আজও ভালোবাসি – খুনশুটি প্রেম: বাজে কথা বলা বন্ধ করুন। আমরা আপনাদের মতো বড়লোক না হতে পারি কিন্তু লোভি নই। আমাদের যা আছে তাতেই আমরা খুশি। আর আমার মেয়ে কখনো এরকম কাজ করতেই পারে না। পুরো গল্পটি পড়লে অবাক হবে।
পর্ব ৭
পরেরদিন সকালে আরাফ সবার সাথে বসে নাস্তা করছে। সেই সময় ওর বাবা ওকে বললো,
_ আরাফ।
_ হ্যা, আব্বু বলো।
_ তোমাকে আজই ইউ কে যেতে হবে।
_ আজকেই! কিন্তু আব্বু হঠাৎ করে।
_ হুম হঠাৎ করেই কাজ পড়ে গেলো। তোমাকে ওখানে আর কে কোম্পানির সাথে একটা ডিল সাইনের জন্য যেতে হবে। ইউ নো যে এই টা আমাদের জন্য একটা বড় সুযোগ। এই ডিল টা যদি পেয়ে যায় তো প্রায় হাজার কোটি টাকা লাভ হবে। সো বুঝতে ই পারছো যাওয়া টা কতোটা জরুরি। তোমার পার্সপোর্ট ভিসা সবকিছু রেডি। রাত আটটায় তোমার ফ্লাইট।
_ ও ওকে আব্বু। আমি যাচ্ছি।
তারপর ও মারিয়ার সাথে ওর যাওয়ার কথা বলে, মারিয়ার একথা শুনে একটু মন খারাপ হয়েছিল যখন শুনলো আরাফের ফিরতে এক সপ্তাহের বেশি লাগবে। কিন্তু আরাফ ওকে অনেক বুঝিয়ে সুজিয়ে সেদিন চলে যায়।
আর তার পরেরদিন ই রুবার কথা অনুযায়ী আরাফের বাবা মারিয়াদের বাড়িতে যায়। মারিয়া ওই সময় বাড়িতে ছিলো না। দিনার সাথে বাইরে গিয়েছিল।
ওর বাবা মারিয়াদের বাড়িতে পৌঁছে কলিং বেল বাজায়।বেলের শব্দ শুনে মারিয়ার মা এসে দরজা খুলে অপরিচিত কাউকে দেখে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো।
_ কে আপনি। আপনাকে তো ঠিক চিনলাম না।
_ বলছি। তার আগে বলুন। এটা কি আরমান সাহেবের বাড়ি।
_ হ্যা,
_ উনি কি বাসায় আছেন।
_ হ্যা, আছে। আপনি বসুন আমি ডেকে আনছি।
তারপর মারিয়ার মা যেয়ে ওর বাবাকে ডেকে আনলো।
মারিয়ার বাবা উনার সামনে আসতেই আরাফের বাবা বললেন।
_ তো। আপনিই আরমান সাহেব।
_ জি। কিন্তু আপনাকে তো ঠিক চিনলাম না।
_ না। চেনার ই কথা। তা মিঃ আরমান আপনার মাসিক ইনকাম কত। জানতে পারি।
_ আমি আসলে কিছু বুঝতে পারছি না। আপনাকে আমি চিনি না জানি না। হঠাৎ করে এসে আমার মাসিক ইনকাম কত জানতে চায়ছেন যে।
_ অবশ্যই কোনো কারণ আছে। তাই জানতে চায়ছি। প্লিজ বলুন।
_ জি। চল্লিশ হাজার টাকা।
_ মাত্র চল্লিশ হাজার টাকা! এজন্য ই বুঝি মেয়েকে বড়লোক ছেলেদের পিছনে লেলিয়ে দিয়েছেন বাড়তি টাকা হাতানোর জন্য।
_ তারমানে! কি বলতে চায়ছেন আপনি।
_ হুম। ঠিক ই তো বলছি।
_ না বলছেন না। কারণ আমার মেয়ে এরকম না। এই শিক্ষায় আমি আমার মেয়ে কে মানুষ করিনি।
_ হ্যা সে তো দেখতেই পাচ্ছি আপনার মেয়ে কও শিক্ষায় মানুষ হয়েছে। এজন্যই তো আমার সম্পত্তির লোভে পড়ে আমার ছেলের পিছনে পড়েছে। তা কতো টাকা হলে আপনার মেয়ের থেকে আমার ছেলেকে মুক্ত করতে পারবো বলুন। আপনি যতো টাকা চায়বেন আমি দিতে রাজি আছি।
_ বাজে কথা বলা বন্ধ করুন। আমরা আপনাদের মতো বড়লোক না হতে পারি কিন্তু লোভি নই। আমাদের যা আছে তাতেই আমরা খুশি। আর আমার মেয়ে কখনো এরকম কাজ করতে ই পারে না।
_ ওকে। আমার কথা বিশ্বাস না হলে আপনি আপনার মেয়েকেই জিজ্ঞেস করুন যে সে আমার একমাত্র ছেলে আরাফ চৌধুরীর পিছনে পড়েছে কি না।
আমি আজকে ভালোভাবে বলে গেলাম নিজের মেয়েকে সামলান। তা নাহলে এই ফারহাদ চৌধুরী কি করতে পারে দেখবেন।
তারপর আরাফের বাবা ওখান থেকে চলে আসে।
আর মারিয়ার বাবা মা যেন অসড় হয়ে গেছে এসব শুনে। যে মেয়েকে ওরা এতো টা ভরসা করতো আজ তার জন্য এতো অপমান সহ্য করতে হলো। তবে মারিয়ার বাবা এখনো বিশ্বাস করে নি যে মারিয়া এসব করতে পারে।
সন্ধার দিকে মারিয়া বাড়ি ফিরে দেখে ওর বাবা মা দুজনেই ড্রয়িং রুমে বসে আছে।
ও যেয়ে ওদের পাশে বসে। কিন্তু ওদের এভাবে চুপচাপ বসে থাকতে দেখে জিজ্ঞেস করে।
_ কি হয়েছে আব্বু। আম্মু তোমরা এভাবে মন খারাপ করে বসে আছো কেন।
মারিয়ার কথা শুনে ওর আম্মু রেগে গিয়ে বললো,
_ তো আর কি করবো। তুই যা করেছিস তারজন্য তো আর কয়দিন পর মানুষের সামনে মুখ দেখাতেই পারবো না। ছি! তোকে আমরা এতো বিশ্বাস করি আর আজ তুই তার এই প্রতিদান দিলি।
_ মানে! আমি কি করেছি আম্মু।
_ হুহহহ। কি বাকি রেখেছিস সেটা বল। তোর জন্য লোকে বাড়ি বয়ে এসে এতোগুলো কথা শুনিয়ে গেলে।ছি! আমার ভাবতেই মরে যেতে ইচ্ছে করছে।
_ আহহহহ। তুমি থামোতো। মারিয়া তোমাকে যা জিজ্ঞেস করবো সব ঠিক ঠিক উত্তর দেবে।
মারিয়া ওর বাবার কথা শুনে একটু ঘাবড়ে গেল কারণ ওর আব্বু তখনই ওর নাম ধরে ডাকে যখন ও বড় কোনো অপরাধ করে। তারপর ও নিজেকে সামলে নিয়ে বললো
_ বলো আব্বু। কি বলবে?
_ তুমি আরাফ নামে কাউকে চেনো।
মারিয়া আরাফের নাম শুনে খুব ঘাবড়ে গেল যে ওর আব্বু কি করে জানলো।
ওকে চুপ করে থাকতে দেখে ওর মা বললো,
_ কি রে চুপ করে আছিস কেন বল?
_ হ হ হ্যা, চ চ চিনি।
_ ওর সাথে তোমার কি সম্পর্ক?
_ মারিয়া চুপ করে আছে।
তা দেখে ওর মা ওর হাত টেনে নিজের মাথার উপর দিয়ে বললো,
_ আমার মাথায় হাত দিয়ে বল কি সম্পর্ক তোর ওর সাথে।
আর যাই হোক মায়ের মাথায় হাত দিয়ে মারিয়া আর মিথ্যা বলতে পারলো না। তাই ভয়ে ভয়ে বললো,
_ আ আ আমি ও ওকে ভ ভ ভালোবববাসি আম্মু।
বলার সাথে সাথে ওর মা ওর গালে ঠাসসসসস করে একটা চড় মারলো।
_ তোর ওই ভালোবাসার জন্য ওর বাবা আমাদের বাড়ি এসে যা নয় তা বলে অপমান করে গেছে। বলেছে আমরা নাকি টাকার জন্য তোকে এভাবে লেলিয়ে দিয়েছে। এতো কষ্ট করে তোকে আমরা মানুষ করেছি এইসব শোনার জন্য বল।
_ আরাফের বাবা এসব বলে গেছে।
_ হ্যা,
মারিয়া আরো কিছু বলতে যাবে তার আগেই পিছন থেকে কিছু পড়ার শব্দ শুনে ও পিছনে ফিরে দেখে ওর বাবা বুকে হাত দিয়ে নিচে পড়ে গেছে। ও আর ওর মা খুব ভয় পেয়ে যায় তাড়াতাড়ি ওর বাবাকে হসপিটালে নিয়ে যায়।
ডক্টর সবকিছু দেখে বলে,
_ অতিরিক্ত মানসিক শকের কারণে উনার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে।
একথা শুনে মারিয়া আর ওর মা খুব ভয় পেয়ে যায়।
_ না না। আপাততো ভয় কেটে গেছে তবে সাবধান উনাকে যেন কোনো ভাবেই আর চিন্তায় ফেলবেন না তাহলে কিন্তু বড় কোনো দূর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।
তারপর ওর বাবার জ্ঞান ফিরলে ওরা কবিনের ভিতর যায় ওর বাবার সাথে দেখা করতে। মারিয়া ওর বাবার পাশে যেয়ে বসে আর বলে,
_ আব্বু বিশ্বাস করো আমি এমন কেনো কাজ করিনি যাতে তোমাকে এভাবে অপমানিত হতে হবে। তারপর ও কি থেকে কি হয়ে গেছে। তুমি আমাকে মাপ করে দাও আব্বু। আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি আমি আর কোনো দিন ও ওর সাথে কথা বলবো না। ওর সাথে কোনো সম্পর্ক রাখবো না। আজ থেকে ওর সাথে আমার সব সম্পর্ক শেষ। তুমি কারো কাছে ছোট হয়ে যাও এমন কোন কাজ করবো না।প্রমিজ।
তারপর ওর বাবা সুস্থ হয়ে গেলে ওরা বাড়ি চলে আসে। এভাবে সাত দিন পার হয়ে যায়। একয়দিনে মারিয়া আরাফের সাথে কোনো যোগাযোগ করে নি। আরাফ ও মারিয়ার সাথে যোগাযোগ করতে না পেরে ওর যেন দম বন্ধ হয়ে আসছে। ও তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করে আট দিনের দিন বাড়ি ফিরে আসে।
এদিকে মারিয়া ও আরাফের সাথে কথা বলে ওর ও খুব কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু ওর বাবার জন্য চায়লেও যোগাযোগ করতে পারছে না। আর ওর বাবার তো সত্যি ই কোনো দোষ নেই। আরাফের বাবা যদি ওর বাবাকে এভাবে অপমান না করতো তাহলে তো এসব কিছু ই হতো না। আর ওর বাবা ও সুস্থ থাকতো। এটা ভেবে আবার মারিয়ার আরাফের উপর ভিষণ রাগ ও হচ্ছে। তাই ও ঠিক করে নেই ওর যতই কষ্ট হোক ও আর আরাফের সাথে কোন রকম যোগাযোগ করবে না।
কিন্তু যতই বলুক। মন তো আর মুখের কথা শোনে না। তাই মারিয়া ও সব সময় মন খারাপ করে থাকে। ও যেন এইকয়দিনে হাসতেই ভুলে গেছে।
এদিকে আরাফ দেশে ফিরে আগে বাড়ি না যেয়ে মারিয়ার খোঁজে যায়। মারিয়া তো ফোন ধরছে না। তাই ও বাড়ি নাকি ভার্সিটি সেটাও তো ও জানে না। তাই ও প্রথমে ভার্সিটিতে যায় ওকে খুজতে।
আরাফ সেখানে যেয়ে মারিয়ার ক্লাস রুম। ক্যামপাস সব জায়গায় খোজ করে কিন্তু পাই না। তখনই ওদিনা কে দেখতে পাই একা একা ভার্সটি থেকে বের হচ্ছে।
আরাফ দৌড়ে ওর কাছে যায়। ওকে এভাবে আসতে দেখে দিনা খুব অবাক হয়।
আরাফ যেয়েই ওকে জিজ্ঞেস করে।
_ দিনা তুমি একা কেন। মারিয়া কোথায়। আমি আজ সাত দিন ধরে ওকে ফোন করছি ও আমার ফোন ধরছেই না।
_ এতোকিছুর পরেও ও আপনার ফোন রিসিভ করবে এটা আপনি কি করে ভাবছেন ভাইয়া। (আসলে দিনা সবকিছু জানে ওদের কথা। সেদিনা যা হয়েছিল)
_ তারমানে! কি বলছো তুমি এসব। আমি তো কিছু ই বুঝতে পারছি না।
_ আপনি সত্যি ই কিছু জানেন না।
_ নারে বাবা। আমি তো আজই ফিরলাম আর এসেই এখানে এলাম মারিয়ার খোঁজে।
আরাফের কথা শুনে দিনা ওকে সব বললো যে সেদিন কি কি হয়েছিল আর ওর বাবার এসব অপমানের জন্য মারিয়ার বাবা ও অসুস্থ হয়ে পড়ছে সেটাও বললো,
সব শুনে আরাফ যেন খুব বড় শক খেলো। ও ভাবতে পারছে না ওর বাবা এসব। ছি! তাহলে সেদিন উনার কথাগুলো সব মিথ্যা ছিলো। ও আর ভাবতে পারছে না। ও তাড়াতাড়ি ওখান থেকে বেরিয়ে গাড়ি নিয়ে সোজা মারিয়াদের বাড়িতে আসলো। এসে ওকে ডাকতে শুরু করলো।
আরাফের কথা শুনে মারিয়া ওর ঘর থেকে বেরিয়ে আসলো সাথে ওরআবাবা মা ও।
আরাফ কে দেখে ওর বাবা বললো,
_ তুমি ই আরাফ।
_ জি আংকেল।
_ তা এখানে কি চায়। এতোকিছুর পরেও।
_ আংকেল আমি জানি না আমার বাবা আপনাকে এসব কেন বললো, আমার বাবা তো আমাদের দুজনের বিয়ের কথায় রাজি হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ করে কি এমন হলো বুঝতে পারছি না। কিন্তু আমার বাবা মা মানুক আর না মানুক আমি মারিয়াকে হারাতে পারবো না। প্লিজ আংকেল আমার বাবার হয়ে আমি আপনার কাছে ক্ষমা চায়ছি। তবু্ও মারিয়াকে আমার কাছ থেকে আলাদা করবেন না। প্লিজ।
_ সরি। এটা সম্ভব নয়। তুমি চলে যাও এখান থেকে।
_ আংকেল প্লিজ আমাকে ফিরিয়ে দেবেন না। আমার বাবা মা যদি ওকে মেনে না ও নেয় তবে ওকে নিয়ে আমি আলাদা হয়ে থাকবো। বিশ্বাস করুন কোনো কষ্ট পেতে দেবো না ওকে।
_ কিন্তু আমি চায় না তুমি আমার মেয়ের কারণে তোমার পরিবার থেকে আলাদা হও। তারচেয়ে ভালো তুমি ওকে ভুলে যাও।
_ ভুলে যাবো! এটা বলা যতোটা সহজ ভুলে যাওয়া টা এতোটা সহজ নয়।
আমি তো মারিয়ার কাছ থেকে শুনেছিলাম যে আন্টি কে ও আপনি ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন। আর উনার বাবা মা রাজি ছিলো না বলে আপনারা পালিয়ে এসেছিলেন। আমরা তো সেরকম কিছু করছি না। আমরা তো আপনাদের অনুমতি নিয়ে আমাদের নতুন জীবন শুরু করতে চায়ছি।
আপনি আজ নিজেকে একজন বাবা নয়। যে অবস্থানে থেকে আপনি আন্টি কে নিয়ে পালিয়ে এসছিলেন আজ আবার নিজেকে সেখানে দাড় করিয়ে বলুন তো আমরা কি ভুল করছি।
আরাফের এ কথা শোনার পর মারিয়ার বাবা কি উত্তর দিবে ভেবে পাচ্ছে না। সত্যি ই তো সেদিন মহিনী কে পাওয়ার জন্য কোন কিছু না ভেবেই পালিয়ে এসেছিলো। আর মহিনী ও নিজের পরিবার ছেড়ে শুধু মাত্র ভালোবাসার জন্য ওর হাত ধরে চলে এসেছিলে।
ওরা ও জানে যে ভালোবাসার জন্য কোন বাধা মানে না। তাহলে আজ কিভাবে ওরা তাদের মেয়ের ভালোবাসার মাঝে বাধা হয়ে দাড়াবে। কিসের জন্য শুধু মাত্র আত্নসম্মানের জন্য। নিজের মেয়ের ভালোবাসার চেয়ে নিজের সম্মান আজ তার কাছে বড় হয়ে গেলো। অথচ। একদিন সে নিজেই অন্য এক বাবার সম্মান ধুলোয় মিশিয়ে দিয়ে তার মেয়েকে নিয়ে পালিয়ে এসেছিলো। তাহলে আজ কেন সে তার মেয়ের ভালোবাসা মেনে নিতে পারছে না। তাছাড়া তার মেয়ে তো তার বিরুদ্ধে কিছু ই করে নি বরং তার অনুমতি চায়ছে। কি করা উচিৎ তার সে ভেবে পাচ্ছে না।
ঘরের এককোণে নিরব দর্শক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে আর চোখের পানি ফেলছে মারিয়া। তার ও যে কিছু বলার নেই। একদিকে নিজের ভালোবাসা অন্য দিকে বাবার সম্মান। কোনটা বাঁচাবে সে।
পুরো ঘর জুড়ে নিরাবতা বয়ছে কারো মুখে কোন হাসি নেই। আছে শুধু ই শোকের আভাস।
সব নিরাবতা ভেঙে আরাফের দিকে তাকিয়ে মারিয়াই কথা বলে উঠলো…….
পর্ব ৮
_ আরাফ, আপনি প্লিজ এখান থেকে চলে যান।
_ ওয়াট। কি বলছো তুমি এসব। তুমি চাও না যে আমাদের বিয়েটা হোক। পারবে তুমি আমাকে ভুলতে।
_ দেখুন, আমি জানি যে আপনি আমাকে কতোটা ভালোবাসেন। আর আমি ও আপনাকে খুব ভালোবাসি। তাই চায়লেই কখনো আপনাকে ভুলতে পারবো না। আর না তো কখনো আপনার জায়গায় অন্য কাউকে বসাতে পারবো। কিন্তু আমি আমার বাবা মাকে ও খুব ভালোবাসি। তাই ওদের বিরুদ্ধে গিয়ে আমি আপনাকে বিয়ে করতে পারবো না। পৃথিবীতে সবার ভালোবাসা পূর্ণতা পায় না।
আরাফ, হয়তো আমাদের ভালোবাসা ও পাবে না। মেনে নিন না যে এটা হয়তো আমাদের ভাগ্যে লেখা ছিলো। দূরে থেকে ও ভালোবাসা যায়। আমরা এক হতে পারলাম না তো কি হয়ছে। দূর থেকে না হয় একজন আরেকজন কে ভালোবেসে যাবো।
কিন্তু তবুও আমাদের জন্য তো আর কাউকে কষ্ট পেতে ও হবে না। আর না তো কেউ কারো কাছে ছোটো হবে। এটাই বা কম কি বলুন।
আমাদের সুখের কথা এরা কেউ ভাবছে না তো কি হয়েছে? আমরা তো এদের সম্মানের কথা ভেবেছি।
আপনি আমি এক না হয়ে আলাদা হয়ে গেলে তাতে আমাদের বাবা মা খুশি হয় তাহলে তো আমাদের আলাদা হয়ে যাওয়ায় ভালো। তাই না বলুন।
তাই আমাদের ভালোবাসার কসম আপনাকে।প্লিজ। এখান থেকে চলে আর কোনো দিন ও এখানে আসবেন না। প্লিজ।
_ মারিয়া!
_ প্লিজ। আরাফ। আপনি চলে যান এখান থেকে।
_ বেশ, আমি তোমার কথায় রাখবো। চলে যাচ্ছি আমি আর কখনো ভালোবাসার দাবি নিয়ে তোমার সামনে আসবো না। বাই। ভালো থেকো।
বলে চোখের পানি মুছতে মুছতে আরাফ বেরিয়ে যাবে তখনই মারিয়ার বাবা ওকে পিছন থেকে ডাক দেয়।
_ দাড়াও।
উনার কথা শুনে আরাফ দাঁড়িয়ে যায় আর পিছন ফিরে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে উনার দিকে তাকায়।
তারপর মারিয়ার বাবা বসে থেকে উঠে প্রথমে মারিয়ার দিকে এগিয়ে যায় আর বলে,
_ নিজের ভালোবাসা বির্সজন দিয়ে বাবা মায়ের কাছে মহান হতে চায়ছিস মা। এতোটা পাষাণ মনে হয় তোর আমাকেে যে আমি আমার একমাত্র মেয়েকে সারাজীবন কষ্টের সাগরে ভাসিয়ে দিবো। ওরে এতোটা খারাপ আমি নয় রে মা।
আমি কখনো চায়নি তোদের সম্পর্কের মাঝে বাঁধা সৃষ্টি করতে শুধু মাত্র ওর বাবার কথায় আমি পিছিয়ে এসেছিলাম। এছাড়া আর কি বা করতাম আমি বল মা।
কিন্তু আমি এতোটাও পাষাণ না। যে আমার মেয়ে আমার সামনে এভাবে কষ্ট পাবে সেটা আমি চেয়ে চেয়ে দেখবো।
আমি যে তোকে খুব ভালোবাসি মা। তোর কষ্ট আমি দেখতে পারবো না। আমি জানি তুই যতই মুখে এসব বলিস না কেন। আরাফ কে ছেড়ে তুই থাকতে পারবি না। এটা আমি খুব ভালো করেই বুঝতে পেরেছি মা।
তাই আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আরাফ। বাবা এদিকে এসো।
মারিয়ার বাবার কথায় আরাফ এগিয়ে এসে ওদের পাশে দাড়ায়। তারপর মারিয়ার বাবা মারিয়ার হাতটা আরাফের হাতের উপর দিয়ে বলে,
_ আমি আমার মেয়ে কে আজ তোমার হাতে তুলে দিলাম। আমি জানি তুমি ওকে খুব ভালো রাখবে সেই ভরসা তেই নিঃ সংকোচে আমি আমার জানটা আজ থেকে তোমার কাছে দিলাম। দোয়া করি তোমরা খুব সুখি হও।
তারপর কিছু সময় থেমে একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে মারিয়ার বাবা আবার বলতে শুরু করে।
_ তুমি মারিয়াকে নিয়ে যাও। আর আবার সেদিনই তোমরা আমাদের কাছে ফিরে আসবে যদিন তোমার বাবা মা তোমাদের মন থেকে মেনে নেবে। তার আগে নয়।
একথা শুনে ওরা দুজনই সহ মারিয়ার মা ও অবাক চোখে উনার দিকে তাকিয়ে থাকে।
_ আব্বু। কি বলছো তুমি এসব! আমি তোমাদের ছেড়ে! যদি উনারা কোনোদিন মেনে না নেয়। না! আমি পারবো না তোমাদের কে ছেড়ে থাকতে।
_ হ্যা সত্যি ই তো তুমি এসব কি বলছো। ও আমাদের একমাত্র মেয়ে। ওকে ছাড়া আমরা কিভাবে থাকবো। যদি উনারা সত্যি ই মারিয়াকে মেনে না নেয়।
_ আন্টি। প্লিজ আপনি এভাবে কাদবেন না। আমার বিশ্বাস আমার বাবা যতই মুখে এসব বলুক না কেন। আমার বিশ্বাস একদিন ঠিক উনি আমাদের কে মেনে নেবে। বেশি দিন রাগ করে থাকতে পারবে না।
মারিয়া তুমি আমার উপর ভরসা রাখতে পারো। আমি বলছি সব ঠিক হয়ে যাবে। আপনার কথা আমি মেনে নিলাম আংকেল। আমি সেদিনই মারিয়াকে নিয়ে আপনার সামনে আসবো যদিন আমার বাবা আমাদের কে মেনে নেবে।
_ কিন্তু আমি পারবো না আমার আব্বু আম্মু কে ছেড়ে থাকতে।
_ মারিয়া মা। দেখ সব সময় সবকিছু সবদিক থেকে পরিপূর্ণ হয় না। তোকে ছেড়ে থাকতে আমাদের ও খুব কষ্ট হবে। কিন্তু আমি যে নিরুপায় মা। তুই কি চাস যে কেউ তোর বাবার দিকে আংগুল তুলুক।
_ না বাবা
_ হুম। ঠিক তেমনি আমি ও চায় না তুই তোর ভালোবাসা কে বির্সজন দিস। ভালোবাসার কাছে যতো বাধায় আসুক না কেন। সেটা অতিক্রম করতে হয়। পিছিয়ে আসতে নেই। আমাদের কথাই ভাব তোর মাকে যখন আমি নিয়ে এসেছিলাম কেউ মেনে নেয় নি আমাদের কিন্তু পরে কিন্তু ঠিক ই মেনে নিয়েছে। সেজন্য ই আজ আমি তোদের কে এভাবে যেতে বলছি। কারণ আমার ও বিশ্বাস আরাফের বাবা মা তোকে একদিন ঠিক মেনে নেবে। আমার মেয়েটা যে এরকম সে সবার মন জয় করতে সক্ষম। তোর থেকে মুখ ঘুরিয়ে কেউ বেশিদিন থাকতে পারবে না মা। আমি জানি তুই ঠিক পারবি ওদের মন জয় করতে।
আমি তোকে অনুমতি দিচ্ছি তুই তোর ভালোবাসার মানুষের সাথে যা মা। আর দোয়া করি তোরা যেন খুব ভালো থাকিস।
_ আব্বু
মারিয়া ওর বাবা মাকে জড়িয়ে ধরে অনেকক্ষণ কাদলো। তারপর অবশেষে ওরা বাবা মার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসলো।
আরাফ আগে থেকে বন্ধু দের বলে দিয়েছে তাই ওরাও বিয়ের সব ব্যবস্তা করে রেখেছে।
তারপর আরাফ মারিয়াকে নিয়ে কাজী অফিসে যায়। যাখানে আগে থেকে ই নিলীম। রায়হান সহ আরাফের সব বন্ধু রা উপস্থিত ছিল। আর মারিয়া যেতে যেতে দিনাকে ও বলে ছিলো।এজন্য দিনা ও সেখানে চলে আসে কারণ তার বেস্টুর বিয়ে। আর সে থাকবে না তা কি হয়।
তারপর ওরা ওখানে পৌঁছায়। এবং সুষ্ঠু ভাবে ওদের বিয়ে সম্পন্ন হয়।
আর আরাফ এবং মারিয়া দিনা আর আরাফের বন্ধু দের থেকে বিদায় নিয়ে সোজা আরাফ দের বাড়িতে আসে।
আরাফের বাবা মা তখন ড্রয়িং রুমে বসে ছিলো।
তখনই আরাফ কে এভাবে মারিয়াকে সাথে করে নিয়ে আসতে দেখে খুব অবাক হয় সাথে আরাফের বাবা খুব রেগে ও যায়। তারপর উনি আরাফ কে উদ্দেশ্য করে বলে,
_ এসব কি আরাফ এই মেয়েটা এইভাবে এখানে নিয়ে এসেছো কেন আর তুমি দেশেই বা কখন ফিরলে। কই আমাকে তো কিছুই বলোনি।
_ তোমার সব কথার উত্তর আমি দেবো। তার আগে এটা বলি যে মারিয়াকে আমি এভাবে এখানে নিয়ে এসছি কারণ আমি ওকে বিয়ে করেছি। আর বিয়ের পর মেয়েরা তার স্বামীর সাথে শশুড় বাড়িতে ই আসবে সেটা সাভাবিক। তাই না।
_ ওয়াট! তুমি ওকে বিয়ে করেছো মানে।
_ এভাবে রিয়েক্ট করছো কেন বাবা। আমি তো তোমাকে বলেইছিলাম যে আমি ওকে ভালোবাসি তাহলে এতোটা হাইপার হচ্ছো কেন। আর তুমি ও তো বলেছিলে যে তোমার কোনো আপত্তি নেই তাহলে।
_ তাই বলে তুমি ওকে এভাবে বিয়ে করবে এটা আমি মেনে নেব তুমি ভাবলে কি করে?
_ এভাবে বিয়ে করেছি বলে তোমার সমস্যা নাকি তুমি ওকে মানতেই পারো নি। তুমি চাওই না যে আমি ওকে বিয়েটা করি সেজন্য।
_ তারমানে।
_ হুহহ। আর মিথ্যা বলে লাভ নেই আব্বু। তুমি ওর বাবাকে যা যা বলেছো সবটাই আমি শুনেছি।
_ ও এখন আমাদের থেকে ওই মেয়েটা তোমার কাছে বেশি ইম্পরট্যান্ট হলে গেল যে ওরা যেটা বলেছে সেটা তুমি বিশ্বাস করবে।
_ ওরা আমাকে কিছু বলে নি বাবা। আমি নিজে থেকে ই জেনে। এখন তুমি বলতো আমি যা শুনেছি সেগুলো সত্যি কিনা।
_ হ্যা, সত্যি। আর আমি এখনো বলছি এই মেয়েটা ভালো না। তুমি একটা খারাপ মেয়ের পাল্লায় পড়েছো আরাফ। আমি কখনো এই মেয়েকে এ বাড়ির বউ হিসেবে মেনে নেব না। তাই বলছি ওকে চলে যেতে বলো।
মারিয়া শুধু এসব শুনছে আর চোখের পানি ফেলছে।
_ সরি আব্বু। ও কোথাও যাবে না। ও শুধু এখন আমার ভালোবাসাই নয় বরং আমার বিবাহিতা স্ত্রী। আর কি বললে ও খারাপ মেয়ে। ওকে আমি খুব ভালো করেই চিনি। আর নিজের থেকেও বেশি বিশ্বাস করি। তুমি না জেনে এসব বলতে পারো না।
_ তারমানে তুমি আমার কথা শুনবে না। আমাদের থেকে ওই মেয়েটা তোমার কাছে বেশি বড় হয়ে গেলো।
_ আব্বু তুমি কিন্তু আমাকে ভুল বুঝচ্ছো। তোমরা যেমন আমার বাবা মা ও তেমনি আমার বউ। তোমরা সবাই আমার কাছে সমান ইম্পরট্যান্ট। আমি ওকে ছাড়তে পারবোনা।
_ ওকে বেশ তাহলে তুমি ও এ বাড়ি ছেড়ে চলে যাও। আজ থেকে আমি জানবো আমার কোনো ছেলে নেই।
_ আব্বু!
_ এসব তুমি কি বলছো। ও এ বাড়ি থেকে চলে যাবে মানে। কেন বলছো এসব। মেনে নাও না ওদের।
_ কখনো না। এই মেয়েকে আমি কখনোই মেনে নেবো না। তোমার ছেলে কে বলে দাও ও যদি কখনো ওই মেয়ে কে ছাড়তে পারে সেদিন ই ওর এই বাড়িতে জায়গা হবে আর নয়তো চির দিনের জন্য এ বাড়ির দরজা ওর জন্য বন্ধ।
_ ওকে। বেশ। আমি চলে যাচ্ছি। আসবো না আর তোমার বাড়ি।
_ এসব তুই কি বলছিস বাবা। মাকে ছেড়ে চলে যাবি। তোর কষ্ট হবে না।
_ আমি তো যেতে চায় নি মা। বাবায় তো আমাকে চলে যেতে বললো,
_ ওগো। তুমি কিছু বলো না দেখো ও চলে যাচ্ছে ওকে আটকাও। এই আরাফা। বোঝানা মা তোর বাবা কে দেখ তোর ভাই চলে যাচ্ছে।
_ বাবা। তুমি কেন এমন করছো। মেনে নাও না ওদের।
ওদের কে দেখে মারিয়ার ও খুব খারাপ লাগছে ওর মনে হচ্ছে যা হচ্ছে সব কিছুর জন্য ও দায়ী। তাই ও বললো,
_ কাউকে কোথাও যেতে হবে না। আমার জন্য ই যখন সব হচ্ছে আমিই চলে যাচ্ছি। আমার জন্য আপনাকে নিজের বাবা মাকে ছেড়ে থাকতে হবে না আরাফ।
_ মারিয়া! কি সব বলছো। তুমি জোর করে এখানে আসো নি। আমি নিয়ে এসছি তোমায়। তাই এ বাড়ি তে তোমার যখন কোনো জায়গা নেই আমি ও চায় না এ বাড়ি থাকতে। চলো এখান থেকে।
_ আরাফ। বাবা পাগলামি করিস না। তোর বাবা তো রাগের মাথায় এসব বলছি। একটু পরে আবার রাগ পড়ে গেলে দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে। তুই চল তো ভিতরে চল।
_ আমি রাগের মাথায় বলিনি যা বলেছি ঠান্ডা মাথায় ভেবে চিন্তেই বলেছি। এই মেয়েকে আমি এ বাড়ি তে জায়গা দেব না। আর তোমার ছেলে যদি ওকে ছাড়তে না পারে তাহলে ওর ও এখানে কোনো জায়গা নেই।
_ দেখলে তো মা। এবার কি বলবে। ভালো থেকো তুমি আর নিজের খেয়াল রেখো। আসি।
_ ভাই
_ আসছি আপু। মায়ের খেয়াল রাখিস। বাই। বাই মা।
বলে চোখের পানি মুছে মারিয়াকে নিয়ে বেরিয়ে এলো। তারপর নিলীম কে ফোন করে সব বললো,
নিলীম ওর অন্য বন্ধু দের সাথে নিয়ে ওদের থাকার জন্য একটা ঘর ঠিক করলো।
আরাফ মারিয়াকে নিয়ে সেখানে যায়ে উঠলো। ওরা বন্ধু রা ওদের রাতের খাবার টা ও কিনে দিয়ে ওদের কে বুঝালো যেন ওরা ভেঙে না পড়ে। ওরা সবাই ওদের সাথে আছে। কোনো অসুবিধা হবে না ওদের। তারপর ওরা আবার সকালে আসবে বলে ওদের থেকে বিদায় নিয়ে ওখান থেকে চলে আসে।
ওরা চলে আসার পর মারিয়া যেয়ে আরাফের পাশে বসে আর বলে,
_ খুব কষ্ট হচ্ছে আপনার তাই না। আজ আমার জন্য আপনাকে আপনার বাবা বাড়ি থেকে বের করে দিলো।
_ মারিয়া। তুমি আবার এসব বলছো। তুমি ও তো আমার জন্য নিজের পরিবার ছেড়ে এসেছো। তাহলে আমি কেন পারবো না। এসব নিয়ে একদম মন খারাপ করবে না। দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে। কোনো কষ্ট পেতে দেবো না আমি তোমায়। এখন শুধু একটা চাকরি ম্যানেজ করতে হবে।
সেদিন এভাবে কেটে যায়। পরের দিন সকালে আবার ওর বন্ধু রা সকালের খাবার সাথে করে নিয়ে ওদের বাসায় আসে।
আরাফ তা দেখে বলে,
_ আমাদের জন্য তোদের ও বড্ড অসুবিধায় ফেলে দিলাম তাই না রে।
এটা শুনে রায়হান তো রেগে গিয়ে বলে,
_ শালা আর একবার একথা বললে না। তোর কি অবস্থা করবো তুই ভাবতে ও পারবি না।
_ হ্যা, রায়হান ঠিক বলেছে। আরে তুই এসব কি বলছিস রে ভাই। ছোট থেকে আমরা একসাথে বড় হয়েছি। আমরা শুধু বন্ধু ই নয়। আপন ভাইয়ের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। আর ভাই হয়ে ভাই য়ের জন্য এগুলো করবো না তা কি করে হয় বলতো।
_ সত্যি তোদের মতো বন্ধু পেয়ে আমি খুব লাকি। আজ যদি তোরা না থাকতিস তাহলে কি যে হতো।
এবার নিলীম বলে ওঠে।
_ ধুর মিয়া এসব বাদ দে তো। আচ্ছা শোন তোকে চাকরির জন্য ও কোনো টেনশন করতে হবে না। আমি আমার ভাইয়া কে বলে সব ব্যবস্তা করে রেখেছি। ভ্যাগিস কাল কথা টা ভাইয়া তুলেছিলো। কাল এখান থেকে যেয়ে শুনি ভাইয়া বলছে ওর অফিসে লোক নিবে। ভালো পদ। সেলারি ও ভালো। তাই আমি তোর কথা বলেছি। আর ভাইয়া ও রাজি। ভাইয়া বলেছে সব ব্যাবস্তা ভাইয়া করে রাখবে তুই শুধু কাল থেকে জয়েন করবি।
একথা শুনে আরাফ মারিয়া দুজনেই খুব খুশি হয়।
_ _ সত্যি ই তোরা না থাকলে আমি এতোটা এগোতে পারতাম না রে।
_ আরে মামা। এখন এসব চিন্তা বাদ দিয়ে বউয়ের সাথে চুটিয়ে প্রেম করতো তো। যেন বছর না ঘুরতেই সু সংবাদ এসে যায়।
রায়হানের কথা শুনে সবাই হেসে উঠলো। মারিয়া তো লজ্জায় শেষ।
এভাবে ওদের সময় গুলো এবার খুব ভালো ভাবে কেটে যাচ্ছে। দুজনের ভিতরেই নিজের পরিবার কে ছেড়ে থাকার কষ্ট টা আছেই। তারপর ও এতো কিছু পার করে যে ওরা এক হতে পেরেছে এটা নিয়ে ওরা খুশি।
আর এই খুশির মুহুর্ত গুলো ও যেন তাড়াতাড়ি পার হয়ে যায়। দেখতে দেখতে ওদের বিয়ের ও এক বছর পূর্ণ হয়ে যায়।
পর্ব ৯
আর এই একবছরে আরাফ বা মারিয়ার ওদের পরিবারের সঙ্গে কোনদিন দেখা ও হয় নি। তবে মারিয়ার সাথে ওর মার প্রায় কথা হয় কিন্তু বাবার সাথে হয় না।
এই এক বছরে মারিয়ার বাবা অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছে। প্রয়োজন ছাড়া কারো সাথে কোন কথা বলেন না। সব সময় চুপচাপ থাকেন। আর বাড়িতে যেটুকু সময় থাকেন মারিয়ার ছবির দিকে তাকিয়ে বসে থাকেন।
মারিয়ার মা অনেক দিন উনাকে মারিয়ার সাথে কথা বলার জন্য বলেছেন। কিন্তু উনি বলেন না। উনার মনে হয় উনি যেভাবে আছেন নিজেকে শক্ত করে এভাবে থাকতে পারবেন। কিন্তু মারিয়ার সাথে কথা বললে উনি আর নিজেকে আটকে রাখতে পারবেন না। কারণ উনার মেয়ে যে উনার প্রাণ।
কিন্তু উনি ও যে নিরুপায়। তার যে কিছু ই করার নেই এ ছাড়া তবে উনি মারিয়ার সাথে কথা না বললে ও ওর খোঁজ ঠিকই রাখেন। আর এটা ভেবে নিজেকে সান্তনা দেন যে। তার মেয়ে নিজের ভালোবাসা কে আপন করে পেয়ে তো সুখি আছে। এটাই বা কম কিসে। উনি ও যে এটাই চায় যে মারিয়া খুশি থাকুক।
মারিয়া ও আরাফের সাথে সত্যি ই খুব ভালো আছে। আরাফ ওর কথা রেখেছে। ও মারিয়াকে আজ অবধি কোনো কষ্টের আচ ও পেতে দেয় নি। ভালোবাসা দিয়ে ভরিয়ে দিয়েছে ওর জীবন।
কিন্তু কথায় বলে না বেশি সুখ বেশি দিন থাকে না। ওদের ও ঠিক তাই হয়েছে।
ওদের প্রথম বিবাহ বার্ষিকী তে আরাফ খুব বড় না হলেও বেশ জমজমাট অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। ও ওর সব বন্ধু সহ অফিসের স্টাফ দের ও ইনভাইট করে সাথে ও আরো একজন ইনভাইট করে যার সাথে ওদের কোম্পানির নতুন ডিল সাইন হয়েছে আর আরাফের সাথে খুব ভালো বন্ধুত্ব ও তৈরি হয়েছে।
আর সেই বাক্তি হলো আর কে কোম্পানির মালিক রাজ খান। আরাফেরই সমবয়সী। দেখতে ও সুন্দর। কিন্তু সভাব টা নোংরা টাইপ।
পাঠক আপনাদের জন্যই আমরা প্রতিনিয়ত লিখে থাকি। আপনাদের আনন্দ দেয়াই আমাদের প্রধান লক্ষ। তাই এই পর্বের “খুনশুটি প্রেম” এর গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো পড়া শেষে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।
যাই হোক, সেইদিন অনুষ্ঠানে এসে মারিয়া কে দেখে ওর তো পাগল হয়ে যায় যায় অবস্থা। যদিও আরাফ কে ও এসব বুঝতে দেয় নি কিন্তু ও মনে মনে মারিয়া কে কিভাবে নিজের করা যায়। ওখান থেকে ফিরে আসার পর থেকে ও সেই ছক তৈরি করতে থাকে। ও সেদিন লুকিয়ে মারিয়ার কয়েকটা ছবি ও তুলে নেয়।
সেদিনের পর থেকে মারিয়া যেন ওর চোখের ঘুম কেড়ে নিয়েছে। সারাক্ষণ শুধু মারিয়ার কথায় ভাবে।
সেদিন ও ওর অফিসে নিজের কেবিনে বসে মারিয়ার ছবি বের করে দেখছিলো আর ওর কথা ভাবছিলো। ঠিক সেই সময় ওর কেবিনে একটা মেয়ে আসে আর সেই মেয়েটি আর কেউ নয়। সে হলো রুবা। (হুম রুবার সাথে রাজের খুব ভালো সম্পর্ক। যেহেতু দুজনই একই মানসিকতার মানুষ। আর কোন এক ক্ষেত্র বিশেষে রাজের সাথে রুবার খুব ভালো বন্ধুত্ব হয়ে যায়। আর তারপর থেকেই ওরা খুব ইজিলি একে অপরের সাথে মেলামেশা করে)
আর আজ রুবা রাজের অফিসে এসে ওর কেবিনে যেয় দেখে রাজ একধ্যানে ফোনের দিকে তাকিয়ে কি যেন দেখছে। রুবা যে ওর কেবিনে ঢুকেছে সেদিকে ওর কোনে খেয়াল ই নেই।
তাই রুবা ও রাজ কে না ডেকে কৌতুহল বসতো ও কি এতো দেখছে দেখার জন্য রাজের পিছনে যেয়ে ওর হাত থেকে ফোন টা কেড়ে নেয়। এবার রাজের হুস হয়৷ ও রুবার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে বলে,
_ আরে রুবা তুমি কখন এলে?
_ এসেছি অনেক সময় কিন্তু তোমার তো অন্য দিকে কোনো খেয়ালই নেই ফোনের মধ্যে ঢুকে গেছো। তাই তোমার ফোন টা কেড়ে নিলাম। তা মশাই এবার আমি ও একটু দেখি যে তুমি ফোনে এতো কি দেখাতে বিভোর ছিলে দেখি।
বলে রুবা ফোনের স্কিনে তাকিয়ে মারিয়ার ছবি দেখে বড় শড়ো একটা শক খায়।
_ আরে মারিয়া! তুমি মারিয়ার ছবি দেখছিলে। এর ছবি তুমি কোথায় পেলে রাজ।
_ মানে। তুমি ও মারিয়াকে চেনো।
_ ওকে চিনবো না আবার। ওর জন্য ই আমি আমার ভালোবাসা কে হারিয়ে ছি।
_ ওয়াট। তারমানে মারিয়ার স্বামী। মানে এই আরাফ ই তোমার সেই আরাফ।
_ হ্যা (আসলে রুবা যে আরাফ কে ভালোবাসতো এটা রাজ জানে)
রুবার কথা শুনে রাজের মাথায় একটা বড়সড় প্ল্যান আসলো।
_ আরেবাজ! তাহলে তো ভালোই হলো রুবা। আমরা তো এবার দারুণ একটা কাজ করতে পারি যাতে তুমি তোমার ভালোবাসা পেতে পারো আর আমি ও আমার ভালোবাসা নিজের করে পাবো।
_ মানে।
_ মানে টা হলো তুমি যেমন আরাফ কে ভালোবাসো। তুমি চাও যে ও যেন তোমার হয়। তেমনি আমিও মারিয়াকে ভালোবাসি। ওকে নিজের করে পেতে চায়। সো তার জন্য আমার কাছে একটা প্ল্যান আছে যাতে করে আমাদের দুজনেরই লাভ।
_ মানে। কি বলছো আমি বুঝতে পারছি না
_ পারবে পারবে।সব বুঝতে পারবে। তুমি শুধু আমি যা বলবো তাই করবে।
_ কি করতে চায়ছো তুমি বলোতো।
_ আরাফ মারিয়াকে অনেক ভালোবাসে তাই না। ওর মন থেকে মারিয়ার জন্য এই যে ভালোবাসা টা এটা ঘৃণায় পরিণত করতে হবে। আরাফের চোখে মারিয়াকে খারাপ বানাতে হবে। ব্যাস এক বার আগুন টা লাগাতে পারলে না ওরা দুজন আলাদা হয়ে যাবে আর আমাদের উদ্দেশ্য ও সফল হবে। তার জন্য আমি যা বলবো তুমি শুধু তাই করবে।
_ তুমি শুধু কি করতে হবে তাই বলো। আরাফ কে পাওয়ার জন্য আমি সব করতে রাজি আছি।
_ ওকে তাহলে শোনো….
_ ওকে বেবি। ডোন্ট ওয়ারি কাজ হয়ে যাবে।
এবার দেখি ওদের এই ভালোবাসা কতোদিন থাকে।
পর্ব ১০
রাজের কথা মতো কাজে লেগে পড়ে রুবা। ওর যে আরাফ কে চায় ই চায়। তারজন্য ও সব কিছু করতে রাজি।
পরেরদিন সকালে আরাফ অফিস চলে যাওয়ার পর মারিয়া মার্কেটে যায় ওর কিছু কেনাকাটা করার আছে তাই।
রাজ ও তখন ওই পথ দিয়েই আসছিলো ও মারিয়াকে এখানে দেখে খুব খুশি হলো এবং ওর দিকে এগিয়ে গেলো।
_ আরে মারিয়া। কেমন আছো।
পিছনে কারো কণ্ঠ শুনে ও পিছনে ফিরে দেখে সেদিনের সেই লোকটা যাকে আরাফ ইনভাইট করেছিলো। মারিয়া ও সৌজন্যতার জন্য বললো,
_ জী। ভালো। আপনি কেমন আছেন।
_ এই তো ভালোই। তা সপিং করতে এসছিলে বুঝি।
_ হ্যা, আর হয়ে ও গেছে। এখন বাসায় যাবো।
_ ওওওও। আচ্ছা কিছু মনে না করলে একটা রিকুয়েস্ট করবো।
_ জী বলুন।
_ আসলে আমার একটা গিফট কেনার ছিলো মেয়েদের গিফট বাট আমি মেয়েদের ব্যপারে ভালো বুঝি না সো আপনি যদি একটু হেল্প করতেন। যদি একটা গিফট চয়েস করে দিতেন।
রাজের কথা শুনে মারিয়া খুব দো টানায় পড়ে গেলো। ওর যেতে ইচ্ছে করছে না তবুও না ও বলতে পারছে না। কি করবে বুঝতে পারছে না।
তা দেখে রাজ আবার বললো,
_ প্লিজ চলুন না।
বাধ্য হয়ে মারিয়া ওর সাথে গেল।
তারপর কেনা কাটা শেষে মারিয়া বাড়ি চলে গেলো। যদিও রাজ ওকে বাড়ি পৌঁছে দিতে চেয়েছিলো কিন্তু মারিয়া জোর করে একা চলে আসলো কারণ একদিনের পরিচয়েই রাজের এতো আদিক্ষেতা মারিয়ার একদম পছন্দ হচ্ছিল না। তাছাড়া আরাফ ও যদি খারাপ মনে করে।
এদিকে আরাফ অফিস থেকে ফেরার পথে রাস্তায় গোলাপ বিক্রি করতে দেখে গাড়ি থামিয়ে সেখানে যায় মারিয়ার জন্য গোলাপ কিনতে তখনই রুবা ওর সামনে আসে। এতোদিন পর আবার রুবা কে আরাফ খুব অবাক হয়।
রুবা ওর দিকে এগিয়ে বসে বলে,
_ কেমন আছো আরাফ।
_ তুমি! এখানে।
_ হ্যা এদিক দিয়েই যাচ্ছিলাম। এতোদিন পর তোমাকে এখানে দেখে ভাবলাম কথা বলে আসি। তা বউয়ের জন্য ফুল কিনছো বুঝি। তা মারিয়া কে তো দেখলাম সপিং মলে একটা ছেলের সাথে ঘুরে বেড়াচ্ছে। খুব ক্লোজ ভাবেই চলছিলো দুজনে। দেখে মনে হচ্ছিল হ্যাপি ক্যাপল।
_ রুবা। মুখ সামলে কথা বলো। সেদিনের চড়ের কথা ভুলে গেছো তাই না। মারিয়ার নামে আর একটা বাজে কথা বললে না আমি আবার নতুন করে মনে করিয়ে দেবো। এবার বুঝলাম এতোদিন পরে আবার কেন আমার সামনে আসলে। বাট তুমি যতই চেষ্টা করো না কেন আমাদের কে আলাদা করতে পারবে না। তাই ভালোই ভালোই চলে যাও এখান থেকে।
_ আমি জানতাম তুমি আমার মুখের কথা বিশ্বাস করবে না। এই দেখ আমার কাছে পিক আছে। বলে পিক গুলো বের করে ফোনটা আরাফের দিকে এগিয়ে দেয়।
দেখো। ছেলেটা কে আমি জানি না। কিন্তু মেয়েটা যে মারিয়া সেটা তো স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।
আরাফ খুব অবাক হয় পিক গুলো দেখে।সত্যি ই তো এটা মারিয়া। আজ সকালে ওর যে ড্রেস টা পরা ছিলো সেটাই পরা। আর তারচেয়ে অবাক হয় সাথে রাজ কে দেখে। রাজ ওর সাথে কি করছে! আর পিক গুলো ঠিক এমন ভাবেই তুলেছে দেখে মনে হচ্ছে ওরা দুজন খুব ঘনিষ্ঠ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
আসলে মারিয়া যখন গিফট চুস করছিলো ওর শুধু সেদিকেই নজর ছিলো। তাই রাজ যে ওর পিছনে খুব কাছে এসে দাড়িয়ে ছিলো আর রুবা দূর থেকে ওদের ছবি তুলছিলো এসব কিছু ই ওর ধারনার বাইরে ছিলো। কারণ ও তো এসব ভাবেই নি ব্যাপারটা এমন হবে।
আরাফ পিক গুলো দেখে কি বলবে বুঝতে পারছে না। তারপর ও রুবাকে আর কোনো কিছু না বলে সোজা ওখান থেকে চলে আসে। আরাফ চলে আসার পর রুবার পিছন থেকে রাজ বেরিয়ে আসে তারপর রাজ রুবা দুজন ই আরাফের যাওয়ার দিকে তাকে শয়তানি হাসি হাসতে থাকে।
এদিকে আরাফ বাড়ি এসে মারিয়াকে যে সে কোথায় গিয়েছিলো।
তা শুনে মারিয়া বলে যে সে ওর কিছু কেনাকাটা করতে গিয়েছিলো। আর ও আরাফ কে ফোন ও দিয়েছিলো কিন্তু আরাফ ফোন রিসিভ করে নি। আরাফ ফোন বের করে দেখে সত্যি ই মারিয়া ফোন দিয়েছিলো। কিন্তু মারিয়ার যে রাজের সাথে দেখা হয়েছিল এটা বলে না দেখে আরাফের কেমন সন্দেহ হয়। কিন্তু এই ভেবে বলে না যে আরাফ যদি রাগ করে। কিন্তু এই না বলা টা যে ওর জন্য কাল হয়ে দাড়াবে এটা ও নিজেও জানতো না।
তারপর আর আরাফ ও কিছু বলে না। এভাবে আরো একসপ্তাহ কেটে যায়। মারিয়ার শরীর টা ইদানীং খুব খারাপ লাগছে। কোন কিছু খেতে পারছে না। বমি হচ্ছে। মাথা ঘুরছে।
একদিন সকালে আরাফ অফিস চলে যাওয়ার পর দিনা আসে মারিয়ার সাথে দেখা করতে। ও আসার পর মারিয়ার শরীর খারাপ শুনে ওকে জোর করে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়। আজও যাওয়ার আগে মারিয়া আরাফ কে ফোন দিয়েছিলো। কিন্তু আরাফ মিটিং এ বিজি ছিলো এজন্য ফোন রিসিভ করে নি। বাধ্য হয়ে আজ ও আরাফ কে না বলে মারিয়া দিনার সাথে ডাক্তারের কাছে চলে যায়।
আর এদিকে সেদিন ছবি গুলো দেখার পর ও আরাফ মারিয়ার মধ্যে সবকিছু ঠিক আছে এটা দেখে রাজ আর রুবা আরো বড় প্ল্যান করে। এবার ওরা সবদিক থেকে ঠিক করেই মাঠে নামে। যাতে এবার আর ব্যর্থ না হয়।
অফিসে আরাফ মিটিং শেষ করে নিজের কেবিনে বসে ছিলো। তখনই ওর নামে একটা পার্সেল আসে। আরাফ পার্সেল টা হাতে নিয়ে ভাবছে যে এসময় ওর নামে পার্সেল কে পঠাবে।
ভাবতে ভাবতে ও পার্সেল টা খুললো ভিতরে কি আছে তা দেখার জন্য। কিন্তু ভিতরে যা আছে তা দেখে যেন ওর পার তলার থেকে মাটি সরে গেলো। ওর বুকের ভিতর যেন কেউ হাতুড়ি দিয়ে মারছে। ও ওর নিজের চোখ কে বিশ্বাস করতে পারছে না। না চায়তেও ওর চোখ দিয়ে অঝোরে পানি ঝরছে।
ও যেন বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে হাতে থাকা ছবি গুলো দেখে কারণ ছবিগুলো মারিয়ার আর রাজের অন্তরজ্ঞ মুহূর্তের ছবি। যগুলো রাজ আর রুবা মিলে এডিট করে বানিয়েছে। কিন্তু এই মুহুর্তে আরাফের মাথায় ওই কথা টা আসছে না যে ছবি গুলো এডিট করাও হতে পারে। ও এগুলো কে সত্যি ভেবে নিয়েছে।
বেশ কিছু ক্ষন এভাবে বসে থেকে রেগে আরাফ অফিস থেকে বেরিয়ে সোজা রাজয়ের অফিসে যায় আর ওর কেবিনে ঢুকে রাজের মুখের উপর ছবি গুলো ছুড়ে মারে।
রাজ ছবিগুলো দেখে ঘাবড়ে যাওয়ার নাটক করে বলে,
_ আরে আরাফ সাহেব। আ আ আপনি এইগুলা ক কি করে পেলেন।
_ তুই কি ভেবেছিস তুই আমার স্ত্রীর সঙ্গে এসব করে বেড়াবি আর আমি জানতে পারবো না।
বলে আরাফ রাজের কলার ধরে টেনে ওকে মারতে শুরু করলো।
_ তোর সাহস হয় কি করে!
_ আারে আরাফ সাহেব। আমার কথা তো শুনুন। দেখুন এখানে সাহসের কিছু নেই। আমি মারিয়াকে ভালোবাসি। আর আপনার স্ত্রী কে আপনি খুশি করতে পারেন নি তাই আমি ওকে আমার ভালোবাসা র কথা জানালে ও আমার কথায় রাজি হয়ে যায়। আপনি ওকে সেই সুখ দিতে পারেন নি যেটা আমি ওকে দিয়েছি এটা আপনার ব্যর্থতা আমার নয়। মারিয়া আর আমি এখন আমরা একে অপর কে খুব ভালোবাসি।
ও আপনার সাথে থাকতে চায় না। শুধু মাত্র আপনার জন্য আমরা এক হতে পারছি না। দেখুন ও যখন আপনাকে চায়ই না তখন আপনি কেন শুধু শুধু আমাদের মাঝে বাঁধা হয়ে আছেন বলুন তো তারচেয়ে ভালো আপনি আমাদের মাঝ থেকে সরে দাড়ান। তাহলে আমরা ও সুখে থাকবো।
রাজের কথা শুনে আরাফ যেন বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে ওর গলা দিয়ে আওয়াজ বের হচ্ছে না। কি বললো রাজ এগুলো মারিয়া আমার সাথে সুখি নয়। ও আর আমাকে চায় না। ওকে আমি সেই সুখ দিতে পারিনি যেটা রাজ ওকে দিয়েছে। আমার জন্য ওরা এক হতে পারছে না।
এতো ভালোবাসলাম ওকে আর ও আমার ভালোবাসার এই প্রতিদান দিলো।
না ও আর কিছু ভাবতে পারছে না। ও রাজ কে আর কিছু না বলে ওখান থেকে বের হলে গেল।
এদিকে মারিয়া দিনার সাথে হসপিটালে এসে টেস্ট করে রির্পোটের জন্য বসে আছে। প্রায় আধাঘন্টা পর ওকে আবার ডাক্তারের কেবিনে ডাক পড়লো।
ও দিনাকে সাথে নিয়ে ডাক্তারের কেবিনে ঢুকতেই ডাক্তার ওকে বললো,
_ কংগ্রাচুলেশনস মিসেস মারিয়া। আপনি মা হতে চলেছেন।
একথা শুনে মারিয়া কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। ও এতো খুশি হয়েছে যে বলে বোঝাতে পারবে না। খুশিতে ওর চোখে পানি এসে গেল।
তারপর ডাক্তার ওকে সাবধানে চলাফেরা করতে বললো এবং ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করতে বললো,
আরো কিছু পরামর্শ দিলো। তারপর হসপিটাল থেকে বের হয়ে দিনা কে বিদায় জানিয়ে ও বাসায় চলে আসে।
ও বাসায় এসে খুশি মনে আরাফের জন্য ওয়েট করতে থাকে যে কখন আরাফ বাড়ি আসবে। ও নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে যখন শুনবে যে ও বাবা হতে চলেছে।
তারপর ও একটা লাল শাড়ি পড়ে আর একটু সাজুগুজু করে আরাফের জন্য ওয়েট করতে থাকে। আজ ও একদম আরাফের মনের মতো সেজেছে। ও ভাবছে যে আরাফ কতোটা খুশি হবে।
তারপর আরাফের জন্য ওয়েট করতে করতে অনেক রাত হয়ে যায় কিন্তু ওর আসার নাম নেই। মারিয়া বেশ কয়েকবার ফোন ও দেয় কিন্তু আরাফ ফোন রিসিভ করছে না। এবার মারিয়ার বেশ টেনশন হয়। ও কি করবে বুঝতে পারছে না। তারপর প্রায় বারোটারদিকে আরাফ বাসায় ফেরে। কলিং বেলের শব্দ শুনে মারিয়া তাড়াতাড়ি যেয়ে খুশি মনে দরজা খুলে। কিন্তু দরজা খুলে আরাফ কে দেখে ওর মুখের হাসি উড়ে যায়। কারণ আরাফ কে দেখেই বোঝা যাচ্ছে যে ও ড্রিয়িং করেছে।
মারিয়া খুব অবাক হয় ওকে এভাবে দেখে। তারপর মারিয়া এগিয়ে যেয়ে ওকে ধরতে যায় কিন্তু তার আগেই আরাফ মারিয়াকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয় আর বলে,
_ খবরদার। তোর ওই নোংরা হাত দিয়ে আমাকে টাস করবি না।
_ আরাফ! কি যা তা বলছো। আর তুমি ড্রিয়িং করেছো!
_ হ্যা, করেছি। তাতে তোর কি। আমি তো শুধু মদ খেয়েছি আর তুই কি করলি। এতো ভালোবাসতাম তোকে আমি আর তুই কিনা পর পুরুষের সাথে নষ্টামি করে বেড়াচ্ছিস। কি নেই আমার মধ্যে যে তোর অন্য পুরুষ লাগে। সব দিক দিয়েই তো তোকে সুখি রেখেছিলাম। এমনকি বেডেও তো তোকে আমি সব সময় খুশি।
_ ছি! আরাফ। কিসব নোংরা কথা বলছো তুমি।
_ ও নোংরা কথা শুনতে খারাপ লাগছে। নোংরা কাজ করতে খারাপ লাগেনি।
_ আমি তোমার কথা কিছুই বুঝতে পারছি না। কি করেছি আমি?
_ কিছু ই করিস নি তুই তাই না। তাহলে এগুলো কি!
বলে সেই ছবিগুলো মারিয়ার মুখে ছুড়ে মারে।
ছবিগুলো দেখে মারিয়া ও যেন আকাশ থেকে পড়ে। এসব কি!
_ কি হলো এখন চুপ কেন। কথা পুরিয়ে গেলো।
_ আরাফ বিশ্বাস করো এ এগুলো মিথ্যা। আমি তো নিজেও বুঝতে পারছি না এসব কি করে?
ঠাসসসসসস করে এক চড় মেরে দিলো এবার আরাফ মারিয়ার গালে যার ফলে মারিয়া ছিটকে নিচে পড়ে গেলো। আর ঠোঁটের কোনা কেটে রক্ত বের হতে লাগলো। । তারপর আরাফ আবার মারিয়ার চুলের মুঠি ধরে টেনে তুললো।
_ এখন কিছু ই বুঝতে পারছিস না। তাই না।
_ আহ! আরাফ আমার লাগছে। চুল ছাড়ো প্লিজ।
_ লাগুক। লাগার জন্য ই তো ধরেছি। তুই আমাকে যে আঘাত দিয়েছিস তার কাছে তো এটা কিছুই না।
_ আরাফ তুমি বিশ্বাস করো আমি সত্যি বলছি। তুমি আমাকে ভুল বুঝচ্ছ।
_ বিশ্বাস! হা হা হা তোর মুখ ও আমি আর দেখতে চায় না। বেরিয়ে যা এখান থেকে।
_ কি বলছো তুমি। এতো রাতে কোথায় যাবো আমি।
_ কেন তোর নাগরের কাছে। যেয়েই আবার নষ্টামী শুরু করবি। এবার যা এখান থেকে আর কোনো দিন ও তোর এই মুখ আমাকে দেখাবি না।
বলে মারিয়াকে ধাক্কা দিয়ে দরজার বাইরে ফেলে দিয়ে দরজা লাগাতে গেলে কিন্তু তার আগেই মারিয়া এসে দরজা ধরে ভিতরে যেতে লাগলো কিন্তু আরাফের কথা য় আবার থেমে গেলো।
_ _ তুই যদি এখন এখান থেকে না যাস তো আমার মরা মুখ দেখবি।
_ _ আরাফ!
_ যা। বের হো এখান থেকে।
বলে ওকে বের করে দিয়ে দরজা আটকে দিলো।
আর মারিয়া দরজার বাইরে থমকে দাড়িয়ে রইলো৷ ও ভাবছে যে আরাফ ওকে বিশ্বাস করলো না। আর কি বললো ও যদি না যায় তাহলে আরাফের মরা মুখ দেখবে। কিন্তু সেটা তো মারিয়া পারবে না। কারণ আরাফ যে ওর জীবন।
ওকে বেশ ও যখন চায়ছে তখন চলে যাবো আমি আরাফের জীবন থেকে অনেক দূরে। থাকবো না আর তোমার জীবনে বাঁধা হয়ে।
আমার ভালোবাসা যদি সত্যি হয়ে থাকে তাহলে একদিন তুমি ঠিক ই বুঝতে পারবে আরাফ যে আমি নির্দোষ।
শুধু একটাই আফসোস আমাদের অনাগত সন্তানের কথা তোমাকে জানাতে পারলাম না।
তারপর মারিয়া নিজের চোখ মুছে ওখান থেকে বেরিয়ে রাস্তা দিয়ে হাটতে থাকে। কোথায় যাবে সেটা ও নিজে ও যানে না। শুধু জানে ওকে আরাফের থেকে অনেক দূরে যেতে হবে কারণ আরাফ যে তাই চায়।
হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ করে ওর সামনে কতকগুলো ছেলে এসে দাঁড়ালো। দেখেই বোঝা যাচ্ছে বকাটে ছেলে। মারিয়া এবার কি করবে বুঝতে পারছে না। তাই আর কোন উপায় না পেয়ে ও পিছাতে পিছাতে ছুট মারলো। ছেলেগুলো ও ওর পিছনে ছুটছে।
মারিয়া আরো জোরে ছুটতে শুরু করলো হঠাৎ করে ওর সামনে একটা গাড়ি চলে আসলো। আর ও যখন গাড়ি টা কে খেয়াল করলো ততক্ষণে গাড়ি টা ওর একদম কাছে চলে এসেছে তাই ও সরতে ও পারে নি। গাড়িটার সাথে জোরে এক ধাক্কা খেয়ে ছিটকে নিচে পড়ে যায়। ওর রক্তাক্ত দেহটা মাটিতে অসড় হয়ে পড়ে থাকে।
পর্ব ১১
চোখ মেলে মারিয়া নিজেকে হাসপাতালের বেডে আবিষ্কার করলো। মাথায়। হাতে। পায়ে প্রচুর ব্যাথা অনুভব করতে পারছে। ধীরে ধীরে মাথায় হাত দিয়ে উঠে বসলো আর সামনে একজন পুরুষ আর একজন মহিলা কে বসা দেখতে পেলো।
হঠাৎ করে ওর বাচ্চার কথা মনে আসতেই ও চিৎকার করে উঠলো এবং পেটে হাত দিয়ে বললো,
_ আ আমার বাচ্চা! আমার বাচ্চা ঠিক আছে তো
তখনই পাশে বসে থাকা মহিলাটি এগিয়ে এসে বললো,
_ হ্যা, ডোন্ট ওয়ারি। তোমার বাচ্চা একদম ঠিক আছে।
মারিয়া কিছু সময় মেয়েটির মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলো তারপর বললো,
_ আপনি?
_ আমি মালা। ও হচ্ছে আমার হাজব্যান্ড কবির। কাল রাতে তুমি আমাদের গাড়ির সাথে ধাক্কা খেয়েছিলে। আমরা কালকে একটা পার্টিতে গিয়েছিলাম সেখান থেকে ফিরছিলাম। আর তখনই মাঝ রাস্তায় তুমি আমাদের গাড়ির সামনে চলে আসলে আর ধাক্কা খেলে।
তারপর আমরা গাড়ি থেকে নেমে তোমার কাছে যায় কিন্তু ততক্ষণে তুমি সেন্সলেস হয়ে গিছিলে। আমরা তো কি করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না। তাড়াতাড়ি করে তোমাকে হসপিটালে নিয়ে এলাম। এখানে ডাক্তার রা তোমাকে দেখার পর জানলাম যে তুমি প্রেগন্যান্ট। ভাগ্য ভালো ছিলো যে অল্পের জন্য বাচ্চার কোনো ক্ষতি হয় নি। তোমার বাচ্চা একদম সেফ আছে।
_ আমার জন্য আপনাদের অনেক সমস্যায় পড়তে হলো তাই না। আই আম সরি।
_ আরে তুমি কেনো সরি বলছো। বিপদ কখনো বলে কয়ে আসে না বোন। আর তাছাড়া আমদের গাড়িতে তুমি আঘাত টা পেয়েছো। তাই সরি টা বরং আমাদের তোমাকে বলা উচিৎ।
_ না না। দোষ টা তো আমারই। কারণ আমিই আপনাদের গাড়ির সামনে চলে এসেছিলাম।
_ আরে বাদ দাও এবার এসব। বাট তুমি এতো রাতে রাস্তায় ওভাবে ছুটছিলে কেন?
পিছন থেকে মেয়েটির হাজব্যান্ড বলে উঠলো।
_ আসলে আমি রাস্তা দিয়ে হেটে যাচ্ছিলাম তখনই কোথা থেকে কয়েক ছেলে এসে আমাকে টিস করছিলো। আমি ওদের ভয়ে কোনদিকে না দেখে ছোটা শুরু করি আর তখনই আপনাদের গাড়ির সাথে ধাক্কা খায়।
_ এসব ছেলেগুলোর জন্য মেয়েরা ইচ্ছা মতো রাস্তা ঘাটে চলতে ও পারবে না। আচ্ছা ডাক্তার বলেছে তুমি এখন মোটামুটি সুস্থ। বাড়িতে গিয়ে রেস্ট নিলে ঠিক হয়ে যাবে। তুমি তোমার নিজের কারো ফোন নং দাও আমি ফোন করে আসতে বলি তা নাহলে ঠিকানা বলো আমরাই তোমাকে পৌঁছে দিবো।
_ হ্যা, কবির ঠিক ই বলেছে। তোমার বাসা কোথায় বলো।
ওদের কথা শুনে মারিয়া এবার কেঁদে ফেলে। ওর কান্না দেখে মেয়েটি বলে
_ একি তুমি কাঁদছো কেন।
_ _ আমার যাওয়ার মতো আপাতত কোনো জায়গা নেই। জানি না আমি এখন কোথায় যাবো। আপনারা এখন যান। এবার আমি নিজে একটা ব্যবস্তা করে নেবো।
_ আরে সেটা কি করে হয়। আমরা তোমাকে এভাবে ফেলে চলে যেতে পারিনা।
তখনই পিছনে থেকে ছেলেটা বলে উঠলো।
_ তারচেয়ে বরং এক কাজ করো তুমি আমাদের সাথে চলো। আমার না কোনো বোন নেই তোমাকে দেখে কেন জানি না আমার ভিষণ মায়াময় লাগছে তোমাকে। যাবে এই ভাইয়া আর ভাবির সঙ্গে।
_ ভাইয়া! ভাবি!
তখনই পাশ থেকে মেয়েটি বলে উঠে।
_ হ্যা, ভাইয়া ভাবি। ও যখন তোমাকে বোন বলেছে তখন আজ থেকে আমরা তোমার ভাই ভাবি। তুমি আজ থেকে আমাদের সাথে ই থাকবে। আমাদের ছোট্ট সংসারে আজ থেকে একজন সদস্য বাড়বে। খুব ভালল থাকবো আমরা সবাই মিলে। চলো না বোন। প্লিজ না করো না।
ওদের কথা শুনে মারিয়া খুশিতে কেঁদেই দেয় আর বলে,
_ হ্যা, আমি যাবো আপনাদের সাথে।
তারপর ওরা মারিয়াকে নিয়ে ওদের বাড়িতে যায়। তারপর রাতে খাওয়া দাওয়া র পর ওরা একসাথে বসে ছিলো তখনই মালা বললো,
_ আচ্ছা মারিয়া তোমার সাথে আসলে কি কি হয়েছে আমাদের বলবে। না মানে তোমার বাচ্চা! তাহলে তোমার স্বামী কোথায়। দেখো আমরা তোমাকে জোর করছি না। শুধু তোমার কষ্ট টা শেয়ার করতে বলছি। কষ্টের কথা শেয়ার করলে নাকি কষ্ট টা একটু হলেও হালকা হয়। তাই বলছি তুমি আমাদের নিজের মনে করে বলতে পারো।
তারপর মারিয়া ওদের প্রথম থেকে সবকিছু খুলে বললো, তা শুনে কবির বললো,
_ কিন্তু আরাফ তোমাকে একবার ও বোঝার চেষ্টা করলো না। এভাবে বাড়ি থেকে বের করে দিতে পারলো।
_ আচ্ছা মারিয়া তুই কি চাস ওর সামনে সত্যি টা প্রমাণ করতে যদি চাস তো আমরা সাহায্য করবো তোকে।
_ হ্যা, তোর ভাবি ঠিক ই বলছে।
_ না ভাইয়া ভাবি আমি এরকম কিছু ই করতে চায় না। কারণ আমার বিশ্বাস আমার ভালোবাসা যদি সত্যি হয়ে থাকে তাহলে একদিন ও নিজেই সত্যি টা জানতে পারবে ও ঠিক একদিন আমার কাছে ফিরে আসবে।
_ মানুষ কখনো সবদিক থেকে পরিপূর্ণ সুখ পাই না মারিয়া। তাই এই নিয়ে কখনো মন খারাপ করবি না। এখন তোর সাথে ওরা কেউ নেই কিন্তু তোর সন্তান আছে আর জন্য তোকে ভালো থাকতে হবে। কারণ এটা যে তোর অনেক বড় পাওয়া। হয়তো তুই এখনি এর মর্ম বুঝবি না। যখন তোর সন্তান তোর কোলে আসবে তখন বুঝবি যে তুই কি পেয়েছিস। সন্তান না থাকার যে কি কষ্ট সেটা আমি জানি রে।
_ আহ। মালা আবার এসব তুলে মন খারাপ করছো।
_ মানে! ভাবি তুমি।
_ হ্যা রে মারিয়া। আমি কোনোদিন ও মা হতে পারবো না।
_ ভাবি মন খারাপ করো না। তুমি ই তো বললে মানুষ সবদিক থেকে পরিপূর্ণ হয় না। তোমার সন্তান হয় নি ঠিক কিন্তু দেখো না তোমাদের মধ্যে আছে সীমাহীন ভালোবাসা। এটা ই বা কম কি বলো।
_ হুম তুই ঠিক বলেছিস। আমি আর এটা নিয়ে মন খারাপ করবো না।
তারপর ওরা ঘুমিয়ে পড়ে।
এদিকে আরাফ পরেরদিন বাড়ি চলে যায়।
এতোদিন পর ওর মা ওকে দেখে খুব খুশি হয়।
_ আরাফ বাবা তুই এসেছিস। আমি জানতাম আমার ছেলে আমাকে ছেড়ে থাকতেই পারবে না। কিন্তু তোকে এমন লাগছে কেন বাবা। কি হয়েছে।
আরাফ এবার ওর মাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলে।
_ মা মারিয়া আমাকে ঠকিয়েছে মা। ও এখন আর আমাকে চায় না।তাই ওকে আমি তাড়িয়ে দিয়েছি মা।
_ আরাফ বাবা তোর বুঝতে ভুল হচ্ছে না তো। মারিয়া।
_ না মা আমার কোনো ভুল হচ্ছে না।
_ তবু্ও তুই।
_ আহা লিয়া ছাড়ো না। এতোদিন পর ছেলেটা ফিরে এসেছে এটাই অনেকে ওই মেয়েকে নিয়ে আর কোন কথা বলে না তো।
_ আব্বু!
_ বাবারে। সব বাবা মা তার সন্তানের ভালো চায়।তুই এতোদিন আমাদেরকে ছেড়ে ছিলি এতে আমরা ও ভালো ছিলাম না রে। যাইহোক তোদের মাঝে কি হয়েছে আমি কিছুই জানতে চায়বো না। তুই ফিরে এসেছিস এতেই আমি খুশি।
_ থাংকস আব্বু।
তারপর আরাফ ওর ঘরে গিয়ে ফ্রেস হয়ে রেস্ট নেয় আর সেদিন সারা রাত ভেবে ও একটা ডিসিসন নেই।
পরেরদিন সকালে নাস্তার টেবিলে বসে আরাফ বলে,
_ আব্বু আম্মু তোমাদের সাথে আমার জরুরি কথা ছিলো।
_ বলো কি বলবে।
_ আব্বু আমি লন্ডন চলে যেতে চায়। ওখানে আমাদের যে বিজনেস টা আছে আমি নিজে দেখাশোনা করতে চায়।
এটা শুনে ওর মা বলে,
_ এসব কি বলছিস বাবা। এতোদিন পর ফিরে এলি আবার মাকে ছেড়ে চলে যাবি।
_ আম্মু প্লিজ বোঝার চেষ্টা করো আমি মেন্টালি খুব ডিপ্রেজড। আমি কিছুদিনের জন্য নিজেকে ব্যস্ত রখতে চায় যেটা এখানে থাকলে পারবো না। হাঁপিয়ে গিয়েছি আমি এবার আর পারছি না।
_ কিন্তু বাবা তুই।
_ লিয়া। চুপ করো। আচ্ছা বেশ তুই যখন চায়ছিস আমি তোর যাওয়ার ব্যবস্তা করছি।
_ তুমি ওকে।
_ লিয়া ও ঠিক কথায় বলছে। কিছু দিন নিজেকে বিজি রাখুক ওর যখন মনে হবে এবার ও নিজেকে সামলাতে পারবে তখনই ও ফিরে আসবে।
তারপর ওর বাবা ওর যাওয়ার ব্যবস্তা করে ফেলে।
যাওয়ার দিন ওর বাবা মা বোন সবাই ওকে ইয়ারপোর্টে পৌঁছে দিতে আসে তারপর আরাফ সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে যায়।
এটা নিয়ে রুবা আর রাজের তো আফসোসের শেষ থাকছে না। ওরা কিছুতেই মানতে পারছে না এভাবে তীরে এসে তরি ডুবে গেলো।ওরা ভেবেছিলো আরাফ মারিয়াকে বের করে দিলে ওকে রাজ নিজের কাছে নিয়ে আসবে কিন্তু তার আগেই মারিয়া যে কোথায় চলে গেলো। আর খুজেই পেলো না।
আর রুবা ভেবেছিলো আরাফ বাড়িতে ফিরে গেলে ও তো এখন শুধু মারিয়াকে ঘৃণা করবে এই সুযোগে ওর মন জয় করে বাবাকে বলে ওর সাথে বিয়েটা দিয়ে দেবে। কিন্তু তার আগেই আরাফ দেশ ছেড়ে চলে গেলো।
এদিকে মারিয়ার মা অনেকদিন ধরে মারিয়ার কোন খোঁজ না পেয়ে চিন্তায় পড়ে যায় সাথে ওর বাবাও।
মারিয়াও বাবা মার জন্য মন খারাপ লাগছে। তা দেখে মালা ওকে বলে ফোন দিয়ে ওর বাবা মার সাথে কথা বলতে।
যদিও মারিয়ার সাহস হচ্ছে না। যার জন্য নিজের বাবা মাকে ছাড়লো আজ সেই তাকে ফেলে চলে গেল। কিন্তু ও বুঝতে পারছে ওর বাবা মা ও ওর জন্য টেনশন করছে। তাই ও আর কিছু না ভেবে ফোন দিলো।
মারিয়ার মা কিচেনে রান্না করছিলো। ফোনের শব্দ শুনে বেরিয়ে এসে দেখে আননোন নং। তারপর উনি ফোন রিসিভ করে। ওপাশ থেকে মারিয়ার কন্ঠ শুনে উনি খুব খুশি হয়। তারপর অনেক সময় মারিয়ার সাথে কথা বলেন ওর বাবা ও পাশে ছিলো। ফোন লাউড স্পিকারে রেখে ওর মা কথা বলছিলো।
তারপর মারিয়া ভয়ে ভয়ে ওর মাকে সব বললো, সাথে বাচ্চার কথা ও সব শুনে ওর বাবা মা কি বলবে বুঝতে পারছিলো না। তারপর ওরা মারিয়ার কাছ থেকে কবিরের ঠিকানা নিয়ে ওখানে মারিয়াকে দেখতে যায়। মারিয়া এতোদিন পর বাবা মাকে দেখে খুব খুশি হয় ওর বাবা মা ও মেয়েকে পেয়ে খুব খুশি হয়।
তারপর ওরা মারিয়াকে ওদের সাথে নিয়ে যেতে চায় কিন্তু মারিয়া রাজি হয় না সাথে কবির আর মালা ও। কারণ এই অবস্থায় নিয়ে গেলে লোকের কথা ও শুনতে হবে। যা এই মুহুর্তে মারিয়ার জন্য ভালো হবে না। কারণ ওর এখন একদম টেনশন করা যাবে না।
তারপর কবির আর মালা ওর বাবা মাকে বুঝিয়ে বললে ওরা মারিয়াকে রেখে চলে যায়।
আস্তে আস্তে মারিয়ার ডেলিভারি ডেট এগিয়ে আসে। ওর বাবা মা ও প্রায় এসে মেয়েকে দেখে যায়।
দেখতে দেখতে সেই দিন চলে আসে যেদিন মারিয়ার লিভার পেইন ওঠে মালা তাড়াতাড়ি করে কবির কে বাসায় আসতে বলে আর ওর বাবা মাকে ও খবর দিয়ে মারিয়াকে নিয়ে হসপিটালে যায়।
মারিয়াকে ওটিতে ঢুকিয়ে ওরা সবাই বাইরে ওয়েট করতে থাকে। কিছু ক্ষণ পর ডাক্তার বেরিয়ে আসে ফুটফুটে একটা মেয়ে বাবু কোলে নিয়ে। ওরা সবাই খুব খুশি হয়।
তারপর মারিয়াকে বাড়িতে নিয়ে আসে। এভাবে দিন চলতে থাকে। ওর মেয়ে যখন আধো আধো কথা বলতে শেখে তখন মারিয়াই ওকে কবির কে বাবাই আর মালা কে মামনি ডাকা শেখায়। এতে কবির মালা ও খুব খুশি হয়। এমনিতেই ওরা অনিকা কে নিজের মেয়ের মতো দেখে তাই মারিয়া ওদের কে বাবা মা ডাকা শেখাতে ওরা খুব খুশি হয়। নিজেদের সন্তান হয় নি তো কি হয়েছে বাবা মা ডাক তো শুনতে পারছে। এই বা কম কিসে।
তারপর মারিয়ার বাবা মা জোর করে মারিয়াকে ওদের কাছে নিয়ে যায়। কারণ এতোদিন মেয়েকে ছেড়ে ছিলো কিন্তু এখন নাতনিকে ছেড়ে ওরা থাকতে পারবে না।
এবার আর কবির মালা ও বাঁধা দিতে পারে নি। তবে অনিকাকে ছেড়ে থাকতে ওদের ও খুব কষ্ট হয়। তবে সমস্যা হয় না কারণ মারিয়া সপ্তাহে দুই দিন করে ওদের কাছে এসে থাকে আর বাকি দিনগুলোতে ওরা তো যায়ই।
এভাবে সময় যেন স্রোতের বেগে চলে যায়। দেখতে দেখতে পাচ বছর কেটে যায়। মারিয়ার বাবা এখন আর চাকরি করে না। এখন মারিয়াই সংসার চালায়।
অনেক কিছু ই বদলে গেছে এই পাঁচ বছরে ছোট্ট অনিকা টা ও এখন অনেক টা বড় হয়ে গেছে।
আর আরাফ ও এই পাঁচ বছর লন্ডন থেকে এবার ফিরে এসেছে শুধু মায়ের জেদের কারণে।
দেশে এসে ও ওদের এখানকার বিজনেস দেখাশোনা করছে। একদিন ও রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলো। হঠাৎ করে ওর গাড়ি খারাপ হয়ে যায়। তাই ও গাড়ি থেকে নেমে আশেপাশে দেখছিলো তখনি ওর চোখ যায় পাশে একটা স্কুলের মাঠে একটা ফুটফুটে ছোট্ট পরির মতো মিষ্টি মেয়ে বাচ্চাদের সাথে খেলছে।
হঠাৎ করে ওদের বলটা আরাফের পায়ের কাছে এসে পড়ে আর সেই ছোট্ট পরিটা ওর কাছে সেই বলটা নিতে আসে।
তারপর আরাফ অনেক সময় ধরে মেয়েটার সাথে কথা বলে, কেন যেন ওর মেয়েটা কে ভিষণ ভালো লাগছে। মনে হচ্ছে খুব আপন কেউ।
সেদিন থেকে ই অনিকার সাথে আরাফের পরিচয়। তারপর থেকে প্রতিদিনই না চায়তেও আরাফ এই স্কুলের সামনে এসে অনিকার জন্য ওয়েট করতে থাকে। ওর সাথে খেলা করে। ঘুরে।
অনিকা ও আরাফের সাথে মিসতে খুব ভালো লাগে।
আরাফ যে কিসের টানে ওর কাছে আসে সেটা ও নিজেও জানে না। কিন্তু অনিকা কে এখন একদিন না দেখে ও থাকতে পারে না।
এভাবেই চলতে থাকে। অনিকাও বাড়ি তে গিয়ে মারিয়ার সাথে বলে ওর প্রিন্স আংকেল এর কথা।
তারপর ওর জন্মদিনে আরাফ কে অনিকা ইনভাইট করে আর আরাফ ও যায়। আর সেদিন ই মারিয়ার সাথে ওর আবার দেখা হয়।
এসব ভাবতে ভাবতে কখনোই যে রাত পার হয়ে গেছে মারিয়া বুঝতে ই পারে না আযানের শব্দে মারিয়ার ঘোর কাটে। আর ও চোখ মুছে নিজে নেমে আসে।
চলবে
আজও ভালোবাসি
লেখিকাঃ মাহিয়া মারিয়া
আরো পড়ুনঃ আজও ভালোবাসি – সিজন ১ । খুনশুটি ভালোবাসার গল্প
আরো পড়ুনঃ আজও ভালোবাসি – সিজন ৩ । দুষ্টু মিষ্টি ভালোবাসা