ভয়ানক ভৌতিক গল্প ৯

ভয়ানক ভৌতিক গল্প – অশুভ আত্মার প্রতিশোধ – পর্ব ৯

ভয়ানক ভৌতিক গল্প – অশুভ আত্মার প্রতিশোধ – পর্ব ৯: অবশেষে অনেক খোঁজার পরে এই প্রেত আত্মার শরীর খুঁজে পেয়েছি। কিন্তু যখন দাফন করতে যাব তখনি বাঁধে বিপদ। আমার বন্ধুকে আটকে রেখেছে সে। জানি না কি করব এখন?

ভূতের সাথে লড়াই

রনির হাঁটু পর্যন্ত পড়ে গেছে মাটি।

ধীরে ধীরে রনি কবরস্থানের নিচে যেতে যেতে লাগল। আমার ভয়ে শরীরের লোম দাঁড়িয়ে যাচ্ছে, এইটা কি হচ্ছে? আমি রনির হাত ধরে জোরে জোরে টানতে লাগলাম।


কিন্তু কোন মতে কোন কাজ হচ্ছে না, এদিকে মাটির পড়তে পড়তে রনির কোমর পর্যন্ত চলে এসেছে।

আমি কি করবো কিছুই বুঝতে পারছিলাম না? তারপর হুজুর দৌড়ে এসে আমাকে বলল,

হুজুরঃ শাফিন, সেই কাপড় থেকে একটা হাড় মাটিতে পড়ে গেছে। সে হাড়টা তুলে কবরস্থানে ফেলে দাও তুমি।

তখনি পায়ের দিকে তাকিয়ে দেখলাম যে আমার পায়ের ধারে একটি হাড় পড়ে আছে। আমি সেটিকে হাতে নিয়ে কবরের ভেতর নিক্ষেপ করার সাথে সাথে মাটি ঝরে পরা বন্ধ হয়ে গেল।

এদিকে রনিকে এখন হালকা একটু টান দিতেই রনি উপরে উঠে আসলো। আমি খুব ভয় পেয়েছিলাম। রনি অনেক ঘাবড়ে গেছে ভয়ে। আমি সান্ত্বনা দিয়ে বললাম,

শাফিনঃ কিছুই হবে না, এখন থেকে সব ঠিক হয়ে গেছে।

রনি মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সূচক সংকেত করলো। তারপর কোদাল দিয়ে কবরটার উপরে মাটি দিয়ে ঢাকা দিয়ে দিলাম। বাড়ির দিকে আসতে আসতে ভাবতেছি, যাক অবশেষে অশুভ আত্মার হাত থেকে বাঁচা গেছে।

কিন্তু এই আশ্বাস বেশিদিন রইলো না।

আবারো অশুভ আত্মার আক্রমণ

এ ঘটনার ঠিক দুই মাস পর আমার ছোট ভাই রাসেলকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

আমি ভেবেছিলাম হয়তো কোন বন্ধুদের বাসায় গিয়েছে, কিংবা কোন বন্ধুর সাথে তার বাসায় পড়তে গেছে।

রাসেল তো উধাও হওয়ার মত ছেলে না।

আম্মু বলল,

রাসেলের মোবাইল ফোন বন্ধ করা। সে কোথাও গেলে আমাকে বলে যায়। কিন্তু হঠাৎ করেই ভোরবেলা কোথায় যেতে পারে কাউকে কিছু না বলে। এখন বিকাল হয়ে গেছে। এখনো কোন খবর পেলাম না। আমার টেনশন হচ্ছে, শাফিন। তুই কিছু একটা কর।

শাফিনঃ তুমি চিন্তা করোনা, আম্মু। রাসেল বাসায় ফিরে আসবে। আমি দেখতেছি কি করা যায়?

এরপর এলাকার মধ্যে সবাইকে জানিয়ে দিলাম রাসেলকে কোথাও দেখলে যেন বাসায় আসতে বলে। কিন্তু অনেকে বললো সকাল থেকে রাসেলকে কেউ একবারের জন্যও দেখেনি। তাহলে রাসেল গেল কোথায়?

এখন আমার মনে একটা ডাউট হতে লাগলো। এইটা কোন আত্মার কাজ নাতো?

মনে পড়লো হুজুরের কথা। আবার হুজুরের কাছে চলে গেলাম।

হুজুরঃ কিরে, আবার কি হয়েছে?

শাফিনঃ হুজুর, রাসেলকে ভোরবেলা থেকে পাওয়া যাচ্ছে না। কেউ রাসেলকে একবারের জন্যেও দেখেনি। আর রাসেল যদি বাহির হয়, তাহলে সবাইকে বলে বাহির হয়। আমার তো এখন ভয় হচ্ছে। হুজুর, আপনি কিছু একটা করুন।

হুজুরঃ আচ্ছা, এক মিনিট দাঁড়া।

এরপর হুজুর চোখ দুটো বন্ধ করে বসে রয়েছে। আমি হুজুরের দিকে তাকিয়ে আছি। হঠাৎ হুজুর চোখ মেলে ঘাবড়ে যায়।

শাফিনঃ হুজুর কি হয়েছে? এভাবে ঘাবড়ে গেছেন কেন?

হুজুরঃ রাসেলের বিপদে হয়েছে। রাসেল অনেক বড় বিপদে আছে।

শাফিনঃ কি বলছেন কি হুজুর? আমাকে ক্লিয়ার করে বলুন।

হুজুরঃ সেই তেতুল গাছে রাসেলকে বন্দি করা হয়েছে।

শাফিনঃ এইটা কি করে সম্ভব? তেতুল গাছের আত্মাটাকে তো আমরা মুক্তি দিয়ে ফেলেছি। তাহলে সেই আবার আমাদের ক্ষতি করতে যাবে কেন? আর রাসেলকে বা নিয়ে যাবে কেন?

হুজুরঃ সেটা তো আমি বলতে পারব না। কিন্তু আমি চোখ বন্ধ করার সাথে সাথে সে তেঁতুল গাছ দেখতে পেয়েছি। তারমানে রাসেল সেই গাছের মধ্যেই আছে।

শাফিনঃ কিন্তু এটা কি করে সম্ভব?

হুজুরঃ সেই অশুভ আত্মাটাই এসে তোর ভাইকে নিয়ে গেছে।

শাফিনঃ হুজুর, আপনি তাড়াতাড়ি কিছু একটা করুন। এতদিন পর আবার সে এভাবে খেপে যাবে, কে জানতো? এখনতো তার হাত থেকে আমাদের বাঁচতে হবে।

আত্মাকে বশ করা

হুজুর একটু ভেবে বলল- শাফিন, তুমি যেটা বলেছিলে সেটা সঠিক। হাড়গুলোকে জানাজা পড়ে কবর দেওয়ার পর সে আমাদের পিছু ছেড়ে দেবে। তোমার কথাই সঠিক হয়েছে। কিন্তু এই জায়গার মধ্যে আরেকটা ভুল আমাদের হয়ে গেছে। সেই আত্মাটার হাড় শুধু আমরা কবর দিয়েছি। কিন্তু আরো যে কোন একটা বস্তু এখনো রয়ে গেছে। যেটার জন্য সে আত্মাটা এখনো মুক্তি পায়নি পুরোপুরিভাবে এবং তুমি তাকে মুক্তি দিতে চেয়েছিলে, কিন্তু সে তার স্বাধীন জীবন থেকে বন্দী হতে যাচ্ছিল। সে জন্য প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য তোমার ভাইকে নিয়ে গেছে।

শাফিনঃ আজকাল দেখি ভূতেরাও ভালো কিছু বোঝেনা। তো এখন আমরা সে আত্মার আরেকটা বস্তু কোথায় পাবো এবং সে বস্তুটা কি হতে পারে?

হুজুরঃ বস্তুটা তেতুল গাছের নিচে পাওয়া যাবে না কিন্তু। সেটার জন্য তার বাসায় যেতে হবে।

শাফিনঃ হুজুর, এখন তো সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে। এদিকে রাসেল এখনো নিখোঁজ। বাসার মধ্যে হই- উল্লাস শুরু হয়ে গেছে। আগে রাসেলকে উদ্ধার করা দরকার, তারপরে যা করার করব।

হুজুরঃ ঠিক আছে, তুমি সামনে গিয়ে বসো।

হুজুর বসা থেকে উঠে একটা বিছানা তৈরী করল মাটির মধ্যে। তারপর সেখানে বসে হাত দুটো হাঁটুর উপর দিয়ে, যেন কোন একটা সন্ন্যাসীর মতো কিংবা তান্ত্রিক এর মত করে চোখ দুটো বন্ধ করে মুখে কি যেন ফিসফিস করে বলতে লাগল।

তখন আমি খেয়াল করলাম মাদ্রাসার রুমের ভিতর লাইট গুলো অফ হতে যাচ্ছে।

একবার জ্বলে উঠছে একবার নিভে যাচ্ছে। লাইট অফ-অন করার সাথে সাথেই লাইট দুটো ভেঙ্গে গেছে।

রুমের ভিতরে অন্ধকার হয়ে গেছে মুহুর্তে।

তখনই হুজুর একটা মোমবাতি জ্বালিয়ে তার সামনে রেখেছে এবং চোখ দুটো বন্ধ করে আবার কি যেন পড়তে লাগলো।

আমি হুজুরের দিকে তাকিয়ে আছি।

এমন সময়… চলবে…

পরের পর্ব- ভয়ানক ভৌতিক গল্প – অশুভ আত্মার প্রতিশোধ – পর্ব ১০

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *