ভয়ানক ভৌতিক গল্প – অশুভ আত্মার প্রতিশোধ – পর্ব ৬: এতদিনে বন্ধুরা আমাকে বোকা বানাত, কিন্তু এখন দেখি এই মরা অশুভ আত্মা আমাকে বোকা বানাচ্ছে, ফাঁদে ফেলছে। আর আমি কিনা জোলার মত ভয়ে তার সব কথা বিশ্বাস করছি। না জানি কি হবে আমার?
ভয় ও শাস্তি
লোকটা একটু জোরে শ্বাস নিয়ে বলল- জেরিন এবং জেরিনের আব্বুকে আরো ৭৫ বছর আগে মেরে ফেলা হয়। তারা মারা গেছে অনেক আগে এবং দুইজনেই মৃত। আর তুমি বলছো জেরিনের সাথে এসেছো?
শাফিনঃ কি বলছেন কি আপনি! আমি এইমাত্র জেরিনের সাথে রুমের মধ্যে ছিলাম। আর আপনি বলছেন তারা ৭৫ বছর আগে মারা গেছে?
লোকটাঃ হ্যাঁ বাবা, আমিও তোমার কথা শুনে ঠিক তোমার মত অবাক হয়েছিলাম। যারা ৭৫ বছর আগে মারা গেছিল, তারা কিভাবে আজকে তোমার সাথে সময় কাটাতে পারে।
শাফিনঃ আপনার হয়তো কোন কোথাও ভুল হচ্ছে, দাদু। দাঁড়ান, আমি এক্ষুনি ভিতরে গিয়ে জেরিনকে নিয়ে আসতেছি।
এরপর আমি মানুষটিকে সে জায়গায় দাঁড় করিয়ে রেখে সেই বাড়িতে ঢুকে পড়লাম। এখন গিয়ে দেখি একটু আগে তো মাকড়সার জাল বোনা ছিল। এখন পুরো বাড়িটা একটা ভুতুড়ে বাড়ির মত হয়ে গেছে। দেওয়ালটা অনেক পুরানো হয়ে গেছে। কিন্তু কিছুক্ষণ আগে আমি এতটা পুরানো দেখিনি। দরজা জানালা সবগুলা ভাঙ্গা। আর কিছুক্ষণ আগে সেই দরজা-জানালাগুলো ভালো ছিল।
তাহলে কি সেই মানুষটি সঠিক?
আমি আর কিছু না ভেবে বাড়ি থেকে বের হয়ে পড়লাম। বের হয়ে দেখি যে মানুষটি একটু আগে আমাকে সব সত্য কথা বলেছিল সেখানে সেই মানুষটি আর নেই। আমি চারপাশ খুঁজতে লাগলাম।
হঠাৎ করেই তিনি আমাকে ডাক দিলেন। আওয়াজটা উপর থেকে আসছিল। আমি উপরের দিকে তাকিয়ে দেখি মানুষটি হাওয়ার মধ্যে ভাসছে এবং ভুতুড়ে হাসি দিতেছে।
আমিও যেন এক পা-ও নড়তে পারছি না। আমি উনার দিকে বিভোর হয়ে তাকিয়ে আছি। উনি উপর থেকে বলল,
লোকটাঃ আজকে থেকে তোর মৃত্যুর দিনগুলো উল্টো থেকে গণা শুরু কর।
আমি আর সেখানে এক মুহূর্ত না দাঁড়িয়ে এক দৌড় দিলাম। আমি যত জোরে দৌড় দিচ্ছিলাম না কেন আমার গতি যেন ধীরে ধীরে কমে আসছে। কোন রকমভাবে রাস্তায় এসে দাঁড়ালাম। এসেই একটা গাড়ি দেখে গাড়িতে উঠে বসলাম।
হৃদপিণ্ড এখনো ধপ ধপ করে কাঁপছে। এই আমি কি দেখলাম! আর আমার সাথে এগুলো কি হচ্ছে!
অশুভ আত্মা বুড়ো রুপে
রনিকে ফোন দিয়ে বললাম,
শাফিনঃ রনি, তুই যত তাড়াতাড়ি পারিস হুজুরকে খুঁজে বের কর এবং হুজুর কোথায় আছে সেটা আমাকে ইমার্জেন্সি ফোন দিয়ে বল। হুজুরের সাথে আমার কিছু কথা আছে।
রনিঃ কেন কি হয়েছে?
শাফিনঃ অনেক কিছু, তোকে আমি এসে বলব। তুই আগে হুজুরকে খুঁজে বের কর।
রনিঃ ঠিক আছে।
আমি ২০ মিনিটের মাথায় এলাকায় গিয়ে পৌঁছালাম। তখন রনির ফোন এসে পড়ল।
রনিঃ দোস্ত, মাদ্রাসায় চলে আয়। হুজুর অনেক অসুস্থ। বাহির হতে পারবে না। তুই এসে দেখা কর।
আমি বরাবর মাদ্রাসার দিকে এগোতে লাগলাম। কিছুক্ষণ পরে মাদ্রাসায় গিয়ে পৌঁছালাম। গিয়ে দেখলাম, হুজুর বেডের মধ্যে শুয়ে আছে।
হুজুরঃ কিরে আজ ঠিকমতো কাজ গুলো করতে পেরেছিস তো?
শাফিনঃ হুজুর একটা গন্ডগোল লেগে গেছে ।
হুজুরঃ কেন, কি হয়েছে আবার?
তারপর হুজুরকে আমি কাল রাতের ঘটনা খুলে বললাম এবং কিছুক্ষণ আগে যে ঘটনা ঘটেছে সেটাও বললাম। হুজুর আমার সবগুলো কথা মনোযোগ দিয়ে শুনে বলল,
হুজুরঃ সেই অশুভ আত্মা তোকে ফাঁদে ফেলেছে। তার কোনো মেয়ে নেই। তুই যে মাটিগুলো হাড়ির মধ্যে রেখেছিস সেগুলো তোকে সকালে ভাঙতে বলেছি।
কিন্তু তুই তার ফাঁদে পা দিয়ে সত্যি সত্যি তার বাসায় চলে গেছিস। সেই অশুভ আত্মা মেয়ের রূপ ধারণ করে তোকে শেখানে নিয়ে গেছিল এবং সে অশুভ আত্মা বুড়ো মানুষের রূপ ধরে তোকে সব সত্য কথা বলেছে।
কিন্তু তার মেয়ে ছিল না। সেটা তোকে বানিয়ে বলেছে এবং এতক্ষণে সে হাড়ির মধ্যে রাখা মাটি নষ্ট হয়ে গেছে। যে মাটি তুই রাতে কবরস্থান থেকে নিয়ে এসেছিলি। এখন সেই আত্মা তোর পিছু আর ছাড়বে না।
রক্ষা কবজ ও খারাপ সময়
শাফিন একটু ভীত হয়ে- হুজুর, এভাবে বলবেন না। আমাকে আর একটা উপায় বলুন। আমি এখন কি করতে পারি।
হুজুরঃ আমি যেটুকু জানতাম সেটুকু তোকে বলেছি। এর বেশি কিছু আমি জানিনা। তবে হ্যাঁ আরেকটা কথা, সে আত্মা চাইলে তোকে তার বাড়িতেই ক্ষতি করতে পারতো। কিন্তু তোর কোন ক্ষতি করেনি। আমার মনে হয় কিছু একটা আছে।
শাফিনঃ হুজুর, কি থাকতে পারে?
হুজুরঃ সেই আত্মাটা আমাকে কিছু বলতে চেয়েছিল। কিন্তু আমি তার আগেই আমার কাছে আসার রাস্তাটা বন্ধ করে দিয়েছি। তুইও বন্ধ করতে চেয়েছিলি, কিন্তু তোকে বন্ধ করতে দেয়নি। অন্যদিকে তোর কোন ক্ষতি ও করেনি। হয়তো সে আত্মাটা তোর কাছে কিছু বলতে চায়।
শাফিনঃ আমাকে কি বলবে? আমি তার কি করেছি? আর আমাকেও বা কেন বলবে?
হুজুরঃ সেটা তো সেই আত্মা জানে। এই নে, এই তাবিজ তোর কাছে রাখ। এটা যতক্ষণ তোর কাছে থাকবে ততক্ষণ সে আত্মাটা তোকে স্পর্শ করতে পারবে না। হয়তো ভয় দেখাতে পারবে। তোকে দেখা দিতে পারবে। কিন্তু তোকে মারতে পারবে না। এখন শুধু চেয়ে চেয়ে দেখতে হবে সামনে কি হয়! তুই এখন আসতে পারিস। যদি কিছু হয়, আমাকে ফোন করে দিস।
শাফিনঃ আপনার নাম্বারটা বলুন।
হুজুরঃ ০১৭ এত এত এত..
শাফিনঃ ঠিক আছে, আমার সাথে কিছু হলে আমি আপনাকে ফোন করবো।
চোল্লাবুড়ির গল্প
আমি আর রনি মাদ্রাসা থেকে প্রস্থান করলাম। রনি বলল,
রনিঃ কিছুদিন আগে ফেসবুকে একটা গল্প লিখেছিস জ্বীনের সাথে যুদ্ধ। এখন দেখছি তোর লাইফে সত্যি সত্যি কোন আত্মার সাথে যুক্ত হতে চলছে।
শাফিনঃ হ্যাঁ রে দোস্ত, এই গল্প লিখতে লিখতে আমার জীবন এরকম একটা ভূতের গল্প হয়ে যাবে ভাবতে পারেনি।
রনিঃ আচ্ছা, সন্ধ্যা হয়েছে। আমি বাসায় চলে যাই। তুইও বাসায় চলে যা।
রনিকে বিদায় দিয়ে আমি আমার বাসার দিকে চলে আসতেছি। বলে রাখা ভালো…
আমার বাড়ির দিকে যেতে হলে দোকানের উপর দিয়ে যেতে হয়। কিন্তু শর্টকাট রাস্তা দিয়ে যেতে হলে খামার বাড়ির উপর দিয়ে যেতে হয়। খামার বাড়ির সেখানে একটা কবর স্থান আছে। লোক মুখে শোনা যায় সেই কবরস্থান নাকী খারাপ। সেখানে নাকি অনেক অলৌকিক ঘটনা ঘটেছে। আমি নিজের এসব ভাবতে ভাবতে সে ভয়ঙ্কর জায়গার কথা ভুলেই গেছিলাম। সে শর্টকাট রাস্তা দিয়েই বাসার দিকে আসতেছি। কবরস্থানের পাশে একটা বাঁশ ঝাড় আছে এবং তার একটু সামনেই একটা বিশাল বড় খাল পড়ে। সেখানের মধ্যেও নাকি একটা চোল্লাবুড়ি থাকে।
ভাবছেন এইটা কি?
তাহলে শুনুন,
এটা বিশেষত একটা মহিলা। উনার চুল অনেক বড় বড় পানির মধ্যে থাকে।
পানির মধ্য থেকে চুল দিয়ে উপরের মানুষদেরকে পেছিয়ে পানিতে নামিয়ে মেরে ফেলে।
অবশ্য আমি কখনো দেখি নি। শুধুমাত্র শুনেছিলাম।
যাইহোক, আমি সেই আত্মার থেকে কিভাবে বাঁচব সেই চিন্তা করতে করতে আসতেছি।
হঠাৎ মনে পড়লো আমি এখানে চলে এসেছি। মোবাইলের ফ্লাশ লাইট অন করে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছি। আমার কাছে তো তাবিজ আছে, তার মানে আত্মা আমাকে স্পর্শ করতে পারবে না।
যা কিছু হয়ে যাক, আমি ভয় পেলে চলবে না।
চোল্লাবুড়ির ভয়
হাঁটতে হাঁটতে সে কবরস্থানের পাশে চলে এসেছি। হঠাৎ করেই আমাকে থমকে দিয়ে বাশ ঝাড় থেকে একটা বাস আমার সামনে পড়ে গেল।
যেন কেউ বাঁশের গোড়া কেটে দিয়ে আমার সামনে ফেলে দিছে।
বাঁশঝাড় আমার সামনে পড়ার সাথে সাথে আমি ভয় পেয়ে আতঙ্ক হয়ে ওঠি।
পিছনের দিকে দৌড় দিলেও চলবে না। আমাকে সামনে যেতে হবে। অনেকের মুখে শুনেছি সামনে যদি রাতে কোন কিছু পড়ে তাহলে সেটাকে এড়িয়ে যেতে নেই। তার পাশ কেটে যেতে হয়।
তাই আমি সেই পাস এড়িয়ে যাওয়ার জন্য পাশ দিয়ে যাবার চিন্তা করলাম। কিন্তু পাশে সেই খাল। খালের কিনারা বেয়ে বাশ পার হতে হবে।
আমি আস্তে করে খালের কিনারা পর্যন্ত নেমেছি। এরপর বাশটি পার হয়ে যখনই আমি খালের কিনারা থেকে রাস্তায় উঠবো।
তখনই দেখলাম আমার সামনে ভয়ঙ্কর মুখ ওয়ালা একজন অশরীর দাঁড়িয়ে আছে।
উনার মুখের চামড়াগুলো অনেক বয়স্ক লোকেদের চামড়ার মত।
চোখ গুলো অনেক ভয়ঙ্কর। আমার দিকে সে ভয়ঙ্কর চোখে তাকিয়ে আছে।
তখন আমি কি করবো নিজেও ভাবতে পারছি না।
এমন সময় আমার পেছন থেকে একটা হাসির শব্দ শুনতে পেলাম।
তাকিয়ে দেখি একটা মহিলা পানির নিচ থেকে উঠে এসেছে। চুল গুলো অনেক বড় বড়।
বুঝতে বাকি রইলো না, এটাই সেই চোল্লাবুড়ি।
চলবে….
পরের পর্ব- ভয়ানক ভৌতিক গল্প – অশুভ আত্মার প্রতিশোধ – পর্ব ৭