ভালোবাসি – পারিবারিক প্রেম কাহিনী

ভালোবাসি – পারিবারিক প্রেম কাহিনী: নিউ ইয়ারে সায়ানকে একটু চমকে দিতে চায় তুলি। ওনাকে প্রপোজ করলে কেমন হয়? দারুণ আইডিয়া। রুমটা ভালো করে সাজিয়ে ওনাকে প্রপোজ করবো। তুলি গায়ে ওড়না ঝুলিয়ে বেরিয়ে পরে। সারা বাজার ঘুরে ঘুরে অনেক ফুল কিনে বাসায় আসে। ফুল দিয়ে রুমটা সুন্দর করে সাজায়।


পর্ব ১

খান বাড়ির সব লোকজন চুপচাপ বসে আছে। কারো মুখে কোনো কথা নেই। সবার মুখে চিন্তার ছাপ। আজ খান বাড়ির বড় ছেলে সায়ান খানের বিয়ে ছিলো। দশ বছর রিলেশন করার পরে সায়ান খান আর তার পালিয়ে যাওয়া প্রেমিকা বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো।

তাদের এই সম্পর্ক দুই পরিবারের সবাই মেনে নিয়ে ধুমধাম করে বিয়ের আয়োজন করেছিলো। কিন্তু শেষ মুহুর্তে মেয়েটা নিখোঁজ হলো।

বাড়ির সবার মাঝে সায়ানও বসে আছে। পুরো বাড়িতে মেহমান গিজগিজ করছে। নিরবতা ভেঙে আরমান খান (সায়ানের দাদা) উঠে দাঁড়ায়। তিনি বলেন তুলির সাথে সায়ানের বিয়ে হবে।
ওনার কথায় সবাই ওনার দিকে তাকায়। ওনার এই কথাটা কেউ হজম করতে পারছে না। কারণ তুলির মাএ পনেরো বছর আর সায়ানের সাতাইশ বছর। এটা কি করে হয়।

বাবা আপনি এটা কি বলছেন। (তুমির মা তাহমিনা বলে)
তুলির বাবা নেই। তুলির মা আর তুলির দায়িত্ব তুলির বড়বাবা (সায়ানের বাবা সাদাত খান) নিয়েছে।

আমি ঠিকি বলছি বউমা। এছাড়া আর কোনো উপায় নেই।
কি বাবা তুলি তো। (সায়ানের মা সাইমা বলে)
আহহ বউ মা। আর কেনো কথা নয়।
তুলিকে সাজিয়ে নিয়ে আসো।

দাদু আমি ওকে বিয়ে করবো না। (সায়ান)
আমিও একে বিয়ে করবো না। (তুলি)
আমি কারো সিদ্ধান্ত জানতে চাই নি। আমি যা বলে, ছি তাই হবে।
আরমান খান চলে যায়।

সায়ান ওর বাবাকে বলে,
বাবা তুমি কিছু করো।

সায়ান প্লিজ৷ যা করার তুমি করেছো এবার অন্তত একটু শান্তি দাও।
সাদাত খানও চলে যায়। তুলিকে নিয়ে যায় সাজাতে।
খুব ভালোভাবে সায়ান আর তুলির বিয়েটা সম্পূর্ণ হয়। বাসর ঘরে বসিয়ে দিয়ে গেছে তুলিকে সায়ানের বোন আর কিছু কাজিন মিলে।

একা বসে তুলি বোর হচ্ছে তার ওপর আবার ভারি ভারি গহনা আর লেহেঙ্গা।
এগুলো এবার খুলে ফেলা উচিৎ। কিন্তু এগুলো খুলে কি পরবো? আর মা আজ আমাকে একা ছাড়লো। আমি একা ঘুমোবো কিভাবে?

এসব ভাবছে আর পরার মতো কিছু খুজছে। অবশেষে সায়ানের একটা সাদা শার্ট পরে আর টাইস। গহনা লেহেঙ্গা একপাশে রেখে ঘুমানোর জন্য বেডে বসে তখন দরজা খোলার শব্দ পায়। তুলি উঠে দাঁড়ায়।

সায়ান ভেতরে ঢুকে তুলির দিকে তাকিয়ে দেখে ওর শার্ট পরে আছে। এমনিতেই সায়ানের মাথাটা গরম তার ওপর আবার নিজের শার্ট তুলির গায়ে দেখে আরও রেগে যায়। তুলি তো ভয়ে শেষ। কাচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
তুই আমার শার্ট কেনো পরেছিস?

দাঁতে দাঁত চেপে বলে, সায়ান। তুলি তুতলিয়ে বলে,
আআআআসলে।
সায়ান ধমক দিয়ে বলে,
আসলে নকলে বুঝাতে আসবি না। তোর সাহস হয় কি করে আমার শার্ট পরার। আর কখনো যদি দেখি তো মেরে ফেলবো। আর তুই আমার ঘরে কেনো?

আআআমাকে এখানে থাকতে বলেছে।
তোকে এখানে থাকতে বললো আর তুই ও নাচতে নাচতে চলে এলি।
আমি তো নাচতে নাচতে আসি নি। হেটে হেঁটে এসেছি।
চুপপ। খুব বেয়াদব হয়েছিস। মুখে মুখে আবার তর্ক করছিস।
তুলি এবার কেঁদে ফেলে। কিন্তু শব্দ না করে কাঁদে। সায়ান বালিশ নিয়ে বেলকনিতে চলে যায়। তুলি মুখ ভেংচি কেটে বিছানায় শুয়ে পরে।

বেলকনির দোলনায় আধশোয়া হয়ে সায়ান সিগারেটের ধোয়া উরাচ্ছে।
সকালে মায়ের ডাকে ঘুম ভেঙে তুলির। গুম ঘুম কন্ঠে বলে,
কি হয়েছে মা ডাকছো কেনো?

ডাকছি কেনো? কতো বেলা হয়েছে সে খেয়াল আছে। সায়ান তো কখন উঠে বেরিয়ে গেছে।
ধুর মা ওই সায়ান ফায়ানের কথা বলো না তো।
কেনো বলবো না? ও তোর স্বামী আমার থেকে গুনে গুনে তেরো বছরের বড়। ওই বুইরা খাটাশ কি করে স্বামী হয়।
তুলি এমন কথা যেনো আর কখনো না শুনি।

স্বামীকে সম্মান করতে শেখো।
তুলির মা চলে যায়। তুলি ফ্রেশ হয়ে নিচে যায়। সবাই যে যার কাজে বিজি। তুলি খাবারের থালাটা নিয়ে টিভি অন করে মটুপাতলু কার্টুন দেখছে আর খাচ্ছে। হঠাৎ দেখে সায়ান বড় একটা লাকেজ হাতে নিয়ে বেরুচ্ছে।
কোথায় যাচ্ছ?


পর্ব ২

কোথায় যাচ্ছ?
চিটাগং।
তুমি কোথাও যাবে না৷ আর যদি যাও তাহলে তুলিকে নিয়ে যাও। (সায়ানের বাবা)
আমি যাবো না।
তুলি ফট করে বলে, ফেলে বলে,
তোকে আমি নিলে তো যাবি।

আমি গেলে তো আপনি নিবেন আমায়।
আমার মুখের ওপর কথা বলিস এতো সাহস পাস কই।
চুপ করো তোমরা। সায়ান তুলি তোমার স্ত্রী। তো ওর দায়িত্ব তোমার।

তো তুমি যদি কোথাও যাও তো তুলিকে নিয়ে যাবে। আর না নিলে তোমারও যাওয়া হবে না।
সায়ানের বাবা চলে। সায়ান কটমট করে তুলির দিকে তাকায়। তুলি সায়ানকে ভেংচি কেটে চলে যায়।

তুলি স্কুল ড্রেস পরে কাঁধে স্কুল ব্যাগ দুই বিনুনি করে বের হয়। তুলির দাদু আরমান খান তুলিকে ডাকে
দাদু ডেকেছো।
হুম। আজ স্কুলে যেতে হবে না।
কিন্তু দাদু।

যাও, শাড়ি পরে সুন্দর করে সাজুগুজু করো একটু পরেই মেহমান চলে আসবে।
তুলি আর কি করবে। অসহায় মুখ করে রুমে চলে আসে। তুলির রুমে রুহি আসে।
তুলি তোমার শাড়ি গহনা। চলো আমি তোমাকে হেল্প করি।
আপু এসব শাড়ি গহনা আমার ভালো লাগে না। আচ্ছা একটা গাউন পরি।
তুলি তোমাকে এটাই পরতে হবে।

রুহি তুলিকে শাড়ি পরিয়ে সুন্দর করে সাজিয়ে দেয়। সারাদিন তুলিকে সারা দুনিয়ায় সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। রাত দশটাই তুলিকে ছাড়া হয়। তুলি রুমে এসে হাফ ছেড়ে বাঁচে
আল্লাহ গোটা দুনিয়ায় আর বোধহয় কেউ বাকি নেই। সবাই আজ আমাকে চিনে গেলো সায়ান খানের বউ তুলি খান।

তখন সায়ান রুমে আসে। তুলির দিকে একটু তাকিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। তুলি সায়ানের চলে যাওয়া দেখে আলমারির কাছে চলে যায়।
ওই একদম আমার শার্ট পরবি না।

তুলি আলমারি খুলতে গিয়েছিলো সায়ানের কথায় পেছনে তাকায়।
আপনার কেনো মনে হয় আমি প্রতিদিনই আপনার শার্ট পরবো?
মনে হওয়ার কিছু নেই তুই এখনই আলমারি খুলে আমার শার্ট নিতে গেছিলি।
ওভার স্মার্ট। যতসব।

তুলি সায়ানকে পাত্তা না দিয়ে আলমারি খুলে তুলির টিশার্ট আর স্কাট নেয়। তারপর সায়ানের দিকে দাঁত কেলিয়ে তাকিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। সায়ান একটা বালিশ নিয়ে বেলকনিতে চলে যায়।

পরেরদিন তুলি স্কুলে যায়। ক্লাস রুমে বসে আছে এখনো স্যার আসে নি। তুলির বেষ্টফ্রেন্ড তমা তুলির পাশে বসে।
কি রে তুলি তোর না কি বিয়ে হয়েছে?
হ রে

তুই আমাকে একবারো বললি না। কেমন বেষ্টু তুই আমার।
সরি বাবু আসলে আমার বিয়ে হবে এটা আমিও জানতাম না।
ঠিক আছে। এবার বল তোর বর কেমন।
বুরো, গোমরা মুখো।
কিহহহহহহ!

হুম। আমার থেকে গুনে গুনে তেরো বছরের বড়। আর জানিস সারাক্ষণ আমাকে বকে আর মুখটাকে কাকের মতো করে রাখে। আস্ত একটা পেঁচা।
তমা হাসতে হাসতে শেষ। তুলির রাগ হয়।

আমি তোর কাছে আমার কষ্ট শেয়ার করছি আর তুই হাসছিস। যাহ কথায় বলবো না।
তমা কোনোরকম হাসিটা চেপে বলে,
সরি বেবি। আর হাসবো না।
তখন স্যার চলে আসে।

সবগুলো ক্লাস শেষ করে বাসায় ফেরে তুলি। নিজের রুমে এসে না দেখেই ব্যাগ ছুরে ফেলে বেডে। খাটে সায়ান শুয়ে ছিলো। ব্যাগটা সায়ানের ওপর পরে আর সায়ান লাফ দিয়ে ওঠে।
ওই পাগল।

সায়ানের চিৎকারে তুলি হকচকিয়ে সায়ানের দিকে তাকায়।
চোখে দেখোস না? কানা না কি তুই।
আআআমি খখখেয়াল করি নননি।
তুতলিয়ে বলে, তুই। সায়ান তুলির ব্যাগটা ফেলে দিয়ে বলে,
তুই কখনো খেয়াল করোস? আমার তো মনে হয় খেয়াল শব্দটাই তোর মধ্যে নেই। পাগল তুই।
তাহলে এই পাগলকে কেনো বিয়ে করলেন?
মন থেকে করি নি। জোর করা হয়েছে।
হ্যাঁ তাই তো। আপনার এই রকম গোমড়া মুখো চেহারা দেখে আপনার পালিয়ে যাওয়া বউ পালিয়েছে।

তুলির কথায় সায়ান থেমে যায়। আর কোনো কথা না বলে, রুম থেকে বেরিয়ে যায়। তুলি সেদিকে পাওা না দিয়ে ফ্রেশ হতে যায়।
বিকেলে তুলির মা তুলির জামাকাপড় গোছাচ্ছে আর কাঁদছে। তুলি বেপারটা বুঝতে পারছে না। খাটের এক কোনে বসে নখ কামরাচ্ছে।

ও মা কি হয়েছে? কখন থেকে জানতে চাইছি। আমরা কি এবাড়ি থেকে চলে যাচ্ছি?
আমরা না তুই যাচ্ছিস।
কিন্তু কোথায়?
সায়ানের সাথে।
কিহহহহহহহ!

তুলি মাকে জড়িয়ে ধরে বলে,
মা আমি যাবো না প্লিজ। তোমাকে ছাড়া আমি থাকতে পারবো না।
তুলির মা তুলির মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।
তোকে থাকতে হবে মা।
আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে।

নিচে থেকে চিৎকার করে বলে, সায়ান। তুলির মা তুলিকে রেডি করিয়ে দেয়। বাড়ির সবার থেকে বিদায় নিয়ে ওরা চলে যায়।
সায়ান ডাইভ করছে। তুলি মেঘলা আকাশের মতো মুখ করে বসে আছে। সায়ানের ফোনে ফোন আসে। সায়ান রিসিভ করে।
হেলো।

সায়ান কেমন আছো?
মেয়েটার কন্ঠ শুনে সায়ান একবার তুলির দিকে তাকায়।
মায়া তুমি। কেনো করলে এমন আর এখন কেনোই বা ফোন করেছো? বেঁচে আছি কি না জানতে।
সায়ান সরি। আমি ইচ্ছে করে করিনি কিছু।

তোমার কোনো কথা শুনবো না। বাই আর কখনো ফোন দেবে না।
সায়ান ফোনটা আছার মেরে দেয়। তুলি ভয়ে কেঁপে ওঠে। সায়ান ফুল স্পিডে গাড়ি চালাচ্ছে। তুলি ভয়ে শেষ। না জানি কখন এক্সিডেন্ট হয়ে যায়। তুলি কিছু বলারও সাহস পাচ্ছে না। কিছু বললেই ধমক দেবে। তাই বসে বসে দোয়া পরছে।

হঠাৎ করে সায়ানের গাড়িটা একটা গাছের সাথে বারি খায়। তুলি মাথায় আঘাত পায়। মাথা কেটে যায়। সায়ানও একটু ব্যাথা পায়। তুলি রাগে গিজগিজ করে বলে,
আপনি মানুষ? আপনার পারসোনাল লাইফের পবলেমের জন্য আমাকে কেনো এভাবে হেনস্তা করছেন? আমার বাবা নেই বলে? আমার পাশে দাঁড়ানোর মতো কেউ নেই বলে? খুব খারাপ আপনি

তুলি গাড়ির দরজা খুলে বেরিয়ে যায়। রাস্তার পাশে বসে কাঁদতে থাকে। সায়ান গাড়িতেই বসে আছে। তুলির বলা কথা গুলো ভাবছে।
তুলি দুই হাটুর মাঝে মুখ লুকিয়ে কাঁদছে।
তুলি বাসায় চল।
সায়ানের দিকে তাকায় তুলি। সায়ান আগে আগে হেঁটে যাচ্ছে। তুলি যাচ্ছে কি না সেদিকে তার খেয়াল নেই। তুলি উঠে সায়ানের পেছনে যায়। ওরা একতলা একটা বাড়িতে যায়। বাড়িটা অপূর্ব সুন্দর। বাড়িটার সামনে দশতালা একটা বিল্ডিং।

সায়ান বাড়িতে ঢুকে একটা রুমে গিয়ে ধপ করে দরজা আটকে দেয়। তুলি অন্য একটা রুমে যায়। মাথা থেকে রক্ত ঝরতে। তুলি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ওড়না দিয়ে রক্ত মুছে নেয়। তারপর ড্রেস চেন্জ করে রান্না ঘরের দিকে যায়।


পর্ব ৩

রান্না ঘরে অনেক খুঁজেই কোনো খাবার পায় না তুলি। শুধু নুডলসের প্যাকেট আছে। ফ্রিজ খুলে দেখে সেখানে মাছ মাংস ডিম সব আছে। তুলি এবার নুডলস রান্না করবে।
তুলি শুধু তুলির জন্য নুডলস রান্না করে সোফায় বসে টিভি অন করে টিভি দেখছে আর নুডলস খাচ্ছে।

সায়ান রুম থেকে বেরিয়ে দেখে তুলি পায়ের ওপর পা রেখে নুডলস খাচ্ছে। সায়ান তুলির দিকে একটু তাকিয়ে রান্না ঘরে চলে যায়। সায়ানও নুডলস রান্না করে খায়।
তুলি ঘুমানোর জন্য একটা রুমে যায়। সায়ানের পাশের রুম। কিন্তু ওখানে একা থাকতে তুলির ভয় করছে তাই বালিশ নিয়ে সায়ানের রুমে চলে যায়। তুলি দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে একটু উঁকি দেয় দেখে রুমে কেউ নেই।

তুলি চোরের মতো পা টিপে টিপে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পরে। সায়ান বেলকনি থেকে রুমে এসে দেখে তুলি চাদর মুরি দিয়ে শুয়ে আছে। সায়ান একটান দিয়ে চাদর সরিয়ে ফেলে। তুলি ধরফরিয়ে উঠে বসে। সায়ান রাগী সুরে বলে,
তুই এখানে কেনো?

আআআমার ওওওই রুমে ভভভয় করছে।
তুতলিয়ে বলে, তুলি।
আমার বাড়িতে ভুত নেই তাই ভয় পাওয়ার কিছু নেই। ঠিক আছে তুই এই রুমে থাক আমি ওই রুমে যাই।
সায়ান বালিশ নিয়ে যেতে নেয় তুলি দৌড়ে সায়ানের সামনে যায়।
What?

আমি আপনার সাথে ঘুমাবো।
মাথা নিচু করে বলে, তুলি।
আমি তোর সাথে ঘুমাবো না।
এমন করেন কেনো? আমি তো আপনার বোন। আপন না হই চাচাতো বোন।
তো।

তো আমার প্রতি আপনার একটা দায়িত্ব আছে। আমি যদি আপনার আপন ছোট বোন হতাম তাহলে কি এমন করতে পারতেন ভাইয়া।
সায়ান এবার কি বলবে বুঝতে পারছে না। তুলির কথায় অসম্ভব রাগ হচ্ছে। চিৎকার করে বলে,
সামনে থেকে সর।

তুলি ভয় পেয়ে সরে যায়। রুমের লাইট জ্বালিয়ে শুয়ে পরে তুলি। সায়ান অন্য রুমে চলে যায়। চাদর মুরি দিয়ে ভয়ে ভয়ে তুলি ঘুমিয়ে পরে।

সকালে সায়ান রান্না করছে। তুলিকে চিটাগং এর একটা স্কুলে ভর্তি করানো হয়েছে। তুলি স্কুলে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে। চুল গুলো ঝুটি করে স্কুল ড্রেস পরে তুলি রান্না ঘরে যায়। সায়ান এক দৃষ্টিতে তুলির দিকে তাকিয়ে আছে।
আসলে সায়ান কখনো তুলিকে ভালো করে দেখেই নি।

তুলির যখন চার বছর বয়স তখন সায়ান বিদেশ চলে যায়। আর বিদেশ থেকে ফেরার পরে বিয়ে নিয়ে বিজি হয়ে যায়।
তুলি সায়ানের সামনে তুরি বাজায়।
হেলো ভাইয়া আপনি আমার দিকে নজর দিচ্ছেন কেনো?

তুলির কথায় সায়ান হকচকিয়ে যায়।
ফালতু কথা বাদ দে।
ফালতু কথা কি সত্যি কথাই তো বললাম।

তোর কাছে কেউ জানতে চায় নাই যে তুই সত্যি বলে, ছিস না কি মিথ্যে বলে, ছিস। এবার খাবারটা খেয়ে আমাকে উদ্ধার কর আর স্কুলে চলে যা।
তুলি মুখ বেঁকিয়ে খাবারটা নিয়ে টেবিলে চলে যায়। খাবার খেয়ে স্কুল ব্যাগ কাঁধে ঝুলিয়ে সায়ানের রুমে উঁকি দেয়। সায়ান অফিসের জন্য তৈরি হচ্ছে।
ভাইয়া।
কি চায়?

বলছিলাম কি তোমার গাড়িতে করে আমাকে একটু স্কুলে ডপ করে দেবে।
সায়ান চোখ ছোট ছোট করে তুলির দিকে তাকায়।
খুব শক না আমার সাথে স্কুলে যাওয়ার।
নাহহহ।

বাট আজ ফাস্ট ডে তো একা একা নার্ভাস লাগছে সো।
সরি আমার সময় নেই। আর নেক্সট টাইম আমার থেকে কোনো হেল্প চাইবি না। আমি তোকে কোনো হেল্প করবো না। নিজের লড়াই নিজে করতে শেখ।
তুলির খুব খারাপ লাগে।

এই মানুষটা এমন কেনো? মানুষের খারাপ সময়ে পিছু টানে।
তুলি হাটতে হাটতে স্কুলে যাচ্ছে। বাসার কাছেই স্কুল তাই হেটে যাচ্ছে। তুলির ফোন নেই তাই ভেবেছিলো সায়ানকে বলবে একটা ফোন কিনে দিতে কিন্তু ওনার যা মেজাজ। থাক বাবা আমি একাই ফোন কিনবো। টাকা তো আছেই।

এসব ভাবতে ভাবতে তুলি স্কুলে চলে আসে। কিন্তু এখন হয়েছে আরেক জ্বালা। তুলির ক্লাস কোনটা তুলি জানে না। এখন কি করবে।

স্কুলের মাথে দাঁড়িয়ে ভাবছে কোনটা নাইনের ক্লাস। কি এতো এতো ক্লাস রুমের মধ্যে খুঁজে পাচ্ছে না।
এনি পবলেম।

কোনো একটার ছেলের কন্ঠ পেয়ে ছেলেটার দিকে তাকায় তুলি। একগাল হাসি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সুদর্শন একটা যুবক। দেখতে মাশাল্লাহ। তুলি তাকিয়ে আছে।
আই নো আমি খুব স্মার্ট তাই বলে, এইভাবে তাকিয়ে থাকবে।
তুলি হকচকিয়ে চোখ সরিয়ে নেয়। তারপর আমতাআমতা করে বলে,
আমি এই স্কুলে নতুন। তো আমি আমার ক্লাস রুমটা খুঁজে পাচ্ছি না।

ওহহ এই বেপার। তো কোন ক্লাসে পড়ো।
ক্লাস নাইন।

আমার সাথে এসো।
তুলি ছেলেটার পিছনে যায়। দুইতলার তিন নম্বর রুমের সামনে এসে ছেলেটা দারায়।
এইটা তোমার ক্লাস রুম।
ধন্যবাদ।

নাম কি তোমার?
তাইবা তাজনিন তুলি।
নাইস নেম। আমি রাফসান রিক। ক্লাসে যাও।
হুম।

তুলি ক্লাস রুমে গিছে দ্বিতীয় ছিটে গিয়ে বসে। তুলির পাশে একটা মেয়ে বসেছে।
হাই। তুমি কি নিউ।
হ্যাঁ। আজই ফাস্টডে।
ওহহহ। আমি প্রভা। তোমার নাম।
তুলি। তাইবা তাজনিন তুলি।

মেয়েটার সাথে তুলির ফ্রেন্ডশীপ হয়ে যায়। ফাস্ট বেলে একটা টিচার আসে। ভালোভাবেই ক্লাসটা শেষ হয়। সেকেন্ড ক্লাসে যে স্যারটা আসে তাকে দেখে তুলি হা। সবাই বসে পরেছে তুলি দাঁড়িয়ে আছে।
মিছ তুলি আপনাকে কি বসার জন্য নেমন্তন্ন করতে হবে।
রিকের কথায় তুলি ঠাস করে বসে পরে। ক্লাসের সব ছেলেমেয়েরা হাসতে থাকে। রিক ধমক দেয়। রিক তুলিদের ইংলিশ টিচার।

ক্লাস শেষে তুলি আর প্রভা কথা বলতে বলতে বাইরে আসছে।
তুলি আমার এখন ইংলিশ কোচিং আছে রে।

আমারও ইংলিশ কোচিং করতে হবে।
তাহলে তো ভালোই হলো তুই আর আমি একসাথে কোচিং করতে পারবো।
স্যারের সাথে কথা বলতে হবে তো।
চল এখুনি বলি।
এখন।
হুম চল।

তুলি আর প্রভা রিকের অফিস রুমে চলে যায়।
মে আই কাম ইন স্যার।
রিক ফোনের দিকে তাকিয়েই বলে,
ইয়েস কাম।

তুলি আর প্রভা ভেতরে ঢুকে।
স্যার তুলি আপনার কাছে ইংলিশ পারত চায়।
রিক তুলির দিকে তাকায়। হাসিমুখে বলে,
ঠিক আছে।

কোচিং শেষে বাসায় চলে আসে তুলি। খুব খিদে পেয়েছে সেই সকালে খেয়েছে এখন পাঁচটা বাজে। খাবার টেবিলের সামনে গিয়ে দেখে ডাল ভাত আর মাছ রান্না করা। তুলি ফ্রেশ না হয়েই খেতে বসে।

রাত দশটাই সায়ান বাসায় ফেরে। বাসায় ফিরে তুলির রুমে নক না করেই ঢুকে। তুলি ড্রেস চেঞ্জ করছিলো। সায়ান ওভাবে ঢুকে পরায় দুজনই মুখোমুখি হয়।
সায়ান তুলিকে দেখে ঘুরে দাঁড়ায়। তুলি তারাহুরো করে ড্রেস পরে।
আপনি নক না করেই আমার রুমে কেনো ঢুকেছেন?
সায়ান তুলির হাত ধরে তুলিকে কাছে এনে শান্ত গলায় বলে,
তুই দরজা লক না করে ড্রেস চেঞ্জ কেনো করছিলি?

যদি কেউ চলে আসতো
যদি কেউ আসতো মানে কি এসেছে তো। নেক্সট টাইম আর কখনো নক না করে ঢুকবেন না।
সায়ান কিছু না বলে, তুলির দিকে তাকিয়ে আছে। তুলি ভয় পেয়ে যায়।
এভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো? আর আমাকে ছাড়ুন।
সায়ান তুলিকে ছেড়ে দেয়।

খেতে আয়
আমি খেয়েছি
সায়ান ভেবেছিলো তুলি খায় নাই। সায়ান কিছু না বলে, চলে যায়। তুলি একটু বই পরে শুয়ে পরে।

আজ ফ্রাইডে স্কুল বন্ধ কিন্তু কোচিং আছে। দশটাই কোচিং। তুলি জিন্স টপ পরে চুলগুলো ঝুটি করে চোখে কাজল ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক নিয়ে যাওয়ার জন্য পা বারায়। তখন সায়ান ডাকে
কোথায় যাচ্ছিস?

কোচিং আছে।
কাল স্কুলে গেলি আর কোচিং ও ঠিক করে ফেললি।
ইয়া কজ তাইবা তাজনিন তুলি সব কিছুতেই ফাস্ট।
ভেরি গুড। ওড়না নিয়ে যা।
মানে।
মানে বড় হয়ে গেছিস। এখন ওড়না ছাড়া ঘুরে বেড়াতে লজ্জা করে না।
লজ্জার কি আছে।

এটা ফ্যাশন
আমার বাড়িতে এসব ফ্যাশন চলবে না। ওরনা ছাড়া যাওয়া যাবে না।
এই ড্রেসের সাথে ওড়না নিলে একদম পাক্কা গাইয়া লাগবে।
চুপ। সায়ান জোরে একটা ধমক দেয়। তুলি ভয় পেয়ে যায়। সায়ান তুলি ড্রেসের সাথে মেচিং করে একটা ওড়না এনে দেয়। তুলি সায়ানকে মনে মনে হাজারটা গালি দিতে দিতে বেরিয়ে যায়।


পর্ব ৪

কোচিং এ বসে আছে প্রভা আর তুলি। আজ একটু আগে এসেছে। কয়েকজন এসেছে তারা বাইরে দিয়ে ঘুরছে। রিক আসে।

হাই।
তুলি আর প্রভা রিককে দেখে ভালো ভাবে বসে।
হেলো স্যার (প্রভা)
রিক ওদের সামনের ছিটে বসে।

কেমন আছো তোমরা।
ভালো। আপনি। (তুলি)
ভালো। তা তুলি তোমাকে খুব মিষ্টি লাগছে।
ধন্যবাদ স্যার।

ওয়েলকাম। তা তোমার পরিরারে কে কে আছে?
সবাই আছে।
ওহহ।

কোচিং শেষে তুলি দাঁড়িয়ে আছে। একটা ফোন কিনবে কিন্তু একা যেতে কেমন জানি লাগছে। প্রভাকে বলে ছিলো। প্রভার বাড়িতে যাওয়ার তারা আছে তাই চলে গেছে।
হেই তুলি এখনো যাও নি।
পেছন থেকে রিক বলে,
হুম যাবো
এনি পবলেম।

তেমন পবলেম নেই। তবে আমি ফোন কিনবো তো একা যেতে কেমন লাগছে।
ওহহ এই বেপার। তুমি চাইলে আমি তোমায় হেল্প করতে পারি।
আপনি।

হুমম। তাছাড়া আমারও মার্কেটে যেতে হবে বোনের বার্থডে তো আমি ওকে একটা ফোন গিফট করবো।

তুলির আমত থাকা স্বত্বেও রিকের সাথে যায়। রিক চয়েস করে তুলিকে একটা ফোন আর সিমকার্ড কিনে দেয়। তুলির সাথে রিকের ফ্রেন্ডশিপ হয়।
সায়ান ওর ফ্রেন্ডের সাথে মার্কেটে এসেছিলো। তুলিকে রিকের সাথে দেখে তুলির দিকে এগিয়ে যায়।

এটা কি তোর কোচিং?
সায়ানের কথা শুনে তুলি ভয় পেয়ে যায়। কারণ সায়ান অসম্ভব রেগে আছে। চোখ দুটো লাল হয়ে আছে।

হু আর ইউ।
রিক সায়ানকে প্রশ্ন করে।
আমি কে সেটা আপনাকে বলতে আমি বাধ্য নই।
আমি বাধ্য কজ আপনি আমার আর ওর মধ্যে ঢুকেছেন।
সায়ান ভাভাইয়ায়া আআআসলে আমি।

তুতলিয়ে বলে, তুলি। সায়ান কিছু বলতে যাবে তার আগেই রিক বলে,
এটা তোমার ভাই তুলি। আগে বলবেন তো। হেই ব্রো আমি রিক।
রিক সায়ানের দিকে হাত বারিয়ে দেয়।

সায়ান তুলির হাত ধরে টেনে নিয়ে যায়।
সারা রাস্তা সায়ান তুলির সাথে একটাও কথা বলেনি। বাড়ির সামনে গাড়ি থামিয়ে হনহন করে সায়ান চলে যায়। তুলি পেছন পেছন যায়। তুলি রুমে ঢুকতেই সায়ান তুলিকে দেয়ালের সাথে শক্ত করে চেপে ধরে। রাগে সায়ানের শরীর কাঁপছে। দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
আমি তোর ভাই হই।
তুলি ভয়ে জমে গেছে। গলা দিয়ে কথা বের হচ্ছে না।
কি হলো বল।

চিৎকার করে বলে, সায়ান। তুলি কেঁপে ওঠে।
হহহ্যাঁ। ভভভাই ই তো লললাগগগেনন।
তুতলিয়ে বলে, তুলি। তুলির কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথে সায়ান তুলি ঠোঁট জোড়া দখল করে নেয়। তুলি শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

এখন বুঝেছিস আমি তোর কি লাগি।
তুলি কিছু না বলে, ওয়াশরুমে চলে যায়। সায়ান বেরিয়ে যায়।
কিছুখন পরেি কলিং বেল বেঁজে ওঠে। তুলি দরজা খুলে দেখে একটা মেয়ে আর একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে।
সায়ান বাসায় আছে। (মেয়েটা)
নাহহ।

ছেলে আর মেয়েটা তুলিকে ঠেলে বাসায় ঢুকে সোফায় বসে। তুলি দরজা খোলা রেখেই ওদের পেছনে আসে। ওরা কি নিয়ে যেনো কথা বলছে তুলি শুনতে পাচ্ছে না। একটু পরেই সায়ান বাসায় ঢোকে। মেয়েটা দৌড়ে গিয়ে সায়ানকে জড়িয়ে ধরে কান্না করা শুরু করে দেয়। এখানে কি হচ্ছে তুলি কিছুই বুঝতে পারছে না।

সরি সায়ান। আমি ইচ্ছে করে করিনি বাধ্য হয়ে ছিলাম। প্লিজ হ্মমা করে দাও প্লিজ।
মেয়েটা সায়ানকে জড়িয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলে। সায়ান একবার তুলির দিকে তাকিয়ে মেয়েটাকে বলে,
আমাকে ছাড়ো মায়া।

শান্ত গলায় বললো সায়ান। সায়ানের শান্ত কন্ঠে মেয়েটার কান্নার গতি বেরে গেলো।
সায়ান খুব #ভালোবাসি তোমায়।
সায়ান এবার ধাক্কা দিয়ে মেয়েটাকে ফেলে দিলো।
এই তোমার ভালোবাসা? বিয়ের দিন কতো ইনসাল্ট হতে হয়েছে আমাদের জানো? চলে যাও তুমি।

তুলি এবার বুঝতে পারলো এটাই তাহলে সায়ানের পালিয়ে যাওয়া বউ। মেয়েটা সায়ানের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বললো,
সরি বলছি তো। আরে ফাঁশির আসামিও যদি নিজের ভুল স্বীকার করে তাকেও তো একটু ছাড় দেওয়া হয়। সায়ান তুমিও তো আমাকে ভালোবাসো বলো।
মায়া আমি বিবা।
আপুটা তো সরি বলছে।

হ্মমা করে দিন।
সায়ানকে থামিয়ে তুলি বলে। মায়া তুলির দিকে তাকায়।
সায়ান ও কে।
আমি ওনার কা।
বউ। ও আমার বউ।
মায়া গলা ফাটিয়ে হাসে।

এভাবে হাসছো কোনো
সায়ান জিজ্ঞেস করে। মায়া হাসিটা কোনোরকম আটকিয়ে বলে,
সিরিয়েসলি সায়ান তুমিও খুব ভালো মজা করো
এখানে মজার কি দেখলে
এই পিচ্চিটা তোমার বউ।

এটা আমায় বিশ্বাস করতে হবে। আমাকে জেলাস করার করার জন্য মিথ্যে বলছো।
মায়া।
সায়ান আমি জানি আমার সায়ান শুধু আমার। সে আমাকে রেখে অন্য কাউকে বিয়ে করবে এটা আমি বিশ্বাস করি না।

এনিওয়ে আজ আসছি কাল অফিসে দেখা হবে। বাই &লাভ ইউ।
মায়া আর ছেলেটা চলে যায়। তুলি সায়ানকে ভেংচি কেটে চলে যায়। রাতে তুলি ফোন দেখছে আর খাচ্ছে। সায়ান তুলির পাশে বসে খাচ্ছে।
তোর তো ফোন ছিলো না।
কিনেছি।
কে কিনে দিলো।

আপনাকে বলবো কেনো? আমি ফোন কিনি না যাই কিনি আপনার কি
কি বললি তুই? আমার কি?

মুহুর্তেই সায়ানের চোখ লাল হয়ে যায়। তুলি ভয়ে ঢোক গিলে। যদি তখনকার মতো করে।
সায়ান নিজের চেয়ার ছেড়ে তুলির কাছে আসে। তুলি কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,
আপনি দুরে থাকেন প্লিজ। বোনের সাথে এরকম বিহেব করা ঠিক না।
সায়ান টেবিলের ওপর থেকে একটা গ্লাস আছার মেরে রুমে চলে যায়।
তুলি বুকে হাত রেখে জোরে একটা শ্বাস নিয়ে বলে,

যাহ বাবা এতো রেগে গেলো কেনো? আমিও না কি সব ভাবছি উনি তো সব সময় রেগেই থাকে। গোমড়া মুখো কোথাকার। মেবি ব্রাশ করে না। তাই ময়লা দাঁত লুকাতে মুখ গোমড়া করে থাকে।
তুলি নিজের রুমে বসে পরছে। তখন তুলির ফোন বেজে ওঠে।
হেলো।

কি করো?
চিনতে পারলাম না।
এতো তারাতাড়ি ভুলে গেলে। দিছ ইজ নট ফেয়ার তুলি।
মনে রাখার মতো কেউ কি আপনি?

অবিএসলি।
সরি আমি আপনাকে সত্যি চিনতে পারছি না। বাই।
হেই হেই আমি রিক ইউআর টিচার।
ওহহ আপনি।
ইয়া আমি। বললে না তো কি করছো?
বই পরছি। আপনি?

আমার হার্টবিটের সাথে কথা বলছি।
মানে।
ডিনার করছো?

হুম। আপনি।
আমিও। তুলি কাউকে ভালোবাসো।
রিকের কথায় তুলি হকচকিয়ে যায়।
কি হলো বলো
ভালোবাসি না তবে একজনকে ভালো লাগে।
কে সে।
পরে এক সময় বলবো। এখন বাই ঘুমাবো।
তুলি রিককে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ফোন কেটে দেয়।
কেমন টিচার রে বাবা আঠার মতো লেগে থাকে। আরে ভাই আমি বিবাহিত।

কে বোঝাবে একে।

সকালে তুলি স্কুলে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে তখন সায়ান আছে। হাতে একটা শপিং ব্যাগ নিয়ে।
আজ তোর স্কুলে যেতে হবে না।
আপনার কথায়।
হ্যাঁ আমার কথায়।

আমি স্কুলে যাবো।
রিক স্যারকে একদিন না দেখে থাকতে পারবি না বুঝি।
যে যেমন তার চিন্তা ভাবনা গুলোও তেমন।
বেশি কথা না বলে, এই শাড়িটা পরে নে।
আমি শাড়ি পরতে পারি না।
খেতে পারোস।
হোয়াট ডু ইউ মিম।

কিছু না। আমি হেল্প করছি।
একদম না। আপনার চরিত্র খারাপ।
কিহহহহহহহহ।
আরে আস্তে কান তো ফেটে যাবে।
আমার চরিত্র খারাপ।

সন্দেহ আছে।
হুম।
মনে নেই সেই দিন
সায়ান তুলির দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বলে,
সেই দিন কি বল।


পর্ব ৫

কথায় কথায় আপনি আমার দিকে এগিয়ে আসেন কেনো বলেন তো? দুর থেকে কি কথা বলা যায় না। না কি আমি কালা কোনটা।
দুর থেকে কথা বললে তুই বুঝিস কম।
ফালতু কথা। সব সময় আমার সাথে দশ হাত দুরে থাকবেন বুঝলেন।
সায়ান তুলির কথায় কান না দিয়ে এগোতে থাকে। তুলি পিছিয়ে যাচ্ছে।

পিছতে পিছতে ওয়াশরুমের দরজার কাছে চলে যায়। দরজাটা হালকা ভেরানো ছিলো। তুলি দরজায় ভর দেয় আর ধপাক করে পড়ে যায়। সায়ান মুখ ঢেকে ফেলে। তুলি পরেই কান্না শুরু করে দেয়।
থাম থাম এতো জোরে কাঁদলে মানুষ ভাববে আমি তোকে পটাচ্ছি।
তুলি নাক টেনে টেনে বলে,
আপনার জন্যই তো এমন হলো। আমার কোমরটা ভেঙে গেলো। এখন কি হবে আমার। এ্যা এ্যা।
স্টপ। কিচ্ছু হয় নাই জাস্ট পরে গেছিস।

সায়ানের ধমকে তুলি চুপ করে। সায়ান তুলিকে কোলে করে আয়নার সামনে দাঁড় করায়।
শাড়িটা আমি পরিয়ে দেবো। অন্য সব কিছু তুই পরে আয়।
আমি পরবো না শাড়ি।

আর একটা কথা বললে একটা থাপ্পড় খাবি।
সায়ান দরজা আটকে চলে যায়।
এই লোকটা আস্ত একটা হনুমান। একটুও ভালো করে কথা বলতে পারে না। সারাক্ষণ ধমক দেয়। শালা তুই বউ পাবি না। সারা জীবন চিরোকুমার থাকবি।

ধুর আমিও না ওনার তো বিয়ে হয়ে গেছে। তাও আবার আমার সাথে।
তুলি শাড়ি হাতে নিয়ে নিজে নিজে পরার ট্রাই করছে।
যেটা পারিস না সেটা করার চেষ্টা করিস কেন।
সায়ানের কথায় সোজা হয়ে দাঁড়ায়।
চেষ্টা না করলে তো আর শিখতে পারবো না।

অতিরিক্ত কথা বলিস তুই।
সায়ান তুলিকে শাড়ি পরিয়ে দিচ্ছে। আচল ঠিক করে দিচ্ছে তখন দরজা ঠেলে মায়া ঢোকে।
সায়ান তুমি ওকে শাড়ি পরাচ্ছো কেনো?
মায়ার কথায় তুলি সায়ান দুজনই মায়ার দিকে তাকায়।
ও পারতে পারে না তাই। আর তুমি এখন এখানে কেনো?

তোমাকে নিতে এসেছি। সবাই আমাদের জন্য ওয়েট করছে তারাতাড়ি চলো। কি যেনো নাম তোমার ওহহ তুলি তুমি আমাদের সাথে যাবে?
হুম ও যাবে।
ঠিক আছে চলো।
ওরা তিনজন বেরিয়ে পরে। সায়ান ডাইভ করছে পাশে মায়া বসেছে। তুলি ইচ্ছে করেই পিছনে বসেছে।

ওরা একটা ক্লাবে আসে। সায়ান আর মায়া গল্প করতে করতে যাচ্ছে। মায়া শুধু বলছে সায়ান শুনছে। তুলি ওদের পেছনে আসছে। সায়ান তিনটে মেয়ে আর দুইটা ছেলের সাথে কথা বলছে আর মায়া সায়ানের পাশে বসে আছে।
সায়ান ও তোর বউ (আলিফ)
সবাই হাসে।

সায়ান তুমিও না একটা দুধের শিশুকে বিয়ে করলে। আমি না হয় একটা পবলেমে আটকে বিয়ের দিন উধাও হয়েছিলাম তাই বলে, তুমি তোমার মেয়ের বয়সী একটা বাচ্চা কে বিয়ে করবে।

তবে যাই হোক এবার আমি চলে এসেছি। তুলি মন দিয়ে লেখাপড়া করো আমি তোমার সায়ান ভাইয়া আমরা তোমার পাশে আছি। অনেক বড় হও তারপর ভালো ছেলে দেখে তোমার বিয়ে দেবো
তুলি সায়ানের মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলো। তুলি ভেবেছিলো সায়ান হয়ত কিছু বলবে কিন্তু সায়ান চুপ করে আছে।
আপু তোমার বাবা কি তোমার থেকে তেরো বছরের বড়?

মানে
আমি সায়ানের থেকে তেরো বছরের ছোট। আর একটা বাবা তার মেয়ের থেকে ২৭-৩০ বছরের বড় হয়। তো তোমার কোন দিক থেকে মনে হয় আমি সায়ানের মেয়ের বয়সি। তুমি হয়ত জানো স্বামী সব সময় স্ত্রীর থেকে বড় হয়।

মায়া অপমান বোধ করে। তুলি এভাবে কথা বলবে তা মায়া ভাবে নি। সবাই তুলির দিকে তাকিয়ে আছে। সায়ান ছাড়া।
তুলি ওখান থেকে উঠে চলে আসে। একপাশে দাঁড়িয়ে আছে।

আচ্ছা উনি কি মায়া আপুকে এক্সেপ্ট করে নেবে। আমাকে ডিভোর্স দিয়ে দেবে। যা খুশি করুক। আমাকে লেখাপড়া করতে হবে। উন্নতি করতে হবে
তুলির চোখ বেয়ে দু ফোটা পানি গড়িয়ে পড়ে।
তুলি একটু সায়ানের দিকে তাকিয়ে দেখে মায়া সায়ানকে টেনে ডান্স ফ্লোরে নিয়ে যাচ্ছে। তুলি চোখ সরিয়ে নেয়।

মায়া পাগলামী বন্ধ করো। আমি বিবাহিত।
কিন্তু ভালো তো আমাকে বাসো।
কাকে ভালোবাসি সে টা বড় কথা না। বড় কথা এটাই যে তুলি আমার বউ।
মাই ফুট। আমি তোমাদের ডিভোর্সের ব্যবস্হা করছি।

সায়ান তুমি তো কখনো আমার মুখের ওপর কথা বলতে না। আমি যা বলতাম তাতেই হ্যাঁ বলতে। তাহলে এখন শুনছো না কেনো? আমি তোমাকে ভালোবাসি তুমিও আমাকে ভালোবাসো তাহলে এখানে তুলি কেনো থাকবে?

আমি তুলিকে বিয়ে করেছি।
ওহহহ গড। সায়ান তাকাও আমার দিকে। আমার চোখের দিকে তাকাও। আমার চোখে তোমার জন্য ভালোবাসা দেখতে পাচ্ছো?
মায়া আমি এখানে থাকবো না। বাসায় যাবো।

ঠিক আছে চলো
মায়া সায়ানের হাত ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। হাজারটা কথা বলছে। সায়ান তুলির কথা ভুলে গেছে। মায়া এক ফাঁকে সায়ানের ফোন সাইলেন্ট করে দেয়।

তুলি সায়ানকে দেখে মায়ার হাত ধরে বেরিয়ে যাচ্ছে। তুলি ওদের পেছনে দৌড় দেয়। কিন্তু তুলি পৌছানোর আগেই ওরা গাড়ি নিয়ে চলে যায়। তুলি গাড়ির পেছনে দৌড়ায়। কিন্তু নাগাল পায় না। ক্লান্ত হয়ে বসে পরে তুলি।
আমাকে কেনো রেখে গেলেন সায়ান? আমি কোথায় যাবো এখন।
কাঁদতে কাঁদতে বলে, তুলি।

আরে তুলি তুমি এখনে এভাবে কাঁদছো কেনো।
পেছনে তাকিয়ে দেখে রিক। তুলি ভরসা করার মতো কাউকে পেয়ে জড়িয়ে ধরে জোরে কান্না করে ফেলে। তুলি রিককে জড়িয়ে ধরেছে এতে রিকের ভালো লাগছে আবার তুলি কাঁদছে তাতে খারাপও লাগছে।

রিক তুলির মাথায় হাত বুলায়।
বলো তুলি কি হয়েছে? তুমি একা কেনো? তোমার বাবা মা বা বাড়ির সবাই কোথায়?
চলে গেছে। আমাকে একা ফেলে।
হেঁচকি তুলে বলে, তুলি। রিক তুলির চোখের পানি মুছে দিয়ে বলে,
কোনো বেপার না আমি পৌঁছে দিয়ে আসছি তোমায়।

কেঁদো না প্লিজ
তুলি রিকের গাড়িতে ওঠে। রিক নানা ভাবে তুলিকে হাসানোর চেষ্টা করছে কিন্তু তুলি হাসছে না। তুলির মনে পাহাড় সমান অভিমান জমে আছে।
রিক তুলিকে বাড়ির সামনে নামিয়ে দেয়। বাড়ির ভেতরে পৌঁছে দিতে চায় কিন্তু তুলি না করে।

সায়ান বাড়ি এসেই তুলির কথা মনে পরে। তারাহুরো করে বেরোনোর জন্য দরজা খুলে দেখে তুলি দাঁড়িয়ে আছে। চোখ মুখ ফুলে আছে। তুলি সায়ানকে পাশ কাটিয়ে ভেতরে ঢোকে।
তুলি আমি আসলে।

আপনি আসলে কি ভালোবাসার মানুষ কে পেয়ে আমাকে ভুলে গেছিলেন। তাই ফেলে এসেছেন তাই তো। আমি তো জোর করে আপনার ঘারে চেপে বসি নি। তাহলে কেনো? আপনার কাছে স্ত্রীর অধিকার ও চাই নি। আর কখনো চাইবোও না। বউ না মানলেন বোন তো হয়। সেই খাতিরেই না হয় আমাকে নিয়ে আসতেন।

তুলির গলা ধরে আসছে। চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পরছে। সায়ানের তুলির কান্না সয্য হচ্ছে না। খুব খারাপ লাগছে।
তুলি সরি
ইটস ওকে।

তুলি রুমে চলে যায়। সায়ান ওখানেই বসে পরে। আজ সায়ান একটা মস্ত বড় ভুল করেছে।
খুব সকালে ঘুম থেকে ওঠে তুলি। আর কখনো সায়ানের রান্না খাবে না। তাই নিজের রান্না নিজেই করলো।

রান্না করে খাবার রুমে নিয়ে আসে। সায়ানের সামনে যাবে না আর। স্কুলের জন্যে রেডি হয়ে খাবার খেয়ে ড্রয়িং রুমে উঁকি দিয়ে দেখে সায়ান আছে কি না। নাহ নেই তুলি দৌড়ে চলে যায়।
সায়ানও আর তুলির সামনে যাবে না। তাই তুলির খোঁজ নেয় নি।

রিক স্যারের কোচিং এ বসে আছে প্রভা আর তুলি। সবার ছুটি হয়ে গেছে কিন্তু ওদের বসিয়ে রেখেছে। একটু পরে রিক চলে আসে হাতে খাবারের প্যাকেট নিয়ে। ওদের সামনে রাখে।
স্যার এসব কী? (প্রভা)
তোমাদের জন্য গরম গরম বিরিয়ানি।
বিরিয়ানির মান শুনেই তুলি প্যাকেট খুলে খেতে শুরু করে।

রিক কেনো বিরিয়ানি এনেছে সেটা শোনার সময় নেই। প্রভা জিজ্ঞেস করলো।
স্যার বিরিয়ানি কিসের জন্য।
আমি তোমাদের টিচার তো ভালোবেসে কি তোমাদের কিছু খাওয়াতে পারি নি?
হুম পারেন বাট।
আগে খাও। পরে বলছি।
প্রভাও খাওয়া শেষ করে।

বাসায় ফেরার সময় তুলি বাজার করে নিয়ে আসে। সায়ানের কিছুই আর খাবে না। বাসায় ঢুকে দেখে সায়ান আর মায়া খাচ্ছে। মায়া তুলিকে ডাকে। তুলি না শোনার ভান করে রুমে চলে যায়।

রাত দশটায় তুলি রান্না করতে যায়। পেঁয়াজ কাঁটছে।
তুই রান্না করছিস কেনো?
তুলি সায়ানের কথা না শোনার ভান করে। সায়ান রেগে যায়। তুলির দিকে এগিয়ে যায় তুলি থামিয়ে দেয়।

একদম আমার আশেপাশে ঘুরঘুর করবেন না। আমাকে আমার মতো থাকতে দেন। আমি তো আপনার লাইফে নাক গলাতে যায় না তো আপনিও আমার লাইফে নাক গলাতে আসবেন না
নাক গলানোর কোনো ইচ্ছেই নেই আমার। আমার বাড়িতে থাকিস তাই বলতে এসেছিলাম খাবি কি না।
সায়ান চলে যায়। তুলি রান্নায় মন দেয়।


পর্ব ৬

আজ তুলির শরীরটা খুব খারাপ লাগছে। স্কুল থেকে আসার পরেই নিজের রুমে শুয়ে ছিলো। আজ আর রান্না করতে যায় নি। ওভাবেই ঘুমিয়ে পরে।
সায়ান অফিস থেকে ফিরে রান্না করে। তারপর গোছল করে ডিনার করে নিজের রুমে গিয়ে কাজ করতে থাকে।

রাত দশটায় তুলির ঘুম ভাঙে কিন্তু খুব খারাপ লাগছে। শরীর গরম। তুলি বিছানা থেকে নেমে সায়ানের রুমে যায়।

দাঁড়ানোর শক্তি নেই। তুলির উপস্থিতি টের পেয়ে সায়ান পেছনে না তাকিয়ে বলে,
তুই আমার রুমে কেনো এসেছিস? যা এখান থেকে।
আমার খুব খিদে পেয়েছে কিছু খেতে দেন না
অসুস্থ কন্ঠে বলে, তুলি। সায়ান তুলির দিকে তাকায়। তুলি ঢুলে পরছে।
কি হয়েছে তোর?
তুলি কিছু বলতে পারে না। পরে যেতে নেয় সায়ান ধরে ফেলে।
এর তো প্রচন্ড জ্বর।

সায়ান তুলিকে সায়ানের বিছানায় শুয়িয়ে দেয়। তুলির মাথায় জলপট্টি দেয়। জ্বরটা একটু কমলে খাবার নিয়ে আসে। তুলিকে খায়িয়ে ঔষুধ খাইয়ে দেয়।
সায়ান তুলির মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। অপুর্ব সুন্দর মেয়েটা। এর চোখে মুখে প্রচন্ড মায়া। তখন সায়ানের ফোন বেজে ওঠে।
হেলো।
কি করো।
কিছু না।
আমাকে জিজ্ঞেস করবে না।
জানার প্রয়োজন মনে করি না।
সায়ান তুমি।

মায়া আমার লাইফ থেকে চলে যাও প্লিজ। একটু ভালো থাকতে দাও না আমায়। একটু শান্তিতে থাকতে চাই আমি।
সায়ান ফোন কেটে দেয়। ফোনটা আছার মেরে ভেঙে ফেলে। তারপর আবার তুলির মুখের দিকে তাকায়।

সকালে তুলির ঘুম ভাঙতে নিজের ওপর ভারি কি অনুভব করে তুলি। চট করে চোখ খুলে দেখে সায়ান তুলিকে ধরে শুয়ে আছে। সায়ানের মুখটা তুলির মুখের খুব কাছে। তুলি তারাহুরো করে সরে যায়। সায়ানের ও ঘুম ভেঙে যায়।
আপনি আমাকে কেনো টাচ করলেন?

সায়ান বসে বলে,
তোকে বলতে হবে।
হ্যাঁ হবে।
তোর জ্বর হয়েছিলো।
তো।
তো মানে।
আমার জ্বর হোক বা আমি মরে যায় তাতে আপনার কি? আপনাকে সিনপেথি দেখাতে কে বলছে।

এটুকু কথা বলে, তুলি সায়ানের দিকে তাকিয়ে ভয় পায়। কারণ সায়ান অসম্ভব রেগে গেছে।
কি বললি তুই আমার কি।
দাঁতে দাঁত চেপে বলে, সায়ান।

তুলি ঢোক গিলে সাহস জুগিয়ে বলে,
ঠিক ই তো বললাম আপনার কি।
সায়ান বিছানা থেকে নেমে তুলির দিকে এগিয়ে যায়। তুলি দৌড়ে ওয়াশরুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয়। সায়ান দরজা ধাক্কিয়ে বলে,
খোল বলছি।

আমারে কি পাগল পাইছেন না কি? স্বেচ্ছায় সিংহের সামনে দাঁড়াবো।
সায়ান দরজার আড়ালে একটু দাঁড়িয়ে চলে যায়। একঘন্টা পরে তুলি বের হয়। ততোখনে সায়ান অফিসে চলে যায়।
আজ আর তুলি স্কুলে যায় না।

বাড়িতে বসে আছে। একা একা ভালো লাগছে না। পুরো বাড়ি ঘুরে দেখছে। পরে সায়ানের রুমে যায়। সায়ান আজকে ভুলে আলমারি খুলে রেখে গেছে। তুলি সায়ানের আলমারির সামনে একটা ওড়না দেখে এগিয়ে যায়। ওড়নায় মুরানো অনেক অনেক ছবি একটা খাতা অনেক গুলো চিঠি। তুলি ওগুলো বিছানায় রাখে।

সায়ান আর মায়ার ছবি সব। দুজনের মুখেই হাসি। সায়ানের হাসি মুখ দেখে তুলির ভালো লাগে। তারপর চিঠি গুলো দেখে। সব গুলো চিঠি মায়ার লেখা। আর খাতাটা দশ বছর আগের। সায়ানের লেখা মায়াকে নিয়ে কত কথা।

সায়ান ভাইয়া মায়া আপুকে এতো ভালোবাসে। তাহলে মায়া ওনাকে ঠকালো কেনো? এরকম একটা মানুষের সাথে কেনো এমন করলেন?

তুলি সব কিছু সুন্দর করে গুছিয়ে রাখলো। তারপর নিজের রুমে চলে গেলো।
সায়ান আসবো।
হুম আয়।
আকাশ সায়ানের পাশে চেয়ার টেনে বসে। সায়ান ফাইল দেখায় বিজি।
সায়ান মায়াকে কিছু বলছিস না কেনো?
কি বলবো?

কি বলবি মানে? তুই মেরিড। তুলি তোর বউ। মায়ার পাগলামিতে তুই কেনো সায় দিচ্ছিস।
আমি এ বিষয়ে কিছু বলতে শুনতে চায় না।
সায়ান।

তুই আসতে পারিস।
আকাশ বেরিয়ে যায়। সায়ান কাজে মন দেয়। তখন মায়া ঢোকে।
সায়ান।
তুমি এখন এখানে কেনো?

আমি একটু শপিং এ যাবো। তাই তোমাকে নিতে এসেছি।
আমি বিজি।
প্লিজ চলো না। আমরা তো বেস্টফ্রেন্ড। চলো না।
মায়া জোর করে সায়ানকে নিয়ে যায়।
প্রভা আসে তুলির কাছে।

একসাথে শপিং এ যায়।
শপিং মলে এসে তুলি সায়ান আর মায়াকে দেখে আড়ালে যায়। মায়া হাজারটা ড্রেস দেখছে আর সায়ানকে দেখাচ্ছে
এই তুলি এদিকে আসলি কেনো?
প্রভা আমি বাসায় যাবো।
কিন্তু।
প্লিজ ভাল্লাগছে না।
ওরা বাসায় চলে যায়।

আজ বিকেলেই সায়ান বাসায় আসে। তিনজন ফ্রেন্ড নিয়ে আসে। বাড়ির সামনে তুলি ওর সমবয়সী কয়েকজন ছেলের সাথে ফুটবল খেলছে। থ্রীকোয়াটার প্যান্ট আর টিশার্ট পরা। সায়ান বাসায় ঢোকার আগে তুলিকে দেখে দাঁড়িয়ে পরে।
সায়ান কি হলো?
(শুভ)
তোরা ভেতরে যা আমি আসছি।
সায়ান তুলির কাছে যায়।
ওই
সায়ানের ধমক মারা ডাকে তুলি থেমে যায়।

বাসায় যা।
তুলি দৌড়ে চলে যায়। সায়ান ওর পিছনে যায়। সায়ানের ফ্রেন্ডরা দাঁড়িয়ে দেখছিলো।
সোফায় বসে আছে সায়ান আর ফ্রেন্ডরা।
সায়ান তোর বউ তো বাচ্চা। (রনি)
বউ তো বউ ই। আর সায়ান আমাদের বড় তো ওর বউকে আমাদের সম্মান দিয়ে ভাবি বলা উচিৎ। (আকাশ)
ওরা হেসে ওঠে।
এই পিচ্চিকে ভাবি বলবো ইম্পসিবল (শুভ)

তুলি ওদের জন্য কফি নিয়ে আসে। সবাই তুলির দিকে তাকিয়ে আছে। সায়ানের খুব রাগ হচ্ছে। ওর ফ্রেন্ড দের কিছু বলতে পারছে না। কারণ ওদের কি দোষ। ওড়না ছাড়া টিশার্ট আর থ্রিকোয়াটার প্যান্ড পরে ওদের সামনে এসেছে।
ওই তোকে কফি বানাতে কে বলেছো।
চেচিয়ে বলে, সায়ান।

তুলি আমতাআমতা করে
আসলে
সায়ান ঠাস করে তুলির গালে চর বসিয়ে দেয়। তুলি ছিটকে পরে যায়। টেবিলের সাথে লেগে মাথা কেটে যায়। ওর বন্ধুরা নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে
ওকে মারলি কেনো তুই?

আকাশ বলে। আকাশ তুলিকে ধরে ওঠায়। তুলি কান্না করছে। সায়ান মুখ ঘুরিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আকাশ ওর রুমাল দিয়ে তুলির কপাল মুছাতে যায়। তুলি বাধা দেয়
তুলি আমি তোমার ভাইয়ের মতো। সায়ানকে আমি ভাইয়া বলি তো তুমি আমার ভাবি। ভাবির একটু যত্ন তো করতেই পারি।

আকাশ কপালটা পরিষ্কার করে দেয়। তুলি নিজের রুমে চলে যায়। ওভাবেই কান্না করতে থাকে। সায়ান তুলিকে দেখতে আসে না।
পরেরদিন তুলি হেঁটে হেঁটে স্কুলে যাচ্ছে। একটা গাড়ি তুলির খুব কাছ দিয়ে ঘেসে যায়। তুলি চিৎকার দিয়ে বসে পরে। গাড়িটা থেমে যায়।

গাড়ি থেকে একটা লোক নেমে আসে।
লোকটা তুলির সামনে দাঁড়িয়ে স্তব্ধ হয়ে যায়। মুখের ভাষা হারিয়ে ফেলে। কি বলবে বুঝতে পারছে না। লোকটা তুলির কাছে হাটু গেরে বসে তুলির মুখে হাত দিতে গেলে তুলি তারাহুরো করে উঠে ওরে। লোকটাও উঠে দাঁড়ায়।
কেমন আছো তুলি?

তুলি লোকটার দিকে তাকিয়ে আছে। এই মানুষটাই তুলির বাবা। দশ বছর বয়সে শেষ দেখেছিলো তুলি তুলির বাবাকে। পাঁচ বছর পরে আবার দেখছে। তুলির কান্না পাচ্ছে। ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকায় তুলি।

খুব ভালো আছি।
তুলি চলে যেতে নেয়
মামনি
স্টপ। আমি আপনার মামনি না। আমি তুলি। শুধু আমার মায়ের তুলি। আমার বাপি মারা গেছে। আর কখনো আমার সামনে আসবেন না। আই হেট ইউ


পর্ব ৭

তুলি দাঁড়াও। আমার কথাটা শুনো
তুলি আর পেছন ঘুরে তাকায় না। দাঁড়ায় ও না। হাত দিয়ে চোখের পানি মুছছে আর হাঁটছে। আজ আর ক্লাসে যেতে ইচ্ছে করছে না। তাই স্কুলের পাশে একটা পুকুর পারে বসে আছে তুলি।

তুলি
পেছনে ঘুরে দেখে রিক দাঁড়িয়ে আছে। তুলি আবার পুকুরের দিকে তাকায়। রিক তুলির পাশে এসে বসে। তুলির হাত ধরে
কি হয়েছে তুলি? আমাকে বলতে পারো
……..
আমি তো ফ্রেন্ড। আর ফ্রেন্ডের সাথে সব শেয়ার করায় যায়।
…….
তুলি তোমার কপালে কি হয়েছে? বলো না আমায়।

তুলি এবার শব্দ করে কেঁদে ফেলে। রিক তুলিকে নিজের বুকে জড়িয়ে নেয়। তুলি ইচ্ছে মতো কাঁদছে। রিক বাধা দিচ্ছে না। কাদুক না। কাঁদলে কষ্ট কমে।
তুলি কি হয়েছে? কেউ কিছু বলেছে? কাল তো তোমাদের গার্ডিয়ান নিয়ে আসতে বলেছে স্কুল থেকে। তা নিয়ে কোনো পবলেম
তুলি এবার রিকের বুক থেকে মাথা তুলে।

হেঁচকি তুলে বলে,
আমি বাড়ি যাবো
বলো না কি হয়েছে তোমার?
কিছু হয় নি
তুলি উঠে দাঁড়ায়।
তুলি
প্লিজ স্যার ভালো লাগছে না আমার
তুলি চলে যায়। রিক বুঝতে পারছে না মেয়েটার কি হয়েছে।

বাসায় ফিরে তুলি দেখে সায়ান রান্না করছে আর মায়া আকাশ শুভ ওরা সায়ানকে হেল্প করছে। তুলি সেদিকে না তাকিয়ে নিজের রুমের দিকে হাঁটা শুরু করে
তুলি
সায়ানের ডাকে তুলি দাঁড়ায়।

এতো তারাতাড়ি স্কুল থেকে চলে এলি যে। আর তোর চোখ মুখ এমন ফোলা ফোলা লাগছে কেনো? কি হয়েছে তোর?
তুলি রুমে ঢুকে জোরে দরজা আটকে দেয়। সায়ানের সাথে কথা বলার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই তুলির। আয়নার সামনে দাঁড়ায় তুলি।

আমি কেনো কাঁদবো? একদম কাঁদবো না আমি। আমার বাবা মারা গেছে। আমাকে বড় হতে হবে। নিজেকে তৈরি করতে হবে।
একা একা কথা গুলো বলে।

ওয়াশরুমে চলে যায় তুলি। একঘন্টা সাওয়ার নেয়। নীল একটা থ্রি পিছ পরে। খুব খিদে পেয়েছে। কিন্তু রান্না না করলে তো আর পেটে খাবার যাবে না। কিচেনে চলে যায়। সায়ান আর ওর ফ্রেন্ডরা কিছু একটা নিয়ে আলোচনা করছে আর খাচ্ছে। তুলি ওদিকে পাত্তা না দিয়ে রান্নায় মনোযোগ দেয়।

তুলির ফোনটা বেজে ওঠে। ফোন বাজার শব্দে সবাই তুলির দিকে তাকায়। তুলি ফোনটা নিয়ে ছাঁদের দিকে চলে যায়
হেলো স্যার বলেন?

কি করে আমার বিউটিকুইন
কিছু না। আপনি
তোমার কথা ভাবছি।
আমার কথা
হুম
বাট কেনো?
তুমি বুঝো না কেনো?

নাহহহ
আই লাভ ইউ
আই লাইল ইউ বাট ডোন্ট লাভ
তুমি তো এখনো ছোট। তাই লাইক ই ঠিক আছে। বড় হও তারপর না হয় লাভ করো
স্যার আমি মেরি
তুলি

পেছন থেকে সায়ানের কন্ঠ শুনে তুলি পেছনে তাকায়।
পরে কথা বলছি
রিকের ফোন কেটে দেয় তুলি। সায়ানকে পাশ কাটিয়ে যেতে নেয়। সায়ান তুলিকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে
ছাড়ুন আমাকে

কার সাথে কথা বলছিলি
যার সাথেই বলি তাতে আপনার কি?
কথাটা শেষ হওয়ার আগেই সায়ান তুলিকে ছাঁদের শেষ পান্তে নিয়ে আসে।
আর কখনো বলবি আমার কি?
তুলি ভয় পেয়ে যায়।

নাাা
মনে থাকে যেনো
সায়ান তুলিকে ছেড়ে দেয়। তুলি হাফ ছেড়ে বাঁচে
কার সাথে কথা বলছিলি
কাল আমার স্কুলে গার্ডিয়ান নিয়ে যেতে বলেছে।

তো আপনি যদি
তোর মনে হয় আমি যাবো তোর সাথে? কখনো না। নিজের দায়িত্ব নিজে নিতে শেখ
তুলি মাথা নিচু করে বলে,
সরি।
তুলি চলে যায়।

নিচে নামতেই আকাশ ডাক দেয়
তুলি ভাবি
তুলি এগিয়ে যায়
হুম ভাইয়া বলেন
বসো না আমাদের সাথে আড্ডা দেই
নাহহহ। ওর আড্ডা দিতে হবে না। রুমে যা তুই
পেছন থেকে সায়ান কথাটা বলে,
আকাশ ভাইয়া পরে কোনো সময় আমরা দুজন আড্ডা দেবো ঠিক আছে
তুলি হাসি মুখে বলে, আকাশকে। আকাশ ও একগাল হেসে তুলির কাছে নাম্বার চায় তুলিও দিয়ে দেয়। সায়ান তো রেগে আগুন হয়ে আছে।

রাতে তুলি পরছে। তখন কোথা থেকে সায়ান এসে তুলির হাত থেকে বই ফেলে দেয়
পবলেম কি আপনার
তোর সমস্যা কোথায়? আকাশের সাথে কিসের এতো কথা তোর।
কোথাও পোরা পোরা গন্ধ পাচ্ছি
বাজে কথা বন্ধ কর
বাজে কথা কই বললাম।

আকাশের সাথে বেশি কথা বলবি না
কই আমি তো আপনাকে বলি না মায়া আপুর সাথে কথা বলবেন না
আমি মায়ার সাথে কথা বলি তাতে তোর কি
সেম টু ইউ। তাছাড়া ও আকাশ ভাইয়া খুব ভালো মানুষ
তোর কাছে আকাশের সার্টিফিকেট চাই নি।
দিচ্ছি ও না। আমি পড়বো আপনি যেতে পারেন।

সায়ান তুলির দিকে ঝুকে বলে,
আমার কথার বাইরে যাবি না। তাহলে খুব খারাপ হয়ে যাবে
সায়ান তুলির হাতে বই দিয়ে চলে যায়। তুলি পরায় মনোযোগ দেয়।

সন্ধায় তুলি কফি খাচ্ছে বেলকনিতে বসে। তখন সায়ান হাতে একটা শপিং ব্যাগ নিয়ে তুলির রুমে ঢোকে
তুলি
কান খোলা আছে
তৈরি হয়ে নে।

বেরোবো
আমি যাবো না
তুলি
চিৎকার করছেন কেনো? আপনি খুব বাজে। আমাকে আবার একা ফেলে চলে আসবেন।
তুলি আমি টেন কাউন্ট করবো। এরমধ্যে যদি রেডি হতে না যাস তো তোর একদিন কি আমার একদিন
সব সময় এমন পেচা হয়ে থাকেন কেনো? করলার মতো কথা বলেন সব সময়। বলি একটু কি হেসে কথা বললে কি আপনার ফাঁশি হয়ে যাবে না কি? যত সব
তুলি শপিং ব্যাগটা নিয়ে সায়ানকে ভেংচি কেটে চলে যায়।
হলুদ লেহেঙ্গার কাঁচা ফুলের গহনা দারুণ লাগছে তুলিকে। সায়ান চুল ঠিক করছিলো
চলুন

সায়ান তুলির দিকে চেখ আটকে যায়। এতো সুন্দর লাগছে মেয়েটাকে
এভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো?
এতো সেজেছিস কেনো?

সেজেছি তো
সাজতে কে বলেছে
সাজতে কারো পারমিশন লাগবে জানা ছিলো না
আর কখনো সাজবি না
ঠিক আছে যাবো না
চল
সায়ান তুলির হাত ধরে যায়।

আজ শুভোর গাঁয়ে হলুদ। বাড়িটা খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। সায়ান আর তুলি শুভোদের বাড়িতে ঢুকছে তখন কোথা থেকে মায়া এসে সায়ানকে জড়িয়ে ধরে।
তুলি বিরক্ত হয়ে মায়ার দিকে তাকিয়ে আছে। মায়া পাতলা একটা হলুদ শাড়ি পরেছে। শরীরের পঞ্চাশ ভাগ দেখা যাচ্ছে
আমাকে কেমন লাগছে সায়ান?

মায়াপু এভাবে জাপটে ধরে থাকলে দেখবে কি করে? আর না দেখলে বলনে কি করে
মায়া সায়ানকে ছেড়ে দেয়। তুলি দাঁত কেলিয়ে সায়ানের দিকে তাকায়।
এবার বলো সায়ান
ভাইয়া ভালো করে দেখে বলেন
সায়ান রাগী চোখে তুলির দিকে তাকায়।
ভালো
শুধু ভালো
অনেক ভালো

তুলি তোমাকে জাস্ট ওসাম লাগছে। আমি তো চোখই ফেরাতে পারছি না।
কারো কথায় তুলি সায়ান মায়া পেছনে তাকায়। মানুষটাকে দেখে তুলির মুখে হাসি ফোটে। কিন্তু সায়ানের খুব রাগ হয়। হাত মুঠ করে ফেলে সায়ান।


পর্ব ৮

হেই স্যার
রিক তুলির কাছে আসে।
আমাকে পাগল করে দিতে চাও না কি?
কি যে বলেন না স্যার।
ঠিকই তো বললাম।

হেই তুলির ভাইয়া হাউ আর ইউ
হাসি মুখে বলে, রিক। সায়ান দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
ফাইন
স্যার এটা আমার হবু ভাবি। ভাইয়ের গফ। তো আমরা ওদিকটাই যায় ওনারা কথা বলুক
ইয়াহ শিওর
তুলি

সায়ান ভাইয়া আমি ওদিকটাই থাকবো। হারাবো না। আপনাদের দেখাদেখি শেষ হলে ডেকে নিয়েন।
তুলি আর রিক চলে যায়।

সায়ান তুলির সাথে রিককে খুব মানায় বলো সায়ান (মায়া)
তুলিকে শুধু ওর স্বামীর সাথে মানায়।
দাঁতে দাঁত চেপে বলে, চলে যায় সায়ান।
তুলি আর রিক পাশাপাশি হাটছে
তুলি সায়ান কি শুধুই তোমার ভাইয়া।

নাহহহ। আমার স্বামী
কিহহহহহ। মজা করছো
আমার জীবনটাই মজার।
তোমার আর ওনার বয়সের দিক
বাদ দেন না প্লিজ।

আমার এখন আর এসব ভালো লাগে না
সায়ান তোমার গায়ে হাত তুলে তাই না
তুলি থেমে যায়। রিকের দিকে তাকায়
আজ তুমি কান্না করছিলে, তারপর তোমার কপালে চোট, সব মিলিয়ে আমি বুঝতে পেরেছি সায়ান তোমাকে পছন্দ করে না।

হুমম। আমি আর একটু বড় হলে ওনাকে মুক্তি দিয়ে দেবো।
তখন আমাকে একসেপ্ট করবে?
আমি আপনার সাথে ফ্রেন্ড +স্যার হিসেবে কথা বলি। তো আপনি যদি অন্য কিছু বলেন তো আমাদের সম্পর্ক এখানেই শেষ।

আমি তোমার ফ্রেন্ড হয়েই থাকতে চাই।
তুলি একটু মুচকি হাসে।
রিক তুলির অনেক ছবি তুলে দেয়।
সবাই এক সাথে খেতে বসে। মায়া সায়ানের পাশে বসেছে। আর তুলি রিক সায়ানের সামনে।
তুলি

পেছনে তাকিয়ে দেখে তুলির বাবা। তুলির হাসিখুশি মুখটা কালো হয়ে যায়।
কাকায় তুমি এখানে
সায়ান তুহিনকে জড়িয়ে ধরে।
কেমন আছিস বাবা
ভালো। তুমি
খুব ভালো।
তুলি খাওয়া ছেড়ে ওঠে।

তুলি একটু কথা বলো না আমার সাথে
‌কি কথা বলবো আপনার সাথে? আর কেনো বারবার আমার সামনে আসছেন? কি চায়?
তুলি আমি তোমার বাবা
আমার বাবা মারা গেছে। আমি এতিম
তুলি আর এক পা না দাঁড়িয়ে চলে যায়। রিক তুলির পেছনে যায়।
সায়ান

কাকায় আমি তুলির সাথে কথা বলবো
সায়ান ও চলে যায়।
তুলি নিরিবিলি জায়গায় একা দাঁড়িয়ে আছে। রিক পাশে দাঁড়ায়।
তুলি ছোট ছোট বিষয় নিয়ে ভেঙে পরা বা কান্না করাটা দুর্বলদের কাজ। জাস্ট ইগনোর করো। তোমার পিছুটান তো একদিন তোমার সামনে আসবেই তাই বলে, ভেঙে পরবে।

ইটস নট ফেয়ার তুলি
আমি ভেঙে পরি নি। খুন্ব স্ট্রয় আমি
ভেরি গুড

রিক তুলির মাথায় একটা চাটি মারে। তুলি হেসে ফেলে। সায়ান দেখে ফেলে। সায়ান রিকের সামনে থেকে তুলির হাত ধরে টেনে নিয়ে যায়। পাগলের মতো ডাইভ করে
ভাইয়া প্লিজ আস্তে চালাও আমার ভয় করছে
সায়ান স্পিড আরও বাড়িয়ে দেয়। তুলি সিট বেল্ট বাধে নি। চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে তুলি। এই বুঝি এক্সিডেন্ট করলো।

সারা রাস্তা ভালোই আসে। কিন্তু বাড়ির সামনে আসতেই সামনে থাকা আরেকটা গাড়ির সাথে ধাক্কা খায়। তুলি গাড়ির দরজা খুলে নিচে পরে যায়। সায়ান মাথায় একটু হালকা চোট পায়। পাশে তাকিয়ে দেখে তুলি নেয়। তুলি নিচে পরে গেছে।
সায়ান তুলিকে ওঠায়। হাসপাতালে নিয়ে যায়।

হাসপাতালের করিডোরে চোখ বন্ধ করে বসে আছে সায়ান। তুলি পায়ে ব্যথা পেয়েছে। আর কপালের কাটা যায়গা থেকে রক্ত বের হয়েছে।

আপনি এবার আপনার বোনকে নিয়ে বাসায় যেতে পারেন
নার্সের কথা শুনে বিরক্তির সাথে নার্সের দিকে তাকায় সায়ান
বোন

হুম। উনি তো বললো আপনি ওনার ভাই হোন
সায়ান রাগে ফুসতে ফুসতে তুলির কেবিনে ঢোকে।
তুলি মুখ বাঁকিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে আছে
আমি তোর ভাই লাগি

আপনি আমার জোম লাগেন। সব সময় আমাকে মারার প্লান করেন কেন? আমি মরলে আপনি বেঁচে যান মানলাম তাই বলেনিজের হাতে খুন করবেন। আপনার কি একটুও মায়া দায়া নাই

তুলি আর কিছু বলতে পারে না। কারন তার আগেই সায়ান তুলির ঠোঁটে টুপ করে একটা চুমু দেয়। তুলির কথা গুলো আটকে যায়।
কি হলো চুপ কেন? আরও কি কি বলবি বল
আপনার ক্যারেকটার এতো খারাপ।

ছি কথায় কথায় ঘেসাঘেসি করেন চুমু দেন। এরপর যদি আবার চুমু দিতে আসেন না তাহলে ঠোঁট সিলাই করে দেবো বলে, দিলাম
চুপ করবি
আমি বাসায় যাবো
তো যা না
আমার পা টা যে আপনি ভেঙে দিছেন

ঠিক হইছে এবার আমিও দেখবো তুই কি করে রিকের সাথে নিকনিক করিস
আমি তো আর রিককে বাসায় নিতে পারবো না কজ ভাড়া থাকি যে। কি আর করার কিছু দিন আপনার আর আপনার মায়ার রংঢং দেখতে হবে
তাতে তোর কি
সেম টু ইউ

তুই আমার বউ
আপনিও আমার বর
এতো কথা কেনো বলিস তুই
সেটা তো আমারও কোশ্চেন

আমি তোকে একটুও হেল্প করবো না। দেখি কি করে বাড়ি যাস
আকাশ বা রিককে ফোন করতে হবে।
সায়ান তুলিকে কোলে তুলে নেয়।

নিজের রুমে বসে বই পরছে তুলি। পা টা আগের থেকে বেশি ব্যাথা হয়ে গেছে। নারাতেও পারছে না। এদিকে ভিষণ খিদে পেয়েছে। বাইরে থেকে সায়ান আর মায়ার কথার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে।
আজ আর কিছু খাওয়া হবে না। সায়ান আমার কথা ভুলে গেছে। না খেয়েই ঘুমিয়ে পরি
তুলি ওভাবেই ঘুমিয়ে পরে। কিছুখন পরে সায়ান খাবার নিয়ে এসে দেখে তুলি ঘুমিয়ে গেছে। সায়ানও নিজের রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পরে।

সকালে অনেক বেলা করে তুলির ঘুম ভাঙে। পায়ের ব্যাথাটা অনেক কমেছে। একটু একটু হাটতে পারছে তুলি। ফ্রেশ হয়ে রান্না ঘরে চলে যায়।
আমি তোর জন্য রান্না করেছি
আপনার রান্না খাবো না
কেনো?
বলা তো যায় না খাবারে বিশ টিশ মিশিয়ে দিতে পারেন
তোকে আমার রান্নায় খেতে হবে।

তখন কলিং বেল বেজে ওঠে। সায়ান দরজা খুলে দেখে মায়া। মায়া ভেতরে আসে
মায়া আপু ভালো সময়ই এসেছো
কেনো?
সায়ান ভাইয়া তোমার জন্য রান্না করেছে
সত্যি
হুম ১০০% সত্যি

মায়া খেতে বসে যায়। সায়ান অগ্নি দৃষ্টিতে তুলির দিকে তাকিয়ে আছে। মায়া খেতে খেতে বলে,
জানো তুলি। আগে না সায়ান প্রতিদিন আমার জন্য নতুন নতুন ডিশ রান্না করতো। কিন্তু তুমি ওর লাইফে আসার পরে আমাদের মধ্যে দুরত্ব বেরে গেছে
সব কিছুর জন্য তুমি দায়ী মায়া (সায়ান)
আই প্রমিজ আমি আবার সব ঠিক করে দেবো।

বেশি পাকনামি করবি না তুই
সায়ান রাগী সুরে বলে,
আপনার মুখে হাসি ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য যদি একটু পাকনামি করি তাহলে হ্মতি কি?
তুলি রান্নাঘরে চলে যায়। সায়ান তুলির দিকে তাকিয়ে থাকে। মায়া খাচ্ছে।

আজ আর সায়ান অফিসে যায় নি। তুলি সোফায় বসে খাচ্ছে আর ফোন দেখছে। মায়া চলে গেছে। মায়ার বাসাটা পাশেই হওয়ায় একটু পরপরই আসে।
তাহলে তুই আমার রান্না করা খাবার খাবি না
তুলি পায়ের ওপর পা তুলে বলে,
প্রশ্নই ওঠে না
খুব বার বেরেছে তোর
হুমমম

চুলা আমার। টাকা আমার
টাকাটা দাদুর। চুলা নিয়ে খোটা দিচ্ছেন তো। আমি তো কয়েক মাস পরে চলে যাবো। তাই আর এই কয়মাসের জন্য চুলা কিনবো না।
তুলি তুই
কিচ্ছু বলার দরকান নেই। আপনি রান্না করবেন মায়া আপু খাবে ব্যাস
আমার রান্না তুই খাবি

যাতে আমাকে মারতে আপনার সুবিধা হয়
আমি কেনো মারবো তোকে
তাহলে পা টা ভাঙলো কি করে
তোর বোকামির জন্য
আপনার সাথে কথা বলার ইচ্ছে নেই
রিকের সাথে কথা বলতে ইচ্ছে হয়
হুম হয় তো

সায়ান তুলির হাত শক্ত করে ধরে বলে,
আমার সাথে তোর কথা বলতে হবে। ইচ্ছে না থাকলেও। আর রিকের বেবস্থা তো আমি করবোই।


পর্ব ৯

আজ তুলির এসএসসি পরিহ্মা। এই এক বছরে সব কিছু পাল্টে গেছে। শুধু পাল্টায়নি তুলি আর সায়ানের সম্পর্কটা। তুলি আর সায়ান দুজন দুই পান্তে।
তুলি খাচ্ছে আর বই পরছে। সায়ান খাচ্ছে আর আরচোখে তুলিকে দেখছে। খাওয়া শেষে তুলি স্কুল ড্রেস পরছে আর আয়না দেখছে

ইশ মোটা হয়ে গেছি। সবাই পড়ার চাপে রোগা হয় আর আমি মোটা হই।
আয়না দেখা শেষ হলে চল
সায়ানের কথায় তুলি আয়না ছেড়ে সায়ানের দিকে তাকায়
সরি বুঝতে পারলাম না
কালা না কি তুই? তোকে আজ আমি নিয়ে যাবো
সূর্য মেবি আজ ওঠে নি তাই না
এমন কেনো মনে হচ্ছে তোর

না মানে এতোদিন তো কত বলতাম আপনি আমাকে ধমক দিয়ে বলতেন নিজের কাজ নিজে করতে শেখ। তো আজ এই পরিবর্তন কেনো? ওহহহ বুঝতে পেরেছি এক্সাম শেষে তো আমি চলে যাবো তাই এখন নিয়ে যেতে চাইছো
তুই এতো কথা বলিস কেনো?

একটু চুপ থাকতে পারিস না
আল্লাহ মুখ দিছে কথা বলার জন্য চুপ থাকবো কেন?
অলরেডি নয়টা বারো বাজে। দশটায় তোর এক্সাম
ওহহহ আমার হয়ে গেছে
ফাইলটা হাতে নিয়ে তুলি দৌড়ে বেরিয়ে যায়।
সায়ান তুলির হাত ধরে গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। সায়ানের বিহেব তুলির অবাক লাগছে। আজ এতো কেয়ার কেনো করছে।

সায়ান তুলিকে পরিহ্মার হলে পৌঁছে দিয়ে চলে যায়। এক্সাম শুরুর আগে রিক তুলির সাথে দেখা করে গেছে।
রিক আর সায়ান পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে
ভাইয়া, কিছু বলবেন

তুমি তুলিকে ভালোবাসো
কেনো বলেন তো
বলো না। সত্যি বলবে
হুম বাসি
আর তুলি

ও বাসে না। আমাকে জাস্ট ফ্রেন্ড ভাবে
বিয়ে করবে তুলিকে
তুলি তো আপনার বউ
হুম শুধু নামে। আমি কখনো তুলিকে ছুঁয়েও দেখি নি।
আমি জানি

আমর থেকে তুলি অনেক ছোট। আমার সাথে ওর যায় না। কিন্তু তোমার সাথে তুলিকে খুব মানাবে। তুমি আর তুলি পারফেক্ট জুটি।
কিন্তু ভাইয়া

ডিভোর্স পেপার রেডি করা আছে। তুলিকে দিয়ে সাইন করিয়ে নেবো
আর আপনি
আমি মায়াকে বিয়ে করে নেবো।

রিক সায়ানকে জড়িয়ে ধরে।
ধনী ভাই। আমি তুলিকে ভীষণ ভালোবাসি
এক্সাম শেষে তুলি সায়ানের খোঁজে এদিকে এসেছিলো তাই ওদের সব কথা তুলি শুনে ফেলে। খুব কান্না পাচ্ছে তুলির। দৌড়ে বাড়ি চলে যায়।
সায়ান তুলিকে স্কুলে খুঁজে না পেয়ে বাড়ি ফিরে যায়।

তুলির ঘরের দরজা বন্ধ। সায়ান কিছুখন ডাকাডাকি করে কিন্তু তুলি দরজা খোলে না। তুলির কোনো শারা না পেয়ে সায়ান চলে যায়
আমাকে সায়ান ডিভোর্স দিয়ে দেবে এতে আমার এতো কান্না পাচ্ছে কেনো? দিক না ডিভোর্স তাতে আমার কি? উনি মায়া আপুকে বিয়ে করবে বলে, আমাকে রিকের সাথে বিয়ে দিয়ে দেবে। আমি রিক কে বিয়ে করবো না। আমি চলে যাবো।

তুলির কান্নার বেগ বাড়িয়ে দেয়। মানুষ এতো স্বার্থপর কেনো হয়? সব সময় নিজের ভালোটা দেখে। চারপাশের মানুষদের নিয়ে ভাবার সময়ই নেই।
তুলি পরতে বসে। এক্সাম শেষ হলেই তুলি চলে যাবে। এই কয়দিন আর সায়ানের মুখোমুখি হতে চায় না তুলি।

রাত বারোটা সায়ান বেলকনিতে বসে সিগারেট খাচ্ছে। সিগারেটটা শেষ হলেই তুলির রুমে যাবে। প্রতিদিনই সায়ান তুলির রুমে যায়। তুলির ঘুমন্ত চেহারাটা দেখা সায়ানের অব্ভাস হয়ে গেছে। তুলি দরজা বন্ধ করে শুয়েছে তাই সায়ান বেলকনি দিয়ে তুলির রুমে যায়। চেয়ার টেনে তুলির পাশে বসে। কেনো বসে আছে সায়ান নিজেও জানে না।
ফোন বেজে ওঠে সায়ানের। ফোনের স্কিনে মায়া নামটা লেখা। ফোন হাতে নিয়ে নিজের রুমে চলে আসে সায়ান

বলো
কি করছো
কিছু না

শোনো না আমি তোমার বাসায় আসি
এতো রাতে কেনো?
বাবা, মা বাড়িতে নেয়। একা প্লিজ আসি না
মায়া তুলি কি ভাববে

পিচ্চি একটা, মেয়ে। ও কি ভাববে? আমি তুলিকে বুঝিয়ে বলবো
কলিং বেল বাজায় সায়ান দরজা খুলতে যায়। তুলি পানি খেতে উঠছিলো এতো রাতে কে এসেছে এটা জানতে উঁকি দেয়। দেখে মায়া এসেছে। সায়ান আর মায়া কথা বলছে। তুলি আবার দরজা আটকে ফেলে। কষ্টে তুলির বুকটা ফেটে যাচ্ছে।

আজ এক্সাম শেষ। সায়ান অফিসে গেছে। এই সুযোগে তুলি জামাকাপড় গুছিয়ে বেরিয়ে যায়। যাওয়ার আগে পুরো বাড়িটা একবার ভালো করে দেখে নেয়।
বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে আছে তুলি। হাতে দুটো ব্যাগ। কোন বাসটা মানিকগঞ্জ যাবে এটাই বুঝতে পারছে না তুলি। এদিকে ওদিকে তাকিয়ে খুঁজছে। অবশেষে একটা বাস পায় মানিকগঞ্জ টু ঢাকার।

তুলি এক দৌড়ে বাসে ওঠে। এই প্রথম একা একা এতোটা রাস্তা যাবে তুলি। একটু একটু ভয় করছে। তুলি একদম পেছনের ছিটের আগের ছিটে বসেছে। পেছনের ছিটে কে বসেছে দেখার জন্য উঁকি দেয় তুলি। দেখে তুলির বাবা বসে আছে আর তার সাথে তুলির থেকে বয়সে ছোট একটা ছেলে আর একজন মহিলা। তুলি সামনে তাকায়। তুলির বাবা তুলিকে দেখে নি।
বাড়িতে এসে কলিং বেল বাজাতেই সায়ানের মা দরজা খুলে দেয়।
তুলি তুই।

সায়ানের মা একটু জোরেই বলে। তুলির মা সায়ানের বাবা সায়ানের বোন রুহি আর দাদু চলে আসে। তুলি সায়ানের মা কে ঠেলে ভেতরে ঢুকে সোফায় বসে পরে। তুলির মা তুলির পাশে বসে। আরেকপাশে তুলির দাদু বসে। তুলির দাদু বলে,
তুমি একা কেনো? সায়ান কোথায়?
জানি না
জানিস না মানে কি তুলি?

জানি না মানে জানি। তোমরা আমাকে কি পেয়েছো বলোতো সবাই মিলে সায়ান ভাইয়ার সাথে বিয়ে দিয়ে দিলে। সায়ান ভাইয়া আবার অন্য একটা ছেলে ঠিক করেছে আমাকে বিয়ে দেওয়ার জন্য। আবার আমার বাবা মানে তোমার ছেলে সে আবার বউ বাচ্চা নিয়ে সব সময় আমার সামনে দিয়ে ঘুর ঘুর করবে।
কি ভাবো বলোতো আমাকে তোমরা?

আমি ছোট বলে, যা খুশি করবে। আমি সায়ানের সাথে ফিরবো না ইনফেক্ট সায়ান ভাইয়া কে আমার চোখের সামনেও দেখতে চায় না।
চিৎকার করে কথা গুলো বলে, তুলি নিজের রুমে চলে যায়। উপস্থিত সবাই তুলির কথা শুনে চুপ হয়ে গেছে।
আজ সায়ানের বাড়ি ফিরতে দেরি হয়ে যায়। ইমপটেন্ট একটা মিটিং ছিলো। বাড়িতে ঢুকে সায়ানের কেমন জানি ফাঁকা ফাঁকা লাগছে।

কারণ প্রতিদিন এই সময় বাড়ি ফিরে দেখে তুলি কার্টুন দেখছে আর খাচ্ছে। কিন্তু আজ তুলি নেই। সায়ান তুলির রুমে গিয়ে দেখে তুলি তো দুরের কথা তুলির একটা জামাও নেই।
সায়ান দৌড়ে গেটের কাছে এসে দারোয়ানকে জিজ্ঞেস করে।
চাচা তুলিকে দেখেছেন।

হহ তুলি আফামনি তে দুপুরেই ব্যাগপএ নিয়ে চলে গেছে।
চলে গেছে শুনে সায়ানের বুকের ভেতর মোচর দিয়ে ওঠে। রুমে এসে দরজা বন্ধ করে দেয় সায়ান। সিগারেট ধরায়। তুলি চলে গেছে শুনে তো খুশি হওয়ার কথা কিন্তু আমার এতো খারাপ লাগছে কেনো? কম তো কষ্ট দেই নি পিচ্চি টাকে।
নিজের মনে কথাগুলো ভাবছে সায়ান।

ফ্রেশ হয়ে খাবার টেবিলে বসে।
মা খেতে দাও।
সাওনের মা তুলির জন্য খাবার নিয়ে আসে। তুলির সামনে রাখতেই তুলি খাওয়া শুরু করে।
সায়ান তোকে ভালোবাসে।
তুলি খাওয়া থামিয়ে বলে,
নাহহ। মায়া আপু ফিরে এসেছে এখন আমাকে ডিভোর্স দিয়ে তাকে বিয়ে করবে।
কিহহহ
হুম।

তোমার ছেলে খুব খারাপ।
ফুপিয়ে কেঁদে ওঠে তুলি। সায়ানের মা তুলিকে জড়িয়ে ধরে
কাঁদিস না সোনা
জানো আমাকে মেরেছে। একদিন পার্টিতে নিয়ে গিয়ে ফেলে এসেছিলো।
তোকে আর সায়ানের সাথে থাকতে হবে না।

ও চাইছে তো ডিভোর্স দিতে। ঠিক আছে আমি তোকে রাজপুত্রের মতো ছেলের সাথে বিয়ে দেবো।
বিয়ে কথাটা শুনে তুলি সায়ানের মাকে ছেড়ে দেয়।
আমি কখনো বিয়ে করবো না
না খেয়েই উঠে পরে তুলি।

নিজের রুমে এসে দেখে দাদু বসে আছে।
দাদু তুমি।
এক্সাম কেমন হয়েছে।
ভালো।

তোমার বাবা তোমার সাথে কথা বলেছে।
ওনার বিষয়ে কিছু শুনতে চায় না।
ঠিক আছে।
দাদু চলে যায়। তুলি দরজা আটকে দেয়।


পর্ব ১০

অফিসে বসে আছে সায়ান। কোনোকিছুই ভালো লাগছে না। সকাল থেকে কিছু খাইও নি। তখন মায়া আসে।
সায়ান আই এম সো হ্যাপি।
মায়া সায়ানকে জড়িয়ে ধরে।

মায়া এটা অফিস। আর কথায় কথায় এতো ঢলাঢলি করার কি আছে। দুর থেকে কথা বলতে পারো না।
মায়া সরে গিয়ে বলে,
সরি খুশিতে ধরে ফেলছি।
খুশির কারণ।

তুলি চলে গেছে। আর আমার বাবাও রাজি হয়ে গেছে। এবার একটা ভালো দিন দেখে আমরা বিয়ে করে নেবো।
আমি তো কখনো তোমাকে বলি নি আমি তোমাকে বিয়ে করবো।
কিহহ। তুমি না বললে তুলির সাথে তোমার ঠিক যায় না। তুলি বাচ্চা মেয়ে। ওকে ওর মতো কারো সাথে বিয়ে দেবে।

আমি এসব ভেবেছিলাম কিন্তু এখন বুঝতে পারছি আমি ভুল করেছি।
মানে।
তুমি বুঝবে না।
বুঝিয়ে বললেই বুঝবো।
আমি বিবাহিত। একটা মেয়ের স্বামী। তো আমার মনে হয় তুমি অন্য কাউকে খুঁজে নাও।
তোমার বউ তো পিচ্চি। ওর সাথে তোমার মেচিং হয় না। তাছাড়া তুলিও তোমাকে পছন্দ করে না।

ও আমাকে পছন্দ করলো কি করলো না এতে আমার একদমই মাথা ব্যাথা নেই।
সায়ান তুমি আমাকে কি করে রিজেক্ট করতে পারো।
তুমি আমায় রিজেক্ট করছে আমি না।
আমি তো সরি বলছি।
সরি দিয়ে তো সব ঠিক হবে না।
কি করবো আমি।
আমার থেকে দুরে থাকো। আসছি আমি।
সায়ান অফিস থেকে বেরিয়ে যায়।

বাসায় এসে নিজের প্রয়োজনীয় সব কিছু গুছিয়ে বেরিয়ে পরে।
তুলি ওর মায়ের সাথে মামা বাড়ি যাচ্ছে। কয়েকদিন থাকবে সেখানে। সায়ানের বাবা ওদের নিয়ে যাচ্ছে।
সায়ান বাড়ি এসে কলিং বেল বাজায়। কিছুখন পরে দাদু এসে দরজা খুলে দেয়।
তুমি এখন এখানে?

কেনো আমি কি আসতে পারি না।
কেনো পারবে না। এটা তোমার বাড়ি তুমি যখন খুশি তখন আসতে পারো৷ আমাদেরই তোমার পারমিশন নেওয়া উচিৎ।
দাদু এভাবে বলছো কেনো।
তো কিভাবে বলবো?
তুলি
একদম তুলির নামটা মুখে আনবে না। যাও তোমার প্রেমিকার কাছে।
দাদু ভুল বুঝবো।
কোনটা ভুল কোনটা ঠিক তুমি আমাকে শেখাতে এসো না।

দাদু চলে যায়। সায়ান তুলির রুমে যায় তুলি নেই। পুরো বাড়ি খোঁজে কোথাও তুলিকে না পেয়ে মায়ের রুমে যায়।
মা।
সায়ানের মা ঘর গোছাচ্ছে।
বল।
তুলি কোথায়?

কেনো?
না মানে তুলিকে দেখছি না
তুলিকে না দেখলেও হবে।
মা এভাবে বলছো কেনো?

আমি কাজ করছি
সায়ান জানে মাকে জোর করে লাভ হবে না। মা বলবে না। তাই রুহির রুমে চলে।
রুহি।
বল।
তুলি কোথায়?

রিকের সাথে চলে গেছে।
মজা করিস না বল প্লিজ।
তুলিকে মিছ করছিস।
বলবি কি না।
মামা বাড়ি গেছে।

সায়ান নিজের রুমে চলে আসে। খুব রাগ হচ্ছে সায়ানের। কার ওপর রাগ হচ্ছে সায়ান বুঝতে পারছে না তুলির ওপর না কি নিজের ওপর।

তুলির ফোনে ফোন দেয় সায়ান। ফোন বন্ধ
এই মেয়েটা এতো স্টুপিট কেনো? মন হচ্ছে চাপকে গাল লাল করে দেই।
তুলির নানুবাড়িতে নানা নানু মামা মামি আর মামাতো একটা ভাই এই কয়জন।

তুলি ওর মামির কাছ থেকে পিঠা নানানো শিখছে। তেলে ভাজা পিঠা। পিঠা তেলের মধ্যে দিতেই অনেক টা তেল তুলির হাতে ওপর পরে। তুলি তো চিৎকার করে কান্না করছে। সবাই ব্যস্ত হয়ে পরে তুলিকে নিয়ে। তুলি মামা আর নানার সাথে ডাক্তারের কাছে যায়। তুলি যাওয়ার পরেই সায়ান আসে।

তুলির মা মামি আর নানু বসে ছিলে তখন সায়ান ঢোকে।
কাকিমা তুলি কই।
সবাই সায়ানকে দেখে অবাক।
সায়ান তুই?
সায়ান মাাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। তুলির নানু সায়ানের কাছে এসে বসতে বলে। সায়ান নানুর পাশে বসে।

তুলি ডাক্তারের কাছে গেছে।
কেনো? কি হয়েছে ওর।
হাত পুরে গেছে।
কিহহ কতোটা পুরেছে? কিভাবে পুরলো? কখন আসবে।
সায়ানের এসব পাগলামি দেখে সবাই মিটিমিটি হাসছে।
কি হলো বলো।

তুই রুমে গিয়ে রেস্ট নে। তুলি আসলে জেনে নিস। (তুলির মা)
সায়ান রুমে চলে যায়।
ডাক্তার তুলির হাত ব্যান্ডেস করে দেয়। তুলি হাসপাতালের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। তুলির নানা গেছে ঔষুধ কিনতে আর মামা একজন পরিচিত মানুষের সাথে কথা বলছে। তুলি একা দাঁড়িয়ে আছে।
তুলি

তুলি পেছন ঘুরে দেখে মায়া।
আপু তুমি এখানে।
এসেছিলাম দরকারে। তোমার সাথে দেখা হয়ে ভালোই হলো। কিছু কথা বলতে চায়।
বলো।
তুলি তুমি অনেক ছোট।

দেখতে খুব মিষ্টি। তোমার লাইফে অনেক ভালো কেউ আসবে। তুমি প্লিজ সায়ানকে ছেড়ে দাও।
আপু তুমি হয়ত জানো না আমি অলরেডি চলে এসেছি। এবার তোমার সায়ানকো বইলো ডিভোর্স পেপারটা পাঠিয়ে দিতে আমি সাইন করে দেবো। আসি।
মায়া কিছু বলতে চায় তুলি না শুনেই চলে আসে।
বাড়ি ফিরে তুলি কারো সাথে কথা না বলে, রুমে চলে আসে। দরজা বন্ধ করে কেঁদে ফেলে।
তুই কাঁদছিস কেনো?

হঠাৎ সায়ানের গলা শুনে তুলি চারপাশে তাকায়। সায়ান খাটে শুয়ে ছিলো।
আপনি।
তো কি রিক ভেবেছিলি না কি।
কেনো এসেছেন এখানে।

এখুনি বেরিয়ে যান।
সায়ান তুলিকে ভালো করে দেখে বলে,
তুই আবার ওড়না ছাড়া ড্রেস পরেছিস।
তো। তো আপনার কি? একদম অধিকার দেখাতে আসবেন না। ভাই ভাইয়ের মতো থাকবেন। তাছাড়া আপনার মায়া তো হাটু পর্যন্ত ড্রেস পরে তাকে তো কখনো বলেন না। আমার বেলায় সব কিছু।

মায়াকে তো ওই রকম ড্রেসে দেখতে খুব ভালো লাগে।
তো দেখুন না না করছে কে।
কোথাও পোরা পোরা গন্ধ পাচ্ছি।
আপনার মাথা পুরছে তার গন্ধ পাচ্ছেন।
তুলি রাগলে তো তোকে পুরাই টমেটো টমেটো লাগে। ইচ্ছে করি খেয়ে ফেলি।
ধুর।

বের হন আমার রুম থেকে।
তুলি সায়ানের হাত ধরে টান দেয়। সায়ানকে এক চুলও নরাতে পারে না উল্টে সায়ানের ওপর তুলি পরে। সায়ান দু’হাতে তুলিকে জড়িয়ে নেয়
আমাকে না বলে, কেনো চলে এলি।
বেশ করেছি।

আপনাকে বলবো কেন? কে আপনি?
আমি কে বোঝাবো।
ছাড়ুর আমাকে।
ছাড়বো না।
হাতে ব্যাথা পাচ্ছি।
সায়ান ছেড়ে দেয়। তুলি উঠে দাঁড়ায়।

আমি ছোট কিছু বুঝি না তাই বড়দের মধ্যে থেকে চলে এসেছি।
এতো পাকনামি কেনো করিস তুই।
আসছেন কেনো? দেখুন আমি রিককে বিয়ে করবো না।

কেনো করবি না।
সেটা আপনাকে বলবো না।
তুলি সায়ানকে নিয়ে খেতে আয়।
তুলির মামি ডাক দেয়।
তুলি যেতে নেয়।
ভালো করে শুনিস নি কি বললো।

বলেছে আমাকে নিয়ে যেতে।
আমি কি আপনাকে কোলে করে নিয়ে যাবো না কি।
চাইলে নিতে পারিস।
হাতির মতো শরীর দেখছেন আপনার।
আমাকে হাতি বললি।
শুধু হাতি না গোমরা মুখো হাতি।
সায়ানকে ভেংচি কেটে চলে যায় তুলি। তুলিকে তুলির মা খাইয়ে দিচ্ছে। সায়ান তুলির পাশে বসে খাচ্ছে।


পর্ব ১১

রাতে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছে তুলি। রুমের ভেতরে ঢুকতে ইচ্ছে হচ্ছে না। একটু দাঁড়িয়ে থেকে মায়ের রুমে চলে যায় তুলি। তুলির মা ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলো।
মা।

কি রে তুই এখানে ঘুমাতে যাস নি।
তুলি বিছানায় শুয়ে বলে,

আমি তোমার কাছে ঘুমাবো।
কি বলছিস তুই।
তুই এখানে ঘুমাবি আর সায়ান ওখানে ঘুমাবে।
তুলির নানু বলে,
হুম।

একদম না। তুই এখুনি যাবি ওই রুমে।
আমি যাবো না।
তুলির মা আর নানু তুলিকে ঠেলেঠুলে সায়ানের রুমে পাঠায়। তুলি আবার দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছে।
দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?

পেছন থেকে সায়ান কথাটা বলে। তুলি চমকে পেছনে তাকায়।
আপনি এখানে।
তোকে খুঁজতে গেছিলাম।
কেনো?

খালি কেনো কেনো করিস কেন? রুমে চল।
সায়ান রুমে চলে যায়। তুলিও পেছন পেছন যায়। সায়ান খাটে বসে পারে। তুলি দাঁড়িয়ে আছে।
দাঁড়িয়ে আছিস কেনো?

না মানে আমি ঘুৃমাবো কোথায়?
এতো বড় খাট আর তুই ঘুমানো জায়গা পাচ্ছিস না।
খাটে তো আপনি ঘুমাবেন।
তো।
আমি আপনার সাথে এক বেডে।
কেনো আমি তোর ভাই হই। তো আমার সাথে ঘুমালে কি হবে? রুহিও তো মাঝে মাঝে আমার কাছে ঘুমায়।
রুহি আর আমি এক হলাম?
তুই ই তো বলতি তুই আর রুহি এক।

তাহলে এখন কথা পাল্টাছিস।
আপনার সাথে কথা বলার মুডটাই নষ্ট হয়ে গেছে।
তুই কি আমার সাথে কথা বলার জন্য মুড নিয়ে এসেছিলি।
আপনি অসয্যকর। আপনাকে আমার সয্য হয় না
কিচ্ছু করার নেই আমাকেই তোর সয্য করতে হবে।
তুলি সোফায় শুয়ে পরে।

তুই বেডে আয়।
লাগবে না।
কোলে করে আনতে পারবো না। তুই অনেক ভারি।
তুলি সোফার কুশন ছুড়ে মারে সায়ানকে। সায়ান ধরে ফেলে।

তুলি রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে খাটে শুয়ে পরে সায়ানকে পেছন ফিরে। সায়ান তুলির পাশে শুয়ে পরে।
তুলি।
তুলি কোনো কথা বলেনা।
আই এম সরি।
কিসের জন্য।
তোর সাথে অনেক বাজে বিহেব করেছি।

কিন্তু কি করবো বল আমি তো মায়াকে সত্যি খুব ভালোবাসতাম। মায়ার জায়গায় তোকে মানতে পারি নি।
তুলি সায়ানের দিকে ঘুরে বলে,
এখন মানতে পেরেছেন।
তুই খুব ছোট।

আমার সাথে তোকে কোনোভাবেই মানায় না। তোর এখন লেখাপড়া করার বয়স। এই বয়সে তোকে সংসার করতে হচ্ছে।
এতো ঘুরিয়ে পেছিয়ে বলার কি আছে সোজাসুজি তো বলতে পারেন আপনি আমাকে মানতে পারবেন না। আমিও আপনাকে মানতে পারবো না বা কখনো মানবোও না।
রিক কে মানলেই হবে।
রিক কে মানলে আপনি খুশি তো।
সায়ান চুপ হয়ে যায়।

তুলি একটু হেসে বলে,
আপনি চিন্তা করবেন না আমি দাদু বড়বাবা সবাইকে মেনেজ করে দেবো। আপনি ভাবছেন আমি থাকলে আপনার বিয়ে করতে পবলেম হবে তাই আমাকে রিকের গলায় ঝুলাতে চাইছেন। আমাকে নিয়ে আপনার কোনো পবলেম হবে না প্রমিজ।
এতো কথা কেনো বলিস তুই? তুই ই তো রিকের সাথে ঢলাঢলি করতি তাই তো।
মানে কি? ঢলাঢলি করার স্বভাবটা আপনার আমার না।
তাই তো দেখতাম।

কথায় বলবো না আপনার সাথে।
তুলি পেছন ফিরে শুয়ে পড়ে। সায়ানও আর কিছু বলেনা।
সকাল বেলা কারো ফোনের শব্দে ঘুম ভাঙে সায়ানের। অননং নাম্বার। সায়ান ফোন রিসিভ করে ঘুম ঘুম কন্ঠে বলে,
হেলো

ওপাশ থেকে শুভ বলে,
মায়া সুইসাইড করতে গেছিলো আমরা ওকে হসপিটালের নিয়ে এসেছি।
কি বলছিস তুই।
তুই তারাতাড়ি চলে আয়।
মায়ার বাবা মাকে জানিয়েছিস।
ওনাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
আমি আসছি।

সায়ান ফোন রেখে পাশে তাকিয়ে দেখে তুলি সায়ানের দিকে তাকিয়ে আছে।
তুলি আমি এখন ঢাকা যাবো।
মানা করছে কে।
সায়ান তুলির মাথাটা সায়ানের বুকের ওপর নিয়ে একহাত দিয়ে তুলিকপ জড়িয়ে ধরে।
তুই এভাবে কেনো কথা বলিস আমার সাথে।

আমি তোর বর রেসপেক্ট দিয়ে কথা বলবি।
বররা বুঝি এমন হয় সব সময় বউদের কষ্ট দেয়।
আমি তোকে কষ্ট দিয়েছি।
নাহহহ। আপনি কষ্ট দিলেই আমি কষ্ট পাবো না কি?
মায়া সুইসাইড করতে গেছিলো।

করে তো আর নাই।
এটা কেমন কথা তুলি। যদি কিছু হয়ে যেতো।
কষ্ট হচ্ছে।
আমি যাবো।
তুলি সরে যায়।

সায়ান উঠে ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নেয়। কিন্তু তুলি ওঠার নামই নেই।
তুলি আমি যাচ্ছি
তুলি একবার সায়ানের দিকে তাকায়। সায়ান তুলিকে বায় বলে, চলে যায়।
তুলি ফ্রেশ হয়ে খাবার টেবিলে যায়। ওখানে মামা নানা মা নানু মামি সবাই আছে।
কি রে সায়ান কোথায়? (নানু)
তুলি খাবার মুখে দিতে দিতে বলে,
চলে গেছে
চলে গেছে মানে কি (মা)
চলে গেছে মানে চলে গেছে। বাংলা বুঝো না তোমরা।
চিৎকার করে বলে, তুলি
এমন করে বলছিস কেনো? কি হয়েছে? (মামি)
কিচ্ছু হয় নি।

তুলি শান্ত হয়ে খেতে থাকে।
তুলি।
তুলির নানু কিছু বলতে যায়। তুলির নানা থামিয়ে বলে,
আহহ চুপ করো। আমার বুনুকে খেতে দাও।
কেউ আর কিছু বলেনা। তুলি খাওয়া শেষ করে রুমে চলে যায়। ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে সায়ান ফোন করেছে। তুলি সিমটা বন্ধ করে দেয়। নতুন সিম চালু করে। এই সিমটা রিক কিনে দিছিলো।

সিমটা চালু হতেই অনেক মেসেজ আসে। যা রিক দিয়েছে। ফোনটা বেজে ওঠে। ফোনের স্কিনে রিকের নাম্বার। তুলি ধরবে কি ধরবে না এসব ভাবতেই ফোনটা কেটে যায়। আবার বেজে ওঠে। ফোনটা রিসিভ করতেই রিক উত্তেজিত কন্ঠে বলে,
তুলি কোথায় তুমি? তোমার ফোন বন্ধ কেনো? তোমার বাড়িতেও গিয়েছিলাম বাড়িতে তালা ঝুলছে। সায়ান ভাইয়ার অফিসেও গিয়েছিলাম কিন্তু ওনাকে পায় নি।
স্যার আমি দেশের বাড়ি চলে এসেছি
কিন্তু কেনো?

এমনিতেই।
তোমার বাড়ি কোথায় এড্রেস দাও আমি এখুনি যাবো।
আমার কথা শুনুন।
তুমি জানো কতো মিছ করেছি তোমাকে।

কেনো চলে গেছো
আমি বিবাহিত স্যার। আমার স্বামী আছে। আর আমি আমার এই লাইফ টা নিয়ে অনেক হ্যাপি। আপনি আমাকে ভুলে যান।
তুলি ফোনটা কেটে দেয়।


পর্ব ১২

মায়ার পাশে মুরা টেনে বসে আছে সায়ান। মায়া অন্য দিকে মুখ করে তাকিয়ে আছে।
মায়া কি হয়েছে? কেনো এমন করেছো?
আমি বাঁচতে চায় না সায়ান। আমার আর কেউ রইলো।
মায়া কেঁদে ওঠে।

মায়া কান্না করো না প্লিজ। তোমার বাবা মা কোথায়?
ওরা হারিয়ে গেছে।
আমাকে বলো আমি খুঁজে এনে দেবো।
ওরা আর ফিরবে না।
মায়া জোরে কান্না শুধু করে। সায়ান মায়ার মাথায় হাত বুলায়।

সায়ান চলে যাওয়ার দুইদিন কেটে গেছে। এই দুইদিনে সায়ান অনেক বার তুলির সাথে কথা বলার চেষ্টা করেছে কিন্তু পারে নি। আজ তুলি আর তুলির মা নানুবাড়ি থেকে নিজেদের বাড়িতে চলে আসছে। তুলির হাতে ব্যান্ডেস দেখে তুলির কাকিমা দাদু কাকায় সবাই তুলির মাকে অনেক বকা দিয়েছে। অন্য সময় হলে তুলি কিছু বলতো। কিন্তু আজ কিছু না বলে, রুমে চলে যায়।

জানালার কাছে বসে আছে তুলি হঠাৎ করে বাইরে নজর যায়। কয়েকজন ছেলেরা ফুটবল খেলছে। তুলি রুমে এসে থ্রিকোয়াটার আর টির্শাট আর পরে বাইরে চলে যায়।
পোলাপানের সাথে ফুটবল খেলছে।
খেলতে খেলতে সন্ধা হয়ে আসে। ঘেমে নেয়ে তুলি বাসার দিকে পা বাড়ায়। দরজার কাছে আসতেই সায়ানের গাড়ি আসে।

সায়ান আর মায়াকে দেখে তুলি তাকিয়ে থাকে। দরজায় কলিং বেল বাজায় তুলির মা দরজা খুলে দেয়। তুলি বাসায় পা দিতেই সায়ান ডাকে। তুলি কথা না বলে, ভেতরে ঢুকে। সায়ান আর মায়াও ঢোকে।
দাদু সায়ানের মা বাবা সবাই চলে আসে।
সায়ান তুমি একে নিয়ে এসেছো কেনো?

দাদু রেগে বলে,
সায়ান জবাব না দিয়ে তুলির কাছে এগিয়ে যায়। একবার পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে নেয়। তারপর দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
ফোন বন্ধ কেনো তোর? পবলেম কি
তুলি কিছু বলেনা
কি হলো চুপ করে আছিস কেনো?
ধমক দিয়ে বলে, সায়ান।

তুলি কেঁপে ওঠে
থামো তুমি। তোমার সাহস হয় কি করে তুলিকে ধমক দেওয়ার।
বাবা তুমি এভাবে বলছো
তুমি এই মেয়েকে নিয়ে এখুনি চলে যাও (দাদু)
দাদু আমার কথাটা শুনো
কিচ্ছু শুনতে চায় না।

আমি আমার নিজের ছেলেকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছি। আর তুমি কোন ছাড়।। তুমি চলে যাও। আমি আমার তুলিকে অনেক ভালো ছেলের সাথে বিয়ে দেবো। যো তোমার মতো চরিত্রহীন হবে না
দাদু।

চুপ করো।
দাদু ওনারা এখানেই থাকবে।
তুলি মাথা নিচু করে বলে,
কি বলছো তুমি তুলি?

এই প্রথম তোমার কাছে কিছু চাইলাম আশা করি তুমি আমাকে ফেরাবে না।
তুলি রুমে চলে আসে। তুলির পেছনে সায়ানের মা আসে।
তুলি।
হিম বলো।
তুই এভাবে জিনের অধিকার ছাড়বি না। সায়ান তোর স্বামী ওকে নিজের করে রাখা তোর কর্তব্য। ওই মায়াকে তাড়ানোর দায়িত্ব তোর। বুঝলি।
কথা গুলো বলে, চলে যায় সায়ানের মা। তুলি বিছানায় বসে পরে।

কি করবো আমি? লড়াই করবো নাকি অধিকার ছেড়ে দেবো। নাহহ আমি অধিকার ছাড়বো না। সায়ান আমার ও আমার স্বামী।
হঠাৎ সায়ান তুলির রুমে এসে দরজা বন্ধ করে দেয়। তুলি দাঁড়িয়ে পরে। সায়ান তুলির গলা চেপে ধরে।
খুব সাহস তোর তাই না। আমাকে ইগনোর করোস। ফোন বন্ধ করে রাখোস।

তুলির চোখ লাল হয়ে যায়। সায়ান ছেড়ে দেয়। তুলি গলা ধরে কাশত থাকে। তুলি ফ্লোরে বসে পরে। সায়ানও বসে পরে। চোখ বন্ধ করে রাগ কমানোর চেষ্টা করে সায়ান। তুলির কাশি থেমে যায়।

তুলি বিছানায় বসে। সায়ানও তুলির পাশে বসে।
সায়ান তুলিকে জড়িয়ে ধরে।
তুই জানিস কতোটা কষ্ট হয়েছে। কেনো ফোন বন্ধ রেখেছিলি। কেনো বল?
আপনি আমাকে ভালোবাসেন?
সায়ান তুলিকে ছেড়ে দেয়।

কি হলো ভালোবাসেন না তাইতো।
সায়ান কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না৷ তুলি আর কোলে বসে পরে। সায়ানের মুখটা ধরে বলে,
ভালোবাসো আর নাইবা বাসো শুধু আমায় ভালো বাসতে দিও।
তুলির গান শুনে সায়ানের কাশি উঠে যায়।
আমার গানটা আপনার গলায় আটকে গেলো না কি?
না মানে,
কোনো মানে টানে নাই। আমি আপনার কে হই?

তুলির প্রশ্নে সায়ান ভেবাচেকা খেয়ে যায়।
তুই আমার কে?
হুম কে আমি।
তুই আমার বো।
তুলি সায়ানের চুল টেনে বলে,

কি?
বউ।
তুলি সায়ানকে জড়িয়ে ধরে বলে,
আমার সোনা বরটা।
সায়ান তো তুলির বেবহারে অবাক।
তুলি তুই ঠিক আছিস।

হুম আমি তো একদম ফিট আছি।
মায়া তুলির রুমে নক করে।
কে?
তুলি বলে,
আমি মায়া সায়ান এসেছে এখানে।
হুম কেনো?
ও কে একটু আসতে বলো।
ও এখন রোমান্স করছে। যেতে পারবে না।

সায়ান তো অবাক।
আমি তো।
তুলি সায়ানের মুখ টিপে ধরে। মায়া রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে চলে যায়।
তুই মিথ্যা কেনো বললি?
তো কি আপনাকে ওই অশান্তির কাছে যাইতে দিমু।
ওর মেবি কোনো দরকার ছিলো।
তুলি সায়ানের কোল থেকে নামে।
যান।

তুলি মুখ গোমড়া করে বলে। উঠে চলে যায়।
মায়া মায়াকে যে রুমে থাকতে দেওয়া হয়েছে সেই রুমে পায়চারি করছে। তখন সায়ান নক করে। মায়া দরজা খুলে সায়ানকে জড়িয়ে ধরে
মায়া এসব কি হচ্ছে
মায়া সায়ানকে ছেড়ে দেয়
সরি
কেনো ডেকেছিলে
ডিস্টার্ব করলাম না কি

তেমন কিছু না
আমার ঔষুধ গুলো খুঁজে পাচ্ছি না
সায়ান মায়ার ঔষুধ গুলো দেয়।
এবার খেয়ে ঘুমিয়ে পরো
সায়ান তুমি আমার সাথে থাকো না
হোয়াট
না মানে আমার একা ভয় করছে

ঠিক আছে তুমি শুয়ে পড়ো। আমি এসে তোমায় দেখে যাবো।
সায়ান চলে যায়। তুলি ড্রেস চেঞ্জ না করেই ঘুমিয়ে পরে।
এই মেয়েটাও না এভাবেই ঘুমিয়ে পড়েছে।
সায়ানও তুলির পাশে শুয়ে পরে।

সকাল বেলা মায়ার চেচামেচিতে তুলি সায়ানসহ বাড়ির সবার ঘুম ভেঙে যায়। সবাই মায়ার রুমে যায়। মায়া না কি কিছু একটা দেখে ভয় পেয়েছে। মায়া কাচুমাচু হয়ে বসে আছে। সায়ান মায়াকে বোঝাচ্ছে
আচ্ছা মায়া আপু তুমি তো তোমার বাড়িতে একাই থাকতে তাই না
হুম

তখন ভয় পেতে না
তখন তো বাড়িটা চেনা ছিলো।
ওহহ। আচ্ছা কাল থেকে তোমার সাথে রুহি থাকবে

না মানে রুহিও তো ছোট
তো তুমি কি সায়ানের সাথে থাকতে চাও না কি
তুলি কি সব বলছিস (সায়ান)
নাটক বন্ধ হলে আমরা যেতে পারি (দাদু)
হুম দাদু চলো। মায়া আপুর সায়ান হলেই চলবে
সবাই চলে যায়। সায়ান আর মায়া বসে আছে
মায়া এসব কি

সত্যি ভয় পেয়ে গেছিলাম
এরকম করলে তোমাকে আমি এই বাড়িতে রাখতে পারবো না
মায়া সায়ানের হাত ধরে বলে,
আমি আর এমন করবো না। প্লিজ আমাকে থাকতে দাও
সায়ান কিছু না বলে, চলে যায়। তুলি আজ ফ্রেশ হয়ে লাল থ্রিপিস পরে। সায়ান দরজার সামনে দাঁড়িয়ে তুলিকে দেখে


পর্ব ১৩

তুলি নিজের রুমে বসে আছে। মায়ার প্লান সম্পর্কে বুঝার চেষ্টা করছে। গভীর মনোযোগ দিয়ে ভাবছে। সায়ান রুমে আসে
কিরে ওখানে বসে আছিস কেনো?

সায়ানের ডাকে তুলি ভাবনার জগৎ থেকে বের হয়। উঠে সায়ানের পাশে দাঁড়ায়
আপনি চলে এলেন যে আপনার মায়া বেবি তো আবার ভয় পাবে
সায়ান হাতের ঘড়ি খুলতে খুলতে বলে,
মায়া আবার আমার বেবি হলো কবে
ও মা আপনি জানেন না

না তো
ড্রামাকিং
ড্রামা কুইন শুনেছি কিং তো শুনি নি
কিংটা আজকেই আবিষ্কার হলো
তুই করলি
ইয়াহ। শুনুন না
বল

আমার দিকে তাকান
সায়ান ঘড়ি রেখে কোমরে হাত রেখে তুলির দিকে ঘুরে তাকায়
বল
এভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো
কিভাবে
মনে হচ্ছে চোখ দিয়ে গিলে খাবেন আমায়
সায়ান মাথায় হাত দিয়ে বলে,
ওহহ আল্লাহ
তুই ই তো আমাকে তোর দিকে তাকাতে বললি
বলে, ছি বলে, এভাবে তাকাবেন

সায়ান এবার তুলির কোমর জড়িয়ে কানের কাছে ফিসফিস করে বলে,
কি চাস তুই বল তো
মায়ার থেকে আপনাকে আলাদা করতে চায়
কেনো? এই এক মিনিট তুই তো আমাকে আবার ভালো টালো বেসে ফেলিস নি
তুলি নিজেকে ছাড়িয়ে একটু দুরে গিয়ে বলে,
ভালোবাসি না।

তবে কিচ্ছু করার নাই বিয়ে হয়ে গেছে তাই জাস্ট লাইক করি
তাই না কি। যাক গে বাদ দে এবার বল কি বলতে চাইছিলি
আমি ঢাকা ফিরে যেতে চায়

রিককে না দেখে থাকতে পারছিস না বুঝি
হুম তবে আরও একটা কারণ আছে
কি
মায়া এই বাদরামী বের করার জন্য

বুঝলাম না
বুঝিয়ে বলি নি তো। কাল কেই ঢাকা যাবো
তুলি চলে যায় সবাইকে বলতে। মায়া মনে মনে খুব খুশি হয়।

আজ তুলি নিজের হাতে রান্না করবে। একা একা। রান্না ঘরে কাউকে এলাও করছে না।
সায়ান দুপুর থেকে তুলিকে দেখছে না। তাই তুলির মায়ের কাছে শুনতে যেতে নেয়
কোথায় যাচ্ছো?
মায়ার ডাকে সায়ান থামে
তুলিকে খুঁজতে

বউকে ছাড়া একটুও থাকতে পারো না। এতো ভালোবেসে ফেলেছো বউকে
মায়া সেরকম কিছু না। জাস্ট ওকে দুপুর থেকে দেখছি না তাই
কই আমাকে না দেখতে পেলে তো খুঁজো না

তোমাকে কেনো খুঁজবে? তুমি তো জাস্ট আশ্রিতা
সায়ান মায়া তাকিয়ে দেখে তুলি দাঁড়িয়ে আছে
দেখলে সায়ান আমায় ইনসাল্ট করলো

হুম করলাম তা তো সায়ান শুনলো
তুমি কিছু বলবে না সায়ান
তুলি চুপ করো
আমার বাড়ি আমার ঘড় আর আমি চুপ করবো
হুম করবে

প্রশ্নটা আমার স্বামীকে করেছি তোমাকে না
এই মেয়ে একদম স্বামী স্বামী করবে না। কিসের স্বামী হ্যাঁ
বিয়ে করা স্বামী

আহহহ তোমার চুপ করো। তুলি যাও নিজের কাজে যাও।
তুলির চোখ ছলছল করে। চলে যায় তুলি। মায়া সায়ানের হাত ধরে বলে,
তুলি আমাকে দেখতেই পারে না
সায়ান কিছু না বলে, চলে যায়।

তুলি ডাল মাংস আর ভাজি রান্না করছে। মনটা ভীষণ খারাপ। একমনে ইউটিউব দেখে রান্না করে যাচ্ছে। রাতে সবাই তুলির করা রান্না খাবে।
রাত নয়টায় তুলির রান্না শেষ হয়। কোনোরকম ফ্রেশ হয়ে সবাইকে খেতে ডাকে।
সায়ানের বাবা দাদা মা রুহি সায়ান মায়া খাবার টেবিলে বসে আছে। তুলি আর তুলির মা খাবার সার্ভ করবে।

না খেলে হয় না। আমার না খিদে নেই
ভয়ের শুরে বলে, সায়ানের বাবা। তুলি চোখ রাঙিয়ে বলে,
তোমরা ভাবছো আমার রান্না খারাপ হয়েছে তাই তো
না না আমার দিদিভাই কখোনো খারাে রান্না করতেই পারে না। আমাকে দাও তো
তুলি প্রথমে দাদুকে দেয়। তারপর একে একে সবাইকে দেয়। তুলি অধিক আগ্রহে সবার দিকে তাকিয়ে আছে।

সবাই খুব প্রশংসা করে তুলির রান্নার। তুলির খুশি আর দেখে কে?
সবার খাওয়া শেষে তুলি আর তুলির মা খায়। খাওয়া দাওয়া শেষে তুলি নিজের রুমে চলে যায়।
বেলকনিতে বসে চাঁদ দেখছে তুলি। কোনো কিছুই ভালো লাগছে না। বারবার সায়ান বাজে বিহেব গুলো চোখের সামনে ভাসছে। কেউ একজন তুলির কাঁধে হাত রাখে
সরি তুলি

তুলি কিছু বলেনা। সায়ান তুলির পাশে বসে বলে,
সরি বললাম তো

আমি তো সরি বলতে বলি নি
আমি ভুল করছি তাই সরি বললাম
তুলি একটু তাচ্ছিল্য হাসে
আপনার কোনো দোষ নেই দোষ আমার কপালের।
এভাবে বলছিস কেনো

তাহলে কিভাবে বলবো বলতে পারেন?
আমার বাবা আমার মাকে ছেড়ে চলে গেছে। অন্য কাউকে বিয়ে করেছে। আমার সাথেও সেম জিনিস হচ্ছে। কিন্তু আমি আমার অধিকার ছাড়বো না। মায়ের মতো এতো ভালো আমি না।

একদমে কথাগুলো বলে, তুলি থামে। একটু দম নিয়ে আবার বলে,
আমাদের যারা অবহেলা করে আমরা তার কাছেই বারবার ছুটে যায়। আর যারা আমাদের ভালোবাসে আমরা তাদের অবহেলা করি।

রিক ভালো ছেলে। আমার ও কে খুব ভালো লাগে। ও আমাকে খুব ভালোবাসে কিন্তু আমার ও কে অবহেলা করতে হচ্ছে কারণ বাবার মতো সেম কাজ আমি করবো না।
মায়াকে ভুলে যান। কারণ আমি বেঁচে থাকতে আপনাকে মায়ার কাছে যেতে দেবো না
তুলি রুমে চলে যায়। সায়ান তুলির বলা কথা গুলো ভাবছে।

সায়ান রুমে এসে দেখে তুলি রুমে নেয়। ওয়াশরুম চেক করে দেখে ওখানেও নেই। গেলো কোথায় মেয়েটা। সায়ান রুম থেকে বের হয়ে তুলিকে খুঁজছে। অবশেষে রান্না ঘরে পায়। ফ্রিজ থেকে বরফ বের করে হাতে দিচ্ছে। সায়ান তুলির পেছনে দাঁড়িয়ে বলে,
হাতে কি হয়েছে

সরি আমি মায়া না তুলি
আমি জানি তুই তুলি

ওহহহ আমি ভাবলাম মায়া ভেবে বলেছেন
একটু বেশিই ভাবছিস তুই
আমার মনে হয় না
তুলি বরফটা রেখে চলে যেতে নেয়
তুলি
বলুন

মায়াকে বিপদে পরে নিয়ে এসেছি
শুনতে চায় নি
শোনার অধিকার আছে তোর
ভালোবাসা পাওয়ারও অধিকার আছে
একটা থাপ্পড় খাবি।

বয়স কতো তোর? ভালোবাসা পাওয়ারও একটা বয়স লাগে। সেই বয়সটা তোর হয় নায়
আমার তো বিয়ের বয়সও তো হয় নাই তাও তো বিয়ে হয়েছিলো
উফ তোকে বোঝানো আমার পহ্মে সম্ভব না
বোঝাতে তো বলি নি।

ভালোবাসতে বলে, ছি
চল আজ তোকে ভালোবাসা কি বোঝাবো। চল আমার সাথে
সায়ান তুলির হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে যায়। রুমে এসে দরজা বন্ধ করে দেয়। তুলি আরামসে সোফায় বসে পরে

ওই তোর ভয় করছে না
কেনো ভয় করবে
আমাকে দেখে

না তো। আপনি আমাকে ভালোবাসবেন তার প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমি তো ভেবে রেখেছি
কি
সামনে বছর আমার গোলুমলু একটা কিউট বেবি হবে
কিহহহহ

হুম
ঘুমিয়ে পর
ভালোবাসবেন না
নাহহহ

তুলি মুখ গোমড়া করে শুয়ে পরে। তখন ফোন বেজে ওঠে তুলির
হেলো স্যার
কেমন আছো?
ভালো। আপনি
ভালো।

সায়ান আগুন চোখে তাকিয়ে আছে
মিছ ইউ তুলি
মিছ ইউ টু
ঢাকা আসবে কবে
কাল

রিয়েলি
হুমমম
কতোদিন পরে তোমার দেখবো। ভাবতেই ভালো লাগছে
তাই
হুম

এখন রাখি কাল দেখা হবে
ফোন রেখে তুলি শুতে যায়। সায়ান দুই বাহু চেপে ধরে
খুব পীরিত হচ্ছে তাই না
ছি কি ভাষা।

পীরিত না প্রেম
খুব বার বেরেছিস তুই
আই নো। তুমি যদি পারো আমি পারবো না কেন? আমি কি কম সুন্দর না কি
তুলির কথা শেষ হতেই সায়ান তুলির ঠোঁট দখল করে নেয়।


পর্ব ১৪

লুচ্চা
হুম আর
সরেন
তুলি সায়ানকে ধাক্কা দিয়ে সরে যায়
এইতো ভালোবাসতে বলছিলি
এভাবে কেউ ভালোবাসে

তো কিভাবে বাসে
আপনি কিচ্ছু জানেন
জানি না বলে, ই তো জানতে চাইছি
ঘুমাবো আমি
বললি না

তুলি সায়ানের চুল টেনে শুয়ে পরে। সায়ান একটু মুচকি হেসে তুলির পাশে শুয়ে পরে।
তুলি
কান খোলা আছে
আমি তোকে ভালোবাসি কি না জানি না তবে এটুলু বলতে পারি কাকায়ের মতো কিছু আমি করবো না

অলরেডি করছে। আমার তো পাশে দাঁড়ানোর মতো কেউ নেই দাদু আপনার বাবা হয়ত প্রটেক্ট করছে তবে আপনি যদি মায়াকে বিয়ে করেন ওনারাও আস্তে আস্তে রাজি হয়ে যাবে
কিসের মধ্যে কি। আমি একটা সিরিয়াস বিষয়ে কথা বলছি তার মধ্যে তুই তোর মন্তব্য এনে মুড টাই নষ্ট করে দিলি
সত্যি কথা বললাম

সত্যি বলিস নি তুই। আমি তোকে বিয়ে করেছি। তুই ছাড়া অন্য কেউ আমার জীবনে আসবে না। আমি তোকে ভালোবাসি
তুলি এবার ফট করে উঠে বসে সায়ানের মুখের দিকে তাকায়। তারপর জোরে জোরে হাসতে থাকে। সায়ানও বসে
হাসছিস কেনো?

জোকস টা দারুণ ছিলো
তুলি আমি সিরিয়াসলি বলছি
হাসতে হাসতে পেট ব্যাথা হয়ে গেলো।
সায়ান মুখ ঘুরিয়ে শুয়ে পরে। তুলিও শুয়ে পরে

আমাকে আপনি ভালোবাসেন না। ভালোবাসলে আপনি কখনো মায়াকে আনতেন না। আর আমি আপনার ভালোবাসা চায়ও না। যারা ভালোবাসে কেয়ার করে তারাই ছেড়ে চলে যায়। আমার বাবাকেই দেখুন না কতো ভালোবাসতো আমাকে আর এখন
তুলি আর কিছু বলেনা। চোখ বন্ধ করে ফেলে। সায়ানও কিছু বলেনা।
সকালে

আজ তুলি সায়ান আর মায়া ঢাকা চলে যাবার কথা কিন্তু আজ রুহির বিয়ের পাকা কথা বলতে আসবে তাই ওরা আর যেতে পারে না। সবাই মিলে ড্রয়িং রুমে গল্প করছে তখন কলিং বেল বাজে

এই সময় আবার কে এলো ( সায়ানের বাবা)

আমি দেখছি
তুলি দরজা খুলতে যায়। দরজা খুলে দেখে তুলির বাবা সাথে সেই মহিলা আর ছেলেটা। তুলিতো ওদের দেখে ভীষণ রেগে যায়
এ বাড়িতে কি চায়

মামনি আমাদের ভেতরে যেতে দাও
ওরা তুলিকে ঠেলে ভেতরে ঢোকে। তুলির দাদু সায়ানের বাবা মা তুলির মা সবাই ওদের দেখে অবাক। দাদু চিৎকার করে বলে,

তোর সাহস কি করে হলো এবাড়ি ঢোকার
বাবা তোমার নাতি দোয়া করবে না
ছেলেটাকে দেখিয়ে বলে,
আমার ছেলেই তো মারা গেছে নাতি আসবে কোথা থেকে। বেরিয়ে যাও
বাবা প্লিজ এমন করো না

কেমন করবো বলো? তুমি মানুষ? কি করে পারলে এরকম একটা ফুটফুটে মেয়েকে ছেড়ে অন্য কাউকে বিয়ে করতে। বউমার কথা বাদ দিলাম। তুলি রোজ কাঁদতো তোমার জন্য রাসেল (সায়ানের বাবা) তোমার অভাবটা পুরণ করার চেষ্টা করেছে
দাদুর চোখ ভিজে যায়। তুলি আর তুলির মায়ের চোখেও পানি। তুলি তুলির বাবার সামনে গিয়ে বলে,

আমি ভেবেছিলাম আমার বাবা খারাপ। কিন্তু আপনি যে জঘন্য খারাপ আজ বুঝতে পারলাম। এখানে নিশ্চয় প্রপার্টির ভাগ নিতে এসেছেন। কিন্তু আপনি প্রপার্টির ভাগ পাবেন না। কারণ আপনার নামের সব প্রপার্টি আমার দাদু আমার মায়ের নামে করে দিয়েছে
কিহহহ বলছে এই মেয়েটা তুহিন
ওই মহিলাটা বলে,
ও ঠিকি বলেছে। এবার তোমরা আসতে পারো আর কখনো যেনো এই বাড়ির আশেপাশে তোমাকে না দেখি (দাদু)

ওই মহিলাটি তুহিনের কলার ধরে বলে,
সামান্য প্রপার্টি টুকু তোমার নামে নেই। কি আছে তোমার হ্যাঁ। এতোদিন তো খুব বলতে তোমার অনেক টাকা পয়সা, আছে আর এখন
আপনি কি টাকা পয়সার জন্য ওনাকে বিয়ে করেছিলেন (তুলি)
তুমি চুপ করো

দুই মিনিটের মধ্যে বেরিয়ে যাবে তোমরা
তুলির বাবা ছলছল চোখে বেরিয়ে যায়।

তুলিও রুমে চলে যায়।
রুহিকে দেখতে লোকজন এসে গেছে। তুলি রুহিকে সাজিয়ে দেয়। তুলিও একটা শারি পরে। সাজানো শেষে রুহিকে নিয়ে যায়। বড়রা কথা বলছে। তুলি এক পাশে দাঁড়িয়ে আছে।
সায়ান তুলির কাছে এসে
বাহহহ তোকে তো দারুণ লাগছে
ধন্যবাদ

সায়ান আমাকে কেমন লাগছে
পেছন থেকে মায়া বলে। সায়ান আর তুলি মায়ার দিকে তাকায়। মায়া হাটু পর্যন্ত ড্রেস পরেছে। সায়ান চোখ ফিরিয়ে নেয়
মায়া আপু তোমার হাটুটা না খুব সুন্দর
হাটু সুন্দর (মায়া)

আমার মনে হলো। সায়ান বেবি আপনি একটু দেখে বলেন তো
সায়ান তুলির দিকে তাকায়
‘আমার দিকে না মায়ার দিকে তাকান
ভালো (সায়ান)

কি ভালো হাটু না কি
সায়ান রাগী লুকে তুলির দিকে তাকায়।
সায়ান এই মেয়েটা এতো স্টুপিট কেনো?
ওই হেলো স্টুপিট তুই আমি না। আর হ্যাঁ এরকম দুই হাত ড্রেস পরে আমার স্বামীকে তুই ইমপ্রেস করতে পারবি না

সায়ান এমনিতেই ইমপ্রেস। ওকে আবার নতুন করে ইমপ্রেস করার কিছু নেই
তুলি রাগী দৃষ্টিতে সায়ানের দিকে তাকায়। সায়ান কিচ্ছু বলছে না
দশ দিনের মধ্যে যদি মায়া এবাড়ি থেকে না যায়। তাহলে আমি চলে যাবো
আমি কোথাও যাবো না
তুলি চলে যায়।

মায়া একটু বেশি বারাবাড়ি করছো তুমি
তোমার বউ বাড়াবাড়ি করছে না। ও আমাকে বাড়ি থেকে চলে যেতে বললো সাহস কতো ওর
তুমি চলে যাবে মায়া

আমি যাবো না। যদি যায় তবে আমার লাশ যাবে
মায়াও চলে যায়। সায়ান এবার ভাবি বিপদে পরেছে। কি করবে? মায়ার এরকম থ্রেট দেওয়া ভালো লাগছে না।

তুলি আর রুহি আজ শপিং করতে গেছে। সারা শপিংমল ঘুরে ঘুরে শপিং করছে।
হঠাৎ রিককে দেখে তুলি থেমে যায়।

এ এখানে এলো কি করে? এখন যদি দেখে ফেলে? কি করবো এবার আমি
তুলি উল্টো দিকে দৌড় দিতে যায়। তার আগেই রিক ডাক দেয়
তুলি

তুলি থেমে যায়
আপনি এখানে?
হুম তোমাকে খুঁজতে খুঁজতে চলে এসেছি


পর্ব ১৫

আপনি জানলেন কি করে আমি এখানে থাকি?
মন থেকে কাউকে খুঁজলে ঠিক পাওয়া যায়।
বাসায় যাবো
তুলি আর রুহি হাঁটা শুরু করে

আমি এতো কষ্ট করে এতো দুরে আসলাম আর তুমি আমাকে দেখে পালিয়ে যাচ্ছ
আসলে এটা আমার শশুর বাড়ির এলাকা। আমি বিবাহিত। এবাবে আপনার সাথে কথা বললে আমার বদনাম হবে। আশা করি বুঝতে পারছেন
তুলি আর রিককে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে চলে যায়। গাড়িতে উঠে জোরে জোরে শ্বাস নেয়

তুলি তোমার স্যার
হুম। খুব সাংঘাতিক
তুলি বাড়ি ফিরে ফ্রেশ হয়। সায়ানকে রুমে না দেখে ভাবে হয়ত মায়ার রুমে আছে। তাই মায়ার রুমে যায়। দরজায় টোকা দেওয়ার আগেই কিছু কথা তুলির কানে আসে মায়ার রুম থেকে

মা আমি ঠিক আছি। আর সেভ আছি। তুমি চিন্তা করো না আমার জন্য। আমি আমার কাজ শেষ করেই শান্ত হবো। তার আগে না
তুলি চিন্তা করতে থাকে।

মায়ার বাবা মা হারায় নি। ওনারা আছে। আর মায়া আপু কোনো একটা প্লান করেছে। হয়ত আমাকে আর সায়ানকে আলাদা করে চায়। আমাকে মায়ার প্লান জানতেই হবে। কিন্তু এখানে থেকে সম্ভব নয়। খুব তারাতাড়ি ঢাকা ফিরে যেতে হবে আমাদের।
তুলি রুমে এসে গভীর মনোযোগ দিয়ে ভাবছে। তখন সায়ান আছে
কি রে কি ভাবছিস
কিছু না

আমি তোর মুখ দেখেই বুঝতে পারছি
বুঝতেই যখন পারছেন তখন জিজ্ঞেস করছেন কেন? শুনুন কাল সকালেই আমরা ঢাকা ফিরে যাবো
কিন্তু কেনো?

গেমস খেলতে
বুঝলাম না
এতো বুঝতে হবে না।
তুলি জামাকাপড় গোছাতে থাকে।

সকালে ওরা ঢাকার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পরে। মায়া ঢাকা যাওয়ার কথা শুনে ঘাবড়ে গেছিলো।
তুন ঘন্টা জার্নি করার পরে ওরা বাড়ি চলে আসে। মায়াকে সায়ান একটা রুম দেখিয়ে দেয়। মায়া রুমে চলে যায়। অনেক দিন অফিসে যাওয়া হয় না তাই সায়ান অফিসে চলে যায়। তুলি রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পরে।

সন্ধায় তুলির ঘুম ভাঙে। চোখ খুলে দেখে সায়ান কারো সাথে ফোনে কথা বলছে। তুলি একটু ভালো করে তাকিয়ে দেখে ফোনটা তুলির। তুলি এক লাফে উঠে সায়ানের কান থেকে ফোনটা নিয়ে আসে।
ফোনটা নিলি কেনো?

রাগী গলায় বলে, সায়ান। তুলি ঢোক গিলে বলে,
কার সাথে কথা বলছিলেন
তোর নাগরের সাথে
নাগর আবার কার নাম
আজ থেকে তোর ফোনে কোনো ছিম থাকবে না
আপনার কথায়

হুম আমার কথায়। আমি তোর হাজবেন
আই নো। এই কথা বারবার বলার কি আছে
তুই তো ভুলে যাস তাই মনে করিয়ে দিলাম
তখন দরজায় মায়া নক করে
আসো

মায়া ভেতরে এসে বলে,
আমি আজ খাবার বানিয়েছি। চলো খাবে তোমরা
তুমি বানিয়েছো
তুলি শুরু কি তুমিই রান্না করতে পারো আর কেউ পারে না
সেটা কখন বললাম।

তুমি খেলে খাবে না খেলে নেই। সায়ান তুমি চলো তো
মায়া সায়ানের হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে থাকে। তুলি থামিয়ে বলে,
আমি হাজবেন কানা না। চোখে দেখতে পায় তো টানাটানি করে নেওয়ার কিছু নেই।
মায়া চলে যায়। সায়ান আর তুলিও যায়। তুলি খাবার টেবিলে বসে বলে,
কোন রেস্টুরেন্টে থেকে এনেছো

মানে? কি বলতে চাইছো তুমি?
রেগে বলে, মায়া
এতো রান্না তুমি করো নি
আমি করেছি

ওহহ গুড তাহলে বলো মাংস রান্নায় কি কি লাগে
মায়া আমতাআমতা করে। তুলি শব্দ করে হেসে ওঠে। সায়ান বলে,
আমার খিদে পেয়েছে

মায়া সায়ানকে খাবার বেরে দেয়। তুলিও খায়।
খাওয়াদাওয়া শেষে মায়া সায়ান কিছু একটা নিয়ে আলোচনা করছে। আর ওদের থেকে একটু দুরে তুলি টিভি দেখছে।

টিভিতে বারবার একটা নিউস দেখাচ্ছে। সেটা হলো কিছুদিন আগে প্রায় তিন কোটি টাকা অত্তসাদ করে বিদেশে পালিয়েছে এক দম্পতি। মহিলা আর লোকটার ছবিও দেওয়া আছে। মহিলাটার চেহারার সাথে মায়ার চেহারার কিছুটা মিল আছে।
তুলি নিউস দেখে জোরে জোরে হাসা শুরু করে। সায়ান আর মায়া তুলির দিকে তাকায়
এভাবে হাসসিস কেনো

তুলি হাসি কিছুটা থামিয়ে বলে,
এই নিউজ টা দেখে হাসি পেলো
এতে হাসির কি আছে

দেখেন এই মহিলাটার একটা মেয়ে আছে। তাহলে সেই মেয়েটার নাম হলো চোরের মেয়ে চোর। আর ওই মেয়েটা বফ হলো চোরের বফ। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সবাই চোর
স্টুপিট থামো
মায়া ধমক দিয়ে বলে,
আরে আপু তোমার গায়ে লাগলো কেনো বুঝলাম না
আমার গায়ে লাগবে কেনো?
সেটাই তো

সায়ান তোমার বউকে বলো তো চুপ থাকতে
আমি ততক্ষণ চুপ থাকবো না যতখন না ওই লোক দুটো ধরা না পরবে
বিরবির করে বলে, তুলি। তুলি নিজের রুমে চলে যায়।
মায়া আমাকে একটু হেল্প করবে
কি রকম

আমি তুলিকে প্রপোজ করবো। বাট কিভাবে সব শুরু করবো ভেবে পাচ্ছি না
মায়া মুখটা ছোট করে বলে,
ওহহ

ওহহ কি। একটু বলো না। কাল তুলির বার্থডে কাল কেই প্রপোজ করতে চায় আমি
আমি তোমাকে কি হেল্প করবো
ভাবছি ছাঁদে প্রপোজ করবো। তো ছাঁদটা কিভাবে সাজাবো এই বিষয়ে একটু হেল্প করো
ঠিক আছে
ধন্যবাদ

সায়ান রুমে চলে যায়। মায়া কাউকে ফোন করে
কাল কেই যা করার করতে হবে। কাল সায়ান তুলিকে প্রপোজ করবে। আমি কেনেভাবেই সায়ান আর তুলিকে এক হতে দেবো না। তুমি কাল বাড়ির পেছনে ওয়েট করবে। কোনো ভুল যেনো না হয়

রুমে বসে তুলি ফোনে গেমস খেলছে তখন সায়ান হাতে একটা ব্যাগ নিয়ে আসে
কাল তুই এটা পরিস
কেনো?
আমি বললাম তাই
পারতে পারি একটা শর্তে
কি

আমাকে তুমি করে বলতে হবে
বলতে পারি তবে একটা শর্তে
কিি
আমাকে তুমি করে বলতে হবে
সায়ান আর তুলি এক সাথে হেসে ফেলে।

এইটুকুনি একটা পিচ্চি মেয়ে তাকে তুমি বলতে হবে
এতো বড় একটা ছেলে তাকে তুমি বলতে হবে
আবার মুখে মুখে তর্ক করছিস
হুমমম

দেবো একটা
কিস না কি🙈
থাপ্পড়
হুরর
হপপ
চুপ
ধুর

কথায় বলবো না আপনার সাথে
কানটাএকটু রেস্ট পাবে
কি বললেন 😡
কি বললাম
হনুমান
আমার পিচ্চি বউ

তুলি সায়ানের কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে পড়ে। সায়ান তুলির মাথায় হাত বুলায়
জানিস প্রথমে তোকে দেখলেই রাগ হতো আর এখন না দেখলে রাগ হয়
সেম টু ইউ। তবে আপনি আমার ওপর অনেক টর্চার করছেন
সরি

খুব কষ্ট দিছেন। ছোটবেলা থেকে অনেক কষ্ট পেয়েছি। এখন একটু সুখে থাকতে চাই। ভালো থাকতে চায়
আমি আর কখনো তোকে কষ্ট দেবো না প্রমিজ
ধন্যবাদ।

কাল কিন্তু সন্ধায় রেডি থাকিস
কোথায় যাবো
সারপ্রাইজ আছে
ঠিক আছে


পর্ব ১৬

খুব সকালে তুলির ঘুম ভাঙে। ফোনটা হাতে নিয়ে কয়টা বাজে দেখার জন্য। ৫ঃ৩৯ বাজে। ৩১ তারিখ।
ওহহ কাল তো Happy new year সায়ানকে তো একটা সারপ্রাইজ দিতে হয়। কিন্তু ও তো আমাকে আজকে সারপ্রাইজ দেবে। আমি কখন দেবো। আমি না হয় ঠিক রাত বারোটায় দেবো।

পাশে তাকিয়ে দেখে সায়ান নেই
এতো সকালে কোথায় গেলো
তুলি সায়ানকে ফোন দেয়
হেলো
বল
এতো সকালে কোথায় গেছেন
ওয়াশরুমে

তুলি দাঁত দিয়ে জিভ করে ফোনটা কেটে দেয়। সায়ান ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে বলে,
ইদানীং একটু বেশিই মিছ করছিস মনে হয়
না মানে ফোন নিয়ে গেছেন তো তাই ভাবলাম কোথাও গেছেন হয়তো
আমি যদি কোথাও যায়ও তাহলে তোর কি
কিছুই না।

তাহলে কল দিলি কেন
সরি আমার ভুল হয়ে গেছে।

মাফ করে দেন
হাত জোর করে বলে, তুলি
সব সময়, এরকমই কেয়ার করবি। একটা মাএ বর তোর। আর শোন আমি এখন বেরোবো আর রাতে ফিরবো
খেয়ে জাবেন না
নাহহ। বাইরে খেয়ে নেবো
সায়ান জামা পারতে পারতে বলে।

তুলি উঠে সায়ানের বুতাম লাগিয়ে দেয়
বা বা এতো ভালোবাসা
ভালোবাসা কই দেখলেন। এটা তো জাস্ট হেল্প করলাম
ঠিক আছে। সন্ধায় রেডি থাকিস

সায়ান তুলিকে টাটা দিয়ে চলে যায়। তুলিও বেরিয়ে পরে একটু হাটতে। মায়ার রুমের সামনে এসে থমকে যায় তুলি। কারণ রুম থেকে একটা ছেলের কন্ঠ ভেসে আসছে। কিন্তু দরজা ভেতর থেকে বন্ধ করা। কি কথা বলছে তুলি স্পষ্ট বুঝতে পারছে না। কিছু শুনতে না পেয়ে তুলি হতাশ হয়ে রুমে ফিরে আসে।

নিউ ইয়ারে সায়ানকে একটু চমকে দিতে চায় তুলি
ওনাকে প্রপোজ করলে কেমন হয়? দারুণ আইডিয়া। রুমটা ভালো করে সাজিয়ে ওনাকে প্রপোজ করবো।
তুলি গায়ে ওড়না ঝুলিয়ে বেরিয়ে পরে। সারা বাজার ঘুরে ঘুরে অনেক ফুল কিনে বাসায় আসে।
ফুল দিয়ে রুমটা সুন্দর করে সাজায়।

সায়ানের জন্য একটা ঘড়ি কিনে আর একটা শার্ট। তুলি সায়ানকে এই প্রথম কিছু দেবে। শার্ট আর ঘড়িটা বিছানার এক পাশে রাখে।
রুম সাজাতে সাজাতে বিকেল চারটা বেজে যায়। তুলি তারাতাড়ি গোছল করে চুল শুকায়। তারপর সায়ানের দেওয়া প্যাকেটটা খুলে দেখে নীল একটা শাড়ি। সাথে ম্যাচিং করা জুয়েলারিও আছে। তুলি চক করে শাড়িটা পরে ফেলে।

নীল শাড়ি। সাথে দুইহাত ভর্তি নীল চুরি। কানে নীল কানের দুল। চোখে মোটা করে কাজল আর ঠোঁটে গোলাপি লিপস্টিক। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে তুলি নিজের ওপর নিজেই ক্রাশ খাচ্ছে।

তুলির ফোন বেজে ওঠে।
হেলো
কয়টা বাজে

তুলি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে ১০ঃ৪৫ বাজে
সরি। আসলে সাজুগুজু করতে করতে আর টাইম দেখা হয় নি
ঠিক আছে ছাঁদে আয়
আপনি কোথায়
যা বলছি কর

সায়ান ফোন কেটে দেয়। তুলি জুতো পরে ছাঁদে দিকে দৌড় দেয়। ছাঁদের দরজা বন্ধ। তুলি দুই তিন বার নক করে কোনো রেসপন্স নেই। তুলির মাথাটা গরম হয়ে যায়। দরজায় লাথি মারে
ওই সায়ানের বাচ্চা। দরজা বন্ধ করে নিশ্চিয় তোর গার্লফ্রেন্ডের সাথে রোমান্স করছিস তাই না। একবার দরজা খোল দেখ তোর কি অবস্থা করি।
সায়ান দরজা খুলে দেয়।

আয়
তুলি সায়ানকে পাত্তা না দিয়ে নিজে নিজেই ঢুকে পরে। অন্ধকার ছাঁদ। কিচ্ছু দেখা যাচ্ছে না
আপনি কি আমাকে এই অন্ধকার দেখানোর জন্য এখানে এনেছেন? দেখুন আমি অনেক অন্ধকার দেখেছি এখন আর দেখতে চায় না
অন্ধকারই তো ভালো তুইও আমাকে দেখতে পাচ্ছিস না আমিও তোকে দেখতে পাচ্ছি না। শুরু অনুভব করতে পারছি

আমি আপনাকে অনুভব করতে পারছি না
কিন্তু আমি পারছি। এখন তুই আমার থেকে ঠিক তিন হাত দুরে আছিস
ধপ মারা বন্ধ করুন
বিশ্বাস হচ্ছে না
প্রশ্নই ওঠে না
ওকে ওয়েট

৩.২.১ লাইট জ্বলে, ওঠে। তুলি দেখে সায়ান ঠিক তুলির থেকে দুই হাত দুরে আছে।
আমাকে পরে দেখিস আগে চারপাশ টা দেখ
তুলি চারপাশে তাকায়। চারপাশে বেলুনে হ্যাপি নিউ ইয়ার হ্যাপি বার্থডে আর আই লাভ ইউ লেখা। পুরো ছাঁদটা সুন্দর করে সাজানো। তুলিতো দেখে হা। সায়ান তুলির সামনে হাটু মুরে বসে বলে,

আমি তোর থেকে অনেক বড়। তোর সাথে আমাকে মানায় না। কিন্তু তবুও আমি তোকে #ভালোবাসি। বড্ড বেশি ভালোবাসি। তোকে ছাড়া আমার এক মুহূর্ত কাটে না। আমি আমার জীবনের বাকি পথটুকু তোর সাথে হাঁটতে চায়। আই প্রমিজ আমি কখনো তোকে রাগাবো না। কষ্ট দেবো না। বকবো না। শুধু ভালোবাসবো।

লোকে তোকে বলবে তোর বরটা বুরো। তুই লোকের কথা উপেক্ষা করে আমার হাতটা শক্ত করে ধরে রাখবি তো
সায়ান তুলির সামনে হাত বাড়িয়ে দেয়। তুলি সায়ানের হাতটা ধরে সায়ানকে দাঁড় করিয়ে বলে,
লোকে কি বললো না বললো তাতে আমার কিচ্ছু আসে যায় না।

আপনি আমার স্বামী। যে যাই বলুক আমি আপনার সাথে থাকবো। তবে হ্যাঁ যদি বকেন তো চলে যাবো
সায়ান তুলিকে জড়িয়ে ধরে
তুমি করে না বললে এখুনি বকবো
তুমি
তুমি

ভালোবাসি
আমিও
তুলি এবার সায়ানকে ছাড়িয়ে বলে,
খালি মুখে ভালোবাসি শুনতে আমার বোরিং লাগে। গিফট বের করুন
গিফট

হ্যাঁ। তিনটা গিফট লাগবে
তিনটা কিসের
হ্যাপি বার্থডে, লাভ ইউ, আর নিউ ইয়ারের
কিন্তু গিফট তো
নেই তাই তো।

ঠিক আছে একটারও রিপ্লাই দেবো না
না দিলে নাই
আপনি শুধু বুরো না সাথে কিপটাও
আমি কিপটা
তা নয়ত কি। একটা মাএ বউ তার জন্য গিফট আনেন নাই
হুম একটা মাএ বউ। ভাবতেছি আরও একটা বিয়ে করবো
তোরে আমি খুন করমু
তুলি সায়ানকে মারতে থাকে

কোথাও পোরা পোরা গন্ধ পাচ্ছি
হ আমার বুকের ভেতর দাও দাও করে আগুন জ্বলছে
সায়ান দোলনায় বসে বলে,
শুনেই আগুন জ্বলছে যদি বিয়ে করে নিয়ে আসি তাহলে তো পুরে ভর্স হয়ে যাবি
তুলি কোনো কথা বলেনা।
ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে ফেলে।

সায়ান তুলির কান্নায় ভরকে যায়। তুলির কাছে এসে বলে,
আই এম সরি। আমি তো মজা করছিলাম
আপনি একটা লুচু। আমি তো চিনি আপনাকে
তুলি কান্নার বেগ বাড়িয়ে দেয়।
প্লিজ কান্না অফ কর। সবাই জেগে যাবে আর আমাকে গনোধলাই দেবে
থামবো

সায়ান তিনটা গিফট বক্স তুলির সামনে দেয়। মুহুর্তেই তুলির কান্না উধাও গিফট গুলো খুলে দেখতে ব্যস্ত
এই তো কাঁদছিলি। এখনি কান্না শেষ
তো আমি কি সারা রাত কাঁদবো না কি
তাও ঠিক।

তুলি গিফট গুলো রেখে সায়ানকে জড়িয়ে ধরে বলে,
লাভ ইউ সো মাচ।
গিফট গুলোকে এতো ভালোবাসিস।
হুরর।

তুলি টেবিলে রাখা জুস খেতে থাকে। সায়ান তুলির পাশে বসে আছে।
সায়ান তুলিকে প্রতিনিয়ত ফলো করছে দুজন মানুষ। একটু সুযোগ পেলেই তারা তাদের কাজ শুরু করে দেবে। কিন্তু সেই চান্সটা পাচ্ছে না।


পর্ব ১৭

শুনুন।
বলুন।

খাটের ওপর আপনার জন্য কিছু রেখে এসেছি দয়া করে ওগুলো পরে আসুন প্লিজ।
একটু পরে যায়।
নাহহ এখুনি যাবেন।
ওকে মহারানী।
সায়ান তুলির কপালে একটা চুমু দিয়ে চলে যায়। তুলি একটু হেসে চারপাশটা হেঁটে হেঁটে দেখছে। হঠাৎ কেউ তুলির মুখে স্পে দেয়। আর তুলি অঙ্গান হয়ে যায়।

সায়ান তুলির দেওয়া নীল শার্ট আর ঘড়িটা পরে ছাঁদে এসে দেখে তুলি নেই।
তুলি কোথায় তুই? বেরিয়ে আয়।
তুলির কোনো সারাশব্দ নেই। সায়ান এবার পাগলের মতো অবস্থা। এদিকওদিক ছুটোছুটি করে তুলিকে খুঁজতে থাকে।

কোথাও তুলি নেই। সায়ান হাঁটু মুরে বসে কাঁদতে থাকে তখন সায়ান তুলির ভাঙা চুরি দেখে।
কেউ আমার তুলিকে কিডন্যাপ করেছে। কিন্তু কেনো? আমার তো কোনো শক্র নেই তাহলে।
সায়ান পুলিকে বলে। আশেপাশে প্রচুর খুঁজে।

কোথাও তুলি নেই
তুলির ঙ্গান ফিরতে তুলি নিজেকে কারো বুকে আবিষ্কার করে। কিন্তু এটা তো সায়ান না। সায়ানের স্পর্শ তুলি খুব ভালো করে চিনে। মানুষটা দেখার জন্য তুলি মাথা তুলে। তুলি রিককে দেখে ছিটকে দুরে চলে যায়। রিক সারা রাত তুলিকে দেখে কাটিয়ে দেয়। কিছুখন আগেই চোখটা লেগে গেছিলো।
আপনি এখানে?

তুলি চারপাশটা দেখে বলে,
আমি এখানে কেনো?
রিক শার্ট ঠিক করতে করতে বলে,
আমি নিয়ে এসেছি।
মানে।

ভালোবাসি তোমায়। তোমাকে অন্য কারো সাথে আমার জাস্ট সয্য হয় না। তাই তোমাকে সবার থেকে দুরে নিয়ে চলে এসেছি। এখন আর কেউ আমাকে আর তোমাকে আলাদা করতে পারবে না।

তুলি মাথায় হাত দিয়ে বসে। চোখ দিয়ে পানি পরছে।
আপনি এটা না করলেও পারতেন স্যার। আমি আপনাকে ভালোবাসি না। আমি একজনের স্ত্রী।

মাই ফুট। তুমি আমার শুধু আমার।
চেচিয়ে বলে, রিক। তুলি কেঁপে ওঠে।
তুলির দুগালে হাত দিয়ে বলে,
আমি তোমাকে কতোটা ভালোবাসি তুমি বুঝতে পারছো না। কতোভাবে বুঝালাম তোমায়। পাগলের মতো তোমার পিছু ছুটলাম তাও তোমার মন পেলাম না। কেনো? সায়ান তোমার এতো অবহেলা করলো তবুও দিনশেষে তুমি তাকেই মন দিলে। কেনো তুলি? আমার দোষ কোথায়?

স্যার আমি আপনার পায়ে পরি আমাকে যেতে দিন প্লিজ। সায়ান আমার জন্য চিন্তা করছে। আমার মা তো পাগল হয়ে যাবে আমার চিন্তায়। প্লিজ স্যার
তুলি রিকের পা ধরে। রিক তুলিকে উঠিয়ে বলে,
আমরা বিয়ে করে। একটা বেবি নিয়ে তোমার পরিবারের সামনে যাবো। তখন আর কেউ আমাদের আলাদা করতে পারবে না।

তুলি রিকের থেকে দুরে গিয়ে চিৎকার করে বলে,
এসব কিসের পাগলামি শুরু করছেন আপনি? আমি সায়ানকে ভালোবাসি। ও আমার স্বামী। আপনি কেনো আমাদের সংসার ভাঙতে চাচ্ছেন।

তোতা পাখি চিৎকার করো না প্লিজ। ফ্রেশ হয়ে নাও আমি খাবার নিয়ে আসছি।
রিক বেরিয়ে যায়। দরজা বন্ধ করে দিয়ে যায়। তুলি সারারুম তন্নতন্ন করে খুঁজেও পালানোর মতো কোনো ফাঁকা খুঁজে পায় না।
কোথায় আপনি সায়ান। আমাকে নিয়ে যান প্লিজ। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে।
তুলি কান্না করতে করতে বলে।

সায়ান পাগলের মতো এখানে ওখানে ছুটাছুটি করছে। সায়ানের পরিবারের সবাই ঢাকা চলে এসেছে। তুলির মা অনবরত কান্না করে যাচ্ছে। সায়ান ক্লান্ত হয়ে তুলির ছবি হাতে নিয়ে বসে পরে৷ সায়ানের মা সায়ানের কাঁধে হাত রাখে।

মা আমি তুলিকে কোথায় খুঁজবো। ও কি যানে না আমি ওকে ছাড়া এক মুহূর্ত থাকতে পারি না। আমি ওকে প্রমিজ করেছি কখনো ও কে বকবো না। তারপরও এমটা কেনো হলো।
আল্লাহর ওপর ভরসা রাখ। ঠিক খুঁজে পাবি তুলিকে।
সায়ান মাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে।

দুই হাঁটুর মধ্যে মুখ গুঁজে বসে আছে তুলি। দরজা খোলার শব্দে মাথা তুলে তাকায়। রিক খাবার নিয়ে তুলির কাছে বসে। রুটি টুকরো করে ভাজি দিয়ে তুলির মুখের সামনে ধরে
খেয়ে নাও।
আমাকে যেতে দিন প্লিজ।
তুলি কেঁদে বলে। রিক জোরে তুলির গালে একটা থাপ্পড় মারে আর তুলি ছিটকে পরে যায়। ঠোঁট কেঁটে রক্ত বের হয়।

আর একবার যদি যেতে দিতে বলো তো এর চেয়ে খারাপ কিছু হবে।
রিক বেরিয়ে যায়। ভুল করে ফোন ফেলে যায়। তুলি ফোনটা হাতে নিয়ে সায়ানের ফোনে ফোন দেয়। দুইবার রিং হওয়ার পরে সায়ান ফোন তুলে।
সায়ান সায়ান আমাকে নিয়ে যাও প্লিজ।
তুলি কোথায় তুই?

একবার বল আমায়।
আমি যানি না। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে প্লিজ নিয়ে যাও।
তুই শান্ত হ তুলি। আমি থাকতে তোর কিচ্ছু হবে না। তুই চারপাশটা দেখে বল কোথায় তুই।
আমাকে রুমে আটকে রেখেছে। এই রুমে আলোবাতাস ঢোকারও জও নেই।
রিক তুলির হাত থেকে ফোনটা নিয়ে যায়।
সায়ান ভাই।
রিক তুই।

হুম আমি। বলছিলাম কি ডিভোর্স পেপারটা পাঠিয়ে দেবো সাইন করে দিও। আর হ্যাঁ আরেকটা বিয়ে করে নাও কারণ তুলি আমার শুধু আমার
রিক ভাই আমার। আমার তুলিকে প্লিজ ছেড়ে দে। প্লিজ রিক।
রিক সায়ানের আকুতি মিনতি শুনে না। ফোন কেটে দেয় আর সিম অফ করে দেয়। তুলি কাঁদতে কাঁদতে বসে পরে।

সায়ান পাগলের মতো দৌড়ে বের হয়। সায়ানের বাবা আটকে দেয়।
কোথায় যাচ্ছো এখন।

বাবা আমার তুলি আজ আমার সাথে কথা বলছে। ওকে রিক ধরে নিয়ে গেছে। খুব কাঁদছিলো। খুব কষ্ট আছে ও।
কোথায় আছে।
জানি না বাবা। আমি তুলিকে ফিরিয়ে আনবোই।
সায়ান বেরিয়ে যায়।

রিক তুলির জন্য অনেক গুলো ড্রেস নিয়ে আসে।
কোনটা পরবে তুমি।
তুলি একমনে তাকিয়ে আছে।
এই তুলি বলোনা।
তুলি সবগুলো ড্রেস ফেলে দেয়।

আমার এসব কিছু চায় না। শুধু সায়ানকে চায়। আমি সায়ানের কাছে যাবো। জোর করে কিছু পাওয়া যায় না। কেনো জোর করছেন। আমি কখনো আপনাকে ভালোবাসবো না
ভালোবাসতে হবে না আমার সাথে থাকলেই হবে।
নাম্বারের লোকেশন দেখে সায়ান পুলিশ নিয়ে ঢাকার থেকে কিছুটা দুরে নদীর পার পর্যন্ত চলে যায়। আশেপাশেই রিকের বাড়ি।

পুলিশ ওই বাড়িটাই হবে।
চলেন।
পুলিশ পুরো বাড়ি ঘিরে ফেলে। সায়ান বাড়ির দরজা খুলেই চমকে ওঠে।


পর্ব ১৮

মায়া সেই চোর মহিলা আর লোকটিকে দেখে সায়ান অবাক হয়।
মায়া এদের সাথে কি করছে? এরা তো ক্রিমিনাল। তাহলে কি এরাই মায়ার বাবা মা?
সায়ান পুলিশদের ডাকে। তারপর পুরোপুরি দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে। মায়া সায়ানকে দেখে চমকে যায়।

তততততুমি এএএখানে?
তুতলিয়ে বলে, মায়া।

তোমার বাবা মায়ের সাথে মিট করতে আসলাম।
স্বাভাবিক ভাবেই উওর দেয় সায়ান।
এরা আমার বাবা মা তোমাকে কে বললো?
আমি তোমাদের কথা শুনেছি।
মায়া ভয় পেয়ে চুপসে যায়। সায়ান পুলিশদের ভেতরে আসতে বলে,
সায়ান তুমি পুলিশ নিয়ে এসেছো?
হ্যাঁ।

কাজটা ঠিক করলে না সায়ান
পুলিশ মায়ার মা বাবাকে গাড়িতে বসায়।

রিক পুলিশ দেখে ঘাবড়ে যায়। তুলিকে টেনে ছাঁদে নিয়ে যায়। ছাঁদে একটা মই আছে সেই মই দিয়ে পালাবে। সায়ান তুলিকে খুঁজছে। তুলিকে যে রুমে রাখা হয়ে ছিলো সেই রুম পর্যন্ত চলে যায়। কিন্তু তুলিকে নিয়ে রিক আগেই বেরিয়ে যায়।
তুলি জানে না সায়ান এসেছে। রিক তুলির হাত ছেড়ে মই ঠিক করছিলো তখন তুলি চারতলা বিল্ডিং এর ওপর থেকে ঝাপ দেয়।

আআআআআআচআআআআ
চিৎকার শুনে সায়ান দাঁড়িয়ে পরে।

তুলির গলা। কিন্তু তুলি এতো জোরে চিৎকার করলো কেনো? আমার তুলি ঠিক আছে তো

চোখ খুলে তুলি নিজেকে হাসপাতালের বেডে পায়। হাত পা নাড়াতে পারছে না। আশেপাশে তাকাতে পারছে না। কাউকে ডাকবে সেটাও পারছে না। শুধু তাকাতে পারছে।
একজন নার্স তুলির কেবিনে ঢুকে দেখে তুলি চোখ খুলেছে। তাই সে দৌড়ে যায় সবাইকে খবর দিতে। সায়ান একটু আগেই তুলির কেবিন থেকে বেরিয়েছিলো। নার্সের কথায় দৌড়ে তুলির কেবিনে ঢোকে।

তুলির পাশে চেয়ার টেনে বসে তুলির মাথায় হাত বুলায়। সায়ানকে দেখে তুলির চোখে পানি চলে আসে। চুলগুলো উসকো খুশকো মুখটা শুকিয়ে গেছে চোখের নিচে কালি পরে গেছে।
সায়ান তুলির চোখের পানি মুছিয়ে দেয়। তুলি সায়ানকে কিছু বলতে যায় কিছু পারছে না।
তুমি বলতে চাইছো আমার এই অবস্থা কেনো তাই তো।
তুলি চোখ দিয়ে বুঝায় হ্যাঁ।

আমার জানটা আজ তিনদিন হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছে আমি কি করে ভালো থাকবো বলো। রিককে সাজা দিয়েছি। ও আর আমাদের মাঝে আসবে না।
তখন ডাক্তার ঢোকে।

মিস্টার খান আপনি বাইরে যান আমরা আপনার মিসেস কে চেক আপ করবো।
আমি এখন যায়। একটু পরে আবার আসবো।
সায়ান তুলির কপালে চুমু দিয়ে বাইরে চলে যায়।

ডাক্তার চেক আপ করে বের হয়।
তুলি কথা বলছে না কেনো।
একটু পরেই কথা বলতে পারবে৷ তবে হ্যাঁ বেশি কথা বলাবেন না ওনাকে দিয়ে।
ঠিক আছে

সায়ান ডাক্তারের সাথে কথা বলে, তুলির কেবিনে যায়। তুলি মা দাদু সায়ানের মা বাবা রুহি সবাই বসে আছে তুলির কাছে। এটা সেটা বলছে। সায়ান দুরে দাঁড়িয়ে আছে। তুলি সায়ানকে না দেখে অস্পষ্ট সরে বলে,
সায়ান কোথায়?

সায়ান আছে সোনা। হয়ত একটু বাইরে গেছে।
তুলির মা তুলির মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
সায়ান সামনে আসে। সবাই চলে যায়। শুধু সায়ান বসে আছে তুলির পাশে। তুলি সায়ানের হা ধরে।

খেয়েছেন কিছু?
সায়ান কিছু বলেনা।
আমার খিদে পেয়েছে।
আমি তোর জন্য খাবার নিয়ে আসছি।

সায়ান যেতে নেয় তুলি হাত ধরে আটকায়।
কাউকে বলুন না খাবার দিয়ে যেতে আপনি আমার কাছেই থাকুন।
সায়ান রুহিকে কল করে খাবার দিয়ে যেতে বলে। রুহি তুলির জন্য সুপ আর সায়ানের জন্য ভাত দিয়ে যায়।

সায়ান তুলির মুখের সামনে খাবার ধরে।
আগে আপনি খান।
তুই খা আমি খাচ্ছি
উহু আগে আপনি।
সায়ান খায় তারপর তুলিকে খাইয়ে দেয়।

এভাবেই ভালোবাসায় কেটে যায় ছয় মাস। তুলি এখন পুরোপুরি সুস্থ। সায়ান আর তুলি এখন পরিবারের সাথেই থাকে। খুব সুখেই কাটছে ওদের দিন।

পরিবারের সবাই এক সাথে খেতে বসেছে। তুলি দুরে দাঁড়িয়ে আছে। তুলির কেমন জানি মাথা ঘুরছে। সকাল থেকে দুইবার বমি করেছে। কাউকে কিছু বলতেও পারছে না।
তুলি তুমি ওখানে দাঁড়িয়ে আছো কেনো?
সায়ানের ডাকে তুলি এগিয়ে যায়।

কি হয়েছে সোনা এমন দেখাচ্ছে কেনো তোকে।
সায়ানের মা জিজ্ঞেস করে।
আমি তোমাদের কিছু বলতে চায়।
হুম বলো

আমি প্রেগন্যান্ট
তুলির কথা শুনে সবার মুখে হাসি ফুটে ওঠে কিন্তু সায়ান খাবার ছেড়ে উঠে চলে যায়। সায়ানের এমন ব্যবহারে তুলির চোখে পানি চলে আসে।
মা সায়ান চলে গেলো

কিচ্ছু হয় নি তুলি। কান্না করছিস কেনো? সায়ান হয়ত অন্য কারনে চলে গেছে।
আমি জানি মা ও খুশি হয় নি।
তুলি কান্না করে বলে। সায়ানের মাও কিছু বলেনা।

সায়ানের বাবা আর দাদু মিলে পুরো পারা মিষ্টি বিলি করছে। খান বাড়িতে নতুন অতিথি আসছে যে। বাড়ির আসবাবপত্র সব নতুন করে বানাচ্ছে আরমান খান। সবাই প্রচুর খুশি।
সায়ানে বেলকানিতে বসে আছে। মুখটা ফ্যাকাশে করে। তুলি কাচুমাচু হয়ে সায়ানের পাশে বসে।

আমি কি কোনো ভুল করেছি।
নাহহ আমি ভুল করেছি।
তুমি যদি খুশি না থাকো তাহলে আমি বেবিটা নষ্ট করে ফেলবো।
সায়ান তুলিকে জড়িয়ে কান্না করে ফেলে।
তুই এখনও ছোট সবে সতেরো বছর।

ছোট বয়সে মা হওয়ার অনেক রিক্স তুলি। যদি তোর কিছু হয়ে যায়।
কান্না করতে করতে বলে, সায়ান। তুলি সায়ানের পিঠে হাত রেখে বলে,
কিচ্ছু হবে না। তুমি আছো তো
আমার খুব ভয় করছে
আল্লাহর ওপর ভরসা রাখো।

তুলি সায়ানের চোখের পানি মুছে দেয়। তুলির ভেতরেও ভয় ঢুকে গেছে। যদি কিছু হয়ে যায়।


অন্তিম পর্ব

সায়ান তুলিকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে গেছে। ডাক্তার তুলিকে একদম সাবধানে থাকতে বলেছে। সায়ানকে তুলির খেয়াল রাখতে বলেছে।

সায়ান তুলিকে নিয়ে বাড়িতে আসে। তুমি খাটে বসে আছে সায়ান ফ্রেশ হয়ে তুলির পাশে বসে আর তুলি বমি করে দেয় সায়ানের ওপর।
সায়ান বমি পরিষ্কার করে আবার চেঞ্জ করে তুলির পাশে বসে।
সরি

কেনো?
এতো কষ্ট করতে হচ্ছে আমার জন্য।
তোর জন্য কিচ্ছু করছি না।
তাহলে।
আমার প্রিন্সেসের জন্য করছি।

ও আসতে না আসতে আমার চেয়ে ও কে বেশি ভালোবাসা শুরু করে দিছো
কোথাও পোরা পোরা গন্ধ পাচ্ছি
তুলি একটু হেসে বলে,
আমি কিন্তু হিংসা করছি না
প্রশ্নই ওঠে না। আমার বুকের বা পাশে তুই আর ডান পাশে আমার বেবি।
যদি আমি মরে যায়
খুব খারাপ হয়ে যাবে কিন্তু তুলি। এ রকম কিছু আর বলবি না।
রেগে যাচ্ছো কেনো?

রাগার মতো কথা বলছিস কেনো?
ঠিক আছে আর বলবো না। লাভ ইউ
টু

কি টু।
ওই তো।
কি ওই তো।
লাভ ইউ টু।
হাগ করো আমাকে।
কি।
জড়িয়ে ধরো।
সায়ান তুলির নাক টেনে জড়িয়ে ধরে।

বাড়ির সবার কাজ বন্ধ। সবাই তুলিকে নিয়ে ব্যস্ত। সায়ান তো দুই মিনিটের জন্যও তুলিকে চোখের আড়াল করে না। সারাক্ষণ ছায়ার মতো পাশে থাকে।

তুলির প্রেগ্ন্যাসির নয় মাস চলছে। পেটটা উঁচু হয়ে গেছে। পেটের জন্য নিচের দিকে তাকাতে পারে না। চোখের নিচে কালি পরে গেছে। মুখটা ফুলে গেছে। একা একা হাটতে পারে না।

সায়ানের বুকে মাথা রেখে তুলি শুয়ে আছে। সায়ান ফোন টিপছে
সায়ান
বলো
আমি তোমাকে জীবন সঙ্গী হিসেবে পেয়ে ধন্য
আমিও
আমার যদি অন্য কারো সাথে বিয়ে হতো৷ তার সাথে হয়ত বয়সের এতোটা ডিফারেন্স থাকতো না তবে সে কখনো আমার এতো কেয়ার করতো না। আমাকো এতো ভালো বুঝতো না।

তাই
প্রথমে আপনাকে মেনে নিতে পারছিলাম না। কিন্তু এখন আমার মনে হয় আমার জন্য আপনি পারফেক্ট।
হুম। আল্লাহ আমার জন্য তোকে বানিয়েছে।
সায়ান তুলির মাথায় কিছ করে।

তুলি সরি
কেনো
তোর বয়সি মেয়েরা এখন কলেজে যাচ্ছে। কতো ইনজয় করছে আর তুই
আমিও তো ইনজয় করছি মা হওয়ার আনন্দটা।

তোর তো এখনো সময় হয় নি
হয়েছে। আর হয়েছে বলে, ই কিন্তু আমি মা হতে যাচ্ছি।
আহ
তুলি কি হয়েছে?

বেবি কিক মেরেছে
সত্যি
হুম দেখো
তুলি সায়ানের হাতটা পেটে ধরে। সায়ান আর তুলি একসাথে হেসে ফেলে।

আহহহহহ
আবার কিক মেরেছে
ব্যাথা করছে। প্রচন্ড
সায়ানের হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। চিৎকার করে বাড়ির সবাইকে ডাকে। সবাই আসে। তুলি ব্যাথায় চিৎকার করে কান্না করছে। সায়ান তুলিকে কোলে নিয়ে দৌড়ে গাড়িতে ওঠে।

সায়ানের বাবা ডাইভ করছে। সায়ান তুলির মা তুলিকে ধরে রেখেছে।
হাসপাতালের করিডোরে পায়চারি করছে আর কান্না করছে সায়ান৷ তুলির মা সায়ানের মা দাদু সবাই বসে কান্না করছে।

সায়ানের বাবা সায়ানের কাঁধে হাত রাখে
আল্লাহকে ডাকো। তিনি সব ঠিক করে দেবে। তোমার তুলির কিছু হবে না
ভেতর থেকে পিচ্চির কান্নার আওয়াজ আসে। মুহূর্তেই সবার মুখে হাসি ফুটে ওঠে। সায়ান মুখটা ভার করে আছে। তুলিকে না দেখা ওবদি সায়ানের মন শান্ত হচ্ছে না।

একটা নার্স কাথা দিয়ে মুরিয়ে ছোট্ট একটা পরিকে ওদের সামনে নিয়ে আসে। সায়ানের বাবা প্রথমে বেবিটাকে কোলে নেয়। সায়ান কেবিনের ভেতরে ঢুকে পরে। হাতে স্যালাইন দিয়ে শুয়ে আছে তুলি। সায়ান তুলির পাশে বসে কপালে চুমু দেয়।

আমার বেবি কোথায়? আমি তো এখনো ও কে দেখলামই না
আমি নিয়ে আসছি
সায়ান সায়ানের মায়ের কোল থেকে বেবিটাকে কোলে নেয়। তারপর তুলির পাশে শুয়িয়ে দেয়
নে দেখ
হুম আমি তো একাই দেখবো। আর কেউ তো ও কে ভালোবাসে না
আমাকে না রাগালে তোর ভালো লাগে না তাই না।

রাগাবোই তো এতো বড় একটা গিফট দিলাম এখনো ভালোবাসি বলো নি।
ভালোবাসি প্রচুর। (সায়ান তুলি আর বেবিকো জড়িয়ে ধরে)

আমার জীবন তোরা। তোদেরকে আকাশ সমান ভালোবাসি। জীবন ফুরিয়ে যাবে কিন্তু আমার ভালোবাসা ফুরোবে না।

লেখা – তানিশা সুলতানা

সমাপ্ত

(পাঠক আপনাদের ভালোলাগার উদ্দেশ্যেই প্রতিনিয়ত আমাদের লেখা। আপনাদের একটি শেয়ার আমাদের লেখার স্পৃহা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আমাদের এই পর্বের “ভালোবাসি – পারিবারিক প্রেম কাহিনী ” গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম। ধন্যবাদ।)

আরো পড়ূনবাঁচার দাবি – একটা কষ্টের গল্প

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *