~ ওহ হ্যাঁ তাইতো_আমার তো মনেই ছিলো না!

~ মনে থাকবে কি করে! তুই তো হলি এক নম্বরের ডাফার_!
আরু ভ্রু কুঁচকে বলল,

~ কি! আমি ডাফার? (আপনি ডাফার, সাথে আপনার বউও ডাফার, পেত্নীর জামাই একটা)
ইশান আরুর হাত ধরে বলল,

~ নাম্বার ওয়ান ডাফার, এখন তাড়াতাড়ি ভেতরে চল। এমনিতেই আমরা অনেক লেট!

ইশান একপ্রকার আরুর হাত ধরে টানতে টানতে ভিতরে নিয়ে গেলো।
দুজনেই তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নিলো। রাত আট টার দিকে ছেলেপক্ষ দেখতে আসলো লিনাকে!

লিনা হলো ইশানের বড় খালার ছোট মেয়ে। তারা মোট তিন বোন, বাকি দুই বোনই বিবাহিত, নিজেদের হাসবেন্ডদের সাথে দু বোনই লন্ডনের প্রবাসী হয়েছেন কয়েক বছর আগে, লিনাকে হঠাৎ দেখতে আসার কথা হলে তারা দেশে ফিরতে পারেননি।

লিনা এবার মাস্টার্স কমপ্লিট করেছে। ইশানের থেকে এক বছরের বড়। তার নিজের ইচ্ছেতেই পড়াশোনা শেষ করে এবার বিয়েতে মত দিয়েছে। ছেলে অবশ্য তারই ভালোবাসার মানুষ।

দীর্ঘ পাঁচ পাঁচটি বছর পর অবশেষে তা পূর্নতা পেতে চলেছে, এই ভালোবাসার পূর্নতা পাওয়ার পেছনে অবশ্য আরু আর ইশানেরই সর্ব প্রচেষ্টা ছিলো। লিনা তো একসময় হাল ছেড়ে দিয়েছিলো এই ভেবে যে ফ্যামিলি মেনে নিবে না। আর তখনই ইশান আরু তাদের

সর্বোচ্চ চেষ্টাতে সেটা সফল করে দিলো। আর তাইতো লিনা আর ইভান খুশি হয়ে দুজনকে দোয়া করে বলেছিলো তোমরাও সারাজীবন একসাথে থাকবে! সে কথা শুনে আরু তো হেসেই খুন!

আরুর হাসি দেখে লিনা খোঁচা মেরে বলেছিলো,
~ হেসোনা বাছা সময় হলে ঠিক বুঝতে পারবা!
লিনার সেই কথাটা মনে পরলে আরু আজও হেসে উড়িয়ে দেয়, কারন সে ভালো করেই জানে লিনা আপু যেটা বলেছে সেটা কোনো কালেই যে সম্ভব নয়।

লিনা ব্রাউন কালারের একটা সিল্কের শাড়ি পড়েছে, চোখে গাঢ় কাজল আর ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক, চুল গুলো কানের পাশ থেকে অল্প একটু নিয়ে পেছনে আঁটকেছে। সোফার মাঝ বরাবর বসে আছে সে, তার পাশেই বসে আছে আরু, কফি কালারের একটা লং থ্রি~ পিস পড়ে আছে সে।

লম্বা চুল গুলোতে অর্ধেক খোঁপা বেঁধেছে আর বাকি অর্ধেক খুলে রেখেছে, চোখ জোড়াতে চিকন করে কাজলের রেখা টানা, ব্যস এটুকুনিতেই অসম্ভব মায়াবতী লাগছে মেয়েটা কে!

! লিনার নার্ভাসনেসের জন্যই সে আরুকে তার পাশে রেখেছে! কিন্তু মেয়েটা যে খুব বিরক্ত হচ্ছে এখানে।

আর তার বিরক্তির কারন হলো দুই টা। এক, লিনার হবু বরের ছোট ভাই, ইশানের ব্যাচমেট হবে হয়তো। সেই প্রথম থেকেই নির্লজ্জের মতো চোখ দিয়ে যেন গিলে খাচ্ছে।

চোখ সরানোর যে কোনো নামই নিচ্ছেনা, মেজাজ যে এখন সপ্তম আসমানে চড়ে গেছে।

আর দুই হলো ইশান। চোখ মুখ কঠিন করে তাকিয়ে আছে, হয়তো রাক্ষসের ন্যায় গিলে খাবার ফন্দী আঁটছে বলে আরুর ধারনা। তার এভাবে গিলে খাওয়ার ইচ্ছের কারন হলো সে আরুকে বারন করেছিলো এখানে বেশিক্ষণ না থাকতে। অথচ সে আছে তো আছেই একদম এই বাইরের লোকগুলোর মুখোমুখি বসে আছে।

আরু তার অবাধ্য হয় সেটা নতুন কিছু না, তাই বলে এতোটা অবাধ্য হবে সে ভাবতে পারেনি! ইচ্ছে তো করছে তুলে এক আছাড় মারতে! কিন্তু সেটা যে এই মুহুর্তে সম্ভব নয়, আর ঝামেলা বাঁধলো এখানে, রাগটা যে কিছুতেই কন্ট্রোল হচ্ছে না!

অবশেষে যেন মুক্তির পথ মিললো আরুর এই হাঁদারামের নজর থেকে আর ইশানের গিলে খাওয়ার ফন্দি থেকে। ছেলে আর মেয়েকে আলাদা করে কথা বলতে দেওয়া হলো। মোটামুটি দম ছেড়ে বাঁচল যেন আরু, কিন্তু সেটা আবার নিমিষেই শেষ হয়ে গেলো। হবু বরের ছোট ভাই বলল,

~ আমিও যাই না ওদের সাথে।

ছেলেটার কথা শুনে আপাতত আরুর তেলাপোকা মারার বিষ খেয়ে মরতে ইচ্ছে করছে, আর নয়তো ছেলেটাকে পিংক কালারের বিষ দিয়ে মারতে ইচ্ছে করছে! আরু বেশ বুঝতে পেরেছে এই হাঁদারামের উদ্দেশ্য তার ভাইয়ের সাথে যাওয়া না বরং তার সাথে কথা

বলা। ছেলেটা এক পা বাড়াতেই বাঁধ সাধলেন এক বয়স্কা মহিলা। তিনি মুখে হাসির রেখা টেনে ছেলেটার দিকে চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে বললেন,

~ আহ্ সাফিন, তুই ওখানে গিয়ে কি করবি? ওদের আলাদা করে কথা বলতে দেওয়াই হচ্ছে মুলত প্রাইভেসির জন্য। নিজেদের মধ্যে আলাদা করে কথা বলে যেন ফাইনাল ডিসিশনটা নিতে পারে। সো ডোন্ট ডিস্টার্ব দেম। চুপ করে বসো এখানে।

ভদ্র মহিলার কথায় সাফিনের মুখের রং টা বদলে গেলো। আরু বেশ খুশি হলো।

ইচ্ছে তো করছে ভদ্র মহিলাটিকে চুমু খেতে, তবে সেটা এই মুহুর্তে সম্ভব না বলেই নিজের অদম্য ইচ্ছেটা কে দমিয়ে রেখে মুচকি হাসি দিয়ে লিনা এবং তার হবু বর ইভান কে নিয়ে লিনার রুমে চলে গেলো।

রুমের ভিতর ঢুকে একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে বলল,
~ আপু, তোমরা কথা বলো আমি বাহিরে ওয়েট করছি।

লিনাও একটা মিষ্টি হাসি উপহার দিয়ে মাথা নাড়লো।
আরু রুম থেকে বের হয়ে রুমের দরজাটা হালকা টেনে দিলো। উদ্দেশ্য এখন নিজের রুমে গিয়ে একটু পানি খাওয়া।


আরুকে আলাদাই একটা রুম দেওয়া হয়েছে, রুমটা হলো লিনার বড় বোন ইনি আপুর রুম! তারা না থাকাতে বেশ সুবিধাই

হলো, আলাদা রুম পাওয়া গেলো। সত্যি কথা বলতে কারোর সাথে রুম শেয়ার করাটাও যেন আস্ত একটা বিরক্তির স্তূপ।

__রুমে ঢুকে দরজাটা হালকা চাপিয়ে ওড়নাটা বিছানায় রেখে অর্ধেক খোলা চুল গুলো খোঁপার সাথে বেঁধে দিলো। শরীরটা প্রচুর টায়ার্ড লাগছে।

ভার্সিটি থেকে ফিরে এখনো অব্দি এক মিনিটের জন্য রেষ্ট নেওয়া হলো না। কারন বাসায় ফিরে ফ্রেশ হয়েই ঘর গোছানোর কাজে লেগে পড়তে হয়েছে।

ইশানের বড় খালার নাকি আরুর ঘর গোছানো খুব ভালো লাগে। যার দরুন আজ ঘর গোছানোর দায়িত্ব টা তার উপরই পড়েছে। যদিও কোনো ইচ্ছে ছিলো না, তবুও মুখের উপর ইনিয়েবিনিয়ে না করাটাও ভালো দেখা যায় না।

তাই কষ্ট হলেও ঘরটাকে খুব নিখুঁত ভাবে সাজিয়েছে। তার জন্য মুলত খুব প্রশংসিতও হয়েছে সবার কাছে। মা তো এসব দেখেই চোখ ভাসিয়ে কাঁদতে বসেছিলো এই বলে

, __আমার মেয়েটা কত বড় হয়ে গেছে। আর তাতেই যেন সব ক্লান্তি ধুয়েমুছে গেছে।

হঠাৎ কারো হেঁচকা টান অনুভব হতেই চোখ দুটো আপনাআপনিই বন্ধ হয়ে গেলো। একটানে দরজার সাথে চেপে ধরে দরজার একদম উপরের ছিটকিনি টা আঁটকে দিলো ইশান।

চোখ দুটো অনেক্ষন আগে থেকেই লাল হয়ে ছিলো। তাই আর আরু সাহস করে সেদিকে তাকায়নি! চোখের সাথে সাথে পুরো মুখটাও যেন লাল হয়ে গিয়েছে, আরু বার কয়েক ঢোক গিললো।

ছেলেটা সামনে আসলেই বেচারীর কোনো কারন ছাড়াই যে গলা শুঁকিয়ে যায় ব্যাপারটায় সে চরম বিরক্ত। কোনো কারন ছাড়াই কেন যে সব কিছু তার অবাধ্য হয়ে যায় বুঝে না সে।

ইশান আরুর হাত দুটো শক্ত করে চেপে ধরলো। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

~ খুব সাহস বেড়েছে তোর তাই না? , খুব সাহস? তোকে আমি বারন করেছি না ঐ বাইরের লোক গুলোর সামনে বেশিক্ষণ থাকবি না! হ্যাঁ? বলেছিলাম কিনা বল? (মৃদু চিৎকার করে)

আরু ভয়ের চোটে রীতিমতো কাঁপছে! চোখ দুটো কাঁপছে সাথে সঙ্গ দিয়ে চলেছে তার ঠোঁট জোড়াও। হাত, পা সহ পুরো শরীর কাঁপছে তার। সে কি বলবে বুঝতে পারছে না, আর কিছু বলতেও

পারছেনা, বলতে নিলেই যেন ঠোঁট জোড়া কথা আঁটকে দিচ্ছে, গলা থেকে কোনো কথারা যেন আসতে চাচ্ছে না। মনে হচ্ছে যেন কেউ পাল্লা দিয়ে তার গলা চেপে ধরেছে।

ইশান আবার বলতে লাগলো,
~ আর ঐ ছেলেটা_? ঐ ছেলেটা কিভাবে চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছিলো তার কোনো হুশ ছিলো মহারানীর? (ধমকের সুরে)কি হলো? কথা বলছিস না কেন?

আরু কিছু একটা বলার তীব্র প্রচেষ্টা চালাচ্ছে কিন্তু বার বার ব্যর্থ হয়ে অবশেষে বলে উঠলো,

~ আ, আমার হাতে ব্যাথা ল, লাগছে!

আরুর কথা ইশানের কান অব্দি পৌঁছলে কিনা বুঝা গেলো না। সে নেশা ভরা চোখে আরুর কাঁপা ঠোঁট দুটোর দিকে তাকিয়ে

আছে, এতক্ষণ চোখে না পড়লেও এখন যে আর চোখ সরাতে পারছে না। কিছুতেই পারছে না! এগিয়ে যাচ্ছে তার দিকে।আরু বুঝতে পারছে না কি হচ্ছেতার কেবল একটাই চিন্তা তার হাট দু’টো তে খুব ব্যাথা লাগছে

আচমকা ইশান আরুর ঠোঁট দুটোতে নিজের ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো। ঘটনার আকস্মিকতায় আরুর চোখ দুটো আলুর সেপের আকার নিলো,

এক্ষনি যেন চোখ দুটো তার কোটর ছেড়ে বেড়িয়ে আসবে। ব্যাপারটা হঠাৎ মাথায় ঘুরতেই ইশানের থেকে নিজেকে ছাড়ানোর কতক্ষণ বৃথা চেষ্টা চালালো_যার ফলাফল নিতান্তই শূন্য।

নিজেকে ছাড়াতে নড়েচড়ে উঠলেই ইশান আরো শক্ত করে চেপে ধরলো। আরুর ঠোঁটে আরো গভীর ভাবে মনোযোগ

দিলো। এবার যে নড়ার বিন্দু মাত্র পথ নেই। ব্যাপারটা যে আরুর কাছে নিতান্তই এক টর্চার, এক কঠিন থেকে কঠিনতম টর্চার। এবার যেন দম আঁটকে মরার পালা! আর কয়েক সেকেন্ড এভাবে থাকলেই মরে যাবে সে, তার মনের কথাটা বুঝি ইশান উঁকি মেরে পড়ে

নিলো। আরুকে ছেড়ে দিয়ে বিছানায় চিত হয়ে শুয়ে পড়লো। আর বড় বড় করে নিশ্বাস নিতে লাগলো। আরু এখনো ঠাঁই দাঁড়িয়ে

রইলো। ইশানের চরিত্র নিয়ে সে রীতিমতো টেনশনে পড়ে গেলো। এটা কি তারই মামুর ছেলে?

এতোটা অশভ্য কি করে হলো? মাথা ঘুরছে আরুর, এখনি যেন শরীরের ভার ছেড়ে দিয়ে ফ্লোরে লুটিয়ে পড়বে বেচারী, কিন্তু তা আর হলো কই_তার আগেই আরেক চমক খেলো ইশানের কথায়।

ইশানের হাতে তার ওড়না। মুখে বাঁকা হাসি দিয়ে ওড়নাটা হাতে নিয়ে উঠে দাঁড়ালো। ঘোর লাগা কন্ঠে বলে উঠলো,

~ আমার মায়াবতী কে ওড়না ছাড়াও বেশ লাগে, একটা হট হট ফিল আসে।

ইশানের কথা শুনে বেচারি বোকার ন্যায় খানিকক্ষণ স্থীর হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। একবার ওড়নার দিকে তাকিয়ে একবার নিজের দিকে তাকালো। তাকাতে দেরি হলেও চিৎকার দিতে দেরি নেই।

ওড়নাটা হাতে নিয়েই কোনো মতে দৌড়ে পালালো সে। ইশান মুচকি হেসে আবারো খাটে বসে পড়লো। আপন মনে খানিক হেসেই বলে উঠলো,

~ আমার মায়াবতী__হ্যাঁ সে শুধু আমার মায়বতী!


পর্ব ৯

আরু দৌড়ে রান্না ঘরে চলে আসলো। মাথাটা তার ভনভন করে ঘুরছে। আচ্ছা ইশান কি পাগল হয়ে গেছে? সত্যি সত্যি পাগল হয়ে গেলো বোধহয়, আর নয়তো হঠাৎ এমন কেন করলো? আর ওমন উদ্ভট কথা_না না না, এই ছেলে নিশ্চিত পাগল হয়ে

গেছে! মামা, মামি কে বলতে হবে নয়তো নিশ্চিত উল্টো পাল্টা কিছু করে ফেলবে, দুই সেকেন্ডের মাথায় নিজেই নিজের মাথায় গাট্টা মারলো। মামা মামি কে কিভাবে বলবে? আর কি~ ই বা বলবে?

লিনার হবু শশুর বাড়ির লোক আজই মেয়েকে আংটি পরিয়ে দিয়ে গেলেন, আর বিয়ের ডেটও ফাইনাল করে গেছেন।

বাকি এই সময় টুকুতে আরু একবারও আর এদিকে আসেনি।

নিজের রুমে বসে ছিলো। ইশানের সামনেও আর পড়েনি, মনে মনে স্থির করলো, কম করে হলেও আগামী এক মাসের মধ্যে এই বান্দর ছেলের সামনে পড়া যাবেনা। ভুলেও না।

উদ্দেশ্য একটাই ইশান কে যেকোনো ভাবে, যেকোনো উপায়ে এভয়ড করা, জানে না সে সেটা কতটুকু সম্ভব? বা আদৌ সম্ভব হবে কি না! কিন্তু চেষ্টা যে তাকে করতেই হবে। দেখা যাক কতটুকু সম্ভব হয়।

ঘড়িতে রাত __১টা ছুঁই ছুঁই। আরু ডাইনিং টেবিল থেকে একটু দুরে সোফার উপর হাঁটু ভাজ করে গুটিশুটি মেরে বসে আছে। আপাতত মেজাজ তার আকাশ চুম্বী হয়ে আছে।

রাগটা অবশ্য নিজের উপরই বেশি লাগছে_ঘন্টা দুয়েক হলো মেহমানরা চলে গেছেন। মেহমানরা যাওয়ার পরে আবার সব কিছু নরমাল করে গুছাতে হয়েছে, অবশ্য সেটা আরুকে করতে হয়নি, বাড়ির কাজের লোকেরা মিলেই করেছে।

ঘড়ির কাঁটায় যখন ১২ টা তখন তার মা তাকে খাবার খাওয়ানোর জন্য এসেছিলো, প্লেট ভর্তি খাবার দেখেই আরু এককথায় না

করলো। কেনন, তার মায়ের হাতে এই মুহুর্তে খেতে হলে প্লেটে একটা দানাও থাকবে না! সো মায়ের হাতে কিছুতেই খাওয়া যাবে না। অনেক জোরাজোরি করেও খাওয়াতে পারলো না। আরুর এক কথা সে ডাইনিং টেবিলে বসে নিজের হাতেই খাবে।

তাই সে গত এক ঘন্টা যাবত সোফায় বসে ঝিমোচ্ছে কারন ডাইনিং আপাতত ফুল। সব গুরুজনেরা মিলে কত জনম জনমের গল্প জুড়ে বসেছে কে জানে! তার উপর ইশানও এখনো খায়নি।

তাই আরুকে ইশানের সাথে বসেই খেতে হবে। আবার সেই ইশানের সামনে পড়তে হবে ভাবলেই গলা শুকিয়ে যায়। তখন যদি মায়ের হাতে খেয়ে নিতো তাহলে এখন ঐ রাক্ষসের সাথে খেতে হতো না। মায়ের হাতে খেলে হয়তো কোনো দানা বাদ থাকতো না কিন্তু এই ছেলের সাথে খেতে বসলে কোনো দানা তো

থাকবেই না উল্টে কতগুলো টর্চার ফ্রী তে পেয়ে যাবে। উদ্দেশ্য কোনো ফাঁক ফোকর পেলে টুপ করে বসে পড়ে টুস করে খেয়ে নিয়ে পালানো। কিন্তু ঐ যে কপাল, আরুর বিপদে খারাপের জায়গায় ভালো কিছু হবে সম্ভব ই নয়। উল্টে তাকে বিপদে ফেলতে সবাই হাসি মুখে এগিয়ে আসবে।

মায়ের ডাকে আরুর ভাবনার শুতো ছিড়লো। সামনে তাকাতেই দেখলো পুরো ডাইনিং ফাঁকা। ফাকা বললে ভুল হবে একটা চেয়ারে ইশান বসে আছে, মা তাকে খাবার বেড়ে দিচ্ছে আর থেকে থেকে আরুকে খাবারের জন্য ডাক দিচ্ছে।

আরুও আর সাত পাঁচ না ভেবে ভদ্র মেয়ের মতো গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে গেলো। ইশানের দিকে একবার আঁড়চোখে তাকিয়ে মুখে ভেংচি কাটলো। গুনে গুনে তিনটা চেয়ার বাদ রেখে বসতে নিলেই বাঁধ সাধলো তার মা।

~ একি আরু! তুমি ওখানে কেন বসছো_(ইশানের পাশের চেয়ারটা বের করে), এখানে বসো! একজন এ মাথায় আর আরেকজন ঐ মাথায় থাকলে খাবার কিভাবে দিবো? এসো এসো~

মায়ের কথা শুনে আরু চোখ কুঁচকে তাকালো। আচ্ছা এটা কি তার মা? মনে তো হচ্ছে না! তার নিজের মা হলে এভাবে কি কেউ তার শত্রুর দিকে তাকে ঠেলে দেয়! __ধুর! অবশ্য মা~ ই বা কি করে জানবে এই ইতর ছেলে ইশান তার মেয়ের একনম্বর জন্ম শত্রু?

আরুকে ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মা আবার হাঁক পাড়লেন,
~ কি হলো মা_! তাড়াতাড়ি এসো, ক’টা বাজে খেয়াল আছে?

মায়ের কথায় নড়েচড়ে উঠলো আরু। মুখে একটা শুকনো হাসি দিয়ে মনের সাথে একপ্রকার যুদ্ধ করে ইশানের পাশে চেয়ারটিতেই বসলো। ভয়ে রীতিমতো পা কাঁপা কাপি শুরু হয়ে গিয়েছে।
মা

আরুকে খাবার বেড়ে দিতে দিতে ইশানকে উদ্দেশ্য করে বলল,
~ বাবা তোর আর কিছু লাগবে?

ইশান কিছু বলতে যাবে এর মাঝেই তার ডাক পড়লো ভিতর থেকে। ইশান মিষ্টি হেসে বলল,

~ আপাতত কিছুর দরকার নেই মনি, তুমি যাও, আড্ডায় বসো গিয়ে। কিছু দরকার হলে আমি নিয়ে নিবো।

ইশানের কথায় যেন বেশ খুশি হয়ে গেলেন আরুর মা। মেয়ের দিকে তাকিয়ে বললেন,

~ আরু_মা ইশানের কিছু লাগলে তুমি দিয়ে দিও কেমন?
কথাটা বলেই চলে গেলেন নাইমা বেগম। আরুর এবার যেন কান্না পেয়ে যাচ্ছে। এক তো এই ইতর ছেলে তার পাশে বসেছে, তার উপর তাকে নাকি আবার বেড়ে খাওয়াতে হবে!

পারে তো প্লেট উঠিয়ে মাথায় ভাঙ্গে, তবে তা তো কোনো কালেই সম্ভব না, ছোট্ট করে একটা নিঃশ্বাস ফেলে শান্ত ভঙ্গিতে খেতে শুরু করলো। কিন্তু বিপত্তি হলো খাবার যে গলা দিয়ে নামছে না! বার বার মনে হচ্ছে কেউ আঁড়চোখে তাকে দেখছে। কে দেখছে__?

? এখানে তো ইশান ছাড়া আর কেউ নেই! তাহলে_! মাথা টা হালকা ঘুরিয়ে আঁড়চোখে একবার তাকে দেখে নিলো। কিন্তু ইশান তো একদম চুপচাপ শান্ত ভঙ্গিতে খাবার খাচ্ছে, এমন ভাবে খাচ্ছে যেন এখানে একমাত্র সে ছাড়া আর একটা মশাও নেই।

অদ্ভুত তো_! এতেও আরু কয়েক দফা বিরক্ত হয়ে গেলো। যত্তসব ঢং~ । আরু খাবারের প্লেট টা নিয়ে উঠে দাড়ালো,

উদ্দেশ্য হলো ইশানের থেকে তিন চারটা চেয়ার ডিস্টেন্স রেখে বসা। আর যাই হোক অন্তত এই পেত্নীর জামাইয়ের সাথে বসে গলা থেকে একটা দানাও নামবে না! সামনের দিকে পা বাড়াতেই হেঁচকা টানে আবার বসে পড়লো। আচমকা হেঁচকা টানে ভয় পেয়ে গেলো বেচারী।

চোখ দুটো বন্ধ করে নিয়ে খানিকক্ষণ চুপ করে বসে আবার পিট পিট করে চোখ খুলে নিলো। পাশে তাকাতেই দেখলো ইশান খাবার রেখে তার দিকেই চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে আছে।

~ কি প্রবলেম হ্যাঁ? চুপ করে কোথাও বসতে পারিসনা নাকি?
আরু ঢোক গিলে বলল,

~ ভাইয়া, আ, আমি আসলে_ ~ চড়ায়ে সব দাঁত ফেলে দিবো! চুপ করে খা_(ধমকের সুরে)
~ (হ্যাঁ আমি তো তর বিয়া করা বউ লাগি তাই না? যখন খুচি চড়াইবি যখন খুশি চুম্মাইবি, বেদ্দপ ছেলে একটা)

~ কি হলো এখনো চুপ করে বসে আছিস!
আরু কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলে উঠলো,
~ খাচ্ছিতো!(শালার কপাল বটে)

আরু আর কিছু না বলে খেতে নিলো। কিন্তু খাবার অর্ধেক গিয়ে গলায় আঁটকালো ইশানের কথায়।

~ ভার্সিটির মাঠে দাঁড়িয়ে কোন ছেলের সাথে পিরিত করছিলি?
কথাটা শুনেই বিষম খেলো। কাশতে কাশতে ঠোঁট দিয়ে ঠোঁট চেপে আঁড়চোখে তাকালো ইশানের দিকে।

সে নিচের দিকে তাকিয়ে খেয়েই চলেছে। আরু তাড়াতাড়ি করে পানি খেয়ে বার কয়েক ঢোক গিলে আবারো ইশানের দিকে দৃষ্টিপাত করলো।

ইশান ভাবলেশহীন ভাবে আবারো প্রশ্ন ছুড়লো আরুর দিকে,
~ কে ছিলো ছেলেটা_?

আরু শুকনো একটা হাসি দিয়ে জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিয়ে বলল,
~ আ, আমি চ, চিনি না!

ইশান ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলল,
~ চিনিস না? তাহলে এক ঘন্টা যাবত কি ডাক্তারি পেশা নিয়ে গবেষণা করছিলি?

~ আসলে ভাইয়া, ঐ হাড়ের ডাক্তার! থুক্কু, ঐ ছেলেটা কনাকে পছন্দ করে! কনার সাথেই কথা বলতে এসেছিলো! (ইশান তাকাতে) সত্যি বলছি।

~ বেশ, ভালো কথা। কনাকে পছন্দ করুক বা কনার মাকে!কোনো ছেলের সঙ্গেই যেন কথা বলতে না দেখি!
~ (এহহ আসছে, বান্দরের নাতি), হু।


পর্ব ১০

পরের দিন সকালেই সবাই বাসায় ফিরলো। মুলত ইশানের জন্যই ফিরতে হয়েছে, আজ তাকে ভার্সিটি যেতে হবে আর পরশু আরুদের নবীন বরনের অনুষ্ঠান।

এখনো অনেক কাজ বাকি। বাসায় ফেরাতে আরুরও বেশ সুবিধাই হলো। আজ সারাদিন বাসায় রেস্ট নিবে বলে মনস্থির করলো। গত রাতে যে একফোঁটাও ঘুম হয়নি।

যার ফলে রাতে ভূতের ভয়টাও যেন চেপে ধরেছিলো। অবশেষে বাসায় ফিরতে পেরে শান্তি। ইশান নিজের রুমে গিয়ে কোনো রকমের চেঞ্জ করেই বের হয়ে গেলো।

আর আরু টায়ার্ড হয়ে ঢুলতে ঢুলতে রুমে এসে এক লম্বা শাওয়ার নিলো। একটা ঢোলা ঢালা টি~ শার্ট আর একটা প্লাজু পরে ভেজা চুল নিয়েই শুইয়ে পড়লো। মনে হচ্ছে কত দিনের ঘুম যেন দেশ ছেড়ে পালিয়েছিলো, আজই সবে সবে ফিরলো।

তাই এই মুহুর্তে সেই শান্তির ঘুম যে ঘুমোতেই হবে।

শান্তির ঘুম, …!
এরই মাঝে তার মা একবার তার রুমে এসে এক ডজন বকাঝকা করে চুল গুলো ভালো করে মুছে দিয়ে গেলেন। যদিও ঘুমের জন্য সে কিছুই টের পায়নি।

হঠাৎ পেটে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে গাঁ শিরশির করে উঠলো আরুর। কিন্তু চোখ খুলে তাকানোর বিন্দু মাত্র ইচ্ছে

জাগলোনা। মানুষ টা তার পেটে হাত দিয়ে স্লাইড করছে, সাথে সাথে শরীরটা কেঁপে উঠছে তার।

হঠাৎ মনে হলো মানুষ টা থেমে গেলো। খানিক বাদে গলার কাছে কারোর ঠোঁটের ছোঁয়া পেলো। মানুষটার গরম নিশ্বাস বার বার আঁচড়ে পরছে। সাথে সাথে ঘুম ভেঙ্গে গেলো।

ধড়ফড়িয়ে উঠে বসলো সে, শরীর থেকে ঘাম ছুটলো! চারপাশে চাতক পাখীর মতো চোখ ঘুরাতে লাগলো, নাহ্ ঘরের মধ্যে সব কিছুই খুব স্বাভাবিক বলে মনে হচ্ছে, এখানে কেউ আসলে এতো তাড়াতাড়ি করে বেরিয়ে যেতে পারবেনা

, কারন বেডের থেকে দরজা পর্যন্ত গিয়ে বের হওয়ার জন্য মাঝে যথেষ্ট দুরত্ব। বের হতে হতে মানুষটার ব্যাক সাইড খুব ভালো ভাবে দেখা যাবে! কেউ এসেছে বলে তো মনে হচ্ছে না। হঠাৎ আরু নিজের দিকে তাকালো, তার টি~ শার্ট একদম ঠিক

আছে, প্লাজুটা খানিক উঠে রয়েছে, তাড়াতাড়ি করে সেটাও ঠিক করে নিয়ে মনে মনে আওড়াতে লাগলো,

~ স্বপ্ন ছিলো! আল্লাহ স্বপ্নই যেন হয়, এমন ভায়নক ব্যাপার যে স্বপ্ন হওয়াই মঙ্গল! আচ্ছা কোনো ভাবে কি ইশান ভাইয়া

এসেছিলেন_ধুশশ! আমিও কি যা তা ভাবছি! উনি কেন আসতে যাবে? ইশান ভাইয়া তো ভার্সিটি তে!আসলেই কি ভার্সিটি তে? আচ্ছা ক’টা বাজে?

ঘাড় ফিরিয়ে ডান পাশে দেয়ালের দিকে তাকালো আরু।_ ঘড়ির কাটায় ৪ঃ০৫।

~ ইয়াআআ মাবুদ! আমি আমি সেই দুপুর ১২ টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ঘুমাইছি! কেমনে কি? না জানি মা কতবার এসে ডেকে গিয়েছে। তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নিচে যাই।আর নয়তো কপালে কোন দুঃখ আছে!

আরু বিছানা ছেড়ে ফ্রেস হয়ে নিচে নেমেই অবাক। সোফার রুমে বেশ আয়েস করে বসে আছে কনা, মা, মামা, মামি, তার সামনের সোফায় ইশান, শিহাব, আড্ডা দিচ্ছে মনে হচ্ছে।

আরুকে সিঁড়িতে স্থির দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ইশান আঁড়চোখে তাকিয়ে বাঁকা হাসি দিয়ে আবার আড্ডায় মনোযোগ দিলো। ইশানের এমন হাসি দেখে আরুর বুকের ভিতর টা ছ্যাত করে উঠলো।

ইশানের হঠাৎ এমন হাসির মানেটা কি? উনিশ বিশ ভাবতে ভাবতে মামার ডাক কানে এসে বারি খেলো, আস্তে আস্তে এগিয়ে গিয়ে মামার পাশে বসতে বসতে কনাকে উদ্দেশ্য করে বলল,

~ কি রে কখন এলি?
আরুর কথায় কনা দৃষ্টিপাত করলো, আরুর মা হাসি মুখে বলে উঠলেন,

~ কনা এসেছে তো অনেক্ষন হয়েছে।
আরু অবাক কন্ঠে বলল,

~ অনেক্ষন হয়েছে? তাহলে আমার কেন ডাকলে না?
কনা বলল,

~ তুই তো ঘুমোচ্ছিলি! তাই আর ডাকি নি!
আরুর মা বললেন,

~ এই তোমরা সবাই গল্প করো, ভাবি__(আরুর মামি)
তুমি ওদের কিছু নাস্তার ব্যবস্থা করো! ইশান, আরু, দুজনে এসো আমার সাথে, দুপুরের খাবার খাওয়া দুজনেরই বাকি। বেলা পরে যাচ্ছে, আসো আসো।

আরু ভ্রু কুঁচকে তাকালো মায়ের দিকে। আপাতত তার খাওয়ার মুড একদম নেই বললেই চলে! তবুও সবার কাছে সে অসহায়, তাই বাধ্য হয়েই মায়ের পেছন পেছন হাঁটা ধরলো

। মায়ের বকুনি আর ইশানের চোখ গরমে কোনোরকম খেয়েই কনাকে নিয়ে সোজা ছাদে চলে আসলো আরু।

কনা মুখ ভার করে দাঁড়িয়ে আছে, আর আরু ফুল গাছ গুলে নিয়ে দেখছে কোনটাতে নতুন ফুল ফুটেছে।

দেখতে দেখতে হঠাৎ কনার দিকে চোখ পড়লো। ফুল গাছ গুলো রেখে হাত ঝাড়তে ঝাড়তে কনার পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। কাঁধ দিয়ে কাঁধে হালকা ধাক্কা দিয়ে বলল,

~ কি ব্যাপার হ্যাঁ? প্রেম কতোটুকু এগুলো? মুখটাকে এমন পেঁচার মতো করে কেন রেখেছিস!?

ডাক্তারের ডোজ কি বেশী পড়লো নাকি রে_?
কনা গাল ফুলিয়ে বলল,

~ আরে ধুর! আর বলিসনা_! ছেলে প্রেম করতে এসেছিলো নাকি ভয় দেখাতে এসেছিলো আল্লাহ মালুম!

কনার কথায় আরু ফিক করে হেঁসে দিলো। কনার কাঁধে হাত রেখে বলল,

~ তা ভয় কি মোটেও পেয়েছিস নাকি ক্যাঁবলার মতো তাকিয়ে থেকেছিস?

আরুর কথায় কনা আগের মতোই গাল ফুলিয়ে বলল,
~ মোটেই না, আমি মোটেই তার দিকে তাকায়নি! বরং সেই ড্যাব ড্যাব করে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো।

আর জানিস বলেছে, কোনো ছেলের সাথে যদি কথা বলতে দেখে তাহলে নাকি আমাকে খুন করবে!আর বলেছে ছেলেদের থেকে একশো হাত দুরে থাকবে।

তুই ভাব একবার, কেউ তার গার্লফ্রেন্ডের সাথে ফার্স্ট ডেট এ আসলে এসব কথা বলে নাকি?

কনার কথা শুনে আরু চোখ বড় বড় করে তাকালো। হঠাৎ ভ্রু কুঁচকে বলল,

~ মানে __আসলেই? ঐ হাড়ের ডাক্তার তোকে এসব কথা বলেছে?

আরুর দিকে কাঁদো কাঁদো মুখ করে কনা তৎক্ষনাৎ দু’তিন বার করে মাথা ঝাকালো, তার মানে বলেছে।
আরু এবার মুখ কুঁচকে বলল,

~ আচ্ছা, কোনো ভাবে কি এই হাড়ের ডাক্তার আবার ইশান ভাইয়ার বন্ধু নন তো?
আরুর কথা শুনে কনা আরুর মুখ পানে খুবই শান্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো, এবং তার থেকেও শান্ত গলায় বলল,

~ জ্বী~ হা। পিয়াস, শিহাব আর ইশান তিনজন নাকি বেস্টফ্রেন্ড। পিয়াস আজই বললো আমাকে। তাদের স্কুল, কলেজে সব একই ছিলো। মাঝে পিয়াসের মেডিকেলে চান্স হয়!

তাই তাদের ভার্সিটি আলাদা হয়। কিন্তু আলাদা হয়েও তেমন কোনো লাভ হলো না, তারা তিনজনই অলওয়েজ একসাথে থাকে, হয় পিয়াস আমাদের ভার্সিটি আসে তাদের সাথে মিট করতে, আর নয়তো ইশান ভাইয়ারা পিয়াসের ভার্সিটি যায়।

, আর আমাদের ভার্সিটি আসতেই সে নাকি তোর সাথে আমাকে দেখেছিলো!

~ ওম্মা ওম্মা কাহিনী তাহলে এটা!
~ হু।

~ আচ্ছা ছাড় ওসব, এখন বল মি. হাড়ের ডাক্তার তোকে কোথায় কিভাবে দেখে প্রেমে পড়লো, আর কবে থেকে কি _বলো বলো বেবি।

কনার আরুর এক্সাইটমেন্ট দেখে রীতিমতো অস্বস্তিতে পড়ে গেলো। কিছু বলতে যাবে তার আগেই পেছন থেকে কেউ আরুর নাম ধরে ডেকে উঠলো। দুজনেই পেছন মুড়ে তাকাতে দেখলো শিহাব দাঁড়িয়ে আছে। মুখে তার মিষ্টি হাসির রেখা ফুটিয়ে আবারো বলে উঠলো,

~ আরু __কেমন আছো?
আরু হালকা হেঁসে মাথা নাড়িয়ে বলল,
~ ভালো আছি ভাইয়া, আপনি কেমন আছেন?

~ আমি তো বেশ আছি। তোমার সাথে গতকাল দেখা হয়েছিলো, কিন্তু কথা বলার সুযোগ আর হয়ে উঠেনি।

~ হ্যাঁ, আচ্ছা আপনাদের ঐ ফ্রেন্ডটা এখন কেমন আছেন? ঠিক আছেন তো?

~ হ্যাঁ এখন অনেকটাই সুস্থ বুঝলে!ওর এক্সিডেন্ট টা যেভাবে হলো!আল্লাহর রহমতে আরো বাজে কিছু হওয়ার থেকে আমরা বেঁচে গেলাম।

~ হ্যাঁ একদমই তাই, না জানি আরো কি কি হতে পারতো,
শিহাব আবারো মুখে মিষ্টি হাসির রেখা টানলো।

বলল,
~ আচ্ছা বাদ দাও ওসব কথা। তারপর বলো আমাদের ভার্সিটি কেমন লাগছে? কোনো প্রবলেম হচ্ছে না তো? প্রবলেম হলে কিন্তু জানাবে! কেমন?

আরুও শিহাবের মিষ্টি হাসির পরিবর্তে মুখে মিষ্টি হাসি জুড়ে বলল,
~ না ভাইয়া, তেমন কোনো প্রবলেম হচ্ছে না। প্রবলেম হলে তো আপনারা আছেন ই।

শিহাব মাথা নাড়লো। মুচকি হেসে কনাকে বলল,
~ তা আমাদের নতুন হবু ভাবি, কেমন আছেন আপনি?
শিহাবের মুখে ভাবি ডাকটা শুনে লজ্জায় লাল হয়ে উঠলো কনা। মাথা নিচু করে মুচকি হেসে বলল,

~ ভালো আছি ভাইয়া।
এভাবেই টুকটাক কথা বলার মাঝে ইশা চলে আসলো, মাথার চুল গুলো হালকা ভিজে আছে। নেভি ব্লু টি~ শার্ট আর কালো একটা শর্ট প্যান্ট পড়ে আছে।

পায়ের ভেজা লোম গুলো পরম যত্নে লেপ্টে আছে যেন। আরুর দিকে একবার আঁড়চোখে তাকালো।

ইশানকে দেখতেই শিহাব বলে উঠলো,
~ ডান_? চল তাহলে?

ইশান ফোনের স্ক্রিনে স্থির দৃষ্টি রেখে মাথা নেড়ে বলল,
~ হু চল।

কনা ইশান এবং শিহাব দুজনকে উদ্দেশ্য করে বলল,
~ ভাইয়া আপানারা তো আমার বাসার ওইদিকেই যাচ্ছেন! আমিও বাসায় ফিরবে ভাবছিলাম, আমি আপনাদের সাথে কি যেতে পারি?
কনার কথায় দুজনেই একবার চোখাচোখি করে বলল,
~ হ্যাঁ শিউর।

তিনজনে যেতে নিলে কনা আবার পেছন ফিরে আরুকে বলল,
~ আরু তুইও চলনা আমাদের সাথে? রাস্তায় গল্প করতে করতে যাওয়া যাবে!
শিহাব মিষ্টি হেসে বলল,

~ হ্যাঁ তাইতো! ব্যাপারটা দারুন হবে। যাবে আরু__?

আরু কি বলবে বুঝতে পারছে না। ইশান যদি কিছু বলে? হাজারটা প্রশ্ন ছুড়ে মারবে, কেন গিয়েছিস? আমি কি বলেছিলাম যেতে? তোর পা অনেক বেড়েছে তাই না?

পা ভেঙ্গে ঘরে রেখে দিতে হবে, ব্লা ব্লা ব্লা__তার থেকে বরং না করাই শ্রেয়! আরু না বলার আগেই তার সমস্ত ভাবনাকে মিথ্যে করে দিয়ে ইশান বলে উঠলো,

~ আরু আয়, এই পড়ন্ত বিকেলের রাস্তায় হাটলে মন ভালো থাকে। চল, শিহাব আয়।

কথাটা বলেই ইশান হাঁটা ধরলো। শিহাব আরুর দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলল,

~ চলো আরু।
বলে সেও ইশানের পেছন পেছন চলে গেলো।

আরুর ইশানের ব্যাপারটা মোটেও হজম হলোনা। সে এখনো ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে, কনার খোঁচানিতে চমকে উঠলো।
~ কি রে দাঁড়িয়ে রইলি কেন? চল তাড়াতাড়ি।

এই বলে কনা আরুর হাত ধরে এক টানে নিয়ে গেলো।


চারজনেই মেইন রোডের সাইড ধরে হাটছে।

ইশান আর শিহাব একটু সামনে, আরু আর কনা একটু পেছনে! কনা সেই কখন থেকে বকবক করে যাচ্ছে কিন্তু তার একটা কথাও আরুর কান অব্দি এসে পৌঁছচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না, সে ইশানকে পর্যবেক্ষণ করতে ব্যস্ত! কি হলো এই ছেলের হঠাৎ?

এতো মিষ্টি করে হঠাৎ কথা বলার কি কারন হতে পারে? আচ্ছা উনার মাথায় আবার অন্য কিছু ঘুরছে না তো? আমি আসতে বারন করিনি বলে আবার বাসায় গিয়ে বকবেন না তো?

বকতেই পারে~ ! উনার তো আবার তালের ঠিক নেই! কখন যে কি করে আল্লাহ~ ই ভালো জানে!

হঠাৎ ইশানের দিকে চোখ পড়তেই আরুর বুকের ভেতরে এক চিন চিনে ব্যাথা অনুভব হতে লাগলো।

ইশান হাসতে হাসতে ঢলে পড়ছে বার বার, শিহাবও তার হাত ধরে হেসে কুটি কুটি হয়ে যাচ্ছে।

ইশান হাসলে তার সামনের চোয়ালের বাঁকা দাঁত দুটো বেড়িয়ে আসে, তাতে যেন ছেলেটার সৌন্দর্য আরো কয়েক গুন বেড়ে যায়, এতো টা সুন্দর কেউ কি করে হতে পারে সেটাই আরুর মাথাতে ধরে না__এতো টা পার্ফেক্ট মানুষ কি করে হয়?

হ্যাঁ ইশানের এই মায়া জড়ানো হাসিতেই আরুর বুকের মাঝে চিন চিনে ব্যাথার উদয় ঘটেছে। বার বার খুন হতে ইচ্ছে করছে এই মানুষটা তে, তার এই হাসি তে,

আচমকা কারোর ছোঁয়ায় ঘোর কাটলো আরুর, মনে হলো তার পেটের সাইডে কেউ হাত রেখেছিলো,


পর্ব ১১

আচমকা কারোর ছোঁয়ায় ঘোর কাটলো আরুর।

মনে হলো কেউ তার পেটের সাইডে কেউ হাত রেখেছিলো। চোখ তুলে তাকাতেই দেখলো তিনটা ছেলে, কেমন একটা লোভাতুর দৃষ্টিতে বিশ্রী ভাবে তাকিয়ে হাসছে আর পেছন ফিরে বার বার তাকাচ্ছে! সেটা দেখেই আরুর মেজাজ বিগড়ে গেল।

কত বড় জানোয়ার হলে একটা মেয়ের শরীরে হাত দেওয়ার মতো দুঃসাহস দেখায়! রাগে যেন শরীরটা কাঁপছে আরুর, চোখ দুটো লাল হয়ে গিয়েছে নিমিষেই, এক্ষনি যেন চোখ ফেটে কান্না চলে আসবে!

আরুকে দাঁড়িয়ে পড়তে দেখে কনাও দাঁড়িয়ে পড়লো, আরুর কাঁধে হাত রেখে বলল,

~ কি রে আরু, দাঁড়িয়ে পড়লি কেন হঠাৎ? আয়_?
কনা এসব কিছুই খেয়াল করেনি। সে কথা বলার তালে এতোটাই ডুবে ছিলো যে তার চোখে কিছুই পড়লো না।

আরু এবং কনাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ইশানরাও দাঁড়িয়ে পড়লো, পেছন ফিরে তাদের দিকে এগিয়ে আসলো। আরুর দিকে একবার তাকিয়ে ইশান কনাকে জিজ্ঞেস করলো,

~ কি হয়েছে কনা_?
আরু মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকায় তার মুখের ভাবটা ঠিক বোঝা গেলো না, কিন্তু তার শরীরের কাঁপুনি ভাবটায় ইশান ঠিক বুঝতে পারলো কিছু একটা হয়ছে! তাই কনার জবাবের আশায় না থেকে আরুর ঠিক সামনে দাঁড়িয়ে বলল,

~ আরু_? তাকা আমার দিকে! বল কি হয়েছে?

ইশানের কথায় আরুর কোনো ভাবান্তর নেই, সে এখনো মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে! ইশান আবারো একই প্রশ্ন করলো, কিন্তু আরুর এবারো কোনো জবাব নেই!

! সে মুখ তুলে ইশানের দিকে তাকাতেই ইশান থমকে গেলো, আরুর চোখ দুটো ভয়ংকর ভাবে লাল হয়ে আছে! কি হয়েছে

মেয়েটার? ইশানের সাথে কনা এবং শিহাবেরও একই অবস্থা।
কনা আরুকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে বলল,
~ এই আরু কি হয়েছে তোর? ত, তোর চোখ দুটো __! বল কি হয়ে,

কনা আর কিছু বলতে পারলো না! তার আগেই কারোর গোঙ্গানির আওয়াজে পেছন ফিরে তাকালো সবাই!ইশান ছেলে তিনটাকে এলোপাতাড়ি মেরে চলেছে।

কি ভয়ংকর লাগছে মানুষ টা কে! _কতটা হিংস্র হয়ে উঠেছে! ঘুষি, লাথি, থাপ্পড়, যেভাবে পারছে সেভাবেই মারছে ছেলে তিনটাকে। ছেলে তিনটে না পেরে অবশেষে ইশানের পা ঝাপটে ধরলো।

শিহাব দৌড়ে গেলো ইশানের কাছে! তাকে ছাড়ানোর কতক্ষন বৃথা চেষ্টা চালিয়ে আরুর দিকে তাকাতেই আরুও দৌড়ে

আসলো!এভাবে মারলে যে ছেলে গুলো নিশ্চিত মরে যাবে! কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে উঠলো,

~ ভাইয়া, ও, ওদের ছেড়ে দিন! আর বেশিক্ষণ মার খেলে মরে য, যাবে! ছেড়ে…দিন।
শিহাব বলল,

~ দোস্ত… দোস্ত ছাড় বলছি! দেখ উল্টো পাল্টা কিছু হয়ে গেলে পরে ঝামেলা হয়ে যাবে!

ইশানের রাগের কাছে দুজনের কারোর কথাই টিকলো না। ইশান আরো ভয়ংকর হয়ে উঠলো। একটার গলা চেপে ধরে বলল,

~ বল কি করেছিস আমার আরুর সাথে? বল বলছি__নয়তো জানে মেরে ফেলবো! বল(চিল্লিয়ে)

একটা ছেলে ইশানের পা জড়িয়ে ধরে বলল,
~ ভ, ভাই ভাই, আমগোরে মাফ করেন ভাই! আমরা বুজি নাই এই আপায় আপনের লগে!

ছেলেটার কথা শুনে এক লাথি মেরে সরিয়ে দিলো ছেলেটাকে। আরেকটার গলা চেপে ধরে বলল,
~ আমি জানতে চেয়েছি কি করেছিস ওর সাথে?

~ ভাই, ভ, ভাই কইতাছি ভাই! আ, আ, আমি_! আমি আপার প, পেটে হাত দিছি ভাই! ভাই ভুল হইয়া গেছে, মাফ কইরা দেন ভাই! আর জীবন থাকতে এমন কাম করমু না!

ছেড়ে দিবে তো দুর ছেলেটার কথায় ইশান আরো ভয়ংকর হয়ে উঠলো। মাথার রগ দুটো আরো মোটা হয়ে গেলো। তার চোখ দুটো থেকে যেন আগুনের লাভা বের হচ্ছে, এক্ষনি সবাইকে ভস্ম করে দিবে।

ছেলেটার কথায় শিহাবের মাথাও গরম হয়ে গেলো। কিন্তু এই মুহুর্তে রাগ দেখালে হবে না, বরং ইশানকে থামাতে হবে।

ছেলেটার একবার রাগ উঠলে যে নিজের উপর থেকে কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলে, কি করতে কি করে বসবে!

ইশান প্রথম টার গলা ছেড়ে দিয়ে এবার দুহাত দিয়ে ছেলেটার গলা চেপে ধরলো। কেমন একটা পাগলের মতো আচরণ করছে ইশান। হঠাৎ ছেলেটার শার্টের পকেটে পরক্ষণে প্যান্টের পকেটে কিছু একটা খুঁজতে লাগলো। আরু অধৈর্য্য হয়ে বলল,

~ কি করছেন টা কি ভাইয়া! ছেড়ে দিন বলছি! যেতে দিন ওদের। যেতে,

আরুর কথার মাঝেই ইশান ছেলেটির পকেট থেকে একটা ছুরি বের করলো! ছুরিটা হাতে নিয়েই তেড়ে গেলো ছেলেটার দিকে! অতিরিক্ত মার খাওয়াতে তিন জনের কারোরই উঠে দৌড়ে পালানোর শক্তিটুকু নেই বললেই চলে।

ইশানকে ছুরি হাতে তেড়ে আসতে দেখে যথাসম্ভব পিছচ্ছে কিন্তু বিন্দু মাত্র জায়গার পরিবর্তন

~ খুব শখ মেয়েদের শরীরে হাত দেওয়ার তাই না? খুব শখ? আজ আমি তোর হাতই কেটে ফেলবো।

ইশানের কথায় সবাই কেঁপে উঠলো।

আরু এবং শিহাব আবারও দৌড়ে গেলো ইশানকে আঁটকাতে, কনা দুরে দাঁড়িয়েই কাঁপছে ভয়ে।

আরু ইশানের হাত টেনে ধরলো। তার এসব একদম ভালো লাগছেনা, খুব ভয় লাগছে এই মানুষটাকে! কেন সে এরকম করছে? সে কি বুঝতে পারছে না তার এই রুপে আরুর ভীষণ রকমের কষ্ট হচ্ছে।

খুব কান্না পেয়ে যাচ্ছে।। কাঁদো কাঁদো মুখ করেই ইশান কে বলল,

~ কি করছেন কি আপনি? পাগল হয়ে গিয়েছেন!?
ইশান চিৎকার করে বলে উঠলো,

~ হ্যাঁ হ্যাঁ!পাগল হয়ে গিয়েছি আমি! আরু ছেড়ে দে আমায়! আজ আমি ওর হাত কেটেই ছাড়বো। ও তোর শরীরে ! জানোয়ারের বাচ্চা কে আমি!

শিহাব বলল,
~ ইশান শান্ত হ! অনেক হয়েছে, ওরা যে পরিমানে মার খেয়েছে তাতে মরেও যেতে পারে!

ইশানঃ না! কোনো ভাবেই আমি ওদের ছাড়বোনা,
আরুঃ ভাইয়া প্লিজ ছেড়ে দিন ওদে,

কথাটা শেষ করা আর হলো না, তার আগেই চিৎকার করে নিচে পড়ে গেলো সে!ইশানের হাত ঝাঁটকা দেওয়াতে ছুরিটা আরুর বা হাতের তালুতে অর্ধেক কেটে বেরিয়ে আসে!

ইশানের ঝাঁটকা দেওয়াতে টাল সামলাতে না পেরে নিচে পড়ে যায় আরু। আরুর চিৎকারে শিহাব এবং কনা দৌড়ে গিয়ে আরুকে ধরলো।

ইশান হাতের ছুরিটা ছুড়ে ফেললো। দৌড়ে গিয়ে আরুকে ঝাপটে ধরে তার হাতটা জাগিয়ে ধরতেই গলগল করে রক্তের ফোটায় নিচ টা ভরে উঠলো।

আরু চোখের জল ছেড়ে দিয়ে ইশানের দিকে মুখ তুলে তাকালো। কিছু বলতে যেয়েও বলতে পারলো না, তার আগেই ঢলে পড়লো ইশানের কোলে।

ইশান অপরাধীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আরুর দিকে!

শিহাব ইশানের কাঁধে হাত রেখে বলল,
~ দোস্ত আরুকে কোলে তুলে নে, সামনেই একটা হসপিটাল আছে! তাড়াতাড়ি কর!

কনা কাঁপা কাঁপা গলায় বলল,
~ হ, হ্যাঁ ভাইয়া! তাড়াতাড়ি কোলে তুলে নেন ওকে!
কারোর কথাতেই কোনো হেলদুল নেই ইশানের।

সে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আরুর মুখপানে! শিহাব ব্যাপারটা বুঝতে পেরে ইশানের কাঁধে জোরে নাড়া দিয়ে বলল,
~ ইশান_! আরুকে তোল তাড়াতাড়ি!

ইশান হকচকিয়ে তাকালো শিহাবের দিকে। আবার আরুর দিকে তাকিয়েই চটজলদি কোলে তুলে নিলো।
_
টানা সাত ঘন্টা স্যালাইন চলেছে। স্যালাইন শেষ হওয়ার দুই মিনিটের মাথায় আরুর সেন্স ফিরলো। বেডের পাশে চেয়ার নিয়ে বসে আছে তার মা,

, একটু দুরেই মামাঃ মামি বসে আছে। মামির পাশেই ইশান মাথা নিচু করে মুখে হাত দিয়ে বসে আছে। আরু চোখ খুলে তাকাতেই সবাই যেন ব্যস্ত হয়ে পড়লো। মা তো কেঁদেই দিলেন! ইশান ধড়ফড়িয়ে উঠে দাড়ালো।

কয়েক সেকেন্ড আরুর দিকে স্থীর দৃষ্টি রেখে বের হয়ে গেলো। মা কান্না জড়িত কন্ঠে বললেন,
~ মা কেমন লাগছে এখন? হাতে ব্যথা করছে না তো?

আরু শুঁকনো ঠোঁট দুটো ভিজিয়ে নিয়ে বলল,
~ মা, কেঁদোনা এভাবে প্লিজ! দেখ, তোমার আরু একদম ঠিকাছে! প্লিজ কেঁদোনা!

মামা আরুর কপালে চুমু খেয়ে বললেন,
~ তুই তো আমাদের একদম টেনশনে ফেলে দিয়েছিলি!
আরু মুখ কুঁচকে বলল,

~ টেনশন করতে কেমন লাগে বলোতো মামা, খুব ভালো নাকি খুব খারাপ?

~ খুব খারাপ রে মা!

~ হু তাহলে এখন বুঝো, তুমি যেদিন বাসায় ফিরতে লেট করতে? সেদিন আমার আর মামির টেনশন করে কি অবস্থা হতো? হু, বলো বলো?

লেখিকা – মৌমিতা মেহরা

চলবে

(পাঠক আপনাদের ভালোলাগার উদ্দেশ্যেই প্রতিনিয়ত আমাদের লেখা। আপনাদের একটি শেয়ার আমাদের লেখার স্পৃহা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আমাদের এই পর্বের “আমার মায়াবতী (১ম খণ্ড) – লোভনীয় প্রেমের গল্প” গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম। ধন্যবাদ।)

আরো পড়ূন – আমার মায়াবতী (শেষ খণ্ড) – লোভনীয় প্রেমের গল্প

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *