এলিয়েন রহস্য পর্ব ২

এলিয়েন রহস্য পর্ব ২ – এলিয়েন মানবের গল্প | Alien Story

এলিয়েন রহস্য পর্ব ২ – এলিয়েন মানবের গল্প: গত পর্বে আমরা দেখেছি এক অপরূপ সুন্দরি মেয়েকে একদল যুবক রাতের আঁধারে জোর করে ভোগ করে ফেলে রেখে যায়, পরে সেই যুবকদের নিম্নাঙ্গের পচন ধরে। এদিকে ঐ মেয়েটিকে একজন কৃষক উদ্ধার করে এবং বাসায় নিয়ে আসে। মেয়েটি একটি ফুটফুটে বাচ্চা শিশু প্রসব করে। এরপর কি হবে তা জানার জন্য আমাদের অন্য এক রহস্যের মধ্যে ঢুকতে হবে। চলুন তবে রহস্য উন্মোচন করার চেষ্টা করি।

বাড়িওয়ালা শফিক সাহেব

বিবাহের মাত্র ৮/৯ দিন আগে একটা ছেলের সাথে বাড়িওয়ালার মেয়ের কিছু অশ্লীল ভিডিও বের হয়েছে। কিন্ত এটা জেনে অবাক হবেন, বিয়েটা যে ভেঙ্গে যাবে সেরকম কিছুই ঘটে নি। শুধুমাত্র যৌতুকের পরিমাণটা বেড়ে যায় পাহাড় সমান।

মিরপুর ১২ এড়িয়ায় তিনটে পাঁচতলা ফ্লাটের মালিক শফিক সাহেব। চারদিকে নাম ডাক আছে ভালোই। তবে সুখে শান্তিতে সম্মানের সহিত দিন কাটানোটা তার সমসাময়িক প্রতিবেশীদের গা জ্বলার কারণ। আজ তার মেয়ের কারণে হয়ত এতদিনের সম্মানটা ধুলোয় মিশে যেতে যাচ্ছিল। চারদিকে বিয়ের কার্ড বিলিয়ে একদম শেষ সময়ে এসে এমন একটা পাপ কাজের প্রকাশ ঘটলো যা দেখার পর তার মেয়েকে বউ হিসেবে হয়ত কেউই মেনে নিত না।

কিন্তু তার একমাত্র বন্ধু পুত্রবধূ হিসেবে শফিক সাহেবের মেয়ে স্নেহাকে মেনে নিতে আপত্তি জানান নি। তবে একটু আবদার করেছেন। তার ছেলের অভিমান ভাংগানোর জন্য লাখ ৫০ এর মত টাকা দিলেই হবে আপাতত।

টাকা পয়সার কথা একদমই না ভেবে শফিক সাহেব এক কথায় রাজী হয়ে বন্ধুকে কৃতজ্ঞতা জানাতেও ভুললেন না। তিন ছেলে, দুই মেয়ে আর স্ত্রী ছাড়া তেমন কোন আত্মীয় স্বজন নেই শফিক সাহেবের।

ছেলেগুলো সব বিবাহিত। মেয়েদের ভিতর স্নেহাই সবথেকে বড়। একসময়ে কোটি কোটি টাকা লেনদেন করা শফিক সাহেব বার্ধক্যের অক্ষমতা প্রথমবার বুঝতে পারলেন মাত্র ৫০ লাখ টাকা সংগ্রহ করতে গিয়ে। একে তো তার হাতে সময় কম, অন্যদিকে তার ছেলেরা বেঁকে বসেছে। এত টাকা দিয়ে তাদের বোনকে ঐ ছেলের কাছে বিয়ে দেয়ার দরকার নেই। মধ্যবিত্ত পরিবারের কারো কাছে বিয়ে দেয়া যাবে চাইলেই।

শফিক সাহেব কিছুতেই ছেলেদের বুঝাতে পারছেন না বিয়ের কার্ড বিলি করা হয়ে গেছে। বিয়েটা না হলে মানুষ বিয়ে ভাংগার কারণ জানতে চাইবে আর তারপর সব কিছু ফাঁস হয়ে যাবে। শেষ বয়সে এসে নিজের সঞ্চিত সব টাকা পয়সা ছেলেদের নামে লিখে দেয়ার পরিণামটা তিনি হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন এখন।

ভাড়াটিয়া শ্রাবণ

তাও হাল ছাড়ার পাত্র তিনি নন। নিজের কাছে যে একদমই টাকা নেই তাও নয়। ৩৫ লাখ টাকার মত নিজেই ম্যানেজ করে ফেলেন তিনি।

তিনটি ৫ তলা বাড়ির সব ভাড়াটিয়াদের জোর নির্দেশ দেন যথাসময়ে বকেয়া সহ সকল টাকা পরিশোধ করে দেয়ার জন্য।

এই তিনটি বাড়ির, কোনো এক ফ্লাটের চতুর্থ তলায় থাকতো শ্রাবণ নামের কেউ একজন।

বাসা ভাড়া পরিশোধ করার নোটিশটা তার কাছেও আসে। মানিব্যাগ খুলে গুনে দেখে সেখানে মাত্র ৮ হাজার টাকা রয়েছে। অথচ বাসা ভাড়া ১৫ হাজার। চলমান মাসের ১ তারিখেই এ ফ্লাটে উঠেছিল শ্রাবণ। অনলাইনের টু লেট গ্রুপের মাধ্যমে এক লোকের সাথে কথা হয় তার, তিনিও শেয়ারে ফ্লাট খুঁজছিলেন। পরিবার নিয়েই থাকবেন। তার সাথে কথা বলে মোটামুটি খারাপ লাগেনা শ্রাবণের।

দু জন মিলে ২৭ তারিখ বাসা খুঁজতে খুঁজতে এই বাসাটাই পছন্দ হয়েছিল তাদের। ছিমছাম একটি সুন্দর বাসা। অপর লোকটা মাঝবয়সী একজন মানুষ। তিনি বাড়িওয়ালা শফিক সাহেবকে জানান, এডভান্স তিনি পুরোটা করতে পারবেন না এখন। আগামী মাসের ১০ তারিখ পুরো ভাড়াটা দেয়ার সময় এডভান্সের টাকাটাও একসাথে পরিশোধ করবেন। অন্য কাউকে যাতে বাসাটা ভাড়া দেয় সেজন্য মাঝবয়সী লোকটাই ৫ হাজার টাকা দিয়ে ফ্লাটটা বুকিং করে রেখেছিলেন।

মাসের শুরুতেই শ্রাবণ নতুন বাসায় উঠে পরে। মাঝবয়সী লোকটা জানায় সে আরো কিছুদিন পরে শিফট করবে।

আজ ৮ তারিখ। সকালে তার ফোনে ফোন দিয়েছিল শ্রাবণ। একটা পিচ্চি মেয়ে কাঁদতে কাঁদতে জানালো তার বাবা আর এ পৃথিবীতে নেই। শোনার পরে শ্রাবণ ফোনটা কেটে টেবিলের উপরে রেখে একটা ঘুম দেয়। ঘুম ভাংগে বাড়িওলার ডাকে। কাল টাকা দিতে হবে তাকে। শ্রাবণের কাছে আছে মাত্র ৮ হাজার টাকা। বাকি ১৯ হাজার টাকা কোথা থেকে পাবে সে ভাবতে চাচ্ছে না আপাতত।

বাড়িওয়ালার মেজাজ খুব গরম হয়ে আছে। কাল টাকাটা না দিতে পারলে হয়ত উল্টাপাল্টা কথা বলবে। শ্রাবণের এই একটা জিনিসে খুব এলার্জী। কারো গরম গরম কথা শুনতে একদমই ভালো লাগে না তার।

অবশ্য বাড়িতে কল করলে টাকাটা ম্যানেজ হয়ে যাবে। কিন্তু গত কয়েকবছর বাড়িতে কখনোই টাকার জন্য ফোন করা হয়নি। হিসেব মত নির্দিষ্ট পরিমান টাকা প্রতিমাসে চলে আসে তার কাছে। মাথা আপাতত ফাঁকা হয়ে আছে শ্রাবণের। অনেক আগে থেকেই সে এ দুনিয়াতে থেকেও যেন নেই। আবার এরকম একটা দুনিয়াবি ঝামেলা এসে ভর করলো তার উপরে।

কি করবে সে ভেবে পায়না। দেখতে দেখতে সময় কেটে যায়। পরদিন বিকেলে বাসার মালিক ফোন করে শ্রাবণের কাছে। টাকাগুলো রেডি রাখ, আমি আসছি।

শ্রাবণ ও অপরিচিতা মেয়ে

শ্রাবণ নিজেকে একটু ভাগ্যবান মনে করে, বাড়িওলা এই বাড়িতে থাকে না। এখানে পৌঁছাতে পৌঁছাতে তার ৩০ মিনিটের মত লাগবে। গায়ে শার্ট চাপিয়ে দরজায় তালা ঝুলিয়ে বাইরে নেমে পরে সে। রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে চিন্তা করতে থাকে কোন একটা বাস তাকে এখন পিষে গেলে হয়ত অনেক ভাল হত। মাথায় সাত পাঁচ চিন্তা করতে করতে শ্রাবণ পৌঁছে যায় কাছের একটা পার্কে। পার্কের পরিবেশ টা খুব ই খারাপ। মন ভাল করার উপাদান এখানে নেই। তবুও বসে থাকার একটা ভাল জায়গা পাওয়ায় সেখানেই বসে যায় সে।

শ্রাবণই একমাত্র ব্যক্তি, যে একা বসে আছে মাথা নিচু করে। চারপাশের সবাই এসেছে তাদের প্রেমিকাকে সাথে নিয়ে। কেউ একা নেই, বাদাম ওয়ালা আর সিগারেট বিক্রেতা ছাড়া। এখানেই বসে থাকতে হবে রাত ৯/১০ টা পর্যন্ত। ফোনটা বাসায় রেখে এসেছে সে।

নিশ্চিন্ত হওয়ার কিছুটা চেষ্টা করছে, কিন্তু একটা ভয়ানক অতীত সেটা তাকে হতে দিচ্ছে না। জীবন ও অতীত থেকে শ্রাবণ পালিয়ে বেড়াচ্ছে সেই অনেক দিন ধরে। সাথে মানুষের সান্নিধ্য থেকেও নিজেকে দূরে রেখেছে।

মাথার ভিতরে অনেক প্যাচ লাগা চিন্তা ঘুরতে ঘুরতে একটা ঘোরের ভিতরে চলে যায় শ্রাবণ।

মাথা নিচু করে বসে থাকা শ্রাবণের ঘোর কাটে একটা হাতের স্পর্শে। অনেকটা চমকে ওঠে সে। ঘুরে তাকাতেই দেখে বোরকা পরিহিত নাক মুখ ঢাকা একটা মেয়ে। সাথে একটা সাইডব্যাগ। চোখদ্বয় শুধু বের হয়ে আছে।

মেয়েঃ ভাইয়া আপনার এখানে একটু বসি?

শ্রাবণঃ জি বসুন।

অন্য সময় হলে শ্রাবণ উঠে চলে যেত। কিন্তু আজ যাচ্ছে না। এই মেয়েদের বলা হয় নগরীর রাতের পাখি। সন্ধ্যে নামলেই এদের আনাগোনা বেড়ে যায় পার্কের আশেপাশে। একা বসে আছে দেখেই হয়ত শ্রাবণের কাছে এসেছে মেয়েটি কিছু টাকা পয়সা কামানোর ধান্ধায় এটাই ধারণা ছিল শ্রাবণের। কিন্তু একটু পর মেয়েটা যখন বলে,

মেয়েঃ ভাইয়া তোমার কি মন খারাপ।

তখন সে একটু অবাকই হয়। মেয়েটার কণ্ঠে কেমন যেন একটা ভেজা ভেজা ভাব।

শ্রাবণঃ এইতো.. এমনি।

মেয়েঃ এমনি আবার মন খারাপ হয় নাকি কারো? ‘তোমার গল্প’ চাইলে তুমি আমাকে বলতে পারো।

শ্রাবণঃ গল্প?

মেয়েঃ হুম।

শ্রাবণের জীবনের গল্প

জীবনের গল্প কখনো কাউকে বলে নি শ্রাবণ। আজ সময়টাও যেন কাটছে না। আর অন্ধকার জগতের একজন মেয়েকে একটা অন্ধকার জগতের গল্প বললে দোষের তো কিছু নেই।

শ্রাবণ বলতে শুরু করে,

একটি সম্ভ্রান্ত শিক্ষক পরিবারে আমার বেড়ে ওঠা। বাবা মা দুজনেই শিক্ষক ছিলেন। ছোট থেকে খুব আদরের মাঝে বড় হয়েছি।

সব সময় ক্লাসে ফার্স্ট হতাম। কিন্তু আমি কখনো দেখিনি আমার বাবা মা অন্যান্য বাবা মা দের মত স্বপ্ন দেখতো। আমার ছেলে বড় হয়ে এটা হবে ওটা হবে। তবে হ্যা, তারা প্রচন্ড খুশি হতেন। আস্তে আস্তে বড় হই। ক্লাস টেন এ যখন উঠি, আমার একটা ছোট ভাই হয়, সেদিন সবচেয়ে বেশি খুশি আমিই হয়েছিলাম। আমার বাবা মা ও খুশি ছিলেন। তারা উইশ করলেন, ছোট ভাইটাও যেন আমার মত মেধাবী হয়।

ক্লাস ফাইভ, এইট, টেন সব জায়গায় আমার রেসাল্ট খুব ভাল। যখন এইচ এস সি কম্লিট করার জন্য ঢাকার নামকরা কিছু কলেজে এপ্লাই করলাম এবং চান্সও পেলাম, ঠিক সে সময়েই ঘটল একটি বিপত্তি। একদিন বাইরে থেকে বিকেলে খেলাধুলা করে বাসায় ফিরে শুনতে পাই বাবা আমার মা কে বলছেন, ওর জন্যই যদি সব টাকা শেষ করে ফেলি, তবে আমাদের বাচ্চার ভবিষ্যৎ ঝুঁকির মুখে পরতে পারে। ঢাকায় রেখে লেখাপড়া করানোর ব্যাপারটা কিন্তু অনেক ব্যয় সাপেক্ষ। আমার মা সে সময়ে চিল্লিয়ে প্রতিবাদ করেছিল, ও কি আমাদের ছেলে না?

বাবা শুধু মা কে একটা কথাই বলেছিলেন, রক্তের সম্পর্কের সামনে বাকি সব সম্পর্ক দুর্বল।

কথাগুল শোনার পরে আমার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যায়। জীবনে আমি দুবার অবাক হয়েছি। তার ভিতর সেদিনই আমি প্রথম অবাক হয়েছিলাম। আমি কি তাহলে তাদের সন্তান না! বুক ফেটে চিৎকার করে কাঁদতে মন চাইছিল। ছোট বেলায় ফজরের নামায শেষে বাবার আঙ্গুল ধরে ঘাসের উপর জমে থাকা শিশিরে লাফাতে লাফাতে হাঁটার কথাটা খুব বেশি মনে পরছিল সেদিন। এত আপন ভাবা দুটি মানুষ আমার আপন বাবা মা নয়!

সেদিন আমি বাসায় ফিরিনি। শুনেছি রাতে আমার মা পাগলের মত খুঁজেছিল। একটা জিনিস বুঝেছিলাম, আমি যে সত্য কথাটা আঁচ করতে পেরেছি এটা জানলে আমার মা আমার থেকেও বেশি কষ্ট পাবে হয়ত। বাড়ি আর থাকা পরেনি। আমি ঢাকা চলে আসি। তবে ভর্তি হই খুব নরমাল একটা কলেজে। পড়াশোনায় আর মন বসাথে পারিনি। আমার আসল বাবা মাকে খুঁজতে শুরু করি। বিভিন্ন ক্লু ধরে ধরে খুঁজে আমি প্রায় এক বছর পর খোঁজ তাদের খোজ পাই।

শ্রাবণের পরিচয়

আমার বাবার নাম ছিলো রহিম আলী। পেশায় একজন কৃষক ছিলেন। গরিবের সংসার থেকে আম মধ্যবিত্ত পরিবারে ভাল থাকব, তাই আমাকে দিয়ে দিয়েছিলেন আমার বর্তমান পিতা মাতার কাছে। আমার মায়ের একটা রোগ ছিল। রোগটা মানসিক, তিনি অল্প ব্যথাও সহ্য করতে পারেন না। সামান্য ব্যথা পেলেও মাথা বিগড়ে যায় তার। ডাক্তার এজন্য বাচ্চা না নিতে পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু আমার মায়ের খুব ইচ্ছে ছিল একটা ছোট বাবুর। আর সেজন্যই একটা কৃষক পরিবার থেকে আমাকে নিয়ে আসা হয় মোটামুটি ভাল একটা পরিবারে।

রহিম আলী অবশ্য বছর ১৫ পরে খুব বড়লোক হয়ে গিয়েছিল। এর মধ্যে একদিন রহিম আলী আর তার স্ত্রী, মানে আমার আসল মা বাবা উধাও হয়ে যায়। তাদের আর খুঁজে পাওয়া যায় নি। তার দুই ছেলে, একজন আমার বয়সী। অন্য জন আমার চেয়ে ১২ / ১৩ বছরের বড়, তাদের সাথে আমি দেখা করি।

তারা আমাকে জানায়, আমার মা কে রেপ করে রাস্তায় ফেলে রাখা হয়েছিল। সেখান থেকে রহিম আলী আমার মাকে আশ্রয় দেন। ঠিক ৬/৭ মাস পরেই আমার জন্ম হয়। আমার মা মারা যান।

মানে আমি রহিম আলীর পরিবারেরও কেউ না। একটা ভেসে আসা পদ্মফুল। যে ফুল এর কোন শিকড় নেই। কোথাও থেকে হয়ত ভেসে এসেছে। কতটা কষ্ট পেয়েছিলাম সেদিন, তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। একবার সুইসাইড এটেম্পটও করি। কিন্তু প্রকৃতি আমাকে মরতে দেয় নি।

এত অন্ধকার আচ্ছন্ন একটা কলুষিত জীবন নিয়ে বেচে আছি কেনো জানো! যে মায়ের কাছে বড় হয়েছি সে আমাকে খুব ভালবাসে। তার নিজের ছেলের মতই। ঢাকায় নিয়ম করে এসে দেখে যায়।

কোন রকম খেয়ে পরে বেঁচে আছি, তবে বাবার কাঁধে আমি নামক পর মানুষের বোঝাটা একটু বেশি ভারী। তাই কখনো মা কিংবা বাবার কাছে টাকা চাইতাম না। আর তার উপর আজকে খুব খারাপ একটা সমস্যা থেকে পালিয়ে এসেছি।

মেয়েঃ কি সমস্যা?

শ্রাবণ বাসা ভাড়ার না থাকার ঘটনাটা খুলে বলে।

শ্রাবণের আশ্রয়ে অপরিচিতা

অনেক হালকা লাগতে থাকে তার। মনে হয় বুকের উপর থেকে বিশাল বড় একটা পাথর নেমে গেছে। কিছুক্ষণের জন্য তার খেয়াল ছিল না যে তার পাশেও কেউ একজন বসে আছে।

মেয়েটি হঠাৎ বলে বসে-

মেয়েঃ আমিও সুইসাইড করতে এসেছি।
শ্রাবণঃ ও।

মেয়েঃ তবে আমার এখন সুইসাইড করতে মন চাইছে না।

শ্রাবণঃ আমি আপনাকে কলগার্ল ভেবেছিলাম। দু:খিত।

এটা শোনার পর কিছুক্ষণ নিরব থাকে মেয়েটি। তারপর আবারো বলে-

মেয়েঃ দেখো তোমার কি নিয়তি, বাসা আছে, তবে টাকা নেই। আমার কাছে টাকা আছে তবে বাসা নেই।

শ্রাবণঃ হুম।

মেয়েঃ আমার কাছে লাখ পাচেক টাকা আছে। তোমার টাকা নিয়ে সমস্যা হবেনা। আমাকে তোমার বাসার খালি রুমটায় থাকতে দিবে?

শ্রাবণঃ বেশ। সমস্যা নেই।

এরপর তারা দুজনেই পায়ে হেঁটেই বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।

বাসার কাছাকাছি পৌঁছনোর পর মেয়েটার ভিতরে প্রচন্ড অসংলগ্নতা দেখা দেয়। কেমন যেন একটা অপরাধবোধ, কেমন যেন একটা উৎকন্ঠা। তবে সে থামে না। শ্রাবণের সাথে একদম শ্রাবণের বাসায় চলে আসে।

শ্রাবণ তার ফ্লাটের খালি রুমটা মেয়েটাকে দেখিয়ে দেয়। একটা লাইটও নেই রুমে।

মেয়েঃ এ রুমে তো কিছুই নেই। এখানে কিভাবে থাকবো? তুমি আমাকে আজ তোমার কাছে থাকতে দিবে? কাল আমাকে কিছু জিনিস কিনে দিও।

শ্রাবণঃ বেশ। থাকুন তবে।

মেয়েটা শ্রাবণের রুমে এসে বোরখা খুলে ফেলে। নিকাবও খুলে ফেলে। একটা গেঞ্জির উপর জিন্সের শার্ট পরিহিত মেয়ে। এতক্ষণ যেন দম বন্ধ ছিল। এখন শান্তি পাচ্ছে এমন একটা ভাব ফুটে উঠে মেয়েটার মাঝে।

শ্রাবণকে উদ্দেশ্য করে-

মেয়েঃ তোমার বাসার মালিক আজ টাকা নিতে আসেন নি। কি অদ্ভুত দুনিয়া এখন তোমার কাছে টাকা আছে দেয়ার মত। অথচ যে পাবে তার আর অত তাড়া নেই।
এই বাসার মালিকের যে কারণে টাকাটা খুব প্রয়োজন ছিল, সে কারণটা বাসা থেকে পালিয়েছে। জীবন কখনো কখনো সাজানো গোছানো নাটকের চেয়েও অদ্ভুত। সবচেয়ে মজার কথা তোমার বাড়িওয়ালার মেয়ে পালিয়ে তোমার ফ্লাটেই এসে উঠেছে।

শ্রাবণঃ আচ্ছা।

মেয়েঃ আচ্ছা মানে? তুমি অবাক হওনি?

শ্রাবণঃ না, আমার অবাক হতে ইচ্ছে করে না।

মেয়েঃ তোমার আচরণে আমি অবাক হচ্ছি। আচ্ছা, তোমাকে এবার তাহলে আমার গল্প বলি।

শ্রাবণঃ শুনছি। বলুন। (চলবে)

পরের পর্ব- এলিয়েন রহস্য পর্ব ৩ – এলিয়েন মানবের গল্প

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *