দুষ্টু মিষ্টি ভালোবাসা

আজও ভালোবাসি – সিজন ৩ । দুষ্টু মিষ্টি ভালোবাসা

আজও ভালোবাসি – দুষ্টু মিষ্টি ভালোবাসা: অনিকার কথা শুনে মারিয়া খুব অবাক হয় সাথে অনিকা কে হারানোর একটা ভয় ওর মনে তাড়া দেয়। শত হলেও আরাফ ওর বাবা। অনিকার উপর ওর ও যতোটা অধিকার আছে আরাফের ও ততোটাই আছে। পুরো গল্পটি পড়ুন অবশ্যই ভালো লাগবে।

পর্ব ১২

নিচে এসে মারিয়া নামাজ পড়ে মেয়ের পাশে কিছুক্ষণ বসে থাকে তারপর রান্নাঘরের দিকে যায়। রান্না করতে। আজকে আবার কবির আর মালা ও আছে।

মারিয়া রান্না শুরু করার পরপরই মালা আসে আর বলে,

_ আরে তুই একা কাজে লেগে পড়লি। আমাকে ডাকলি না কেন। দে আমি হেল্প করছি।

_ আরে আমি একা পারবো। তুমি…

_ দূর। সর তো উনি কাজ করবে আর আমি নাকি বসে বসে দেখবো।

_ আচ্ছা বাবা। তোমাকে বসে থাকতে হবে না। তুমি কাজ করো।

তারপর ওরা দুজনে মিলে রান্না শেষ করে একে একে টেবিলে সাজিয়ে রাখে।

তখনই কবির বেরিয়ে আসে অনিকা কে কোলে নিয়ে।

_ আরে তোমাদের রান্না শেষ। দেখ আমরা চলে এসেছি। তাড়াতাড়ি খেতে দাও তো আমাদের কিন্তু খুব খিদে পেয়েছে। তাই না মামনি।

_ হ্যা, আর খাবারের দারুণ গন্ধে খিদে আরো বেড়ে গেছে।

অনিকার কথা শুনে সবাই হেসে উঠে।

_ আচ্ছা। মাম্মা। নানুরা কখন আসবে বলো তো। ওরা জানে না যে আমি ওদের খুব মিস করছি। আমার বার্থডে তেও ওরা থাকেনি।

_ এইতো নানুভাই। আমরা চলে এসেছি।

মারিয়ার মা বাবা কে দেখে অনিকা ছুটে যেয়ে ওদের জড়িয়ে ধরে।

_ তোমরা এসে গেছো। আই আম সো হ্যাপি বাট আমি তোমাদের উপর খুব রেগে আছি। তোমরা আমার বার্থডে তে থাকো নি।

_ _ এত্ত গুলো সরি দিদিভাই। আর আমরা জানি তো যে আমার নানুভাই টা খুব রেগে আছে আমাদের উপর তাই তো তার রাগ ভাঙানোর জন্য এত্ত গুলো চকলেট এনেছি। এই দেখো।

_ ওয়াও। এগুলো সব আমার উমমমা তোমরা খুব ভালো।

তারপর ওরা ভিতরে ঢুকে সোফায় বসে আর মারিয়া বলে,

_ মামার শরীর এখন কেমন আছে মা।

_ এখন অনেক টা ভালো। তাই তো চলে এলাম। অনিকা টা কে রেখে কোথাও যেয়ে মন দাঁড়াতেই চায় না।

তারপর ওরা সবাই মিলে খাওয়া দাওয়া শেষ করে।

এদিকে আরাফ দের বাড়িতে সকালে ও নাস্তা করতে বসে সেই সময় ওর মা বলে
_ আরাফ বাবা। একটা কথা বলার ছিলো তোকে শুনবি।

_ বলো কি বলবে।

_ ইয়ে ম মানে

_ আরে আম্মু কি ইয়ে মানে মানে করছো। যা বলবে ক্লিয়ারলি বলে ফেলো তো।

_ আসলে বলছিলাম যে অনেক তো হলো বাবা। এবার বিয়েতে রাজি হয়ে যা না বাবা। তুই আমাদের একমাত্র ছেলে। আমাদের ও তো ইচ্ছে করে তোর বিয়ে দেবো নাতি নাতনীর মুখ দেখবো।

_ হয়েছে। শেষ তোমার বলা। এবার আমি যায়।
_ রাগ করছিস কেন?

_ তো কি করবো। আসলে ধরে সেই এক টপিক নিয়ে পড়ে আছো। একবার বলেছি না। আমাকে বিয়ের কথা বলবে না।

_ আরাফ। তোমার আম্মু তো ঠিক ই বলেছে।

_ আব্বু প্লিজ। এবার তুমি ও আম্মুর মতো শুরু করো না। আসছি আমি।

_ আরে আরাফ। শোন বাবা। খেয়ে যা। না খেয়ে কোথায় যাচ্ছিস। ফার। উফ চলে গেলো।

আরাফ রেগে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গাড়ি নিয়ে চলে যায়। ও গাড়ি তে করে যেতে যেতে অনিকার স্কুলের সামনে অনিকা কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে গাড়ি থামিয়ে ওর কছে যায়।

অনিকা তো আরাফ কে দেখে খুব খুশি হয়ে দৌড়ে ওর কাছে আসে।

_ আরে প্রিন্স আংকেল তুমি।

_ হ্যা মামনি। কিন্তু তুমি এখানে দাড়িয়ে আছো কেন মা।

_ আম্মু স্কুলে দিয়ে গেছে আর বলেছে স্কুল ছুটি হলে এসে নিয়ে যাবে কিন্তু আজকে কি জন্য যানি না তাড়াতাড়ি ছুটি দিয়ে দিয়েছে। তাই এখানে দাড়িয়ে ছিলাম। ভালোই হলো তুমি এসেছো। আম্মু আসবে তো এখনো অনেক পরে ততো সময় আমি তোমার সাথে ঘুরবো। আমায় নিয়ে যাবে তো প্রিন্স আংকেল তুমি ঘুরতে।

_ ঠিক আছে মা। তাহলে তুমি বলো কোথায় যাবে আজ আমি তোমাকে সেখানে নিয়ে যাবো।

_ সত্যি আমি যেখানে যেতে চায়বো সেখানে নিয়ে যাবে।

_ হ্যা, মা। নিয়ে যাবো।

_ প্রমিস

_ প্রমিস

_ ওকে। তাহলে আজ আমাকে তোমার বাড়িতে নিয়ে চলো। তুমি তো আমাকে বলেছিলে আমাকে একদিন তোমাদের বাড়ি তে নিয়ে যাবে। ওখানে আমার আরো একটা দাদু দিদা আছে। তাদের সাথে দেখা করাতে। তাহলে আজ নিয়ে চলো না। প্লিজ।

_ ওকে মা। চলো।

তারপর আরাফ স্কুলের দারোয়ান কে বলে অনিকাকে সাথে নিয়ে আবার বাড়ি ফিরে আসে।

আরাফ অনিকা কে কোলে করে নিয়ে বাড়ি তে ঢোকে। তখন ওর বাবা মা ড্রয়িং রুমে বসে ছিলো।

আরাফ অনিকা কে ওদের সামনে নিয়ে গিয়ে বলে,

_ মামনি এই দেখো তোমার আর একটা দাদু আর দিদা। আর আব্বু আম্মু এ হলো অনিকা। তোমাদের কে যার কথা বলেছিলাম।

আরাফের মা ওর কথা শুনে অনিকার দিকে তাকায়। তাকানোর সাথে সাথে উনি দাড়িয়ে যান আর অবাক চোখে অনিকার দিকে তাকিয়ে থাকে।

_ কি হলো আম্মু। তুমি ওর দিকে এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?

_ আরে এ তো।

_ কি আম্মু?

_ আরে আরাফ একে দেখে আমার মনে হচ্ছে আমি যেন বিশ বছর আগের তুই সেই ছোট্ট আরাফ কে দেখছি। যেন একদম তোর কার্বন কপি। হবুহু তোর মতই। আর দেখ ওর চোখ। ঠোঁট একদম তোর মতো। ছোট্ট বেলায় তুই একদম এরকম ছিলি। আমার যেন মনে হচ্ছে যে আজ আমার সেই ছোট্ট আরাফ আর বড় আরাফ একসাথে আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।

_ আরে সত্যি ই তো তাই। ওই দেখো আরাফ তোমার ছোট্ট বেলার ছবি। ছবিটা নিয়ে তুমি নিজেই মিলিয়ে দেখো। তাহলে তুমি বলবে। যে ও একদম তোমার মতো।

ওর বাবা মার কথা শুনে আরাফ ওর ছবি নিয়ে দেখে। এবার ওর মনে খুব বড়ো সড় একটা ধাক্কা লাগে। কারণ সত্যি ই অনিকাকে একদম ওর মতোই মনে হচ্ছে।
কিন্তু এটা তো তখনই সম্ভব যদি…। তাহলে কি অনিকা?
ও আর ভাবতে পারছে না।

তারপর অনিকা ওদের বাড়ি তে অনেক সময় থাকে। ওর বাবা মার ও অনিকা কে খুব ভালো লাগে। যেতেই দিতে ইচ্ছা করছিলো না। অনিকা ও ওদের সাথে খুব মজা করে।
ওকে এদের সাথে এভাবে মিশতে দেখে মনে হচ্ছে কতোদিনের চেনা। আসলে রক্তের সম্পর্ক মনে হয় এরকমই হয়। বাইরের চোখে যতই অচেনা মন হোক না কেন। মনের চোখ চিনতে ভুল করে না।

তারপর আরাফ অনিকা কে নিয়ে বেরিয়ে যায় ওকে দিতে কারণ মারিয়া হয়তো এতো সময় চলে এসেছে। ও চিন্তা করবে।

ওর বাবা মার ও ইচ্ছে করছে না অনিকা কে যেতে দিতে কিন্তু কি করবে।

আরাফ অনিকা কে নিয়ে আবার ওর স্কুলের সামনে আসে। এসে দেখে মারিয়া দাঁড়িয়ে আছে। তারপর ও গাড়ি থেকে নেমে অনিকা কে নিয়ে মারিয়ার কাছে য়ায়।

অনিকা কে দেখে মারিয়া দৌড়ে আসে।

_ কোথায় গিয়েছিলে মা তুমি আমাকে না বলে, মাম্মা র টেনশন হয় তো।

_ সরি মাম্মা। আসলে আমি ভাবলাম তোমার আসতে দেরি হবে তাই আমি প্রিন্স আংকেলের বাড়িতে গিয়েছিলাম। জানো মাম্মা ওখানে আমার আরো একজন দাদু আর দিদা আাছে। ওরা আমাকে কত্ত আদর করেছে৷

অনিকার কথা শুনে মারিয়া খুব অবাক হয় সাথে অনিকা কে হারানোর একটা ভয় ওর মনে তাড়া দেয়। শত হলেও আরাফ ওর বাবা। অনিকার উপর ওর ও যতোটা অধিকার আছে আরাফের ও ততোটাই আছে।

আরাফ যদি এটা জেনে যায় যে অনিকা ওর মেয়ে তাহলে যদি ওকে মারিয়ার কাছ থেকে কেড়ে নেয়।

নাহহহহ! মারিয়া এটা কিছু তেই হতে দেবে না।

আরাফ এভাবে মারিয়াকে কিছু একটা ভাবতে ভ্রু কুঁচকে ওর দিকে তাকায় কিন্তু কিছু বলে না। কারণ ওর সাথে কথা বলার কোনো ইচ্ছা নেই ওর।

তাই ও অনিকা কে বলে,

_ মামনি আজ তাহলে আমি আসি। তুমি তোমার মায়ের সাথে বাড়ি চলে যাও। কেমন!

_ ওকে।

তারপর আরাফ চলে যায় আর মারিয়া ও অনিকা কে নিয়ে বাড়ি চলে আসে।


পর্ব ১৩

গভীর রাত। চারিদিকে সব নিস্তব্ধ। সারাদিনের কোলাহল পূর্ণ পরিবেশ থেকে বেরিয়ে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন এখন সবাই। কিন্তু। একজনের চোখে ঘুম নেই। এই অন্ধকার রাতে ছাদের রেলিং ধরে আকাশের দিকে তাকিয়ে একমনে মনে খুব গভীর ভাবে কিছু একটা ভেবে চলেছে সে।

সেই বাক্তি টা আর কেউ নয়। আরাফ। একা একা দাড়িয়ে শুধু ভেবেই চলেছে কিন্তু কোনো উত্তর মিলছে না। তার মাথায় একসাথে যেন সবার বলা কথা গুলো ঘুরছে।
সেদিন নিলীম ও বলেছিলো যে অনিকা হয়তো তার মেয়ে। আজ কে মা বাবা ও বলছে। অনিকা দেখতে আমার মতো৷ আমার কাছে ও তাই মনে হচ্ছে।

কিছু ই বুঝতে পারছে না ও। আর এটাও ভাবছে যে মারিয়া কে ও এখনো সহ্য করতে পারে না যদিও উপর উপর বললে ও মন থেকে ওকে কখনো ঘৃণা করতে পারেনি হয়তো

আজও ভালোবাসি তাই। এজন্য চাইলেই মন থেকে ওকে সারাতে পারেনি।

কিন্তু তবুও মারিয়ার উপর ওর খুব রাগ আর সেকারণে তো অনিকা ওর মেয়ে। এটা জানার পর তো ওর অনিকা কে ও এড়িয়ে চলা উচিৎ। কিন্তু আরাফ চাইলেও সেটা পারে না। বরং অনিকা কে একদিন না দেখলে ওর যেন দম বন্ধ হয়ে আসে। অনিকা ওর কাছে থাকলে ও ওর সব কষ্ট ভুলে যায়। মনে হয় খুব আপন কেউ।

তাহলে কি সত্যি ই অনিকা আমার..

নাহ আর ভাবতে পারছে না ও। এবার মারিয়ার সাথে কথা বলতে হবে। সত্যি টা জানতেই হবে ওকে।

মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে আরাফ আর মারিয়া। সাথে অনিকা। মারিয়া ওকে শক্ত করে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরেছে।

কারণ আজ আরাফ সত্যি টা জেনে গেছে তাই ও অনিকা কে নিতে এসেছে। কিন্তু মারিয়া তো অনিকা কে দেবে না। ও অনিকা কে ছাড়া থাকবে কি করে। ও যে ওর জন্য ই বেঁচে আছে।

কিন্তু আরাফ তো ওর কথা শুনছে না। ও যেভাবে হোক অনিকা কে নিয়ে যাবে।

আরাফ ধীরে ধীরে মারিয়ার দিকে এগিয়ে গেলো। আর হাত বাড়িয়ে দিলো অনিকা কে নেওয়ার জন্য। অনিকা ও হাত বাড়িয়ে আরাফের কোলে চলে গেলো। কারণ ওহো ওর বাবার সাথে ই যেতে চায়।

তারপর আরাফ অনিকা কে নিয়ে চলে যায়। মারিয়া পিছন থেকে ডাক দেয় কিন্তু ফিরে তাকায় না।

নাহহহহহ। হঠাৎ করে মারিয়া ঘুম থেকে চিৎকার দিয়ে উঠে বসে। মাথার উপর ফ্যান চলছে তবুও মারিয়া ঘেমে যাচ্ছে।

এটা কি সপ্ন দেখলো সে আরাফ ওর কাছ থেকে ওর মেয়ে কে নিয়ে যাচ্ছে।

পাশে টেবিলের উপর থেকে পানির গ্লাস নিয়ে পানি খেয়ে নিজেকে শান্ত করলো ও। তারপর তাকালো পাশে ওর মেয়ের দিকে। কোল বালিশ টা জড়িয়ে কি সুন্দর করে ঘুমিয়ে আছে কি মিষ্টি লাগছে দেখতে। একে ছেড়ে থাকবে কি করে মারিয়া যদি সত্যি ই আরাফ ওকে নিয়ে যায়। না না এটা মারিয়া হতে দেবে না। কেউ ওর কাছ থেকে ওর মেয়ে কে আলাদা করতে পারবে না।

তারপর মারিয়া অনিকা কে জড়িয়ে ধরে আবার ঘুমিয়ে পড়লো।

এদিকে আরাফ ভেবেই চলেছে যে কি করবে ও।

একদিন ও মার্কেটে গেল নিলীমের সাথে। সেখানে কবিরের সাথে দেখা হলো। কবির ওকে দেখে নিজেই এগিয়ে আসলো। কারণ সেদিনের পর থেকে কবিরের ও ইচ্ছে ছিলো আরাফের সাথে আলাদা করে কথা বলার কারণ সেদিন ওদের দুজন কে একসাথে দেখে ও খুব ভালো করেই বুঝতে পেরেছে ওরা এখনো একে অপরকে ভালোবাসে। তাই কবির চায় ওদের মধ্যে সকল ভুল ভেঙে ওদের আবার এক করে দিতে। এজন্য আরাফের সাথে আগে কথা বলতে হবে। কারণ ভুলটা তো ও বুঝছে।

তারপর কবির আরাফের সামনে যায় আর বলে,

_ আরে মিঃ আরাফ যে। তা কেমন আছেন।

আরাফের কথা বলার ইচ্ছে না থাকলেও ভদ্রতার খাতিরে বলে,

_ এইতো ভালোই। তো আপনি কেমন আছেন।

_ আছি ভালোই।

ওদের কথার মাঝেই মালা অনিকা কে কোলে নিয়ে ওদের দিকে এগিয়ে আসলো।

অনিকা তো আরাফ কে দেখেই ওর কাছে ছুটে চলে আসলো।

_ আরে প্রিন্স আংকেল তুমি এখানে। ভালোই হয়েছে। আমি না তোমাকে খুব মিস করছিলাম।

_ তাই। আমি ও তোমাকে খুব মিস করছিলাম মামনি।

_ প্রিন্স আংকেল। তুমি এদের কে চেনো তো। এরা হলো আমার বাবাই আর এ হলো আমার মামনি।

_ বাবাই! মামনি!

_ হ্যা, এ হলো আমার স্ত্রী মালা। আসলে অনিকা ছোট্ট বেলা থেকে আমাদের বাবাই আর মামনি বলে ডাকে।

_ ওওওওও

তখনই পাশ থেকে নিলীম বলে ওঠে।

_ আচ্ছা বুঝলাম যে অনিকা আপনাদের এই নামে ডাকে। কিন্তু আপনারা আসলে সম্পর্কে ওর কি হন।

_ মামা মামী।

_ _ কিন্তু আমি তো জানতাম মারিয়া একা বোন। তাহলে….

_ আপনি মারিয়ার ব্যাপারে আগে থেকে জানেন। মানে এদের ব্যাপারে সবকিছু জানেন আপনি।

_ আপনি আরাফ আর মারিয়ার ব্যাপারে বলছেন।

_ জি

_ হ্যা জানি। আপনি ও তাহলে জানেন যে আরাফ ই।

_ হ্যা, জানি যে আরাফ মারিয়ার স্বামী। আর ইনি মারিয়ার সাথে যা যা করেছে সব।

আরাফ অবাক হয়ে কবিরের দিকে তাকিয়ে আছে তারপর ও বললো,
_ হুহ। আমি নয় আপনার বোন আমার সাথে কি কি করছে তাই বলুন। নাকি সেটা ও বলেনি।

কবির কিছু বলতে যাবে তার আগেই মালা বলে উঠলো।

_ আমি বলছি। মারিয়া আমাদের কে সবটাই বলেছে।

আর এএই যে আপনি বলছিলেন না যে আপনি জানেন যে মারিয়া একা বোন তাহলে ভাই আসলো কি করে। তাহলে শুনন।

হ্যা, মারিয়া ওর আপন বোন নয়। ওর সাথে তো আমাদের পরিচয় হয় সেদিন যেদিন ওকে তাড়িয়ে দিয়েছিলো সেই দিন।

_ সেইদিন!

_ সেদিন আরাফ মারিয়াকে তাড়িয়ে দেওয়ার পর ও যখন রাস্তা দিয়ে হাটছিলো তখন। কয়েকটা বখাটে ছেলে ওর পথ আটকায়। ও তখন ওদের কাছ থেকে বাচার জন্য ছুটছিলো আর তখনই আমাদের গাড়ির সাথে ধাক্কা খায়। তারপর আমরা ওকে হসপিটালে নিয়ে যায়। আল্লাহর রহমতে সেদিন বড়কোনো ক্ষতি হয়নি। মারিয়া আর ওর সন্তান দুজনেই সুস্থ ছিলো।

উনার কথা শুনে আরাফ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো।

_ সন্তান!

_ হ্যা, সন্তান। আপনি যেদিন ওকে বের করে দিয়েছিলেন সেদিনই ও যেনেছিলো যে ও মা হতে চলছে আর আপনি বাবা। ও সেদিন খুব খুশি ছিলো। আর আপনাকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলো কিন্তু আপসোস ও নিজেই সেদিন সারপ্রাইজড হয়ে গিয়েছিলো যখন আপনি ওকে অবিশ্বাস করে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিলেন।

তারপর থেকে মারিয়া আমাদের সাথে ই ছিলো।৷ অনিকা হওয়ার পর ওর বাবা মা ওকে ওদের বাসায় নিয়ে আসে।

_ সেদিন যদি আপনি ওকে ভুল বুঝে বাড়ি থেকে বের করে না দিতেন তাহলে আজ অনিকা কে নিয়ে আপনাদের দুজনের সুখের সংসার হতো কিন্তু দেখুন আজ আপনার মেয়ে আপনারই সামনে কিন্তু আপনি নিজেও জানেন না যে ও আপনার মেয়ে হয়তো মানতেই পারছেন না কিন্তু এটাই সত্য। অনিকা আপনার মেয়ে।

_ হয়েছে আপনাদের বলা শেষ। এবার আমি বলও। আমি মারিয়া কে অকারণে বের করে দেয়নি। ও আমার ভালোবাসা নিয়ে খেলা করছে। কি করিনি আমি ওর জন্য। নিজের বাবা মার বিরুদ্ধে গিয়ে ওকে বিয়ে করেছিলাম। কিন্তু ও কি করলো অন্য একজনের সঙ্গে। ছি!

_ এটাই তো বলছি মিঃ আরাফ। আপনি মারিয়া কে ভুল বুঝচ্ছেন। ও
_ ভুল! নিজের চোখের দেখা কি করে অবিশ্বাস করবো বলুন তো কবির সাহেব।

_ অনেক সময় চোখের সামনে যেটা ঘটে সেটা সত্যি হয় না। আর আপনি তো ছবি দেখে বিশ্বাস করে নিলেন। অথচ এটা ভাবলেন না যে বর্তমানে এরকম কতো ছবি তো এডিট করে ও তৈরি করা যায়।

কবিরের কথা শুনে আরাফের মনে খুব বড় একটা ধাক্কা লাগে। কারণ সত্যি ই তো এই কথাটা তো কখনো আরাফের মাথায় আসেই নি।

ওকে চুপ থাকতে দেখে কবির আবার বললো,

_ _আপনি বুদ্ধিমান মানুষ। আমি যানি আপনি চাইলেই সত্যি টা বের করতে পারবেন। সো চেষ্টা করে দেখুন না। আর আমি জানি মারিয়া যাই বলুক না কেন ও আজ ও আপনার পথ চেয়ে বসে আছে। তাই এভাবে নিজেদের জীবন টা শেষ করে না দিয়ে সত্যি টা খোঁজার চেষ্টা করুন না। হয়তো আবার সব কিছু আগের মতো ঠিক হয়ে যেতে পারে। এনিওয়ে। আজ আমরা আসি। পারলে ভেবে দেখবেন।

আর আরাফ ওখানে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে ওর পাশে নিলীম ওর তাকিয়ে ওর মনে কি চলছে তা বোঝার চেষ্টা করছে।


পর্ব ১৪

বাড়ি ফিরে ধরে আরাফ কোনো কাজে মন বসাতে পারছে না। ওর মাথায় শুধু কবিরের বলা কথা গুলো ই ঘুরছে।

ওর নিজের ও এবার মনে হচ্ছে যে ও সত্যি ই কেনো ভুল করছে না তো। সত্যি ই যদি সেরকম কিছু হয় তাহলে ওকে নিজেই সেটা ঠিক করতে হবে।

কিন্তু ওর কি করা উচিৎ ও বুঝতে পারছে না। আরাফ ওর ঘরে বসে এসব ভাবছিলো। তখনই ওর মা এলো ওর ঘরে।

ছেলেকে ওরকম অস্থির দেখে উনি এগিয়ে যেয়ে ছেলের কাঁধে হাত রাখলেন তারপর বললেন।

_ কি হয়েছে রে বাবা তোর। এরকম অস্থির লাগছে কেন। কয়দিন ধরেই দেখছি তুই কেমন যেন করছিস।

কি হয়েছে বাবা। মাকে বলবিনা।

ওর মায়ের কথা শুনে আরাফ আর নিজের কষ্ট টা লুকিয়ে রাখতে পারলো না তাই ওর মায়ের দিকে ফিরে মায়ের কোলের উপরে মাথা রাখলো তারপর একে একে সব বললো ওর মাকে।

_ কি! অনিকা তাহলে তোর মেয়ে। তুই সেদিন কিছু বললি না কেন?

_ মা আমি নিজেও কনফিউজড। তোমাকে কি বলতাম। আমার তো মনে হচ্ছে আমি এখনো বড় কোনো গোলকধাঁধার মধ্যে পড়ে আছি আর এখান থেকে কি করে বের হবো সেটাও আমার জানা নেই।

_ আমার ও মনে হচ্ছে তোরই হয়তো কোথাও ভুল হচ্ছে। কিন্তু আমার বিশ্বাস তুই সব সত্যি টা খুঁজে বের করতে পারবি। পারতে যে তোকে হবেই।

_ হুম। তুমি ঠিক বলেছো আম্মু। পারতে আমাকে হবেই।

_ আমার মনে হয় না মারিয়ার কোনো দোষ আছে। আমি খুব তাড়াতাড়ি আমার বৌমা আর নাতনি কে এই বাড়িতে দেখতে চায়। সসম্মানে।

তারপর ওর মা চলে যায় আর আরাফ নিলীমকে ফোন করে ওর সাথে দেখা করতে বলে,

ওরা একটা রেস্টুরেন্টে দেখা করবে তাই আরাফ সোজা সেখানে চলে যায়। আর নিলীমের আসতে দেরি হচ্ছিল বলে ও একা একা সেখানে বসে ওর জন্য ওয়েট করতে থাকে।

_ কেমন আছো আরাফ?

পিছন থেকে কোন মেয়েলি কণ্ঠ শুনে আরাফ পিছনে ফিরে তাকায় আর যা দেখে তাতে ও যেন একবারে এক হাজার বোল্টেজের শক খেয়েছে এমন মনে হয়।

কারণ ওর সামনে রুবা এবং রাজ দুজনেই একসাথে দাঁড়িয়ে আছে।

আরাফ কে ওদের দিকে তাকিয়ে এভাবে চুপ করে দাড়িয়ে থাকতে দেখে রাজ একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে আবার বলে,

_ কি হলো আরাফ বললে না তো কেমন আছো?

এবার আরাফের হুশ আসে তারপর ও বলে,

_ হুহ। তুমি নিজে আমার জীবনে আগুন লাগিয়ে তুমি ই শুনতে এসেছো যে আমি কেমন আছি। ভেরি ফানি।

আরাফের কথা শুনে রুবার চোখ থেকে এক ফোটা পানি গড়িয়ে পড়ে তা দেখে আরাফ বলে,

_ আরে তুমি কাদছো কেন! আর তোমরা দুজন একসাথেই বা কি করে?

_ হ্যা একসাথে কারণ আমরা দুজন হাসবেন্ড _ওয়াইফ।

_ ওয়াট!মজা করছো আমার সাথে?

_ না আরাফ। রাজ সত্যি বলছে।

_ তাহলে মারিয়ার সাথে ওসব…

_ স সব মিথ্যে ছিলো।

_ ওয়াট!

_ হ্যা আরাফ। সবটাই ছিলো তোমাদের দুজন কে আলাদা করার পরিকল্পনা। আর এই কাজে রাজ একা নয় আমি ও ওর সাথে ছিলাম।

_ তাহলে ওই ছবি গুলো।

_ ওগুলো সব এডিট করা।

ওদের কথা শুনে আরাফ যেন কিছু বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। ওর এখন এদের দুজন কে খুন করে ফেলতে ইচ্ছা করছে কিন্তু ওর যেন সবকিছু থমকে গিয়েছে। ওর মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না।

ওর শুধু একটা কথায় মাথায় আসছে। কি করে মারিয়া কে অবিশ্বাস করলো। আর এখন ওর সামনে যেয়ই বা কি করে দাড়াবে। মারিয়া কি ওকে ক্ষমা করবে।

_ আরাফ। প্লিজ তুমি আমাদের ক্ষমা করে দাও।

এবার আরাফের রাগ যেন মাথায় উঠে গেল। ও উঠে রাজের কলার ধরে বললো
_ ক্ষমা! ক্ষমা মাই ফুট। আমাদের জীবন টা নষ্ট করে দিয়ে। এখন আসছে ক্ষমা চাইতে। ব্যাস! সাত খুন মাফ হয়ে গেলো। তাই না।

_ না আরাফ। শুধু সরি বলেই সব মাফ হয়ে যায় না সেটা আমরা ও জানি। আর এটাও জানি যে আমরা তোমাদের সাথে যে অন্যায় করেছি তা ক্ষমার অযোগ্য।

_ হ্যা, কিন্তু বিশ্বাস করো তোমাদের সাথে অন্যায় করে আমরা বাঁচতে পারিনি। প্রকৃতি আমাদের ছাড়ে নি। সে ঠিকই তার প্রতিশোধ নিয়ে নিয়েছে।

_ মানে!

_ বলছি শোনো। তোমাদের দুজনকে আলাদা করার পিছনে আমাদের উদ্দেশ্য ছিলো। তোমরা আলাদা হওয়ার পর রাজ মারিয়াকে পাবে আর আমি তোমাকে। কিন্তু আমাদের সব পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়ে যায়। সেদিন মারিয়াকে ও আর খুঁজে পাই নি আর তুমি ও দেশের বাইরে চলে যাও।

এতোকিছু করে ও তোমাদের আলাদা করতে পারলে ও আমরা কেউ তোমাদের দুজন কে পেলাম না। তখন বুঝতে পেরেছিলাম এটা হয়তো আমাদের ভাগ্যে ছিলো।

আর আমরা সেটা মেনে নিয়েছিলাম। তারপর রাজ আমাকে বিয়ের কথা বললে আমি ও রাজি হয়ে যায়। তারপর আমরা বিয়ে করে নিই। কিন্তু তখনো ও না আমাদের মধ্যে কোন অনুশুচনা বা আপসোস হয় নি তোমাদের সাথে অন্যায় করেছি বলে,

তারপর আমরা বেশ ভালোভাবে ই চলছিলাম। খুব হ্যাপি ছিলাম। কোন কিছু র কমতি ছিলো না।

তারপর যখন জানতে পারলাম আমি মা হতে চলেছি তখন যেন আরো সুখ ধরা দিলো। সবাই খুব কেয়ার করতো। সবার কাছে খুব প্রিয় ছিলাম।

এভাবে খুব সুখের মধ্যে দিয়ে আমাদের দিনগুলো চলছিলো। তোমাদের কথা যেন ভুলেই গিয়েছিলাম। কিন্তু প্রকৃতি ভোলে নি। ঠিকই প্রতিশোধ নিয়েছে। আমরা আমাদের পাপের শাস্তি খুব ভয়ংকর ভাবে পেয়েছি।

বলে রুবা কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো তারপর আবার বলতে শুরু করলো।

_ আমার প্রেগনেন্সির যখন আট মাস চলে তখন আমরা দুজনে একদিন ঘুরতে বেরিয়ে ছিলাম। সেদিন খুব বড় একটা দূর্ঘটনা ঘটেছিলো। যা আমাদের পুরো জীবন টা ই এলোমেলো করে দিলো।

সেদিনের দূর্ঘটনায় আমাদের সন্তান টা মারা যায়। আর আমি সারাজীবনের মতে মা হওয়ার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলি।

বলে রুবা এবার জোরে কেঁদে উঠলো। রাজের চোখেও পানি।

তারপর রাজ বলতে শুরু করলো।

_ জানো সেদিন খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। তখনই আমার তোমাদের কথা মনে হয়েছিল। তোমরা ও নিশ্চয়ই এরকমই কষ্ট পেয়েছিলে সেদিন। যে কষ্ট টা আমরা দুজনে মিলে দিয়েছিলাম তোমাদের।

_ আর আজ দেখো। সেদিন তোমরা সত্যি টা জানতে না পারলেও আমরা ঠিকই আমাদের পাপের শাস্তি পেয়েছি। নিজের সন্তান কে হারিয়েছি। এমন কি আর কোনো দিন ও বাবা মা হতে পারবো না।

_ সেদিনের পর থেকে তোমাদের খুঁজে চলেছি মাফ চাওয়ার জন্য। তোমরা ক্ষমা না করলে যে সারাজীবন ভিতরে ভিতরে আমরা এই পাপের বোঝা নিয়ে তিলে তিলে শেষ হয়ে যাবো। প্লিজ আরাফ তুমি আমাদের ক্ষমা করে দাও।

_ হ্যা, বিশ্বাস করো আজ তিনটা বছর ধরে এই পাপের বোঝা মাথায় নিয়ে আমরা শেষ হয়ে যাচ্ছি। প্লিজ আমাদের কে মাফ করে দাও।

ওদের সব কথা শুনে আরাফ বললো,

_ তোমরা যা অন্যায় করেছো তার শাস্তি তোমরা পেয়েছো। আমার তোমাদের উপর কোন ক্ষোভ নেই। আমার সাথে যা হয়েছে এটা হয়তো আমার ভাগ্যে ছিলো। তোমরা শুধু শুধু এটা নিয়ে গিল্টিফিল করবে না। আমার সত্যি এখন আর তোমাদের উপর কোন রাগ নেই। তোমরা খুব ভালো থেকো দুজনে।

_ থাংকস আরাফ।

_ আজ তাহলে আমরা আসি।

_ ওকে।

তারপর ওরা দুজন চলে যায় আর আরাফ ওখানে মাথা নিচু করে বসে থাকে।
তখনই পিছনে থেকে কেউ ওর কাঁধে হাত রাখে। ও পিছনে ফিরে দেখে নিলীম।

_ নিলীম। তুই কখন আসলি?

_ অনেক সময়৷ যখন তোরা কথা বলছিলি।

_ তুই সবকিছু।

_ হ্যা, আমি সবকিছু ই শুনেছি। দেখলি। আমি তোকে বলেছিলাম না। সব সময় চোখের দেখা সত্যি হয় না। মিললো তো।

পাঠক আপনাদের জন্যই আমরা প্রতিনিয়ত লিখে থাকি। আপনাদের আনন্দ দেয়াই আমাদের প্রধান লক্ষ। তাই এই পর্বের “দুষ্টু মিষ্টি ভালোবাসা” র গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো পড়া শেষে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।

_ আমি এখন কি করবো রে নিলীম। সত্যি আমার মাথা কাজ করছে না।

_ রিলাক্স ইয়ার। টেনশন করে লাভ হবে না। তুই মারিয়ার কাছে সবটা বল। আমার বিশ্বাস ও তোকে ক্ষমা করবে। তোকে ফেরাতে পারবে না।

_ তুই ঠিক বলেছিস। আমাকে ওর সাথে কথা বলতে হবে। দরকার পড়লে ওর পায়ে ধরে মাফ চাইবো।

_ হা হা হা। আচ্ছা এখন বাড়ি চল।

_ ওকে চল।

তারপর আরাফ বাড়ি চলে আসে আর ওর বাবা মাকে সব কিছু বলে, সবকিছু শুনে আরাফের বাবা ও খুব কষ্ট পাই। সেদিন যদি উনি রুবার কথা শুনে এসব না করতেন তাহলে হয়তো এসব কিছু ই হতো না। সব ঠিক থাকতো।

সব কিছুর জন্য এখন উনি নিজেকেই দায়ী করছেন। তাই উনি ঠিক করেছেন। উনিই সব ঠিক করে দেবেন।

আর কোনো কষ্ট পেতে দেবে না নিজের ছেলেকে। দরকার হলে মারিয়ার বাবার পায়ে ধরে উনার কাছে উনার মেয়েকে ভিক্ষা চাইবেন।


পর্ব ১৫

সকাল বেলায় ড্রয়িং রুমে আওয়াজ শুনে মারিয়ার ঘুম ভাঙে। ও কিসের আওয়াজ আসছে তা দেখার জন্য ড্রয়িং রুমে যায়।

ড্রয়িং রুমে যেয়ে যা দেখে তাতে তো ও চোখ চড়ক গাছে। কারণ এখানে আরাফ। ওর বাবা মা। বোন। দুলাভাই। কবির। মালা সবাই উপস্থিত আছে।

সকাল সকাল এরা সবাই এখানে কি জন্য এসেছে। সেটাই বুঝতে পারছে না ও।

মারিয়ার পিছনে পিছনে অনিকা ও বাইরে আসে। এসে আরাফ কে দেখেই ছুটে ওর কাছে চলে যায়। আর টুপ করে ওর গালে একটা চুমু দিয়ে বলে,

_ প্রিন্স আংকেল তুমি এসেছো। সাথে দাদু দিদা ও এসেছে। ইয়ে কি মজা আজকে আমি আবার সবার সঙ্গে খুব মজা করবো।

ওর কথা শুনে মারিয়া ছাড়া সবাই হেসে দেয়। তারপর আরাফ মা অনিকা কে নিজের কাছে ডাকে।

_ দিদিভাই। আমার কাছে এসো।

অনিকা ও ছুটে উনার কাছে যায়। তারপর উনি বলে,

_ উনি তোমার আংকেল হয় না। দিদিভাই।

_ আংকেল হয় না। তাহলে কি হয়?

_ উনি তোমার বাবা।

_ বাবা! আমার বাবা। কিন্তু মাম্মা যে বলেছিলো আমার পাপপা আমাদের উপর রাগ করে বাইরে চলে গেছে।

_ হ্যা, কিন্তু এখন আবার ফিরে এসেছে।

_ তাই।

_ হুম। তাই।

তারপর অনিকা আবার আরাফের কাছে যায় আর বলে,

_ প্রিন্স আংকেল তুমি সত্যি আমার পাপা।

_ হ্যা, মা।

_ তাহলে তুমি আমাদের ছেড়ে রাগ করে চলে গিছিলে কেন। জানো আমার কতো মন খারাপ করতো। সবার পাপা তাদের সাথে থাকে। আর আমার পাপা থাকে না বলে,

_ সরি মাম্মা। আমি আর কখনো তোমাদের ছেড়ে যাবো না।

_ প্রমিস

_ প্রমিস

তারপর অনিকা আরাফা কে দেখিয়ে বলে,

_ পাপা। ইনি কে?

_ উনি তোমার ফুফি। আর ইনি তোমার আংকেল। আর এই যে এটা হলো তোমার ভাইয়া।

_ ভাইয়া। তোমার নাম কি ভাইয়া?

_ ফারুক।

এবার আরাফা ওদের দুজন কে ডেকে বলে,

_ মা। এবার ভাইয়া আর তুমি ওপাশে গিয়ে খেলো। কেমন।

_ ওকে। ফুফি। চলো ভাইয়া।

মারিয়া এতোক্ষণ সবকিছু নিরব দর্শকের মতো দেখছিলো। ও এখনো বুঝতে পারছে না যে এসব হচ্ছে টা কি।

এবার আরাফের মা মারিয়ার কাছে এগিয়ে আসলো।

_ কেমন আছো মা।

_ জি আন্টি ভালো। আপনি কেমন আছেন?

_ ভালো। তুই খুব রেগে আছিস আমাদের উপর তাই না রে মা?

_ ছি ছি! কি বলছেন। রেগে থাকবো কেন।

_ তাহলে আমাকে আন্টি বলছিস যে মা বলবি না আমায়।

উনার কথা শুনে মারিয়া চুপ করে আছে। তারপর আরাফের বাবা ওর দিকে এগিয়ে আসলো আর বললো,

_ আমি জানি মা। তুমি খুব রেগে আছো আমাদের উপর। আর সেটাই সাভাবিক। আর এসব কিছুর জন্য আমিই দয়ী। আমি যদি সেদিন তোমাকে মেনে নিতাম। তাহলে এতো কিছু ঘটতোই না। আজ আমি বুঝতে পারছি মা। সেদিন রুবার কথায় তোমাকে ভুল বুঝে কতো বড় অন্যায় করেছি।

এই বুড়ো বাপ টাকে মাপ করা যায় না মা।

_ ছি ছি। আংকেল এসব বলে আমাকে লজ্জা দেবেন না। এখানে আপনার কোনো দোষ নেই।

_ তুমি না বললেই তো সত্যি টা মিথ্যা হয়ে যাবে না মা। যাক সেসব কথা। সবকিছু ভুলে আবার নতুন করে শুরু করো না মা। ফিরে চলো তোমার নিজের সংসারে।

তখনই মারিয়ার বাবা এসে বলে,

_ হ্যা রে মা। উনারা সব বলেছে আমাদের। এখানে ওদের কোনো দোষ নেই মা। ওই রুবা আর রাজ মিলে সবাই কে ভুল বুঝিয়েছিলো। কিন্তু এখন তো যা হওয়ার হয়ে গেছে। তুই সব ভুলে আবার নতুন করে শুরু কর মা। আবার আরাফের কাছে ফিরে যা।

_ বাবা!

_ হ্যা রে মা। তোর বাবা ঠিক ই বলছে।ও তোকে এখনো খুব ভালোবাসে আর আমি খুব ভালো করেই জানি তুই মুখে না বললে ও এখনো আরাফ কে আগের মতোই ভালোবাসিস।

_ আর আমরা ও যে তোকে সুখি দেখে যেতে চায় রে মা। তোকে এভাবে কষ্ট পেতে দেখে গেলে আমরা যে মরে ও শান্তি পাবো না মা। তাই সব ভুলে আবার নতুন করে জীবন টা কে সাজিয়ে গুছিয়ে নে মা।

_ দেখ আমার কারো উপর কোন অভিযোগ নেই। কিন্তু আমি কারো কাছে ফিরে যেতে পারবো না। ইমপ্যাক্ট আমি সেটা চায় ও না। আমি আমার মেয়ে কে নিয়ে যেমন আছি বাকি জীবন টা ও সেভাবেই থাকবো। কারো দরকার নেই আমার জীবনে। আমি একাই ভালো আছি।

মারিয়া র কথা শুনে আরাফ অসহায় চোখে মারিয়ার দিকে তাকায়।

এবার আরাফের মা বলে,

_ তারমানে তুই আমাদের কে ক্ষমা করতে পারিস নি তাই না।

_ না মা। আমার সত্যি আপনাদের উপর কোনো রাগ বা অভিযোগ নেই।
কিন্তু আমি আপনার ছেলের কাছে আর ফিরে যেতে চায় না।

_ এরকম বলিস না মা। মাফ করে দে না আমার ছেলেটাকে। তোকে কষ্ট দিয়ে ও নিজেও যে ভালো ছিলো এতো বছর। কারণ ও যে আজও তোকে খুব ভালোবাসে।

_ হুহহহ। ভালোবাসা! যদি সত্যি ই আমাকে ভালোবাসতো না মা। তাহলে আর যাই হোক। কখনো অবিশ্বাস করতো না। একটা সম্পর্কের মূল ভিত্তি হলো বিশ্বাস। আর সেটাই নেই তখন সেই সম্পর্কে আবার নতুন করে আমি নিজেকে জড়াতে চায় না। আমায় ক্ষমা করবেন মা। আমি পারবো না ওর কাছে ফিরতে।
বলে ওখানে থেকে চলে আসে আর ঘরে যেয়ে কাঁদতে থাকে। কিছুক্ষণ পর ও ওর কাঁধে কারো হাতের স্পর্শ পাই ও পিছনে ফিরে দেখে আরাফ দাড়িয়ে আছে।

_ আপনি! এখানে কেন এসছেন। আমার যা বলার আমি বলে দিয়েছি।প্লিজ চলে যান এখান থেকে।

_ মারিয়া। আমি জানি আমি অনেক বড় ভুল করেছি। কিন্তু প্লিজ তুমি এভাবে আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিও না। আমায় মাফ করে দাও প্লিজ। আমি তোমাকে যতো টা কষ্ট দিয়েছি তার থেকে বেশি নিজে কষ্ট পেয়েছি কারণ আমি যে আজও ভালোবাসি তোমায়। প্লিজ আমায় ফিরিয়ে দিও না। আমি মরে যাবো তোমায় ছাড়া।

_ সেটা আগে ভাবা উচিত ছিলো। কই সেদিন তো একবারও আপনি আমার কথা শোনেন নি। এতোবার আপনাকে বোঝানোর চেষ্টা করেছিলাম। শুনেছিলেন আমার কথা। উল্টে দূর দূর করে তাড়িয়ে দিয়েছিলেন। সেদিন কোথায় ছিলো আপনার ভালোবাসা যে অন্যের কথা বিশ্বাস করে নিজের ভালোবাসা কে অবিশ্বাস করেছিলেন। আর আজ আপনি সত্যি টা জানতে পেরেছেন বলে আবার আমার কাছে এসছেন। যদি আজও আপনি এটা না জানতেন তাহলে কিন্তু আজও আসতেন না। তাই প্লিজ আমাকে বুঝিয়ে কোন লাভ হবে না৷ আপনি এখন আসতে পারেন।

_ বেশ। চলে যাচ্ছি আমি। কিন্তু আমি আবার আসবো। দেখি তুমি কতোবার আমাকে ফিরিয়ে দাও।

এই বলে আরাফ ওখান থেকে চলে আসে আর মারিয়া এবার কাদতে থাকে।

সেদিনের মতো সবাই চলে আসে মারিয়াকে অনেক বুঝিয়ে ও কেউ রাজি করাতে পারেনি।তাই বাধ্য হয়ে চলে আসে।

কিন্তু আরাফ হাল ছেড়ে দেয় নি ও প্রতিদিন মারিয়ার কাছে আসে ওকে বোঝানোর চেষ্টা করে। মারিয়ার বাবা মা। কবির মালা সবাই মারিয়াকে বোঝানোর চেষ্টা করে কিন্তু মারিয়া তার সিদ্ধান্তে অটল। সে কারো কথায় শুনছে না।

এভাবে আরো একমাস পার হয়ে যায়।

বিকালে মারিয়া অফিস থেকে ফিরছিলো তখন আরাফ ওর সামনে আসে। প্রতিদিনই আরাফের এই বিরক্ত করা। আর আজ আবার রাস্তায় দাঁড়িয়ে এরকম করছে এতে মারিয়া খুব রেগে যায় আর বলে,

_ কি সমস্যা আপনার। আবার কেন এসেছেন।

_ কি করবো বলো। তুমি ই তো বাধ্য করছো তোমাকে ডিসটার্ব করতে। আমার কথা মেনে নিয়ে যদি তুমি এতোদিন তুমি আমার সাথে চলে যেতে তাহলে তো আর আমাকে এতো কষ্ট করতে হতো না। অনেক তো হলো আর কতো ঘুরবো বল তো এবার প্লিজ চলো না জান। যতোদিন ঘুরছি। তুমি সব মেনে নিলে। এতোদিনে আমার মেয়ের জন্য ভাই নিয়ে আসার প্রিপারেশন শুরু করে দিতে পারতাম।
এ কথা শুনে মারিয়া আরো রেগে গিয়ে বলে,

_ কে বলেছে আপনাকে আমার পিছনে ঘুরতে। কেন পড়ে আছেন আমার পিছনে। কেন বুঝতে পারছেন না আপনাকে জাস্ট সহ্য হচ্ছে না। আপনাকে দেখলে এখন নিজের প্রতিই ঘৃণা হয় আমার এটা ভেবে যে আপনার মতো একটা মানুষ কে আমি ভাললবেসেছিলাম। যে কিনা আমাকে বিশ্বাস ই করে না।

_ মারিয়া। আমি তো মানছি আমি ভুল করেছি। কিন্তু তারজন্য তোমার কাছে ক্ষমা ও চেয়েছি। আজ একটা মাস ধরে কুকুরের মতো তোমার পিছনে ঘুরছি। নিজের মেয়ে কেও এতো কাছে থাকতে ও তার পাশে ও তুমি আমাকল যেতে দিচ্ছো না। আর কতো শাস্তি দেবে আমায়।

_ আমি তো বলিনি আমার পিছনে ঘুরতে। আপনি নিজের মতো করে সুখে থাকুন না। কেন এতো কথা শোনার পর ও আমার কাছেই আসেন।

_ আমি তো..

_ আর কিচ্ছু শুনতে চায় না আমি। আজকের পর থেকে যদি আপনি আমার সামনে আসেন তাহলে। তাহলে আমি নিজেকে ই শেষ করে দেব।

_ মারিয়া!

তারপর একটু থেমে আবার বললো,

_ ওকে। বেশ। আমার জন্য যখন তোমার এতো অসুবিধা হয়। তখন আজ থেকে আমি আর কোনোদিন ও তোমাট সামনে আসবো না। আর সহ্য করা লাগবে না আমাকে। বাই ভ ভালো থেকো। আ আর আ আমার মেয়েকে দেখে রেখো। ওকে বলো ও যেন বড় হয়ে আমাকে ভুল না বোঝে। বলো ওর বাবা ওকে সত্যি অনেক ভালোবাসে। নিজের চেয়ে ও বেশি। আ আসছি। বাই।

তারপর আরাফ ওখান থেকে গাড়ি নিয়ে চলে গেলো। আর মারিয়া ওখানেই দাঁড়িয়ে আছে। ও বুঝতে পারছে না আরাফ এভাবে কেন বললো৷ কোথায় যাবে ও তাহলে ও কি আর কোনো দিনও সত্যি ই আসবে না।

তারপর মারিয়া নিজেকে সামলে নিয়ে বাড়ি তে চলে গেলো।


পর্ব ১৬ (শেষ পর্ব)

মারিয়া বাড়ি এসে কোন কাজেই মন বসাতে পারছে না। ওর শুধু আরাফের বলা কথা গুলোই মনে উঠছে। ওর এবার সত্যি ই ভয় হচ্ছে আরাফ সত্যি সত্যি আবার ওর থেকে দূরে চলে যাবে না তো।

ভয় হওয়ার ই কথা। কারণ মুখে যতই বলুক না কেন ও আরাফের কাছে যেতে চায় না। ওর মুখ দেখতে চায় না কিন্তু সত্যি তো এটাই যে মারিয়া এখনো আরাফ কে ঠিক ততোটাই ভালোবাসে যতোটা আগে বাসতো। শুধু মাত্র আরাফের সেদিনের ব্যবহারের জন্য ও ওকে মেনে নিতে পারছে না। যতো বারই ও ভাবছে। আরাফ কে মেনে ততোবারই ওর সেদিনের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে।

কিন্তু মারিয়া এবার ঠিক করে নেই ও আর আরাফ কে কষ্ট দেবে না। এই এক মাসে অনেক কষ্ট দিয়েছে ওকে। অনেক খারাপ ব্যবহার করেছে ওর সাথে। আর না এবার আরাফ আসলে মারিয়া ওর সাথে যাবে।

এসব ভাবতে ভাবতে ই ওর ফোন বেজে ওঠে। মারিয়া ওর ভাবনাতে এতো মগ্ন ছিলে যে ফোন দুই বার বেজে কেটে গেল কিন্তু ও বুঝতে ই পারলো না।

তিন বার বেজে উঠলে ওর হুশ আসে। ও তাড়াতাড়ি ফোন হাতে নিয়ে দেখে যে নিলীম ফোন দিয়েছে।

ও ফোন রিসিভ করে কথা বলতে ই ওপাশ থেকে নিলীমের ভিত কন্ঠ ভেসে আসলো।

_ ভা ভাবি

_ নিলীম ভাইয়া। কি হয়েছে? আপনার কন্ঠ এরকম লাগছে কেন।

_ ভাবি ফা আরাফ

_ আরাফ! কি হয়েছে আরাফের।

_ আরাফের আসলে।

_ ভাইয়া বলুন না প্লিজ। আরাফের কি হয়েছে?

_ আরাফ এক্সিডেন্ট করেছে।

_ ওয়াট! ক কি বলছেন এসব।

_ হ্যা, ভাবি আপনি এখুনি সিটি হসপিটালে চলে আসুন।

_ আমি এক্ষুনি আসছি।

তারপর মারিয়া কোনরকম ওর মাকে বলে ছুটে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে। ওর পিছনে ওর বাবা মা। কবির মালাও অনিকা কে সাথে নিয়ে চলে আসে।

মারিয়া হসপিটালে পৌঁছে দেখে আরাফের বাবা মা। বোন সবাই বাইরে বসে আছে। নিলীম ও আছে। ও ছুটে ওদের কাছে যায়।

মারিয়াকে দেখে আরাফা ছুটে ওর কাছে আসে।

_ মারিয়া। তুমি এসেছো। আমি যানতাম তুমি আসবে।

_ আপু আরাফ এখন কেমন আছে। ওর কিছু হবে না তো। ওর কিছু হলে যে আমি ও বাঁচবো না।

তখন নিলীম এসে ওদের পাশে দাড়ায়।

_ চিন্তা করো না। আরাফ একদম ঠিক হয়ে যাবে।

ওদের কথার মাঝেই ওটির আলো নিভে যায়। আর ডাক্তার বেরিয়ে আসে।

ডাক্তার কে দেখে সবাই এগিয়ে যায়। ওর বাবা জিজ্ঞেস করে।

_ ডক্টর। আমার ছেলে।

_ ডোন্ট ওয়ারি মিঃ চৌধুরী। আরাফ এখন একদম বিপদ মুক্ত। আঘাতটা খুব বেশি জোরালো নয়। এজন্য সমস্যা হয়নি। একটু পরেই ওকে কেবিনে সিফট করা হবে। আর কালকের মধ্যে বাড়ি ও নিয়ে যেতে পারবেন। সপ্তাহ খানিক বেড রেস্টে থাকলেই ও একদম ঠিক হয়ে যাবে।

এরই মধ্যে মারিয়ার বাবা মা। কবির মালাও অনিকা কে নিয়ে চলে এসেছে।

ডক্টরের কথা শুনে সবাই নিশ্চিন্ত হয়। কিছু ক্ষন পরের ওকে কেবিনে সিফট করা হয়। সবাই একে একে ওর সাথে দেখা করে। সবার শেষে মারিয়া ভিতরে যায়। মারিয়া যেয়ে দেখে আরাফ শুয়ে আছে আর অনিকা ওর পাশে বসে আরাফের সাথে কথা বলছে আর ওর মুখে চুমু খাচ্ছে। মারিয়ার খুব ভালো লাগছে বাবা মেয়ের এই ভালোবাসা দেখে।

মারিয়াকে দেখে ওরা সবাই বেরিয়ে যায় অনিকা কে নিয়ে। তারপর মারিয়া যেয়ে আরাফের পাশে বসে। আরাফ একবার মারিয়ার দিকে তাকিয়ে আবার চোখ ফিরিয়ে নেই তা দেখে মারিয়া বলে,

_ কি হলো কথা বলবেন না আমার সাথে। আমি খুব খারাপ তাই না। শুধু আপনাকে কষ্ট দিই। আজ আমার জন্য ই আপনার এই অবস্থা।

বলে কাঁদতে শুরু করে। মারিয়ার কান্না দেখে আরাফ আর চুপ করে থাকতে পারে না। হাত দিয়ে ওর চোখের পানি মুছে দিয়ে বলে,

_ এই পাগলী, কাঁদছো কেন। দেখো আমি একদম ঠিক আছি। আর এখানে তোমার দোষ কোথায়। আমি তোমার সাথে যে অন্যায় করেছি। তার জন্য তুমি যা যা বলেছো তা কিছু ই না।

_ কিন্তু আমার কথায় কষ্ট পেয়েই তো আপনি হয়তো জোরে গাড়ি চালাচ্ছিলেন। তার জন্য এরকম হলে না হলে তো তা নাহলে হতো না।

_ ধুর পাগলি। এসব নিয়ে কেন মন খারাপ করছো বলো তো এখন তো আমি ঠিক আছি।

_ হুম

_ মারিয়া। আমায় ক্ষমা করেছো তো। এবার প্লিজ ফিরে এসো আমার কাছে। আমি আর পারছি না তোমাকে আর অনিকা কে ছেড়ে থাকতে। প্লিজ। এবার আামাকে ফিরিয়ে দিলে আমি সত্যি সত্যি ই মরে।

_ হুস। আর একবার এমন কথা বলবেন না। আপনার কিছু হলে আমি করে থাকবো। আমি ও যে পারবো না আপনাকে ছেড়ে থাকতে কারণ আমি যে আজও ভালোবাসি আপনাকে ঠিক আগের মতো। আপনি তো শুধু আমার মুখের কথাটাই শুনলে। কিন্তু আপনাকে কষ্ট দিয়ে যে আমি ও ভালো নেই এটা বোঝার চেষ্টা করলেন না। আপনি খুব খারাপ।

_ আই নো। বাট কিছু করার নেই। এই খারপ লোকটার সাথে ই যে তোমাকে সারাজীবন থাকতে হবে। কি থাকবে না।

_ থাকতে যে আমাকে হবেই। কারণ আমিও যে এই খারাপ মানুষ টাকে খুব ভালোবাসি। তাই এই মানুষ টাকে ছাড়া যে আমি থাকতেই পারবো না।

_ আই লাভ ইউ জান

_ লাভ ইউ টু

বলে মারিয়া আরাফ কে জড়িয়ে ধরলো ঠিক তখনই অনিকা ভিতরে ঢুকলো আর ওদের কে এই অবস্থায় দেখে কোমরে দুই হাত দিয়ে ওদের সামনে এসে দাড়ালো আর বললো,

_ মাম্মা পাপা। আমরা ওখানে বাইরে দাড়িয়ে চিন্তা করছি আর তোমরা এখানে রোমাঞ্চ করছো।

অনিকার কথা শুনে ওরা দুজন ই দূরে সরে গেলো একে অপরের থেকে। তারপর আরাফ হেসে অনিকা কে কাছে টেনে নিয়ে বললো,

_ ওলে বাবা লে। আমার মামনি টা দেখছি রোমাঞ্চ ও বোঝে।

_ হুম বুঝি তো। টিভি তে দেখছি আবার বাবাই আর মামনি কে ও দেখেছি আর আজ তোমাদের দেখলাম।

অনিকা একথা বলার সময় কবির আর মালাও ভিতরে আসছিলো আর অনিকার কথা শুনে কবিরের কাশি শুরু হয়ে গেলো। এই মেয়েটা যে ওর ইজ্জতের ফালুদা করে দিলো সবার সামনে।

তারপর সবকিছু ঠিক করে আরাফ কে বাড়ি তে নিয়ে আসে মারিয়া ও ওর সাথেই আসে।

ওর শশুর শাশুড়ী খুব খুশি হয়।ছেলে বৌমা নাতনি কে নিয়ে আজ তাদের সংসার টা পরিপূর্ণ হয়ে গেলো।

এভাবে এক সপ্তাহ কেটে যায়। আরাফ এখন পুরোপুরি সুস্থ।

আরাফ সুস্থ হয়ে উঠলে ওর বাবা আরাফ আর মারিয়ার ওনারে একটা বড় পার্টির আয়োজন করে ওদের বাড়িতে। কারণ এক মাত্র ছেলের বিয়েতে ও কোনো অনুষ্ঠান করতে পারেনি তাই সেটা এখন করছে। মারিয়ার বাবা মা ও খুব খুশি মেয়ে কে খুশি দেখে।

পার্টিতে আরাফ রুবা আর রাজ কে ও দাওয়াত করেছে। কারণ এখন তো আর কোনো সমস্যা নেই।

রুবা রাজ ওদের পরিবারের সবার কাছ থেকে ও মাফ চেয়ে নিয়েছে।

আজকে সবাই খুব খুশি সাথে কবির আর মালার জন্য আজ আরো খুব বড় একটা খুশির খবর ও পেয়েছে সেটা হলো মালা মা হতে চলেছে। হ্যা অনেক চিকিৎসা করার পর আল্লাহর রহমতে শেষমেষ ওদের ঘরে ও সন্তান আসতে চলেছে। এই নিয়ে ও সবাই খুব খুশি।

এভাবে খুব আনন্দের সাথে অনুষ্ঠান শেষ হয়। রাতে আরাফ আর মারিয়া মাত্র ঘরে এসেছে। ওরা তো ঘরে ঢুকেই অবাক কারণ ঘর টা একদম ফুলসজ্জার ঘরের মতো সাজানো। এসব নিলীম। রায়হান সহ আরাফের সব বন্ধু রা মিলে করেছে।

মারিয়া কিছু বলতে যাবে তার আগেই অনিকা ঘরে আসলো। আরাফ অনিকা কে দেখে ওর কাছে যেয়ে ওকে কোলে নিলো।

_ মাম্মা। অনেক রাত হয়ে গেছে তো। ঘুম পাচ্ছে না তোমার?

_ হ্যা পাপা। তাই তো তোমাদের বলতে এলাম আমি আজ দাদুর কাছে থাকবো। আজ তোমরা দুজনে থাকো। আবাট ভয় পেও না যেন। কাল থেকে আমি আাবার তোমাদের সাথে থাকবো।

ওর কথা শুনে ওরা দুজন ই হেসে দেয়।

_ ওলে আমার পাকে বুড়ি রে। ঠিক আছে মা তুমি যাও। আমরা ভয় পাবো না।

_ ওকে পাপা।

বলে অনিকা চলে যায়।

তারপর আরাফ দরজা বন্ধ করে মুচকি হেসে মারিয়ার দিকে এগিয়ে যায়। আর আরাফ কে এভাবে আসতে দেখে মারিয়ার হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে কারণ ওর হাসি ও খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে আরাফের মতলব ভালো না।

তারপর আরাফ এগিয়ে যেয় ওকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে আর মারিয়া ছাড়ানোর চেষ্টা করে।

_ এই ক কি করছেন। ছ ছাড়ুন বলছি। খুব ঘুম পাচ্ছে আমার। অনেক রাত হয়ে গেছে।

_ তা বললে তো হবে না বেবি। আজ নো ঘুম। শুধু ই রোমাঞ্চ। দেখ না মেয়ে ও কেমন তার বাবার দঃখ বোঝে। সে থাকলে তার বাবা রোমাঞ্চ করতে পারবে না বলে সে মার কাছে চলে গেলো। আর তুমি কিনা আনরোমান্টিকের মতো কথা বলছো। ছি! এটা আমি তোমার থেকে আশা করিনি।

_ হুহহ। ঢং। এসব বলে আমাকল পটাতে পারবেন না। অনেক কষ্ট দিয়েছেন আমাকে। এবার আমি তার শোধ তুলবো। আমি যতো দিন না বলবো আমাকে টাচ ও করতে পারবো না।

_ ক কি সব বলছো। এতো বড় শাস্তি তুমি আমায় দিতে পারো না। আর আমি ভুল করেছি তার জন্য ক্ষমা ও চেয়েছি সো আর কোনো ওয়েট করতে পারবো না। আর তাছাড়া একটা কথা ভাবো জান। দেখ আমাদের মেয়েটা আমাদের কততো ভালোবাসে। সো আমাদের ও উচিৎ না বলো। আমাদের মেয়েটার কষ্ট বোঝা।

_ মেয়ের কষ্ট মানে! কিসের মধ্যে কি আনছেন।

_ আরে ঠিক ই তো বলছি। মেয়েটা আর কতোদিন একা থাকবে। বলোতো। ওর তো একটা খেলার সাথি দরকার। তাই আমাদের উচিৎ না ওর জন্য একটা ভাই বা বোন আনার ব্যবস্তা করা। আর সেটা করার জন্য তো তাহলে….

_ এ্যাএএএ। যতোসব খালি রোমাঞ্চ করার ধান্দা। এতো রোমাঞ্চ কোথা থেকে আসে।

_ সেটা মুখে না বরং প্রাকটিকালি দেখিয়েই দিই কি বলো!

_ ধ্যাৎ

তারপর ওরা দুজনেই ভালোবাসা র সাগরে ডুব দেয়।

আটমাস পরে…

_ পাপা। মাম্মা র পেট টা আস্তে আস্তে এরকম ফুলে যাচ্ছে কেন?

_ কারণ ওখানে তোমার ভাই বা বোন আছে মা। যে কিছু দিন পর আমাদের মাঝে চলে আসবে আর তোমার সাথে খেলা করবে।

_ ইয়ে কি মজা আমার আরো একটা ভাইয়া হবে ফাইম ভাইয়া আর মাহিন ভাইয়ার মতো। (মাহিন কবির আর মালার ছেলে)

_ হ্যা মা।

_ আচ্ছা পাপা। তোমরা থাকো আমি দাদুর কাছে বলে আসি আমার ভাইয়া আসবে সেটা।

_ ঠিক আছে মা যাও।

তারপর অনিকা চলে যায় আর আরাফ যেয়ে মারিয়াকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে
_ এই কি করছো। ছাড়ো৷ এখন কিন্তু একদম দুষ্টুমি করবে না।

_ ডোন্ট ওয়ারি জান। এখন আমি কিচ্ছু করবো না। শুধু আমার ছেলে মেয়েদের মাম্মা কে অনেক ভালোবাসবো।

_ ধ্যাৎ। দুই বাচ্চার বাবা হতে চললে। এখনো শুধরালে না।

_ আর শুধরাতে চায় ও না। সারাজীবন এরকম ই থাকতে চায়। আর তোমাকল ভালবাসতে চায়। আই লাভ ইউ সোনা।

_ আই লাভ ইউ টু জান। আমি এভাবেই সারাজীবন তোমার বুকে ই থাকতে চায় বলে ওকে জড়িয়ে ধরলো।

এইভাবেই দুষ্ট মিষ্টি ভালোবাসার মধ্য দিয়েই চলতে থাকে ওদের সংসার। খুব ভালো থাকুক ওরা দুজনে ওদের মেয়ে আর যে অনাগত সন্তান আসছে তাকে নিয়ে। ভালোবাসার রঙে ভরে উঠুক ওদের জীবন।

সমাপ্ত

(হ্যাপি ইন্ডিং চায়। হ্যাপি ইন্ডিং চায়। সবার এক কথা। নিন সবার কথা রাখলাম। এবার আপনারা হ্যাপি তো। জানি না গল্প শেষ অবধি কেমন হয়েছে।আমি আমার সবটা দিয়ে চেষ্টা করেছি আপনাদের মন মতো লেখার। জানি না কতোটুকু পেরেছি। আমি এতোটা ভালো রাইটার নয়। শখের বসে লিখি। সেটা যদি একটু ও আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলেই আমার লেখা সার্থক। ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আর এভাবেই আমার পাশে থাকবেন যাতে আমি আরো ভালো ভালো গল্প নিয়ে আপনাদের মাঝে উপস্থিত হতে পারি। ধন্যবাদ সকলেকে)

আজও ভালোবাসি
লেখিকাঃ মাহিয়া মারিয়া

আরো পড়ুনঃ আজও ভালোবাসি – সিজন ১ । খুনশুটি ভালোবাসার গল্প

আরো পড়ুনঃ আজও ভালোবাসি – সিজন ২ । খুনশুটি প্রেম

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *