রাণীমা (শেষ খণ্ড) – bhalobasar golpo kotha: সব দোলা সহ্য করতে পারে না। অসহ্য যন্ত্রণার অনুভূতি এইটা। না পারছে অতীত ভুলে শামীমের হাত ধরতে আর না পারছে শামীমকে ভুলে থাকতে। ভুলতে চাইলেও ভুলতে পারছেনা কারণ শামীম নাছোড়বান্দা।
পর্ব ১৪
রাণীর রুমে রাণী আর রিমন বিজনেস নিয়ে ডিসকাস করছে। এর মধ্যে ফোন বেজে উঠে। আননোন নাম্বার দেখে রিমনের হাতে দেয়।
~ আসসালামু আলায়কুম।
~ অয়ালাইকুম সালাম। রিমন তোমার রাণীমাকে ফোন টা দাও।
রিমন রাণীকে ফোন দেয়।
~ হ্যাঁলো
~ কেমন আছ রাণী সাহেবা?
~ আলহামদুলিল্লাহ। আপনি কেমন আছেন?
~ এই মুহুর্তে অনেক ভালো। এতটা ভালো খুব কম সময় থেকেছি। বাই দা ওয়ে, আজ আমার সাথে ডিনারে যাচ্ছ তুমি।
~ সরি মি শ্রাবণ। আমি কারো সাথে পার্সোনাল ভাবে ডিনারে যাই না।
~ সেইটা আমার সৌভাগ্য।
~ মি শ্রাবন আমাদের সম্পর্ক বিজনেস অব্দি। পার্সোনাল লাইফে এর কোন ভিত্তি নেই। সো আল্লাহ হাফেজ। ভালো থাকবেন।
রিমন next Thursday hospital opening date fixed So, আমার হয়ে তুমি মি বিজয় কে বলে দিবে। আমি নিজে গিয়ে ওপেন করব আর সবাইকে সবার দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে আসব। ৪ টা ambulance পাঠিয়ে দাও। doctor দের যয়েন করতে বলো। পুরো এলাকা announce করে দাও। মি বিজয় কে ডেকোরেটিং এর দায়িত্ব দিয়ে দাও। কার্ড কাল সকালে ডেলিভারি দিয়ে দিবে। কার্ড নিয়ে কাল রওনা দিবে। যাওয়ার সময় আমার সাথে দেখা করে যাবে।
ওকে রাণীমা। আমি তাহলে আসি।
ডিনার করে যাও
রাণীমা আসব?
এসো এলিনা।
রাণীমা স্যার বললেন রান্না না করতে। আপনাকে নিয়ে বাইরে খাবেন। স্যার কেফে স্টেশন রেস্টুরেন্টে আছেন। আপনাকে ৯ টার মধ্যে যেতে বলেছেন।
ওহ আচ্ছা ঠিক আছে। যাও তুমি। রিমন চল যাওয়া যাক।
জী রাণীমা।
রাণী রেস্টুরেন্টে ডুকেই দেখে ইশান, সোহানা, মনা, শাহেদ টেবিলে বসে গল্প করছে। তারমানে একসাথে ডিনার করার জন্য ডেকেছে। রাণীর মুখে হাসি ফুটে ওঠে। এগিয়ে যায়। মনা রাণীকে দেখে লাফিয়ে গিয়ে হাগ দেয়। শাহেদ ফ্লাইং কিসি দেয়। সোহানা ইশারায় নিজের কাছে ডেকে নিয়ে কপালে আলতো ছোঁয়া দিয়ে দেয়।
~ আমার মিষ্টি পরী বাচ্চা টা কেমন আছে?
~আলহামদুলিল্লাহ আন্টি। আপনি কেমন আছেন?
~ ভালো। বস। রিমন দাড়িয়ে কেন? বস।
~ জী আন্টি।
যে যার পছন্দ মত খাবার অর্ডার করে দেয়। খাবার আসতে কিছুক্ষণ সময় লাগবে। সবাই গল্প করতে থাকে। রাণীর খুব ভালো লাগে এদের সাথে সময় কাটাতে।
রাণী আর মনা ~ শাহেদ আর রিমন ~ ইশান আর সোহানা গল্ল করছে। এতক্ষণে খাবারও চলে আসছে।
ফট করে রাণীর পাশের চেয়ারে হন্তদন্ত হয়ে বসে ~ sorry everyone sorry I’m too late Please don’t mind Don’t mind uncle
কথা শুনে রাণী পাশে হা তাকিয়ে আছে একি শ্রাবণ খান। এই খানে কেন?
রাণীকে হা করে থাকতে দেখে টেবিল থেকে একটা চিকেন বল নিয়ে মুখে ঢুকিয়ে দেয়। তা দেখে সবাই হোহো করে হেসে ওঠে। এমন কাজে রাণী কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে সামনে তাকিয়ে মুখ থেকে বের না করে চিবিয়ে খেয়ে নেয়।
ইশানঃ ইয়াং ম্যান তোমার জন্য অর্ডার করে দেই? কি খাবে বলো?
শ্রাবণঃ no no uncle We are a family now It’s not business Clint’s dinner So, extra Dish no need
রাণী চুপচাপ বসে আছে। এইটা যে তাকেয় বলা হল এইটা সে ভাল ভাবেই বুঝতে পেরেছে। কিন্তু মি শ্রাবন এখানে কেন?
সোহানাঃ মিষ্টি পরী তুমি তো ওকে চেনই। একসাথে কাজ করছ।
শ্রাবনঃ মম তোমাকে আর কষ্ট করে পরিচয় করিয়ে দিতে হবে না। রাণী চৌধুরানী know me
রাণীঃ মনে মনে ওহ ইনি আন্টির ছেলে।
সকালে …
রাণীমা এইযে কার্ড। আমি তাহলে আসি। ওখানে গিয়ে সব ওকে করে জানাব।
রিমন চলে যেতে নিলে রাণী পেছন থেকে ডাক দেয়
~ রিমন
~ হ্যাঁ রাণীমা
~ মি বিজয়ের ফ্যামিলি কে কাল আমার মেনশনে সিফট করতে বলবে।
~ হ্যাঁ
~ ইয়াহ। ওদের বলবে রাণীমা কাল থেকে এই বাড়িতে থাকার জন্য বলেছে। চাবিটা নিয়ে যাও। মিসেস বিজয়ের হাতে এই চাবিটা দিবে।
~ কিন্তু রাণীমা আমি বললেই তারা আমার কথা শুনবে কেন?
~ না করলে আমার সাথে কথা বলতে বলো।
~ জি। আসি।
বিজয় দোলা কে নিয়ে কলেজ থেকে বাসায় ফিরছিল। রিমন তাদের দেখে গাড়ি থেকে নেমে ওদের সামনে আসে।
~ আংকেল আসসালামু আলায়কুম।
~ অয়ালাইকুম ছালাম।
~ আংকেল কোথায় গিয়েছিলেন?
~ এইতো দোলাকে কলেজ থেকে নিয়ে আসলাম।
রিমন পেছনে আগে খেয়াল করেনি। বিজয়ের কথা শুনে পেছনদিকে তাকিয়ে দেখে একটা নিল পরী কাঁচুমাচু হয়ে দাড়িয়ে আছে। দোলাকে এভাবে দেখে রিমন হেসে ফেলে। এই মেয়েকে দেখলে তার রাণীমার কথা মনে পড়ে আর শান্তি লাগে। জিজ্ঞাসা করে
~ কেমন আছ দোলা মনি?
~ আলহামদুলিল্লাহ আপনি?
~ আমিও ভালো আছি। আংকেল আমি আপনার কছেই আসছিলাম আর আদারস কিছু কাজ ছিল। গাড়িতে উঠুন একসাথেই যাই। দোলা মনি আস গাড়িতে উঠো।
বিজয় গিয়ে গাড়িতে বসে পড়ে। দোলাও বসে।
সব দিকে কাজ সেরে রিমন এবার বিজয়ের বাসায় এসেছে। সোফায় বিজয়, মিসেস বিজয় আর রিমন বসে আছে। দোলা পাশেই দাড়িয়ে আছে। রিমন একবার দোলার দিক তাকিয়ে বলতে শুরু করে ~
আংকেল বুধবার হসপিটালের উদ্বোধন। ডেকারেশনের দায়িত্ব টা আপনাকে নিতে বলেছে। আর রাণীমা আপনাদের একান্ত অনুরোধ করেছেন যেন আপনারা এ বাসা ছেড়ে রাণীমার বাসায় শিফট করেন। এইটা বাসার কি। আন্টি নিন।
রিমনের কথা শুনে কেউই এতটা বিচলিত হল না। তারা যেন জানতো রাণীমা এমন প্রপোজাল দিবে। কিন্তু বিশ্বাস করতে পারছে না। মিসেস বিজয় বলল
~ আমরা রাণীমার বাসায় কেন উঠব। আমাদের তো এমন কোন কথা হয়নি। তাছাড়া রাণীমা এমন আবদার কেন করবে?
~ আন্টি আপনি বরং রাণীমার সাথে কথা বলে নিন। আমি ফোন দিচ্ছি।
রাণী অফিসে কাজ করছিল। রিমনের ফোন পেয়ে বুঝতে আর বাকি রইল না যে ওরা কথা বলবে।
~ হ্যালো রাণীমা। আন্টি কথা বলবে আপনার সাথে।
~ হুম দাও।
~ হ্যালো আসসালামু আলায়কুম রাণীমা।
~ আপনাদের আমার বাসায় সিফট করতে বলা হয়েছে। আগামী কাল এর মধ্যেই সিফট করবেন।
~ কিন্তু রাণীমা আমরা কে
~ কারন আমি চেয়েছি তাই।
~ আপনি অধিকার দেখা
~ আমার অধিকার আছে জন্যই আমি অধিকার দেখাই। আপনার ফেমেলির উপর সবথেকে বেশি অধিকার আমার।
রিমন চলে এলে বিজয় নিঃশব্দে চোখের জল ফেলে। মিস
~ শব্দ করে কাঁদবে। নিঃশব্দে বন্ধ হয়ে আসে।
~ জানি। আপনি এখানে যে ইমপর্টেন্ট কিছু হলে তো ফোনেই বলতে পারতেন।
~ হুমমম। ফোনে ভয়েজ শুনতে পেতাম। দেখতেতো পেতাম না। যাই হোক তোমার মুড খারাপ। আমারো কাজ আছে। আসি।
শ্রাবণ প্রতিদিন রাণীকে ফোন দেয়। রাণী কথা বলতে না চাইলেও শ্রাবণ জোর করে কথা বলে।
রাতে এলিনা এসে তিনবার খাবারের জন্য ডেকে গেছে। রাণী খাবে না বলে দিয়েছে। খিদে নেই তার। জানালার পাশে দাঁড়িয়ে নিস্তব্ধ শহর টাকে দেখছে। কাল রাণী নিজের জন্মস্থানে পা রাখবে দীর্ঘ দশ বছর পর। কী জানি ছোট্ট বৃষ্টির কথা কেউ মনে রেখেছে কিনা। বৃষ্টির অস্তিত্ব আছে কিনা।
বৃষ্টিকে কেউ চিনবে কিনা। আম্মু আব্বু কি চিনবে আমায় নাকি রাণীমার আসনেই বসিয়ে রাখবে? তাদের সাথে কথা বললে কেন মনে হয় তারা আমায় চিনে। টপ টপ করে চোখের পানি ঝরে পড়ছে। ভয়ংকর সেই অতীতে ডুব দেয় রাণী। এরকম এই রাতে জীবনের মোর ঘুরে গিয়েছিল তার। সেদিন ~
সোহানঃ দেখ বিজয় বাড়ির মেয়ে বাড়িতেই থাকবো। এতে তো তোরই ভাল হবে। তোর এত জমি জমা দেখব কে? আমরাইতো দেখমু। আমরা ছাড়া তোর এতকিছু খাব কারা?
বিজয়ঃ ভাই আমি নিঃসন্তান না। আমার দুইটা মেয়ে আছে। আমার মেয়ের ভবিষৎ আছে।
সোহানঃ তোর মেয়ে বিয়ে দিলেই তো শেষ। বড় টারে সবুজের কাছে বিয়ে দে আর ছোট টারে ভাল ঘর দেখি গছিয়ে দিবনি।
বিজয়ঃ আমার মেয়ে বানের জলে ভেসে আসে নাই যে মানুষের কাছে গছিয়ে দেওয়া লাগবো। আমার নামে ৫ বিঘা জমি তুমি দখল করে খাইতেছ। আমার জমি আমি নিয়ে নিমু। দেখি কেমনে আটকাও।
সোহানঃ আরে তোর জমি তো আমরাই ভোগ করমু। ভাতিজারে না দিয়ে তুই পরের পোলারে দিবার চাস। তোর মেয়েরে আমার ছেলের বউ বানিয়ে তোর সবকিছু আমরাই রেখে দিমু।
বিজয়ঃ কোন দিন না। ছেলে মেয়ে সমান অধিকার। বড় মেয়েরে তোমার ছেলের কাছে বিয়ে দিলে তোমরা সব নিয়ে আমার ছোট মেয়ে টারে ভাসায়ে দিবা। বাপ হয়ে মেয়ের হক মারতে দিমু না আমি। তোমার ওই কুলাংগার ছেলের কাছে তো কোন দিনও আমার ফুলের মতো মেয়ের বিয়ে দিমুনা।
সোহানঃ কিহ এত বড় কথা আমার ছেলেরে কুলাংগার বলস তুই। সাহস তো কম না তোর।
বিজয়ঃ কুলাংগার ছেলে কে কুলাংগার বলমু নাত কি বলমু? ওর বান্ধবীর সাথে খারাপ আচরণ করে তো মেয়েটার জীবনটাই নষ্ট করে দিল। ওই ছেলের কাছে আমার মেয়ে কিছুতেই দিব না।
সোহানঃ এত বড় কথা আজি তোর মেয়ের আমার ছেলের সাথে বিয়ে হব। তুই কিছুতেই আটকাতে পারবিনা।
সোহান রাগে গজ গজ করতে করতে চলে যায়।
আমার কপালে এই দিন টাও দেখার ছিল। আমার মেয়ের কি হবে এখন? কিভাবে বাচাব আমি আমার মেয়েটাকে। আমার মেয়েটা কিচ্ছু বুঝে না।
কত বার বলেছি চল সব বিক্রি করে চলে যাই আমরা। শহরে গিয়ে একটা ফ্ল্যাট কিনে ব্যবসা কর। কে শুনে কার কথা। বাপের দেওয়া সম্পদ বেচতে চাইলে না। এই বাপের সম্পদ ই আজ কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমার মেয়ের দিক নজর পরেছে শেষ পর্যন্ত। এখন যদি ওরা সত্যি সত্যিই বিয়ে করতে আসে
আহ। বললেই হলো বিয়ে করবে। কখনো না। চুপ কর তুমি বৃষ্টির মা। বৃষ্টি কে কাল ওর নানুর বাড়ি পাঠিয়ে দিব সকালেই। বৃষ্টি যা ব্যাগ গুছিয়ে নে। তর মামাকে বলতেছি সকালে এসে নিয়ে যাবে।
আচ্ছা আব্বু।
রাতে দড়জায় কড়া নাড়ছে।
দোলা দেখতো কে আসছে।
আচ্ছা আম্মু।
দরজা খুলতে যাবে এই মুহুর্তে সোহান:~
বিজয় দরজা খুল। কাজী সাহেব নিয়ে আসছি। বিয়ের বাজার ও করে আনছি। আজি বিয়ে হবে। দরজা খুল।
দোলা জানালা দিয়ে উকি দেয়
আব্বু বড় জেঠ, ছোট জেঠ, সবুজ~ শামীম ভাই, জেঠিরা, কাজি, মুন্সি আরো কয়েকটা লোক আসছে। এখন কি হবে আব্বু?
বিজয় দিন দুনিয়ার জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। ওদের হাত থেকে বাচা সম্ভব নয় এটা ভাল করে বুঝে গেছে। এক কোনায় বৃষ্টি কে দাড়িয়ে কাপতে দেখে হাত ধরে টেনে বৃষ্টির রুমে নিয়ে যায়। আলমারি থেকে ২ টা টাকার বান্ডিল গোছানো ব্যাগ এ ডুকিয়ে দেয়। বাসার ফোনটাও ডুকিয়ে দেয়। মেয়ের কপালে চুমু দিয়ে বলে ~
বৃষ্টি আম্মু পেছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে যা শিগগির।
কি বলছ তুমি বৃষ্টির আব্বু? ও তো কিছুই চিনে না। ও একা চলতে পারে না।
~ পারে। আমার মেয়ে সব পারে।
~ আব্বু আমি যাবনা। আমার ভয় করে।
~ ওগো শুন। আমার বাচ্চাটা পারবেনা। ওকে তো কোনদিন তুমি ছাড়া বাড়ির বাইরেই যেতে দেও নাই। রাতের বেলা ভয়
~ মেয়েকে বাচাতে চাইলে এক্ষুণি পালাতে বল। শোন মা সোজা বাসট্যন্ট এ যাবি। সেখানে ময়মনসিংহের বাস আছে। ওইটাতে উঠবি। সম্ভুগঞ্জ ব্রিজে নামবি। তোর মামাকে নেমেই ফোন দিবি। ঠিকাছে? তারাতারি যা।
জোর করে বাড়ি থেকে বের করে দেয়া হয় বৃষ্টি কে। ভয়ে ভয়ে বাসট্যন্টের দিকে দৌড়াতে থাকে। ওখানে পৌছে দেখে কোন বাস নেই। কয়েক মিনিট বসে থাকে। তখনি রাস্তা দিয়ে সবুজের কিছু বন্ধু কে দেখে ভয় পেয়ে যায়। সামনের দিকে দৌড়াতে থাকে। সি এন জি দেখতে পায় একটা। দৌড়ে গিয়ে সিএনজি তে উঠে বসে।
সিএনজি তে একটা লোক আর একটা মহিলা ছিল বলে ভয় টা একটু কমে যায় বৃষ্টির। ময়মনসিংহের আগেই ওরা নেমে যায়। বৃষ্টি নামতে থাকে। বৃষ্টির ভয় হতে থাকে। এত রাতে কিভাবে মামা আসবে? আমি কোথায় দাড়াব এই ফাকা রাস্তায়?
একটা চায়ের দোকান দেখে বৃষ্টি নেমে যায়।
বার বার কল দিচ্ছে মামাকে কিন্তু বৃষ্টির কারনে নেটওয়ার্ক পাচ্ছে না। ঠান্ডায় কাপতে থাকে। ফোনটা হাতে নিয়েই চুপটি করে বসে থাকে।
হটাৎ দেখে একটা গাড়ি এসে সামনে থামে। গাড়ি থেকে একটা মাতাল লোক হেলতে দুলতে এগিয়ে আসছে
নাহ আর ঠিক থাকতে পারে না রাণী। দু হাত দিয়ে দু কান ধরে চিৎকার করে অজ্ঞান হয়ে যায়।
সকালে জ্ঞান ফিরে রাণীর। আস্তে আস্তে চোখ খুলে বিছানায় আবিষ্কার করে নিজেকে। সময় দেখার জন্য বিছানা থেকে ফোন টা নেয়। ফোন অন করে চক্ষু চড়ক গাছ। ১৯০ টা মিসড কল যার সব গুলো শ্রাবন দিয়েছে। দরজার দিকে চোখ দিয়ে দেখে দরজা খোলা।
কিন্তু রাতে তো দরজা বন্ধ ছিল আর ও তো জানালার কাছে ছিল। মাথা ঘুরতে থাকে রাণীর।
দৌড়ে নিচে এসে দেখে শ্রাবন ইশানের সাথে বসে গল্প করছে। এত ভোরে শ্রাবণ মাত্র ৫৩০ বাজে। আস্তে আস্তে ধীর পায়ে হেঁটে ইশানের পেছনে গিয়ে দাঁড়ায়। রাণীকে দেখে শ্রাবন মেকি স্মাইল দিয়ে ইশারায় পাশে বসতে বলে। ইশান উঠে গিয়ে রাণীর মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। হাত ধরে নিয়ে শ্রাবনের পাশে বসিয়ে দিয়ে উপরে চলে যায়। রাণী শ্রাবনের দিকে তাকিয়ে দেখে নেশা ভরা চোখে রাণীর দিকে তাকিয়ে আছে। রাণী চোখ নামিয়ে নেয়। সেই চোখে ২য় বার তাকানোর সাহস রাণীর নেই।
~ কখন এসেছেন আপনি?
~ রাতে ১টা সময়।
~ এত রাতে?
~ ফোন তুলছিলেনা। আংকেল কে কল দিয়েছিলাম। দরজায় অনেক বার নক করেছে। তুমি খোল নি। ভয় পেয়ে আংকেল আমায় জানায় তুমি দরজা খুলোনি। তার পর আমি এসে তোমার বারান্দা দিয়ে ভেতরে ঢুকে দেখি তুমি ফ্লোরে পড়ে আছো। তুমায় বিছানায় শুইয়ে দরজা খুলে দেই। ডক্টর এসে দেখে গেছে তোমায়।
~ রাণী কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। এতো কিছু হয়ে গেল। শ্রাবনের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করল ~ আপনি কোথায় ছিলেন রাতে? ঘুমোন নি?
~ ঘুমোয়নি। তোমার রুমেই ছিলাম।
রাণী হকচকিয়ে ওঠে। যেই কিছু বলতে যাবে তখনি শ্রাবণ ঠোঁটে এক আঙুল চেপে ধরে।
সিসসসসস চুপ। এক দম চুপ। ঘোর লাগা চোখে রাণীর দিক তাকিয়ে আছে শ্রাবন। শরীরে এক অজানা শিহরণ বয়ে যাচ্ছে রাণীর। শ্রাবণ রাণীর এতোটা কাছে যে দুজনের ভারী নিঃশ্বাস গুলো কোনটা কার আলাদা করা সম্ভব নয়।
রাণীর ঠোঁট থেকে আঙুল সরিয়ে শ্রাবণ বলতে থাকে ~
দুদিনের জন্য চলে যাচ্ছ আমাকে তো কিছুই বলনি। যখন বেশী কষ্ট হবে আমার সাথে কথা বলবে। জান কতটা টেন্সট ছিলাম আমি? তবে যা হয় ভালোর জন্য হয়। যদি না আসতাম তাহলে আমার জীবনের সব থেকে সুদর্শন দেখাটা দেখতে পেতাম না।
জান একটা বারের জন্যও চোখের পলক ফেলতে পারি নি। ঘুমন্ত মুখ, পদ্মের ন্যায় ভ্রু যুগল, কাল কুচকুচে পাপড়ি, টিয়া পাখীর থেকেও সুন্দর নাক, টকটকে লালগোলাপী লিপ, ছোট একটা থুতনি। আর বলতে না দিয়ে উঠে একটু সরে দাঁড়ায়।
রাণীর এমন করাতে শ্রাবণ হো হো করে হেসে উঠে। হাসি থামিয়ে বলে~
তোমার লাল কাল চুল গুলো দেখতে পারলাম না। ওরনা দিয়ে ঢাকা ছিল। ছোয়ার সাহস পাইনি। এর পর কিন্তু ছোয়ে দিব।
আগেই পারমিশন চেয়ে নিলাম।
রাণী এক দৌড়ে উপরে চলে যায়।
পর্ব ১৬
উপস্থিত মাননীয় জেলা প্রশাসক, উপস্থিত উপজেলা নির্বাহী অফিসার, উপস্থিত অত্র এলাকার চেয়ারম্যান, মেম্বার এবং গণ্যমান্য ব্যক্তি গণ, উপস্থিত এলাকার লোকজন। আসসালামু আলায়কুম। আপনারা সকলেই জানেন আজকের এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আপনাদের স্বার্থে বিখ্যাত বিজনেসমেন রাণী চৌধুরানী কতৃক গঠিত এই হসপিটাল উদ্বোধন করা হবে।
আজকের বিশেষ অতিথি বৃন্দ সহ রাণী চৌধুরানী নিজে এই হসপিটাল উদ্বোধন করবেন। তিনি এসেই এই হসপিটাল উদ্বোধন করবেন। তিনি এই মূহুর্তে প্রায় এসেইগেছেন। চলুন আমরা তাকে স্বাগত জানাতে এগিয়ে যাই।
সকলে হাসপাতালের গেটের সামনে ফুল হাতে দাড়িয়ে রাণীমাকে স্বাগত জানাতে অপেক্ষা করছেন। রাণীমাকে দেখার জন্য উপচে পড়া ভীড় জমেছে।
কিছুক্ষন মধ্যেই একনাগাড়ে পাঁচটি গাড়ি এসে ভিড়ের মধ্যে ঢুকে পড়ে। প্রথম গাড়ি থেকে রিমন সহ কয়েকজন সিকিউরিটি গার্ড নেমে আসে। পেছনের তিনটি গাড়ি থেকে কয়েকজন ডাক্তার, নার্স বের হয়ে আসেন। গার্ডরা দ্বিতীয় গাড়িটির নিকট গিয়ে লোকজন সরিয়ে দিতে থাকে।
ওদিকে অধির আকুলতায় রাণীকে দেখার জন্য ছটফট করছে বিজয় এবং মিসেস বিজয়। গার্ডদের দেখে সিওর হয় যে রাণী এই গাড়িতেই আছে। দুজনেই এসে উপস্থিত হয় সেখানে। গার্ডরা বাধা দিতে গেলে রিমন আটকিয়ে দেয়। মুচকি হেসে মাথা নত করে সালাম জানায়। যেতে বলে গাড়ির নিকট।
গার্ড এসে গাড়ির গেইট খুলে দেয়। এক পা এগিয়ে দিয়ে বের হয়ে আসে রাণী চৌধুরানী। সবাই উৎসুক চোখে তাকিয়ে আছে রাণীমার পানে। কারো চোখ তাকে রাণী হিসেবে মানতে নারাজ। তাকে রাজকুমারী ডাকেই যেন বেশী মানাবে।
দীর্ঘ লাল গাউন এর সাথে লাল জরজেট দোপাট্টা দিয়ে মাথায় বড় করে ঘোমটা চিবুক অব্দি ঢেকে রয়েছে। হাতে বড় রিং, রেড় স্টোনের দু হাত ভরা চুড়ি, গলায় রেড় ডায়ামন্ডের নেকলেস। এ যেন রাজা বাদশাহ আমলের রাজকুমারী এসে দাঁড়িয়েছে।
রাণীর দিকে একে একে ফুলের বুকি দিয়ে অভিনন্দন জানায় সকলে। গার্ডরা বুকি গুলো হাতে নেয়। সামনের দিকে এগোতে থাকে রাণী। বিজয় আর তার স্ত্রীর সামনে এসে দাঁড়ায়। বাবা মার মন বলে কথা। চোখের জল ছেড়ে দেয়। রাণী একমনে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে।
এতদিন পর সামনে বাবা মা কে দেখে কেপে উঠে রাণী। নিজেকে খুব কষ্টে সামলে নেয়। রাণীর মুখটা দেখার জন্য আকুপাকু করতে থাকে মিসেস বিজয়। কিন্তু ঘোমটা দিয়ে ঢেকে রাখার জন্য দেখতে পারছে না।
রাণী আস্তে আস্তে এগিয়ে গেইটের সামনে এসে দাঁড়ায়। পেছনে অতিথীরা এসে দাড়ায়। ঘোষণা করা হয় যে উদ্ভোধন করা হবে। লাল পর্দা দিয়ে ঢাকা দেওয়া আছে হসপিটালের নাম। রাণীর হাতে কাচি দেওয়া হয়। ইশারায় বিজয়কেও কাচি ধরতে বলে রিমন। রাণীর হাতের উপর দিয়ে হাত কাচি ধরে ফিতা কাটে। চারিদিক করতালি আর বাজির আওয়াজ ধন্নিত হতে থাকে। রাণী এক টানে পর্দা সরিয়ে দেয়। হাসপাতালের নাম দেখে অবাক হয়ে যায় সবাই।
বিজয় নিজেকে খুব কষ্টে ঠিক রাখে। দশ বছর পর নিজের কলিজা টা সামনে অথচ একবার জড়িয়ে নিতে পারছে না। একবারের জন্য মুখটাও দেখতে পারছে না। তার কলিজা নিজে হাসপাতাল তৈরী করেছে যার নামটাও তার নামে দিয়েছে ~”বিজয় ডায়াগোনষ্টিক সেন্টার এন্ড হসপিটাল”। বিজয়ের পুরো শরীর যেন কাপছে।
রাণী পাশেই দাড়িয়ে আর চোখে বাবাকে দেখছে। বিজয়ের অবস্থা বুঝতে পেরে এক হাত দিয়ে বিজয়ের এক বাহু জড়িয়ে ধরে হাটতে শুরু করে। ঘটনার আকস্মিকতায় বিজয় চোখ দুটো বন্ধ করে রাণীর সাথে হাটতে থাকে। সকলে এই ব্যাপারে আরও অবাক হয়ে যায়। রাণী স্টেজে ওঠে বিজয় এর হাত ছাড়িয়ে স্পিকারের সামনে দাঁড়ায়।
আসসালামু আলায়কুম। উপস্থিত এলাকার সকল কে আমার পক্ষ থেকে অশেষ ধন্যবাদ এখানে আসার জন্য, আমাকে এত বড় একটা কাজে হেল্প করার জন্য। আপনাদের ছাড়া এই হসপিটাল সম্ভব হতো না। রাণীমা কে এত সাদরে গ্রহণ করার জন্য এই এলাকার প্রত্যেক টি মানুষ কে রাণীমার পক্ষ থেকে অশেষ ভালবাসা। আজ থেকে বিজয় ডায়াগোনষ্টিক সেন্টার এন্ড হসপিটালের যাত্রা শুরু হল। অভিজ্ঞ ডাক্তার এবং নার্সের দারা এখানে সেবা প্রদান করা হবে।
উন্নত মানের যন্ত্রের সাহায্যে চিকিৎসা প্রদান করা হবে। poor people দের জন্য রয়েছে সুযোগ সুবিধা। এই ব্যাপারে আপনারা মি বিজয় আহমেদ মন্ডল এর সাথে যোগাযোগ করবেন। এখানে খুব কম মূল্যে যাবতীয় চিকিৎসা এবং ঔষধ পেয়ে থাকবেন। আর আমার জন্য দোয়া করবেন যাতে আমি আপনাদের আরও সেবা করতে পারি। ধন্যবাদ সবাইকে।
রাণীমার কথা মুগ্ধ হয়ে শোনে সবাই। চারিদিকে রাণীমার জয় ধ্বনি উচ্চারিত হতে থাকে।
রাণী নিজের মেনশনে পা রাখে। দোলা এবং তার মা অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় ছিল রাণীর জন্য। রাণী ভেতরে গিয়ে আলোচনায় বসে। ওদের সাথে কথা বলার সময় পায় না। যার যার কাজ তাকে তাকে বুঝিয়ে দেয়।
বিজয় হাসপাতাল কমিটি গঠন করে আলোচনায় বসে। বিশাল আয়োজন করা হয়েছে। ডাক্তার নার্স, অতিথী বৃন্দ সবার জন্য খাবারের আয়োজন করা হয়েছে। রাতে সবাই ডিনার করে যে যার বাসায় চলে যায়। ডাক্তার কোয়ার্টারে চলে যায়।
সারাদিনের ক্লান্তিতে রাণী নিজের রুমে এসে দোপাট্টা খুলে ফ্রেস না হয়েই বিছানায় গা এলিয়ে দেয়। বেশি ক্লান্ত থাকার কারনে দুচোখে ঘুম চলে আসে।
দোলা সারাদিন ঘর থেকে বের হয়নি। বিজয় বের হতে দেয়নি বাইরের এতো লোক জনের জন্য। এখন সে বের হয়েছে। রাণী চৌধুরানী কে সে দেখবে এখন। যে রাণীমার এত নাম~ডাক তাকে তো দেখতেই হবে। সোজা রাণীর রুমে চলে আসে। দরজা খোলা পেয়ে আস্তে আস্তে ভেতরে ঢুকে। বিছানায় তাকিয়ে দেখে একটা লাল পরী বিছানায় শুয়ে আছে।
এগিয়ে গিয়ে দু চোখ ভরে দেখতে থাকে। এত সুন্দর কেউ কি করে হতে পারে? ওর খুব ছোয়ে দেখতে ইচ্ছা করছে। কিন্তু একটু ছোলেই যদি জেগে ওঠে সাহস পায় না আর। সোজা দাঁড়িয়ে দেখতে থাকে। রাণী একটু নড়ে উঠলে দোলা চলে যায় নিজের রুমে।
বিজয় আর তার স্ত্রী রাণীর রুমে আসে। দরজা খোলা দেখে ভিতরে উকি দেয়। দেখে রাণী বিছানায় শুয়ে আছে। না ডেকেই ভিতরে চলে আসে। বিছানায় শুয়ে থাকা রাণীকে দেখে দুচোখ ভরে। ইসস কত সুন্দর হয়েছে তার মেয়েটা। নুরের আলোয় যেন ভরপুর এ রুপ।
রাণীর মাথাটা নিজের কোলে নেয়। ঘুমন্ত মুখটায় অজস্র আদর দেয় রাণীর। মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করতে থাকে। এত বছরের তৃষ্ণার্ত পীড়িত মনটা শান্ত করতে ব্যস্ত দুজনেই। ঘুমের ঘোরে রাণী বিজয়কে জড়িয়ে ধরে। বিজয় বুকের মধ্যে শক্ত করে ধরে রাখে যেন ছেড়ে দিলেই হাড়িয়ে যাবে।
রাণীর বার বার কল আসছে। সেই শব্দে ঘুম ভাঙ্গে রাণীর। নিজেকে মায়ের কোলে আর বাবার বুকে আবিষ্কার করে। কিছু না বলে ওঠে বসে। ফোন হাতে নিয়ে রিসিভ করে ~
~ হ্যালো পাপা
~ রাণীমা ঘুমের কন্ঠ পাচ্ছি। ঘুমিয়ে পড়েছিলি?
~ হ্যাঁ পাপা। ওই একটু।
~ হুম অনেক বার ফোন দিয়েছি।
~ বিজি ছিলাম পাপা।
~ হুম। শ্রাবণ ও অনেক বার ফোন দিয়েছে।
~ ওহ। আচ্ছা পাপা রাখি তাহলে।
~ হুম।
তোর পাপার সাথে কথা বলাবি না আমাদের?
হু। বলাব।
শরীর খারাপ লাগছে তাই মার উপর শরীরের ভার ছেড়ে দেয়। মা ও জড়িয়ে নেয় মেয়েকে। বলে ~
সারাদিনের ক্লান্তি, জার্নি একটু গোসল করে ঘুমোলে অনেক শান্তি পেতে। ড্রেস টাও চেঞ্জ কর নি। ফ্রেস ও হওনি।
~ খারাপ লাগছে।
~ আস একটু ফ্রেস করিয়ে দেই। একটু গরম দুধ খেলেই ভালো লাগবে।
আবার ফোন বেজে ওঠে। রাণী ফোন হাতে নিয়ে দুজনের দিকে তাকিয়ে থাকে।
বিজয় মুচকি হেসে বলে
~ কে? জামাই?
~রাণী মাথা নেড়ে না করে।
~ বিয়ে করনি আম্মু?
~ রাণী আবার মাথা নেড়ে না করে।
~ আচ্ছা। ফোন ধর।
রাণী রিসিভ করে কানে ধরে।
~ হ্যালো
~ রাণী সাহেবা
~ জি
~ ঘুমাচ্ছিলে?
~ হুম।
~ আচ্ছা ঘুমাও। রাখছি।
পর্ব ১৭
পরদিন হাসপাতাল পরিদর্শন করে ঢাকায় চলে আসে রাণী।
দোলা আজকাল বাইরে বের হয় না। কলেজ থেকে বাসা ~ বাসা থেকে কলেজ। কলেজে বিজয় নিয়ে যায় আবার ক্লাস শেষে নিয়ে আসে। সুমি আর মনির সাথে কথা বলতে নিষেধ করেছে বিজয় ঐ দিনের পর থেকে।
রাণীর মেনশনে থাকে এখন সবাই। দোলা সবসময় নিজের রুমেই থাকে। রুমেই খাবার দিয়ে যায়। সবাই ভাবে দোলা পড়াশুনা নিয়ে ব্যস্ত। কিন্তু দোলা সেই কবেই পড়াশুনা ছেড়ে দিয়েছে। তার মনের উপরে কি হচ্ছে সেটা শুধু ওই জানে।
দোলার রুমের পাশে সুন্দর একটা বেলকনি। দোলা বেলকনিতে আসলেই দূরে শামীমদের বাসার সাদে শামীম কে দেখে। শামীম এক ধেনে দোলার দিকে তাকিয়ে থাকে। অনেক দিন বাসার নিচে এসেও দাড়িয়ে থাকে।
এসব দোলা সহ্য করতে পারে না। অসহ্য যন্ত্রণার অনুভূতি এইটা। না পারছে অতীত ভুলে শামীমের হাত ধরতে আর না পারছে শামীমকে ভুলে থাকতে। ভুলতে চাইলেও ভুলতে পারছেনা কারণ শামীম নাছোড়বান্দা। দোলার আসেপাশেই থাকার চেষ্টা করে।
আজকাল দোলা নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে। বাবা মার সাথেও প্রয়োজন ছাড়া কথা বলে না। রুমে থেকে শামীমের ভাবনায় বসে নইত আপু আপু বলে কান্না করে। দোলার হাব ভাব বিজয়কে ভাবালেও বেশী মাথা ঘামায় না। ভাবে অতিরিক্ত পড়াশুনার জন্য এমন হচ্ছে।
বনানী তে একটা সাইট দেখতে যাব পাপা। তুমিও চল আমার সাথে। ঐ সাইটটা অনেক সুন্দর। অনেকেই কিনতে চাচ্ছে। বাট আমার যদি পছন্দ হয়ে যায় তাহলে আমিই নিব।
~ আচ্ছা রাণীমা। আজ তুই দেখে আয় পছন্দ হলে তারপর আমি দেখব। আজ বাইরে বের হতে ইচ্ছা করছে না প্লিজ। রিমনকে নিয়ে যা।
~ রিমন অফিসে থাকবে পাপা। আমি একাই যাব।
~ ওকে আমি রুমে গেলাম।
বাণাণী সাইটে এসে দেখতে থাকে। ভালই লাগল রাণীর কাছে। ঘুরে ঘুরে দেখতে থাকে। সাইটের দায়িত্বে থাকা লোকটির কাছে আসে কথা বলার জন্য। লোকটি একজন লোকের সাথে কথা বলছে। হবে হয়তো অন্য কোন ক্লাইন্ট। একি সাইটের লোকটা কথা না বলেই চলে গেল। রাগ হল মনে মনে একটু।
চলে আসার জন্য পা বাড়াবে এর মধ্যেই পিছন থেকে হাত ধরে। পেছনে তাকাতেই চোখ আটকে যায় দুটি চোখে। কখনো এই চোখ দুটির দিকে তাকাতে চায় নি রাণী। কিন্তু আজ এই দুচোখ জোড়া থেকে যেন চোখ সরানো বড় দায়। চোখ অনেক না বলা কথা বলে দেয়। গভীর এ চাহনি ভরা ভালবাসা প্রকাশ্য। বুকের ভেতর উথাল পাতাল ঢেউ বইয়ে দেওয়ার জন্য এ চাহনি ই যথেষ্ট।
~ রাণী সাহেবা।
~ চমকে উঠে এই ডাকে। তার বেহায়া চোখ দুটো বন্ধ হয়ে যায় নিমেষেই। একটু দুরে সরে দাঁড়িয়ে বলে ~ মি খান আপনি এখানে?
~ হুম। এই সাইট টা পছন্দ হয়েছে খুব। নিতে চাচ্ছি। তুমিও নিশ্চয় এই কারণেই এসেছ?
~ Yes Beautiful area Fresh Unbutton environment
~ Yeah Fresh unbutton environment You like Fresh unbutton environment right? Okk Come with me
~ where?
~ come naaa
মি শ্রাবনের পেছন পেছন হাঁটছে রাণী। জায়গাটাকে প্রায় জনশূন্য ই বলা চলে। একটা রেস্টুরেন্ট এ ডুকে রাণীকে চেয়ারে বসতে বলে নিজেও একটা চেয়ারে বসে পড়ে। রেস্টুরেন্ট টা অনেক খোলামেলা। চারিদিকে ফুল গাছ দিয়ে ঘেরা। ফুলের গন্ধে চারিদিক মৌ মৌ করছে। কঠিনতম মন খারাপ থকলেও এখানে এলে ভাল হয়ে যাবে।
~ রাণী সাহেবা। চা টা নাও ঠান্ডা হয়ে যাবে।
~ মাটির কাপে গরম ধোয়া উঠা চা এই পরিবেশে। ছেলেটা ছোট ছোট ভাললাগা দিয়ে ভরিয়ে তোলো।
~ তো রাণী সাহেবা সাইট কেমন লাগলো?
~ ভালো
~ কিনতে চাও? আমার কিন্তু অনেক পছন্দ হয়েছে।
~ তো নিয়ে নিন। আপনি নিলে আমি নিবনা।
~ তোমার নেওয়া আর আমার নেওয়ার মধ্যে কোন তফাত আছে বলে মনে হচ্ছে না।
~?
~ লিসেন। আমি যদি নেই এইটা ভবিষ্যতে তোমারি হবে। আর তুমি যদি নাও তাও তোমারি থাকবে।
~ You are over confident But remember it over confident is not good
~ you think so?
~ yeah
~ let’s see Rani saheba ha ha ha
বিকালে দোলা প্রাইভেট পড়তে যায়। একটু আগেই আজ ছুটি দিয়ে দেয় টিচার। বাইরে এসে বাবাকে না পেয়ে দাডিয়ে থাকে। দৌড়ে এসে দোলার সামনে বসে পড়ে শামীম। হাতে একগুচ্ছ গোলাপ ফুল। দোলার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে ~
জান তোমার জন্য। তোমার পছন্দের গোলাপ ফুল। নাও প্লিজ।
~ আমি নিতে পারবনা।
~ প্লিজ দোলা একটি বারের জন্য নাও প্লিজ।
দোলা ফুল গুলো নিতে হাত কাপতে থাকে। যখন ফুল গুলো ছোবে তখনি বিজয় এসে এক লাথি দিয়ে ফেলে দেয়। দোলা বাবাকে দেখে ভয়ে কাপতে শুরু করে। বিজয় শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে শামীম কে থাপ্পড় মেরে দোলাকে নিয়ে চলে আসে।
রাতে রাণী রুমে বসে আছে। ড্রয়িং রুমে ইশান আর রিমন মেতেছে খোশগল্পে। রাণীর ফোন আসে। ফোনে রাণীর এক লোক দোলা আর শামীমের ব্যপারে সব কিছু বলে। রাণীর চোখ লাল হয়ে উঠে। মাথা গরম হয়ে যায়। চিৎকার করে রিমনকে ডাকতে থাকে। রাণীর এই ভাবে ডাক শুনে ইশান ~ রিমন দুজনেই দৌড়ে এসে রাণীর সামনে দাড়ায়। রাণীকে দেখে ভয় পেয়ে যায়। রাণী বলে ~
দোলাকে বিয়ে করবে রিমন?
রিমন ইশান এমন কথা শুনে হতভম্ভ হয়ে দাড়িয়ে থাকে। ইশান কিছু না বলে চুপচাপ দাড়িয়ে থাকে কারণ এই মূহুর্তে তার কথা মূল্যহীন।
কি হল বলো বিয়ে করবে কিনা?
~ রাণীমা আমি
~ দোলা কে বিয়ে করতে তোমার আপত্তি আছে কিনা?
~ রাণীমা আমি ওইভাবে
~ আমার কাছে কিছু লুকিও না রিমন। রাণীমার চোখে ফাকি দেওয়ার সাহস কি করে হয় তোমার? রাণীকে তুমি পছন্দ কর কি না?
~ করি।
~ কেন কর?
~ আপনাকে আমার আপন বোনের মতো মনে করি। দোলাকে দেখে আপনার কথা মনে পরে। দোলার মধ্যে যেন শান্তি খুঁজে পাই। খুব আপন মনে হয়।
~ বিয়ে করবে?
~ হ্যাঁ।
~ বিয়ের কেনাকাটা শুরু কর কাল থেকে।
এবার আর ইশান চুপ থাকতে পারল না। বলেই ফেলল ~ রাণীমা দোলা আমার ছোট মেয়ে। আমি চাই আমার বড় মেয়ের বিয়ে হক তার পর ছোট মেয়ের।
~ সব চাওয়া পুরন হবার নয় পাপা। প্রব্লেম আছে।
রাতেই রাণী বিজয়ের সাথে কথা বলার জন্য বেড়িয়ে পরে
ওদিকে বিজয় বাসায় এসে দোলাকে চড় কষে দিয়েছে কয়েকটা। দোলা আপু আপু করে ঘরের দরজা বন্ধ করে কাদতে থাকে। কারো খাওয়া হয়নি রাতে। বিজয় আর তার স্ত্রী চিন্তায় সারারাত ঘুমাতে পারে নি। ভোর চারটার দিকে রাণীর গাড়ির আওয়াজে দরজা খুলে বিজয়। রাণীকে ভিতরে নিয়ে যায়। মিসেস বিজয় দৌড়ে এসে বুকে জড়িয়ে নেয়।
সবার মুখ দেখে রাণী মিসেস বিজয়কে বলে ~
আম্মু খাবার রেডি কর। মেয়ের মুখে এত দিন পর আম্মু ডাক শুনে চোখ ছল ছল করে উঠে। দৌড়ে গিয়ে খাবার গরম করে টেবিলে খাবার সাজায়। রাণী ফ্রেস হয়ে এসে টেবিলে বসে। দোলা কে না পেয়ে জিঙসা করে ~ দোলা খেয়েছে?
~ না।
~ ওকে ডাক।
দোলা রাণীমা এসেছে শুনে সাভাবিক হয়ে নিচে এসে খেতে বসে। রাণীর এতক্ষণে খাওয়া শেষ। পলকহীন ভাবে দোলা কে দেখছে রাণী। চেহারায় বিষন্ন ভাব। বিজয়ের ধমক খেয়ে কোনমতে খাবার শেষ করে দোলা। রাণীর চাহনিতে সবারি উসখুস ভাব চলে আসে। এবার রাণী মুখ খুলে।
রিমন আমার ছোট ভাই। দুইবছর থেকে আমার সাথে আছে। অনেক ভালো ছেলে। দোলার সাথে খুব মানাবে। আমি ওদের বিয়ে দিতে চাই।
রাণীর কথায় দোলা খুশি হতে পারল না। কিন্তু বাবা মা দুজনেই খুব খুশি হল। রিমন সত্যিই ভাল লাগার মতো মানুষ একজন। বিনয়ী সভাবের। আর রাণী তাকে ভালো ভাবেই চিনে। বাবা মা দুজনেই সম্মতি জানালো।
দোলার এই মূহুর্তে এদের খুশি তে গা জ্বালা করছে। দোলা নিজেও বুঝতে পারছে তার ভালোর জন্যই এসব। কিন্তু মানতে পারছেনা। দু চোখ বেয়ে জল পরছে।
দোলার এই রুপ দেখে রাণী বলল ~
দোলা কাদছ কেন? তোমার জন্য রিমন বেষ্ট চয়েজ। পড়াশুনা বিয়ের পরেই করবে। ঢাকা থাকবে। সেখানেই পরবে। কেদ না।
দোলা আরো ফুপিয়ে কাঁদতে থাকল। যা দেখে রাণীর রাগ উঠে গেল।
~ দোলা খুশিতে কেউ এভাবে কাদে না।
এবার দোলা মুখ খুললো ~
আমার পক্ষে এখন বিয়ে করা সম্ভব নয়। আমার সময় লাগবে। আমার কিছু কথা আছে।
কথা শুনে রাণী চটে যায়। দোলার চুলের মুঠি ধরে একটানে চেয়ার থেকে টেনে তুলে চিৎকার করে~
সময় চায় তোর পালানোর জন্য সময় চাই? কি বলবি ভালবাসিস ওই কুত্তা শামীমকে।
দোলাঃ আহ ছাড়ুন লাগছে। যাইহোক আপনার কি?
রাণী আরো রেগে যায়।
দোলাকে ফ্লোরে ফেলে দেয় ~
কাকে ভালোবাসিস তুই যে তোকে বিয়ে করে ভাইয়ের প্রতিশোধ নিতে চায়যাদের জন্য আব্বু আম্মু এতদিন সন্তান হারিয়ে চোখের পানি ফেলেছে যাদের জন্য আজ আমি জিবন্ত লাশ হয়ে বেঁচে আছিযাদের জন্য বার বার মৃত্যু বরণ করতে হয়েছে আমার দশটা বছর যুদ্ধ করে যাচ্ছি বৃষ্টি থেকে রাণীমা হয়েছি বুকে কষ্ট চেপে দিন পার করছি তাদের কাছে যাবি তুই?
~ আপুইইই
~ যা তুই যা। মুক্ত তুই। এই মূহুর্তে ওই শামীমের কাছে চলে যাবি তুই।
বিজয়ঃ আজ এই মূহুর্তে আমি তোকে ত্যাগ
দোলাঃ না আব্বু না আমায় ক্ষমা কর আব্বু। আমায় পর করে দিও না। আপু তুই আমায় মাফ করে দে। আমি কখনো আর ওই লোকের কথা মনে করব না। আমি রিমন কেই বিয়ে করব। আমি ভুল করেছি আপু। সরি সরি সরি
পর্ব ১৮
দোলার বিয়েতে রাজি হওয়াতে বিজয়ের কোন চিন্তায় থাকে আর। বিজয়ের মেয়ের বিয়ে চারিদিকে রটে যায়। দোলা কলেজ শেষে বাসার পথে আসছিল। বাসার কাছেই আসতে পথিমধ্যেই দেখতে পায় শামীম দাড়িয়ে আছে।
শামীম কে দেখে দোলার রাগ হতে থাকে। নিজের গতিতে পা বাড়িয়ে হাটতে থাকে। শামীম পথ আটকে দাড়ায়। খপ করে দোলার হাত টা ধরে বলে চলো আমরা বিয়ে করে আসি। শামীম এর এমন লুক আর কথা শুনে দোলা সামান্য ভয় পেয়ে যায়। কিন্ত রাণীর কথা মনে হতেই সাহস চলে আসে।
সাহস করে বলে
~ বিয়ে মানে? কিসের বিয়ে? আমি কেন তোমাকে বিয়ে করবো? তোমার সাথে কি আমার কোন বিয়ের কথা ছিল? আমি কি কখনো তোমাকে বলেছি যে বিয়ে করব?
পেছন থেকে সবুজ এসে বলে
~ আমার ভাই এতদিন ধরে তোর পিছু পিছু সময় নষ্ট করলো এর পুরষ্কার স্বরূপ তুই কিচ্ছু দিবিনা বল
~ কি চাই তোমাদের?
~ বড় পাখিতো ফুরূৎ করে উড়ে গেল। এখন তুই আছিস। তোকে বিয়ে করে তোর রূপ যৌবন ভোগ করব আমি আর ভাই। আর তোর বাবার সম্পত্তিও ভোগ করব।
দোলা শামীমের মুখে থুতু ফেলে চলে আসতে নিলে শামীম হাত ধরে গাড়ির দিকে টানতে থাকে। আর বলে”তোর রূপ মাথা নষ্ট করে দিয়েছে আমার তোরে না দেখলে ভালো লাগে না এক রাতের জন্য হলেও তোকে চাই।”
দোলা আব্বু আপু বলে চিৎকার করতে থাকে। আসে পাশে কেউ নেই যে হেল্প চাইবে।
রাণী এসে গাড়ির সামনে দাড়ায়। রাণীকে দেখে শক্ত করে ধরা হাত হালকা হয়ে যায়। দোলা হাত সরিয়ে নেয়।
শামীম ~ রাণীমা না আপনি? যার বাসায় দোলা রা থাকে।
রাণী ~ হ্যাঁ আর তুই সেই বাসার সামনে দিন রাত উকি ঝুকি দিস
শামীমে কলার ধরে টানতে টানতে ভিতরে নিয়ে গিয়ে ফেলে দেয়। সবুজ ও পেছন পেছন আসে। রাণী কে যে আটকাবে ধরবে সেই সাহসটাও পায় না।
“রূপ দেখে পাগল হয়েছিস তাই না রুপ দেখবি তুই? একটানে মুখের ঘোমটা খুলে দেখ কত রুপ দেখতে পারিস দেখ এবার বল আমাকে তোদের চাই রাতের জন্য চাই বল”
শামীম ~সবুজ রাণীর এমন অগ্নিমূর্তি দেখে ভয়ে কাপাকাপি অবস্থা। বার বার রাণীর কাছে ক্ষমা চাইছে।
পুলিশ এসে সবুজ ~ শামীম কে ধরে নিয়ে যায়। রাণী তাদের একটা মাডার কেসে দিতে বলেছে যেন সারাজীবন জেলেই পচে মরে।
বিজয়ের পরিবার সেদিনি রাণীর সাথে চৌধুরী বাড়িতে চলে আসে। বিয়ে এই বাড়ি থেকেই হবে রাণীর আদেশ। আত্মীয় স্বজন বলতে মামা~মামী আর পুচকে দূ টা মামাত ভাই টোটো আর টুকু। ওরাও চলে আসে।
চারদিন পর দোলার বিয়ে। বিয়ের শপিং এখনও শেষ হয়নি। দোলা আসার পর থেকে রিমন একবারও আসে নি চৌধুরী বাড়িতে। অনেক ব্যস্ততার মাঝে দিন কাটছে তার তাই দোলার সাথে দেখাও করতে পারছেনা। কিন্তু দেখার জন্যে ছটফট ঠিকই করছে।
দোলার যেন আনন্দ আর ধরে না। পুরো পরিবার এক সাথে। সব থেকে বড় আনন্দ হচ্ছে তার আপুই কে ফিরে পেয়ে। আর রিমনকে বিয়ে করলে সে নিশ্চিত সে সুখী হবে কারণ তার আপুই আছে আর আপুর কাছাকাছি থাকতে পারবে। বাবা মার জন্যও আপুই আছে তার আর কোন টেনশন ই নেই।
রিমন এসেছে দোলাকে নিয়ে শপিং এ যাবার জন্য। দোলা রেড়ি হতে বলে মা এসে। রিমন কে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় ইশান। টোটো ~ টুকুর সাথে খুব ভাব জমে গেছে রিমনের। জুটিয়ে গল্প করছে। রিমন ওদের জিজ্ঞাসা করে
~ ভাইয়ারা তোমার আপু কোথায় জান? দুজনেই মাথা নাড়ায়।
~ আমায় নিয়ে যাবে আপুর কাছে?
~ আমাদের কি লাভ তাহলে?
~ ওরে বাবা তোমরা লাভ ক্ষতির হিসাব ও জান? হবে নাইবা কেন? রাণীমার ভাই বলে কথা।
~ রাণীমা ডাক কেন? তোমার তো আপুই হবে। আপুই কে কি মা ডাকে?
~ তাওতো ঠিক। আচ্ছা আমাকে আপুর কাছে নিয়ে চল আমি তোমাদের আইসক্রিম কিনে দিব শপিং এ গিয়ে। চলবে?
~ দৌরবে। এখন দৌরাও আমাদের সাথে।
মিররের সামনে দাঁড়িয়ে দোলা হিযআপ বাধছে। রাণীর স্টাইল গুলো তার খুব ভালো লাগে। নিল রেশমি শাড়ি, এক হাত ভর্তি নীল চুড়ি, হাই হিল, মাথায় পিংক কালার হিযআপ, চোখে গাড় করে কাজল এতটুকুতেই অসাধারণ লাগছে।
রিমন দরজায় দাড়িয়ে হা করে দেখছে। এমন একটা নীল পরী কে পেতেও যে ভাগ্যলাগে। ইস আরো আগে কেন দেখা হল না?
দোলার চোখ আটকে যায় দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটার উপর। এর আগেও কয়েকবার দেখা হয়েছে কিন্তু সেভাবে দেখেনি কখনো। সুন্দর হ্যান্ডসাম দেখতে। উজ্জ্বল শ্যামলা গায়ের রং। জেল দেওয়া চুল, ছোট ছোট চাপ দাড়ি, লম্বা নাক, ছোট ছোট চোখ। অসাধারণ কম্বিনেশন। কিছু দিন পর এই মানুষ টা তার নিজের হয়ে যাবে।
রিমনঃ কয়দিন পর যত ইচ্ছা তত দেইখো। নিজের জিনিস দেখতে না মানা। শপিং এ যাওয়ার কথা ছিল। আপাতত টাইম মেইনটেইন করতে হবে। নইত ডিসট্রাব করতাম না।
লজ্জায় গাল দুটো লাল হয়ে উঠে দোলার। রিমন আর নিজেকে আটকাতে পারে না। দোলার সামনে গিয়ে দাড়ায়। নিচু হয়ে থাকা গাল দুটো দুহাতে আবদ্ধ করে উপরে তুলে। দোলা চোখ খুলে রিমনের চোখের দিকে তাকায়।
~ দোলা মনি। জান তোমায় যেদিন দেখেছিলাম চোখ দুটো আটকে গিয়েছিল। খুব চেনা চেনা মনে হচ্ছিল রাণীমাকে খুজে পাচ্ছিলাম তোমার মাঝে।
তার পর যত বার তোমায় দেখতাম অদ্ভুত এক শান্তি পেতাম। বড্ড আপন মনে হতো তোমায়। খুব দেখতে ইচ্ছা করত তোমায়। হৃদয়ের গভীরে যায়গা করে নিয়েছ তুমি অজান্তেই। কাজের বাহানায় বার বার তোমার আশেপাশে থেকেছি। যেদিন রাণীমা তোমায় বিয়ে করতে বলেছিল আমার ভিতর যে কি হচ্ছিল তুমাকে কি বলে বুঝাব? তুমি আমার জীবনের সেরা গিফ্ট।
I promise you সারাজীবন তোমাকে আগলে রাখব। কখনো কষ্ট দিব না। খুব ভালবাসব। খুব।
দোলার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। কত ভাগ্যবতী সে। এইরকম জীবন সঙ্গী কয়জন এ পায়। এতদিনের বোকামির জন্য খুব আফসোস হচ্ছে তার। রাসকেল গুলোর জন্য কতরাত চোখের পানি গুলো নষ্ট করেছে। নিজের গালে নিজে চরাতে ইচ্ছা করছে।
~ দোলা মনি কাদছ কেন? তুমি কি ভালবাসবে না আমায়? তুমি কি বিয়েটা
~ একটু জরিয়ে ধরবে আমায়?
~ রিমন মুচকি হেসে হালকা করে জরিয়ে নেয়।
~ তোমার বাধন এতো হালকা?
রিমন সমস্ত শক্তি দিয়ে জরিয়ে ধরে উচু করে তুলে নেয়।
দোলা, রিমন, টোটো, টুকু শপিং এ এসেছে। শপিং শেষ করে রেস্টুরেন্টে খেতে এসেছে। রিমন টোটো টুকু কে আইসক্রিম কিনে দিয়েছে। ওরা আইসক্রিম খেতে ব্যস্ত। এর মধ্যে শ্রাবণ রেস্টুরেন্টে খেতে আসে। রিমনকে দেখে বলে
~ এইযে শেলক সাহেব। কেমন আছো? কি ব্যাপার? ফেমেলি নিয়ে আসছ নাকি?। রিমনও এগিয়ে গিয়ে কুলাকুলি করে।
~ আলহামদুলিল্লাহ ভাইয়া। ফিউচার ফেমেলি নিয়ে আসছি।
~ ওহ তাই বুঝি।
~ শুধু আমার না ভাইয়া আপনার ও ফিউচার ফেমেলি।
~ হুম তা তো অবশ্যই।
~ একটু মিসটেক হয়ে গেছে ভাইয়া।
~?
~ আমি আপনার শেলক নই বরং ভাইরা ভাই হতে যাচ্ছি। আর এ হচ্ছে আপনার one and only শালিকা। আর এই পুচকে গুলো আমাদের শেলক।
~ বাব্বা আমার শালিকা দেখি খুবই কিউট। এই যে পুচকু শেলক নাম কি তোমাদের?
পুচকুদের কোন খবর নেই। ওরা আইসক্রিম খেতে ব্যস্ত।
রিমন বলল এর নাম টোটো আর ওর নাম টুকু। দোলার মামাতো ভাই। টোটো ~টুকু দেখ এইটা তোমাদের আরেকটা ভাইয়া। বৃষ্টি আপুইইয়ের সাথে এই ভাইয়াটার বিয়ে হবে।
দুজনের একসাথে বলে উঠে ~ তো আমাদের কি লাভ?
দোলা লজ্জা পেয়ে যায়। দুহাতে দুজনের মুখ চেপে ধরে।
শ্রাবণঃ তো দোলা ভাইয়াকে কেমন লাগলো? নিজেকে দেখিয়ে। তোমার বোনের সাথে মেচ করবে তো?
দোলা কিছু না বলে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখতে লাগলো শ্রাবণ কে ইয়া লম্বা, খুব স্টাইলিস, দামী সু, ব্লাক ডেনিম প্যান্ট, হুয়াইট কালার শার্ট, ফ্লোল্ড করে রেখেছে শার্টের হাতা, ফর্সা গায়ের রং, খোচা খোচা দাড়ি, লাল টকটকে ঠোঁট, লম্বা বাশির মতো নাক, সুন্দর দুটি চোখ, প্রশস্ত কপাল, স্পাইক করা চুল। কোথাও যে কোন খুত নেই। এই লোকটা তার ভাইয়া হবে ভাবতেই ঠোঁটের কোণে হাসি উঠে।
এতক্ষণ দোলার এমন নিচ থেকে উপর অব্দি পর্যবেক্ষণ করা দেখে শ্রাবন আর রিমন হো হো করে হাসছিল। রিমনের হাসি কোথায় যে হারিয়ে যায় দোলার হাসি তে মরে যায় যায় অবস্থা।
শ্রাবনঃ দোলা কি ভাবছ? তুমি যে ভাবে আমায় দেখছ তোমার বোন তো আমার দিকে চেয়েই দেখলো না।
দোলাঃ আপনি আমার ভাইয়া হবেন? আপনি কত সুন্দর ঠিক আমার আপুইয়ের মত। আপনাদের দুজনকে অনেক মানাবে
তারপর কিছুক্ষণ গল্প করে খেয়ে বেরিয়ে আসে। শ্রাবণ টোটো আর টুকু কে অনেক গুলো চকলেট কিনে দেয়। দুজনেই খুব খুশী।
পর্ব ১৯
রাস্তায় পাশে ভির জমেছে, পুলিশের গাড়ি দেখা যাচ্ছে। গাড়ি থামানো হচ্ছে। শ্রাবণ গাড়ি থেকে নেমে একজনকে জিজ্ঞাসা করে
~ এইযে ভাইয়া এখানে কি হয়েছে এত ভির আর পুলিশ দেখা যাচ্ছে।
লোকটা ~ আর বলবেননা না ভাই এখানে একটা খুন হয়েছে। রাত দুপুরে মাতলামি করতে এসেছে। একটা বাচ্চা মেয়ের উপর হামলা করেছিল। মদের বোতল দিয়ে মেয়েটা লোকটার মাথায় মেরেছে লোকটা মারা গেছে। এখন মেয়েটাকে পুলিশ নিয়ে যাবে কিন্তু একজন মহিলা এসে কেস টা এখানেই শেষ করে দিল।
শ্রাবণ কৌতুহল বসত ভিতরে এগোতে লাগল কিন্তু যা দেখল তার জন্য প্রস্তুত ছিল না। রাণী একটা পুলিশ কে কষিয়ে থাপ্পড় মারছে। শরীরে রক্ত লেগে আছে। শ্রাবণের বুকটা ধপ করে উঠে।
রাণীঃ হারামজাদা ডিউটি দেখাচ্ছিস আমায়। তোরা পুরুষ নামের কলঙ্ক। খুন আমি করেছি আমায় এরেষ্ট কর দেখি কেমন পারস আমাকে করতে পারবি না আর মুমূর্ষু মেয়েটাকে নিতে চাচ্ছিস। লাস টাকে নিয়ে এই মূহুর্তে চলে যাবি।
রাণী একটা মেয়ে কে ধরে গাড়িতে উঠচ্ছে। মেয়েটির হাত মুখ দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। রাণীর হাসপাতালে নিয়ে আসে মেয়েটিকে। শ্রাবণ ও পেছন পেছন আসে। মেয়েটিকে যখন ব্যান্ডেজ করছে তখন দেখে শ্রাবন তার সামনে বসে কাটা হাতটা নিচ্ছে রক্ত পরিষ্কার করতে।
শ্রাবণ কে দেখে রাণী রেগে যায়। অসস্থি লাগছে শ্রাবণ কে দেখে। সহ্য করতে পারছে না সে। এক ঝাটকায় হাত সরিয়ে নেয়। আবারো যখন হাত ধরতে যাবে উঠে অপর পাশে চলে যায়। রাগে শরীরের চামড়া ফেটে যাচ্ছে রাণীর। কোন মতে একটু কন্টল করে নেয় নিজেকে।
মেয়েটিকে বাসায় দিয়ে রাস্তায় গাড়ির কাছে এসে দেখে শ্রাবন দাড়িয়ে আছে। শ্রাবণ দৌড়ে এসে রাণীর হাত ধরে। রাণী আবার হাত সরিয়ে নিয়ে বলে
~ সমস্যা কি আপনার? যখন তখন হাত ধরেন।
~ তোমার হাত কতখানি কেটে গেছে। কতখানি রক্ত পরছে। প্লিজ সোনা চল ড্রেসিং করবে চল
~ আমার যা ইচ্ছা হোক আপনার কি তাতে? কেন আমার পিছু লেগে আছেন?
~ একটু শান্ত হও সোনা। তোমার হাতে ব্যথা হচ্ছে চল আগে ড্রেসিং করে ওষুধ লাগিয়ে দেই তারপর কথা বলি চল।
~ একদম ছোবেন না আমায়। আমি সহ্য করতে পারছি না আপনাকে।
~ মেয়েটি কি সত্যি ঐ লোক টাকে মেরেছে? মেয়েটা মারলে তোমার হাত কাটা কেন? তুমি কিছু করনিত?
~ বাহ এখন আমাকে খুনী বলছেন। বুদ্ধি আছে আপনার। কত সুন্দর ভাবে বুঝে গেলেন তো এত বুঝেন তাও আমার পিছে লেগে আছেন কেন?কতটুকু জানেন আমার সম্পর্কে? আমি ধর্ষিতা আমি একটা খুনী।
~ আমি জানি। সব জানি আমি। ভালোবাসি তোমায়।
~ আমি কারো করুনার পাত্রী হতে চাই না।
~ ভালবাসা করুনা নয় রাণী। প্লিজ রাণী। খুব ভালোবাসি আমার পুরো দুনিয়া তুমি। অতীতের সব কিছু ভুলে নতুন করে শুরু কর। আমি তোমায় একটা নতুন জীবন সাজিয়ে দিতে চাই। সেখানে তুমি আর আমি ভালবাসার চাদরে মুড়িয়ে থাকবো।
প্লিজ রাণী যেও না আমার কথা শোন প্লিজ।
আজ দোলার গায়ে হলুদ। সন্ধ্যায় অনুষ্ঠান। দোলা হলুদ শাড়ি লাল পাড় শাড়ি, ফুলের গহনায় সেজেছে। রিমন হলুদ পাঞ্জাবী পড়েছে। দুজনকে স্টেজে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। একে একে সবাই গায়ে হলুদ ছোঁয়া দেয়। আনন্দ উল্লাসে ভরপুর সবাই।
এত আনন্দের মাঝে রাণীর মুখে সন্ধ্যা নেমেছে। চোখ দুটো বার বার একজনকেই শুধু খুজছে। রিমন রাণীর এমন করা দেখে জিজ্ঞাসা করে
~ রাণীমা কাওকে খুজছেন?
~ রিমন আন্টি আসেনি?
~ কোন আন্টি?
~ সোহানা আন্টি, মনা, শাহেদ আসেনি?
~ একজনকে বাদ দেওয়া উচিত হয়নি। সমস্যা নেই মুখে না বললেও মনে মনে বললেই চলবে। আমরা কেউ শুনতে যাচ্ছি না।
~ বাজে কথা রাখ। আসেনি?
~ রাণীমা ওরা আজ আসেনি। কাল আসবে বলেছে।
~ ওহ আচ্ছা। শোন আপুই বলে ডাকবে।
রিমন মুচকি হেসে চলে যায়।
রাণী বরাবরি সাজ প্রিয়। মায়ের জোরাজুরি তে শাড়ি পরেছে। বোনের বিয়ে আর না সাজলে কি হয়? সাদার মধ্যে লাল হলুদ মিক্স কাতান শাড়ি পড়ে হলুদ বেগুনী মিক্স হিযআপ গোল্ড জুয়েলারিতে অসাধারণ লাগছে। মা কাজলের কালি কানের পেছন দিয়ে নজর বন্দী করে নেয়। এত সাজ যার জন্য সে কোথাই? সে কি চোখ ফেরাতে পারবে রাণীকে দেখে?
বর বউ বসে আছে স্টেজে। দুজনেই নীল রংয়ে সেজেছে। দুজন দুজনের দিকে আড় চোখে তাকিয়ে দেখছে বার বার। এইটা দেখে বন্ধু মহলে সেইরকম হাসি ঠাট্টা আর দুষ্টুমি চলছে। দোলা আর তাকাতে পারছে না। কিন্তু রিমন ঠিকি একটু পর পর তার নীল পরীকে দেখছে। দোখ ফেরানো বড্ড দায়।
রাণী স্টেজে আসতেই দোলা জড়িয়ে ধরে ওকে। রিমন আর দোলাকে নিয়ে কয়েকটা ছবি তুলে। তারপর একে একে সবাই সবাই এসে ছবি তুলে। কয়েকটা ফেমেলি ফটোও তুলা হয়।
রাণী উসখুস করতে থাকে। অতিথিরা প্রায় সবাই চলে এসেছে। কিন্তু খান বাড়ির কেউই আসলোনা এখনো। রাণীর এখন খুব কষ্ট হচ্ছে। সেই রাতের পর থেকে শ্রাবণ আর ফোন দেয় না, সামনে আসে না, কথা বলে না।
প্রত্যেক রাতে ঘুমানোর আগে ফোন দিয়ে কিসব দুষ্টু দুষ্টু কথা বলে। কিন্তু কয়দিন থেকে আর সেই কথা শুনে না। দেখতে আসে না রাণীকে। শ্রাবণের মত রাণীর ও অভ্যাস হয়ে গেছে এ কয়দিনে। নির্ঘুম রাত কাটে রাণীর।
রাণী এবারো রিমনের নজর এড়ালো না। ইতোমধ্যে সোহানারা চলে এসেছে। ইশানের সাথে গল্প জমিয়ে দিয়েছে। রিমন রাণীর কাছে এসে বলল
~ আপুই ওরা চলে এসেছে।
রাণী সোহানা, মনা আর শাহেদ কে এদিকে আসতে দেখে। এদিক ওদিক ঘোরে খুঁজে চলেছে। কিন্তু শ্রাবণ কে পায় না। তার মানে সে আসেনি। খুব কি খারাপ ব্যবহার করে ফেলেছে ও? মন খারাপ হয়ে যায় মূহূতেই।
ওরা এসে রিমন ~ দোলার সাথে গল্পে লেগে যায়। সোহানা ওদের জন্য প্রাণ ভরে দোয়া করে।
দোলা গুটি গুটি পায়ে দোলার পাশে গিয়ে দাঁড়ায়।
সোহানা, শাহেদ, মনা ~
শাহেদঃ মম বউ কোনটা।
মনাঃ মম এই বউটাতো রিমন ভাই নিয়ে চলে যাবে তাহলে আমরা এই বউটা নিয়ে চলে যাই?
সোহানাঃ দুই বোন মাশাল্লাহ খুব সুন্দর লাগছে। ভাইজান এই বউটাকে কিন্তু যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমার ঘরে নিতে চাই।
ইশানঃ হা হা হা। ছেলে মেয়ে যে বায়না ধরেছে।
সোহানা রাণীর কাছে এসে ~ কিরে মা? যাবিনা আমার বাসায়?
রাণী মাটির দিকে তাকিয়ে চোখের জল ফেলতে থাকে।
সোহানাঃ কাঁদছিস কেন বোকা মেয়ে? তোকে কি একবারেই নিব? পাপার কাছেও থাকবি।
রাণী দৌড়ে চলে এসে দরজা আটকে কান্না করতে থাকে।
“আপনি সত্যি সত্যি দূরে চলে গেলেন? একবার ও ভাবলেন না তখন আমার মাথা খারাপ হয়ে গেছিল আমি সরি মি খান সরি। আপনি সব জেনেও আমাকে ভালবেসেছিলেন? সত্যিই কি ভালবেসেছিলেন? ভালবাসলে চলে যেতে বললেই কেউ চলে যায়?”
পর্ব ২০
বউভাতের পরদিনই দোলা ~রিমন হানিমুনে রাজস্থান এ যায়। রাণীর পক্ষ থেকে এটা গিফট হিসেবে রিমন খুবই খুশি। আজ দশদিন পর দেশে ফিরেছে। সবার জন্য গিফট নিয়ে এসেছে।
মামা মামী তাদের বাসায় চলে গেছে। বিজয়রা চৌধুরী বাড়ি তেই আছে। তার দু মেয়ে জোর করে নিজের কাছে রেখেছে। প্রাণ ভোমরা ছাড়া থাকা যায় না তাই এখন থেকে এখানেই থাকবে।
আজ পনের দিন শ্রাবণ রাণীর কোন যোগাযোগ নেই। রাণী অনেক মিস করে কিন্তু ভূলে থাকার চেষ্টা করে সবসময়। তার মত একজনের কাউকে পাশেচাওয়ারর মত বোকামি আর নেই। পরিবারের হাসিমুখ দেখে জীবন পার করে দিতে পারে। আছেই তো বেশ। এভাবে এই ছোট্ট জীবন শেষ হয়ে যাবে।
সবাই আজ খান বাড়িতে যাবে। নতুন জুটির উপলক্ষে খান বাড়িতে সবার দাওয়াত পরেছে। ইশান রাণীকে এই কথা বলতে না করেছে। কারণ রাণী জানলে খান বাড়িতে যেতে চাইবে না।
রাণীমা। আজ অফিসে ফোন করে না করে দাও তুমি যাবেনা।
কেন পাপা?
আমার সাথে বেরবে তুমি। সবাই বের হব।
আমরা কোথায় যাব পাপা?
বলে দিলে তো সারপ্রাইজ থাকলো না। না শুনতে চাই না।
ওকে পাপা।
খান বাড়ির সামনে গাড়ি এসে দাঁড়িয়েছে। রাণী গাড়ি থেকে নেমে বাড়িটি দেখছে। খুব সুন্দর বাড়িটি। হটাৎ রাণীর চোখ আটকে গেল। শাহেদ ওদের এগিয়ে নিতে এসেছে। বিষাদের ছায়া হয়ে নেমে আসে মনে। রাণীর বাড়ির ভিতরে ঢুকে সবার সাথে। তার চোখ কেবল চারিদিকে তাকাচ্ছে আর মনের ভেতরে প্রশ্ন গুলো উকি দিচ্ছে।
“শ্রাবন কি আদৌ বাসায় আছে? নাকি বের হয়ে গেছে? শ্রাবন কি জানে আমি আসব? সেকি আমার সামনে আর কখনো আসবেনা?”
মনা রাণীকে দেখে দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরে। রাণীর মনার এই পাগলামিটা বেশ ভালো লাগে। ও জড়িয়ে নেয়। জড়িয়ে থাকা অবস্থায় বলে ~ মম দেখ কে এসেছে এই পরী টাকে আর যেতে দিব না মম। এই পরী তোমার কি আমাদের সাথে থাকতে ভালো লাগে না? চলে আসনা আমাদের সাথে থাকবে।
আমি তোমায় অনেক চকলেট দিব। আমার পচা ডাক্তার তোমার সব ঔষধ এনে দিবে। মম তোমার জন্য অনেক কিছু রেখেছে ঐগুলো সব দিবে আর ভাইয়া তোমায় অনেক আদর দিবে তোমায় অনেক ভালবাসবে।
মনা তুমি খুব দুষ্টু হয়ে গেছ।
এইটা ভাইয়াও বলে,
ভাইয়া ও ভাইয়া তারাতারি উঠ। ভাইয়া এই ভাইয়াভাইয়া।
উফ মনা হচ্ছে টাকি? You know that I’m very tired Now I sleep Go now and don’t disturb me.
ভাইয়া তুমার সব tiredness উবে যাবে গো। ভাবি এসেছে।
কোন ভাবি?
আরে পরী ভাবি। তোমার প্রাসাদ পরী।
ও তো সবসময়ই আসে।
আরে সবসময় তো সপ্নে আসে। বাট এখন রিয়েলি এসেছে। ইভেন ওদের বাসার সবাই এসেছে। নিচে বসে আছে।
এই কথা বলতে এতক্ষণ টাইম লাগে? যাও আসছি আমি।
নিচে নামতে নামতে দেখে সবাই বসে ভালোই গল্প জুড়ে দিয়েছে। সোফায় সরাসরি রাণীর সামনে গিয়ে বসে। রাণী তো দেখে হা। এইভাবে কখনো শ্রাবণকে দেখবে কখনো ভাবেনি। হাটুর উপরে অফ হোয়াইট কালার প্যান্ট। স্লিভলেস রেড কালার গেঞ্জি। জিম করা বডি পুষ্ট হয়ে উকি দিচ্ছে।
ঈশানঃ শ্রাবণ তোমার মামার শরীর কেমন এখন?
শ্রাবনঃ মামা এখন অনেকটাই ওয়েল।
~ সিঙ্গাপুর থেকে বেক করেছ কবে?
~ 4 hours ago uncle মামার সাথে এখন মামনি আছে। আমারো হাতে কাজ। সো চলে আসলাম।
~ ও আচ্ছা। রেস্ট নাও কাল থেকে কাজে এটেন্ড করবে।
~ হামম।
সবার সাথে কথা বলে নেয় শ্রাবন। দু হাত ভাজ করে থুতনি রেখে হাটুর উপর ভর দিয়ে পলকহীন ভাবে তাকিয়ে থাকে রাণীর পানে। চোখ ফেরালেই যেন পাখি উরে যাবে। এত দিনের না দেখার তৃষ্ণা মেটাতে ব্যস্ত হয়ে পরে।
রাণী বার বার আর চোখে শ্রাবণের দিকে তাকায়। এমন তাকানোতে রাণীর অসস্থি লাগছে। কিন্ত কিছু করার নেই। উঠে যাওয়াও সম্ভব নয়। না চাইতেও বার বার চোখ চলে যাচ্ছে। চোখ দুটো অসম্ভব লাল হয়ে আছে। মাথার চুল গুলো উসকো খুসকো হয়ে আছে। সৌন্দর্য যেন এতে আরো বেরে গেছে।
হটাৎ করে শ্রাবন উঠে দাড়ায়। রাণীর হাত ধরে সোজা উপরে হাটা দেয়। সবাই হা করে তাকিয়ে আছে। সবার সামনে এভাবে যে শ্রাবনের মত লাজুক ছেলে রাণীকে টেনে নিয়ে যাবে ভাবতেই পারে নি। রাণীও অবাকের চরম পর্যায়ে।
রাণীকে রুমে নিয়ে গিয়ে খাটে বসিয়ে দিয়ে আলমারির থেকে মলম নিয়ে আসে। সামনে বসে বলে ~দেখি হাতটা।
রাণীর এদিকে হুস নেই। সে শ্রাবনের রুম দেখতে এতটাই ব্যস্ত যে কোন কথা কানে যাচ্ছে না। গোছালো একটা রুম। রুমের একপাশে বেলকনি, আর এক পাশে আলমারি আর বেড সোফা, আরেক পাশে দেয়ালে ছোট বড় ফ্রেমে বেশ কয়েকটি ছবি। ছবি দেখে বুকের ভেতর অদ্ভুত খেলা শুরু হয়ে যায়।
ছবি গুলো শ্রাবণের সাথে প্রত্যেক বার দেখা হওয়ার ছবি। পাহাড়ের উপর দুজনে সূর্যাস্ত দেখা সময়ের ছবি। যেখানে রাণী তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে আর শ্রাবণ রাণীর দিকে। বিচে বসে সূর্যাদয় দেখার ছবি। রেস্টুরেন্টে পাশাপাশি বসে চা খাওয়ার ছবি। আরেকপাশে তাকাতেই মুগ্ধ হয়ে যায় বড় করে বাধানো শ্রাবণের ছবি দেখে।
শ্রাবন রাণীর এরকম কাজ দেখে এতক্ষণ মিটি মিটি হাসছিল। কানের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করে
~ কেমন দেখতে?
~ ভয়ংকর সুন্দর।
~ যাক তাহলে রাণী সাহেবাও আমায় খেয়াল করে।
রাণীর ঘোর কেটে যায় শ্রাবনের কথায়। শ্রাবন দুহাতে মুখ ধরে উপরে তুলে বলে ~ ছবি তে দেখতে হয় কেন? সামনেই বসে আছি। দেখনা আমার দিকে যত ইচ্ছে দেখ। আমি যে তোমার চোখে বন্দী হয়ে থাকতে চাই সারাজীবন।
দেখি হাত দেখেছ কতটুকু দাগ হয়ে গেছে। আমার উপর রাগ দেখিয়ে নিজের ক্ষতি কর কেন বোকা মেয়ে?
(দাগে মলম লাগাতে লাগাতে)
~ I am sorry for that night
~ sorry কেন বলছ? জান আমি কতটা খুশি হয়েছিলাম তুমি আমার উপর এমন করেছ বলে রাগ মানুষ তাদের উপর ই দেখায় যাদের ভালবাসে। এই মলমটা যাওয়ার সময় নিয়ে যাবে। রাতে আরেকবার লাগাতে হবে। অবশ্য তুমি যদি চাও আমি রাতেও লাগিয়ে দিয়ে আসতে পারি। তবে ব্যপারটা আমার শশুর শাশুরির কাছে দৃষ্টিকটু লাগতে পারে।
রাণীর একটু রাগ হল আবার লজ্জা ও পেল।
~ এভাবে যে টেনে উপরে নিয়ে এলেন এটাকি খুব ভালো দেখতে লাগলো?
শ্রাবন উওর না দিয়ে রাণীর কোলে শুয়ে পড়ে।
আমার খুব ঘুম পাচ্ছে। মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দাওনা। জান কতদিন ঘুমায় না আমি? চোখ বন্ধ করলেই তুমি খুব জালাতন করো গো।
রাণী মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। হটাৎ করে শ্রাবন ঘুরে রাণীর পেটে মুখ গুঁজে দেয়। দু হাত দিয়ে কোমড় জড়িয়ে ধরে শক্ত করে। রাণীর অবস্থা খারাপের থেকেও খারাপ হয়ে যায়। চোখ গুলো যেন উপচে বেড় হয়ে পরবে এমন অবস্থা। শ্রাবনের গরম নিশ্বাস গুলো জামা বেধ করে পেটে গিয়ে লাগছে। যার ফলে শরীরে এক অসহ্য মিষ্টি যন্ত্রণা সৃষ্টি হচ্ছে। প্রত্যেকটা নিঃশ্বাস এ রাণী কেপে উঠছে। এ এক ভয়ংকর ফিলিংস।
দুপুরে খাবার টেবিলে বসে সবাই রাণীর জন্য অপেক্ষা করছে। সোহানা রাণীকে ডাকার জন্য উপরে যায়। দরজার কাছে যেতেই এরকম রোমান্টিক সিন দেখতে পায়। নিজের ছেলের এমন কান্ড দেখে লজ্জা পেয়ে যায়। কিন্তু চোখ সরাতে পারে না। এতদিন যা চেয়ে এসেছে আজ যে তাই দেখতে পাচ্ছে। মনের ভিতর আনন্দ আন্দোলন করতে শুরু করেছে।
সোহানার দেরি দেখে একে একে সবাই উপরে চলে এসেছে। রাণীর লজ্জায় মাথা কাটা যায় যায় অবস্থা। আরেকজন তো মনের সুখে জড়িয়ে ধরে ঘুমোচ্ছে। রাণী চোখ দুটো খিচে বন্ধ করে নেয়। ওকে সবাই দেখছে দেখুক কিন্তু সে কাউকে দেখবে না। বাইরে যে হাসির রোল পড়ে গেছে এটা খুব ভালো ভাবেই বুঝতে পারছে।
ইশানঃ ভাবি এই জোড়াকে এক করার সময় এসে গেছে। হা হা হা
পর্ব ২১
পরসু রাতে ৮ টার দিকে আমার মেয়েটা বাসা থেকে বের হয়েছে। আজ রাত ৯টা বাজতে চলল। ও বাসায়তেও আসল না। ফোন ও তুলছে না সুইচ স্টপ বলছে। যেখানে যেখানে যাবার সব জায়গায় খবর নিয়েছি। এমন কখনো করে না। ওকে এনে দাও তোমরা। ও ছাড়া আমার আর কেউ নেই। আমার একমাত্র অবলম্বন। রাণীমা
আংকেল প্লিজ শান্ত হন। এভাবে ভেঙ্গে পরবেন না। আমার উপর ভরসা আছে তো নাকি? আমি ঠিক ওকে সুস্থ ভাবে বাসায় নিয়ে আসব। কিন্তু ও যাবে কোথায়?
(মনে মনে) ~হে আল্লাহ আমার প্রাসাদ পরীর যেন কিছু না হয়। প্রাসাদ পরী। ইয়েস প্রাসাদ। আই মিন রাজস্থান। আমি যতদুর যানি ওখানে রাণী একাই যেত আর বেশ কিছু দিন করে থাকত। ওইখানের সাথে তো আংকেল দের কারো যোগাযোগ নেই। আমাকে এক্ষুণি যোগাযোগ করতে হবে।
শ্রাবণ তার বিজনেস পার্টনার এর সাহায্য নিয়ে রাজস্থান এর সব গুলো হোটেল ~মোটেল এ খবর নেয়। কিন্ত ফলাফল শূন্য। তার পর তার গার্ড গুলোর কথা মনে পড়ে যায়। ফোন নাম্বার খুঁজে ফোন দেয় গার্ড কে।
গার্ডঃ নামাস্তে ভাইসাব।
শ্রাবণঃ হুম। ভাইসাব রাণীজি উস প্রাসাদ কো গায়া? তুম দেখা উসকো?
গার্ডঃ ও হা রাণীজি। রাণীজি মর্নিং এ ইকবার আয়া ইদার। লেকিন চলাগায়া।
শ্রাবণঃ thank you ভাইসাব। মে আগায়ি। মে আন্দার যাতা চাতিহু। আপ সাব fix up কারনা please
গার্ড: ওকে ভাইসাব মে দেখতেহু।
ইমার্জেন্সি টিকিটে রাত ১০৩০ টার ফ্লাইটে ইন্ডিয়া চলে যায় শ্রাবণ।
প্রাসাদের সামনে পায়চারি করছে। গার্ডের উপর প্রচুর রাগ হচ্ছে। এতক্ষণ লাগে ফর্মালিটি পুরণ করতে? তার পর আবার বলে জানিয়ে আসছেন তো কি হয়েছে আমি কি জানি এই রাত বিরাতেই চলে আসবেন। ইচ্ছে করছে গার্ডকে দোলাই দিতে। তার মধ্যে আবার গার্ড বলল একটু আগে নাকি রাণী ভিতরে ঢুকেছে।
সকালে যখন এসেছিল তখন একটা লোক কে টেনে ছেসরে নিয়ে ঢুকেছে। এটা কেন করবে রাণী? এখানে এসেছে বাসায় বলে আসল না কেন? এদের ক্লাস তো হয় দিনের বেলা আর রাতে তো এখানে ঢুকতে দেয় না। তাহলে রাণী কিভাবে ডুকল?
~ ভাইসাব formalities complete হ গায়া। আপ আন্দার যায়ে।
~ ok again thank you
শ্রাবণ ভিতরে দিকে আস্তে আস্তে এগিয়ে যায়। বাগানে লাইট রয়েছে কিন্তু প্রাসাদ অন্ধকার। হাটতে হাটতে হোচট খেয়ে পড়ে যায়। উঠে খেয়াল করে যে এই সেই যায়গা যেখানে সে তার প্রাসাদ পরী দেখা পেয়েছিল। মুখে হাসি ফুটে ওঠে তার। কিন্ত কোথায় পাবে তার পরীকে। এ প্রাসাদের কোন কোনে আছে সে?
শ্রাবণের একটু একটু ভয় লাগছে। কারন এ প্রাসাদ সম্পর্কে অনেক অজানা কথা লোক মুখে শুনেছে সে। ভয়ংকর সে লোককথা। উপরের ঘর গুলোর দিকে তাকাতেই হটাৎ একটা ঘরে আলো দেখতে পায়। দ্রুত সেখানে যায়।
বিশাল বড় হল রুম। যার চারিদিকে দেয়ালে দেয়ালে টাঙানো আছে তরবারি। ছোট বড় অনেক ঐতিহ্য বাহি তরবারি। মাঝ বরারর বিশাল একটা ঝারবাতি। ঠিক তার নিচে রশি দিয়ে পেচানো অবস্থায় ফ্লোরে বসে আছে ইদ্রিস। আর তার সামনে ভয়ংকর রাণী চৌধুরানী। গোলাপি গায়ের রং লাল বর্ণ ধারণ করেছে সাথে লাল শাড়ি। চোখ থেকে যেন আগুন ঝরে পড়ছে। চেহারায় হিংস্রতা ফুটে উঠেছে।
আমি রাণী চৌধুরানী। সাধারণ মফস্বলের মেয়ে ছিলাম। মানুষের হাতে হাতে আজ আমি রাণী চৌধুরানী। মনে আছে সে রাতের কথা? মাতাল অবস্থায় বৃষ্টির রাতে অন্ধকারে বৃষ্টি নামের একটি মেয়ের উপর কুকুরের মত হামলা করেছিলি। কেউ কিছু জানতে পারে নি। সেদিন তো মারা গিয়েছে বৃষ্টি। জন্ম হয়েছিল রাণীর। ঠিক দু বছর পর এই একি কাজটা করেছিস তুই। চিনতে পারিস নি আমায়। আমি কিন্তু ঠিকই চিনেছিলাম। আবার তুই মেরে ফেললি আমায়।
মাংসাসি পশুর মত কামড়ে খেয়েছিলি আমার দেহটাকে। এত যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়েছে আমায়। আমার মম আর ভাইটাকেও মেরে ফেলল তোর ভাই।
সুস্থ হওয়ার পর থেকেই খুজে চলেছি তোদেরকে। তোরা লন্ডন চলেগিয়েছিস শুনে পড়ার অজুহাতে লন্ডনেই চলে গিয়েছিলাম। কিন্তু অনেক খুজেও পায়নি তোদের। দু বছর আগে তোর ভাইকে পেয়ে কস্ট দিয়ে দিয়ে মেরেছি আমি।
যেভাবে আমার মম আর ভাইকে মেরেছিল। আর আজ তোকে মারব আমি যেভাবে আমাকে মেরে ছিস বার বার। আমার শরীর যেভাবে ক্ষত বিক্ষত করেছিস সেভাবে মারব তোকে। আমি ঠিক যেভাবে যন্ত্রণায় ছটফট করেছি সেভাবে ছটফট করবি তুই।
রাণীর তরবারির প্রত্যেক টা আঘাতে ছিন্নভিন্ন হতে থাকে ইদ্রিস। যত রাগ সব ঝারতে থাকে রাণী। শিরা উপশিরা থেকে সব রক্ত মাথায় উঠে গেছে তার। মরণ যন্ত্রনায় ছটফট করতে করতে শেষ হয়ে যায় ইদ্রিস।
রাণী এত আঘাত করেও শান্ত হতে পারে না। মেঝেতে বসে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে কাঁদতে থাকে। আর দরজায় দাড়িয়ে হতভম্ব হয়ে দেখতে থাকে এই দৃশ্য শ্রাবণ আহমেদ খান। একসময় সেভাবেই ঘুমিয়ে পরে রাণী।
শ্রাবণের কোলে মাথা রেখে ফ্লোরে ঘুমিয়ে আছে রাণী। সকালে ঘুম ভাঙলে দেখে শ্রাবন তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। চমকে উঠে বলে
~ আপনি?
~ হুম।
~ কোথায় আমি?
~ যেখানে ছিলে সেখানেই আছ।
~ আপনি কিভাবে আসলেন এখানে?
~ যেভাবেই আসি না কেন সেটা বড় কথা নয়। এভাবে না জানিয়ে আসা ঠিক হয়নি।
~ এখানে একটা লাশ ছিল।
~ সরিয়ে দিয়েছি। চল উঠ। বের হতে হবে এবার।
~ আহ।
~ দেখি সাবধানে। পা কেটে গেছে। হাতেও লেগেছে।
শ্রাবনের উপর ভর দিয়ে সিড়ি বেয়ে নেমে আসে রাণী। নিচে এসে দেখে অনেক মেয়েই আসছে। একটু এগুতেই দাড়িয়ে যায় রাণী। বয়স্ক এক মহিলা এসে দুহাতে পরম আদরে মুখ ধরে বলে
~ রাণীজি। কেসা হে আপ? কিসকা আয়া?
~ night pe গুরুমা।
~ পেছনে শ্রাবণকে দেখে বলে”উস লারকা কেয়া হে রাণীজি? তেরা পতি হে?
~ রাণী একবার শ্রাবণের দিকে তাকিয়ে মাথা উঁচু নীচু করে সস্মতি জানায়।
~ মাশাল্লাহ। কিসিসে নজর নাহি লাগে।
রাণীকে কোলে তুলে নেয় শ্রাবন।
~ কোল থেকে নামান। আমি হাটতে পারবো।
~ জানি তো আমায় ধরে ধরে।
~ তবুও নামান। আমি চাইনা আমার জন্য আমার জামাইয়ের কোন কষ্ট হোক।
~ ওই। তুমি আমার বউ আর কারো না। তোমার জামাই শুধু আমি।
~ আপনার কথাই তো বললাম।
~ তাহলে ঠিক আছে। আমার বউ এর প্রথম আমি কোলে নিয়েছি। এইটা আমার জন্য কতটা সুখের জান তুমি রাণী সাহেবা? তুমি আমার বুকে পা দিয়ে হাটলেও আমার একটুও কষ্ট লাগবেনা।
রেস্টুরেন্টে বসে রাণীকে খাইয়ে দিচ্ছে শ্রাবণ। রাণীর হাতে পায়ে ঔষধ লাগানো। রাণীর দু চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে।
~ রাণী সাহেবা কাদছ কেন? দেখ তোমার খামখেয়ালী পনা অনেক দেখেছি। একটু কি বকতেও পারব না? নেক্সট টাইম থেকে এরকম করলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না।
~ পাপা পাঠিয়েছে আপনাকে তাই না?
~ তোমার পাপা এখনও জানে না যে আমি আর তুমি এখানে। একটা সত্যি কথা বলত সেদিন রাস্তায় লোক টাকে কে মেরেছে? তুমি নাকি ঐ মেয়েটা?
~ আমি মারতে বলেছিলাম আর ও মেরেছে। কেন এভাবে মায়ায় আটকিয়ে রেখেছেন আমায়? আমি একজন
~ ধর্ষিতা
~ আমি
~ খুনী
~ কেন করেন আমার সাথে এমন?
~ ভালবাসি তাই। আর তুমি খুনী আর ধর্ষিতা জন্যই আমি তোমাকে ভালবাসি।
~ এটা ভালবাসা না।
~ এটাই ভালোবাসা। তোমার সবকিছু জেনেও তোমায় ভালবাসি আমি। তুমি তো খুনী। যেদিন প্রাসাদে প্রথম তোমার সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম তখনই খুন করে দিয়েছ তুমি আমায়। খুন হয়ে গেছি আমি। আর বার বার ধর্ষিতা বলে কি মনে করাতে চাও তুমি আমায়? ধর্ষণ তোমার খুব পছন্দের তাইনা? বিয়ে টা হতে দাও শুধু ধর্ষণ কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি?সব মুখস্ত করিয়ে দিব। একটা রাত ও ছাড় পাবে না তুমি। প্রতিটি দিন ছটফট করবে আর প্রতিটি রাতেই আমার ভালবাসায় ধর্ষিত হবে।
~ আপনি খুব খারাপ
~ তোমার জন্য সর্ব নিম্ন পর্যায়ে যেতে রাজি আছি রাণী সাহেবা
পর্ব ২২
~ আমি ঘুমাব।
~ কিহ? তুমি তো ঘুমাচ্ছিলে। উঠলে কেন?
~ আমি আপনার রুমে ঘুমাবনা। আমার জন্য অন্য একটি রুম বুক করেন।
~ আমার রুমে ঘুমোতে বুঝি প্রবলেম হচ্ছে তোমার?
~ হুম। হচ্ছে তো। আমি চোখ বন্ধ করেও দেখছি আপনি আমাকে দেখার প্রতিযোগিতায় নেমেছেন। আমার থেকে চোখ সরালে যেন আমি ভেনিস হয়ে যাব। এভাবে তাকিয়ে থাকলে ঘুমানো যায় নাকি।
~ কেন ভয় পাও?
~ আপনার কি মনে হয় আমি ভিতু? কি দেখেন এভাবে?
~ ভারতবর্ষের রাণী। এতদিন সে রাণী এলিজাবেথ ছিল। আপডেট হয়ে সে ভারতবর্ষের রাণী হয়েছে।
~ মানে?
~ একটানে মিররের সামনে দাড় করিয়ে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে ঘাড়ে মুখ গুঁজে দিয়ে বলে রাণী সাহেবা তুমি নিজেই দেখ তুমাকে টোটালি অন্যরকম লাগছে। পর্দায় দেখেছি তোমায় সবসময়। তবুও নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে একটু কষ্ট হয়েছে। আর আজ তুমি লাল কাতান শাড়িতে, খোপা করা চুলে, রক্তিম আভা যুক্ত গালে, ঐ লাল টুকটুকে অধরে, নতুন বউ সাজে আমার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে কিভাবে বাচিয়ে রাখি বলত? তোমার থেকে চোখ সরালে যে ঘোর অন্যায় করা হবে।
এমন নেশা ভরা কন্ঠে রাণীর চোখ জুড়া বন্ধ হয়ে আসে। গরম নিশ্বাস গুলো বার বার কাপিয়ে তুলে শরীর কে। কাপা কাপা কন্ঠে রাণী বলে ~
আআআমিই থাককবনা এই রুরুমে।
রাণীকে ছেড়ে দুরে সরে দাঁড়িয়ে ~ হা হা হা তুমি কতটা ভিতু দেখলে?
~ আপনি একটা অসভ্য।
~ তোমার দুনিয়ায়।
রাণীকে নিয়ে পরদিন বিডিতে ফিরে শ্রাবণ।
রাণী মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে ইশানের সামনে
~ আমি সরি পাপা। আর হবে না। কখখোনো না। ফরগিভ মি।
~ পাপা সরি তো। প্লিজ
~ শ্রাবণ যা বলল সব কি সত্যি?
~ উত্তর চেয়েছি আমি।
~ হ্যাঁ পাপা।
~ তাহলে মাথা উঁচু করে থাকার কথা নিচু কেন?
~ পাপা। লাভ ইউ পাপা। থ্যাংকু।
~এবার আমার একটা কথা যদি অমান্য কর তাহলে যে দিক দু চোখ যায় সেদিকে চলে যাব।
~ সব শুনব পাপা। সব
২ দিন পর ..
রাণীর ফোনে একটা টেক্সট আসে।
~ now it is noon At evening I want to see you with me Open your Almira and you can see a shopping bag There are a beautiful dress that I gift you now Please wear it and join with me Love you so much rani saheba.
রাণী প্যাকেট টা খুলে দেখল চকলেট কালার সিল্কের একটা অসম্ভব সুন্দর পার্টি ড্রেস উইথ স্কার্ফ।
সন্ধ্যায় রাণী ড্রেস টি পড়ে একদম সিম্পল সাজে চুল গুলো পেছনে খুলে স্কার্ফ মাথায় দিয়ে নেয়। এতেই তাকে দেখে হাজার ছেলে পাগল হয়ার জোগাড়। বেড়িয়ে পরে শ্রাবণের দেওয়া ঠিকানার উদ্দেশ্য।
গাড়ি থেকে নেমে দেখে এইটা একটা বড় রেস্টুরেন্ট। আসে পাশে শ্রাবন কে দেখতে না পেয়ে ভিতরে যেতে থাকে। একটু যেতেই দেখে শ্রাবন ২টা মেয়ের সাথে ক্লোজ ভাবে দাড়িয়ে গল্পে মেতেছে।
রাণীর মনে কষ্ট গুলো উকি দিতে থাকে। শ্রাবণ ওকে ডেকেছে দুজনে সময় কাটানোর জন্য। কিন্তু ও তো অন্যকারো সাথে
পেছন দিক পা বাড়ায় রাণী যা শ্রাবনের চোখের আড়াল হয় না।
সেও রাণীর পেছন পেছন দৌড়ে আসে। রাণী গাড়ির গেইট খুলে ভিতরে ঢুকতে যাবে তখনি একটানে শ্রাবন নিজের বাহুডোরে বন্ধি করে নেয় রাণীকে। এক চাহনিতে রাণী শ্রাবণের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে। বেশ কিছুক্ষণ চোখে চোখে কথপোকথন চলে।
শ্রাবণ রাণীর থেকে স্কাফ টান দিয়ে নিজের গলায় পেচিয়ে নেয়। ফুটে ওঠে শ্রাবণের প্রাসাদ পরীর সৌন্দর্য। লম্বা চুল গুলো ছড়িয়ে পড়ে ঘারের মুখের চারপাশে। শ্রাবণ রাণীর মাঝে ডুবতে ডুবতে ডুবলনা। একহাত ধরে ভিতরে যেতে থাকে।
রেস্টুরেন্টে পা রেখে চারপাশে অন্ধকার দেখে রাণী। হটাৎ একটা আলো এসে তার উপর পড়ে। সাথে অজস্র গোলাপের পাপড়ির বর্ষণ।
~ গোলাপের সুবাসের মত ভালবাসায় সুবাসিত করতে চাই তোমায় প্রাসাদ পরী।
আরেকটু এগিয়ে নিয়ে এসে একটা পুলের সামনে দাড় করায়। পুলের পানিতে অজস্র পদ্ম ফোটে আছে।
~ পদ্মের মত ভালবাসায় তোমার জীবণ ফুটিয়ে তুলতে চাই প্রাসাদ পরী।
আর একটু সামনে এগিয়ে এনে দাড় করায়। সামনে কৃষ্ণচূড়া ফুলে পূর্ণ গাছ।
~ কৃষ্ণচূড়ার রংয়ের মত ভালবাসা দিয়ে তোমায় রাঙ্গাতে চাই প্রাসাদ পরী।
আরো একটু এগিয়ে নিয়ে গিয়ে বেলীফুলে সাজানো বেচ্ঞি তে বসিয়ে দেয়। একটা বেলির মালা চুলে গুজে দিয়ে বলে
~ প্রত্যেক দিন বাসায় ফিরে তোমায় বেলীর ফুলে সাজাতে চাই প্রাসাদ পরী।
হাত ধরে কিছুটা এগিয়ে নিয়ে দাড় করিয়ে দেয়। সাথে সাথে মিউজিক বেজে ওঠে।
~ সানাম রে সানাম রে তু মেরি সানাম হুয়া রে।
রাণীর হাত ধরে ডান্স করতে থাকে। রাণীও পায়ে পা মিলিয়ে ডান্স করে। ডান্স শেষ করে সামনে এক হাটু ভাজ করে বসে এক গুচ্ছ গোলাপ রাণীর দিকে এগিয়ে দেয়। রাণী ফুল গুলো হাতে নেয়।
~ জীবণের প্রত্যেক টা পদক্ষেপে এভাবে পায়ে পায়ে এগিয়ে যেতে চাই।
হাত ধরে টেনে আকাশের দিকে দিকে দেখিয়ে বলে দেখ আকাশে কত মেঘ জমেছে এটা কি মাস জান? শ্রাবণ মাস। একটু পরেই অঝর ধারায় বৃষ্টি বর্ষণ হবে। যাকে বলে শ্রাবণ দিনের বৃষ্টি।
তুমি কি হবে এই শ্রাবণের বৃষ্টি? ভিজিয়ে দিবে কি এই শ্রাবণকে? নামবে কি ধারা হয়ে এই শ্রাবণে?
রাণীর চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে। এত সুখ যে তার কপালে ছিল শ্রাবণ এর ভালবাসা যে সে পাবে এটা কখনো কোনদিন ভাবেই নি।
মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়।
তখনি চারিদিকে আলো জলে উঠে। চারিপাশ থেকে করতালির আওয়াজ ভেসে উঠে।
রাণী চারিপাশে চোখ বুলিয়ে দেখতে থাকে। রাণী ও শ্রাবণের পরিবারের সবাই উপস্থিত সেখানে। রিলেটিভ রা সহ উপস্থিত। সবাই হাত তালি দিচ্ছে।
ইশান ~ উপস্থিত সকলকে উদ্দেশ্য করছি। আজ আমি আমার একমাত্র মেয়ে রাণী চৌধুরানী র সহিত মিসেস সোহানা খানের বড় ছেলে শ্রাবণ আহমেদ রাজা খানের এংগেইজমেন্ট ঘোষণা করছি এবং অতী সিঘ্রই এদের বিবাহ ঘোষণা করছি।
সবাই হাততালি দেয়। একটা ডালায় লাল ভেলভেটের কাপড়ের উপর গোলাপের পাপড়ি দিয়ে সাজানো উপরে দুটো রিং বসানো নিয়ে আসে রিমন। রাণীকে শ্রাবণের হাতে রিং পরাতে বলা হয়। রাণী কুচুরমুচুর শুরু করে দেয়। ইশান আবার রিং পরাতে বললে রাণী আস্তে আস্তে বলে উঠে বুড়ো বয়সে এংগেইজমেন্ট।
শ্রাবণ এই কথা শুনে কাদবে নাকি হাসবে বুঝতে পারে না।
ইশান গলা খাকিয়ে বলে উঠে আমার এই বয়সে বিয়ে করতে ইচ্ছে করে আর তোর ২৮ বছর বয়স মাত্র তাই এংগেইজমেন্ট করতে লজ্জা পাস।
সবাই এক নাগারে হেসে উঠে।
পর্ব ২৩ (অন্তিম)
রাতের মাতোয়ারা পরিবেশ। ঝিরি ঝিরি হালকাভাবে বৃষ্টি পড়ছে। অস্ফুট স্বরে আসা বৃষ্টির ফোঁটা গুলো চোখে মুখে ছোয়ে দিচ্ছে। শরীর জুড়ে শিহরণ বয়ে যাচ্ছে। রাস্তার সোডিয়াম আলো গুলো আরো ভালো লাগছে। এরি মাঝে একজোড়া কপোত কপোতী হেটে যাচ্ছে
খুব ইচ্ছে ছিল তোমার সাথে বৃষ্টি রাতে ভিজব। এত তাড়াতাড়ি ইচ্ছে টা পূরণ হবে ভাবিনি।
তুমি কি কিছুই বলবেনা?
বৃষ্টি যে মধুর হয় তা জানতাম বাট এত মধুর হতে পারে আগে কখনো ভাবিনি। অদ্ভুত সুন্দর।
~ আমি বুঝি সুন্দর না?
~ এতক্ষণে রাণীসাহেবার মুখ থেকে কথা ফুটল। তোমার কথাই বলেছি
~ কি?
~ মধুর
~ …
~ টমেটোর মত গাল গুলো এই পরিবেশে না দেখালেকি হয় না তোমার?
~ আজকে আমায় মারার প্লান করেছ নাকি।
~ হাটবনা আপনার সাথে।
~ বৃষ্টি জোরে নেমেছে। চল গাড়িতে ফিরে যাই।
~ হুম। এইরেএএএ
~ কি হল?
~ আমরা তো অনেক দুরে চলে এসেছি।
~ এখন? বৃষ্টি তে ভেজাও তো যাবে না। বাজ পরছে তো।
~ দেখি কোথাও দাড়ানোর জায়গা পাই কিনা।
এক বন্ধ দোকানের ছাউনির নিচে গিয়ে দাড়ায় দুজনে। বাতাস ~ বজ্রপাত ~ বৃষ্টি একসাথে শুরু হয়।
~ আচ্ছা তোমার কে রাজা বলে ডাকল সবাই। তোমার নাম রাজা জানতামনা।
~ তুমি যেমন শ্রাবণের বৃষ্ট তেমনি রাজার রাণী। তুমার রাণী নাম টা কে দিয়েছে?
~ ভাইয়া।
~ ঐ আমি তোমার কোন জনমের ভাই?
~ আমি তোমার কথা না আমার ভাই রাজের কথা বলেছি।
~ রাণী নামটা আমি দিয়েছি। রাজ নই।
~ …
~ রাজের থেকে যখন শুনেছিলাম তোমার নাম বৃষ্টি তখনি ওকে রাণী নাম রাখতে বলি। শ্রাবণের বৃষ্টি, রাজের বোন রাজার রাণী।
~ এই তুমি কি আগে থেকেই আমাকে বিয়ে করবে ভেবে রেখেছিলে নাকি?
~ হয়ত হা হা হা।
ক্রমান্বয়ে রাত বেড়ে চলেছে। বৃষ্টি থামার কোন নাম নেই। আর সেই সাথে শ্রাবনের রাণীকে দেখারও অন্ত নেই। মধ্য রাতের ঠান্ডায় রাণী ঠান্ডায় গুটিগুটি হয়ে দাড়িয়ে আছে। গায়ের উরনা টাও শ্রাবনের গলায় ঝুলছে। গলা থেকে ওরনা টা নিয়ে নিয়ে আস্তে আস্তে রাণীর সামনে এসে দাড়ায়। রাণীকে ওরণা দিয়ে মুড়িয়ে দেয়। পাতলা ওরণা গায়ে জড়ীয়ে কাপতে থাকে। শ্রাবণের চোখ দুটো রাণীর থেকে সরানোই দায় হয়ে পড়ে।
ঘোর লাগা চোখ দুটো প্রিয়তমাকে নজর বন্দী করতে ব্যস্ত আজ। আচমকা একটানে রাণীকে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। চোখ গুলো বড় করে হা করে তাকায় শ্রাবণের দিকে। শ্রাবণ ঠোঁট দুটো বন্ধ করে দেয় নিজের ঠোঁটে দিয়ে। ভালবাসার পরশ দিতে থাকে। আবেশে চোখ বন্ধ করে নেয় রাণী।
দুহাত দিয়ে জড়িয়ে নেয়। বাধাহীন ভাবে আবেগে ভরপুর অনুভূতি মিশ্রিত আকুলতা জড়িত বিশ্বাস অধিকার বোধ দিয়ে ভালবাসার ছোঁয়া দিতে থাকে। রাণীর চোখ থেকে দুফোটা জল বেয়ে পড়ে। জলের ছোয়া পেয়ে শ্রাবণের হুস ফিরে।
রাণীকে ছেড়ে দিয়ে একটু দুরে সরে দাঁড়ায়। পেছন দিক ফিরে বড় বড় নিঃশ্বাস নিতে থাকে। কি করল সে এটা? কিভাবে মুখ দেখাবে রাণীর সামনে?
রাণী চোখ খুলে শ্রাবণের দিকে তাকিয়ে জোরে জোরে নিশাঃস নিতে থাকে।
কিছু না বলেই রাণীর হাত ধরে গাড়ির উদ্দেশ্য হাটা দেয়। গাড়ির গেইট খুলে ভিতরে বসিয়ে দিয়ে নিজেও বসে ড্রাইভ করতে থাকে। নিজের ভিতরে গিল্টি ফিল হচ্ছে। বার বার রাণীর সাথে কথা বলতে গিয়ে থেকে যাচ্ছে। কিছু বলতে পারছে না। মনে ভয় কাজ করছে রাণী মাইন্ড করল না তো?
এদিকে রাণী অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে শ্রাবণের দিক। তার হাবভাব দেখে বুঝতে আর বাকি রইল না কিছুই। মিটি মিটি হাসছে রাণী। শ্রাবণ বার বার তাকাতে গিয়েও তাকাতে পারছে না।
চৌধুরী বাড়ির সামনে এসে গাড়ি থামায়। সামনের দিক তাকিয়েই বলে
~ রাণী সাহেবা আমরা চলে আসছি। ভেতরে চলে যাও।
~ গাড়ি থেকে নাম। যাও বাসায় চলে যাও।
~ আমার যেতে ইচ্ছে করছে না। আমরা যদি গাড়িতেই এখন থাকি তাহলে কি খুব প্রবলেম হবে তোমার?
~ রাণীর কথা শুনে এবার তাকিয়ে বড় সড় সক খায়। রাণীর উচ্ছল মুখ দেখে শরীরের শিরা উপশিরায় রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে আসে।
নিজেকে সামলে বলে
~ গাড়ি থেকে নাম। রাইট নাও। কি হল শুনছ না? বাসায় যাও। বাসায় গিয়ে সোজা নিজের রুমে চলে যাবে। কেউ ডাকলেও দাড়াবেনা। এই চাদর টা মুড়ি দিয়ে তারপর ভিতরে যাবে।
শ্রাবণের এমন ব্যবহারে রাণী কষ্ট পায়। হটাৎ করে কি এমন হল যে এভাবে রিয়েক্ট করতে হবে। চাদর না নিয়েই গাড়ি থেকে নেমে পড়ে। বাড়ির দিকে পা বাড়ায়। শ্রাবণ বার বার পেছন থেকে ডাকে কিন্তু রাণী সাড়া না দিয়ে এগোতে থাকে। অগত্যা শ্রাবণ গাড়ি থেকে নেমে দৌড়ে রাণীর সামনে এসে দাড়ায়।
~ ডাকছি তো আমি চাদর টা নিয়ে যাও।
~ নিব না আমি। যান এখান থেকে
~ দেখি আমি মোড়িয়ে দিই স্টপ রাণী একদম মোচরা মোচরি করবে না।
~ পরব না আমি।
রাণীকে থামাতে না পেরে জড়িয়ে নেয় বাহুডোরে। কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে
~ বাসায় তোমার জন্য সবাই অপেক্ষা করছে। ভিজে গায়ের সাথে ড্রেস লেপ্টে গেছে। আমি চাইনা আমার সম্পত্তি অন্য কারো নজরে পরুক।
শ্রাবণের কথাতে রাণী চুপসে যায়। এতক্ষণে নিজের দিকে খেয়াল করে। শ্রাবণের সাথে থাকলে নিজেকে একদমি ভুলে যায়। শ্রাবণ চাদর রাণীর গায়ে জড়িয়ে দিতে দিতে বলে
~ এত ভাবতে হবে না। তোমার খেয়াল রাখার জন্য আমিই আছি। তোমাকে কষ্ট করতে হবে না।
পরদিন ১২ টায় মায়ের ডাকে ঘুম ভাঙ্গে রাণীর। চোখ খুলে তাকাতেই দেখে টোটো ~ টুকু ওর পাশে বসে আছে হলুদ পাঞ্জাবী পড়ে। খুব সুন্দর লাগছে। পাশেই আম্মু আর মামনি হাতে অনেক গুলো প্যাকেট নিয়ে দাড়িয়ে আছে।
~ মামনি তোমরা কখন এলে? টোটো ~টুকু অনেক সুন্দর লাগছে। কি ব্যাপার এত সাজগোজ কিসের হুমম?
~ বিয়ে বাড়ী তো সাজব না?
~ কোথায় বিয়ে বাড়ি? কার বিয়ে? আম্মু
~ আমার বড় মেয়ের বিয়ে। বড্ড ভুল করেছি মা। কালই তোদের বিয়ের ব্যবস্থা করার প্রয়োজন ছিল।
~ বিয়ে মানে? বুড়ো বয়সে কিসের বিয়ে?
দোলা রুমে ডুকতে ডুকতে বলে এর জন্যই ভাইয়া আজি বিয়ে করতে চেয়েছে। দুদিন পর বলবে আমার এক পা কবরে চলে গেছে বিয়ে করব না।
সবাই একযোগে হেসে উঠে।
হলুদ গোলাপি মিক্স সুন্দর একটা লেহেংগা পরে ফুলের গহনা দিয়ে সেজে বসে আছে। বিরক্ত লাগছে সবকিছু। হুট করেই গায়ে হলুদ বললেই হলো তার পর আবার সন্ধ্যায় বিয়ে। কি পেয়েছে কি সবাই? এভাবে না জানিয়ে সব আয়োজন করে ফেলবে? ওই ব্যাটা কে বিয়েই করব না আমি। আমার সাথে শুধু শুধু মিসবিহেব করেছে।
~ sorry for that
রাণী দরজায় তাকিয়ে দেখে শ্রাবন এক পায়ের সাথে আরেক পা লাগিয়ে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে।
~ আপনি বিয়ে করব না আমি। যানত।
~ রাণীর কাছে এসে পাশে বসে I’m sorry for last night Sorry for my behavior Actually I was out of control I think you understand Please forgive me I want you Rani Shaheba I need you I love you Trust me
~ তাই বলে আজি
~ সিসসসসস চুপ। আমি তুমি ছাড়া শূন্য।
আজ থেকে আমরা এক সাথে থাকব। যান কতটা সময় পর আমি তোমায় দেখছি? এত টা সময় কিভাবে কাটালাম তুমি যদি জানতে
~ এত আয়োজন কিভাবে সম্ভব?
~ তোমাকে রেখে গিয়েই সব ম্যানেজ করে নিয়েছি। রিলেটিভ দের জানিয়েছি। বিয়ের শপিং সিংগাপুর থেকেই করে নিয়ে এসেছি। কোন অপূর্ণতা রাখবোনা রাণী সাহেবা।
~ তুমি
~ তুমি বড্ড বেশী কথা বল রাণী সাহেবা বিয়ে আজি হবে। একটু পরেই হবে। ভালোই ভালোই হবে। আর এক্ষুণি গায়ে হলুদ হবে।
রাণীর গালে হলুদ লাগিয়ে চলে যায়।
মামনি আর দোলা হলুদের জন্য নিতে এসেছে। এসেই রানীর দু গাল ভর্তি হলুদ দেখতে পায়।
হা হা হা হা আপুই তোর আসল হলুদ তো হয়েই গেছে। আমাদের ও একটু লাগাতে দেয়
বিয়ের আসরে শ্রাবণ রাণী পাশাপাশি বসে আছে। একটু আগেই তারা কবুল বলে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে। রাণীর লজ্জার বাধ ভেঙ্গেছে আজ।
আর সেই লাজে রাঙ্গা রাণীকে দেখে বার বার হার্টবিট মিস করছে শ্রাবণ। হটাৎ শ্রাবণ প্রশ্ন করে ~রাণী সাহেবা আপনার কি আরো করো উপর প্রতিশোধ নেওয়ার আছে?
~ জি। আপনার উপর।
~ আমার অপরাধ?
~ এভাবে ধরে বেধে বিয়ে করা।
~ আপনার শাস্তি মাথা পেতে নিতে আমি প্রস্তুত।
মুচকি হেসে মাথা দোলায় রাণীমা।
লেখা – লাবিবা তানহা লিজা
সমাপ্ত
(পাঠক আপনাদের ভালোলাগার উদ্দেশ্যেই প্রতিনিয়ত আমাদের লেখা। আপনাদের একটি শেয়ার আমাদের লেখার স্পৃহা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আমাদের এই পর্বের “রাণীমা – bhalobasar golpo kotha” গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম। ধন্যবাদ।)
আরো পড়ূন – রাণীমা (১ম খণ্ড) – valobashar golpo kotha