রাণীমা (১ম খণ্ড) – valobashar golpo kotha

রাণীমা (১ম খণ্ড) – valobashar golpo kotha: শ্রাবনের এরকম কথায় রাণী বিছানা ছেড়ে ওঠে যায়। মাথায় একটা ওড়না পেচিয়ে নেয়। দরজা খোলে অবাক হয়ে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকে।


পর্ব ১

ঘড়ির কাঁটা ১টা ছুই ছুই।

নিস্তব্ধ রাতের শহর। চারিদিকে শুধু বৃষ্টির ঝম ঝম শব্দ। একদিন এই শ্রাবণের বৃষ্টির রাতেই জন্ম নিয়েছিল ফুট~ফুটে এক পরি। বাবা তাই নাম রেখেছিল রিমিঝিমি বৃষ্টি।

কতই না ভালোবেসেছিল এই বৃষ্টির রাতকে কিন্তু এই বৃষ্টি ভেজা রাতই তার জীবনের কাল হয়ে দাঁড়াল। আজ এই ভেজা রাতকে অভিশপ্ত মনে হয়। ভালবাসার বদলে আছে শুধু ঘৃনা আর কিছুটা ভয়। জানালার পাশে দাঁড়িয়ে ভাবছিল রাণী।

বৃষ্টির ফোঁটার সাথে তার চোখের জল যেন প্রতিযোগিতায় নাম লিখিয়েছে। নিশ্চয় কোন দুঃখিনীর চোখের জলে এই বৃষ্টির উদ্ভব ঘটছে। আষাঢ় ~শ্রাবণের সময় হয়ত সেই দুঃখিনীর দুঃখ বেদনা অসহ্য রকম যন্ত্রনা দেয়। তাই তার কান্নার বাধ ভেঙ্গে যায়। কোন দিন যদি সেই দুঃখিনী কন্যার সাথে দেখা হয়ে যেত তাহলে হয়ত তার দুঃখের কারনটা যানা যেত। নিঃশব্দে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদতে থাকে রাণী।

হটাৎ কাধে হাতের ছোঁয়ায় চমকে উঠে রানী। পেছনে তাকিয়ে অস্ফুষ্ট স্বরে বলে উঠে ~ পাপা। তুই আবার কাদছিস কেন রাণীমা আর কত বোঝাব তোকে এই কান্না তোকে শোভা পায় না। আমার রাণীমার চোখে জল বড্ড বেমানান লাগে। আমি বাড়ি যাব পাপাআমি বাড়ি যাবআমি বাড়ি যাব বাড়ি যাব আমি (চিৎকার করতে করতে)।

মেয়ে কে বুকে আগলে নেয় ইশান চৌধুরী। হাওমাও করে কাদতে থাকে রাণী পাপাকে জড়িয়ে ধরে। ইশান চৌধুরী মেয়েকে শান্ত করতে ব্যস্ত হয়ে যায়। মেয়ের কান্না যে সে সহ্য করতে পারে না। তার কলিজার টুকরো রাণী। তার বেচে থাকার একমাত্র অবলম্বন।
কাঁদতে কাঁদতে একসময় পাপার বুকেই ঘুমিয়ে পরে রাণী।

এটা আকষ্মিক কোন ঘটনা নয়। প্রায় ১০ বছর থেকে এই ঘটনার সাথে পরিচিত হয়ে আসছে ইশান চৌধুরী। রাণীকে বিছানায় শুয়ে দিয়ে বিছানায় বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে।
কতই না নিষ্পাপ মুখ মেয়েটার ১০ বছর আগে মধ্য রাতে এই মেয়ে টাকে রাস্তায় এলোমেলো ভাবে মুমূর্ষু অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেছিলাম। বুকটা আতকে ওঠে মিসেস নুরজাহান চৌধুরীর।

সারা সরীর থেকে রক্ত চুইয়ে চুইয়ে যেন পড়ছে। ১৬~১৭ বছর বয়সী কিশোরী। ল্যাম্পপোস্ট এর আলোতে গায়ের রঙ টা ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। কোন কুকুর এর দল যেন ছিড়ে ছিড়ে খেয়েছে মেয়েটাকে। অষ্ফুষ্ট স্বরে শুধু গোঙ্ঘানির আওয়াজ ভেসে আসে মুখ থেকে। মেয়েটাকে বাঁচাতে হবে। আর কিছু না ভেবেই নিজেদের গাড়িতে তুলে বাসায় নিয়ে আসে মিসেস চৌধুরী এবং মি চৌধুরী। অচেনা মেয়ে কে বাসায় এনে সেবা দিয়ে বাচিয়ে তুলে।

লেখা পড়া শিখিয়ে বড় করে তুলে। বাবা মার স্নেহ মমতা দিয়ে নিজের মেয়ের জায়গায় বসায়। ইশান চৌধুরীর ছেলে রাজ চৌধুরী ও বোন হিসাবে মেনে নেয় বৃষ্টি কে। আর নিজের নামের সাথে মিলিয়ে বৃষ্টির নাম দেয় রানী। সৈই রানী আজ চৌধুরানী। কতই না ভয় পেয়ে ছিলাম অপরিচিত মেয়ে বলে। তখন কি আর জানতাম রে মা তুই আমার বেঁচে থা কার একমাত্র অবলম্বন হবি।

ভাবনা থেকে বের হয়ে চাদর টা টেনে দেয় ইশান চৌধুরী। রাণীর কপালে চুমো দিয়ে লাইট টা অফ করে চুপচাপ দরজা টা ভিড়িয়ে নিজের রুমে চলে যায় ইশান চৌধুরী।

সকাল বেলা
Servent: good morning Sir
Mr ইশান চৌধুরীঃ good morning everyone
Servent: Sir রানীমা এখনও নিচে আসে নি। ওইতো রানীমা
সবার চোখ উপরে সিড়ির দিকে চলে যায়। রানীমা উপর থেকে সিড়ি দিয়ে নামতে থাকে।

Yellow কালার গাউন পায়ের পাতা পর্যন্ত ছুয়া গাউনের ফুল হাতায় stone এর কাজ। চুল গুলো পেছনে ছেড়ে দেওয়া। মাথায় ইয়া বড় ওড়না চুলের সাথে clip দিয়ে আটকানো। ব্যাক সাইড়ে ওড়নার একপ্রান্ত ফ্লোরে পড়ে আছে। কানে ছোট ডায়মন্ড রিং। মেকাব বিহীন মুখে তার কঠিনতার ছাপ।
এ যেন কোন স্বর্গ পুরির রাজকন্যা হেটে আসছে উদ্দম গতিতে। সকলেই যেন এ দৃশ্য দেখার জন্যই যেন অপেক্ষায় ছিল।
রাণীমার এ দৃশ্য বড়ই শান্তি দেয় ইশান চৌধুরী কে। এই রানীমার সাথে গত রাতের রাণীমার কোন সদৃশ পায় না ইশান চৌধুরী। সে শুনেছে নারিজাতি বহুরুপি।

এইকি সেই রুপ হিসাব মিলাতে ব্যস্ততা এতই বেশী যে রাণীমার ডাক তার কান পর্যন্ত পৌঁছায় নি।
এক সময় রানী চিল্লানি দিয়ে বলে ~ Papa Are you hear, what i say?
Mr Ishan: yes Yes ranima I’m hearing.


পর্ব ২

এক সময় রাণী চিল্লানি দিয়ে বলে ~ Papa Are you hear, What i say?
Mr Ishan: yes Yes ranima I’m hearing
রাণীঃ oh no papa কই থাকো তুমি? কিসব ভাব সবসময়? আমার খাওয়া শেষ হয়ে গেল আর তুমি খাচ্ছই না।

মি ইশানঃ হা হা এইতো আমি খাচ্ছি এইযে।
রাণীঃ are you okay Papa? শরীর খারাপ করেনিত আবার?

মি ইশানঃ আমি ঠিকই আছি। পূর্ব জন্ম বলে যদি কিছু থেকে থাকে তাহলে হয়তো সেই জন্মে তুই আমার মা ছিলি। আর আমি তোর ছেলে। তাইতো এমন শাসন করিস আমায়।
রাণীঃ পাপা তুমি কিন্তু কিছুই খাচ্ছ না However, হা কর। সাথে সাথেই মি ইশান হা করে। রাণী জেল দিয়ে পাউরুটি খাওয়াতে থাকে মি ইশান কে।

মি ইশানঃ আচ্ছা আমি তো আর আফিসে যাচ্ছি না আজ। তুই খেয়ে বেড়িয়ে পর। লেট হয়ে যাবে ত আবার। সকাল সকাল তোর জন্য তো ঘুমাতেই পারিনা আমি।

রাণীঃ listen Papa আমি এখন বের হয়ে গেলে সারাদিন তোমার জন্য টাইম কোথায় আমার? আমি যদি এইটুকু শাসন না করি তাহলে তো তুমি ঘুম থেকে উঠবে noon এ। exercise ও করবেনা। break fast and lunch দুটোই একসাথে করবে। সকালে medicine ও নিবে না। বয়স হচ্ছে পাপা Active থাক।
মি ইশানঃ সেটা যদি তুই খানিকটাও বুঝতি তাহলে আজ আমার একা থাকতে হত না। আমার নানু ভাই কে নিয়ে আমার দিন চলে যেত।

রাণীঃ বাজে বক না তো। আসছি আমি। এই রিমনটা (PA) আজো লেট।

বাইরে এসে গাড়ির গেইট খুলতে নিলেই দৌড়ে এসে সামনে হুমড়ি খেয়ে পরে রিমন। ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে ভেজা র্শাট নিয়ে দাড়ানো রিমন কে দেখে মনে হচ্ছে একজন আ্যথল্যটিক তার ম্যারাথন দৌড় শেষ করল এইমাত্র।

রিমনঃ sorry sorry sorry রাণীমা একটু লেট হয়ে গেছে। actually হয়েছে কি আজ রাস্তায় হটাৎ মনালিসা কে দেখতে গিয়ে দেরি হয়ে গেল।
রাণীঃ বাম হাতের উপর দিয়ে ডান হাত গুজে দিয়ে কথা হল কি মনালিসার সাথে?

রিমনঃ no রাণীমা। দেখলাম শপিং মল এ ডুকল। আমি ও একটু গেলাম কথা বলতে কথা তো বললই না উল্টে কেস খাইয়ে দিল আধ বয়সি একটা মহিলাকে বলল আমি নাকি সেই মহিলাকে ফলো করছি। মহিলা তো তেড়ে এসে আমায় থাপ্পড় দিয়ে দিল। আসে পাশের লোকজন আমাকে অসভ্য বলে মারতে আসছে কোন মতে জান নিয়ে দৌড়ে চলে আসছি।

রাণীঃ চিল্লানি দিয়ে Shut up Non stop বকবকানি বন্ধ করে চল।

অফিসে ডুকে।
Employee: আসসালামু আলায়কুম রাণীমা।
ওয়ালাইকুম সালাম। সবাই হালকা মাথা নিচু করে রাণীমা কে সালাম জানায়।

নিজের কেবিনে বসে রিমন কে বিকালে SK group of companie r সাথে মিটিং টা সেরে নিতে বলে দুপুরে একটা জরুরী কাজে বেরিয়ে পরে

বিকালে রেস্টুরেন্টে রিমন, রাত, SK group of companir CEO শ্রাবণ আহমেদ খান এবং তার ২ জন employee একত্রে round টেবিলে বসা।

রিমনঃ হ্যালো মি SK and others Nice to meet you Actually আমাদের ম্যাম রাণী চৌধুরানী একটা বিশেষ কাজে ব্যস্ত থাকার জন্য মিটিং টা আমাকে করতে হচ্ছে। so sorry for that And I’m her PA রিমন খুব সুন্দর করে প্রেজেন্টেশন শো করে।

শ্রাবন খান ডিল টা সাইন করতে করতে বলে ~ মি রিমন চৌধুরী গ্রুপের সাথে এই ফাস্ট SK গ্রুপ কাজ করছে। আপনার ম্যাম এর উপস্থিতি কামনা করি next time থেকে। মনে মনে ~রাণী চৌধুরীরানী Interesting বাকা smile দিয়ে।


পর্ব ৩

দোলা কলেজের ক্লাস শেষ করে গেইটে সুমি আর মনির সাথে দাড়িয়ে আছে। অটো এই অটো ধুর বাল আজ একটাও অটো পাচ্ছি না। অটো মামা গুলার সব বউ মরল নাকি?
শামীম বাইক নিয়ে সামনে এসে দাঁড়ায়। ~ কিরে দোলা বাড়ি যাবি নাকি? আমিও যাচ্ছি বাড়ি। উঠ বাইকের পেছনে।

দোলার রাগে অন্যদিকে তাকিয়ে ~ আপনি চলে যান ভাইয়া। আমি সুমিদের সাথে যাব। আরে আজ এমনিতেই দেরি হয়ে গেছে। উঠ আমার বাইকে। ওদের। জন্য আমি গাড়ি ঠিক করে দিচ্ছি।
লাগবেনা। আপনি যেতে পারেন। আমি চলে যাবো।

অনেক জোরাজুরি করেও লাভ হল না। অগত্যা শামীম চলে গেল।
মনিঃ হায় কি হ্যান্ডসাম। উফফফ তুই এত বড় বোকা কেন রে দোলা? এত সুন্দর ছেলে এত সুন্দর বাইক অফার টা মিস করলি দোস্ত। আমাকে যদি করত না এত ক্ষনে বাইকে থাকতাম আমি।
সুমিঃ চুপ করতো তুই। ছেলে টা কেরে?

দোলাঃ শামীম ভাই। ছোট চাচার ছেলে।
মনিঃ ছি ছি! আল্লাহ পাক মাফ কর আমায়। ক্রাস খাইতে খাইতেও খাইলাম না।
সুমিঃ হুম। ওইতো অটো। চল।

মি বিজয়ঃ এতো লেট হল কেন আব্বু?
দোলাঃ অটো পাইতে দেরি হইছে।
বিজয়ঃ ওহহ। যা হাত মুখ ধুয়ে আয়।

এই সময় ফোন বেজে ওঠে। দোলা ফোন রিসিভ করে বাবার কাছে দেয়।
বিজয়ঃ আসসালামু আলায়কুম। কে?
রাণীঃ ওয়ালাইকুম সালাম। আমি রাণী চৌধুরানী। আশা করি চিনতে অসুবিধা হবে না।

কন্ঠ শুনে বিজয় হতভম্ব হয়ে যায়। এযে তার খুব চেনা গলা। অবিকল তার কলিজার গলা। দু চোখ ভরে জল চলে আসে। এটা দেখে বন্যা আর দোলা ফোনটা লাউড স্পিকার এ দিয়ে দেয়। তারাও গলা শুনে কেপে উঠে।
নিজেকে সামলে নিয়ে বলে ~ হ্যাঁ রাণীমা। চিনতে পারছি। আপনি তো আমাদের জেলার সব থেকে বেশী জমি জমার মালিক। আমারয় ভাইদের ও অনেক জমি কিনেছেন।

রাণী: আপনার বুঝি ভাই আছে? (এখনও ভাই ভাব তাদের ~ মনে মনে ) চিন্তা করবেন না অতি শীঘ্রই আপনার ভাইদের ৯০% জমি রাণীমার হয়ে যাবে। বাকিটুকু ওদের বেঁচে থাকার জন্য।
বিজয়ঃ ঠিক বুঝলাম না। আপনি কি মনে করে আমায় কল দিলেন?

রাণীঃ আমি সরাসরি কথা বলতে পছন্দ করি। আপনার এলাকায় আমার মেনশন তৈরী হয়েছে। তার পাশে হসপিটাল এর কাজ হচ্ছে। হসপিটাল এর ওরিয়া আর একটু বড় করার জন্য উওরে আপনার জমি টা আমি চুজ করেছি। সো আমার জায়গা টা চাই।
বিজয়ঃ দেখুন রাণীমা আমি তো জমি বিক্রি করবনা। ঐ জমিতে আমি ফসল করে খাই।

রাণী: মি বিজয় আমি আপনার সম্পর্কে সব জেনে প্রোপোজাল টা দিয়েছি। first of all, আপনার হাত খালি। কয়দিন পরে কিভাবে দিন যাবে তা বলা যায় না। secondly, আপনার মেয়ের পড়াশুনার খরচ চলবে কিভাবে? And last, কথা টা বলতেই হচ্ছে ~ জমি দিয়ে কি করবেন যদি সন্তান কেই হারাতে হয়

কথাটা শুনততেই হাত থেকে ফোনটা পরে যায়।
হো হো করে কেদে ওঠে বিজয় আর বন্যা। দোলা নিস্তব্ধ হয়ে যায়।

এদিকে রাণীও চিৎকার করে কাঁদতে থাকে।

পর্ব ৪

এদিকে রানীও চিৎকার করে কাঁদতে থাকে।

খান বাড়িতে breakfast এ বসছে সবাই।

শ্রাবণঃ মম আগামীকাল দুপুরের ফ্লাইটে India যাচ্ছি। তোমার মেডিসিন এনে রাখব ভাবছি। prescription টা আমার ব্যাগ এ দিয়ে দিও।

মনাঃ ওয়াও ভাইয়া। আমার কিছু কসমেটিকস্ আনতে হবে। এনে দিবে তো ভাইয়া (আহ্লাদ করে )। প্লিজ
শাহেদঃ একদম না ভাইয়া। তুমার জন্য আমি বউ হারিয়ে ফেলেছি। তুমি এসব আটা ময়দা সুজি এনে এনে আমার বউকে ভূত বানিয়ে দিয়েছ।

মনাঃ কিহ্ আমি ভূত মম আমায় ভুত বলল,
সোহানাঃ চুপ থাক তোরা। India কোথায় যাচ্ছিস?

শ্রাবণঃ রাজস্থান মম। সেখানে একটা প্রোজেক্ট এর কাজে যাচ্ছি। ২ দিন থাকবো।
শাহেদঃ হে আল্লাহ এই হিল্লায় আমার একটা ভাবী। জুটিয়ে দিও। রাজস্থান এর মেয়েরা নাকি অনেক সুন্দর হয়। মনা বলে ওঠে আমিন।

সোহানাঃ ইমোশনাল হয়ে বাবা আমার তো বয়স হয়েছে আমি কি আমার নাতির সাথে খেলা করে মরতে পারবোনা বল

শ্রাবণঃ অবাক হয়ে মম এতোদিন তো বউ বউ করে চিল্লাতে এখন নাতির লেভেলে চলে গেছ। এখন তো মনে হচ্ছে বিয়ে না করেই ভাল আছি। বিয়ে করলে বিয়ের দিন ই মনে হচ্ছে নাতির জন্য আমার উপর টরচার শুরু করবে। এই মনা কি করিস তুই? মমকে একটা নাতি এনে দিতে পারিস না (ধমকিয়ে)।

সোহানাঃ ও কি করবে? ওওও তো এখনও বাচ্চা।
শ্রাবণ আর কিছু না বলে অফিসে চলে গেলো। আর শাহেদ ও হাসপাতালে চলে যায়।

এদিকে রানী রাতে ডিনার করে drawing room এ বসে। বিজয় কে ফোন দেয়। বিজয় নাম্বার দেখে বুঝতে পারে এটা রাণীমা কল দিয়েছে। কল রিসিভ করে লাউড দেয় যাতে বন্যা আর দোলা শুনতে পায়।

বিজয়ঃ হ্যালো, আসসালামু আলায়কুম। কেমন আছেন রাণীমা?
রাণীঃ আপনারা ভালো থাকলেই রাণীমা ভাল থাকে। আপনার কি উচিত নয় যে কেও ভাল থাকতে চাইলে তাকে ভালো থাকতে দেওয়া?

বিজয়ঃ আমি কিভাবে কি
রাণীঃ আপনার account এ পর্যাপ্ত টাকা চলে যাবে। আপনার মেয়ের পড়াশুনার সাথে চাকরির দায়িত্ব ও আমি নিচ্ছি। আপনার পরিবার permanently আমার মেনশন এ থাকবে। আর কি চাই? শুধু জমিটা আমার চাই। রাত টুকু ভাবুন। সকালে আমার লোক আপনার বাসায় পৌঁছে যাবে। আর আমি যখন জমিটা নিতে চাচ্ছি তখন আমি নিব ই। আপনি না দিলেও জমিটা আমার। ভালো থাকবেন।

বিজয় চিন্তায় পড়ে যায়। সারারাত ভাবে।

সকালে উঠে বন্যা আর দোলা কে জানায় যে ও জমিটা দান করে দিবে হাসপাতালের জন্য। এতে কেউ আপত্তি করে না।
রাণীমার লোকের সাথে কথা বলে নেয়। রাণীমা আগেই জানতো যে বিজয় জমিটা দান করে দিবে।

দোলা কলেজে চলে যায়। কলেজে ঢুকে দেখে বন্ধুরা আড্ডা দিচ্ছে।
রাজনঃ সুন্দরী তুমি এতক্ষণে এলে। তুমার জন্য আমার মন প্রাণ উতাল হয়ে আছে।

দোলাঃ হয়ছে থাক। আদুভাই আপনি এবার কিভাবে পাশ করবেন তার জন্য উতলা হন।
সুমিঃ আজকে নিরব কে দেখলাম সেই রকম ভাব সাব। তোকে প্রপোজ করবে শুনলাম। কলেজের সব চেয়ে সুন্দরী তুই। অনেক ভালো ছেলে পাবি। এসব কিছু মাথায় নিস না।

দোলাঃ হু।
সামনে নিরব চলে আসে হাতে একগুচ্ছ গোলাপ ফুল। হাটু মোড়া দিয়ে দোলার সামনে বসে পরে। ফুল গুলো দোলার দিকে এগিয়ে দিয়ে …..।

দোলা আমি প্রথম তোমাকে নববর্ষে দেখেছিলাম। লাল শাড়ি সাদা পাড় সারীতে সেজেছিলে তুমি। প্রথম দেখায় আমি তোমাকে ভালবেসে ফেলেছিলাম। আমার দিল জুড়ে, মন জুড়ে, শরীর জুড়ে তুমি। আমার মত smart ছেলের পাশে যে তোমাকেই মানাবে সুন্দরী। আমার ভালবাসার পাগলী হয়ে যাবে কি তুমি? ভালোবসার নৌকা ভিডাবে কি তুমি? বিশ্বাস কর অনেক ভালবাসব তোমায়। প্লিজ আমাকে accept করে নাও জান। প্লিজ

এদিকে নীরবের প্রপোজ দেখে দোলার সেন্সলেস হওয়ার অবস্থা। সুমি আর মনি তো হেসে কুটি কুটি হয়ে যাচ্ছে। রাজন বেটা = বিরোহ তুলছে আহারে ছেলে টা প্রপোজ টাও ঠিক করে করতে পারল না মনে হচ্ছে পরীক্ষার পাতা ভরাচ্ছে। সারাবছর পড়ালেখা না করলে যা হয় আর কি একথা বলে হাত দিয়ে বুক চেপে ধরে উঠে দাঁড়ায়।

দোলাঃ ছি! কি ছিল এইটা। এইভাবে কেউ কোন দিন প্রপোজ করে।

হটাৎই শামীম এসে দোলার হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে চলে আসছে ওহ তাহলে কলেজে আসার নাম করে এইসব চলে। রূপ দেখিয়ে ছেলে বস করা হচ্ছে তোর এই রূপ তো আমি শেষ করে দিব।

দোলাঃ শামীম ভাই হাত ছারেন। আপনার সাহস কি করে হয় আমার হাত ধরার
শামীমঃ আমার অধিকার আছে তোর হাত ধরার। অনেক আগেই তোকে শাসন করা উচিত ছিল।

তোর বোন তো পালিয়ে গিয়ে হাপিস হয়ে গেছে। কিন্তু তোকে আমি পালাতে দিব না কিছুতেই। তোর রূপের জালায় পুড়ে মরছি আমি আর তুই অন্যজনের সাথে ডলাডলি করবি।
দোলাঃ শামীমের মুখে থুতু ফেলে দেয়। কুকুরের লেজ কখনো সোজা হয় না বলে চলে আসে হাত ছাড়িয়ে।

এদিকে শ্রাবণ দুপুরে ইয়ারপোর্ট এ পৌছে যায়। সাথে তার PA রাত ৯ টায় রাজস্থান পৌছে য়ায়। হোটেল বুকিং করে ডিনার করে নেয়।

রাণী, ইশান আর রিমন ডিনার করেছ। রাণীই রিমনকে ডিনার করে যেতে বলেছে। রিমন কে ছোট ভাই এর মত দেখে রাণী। বড্ড সৎ আর ভালো ছেলেটি। বাবা ছোট বেলায় মারা গেছে। ২ বছর আগে মা ও য়মারা গেছে। পরিবারে একাই ও। আপন বলতে কেউ নেই। ইশান ও অনেক আদর করে রিমনকে।

রাণীঃ পাপা আমার লাস্ট ক্লাস হবে পরশু। রিমন ১টা টিকেট কেটে রাখ। কাল রাজস্থান যাচ্ছি। পাপা এই ২ দিন তুমি আফিস দেখে রাখবে আর রিমন তুমি মি বিজয় এর সাথে দেখা করে পেপারর্স গুলো সাইন করিয়ে আনবে।

রিমনঃ রাণীমা অভয় দিলে একটা কথা বলতাম।
রাণীঃ হুম বল। যা বলার আছে তাড়া তাড়ি বল। আমার খাওয়া শেষ।

রিমনঃ আমি তো প্রায় সবসময় আপনার সাথেই থাকি সবকাজে। আমার না রাজস্থান যাওয়ার খুব শখ। একটু নিয়ে গেলে কি হয়?
ইশাদঃ তাই নাকি রিমন। চল তুই আর আমি মিলে একবার টুর দিব। ব্যাচ্যালর টুর। হা হা হা।

পর্ব ৫

শ্রাবন খান ও তার PA হোটেল সেট আপ এর কাজে রাজস্থান এসেছে। জায়গা আগেই দেখে রাখা হয়েছিল। এখানে লোকেশন টা অনেক ভাল আর পর্যটক এর আনাগোনাও প্রচুর। ইনডিয়ার একটা কোম্পানির সাথে ডিল করে এই হোটেল টি সেট আপ করা হচ্ছে যার ৭০% SK companir share
কাজ এ প্রচুর ব্যস্ত শ্রাবণ। lunch করা হয় নি এখনও। বিকাল ৪ টায় ফ্রি হলে পাশের একটা রেস্টুরেন্ট খেতে যায়।

পিএঃ স্যার সারাদিন অনেক বিজি ছিলাম তাই সময় পাই নি। কিন্তু এখন তো আমরা ফ্রি। চলুন না রাজস্থান এর বড় রাজবাড়ী টি ঘুরে আসি।

শ্রাবণঃ অল্প কিছু সময় আছে। এর মধ্যে কিভাবে এত বড় এরিয়া ঘুরব?
পিএঃ স্যার যতটুকু পারি ততটুকু। প্লিজ স্যার না করবেন না। এর পর আমি সুযোগ নাও পেতে পারি এখানে আসার।
শ্রাবণঃ ওকে চল তাহলে

রাজস্থান শহর টাই প্রাসাদের শহর। প্রাচীন এই প্রাসাদ গুলো দেখলে চোখ ধাধিয়ে যায়। সব থেকে সুন্দর হলো হাওয়া মহল। জল মহল আর তার চারিপাশের সৌন্দর্য অপূর্ব। প্রাসাদ গুলোতে জল জল করা কাচের কারুকার্য ও রয়েছে।

শ্রাবণ মুগ্ধ হয়ে দেখতে থাকে। সন্ধ্যা= হওয়ার সাথে সাথেই প্রাসাদে আলো জ্বলে উঠে। আনমনে হাটতে থাকে শ্রাবণ। কিন্তু একটা প্রাসাদের মেইন ফটকের কাছে আসতেই ঘুঙ্ঘুরের আওয়াজ শুনতে পায়। ভিতরে ডুকতে গেলেই প্রহরীরা তাকে আর ডুকতে দেয় না। তার মন ভিতরে কি হয় দেখার জন্যে ছটফট করতে থাকে। যদিও সে ইচ্ছা করলেই ডুকতে পারবে তবুও সারাদিনের ক্লান্তিতে তার মষমনে হচ্ছে এখন একটু রেস্ট নেওয়া দরকার। শ্রাবণ হোটেলে ফিরে আসে।

এদিকে রাণী ও রাজস্থান এ চলে আসে।

রাজস্থানে আসার সময় ইয়ারপোর্ট এ রিমন রাণীকে এগিয়ে দিতে আসে।
রিমন ~ আমি সাথে থাকলে কি এমন হত বাচ্চা দের মত মুখ করে
রাণীঃ যেতে চাইলে যেতেই পার। বাট আমার সাথে নয়। বউকে নিয়ে হানিমুনে যেও অনেক সুন্দর জায়গা।
রিমনঃ আমার কপালে কি বউ আদৌ আছে?
রাণীঃ সি ইউ। বাই।

রাতে বিছানায় শুয়ে আছে শ্রাবণ। কিন্তু তার মন পরে আছে সেই প্রাসাদের দারকোঠায়। প্রহরি দের থেকে জানতে পেরেছে ~ এই প্রাসাদে নাকি একটা স্কুল আছে। স্কুল টি বিশষত মেয়েদের স্কুল। তাই ছেলেদের ডুকতে দেওয়া হয় না। তবে বিশেষ কায়দা করে বেশ কিছু শৌখিন ও ধনী ব্যক্তি ডুকে।

এতে অনেক রুপি খরচ করতে হয়। রুপী খরচের স্বার্থকতাও রয়েছে। এই প্রাসাদের সৌন্দর্য একবার উপভোগ করলে আর ভুলবার নয়। তবে দিনের মধ্যে প্রহর ও রাতের মধ্য প্রহরে এখানে বাইরের কার ও পদাচরন নিষেধ। এই সময়ে এখানে নাকি মাঝে মাঝে অদ্ভুত ঘটনা ঘটে।

শ্রাবণ সব থেকে অবাক হয়েছে এটা শুনে যে এখানে স্কুল রয়েছে কিন্তু এই স্কুলে লেখাপড়া শেখানো হয় না শেখানো হয় অন্য কিছু যেমন ~ ভারত নাট্টম, এরাবিক নাচ, তরবারি চালানো, ঘোড়া চালানো আর ও অনেক রাজকীয় শিক্ষা। তার মাথায় এটা ডুকেইনা যে এই 2020 সালে কে শিখে এসব? কার মন এত রাণিপ্রাণবন্ত যে এসব শিখে যেখানে দুনিয়াই আধুনিক হয়ে উঠেছে।

শ্রাবণ ঠিক করে নেয় একবার হলেও এই প্রাসাদে ডুকবেই সে।

পরদিন দুপুরের দিকে বেশিরভাগ কাজ শেষ করে বাকী কাজ গুলো তার পিএ এর উপর দিয়ে lunch করে বেড়িয়ে পরে। গন্তব্য সেই প্রাসাদ।

এদিকে রিমন রাণীমার কথা অনুযায়ী চলে যায় বিজয়ের বাড়িতে।
সুন্দর সুসজ্জিত বাড়িটি। অনেক গুলো ফুল ও ফলের গাছের ঘেরা। ঠিক মাঝখানে একটি একতালা বাড়ি। পরিবেশ টা খুব মনোরম। বাইরের বসার জায়গায় বসে চা এ চু মুক দিয়ে কথা বলছে বিজয়ের সাথে।

রিমনঃ আপনার কথা লোক মুখে অনেক শুনেছি। তবে আজ তার প্রমাণ পেলাম। রাণীমা আর আপনাকে একই জায়গায় বসিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে। আপনার এত বড় এরিয়া আপনি দান করে দিলেন জনস্বার্থে। যেখানে তার বর্তমান মূল্য প্রায় ১ কোটি টাকা।

বিজয়ঃ আমি যে আটকে গেছি সেই একটা কথায়। আমার মেয়েটাই তো নেই মেয়ের সম্পত্তি দিয়ে কি করবো? ~~ মনে মনে।
বন্যাঃ আমার মেয়ের খুব শখ ছিল একটা এতিমখানা করবে। এখন তো এতিমখানার অভাব নেই তাই রাণীমা বলাতেই হাসপাতালের জন্য জায়গাটা দিয়ে দিলাম।

রিমনঃ ও আচ্ছা আচ্ছা। আপনাদের বাড়িটা খুব সুন্দর লাগছে আমার কাছে। অনেকটা বাগান বাড়ির মত।
বন্যাঃ আমার বড় মেয়ে লাগিয়েছে গাছ গুলো। খুব বাগান প্রিয় ছিল।
দোলা দৌড়ে এসে আম্মু আম্মু ২০০ টাকা দাও তাড়াতাড়ি। শাঁকচুন্নী ২ টা দাড়িয়ে আছে আমার জন্য। চল চল চল
রিমন অবাক হয়ে দোলার লাফানো দেখছে। এত বড় মেয়ে হয়েও ব্যাঙাচির মত লাফা লাফি করছে। ব্রাউন কালার জামাটার সাথে গায়ের রঙ মিশে গেছে। বাচ্চা বাচ্চা ফেস মুখে মেকাপের ছিটে ফুটাও নেই। অদ্ভুত স্নিগ্ধতা।

এমেয়ে এভাবেই যে সুন্দরী আধুনিক মেয়ে দের মতো সাজলে ঠিক কেমন সুন্দরী লাগবে ভাবতেই পাগল পাগল লাগছে নিজেকে। এত দিন সে রাণীমা কে নিয়ে ভেবেছে যে না সাজতেই এত সুন্দর, সাজলে না জানি কোন পরীর মতো লাগে।

বিজয়ের ডাকে হুস ফিরল রিমনের।

পেপা্র গুলো সাইন করিয়ে ঢাকায় ব্যাক করে রিমন।

পর্ব ৬

প্রাসাদের সামনে আসতেই আবার সেই প্রহরীরা বাধা দেয়। ওদের সাথে কথা বলে কিভাবে ভেতরে ঢ়ুকবে তাই নিয়ে কথা বলে। প্রহরীরা ওকে ফটকের ভিতরে নিয়ে যায়। ভেতরে ঢুকেই ঢ়সামনের বিল্ডিং এ পৌছে দিয়ে চলে যায় প্রহরী।

বিল্ডিং এর ভিতরে ঢুকে দেখে ছোট একটা অফিস। সেখানে অনেক ফরমালিটিস পালন করতে হয়। শ্রাবণ প্রায় ৫০ হাজার রুপি ব্যয় করে ভিতরে ডুকার জন্য। যেখানে মেয়েদের মাত্র ৩০০ রুপি দিয়েই ভিতরে ডুকতে পারে।

এই মূহুর্তে মনে হচ্ছে কেন সে মেয়ে হলো না।
শ্রাবণ এর সাথে একজন গার্ড দিয়ে দেয় সবকিছু ভাল করে দেখানোর জন্য।

প্রাসাদে ডুকতেই রাস্তার দুপাশে অপূর্ব পানির কৃত্রিম ফোয়ারা দেখতে পায়। এই মূহুর্তে তার মনে হচ্ছে~ এই সৌন্দর্য উপভোগ না করতে পারা হাজারো মেল~ টুরিস্ট এর জন্য অনেক অনেক দুঃখ প্রকাশ করতে।

একটু ভিতরে ঢুকতেই দেখল অনেক বড় বড় প্রাসাদ। একেকটি প্রাসাদ এক এক কাজে ব্যবহৃত হয়। প্রাসাদ গুলোতে অনেক বড় বড় হলরুম। দেয়াল গুলো সোনালী রঙ এর। মনে হয় সোনা দিয়েই তৈরী করা হয়েছে।

শ্রাবণ একটি হল রুমে উকি দেয় ~ কয়েক জন মেয়ে নাচ শিখছে ঘুঙুর পায়ে। মেয়ে বললে ভুল হবে। একেকটা পরী যেন নাচ করছে। সেকি রূপ। এই এতো সুন্দর মেয়েগুলোকে দেখে তার মনে হচ্ছে সে যেন কোন পরীরাজ্যএ ঢুকে পরেছে। তার পঞ্চাশ হাজার রুপি ব্যয় স্বার্থক হল সাথে সাথে তার জীবনটাও।

ধীরে ধীরে দেখেই যাচ্ছে সে। অনেকেই অনেক কিছু করছে। সুন্দরী নারীদের হাসির শব্দে চারিদিক মাতোয়ারা। এই মুহুর্তে তার ইচ্ছে হচ্ছে সে এই পরীরাজ্যএর কোন এক পরীকে বিয়ে করে অজানায় পাড়ি দিতে। তার ৩৫ বছর বয়সেও সিঙেল থাকতে পেরে নিজেকে স্যালুট দিতে ইচ্ছে করছে।

হটাৎ বাগানের ভেতরে তরবারি চালানো এক রমনীকে দেখে স্তব্ধ হয়ে দাড়িয়ে যায়।
রমণীকে দেখে সে ১ বার হার্টবিট মিস করে। বুকের বা পাশে না চাইলেও ওর হাত চলে যায়।

ক্ষিপ্ত উদ্দ্যমে সঙীর সহিত তরবারি যুদ্দ্ব করছে। অসাধারণ তার তরবারি চালানোর কলাকৌশল। প্রাচীন যুগের রাণীদের মত যুদ্ধ কৌশল।

ক্ষিপ্ত চেহারা। গোলাপী রঙের চামড়া লাল বর্ণ ধারন করেছে। হয়ত অনেকক্ষন থেকে রোদে থাকার জন্য। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম সোনার মতো চিক চিক করছে। পরনে দামী গাউন আর ছোট ছোট অরনামেন্ট। এত কিছুর মধ্যে হরিণী চোখ দুটো শান্ত চাহনি প্রয়োগ করছে।

আর দেখতে পেল না শ্রাবণ। গার্ড এসে একপ্রকার টেনে টুনেই নিয়ে চলে গেল। কারন এখানে রমণীদের দিকে নজর দেওয়া যাবে না। অনেক মুসলিম ও আরবীয় মহিলাও রয়েছে এখানে।

সেদিন রাতে শ্রাবণ আর ঘুমাতে পারেনি। বার বার প্রাসাদের কথা মনে পড়ছে তার। ওর জীবনে এমন কিছু দেখবে সপ্নেও ভাবতে পারে নি।
পরের দিন হালকা শপিং করে দেশে ফিরে আসে শ্রাবণ।
কিন্তু তার ধ্যান রয়ে যায় সেই জয়পুরের প্রাসাদে।

এদিকে দোলার পেছনে আঠার মতো লেগেই আছে শামীম। সবকিছু অসহ্য লাগে দোলার কাছে। বাবাকে বলতেও পারছেনা। মেয়েকে নিয়ে খুবই সিরিয়াস বিজয়। বললে আর কলেজ করতে দিবে না ভেবে আর বলতেও পারে না।
শামীম প্রতি দিন দোলাকে ডিস্টার্ব করতে থাকে
আসলে শামীম নানাভাবে দোলাকে ইমপ্রেস করতে থাকে। যা দোলার কাছে বিরক্ত লাগে।

এদিকে বিজয় দোলার মনমরা হয়ে থাকাতে চিন্তিত হয়ে পড়েন। দোলার দিকে নজর দেন।
বিষয়টা বুঝতে পেরে দোলাকে নানু বাড়ি পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। কারন এখানে তার মেয়ে সেইফ না।

কলেজে এসে প্রিন্সিপাল এর সাথে কথা বলে নেয়। শুধু পরীক্ষার সময় পরীক্ষা দিতে আসবে এটাই ঠিক করা হয়।
দোলার মন একদমই যেতে চাইছে না। কলেজ কে খুব মিস করবে সে। সুমি আর মনি কে খুব মনে পড়বে। আর আম্মু আব্বু কে ছাড়া কিভাবে থাকব।

শেষ রক্ষা আর হলো না। নানু বাড়ি চলে যেতেই হলো। অনেক চেষ্টা করেছে থাকার জন্য কিন্তু বিজয় জেদ করে পাঠিয়ে দিল। গোয়াল পুরা গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলেও ভয় পায়।

শ্রাবন একটা ইমপর্টেন্ট কাজে রাণীমার অফিসে আসে। তার রিমনের সাথে দেখা করতে হবে। কারন ডিলটা রিমনের সাথে হয়েছিল। পেপারর্স এ কিছু প্রবলেম হচ্ছে।
পিয়ন এসে খবর দিয়ে যায় শ্রাবণ আহমেদ খান এসেছে।

রানীমা নিজের কেবিনে নিয়ে আসতে বলে। শ্রাবন কেবিনে এসে দেখে রিমন এবং রাণীমা বসে আছে। কিন্তু রাণীমাকে দেখে অবাকের চরম পর্যায়ে উঠে যায়।
লং গোলাপী রঙের গাউন। গোলাপী গায়ের রঙ একটু দেখা যাচ্ছে। গোলাপী হিয আপ এ শুধু চোখ দেখা যাচ্ছে। শান্ত চাহনি।

রাণীমা কে দেখে শ্রাবণ এর প্রাসাদের সেই হুর এর কথা মনে হচ্ছে। সেই হুর ও লং গাউন পরিহিত ছিল।
গায়ের রং ছিল গোলাপী। শান্ত চাহনির অধিকারী ছিল।
রিমনের ডাকে হুস ফিরে আসে।

প্রবলেম গুলো ঠিক করতে থাকে। রাণী সালাম দিয়ে আর কিছু বলে নি। ল্যাপটপ এ কাজ করতে থাকে। শ্রাবণ এর না চাইতেও বার বার রাণীর দিকে চোখ চলে যায়।
কাজ শেষে বেরিয়ে পড়ে।

পর্ব ৭

রাতে ডিনার এ বসছে সবাই।

সোহানা না খেয়ে মুখ ফুলিয়ে বসে আছে।
মনাঃ মম এই মম খাওনা। বসে আছ কেন এভাবে? খাইয়ে দিব? হাত ব্যাথা করছে?
সোহানাঃ মনের ব্যাথার কাছে হাত ব্যাথা খুব ঠুনকো।
শাহেদঃ কেন মম তোমার কি মনের উপর দিয়ে কি কেউ রেসলিং করছে যে তুমি ব্যথা পাচ্ছ?
সোহানাঃ তোর ভাই করছে ন্যাকা কান্না করে।

শ্রাবণঃ মম তুমি কি খাওয়ার সময় এখন ম্যালড্রামা শুরু করবে অসহায় ভাবে।
সোহানাঃ করবো একশো বার করব। ৩৬ বছর হয়ে গেল অথচ বিয়ে করছিস না। কত কিউট কিউট মেয়েরা তর উপর হূমড়ি খেয়ে পরে। তর এক্স পিএ সোনিয়া কত সুন্দর মেয়ে ছিল তুই বলতেই পাগল। অথচ তুই ওকে বাদ দিয়ে এখন ছেলে পিএ রাখছিস। তুই কবে বুঝবি বলত? বুড়ো বয়সে কি বাচ্চার বাপ হবি?

শ্রাবণঃ মম খাওয়ার সময় এসব ভালো লাগছে না রেগে।
সোহানাঃ খা তুই সব খা। গিল ভাল করে।
চিল্লাচিল্লি করে উপরে চলে যেতে যেতে বলে। শ্রাবন, শাহেদ, মনা হতভম্ব হয়ে বসে থাকে। রাগে দুঃখে কারোর আর খাওয়া হয় না। সবাই সবার রুমে চলে যায়।

রুমে এসে কিছু ইমপর্টেন্ট ফাইল নিয়ে বসেছে। ফাইল গুলো চেক করার সময় হটাৎ একটা সাইন দেখে থমকে যায়। খুব সুন্দর করে সাইন করা রাণী চৌধুরানী। শ্রাবণ আঙুল দিয়ে সাইনের উপর হাত বুলায়। একবার রাণীমার কথা মনে পরে তো আবার প্রাসাদের সেই হুর এর কথা মনে পরে। দুজনের মধ্যে অদ্ভুত মিল রয়েছে। মিল~ অমিলের খেলা খেলতে খেলতে অস্থির হয়ে পড়ে। একসময় অধৈর্য হয়ে উঠে গিয়ে ড্রয়িং রুমে এসে মনা আর শাহেদ কে ডাক দেয়।

মনাঃ ভাইয়া
শ্রাবণঃ ট্রে তে সবার খাবার নিয়ে মম এর রুমে আসো।
মনাঃ জি ভাইয়া।

অনেকক্ষণ দরজা ধাক্কাধাক্কি করার পর সোহানা দরজা খুলে সরাসরি খাটে গিয়ে বসে। শ্রাবন, শাহেদ আর মনাও রুমে ডুকে খাটে মায়ের পাশে বসে। সোহানার চোখ মুখ ফোলা দেখেই বোঝা যাচ্ছে যে এতখন কান্না করেছে।
শ্রাবণ ফট করে মাকে বুকে জড়িয়ে নেয়। সোহানা চুপ করে আছে। কিচ্ছু বললনা।

আমাদের খাইয়ে দিবে মম? খুব ক্ষুধা লেগেছে। সোহানার চোখের পানি টুপ করে গাল বেয়ে পরে। কিছু না বলে বুক থেকে সরে যায়।
শাহেদ শ্রাবণ এর কাছে এসে হাত দুটো ধরে বলে ~ আমার একটা ভাবী চাই ভাইয়া। মনাও বলল ~ আমার একটা আপু চাই ভাইয়া।

শ্রাবণ কিছুসময় চুপ করে থেকে মম ওকে আমি বউ
আনব। প্রোমিজ।
সোহানার চোখ দুটো চক চক করে উঠে।
তাই!

দোলা অনেক দিন হয়েছে মামা বাড়ি এসেছে। এখানে মামা তার পড়াশোনার দিক কড়া নজর রাখে।
দোলার বাড়ির জন্য মন খারাপ লাগে। একয়দিনে সব থেকে বেশী মিস করেছে শামীম কে। বাইরে বের হ‌লেই লোক টা চিনের জোকের মত লেগে থাকতো। কত দিন দেখে না। মায়ায় পরে গেছে নাকি শামীমের কথা প্রায়ই মনে য়হয়। যদিও সে জানে এটা খুবই খারাপ য়কিছু তবুও মনে পরে।

এক পর্যায়ে দোলা খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দেয়। মামা বিজয় কে ফোন করে সব বলে। বিজয় ফোনে দোলা কে চায় ~~ ফোন কানে নিয়ে আব্বু বলে কাদতে থাকে।
বিজয় মেয়েকে আস্বস্থ করে এটা বলে যে সময় করে গিয়ে দোলাকে নিয়ে আসবে।

ইদানীং বিজয় খুব ব্যস্ততার মধ্যে আছে। রাণীমা বিজয়ের উপর হসপিটাল তৈরীর দায়িত্ব ৫০% বিজয়ের উপর দিয়েছে।

প্রতিদিন এর মতো দোলা পড়তে বসে। কিন্তু তার মন ভালো না। মন ভালো না থাকলে একদমই পড়তে পারে না। বই বন্ধ করে জানালার কাছে গিয়ে দাড়ায়। একমনে চুপ হয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকে।

দোলা এই দোলা দোলা এই দিকে এই দিকে। দোলা সামনে তাকিয়ে অবাক হয়ে ~ শামীম ভাই।
হুম। আমি। এদিকে আয়। দোলা কতদিন পরে তকে দেখছি। তুই তো আরো সুন্দর হয়ে গেছিস। তোকে দেখার জন্য আমি এতদুর ছোটে এসেছি। জানিস তুই ছাড়া আমার দিন গুলো কেমন কাটছিল?
তুই ছাড়া এক একটা দিন আমার মরুভূমি হয়ে গেছে। তোকে দেখতে না পেয়ে আমি ছারখার হয়ে গেছি।
দোলাঃ শামীম ভাই তুমি কাঁদছ?

শামীমঃ তুই জানিস দোলা তুই আমার হৃৎপিন্ড। আমি জানি তুই আমাকে খারাপ ভাবিস। তোর আর আমার সম্পর্ক চাচা কোনদিন মেনে নিবে না। চল আমরা পালিয়ে যাই। যেখানে কেউ আমাদের বাধা হয়ে দাড়াবে না।

দোলাঃ পালিয়ে যাওয়ার কথা শুনে দোলা চটে গেল। চুপ কর তুমি। আর যাও এখান থেকে। মামা জানলে তুমি আর বেচে ফিরতে পারবে না। অনেক কষ্ট সহ্য করেছি তোমাদের জন্য। যাও এখান থেকে।
শামীমঃ দোলা শোন আমার কথা। I love you dola
দোলাঃ রাবিস। যাও এখান থেকে।

শামীম কে তারিয়ে দোলা অনেক ক্ষন কাদল। কষ্ট হচ্ছে তার। নিজের শত্রুর উপর কি সে দুর্বল হয়ে পড়ছে? একদমি না। কিছুতেই না।

পাপা আমি যেতে পারবো না প্লিজ। আহা রাণীমা গেলে কি হয় তোর। খুব কম পার্টিতে এটেন্ড করিস তুই।
আমি পারব না। তোমার সো কল্ড পার্টি তে তুমি একাই যাও।

রিমনঃ এএএএএ আমি কি তাহলে যাব না?
রাণীঃ অবশ্যই যাবে। পাপা তুমার পার্টনার চলে এসেছে। এবার যাও। এর থেকে আমার জিমে যাওয়া বেটার অফসন।

পার্টি তে।
আরে মি চৌধুরী How are you bro? I’m fine Mrs Khan You?
আরে uncle
What’s up young man? অনেক দিন পর দেখা হল। তা বিজনেস কেমন চলছে?
First Class Uncle Uncle রাজ আসে নি?

ইমান চুপ।
আরে uncle রাজ কে ত দেখতেই পাচ্ছি না। অনেক দিন দেখা হয় না। কোথায় ও? শালা বহত খারাপ। ইউকে থেকে আসার ১ বছর পর থেকে আমার সাথে আর যোগাযোগ ই করল না। আগে তো আমায় ভাই বলত যেই একটা বোন পেল সেই আস্তে আস্তে ভাই কে ভুলে গেল। আর আন্টি কোথায়?

ওরা আর নেই বাবা।
কিহহ নেই মানে?
পরে একসময় বলব।

পর্ব ৮

সেদিন রাতে আর ঘুমাতে পারেনি শ্রাবণ। ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে পরিচয় হলেও পারিবারিক ভাবেও খুব অন্তরঙ্গ। খুব ভাব ছিল ওদের মধ্যে। শ্রাবণের পরিরারের সবাই খুব কষ্ট পেয়েছে রাজের মৃত্যুর খবর শুনে। রাজ ছেলেটা খুব মিশুক প্রকৃতির ছিল। অনায়াসেই সে একজনের মনের কুঠিরে জায়গা করে নিতে পারত।

পরদিন শ্রাবণ অফিস টাইম শেষ করে ইমান চৌধুরী কে ফোন করে।
~ হ্যালো আংকেল, আসসালামু আলায়কুম।
~ ওয়ালাইকুম আসসালাম বাবা।
~ আংকেল আপনি কি ফ্রি আছেন?
~ হ্যাঁ বাবা।

~ আংকেল রাজের মৃত্যুর ব্যপারে আমি সব জানতে চাই। আমি জানি আমি কিছু করতে পারবো না বাট আমি না জানা পর্যন্ত একদম শান্তি পাচ্ছি না।
~ ওহ্। তুমি বাসায় আসো। আমি বাসায় আছি।
ওকে আংকেল। আসছি আমি।

ইমানের রুমে শ্রাবণ সোফায় বসে আছে এবং ইমান শ্রাবণের সামনে বিছানায় বসে আছে। দুজনেই চুপচাপ। একসময় শ্রাবন বলে উঠে ~

আংকেল আমরা সবাই সোকড এই ব্যাপারটা শুনে। আমার জানা মতে রাজ কারও কোন ক্ষতি করতেই পারে না। তাহলে কেউ কেন এভাবে মারবে ওকে। বাড়ি তে তো আরও অনেকেই থাকে তবে আন্টি আর রাজ কেই কেন মারতে গেল। না আমি আর কিছু ভাবতে পারছি না।

~ আমার নিজের দোষে আমি আমার স্ত্রী সন্তান কে হারিয়েছি শ্রাবণ।
~ আংকেল প্লিজ কাঁদবেন না। যা হবার তা তো হয়েই গেছে। চাইলেই কি আর ওদের ফেরানো সম্ভব?

চোখ মুছে ইমান বলতে থাকলো ~ ইদ্রিস দের সাথে আমার শত্রুতা অনেক আগে থেকেই। রাজশাহীর প্লান্ট নিয়ে আমার সাথে ওদের শত্রুতা সৃষ্টি হয়। ওরা মানুষ হিসেবে খুবই খারাপ লোক ছিল। রাজ কোম্পানি তে বসার পর শত্রুতা ধীরে ধীরে বাড়তেই থাকল। এক পর্যায়ে এর বাধ ভেঙে পরল। ওরা আমার ছেলেকে শেষ করে দেওয়ার প্লান করে। কিন্তু ধারে কাছে ঘেঁষতে পারে না। সুযোগ এর অপেক্ষায় ছিল।

উপায় পেয়েও যায়। একদিন ফোন করে বলে ~ সব শত্রুতা ভুলে বন্ধুত্ব করতে চায়। এর জন্য রাজের সাথে তাদের একমাত্র বোন রাইসার বিয়ে দিতে চায়। আমরা কেউ রাজি হয়নি। কিন্তু রাইসার ছবি দেখে রাজ বিয়ে করতে চায়। ছবি দেখার পর আমরাও রাজি হয়ে যাই। রাইসা অনন্ত সুন্দরী মেয়ে।

তারপর বিয়ের সব ঠিক হয়ে যায়। রাজ ভালবেসে ফেলে রাইসাকে।
আমি কাজের জন্য ইনডিয়া যাই দুদিনের জন্য। এর মধ্যেই এতকিছু।
আমি যেদিন ফিরে আসি সেদিন সকালে এই ঘটনা ঘটে।

সেদিন ~~~
রাণীঃ ভাইয়া দেখ এই ইয়েলো জামা টা বিয়ের দিন পরব।
রাজঃ ওরে এই তোর মনে মনে কান ধরে।
রাণীঃউহহহহ কান ছার ভাইয়া। ব্যথা পাচ্ছি।

মিসেস চৌধুরীঃ এই তুই ওর কান ধরেছিস কেন?
রাজঃ মম তুমার মেয়ে আমার বিয়ের দিন ইয়েলো ফেয়ারি সাজবে আর ছেলেদের মাথা খারাপ করবে। আমি তো আর তখন ওর দিকে নজর দিতে পারব না। তাই এই বুদ্ধি করেছে।

রাণীঃ হ্যাঁ হ্যাঁ তোর নজর তো তখন ভাবির দিকে থাকবে। আমি এটাই পরব আর সব ছেলে কে পেছন পেছন ঘুরাব দেখে নিস। গেলাম আমি 😏😏
রাজঃ আরে আরে বিয়ের কার্ড চুজ করবে কে ধুর চলেই গেল।

ইদ্রিসঃ ওরে বাবা বিয়ের শপিং ও শুরু হয়ে গেছে।
মিসেস চৌধুরীঃ আরে আসুন আসুন। কি শৌভাগ্য।

শাওনঃ শৌভাগ্যই বটে তা অনেক তো বিয়ের কেনাকাটা করলেন এবার আমরা নাহয় লাশের কাপড় টা কিনে দেব ইউর টাইম ইজ আপ ( রিভলবার রাজের দিক তাক করে )
মিসেস চৌধুরীঃ কি করছেন কি ভুলে যাবেন না ও আপনার বোনের উড বি।
ইদ্রিসঃ বোন কিসের বোন? আমার তো কোন বোন ই নেই।
রাজঃ মানে রেসমা আপনার বোন।

শাওনঃ হাহাহাহাহা রেসমা ইজ মাই সো হট সেক্সসি পিএ।
রাজঃ না এ হতে পারে না। বুকে হাত দিয়ে বসে পড়ে রাজ।
শাওনঃতোর আর তোর বাবার করা প্রত্যেকটা অপমানের শোধ তুলব আজ।
রাজকে শুট করলে রাজের মা সামনে এসে পড়ে গুলিটা বুকে লেগে যায়।

রাজ ~ রাণী একসাথে ~ মমমমমমমমম
আরও দুইটা গুলি রাজের বুক ছারখার করে দেয়।
রাণীঃ ভাইয়াআআআআআআ
রাজঃ রাণী পালা। চলে যা এখান থেকে। পালা।

ইদ্রিসঃ ওয়াও তোর বোনও আছে একে তো একবার টেস্ট করতে হয়।
রাণী পালাতে গিয়েও পালাতে পারে না। ইদ্রিস রক্তাক্ত করে দেয় রাণীকে।

সেদিন বিকালে আমি এসে

ইমান চৌধুরী কাঁদছে। শ্রাবনের চোখেও পানি।

শ্রাবণঃ রাণী কি বেঁচে আছে আংকেল?
ইমানঃ হ্যাঁ। ও সুস্থ হলে ওকে আমি লন্ডন পাঠিয়ে দেই। ২ বছর হলো ও দেশে ফিরছে। এখন আমার সাথে বিজনেসে হাত লাগিয়েছে।

শ্রাবণঃ ইদ্রিস আর শাওনের কি শাস্তি দিতে পেরেছেন?
ইমানঃ না। ওদের খুজ পায়নি আর। কিন্তু ১ বছর আগে পত্রিকায় শাওনের লাশের ছবি দেখতে পারি। কেউ ওকে সুট করে মেরেছে। কে মেরেছে এখনও জানা যায়নি।

~ আমি আসি তাহলে আংকেল।
~ এসো। তোমার মম, ভাই, ভাইয়ের বউ কে নিয়ে এসো সময় করে।
~ ওকে আংকেল।

পর্ব ৯

বিজয় দোলা কে বাসায় নিয়ে আসে। মা যেন মেয়েকে পেয়ে জীবন ফিরে পায়। দোলা মায়ের বুকে মাথা রেখে কাঁদতে থাকে। বিজয় পাশে এসে দাঁড়িয়ে থেকে দেখে মা মেয়ে কাঁদছে। কিছু না বলে বাইরে বেরিয়ে পড়ে।

ইদানীং রাণীমা প্রায়ই বিজয়কে ফোন করে কাজের খোঁজ খবর নেয়। বিজয় যেন আসায় থাকে কবে রাণীমা ফোন দিবে বিজয়ের অস্থিরতায় পূর্ণ হৃদয় শীতল স্থির করে এই কণ্ঠ। পাশে বসে দোলা আর মা ও শুনে রাণীর কথা। আজকাল রাণীমা কে খুব দেখতে ইচ্ছে করে তাদের। মাঝে মাঝে তারাও কথা বলে।

রাতে খাবার খেয়ে সোফায় আরাম করে টিভি দেখছে সবাই। তখনি ফোন টা বেজে ওঠে। ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে রাণীমা কল দিয়েছে। তারাতারি করে টিভি অফ করতে বলে বিজয়।
রাণীঃ আসসালামু আলায়কুম।

বিজয়ঃ ওয়ালাইকুম সালাম। কেমন আছেন রাণীমা?
রাণী: আলহামদুলিল্লাহ। আমার কাজ কতদূর এগোলো? Next month e হসপিটাল উদ্বোধন করতে চাই।
বিজয়ঃ অবশ্যই রাণীমা। হয়ে যাবে।

রাণীঃ thank you for donated your place
বিজয়ঃ thank you to you আমাকে সমাজসেবার এত বড় সুযোগ করে দেওয়ার জন্য। আমার ওয়াইফ আর মেয়ে আপনাকে দেখতে চায়।
রাণীঃ কেমন আছেন তিনি?
বিজয়ঃ ভালো।

রাণীঃ আর আপনার মেয়েরা কেমন আছে?
বিজয়ঃ আমার ছোট মেয়ে ভালো আছে। আর বড় মেয়েও দোয়া করি ভালো থাকুক। বাবা ~মার সাথে লুকোচুরি খেলতে খুব ভালোবাসে আমার মেয়ে।

রাণীঃ হা হা হা তাই নাকি! আসছি next month এ। আল্লাহ হাফেজ।

কেবিনে চুপচাপ রাণীমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে রিমন।
~ রিমন সাহেব মুখে অমাবস্যা নেমেছে ব্যপারটা কি?
~
~ কি হলো?
~
~ ল্যাপটপ বন্ধ করে রিমনের দিকে তাকিয়ে ~ এদিকে এসো। বস। এবার বল কি হয়েছে?
~ আমি দেখতে কেমন?

~ ভ্যবাচ্যআকা খেয়ে মানে?
~ আমাকে দেখতে কেমন? আমার চেহারা কেমন? আমার ব্যবহার কেমন? মানুষ হিসেবে কেমন?
~ রুক যা মেরে ভাই। আগে তো বলবে কি হয়েছে?

~ আমি কি হ্যান্ডসাম নই? কোয়ালিফাইড নই? সুন্দর নই? তাহলে মনালিসা, টিপু, তমা এরা কেন আমাকে লাইক করে না? আমার থেকে কম কোয়ালিফাইড কম সুন্দর ছেলেকে বিয়ে করে নিচ্ছে। আমি কেন পাব না। কি নেই আমার?
~ হা হা হা তো এই ব্যাপার। কুল ডাউন মাই ব্রো।

শুন আমি তোমায় বলি তুমি যদি এসব আজে বাজে রিলেশন করে টাইম নষ্ট কর তাহলে তোমার কাজ করবে কে? তুমি মনা~ সোনার পিছু নিতেই এত্ত লেট কর। রিলেশন এ গেলে খুঁজে পাওয়াই যাবে না। তখন আমি তোমাকে ফায়ার অবশ্যই করব। কি হবে তখন?

~ তারমানে এগুলো আপনার কাজ নইতো? উদ্দেশ্য কি?
~ হা হা হা ব্রিলিয়ান্ট। ডিনারে বাসায় এসো।

রাত ৮ টায় কাজ শেষ করে জিমে যায় রাণী। ১ ঘন্টা জিম করে ৯ টায় জিমনেশিয়াম থেকে বের হয়ে লিফটের উদ্দেশ্যে দারিয়ে আছে। কিন্তু লিফট থার্ড ফ্লোরে আটকে আছে। গার্ডের থেকে জানতে পারে লিফটের সমস্যা হয়েছে। অগত্যা সিড়ি দিয়ে নিচে নামতে থাকে। আচমকা ধাক্কা খেয়ে পড়তে পড়তেই নিজেকে সামলে নেয়।

কিন্তু দোপাট্টা মাথা থেকে আলগা হয়ে যায়। পেছনে তাকাতেই দেখে একজোড়া চোখ তার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। ভালো করে দেখে ইনি sk company এর বস। তাড়াতাড়ি মাথায় দোপাট্টা দিয়ে নিচে নেমে যায়।

এদিকে শ্রাবণ খান পুরোই সকড। এ আমি কাকে দেখলাম সেই রূপ, সেই স্মেল, সেই চোখ, বিন্দু বিন্দু ঘাম জমা কপাল, সেই গেট আপ প্রাসাদ পরী বিডি তে কিভাবে? হাই আল্লাহ তার মানে আমার প্রাসাদ পরী বাংগালী।

কোথায় থাকে ও পরীর সাথে আমার কথা বলতেই হবে। তাড়াতাড়ি করে নিচে নেমে খুজতে থাকে কিন্তু পায়না।
ওহ সিট। আবার হারিয়ে ফেললাম। তুমায় আমি খুজে বের করবই পরী। তুমাকে আমার চাই চাই।

সোহানাঃ শ্রাবণ বাবা কি হয়েছে তোর? আসার পর থেকেই দেখছি অন্যমনস্ক হয়ে আছিস।
মনাঃ না না ভাইয়া সামথিং রং। বিজনেস নিয়ে এত ভাবতে দেখি নি কখনো আজ এমন কি হলো?

শাহেদঃ ভাইয়া তোর কি শরীর খারাপ লাগছে? হাত টা এদিকে দে পেসার মেপে দেখি।
মনাঃ উফ তুমার কাছে শুধু শরীর ই খারাপ হয়। সব জায়গায় ডাক্তারী দেখাবে না। এই ভাইয়া কি হয়েছে বলো না।

শাহেদঃ তোকে কি ভুতে টুতে ধরল নাকি।
শ্রাবণঃ উহো ভুত নয়। পরী। যেমন তেমন পরী নয় প্রাসাদ পরী। হটাৎ দেখা দেয় আবার। মিলিয়ে যায়।

শাহেদঃ ভাইয়া তুমি প্রেমে পড়েছ নাকি? ইয়াহু।
সোহানার চোখ চক চক করে ওঠে। কোন মেয়ে? কেমন মেয়ে? কোথায় থাকে? কি নাম? কি করে? প্রশ্ন করে করে অস্থির করে তোলে। অবস্থার বেগতিক দেখে দু কানে দু আঙুল দিয়ে দৌরে পালায় শ্রাবন।

পর্ব ১০

দোলা বাগানে ফল পাড়ছিল। মনি আর সুমি পিছন থেকে জাপটে ধরে ~ উফ জানু কত দিন পর আবার দেখতেছি তোকে।
~ থাক আর দরদ দেখাতে হবে না। ফোন দিছিস কয় বার এই কয়মাসে?
~ ওলে সোনা টা আবার রাগ করে দেখি। ইয়া আল্লাহ তুই তো আরও সুন্দরী হয়ে গেছিস। আয় আমাদের সাথে।

~ আরে আরে কোথায় নিয়ে যাচ্ছিস পড়ে যাব তো
~ পড়ে গেলে কি? তোর রসিক নাগর ঠিক ই ধরে নিবে।

~ য়ে
~ য়ে না হে তাকা সামনে
~ শামীম ভাই
সুমি আর মনি একটু দূরে গিয়ে দাঁড়ায়।

~ কেমন আছ দোলা?
~ আলহামদুলিল্লাহ। আপনি কেমন আছেন?
~ যেমন দেখছিস।

দোলা শামীমের চোখে চোখ রাখে। চোখ দুটো ফ্যকাশে সাদা হয়ে আছে। চোখের নিচে কালি জমা হয়ে গেছে। মাথার চুল গুলো উসকো খুশকো হয়ে আছে। চেহারা অনেক টাই মলিন তবে কি সত্যি শামীম ভাই ভালো নেই? ঘাবরে যায় দোলা।

~ দোলা আমায় কি একটু বিশ্বাস করা যায় না? আমি কি এতটাই খারাপ? একবার বিশ্বাস করে দেখ কোনদিন ঠকবিনা।
~ বাড়ি যাও শামীম ভাই শান্ত গলায়। আর কিছু না বলে বাড়ির দিকে হাটা দেয়

ঘরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিয়ে দৌরে বোনের ছবি টা হাতে নিয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে কাঁদতে থাকে। এদিকে চিৎকার শুনে মা ~ বাবা দুজনেই কেঁপে ওঠে। দরজার সামনে এসে মেয়ের কান্না গিলতে থাকে। দরজায় কড়া নাড়ায় না। মেয়েকে ডাকও দেয় না। কারন মেয়েকে ডেকে লাভ নেই। ডাকের সাড়াও দিবে না আর দরজাও খুলবেনা। কান্না শেষ হলে একাই বেড়িয়ে আসবে।

তুমি কেন এমন করলে আপু কেন ফিরে এলে না কোথায় তুমি আপু? আমি আর সহ্য করতে পারছি না। একোন দুটানায় পরলাম আমি নরপিশাচ তো নরপিশাচই হয়। তবু কেন মায়া লাগে তাদের প্রতি? আমি চাইনা এমন রক্তের সম্পর্ক যে সম্পর্কের আঘাতে আঘাতে মৃত্যুর দিকে ধাবিত করে।

কেন মন থেকে থেকে তার কথাই ভাবে? কেন আমার বিশ্বাস করতে মন চায়? কেন আমি ভুলে থাকতে চাইলেও বার বার আমার সামনে আসে? আমি থাকতে চাই না আর এখানে চলে যেতে চাই। তুমায় খুব প্রয়োজন আপু। প্লিজ হেল্প। মি প্লিজ
কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পরে একপর্যায়ে।

বিজয় সুমি আর মনি কে ডেকে পাঠায়। ওদের কাছ থেকে সব শুনে চিন্তায় পরে যায়। সিদ্ধান্ত নেয় দোলাকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিয়ে দিতে হবে। ঘটকের সাথে কথা বলে নেয়। পাত্র দেখতে শুরু করে দেয়।

এই কথা শামীম এর ভাই সবুজ জানতে পারে।
সবুজঃ যা শুনছি তাই কি সত্যি?
শামীমঃ হ্যাঁ ভাইয়া। সত্যি।
সবুজঃ তুই কি সত্যি ভালবাসিস?
শামীমঃ হ্যাঁ ভাইয়া।

সবুজঃ চুপ কর হারামজাদা। ওদের জন্য ২ বছর জেল খাটতে গেছে আমার। ভেবেছিলাম এর প্রতিশোধ নেয়ার জন্য তুই দোলার পিছু লেগেছিস। কিন্তু তুই তো প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছিস।
শামীমঃ দোলার রুপে মুগ্ধ আমি। ওকে বিয়ে করে আমি ওকে পেয়ে যাব। তখন না হয় তুমি সুযোগ মতো প্রতিশোধ নিয়ে নিয়ো।
সবুজঃ মেকি হেসে আচ্ছা তো এই ব্যাপার।

শ্রাবণের ভুবন জুড়ে সেই প্রাসাদ পরীর ভাবনা। মনে মনে সেই পরীকে খুঁজে বেড়ায়। জিমনাশিয়াম থেকে শুধু নামটাই জানতে পেরেছে কিন্তু ঠিকানা জানতে পারে নাই। আসলে সবার নাম ঠিকানা দিয়ে এড হলেও রাণীমার ঠিকানা দেওয়া হয়নি। তাছাড়া রাণীমার জন্য আলাদা রুম বুক করা স্পেশাল ভাবে।

ইদানীং ইমানের সাথে শ্রাবনের বেশ ভালোই সম্পর্ক গড়ে উঠছে। রাতে শ্রাবণ ইমান কে ফোন দেয় ~~
~ আসসালামু আলায়কুম আংকেল।
~ ওয়ালাইকুম আসসালাম।

~ কাল তো উইকেন্ড। মম আপনাদের বাসায় দাওয়াত দিয়েছে।
~ আম সরি বাবা। কাল আমি একটু টাঙ্গাইল যাচ্ছি। তুমি ফ্রি থাকলে যেতে পারো।

~ টাঙাইলে কেন যাচ্ছেন?
~ তুমার আন্টির বাপের বাড়ি টাঙাইলে। সেখানেই তাকে আর রাজকে সমাহিত করা হয়েছে। তাই তোমায় যেতে বলছি।
~ ঠিক আছে আংকেল আমি যাব। কাল দেখা হচ্ছে।

সকাল বেলা ব্রেক ফাস্ট করে বেড়িয়ে পড়ে। গাজীপুর এ ইমান এর সাথে দেখা হয়। দুজন দুজনের গাড়ি তে চলতে থাকে। টাঙাইলে পৌছেই ইশানের শশুর বাড়িতে যায়। ভেতরে ইমাম সহ অনেক মানুষ গোল হয়ে বসে আছে। ইশান শ্রাবণ কে নিয়ে ওজু করে আসে। ইমামের পাশে গিয়ে বসে ইশারায় শুরু করতে বলে। শ্রাবন ইশানকে বলে ~ আংকেল কি উদ্দেশ্যে এই মিল্লাত মাহফিল এর আয়োজন করা হয়েছে?

~ ইশান জোরে হা নিঃশাস ফেলে। আজ রাজ আর তোমার আন্টির মৃত্যু বার্ষিকী।
ইমাম সাহেব দোয়া পাঠ শেষ করলে ইশান সবাইকে গেইটের বাইরে ফাকা জায়গায় বসতে বলে।

সেখানে বিরাট খাওয়া দাওয়ার আয়োজন করা হয়েছে। আশে পাশের এলাকার মানুষদের চটি বিছিয়ে খাবার দেওয়া হচ্ছে।

ইশান বাবুচি দের সাথে কথা বলে। নিজের পানজাবির হাতা ফোল্ড করে একটা মাংসের বালতি হাতে নিয়ে খাবার দিতে থাকে। দেখাদেখি শ্রাবণ ও শার্টের হাতা ফোল্ড করে প্যান্ট ও নিচে ফোল্ড করে পোলাও এর বোল নিয়ে সার্ভ করতে থাকে।

খাওয়া দাওয়া শেষ করে লোকজনকে বিদায় দিয়ে ইশান শ্রাবণের সামনে এসে দাঁড়ায়।
শ্রাবণঃ আংকেল এত দুর আসছি যখন তখন কবর যিয়ারত করে যেতে চাই।
~ এখান থেকে ৩০ মিনিট হাটতে হবে। যাবে তো?

~ চলুন।
যেতে যেতে….
~ আংকেল রাণী আসলো না যে?
~ জানিনা
~ কেন?

~ আজ দেখি নি রাণীমা কে। ওর মন টানলে ও এমনিতেই চলে আসে। আমাকে বলেও না।
~ ওহ। আংকেল ওর সাথে তো পরিচয় করিয়ে দিলেন না। দুদিন বাসায় গেলাম তাও দেখলাম না।
~ ও এখন আমার থেকেও বেশি ব্যস্ত। বিজনেস এ হাত দিয়েছে। অনেক দক্ষতার সাথে সব মেইনটেইন করে।
~ বাহ। তাহলে তো খুব ভালো। ওর বিজনেস পার্টনার হয়ে কাজ করতে পারবো।

~ অলরেডি হয়েই আছ। চৌধুরী ইন্ডাস্ট্রির রাণী চৌধুরানী ই আমার রাণীমা।
~ হুয়াট। ও মাই গড। ঐ রাণীই এই রাণী। সবসময় যে মুখ ঢেকে রাখে।
~ হা হা হা। অবাক হলে মনে হয়।

~ অনেক। মনে মনে, আহারে কত সুন্দর গঠন মেয়েটার। অথচ মুখ ঢেকে রাখতে হয়। এ সমাজ কত টা খারাপ। মুখটাই মনে হয় শেষ। শরীর ও ঢেকে রাখতে হয়। খুব মায়া হচ্ছে।

গুরুস্থানের সামনে চলে আসে কথা বলতে বলতে
গুরুস্থানের সামনে একটা গাড়ী দাঁড়িয়ে আছে। গাড়ি দেখেই ইশান বলে ওঠে ~ রাণীমা
এক সেকেন্ড ও না দাড়িয়ে ভেতরে চলে যায়। পেছন পেছন শ্রাবণ ও যায়।
সিমেন্টের পাকা করা দুটো কবরের সামনে বসে আছে এক সাদা পরী। শরীরের পুরোটা জুড়ে সাদা গাউনে আবৃত। মাথায় সাদা হিযআপ।

পেছন থেকে এভাবে বসে থাকতে দেখে শ্রাবণের বুকে চিন চিন একটা ব্যথা অনুভুত হয়।
পেছন থেকে ইশান ডাকে ~ রাণীমা
বাবার কন্ঠে পেছনে তাকায় রাণী। চোখ মুখ অদ্ভুত ভাবে ফুলে গেছে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে এতক্ষণ যে বসে বসে কেদেছে এখানে।
বাবার সাথে কথা বলে না রাণী। আবার আগের মত করে বসে যায়।

এদিকে শ্রাবণ রাণীকে দেখা মাত্রই তার দুনিয়া অন্ধকার হয়ে গেছে। নিজেকে ঠিক রাখতে খুব কষ্ট হচ্ছে তার। আর একমিনিট ও ওখানে না দাড়িয়ে হন হন করে পেছন দিক হাটা দেয় শ্রাবণ। পেছন থেকে ইশান অনেক বার ডাকলেও ফিরে তাকায় না সে।
ইশান অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে শ্রাবণের এমন আচরণে।

পর্ব ১১

শ্রাবণ হাই স্পিপ এ গাড়ি চালিয়ে ঢাকার দিকে এগোতে থাকে। কিছুক্ষন আগে তার প্রাসাদ পরী তার সামনেই ছিল যাকে কয়েকটা মাস ধরে দুইটা দেশেই খুঁজে বেরুচ্ছে। তার পরী আজ তার সামনেই ছিল কিন্তু দাড়াতে পারেনি তার সামনে। অনুভূতি গুলো আজ তাকে দুটানায় ফেলে এক ভয়ংকর খেলায় মেতে উঠতে চাচ্ছে।

বুকের পাটাতনে চেপে চেপে মেরে ফেলতে চাইছে। যাকে প্রাসাদ রাণী ভেবেছিল সে যে এক রহস্য ময়ী রাণী। ভয়ংকর রাণী সে। যার শরীর জুড়ে কষ্ট ~ মনটা নষ্ট। আবার কোথাও যেন পবিত্রতা বিরাজ করছে। এক বহুরুপী রাণী সে। কখনো ভেজা কখনো শুকনো। না সে আর ভাবতে পারবে না।

সমাজের মানুষ রূপী পশুদের জন্য আজ অধিকাংশ নারী দের এই অবস্থা। ধর্ষণ আজকাল সমাজে একটা ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে। পশু গুলো ধর্ষণ করে ভাবে যে দেখ এইতো আমরা পুরুষ। পুরুষ জাতি হবে শক্তিশালী। নিজেদের ইচ্ছা মত তারা চলবে।

নারীদের উপর অত্যাচার করে নিজেদের তৃষ্ণা মিটিয়ে মহাপুরুষ হবে। ছোট ছোট বাচ্চা পর্যন্ত ছাড় পায় না। আইন তাদের কিচ্ছু করতে পারবে না। ক্ষমতার জোরে লকাব অব্দি পৌঁছায় না তাদের দেহ। ধিক্কার জানাই সেই সব নরপশুদের। কাপুরুষ হয়ে যারা নিজেদের মহাপুরুষ মনে করে।

খুব একা ফিল হচ্ছে শ্রাবণের। রাস্তা টাও আজ জনমানবহীন। অঝর ধারায় বৃষ্টি হচ্ছে। চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে আসছে। গাড়ি থামিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসে। বৃষ্টির পানি গুলো শরীরে শুষে নিতে থাকে।

আচ্ছা রাণী সাহেবা তুমি কি সব পুরুষ কে এক চোখে দেখ? আমার ভালবাসা কি বুঝবে তুমি? মেনে নিবে আমায়? জানো বুকটা খাখা পকরছে। শূন্যতা বিরাজ করছে। তুমি কি এই বুকে মাথা রেখে পূর্ণ করবে আমায়?

তোমার কষ্ট গুলোর ভাগ করে নিতে চাই আমি। তোমায় সব দিতে চাই আমি। মম, ভাই, বোন, একটা পরিবার সব সব। তুমি যেমনঃ হও না কেন এই শ্রাবণের বৃষ্টি তুমি। খুব ইচ্ছা তোমায় নিয়ে শ্রাবণের বৃষ্টি তে ভিজব। তুমি তো আর বৃষ্টি ভালবাস না। আমি তোমায় বৃষ্টি ভালবাসাব। আর তোমার চোখের বৃষ্টি গুলো শুষে নিব। কখনোই নষ্ট হতে দিব না। কখোনোই না।

হাত গুটিয়ে বসে থাকবি এখনও শাহেদ কিছু একটা কর ৪ টা বেজে গেছে অথচ আমার বাচ্চা টা এখনও এলো না। এমন কোনদিন ও করে নি ও। আমার ছেলেটা ঠিক আছে তো?
মম প্লিজ কেদ না সকালে ভাইয়া ঠিক ই চলে আসবে। বাইরে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে। হয়ত কোথাও আটকে গেছে
আটকে গেলে ফোন কেন অফ থাকবে? জানাবেত আমায় কোথায় আছে।

ভোর ৫ টার দিকে শ্রাবণ বাসায় ফিরে। সোহানা ছেলে কে দেখে ভয় পেয়ে যায়। ভেজা শার্ট প্যান্ট ~ লাল চোখ দেখে আৎকে ওঠে। দৌরে গিয়ে একবার ছেলেকে বুকে জড়িয়ে নেয়। হাত ধরে উপরে নিয়ে রুমে নিয়ে যায়। টাওয়েল, টি~শার্ট, প্যান্ট বের করে ওয়াস রুমে পাঠিয়ে দেয়।

ইশান মেয়েকে নিয়ে সেদিন টাঙাইলেই থেকে য়ায়। সকালে খাওয়া দাওয়া করে ঢাকার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ে। রাতে মিসেস খান অনেক বার কল দিয়েছে কিন্তু রিসিভ করতে পারে নাই।

ওদিকে শ্রাবণের কাঁপুনি দিয়ে জর আসে সারারাত বৃষ্টিতে ভেজার ফলে। সোহানা ভেজা কাপড় দিয়ে বার বার গা মুছে দিচ্ছে। মনা মাথায় জলপট্টি দিচ্ছে। শাহেদ অনেক আগেই মেডিসিন খাইয়ে দিয়েছে। কিন্তু জর এখনো কমে নি।

জরের ঘোরে কথা বলছে।
সোহানাঃ শাহেদ জর তো কমছে না। কি করব বল না কিসব বলছে জরের ঘোরে।
মনাঃ বৃশি হ্যাঁ বৃষ্টি। বৃষ্টি নাম বলছে।

সোহানাঃ বৃষ্টি তে ভিজেই তো আমার বাচ্চা টার জর আসলো
শাহেদঃ মম ভাইয়া তো পরীর প্রেমে পড়েছে। বৃষ্টি তো মেয়ের নাম। তাহলে পরীটার নাম বৃষ্টি নয়তো?
সোহানাঃ সব আমার দোষ। কেন য়ে ছেলেকে প্রেমে পড়তে বললাম নয়তো আজ আমার ছেলে অসুস্থ হয় নাকি?

কি খারাপ মেয়ে আমার ছেলেকে অসুস্থ করে দিল একবার ভাব শাহেদ ঐ মেয়ে কতটা।
শাহেদঃ মম চুপ কর। ভাইয়া ঠিকই বলে তুমি একটা মেলড্রামার কারখানা। কই তুমি ভাইয়াকে নিয়ে ভাববে তা না করে ঐ মেয়ের পেছনে লেগেছ। ইনজেকশন পোস্ট করা ছাড়া উপায় নেই। আমি ইনজেকশন আনতে গেলাম। মাথায় পানি দিতে থাকো।

সোহানাঃ তাড়াতাড়ি আসবি।
শাহেদঃ ওকে।

ইশান রাণীকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে শ্রাবণের বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হয়। ছেলেটা কাল এভাবে চলে এলো আর ওর মম রাতে এতবার কল দিল ব্যপারটা কেমন যেন মনে হচ্ছে। এখন ফোন দিলেও রিসিভ হচ্ছে না।

শাহেদঃ ইনজেকশন দিয়ে দিয়েছি দেখ আস্তে আস্তে জর কমে আসছে।
সোহানাঃ বাবা উঠে বস। এই দুধ টুকু খেয়ে নে এনার্জি পাবি।
মনা আর শাহেদ ধরে পেছনে বালিস দিয়ে হালকা করে বসিয়ে দেয়। সোহানা দুধ টুকু খাইয়ে দেয়।

এসময় দরজায় ইশান দাঁড়িয়ে
~ may I coming?

শাহেদঃ a Uncle coming please
ইশানঃ শ্রাবণ বাবা কি হয়েছে তোমার? একি অবস্থা করেছ নিজের?
সোহানাঃ দেখুননা ভাইজান কাল সকালে বের হয়েছে। সারারাত বাসায় ফিরে নি। আপনাকে কত বার কল দিয়েছি বাট আপনিতো ধরেন নাই। ভোরে বৃষ্টিতে ভিজে একাকার হয়ে বাসায় ফিরেছে। এখন দেখুন অসুস্থ হয়ে গেছে।

ইশানঃ I’m sorry for that Actually network problem ছিল তাই কথা বলতে পারি নাই। আর শ্রাবণ এ কেমন পাগলামি? গাড়ি থাকতে বৃষ্টিতে কেন ভিজেছ তুমি? This is very bad
মনাঃ ভাইয়া মনে হয় বৃষ্টির প্রেমে পড়েছে। জরের ঘোরেও বৃষ্টি বৃষ্টি করছিল।
ইশানঃ চমকে উঠে শ্রাবন
শ্রাবণঃ uncle আমাকে আপনার কেমন লাগে?

~ কেমন আবার লাগবে? খুব সুন্দর তুমি।
~ ছেলে হিসেবে কেমন?
~ খুব ভালো।

~ কোন চোখে দেখেন আমায়?
~ তোমায় নিজের ছেলের মত দেখি আমি।
~ ছেলে হিসেবে কিছু চাইলে দিবেন আমায়?
~ বল আমার ছেলে কি চায় আমার কাছে?

~ রাণী সাহেবা কে দিবেন আমায় সারাজীবনের জন্য?
~ শ্রাবণ এইটা অসম্ভব। তুমি সব জানো। নতুন করে বলার কিছু নেই। আর রাণী বিয়ে করবেনা আমাকে জানিয়ে দিয়েছে।
~ অসম্ভব কে সম্ভব করা আমার দায়িত্ব আংকেল। আমি সব জেনেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি ওকে রাজি করাব। আপনি শুধু আমায় জামাই হিসেবে মেনে নেন। আর কিছু চাইনা আমার।

~ একবার দেখেই তুমি এই আবদার করে দিলে? শ্রাবন ও রাণীমা। আর পাচ জন মেয়ের মত না ও।
~ ও যেমনি হোক আমি ওকে তেমন ভাবেই চাই। আমি ওকে অনেকদিন থেকেই চিনি। ৭ টা মাস থেকে খুজছি ওকে। আমি আর হারাতে চাই না আংকেল। প্লিজ বুঝার চেষ্টা করুন।

~ রাণীকে যদি রাজি করাতে পার তাহলে আমার কোন আপত্তি নেই। দেখ কি করতে পার
~ thank you so much uncle Thank you
~ আসছি আমি।

রাতে ডিনারে~
~ রাণীমা আমি আমার কিছু সিদ্ধান্ত তোমায় জানাতে চাই।
~ কোন ব্যপারে পাপা?

~ খাবার টা শেষ কর তারপর বলছি।
~ কি এমন কথা যে খাবার শেষ করতে হবে?
~ আগে কর তারপর বলছি।

~ হুম। শেষ। এবার বলো।
~ আমি সিদ্ধান্ত নিয়ছি এই বছরেই তোকে একটা পরিবার দিব।
~ মানে?

~ মানে এই বছরেই আমি তোমার বিয়ে দিব। আর এইটা আমার শেষ কথা।
~ ভেবে বলছ?
~ হ্যাঁ। আমি ভেবেই বলছি।

~ আর আমিও বলছি আমি বিয়ে করবো না। কিছুতেই করবনা। আমি কাওকে ঠকাতে পারব না। আমি কোন
ঠক নই। পারবোনা আমি।
রাণীমা শোন আমার কথা শোন রাণী।

সকালে অফিসে
রিমন
~ রাণীমা Cox bazer এ meeting arrange করা হয়েছে Next Friday
~ আমার সাথে তুমিও যাচ্ছ।
~ ওকে।

~ রাণীমা আপনার ফোন
~ হ্যাঁলো আসসালামু আলায়কুম পাপা।
~ অয়ালাইকুম সালাম রাণীমা। আজকে lunch time এ বাসায় চলে এসো।
~ ওকে পাপা।
~ হুম

পর্ব ১২

আসসালামু আলায়কুম ভাবী। আসতে কোন অসুবিধা হয়নি তো? না না ভাইজান কোন অসুবিধা হয়নি। আমি তো নতুন আসছিনা এর আগেও তো অনেক বার আসা হয়েছে ভাবী থাকতে। হূম তো শাহেদ মনা কেমন আছ তোমরা? আমরা খুবই ভালো আর উত্তেজিত আংকেল নতুন ভাবিকে দেখার জন্য। হা হা হা তো তোমার ভাবীর সামনে যেন ভাবী ডেক নাতালগোল পাকিয়ে যেতে পারে সব। ওকে আংকেল।

বসুন ভাবী। বস তোমরা। তা ভাবী শ্রাবণ এলো না কেন? শ্রাবন একটু কাজে ব্যস্ত। তারপর কাল আবার কক্সবাজার যেতে হবে। সেখানে একটা প্রজেক্টে গ্রুপ ডিল করা হবে।
রাণীমাও কিন্তু এই বিজনেসের একটা পার্ট। মনে হয় ওকেও যেতে হবে।

তাহলেতো ভালই হল ভাইজান। কাজের বাহানায় তারা কথা বার্তা বলতে বলতে ফ্রি হয়ে যাবে আস্তে আস্তে।
হুম ঠিকই বলেছেন ভাবী। নিন কিছু নিন। খেতে খেতে কথা বলা যাক। এলিনা সার্ভ করে দাও।
হামম।
আংকেল ভাবী কি এখনো আসে নি? আমরাই মনে হয় তাড়াতাড়ি চলে আসছি।

এসে যাবে। আমি বলেছি lunch period এ বাসায় আসতে। তোমাদের কথা কিছুই বলিনি। সময় হয়ে আসছে। এসে যাবে। শ্রাবনটা এলে ভালো হতো। সামনা সামনি কথা বলানো যেত।

এভাবেই কথা চলতে থাকে। এর মধ্যেই রাণীমা বাসায় প্রবেশ করে। পেছন পেছন রিমন ও প্রবেশ করে। রাণীমা ফ্রেস হয়ে আস। তোমার এক খালামনি আসছে মিট করবে। এলিনা টেবিলে খাবার সাজাও। রিমন তুমিও ফ্রেস হয়ে এসো।
জি আংকেল।

রাণী নিজের রুমে চলে যায়। রিমন ও গেষ্ট রুমে চলে যায়। মনা, শাহেদ, সোহানা এক ধেন এ রাণীমার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। সবাই অবাক রাণীমাকে দেখে। সাদা বেলভেটের লং গাউন পরিহিত, মাথায় হিযআপ দিয়ে মুখ ঢাকা।

শুধু চোখ বের করা। এমন গেট আপ এ যেন প্রথম কাউকে দেখছে। সোহানা বড্ড খুশি হয়ে যায় যে এমন জেনারেশনে একজন বিজনেসমেন হয়ে কেউ এরকম পর্দায় থাকতে পারে। একটু পর রিমন চলে আসে। রিমনকে ইশান সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। রাণীমাও চলে আসে নিচে ~

আসসালামু আলায়কুম। কেমন আছেন সবাই?
অয়ালাইকুম সালাম। আলহামদুলিল্লাহ। আমার কাছে এসে বস তো মা। থুতনি তুলে ~ দেখি দেখি মাশাল্লাহ। এযে পরী একটা। আর কিছু না পাক গায়ের রং টা একদম মার মতো পেয়েছো।

রাণীমা এ হচ্ছে তোমার সোহানা আন্টি। তোমার মম এর খুবই ক্লোজ ফ্রেন্ড। আর ও হচ্ছে শাহেদ তোমার খালামনির ছেলে। আর ও মনা ~শাহেদের বউ।

শাহেদ আর মনার চোখ তো ছানাবড়া। ভাইয়া কেন পাগলামি করবেনা এ মেয়ের জন্য? গোলাপি গায়ের রঙ, রসগোল্লার মত গাল, ছোট টকটকে লাল অধর যুগল, হরীণির মত বড় বড় চোখ, টনটনা একটু লম্বা নাক, হালকা সবুজ চোখের মনি, টিয়া কালার গাউন পরেছে, মেজেনটা কালার দোপাট্টা দিয়ে ঘোমটা দেয়া। দোপাট্টা দিয়ে ঢাকা মাথায় সামনে কিছু চুল দৃশ্যমান। হালকা লালচে চুল বোঝা যাচ্ছে।
শাহেদ তো সোফায় বসেই সেন্সলেস হবে হবে অবস্থা উপায়ান্তর না পেয়ে মনা কে শক্ত করে ধরে বসে থাকে।

আমি যদি জানতাম এখানে এলে এমন মিষ্টি একজনের দেখা পাব তাহলে অনেক আগেই আসতাম।
আমায় আগে কেন বললেন না ভাইজান আপনার ঘরে জান্নাতের হুর থাকে।

দেখি হাতটা।
কি করছেন আন্টি এটা।
(পিংক ডায়মন্ড বসানো একটা চুর পরিয়ে দেয়)
রাণীমা আন্টি ভালবেসে দিচ্ছে নাও।
হামম।

বাহ কি সুন্দর লাগছে। এটা আমার পক্ষ থেকে তোমায় দেওয়া ভালবাসা। খুবই সিম্পল। সব সময় হাতে পড়ে থাকবে কেমন? খুলো না যেন অসাধারণ কিউট লাগছে।

সবাই খাওয়া দাওয়া করে নেয়। তারপর কিছুক্ষণ গল্প করে বাসাই চলে যায়।

রাতে বাসায় শ্রাবণ আসলে এক দৌরে মনা ~ শাহেদ কোলে উঠে ~ ভাইয়াআআআআআ আআআআ উমমাআহহ উমমমাআআহহহহহউমমমমাআহহহহ উমমমমাআআহহহহহ
উমম ছারর ছারর উফ কি হয়েছে কি? মুখটা দুটোয় মিলে শেষ করে দিল

~ ভাইয়া ভাবিকে দেখে মাথা ঠিক নেই। তাড়াতাড়ি আমাদের বাসায় আনার ব্যবস্থা কর। ভাবিকে ছাড়া আর থাকতে পারছি না গো
~ এর জন্য আমার মুখটা লালা দিয়ে ভরিয়ে দিলি
~ লালা বলছ কেন? এগুলো তো স্পেশাল চুমো। ইচ্ছে করছে আরো দেই
~ …

~ ওই বাদরের দল ভাইয়াকে ছাড়। যেতে দে। আয় আমার বাচ্চাটা আমার কাছে আয়। আমি দুটো চুমো দেই।
~ নাআআআআআআআআআআআআ গাল দুইটা দু হাত দিয়ে ধরে দৌড়

রাতে শাহেদের কাছ থেকে রাণীর ছবি গুলো নেয়। শাহেদ সুযোগ বুঝে ছবি তুলেছিল। রাতে রাণীর ছবি গুলো দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে পড়ে। মেয়েটা তার ঘুমের মধ্যেও ঢুকে পড়ে। নিয়ে যায় নাম না জানা সব রাজ্যে। এ এক অদ্ভুত অজানা অনুভূতি।

সকালে ৪ টার দিকে ব্রেকফাষ্ট করে ৯ টায় বেড়িয়ে পড়ে ইয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে। ১০৩০ টায় ফ্লাইটে উঠে। জানালার পাশে বসে রাণী। আর পাশে এসে বসে শ্রাবণ। রাণীর মুখ হিযআপ দিয়ে ঢাকা। ফ্লাইট কক্সবাজারের উদ্দেশে ছাড়ে।

~ hello I am srabon ahemed Khan You are rani chowdurani Right?

~ yeah I’m
~ sk company and chowdury company একসাথে international business e dil করতে যাচ্ছে।
~ yes I hope we both get this project Inshallah
~ inshallah

ফ্লাইট থেকে নেমে ~
~ কোন হোটেলে বুকিং দিয়েছেন?

~ জি না। আমি সরাসরি উঠব।
~ এক হোটেলে থাকলে সুবিধা হবে। you can come with me
~ sure

হোটেলে পৌঁছে রুমের চাবি নিয়ে রুমে চলে যায়। দুজনের রুম পাশাপাশি। unfortunately metting cencle হয়ে যায়। Clint এখনও এসে পৌঁছায় নি। মিটিং দুপুর ৩ টায় ছিল। কিন্ত ১৩০ জানতে পারে Clint আসতে আসতে ৬ টা বেজে যাবে। তাই আগামীকাল সকাল ১০ টায় মিটিং ফিক্সড করা হয়।
রাণী একটু ঘুমিয়ে নেয়।

রাস্তা দিয়ে বিজয় বাজারে যাচ্ছে। সবুজ সামনে এসে দাঁড়ায়।
~আসসালামু আলায়কুম চাচা।
~ অয়ালাইকুম আসসালাম।
~ চাচা আপনার সাথে আমার কিছু কথা ছিল।

~ তুমার বা তোমাদের সাথে আমার কোন কথা না ছিল না আছে না থাকবে।
~ এভাবে বলবেন না চাচা। নিজের ভুলের জন্য আমি ক্ষমা প্রার্থী। দুটো মিনিট সময় দেন প্লিজ। একটু সাইডে বসুন যাষ্ট দুটো মিনিট।

~ তোমার সাথে আমি মরে গেলেও বসব না। তুমি তোমার ভাইকে বলে দিবে আমার মেয়ের পেছনে যেন না লাগে। না হলে তোমার ভাইয়ের অবস্থা ভয়ংকর কিছু হবে।

~ চাচা শামীম দোলাকে সত্যি খুব ভালোবাসে। দোলাও শামীম কে ভালবাসে।
~ চুপ থাক সবুজ। তোমার জন্য আমি আমার এক কলিজাকে হারিয়েছি। তোমার ভাইয়ের জন্য আমার আত্মা কে হারাতে পারবো না। আমার মেয়ে কখনোই কাউকে ভালবাসতে পারে না যে আমার চিরকালের শত্রু।

~ চাচা আমার ভুলের জন্য আমি শাস্তি পেয়েছি। কিন্ত প্লিজ আমার ভাইটাকে কষ্ট দিবেন না। আর দোলা অনেক সুখী হবে। আপনার কাছাকাছিও থাকবে। যখন ইচ্ছা তখন সামনে দেখতে পাবেন। আর
~ আর আমার সব কিছু তোমার ভাইয়ের হবে তাই তো।

~ চাচা আপনি কিন্ত বেশিই বারাবারি করতেছেন।
~ আমার মেয়ের গায়ে যদি একটু আচর দিতে চেষ্টা করস তাহলে তুই আর তোর ভাইয়ের কবর খুঁড়তে বলে রাখিস তোর বাপ কে।

বাড়িতে এসে বাজারের ব্যাগ ছুড়ে ফেলে সোফায় বসে দোলাকে ডাকতে থাকে বিজয়। দোলা ছুটে এসে দেখে রাগে কপাল সহ চোখ লাল হয়ে আছে। ভয় পেয়ে য়ায় দোলা।

আব্বু বল। কাল থেকে কলেজে আমি নিয়ে যাব নিয়ে আনব তোকে। কথাটা যেন মনে থাকে। কোন বান্ধবীর সাথে যেতে হবে না। যা এখান থেকে।

৩ টায় শ্রাবন রাণীর খোঁজ নিতে যায়। রাণীকে রুমে না পেয়ে পুরো হোটেল খুজে। বিচে এসেও অনেকক্ষণ খুঁজে। কিন্ত পায় না।

ধুরররর ভাবলাম ওকে নিয়ে একটু বের হয়ে ঘুরব। কিন্তু পাখিটাকেই তো পাচ্ছি না। ওর ফোন নাম্বার টাও তো নেই। কোথায় গেল আংকেল কে বরং ফোন করি ~
~ হ্যালো আংকেল রাণী সাহেবার নাম্বার টা একটু টেক্সট করূন না ও আসলে একা বেরিয়ে গেছে। কোথায় আছে একটু জেনে বলুন প্লিজ।

পর্ব ১৩

ফুলে ফুলে ঢলে ঢলে, বহে কিবা মৃদু বায়।
ফুলে ফুলে ঢলে ঢলে, বহে কিবা মৃদু বায়।

তটিনী হিল্লোল তুলে, কল্লোলে চলিয়া যায়।

পিক কিবা কুঞ্জে কুঞ্জে, পিক কিবা কুঞ্জে কুঞ্জে,
কুহু কুহু কুহু গায়।

কি জানি কিসের লাগি, প্রাণ করে হায় হায়!

ফুলে ফুলে ঢলে ঢলে, বহে কিবা মৃদু বায়

আসাধারন
একি আপনি এখানে চমকে উঠে পেছনে তাকিয়ে
ভাগ্যিস এসেছিলাম নয়তো কোকিলকণ্ঠীর মধুর সুরে গান শুনতে পারতামনা। আর কি কি গুন আছে প্লিজ বলবেন?

মি শ্রাবন আমাদের কি কাকতালীয় ভাবে এখানে দেখা নাকি ইচ্ছা করে
ওয়েট ওয়েট প্রশ্ন করছেন?

আ সরি আমি
ইটস ওকে ওকে মিটিং কেনসেল হলো সো ভাবলাম একটু আড্ডা দেওয়া যাক। আপনাকে পেলাম না। তাই পাহাড়ে আসলাম। এখানে এসেছেন যে?

ভালো। সামনে একটা অরফানেজ আছে। যাবেন?
অরফানেজ হ্যাঁ অবশ্যই চলুন।

পাহাড়ের উপর মনোরম পরিবেশে ছোট্ট একটা অরফানেজ। কয়েকজন বাচ্চা মাচায় বসে বই পড়ছে। কয়েকজন লাফালাফি করে খেলছে। অরফানেজ এর চারিদিকে ছোট ছোট বাশের বেড়া দেওয়া। বাশের গেইট ছাড়িয়ে রাণী ভেতরে ঢুকে পড়ে। পেছন পেছন শ্রাবণ ও যায়। রাণীকে দেখে বাচ্চারা রাণীমা বলে দৌড়ে এসে রাণীকে জড়িয়ে ধরে। রাণীও পরম আদরে জড়িয়ে আদর করতে থাকে তাদের। অরফানেজ এর ভেতর থেকে আধবয়সী একজন মহিলা বের হয়ে আসে।

রাণীমা আসসালামু আলায়কুম। কত দিন পরে এলেন আপনি। কেমন আছেন রাণীমা?
ভালো আছি মনিরা। তুমি কেমন আছো? বাচ্চাদের ভালো মতো দেখাশুনা করছতো?
আপনি নিজের চোখেই দেখুন রাণীমা। ওরা কত ভালো আছে।
হুম।

শুধু টাকা পাঠালেই আমরা ভালো থাকি নাকি? আপনার চাদমুখ খানা দেখলে যে এমনিতেই শান্তি পাওয়া যায়।
অনেক ব্যস্ত থাকি বুঝোইতো।

শ্রাবণ বুঝতে পারে অরফানেজ টা রাণীরই।
শ্রাবণ কে দেখিয়ে ওনি আমাদের স্যার বুঝি আসসালামু আলায়কুম।
ওয়ালাইকুম সালাম। আমি তোমার স্যার নই। কিন্তু হয়ে যাব টেনশন নিও না বলেই মুচকি হাসি দিল।
মনিরাও মুচকি হাসল।

কিছুক্ষণ বাচ্চাদের সাথে কাটিয়ে রাণী বলল ~ মি শ্রাবন আমাদের যেতে হবে এবার। শ্রাবন মাথা নাড়িয়ে সায় দিলো। বিদায় নিয়ে দুজনেই পাহাড়ি রাস্তায় হেটে এগুতে লাগলো। রাণী সাধারণত কারো সাথে এভাবে comfortly থাকতে পারে না। কিন্তু শ্রাবণের সঙ্গ তার ভালোই লাগছে খারাপ লাগছে না।

পথে শ্রাবণ যে রাস্তায় এসেছিল সে রাস্তার মোড়ে অন্য আর এক রাস্তার দিকে এগোতে থাকে।
আরে আরে আপনি ঐদিকে কোথায় যাচ্ছেন? আমরা এই রাস্তায় এসেছি।
আপনিও যাবেন আমার সাথে ঐ দিকে। চলুন। না করবেন না প্লিজ।

বিকাল ৫২০ বাজে। আর মাত্র ১ ঘন্টার মতো সময় আছে হাতে। হোটেলে ফিরতে হবে। ঐ দিকে শুধু পাহাড় আর পাহাড়। কিচ্ছু পাবেন না।
পাহাড়েই তো আছি রাণী সাহেবা। আপনি বলেছেন তাই আমি আপনার সাথে গিয়েছিলাম তাই প্লিজ এখন না করবেন না।

রাণী আর কিছু বলতে পারল না। অগত্যা শ্রাবণের সাথে পা বাড়ালো। হাটতে হাটতে দুজনে বড় একটা পাহাড়ের উপরে উঠে পড়ল। শ্রাবন চূড়ায় গিয়ে বসলো। রাণীও দেখাদেখি পাশে বসে পড়ে।

এগুলো আপনার জন্য। ধরুন।
ওয়াও বনফুল So sweet
হুম। White and yellow mixed colour Matching with your dress Wear it
How?

শ্রাবন একটা ফুলের সাথে আরেকটা ফুল গেথে গেথে ছোট্ট মালা করে। হাত টা দিন বেধে দেই। রাণী হাত এগিয়ে দিতেই চোখে পড়ে যায় Pink diamond চুর টা। চুর টা দেখে শ্রাবণের মুখে হাসি ফুটে ওঠে। তার রাণী সাহেবা তার দেওয়া চুর হাতে পরে আছে। চুর টা অনেক সুন্দর তো। গিফটের?
হুম।

এরকম চুর সচারাচর পাওয়া যায় না। মনে হচ্ছে কেউ স্পেশালি অর্ডার দিয়ে আনিয়েছে। এই হাতে থাক ঐ হাতটা দিন।
রাণী অন্য হাত দিলে যত্ন করে হাতে পরিয়ে দেয়।
এই হাতেও গিফ্ট ঐ হাতেও গিফ্ট। মনে হচ্ছেনা আপনার হাত দুটো বেধে নেওয়া হলো?
আপনি বেশি কথা বলেন।

তাও তো আপনার মুখ থেকে দুটোর বেশি কথা বের করতে পারছিনা।
আমি নই অরফানেজ পরিদর্শন করতে গিয়েছিলাম কিন্তু আপনি এখানে কেন এলেন?
পড়ন্ত বিকেলে সুন্দরী রমনীর সাথে পাহাড়ের উপরে বসে সূর্যাস্ত দেখতে। যার পরপরই নামবে ঘন কুয়াশা। হবে শীতল মেঘের আনাগোনা।

অন্ধকারে পাহাড়ের রাস্তা অনেক ভয়ংকর।
রাণী চৌধুরানী তো পাশেই আছে।
রাণী আর কিছু না বলে সৌন্দর্য উপভোগ করতে থাকলো।

অনবরত একের পর এক ফোন বেজেই চলেছে। রাতে আরো কিছু প্রেজেন্টেশন রেড়ি করতে গিয়ে লেট করে ঘুমিয়েছে। ঘুমের ঘোরে বিছানায় খুঁজে নেয় ফোন।
~ হ্যালো
~ রাণী সাহেবার ঘুম এখনও কাটেনি তাহলে।

~ ওহ মি শ্রা
~ শ্রাবন। অনেকক্ষণ ওয়েট করিয়েছেন। ডোর খুলুন।
~ মানে?
~ অনেক্ষণ থেকে দাড়িয়ে আছি তাড়াতাড়ি খুলো। পা ব্যথা ধরে গেছে। ফাস্ট।

শ্রাবনের এরকম কথায় রাণী বিছানা ছেড়ে ওঠে যায়। মাথায় একটা ওড়না পেচিয়ে নেয়। দরজা খোলে অবাক হয়ে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকে। প্রথমত, দরজায় শ্রাবন রেড় কালার একটা টি~র্শাট আর ব্লেক কালার থ্রি~ কোয়াটার প্যান্ট পরে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। দ্বিতীয়ত, হোটেলের বেলকনি দিয়ে দেখা যাচ্ছে এখনো কিছুটা বাইরে অন্ধকার আছে।

শ্রাবণ এক ধেনে রাণীকে দেখছে। আজ এই প্রথম রাণীকে সে গাউন আর হিযআপ ছাড়া দেখছে। মাথায় ওরনা দেওয়া, লং শার্ট, ব্লু গ্যবাটি প্যান্ট। ঘুম থেকে ওঠা স্নিগ্ধ চেহারা। এই মেয়ে যেভাবেই থাকুক না কেন সৃষ্টির সব সৌন্দর্য তার কাছে হার মানতে হবে।

শ্রাবণ ঘোর কাটিয়ে খপ করে রাণীর হাত ধরে দৌড়ে নিচে নামতে থাকে। আরে আরে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন? মি শ্রাবন হাত ছারুন। মি শ্রাবণ
একটু চুপ করে চল আমার সাথে। এমনিতেই অনেক লেট করে ফেলেছ। দৌড়াও আমার সাথে।
দৌড়াব না আমি। ছাড়ুন।

বালিতে দৌড়ালে শরীর ভালো লাগবে। নাও ছেড়ে দিলাম। বস এখানে বলে শ্রাবন বসে পড়ল।
~ বীচে এলাম কেন এখন? মাত্র তো আলো ফুটছে। রাণীও বসে পড়ল শ্রাবণের পাশে।
~ সূর্য উদয় দেখব বলে। মনে তো হচ্ছে না কখনো দেখেছ। তাই নিয়ে এলাম। আজ দেখ। অসাধারণ লাগবে।
~ এটাও কি গতকালের মতই একটা ইচ্ছা?

~ হুম। যার সাথে সূর্যাস্ত উপভোগ করলাম তার সাথে সূর্য উদয় না উপভোগ করলে জীবনে কিছু অপূর্ণ রয়ে যাবে।
রাণী আর কিছু না বলে সূর্য উদয় উপভোগ করতে থাকে। সূর্যের হালকা রশ্মি রাণীর সৌন্দর্য আরও কয়েক গুনে বাড়িয়ে দিয়েছে। কপালে ফোটা ফোটা জমা ঘাম গুলো রোদের আলোয় চিকচিক করছে।

~ সূর্য টা সামনের দিকে পাশে নয়। কাল ও এভাবেই ছিলেন। না তাকিয়েও বুঝতে পারি। কি দেখেন এভাবে?
~ কাল দেখেছিলাম গোধুলি লগ্নে উজ্জল এক তরুণীকে যার সবকিছু জুড়ে বিরাজ করছিল অদ্ভুত এক মুগ্ধতা। সেই মুগ্ধতার প্রত্যেকটা পরশ লুটে নিচ্ছিলাম আমি।

আর আজ দেখছি ভোরের আলোয় সদ্য ফোটা এক পদ্মকে যার চারপাশে সৌন্দর্যেরা আনা গোনা করছে আর সেই সৌন্দর্য গুলো আমিই লোটে নিচ্ছি।
~ পছন্দ করেন আমাকে?
~ প্রচুর।

~ সেই অদ্বিই থাকেন। আর এগুবেন না। সামনের দিকে এগোনো মুর্খতা ছাড়া আর কিছুই নয়।
~ that is my business Whatever চলুন ব্রেকফাষ্ট করা যাক।
~ ফ্রেস হতে হবে।
~ একদিন না হলে কিছুই হবে না।

চলুন বলে শ্রাবণ এক টিনের চাল যুক্ত আগলা রেস্তোরাঁয় গেল। কয়েকটা চেয়ার আর দুটো টেবিল রাখা আছে। একজন আধবয়সী মহিলা রান্না করছে আর একটা বাচ্চা ছেলে সার্ভ করছে। রাণীকে একটা চেয়ার টেনে বসতে বলে নিজেও পাশে বসে পড়ে। রাণী মনে মনে খুব ইনজয় করছে। এরকম ভাবে তার কোন দিন ইনজয় করার সুযোগ হয়ে ওঠেনি। তার পর আবার ২ দিনের পরিচয়ের বিজনেস পার্টনার এর সাথে।

~ খালা ২ টা চিংড়ি ভাজা। রাণী সাহেবা আর কি নিবেন?
~ চিংড়ি ভাজা। আপনি ব্রেকফাষ্টে চিংড়ি ভাজা নিবেন?
~ আমি না তুমিও নিচ্ছ। ট্রিট টা আমার ওকে। আর কিছু?
~ না।

১১ টায় মিটিং শেষ করে। শ্রাবণ রেস্টুরেন্ট থেকে বের হওয়ার সময় রাণী পেছন থেকে ডাক দেয় ~
~ সবকিছুর জন্য থ্যাংকস।
~ ওয়েলকাম। ঢাকায় ফিরে দেখা হচ্ছে।

লেখা – লাবিবা তানহা লিজা

চলবে

(পাঠক আপনাদের ভালোলাগার উদ্দেশ্যেই প্রতিনিয়ত আমাদের লেখা। আপনাদের একটি শেয়ার আমাদের লেখার স্পৃহা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আমাদের এই পর্বের “রাণীমা – valobashar golpo kotha” গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম। ধন্যবাদ।)

আরো পড়ূন – রাণীমা (শেষ খণ্ড) – bhalobasar golpo kotha

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *