জ্বীনবর (সিজন ১) – লোমহর্ষক ভয়ানক ভুতের গল্প ২০১১

জ্বীনবর – লোমহর্ষক ভয়ানক ভুতের গল্প ২০১১: সকালটা শুরু হত কপালে উনার ঠোঁটের স্পর্শে ঘুম ভেঙে। সারাটাদিন খুন সুটি তে কাটতো। পালা করে এক একেকদিন একজন অপরজনকে খাইয়ে দিতাম। সন্ধ্যায় ছাদে বসে চাঁদ দেখতে দেখতে উনার কাধে মাথা রেখে নানারকম গল্প জুড়ে দিতাম।


পর্ব ০১

আনমনে বসে বাগানের দোলনায় দুলছি। হালকা বাতাসে চুল এলোমেলো হচ্ছে বারবার। তখনি বাবার ডাক, “এই মুশায়রা, এদিকে আসোতো মা!”
বাবার ডাকে অগত্যা উঠে বাসায় ঢুকে বাবার সামনে এসে দাঁড়ালাম।

বাবা মাথায় টুপিটা চড়িয়ে আমার দিকে তাকালেন। একটু রাগমিশ্রিত স্বরে বললেন, তোমাকে বারণ করেছি না চুল খোলা করে বাহিরে যাবেনা! নামায পড়েছো?

তাড়াতাড়ি মাথায় ওড়না দিয়ে
আমি মাথা নিচু করে আস্তে মাথা নাড়ালাম। বাবা হাতের ঘড়ি দেখে বললেন, “হাতে আরো ১০মিনিট আছে, যাও নামায পড়ে নাও”আমি মাথা নাড়িয়ে চলে এলাম আমার রুমে।

আমার বাবাটা অনেক ধার্মিক। ধর্মের সবকিছু অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলেন। এইজন্য গ্রামের মানুষরা বাবাকে খুব মেনে চলে এবং যে কোনো সমস্যায় বাবার কাছে ছুটে আসে। আমি মুশায়রা, বাবার একমাত্র মেয়ে, এইবার মাদ্রাসায় দাখিল পরীক্ষায় উর্ত্তীণ হয়েছি। বাসায় আমি, ছোটভাই, বাবাই থাকি।

মা কোথায় আছে তা জানিনা, খুব ছোটকালে দেখেছিলাম। চেহারাটাও ঠিক করে মনে পড়েনা। বাবাকে মায়ের কথা জিজ্ঞেস করা একদমই বারণ। এই ব্যাপারে কথা উঠলেই রেগে যান। বাবার এক বিশ্বস্ত বুয়াখালাই আমাদের দেখাশুনা করেন।

অজু করে নামায পড়ে নিলাম। আমার ধর্মের এসব নিয়ম কানুন মানতে ভালোলাগেনা। বাবা রাগ করবেন বলে বাধ্য হয়ে করি। বাবার কথা হচ্ছে উনি যে পথ সারাজীবন অনুসরণ করে এসেছেন, আমাদেরকেও অক্ষরে অক্ষরে তা করাবেন ইনশাল্লাহ।
মাঝে মাঝে বাবার এসব আমার বাড়াবাড়ি মনে হয়। কত নিষেধ, কত নিয়ম পালন করতে করতে বিরক্ত লাগে।

এমনি ভাবনার সময় আবার বাবার ডাক এলো। চা নিয়ে বাবার রুমে প্রবেশ করে বললাম,
~ ডাকছো বাবা?
~ নামায পড়ছো?

~ হুম আব্বাহুজুর। এই নাও তোমার চা।
~ মুমিন ফিরেছে?
~ এখনো তো ফিরেনি।
ধমকের সুরে বললেন,
~ এখনো কি মাঠে খেলছে? কত বার বলেছি বিকালের সময়টা একটু হাদিস শিক্ষা নে। আজ আসুক হচ্ছে ওর।

মনে মনে ভয় পেলাম। আজ ভাইয়ের কপালে মাইর আছে। মুমিন ই আমার ছোট ভাই। বয়স ১১বছর। মাদ্রাসায় ৫ম শ্রেনীতে পড়ে।
বাবা চায়ের কাপটা ফেরত দিয়ে বলল, “যাও তুমি ভেতরে যাও। কিছু মানুষ আসবে জরুরী কথা বলতে।”
বাবা কখনোই বাহিরের মানুষের সামনে আমাকে আসতে দেয়না। সবসময় পর্দায় থাকতে বলে।
চায়ের কাপ নিয়ে রান্নাঘরে চলে এলাম।

সন্ধ্যার পর বাবা নামাযঘরে থাকেন অনেকরাত অবধি। অই ঘরে আমাদের যাওয়া বারণ। আমি মাঝে মাঝে উকি মেরে দেখি বাবা অন্ধকারে অইখানে দরজা বন্ধ করে বসে থাকেন। জিজ্ঞেস করার কথা ভাবতে পারিনা। কেননা, বাবা যা আমাদেরকে নিজে থেকে বলতে চাননা তা জিজ্ঞেস করলে তার বকুনি খেতে হয়।

এই সময়টা আমার ভয় ভয় লাগে। ঘরের সব বাতিগুলো নিভু নিভু করে। হালকা ঠান্ডা বাতাস পুরো ঘরে বিরাজ করে। ছোট ভাই পা টিপে টিপে ঘরে প্রবেশ করে আমাকে ফিসফিসিয়ে বলে, “বুবু, বাবা কোথায়?”আমি হাতের কাজ করতে করতে বলি, “নামায ঘরে আছে। যা তাড়াতাড়ি হাতমুখ ধুয়ে পড়তে বস।”মুমিন হাসিমুখে চলে যায় তার রুমে।

আমার বান্ধবীদের অনেকে বলে আমার বাবা নাকি জ্বিন পালে। তাদের সাথে কথা বলে। আমি ওদেরকে বুঝাতে পারিনা এসব বাবা করেননা। আমি কখনোই দেখিনি এসব।
অনেকে উপহাসের সুরে বলে, তোকে জানিয়ে করবে নাকি? তাছাড়া তোর বাবা এত বড় আলেম, তার বুঝি এসব থাকবেনা। ওদের কথায় আমি পাত্তা দেইনা।

তবে মাঝে মাঝে এইসব ভাবি, “ইস সত্যি যদি বাবার পোষা জ্বীন থাকত, তাদের একবার দেখতে পারতাম।”ছোটভাই শুনেই হাসতে হাসতে শেষ। আমার গলা জড়িয়ে বলে, বুবু আপনি এমনিতে যে ভীতু। সামান্য তেলাপোকা দেখে চিৎকার করেন, আপনি নাকি দেখবেন জ্বীন!
রাগ লাগে এসব শুনে। তাই ওকে আর আমার ভাবনাগুলো বলিনা।

প্রায় রাত ১০টায় বাবা নামাযঘর থেকে বের হলেন। আমি তখন টেবিলে খাবার এনে দিচ্ছিলাম। বাবা এসেই চেয়ারে ধপ করে বসে পড়লেন। পানির জগ থেকে পানি গ্লাসে ঢেলে এক নিমিষে ঢকঢক করে গিলে নিলেন। আমি একটু চিন্তিত হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, “বাবা তুমি কি ক্লান্ত?”বাবা না বলে মুমিনকে খেতে ডাকলেন।
খাওয়ার পুরোটা সময় বাবার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে ছিলাম। কপালে কয়েকটা ভাজ পড়ছে, চোখে মুখেও উউদ্বিগ্নতা।

জিজ্ঞেস করে লাভ হবেনা জেনেও বললাম, “বাবা, তুমি কি চিন্তিত?”বাবা চোখ রাঙ্গিয়ে বললেন, “খাওয়ার সময় কথা বলতে বারণ করেছিনা?”

বকুনি খেয়ে একটু অভিমান জাগল। অস্ফুটস্বরে বললাম, আর বলবনা বাবা!
বাবা আর কিছু বললেননা। খাওয়া দাওয়া শেষ করে নিজের ঘরে চলে গেলেন। আমি সব গুছিয়ে নিজের ঘরে যাওয়ার আগে বাবার ঘরে একবার উকি মারতে গেলাম। দেখলাম বাবা অন্ধকারে বসে তসবিহ পড়ছেন।

বিরক্ত না করে ওখান থেকে মুমিনের ঘরে ঢুকলাম।
ঘুমিয়ে পড়েছে ও। ওর গায়ে হালকা কাথা দিয়ে ফ্যানের স্পিড কমিয়ে নিজের ঘরে চলে আসলাম।
লাইট নিভিয়ে শুয়ে পড়লাম। ঘুম আসছেনা কিছুতেই।

বাবার চিন্তিত মুখটা চোখের সামনে ভেসে উঠছে। কেন যে বাবা কিছুতেই কোনো কথা বলতে চায়না।
আমার বাবাটা এমন কেন? সবার বাবারা কত ভালো হয়। ঘুরতে নিয়ে যায়, সবসময় আদর করে।

মাথায় হাত বুলিয়ে গল্প শুনিয়ে ঘুম পাড়ায়। এসব কিছুই আমি পাইনা।
সব ভাবনা ঝেড়ে যেই ঘুমাব তখনি দেখি আমার ঘরের মেঝেতে একটা ছায়া পড়েছে। ছায়াটা অনেক লম্বা। আমার রুমের দিকে এগিয়ে আসছে। ভয় পেয়ে গেলাম।

এটা অন্য কিছু নয়তো? চিৎকার করব নাকি ভাবতেই টের পেলাম ছায়াটা আমার ঘরে ঢুকে গেছে। ভয়ে চোখ বন্ধ করে মনে মনে সূরা পড়া শুরু করলাম।
অনুভব করছি কেউ আমার দিকে গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে আসছে। অনেক কাছে এসে গেছে আমার।
মুশায়রা আজ তুই শেষ! জ্বীন তোর সামনে এলে এসেছে বলে বিড়বিড় করতে লাগলাম।


পর্ব ০২

সে এসে আমার পাশে বসল। অতিযত্নে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। আমার খুব ইচ্ছে করল তাকে দেখতে। এত সুন্দর ভাবে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে কেন?

চোখ খুলে দেখতে চাইলাম। কিন্তু সেই সাহস হলোনা। হঠাৎ হু হু করে চাপা কান্না কানে এল। আমার পাশে বসা সে কান্না করছে। আচ্ছা জ্বীন কি কান্না করে? এভাবে যত্ন করে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়? টের পেলাম সে আমার পাশ থেকে উঠে গেল। নিশ্চয়ই এখন সে চলে যাবে।

এখন তাকে না দেখতে পেলে হয়ত আর দেখার সুযোগ হবেনা। ভয়ে ভয়ে চোখজোড়া খুললাম। ঠিকি তো ছায়াটা আমার রুম থেকে বের হয়ে গেল। আমি তাড়াতাড়ি উঠে পিছু নিলাম। বারান্দায় আলোয় দেখতে পেলাম এটা বাবা। উনি তার রুমের দিকে ফিরে যাচ্ছেন। বাবা কেন এভাবে আমার রুমে আসলেন? কাঁদলেন ই বা কেন?

ধীরপায়ে বাবার ঘরের দরজায় এসে দাঁড়ালাম। বাবা রেকিং চেয়ারে বসে বসে কি যেন বিড়বিড় করছেন। অন্যসময় হলে অনুমতি নিয়ে ঢুকতাম ঘরে। আমার এখন কথা বলতে ইচ্ছে করল না। আস্তে গিয়ে বাবার পা জড়িয়ে বসে পড়লাম। বাবা চমকে উঠে আমার দিকে তাকালেন। মাথায় হাত রেখে বললেন, “ঘুমোনি?”
~ বাবা বলোনা কি হয়েছে তোমার?

~ কিছুনা মা। অনেক রাত হয়েছে ঘুমাও।
~ বাবা বলোনা। আমার চিন্তায় ঘুম আসবেনা।

বাবা ফিক করে হেসে বললেন,
~ মেয়ে বড় হলে সব বাবাদেরই এমন একটুখানি হয়ে থাকে!
বাবার কোলে মাথা রেখে বললাম,
~ আমাকে কি তাড়ানোর পরিকল্পনা করছো?

~ তাড়াব কেন? মেয়েরা হল রহমত। রহমত কে কি কেউ বিতাড়িত করতে পারে?
~ সে তুমি যাই বলোনা কেন! আমি কোথাও যাবনা বাবা। আমার সারাটা জীবন তোমার আর ভাইয়ের জন্য রাখতে চাই।
~ পাগলি মেয়ে আমার। যা ঘুমো।
এই বলে আমার কপালে বাবা ছোট্ট একটা চুমু একে দিলেন। আমিও কথা না বাড়িয়ে চলে এলাম। বাবার এই রুপটা খুব কমই দেখেছি। আজ দেখে মনে যত অভিযোগ ছিল সব দূর হয়ে গেছে। বাবা কেন সবসময় এমন থাকতে পারেনা!

এসব ভাবনায় রাতটাই কেটে গেল। আজান শুনে উঠে পড়লাম। প্রতিদিন বাবা ডেকে দেন। আজ নিজে থেকে উঠে নামায পড়লাম। কিছুক্ষণ কুরঅান পাঠ করে উঠে যেতে দেখি বাবা আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
~ মা, আজ তুমি নিজে উঠেছো?

~ জ্বি বাবা। চা করে দিব?
~ হুম দাও। মুমিনকেও জাগিয়ে দাও। এমনিতেই জামায়াতের সময় পার হয়ে গেছে। এরপর নামায পড়ারও সময় পাবেনা।

মনটা আজ অনেক ফ্রেশ। সব কাজ করতে ভালোলাগছে। ভাইকে নাস্তা করিয়ে মাদ্রাসায় পাঠিয়ে দিলাম।
বাবা খেয়ে কোন একটা সালিশে গেছেন। পুরো বাসায় একা আমি। আজ বুয়াখালাও আসেননি। দিনেক দুই ধরেই নাকি অসুস্থ। বাবা গিয়ে দেখে এসেছে।

আমার ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও যেতে পারলামনা। আমার কারণ ছাড়া বাসা থেকে বের হওয়া নিষেধ। বের হলেও পরিপূর্ন পর্দা করে বের হতে হবে। রান্নাবান্না সেরে ফ্রেশ হয়ে ছাদে উঠলাম একটু ঘুরাঘুরি করার জন্য।

আমাদের পুরো বাসা বাউন্ডারি করা। বাসার সামনে বড় বাগান। দুতালা ফ্ল্যাট। ছাদটা আমার খুব ভালোলাগে। নিজের হাতে যত্ন করে সাজিয়েছি। অবসর সময়ে আসি প্রায়। রাতেও আসতে ইচ্ছে করে, কিন্তু বাবার আদেশ সন্ধ্যার পর কেউ ছাদে আসতে পারবেনা।

চুল শুকাতে শুকাতে এই ধার ওই ধার ঘুরছি। এমন সময় খেয়াল করি বাগানে আমার দোলনায় কে যেন বসে দোল খাচ্ছে। প্রথমে মনে হল চোখের ভুল।
কিন্তু না ঠিকি দেখছি কেউ বসে আছে।

সামনের আমগাছটার জন্য ভালো করে কিছু দেখতে পাচ্ছিনা। কোনো দুষ্টু ছেলে দেয়াল টপকে বাগানে ঢুকেনি তো? এই সাহস তো কারো হবেনা। এলাকার সবাই বাবাকে ভয় পায়। এই বাড়ীতে ঢুকার সাহস দেখানো কারো নেই। যাই হোক, কেউ তো নিশ্চয়ই আছে।

ছাদ থেকে তাড়াহুড়ো করে নেমে দৌড়ে বাগানের দোলনার কাছে এলাম। কেউ তো নেই, দোলনাটা নিস্তব্ধ ভাবে আছে। কেউ যদি চলেও যেত দোলনা তো অবশ্যই এখনো দুলত।

আজকাল চোখেও ভুল দেখতে শুরু করেছি।
যেই বাসার দিকে হাটা ধরলাম, শব্দ হল দোলনাটা নড়ার। আবার পিছনে ফিরলাম, বাতাসে নড়তে দেখে চলে এলাম।

বিকেলের দিকে ভাই আর বাবা একসাথে ফিরল। সন্ধ্যায় বাবা পাঞ্জাবি পড়ে আতর মেখে কোথাও যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। বাবা আমাকে তার ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বললেন, “মা, আজ নত্রপুরে ওয়াজ মাহফিলে আমাকে প্রধান অতিথি হিসেবে ডাকা হয়েছে। তাই যেতে হচ্ছে। তুমি চিন্তা করোনা আমি খুব তাড়াতাড়ি ফিরব।”
~ আচ্ছা বাবা, সাবধানে যেও। বলছি কি, রাতের খাবারটা খেয়ে যাও।
~ নারে মা। সময় নেই। ৩ গ্রাম পেরিয়ে যেতে হবে। এখন না বের হলে সময়মত পৌছাতে পারবনা।
~ সাথে রহিছ চাচা যাচ্ছে তো?
~ হুম যাচ্ছে। তাড়াতাড়ি খেয়ে ঘুমিয়ে পড়িস। সাবধানে থাকিস।

বলে বাবা বাসা থেকে আল্লাহর নাম নিয়ে বেরিয়ে গেল। বাবা যাওয়ার পর দরজা আটকে মুমিনের পাশে বসলাম। মুমিন মনোযোগ দিয়ে পড়ছে, আমাকে দেখে বলল, “ভয় পাচ্ছেন বুবু?”
ওর মাথায় একটা চাট্টি মেরে বললাম, “পাকামি রেখে মন দিয়ে পড়। একা একা ভালোলাগছেনা তাই তোর কাছে এলাম।”

মুমিন মুচকি হেসে আবার পড়ায় মন দিল। হঠাৎ শুরু হল ঝড়ো হাওয়া। মনে হচ্ছে প্রবল বৃষ্টি হবে। এমনি সময় চলে গেল ইলেকট্রিসিটি। পুরো বাসা হয়ে গেল অন্ধকার। আমি মুমিনকে বললাম, তুই বস! আমি চার্জার লাইট জ্বালিয়ে দেই।

লাইট জ্বালিয়ে দেখি এর চার্জ খুব কম। সারাদিন চার্জে দিতে ভুলে গেছি।
~ মুমিন আর পড়ে কাজ নেই। লাইটের চার্জ কম।

তুই বরং চল খেয়ে ঘুমাবি।
~ বুবু আমার ক্ষিদে নেই। তবে ঘুম পাচ্ছে। আমি ঘুমিয়ে পড়ি। আপনিও খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ুন আমার পাশে।
~ আচ্ছা ঘুমো।

মুমিন ঘুমিয়ে পড়লে আমি বের হয়ে আসি রান্নাঘরে টা গুছিয়ে রাখতে। মোম জ্বালিয়ে রান্নাঘরে আসলাম। খেতে ইচ্ছে করছেনা বিধায় সব ঢাকা দিয়ে বের হয়ে এলাম।

ইতিমধ্যে বাহিরে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। বারান্দার দরজাটা বন্ধ করা হয়নি। অইদিকে যেতে যেতে ভাবছি বাবা পথে আটকা পড়ে গেল নাকি? সাথে তো ছাতাও নিলনা।
বারান্দার দরজা বন্ধ করতে যাব এমন সময় মোমের আলো বাতাসে নিভে গেল।


পর্ব ০৩

মোমের আলো নিভে যাওয়ায় বারান্দাটা অন্ধকারে ঢেকে গেল। ভয় লাগছিল। তাড়াতাড়ি দরজাটা লক করে ঘরে পালাতে পারলেই বাচি। দরজা টেনে আনতে গিয়ে দেখি বারান্দার কোনে কারো প্রতিমূর্তি। অন্ধকারে কিছু তেমন দেখতে না পেলেও বুঝলাম সেখানে কেউ ঠায় বসে আছে।

ভালো করে বুঝার জন্য হাতড়ে হাতড়ে কোণের দিকে গেলাম। হাতটা কোণের দিকে বাড়াতেই কারো নিঃশ্বাস আমার হাতে পড়ল। ভয় পেয়ে দুপা পিছিয়ে গেলাম। জোরে জোরে চিৎকার করতে লাগলাম, “কে ওখানে? সাড়া দাও বলছি।”
একটা মিহি সুন্দরকন্ঠে উত্তর এল, “এত জোরে চিৎকার করবেননা। এতে আমার ইবাদতে বিঘ্ন হচ্ছে। আপনাকে ভেতরে চলে যান।”

আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম। আমাদের বাসায় ছেলে এলো কি করে? এখানে ইবাদত করছে মানে কি? কাপা কাপা কন্ঠে বললাম, কে আপনি? এখানে এলেন কি করে?

আবারো শান্ত ভাবে উত্তর এল, “ভয় পাবেননা। শান্ত হোন!”আমার রাগ উঠে গেল, একে তো বেগানা পুরুষ। তাও আমার বাসায় সংগোপনে বসে আমাকে বলছে শান্ত হতে। একটু ধমকে উত্তর দিলাম, “শান্ত হব মানে কি! আপনি কে সেটা বলুন? একে তো একজন অচেনা পুরুষ আবার অন্যের বাসায় চুরি করে ঢুকতে লজ্জা করেনা। বেরিয়ে আসুন বলছি।”তখনি পিছন থেকে ডাক এলো, “বুবু আপনি চিৎকার করছেন কেন?”

তাকিয়ে দেখি মুমিন চোখ ডলতে ডলতে মোম নিয়ে আমার পিছনে দাঁড়িয়ে আছে। আমি বারান্দায় কোণ ইশারা করে বললাম, “দেখ ভাই, একটা ছেলে আমাদের বারান্দায় চুরি করে ঢুকে পড়েছে। নিজের পরিচয় ও দিচ্ছেনা।”মুমিন এগিয়ে এসে অইকোণ মোমের আলো দিয়ে চেক করে। পরে আমার দিকে তাকিয়ে বলে, বুবু এখানে তো কেউ নেই। আমি অবাক হয়ে কোণে তাকাই। সত্যিই তো কোণে কেউ নেই, তাহলে আমার সাথে এতক্ষন কথা বলল কে! আমিতো ভুল শুনিনি।

~ ভাই এখানে কেউ ছিল। মুমিন আমাকে ভেতরের দিকে টেনে নিয়ে বলল,
~ বুবু চলুন এখান থেকে। কেউ নেই এখানে। আপনি বোধহয় ভয় পেয়েছেন। আমি দরজা লক করে দিচ্ছি।
আমি মুমিনের ঘরে চলে আসলাম। ও পিছু পিছু এসে বলে, “বুবু আপনি ঘুমিয়ে পড়ুন। আমারো ঘুম পাচ্ছে খুব। দরকার হলে ডেকে দিবেন।”আমি মাথা নাড়িয়ে সায় দিলাম।

ও ঘুমিয়ে পড়ার পরও আমি বিছানায় হেলান দিয়ে আধশোয়া রইলাম। চোখে ঘুম কিন্তু ঘুমোতে চাচ্ছিনা। কেউ তো নিশ্চয়ই আছে। মুমিনকে দেখে হয়তো পালিয়ে গেছে। বাসায় যখন আছে, তখন তো আবার টের পাব। এই ভাবনায় ঘুমোচ্ছিনা। হঠাৎ মোমের আলো নিভু নিভু করতে লাগল। উঠে গিয়ে ওটা ধরার আগেই নিভে গেল। পুরো রুমটা অন্ধকার হয়ে গেল। বদ্ধ রুমে হাওয়া এলো কোথা থেকে?

এমনসময় কারো গলা কেশে নেওয়ার শব্দ শুনলাম। এক লাফে আবার বিছানায় উঠে বসলাম। অনুভব করলাম কেউ যেন আমার পাশে এসে বসল। সেই মিহিকন্ঠটা বলল,
~ ঘুমোচ্ছেন না যে? কাঁদোকাঁদো গলায় বললাম,
~ আপনি কে হুম?

এভাবে আমাকে ভয় দেখাচ্ছেন। ভালো হবেনা বলে দিচ্ছি। আসুক বাবা আপনার নামে নালিশ জানাব। একটু হেসে বলল,
~ আপনি ভীতু জানতাম এত ভীতু জানতামনা।
আমাকে ভীতু বলায় রেগে গেলাম।

ধমক দিয়ে বললাম,
~ আপনার সাহস তো কম না, আমায় ভীতু বলছেন। আসুন একবার আলোয় মাইর একটাও মাটিতে পড়বেনা।
~ আমায় মারতে হলে অন্ধকারেই মারতে হবে। দেখি কত সাহসী আপনি! আমি আপনার পাশেই বসে আছি নিন শুরু করুন। এইবার কেঁদেই দিলাম ভয়ে। সে একটু নরমগলায় বলল, “আহা, কাঁদছেন কেন? আমি কি বকেছি নাকি?”
~ উমহু।

~ তাহলে কি ভয়ে কাঁদছেন ভীতুনী?
~ আপনি আমাকে ভীতুনী বলছেন কেন?
~ আপনি ভীতু তাই। কান্না থামিয়ে বললাম,
~ দেখুন ভালো হচ্ছেনা কিন্তু। আপনি কে বলুন তো?
~ যাকে দেখার এত শখ আপনার আমি সেই।

আমি থম মেরে গেলাম। আমার তো জ্বীন দেখার খুব শখ। ওরে বাবাগো, স্বয়ং উনি আমার সামনে। এইবার ভয় পেয়ে হাত দিয়ে ভাইকে ধাক্কা দেওয়া শুরু করলাম।

ও ধড়পড়িয়ে উঠে পড়ল। উঠেই বলল, “কি হয়েছে বুবু?”ভাই উঠার সাথে সাথে আমার পাশের ভারীভাবটা কমে গেল। তার মানে ভাইকে ডাকায় উনি চলে গেছেন। আমার নীরবতা দেখে মুমিনকে আমার শরীর নাড়া দিয়ে বলল, “ও বুবু, ডেকেছেন কেন?”
~ না কিছুনা। ঘুমো তুই।

~ এভাবে আর গভীর ঘুম ভাঙাবেন না কিন্তু। বলে মুমিন আবার শুয়ে পড়ল। কি বোকামীটাই না করলাম আমি!
সকাল ৬টায় উঠলাম। মুখ ধুতে ধুতে ভাবছি, কাল রাতে চলে যাওয়ার পর উনি আর একবার ও আসলেননা।

উনি কি অভিমান করলেন! সারারাত এতকষ্ট করে ঘুম আটকে রাখলাম উনি আরেকবার আসবেন এই আশায়। এতদিন অপেক্ষার পর সুযোগ হল জ্বীনের সাথে কথা বলার। নিজের বোকামীর জন্য সব শেষ।
তাড়াতাড়ি নামায পড়ে নাস্তা বানালাম। সারাটা দিন সেই ভাবনায় কাটল।

বিকেলে বাবা ফিরে এলেন। ভাবলাম বাবাকে একবার জানাব ব্যাপারটা। পরে ভাবলাম, “না থাক। জানলে হয়তো বাবা রেগে যাবেন। এক বোকামীর জন্য উনি চলে গেলেন, এখন যদি আরেক বোকামী করি তবে উনি যদি আর না আসেন।”
বাবা আমাকে আনমনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বললেন,
~ কিছু বলবে মুশায়রা মা?
~ না বাবামানে হ্যা বাবা।

~ আমতা আমতা করছো কেন? কি বলতে এসেছো বল।
~ না মানে, তোমার কি কিছু প্রয়োজন?
~ না এখন কিছু লাগবেনা। প্রয়োজন হলে ডেকে নেব।
~ আচ্ছা বাবা। আমি এখন আসি।

কোনোরকমে পালিয়ে এলাম বাবার সামনে থেকে। আমি বাবার সাথে মিথ্যা একদম বলতে পারিনা। তাছাড়া বাবাও মুখ দেখে অনেককিছু বুঝে যান। তাই এভাবে চলে আসলাম।
নিজের ঘরে বসে বসে তাকে মিস করছি। কিচ্ছু ভাললাগছেনা। আজ রাতে কি সে আবার আসবে নাকি অভিমান করে আর আসবেনা! উনি সত্যিই বলেছেন আস্ত একটা ভীতুনী আমি।


পর্ব ০৪

চা খেতে খেতে জানালা দিয়ে চাঁদ দেখছি। কত সুন্দর জ্যোৎস্না, জানালার ফাক দিয়ে এসে আমার গায়ে লুটোপুটি খাচ্ছে। এমন সময়টা আমি দরজা বন্ধ করে আমার ঘরের সব আলো নিভিয়ে জোস্নাবিলাস করি। চোখ বন্ধ করে দখিনের হাওয়াটাও উপভোগ করছি।

হঠাৎ সেই অপেক্ষিত কন্ঠের আওয়াজ শুনলাম, “জোস্নাবিলাস করছেন বুঝি?”শুনামাত্রই পিছু ফিরে তাকালাম, আমার বিছানার উপর একটা প্রতিমূর্তি মাথা নিচু করে বসে আছে। বিছানাটা আমার জানালার বিপরীত কোণে, তাই জ্যোৎস্না অতদূরে গেলনা। এই অন্ধকারে তার মুখটাও দেখা হচ্ছেনা।

ওপাশ থেকে আবার জিজ্ঞাসা, “গভীর ভাবনায় হারিয়েছেন বুঝি?”আমি উত্তর দিলাম, “আপনি এসেছেন?”
মূহুর্তে উত্তর এল, “কি ভেবেছেন আর আসবনা?”
~ চেয়েছিলাম তো আবার আসুন। কিন্তু ভাবলাম অভিমান করেছেন হয়তো।
~ করার কথা কিন্তু করিনি। আমি অবাক কন্ঠে বললাম,
~ কেন?

~ আমি তো জানি আপনি একটা ভীতুনি। প্রথম প্রথম এমনটা করবেনই। তাই আর অভিমান এলোনা।
~ আপনি আবার আমাকে ভীতুনি বলছেন?
~ কি বলব বলুন! আপনি তো ভীতুই সেটা আপনি নিজেও ভালো করে জানেন।

আমি থতমত খেয়ে গেলাম। আরেহ বাবা এ তো মনের কথাও জানে। না একে বুঝতে দিলে হবেনা, স্বীকার করবনা বেটাকে।”মোটেও না, কি আপনি হুম! মনগড়া কিছু একটা বলে দিলেই হল”আমতা আমতা করে বলে দিলাম। অপরপাশ থেকে তার হাসি। কি সুন্দর হাসির শব্দ। ছেলেদের কি মুক্ত ঝরা হাসি হয়?

অত জেনে কি হবে! এই হাসিটা তার চেয়ে বেশি মুগ্ধকর। হাসি থামিয়ে বলল, “আচ্ছা, আপনি ভীতু নন। অনেক সাহসী।”
আমিও এটা শুনে একটু ভাব নিলাম। শত হলেও একটা জ্বীন আমার প্রশংসা করছে। হঠাৎ উনি বলে উঠল, “মুশায়রা আপনার হাতের পাশে একটা তেলাপোকা।”

শুনেই হাতের কাপ ফেলে লাফিয়ে চিৎকার করে উঠলাম, “ওহ বাবাগো।”এক লাফে জানালা থেকে ৩পা পিছিয়ে এলাম। উনার সে কি হাসি! এই মুগ্ধকর হাসি যেন থামেই না।

খোঁচা দিয়ে হাসতে হাসতে বললেন, “আসলেই আপনি এত্তগুলা সাহসী!”অভিমানে গাল ফুলিয়ে ফেললাম। গেল আমার সম্মানটা, যাও একটু ভাব নিলাম। সেটাও শেষ, কি যে লজ্জা লাগছে আমার।
এর মধ্যে আমার দরজায় কড়া পরল।”এইরে কেউ আবার চিৎকার শুনে ফেলল নাকি? কি বলব বাবাকে?”ভাবতে ভাবতেই দরজা খুললাম।

যাক বাবা না, ছোট ভাই এসেছে। দরজা খুলতেই প্রশ্ন ছুড়ে মারল, “বুবু আপনি চিৎকার করছেন কেন?”
~ ও কিছুনা। তেলাপোকা এসে পড়েছিল গায়ে।
মুমিন খানিকক্ষন হেসে নিয়ে বলল, “ভীতুর ডিম বুবু”
চোখ রাঙ্গিয়ে বললাম, “গেলি এইখান থেকে!”
~ গেলামনা। ক্ষিদে পেয়েছে খেতে দিন।

~ বাবা মসজিদ থেকে ফিরেছে?
~ এসে পড়বে। আমাকে আগে খেতে দিন।
~ আচ্ছা তুই যা আমি আসছি।

মুমিন আচ্ছা বলে নিজের ঘরের দিকে চলে গেল। কয়েকবার “এই যে”বলে তার উপস্থিতি বুঝার চেষ্টা করলাম। সাড়া পেয়ে মনটা খারাপ হয়ে গেল। আবার না বলে চলে গেল। ভাই ও আর আসার সময় পেলনা। আলো জ্বালিয়ে মেঝে থেকে চায়ের কাপটা তুলে নিয়ে রান্নাঘরে চলে এলাম।

সেইরাতে উনি আর এলেন না দেখা দিতে। কেমন জানি! এখনো অবধি দেখিনি তবুও তার আসার অপেক্ষায় ছটপট করি। যতটা সময় তার সাথে কথা বলি কেমন ভালোলাগায় কেটে যায়। তার যেন শুধু ভালোলাগে আমাকে রাগিয়ে ঝগড়া করতে।

এখন আর নিজেকে একা মনে হয়না। অনুভব করি আশেপাশেই সে আছে, আমি দেখতে পাচ্ছিনা।
সেইদিনের পর থেকে দুইদিন আর তার খোজ নেই। উনি কি বুঝেনা উনার ভীতুনি উনাকে খুব মিস করছে! ধুর মনটা একদম খারাপ। কিছুই ভালোলাগছেনা।

এত্ত পচা কেন জ্বীনটা! আসুক এইবার আর কথাই বলবনা। অন্যঘর থেকে বাবার ডাক, “মুশায়রা মা”
গিয়ে বাবার কাছে হাজির হলাম, “কিছু বলবা বাবা?”
~ চা চেয়েছিলাম অনেকক্ষন আগে।

~ দুঃখিত বাবা। মুমিনের জন্য নুডুলস করছিলাম। এক্ষুনি করে দিচ্ছি। একটু বসো।
~ এখন আর খাওয়ার সময় নেই।

এক জায়গায় ফতোয়া দিতে যেতে হবে। আমার পাঞ্জাবিটা এনে দাও তো।
~ এনে দিচ্ছি। পাঞ্জাবি নিয়ে এসে দেখি বাবা কেমন জানি গম্ভীর মুখ করে আছেন।
~ বাবা তুমি কি কিছু নিয়ে চিন্তিত?

~ রহিছ ভাইয়ের নাকি পেটেপীড়া উঠেছে। এখন অতদূর আমি একা কি করে যাই! একজনকে পাশে থাকা দরকার।
~ তো তুমি ভাইকে নিয়ে যাও।

~ তুমি একা বাসায় কি করে থাকবে?
~ বাবা একটা রাত ই তো। তুমি যাও ভাইকে নিয়ে। আমাকে নিয়ে ভেবোনা।
~ আচ্ছা মা সাবধানে থেকো।

সন্ধ্যার মুখে বাবা ভাইকে নিয়ে বেরিয়ে গেলেন। পুরো বাসায় আমি একা। একা একা কি করব ভেবে না পেয়ে বিছানায় আধশোয়া হয়ে হাদিস শিক্ষার বই পড়ছি।

জানালা দিয়ে হঠাৎ দমকা বাতাস ঢুকল ঘরে। সাথে সাথে লাইট অফ হয়ে গেল। ভয় পেয়ে উঠে বসলাম।
মিহিকন্ঠে উনি বলে উঠলেন, “ভয় পাবেননা, আমি এসেছি।”মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে বললাম,
~ না আসলেও হত।

~ অভিমান করেছেন?
~ অভিমান করে কি হবে?

~ ভীতুনির এত অভিমান হয় জানা ছিলনা।
~ জানার ইচ্ছে থাকলে তো জানবেন!
~ কানে ধরতে হবে নাকি এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকব?
~ কোনোটাই না।
~ অভিমান করে থাকবে?

~ করলে আপনার কি!
~ আচ্ছা আমি চলে যাচ্ছি। আমি ধড়পড়িয়ে বললাম,
~ এই না, যাবেননা।
অপরপাশ থেকে কোনো সাড়া নেই। কাঁদোকাঁদো গলায় বললাম, “চলে গেছেন বুঝি?”

পর্ব ০৫

একটুপর অনুভব করলাম উনি আমার পাশে বসল এবং নরমকন্ঠে বললেন, “একি আবার কান্না শুরু করলেন!”চোখ মুছতে মুছতে বললাম,
~ এভাবে হুট করে চলে গেলেন কেন?

~ আমি চলে গেলে আপনার কি! যতটা জানি জ্বীন দের মানুষ কখনোই কাছে আসতে দিতে চায়না। ভয় পায়, ঘৃণা করে তাদের।

~ আমি জানিনা। এইটুকু জানি আপনাকে খুব মিস করি, নিজেকে এখন একা মনে হয়না। আশেপাশেই আপনার অস্তিত্ব টের পাই।

আপনার কন্ঠ শোনার অপেক্ষা করি। উনি গম্ভীরকন্ঠে বললেন,
~ আপনি এর পরিণতি সম্পর্কে অবগত নন
~ পরিণতি, ভবিষ্যত কি হবে আমি জানিনা। জানতেও চাইনা। দয়া করে আপনি এমন করবেননা।
~ আমি দেখতে খুবই ভয়ানক।
~ দেখে তো আর আপনাকে অনুভব করছিনা। কন্ঠটা তো আপনারই। কন্ঠটাই আমাকে আপনার আগমনি বার্তা দেয়।

প্রথম বারের মত উনি আমার হাতদুটো স্পর্শ করলেন। আমি কেপে উঠলাম, এত্ত ঠান্ডা কেন উনার হাত! হাতদুটো জড়িয়ে বললেন, “আল্লাহর আর নিজের উপর সবসময় ভরসা রাখবেন। আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্য করেন। তবে কখনোই আল্লাহর পথ থেকে বিমুখ হবেননা। গুরুজনের অবাধ্য হবেননা।
জানিনা আপনার সাথে আর দেখা হবে কিনা! তবে আপনি সবসময় আমার মনে থাকবেন। আল্লাহ আপনার সহায় হোন।”

আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম। কি বলছেন এসব উনি! উনি কোথায় যাবেন? আর কি আমার সাথে দেখা দিবেননা।
আমি উনার হাত শক্ত করে বললাম, “আপনি কি আর আসবেননা? আপনার ভীতুনিকে ছেড়ে চলে যাচ্ছেন?”
মুর্হূতের মধ্যে আমার হাতটা শূণ্য হয়ে গেল। উনি অদৃশ্য হয়ে গেছেন।

খুব কষ্ট হচ্ছে, কেন উনি এমন করলেন। রুমের আলো ও জ্বলে উঠেছে। কান্নাটা আর চেপে রাখতে পারলামনা। কাদতে কাদতে ভাবলাম, “উনি কি আমার অনূভূতিগুলো পছন্দ করেননি? এমন করবেন জানলে কখনোই বলতামনা। আমার সব আশা উনি ভেঙে দিলেন। এমন না করলেও পারতেননা।
যাবেনই যখন তবে মায়া জাগাতে এলেন কেন?”

মনটা খুব খারাপ এই কয়েকদিন। উনি যাবার পর থেকে একটা আশায় ছিলাম। উনি উনার কথা ভুল প্রমাণ করে আবার আসবেন আমার কাছে। কিন্তু আর ফিরে এলেননা। বাবা তখনি আমার রুমে এসে দরজায় টোকা দিলেন। আমি তাড়াতাড়ি চোখের পানি মুছে মাথায় ওড়না দিয়ে বাবার সামনে এসে দাড়ালাম। বাবা আমার মুখে হাত দিয়ে বললেন,
~ তোমার কি মন খারাপ মা?

~ নাতো বাবা। কিছু বলবা?
~ হুম মা। একটা প্যাকেট হাতে দিয়ে বললেন, “তৈরী হয়ে নাও।”অবাক হয়ে বললাম,
~ কেন বাবা?

~ এখুনি তোমার বিয়ে পড়াব।
~ কি বলছো বাবা? হঠাৎ বিয়ে!
~ হঠাৎ নয় মা, অনেকদিন ধরেই ভাবছিলাম এই ব্যাপারটা। আজই ঠিক করলাম তোমায় বিয়ে দিব। খুব সাধারণভাবে সম্পন্ন করব।

~ বাবা আমায় না জানিয়ে তুমি বিয়েও ঠিক করে নিলে?
~ তুই আমার মতের উপর কথা বলবিনা, এই ভরসা আমার আছে।
~ বাবা আমি এই বিয়েওঘর থেকে বাবার ডাক এলো। বাবা আমার মাথায় হাত রেখে বলল, তাড়াতাড়ি তৈরী হয়ে নাও। বাদ যোহর তোমার কাবিননামা হবে।

বাবা চলে গেলেন। আমি উনার যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলাম। কি করব আমি! বাবার কথা ফেলব নাকি রাখব? না রাখলে বাবা কষ্ট পাবেন। সেই ছোট থেকে আদরযত্নে এত বড় করেছেন, তার মনে কষ্ট দিলে কি আল্লাহ আমায় ক্ষমা করবেন?

প্যাকেট খুলে দেখি অনেক সুন্দর একটা বোরকা। পরে মুখটাও ঢেকে নিলাম। বিয়ের কনে বোরকা পড়ে এটা জানা ছিলনা। বাবা হয়তো এমন কারো সাথেই বিয়ে দিচ্ছেন যে বাবার মত একজন আলেম।

যোহর নামায শেষ করে বাবা আমার ঘরে এলেন। দোয়া পড়ে কবুল বলতে বললেন। মুখ দিয়ে কবুল শব্দটা বের হচ্ছিলনা। তাও কোনোরকম তিনবার কবুল বলতে গিয়ে হু হু করে কেদে দিলাম। মনে মনে উনাকে ডাকছি, উনি যদি সাড়া দিয়ে তার ভীতুনিকে এই বিপদ থেকে সাহায্য করেন। কিন্তু কিছু হলোনা। বিয়েটা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হল। যার সাথে বিয়ে হয়েছে তাকে এখনো দেখলামনা।
কোথায় বসে আছে তাও জানিনা।

কাদতে কাদতে বাবা ভাইকে বিদায় দিয়ে গাড়িতে উঠে বসলাম। পাশে বসে যিনি গাড়ি চালাচ্ছেন তিনিই আমার স্বামী বুঝতে কষ্ট হলোনা। কেননা, আমাদের সাথে আর কেউই নেই। তাকালামনা তার দিকে, বড্ড অভিমান ভর করেছে আমার উপর। এই মানুষটা আর বাবার উপর। গাড়ির জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে রইলাম।

জ্বীনসাহেবকে খুব মিস করছি, তার কথা মনে পড়তেই চোখ থেকে দু’ফোটা জল চেহারায় গড়িয়ে পড়ল।
এমন একজনকে নিজের আপন করে পেতে চেয়েছি, যে আমার ব্যাপারে সম্পূর্ন উদাস। আমার চাওয়ার দামটুকুও সে দিলনা। খুব ঘৃণা হয় তাকে। ভাগ্যটা আমার প্রচন্ড খারাপ। নাহলে কি সবসময় আমার সাথে এমন অন্যায় হয়। ফিরে তাকাতে দেখি আমার স্বামী আমার দিকে টিস্যু বাড়িয়ে দিয়েছেন।

তার দিকে মুখ না ফিরিয়ে টিস্যু নিয়ে নিলাম। এমন একটা মানুষের পাশে বসে থাকতেও ইচ্ছে হচ্ছেনা যে কনের মতামত ছাড়াই তাকে বিয়ে করে নেয়।
বিকেলে এসে শ্বশুড়বাড়িতে পৌঁছালাম। অনেক বড় এবং সুন্দর বাড়ী তাদের। কিন্তু পুরো বাড়িতে তিনজন মেয়ে ছাড়া আর কাউকে চোখে পড়লনা। তারা আমাকে একটি ঘরে বসিয়ে রেখে গেল। খুব ক্লান্ত লাগছিল, চোখে কেমন জানি ঘুম নেমে আসছে। বোরকাটা খুলে গা টা বিছানায় এলিয়ে দিতে ঘুম চলে এল।

পর্ব ০৬

কারো রুমে ঢুকে দরজা লক করার শব্দে ঘুম ভাঙল। উঠে বসে দেখি আমার স্বামী নামক প্রানীটি ঘরে এসেছে। হাতে আবার ভারী খাবার সাজানো ট্রে।

ট্রে টা বেডটেবিলে রেখে আলমারী থেকে একটা লাল টুকটুকে শাড়ি বের করে হাতে দিয়ে ইশারা করলেন ফ্রেশ হয়ে নিতে। আমি শাড়ি নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়লাম। ফ্রেশ হয়ে তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে ভাবলাম, উনি কি বোবা নাকি? ইশারা দিয়ে বুঝালো কেন? বাবা শেষমেষ আমাকে একটা বোবা ছেলের সাথে বিয়ে দিল। আল্লাহ! কি জানে কি হবে?

ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে দেখি উনি বিছানার উপর বসে খাবার হাতে বসে আছেন। আমি আসতে ইশারায় পাশে বসতে বললেন। লক্ষী মেয়ের মত পাশে বসলাম। উনি খাবার আমার মুখের সামনে ধরলেন, খাইয়ে দিতে চাইছেন হয়তো। আমি বললাম, আমি খেয়ে নিতে পারব। উনি তাও হাতটা মুখের সামনে ধরে রাখলেন।

আজিব তো! জোর করে খাইয়ে দিয়ে ছাড়বে নাকি। এমনিতেই অনেক ক্ষুধা লেগেছে, তাই বাড়াবাড়ি না করে উনার হাতে খেয়ে নিচ্ছি। এতক্ষণ ভালো করে উনার দিকে না তাকালেও এখন তাকালাম। টকটকে ফর্সা, লম্বা চওড়া। চেহারায় এক একটা মায়া মায়া ভাব আছে। নাকের উপর মোটা ফ্রেমের চশমা থাকায় আরো বেশি ভালোলাগছে দেখতে। মোটামুটি পুরাই কিউটের ডিব্বা। শুধু আফসুস এত সুন্দর এবং ধনী হওয়া সত্ত্বেও বোবা।

আল্লাহর কি নিয়ামত!
এমন ভাবে যত্ন করে খাইয়ে দিচ্ছে যেন আমি অসুস্থ রোগী। পানিটাও নিজের হাতে খেতে দিলনা। খাওয়া শেষে উনি এসব রাখতে নিচে গেলেন। আমি আর কি করব বসে বসে রুমটা দেখছি। ভদ্রলোকের দেখি বেশ রুচি আছে। অনেক সুন্দর করে রুমটা সাজিয়েছেন।

আমি তো ভুলেই গেছি আজ আমাদের বাসররাত।
আজ কি উনি আমার সাথে থাকবেন নাকি? ভেবেই গায়ে কাটা দিয়ে উঠল। আল্লাহ কি হবে আমার! এমনি ভাবনার সময় উনি ঘরে ঢুকলেন। ইশারায় একটা লম্বা সালাম দিলেন। আমিও সালামের উত্তর দিয়ে বললাম, “কিছু বলবেন?”ভেতরে ভেতরে লজ্জায় মরে যাচ্ছি।

যা আমার করার কথা সেটা উনি করছেন। কি ভাব্বেন কি জানি! উনি মাথা নাড়িয়ে জায়নামাজ বিছিয়ে ডাকলেন। বুঝলাম উনি নামায পড়তে ডাকছেন। বাসররাতে স্বামী স্ত্রী মিলে যে নামায আদায় করতে হয় ওযু করে আমরা দুজন মিলে সেটাই আদায় করলাম।

নামায শেষে একলাফে উনার আগে বিছানায় উঠে এক কোনে গুটিসুটি মেরে শুয়ে ঘুমোনোর ভান করলাম। জানি এই পদ্ধতি কাজে দিবে নাকি তাও করলাম। উনাকে আমি মন থেকে স্বামী হিসেবে মানিনি এখনো তাই তার সাথে স্ত্রীর মত আচরণ করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। কিছুটা সময় পার হয়ে গেল আধ চোখ মেলে দেখলাম উনি আমার দিকে এগিয়ে আসছেন। আল্লাহ তুমি বাচাও আমারে।

প্রস্তুত হয়ে নিলাম আমাকে স্পর্শ করলে কড়া কথা শুনিয়ে দিব ঘুম ভাঙানোর জন্য। উনি এসে আমার গায়ে চাদর টেনে দিয়ে চলে গেলেন। যাক বাবা হাফ ছেড়ে বাচলাম। রুমের লাইট অফ করে হালকা পাওয়ারের আলো জ্বালিয়ে দিলেম। আমি বিছানা হাতড়াতে লাগলাম উনি পাশে আছেন কিনা বুঝতে। পুরো বিছানায় আমি একা। উনি কই?

ঘুমের মধ্যে খাটের নিচে পড়ে গেলেন নাকি! খাটের নিচটায় একবার উঁকি দিলাম। পুরো ঘরেই উনি নেই। অন্য ঘরে ঘুমিয়েছেন ভেবে নিশ্চিন্ত মনে ঘুমিয়ে গেলাম।
ফজরের আযান দেওয়ার সময় ঘুম ভেঙে গেল। দেখি কেউ ঝুকে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। আতকে উঠে বসল। উনি আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিলেন।

বিরক্ত বোধ করলাম, এভাবে কেউ ভয় লাগিয়ে আবার হাসে। কচুর স্বামী। উনি ঘড়ির দিকে ইশারা করলেন। আমি কিছু না বলে উঠে ফ্রেশ হয়ে নামায পড়লাম। নামায পড়ে উনাকে রুমে দেখলামনা। এই আবার কেমন মানুষ। এই দেখি আবার এই নাই! উনাকে খুজতে রুম থেকে বের হলাম। পরে কি ভেবে উনাকে না খুজে সোজা বাসার বাহিরে আসলাম।

উনার বাসার সামনেও অনেক বড় বাগান। মৃদু মন্দ বাতাস বয়ছে, চারদিকে পাখির কলরব। চোখ বন্ধ করে লম্বা শ্বাস নিয়ে ভালোলাগা অনুভব করছি। চোখ খুলে দেখি উনি আমার সামনে চায়ের কাপ হাতে দাঁড়িয়েছে আছেন। আমাকে চায়ের কাপ টা এগিয়ে দিয়ে পাশে থাকা দোলনায় বসার ইশারা করলেন। কি যে হচ্ছে বুঝতেই পারছিনা! এত্ত কেয়ার করে কেন?

এই কেয়ারিংটা আমার অস্বস্তির কারণ হয়ে যাচ্ছে। আমি চা টা খেয়ে রান্নাঘরে চলে এলাম। এই বাড়িতে মানুষ একজন কিন্তু রুম অনেকগুলা। রান্নাঘর খুজে পেতে বেগ পেতে হল। ঢুকে দেখি মেয়ে ২টা নাস্তা প্রস্তুত করছে। আমাকে দেখে সবিনয়ে সালাম দিল। একজন হাসিমুখে বলল, “আপনি আবার কস্ট করে রান্নাঘরে আসতে গেলেন কেন ভাবী?”

~ সব কাজ কি তোমরা একা করবা নাকি বোন? আমিও একটু হাত লাগাই। অপরজন বলল,
~ আপনি নতুন বউ। কিছুদিন না করলে কিচ্ছু হবেনা। সংসারটা তো আপনারই। এই কয়েকদিন বরঙ আমাদের ভাইয়ার সেবা করুন। বলেই দুজন খিলখিলিয়ে হাসতে লাগল।

আমার এসব কথা শুনে লজ্জা লাগছে। তবে মিশুক টাইপের মেয়েগুলোর সাথে কথা বলে অস্বস্তিটা অনেকটাই কাটিয়ে নিলাম।
একসাথে বসে দুজন নাস্তা করার পর উনাকে আর বাকিটা সময় বাসায় দেখলামনা। কোথায় গেছে বলেও যায়নি। এইদিকে আমি গোসল করতে যাব, পরার মত শাড়ি পাচ্ছিনা।

বাসা থেকে কিচ্ছু আনিনি, এইবার পড়বটা কি! মনে পড়ল কাল রাতে উনি আলমারি থেকে একটা শাড়ি বের করে দিয়েছেন।
সেই ভেবেই আলমারি খুলে দেখি অনেক শাড়ি~ গয়না সাজিয়ে রেখেছেন উনি। বাহ! বিয়ের আগেই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলেন।

এমন স্বামী পেয়ে নিজেকে ভাগ্যবতী মনে করার কথা কিন্তু আমার সেসব মনে হচ্ছেনা। আমি এমনটা চাইনি ঠিক তা নয়, তবে যাকে খুব করে চেয়েছি এই সে নয়। পুরোনো কথা মনে উঠতেই একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লাম। খুব জানতে করছেন উনি কেমন আছেন?
আমাকে কি একবারো মনে পড়েনা! স্বার্থপররা বুঝি এমনই হয়।

মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল। বিকেলের দিকে স্বামী কোন রাজকার্য সেরে বাসায় ফিরলেন। উনাকে ছাড়া আমার দুপুরের খাবার খেতে কেমন জানি লজ্জা করছিল। তাই মেয়েগুলো বার বার বলা সত্ত্বেও খেলামনা। পেটের মধ্যে মনে হচ্ছে ডায়নোসর দৌড়াচ্ছে তাও পেট চেপে বসে আছি উনার অপেক্ষায়। শত হলেও নতুন বউ আমি, একটু আধটু তো এসব করাই লাগবে।

উনি রুমে ঢোকার সাথে চোখ রাঙিয়ে তার দিকে তাকালাম আর মনে মনে যত ভদ্র গালি আছে একটাও দিতে বাদ রাখলামনা। উনি আমার এই রুপ দেখে থতমত খেয়ে গেলেন। কি যেন ভেবে রুম থেকে কিছু না বলে বেরিয়ে গেলেন।

আচ্ছা পচা লোক তো একটা মেয়ে তার জন্য সকাল থেকে না খেয়ে বসে আছে আর তিনি গায়ে হাওয়া লাগাতে আবার বেরিয়ে গেলেন। নিজের কষ্ট নিজে ছাড়া আর কেউ বুঝেনা। হায় কপাল, এমন একটা স্বামী ও ভাগ্যে ছিল।
মিনিট কয়েকের মধ্যে উনি আবার খাবার নিয়ে হাজির।

খাবার দেখেই নিয়ে খেতে শুরু করলাম। একটু খাওয়ার পর উনার দিকে তাকিয়ে দেখি উনি ড্যাপড্যাপ করে আমার খাওয়া দেখছেন। বিষম খেয়ে গেলাম, উনি তাড়াতাড়ি উঠে পানির গ্লাস এগিয়ে দিয়ে মাথায় ফু দিয়ে দিলেন। স্বাভাবিক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, “আপনি খাবেননা?”উনি কিছু না বলে বড় করে হা করলেন।

এমা এই দামড়া ছেলেটাকে কি এখন খাইয়ে দিতে হবে নাকি! হা যখন করে আছেন, না খাইয়ে দিয়ে উপায় কি!
অনিচ্ছাসত্ত্বেও খাইয়ে দিলাম।

পর্ব ০৭

রাতে খুব ছটফট করছি, ঘুম আসছেনা। আমার পাশের মানুষটা কি নিশ্চিন্তে ঘুম দিচ্ছে। উনি পাশে শোয়ায় খুব অস্বস্তি লাগছে। কিছুক্ষণ এই পাশ ওই পাশ করে ঘুমানোর চেষ্টা করলাম, কিন্তু ঘুম আসছেনা। কেন জানি মনে হচ্ছে জ্বীনসাহেব আমার আশে পাশেই কোথাও আছে। বিছানা থেকে নেমে অন্ধকারে হাতড়ে রুমের জানালা খুলে দিতেই এক ফালি জ্যোৎস্না এসে আমার গায়ে পড়ল।

এমনি এক জ্যোৎস্নায় সে আমার পাশে ছিল। খুব মনে পড়ছে তার কথা। জানালায় মাথা ঠেকিয়ে অতীতের স্মৃতিচারণ করছি। হঠাৎ দমকা হাওয়ায় একটা কন্ঠ ভেসে এল, “আমাকে কি খুব মনে পড়ে?”
চমকে উঠে রুমের এইদিক ওইদিক তাকাতে থাকি।

ভুল শুনিনি, সত্যি আমার জ্বীনসাহেব ফিরে এসেছেন। জানালার অপরপাশে অন্ধকারে একটা আবছা প্রতিমুর্তি দেখে বুঝলাম এতদিনের ব্যর্থ আশা বাস্তবতায় পরিণতি পেয়েছে।
আমি মুখ গোমড়া করে বললাম, “আপনি কি জানেননা?”
~ হুম জানি তো। কেমন আছো?

~ আপনাকে ছাড়া যেমন থাকা যায়। আপনি তো খুব ভালো আছেন। একটু হেসে বলল,
~ অবশ্যই। আমি কি খারাপ থাকতে পারি এত মিষ্টি বউ থাকতে। কথাটা নিমিষে গিয়ে কলিজায় লাগল।
~ আপনার বউ মানে? আপনি বিয়ে করে নিয়েছেন?
~ তা তো আপনিও করেছেন।

~ বাধ্য হয়ে করেছি। মনে শুধুই আপনার রাজত্ব এখনো। কিন্তু আপনি এটা কি করে করতে পারলেন?
~ কেন? আমার যাকে পছন্দ তাকে কি বিয়ে করতে পারিনা? টের পেলাম আমার চোখের অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। সেটা উনার চোখে পড়ার আগে মুছে নিয়ে বললাম, “তা আপনি অবশ্যই পারেন। ভালো থাকবেন!”বলে জানালার কাছ থেকে সরে আসতে চাইলাম। উনি নরমকন্ঠে বললেন,
~ আমায় দেখতে চাননা বুঝি?

~ অন্যের স্বামীকে দেখে কি করব!
~ তাও দেখে নিজের মনকে শান্ত করুন। বলেই জানালার চাঁদের আলোয় এসে দাড়ালেন। আমি পাথরের মত দাড়িয়ে অবাক হয়ে দেখতে লাগলাম।

নিজের অজান্তেই বলে ফেললাম, “একি আপনি?”
সে মুচকি হেসে বলল, “হ্যাঁ, আমি আপনার বর”
~ এটা কি করে সম্ভব হল?

~ মনের টান টা শক্ত থাকলে সবি সম্ভব!
~ এটা কোনো মায়া নয় তো?

~ একদমই না। আমি মুস্তফা, আপনার বাবার বিশ্বস্ত পালিত জ্বীন। ছোট থেকেই আপনার বাবার কাছেই বড় হয়েছি, উনার আদেশেই আপনাকে বিয়ে করেছি।

~ বাবা রাজি হলেন?
~ আপনার বাবার মনের আশা ছিল তার পুত্র সমতুল্য জ্বীনের সাথে আপনার বিয়ে দেওয়ার। এর পিছনে আরেকটা কারণ ও আছে। সেটা সময় আসলে জানতে পারবেন। এইটুকু বুঝলেন আল্লাহ আপনার আমার ভরসা টাকে মিথ্যে করেননি।

~ শুকরিয়া আল্লাহর কাছে। আমি এটা কল্পনাও করতে পারিনি। কিন্তু আপনি এটা কেন আমাকে আগে জানাননি?
~ আপনার ধের্য্য দেখতে চেয়েছি। যাকে বিয়ে করেছি তাকে একটু যাচাই করবনা। অবশ্য এর জন্য মনে মনে নিশ্চয় আপনার কম বকা খাইনি।

আমি উনাকে জড়িয়ে ধরে বললাম, আপনি আসলেই অনেক পচা। এত কষ্ট কি করে দিতে পারলেন!
উনি কিছু না বলে আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন। আমরা বিশেষ মূহুর্তে প্রবেশ করার সময় হঠাৎ ঘরে একটা বিকট শব্দ হল। উনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে অন্ধকারের মধ্যে হারিয়ে গেলেন। উনাকে ডাকলাম কয়েকবার কিন্তু সাড়া পড়লাম না। কিছুক্ষন পর ধস্তাধস্তির আওয়াজ শুনলাম।

মনে হল কেউ যুদ্ধ করে ঘরটাকে তছনছ করে দিচ্ছে। আমার জ্বীনবরের গোঙানি শুনে আমি আর বসে থাকতে পারলামনা। হাতড়ে রুমের লাইটটা অন করলাম।
লাইট অন করতেই দেখি ঘরটা এলোমেলো হয়ে আছে, মুস্তফা মেঝেতে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে। তার নাকমুখ থেকে রক্ত বের হচ্ছে। তার এই অবস্থা দেখে আমার প্রচন্ড কান্না চলে এল।

সেবাযত্ন করে উনার জ্ঞান ফেরালাম।
বিকেলের দিকে উনি অনেকটা সুস্থ হলেন। তখনি হুট করে বললেন, “চল বাবার বাসা থেকে ঘুরে আসি।”
~ কিন্তু আপনি তো অসুস্থ।
~ আমি এখন অনেকটা সুস্থবোধ করছি। চল, তুমি তৈরী হয়ে নাও। আমি আর কথা না বাড়িয়ে উনার কথামত প্রস্তুত হয়ে গাড়িতে উঠে বসল।

উনি চুপচাপ গাড়ি ড্রাইভ করছেন। আমার মনটা বড্ড খুতখুত করছে। একে তো উনার উপর আক্রমন হয়েছে কেন, কি কারণে, কার দ্বারা হয়েছে সেটা জিজ্ঞেস করা হয়নি। এর উপর অসুস্থতা নিয়ে বাবার সাথে দেখা করতে যাচ্ছেন। কিছুই বুঝতে পারছিনা।

নীরবতা ভেঙে আমি জিজ্ঞেস করলাম, “কাল রাতে কে আপনাকে আঘাত করেছে?”
~ যে চায় না আমরা একসাথে থাকি। কথাটা মাথায় ঢুকে গেল। ভাবতে লাগলাম, কে চায়না? তবে উনার জগতের কেউ চাচ্ছেনা উনি মানুষের সাথে সংসার করুক। তাই উনাকে আমার থেকে কেড়ে নিতে চাইছে।

বাবার বাসায় ঢুকতেই বাবাকে সামনে পেলাম। সালাম কুশলাদি সেরে মুমিনের ঘরের দিকে গেলাম। অনেকদিন দেখিনা ভাইটাকে। মুমিনের সাথে দেখা করে রান্নাঘরে ঢুকে চা বানালাম। চা নিয়ে বাবার ঘরের সামনে আসতেই শুনলাম। উনি বাবাকে বলছেন,
~ বাবা আপনি আমাকে উপায় বলুন। আমি চাইনা মুশায়রাকে ওরা আঘাত করুক, আমাদের সংসারটা নষ্ট করে দিক।
~ শান্ত হও মুস্তফা। এমন বিপদের আশংকা আমিও করেছিলাম। কিন্তু ভেবোনা খুব তাড়াতাড়ি আমি কিছু একটা চেষ্টা করব। তোমরা এইখানে কিছুদিন থাকো
আমার এই বাসাটা বন দেওয়া আছে, কোনো খারাপ শক্তি প্রবেশ করতে পারবেনা।

এটা শুনে আমার হাত পা কাপতে শুরু করল। তার মানে আমি যা ভাবছি তাই হচ্ছে। মুস্তফা আমাকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে বলল, ভেতরে আসুন।
আমি হাসিমুখে কোনোরকম চা টা রেখে রুমে চলে এলাম। মাথার ভেতর হাজারটা প্রশ্ন ঘোরপাক খাচ্ছে। মুস্তফার থেকে সব না জানা অবধি শান্তি পাচ্ছিনা।

রাতে ওর বুকে মাথা রেখে জিজ্ঞেস করলাম, “আমাকে দয়া করে বলুন কে আমাদের ক্ষতি চাইছে?”
~ এমন একজন আছে। এসব ভেবোনা, আল্লাহর উপর ভরসা রাখো। তিনি ঠিকিই আমাদের রক্ষা করবেন।

এই বলে তিনি আমাকে পরমযত্নে বুকের মাঝে টেনে নিলেন। কিছুদিন বাবার বাসায় থাকার পর বাসায় ফেরার জন্য রওনা হলাম। যাওয়ার সময় বাবা আমাদের দুজনকে দুটো আল্লাহর কালামের তাবিজ দিলেন এবং বললেন, “এটা কাছ ছাড়া করোনা তোমরা। আর মন দিয়ে আল্লাহ ডাকো, তার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করো।”

পর্ব ০৮ এবং শেষ পর্ব

বাবার বাসা থেকে আসার পর আমাদের আর কোনো সমস্যা হয়নি। খুব সুন্দর সংসার সাজিয়েছিলাম দুজন মিলে। ভালোবাসায় পরিপূর্ণ ছিল।

সকালটা শুরু হত কপালে উনার ঠোঁটের স্পর্শে ঘুম ভেঙে। সারাটাদিন খুন সুটি তে কাটতো। পালা করে এক একেকদিন একজন অপরজনকে খাইয়ে দিতাম। সন্ধ্যায় ছাদে বসে চাঁদ দেখতে দেখতে উনার কাধে মাথা রেখে নানারকম গল্প জুড়ে দিতাম। রাতে উনার বুকে মাথা রেখে না ঘুমালে ঘুমই আসতোনা।

মাঝে মাঝে নিজেকে নিজের হিংসে হত এত ভালো কেয়ারিং স্বামীর ভালোবাসা পেয়ে।
এত সুখের সংসার আরো খুশি বয়ে এনে দিল আমার একটি সুসংবাদ।

আমি মা হতে চলেছি। উনাকে জানানোমাত্রই উনি প্রথমে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করলেন। পরে আমাকে কোলে তুলে বললেন,
~ মুশায়রা তুমি আমাকে কতটা খুশি করেছো তোমাকে বলে বুঝাতে পারবনা।
~ আপনার খুশি দেখে আমারো অনেক খুশি লাগছে। এখন আমাকে কোল থেকে নামান। আমার ভয় লাগছে, পড়ে যাব তো।

~ পড়বেনা ভীতুনি। আমার তো ইচ্ছে করছে তোমাকে বুকের কোঠোরে লুকিয়ে রাখি।
~ লুকোবেন কেন? প্রশ্নটা শুনে উনার মুখে দুশ্চিন্তার ছাপ দেখতে পেলাম। উনার এমন মুখ দেখলে আমার খুব কষ্ট হয়। তাই উনাকে খুশি করার জন্য বললাম,
~ আমাদের ছেলে হবে নাকি মেয়ে?

উনি পুলকিত হয়ে বললেন,
~ আল্লাহ যেটা দেন, সেটাই আমার জন্য শুকরিয়া। তবে আমার শখ একটা মিষ্টি রাজকন্যার।
~ আল্লাহ আপনার মনের ইচ্ছে কবুল করুক।

দেখতে দেখতে ৮টা মাস কেটে গেল। এখন উঠতে বসতে অনেক কষ্ট হয়। উনি সবসময় আমার পাশে থাকেন। সব কাজ করে দেন। আগের থেকে অনেক বেশী যত্ন করেন। চুল বেধে দেন, শাড়ির কুচি ঠিক করে দেন, ওযু করিয়ে দেন। সবসময় আমাকে সময় দেন, কখনোই একা ছাড়তে চাননা। এসব নিয়ে খুব ভালো দিন কাটছিল আমার। কিন্তু ইদানীং আমার খুব অস্বস্তি হয়।

মনে হচ্ছে কেউ আমার উপর সারাক্ষণ নজর রাখছে। আশেপাশে খারাপ কিছু উপস্থিতি টের পাই। উনাকে এসব ব্যাপারে কিছু বলিনি যদি অযথা চিন্তা করেন।
আজ সকালে উনি কি একটা কাজে বাহিরে বেরিয়েছেন। আমি নিচে নামতে যাচ্ছি কাজের মেয়ে ৩টাকে ডাকতে।

অনেকক্ষণ ধরে রুম থেকে সবাইকে ডাকছি কিন্তু কারো সাড়া পাচ্ছিনা। তাই ওদের খুজতে সিড়ি বেয়ে নিচে নামছি। দুটো কি তিনটা সিড়ি সাবধানে বেয়ে নেমেছি, চিৎকার করে সিড়ি থেকে নিচে পড়ে গেলাম।

তারপর কি হয়েছে জানিনা। জ্ঞান ফিরতে দেখি আমি বিছানায় শুয়ে আছি। পাশে উনি আমার হাত ধরে বসে আছেন। উনার দিকে তাকিয়ে দেখি চোখ দুটো ফুলে আছে, নিশ্চয়ই অনেকক্ষণ ধরে কেদেছেন। আমি উঠে বসে উনার গালে হাত রেখে বললাম,
~ কেদেছেন কেন?

~ তুমি সিড়ি থেকে পড়লে কি করে? তোমাকে না বারণ করে গিয়েছিলাম একা একা নিচে নামবেনা।
~ আমি তো সাবধানেই নামছিলাম। হঠাৎ মনে হল কেউ আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিল।
~ একি তোমার হাতের তাবিজ টা কোথায়?

~ গোসল করার সময় খুলে কোথায় যেন রেখেছিলাম এরপর থেকে আর পাচ্ছিনা। তাই তো সাবিনা~ সাবিবা, রিতাকে ডাকছিলাম যাতে ওরা আমাকে খুজে দেয়। এটা শুনে উনি পুরো ঘর খুজলেন কিন্তু পেলেননা।

পরে এসে উনার তাবিজ টা খুলে আমাকে পরিয়ে দিলেন।
~ এটা আপনার তাবিজ আমাকে পরাচ্ছেন কেন? এটা আপনার কাছে রাখুন, আল্লাহ না করুক আপনার যদি কোনো ক্ষতি হয়ে যায়।

~ আমার সবচেয়ে বড় ক্ষতি তো হবে যদি তোমার আর আমার সন্তানের কিছু হয়। এটা সাবধানে রেখো।
আজ যদি সাবিনা তোমাকে ছুটে এসে না ধরতো, কি হত ভেবে দেখো। এই কথা শুনে আমারো গা শিউরে উঠল, আসলেই তো আজ বড় কিছু ঘটে যেত।

বিকেলের দিকে বাবা আর ভাই আমাকে দেখতে এলেন। বাবাকে অনেক খুশি দেখেছিলাম আমার সুসংবাদে। কিন্তু আজকের ঘটনা শোনার পর উনার মুখ কালো হয়ে গেল।
~ মা তোমাকে আরো বেশি সাবধান হতে হবে। কেউ চায়না তোমাদের সন্তান এই পৃথিবীতে আসুক। তার জন্য সে যা খুশি করতে পারে।

~ কে সে বাবা? কে চায়না?
~ তোমার মা।
~ কি বলছো কি বাবা?

~ হুম, তোমার একজন কালোযাদুকরী, শয়তানের পূজাকারিণী। আমি যখন জেনে এসবে বাধা দিয়েছিলাম, তোমার মা প্রচন্ড ক্ষেপে আমাদেরকে ছেড়ে চলে গিয়েছেন।
~ কিন্তু মা কেন আমার এতবড় ক্ষতি চায়?

বাবা কিছু বলার আগে দেখি বাবা আর ভাই শুণ্যে ভেসে উঠছে। এটা দেখে আমি চিৎকার করতে থাকি। একটা অদৃশ্য নারীকন্ঠ আমাকে বলছে, বাবা আর ভাইকে বাচাতে চাইলে তাবিজ ছুড়ে ফেলে দাও।

বাবা আমাকে বারণ করে বলছেন, না মা, আমাদের যাই হোক তুমি তাবিজ খুলবেনা। আমার কসম লাগে মা।
বাবার এই কথা শোনার পর কে যেন বাবা আর ভাইকে আমার চোখের সামনে দুটুকরো করে ছিড়ে ফেলল।

এই দৃশ্য সহ্য করতে না পেরে আমি জ্ঞান হারাই।
জ্ঞান ফেরার পর দেখি মুস্তফা নীরবে কাদছে। আমি ওকে জড়িয়ে ধরে বলি, ওই শয়তানী আমার বাবা আর ভাইকে মেরে ফেলেছে।

~ শান্ত হও মুশায়রা। আমার কাছে কোনো শক্তি নেই এসব মোকাবেলা করার। সব শক্তি আমি হারিয়ে ফেলেছি। তাই কোনোঅবস্থাতেই তুমি এই তাবিজ খুলবেনা।
~ ও আপনার কোনো ক্ষতি করবেনা তো!

~ ভেবোনা আমার কিচ্ছু হবেনা। এসো ঘুমাও।
মাঝরাতে উঠে দেখি মুস্তফা আমার পাশে নেই। দেয়ালে রক্ত দিয়ে লেখা, “নিজের স্বামীকে বাচাতে চাইলে কালো পাহাড়ে চলে এসো।”

পরেরদিন রাতে আমি সেই পাহাড়ের গুহার সামনে আসি। দেখি একজন ভয়ংকর মহিলা আগুনের সামনে বসে বিড়বিড় করছেন। মুস্তফা একটা ছোট বোতলে বন্দি। আমার ভাবতেও ঘৃণা হচ্ছে এই বাজে মহিলাটি আমার মা। আমাকে দেখে বলল,
~ তাবিজ খুলে ফেল।

~ খুলবনা। কি করবেন আপনি? আমার কথা শুনে মহিলা উচ্চস্বরে হেসে উঠল। হাতে একটা পুতুল নিয়ে পুতুলটির বুকের বামদিকে সুচ প্রবেশ করাল। সাথে সাথে মুস্তফা আর্তনাদ করে নিচে লুটিয়ে পড়ল।
আমি চিৎকার করে উঠলাম।

~ দেখবি কি করে তোর চোখের সামনে তোর স্বামীকে টুকরো টুকরো করি।
~ না ওকে কিছু করবেননা। আমি তাবিজ খুলে ফেলছি।

আমি হাত থেকে তাবিজ খুলে ছুড়ে ফেলে দিলাম।
মহিলাটি আমার দিকে এগিয়ে এসে বলল, “তোর স্বামী তো মরে গেছে এখন তোর পালা। মহিলাটি আমার বুকে ধারালো ছুরি বসিয়ে দিয়ে ধাক্কা দিয়ে পাহাড় থেকে ফেলে দিল।

যত নিচে পড়ে যাচ্ছি আমার নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে।
কাপা কাপা কন্ঠে শেষ আর্তনাদ করলাম, “আল্লাহ আপনি এর উত্তম প্রতিদান দিন।”

লেখা – আস্থা রহমান শান্ত্বনা

সমাপ্ত

(পাঠক আপনাদের ভালোলাগার উদ্দেশ্যেই প্রতিনিয়ত আমাদের লেখা। আপনাদের একটি শেয়ার আমাদের লেখার স্পৃহা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আমাদের এই পর্বের “জ্বীনবর – লোমহর্ষক ভয়ানক ভুতের গল্প ২০১১” গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম। ধন্যবাদ।)

আরো পড়ূন – জ্বীনবর (সিজন ২) – ভয়ঙ্কর ভূতের গল্প বলো

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *