এলিয়েন রহস্য পর্ব ৪

এলিয়েন রহস্য পর্ব ৪ – এলিয়েন মানবের গল্প | Alien Story

এলিয়েন রহস্য পর্ব ৪ – এলিয়েন মানবের গল্প: গত পর্বে আমরা শ্রাবণ ও স্নেহার হতাশা থেকে ফিরে দাঁড়াবার মুহুর্ত দেখেছি। দুজনের হাতে বাসাটাকে সাজানো দেখেছি। এরপরে দুজনে ঘুরতে যাওয়ার প্লান করলে একটি অদ্ভুত জায়গার খোঁজ পায়। স্নেহার স্বপ্নের ঘটনা যেন একটু একটু করে বাস্তবের দিকে যাচ্ছে। দুজনে বেশ ভয়ে থাকলেও এই রাতে তাদের দুজনের একটা থাকার জায়গা চাই। তাই তারা একটি প্রাসাদের সন্ধান পাওয়ায় সেখানে যেতে চায়। কিন্তু কি হবে যদি তারা এখানে যায়? চলুন রহস্যভেদ করি।

তাইসনের রাজ্যের উদ্দেশ্যে যাত্রা

এই মুহূর্তে স্নেহা যেন শ্রাবণকেও বিশ্বাস করতে পারছে না।

শ্রাবণ স্নেহার হাত ধরে হ্যাঁচকা টান দিয়ে রাস্তার এক পাশে নিয়ে যেতে শুরু করে। পাকা রাস্তার দুপাশে যতদূর চোখ যায় শূন্য জমি। সিজন এলে এই খালি জমিতে হয়ত চাষাবাদ করা হয়। স্নেহা হাত ছাড়ানোর জন্য বার বার জোড়াজুড়ি করতে থাকলেও ক্লান্ত শরীর নিয়ে শ্রাবণের বজ্রমুষ্ঠি এর কাছে নিজেকে পা বেঁধে ঝুলিয়ে রাখা মুরগীর ন্যায় নিরুপায়ভাবে আবিষ্কার করে। শ্রাবণ স্নেহাকে সতর্ক করে, সে যেন ভুলেও কোন প্রকারের চিৎকার চেঁচামেচি না করে।

স্নেহাকে ঠেলে রাস্তার ঢালের উপর শুইয়ে দেয় শ্রাবণ। নিজেও উপুর হয়ে স্নেহার পাশে শুয়ে পরে। ঠিক তার ১ মিনিট পরই রাতের অন্ধকার ও নিরবতা কাটিয়ে কয়েকটা ট্রলি গাড়িকে সু-উচ্চ শব্দে ছুটে আসতে দেখা যায়।

বালি, ইট এবং সিমেন্ট বোঝাই ট্রলিগুলো গর্জন করে করে লাইন বেঁধে ছুটে চলেছে মিডিয়াম গতিতে। এদের সবার গন্তব্য তাইসন এর রাজ্য।

এক পর্যায়ে স্নেহাদের সামনে থেকে প্রথম গাড়িটি ক্রস করে চলে যায়। হেডলাইটের আলো থেকে নিজেদের আড়াল করতে দুজনেই মাথা নুইয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে রাখে। একের পর এক ট্রলি পর্যায়ক্রমে তাদের ক্রস করে চলে যেতে থাকে। সব শেষে দেখা যায়, একটি ইট বোঝাই ট্রলিকে। শ্রাবণদের ক্রস করা মাত্রই ঝটপট উঠে পরে শ্রাবণ। স্নেহাকে হ্যাঁচকা টানে টেনে তুলে ট্রলির পিছনে গায়ের সর্ব শক্তি দিয়ে দৌড় লাগায়। স্নেহার হাত যেন টান খেয়ে ছিড়ে যাচ্ছিল। কোন রকম সামলে নিয়ে সেও ছুটে চলে শ্রাবণের সাথে।

অবশেষে শেষ ট্রলিটির পেছনের একটি অংশ ধরে ঝুলে পরতে সক্ষম হয় শ্রাবণ। সাথে কোন রকমে স্নেহাকেও টেনে তুলে। এই ট্রলিই তাদের নিয়ে যাবে তাইসনের রাজ প্রাসাদে। আস্তে আস্তে ট্রলির উপরে বেয়ে উঠে বসার একটা জায়গা করে নেয় তারা।

হঠাৎ স্নেহার চোখ যায় ড্রাইভার সিটের পাশে লাগানো লুকিং গ্লাসের দিকে। শ্রাবণকে প্রশ্ন করে,

স্নেহাঃ আচ্ছা, যারা গাড়ি চালাচ্ছে তারা রাতের বেলায়ও এরকম সানগ্লাস পড়ে আছে কেন? শ্রাবণও এরপরে ব্যাপারটা লক্ষ করে। একটু ঘেটে ঘুটে বুঝতে পারে চালক আসনের দুজনের চোখেই সানগ্লাস লাগানো।

খোলা মাঠের ভিতরে সরু একটা রাস্তা দিয়ে পিঁপড়ার মত সারিবদ্ধভাবে ছুটে চলছে ট্রলিগুলো। প্রচন্ড বাতাসে স্নেহার চুল উড়ছে। বাতাস খুব অদ্ভুত একটা জিনিস। মানুষের প্রচন্ড মন খারাপের সময়েও দমকা বাতাস পরম মমতায় গায়ে হাত বুলিয়ে মন ভাল করে দেয়ার আশ্চর্য শক্তি রাখে। একটু আগেও ভয় পাওয়া ব্যাপারটা স্নেহা ভুলে গেছে একদমই। এডভেঞ্চার তো এমনই হওয়া উচিৎ, কিছু সময় ভয় কিছু সময়ে ভাল লাগা, আবার ছোট ছোট সমস্যার সমাধানের আনন্দ।

ট্রলিতে শ্রাবণ ও স্নেহার কথোপকথন

স্নেহার মেজাজ ফুরফুরে দেখে শ্রাবণ মনে মনে বেশ খুশি হয়। আকাশে চাঁদের আলো খুবই কম। তবুও সে আলোতে মেঘের উপস্থিতি টের পাওয়া যায়। শ্রাবণ কবিতা ধরে,

প্রিয় মেঘ,
আমার থেকে এক মুঠো ভালোবাসা নিও।
তোমার বুকের বিজিলী চমক,
আমার চোখে দিও।

ট্রলির ইঞ্জিনের বিদঘুটে শব্দের ভেতরেও স্নেহা শ্রাবণের কবিতাটা ঠিকই শুনতে পায়।

হঠাৎ স্নেহার একটা কথা মনে পরে যায়।

সে শ্রাবণকে প্রশ্ন করে-

স্নেহাঃ আচ্ছা, তুমি বলেছিলে তুমি তোমার জীবনে মাত্র দুবার আশ্চর্য হয়েছ। একবার প্রথম তোমার জন্মের ব্যাপারে শুনে, কিন্তু দ্বিতীয়বার কখন কিভাবে হয়েছিলে, সেটা তো বলো নি?

শ্রাবণঃ যেদিন আমি সুইসাইড এটেম্পট করি।

৬ তলা বিল্ডিং থেকে লাফ দেই। স্পষ্ট মনে আছে, আমার মাথাটা রাস্তার উপরে আছড়ে পরেছিল। ব্যথা অনুভব করার আগে টের পাই চড়চড় করে আমার খুলিটি ফেটে যাচ্ছে। কিন্তু তারপর আর আমার কিছু মনে নেই। যখন জ্ঞান ফেরে, আমি দেখতে পাই একটা কালো রাস্তার উপরে আমি শুয়ে আছি। চারপাশে রক্তের বন্যা বয়ে গেছে। আমার পুরো গা সাদা ফিতে দিয়ে, মোড়ানো, মমিদের গা যেরকম সাদা ফিতেতে মোড়ানো থাকে, একদম সেরকম। শুধু চোখ দুটো উন্মুক্ত। হাত পা প্রচন্ড ব্যথা করছে। উঠে দাঁড়াতে গিয়েও দাঁড়াতে পারি না। ব্যর্থ হই। আমার গায়ের সাদা পোশাক রাস্তায় থাকা রক্তে ভিজে যাচ্ছে।

হঠাৎ করেই কোথা থেকে যেন ৭ জন মানুষ আসে। তাদের গায়েও ঠিক আমার মতই পোশাক। উচ্চতাও আমার মতই তবে তাদের সবার হাতেই একটি করে তরবারি। তরবারি গুলো সবুজ আলোতে জ্বল জ্বল করছিল। আমার তখন মনে হয়েছিল আমার হাতেও হয়ত এমন কিছু একটা থাকার কথা। আমি আশেপাশে তাকাই। আমার থেকে একটু দূরেই দেখতে পাই ঠিক ওদের তরবারির মতই একটা তরবারি কয়েকটুকরো হয়ে ভেংগে আছে। সাদা পোশাকের সাতজন মানুষ ইতিমধ্যেই আমার কাছে চলে এসেছে। আমি চোখ বন্ধ করে ফেলি। ভেবেছিলাম হয়ত জীবন যুদ্ধের শেষ এটাই। ওরা এসে আমার গলাটা কেটে ফেলবে।

এভাবেই হয়ত মানুষ হেরে যায়। কিন্তু না ওরা আমকে ক্রস করে সামনে এগিয়ে যায়। আমিও কোন রকম হামাগুড়ি দিয়ে উঠে ওদের পিছনে পিছনে যেতে থাকি। একটা পর্যায়ে ওরা ওদের হাঁটা থামিয়ে দেয়। আমি খেয়াল করি ওদের সামনে দাঁড়িয়ে আছে কালো কাপড়ে সমস্ত শরীর মোড়ানো একজন বৃহদাকার লোক। যার চেহারা আমার মত সাদা কাপড়ে ঢাকা ছিল না। মুখে ছিল রাক্ষসের মত হাসি। হাতে ছিল অনেক লম্বা একটা ধারালো অস্ত্র। যেটার গা থেকে লাল রক্ত চুইয়ে চুইয়ে পড়ছিল।

আমি দ্বিতীয়বার আশ্চর্য তখনই হয়েছিলাম, যখন দেখেছিলাম সেই কালো পোশাকের লোকটির চেহারা একদম হুবুহু আমার মতই। আমার মতই তার দুই ভ্রু এর ভিতরে ছোট একটা কাটা দাগ আছে। সাদা কাপড়ের সাতজন লোক তার সামনে উপস্থিত হতেই আমার মত চেহারার কালো পোশাকের ব্যক্তি তার সেই লম্বা ধারালো অস্ত্র নিয়ে হিংস্রভাবে তাদের উপর আক্রমণ করল। মুহুর্তের মধ্যেই কয়েক খন্ড হয়ে গেল তাদের দেহ। রক্তের বন্যায় ভেসে যাচ্ছে চারদিক। ক্ষত বিক্ষত আমি আর তার মাঝে কেউ নেই এখন। আস্তে আস্তে সে এগিয়ে আসতে থাকে আমার দিকে।

এসেই হুংকার দিয়ে বলে-
শ্রাবণ, তোমার জন্য আমি অনেক লম্বা সময় ধরে অপেক্ষা করছি।

আমি জিজ্ঞেস করি, কে তুমি?

সে জবাব দেয়, আমি তোমার ডার্কনেস। মোকাবেলার জন্য তৈরি হও।

এ পর্যন্ত বলে থামে শ্রাবণ। স্নেহা হা করে এতক্ষণ শ্রাবণের কথা শুনছিল। হঠাৎ থামায় জিজ্ঞেস করে, কি ব্যাপার, থামলে কেন? তারপর কি হয়েছিল?

শ্রাবণ উত্তর দেয়, সেটা অন্য একদিন বলা যাবে।

তাইসন ও ডার্ক হর্সের রাজ্যে দুজন

ঐদিকে দেখো- স্নেহা শ্রাবণের আংগুলের ইশারায় রাস্তার পাশে তাকায়। এতক্ষণ রাস্তার পাশে চোখ গেলে ধু ধু করা ফাঁক প্রান্তরের দেখা পাওয়া যেত। কিন্তু এখানে আর ফাঁকা জায়গা নেই। যতদূর চোখ যায় শত শত তাবু গাড়া। যেন কোন যুদ্ধের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। স্নেহা বেশ অবাক হয়। এমন একটা জায়গা বাংলাদেশে আছে, অথচ এটা সম্পর্কে কেউ জানে না। অন্তত টিভিতে দু একটা প্রতিবেদন ও হতে পারত। কোন একটা রহস্য তো আছেই। তাবু গুলোর মাঝ বরাবর চলাচল করার জন্য একটা ফাঁকা জায়গা রাখা হয়েছে রাস্তার মত।

হাজার হাজার তাবুর সমুদ্র শেষ হওয়ার পরে শুরু হয়েছে ছোট বড় ইমারত। গম্বুজ। এত সুন্দর করে সবকিছু বানানো, যেন চোখে একদম লেগে থাকে। হালকা চাঁদের আলোয় সেগুলোকে একটু ভৌতিক ও লাগছে কেমন যেন।

স্নেহা বুঝতে পারে ওরা হয়ত পৌঁছে গিয়েছে প্রায়। আরো কয়েক মিনিট পরে ট্রলি গুলো আস্তে আস্তে থেমে যায়। বিশাল একটি গেট চোখে পরে তাদের। কয়েকজন মিলে গেট খুলে দেয়। ট্রলি গাড়ির সাথে শ্রাবণ এবং স্নেহাও ভিতরে প্রবেশ করে। বেশ অবাক হয় স্নেহা। এই রাতেও মানুষ কাজ করে চলেছে। সবার চোখেই কালো সানগ্লাস। কিন্তু তারা রাতের অন্ধকারেই নিজেদের কাজ চালাচ্ছে। কোন প্রকারের আলোর সাহায্য নিতে হচ্ছে না।

ট্রলি থেকে দুজনেই নামে। সবার মাঝখান দিয়ে হেঁটে হেঁটে এগুতে থাকে। তাদের দিকে কেউ ফিরেও তাকাচ্ছে না। সব মানুষগুলো কেমন যেন রোবটের মত। বেশ বড় এড়িয়া জুড়ে ছোট বড় প্রাসাদের মত বিল্ডিং। এই বড় বাউন্ডারির ভিতরে ফুলের বাগান, সবজি খেত, খুব সুন্দর দিঘী, বিলাসী নৌকা সব কিছুই রয়েছে। রাত তখন বেশ গভীর। এখানের আশেপাশে তাকালে চোখে পরে একটা সুউচ্চ সুন্দর বিল্ডিং। বিল্ডিং না বলে রাজপ্রাসাদ বলাই ভাল। ওখানেই যে তাইসন এবং তাহিরের বসবাস , সেটা আঁচ করতে পারবে যে কেউই।

শ্রাবণ এবং স্নেহা টর্চ লাইটের আলো ফেলে বিল্ডিংটার দিকে এগোয়। পথে যেতে যেতে চোখে পরে তাইসনের বিভিন্ন স্টাচু। সবথেকে বড় স্টাচুটা একটা ঘোড়ার। ঘোড়ার স্টাচুর দিকে চোখ পরতেই কলিজা ধক করে ওঠে স্নেহার। সেদিনের স্বপ্নের কথাটা মনে পরে তার। লুকিয়ে শ্রাবণের চেহারার দিকে তাকায় স্নেহা। কিন্তু কিছুই আঁচ করতে পারে না সে। এই এলাকাটা কেমন যেন একটু বেশি ই অন্ধকার। বড় বড় গাছপালার ডাল দিয়ে আড়াল করা সব কিছুই। বাম দিকটায় যেমন রোবটের মত মানুষদের আনাগোনা চোখে পরে বেশ, বিভিন্ন কাজ করে চলেছে তারা, ডান পাশটা কিন্তু তেমন নয়। শুনশান। নিরব। যেন একটা শীতল মৃত্যুপুরী।

শ্রাবণ ও স্নেহার পা ফেলার শব্দ ও মনে হয় অনেক জোড়ে আওয়াজ তুলছে এতটাই নিরব চারদিক।

রাজপ্রাসাদে অভ্যর্থনা

এভাবে কিছুক্ষণ হাঁটার পরে চোখে পরে সেই রাজ প্রাসাদের মত বড় বিল্ডিংটা। সামনে দিয়ে খুব সুন্দর হাতের কারুকাজ করা। কিন্তু এই কারুকাজগুলো মনে হয় কিছু একটা বলতে চায় মানুষকে। হয়ত এরা মানুষকে ভয় দেখায়। ভাগো! তোমরা এখান থেকে ভাগো।

দরজায় দুজন প্রহরী। তাদের চোখে চশমা নেই। অনেক দূর থেকে শ্রাবণ ও স্নেহাকে দেখেই তারাও এগিয়ে আসে। দুজন বিশালদেহি ছেলে। স্নেহাদের চোখে চশমা না দেখে বেশ অনেকটা অবাক হয় তারা। জিজ্ঞেস করে-

তোমরা এই এলাকায় ঢুকেছ কেন? এত বড় সাহস কে দিলো?
আর এত রাতে এখানে কি করছো? সাংবাদিক নাকি আইনের লোক! যেই হও না কেন ঢুকেছ যখন আর নিস্তার নেই। তাবুর বাসিন্দা হতে রেডি হয়ে যাও।

শ্রাবণ অনুনয়ের সুরে জানায়, তাহির এবং তাইসন শ্রাবণের ভাই হয়। তাদের কাউকে গিয়ে বলতে যে শ্রাবণ এসেছে। তাহলেই চিনবে।

একজন দ্বাররক্ষক ভেতরে ঢুকে যায়। বের হয়ে আসে একজন লোক কে নিয়ে। রাতের আঁধারে দূর থেকে না চিনলেও কাছে আসার পরই চিনতে পারে, এ ব্যক্তিটি তো তাহির।

শ্রাবণকে দেখেই ছুটে এসে বুকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে দেয় তাহির। অনেক বছর পরে.. আবার দেখা..

তাহির ইমোশনাল হয়ে কান্নাকাটি শুরু করলেও শ্রাবণ বরাবরের মতই নিষ্প্রাণ। তবে সে স্নেহাকে দেখে একটু ইতস্তত করতে থাকে। আসলে তাহির ভেবেছিল শ্রাবণের স্ত্রী হলো স্নেহা। তাহির বেশ অনেক্ষণ বাইরে দাঁড়িয়ে দাঁডিয়ে কথা বলছে। ভিতরে যাওয়ার নাম মাত্র করছে না। স্নেহা আগ বাড়িয়ে বলে, আমরা অনেক দূর থেকে এসেছি। অনেক ক্লান্ত। একটু বিশ্রাম নেয়ার ব্যবস্থা করা যাবে? তাহির মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলে, হ্যাঁ দাঁড়াও। আমি এক্ষুনি আসছি। ছুটে তাহির প্রাসাদের ভিতর চলে যায়। গিয়েই হুংকার ছাড়ে। সকল মেয়েরা..

তোমাদের আজ ছুটি। তোমরা সবাই নিজ নিজ রুমে গিয়ে বিশ্রাম নাও। আমি না বলা পর্যন্ত কেউ বাইরে আসবে না।

তাহিরের কথা মত ওখানে সেবাযত্ন করার কাজে নিয়োজিত মেয়েরা সবাই বিশ্রাম করার জন্য চলে যায়। তাহির এরপর বাইরে এসে স্নেহা ও শ্রাবণকে ভিতরে নিয়ে যায়। শ্রাবণের চেয়ে বয়সে ১৩ বছরের বড় তাহির। তাইসনের কথা জিজ্ঞেস করে শ্রাবণ। তাহির উত্তর দেয়, আগে বল তোমরা এসেছ কিভাবে এখানে? শ্রাবণ বলে ট্রলিতে চেপে। তাহির কোন কথা বলে না। শুধু বলে ঐ পাকা রাস্তা শুরু থেকে এ পর্যন্ত সব কিছুর মালিক তাইসন। শ্রাবণ প্রশ্ন করে – এত টাকা পয়সা কিভাবে পেলে? তাহির উত্তর দেয়,
সব কিছুই তাইসনের পরিশ্রমের ফল।

তাইসনের রাগ ও প্রশ্নবিদ্ধ স্নেহা

স্নেহা প্রশ্ন করে ওখানের তাবু গুলো কিসের?

তাহির: আমাদের এখানে যারা কাজ করে তাদের বিশ্রামের জন্য ঐ তাবুগুলো বানানো।
এতগুলো মানুষের খাওয়া দাওয়া ভরণ পোষন, এত টাকা কোথায় পায় তাইসন। মনে খটকা লাগে স্নেহার। স্নেহা ও শ্রাবণ দুজনেই সে রাতে গোসল করে ফ্রেশ হয়। খাওয়া দাওয়াও ছিল আসলেই রাজকীয় টাইপের। পেট পুরে খেয়ে ঘুম দেয় দুজিনেই। অনেক ক্লান্তির ঘুম। স্নেহা একদম পুরোপুরিভাবে ঘুমে তলিয়ে যায়।

শ্রাবণের ঘুম আসছে না এদিকে। মাথার কাছে দুজন বড় হাতপাখা দিয়ে ক্রমাগত বাতাস করে চলেছে। স্নেহা এক পা শ্রাবণের গায়ে তুলে দিয়ে বেঘোরে ঘুমুচ্ছে। সব কিছু মিলিয়ে পরিবেশটা শ্রাবণের ঘুমানোর মত না। তবুও একটু চোখ বন্ধ করে সে। আর তাতেই ঘটে আশ্চর্যজনক একটা ঘটনা। চোখ বন্ধ করতেই সে দেখতে পায়। তাইসন আলিসান একটি জাজিমে বসে আছে। তার গায়ে বড় পাখা দিয়ে বাতাস দিচ্ছে দুজন বিবস্ত্র মেয়ে। তাইসনের সামনেই মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে আছে তাহির।

তাইসন চিৎকার করে বলছে, তুমি খুব ভালো করেই জানো তাহির, শ্রাবণ কে আমার সহ্য হয়না। তুমি ওকে আমার প্রাসাদে কেনো নিয়ে আসলে!

তাহির উত্তর দেয়, ও তো আমাদেরই কাছের কেউ একজন।

“চুপ থাকো তুমি, বেশি বাড়াবাড়ি করলে বুড়ো বুড়ির মত তোমাকেও একদম উধাও করে দিব। ওদেরকে আর আমার এড়িয়ার বাইরে যেতে দেয়া যাবে না।
তাহির হাত জোড় করে তাইসনের পায়ের সামনে লুটিয়ে পরে, “তুমি প্লিজ ওদের কোন ক্ষতি করো না, আমি বুঝিয়ে বলে দিব ওরা যেন বাইরের কাউকে না বলে।
পা দিয়ে ধাক্কা দিয়ে তাহির কে ফেলে দিয়ে তাইসন বলে, কাল সন্ধ্যের আগ পর্যন্ত যা খাওয়ানোর শ্রাবণ আর ওর বৌকে খাইয়ে নে। কালকের রাতই হবে ওদের জীবনের শেষ রাত। (চলবে)

পরের পর্ব- এলিয়েন রহস্য পর্ব ৫ – এলিয়েন মানবের গল্প

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *