নিঝুম বিকেল – ভয়ানক ভৌতিক গল্প: রুমে এসে বিশাল ভাবনায় ডুব দিয়ে পাবনার পথ খুঁজছে। বাতাসে আজ কেনও মনোমুগ্ধকর কারো স্পর্শে শরীরে ঝাঁকুনি লাগলো কেনও আজ আমি এতো টা শিহরিত হলাম, ঈশিকার মনে, অদ্ভুত অদৃশ্য ছায়া, মনের দুয়ারে বারবার কড়া নাড়ছে।
পর্ব ০১
“নিশিকান্ত বেলা আমার
যায় যে ফুরিয়ে,
তবুও যেনো মিথ্যে মায়া
এই রজনী তে”
~ ঘুমের ঘোরে ঈশিকা বার~ বার কালো অন্ধকার দেখছে। ঈশিকা কে বাঁচানোর জন্য কেউ একজন আগুনে ঝাপ দিলো।
আচমকাই ঈশিকার চোখের ঘুমটাও হারিয়ে গেলো।
ঈশিকা মনে মনে চিন্তা করলো, জীবনের একমাত্র লক্ষ্য হলো যেখানে যেটা প্রয়োজন সেটাই করা। আনন্দের সময় আনন্দ, চুপ থাকার সময় একেবারে মুখে হাতি, ঘোড়া ঢুকিয়ে মুখে কুলুপ লাগানো। তাই ঈশিকা যেমন নীরব তেমন চঞ্চল চড়ুই পাখিও বটে।
তাই ঈশিকা ব্যাপারটা ভুলে গেলো। তার কারণ হলো এটা নিছকই স্বপ্ন, যা ভেঙে গেলেই শেষ।
~ রাত দশ~ টা বাজে খুব একটা রাতও হয় নি আবার কমও হয়নি। শুয়ে শুয়ে মোবাইল টিপছে ঈশিকা, শাকচুন্নি ফ্রেন্ডদের ছবিতে এংরি রিয়েক্ট দিচ্ছে, ঈশিকার তো বেশ ইচ্ছে করছে সবগুলোর চুল ছিঁড়ে কুকুরের মাথায় লাগিয়ে দিতে, আর কুকুরের লেজ কেটে ওদের লাগিয়ে দিতে। কারণটা হলো ঈশিকা একটু অসুস্থ ছিলো এরই সবকটা ঘুরতে যাওয়ার জন্য আকুপাকু করে শেষমেশ ঘুরতেই চলে গেলো।
কেউ কেউ জিব বের করে এমনভাবে ছবি তুলেছে যেনো পোলিও আক্রান্ত রোগী, কেউ চোখ টিপ মেরে ছবি দিয়েছে যেনো চোখে ঠাডা পড়েছে, আরেকজন ঠোঁট বাঁকিয়ে ছবি তুলেছে, ইচ্ছেতো করছে কুকুর কে দিয়ে ঠোঁটগুলি কামড়ে দিতে।
ঈশিকা আবার অন্যদের মতো এতো কিপ্টে নয়, যতোটা সম্ভব লাইক, কমেন্ট করে নিচে কমেন্ট করে দিলো, ময়দা সুন্দরীরা বাস্তবে আপনাদের কে দেখলে ছেলেরা হুঁশ হয়ে হয়ে বেহুঁশ হতে থাকবে। ছবিতে এক~ এক জনকে পেত্নী, ডাইনীর নানি, দাদি থেকেও কম লাগছে না।
আরেকজন ছেলের ছবি আসলো সামনে তেমন পরিচিত নয়, ভাবলো কিপ্টেমি করে কী লাভ একটু দয়া দেখানো বিশাল মনের পরিচয়। তাই ভাবলো বেচারার কাছে বিশাল মনের পরিচয় দিতে গিয়ে একটা কমেন্ট করা যায়।কমেন্টে লিখলো, আপনার শরীর তো একদম শুটকি মাছের থেকেও কম লাগছে না।
ঝড়ের দিনে বের হবেন না, নয় তো খড়কুটোর মতো যে কোনো সময় উড়ে যেতে পারেন। নিউজ ফিড গুলো আরো ঘেঁটে ঘেঁটে দেখছে।
হঠাৎ ঈশিকার মা ডাক দিলো এই ঈশিকা, ঈশিকা আর কতো মোবাইল টিপবি এক কাজ কর মোবাইল কোম্পানিতে খবর দিয়ে মোবাইলের মধ্যে ঢুকে যা।
ঈশিকা চরম বিরক্তি নিয়ে ডাইনিং রুমের দিকে আঁড়চোখে তাকালো আর ভাবলো, এই বাঙালি মায়েদের এই এক প্রবলেম, শ্বাশুড়ির মতো সারাক্ষণ চোখে চোখে রাখা। তবুও মায়ের গুরুগম্ভীরতা বুঝে নিয়ে মোবাইল খানা রেখে গুটিগুটি হেঁটে চেয়ার টেনে বসলো।
ঈশিকা হাসি~ হাসি মুখে মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে বললো সারাক্ষণ ডাকাডাকি করো কেনও, দশমাস দশদিন পেটে ধরে পৃথিবীতে নিয়ে এসেছো কেনও বলো তো পেটের মধ্যে রেখে দিলেই তো হতো।
তাহলে তো কষ্ট করে আর ডাকতে হতো না, আর না আমাকে কষ্ট করে তোমার কাছে ছোটে আসতে হতো।
~ মা একটা কাজ করো মোবাইল কোম্পানিকে খবর না দিয়ে ডাক্তারের কাছে গিয়ে আমাকে আবার তোমার পেটে ঢুকিয়ে নাও।
পাগলি মেয়ে বলছিস কী এসব, পেট থেকে কেউ একবার বের হলে বুঝি আবার পেটে ঢুকানো যায়?
কী যে বলো মা, এখনকার যুগ হলো আপডেট, এ যুগে সবি সম্ভব। কয়দিন পর দেখবে আমাদের মানুষ জাতি জ্বীন, ভূত, এলিয়েনদের সাথেও ঝগড়া লেগে গেছে, বান্দর বান্দরনি হানিমুনে সুইজারল্যান্ড চলে গেছে, আম গাছে কাঁঠাল, জাম গাছে কলা, লেবু গাছে পেয়ারা ধরেছে।
আমার বড়ো ভাই বলে উঠলো, ঈশিকা তোর ফ্রেন্ড বান্দুরনির বিয়েতে কিন্তু আমাকেও নিয়ে যাস, কতোদিন হলো বিয়ের রোস্ট, পোলাও খাইনা, আমি চিন্তা করে রেখেছি তুই গেলে আমিও লুকিয়ে লুকিয়ে তোর সাথে বিনা দাওয়াতে হলেও চলে যাবো।
আম গাছে যে কাঁঠাল, জাম গাছে কলা তাও খেতে চাই চুরি করে হলেও আমাকে খাওয়াতে হবে, দরকার পরলে বানরদের মতো গাছে উঠে পেরে নিয়ে আসবি বুঝলি তো এখন যুগটাই হলো আপডেট।
আমি আমার ভাইয়ের কথা শুনে রীতিমতো অবাক, আমার কথা দিয়ে আমাকেই গোটা গাতা দিচ্ছে।
আচ্ছা ভাই তুই চিন্তা করিস না বিয়েতে আমি দাওয়াত পাই কিনা সন্দেহ তবে যদিও যাই, চুরি করে হলেও তোর জন্য টিস্যু পেপারে মুড়িয়ে আনবো। আমার ভাই যে পেটুক তা সবারই জানা তাই আনতে কোনো প্রবলেম হবে না আমার।
ঈশিকার আম্মিজান এসে বললো কিরে ঈশিকা তোর এখনো খাওয়া হয় নি হসপিটালে যাবি কখন?
ঈশিকা ডেন্টালে পড়ে। জোড় গলায় বললো, ওহ্ মা এতো চিন্তা করো না তো, এক দৌড়ে চলে যাবো।
হ্যাঁ তুই তো বাতাসির মা, বাতাসের বেগে দৌড়ে চলে যাবো।
ঈশিকা চিৎকার দিয়ে বললো, মা তুমি আমাকে এভাবে বলতে পারলে! আমি কি তোমার দত্তক মেয়ে।
~ ঈশিকার ভাই রোহান বলে উঠলো ওমা তা কী আর বলতে, জানিস না তুই, তোকে তো আমরা পথেই পেয়েছিলাম। আমি, মা~ বাবা একদিন ঘুরতে গিয়ে তোকে পাই, তুই তখন ভিক্ষা করতি। আমি তোকে দেখে মা’কে বললাম, মা দেখো না ছোট মেয়েটা কী কিউট পরী চলো না ওকে ভিক্ষা করতে না দিয়ে আমার বোন বানিয়ে দাও।
মা~ ও আর না করে নি কারণ তুই যেভাবে ভিক্ষা করছিলি এতে সবার মায়া লাগলো তাঁর উপর তুই ছিলি দেখতে কিউট পরী। সবাই রাজিও হলো।
এরপর থেকে তুই আমার বোন।
~ ঈশিকা ঠোঁট উল্টিয়ে মুখ বাঁকিয়ে বললো মা ভাইয়া যা বলছে তা কী সত্যি, যদি সত্যি হয় আমি কিন্তু কেঁদে এই বাড়ি কে নদী বানিয়ে ছাড়বো, ভাই কে খামচে চিতাবাঘ বানিয়ে দেবো, ঘরের একটা জিনিসপত্র আস্ত থাকবেনা, ভুমিকম্পের মতো সব ভেঙে চুরমার করে মরুভূমি বানিয়ে ছাড়বো।
তোকে রোহান বলেছে আর তুই বোকার মতো বিশ্বাস করে নিলি। তুই আগে বল, তোর বাবার চেহারা কে পেয়েছে তুই নাকি রোহান?
ঈশিকা খুশিখুশি মুখে বললাম আমি।
তাহলে এবার ভেবে নে তুই দত্তক কি~ না।
ঈশিকার ভাই সবার চেয়ে একটু কালো তাই ওকে নিয়ে ঠাট্টা বানানো। রোহানও কিছু মনে করেননা কারণ এইসব মজা হরহামেশাই করা হয়।
ঈশিকা, রোহান কে বললো ভাইয়া হসপিটাল থেকে ফিরে তোমার জন্য তেলাপোকার ফ্রাই বানাবো ভাবছি।
ঈশিকার ভাই এ কথা শুনে সব বের করে দেওয়ার উপক্রম।
ঈশিকা ঘড়িতে তাকিয়ে দেখলো অনেক দেরি হয়ে গেছে। বান্ধবী অণু নির্ঘাত আজ চুল গুলো একটাও রাখবে না। সব টেনেটুনে ছিঁড়ে টাকলু বানিয়ে দেবে।
রাস্তায় বের হয়ে দেখলো বান্ধবী অণু দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু ঈশিকা ওদের কে দেখে ভয় পেলো। অণু বিড়ালের চোখ দিয়ে তাকিয়ে আছে। রোদে লাল জাম্বুরা হয়ে আছে। আল্লাহ জানে আজ ঈশিকার কপালে শনিবার না সোমবার আছে।
কথা ঘুরানোর জন্য বললো ওহ্ আমার প্রাণ সখি কেমন আছো। তোমাকে তো আজ পরীর মতো লাগছে।
অণু বললো, ওহ্ ছবিতে আমাকে ডাইনির মতো লাগছে আর এখন রোদে পুড়িয়ে কয়লা বানিয়ে পরী খেতাব দিচ্ছিস তাই~ না খুবি ভালো পাম্প।
কী বলছিস তোকে পাম্প দেবোই বা কেনও তোই কী গাড়ির সস্তা চাকা, যে পাম্প দিতে যাবো। আর তোর যে স্বাস্থ্য, পাম্প দিলে যে কোনো সময় ফেটে যেতে পারিস। আর আমি তোর বান্ধবী হয়ে তোর এতো বড়ো ক্ষতি করতে পারি বল। এখন আর কিছু শুনে মাথা নষ্ট করে পাগলাগারদে যেতে চাই না, আমার এমনি অনেক শখ হালি হালি নাতি নাতনির ফার্ম দেওয়ার।
~ ঈশিকার বান্ধবী বলে উঠলো কেনও ফার্মের মুরগীর মতো বিক্রি করবি নাকি?
বিক্রি করার জন্য নয়, ওদের কে দিয়ে একটা টিম বানাবো। তোরা কেউ জামাই বাড়িতে অশান্তিতে থাকলে সবকটা কে কেলিয়ে আসবে।
ঈশিকার বান্ধুবী বললো ঠিক আছে, এখন চল, হসপিটালে যেতে দেরি হলে স্যার আমাদের কে কেলিয়ে ছাড়বে তারাতাড়ি চল।তোর কারনে রোদে শুটকি হয়ে গেলাম।
চিন্তা করিসনা বাজারে এখন শুটকির অনেক চাহিদা। লকডাউনের কারনে শুটরির দামও বেড়েছে। শুঁ
~ অণু বললো, তুই আমাকে পরে শুঁটকির ভর্তা বানাস, আগে চল নয়তো স্যারই রোদে শুকিয়ে শুঁটকি বানিয়ে ছাড়বে।
ঈশিকা অণুর কথায় সায় দিয়ে রিকশা নিয়ে তারাতাড়ি হসপিটালে ছুটে চললো।
গিয়ে দেখে অনেক লম্বা সিরিয়াল। ঈশিকা আর অণু কিছুটা অবাক। ভেতরে গিয়ে জিজ্ঞেস করে জানতে পারে এক্সিডেন্টে অনেকের দাঁত ভেঙে গেছে।
এদিকে অনেক লেট, স্যার নিশ্চয়ই আজ আমাদেরও দাঁত ভেঙে বের করে দিবে।
ভয়ে ভয়ে ভেতরে ঢুকলো দু’জনে। যে ভয়টা পাচ্ছিলো সেটাই হলো, স্যার দাঁতে দাঁত চেপে বললো তোমরা কী শ্বশুরবাড়ি এসেছো, ঘটা করে কী তোমাদের বরণ করতে হবে?
দেখতে পাচ্ছো না এক্সিডেন্টে অনেকের দাঁতের মারাত্মক ইনজুরি হয়েছে। তোমরা কী চেয়ে চেয়ে দেখবে, না কাজে হেল্প করবে?
স্যারের কথা শুনে অণুতো বিড়াল ছানার মতো একটা জবাবও দেয়নি। অণুকে চুপ থাকতে দেখে ঈশিকা স্যারকে বললো, স্যার কী করবো?
স্যার চেচিয়ে বললো, আমার মাথার উপর উঠে নাচো।
ঈশিকা আর অণু তো অবাক চোখে স্যারের দিকে তাকিয়ে দেখলো স্যার রাগে লাল রসগোল্লার হয়ে আছে।
স্যার আবার বলতে শুরু করলো, যাঁরা ইনজুরি হয়েছে গিয়ে তাদের প্রবলেম দেখো।
ওহ্ স্যার আমি বুঝি না আপনি আপনার এসব বাঁকা কথার জন্য দিনে রাতে
কয়বার যে ম্যাডামের পা ধরে বসে থাকেন। কথাগুলো ঈশিকা মনে মনে বললেও মুখে কোনোরকম হাসি ফুটিয়ে বললো,”ঠিক আছে যাচ্ছি স্যার।
পর্ব ০২
~ ঈশিকা স্যারের কথামতো রোগীদের দেখতে লাগলো। অনেকের দাঁত দেখে তো ভীষণ অবাক!
জীবনেও মনে হয় ব্রাশ করে না।এদের দাঁতের এমনই করুণ অবস্থা টয়লেট পরিষ্কার করার ব্রাশ দিয়েও এদের দাঁত পরিষ্কার করা অসম্ভব। এক~ এক জনের দাঁত থেকে পঁচা ইঁদুরের গন্ধ বের হচ্ছে।গন্ধে মনে তো হচ্ছে পেটের নাড়িভুড়ি সব বেড়িয়ে আসবে।ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও ঈশিকা রোগী দেখলো। কারণ হলো দায়িত্ব বলে একটা কিছু তো আছে।
অণুর খবর নিয়ে শুনলাম ও অলরেডি প্রেগন্যান্ট মহিলার মতো পেটের সব বের করে বসে বসে ঝিমচ্ছে। বেচারি কে অনেক স্যালাইন খাইয়ে বহু কষ্টে ঠিক করা হয়েছে। স্যারকে অনুর অসুস্থতার কথা বলে ছুটি নিয়ে ঈশিকা অণুকে বাসায় দিয়ে নিজের বাসায় চলে আসলো।
বাসায় এসে তো ঈশিকা রীতিমতো অবাক! ঈশিকার মামী আর মামাতো বোন পাখি এসেছে।ঈশিকা মামীকে সালাম দিয়ে রুমে চলে আসলো।কারণ হলো ঈশিকার মামী খুবি বিপদজনক। কখন যে কোন কথা বলে লজ্জায় পেলে দেয় তাঁর ঠিক নেই। এখন যে ঈশিকার মায়ের কান ভরিয়ে দিবে তা ইশিকার ভালোই জানা আছে। বলবে যে মেয়ে বড়ো হয়েছে বিয়ে দিয়ে দাও।
ইশিকার মামাতো বোন হচ্ছে সেই রকম চ্যাছড়া যাকে বলে দুষ্ট ইঁদুর, যখন তখন যে কোনো গর্তে ঢুকে যায়, এখানের প্যাঁচ ঐখানে লাগায়।
~ ঈশিকা রুমে এসে জামাকাপড় খুলে ড্রয়ার থেকে সবুজ, হলুদ মিশ্রিত একটি ড্রেস নামিয়ে পড়ে নিলো।কোথা থেকে পাখি, পাখির মতো উড়ে উড়ে হাজির।
পাখি এসে বললো ওহ্ আপু তোমাকে যা লাগছে গো, তোমার ড্রেস টাও অনেক সুন্দর। আপু দেখি তোমার আর কী কী ড্রেস আছে বলে ইশিকার সব জামাকাপড় ঘাটাঘাটি করে প্রিয় ড্রেস টা বের করলো। ঈশিকার চোখ তো বের হয়ে যাওয়ার উপক্রম। পাখি বললো আপু গো তুমি যদি এই ড্রেস টা আমাকে না দাও তবুও আমি এটা জোর করে নিয়ে যাবো।
পাখির কথায় ঈশিকা আর কী বলবে, ভদ্রতা বলে তো একটা কথা আছে, দুনিয়ায় সবাই যদি অভদ্র হয়ে যায় তাহলে তো পৃথিবীটাও ডুবতে বেশি দিন লাগবে না। ঈশিকা ভদ্রতা বজায় রেখে বললো, তোর এটা পচন্দ হয়েছে তাহলে নিয়ে যা, দরকার হলে সবগুলোই নিয়ে যা।ইশিকার মনেমনে তো সেই রকম রাগ লাগছে ইচ্ছে তো করছে পাখিকে পেঁচা বানিয়ে আকাশে উড়িয়ে দিতে।
সবাই রাতে খেতে বসলো, ঈশিকার মা~ বাবা, ভাইয়া মামী, পাখিও আছে। পাখি তো একের পর এক তরকারি নিচ্ছে আর খাচ্ছে এমনভাবে খাচ্ছে যেনো দুর্ভিক্ষ কবলিত এলাকা থেকে উঠে এসেছে। পাখি এতো এতো খাচ্ছে দুইদিন পর দেখা যাবে পাখি থেকে গরু হয়ে গেছে, কুরবানির হাটে ভালো দামে বিক্রিও করা যাবে।
~ ঈশিকার ভাই আর ঈশিকা দু’ভাই বোন একে অন্যের মুখ দেখাদেখি করছি।ঈশিকার মা~ ও ব্যাপারটা লক্ষ্য করছে ঠিক কিন্তু ভাইয়ের মেয়ে বলে কিছু মনে করছেননা। ঈশিকা বুদ্ধি করে বলল মা আর খাবো না গো, এতো এতো খেলে ড্রাম হয়ে যাবো।
পরে শ্বশুরবাড়ি গেলে সবাই নাম পেলে দিবে ড্রাম বউ।সবাই হাসিতে ফেটে পড়লো। পাখিও বোকার মতো হাসতে লাগলো, মামী কিছুটা বুঝতে পেরে পাখি কে চোখ দিয়ে কিছু একটা ইশারা করলো, নিমিষে পাখির গাজর মাখা হাসি বন্ধ হয়ে গেলো। সবাই খাওয়া শেষ করে যে যার রুমে চলে গেলো।
ঈশিকার উপর নতুন এক বিপদ উদয় হলো, পাখি জেদ ধরেছে মায়ের সাথে না ঘুমিয়ে ও ইশিকার সাথে ঘুমাবে।
যা~ ই হোক বিছানা গুছিয়ে ঘুমতে গেলো। কিছুক্ষণের মধ্যে পাখিও ঘুমিয়ে গেলো।
কিন্তু নতুন আরেক বিপত্তি সৃষ্টি হলো।ঈশিকা দেখলো পাখি রীতিমতো ট্রাক চালানো শুরু করেছে। এখন না থামালে চালকহীন ট্রাক যে কোনো সময় এক্সিডেন্ট হয়ে যেতে পারে।
~ ঈশিকা পাখি কে হালকা করে ধাক্কা দিলো, যাক আওয়াজ থেমে গেলো।
মিনিট পাঁচেক পর আবার শুরু করলো, ঈশিকা এবার কোনো উপায় না পেয়ে পাখিকে সজোরে ধাক্কা দিলো, পাখিও ছিটকে পড়ে গেলো। নিভু নিভু চোখে ঈশিকার দিকে তাকালো।
ঈশিকার দিকে তাকানোর আগেই ঈশিকা চোখ বন্ধ করে ফেললো।
~ পাখি ঈশিকা কে চোখ বন্ধ অবস্থায় দেখতে পেয়ে ঈশিকা কে ডাকতে লাগলো এই আপু আমাকে ধাক্কা দিলো কে, চোর নয়তো আবার?
~ ঈশিকা স্বাভাবিক ভাবে বললো কী ব্যাপার এভাবে ডাকছিলি কেনও? ডাক্তার, ইন্জিনিয়ার বাদে শেষ পর্যন্ত চোর তোকে ভাগিয়ে নিতে এসেছে?
আপু আসলে আমি তো কখনো নিচে পরিনি কিন্তু আজ কিভাবে পড়লাম সেটাই বুঝতে পারছি না! তুমি কী আমাকে ধাক্কা মেরেছো?
~ আরে না কী বলছিস, আমি ধাক্কা মারবো কেনও তোর সাথে কী আমার ধাক্কাধাক্কির সম্পর্ক? আমি যেহেতু ফেলিনি, চোরও আসে নি তাহলে নিশ্চয়ই জ্বীনে ফেলেছে তোকে।
কী বলছো আপু!
হুম ঠিকই বলেছি, তুই তো হচ্ছিস সুন্দরীর উপর মহা সুন্দরী যাকে দেখলে জ্বীনের বাদশারও মন আকুপাকু করে তোকে জ্বীনে ধরবে নাতো রাক্ষস ধরবে নাকি?
~ ওমা গো আপু বাঁচাও বলে ইশিকা কে জড়িয়ে ধরলো। ঈশিকা পড়েছে মহা ঝামেলায়। ঈশিকা বিপদ থেকে যতটা দূরে থাকতে চায়, বিপদের দাদা~ দাদি, নানা~ নানি সব এসে আঁকড়ে ধরে। পাখি তো ঈশিকা কে সাপের মতো পেঁচিয়ে রেখেছে।
ওহ্ পাখি ছাড় কিছু হবে না বুঝলি, তুই নিজেই পেত্নীর রানী।
~ আপু তুমি কী কিছু বললে?
~ না কিছু বলিনি তুই ঘুমা আমি আছি।
~ পাখি কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়লো।
ঈশিকা মনে মনে একটু খুশিই হলো, পাখি কিছুটা হলেও ভয় পেয়েছে। আগামীকাল থেকে এই চড়ুই পাখি ঈশিকার সাথে ঘুমাতে আসবে না। ঈশিকাও কিছুক্ষণের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়লো।
পরদিন সকালে দাঁত ব্রাশ করতে করতে নিচে নেমে মা’কে বললো, মা আজ হসপিটাল থেকে ফিরতে একটু লেট হতে পারে। ঈশিকার মা কিছুই বলেনি, কিন্তু মামী তাচ্ছিল্যের স্বরে বলে উঠলো কি রে ঈশিকা এতো ডাক্তার হয়ে কী করবি? তবে এটা ভালো যে জামাই বাড়ি গিয়ে শ্বশুর ~ শ্বাশুড়ি, ছেলেমেয়েদের দাঁতের চিকিৎসা করাতে পারবি।
~ ঈশিকা মামীর কথা হজম করে জবাবে বললো, মামী সবাই যদি শ্বশুরবাড়ি গিয়ে ডাক্তারি করে তাহলে আপনাদের দাঁতের চিকিৎসা করাবে কে?
মামি থতমত খেয়ে নিরব হয়ে গেলো, ঈশিকা মনে মনে বললো যেমন কুকুর তেমন মুগুর।
নাস্তা করে ঈশিকা হসপিটালে চলে আসে। আজ অণু আসেনি। ঈশিকার আজ কেমন বোরিং লাগছে, হসপিটালের সকল কাজ সম্পূর্ণ করে বাসায় চলে আসলো। বাসায় এসে রেস্ট নিয়ে নিচে নেমে সবার সাথে লাঞ্চ সেরে নিলো।
রুমে বসে বসে অনেকক্ষণ গল্পের বই পড়লো মনটা তেমন ভালো লাগছে না। ভাইয়ের রুমে গিয়ে দেখলো ভাই কি যেনো করছে। হঠাৎ ঈশিকা কে দেখে কী যেনো লুকিয়ে ফেললো।
~ ঈশিকা ভাই কে জিজ্ঞেস করলো, কী ব্যাপার ভাই, তুমি কী লুকিয়েছ? নিশ্চয়ই চুরি করে প্রেম করছো?
~ আরে না কী যে বলিস, প্রেম করবো তাও চুরি করে।
~ তাইতো দেখছি প্রেম খানা চুরি করে করছো। প্রেম করো ঠিক আছে, কিন্তু বিয়ে টা চুরি করে করোনা, আমার আবার অনেক শখ নতুন ভাবীর কুলে বসে বসে গাড়ি চড়বো।
~ ওরে বাবা তোর মতো মটকি কে কুলে নিবে তাও আাবার আমার বউ, তাহলে তো সেরেছে আমার বউ তোকে কুলে নিলে আমাকে নিবে কখন।
~ ঈশিকা ভাই কে চোখ মেরে বললো, কেনও ভাই তোমাকে কুলে নিতে হবে কেনও তুমি কী ছোট্ট বাবু?
~ রোহান আমতাআমতা করে উত্তর দিলো আরে আমিতো এমনিই বলেছি।আচ্ছা যাইহোক শুন, আমি আমার ক্লাসমেট রিমি কে অনেক ভালোবাসি।
~ তুমি কী ওকে একাই ভালোবাসো নাকি তোমার ঐ রিমিও তোমাকে ভালোবাসে।
~ আসলে কী বলবো, আমিতো ওকে এখনো প্রপোজ ‘ই’ করিনি, তবে ওর হাসি দেখে বুঝতে পেরেছি যে, ও আমাকেও ভালোবাসে।
~ কী যে বলো ভাই, মেয়েদের মন বোঝা বড়ো দায়, আর তুমি ওর হাসি দেখেই বুঝতে পেরেছ যে ও তোমাকে ভালোবাসে।
যদি তাই হতো, লিওনার্দো দ্যা ভিঞ্চির বিখ্যাত মোনালিচার ছবিটি দেখেও সবাই বুঝতো যে, মুনালিসাও সবাইকে ভালোবাসে।কিন্তু দেখো মুনালিসার পক্ষে কী সবাইকে ভালোবাসা সম্ভব। তোমার রিমি কেও গিয়ে দেখো এই হাসির আড়ালে কতোজন কে ঘায়েল করে রেখেছে।
~ আচ্ছা ভাই তুমি যেভাবে বিচলিত হচ্ছো আমারতো মনে হচ্ছে তোমার বউ কারোর সাথে ভেগে টেগে গেছে। শুনো গার্লফ্রেন্ড আর বউ এককথা নয়। গার্লফ্রেন্ড হাজার টা প্রেম করুক কিন্তু বউ যেনো তা~ না করে।
~ আচ্ছা বলতো বউকে কিভাবে ধরে রাখবো।
~ এ বাবা তুমি তাও জানো না, বাজার থেকে মোটা রশি এনে গরুর মতো বেঁধে রাখবে।
~ যা কী বাজে বকিস?
~ আমি বাজে বকি না~ কি তুমি বাজে বকো, এ দুনিয়ায় তোমার মতো আর একটি ভাই খুজে পাবে যে বোন কে জিজ্ঞেস করে বউকে কিভাবে ধরে রাখে।
তুমি তোমার বন্ধুদের থেকে জেনে নিও। আমি এখন আসি।
_ঘরের মধ্যে বিকেল টা কেমন পানসে পানসে লাগছে ঈশিকার। তাই ঈশিকা ভাবলো একটু ছাদে যাওয়া যাক।ছাদে এসে দেখলো মনোমুগ্ধকর বাতাস। বাতাসের সাথে আত্মাটাও যেনো আজ প্রানবন্ত হয়ে উঠেছে, ছাদে যে বিকেল টা কে এতো টা উপভোগ করতে পারবে ঈশিকা বুঝতে পারেনি।
ঈশিকা প্রজাপতির মতো দুহাত মেলে চোখবুঁজে দাড়িয়েছে। বাতাসে চুলগুলো নেচে বেড়াচ্ছে, হৃদয়ে আলাদা স্পন্দন, হঠাৎ কপালের চুল গুলো হিমেল বাতাসের স্পর্শে সরে গেলো। এ যেনো এক অজানা অনুভূতি।
পর্ব ০৩
~ আজকাল ঈশিকা ঘুমালেও ঘুম ভেঙে যায়, আসলে ঘুম বললে ভুল হবে, চোখ বুজলে, ঘুমের যে নিভু নিভু ঘোর ওটাই ভেঙে যায়। বাহিরের আকাশ টা কে প্রজাপতির মতো মুক্ত বিহঙ্গের মতো দেখায়।
~ আজকাল চোখ বুঁজলে অন্যরকম অনুভূতি স্পর্শ করতে চায়।
কে যেনো ঈশিকা কে দূর থেকে অবলোকন করছে, ঈশিকার কাছে এমনটিই মনে হচ্ছে। বরফের কাছাকাছি দাঁড়ালে যেমন হিমেল স্পর্শে শরীরে ঝাঁঝালো কাঁপুনি দিয়ে নেড়ে উঠে ঠিক এমনটিই অনূভুত হচ্ছে।
কিন্তু ঈশিকা মনে মনে ভাবছে চোখবুঁজে এমন অনূভুতি হচ্ছে কিন্তু চোখ খুললে যদি না পাওয়া যায় তাই আর চোখ খোলেনা। যতোক্ষণ চোখ বন্ধ ছিলো ততোক্ষণ পর্যন্ত একই অনূভুতি হয়েছে কিন্তু কাঁধে কারো স্পর্শ পেয়ে চোখ খুলে তাকিয়ে দেখলো পাখি।
~ ঈশিকার তো ইচ্ছে করছে পাখিকে ডানা লাগিয়ে পেঁচা বানিয়ে আকাশে উড়িয়ে দিতে। কিন্তু তা করার মোটেও উপায় নেই কারণ না জানে কোনো মন্ত্র, না কোনো জাদু। কিরে পাখি তুই এখানে যে।
~ হুম আমার না, নিচে থেকে থেকে একটু বোরিং লাগছে তো তাই ভাবলাম ছাদে গিয়ে একটু মিষ্টি বাতাস খেয়ে আসি।
~ কিন্তু কী হয়েছে পাখি জানিস, আমিও এখানে ঠান্ডা বাতাস খেতে আসছি। কিন্তু আজ বাতাস টা কেমন তিতে তিতে লাগছে বুঝলি তো আজ বাতাসও তিতে হয়ে গেছে।
~ আমার মনে হয় আপু আজ, পেত্নীর বাতাস তাই তিতে তিতে। ওরে বাবা আপু আমাকে জড়িয়ে ধরো ভয়ে আমি সব সবুজ দেখছি।
~ উঁহু পেত্নীর বাতাস নয়, আজ পেত্নী রানীর বাসর রাত।
~ কী যে বলো আপু বিকেলে বুঝি বাসর রাত হয়। কাচুমাচু ভঙ্গিতে বললো বাসর রাত তো হয় রাতে।
~ কেনও তুই কী সেটাও জানিস না বুঝি, বাসর রাত হতে হলে যে রাত কেই কেন্দ্র করে করতে হবে এমন টা কোথাও কী শুনেছিস। আচ্ছা তুই কিসে পড়ছিস বলতো আমায়।
~ এইতো ইন্টার ফাস্ট ইয়ারে।
~ তুই তো অনেক কিছুই জানার কথা তাহলে। এতো অজান্তা কেনো রে। তোকে বিয়ে দিলে এতোদিনে কুড়ি কুড়ি বাচ্চার খালামনি হয়ে যেতাম। তুই তো নিশ্চয়ই প্রেম করছিস তাই~ না?
~ পাখি তো লজ্জায় টিয়া হওয়ার উপক্রম। পাখি বললো আসলে আপু কী বলবো, তোমাকে।
~ এতো লজ্জা না পেয়ে বলে পেল, তোদের মতো মেয়েরা চা দোকানি, বাদাম ওয়ালা, ফুচকা ওয়ালা এমনকি কলা গাছের সাথেও প্রেম করার গুঞ্জনে খবরেরকাগজ পর্যন্ত লজ্জা পেয়ে যায়।
~ কী যে বলো আপু আমি প্রেম করি আমার একটা স্যারের সাথে উনি রোজ বিকেলে আমাকে পড়াতে আসে।
~ তাহলে ঠিক আছে, বঁড়শি ঠিক জায়গায় ফেলেছিস, এবার বোয়ালও আসতে পারে, পুঁটি মাছও আসতে পারে।
তাহলে এখন শোন বাসর রাতের ব্যাখ্যা, তুই যে প্রেম করছিস তা কী রাত দিন দেখে করিস, নাতো তা নিশ্চয়ই নয় তাই~ না! তেমনি পেত্নী বলিস, আর মানুষ বলিস বাসর রাত করতে রাত বা দিনকে কেন্দ্র করে হয় না। দিনেও বাসর রাত করা যায় শুধু মনের গভীর ভালোবাসা টা থাকলেই হয়।
আচ্ছা শুন, এখন এগুলো বাদ দে আমরা নিচে চলে যাই, কখন জ্বিন এসে তোকে পাখির মতো উড়িয়ে নিয়ে যায়।
~ ওহ্ আপু আমার মাথা ঘুরপাক খাচ্ছে, এতোকিছু আমি এখনো বুঝতে পারি না। তারচেয়ে বরং আমি গিয়ে মায়ের কুলে ঘুমিয়ে পড়ি।
~ ঈশিকা, পাখিকে ওর মায়ের কাছে দিয়ে নিজের রুমে চলে আসলো।
রুমে এসে বিশাল ভাবনায় ডুব দিয়ে পাবনার পথ খুঁজছে। বাতাসে আজ কেনও মনোমুগ্ধকর কারো স্পর্শে শরীরে ঝাঁকুনি লাগলো কেনও আজ আমি এতো টা শিহরিত হলাম, ঈশিকার মনে, অদ্ভুত অদৃশ্য ছায়া, মনের দুয়ারে বারবার কড়া নাড়ছে।
তাহলে কী সত্যি সত্যি কেউ ছিলো, ছাদে পাখি কে ছাড়া তো আর কাউকেই দেখেনি ঈশিকা এই পাগল মন কী সত্যি সত্যি পাগলামো শুরু করে দিয়েছে। একবার পাগলামো শুরু করলে যে কেউ এই লাগামহীন মনকে শান্ত করতে পারবেনা অদৃশ্য ছায়া ছাড়া।
এসব ভাবতে ভাবতে ঈশিকা ঘুমিয়ে গেলো। কেউ একজন ঈশিকা কে গভীর নয়নের দৃষ্টি দিয়ে অবলোকন করছে। যেনো চিরচেনা পথ সোপানে দুজনের চিরচেনা গন্তব্য কিন্তু তা আজ কারো জানা কারো অজানা। যার জানার ইচ্ছে সে একদিন জেনেই যাবে, আহামরি হয়ে তাকে জানানোর কিছুই নেই।
~ গভীর রাতে ঈশিকার কেমন কেমন অনুভূত হয়ে ঘুমটা ভেঙে গেলো। ঈশিকা পুরো রুমে আবারও সেই মনমাতানো মিষ্টি ঘ্রাণ টা পেলো। ঈশিকা চোখ বন্ধ করে নিঃশ্বাস টা ধরে রেখেছে, নিশ্বাস টা আটকে রেখেছে বেশ কিছুক্ষণ, কারণ নিশ্বাস ফেললেই যদি মনমাতানো সৌরভটা ধোঁয়াশা হয়ে যায় সেই ভয়ে।
ঈশিকা এতোটা চঞ্চল, চড়ুই পাখির মতো যার আউড় ঝাপ, উড়ো চণ্ডীর মতো যার উচ্ছ্বাস কিন্তু আজ তাঁর মন প্রচন্ড রকম উদ্ধিগ্ন কী হচ্ছে কেনও হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছে না।
নিজেকেও আজ বড্ড অচেনা লাগছে।
ঈশিকা চোখ বন্ধ করে বললো কে আপনি কেনও আমার সাথে এমন টা করছেন আমি নিজেও জানি না। আপনি প্লিজ আমার সামনে আসুন আমি সত্যি নিজেকে আজ কিছুতেই চিনতে পারছি না।
আপনি যদি কোনো ছায়া মানবও হোন তবুও একটি বার সাড়া দিন।
ঈশিকা আজ বড্ড বেখেয়ালি মনে নিজের সত্বাকে হারিয়ে এতটা আবেগ প্রকাশ করছে।
অনেকক্ষণ হয়ে গেলো কিন্তু কেউ আসেনি।
~ ঈশিকা ভারাক্রান্ত হৃদয় নিয়ে ঘুমুতে চেষ্টা করলো। কিন্তু ঘুম আসা কী এতো টা সত্যি কথা, এটা নিছক মুখের বলি, একবার আওড়ালে হয়না, ঘুম পরী একবার রাগ করে চলে গেলে আর আসে না।
~ ঈশিকার কাছে মনে হচ্ছে ঘুম পরী ওকে চুপিচুপি বলছে, প্রতিদিন তোমার চোখে তন্দ্রারূপে আমাকে পাও কিন্তু আজ যে আমি আর আসবো না, আজ আমারও একটু বিশ্রাম যে চাই।
~ ঈশিকাও তন্দ্রা পরীকে আজ ছুটি দিয়ে দিয়েছে। তন্দ্রা পরী আজ থাকুক নিজের মনমতো। কিন্তু আদৌ কী ছায়া মানব বলে কিছু আছে? তাহলে কেনও বারবার আমাকে ব্যাতিব্যাস্থ করে তুলছে। সে যা~ ই হোক যদি থেকেও যাকে নিশ্চয়ই সে আসবে, এসে আমাকে ধরা দেবেই। আমি যে তাঁর প্রতিক্ষায় থাকব নিশ্চয়ই সে আমাকে এতোটা নিরাশ করবে না।
~ সকালে সবাই নাস্তা করতে বসলো, ঈশিকাও সবার সাথে খেতে বসলো।ঈশিকার হাতে সময় কম তাই খাওয়ার টেবিলে কোনো কথাবার্তা না বলে খেয়ে যাচ্ছে।
~ ঈশিকার মামী ঈশিকার বাবা কামরুল শেখরকে বললো, কী ব্যাপার ভাইজান ঈশিকার বয়স তো আর কম হয় নি এখন তো আপনাদের উচিত ওকে ভালো একটি পাত্র দেখে বিয়ে দিয়ে দেওয়া।
~ ঈশিকার খাওয়ার ইচ্ছেটা আর থাকলো না। হাত থেকে চায়ের কাপ টা রেখে উঠে গেলো। কারো কোনো কথা শুনার অপেক্ষা করেনি।
ঈশিকার তো মনে তো সেই রকম জেদ চেপে বসেছে, বাবা যদি সত্যি সত্যি মামির কথায় বিয়ে বিষয়ে রাজি হয় তাহলে ঈশিকাও বিয়ের জন্য রাজি হয়ে যাবে। কিন্তু মনে মনে কিছু একটা ভেবে রাগটা আরো তীর্যক করলো এই ভেবে, দরকার পড়লে জামাই কে, ভাই, দুলাভাই, কাকা, চাচা বলে হলেও জামাই বাড়ি পড়ে থাকবে কিন্তু এ বাড়ি আর ফিরবে না।
ঈশিকা তীব্র পোড়া মনকে নিয়েই হসপিটালের ডিউটি শেষ করে ক্লান্ত ভরা দেহ, মন নিয়ে বাসায় ফিরলো।
ফ্রেশ হয়ে যখন খাটে গিয়ে বসলো তখন পাখি এসে ঠোকরাতে শুরু করলো এই আপু জানো তোমাকে আজ দেখতে আসছে অনেক বড়ো বিজনেসম্যান। পাখি নিজে নিজে মনভোলানো হাসি দিয়ে যেভাবে এসেছে ওভাবেই চলে গেছে।
~ ঈশিকা তো ঢোক গিলতে পারছে না পাখির কথা শুনে। ইচ্ছে তো করছে ছায়া হয়ে দূর আকাশে বিলীন হয়ে যেতে।
~ ঈশিকাও আজ পণ করলো যে যেভাবেই হোক আজ সে ছায়া মানব কে দেখবেই দেখবে এবার সে জ্বীন বা রাক্ষস হয়ে ঈশিকার হাড্ডিসহ খেয়ে ফেলুক তাতে কিছু যায় আসে না।
কিন্তু আজ এই ছায়া মানবের সাড়া পেতেই চায়। ঈশিকাও আর দেরি না করে ছাদে চলে গেলো। ছাদের মাঝখান টায় দাঁড়ালো। আজও ভীষণ রকম বাতাস কিন্তু মিষ্টি সুভাস টা আজ আর নেই। ঈশিকার মনটা চটপট করতে লাগলো।
ঈশিকা চিৎকার দিয়ে বললো, আপনি কে আমি আপনাকে চিনি না আপনি সত্যি আছেন কিনা তাও আমার অজানা।যদি থেকেই থাকেন প্লিজ আমার সামনে আসেন আমার অসম্ভব রকম টেনশন হচ্ছে আমাকে আমার চিন্তা তাড়া করে বেড়াচ্ছে। আমি ঠিকভাবে খেতে পর্যন্ত পারছি না, ঘুমুতেও পারছিনা।
ঈশিকা না চাইতেও দুই ফোটা চোখের জল গাল ভেসে পড়তে লাগলো।
ঈশিকা কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে যখন দেখলো কেউ আসছে না তখন ঈশিকা হাঁটু গেড়ে নিচে বসে গেলো।
মিনিট দুয়ে কের মধ্যে প্রচন্ড বেগে বাতাস বইতে শুরু করলো।বাতাসে ঈশিকা চুলগুলো বারবার লেপ্টে যাচ্ছে, গাছের পাতারা উড়ো পাখির মতো উড়তে শুরু করেছে, বাতাসে চোখের পাপড়ি গুলো নড়তে শুরু করেছে।
ঈশিকার সামনে একটি পাতা ভেসে আসলো তাতে কিছু লেখা দেখে ঈশিকা ভয় পেয়ে ঢোক গিললো। ঈশিকার ভয়ের চোটে মাছির মতো মাথা ঘুরছে। ঈশিকা মনেমনে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করেছে সে যাই হোক, মাথা ভনভন ঘুরপাক খাক, ছাদ ভেঙে যাক, পৃথিবী উল্টিয়ে যাক, ঈশিকা আজ যাবেই না।
পর্ব ০৪
অভিমানী বালিকা তোমার এমন মুখখানা দেখে তো আমার মনে হচ্ছে তুমি মেঘলা দিনের একলা সঙ্গী। আমাকে যে এতো টা দেখিবার ইচ্ছে তোমার জেগেছে, পরে দেখো বাপু তুমি না আবার আমার রক্তাক্ত দাঁত গুলো দেখে ভয় পেয়ে লুকিয়ে পড়ো।
ঈশিকা লিখা টা দেখে তো ঘামছে, ভীষণ রকম ঘামছে ঘাম গুলো ঝর্ণার মতো নিচে পড়তে লাগলো। নির্ঘাত ঘামের টর্নেডোর পূর্বাভাস।
হঠাৎ একটি মিষ্টি কন্ঠে বলে উঠলো ইশু আমাকে দেখে না জানি তুমি শিষু করে দাও।
ঈশিকা এতোক্ষণ ভয় পেলেও এবার আর ভয় না পেয়ে অপমান বোধ করে বললো, আমি শিশু না যে, শিষু করে দেবো। আপনি কুকুর, বিড়াল, মাংস খাওয়ার খোক্কশ যা~ ই হোননা কেনও, আপনার বিভৎস পেয়ারা মার্কা চেহারা দেখিয়ে আমাদের এই প্রকৃতি কে ধন্য করুন।
বাতাসের তীব্রতা বন্ধ হয়ে তীর্যক সুবাসিত ঘ্রাণ আবার নাকে এসে নেশাময় করে তুললো ঈশিকা কে।
মিষ্টি কন্ঠে বলে উঠলো তুমি কী ভয় পেয়ে গেলে? আসলে আমি মজা করেছি। আমি কখনো চাই না আমার এই ভয়ংকর চেহারা দেখে কেউ ভয়ে কাতর হোক।
~ ঈশিকা করুণ স্বরে বললো আপনি কী সত্যি বিভৎস যে কেউ দেখলেই ভয় পেয়ে যাবে।
সে কী তা আর বলতে, যদি তুমি দেখো বেহুঁশও হয়ে যেতে পারো। বেহুঁশ হয়ে আকাশের তারাও হয়ে যেতে পারো।
ঈশিকা যেন এবার সত্যি ভয় পেলো।
ঈশিকা কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবার বলতে শুরু করলো, আচ্ছা আপনাকে নাই~ বা দেখলাম আপনার সাথে কী একটু পরিচিত হতে পারি।
। ঈশিকা কিছুতেই বুঝতে পারছে না, এ মোহ কী সত্যি নাকি কুয়াশায় ঢাকা অস্পষ্ট নিছক স্বপ্ন মাত্র।
ছায়া মানব অদ্ভুত হাসিতে ফেটে পরলো। কেনও কেনও লাজুক পরী তুমি মানবীয় মোহনীয় নারী হয়ে কেনও আমার সাথে পরিচিত হতে চাও বলতো।
ঈশিকা আমতা আমতা করে বললো, বারে আমি আপনার সাথে পরিচিত হলে কী আপনার সাথে চলে যেতে চাইবো, আপনি কোন দেশের রাজপুত্র হুহ্ বলেন তো! আমার মতো সুন্দরী মেয়ে আপনার সাথে লেজ তুলে পালাবে।
হাহাহাহা লাজুক পরী হাঁসালে বেশ। তুমি যখন মন খারাপ করোনা তোমাকে তো সেই রকম রসগোল্লার মতো দেখায়। তখন তো যে কারোর ইচ্ছে করবে টুপ টুপ করে গিলে ফেলতে।
কী আমি রসগোল্লা! আপনারও কী ইচ্ছে করেছিল আমাকে গিলে ফেলতে?
বেশ বলেছো বটে লাজুক পরী। আমাকে যেহেতু দেখতে পাচ্ছোনা তাহলে নিশ্চয়ই বিশ্বাস করো আমি অদৃশ্য কিছু তাই~ না?
হুম লাজুক পরী আমি আসলেই একজন জ্বীন।
~ বাস্তবতার সত্য রূপে প্রতিয়মান ভেবে ঈশিকা থরথর করে কাঁপতে শুরু করলো।
~ অদৃশ্য ছায়া আবার বলতে শুরু করলো, লাজুক লতা বিহারিণী যেভাবে কাঁপা~ কাঁপি করছেন মনে তো হচ্ছে ঘূর্ণিঝড়, সিডর, সুনামির পূর্বাভাস।
~ ঈশিকা নিজেকে শান্ত করার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু না বার~ বার ব্যার্থ প্রতিপন্ন হচ্ছে। শেষমেশ কোনো উপায় না পেয়ে জোরে নিজেকে চিমটি কেটে শান্ত করলো। আর যাই হোক নিজের কাঁপা ~ কাঁপিতে পুরো পৃথিবী কাঁপানোর কোনো ইচ্ছেই নেই ঈশিকার।
ঈশিকা কোনো রকমে নিজেকে স্থির করে বললো, আপনি আসলে কে, আমি বুঝতেই পারিনি আপনি বলে কারো অস্তিত্ব আছে। ভেবেছি অদৃশ্য ছায়া বলে কিছু নেই বলে দীর্ঘশ্বাস ফেলে। আবার বলতে শুরু করলো আসলে আমি এই প্রথম অদৃশ্য কিছু কে অনুভব করতে পাচ্ছি।
~ কেনও আগে অনুভব করতে পারলে বুঝি প্রেমে পড়ে যেতে।
~ কথাটা শুনে ঈশিকার বুকের ভেতর মুচড়ে উঠলো।চারদিকে যেনো মহাপ্রলয়ের পূর্বাভাস। বুকের ভেতরের অচিন পাখিটা নিতান্তই মহাচিন্তায় ডুব দিলো।
~ ইশ্ লাজুক পরী তোমাকে বুঝি খুব লজ্জায় পেলে দিলাম। তুমি তো দেখছি লজ্জায় লাল~ নীল লীলাবতী হয়ে যাচ্ছো।
আহা এতো লজ্জা পেতে হবেনা বুঝলে লাজুকলতা কিছু লজ্জা তোমার বিয়ের পরের জন্য রেখে দাও।
~ ঈশিকা সত্যি সত্যি বেশ লজ্জা পেলো বটে কিন্তু তা প্রকাশ করতে নারাজ। কারণ ঈশিকা নিজের মনের দুর্বলতা কাউকে বুঝাতে চায়না।
~ ঈশিকা তো মনে মনে হতবাক, জ্বীন শেহজাদাও বুঝি এতটা নির্লজ্জ হয়
~ যেসব মানবীয় নারীর চোখ থেকেও জন্মগতভাবে অন্ধ তাঁরা কখনো আমাকে দেখতে পাবেনা। আর যাদের দৃষ্টিশক্তি না থাকা সত্ত্বেও মনের চোখের দৃষ্টি সুস্পষ্ট তাঁরাই কেবল দেখতে পাবে।
~ ঈশিকা এতো মেধাবী হয়েও অদৃশ্য ছায়ার কথাগুলোর অর্থ বুঝতে পারছেনা। ঈশিকা অনেক কিছুকেই বিশ্বাস করে না কিন্তু আজ এই অদৃশ্য ছায়া কে বিশ্বাস করতে খুবি ইচ্ছে করছে। ইচ্ছে করছে মনের ছন্দমাখা সকল স্বপ্নের কথা গল্প করতে। কিন্তু এই অদৃশ্য ছায়া কী শুনবে তার কল্পকথা।
~ এইযে শুনছেন ইশু না শিষু আমার হাতে বেশিক্ষণ সময় নেই বুঝলেন তো একজন অপেক্ষা করছে যেতে হবে। আরেকদিন এসে আপনার সাথে গল্প করবো।
~ ঈশিকার তো ইচ্ছে করছে অদৃশ্য ছায়া কে জড়িয়ে ধরে ভ্যাভ্যা করে কাঁদতে। কেঁদে কেঁদে পুরো পৃথিবী ডুবিয়ে দিতে। নাকের পানি, চোখের পানি দিয়ে অদৃশ্য জ্বীনের কাপড় ভিজিয়ে দিতে। এই অদৃশ্য ছায়া মানবের জন্য কেনও অন্যকেউ অপেক্ষা করবে?
দেখা হবে কী আর কখনো
এই অসীম আকাশের সসীম সৌন্দর্যে
কোনো বিশেষ দিনে, বিশেষ মূহুর্তে
হোক সেটা হোক সেটা একটুখানি,
চিরায়ত স্বপ্নের সোপানে।
পর্ব ০৫
~ ঈশিকা তো সেই রকম মন খারাপ করে বসে আছে রুমে তাও দরজা বন্ধ করে। সবাই একবার একবার করে ঈশিকা কে ডেকে যাচ্ছে যেনো সবাই আজ ডাকাডাকি প্রতিযোগিতায় নেমেছে।
~ ঈশিকা আকাশ ভরা মেঘলা হৃদয় নিয়ে রুমে বসে আছে, কিছুই ভালো লাগছে না। বার~ বার সেটাই মনে হচ্ছে যে, অদৃশ্য ছায়া একটু দেখা দিলে কী হতো, খুব বেশি কী সমস্যা হতো। উনি কী সত্যি সত্যি আছে না~ কি নিছক স্বপ্ন মাত্র।
ঈশিকা বসে বসে ভাবছে আর উপরের ঠোঁট দিয়ে নিচের ঠোঁট কামড়াচ্ছে। ঈশিকা এইসব ভাবতে ভাবতে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।মাথায় হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।
ঈশিকার কাছে নিজেকে পাগল পাগল লাগছে কারণ হচ্ছে এতোক্ষণ বসে বসে নিজের ঠোঁট কামড়ে যে ফুলিয়ে ফেলছে টেরই পায়নি। সব ঐ অদৃশ্য ছায়া মানবের দোষ।
ঈশিকা এখন নতুন ঝামেলায় পড়েছে তাঁর কারণ হলো মামী। সবাইকে মানানো গেলেও মামীকে যে সহজে মানানো যাবেনা মামী দিনদিন গোয়েন্দাদের মতো গোয়েন্দাগিরি করে যাচ্ছে।
বহু চিন্তা বেধ করে দরজা খুলে প্রথমেই মামীর সামনে পরলো। যার জন্য ঈশিকা মোটেও প্রস্তুত ছিলো না।
মামী ঈশিকার দিকে তাকিয়ে একবার উপর~ নিচে চোখ ঘোরালো।
কিরে ঈশিকা তুই কী ছোট বাবু হয়ে গেলি যে, তোকে কোলে তুলে আদর করে ঘুম থেকে উঠাতে হবে। রুমে কী করছিলি এতোক্ষণ ধরে এতো ডাকাডাকি করলাম সাড়া দিলি না।
ঈশিকা জবাব টা কী দিবে সেটাই ভেবে ভেবে অস্হির, তবুও জবাব দিলো, মামী ঘুমিয়ে পড়েছিলাম তা~ ই টেরই পাইনি।
মামী অবাক চোখে ঈশিকার দিকে তাকিয়ে বললো, কী বলিস, তাহলে তো দেখা যাচ্ছে চোর তোকে নিয়ে পালিয়ে গেলেও তুই টের পাবিনা।
আচ্ছা তুই দাঁতের চিকিৎসা দিস কীভাবে বলতো?
না~ কি দাঁতের চিকিৎসা দিতে গিয়েও ঘুমিয়ে পড়িস?
তোকে নিয়ে তো দেখা যাচ্ছে আমরা সবাই বিপদে পড়বো। দুএক দিনের মধ্যে পাত্রপক্ষ তোকে দেখতে আসবে। দেখিস আবার ওদের সামনেও ঘুমিয়ে পড়িস না।
ঈশিকা মামীর সামনে আর কথা বাড়ায় নি। কারণ ঈশিকা খুব ভালো করেই জানে, এখন কিছু বললে মামী পুরো বাড়ি এক করে ফেলবে।
ঈশিকার বাবাও মামীর পক্ষে কারণ হলো ঈশিকার বাবা একবার ব্যাবসায়ে বিরাট সমস্যার সম্মুখীন হয়, আর এই মামীই নিজের গয়না বিক্রি করে ঈশিকার বাবাকে হেল্প করে। তাই ঈশিকার বাবা মামীর যে কোনো কথাতেই গুরুত্ব দেয়।
ঈশিকা ঠিক আছে বলে মামীকে মাথা নাড়লো।কিন্তু বুকের ভেতর হু হু হু করে উঠলো।কারণ হলো ঈশিকা সবে মাত্র ডাক্তারি তে জয়েন দিয়েছে। তাই এতো তারাতাড়ি বিয়ের জন্য মোটেও প্রস্তুত নয়। ঈশিকা মনে মনে দুষ্টু ফন্দি আটলো।
হায় হায় কিরে ঈশিকা!
মামী এমনভাবে চিৎকার দিলো বুক টা ধুক করে উঠলো ঈশিকার।
তোর ঠোঁটে কে কামড় দিয়েছে বলতো?
তেলাপোকা কামড়ায় নিতো আবার। ইচ্ছে করছে তেলাপোকার দাঁত ভেঙে পাউডার বানাতে।
ঈশিকা যে ভয়টা পাচ্ছিল সেটাই হলো, ঢোক গিলে বললো, আরে নাহ মামী আমার এলার্জি বেশি তো তাই হয়তো ঠোঁট ফুলে গেছে।
মামী অবাক চোখে আরেক বার ঈশিকা কে পরখ করে বললো এলার্জি থেকে বুঝি ঠোঁট ফোলে কলাগাছ হবে। মামী যেনো জোর করে ঈশিকার কথাটা বিশ্বাস করলো। রাতে তোর ঘরে তেলাপোকার পাউডার ছিটিয়ে দেবো, এখন খাবি চল।
ঈশিকা খাওয়া শেষ করে নিজের রুমে এসে বারান্দায় দাঁড়িয়েছে।মৃদুমন্দ বাতাসে চুলগুলি যেনো এলোপাতাড়ি নাচের প্রতিযোগিতায় নেমেছে। আজ বাতাসের লীলাবতীরা মুগ্ধ হয়ে ঈশিকা কে বার~ বার যেনো ছোঁয়ে দিচ্ছে।
ঈশিকা কে বারান্দায় দেখে মামী চিৎকার দিয়ে বললো কিরে ঈশিকা এতো রাত বিরাতে কি করছিস বারান্দায়। এতো রাতে যে বারান্দায় গিয়েছিস কী কী হতে তুই জানিস?
মামী যেনো দিন দিন কেমন হয়ে যাচ্ছে সামান্য কিছু নিয়েও উনার বাড়াবাড়ি। ঈশিকা নির্বিকার ভাবে শুনছে মামীর কথাগুলো।
কিরে কথার জবাব দিচ্ছিসনা যে?
কি হবে মামী কিছুই হবেনা। আর আমি তো আর পাখির মতোও এতো টা সুন্দরী নয়।
হয়েছে হয়েছে তোর ঢংয়ের কথা শুনলে আমার গায়ে আগুন জ্বলে।আমাদের মেয়ে ছেলেদের মধ্যে তুই হচ্ছিস সবচেয়ে সুন্দরী।
একবার যদি তোর দিকে বাহিরের কিছু দৃষ্টি করে তাহলে তোর শ্বশুরবাড়ি গিয়েও ঝামেলা করবে। এমনি তো আর আমার চুল গুলো পাকেনি বুঝলি।
ঈশিকা চোখমুখ খিঁচে মামী কে একবার দেখে নিলো। কিন্তু কিছুতেই মেলাতে পারছেনা মামী কাঁচা চুলকে কেনও পাকা বলছে।
যাই হোক, পাত্রপক্ষ তোকে দেখতে আসবে যে কোনো দিন।আমি চাই তোকে যেনো ন্যাচারালি সুন্দর দেখায়। তার কারণ হলো, এখনকার ডায়না সুন্দুরীরা তো মুখে এতো এতো মেকআপ করে যে কোনটা মানুষের মুখ কোনটা সাদা বিড়ালের মুখ বুঝাই মুশকিল হয়ে যায়।
আমি চাই তুই যেমন ঠিক তেমনভাবেই তাদের সামনে গিয়ে দাঁড়াবি। আর শোন, ওরা যা যা জিজ্ঞেস করে ঠিকঠাক ভাবে উওর দিবি।
ঈশিকা কপাল কুঁচকে মামীকে জিজ্ঞেস করলো, কী ধরনের প্রশ্ন বলো তো।
মামী ভাবান্তর হয়ে জবাব দিলো এই যেমন ধর, ঘুমালে কি তোর নাক ডাকে কিনা, বিয়ের পর অন্য কারো সাথে পালিয়ে যাবি কিনা, বিয়ের পর জামাই কে কী বলে ডাকবি।
ঈশিকা অবাক চোখে তাকিয়ে মামীকে জিজ্ঞেস করলো কী নামে ডাকবো মানে?
এই ধর, এখন কার যুগে তো কেউ কেউ জামাই কে, নাম ধরে ডাকে, কেউ কেউ বাবু বাবু বলে তো মুখের ফেনা ছেড়ে দেয়, আর কেউ কেউ জান বলে বলে নিজের জান পর্যন্ত বের করে দেয়।
সে যা~ ই হোক দুধ নিয়ে এসেছি দুধটুকু খেয়ে চেহারার চন্দন বাড়া। যাতে তোকে এক দেখায় পচন্দ করে ফেলে।
ঈশিকাও আর কথা না বাড়িয়ে দুধটুকু খেয়ে মামী কে বিদায় জানায়।
ঈশিকা আবার কিছু একটা ভেবে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ায় মনের সমস্ত ব্যাকুলতা নিয়ে। যদিওবা তাঁর সাথে কোনোভাবে দেখা হয়।
বাতাস আজ চুপিচুপি বলে যায়,
ফিরবো আমি ফিরবো তোমারি পানে
এই তীর্যক সুবাসিত ঘ্রাণে
মাতাল ভরা চাঁদিনী রাতে
কোনো এক অদেখা সপ্ন সোপানে।
ঈশিকা আজ খুব সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে সবার জন্য নাস্তা বানিয়ে নিলো। সবাই তো খেয়েদেয়ে এতো এতো প্রশংসা করলো যে দুপুরের রান্নার চাপ টাও ঈশিকার উপরে গিয়ে পড়লো।
পাখি তো সেই রকম খুশি দুপুরে আরেক দফা মজা করে খাবে বলে কিন্তু এদিকে ঈশিকা পারছেনা সবাইকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে। কিন্তু লজ্জার জন্য কাঁদতেও পারছেনা।
ঈশিকার ইচ্ছে করছে আজ বিকেল টা বাহিরে কাটাতে। ঈশিকা পাখি কে নিয়ে বের হলো। বাহিরের আবহাওয়া আজ চমৎকার। নববধূর মতো যেনো ধম মেরে বসে আছে। আকাশে মেঘের খেলা।
যে~ কোন সময় বৃষ্টি নামতে পারে। এই মেঘলা দিনে ফুচকা খাওয়ার মজাটাই আলাদা তাই ঈশিকা পাখি কে নিয়ে ফুচকা দোকানে ঢুকতে যাবে এমন সময় কেউ একজনের সাথে সজোরে ধাক্কা খেলো।
ঈশিকা তো অবাকের উপর চরম অবাক।
পর্ব ০৬
~ এই আপনি কী চক্ষু থাকিতে অন্ধ যেই বলে পেছনে তাকালো, ঈশিকার চোখ ছানা বড়ো দুনিয়ার আলো যেনো নিবুনিবু করছে ঈশিকার কাছে, চারদিক যেনো হিজল ফুলে ছেয়ে গেছে, মনমাতানো সৌরভে যেনো নিজেকে আজ বড্ড অচেনা লাগছে।
ব্ল্যাক কটন ফুল স্লীভ ফরমাল, ব্ল্যাক সুজ, ব্রান্ডের ঘড়ি, স্পাইক করা চুল, চোখে কালো সানগ্লাস, রক্তিম ঠোঁট এ যেনো স্বপ্নের রাজপুত্র দাঁড়িয়ে আছে, শুধু ঘোড়াটা বাকি।
ঈশিকা এমনভাবে হা হয়ে তাকিয়ে আছে যেনো মুখে পৃথিবীর মশা, হাতি সব ঢুকে যাবে।
ঈশিকা ভাঙবে কিন্তু মচকাবে না।
ঈশিকা চিৎকার দিয়ে বললো এই আপনার হয়েছে টা কী?
মেয়ে মানুষ দেখলেই কী ধাক্কাধাক্কি খেতে ইচ্ছে করে।
এতো ইচ্ছে করলে ঐদিকে একটা মটকা বটগাছ আছে ওটার সাথে গিয়ে ধাক্কাধাক্কি খান কেউ কিছু বলবেনা।
~ জাস্ট স্যাট~ আপ ষ্টুপিড গার্ল, আর ইউ ম্যাড?
আমি কেনও তোমার মতো বাতাসির সাথে ধাক্কা খেতে যাবো। দেশে কী বাতাসের অভাব পড়েছে!
~ ডু ইউ নো হো আই এম?
এই যে আপনি যেই হোননা কেন, এদেশের আলালের ঘরের দুলাল
হোন আর বস্তির ছেলেই হোন তাতে আমার কী আমি কী আপনার জন্য ঘটকালি করতে যাচ্ছি!
হোয়াট ডু ইউ মিন!
আমাকে দেখে কী বস্তির ছেলে মনে হয়?
মনে হয়না শুধু, আমি ১০০% সিউর আপনি বস্তির ছেলেই।
আচরণে বস্তি বস্তি লাগছে।
আজকাল চোর, ডাকাত রাও দামী দামী ড্রেস বাড়া করে ভালো মানুষের মুখোশ পড়ে ঘুরে চুরি ডাকাতি করে।
পাখি হা হয়ে ছেলেটা কে গিলছে পারছেনা ফোসকার সাথে তেঁতুলের টক বানিয়ে খেয়ে ফেলতে।
পাখি বারবার ঈশিকা কে থামানোর চেষ্টা করছে কিন্তু ঈশিকা মোটেই থামবার পাত্রী নয়। ঈশিকা তো পারছেনা গোঁজ বেধে ছেলেটির সাথে ঝগড়ায় নামতে।
ঈশিকার ঝগড়া দেখে প্রায় সবাই ভিড় জমাতে শুরু করলো।
চারদিকের লোকজনকে দেখে ঈশিকার মাথাটা এবার আরো বেশি এলোমেলো হয়ে গেলো।
ঈশিকা এবার সবার চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করলো এই আপনাদের প্রবলেমটা কী। আমরা কী আপনাদের কে দু’টাকার দর্শক হিসেবে দাওয়াত দিয়েছি যে নাটক দেখে হ্যাংলার মতো বিনোদন নিতে চলে এসেছেন। যান যান যে যার কাজে যান।
ঈশিকা আর ঝগড়া না করে ফোসকা দোকানের ভেতর চলে গেলো।
কারন হলো ঈশিকা নিজেই বুঝতে পেরেছে যে আজ অনেক ঝগড়া করে ফেলেছে আর কিছুক্ষণ করলে যে কোনো সময় মাথা ব্রাস্ট হয়ে যেতে পারে।
এখন যতোটা সম্ভব ফোসকা খেয়ে মাথা ঠান্ডা করা উচিত।
অচেনা ছেলেটা ঈশিকার যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো। কেউ যে এতোটা ঝগড়া করতে পারে
ঈশিকার এমন রূপ না দেখলে জানা হতো না।
ঈশিকা ফোসকা দোকানীকে গিয়ে বললো ঝাল ঝাল করে তিন প্লেট ফোসকা দিতে।
দু ‘প্লেট ঈশিকার বাকি এক প্লেট পাখির।
ঈশিকা সব খেয়ে সাবাড় করে পাখি কে নিয়ে হনহন করে বাসায় চলে আসলো।
আজ মন ভীষণ খারাপ তার কারণ হলো যে~ ই একটু ঠান্ডা বাতাস খেতে গিয়েছিল বাহিরে কিন্তু উল্টো গরম বাতাস খেয়ে চলে আসতে হলো।
কিছুক্ষণের মধ্যে ঈশিকার দরজায় সবাই এসে একে একে ডেকে গেলো। কিছুতেই ঈশিকা দরজা খুলে নি।
এ বাড়ির প্রতিটি মানুষ ঈশিকা কে বড্ড বেশি ভালোবাসে, ঈশিকার রুমের দরজা বন্ধ থাকলে যেনো ওদের নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়। সবার এতো ডাকাডাকি তে ঈশিকা দরজা না খুলে চুপচাপ বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো।
চারিদিকের ঝিঁঝি পোকারা যেনো আজ দলবেঁধে নেমেছে চারিদিক পরিদর্শন করার জন্য। ঈশিকারও আজ সুযোগ মিলেছে তা উপভোগ করবার। স্রষ্টা যে চারদিকে সৌন্দর্যের জিনিস ছড়িয়ে~ ছিটিয়ে রেখেছে এই অদ্ভুত লীলাভূমিতে, নিজের স্বচক্ষে না দেখলে কখনো জানতেই পারতোনা ঈশিকা।
ঈশিকার তো সেই রকম মেজাজ খারাপ তাঁর কারণ হলো ছেলেটি একে তো ঈশিকা কে ধাক্কা দিয়েছে তারউপর আবার অপমানও করেছে। যেখানে কোনো ছেলে ঈশিকার সাথে কথা বলার চান্সই পায়নি কিন্তু আজ এই অপমান কিভাবে হজম করবে ঈশিকা বারান্দায় বসে বসে ভাবছে।
হঠাৎ দরজায় আবার কড়া নাড়ায় ঈশিকা বেশ বিরক্ত হলো।
এতো জোরে জোরে কড়া নাড়ছে যেনো দরজাটাই ভেঙে ফেলবে।
শেষে আর কোনো উপায় না পেয়ে ঈশিকা দরজা খুলে দিলো।
দরজা খুলে যাকে দেখলো ঈশিকা চরম অবাক। খুশিতে গদগদ হয়ে জড়িয়ে ধরলো।
অনেকদিন পর ঈশিকার নানি জি এসেছে ঈশিকার সাথে দেখা করতে।
ঈশিকার নানিও খুশিতে ঈশিকা কে জড়িয়ে ধরলো। ঈশিকা পড়াশোনার চাপে পড়ে নানির বাড়ি যেতে পারে নি বেশ কয়েক মাস হয়ে গেলো।
নানি জি আদুরে গলায় বললো, কিরে আমার আহ্লাদী নাতনি তুই এই অন্ধকার রুমে একা~ একা কী করছিস বলতো।
এই রূপ খানা জ্বীন~ ভূত কে দেখিয়ে পাগল করার চিন্তা করছোস নাকি? আমি বাপু কোনো জ্বীন কে নাতজামাই বানামু না বলে দিলেম।
নানি জি কী যে বলো, তোমার মতো রূপবতী নানি যার আছে তাঁর নানি কে ফেলে নাতনি কে কেনও পছন্দ করতে যাবে!
হাহাহাহা হয়েছে আমার সতীন। পছন্দ করলে আমাদের দুজন কেই নিতে হবে। একজন কে নিলে হবে না বলে দিলুম। এখন নিচে চল সবাই তো তোর চিন্তা করতে করতে বেহুঁশ, নিচে গিয়ে ওদের হুঁশ কর।
ঈশিকা নানির সাথে নিচে চলে গেল। সবাই ঈশিকা কে নিয়ে এমনভাবে পরেছে যেন কয়েক বছর পর শ্বশুরবাড়ি থেকে এসেছে।
পরদিন সকালে ঈশিকা, অণু একসাথে হসপিটালে গেল।হসপিটালে গিয়ে শুনলো বড়ো স্যার ভীষণ অসুস্থ। আগামিদিন থেকে অন্য কেউ হসপিটালের দায়িত্বে থাকবে। ঈশিকা ও, অণু আগামীকাল থেকে নতুন স্যারের কাছে ইন্টার্নি শুরু করবে।
ঈশিকার তো সেই রকম মন খারাপ। আগের স্যারের সাথে যা ফাঁকিবাজি করা যেতো কিন্তু নতুন স্যার কেমন না কেমন মাথা মোটা কে জানে।
অণু ঈশিকা কে আনমনে ভাবতে দেখে ঈশিকা কে ধাক্কা দিয়ে বললো কিরে কী ভাবছিস?
কী আর ভাববো, ভাবছি শ্বশুরবাড়ি চলে যাবো।
পর্ব ০৭
~ এই ঈশিকা কী বলিস এগুলো।
তাহলে কী করবো বল, আমি তুই যা ফাঁকিবাজ নতুন স্যার আমাদের কী না কী শাস্তি দেয় আল্লাহ জানে। অপমান করে বের করে দেওয়ার চাইতে ভালো আমরাই নিজ থেকে বের হয়ে শ্বশুরবাড়ি
গিয়ে শ্বশুর শাশুড়ির সেবা যত্ন করে দোয়া নেই।
এই ঈশিকা কী যা~ তা বলছিস, দেখা যাবে আগের স্যারের চেয়ে এখনকার স্যার অনেক ভালো তখন কী করবি?
হ্যাঁ তুই এই আশায় বসে বসে ঘুমা আর খেয়ে খেয়ে মোটাতাজা হও।
তোর মাথাটা আসলেই গেছে। কী যা~ তা বলছিস আল্লাহ জানে। চল বাসায় চলে যাই।
মুখ গোমড়া করে ঘরে প্রবেশ করলো ঈশিকা।
ঈশিকার নানি জি চিৎকার দিয়ে বললো কিরে সই তোর আবার কী হইলো।
চাঁদের মুখখানা এমন আন্ধার করে রাখছস ক্যান?
তোর এই আন্ধার মুখখানা দেখলে তো চাঁদের মনখানাও বেশ খারাপ হয়ে যাইবো। হাসি দে একটু দে না।
কিভাবে হাসবো নানি জি। আগামীকাল থেকে নতুন স্যার আমাদের ক্লাস নিবেন।
তাতে কী, স্যার তো আর তোকে বিয়ে করে নিয়ে যাচ্ছেনা
এতে মন খারাপের কী আছে।
তুমিতো জানো আমি অনেক ফাঁকিবাজ। নতুন স্যার কী না কী শাস্তি দেয় আল্লাহই জানে।
তুই আর চিন্তা করে করে বুড়ি অইসনা তো।
দেখবি নতুন স্যার পুরনো স্যার থেকে আরো ভালো হয়বো। যায় বান্ধুরনি আইয়ে সুন্দুরনী বুঝলি।
হুম হুম বুঝছি সুন্দুরী আমি এখন ফ্রেশ হয়ে আসি।
ঈশিকা অদৃশ্য মানবের কথা প্রায় ভুলতে চললো।
ঈশিকা রাতের খাবার শেষ করে নানি জির কোলে মাথা রেখে গল্প শুনছে।
বুঝলি ইশু তোর কাছে একটা গল্প বলি, অনেকদিন আগের কথা।
নানি জি যেই ইশু বললো, ঈশিকার আবার অদৃশ্য ছায়ার কথা মনে পড়ে গেলো। চারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার, ঈশিকা চারদিকে তাকিয়ে দেখলো লোকজনের তেমন কোনো সাড়াও নেই। নানি জি গল্প করছে তাও এক বাজে জ্বীনের।
বুঝলি ইশু আমাদের পাশের ঘরের রহিমাকে একবার
এক বাজে জ্বীনে নজর দিছিল, ঐ জ্বীন টা ছিলো অনেক খারাপ রহিমার ঘাড় মটকে শরীরের সব রক্ত খেয়ে ওকে কলপাড়ে পেলে চলে যায়। আর যাওয়ার সময় রহিমার মাথাটাও থেঁতলে যায়।
লোকজন তো ভয়ে শেষ, রহিমার জামাকাপড় দেখে আমরা সবাই চিনতে পারি নয়তো চিনবার কোনো অবকাশ ‘ই’ রাখেনি ঐ বজ্জাত জ্বীন টা।
হঠাৎ চারদিক থেকে কেমন একটা বিশ্রী গন্ধ নাকে আসলো ঈশিকার। মাথাটাও কেমন ঝিম ঝিম করতে লাগলো, প্রায় বমি করবার অবস্থা। ঈশিকা নানি কে বললো,”নানি জি কেমন একটা বিশ্রী গন্ধ আমার নাকে আসলো।
কেমন কেমন সব উল্টিয়ে আসছে।
নানি জি কেমন কেমন ভয় পেলো। নানি জি ঈশিকা কে বললো ঠিকি তো। গন্ধে তো আমারও নাড়িভুড়ি সব বের হয়ে যাচ্ছে চল বারান্দায় বেশিক্ষণ থাকাটা ঠিক অইবো না। ঘরে চল আজ রাত আমি তোর সাথেই থাকমু।
ঈশিকা নানি কে থাকতে নিষেধ করলে~ ও নানি নিষেধ শুনলেন না। নানিও একটু ভয় পেয়েছে তাঁর কারণ হলো বিশ্রী গন্ধটা মোটেই সুবিধার না।
ঈশিকা নানি কে জিজ্ঞেস করলো কী নানি তুমি কী ভয় পেলে না~ কি!
নানা আসে নি তো আবার তোমার সাথে প্রেম করতে।
কী যে বলিস। তোর নানা আসলে তো আমি ভয় না পেয়ে খুশিতে লাফিয়ে উঠতাম। কিন্তু আমার যে ভয় হচ্ছে তোকে নিয়ে। জোয়ান মাইয়া তুই, আল্লাহ না করুক নজর না লেগে যায় খারাপ কিছুর।নয়তো অনেক বড়ো বিপদ হবে।
কী আর হবে নানি জি, জ্বীন কে বিয়ে করে গলায় মালা পড়িয়ে শ্বশুরবাড়ি চলে যাবো।
নানি ঈশিকার মুখ চেপে ধরলো। কী বলছিস এ~ সব। যা মুখে এনেছিস আর নয়। এগুলো বলাও পাপ। কখন তোর কথা কে শুনে ফেলে কে জানে।
নানি ঈশিকার মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিলো। কিন্তু নানির মন বিষন্নতায় ছেঁয়ে গেছে। দমকা হাওয়া আর বিশ্রী গন্ধটার রহস্য নানির কাছে অশুভ কিছুর ইঙ্গিত করছে। নানি সূরা পড়ে ঈশিকার উপর, নিচে ফু দিয়ে দিলো।
ঈশিকা আজ সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে সবার সাথে নাস্তা করে রেডি হয়ে নিচে নামলো।
আজ ঈশিকা কে দেখতে বেশ লাগছে।
নানি এসে বললো, কিরে নাতনি এতো সেজেছিস কেনো?
তোর রূপের জ্বালে ফাঁসিয়ে কাউকে মেরে ফেলবি নাকি রে।
দুষ্টুমি করো নাতো নানি জি, আজ এমনি অনেক টেনশনে আছি।
নতুন স্যার আসবে কেমন না কেমন হয় কে জানে।
ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।
হাত~ পা আর ঠান্ডা করতে হবে না, গরম করেই যা, আমার মন বলছে ভালোই হবে। দোয়া করে দিলাম আল্লাহর নাম নিয়ে বের ‘হ’।
ঈশিকা আল্লাহর নাম নিয়ে বের হলো। রাস্তায় রিকশার জন্য বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করছে কিন্তু রিকশা থাক একটা মশার সাথেও দেখা নেই।
আজ অণু টাও আসেনি কারণ হলো নতুন স্যারের ভয়ে ও আজ একা একাই হসপিটালে চলে গেছে।
ঈশিকা পরলো নতুন ঝামেলায়, কোনো রিকশা, সিএনজি কিছুই নেই রাস্তায়। ঈশিকার ভাগ্য যে পেঁচার ভাগ্য আজই প্রমাণ হয়ে গেলো।
ঈশিকা দু~ চোখ ঘুরিয়ে যখনই সামনে তাকালো, ঈশিকা দেখতে পেলো, কালো একটি প্রাইভেট কার শাঁ শাঁ করে ছুটে আসতে। ঈশিকা সকল প্রকার দ্বিধা ভুলে গিয়ে গাড়ি টাকে থামাতে আপ্রাণ চেষ্টা করতে লাগলো।
গাড়িটি ঈশিকা থেকে একটু সামনে গিয়ে থামলো।গাড়িটা থামবার আশা তো ঈশিকা প্রায় ছেড়েই দিয়েছে। কিন্তু যখন দেখলো গাড়িটা থেমেছে ঈশিকা সামনে এগিয়ে গিয়ে দাঁড়ালো।
গাড়ির দরজা খুলে ভীষণ রকম একজন হ্যান্ডসাম ছেলে বেড়িয়ে আসলো। ব্যান্ডের ফর্মাল ড্রেস, গুড লুকিং, স্টাইলিশ এককথায় অসাধারণ। ঈশিকা দেখে তো চোখের পলকই ফেলছে না।
ছেলেটিই প্রথম বলে উঠলো এই~ যে ম্যাম আপনি কী শুনছেন। জেগে থেকেও কী বেহুঁশ হয়ে গেলেন না~ কি আবার?
আমি ফারহান চৌধুরী
আপনি?
আমি, আমি, আমি কে ঈশিকা মুখ ফসকে বললো।
~ এই যে ম্যাম আপনি কে সেটাই ভুলে গেলেন। কিছুক্ষণ পর না জানি আবার বলা শুরু করেন আমি আপনাকে হাইজ্যাক করার জন্য গাড়ি থামিয়েছি।
ঈশিকা ছেলেটা কে মুগ্ধ হয়ে দেখছে আর ভাবছে মানুষ কিভাবে এতোটা সুন্দর করে কথা বলতে পারে। ছেলেটা দেখতে যেমন বেশ কথাগুলোও তেমন মুগ্ধকর।
ঈশিকা বহুকষ্টে নিজেকে সংযত রেখে বললো, আসলে তা নয়। আমি ঈশিকা নন্দিনী, আসলে আজ অফিসে একটু ইম্পরট্যান্ট কাজ ছিলো তাই একটু তাড়া ছিলো, রাস্তায় আজ একটা রিকশা পাওয়াও বেশ দুষ্কর যার কারনে আপনাকে ডিস্টার্ব করলাম। ঈশিকা আমতা আমতা করে বললো যদি একটু লিপ দিতেন।
ফারহান ছেলেটা মিষ্টি করে হেঁসে বললো অফকোর্স কেনো নয়। এটা তো কোনো ব্যাপার ই না। সামান্য জিনিস টুকু নিয়ে বুঝি এতোটা হ্যাসিয়েড করতে হয়। ফারহান গাড়ির ভেতর গিয়ে বললো ম্যাম উঠে আসুন বলে গাড়ির সামনের দরজা খুলে দিলো।
ঈশিকার কেমন সংকোচ বোধ হতে লাগলো। অনেক দ্বিধা দ্বন্দ্ব বেদ করে ঈশিকা গাড়িতে উঠে বসলো তাও ফারহানের পাশের সিটে।
ফারহান ছেলেটা মুখে মিষ্টি হাসি ফুটিয়ে বললো আপনি আপনার অফিসের লোকেশন টা দেখিয়ে দিবেন আমি যতোটা পারি দ্রুত গতিতে পৌঁছাতে চেষ্টা করবো।
ঈশিকা মুখে কিছু না বলে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লো।
ফারহান ছেলেটা গাড়ি স্টার্ট দিলো। গাড়ি আপন গতিতে চলতে লাগলো।
ঈশিকা জানালার কাঁচ বেদ করে বাহিরে তাকালো। বাহিরের উজ্জ্বল রোদ্দুরে প্রকৃতিকে উজ্জ্বল দীপ্তমান লাগছে। যেনো নববধূ সেজেগুজে লজ্জায় মরি মরি হয়ে ভালবাসার চাদরে মুখ লুকচ্ছে। এ যেন পরম ভক্তির পাওনা।
গাড়িতে থাকাকালীন ফারহান, ঈশিকার মধ্যে আর কোনো কথা হয়নি।
ঈশিকার নির্দেশে অফিসের সামনে গাড়ি থামলো।
ঈশিকা ফারহান কে ধন্যবাদ জানিয়ে নিজের গন্তব্যে অফিসের ভেতর দ্রুত গতিতে চলে গেলো।ফারহান ছেলেটা আর কিছুই বলার সুযোগ পায়নি।
ঈশিকা যে~ ই লিফ্ট বেয়ে উপরে যেতে লাগলো ঈশিকার কলিজা টাও যেনও উপর নিচ বিদ্যুৎ গতিতে লিফ্ট বায়ছে। তাঁর কারণ হলো একে~ তো অফিস টাইম ১০ টা তাঁর উপর এখন বাজছে ১১ টা। আজ আবার নতুন স্যারের আগমন, কপালে যে কোন দূর্গতির আগমন আল্লাহ জানে।
কপালে যে আজ ঝাড়ুর ঝাড়ি অপেক্ষা করছে তা নিশ্চিত। ঈশিকা আল্লাহর কাছে বার~ বার প্রার্থনা করছে নতুন স্যার যেনো অপমান টা সবার সামনে না করে আড়ালে গিয়ে করে।
ঈশিকা যে~ ই লিফ্ট থেকে বের হলো অণু চিৎকার দিয়ে বললো কিরে এতোক্ষণে তোর শ্বশুরবাড়ি আসার সময় হলো। এখন যা তারাতাড়ি নতুন স্যারের কাছে গিয়ে দেখা করে আয়।
ঈশিকা চেঁচিয়ে বললো কী আমি এখুনি আসলাম তুই এখুনি আমাকে সিংহের গুহায় পাঠিয়ে দিচ্ছিস।
তো কী করবো বল, তুই বললে তোকে তোর জামাইয়ের সাথে বাসর ঘরেও পাঠাতে পারি। শুধু একটা বার বলেই দেখ মেরি বেহেনজি।
বুঝেছি হাতি গর্তে পড়লে ব্যাংঙও পা তুলে। আমি যাচ্ছি ফিরে এসে মজা দেখাবো।
মজাটা পরে দেখাস বুঝলি আগে তুই মজা পেয়ে আয়, দেখিস আবার বেশি মজা পেয়ে ভয়ে পালিয়ে টালিয়ে যাসনা।
আর মজাটা কেমন পাস এসে কিন্তু জানাস। আমাদেরও ধারণা নেওয়া উচিত। নতুন স্যার কিন্তু হেব্বি রে। আল্লাহ মালুম মজা গুলোও উনার মতো হেব্বি ই হবে।
ঈশিকা চোখ পাকিয়ে ভয়ে ভয়ে আল্লাহ করতে করতে নতুন স্যারের রুমের সামনে গিয়ে দরজা নক করলো।
মে আই কাম ইন স্যার!
আর ইউ ওকে?
ঘড়িটা দেখো কয়টা বাজে।
এটা কী তোমার জামাইবাড়ি পেয়েছো যে জামাই কে আদর ভালোবাসা দিয়ে বুঝিয়ে নেবে। এটা একটা হসপিটাল তোমার বাবার বাড়ি বা শ্বশুরবাড়ি নয়। এতোক্ষণ কথাগুলো নতুন স্যার পেছনে মুখ করে বলছিলো।
যেই ঈশিকার দিকে তাকালো ঈশিকা আর এই পৃথিবীতে নেই।
ঈশিকার পায়ের নিচের মাটি সরে গেলো।
ঈশিকার মাথাটা মৌমাছির মতো ঘুরঘুর করছে।
ঈশিকা যে কোনো সময় মাথা ঘুরিয়ে পড়ে যেতে পারে।
ঈশিকা চিৎকার দিয়ে বললো,”এই আপনি তাও এখানে?
স্যাট আপ ষ্টুপিড গার্ল।
আমি এখানে থাকবো নাতো কোথায় থাকবো তোমার আকাশে?
ঈশিকা হতাশ এই লোকের সাথে যে আবার দেখা হবে তাও এভাবে কখনো চিন্তাও করেনি।
“আজ এই অজানা দিনে
অজানা ভয়ে বুকের ভেতর
করে আনচান,
আবারো পেয়েছি দেখা
কেনো এই সূচনার”।
পর্ব ৮
ঈশিকার বুকের ভেতর টা ভয়ে দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে।
তাঁর কারণ হলো ঐদিন ঈশিকার মাথা টা বেশ গরম ছিলো যার কারনে অকথ্য ভাষায় কথাগুলো বলেছিলো ঐ ছেলেটা কে।
কিন্তু এখন হবে টা কী তা ভাবতেই ঈশিকার হাত, পা হিম হয়ে যাচ্ছে। ইচ্ছে তো করছে মাটি খুঁড়ে ভেতরে চলে যেতে। এই লোক এখন কি~ না কী করে বসে। যদি ঈশিকা কে অপমান করে বের করে দেয়।”
“ঈশিকা তো পারছেনা ভয়ে কেঁদে ফেলে।
ঈশিকা কখনো কাউকে তেমন সরি বলে না, তবুও আজ সরি বলবে বলে ঠিক করেছে। ঈশিকার ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও নতুন স্যার কে সরি বললো।
ঈশিকা নিজের চোখ কেও বিশ্বাস করতে পারছে না নতুন স্যার যে ঐদিনের ছেলেটা হবে।”
“ঈশিকা অবাক হয়ে বললো আপনি এখানে কেনো?”
~”শুভ্র চেচিয়ে বললো,”হোয়াট আপনি”! কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকো।”
~”ঈশিকা হোয়াট বলে চিৎকার দিলো। মনে মনে ভাবলো আর কোনো উপায় নেই।সবার সামনে বের করে দেওয়ার চাইতে কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকা অনেক ভালো।”
~”মা’ই নেইম শুভ্র মাহমুদ। ড্যাড অসুস্থ যার কারনে এই হসপিটালের সকল দায়িত্ব এখন আমার, আন্ডারস্ট্যান্ড হোয়াট আই সে?”
~”ঈশিকা মুখ টা কাঁচুমাচু ভঙ্গিতে বললো ইয়েস স্যার।”
~”শুভ্র আবার বলতে শুরু করলো, ঐ দিন তো না জেনে না বুঝে খুব তো আমাকে ঝাড়লে।আমি নাকি ইচ্ছে করে তোমার সাথে ধাক্কা খেয়েছি, আমার তো খেয়ে দেয়ে কাজ নেই তোমার মতো জাড়ুল গাছের সাথে ধাক্কাধাক্কি খেতে। এখন যদি আমি তোমাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেই ব্যাপারটা কেমন হবে?”
~”ফেলে লে লে লে দিবেন মানে। আমি কী করেছি। ঈশিকার এবার খুব ভালো করেই মনে পড়লো ঐ দিন ফোসকা খাওয়ার দিনটির কথা। ঈশিকা আসলেই খুব বাজে ব্যাবহার করেছিলো। বাসায় গিয়েও ঈশিকা ব্যাপারটা নিয়ে খুব খুব ভেবেছিল। মন থেকে মনে মনে সরিও বলেছিলো যা শুভ্র শুনতে পায়নি।”
~”কী করেছো মানে। হোয়াট দ্যা হ্যাল।
ঘড়িতে টাইম দেখেছো কতো টা লেইট করেছো। আমি বুঝতে পারছি না একজন ডাক্তার হয়ে কীভাবে পারলে এতো টা লেট করতে।
ড্যামেট আনসার মি।”
~”ঈশিকা কী বলবে ভেবে পাচ্ছে না। যা সত্যি তাই বললো।
আসলে স্যার রাস্তায় এ~ তো এ~ তো জ্যামে আটকা পড়েছি তাই লেট হয়ে গেলো।”
~”তুমি একাই জ্যামে পড়েছ, আর আমরা কী উড়ো জাহাজ দিয়ে উড়ে উড়ে এসেছি।
একজন ডাক্তার হয়েও কিভাবে এতো টা কেয়ারলেস হতে পারো।
জ্যাম না ছাই লিপস্টিক একটার উপর দিয়ে আরেকটা লাগিয়েছ, ফেইস পাউডার একটার উপর পাঁচটা লাগিয়েছ সেটা বলো।
“
~”ঈশিকার চোখ যেনো অস্ফুটে কেঁদে ফেলবার অবস্থা। ঈশিকা অনেক কষ্টে কান্না আটকিয়ে বললো, স্যার আমি লিপস্টিকও দেইনা, আর না কোনো ফেইস পাউডার ইউজ করি। আমি এতোটাও ধনী নয়, যে নিজেদের গাড়ি দিয়ে যাওয়া আসা করবো।”
~”শুভ্র ঈশিকার দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ভেবে বললো কান ছাড়ো। ঠিক আছে তোমার ক্যাবিনে যাও দরকার পড়লে আমি ডাকবো। আর শুনো আজ ফাস্ট দিন আমার জন্য তাই তোমাকে মাফ করা হলো। পরবর্তী তে কিন্তু আর এ সুযোগ পাবে না মাইন্ড ইট।”
~”ঈশিকার তো সেই রকম কান্না পাচ্ছে।
এতো এতো কান্না পারছে ইচ্ছে তো করছে চিৎকার করে বুক ফাটিয়ে কাঁদতে। এতটা অপমান ঈশিকা কে কেউ কখনো করে নি।”
“ঈশিকা পরিস্থিতি শান্ত রেখে শুভ্র কে বললো ঠিক আছে স্যার আমি এখন আসি বলে ক্যাবিন থেকে বের হয়ে গেলো।”
~”ঈশিকা অণু কে দেখে থমকে দাঁড়ালো। ঈশিকার তো সেই রকম ভয় লাগছে, অণু বেষ্ট ফ্রেন্ড হওয়া সত্বেও যদি সব শুনে ফেলে তাহলে তো মানসম্মান যা আছে সবই যাবে।
ঈশিকা নিজেকে স্বাভাবিক রাখলো।”
~”অণু জিজ্ঞেস করলো,”কিরে ঈশিকা নতুন স্যার তোকে বকাবকি করে নিতো আবার”?
“ঈশিকা বললো,”নাহ কী বলবে, আমি কী ভিক্ষারী নাকি, যে আমাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিবে।
হয়তো একটু লেট করে ফেলেছি তাই স্যার আমাকে আজ বলে দিয়েছেন টাইমলি যেনো হসপিটালে চলে আসি।
আর যেনো লেট না করি।
ঈশিকা অণু কে পিঠে থাপ্পর দিয়ে বললো, হয়েছে কালনাগিনী আমার কথা ভেবে ভেবে আর সর্দি লাগাস না, পরে দেখা যাবে জ্বরও বাঁধিয়ে ফেলছিস।
অফিস মিস করলে, আমার জন্য এতোক্ষণ ধরে যতো এডভান্স চিন্তাগুলো করেছিস্ তুষার শুভ্র তোর উপর সব বাস্তবিক করবে।”
~”ওয়েট ওয়েট আমি কালনাগিনী হলে তুই বিষ নাগিনী। তুর রূপের বিষে সবাইকে বশীভূত করে ফেলিস। দেখ গিয়ে নতুন স্যারও বশীভূত হয়ে আছে।
এখন বল এতো কিউট নামটা কার?”
~”কোনটা শুভ্র?”
~”হুম।”
~”আরে এখনো জানিস না আমাদের নতুন স্যার উল্লুক টার নাম ই তো শুভ্র মাহমুদ।”
~”অণু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো
ওহ্ রিয়েলি! শুভ্র কী নাইচ নেইম। যেনো বরফে ঢাকা শীতল পরশ। অবিরাম হিম বাতাসে স্পর্শ করে যায় হৃদয়। আমার তো মনে হচ্ছে এখুনি শুভ্র বাতাসে উড়ে উড়ে বেড়াচ্ছি।”
~”ঈশিকা তাচ্ছিল্য করে বললো,”বরফ না আগুন পরেই টের পাবি।
শুভ্র না শুভ্রের ছাই পরেই সবটা টের পাবি এখন ক্যাবিনে চল কিছু খাবো অনেক খিদে পেয়েছে।”
~”অণু ঈশিকা কে বললো,”ঈশিকা শুন তুই দিনে পাঁচ বেলা খেলেও মোটা হবি না। তুই যা খাদক।
আর আমাকে দেখ আমার মতো অভাগিনী কী আর আছে, না খেয়ে খেয়েও দিন দিন আলুর বস্তা হয়ে যাচ্ছি।”
~”ঈশিকা অনেক কষ্টে নিজের হাসি চেপে বললো,”তুই বড্ড বোকা তোর জামাই দেখবি খুবি খুশি হবে তোকে পেয়ে।”
~”অণু অবাক চোখে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,”কিভাবে”? তুই কী আমাকে অপমান করছিস?”
~”আরে না আমি কী আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড কে অপমান করতে পারি আমার বুঝি মান যাবে না তোকে অপমান করলে।
শুন বুঝিয়ে বলছি। আগে ক্যাবিনে চল।
ঈশিকা অণু কে নিয়ে ক্যাবিনে গেলো।”
~ “ঈশিকা ক্যাবিনে গিয়ে সব কিছু গোছাতে গোছাতে বললো শুন, বেশিরভাগ জামাই তার বউকে কোলে নেয় তুই না হয় উল্টোটা করলি। জামাই কে কোলে নিবি।
তোকে কে বললো তুই আলুর বস্তা, তুই তো হবি তোর জামাইয়ের কোলের বস্তা।
যে বস্তায় জড়িয়ে ধরলে তোর জামাইয়ের চোখে রাজ্য জোরে ঘুম চলে আসবে।
তোদের মাঝখানে কোলবালিশের আর দরকার পড়বেনা বুঝলি তো কাহিনী।”
~”অণু বললো,”অহ্ আচ্ছা আমি কোলের বস্তা তুই কী তাহলে?
বাতাসের বস্তা।
তোর জামাই তো তোকে কথায় কথায় কোলে নিয়ে নিবে, আর সারাক্ষণ আতংকে থাকবে কখন না যেনো আবার বাতাসে উড়ে যাস।”
~”আমাকে বাতাসের বস্তা বলবিনা, বাতাস না থাকলে তোর মতো মোটা রা ভীষণ সমস্যায় পড়ে যাবি বুঝলি। তোরা কাতলা মাছের মতো কাত হয়ে পড়ে মরে যাবি।
তখন বাতাস বাতাস বলে বাতাসের মাথা খারাপ করে ফেলবি।”
~ “কেউ একজন পেছন থেকে বলে উঠলো আর কার কার মাথা খারাপ হবে?”
“অণু ও ঈশিকা পেছনে তাকিয়ে ভয়ে জমে গেলো।”
“তার কারণ হলো পেছনে আর কেউ নয়, স্বয়ং শুভ্র এক পায়ের উপর আরেক পা ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
ধূসর কালারের ব্লেজারে শুভ্রকে ভয়ংকর সুন্দর দেখাচ্ছে।
ঈশিকা ও অণুকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে শুভ্র চেচিয়ে বললো
হোয়াট আমি কী তোমাদের দুলাভাই লাগি, যে পান সরবত পান করানোর জন্য দরজায় দাঁড়িয়ে আছো।”
~ “অণু শুভ্রকে বললো,”সরি স্যার আসলে একটু কথা বলছিলাম”।
~”শুভ্র তাচ্ছিল্যের স্বরে বললো”তা তো বেশ দেখতে পেলাম, কী কী আলোচনা করছো।হসপিটালে এসে জামাইয়ের উপর ডিগ্রি নিচ্ছো। কয়দিন পর তো দেখা যাবে ডিগ্রি নিতে লন্ডনেও চলে গেছো।”
~”ঈশিকা মনে মনে বেশ লজ্জা পেলো এই বরফের শুভ্র না জানি কতোক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কী সব শুনেছে, আর এখন আর কী কী বলে লজ্জায় পেলে, না জানি সবই শুনে নিয়েছে। ঈশিকার কাছে যেনো সব জট পাকিয়ে যাচ্ছে।”
~”শুভ্র ঈশিকার দিকে তাকিয়ে বললো, এই~ যে ঈশিকা ম্যাম প্লিজ কাম টু মা’ই রুম বলে হনহনিয়ে চলে গেলো।”
~”ঈশিকার তো প্রাণ যায়যায়। ঈশিকা তবুও সব ভয় পেলে দিয়ে শুভ্রের রুমের দিকে এক কদম দু কদম করে পা ফেলছে আর বুকের ভেতর ভয়ে দাও দাও করে আগুন জ্বলছে।”
~”শুভ্র কেবিনে গিয়ে ভীষণ রকম ঘামছে। এসির টেম্পারেচার সর্বোচ্চ বাড়িয়ে দিলো তবুও গরম লাগছে। কেমন অস্থির অস্থির লাগছে। শুভ্রের তো ইচ্ছে করছে বাথটাবের ভেতর বরফ জলে গোসল করতে। শুভ্র কোনো উপায় না পেয়ে ড্রয়ার থেকে কিছু একটা বের করলো।”
~”ঈশিকা শুভ্র থেকে অনুমতি নিয়ে রুমের ক্যাবিনের ভেতর প্রবেশ করলো।”
~”ঈশিকা রুমে প্রবেশ করলে শুভ্র এসে দরজাটা আটকিয়ে দিলো।”
~”ঈশিকা ভয়ে ঢোক গিললো, একে~ তো ঈশিকা ভয়ে চুপসে আছে। তারউপর আবার দরজা আটকিয়ে দিলো শুভ্র। কি হতে চলছে কিছুই মাথায় ঢুকছে না ঈশিকার।”
~”ঈশিকা শুভ্রকে দেখে ভয়ে একদম জমে যাচ্ছে। ঈশিকা কী বলবে ভেবে পাচ্ছেনা। শুভ্রকে দেখে ঈশিকার বুকের ভেতর টা ঢিপঢিপ করছে, এতো সুন্দর মানুষ হয়, এই ছেলে ঈশিকা কে যেনো পাগল করে ছাড়বে।”
~ “শুভ্র ধূসর কালারের ব্লেজার টা খুলে চেয়ারের হাতায় রাখলো। তারপর এক~ এক করে শার্টের বোতাম খুলতে শুরু করলো।”
~”ঈশিকা চিৎকার দিয়ে বললো,”স্যার কী করছেন”?
~”শুভ্রের ভীষণ রকম অস্থিরতা লাগছে, কী হবে কিছুই জানা নেই, শুভ্র দাঁত কটমট করে ঈশিকা কে বললো, তোমার সাথে বাসর করবো। এতোক্ষণ কী কী আলোচনা করেছো সব কী ভুলে গেছো?”
পর্ব ০৯
ঈশিকার বুকের ভেতর টা ভয়ে দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে।
তাঁর কারণ হলো ঐদিন ঈশিকার মাথা টা বেশ গরম ছিলো যার কারনে অকথ্য ভাষায় কথাগুলো বলেছিলো ঐ ছেলেটা কে।
কিন্তু এখন হবে টা কী তা ভাবতেই ঈশিকার হাত, পা হিম হয়ে যাচ্ছে। ইচ্ছে তো করছে মাটি খুঁড়ে ভেতরে চলে যেতে। এই লোক এখন কি~ না কী করে বসে। যদি ঈশিকা কে অপমান করে বের করে দেয়।
ঈশিকা তো পারছেনা ভয়ে কেঁদে ফেলে।
ঈশিকা কখনো কাউকে তেমন সরি বলে না, তবুও আজ সরি বলবে বলে ঠিক করেছে। ঈশিকার ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও নতুন স্যার কে সরি বললো।
ঈশিকা নিজের চোখ কেও বিশ্বাস করতে পারছে না নতুন স্যার যে ঐদিনের ছেলেটা হবে।
ঈশিকা অবাক হয়ে বললো আপনি এখানে কেনো?
~ শুভ্র চেচিয়ে বললো,”হোয়াট আপনি”! কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকো।
~ ঈশিকা হোয়াট বলে চিৎকার দিলো। মনে মনে ভাবলো আর কোনো উপায় নেই।সবার সামনে বের করে দেওয়ার চাইতে কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকা অনেক ভালো।
~ মা’ই নেইম শুভ্র মাহমুদ। ড্যাড অসুস্থ যার কারনে এই হসপিটালের সকল দায়িত্ব এখন আমার, আন্ডারস্ট্যান্ড হোয়াট আই সে?
~ ঈশিকা মুখ টা কাঁচুমাচু ভঙ্গিতে বললো ইয়েস স্যার।
~ শুভ্র আবার বলতে শুরু করলো, ঐ দিন তো না জেনে না বুঝে খুব তো আমাকে ঝাড়লে।আমি নাকি ইচ্ছে করে তোমার সাথে ধাক্কা খেয়েছি, আমার তো খেয়ে দেয়ে কাজ নেই তোমার মতো জাড়ুল গাছের সাথে ধাক্কাধাক্কি খেতে। এখন যদি আমি তোমাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেই ব্যাপারটা কেমন হবে?
~ ফেলে লে লে লে দিবেন মানে। আমি কী করেছি। ঈশিকার এবার খুব ভালো করেই মনে পড়লো ঐ দিন ফোসকা খাওয়ার দিনটির কথা। ঈশিকা আসলেই খুব বাজে ব্যাবহার করেছিলো। বাসায় গিয়েও ঈশিকা ব্যাপারটা নিয়ে খুব খুব ভেবেছিল। মন থেকে মনে মনে সরিও বলেছিলো যা শুভ্র শুনতে পায়নি।
~ কী করেছো মানে। হোয়াট দ্যা হ্যাল।
ঘড়িতে টাইম দেখেছো কতো টা লেইট করেছো। আমি বুঝতে পারছি না একজন ডাক্তার হয়ে কীভাবে পারলে এতো টা লেট করতে।
ড্যামেট আনসার মি।
~ ঈশিকা কী বলবে ভেবে পাচ্ছে না। যা সত্যি তাই বললো।
আসলে স্যার রাস্তায় এ~ তো এ~ তো জ্যামে আটকা পড়েছি তাই লেট হয়ে গেলো।
~ তুমি একাই জ্যামে পড়েছ, আর আমরা কী উড়ো জাহাজ দিয়ে উড়ে উড়ে এসেছি।
একজন ডাক্তার হয়েও কিভাবে এতো টা কেয়ারলেস হতে পারো।
জ্যাম না ছাই লিপস্টিক একটার উপর দিয়ে আরেকটা লাগিয়েছ, ফেইস পাউডার একটার উপর পাঁচটা লাগিয়েছ সেটা বলো।
~ ঈশিকার চোখ যেনো অস্ফুটে কেঁদে ফেলবার অবস্থা। ঈশিকা অনেক কষ্টে কান্না আটকিয়ে বললো, স্যার আমি লিপস্টিকও দেইনা, আর না কোনো ফেইস পাউডার ইউজ করি। আমি এতোটাও ধনী নয়, যে নিজেদের গাড়ি দিয়ে যাওয়া আসা করবো।
~ শুভ্র ঈশিকার দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ভেবে বললো কান ছাড়ো। ঠিক আছে তোমার ক্যাবিনে যাও দরকার পড়লে আমি ডাকবো। আর শুনো আজ ফাস্ট দিন আমার জন্য তাই তোমাকে মাফ করা হলো। পরবর্তী তে কিন্তু আর এ সুযোগ পাবে না মাইন্ড ইট।
~ ঈশিকার তো সেই রকম কান্না পাচ্ছে।
এতো এতো কান্না পারছে ইচ্ছে তো করছে চিৎকার করে বুক ফাটিয়ে কাঁদতে। এতটা অপমান ঈশিকা কে কেউ কখনো করে নি।
ঈশিকা পরিস্থিতি শান্ত রেখে শুভ্র কে বললো ঠিক আছে স্যার আমি এখন আসি বলে ক্যাবিন থেকে বের হয়ে গেলো।
~ ঈশিকা অণু কে দেখে থমকে দাঁড়ালো। ঈশিকার তো সেই রকম ভয় লাগছে, অণু বেষ্ট ফ্রেন্ড হওয়া সত্বেও যদি সব শুনে ফেলে তাহলে তো মানসম্মান যা আছে সবই যাবে।
ঈশিকা নিজেকে স্বাভাবিক রাখলো।
~ অণু জিজ্ঞেস করলো,”কিরে ঈশিকা নতুন স্যার তোকে বকাবকি করে নিতো আবার”?
ঈশিকা বললো,”নাহ কী বলবে, আমি কী ভিক্ষারী নাকি, যে আমাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিবে।
হয়তো একটু লেট করে ফেলেছি তাই স্যার আমাকে আজ বলে দিয়েছেন টাইমলি যেনো হসপিটালে চলে আসি।
আর যেনো লেট না করি।
ঈশিকা অণু কে পিঠে থাপ্পর দিয়ে বললো, হয়েছে কালনাগিনী আমার কথা ভেবে ভেবে আর সর্দি লাগাস না, পরে দেখা যাবে জ্বরও বাঁধিয়ে ফেলছিস।
অফিস মিস করলে, আমার জন্য এতোক্ষণ ধরে যতো এডভান্স চিন্তাগুলো করেছিস্ তুষার শুভ্র তোর উপর সব বাস্তবিক করবে।
~ ওয়েট ওয়েট আমি কালনাগিনী হলে তুই বিষ নাগিনী। তুর রূপের বিষে সবাইকে বশীভূত করে ফেলিস। দেখ গিয়ে নতুন স্যারও বশীভূত হয়ে আছে।
এখন বল এতো কিউট নামটা কার?
~ কোনটা শুভ্র?
~ হুম।
~ আরে এখনো জানিস না আমাদের নতুন স্যার উল্লুক টার নাম ই তো শুভ্র মাহমুদ।
~ অণু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো
ওহ্ রিয়েলি! শুভ্র কী নাইচ নেইম। যেনো বরফে ঢাকা শীতল পরশ। অবিরাম হিম বাতাসে স্পর্শ করে যায় হৃদয়। আমার তো মনে হচ্ছে এখুনি শুভ্র বাতাসে উড়ে উড়ে বেড়াচ্ছি।
~ ঈশিকা তাচ্ছিল্য করে বললো,”বরফ না আগুন পরেই টের পাবি।
শুভ্র না শুভ্রের ছাই পরেই সবটা টের পাবি এখন ক্যাবিনে চল কিছু খাবো অনেক খিদে পেয়েছে।
~ অণু ঈশিকা কে বললো,”ঈশিকা শুন তুই দিনে পাঁচ বেলা খেলেও মোটা হবি না। তুই যা খাদক।
আর আমাকে দেখ আমার মতো অভাগিনী কী আর আছে, না খেয়ে খেয়েও দিন দিন আলুর বস্তা হয়ে যাচ্ছি।
~ ঈশিকা অনেক কষ্টে নিজের হাসি চেপে বললো,”তুই বড্ড বোকা তোর জামাই দেখবি খুবি খুশি হবে তোকে পেয়ে।
~ অণু অবাক চোখে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,”কিভাবে”? তুই কী আমাকে অপমান করছিস?
~ আরে না আমি কী আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড কে অপমান করতে পারি আমার বুঝি মান যাবে না তোকে অপমান করলে।
শুন বুঝিয়ে বলছি। আগে ক্যাবিনে চল।
ঈশিকা অণু কে নিয়ে ক্যাবিনে গেলো।
~ ঈশিকা ক্যাবিনে গিয়ে সব কিছু গোছাতে গোছাতে বললো শুন, বেশিরভাগ জামাই তার বউকে কোলে নেয় তুই না হয় উল্টোটা করলি। জামাই কে কোলে নিবি।
তোকে কে বললো তুই আলুর বস্তা, তুই তো হবি তোর জামাইয়ের কোলের বস্তা।
যে বস্তায় জড়িয়ে ধরলে তোর জামাইয়ের চোখে রাজ্য জোরে ঘুম চলে আসবে।
তোদের মাঝখানে কোলবালিশের আর দরকার পড়বেনা বুঝলি তো কাহিনী।
~ অণু বললো,”অহ্ আচ্ছা আমি কোলের বস্তা তুই কী তাহলে?
বাতাসের বস্তা।
তোর জামাই তো তোকে কথায় কথায় কোলে নিয়ে নিবে, আর সারাক্ষণ আতংকে থাকবে কখন না যেনো আবার বাতাসে উড়ে যাস।
~ আমাকে বাতাসের বস্তা বলবিনা, বাতাস না থাকলে তোর মতো মোটা রা ভীষণ সমস্যায় পড়ে যাবি বুঝলি। তোরা কাতলা মাছের মতো কাত হয়ে পড়ে মরে যাবি।
তখন বাতাস বাতাস বলে বাতাসের মাথা খারাপ করে ফেলবি।
~ কেউ একজন পেছন থেকে বলে উঠলো আর কার কার মাথা খারাপ হবে?
অণু ও ঈশিকা পেছনে তাকিয়ে ভয়ে জমে গেলো।
তার কারণ হলো পেছনে আর কেউ নয়, স্বয়ং শুভ্র এক পায়ের উপর আরেক পা ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
ধূসর কালারের ব্লেজারে শুভ্রকে ভয়ংকর সুন্দর দেখাচ্ছে।
ঈশিকা ও অণুকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে শুভ্র চেচিয়ে বললো
হোয়াট আমি কী তোমাদের দুলাভাই লাগি, যে পান সরবত পান করানোর জন্য দরজায় দাঁড়িয়ে আছো।
~ অণু শুভ্রকে বললো,”সরি স্যার আসলে একটু কথা বলছিলাম”।
~ শুভ্র তাচ্ছিল্যের স্বরে বললো”তা তো বেশ দেখতে পেলাম, কী কী আলোচনা করছো।হসপিটালে এসে জামাইয়ের উপর ডিগ্রি নিচ্ছো। কয়দিন পর তো দেখা যাবে ডিগ্রি নিতে লন্ডনেও চলে গেছো।
~ ঈশিকা মনে মনে বেশ লজ্জা পেলো এই বরফের শুভ্র না জানি কতোক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কী সব শুনেছে, আর এখন আর কী কী বলে লজ্জায় পেলে, না জানি সবই শুনে নিয়েছে। ঈশিকার কাছে যেনো সব জট পাকিয়ে যাচ্ছে।
~ শুভ্র ঈশিকার দিকে তাকিয়ে বললো, এই~ যে ঈশিকা ম্যাম প্লিজ কাম টু মা’ই রুম বলে হনহনিয়ে চলে গেলো।
~ ঈশিকার তো প্রাণ যায়যায়। ঈশিকা তবুও সব ভয় পেলে দিয়ে শুভ্রের রুমের দিকে এক কদম দু কদম করে পা ফেলছে আর বুকের ভেতর ভয়ে দাও দাও করে আগুন জ্বলছে।
~ শুভ্র কেবিনে গিয়ে ভীষণ রকম ঘামছে। এসির টেম্পারেচার সর্বোচ্চ বাড়িয়ে দিলো তবুও গরম লাগছে। কেমন অস্থির অস্থির লাগছে। শুভ্রের তো ইচ্ছে করছে বাথটাবের ভেতর বরফ জলে গোসল করতে। শুভ্র কোনো উপায় না পেয়ে ড্রয়ার থেকে কিছু একটা বের করলো।
~ ঈশিকা শুভ্র থেকে অনুমতি নিয়ে রুমের ক্যাবিনের ভেতর প্রবেশ করলো।
~ ঈশিকা রুমে প্রবেশ করলে শুভ্র এসে দরজাটা আটকিয়ে দিলো।
~ ঈশিকা ভয়ে ঢোক গিললো, একে~ তো ঈশিকা ভয়ে চুপসে আছে। তারউপর আবার দরজা আটকিয়ে দিলো শুভ্র। কি হতে চলছে কিছুই মাথায় ঢুকছে না ঈশিকার।
~ ঈশিকা শুভ্রকে দেখে ভয়ে একদম জমে যাচ্ছে। ঈশিকা কী বলবে ভেবে পাচ্ছেনা। শুভ্রকে দেখে ঈশিকার বুকের ভেতর টা ঢিপঢিপ করছে, এতো সুন্দর মানুষ হয়, এই ছেলে ঈশিকা কে যেনো পাগল করে ছাড়বে।
~ শুভ্র ধূসর কালারের ব্লেজার টা খুলে চেয়ারের হাতায় রাখলো। তারপর এক~ এক করে শার্টের বোতাম খুলতে শুরু করলো।
~ ঈশিকা চিৎকার দিয়ে বললো,”স্যার কী করছেন”?
~ শুভ্রের ভীষণ রকম অস্থিরতা লাগছে, কী হবে কিছুই জানা নেই, শুভ্র দাঁত কটমট করে ঈশিকা কে বললো, তোমার সাথে বাসর করবো। এতোক্ষণ কী কী আলোচনা করলে মনে আছে তো।
পর্ব ১০
~ শুভ্রের কথা শুনে, ঈশিকার তো সেই রকম ভয় লাগছে, ভয় পেয়ে একদম জমে যাচ্ছে।
ঈশিকা মনে মনে ভাবছে,”সত্যিকি উনি এমন কিছু করতে চলেছেন যার কারনে নিজেকে আজ একজন পুরুষের কাছে বলিদান করতে হবে।”
“রাতের আকাশে কী আর তারা দেখা হবে না, জীবন খানা কী অন্ধকারে ছেয়ে যাবে তাহলে।
~ “না, এটা কিছুতেই হতে দেওয়া যাবে না”ঈশিকা মনে মনে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করলো।
দরকার পড়লে এই শুভ্রকে খুন করে দেবো তবুও নিজেকে লাঞ্চিত হতে দেবোনা।
~ হঠাৎ ঈশিকার সামনে তুড়ি বেজে উঠে, ঈশিকা চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে
শুভ্র সত্যি সত্যি গায়ের সমস্ত কাপড় খুলে দাঁড়িয়ে আছে শুধু প্যান্ট আছে। জানালা দিয়ে দমকা বাতাসে শুভ্রের চুল গুলো লাগামহীন ভাবে উড়ে বেড়াচ্ছে, অদ্ভুত সৌন্দর্যে ঈশিকার বুকের ভেতর যেনো মোহ এসে দানা বাঁধছে। বুকের ভেতর যেনো জলতরঙ্গ খেলা করছে। এ~ তো এ~ তো সৌন্দর্যে যে কোনো মেয়ে ভুল করে হলেও নিজের সর্বনাশ করে বসবে।
সাত সাগরের ঢেউয়ে হৃদয় যেনো উতালপাতাল শুরু করেছে। ঈশিকার গাঁয়ের সমস্ত লোমশ দাঁড়িয়ে গেছে, আজ কী তাহলে সত্যি নিজেকে উৎসর্গ করে দেবে এই সুদর্শন যুবকের বুকে।
~ ঈশিকা মনে যদিও মোহ কাজ করছে বিবেক বলে কিছু একটা মস্তিষ্কে বারবার জানান দিচ্ছে।
ঈশিকা এবার ভরকে গেল। ঈশিকা তো পারছেনা জোরে চিৎকার দিতে। তাঁর কারণ হলো ঈশিকা মনে মনে যতই নিজেকে শক্তিশালী মনে করুক না কেনও দিনশেষে প্রতিটি মেয়েই পুরুষ শক্তির কাছে অবলা।
ঈশিকা শুভ্রের দিকে তাকিয়ে দেখলো,”বিধাতা প্রচন্ড মনযোগ দিয়ে শরীরের প্রতিটি অঙ্গ গড়েছেন উনার যেনো তুষারের ন্যায় শুভ্রের ছোঁয়া লেগে আছে, যেমন তাঁর সুদর্শন চেহারা, তেমনি তাঁর দেহের গঠন, এ যেনো এক অদ্ভুত নীলা দর্শন।
সে যা~ ই হোক বিয়ের আগে যে কোনো পুরুষ মানুষকে দেখা হারাম, ঈশিকা সেটা মনে করেই নিজের চোখ কে সংযত রেখে নিচের দিকে তাকিয়ে বললো, স্যার একি করছেন।
আপনি খালি শরীরে কেনো আমার ভীষণ রকম অস্বস্তি লাগছে।
~ শুভ্র চরম অস্থিরতা নিয়েও ঈশিকার দিকে তাকিয়ে বললো,”কেনো?”
আমার মতো সুদর্শন ছেলে যে প্রতিটি মেয়েরই কাম্য, আমি যে প্রতিটি মেয়ের কামনা বাসনার চাঁদ।
এতো অস্বস্তি লাগার কী আছে আমি আর তুমিই তো তা~ ও এই বদ্ধ রুমে।
কেউ আসবে না জানবে না, আমাদের এই লীলাখেলা।
তোমার জন্য এক পায়ে খাড়া, তোমায় ছাড়া কাটে না মোর বেলা।
ষ্টুপিড গার্ল, ভেবেছ কী, তোমাকে নিয়ে প্রেম লীলায় মাতিয়ে থাকবার জন্য এই বদ্ধ রুমে আবদ্ধ রয়েছি।
আমার একটা কাজ করে দিতে হবে তোমায়।
~ ঈশিকা অজান্তেই আবারো চোখ বুলিয়ে শুভ্র কে দেখতে লাগলো।
ঈশিকা এবার বুঝতে পারলো শুভ্র শুধু সুন্দর ‘ই’ নয় চরম রকম অসভ্যও বটে।
যেনো উনার মধ্যে হাজারো রকম অসভ্যতা বাসা বেঁধেছে।
কিন্তু ঈশিকা কী করতে পারে, কেনো স্যার ‘ই’ বা ঈশিকা কে এই অবস্থায় ডেকেছে ঈশিকার তা জানা নেই।
~ শুভ্র ঈশিকা কে বলতে শুরু করলো,
“আমার উপর এভাবে তাকিয়ে গরুর রচনা পড়া শেষ হলে তোমাকে কী কাজ দিয়েছি সেটা তারাতাড়ি শেষ করো।
~ ঈশিকা না চাইতেও লজ্জা পেলো।
এতো এতো লজ্জা ঈশিকার তো ইচ্ছে করছে সাত সাগরের নিচে তলিয়ে যেতে, আকাশের হলুদ পাখি হয়ে লুকিয়ে যেতে।
ঈশিকা দৃষ্টি সংযত রেখে বললো,”সরি স্যার আপনাকে কিভাবে সাহায্য করতে পারি তা তো আমার জানা নেই।”
~ “তোমার জানা না থাকলেও আমার জানা আছে।”শুভ্র ঈশিকার হাতে কিছু একটা দিয়ে বললো,”এই নাও এটা আমার পুরো শরীরে মেখে দাও, সাবধান নিচে যেনো না পড়ে।”
~ ঈশিকা, শুভ্রের হাত থেকে শিশি টা নিজের হাতে নিয়ে দেখতে লাগলো।
ঈশিকা কালো শিশি টা কে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করেও কিছুই বুঝতে পারলোনা।
~ শুভ্র, ঈশিকার দিকে রাগান্বিত চোখে তাকিয়ে বললো,”এটা বিষের শিশি না যে তোমাকে খাইয়ে আমি মেরে ফেলবো।”
“পুরো শরীরে ভালো করে লাগিয়ে দাও, দেখো আবার আমার শরীরের উপর নজর দিও না।
~ ঈশিকা ভয়ে ভয়ে শিশির ঢাকনা খুলে তরল জাতীয় তেল নিজের হাতে নিলো, কিন্তু এখন হলো আরেক বিপর্যয়।
শুভ্রের খালি শরীরে টাচ করতে বিবেকে ভীষণ বাধছে। টাচ করবে কী করবে না এ নিয়ে ভীষণ ভাবনায় ডুব দিলো।
~ শুভ্র এবার সত্যি সত্যি রেগে গেলো,”হোয়াট হ্যাপেন্ড, আমাকে টাচ করলে কী তোমার নরম হাত গরম হয়ে যাবে।
তোমাকে আর দিতে হবে না আমি নিজেই করে নিতে পারবো।
~ ঈশিকা ভীষণ রকম ভয় পেয়ে গেলো।
মনে মনে ভাবলো, জান বাঁচান ফরজ কাজ। তাই ঈশিকা সাতপাঁচ না ভেবে
শুভ্রের পিঠে তেল মালিশ করতে লাগলো।
তেলটা কিসের তেল, ঈশিকা ভেবেও কিছুই বুঝতে পারেনি কিন্তু তেলটা থেকে ভীষণ রকম সুগন্ধি আসছে, একদম মনমাতানো সৌরভ।
ঈশিকার চোখ বার~ বার শুভ্রের উদোম পিঠে গিয়ে ঠেকছে।
যেখানে প্রচুর নিষেধাজ্ঞা থাকে ঐ জিনিস টার প্রতিই মানুষের চরম আগ্রহ কাজ করে।
ঈশিকার বেলাও তাই হয়েছে।
শুভ্রের নরম পিঠে গরম হাত দিয়ে মালিশ করে যাচ্ছে, পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে হারিয়ে যাচ্ছে।
~ ঈশিকা ছয় থেকে সাত মিনিট মালিশ করার পর, শুভ্র ঈশিকা কে থামিয়ে দিয়ে বললো ওকে, নাউ ইউ ক্যান গো।
~ ঈশিকা কিছু একটা বলতে যাবে এমন সময় শুভ্র চরম বিরক্তি নিয়ে ঈশিকা কে থামিয়ে বললো,”প্লিজ আমি এখন কিছুই শুনতে চাই না, তুমি যেতে পারো।”
“আর শুনো তুমি এতোক্ষণ ধরে আমার কী সেবা করেছো, বুক ফুলিয়ে বাহিরের কাউকে বলতে যেওনা।
~ এমনকি তোমার বেষ্ট ফ্রেন্ড কেও না।
বুঝতো সবি, এমন এমন ভাব করে বসে থাকো যেনো তুমি কবি।
বাহিরের লোকের কাছে এই ঘটনাটা বললেও তোমার যে খুব একটা সুনাম হবে না সেটা বেশ বুঝতেই পারছো মাইন্ড ইট।
~ ঈশিকা শুভ্রের কথাগুলো কান দিয়ে শুনছে, আর গরম বাতাস বের করছে। কিন্তু চোখের পলক ফেলছে না।
ঘন পাপড়িতে ভরা মায়াবী চোখ বিশিষ্ট লোকটা কিভাবে এতো টা হীনমন্যতা নিয়ে কথা বলতে পারে, ব্যাপারটা ঈশিকা কে বেশ ভাবাচ্ছে।
~ এই মায়াবী ভরা ব্যাক্তির দুচোখে তাকালেই যেনো দুনিয়ার সব ভুলে একাকার হয়ে যেতে ইচ্ছে করে।
কিন্তু লোক টার কথাগুলো অন্তরকে বেশ জ্বালায়, এ~ তো এ~ তো জ্বালা করে যেনো দুনিয়ার বিষাক্ত সাপের ছোবল থেকেও বিষাদময়। ঈশিকার মন বেশ ভাবাচ্ছে কেমন অদ্ভুত লোক, কাজ করিয়েও সামান্যতম ধন্যবাদ দিতেও উনি কুন্ঠিত বোধ করেন।
~ ঈশিকা নিজেকে বহুকষ্টে সংযত রেখে বললো,”স্যার আপনি নিশ্চিন্তে থাকুন,
এই বদ্ধ রুমে কী হয়েছে, না হয়েছে, আমি ঢাকঢোল পিটিয়ে কাউকে বলতে যাবো না।”
এই ব’লে ঈশিকা শুভ্রের রুম প্রস্থান করলো।
ঈশিকা এমনিতেও কাউকেই বলতো না, স্যারকে মালিশ করে দিয়েছে, ব্যাপারটা কেউ শুনলে যে অনেক জগন্য ভাববে ঈশিকা তা বেশ ভালোই বুঝে।
~ ঈশিকা নিজের ক্যাবিনে গিয়ে দরজাটা আটকে বসে রইলো।
~ অণু হাতের কাজ শেষ করে ঈশিকার ক্যাবিনে এসে অনেকক্ষণ দরজা নক করে গেলো।
কিন্তু না ঈশিকা কোনো সাড়া দেয়নি।
অণুও আর বিরক্ত না করে চলে গেলো।
~ ঈশিকা বসে বসে ভাবছে স্যারের এমন কী হলো যে, স্যার শেষ পর্যন্ত আমাকে দিয়েই তেল মালিশ করালো।
স্যার কী আমাকে অপমান করবার জন্য প্লেনটা করেছেন তাহলে।
আজ একটু না~ হয় একটু খানি লেট হয়েছে
সেজন্য বুঝি স্যার এই জগন্যতম কাজটা করাতে পারলেন।
~ ছিঃ
ব্যাপারটা ভাবলেই কেমন বিচ্ছিরি দেখায়।
আসলে সব পুরুষ ‘ই’ এক
শত~ শত বাহানা দিয়ে মেয়েদের শরীর ছোঁয়ার চেষ্টা মাত্র।
কিছুকিছু শিক্ষিত লোকের মধ্যেও যে নরপশু বিরাজমান তা স্যারকে দেখেই আজ বুঝা গেলো।
কথাগুলো ঈশিকা নিজে নিজে ভাবছে
আর অস্ফুটে চোখের জল গড়িয়ে পড়ছে।
~”নিঝুম বিকেলে ক্লান্ত মনে
অবলীলায় পিপাসার্ত মন।
গোধূলিলগ্নে বার~ বার বুঝিয়ে দিলো,
কে আপন, কে পর।”
~ নারী পিপাশু পুরুষ সমাজে
নারীদেরকে আরো বেশি কঠোর হতে হবে।
তা না হলে, শত~ শত পুরুষ নারীদের কে নির্লিপ্ত ভাবে অসৎ কাজে লাগাবে।
~ ঈশিকা কিছু একটা ভেবে মুখে প্রশান্তির হাসি রেখা টানলো।
~ সকল কাজ শেষ করে বাসায় যাওয়ার সময় হয়ে গেছে। শুভ্রের অস্থিরতাটা আগের চেয়ে একটু কমেছে।
শুভ্র পোশাক পরিধান করে বের হয়ে গেলো।
~ বাসায় তাড়া ছিলো, তাই অণু আজ একটু আগেই বের হয়ে গেছে।
~ ঈশিকার কপাল আজ আসলেই খারাপ।
আসার সময়ও গাড়ি পায়নি, যার কারনে স্যারের কাছেও আজ লাঞ্চিত হতে হলো, আর এখন আবার বাসায় ফিরবার সময়ও টেক্সি পাচ্ছে না। না জানি বাসায় গিয়েও কার না কার হাতে অপদস্ত হতে হয়।
ঈশিকা মনে মনে ভাবছে, আজ কোন অলক্ষির মুখ দেখে যে ঘুম থেকে উঠেছি, আল্লাহ জানে।
২০~ ৩০ মিনিট অপেক্ষা করতে করতে ঈশিকার পা ব্যাথা হয়ে গেলো।
~ দূর থেকে কেউ একজন গাড়ির ভেতর থেকে ইশিকা কে অবলোকন করছে, আর বেশ মজা নিয়ে হাসছে।
~ ইশিকার সামনে হঠাৎ একটি গাড়ি এসে থামলো।
ঈশিকা তো বেশ ভয় পেয়ে গেলো, ভয় পেয়ে একদম স্ট্রোক করে ফেলবার মতো অবস্থা।ঈশিকার প্রাণ টা যেনো একটুর জন্য বেঁচে গেলো।
~ গাড়ির দরজা খুলে দিয়ে চোখের সানগ্লাস নামিয়ে, সুদর্শন হিরোর মতো ছেলেটা ঈশিকা কে বললো,
“কাম অন ইন ম্যাম, যদি আপনার কোনো আপত্তি না থাকে।”
~ ঈশিকাও বেশ অবাক হলো।
এমন সময় এমন কেউ আসবে, এমনটা কখনো আশা করে নি।
ঈশিকাও সাতপাঁচ না ভেবেই গাড়িতে উঠে পড়লো।
সুদর্শন ছেলে টা গাড়ি স্টার্ট দিয়ে ঈশিকা কে নিয়ে চলে গেলো।
~ আর এদিকে দূর থেকে অবলোকন করা ব্যাক্তি ফুলে একদম বেলুন।
আরেকটু হলেই ফেটে যাবে। রাগে হাত দিয়ে নিজের চুল নিজে মুঠো করে ছিঁড়ছে।
শুধু পারছে না গাড়ি নিয়ে আসা ছেলেটা কে কাঁচা চিবিয়ে খেতে।
খেলেও যেনো কম হবে, আগুনে পুড়িয়ে কয়লা করে ফেললেই যেনো মনটা ক্ষান্ত হবে।
দূর থেকে অবলোকন করা ব্যাক্তিটি কিছু একটা ভেবে নিজেকে শান্ত করে
গাছের শেকড়ের সাথে জোরে একটা লাথি মারলো।
ব্যাথা পেয়ে আহ্ করে উঠলো।
~ কিন্তু
“এ ব্যাথা কঠিন ব্যাথা নয়, তোমার ছেয়ে
যে ব্যাথা বহিছে হৃদয়ে।
জ্বালিয়ে দেবো সবি, পুড়িয়ে দেবো সবি
তপস্যায় আছো শুধু তুমি”
আজ আমি ব্যাথিত হৃদয় নিয়ে ফিরছি প্রিয়, ব্যাথিত হৃদয়ের দাগটা ভালবাসার ছোঁয়াতে তোমাকেই মুছে দিতে হবে। তুমি আছো শুধু অন্তরে, ভালোবাসার গভীরে। ঘুরেফিরে আসতেই হবে এ বক্ষে।
তুমি আমার চাঁদের তারা, রঙধনুর সাত রং, তোমাকে নিয়ে পাড়ি দেবো অবলীলার বাসর।
জোনাকির আলোতে তোমাকে দেখে হাজারো বছরের তৃষ্ণা মেটাবো আমি।
আজ যে ব্যাথা দিয়েছো এই গহীন হৃদয়ে, এ ব্যাথার ভাগ তোমাকেও নিতে হবে মায়াবতী।
গহীন হৃদয় থেকে স্রষ্টার কাছে চ্যালেঞ্জ করলাম।
“ভালো থেকো তুমি
আসবো আমি ফিরে
বার~ বার তোমায় ঘিরে।”
পর্ব ~ ১১
~ চারপাশ টা কেমন যেনো খাঁ খাঁ করছে।
মাথার ভিতরটা কেমন গিজগিজ করছে ঈশিকার।
কেমন যেনো অদ্ভুত ফিলিংস হচ্ছে। এতো খারাপ কেনো বোধ হচ্ছে ঈশিকার তা বোধগম্য নয়।
~ পাশে একজন সুদর্শন যুবক বসে আছে, তাতে ঈশিকার কোনো মাথা ব্যাথা নেই।
ঈশিকার বুকের ভেতর চিনচিনে ব্যথা হচ্ছে। চোখের পলকের সাথে সাথে যেনো গাড়ি চলছে, তবুও এ পথের যেনো শেষ ই হচ্ছে না। ঈশিকা গাড়িতে মাথা গুঁজে বসে আছে, যেনো একটু হলেও স্বস্তি বোধ হয়।
~ গাড়ি চালানো ছেলেটি ঈশিকা কে বললো,”এই যে ম্যাম আপনার কী খুব খারাপ লাগছে, মনে হচ্ছে আপনি অনেক টায়ার্ড।”
আচ্ছা আপনি কী খুব অবাক হয়েছেন?
মনে মনে নিশ্চয়ই ভাবছেন আমি আপনার পিছু নিয়েছি কি~ না?
~ হা হা হা
আসলে তা নয়,”ঐ দিকে একটু জরুরী কাজ ছিলো, আসার পথেই আপনার সাথে দেখা।”
“তাই ভাবলাম আপনি যদি আবারও লেট করেন, বাসায় গিয়ে হয়তো বকুনি খেতে পারেন।”
ঈশিকা মনে মনে বললো,”শুধু বকুনি না,
“মাথায় হয়তো আজ কোনো চুল ই থাকবেনা, আম্মা সবকটা ছিঁড়ে ফেলবে।”
তখনতো জামাই বাড়ি গিয়ে টাকলু মাথার জন্য একের পর এক খোঁটা শুনতে হবে।
ঈশিকা এমন ভাব নিয়ে ফারহান কে জবাব দিলো, যেনো কিছুই ভাবছে না।
ঈশিকা রিলাক্স মুডে জবাব দিলো”আসলে তা নয়, বাসায় হয়তো সবাই খুবি টেনশন করছে, তাই ভাবছি।”
ঈশিকা কথাগুলো এমন ভাব ধরে বললো,”যেনো বাসায় ফিরলেই ওকে ওর মা কোলে নিয়ে আদর দিয়ে ঘুম পারাবে।
ফারহান ঈশিকার কথা শুনে কিছু একটা ভেবে বললো, ওকে ম্যাম।
আপনি ঘড়ি টা একটু ভালোভাবে চেকিং করে নিন, আমি ঠিক আপনাকে ১০ মিনিটের মধ্যে পৌঁছিয়ে দিচ্ছি।
ঈশিকা ঠিক করে ঘড়িটা দেখে নিলো।
ফারহান ঈশিকা কে বললো,”ম্যাম আপনি দয়া করে চোখটা বন্ধ করুন।”
কেন?
~ ফারহান ঈশিকার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেঁসে জবাব দিলো,”আসলে কেউ চোখ খোলা রাখলে আমি দ্রুত গাড়ি ড্রাইভ করতে পারি না।”
এখন আপনি যদি তারাতাড়ি বাসায় যেতে চান, তাহলে চোখ বন্ধ করুন।”
“আর যদি না যেতে চান তাহলে খোলা রাখুন আপনার ইচ্ছা।
“ঈশিকা ভাবলেশহীন ভাবে ফারহানের দিকে তাকিয়ে বললো ঠিক আছে আমি চোখ বন্ধ করে আপনাকে ধন্য করছি, কিন্তু শুনুন দ্রুত গতিতে পৌঁছাতে গিয়ে না জানি আবার পঙ্গু হসপিটালে পৌছিয়ে দেন।”
ওকে তা দেখা যাবে।
কিন্তু দশ মিনিট পর, এখন চোখ বন্ধ করুন।
“ঈশিকা চোখ বুঁজে গাড়ির সিটে হেলান দিয়ে মাথাটা আরাম করে রাখলো।”
গাড়ি কি চলছে, না~ কি হাওয়ায় ভাসছে
“কিছুই বুঝা যাচ্ছে না, কানে শুধু শোঁশোঁ বাতাসের ধ্বনি ভেসে আসছে।”
“ঈশিকা চোখ দুটি খুলতেও পারছেনা।”
“তাঁর কারণ হলো, ফারহানের কাছে ওয়াদা বদ্ধ।”
“ঈশিকা ফারহানের কাছে ওয়াদা করেছে যে, যা~ ই হয়ে যাক কিছুতেই ঈশিকা চোখ খুলতে পারবেনা।”
“চোখ বুজা অবস্থায় ঈশিকার হঠাৎ অনূভুত হলো, কালো অন্ধকারে কালো হুডি পরিহিত বিশাল লম্বা কেউ একজন ঈশিকার সামনে দু~ হাত পেতে আছে।
ঈশিকা ভীষণ ঘামছে, ঘেমে একদম একাকার, হুডি পরিহিত লোকটা যখন ঈশিকার খুব কাছাকাছি চলে আসছে, ঈশিকা ভয় পেয়ে একপা দু’পা করে পিছাতে লাগলো, একসময় ঈশিকা থেমে গেল, হুডি পরিহিত লোকটা ঈশিকার হাত ধরতে যাবে যখুনি, ঠিক তখুনি”ঈশিকা চোখ খুলে অবাক!”
“তা~ ও ভীষণ রকম অবাক।”
“ফারহান গাড়ি থেকে বের হয়ে ঈশিকার দরজা খুলে বললো, প্লিজ কাম ম্যাম।
বাই দ্যা ওয়ে, প্লিজ ঘড়িটা চেকিং করে নিন, কতো মিনিটের মধ্যে পৌছালাম আমরা?”
“ঈশিকা ঘড়িতে তাকিয়ে দেখলো দশ মিনিট পুরোপুরি পারও হয়নি।”
“তার আগেই বাসায় পৌঁছে গেলো।”
এটা কী সত্যি পসিবল!
ঈশিকার মাথার ভেতর থেকে কালো হুডি পরিহিত লোকটির ব্যাপারটা এখনো সরেনি, মাথা অলরেডি হ্যাং মেরে আছে, তা রিফ্রেশ করবে কিভাবে সেটাই জানা নেই, এখন আবার নতুন কৌতুহল শুরু হলো জানতে, ১ঘন্টার পথ কিভাবে ১০ মিনিটে পৌছানো যায়।
“সে যা~ ই হোক ঈশিকা এ ব্যাপারটা নিয়ে মাথাটা আর বেশি ঘোলা করতে চায় না।”
ঈশিকা গাড়ির ভেতর থেকে বের হয়ে
ফারহান কে বাসায় যেতে বললো।
কিন্তু ফারহান কাজের বাহানা দিয়ে বললো, আরেকদিন, আবার দেখা হবে।
ঐ পর্যন্ত ভালো থাকবেন।
বিধাতা চাইলে আবার দেখা হবে।
ঈশিকাও ফারহান কে বেশি কিছু বলে নি তার কারণ হলো, সবকিছুর আগে কাজ, আর ফারহান কে দেখেই বুঝা যায় অনেক বিজি মানুষ, আর বিশাল বিত্তবানও বটে। বিত্তবানদের এমনি তেও অনেক কাজ থাকে।
ঈশিকা আর বেশি বারাবাড়ি না করে
ফারহান কে হাসিমুখে বিদায় জানালো।
কিন্তু মনের মধ্যে একটা খুট খুঁটে রয়েই গেলো।
ঈশিকা মনে মনে বললো,”সে যা~ ই হোক বাসায় তো ঠিকভাবে আসা হলো, তা~ ও সুস্থ শরীরে।”
“ভালোই হয়েছে, চোখ বুজে ছিলাম, হয়তো এ~ তো জোরে ড্রাইভ করেছে যে, ভয় পেয়ে বেঁহুশ হয়ে যেতাম।”
সকল চিন্তা ঝেড়ে ফেলে ঈশিকা ভয়ে ভয়ে কলিং বেল চাপ দিলো।
“বেল বাজানোর সাথে সাথে কেউ এসে ধপাস করে দরজা খুলে দিলো।”
“সবাই মনে হয় ঈশিকার জন্যই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।”
বাসার সবাই যেনো নিরবতা পালন করছে।
ঈশিকার জন্য ঈশিকার মায়ের যদিও অনেক টান, কিন্তু কোনো অন্যায়ে ঈশিকা কে তিনি কখনো পশ্রয় দেন না।
আজও তাই হলো।
“পাখি দরজা খুলে দিয়ে একপাশে এসে দাঁড়ালো।”
ঈশিকার মা ঈশিকা কে সেই রকম ঝাড়তে লাগলো।
তাঁর কারণ হলো, উনি চান না ঈশিকা কোনো প্রবলেমে পড়ুক।
ঈশিকা যতোক্ষণ বাহিরে থাকে, উনার অবস্থা খুবি খারাপ হয়ে যায়, একদম নাজেহাল। নাওয়াখাওয়া বাদ দিয়ে উনি কেবলই ঈশিকা কে ভাবতে থাকেন।
তাঁর কারণ টা ঈশিকার এখনো অজানা।
“ঈশিকা মনে করে, ঈশিকা ছোট মেয়ে তাই হয়তো মায়ের এতো টা টান।
~ @কিন্তু মাঝেমধ্যে এ~ ই টান বিরক্তির উত্তেজনাও নিয়ে আসে।
“এইতো এখন পুরো ঘরের মানুষের সামনে ঈশিকা কে টানের ছলে অপদস্ত হতে হচ্ছে।”
“মা হয়তো এমনি, তাই ঈশিকা সব মুখ বুজে সয়ে যাচ্ছে।”
~”যাক অবশেষে নানি জান এসে ঈশিকা কে শেষ বাঁচা বাঁচিয়ে দিলো।”
“নয় তো কি যে হতো।”
সে যা~ ই হোক বাঁচাতো গেলো।
এই ভেবে ঈশিকা নিজের রুমে চলে গেলো।
আর এদিকে ঈশিকার মায়ের কান্না এখনো থামানো যাচ্ছে না।
ঈশিকার নানি অনেক কিছু বলে উনাকে বুঝাতে চাইছেন, কিন্তু উনার যেনো কিছুতেই বুঝ মানতে মন চাইছে না।
পুরোনো কোনো একটা ভয় উনাকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে।
~ ঈশিকার মায়ের কথা শুনে ঈশিকার নানি জানও দরদর করে ঘামতে শুরু করলো। ঈশিকার নানি জান তারাতাড়ি এসে নিজের মেয়ের মুখ চেপে ধরে বললো, জাহানারা( ঈশিকার মায়ের নাম)
যা বলেছিস আর বলিস না, কেউ শুনতে পাবে।
আম্মা তুমি কী বলো, সবাই যখন জিজ্ঞেস করবে তখন আমরা কী জবাব দিব বলো।
আমি কিছুই চাই না, আমি শুধু আমার ঈশিকা কে চাই।
ঈশিকা হঠাৎ কিছু একটা নিতে আসছিলো, মায়ের রুমের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় মায়ের কান্না শুনতে পেলো।
ঈশিকার বুকের ভেতর টা চ্যাৎ করে উঠলো।
~”মা তো মা
নেই যার তুলনা।”
~ কী ব্যাপার মা তুৃমি এখনো কাঁদছো।
সামান্য একটু লেট করেছি বলে এতো কান্না। যদি শ্বশুরবাড়ি চলে যাই, তখন কী করবে শুনি?
তখন না জানি আমার শ্বশুর বাবার গলায় ধরে কান্নাকাটি শুরু করে বসো।
তখন তো আমার শ্বাশুড়ি হয়ে যাবে ভিলেন, সবাই আমার উপর ভিলেন গিরি খাটাতে আসবে।খাটাতে খাটাতে একদম খাটাশ বানিয়ে ছাড়বে।
“ঈশিকার কথা শুনে ঈশিকার মা কান্না থামিয়ে পলকহীন চোখে তাকিয়ে রইলো।মায়ের কাছে ঈশিকা যেনো সেই ছোট্ট সোনামণি টা।”
ঈশিকা দৌড়ে গিয়ে ওর মা’কে জড়িয়ে ধরে বললো,”মা জানো তুমি না হাসলে, তোমাকে একদম কিউটি, বিউটি দজ্জাল শ্বাশুড়িগুলোর মতো দেখায়। প্লিজ একটু হাসো না।
ঈশিকার মা দু~ হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে বললো, আমি চাই তোর ভাগ্যে যেনো একজন ভিলেন শ্বাশুড়িই জোটে, যার ভয়ে বাসায় লেট করে না ফিরতে পারিস।
“ওকে মা নো প্রবলেম, এখন তুমি একটুখানি হাসো, শাশুড়ী ভিলেন হোক সমস্যা নেই, কিন্তু আমার মা ভিলেন না হলেই হলো।”
ঈশিকার নানি জান বলে উঠলো,”তোর মা ভিলেন না হোক, আমি কিন্তু আছি, তোর আর তোর জামাইয়ের মধ্যে ভিলেন হয়ে এন্ট্রি নেব।”
ঈশিকা নানির কানে কানে বললো,”ওরে বুড়ী তুমি এন্ট্রি নিলেও প্রবলেম নেই, তোমার এখন বেইল নেই।
তোমাকে আমি সতীন বানাতেও রাজি আছি।””আমি খাটের উপরে থাকবো, আর তুমি খাটের নিচে।”
“তুমি বুড়ো মানুষ তোমার দিকে যে আমার জামাই তাকাবেনা সেটা আমি নিশ্চিন্ত। তাই এ ব্যাপারে আমার কোনো ভয় নেই।”
“তবে খুবি ভালো হবে আমি যখন কাজে থাকবো, আমাদের জন্য রান্নার জন্য একজন লাগবে না সেটা না হয় তুমিই হলে।”সতীন+কাজের বেটি হয়ে এন্ট্রি নিবে।”
“ওরে আল্লাহ তুই এ~ ই আশায় ঘুম মারছিস, তবে রে।”
“ঈশিকাও এক ভোঁদৌড় লাগালো একদম
রুমে।”
“ঈশিকা ফ্রেশ হয়ে মাথা আঁচড়ে আয়নার সামনে এসে দাঁড়ালো।”
ঈশিকার মন চায় আজ নেচে বেড়াতে, পরী দের মতো ডানা লাগিয়ে মুক্ত আকাশে উড়ে বেড়াতে।
ঈশিকা আয়নায় তাকিয়ে শুভ্র রঙের একটি স্টোন টিপ কপালে দিলো, যেনো চারদিকে শুভ্রতার ছোঁয়া লেগে গেলো।
“চুল গুলো মুক্ত বিহঙ্গের মতো ছেড়ে দিয়ে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো।”
“প্রকৃতিতে যেনো আজ মুগ্ধতার
ছোঁয়াছুঁয়ি, পাখিদের সমাহার, সন্ধ্যার আকাশে অন্ধকার এসে ভিড় জমিয়েছে, মনের আকাশে ইচ্ছে ঘুড়ি রা উড়ে বেড়াচ্ছে।”
“হঠাৎ করে ঈশিকার মনে হলো, ফারহানের কথা।”
কি করে পারলো ফারহান তা~ ও এ~ তো দ্রুত, এক ঘন্টার পথ মাত্র দশ মিনিটে পাড়ি দিতে!
ঈশিকা তো ফারহান কে বাসার এড্রেস টাও দেয়নি, ফারহান তাহলে কিভাবে এড্রেস টা জানলো। অফিস যাওয়ার সময় তো ঈশিকা মাঝপথ থেকে ফারহানের গাড়িতে উঠেছে। এড্রেস জানার অবকাশ তো রাখেনি ঈশিকা।
“না কিছুতেই ভাবতে পারছেনা, ভাবতে ভাবতে মাথাটা যেনো ধরে যাচ্ছে তবুও ভাবনার যেনো রেশ কাটতে চাইছে না।”
“কেউ একজন ঈশিকাকে মুগ্ধ নয়নে দেখছে, এ যে হাজার বছরের তৃষ্ণা, যাকে শত দেখায়ও তৃপ্ত হবে না চক্ষুদ্বয়।”
পলকহীন গহীন চোখে তাকিয়ে হাজারো মিনতি যেনো এ চোখে কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারছেনা।
“ঈশিকা আবার সেই মনমাতানো মিষ্টি সুভাস টা পেলো। এই সুভাস কোনো পারফিউম বা ফুলেরও নয়, আলাদা সুভাস যার সুভাসে হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে বার~ বার”ঈশিকা মিষ্টি হাসি ফুটিয়ে বললো, আপনি এসেছেন, আমি খুবি খুশি হলাম।
কী ব্যাপার কথা বলছেন না কেনও। আপনি কী আজ কথা বলবেন না। অভিমান হয়েছে বুঝি। এই দেখেন কান ধরলাম, প্রমিজ করলাম আপনাকে রাগানোর মতো কোনো কথা বলবো না।
অনেকক্ষণ হয়ে গেলো কিন্তু কেউ সাড়া দিচ্ছে না।
চুপ থাকা ব্যাক্তি মনে মনে এটুকুই বললো,”
তুমি তো আমার রাণী মিতালী, মনের পিঞ্জিরার আকুতি, আমার পবিত্র ছোঁয়া, যার ছোঁয়ায় পেতে দিশেহারা মন, তোমাকে চাই সারাক্ষণ।,”ভেবোনা প্রিয় আমি অভিমান করেছি, তোমাকে ঠিকই নিজের করে নিয়েছি।”
“আগের জনমে পায়নি ব’লে এবারো পাবো না, এমন টা আর হবে না।”
“ভালো নাই প্রিয় তুমি বিহীন
বুক ছিঁড়ে আসে ক্রন্দন”
“তোমাকে নিয়ে ভেসে যাবো হিজল তলায়
সঁপে দেবো আমার প্রাণভোমরা।”
পর্ব ১২
~ “ঈশিকা বেশ কিছু সময় বারান্দায় কাটিয়ে রুমে চলে আসে।
ঈশিকার আজ বেশ ভালো লাগছে, তাই হসপিটালের কাগজপত্র গুলো নিয়ে বসলো। অফিসের কাজগুলো শেষ করতেই হবে ঈশিকা কে। তাঁর কারণ হলো একে তো অফিসে লেট করা, তাঁর উপর আজ আবার নতুন স্যারের এন্ট্রি।
তাই পানিশমেন্ট হিসেবে স্যার বাড়তি কাজ হিসেবে অনেক গুলো ফাইল ধরিয়ে দিয়েছে।”
~”ঈশিকা মনে মনে ভাবছে কি কপাল নিয়ে যে আসলাম, আগের স্যারটা কতো ভালো ছিলো, আর এখন আসছে একটা লাল হনুমান, কথায় কথায় চোখ রাঙায়।
চোখ দেখলেই ভয়ে চুপসে যা~ ই, আর কিছু বলার অবকাশ ই রাখে না।
আচ্ছা স্যার জন্মের পর উনার নানি কী স্যারের মুখে একটুও মধু দিতে পারেন নি।
হসপিটালে এসে এমন ঢং করে যেনো উনি রাজপুত্র।যেনো উনি একাই একশো, উনার পারসোনালিটি দেখে যেনো সবাই ফিদা হয়ে নাচানাচি করবে।”
“ঈশিকার নানি এসে দেখলো ঈশিকা বিড়বিড় করে কি যেনো আওড়াচ্ছে।”
“নানি জি জিজ্ঞেস করলো, কিরে সতীন কাকে এভাবে গালি দিচ্ছিস?
“তোকে আবার কেউ প্রেমের প্রস্তাব দেয় নিতো।”
“শুন এখন কিন্তু প্রেমের সময় নাই তোর বুঝলি তো।”
“এখন তোর ভরা যৌবন, যৌবনে যতো তারাতাড়ি বিয়ে করা যায় ততো ভালো, তাঁর কারণ হলো এসময় বিয়ে করলে জামাইয়ের মর্মও বুঝবি, সংসারে সুখেরও অভাব থাকবে না।”
“তোর নানা জির কথা আর কি বলবো~”
“হয়েছে হয়েছে নানি জি আমি আর শুনতে চাই না, তোমার আর নানা জির আদর, সোহাগের কথা।”
“এসব শুনলে আমার মনে হয়, তুমি আর নানা বাসর ঘরে বাসর করছো, আর আমি খাটের নিচে ভিলেন হয়ে এন্ট্রি নিয়েছি।”
“আচ্ছা আচ্ছা তোকে আর ভিলেন হতে হবে না।”
তোর মা কাজ করছে, তাই আমার মতো বুড়ি কেই তোর জন্য খাবার আনতে হলো।”
এখন খেয়ে নে, না খেয়ে খেয়ে যে হারে বাতাসি হচ্ছিস, আল্লাহ জানে বাসরে নাতজামাই তোকে দেখে না জানি বেহুঁশ হয়ে যায়।
“ঈশিকা ভ্রু নাচিয়ে খেতে খেতে বললো, আহা বুড়ী এ~ তো টেনশন কেনো, তোমার জামাই টার জন্য, তুমি তো আছো, তুমি সামলাবে।”
“হয়েছে হয়েছে এখন খেয়ে শেষ কর।
খেতে খেতে আমাকে বলতো, যাকে নিয়ে এতো টেনশনে ছিলি সে কেমন?
“ঈশিকা জিজ্ঞেসু দৃষ্টিতে নানি জির দিকে তাকালো।”
“নানি জি বললো, আরে ভুলে গেলি নাকি রে, নতুন স্যারের কথা বলছি।
নিশ্চয়ই খুবি ভালো, তোকে নিশ্চয়ই অনেক আদর করে।”
“আদরের কথা শুনে বিষম খেলো ঈশিকা।”
ঈশিকা মনে মনে বললো, আদর না ছাই, উনি যেভাবে তাকায় যে কেউ হজম হতে মিনিট পাঁচেকও লাগবে না।
“কি যে বলো নানি জি আমি কি ছোট যে উনি আমাকে আদর দিবে, আর উনার বয়স কতো জানো?”
“নানি জি অবাক চোখে তাকিয়ে বললো,”কেনো রে আমার চাইতেও বুঝি বেশি?”
“আরে না কী যে বলো, এই মনে করো ২৭/২৮ হবে!”
“ওহ্ বুঝছি তাইলেতো টাটকা জোয়ান।”
“তা তোর কেমন লাগে বলনা বইনা!”
ঈশিকা ভাবনার ভঙ্গিতে থেকে বললো,”একদম রাবণের মতো।”
“যা কী বলিস এগুলো, আমি হলে তো, আমার পেছন পেছন ঘুরাইতাম।”
তুই একটা ফুটা বেলুন, ফোলালেও ফুলতে চাস না। দোয়া করছি শীঘ্রই তোর জীবনে এমন কেউ আসুক, যাকে দেখলেও তোর যেনো মন না ভরে, তাকে দেখা’র জন্য সারাক্ষণ চটপট করতে থাকিস, মনের মধ্যে তার নাম সারাক্ষণ নিতে থাকিস, তাকে ভালোবাসার জন্য হাজারো বাহানা খুঁজিস।”
“হয়েছে কুজো বুড়ী অনেক দোয়া করেছো, আরো দোয়া থাকলে বলো ডিব্বা পুরিয়ে রেখে দেবো।”
“মজা করো না সতীন, ভালোবাসার আগুনে জ্বলেপুড়ে যখন ছাই হয়ে যাবে তখন বুঝবে এই বুড়ির কদর।কদরে কদরে করবে তখন স্মরণ, থাকবো না আমি আজীবন, দেখবো না তোমার রম্য।”
“মজায় মজায় ঈশিকার দু~ চোখ ভিজতে শুরু করলো।”
বুক ফেটে কান্না আসতে লাগলো।
ইচ্ছে তো করছে নানি জি কে জড়িয়ে ধরে ভেউ ভেউ করে কাঁদতে, কেঁদে কেঁদে নানি জি কে ভাসিয়ে দিতে। চোখের পানিতে ডুবে যাক এ বুড়ী, হয়ে যাক আজ সমাধি এই কুঁজো বুড়ির সাথে আমারি।
“ঈশিকা সত্যি সত্যি নানি জি কে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো।”
নানি জিও ঈশিকা কে বুকে জড়িয়ে কোমলভাবে হাত দিয়ে আরো কাছে টেনে নিলো।
নানি জির এ জড়িয়ে ধরার মধ্যে আছে যেনো হাজারো আকুলতা, মনের মধ্যে বইছে ব্যাকুলতা। বুকের নিশ্বাস টা যেনো আজ বড্ড ভারি হয়ে আছে।
“নানি জি যেনো কিছু বলতে চায় ঈশিকা কে।”
~ ঈশিকা নানি জি কে বললো,”দিন দিন বুড়ী তুমি কিন্তু কুজো বুড়ী হয়ে যাচ্ছো।”
আমি কিন্তু আগের রূপ বিবিটা কে~ ই চাই।
(রূপ বিবি ~ নানি জির নাম)
ঈশিকা নানি জি কে গভীরভাবে জড়িয়ে ধরে বললো,”নানি জি আমি হারাতে চাইনা তোমাকে, আমার বড্ড অবেলায়।”
তোমাকে আরো কোটি বছর পেতে চাই।
তোমার দুষ্টু মিষ্টি কথার প্রেমে পরতে চাই।
“পাগলি সতীন আমার, তোকে আর আমার নাতজামাই কে জ্বালানো ছাড়া এতো তারাতাড়ি মরছি না বুঝলি তো।”
ভাবছি দাঁতগুলো লাগিয়ে আসবো তোদের হসপিটালে গিয়ে।
ঈশিকা ভ্রু নাচিয়ে বললো,”কেনো?”
“কেনো আবার তোর কী হিংসা হয়, দাঁত লাগালে বেশি সুন্দর লাগবে যে আমায়?”
ওরে বাবা তা হবে কেনো? ঈশিকা নানি কে ধাক্কা দিয়ে বললো,”রহস্য কী বুড়ী আবার কুঁড়ি হতে চায় না~ কি মন?”
“হইলেও আমি হবো তোকে এতো ভাবতে হবে না। আর শোন মরলেও ভূত হয়ে ফিরে আসবো, তোর জামাই কেও ভালোবাসবো চিন্তা করিস না।”
“ঈশিকা হাসিতে ফেটে পড়লো।”
~”নানি জিও চলে গেলো।”
“দু’জনের দুষ্টু মিষ্টি কথা শুনে কেউ একজনও খুব হাসছে, হাসতে হাসতে মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে, কিন্তু এই গড়াগড়ি কেউ দেখছে না।”
“কিছুক্ষণ পর সবকিছুতেই যেনো নিরবতা বিরাজ করছে, নেই কোনো কোলাহল, নেই কোনো অস্হির মনের আকুতি।
“ঈশিকা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন, রাত্রি তখন তিনটে ছুঁইছুঁই।
ঈশিকার দু’চোখে স্বপ্নবিলাস খেলে যাচ্ছে।
অচেনা এক রাজকুমার শুভ্র রঙের পায়জামা, পাঞ্জাবি পরিহিত, চোখে তার অদ্ভুত মায়া, রক্তিম ঠোঁট, ঠোঁটের পাশে কালো তিল, অদ্ভুত আকুতি ভরা চাহুনি, যে চাহনিতে মনের ভেতরের রঙধনুরা খেলতে শুরু করেছে, মায়া ভরা চাহনিতে বুকের বাঁপাশে যেনো চিনচিনে ব্যাথা, যে ব্যাথা নিয়েও মরে যেতে রাজি যদি সে একটি বার হাত টুকু ধরে বলে,
“যাবে সখি আমার সনে,
রাখিবো তোমায় হৃদয়মাঝে,
দুঃখ দেবো না কোনো কালে
ভেসে যাবো ভালোবাসার সাগরে।”
“রাজপুত্র দাঁড়িয়ে যখন ঈশিকার হাতে হাত বাড়িয়ে দিলো, ঈশিকাও চরম আনন্দে আপ্লূত হয়ে হাতে হাত রেখে সানন্দে গ্রহণ করলো।”
“এ যে চরম চাওয়া, পরম পাওয়া, যার হয়না তুলনা।”
“ঈশিকা কে পরম যত্নে নিজের রাজমহলে নিয়ে গেলো। ঈশিকার আগমনে হাজার হাজার দাস দাসীরা ফুল ছিটিয়ে স্বাগতম জানালো। এসব দেখে ঈশিকা মুচকি হাসলো।”
“ঈশিকা যখনই মুখ তুলে তাকালো তখনই সব অন্ধকারে ছেয়ে গেলো।”
“পরক্ষণেই ঈশিকার সেই হাসি বিলীন হয়ে গেলো।”
“মনে তিক্ততার আবছায়া নেমে এলো।”
“ঈশিকা বুঝতে পারলো, এতোক্ষণ ঈশিকা স্বপ্ন দেখছিলো।”
“রাজকুমার”!
~ ইশ
“রাজকুমারের চেহারাটাই ঈশিকার মনে নেই।”
“ঈশিকা বার~ বার চেষ্টা করছে সেই মায়াভরা মুখের আদল খানা মনে করতে।”
~ কিন্তু হায়!
“ঈশিকা সব ভুলে একাকার।
ক্লান্ত মন নিয়ে ঈশিকা জানালা দিয়ে অন্ধকারাচ্ছন্ন আকাশের পানে তাকালো।
চাঁদের বুড়ীটার দিকে তাকালো।
চাঁদের বুড়ীটাও যেনো আজ ঈশিকার দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসতে লাগলো।
চুপিচুপি যেনো বলছে, কিরে তুই কী তোর প্রাণভোমরাটা কে মনে রাখতে পারিসনি।”
~ ছিহ!
“এতোটাই ঠুনকো তোর প্রেম, নিজের ভালো~ লাগা কেও মনে রাখতে পারিসনি।”
“এ~ সব কথায় ঈশিকা যেনো নিজের কাছেই নিজে ছোট হলো।
ঈশিকা মনে রাখবেই বা কিভাবে, যাকে ঈশিকা ঠিকভাবে দেখেই নি, যার সাথে বাস্তব জীবনে দেখা পর্যন্ত মেলেনি, যার হাতে হাত রাখা হয়ইনি, যার নাম পর্যন্ত জানেনি, তাহলে?”
তুমি বলো চাঁদ বুড়ী, কিভাবে রাখবো মনে আমি। আমার মন কী কোন মেশিন যে, চাইলেই মনে রাখতে পারবো তাকে।
তুমি আমাকে বলো, কিভাবে মেলবে তার দেখা, কোথায় খুঁজবো তাঁকে,?
“চাঁদ বুড়ী চোখের ইশারায় বলে যায়,”মনের কিনারায় আছে সে, লোকচক্ষুর আড়ালে, খুঁজে নে, তুই তাঁকে।”
“ঈশিকা যেনো কিছু একটা বুঝতে পেরেছে। মিষ্টি হাসি দিয়ে চাঁদ বুড়ী কে বিদায় জানিয়ে নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে প্রিয়তমের জন্য প্রার্থনা জানালো।
ঈশিকা চায় তার রাজকুমার কে মনেপ্রাণে, শয়নেস্বপনে, জাগরণে।”
“ঈশিকা আজ আর লেট করতে চায় না, তাই তারাতাড়ি রেডি হয়ে নিলো হসপিটালে যাবে বলে।
আজ যাতে লেট না হয় গাড়ির জন্য, তাই রাস্তায় আগে এসে দাঁড়িয়ে থাকলো।”
“ঈশিকা এদিক~ সেদিক তাকাতেই, রেড কালারের অসম্ভব সুন্দর একটি গাড়ি দ্রুত গতিতে আসতে লাগলো।”
“গাড়িটি ঈশিকার সামনে এসে থামলো।
মিনিট দুয়েকের মধ্যে গাড়ির কাঁচ নামানো হলো।”
“ব্যাক্তটি কে দেখা মাত্রই ঈশিকার গলা শুকিয়ে গেলো, হাত পা ঠান্ডা হতে লাগলো, মাথার উপরের আকাশটা ঘুরতে লাগলো।”
“এই~ যে আর কেউ নয়, স্বয়ং শুভ্র স্যার।
প্রতিক্ষণ কে অশুভ্র করতে মোটেও যার সময় লাগে না।”
ঈশিকা বেশ বিরক্তি নিয়ে শুভ্র স্যারের দিকে তাকালো।
“শুভ্র গাড়ির দরজা টা খুলে দিলো।
হাত দিয়ে ইশারায় জানালো গাড়িতে উঠতে।”
“ঈশিকা যেনো স্বপ্ন দেখছে, কল্পনায় করতে পারছেনা যে শুভ্র গাড়িতে উঠতে বলছে।”
“শুভ্র গাড়ির হর্ণ এমন জোরে বাজালো, ঈশিকা ঝাঁঝালোভাবে কেঁপে উঠলো।”
ঈশিকা আর কোন উপায় না দেখে গাড়িতে উঠে সামনের সিটে গিয়ে বসলো।”
“কেউ কারোর সাথে কথা বলছে না, ফিনফিনে নিরবতা।
ঈশিকার কেমন যেনো লাগছে, প্রকৃতিও যেনো আজ লজ্জা পাচ্ছে।
বাতাসে ঈশিকার চুল বার~ বার শুভ্রের মুখে দোলা দিচ্ছে।”
শুভ্র বিড়বিড় করে কি যেনো বলছে, সামথিং কিছু ঈশিকার কানে আসলো
ওহ্ গড, মানুষ যেমন লাগামহীন তার চুল গুলোও তেমন।
“ঈশিকাও বলতে শুরু করলো,
হুহ্, উনাকে কেউ যেনো বলছে সেঁধিয়ে এনে অপমান করতে।”( মনে মনে)
আমার যেনো পা নেই, উনার গাড়ি ছাড়া আমি যেনো যেতে পারিনা।
শুভ্র চিৎকার দিয়ে বললো”ডাফার কোথাকার।”
ঈশিকা যেনো আকাশ থেকে পরলো।
ঈশিকা কিছুই করেনি, তবুও অপদার্থের মতো অপমানিত হয়ে যাচ্ছে।
“শুভ্র গাড়ি থামিয়ে কয়েক ধাপ ঝাড়ি মেরে
ঈশিকার কাছে আসলো। সিট বেল্ট টা টান দিয়ে বাঁধতে লাগলো।
ভয়ে ঈশিকার হাত, পা ঠান্ডা হয়ে আসছে। একপা দিয়ে আরেক পা চেপে ধরে রেখেছে।
শুভ্র এতো কাছে আসাটা ঈশিকার যেনো আর সহ্য হচ্ছে না।
শুভ্রের গরম নিঃশ্বাসে ঈশিকার যেনো সবকিছু বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে।
বুকের ভেতরের সেই চিরচেনা ব্যাথাটা শুরু হতে লাগলো।
ঈশিকা হাত দিয়ে বুক টা চেপে ধরলো।
শুভ্র চোখ তুলে ঈশিকার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,”সমস্যা কী।”
ঈশিকা মুখ টা কাঁচুমাচু ভঙ্গিতে বললো,”সামান্য বুক ব্যাথা।”
“বুক ব্যাথা শুনে শুভ্র যেনো অদ্ভুত ভাবে দরদর করে ঘামতে শুরু করলো।
শুভ্র কে অনেক হতাশ দেখাতে লাগলো।”
“ঈশিকা অবাক হয়ে শুভ্রের দিকে তাকালো, অদ্ভুত মায়াবী চোখ, এ চোখের ভাষা বুঝা বড্ড কঠিন, নাকের ডগায় রাগ যেনো সর্বক্ষণ লেগেই আছে, এ মূহুর্তে উনার ভয়ার্ত চেহারা দেখে বড্ড হাসি পাচ্ছে ঈশিকার।”
~ ইশ্!
“ঈশিকা যদি এখন প্রাণ খুলে হাসতে পারতো খুবি ভালো হতো।
কিন্তু কি করা যাকে নিয়ে হাসবে সেই এখন পাশে। তাই ঈশিকা ভাবলো
হসপিটালে নিজের ক্যাবিনে গিয়ে প্রাণ খুলে হাসবে। এবার যা~ ই হয়ে যাক।”
“শুভ্র গাড়ির বক্স থেকে কিসের বোতল যেনো বের করে ঈশিকার সামনে বাড়িয়ে দিলো।”
ঈশিকা ভয়ার্ত চোখে ইশারা করলো যে, নিজে খেতে পারবেনা, বুকে ভীষণ ব্যাথা।
ঈশিকা নিজে জানেইনা এই ব্যাথা যে কতো টা ভয়ার্ত, যে ব্যাথার পেছনে আছে অনেক রহস্য।
এ রহস্য বেদ করে আদৌও কী জানতে পারবে ঈশিকা।”
শুভ্র ব্যাপারটা বুঝতে পেরে পরম যত্নে নিজ হাতে ঔষধ টা খাইয়ে দিলো, ঔষধ বললে ভুল হবে, বোতলে আছে কী ঈশিকা নিজে জানেইনা।
তবুও ঈশিকা ঢকঢক করে খেয়ে নিলো।
ঔষধের স্বাদ যেনো অমৃত।
ঔষধ খেতে যে এতো টা মজাদার এটা না খেলে জানতোই না ঈশিকা। যেনো মায়ের হাতের রান্না কোনো এক অমৃত।
দুজনের মধ্যে আর কোন কথা হয়নি।
শুভ্রও মনোযোগ দিয়ে গাড়ি চালাতে লাগলো।
“আর এদিকে ঈশিকার মনে হাজারো প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে।
জীবন যেনো স্বপ্নময় এক পাতালপুরী তে গিয়ে ঠেকছে।
মহাকাল যেনো খুব কাছাকাছি, হাতছানি দিয়ে ডাকছে, অনেক প্রশ্নের উত্তর দিবে বলে।”
~”হঠাৎ গাড়ি থেমে গেলো।”
“শুভ্র গাড়ি থেকে নেমে, ঈশিকার দরজা খুলে দিলো।”
ঈশিকাও কোনো কথা না বাড়িয়ে, শুভ্রের জন্য ওয়েট না করে হসপিটালের ভেতর চলে আসলো।
“আর এদিকে কেউ বাসায় এসে সব ভেঙে তছনছ করে ফেলছে, আজ একটাই লক্ষ্য, সব ভেঙে দিবে, পুরো পৃথিবী এক করে ফেলবে। জোরে হুংকার ছেড়ে বলতে শুরু করলো ঈশিকা আমি তোমাকে চাই সারাজীবনের জন্য চাই, হারাতে চাইনা কখনো।
আমার সমাধি তেই তোমার সমাধি।
তোমাকে আমি শীঘ্রই নিজের করে পেতে চাই। এ জনমে পেয়েও হারাবো না আর।
এই বলে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো।”
“ডোন্ট ক্রাই মা’ই সান
আমি আছি ভেবোনা তুমি। কতো কাল পর পেয়েছো দেখা, মিছে হতে দেবো না তোমার ভালোবাসা।
পিতা হয়ে তোমাকে আর ব্যাথিত দেখতে চাই না আর।
যতদ্রুত সম্ভব ঈশিকা কে নিজের করে নাও, এই বলে দু’জন দু’জনকে জড়িয়ে ধরলো।”
“আর এদিকে ঈশিকা বেশ কিছুক্ষণ আরামের ঘুম দিলো।
অনেক দিন পর যেনো ভালো ঘুম ঘুমালো।
ঘড়িতে তাকিয়ে দেখলো অফিস ছুটির সময় হয়ে গেছে।”
অণু এসে দরজা নক করলো।
ভেতরে এসে ঈশিকা কে বললো,”কিরে বাসায় যাবি নাহ?”
“ঈশিকা জবাব দিলো যাবো না তো কী করবো, তোর শ্বশুরবাড়ি থাকবো?”
“অণু দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,”আর শ্বশুরবাড়ি, আমার ক্রাশ ই আসে নি আজ।”
“তোর ক্রাশ মানে?”
“নতুন স্যার, ডক্টর শুভ্র!”
“ঈশিকা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো, আসেনি মানে?
“আমি আর উনি তো ব’লে থেমে গেলো ঈশিকা
লেখা – আফরিন ইভা
চলবে
(পাঠক আপনাদের ভালোলাগার উদ্দেশ্যেই প্রতিনিয়ত আমাদের লেখা। আপনাদের একটি শেয়ার আমাদের লেখার স্পৃহা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আমাদের এই পর্বের”নিঝুম বিকেল – ভয়ানক ভৌতিক গল্প”গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম। ধন্যবাদ।)
আরো পড়ূন – নিঝুম বিকেল (শেষ খণ্ড) – ভয়ের ভৌতিক গল্প