ভয়ানক ভৌতিক গল্প – অশুভ আত্মার প্রতিশোধ – পর্ব ৩: আমার জীবনে অদ্ভুত সব ঘটনা ঘটে চলেছে। এক অশুভ আত্মা বা জীন আমার পিছু নিয়েছে এমনকি বাসা পর্যন্ত চলে এসেছে। শুনেছি তাদের ক্ষতি করলে নাকি তারা পিছু নেয় এবং ভয় দেখায়। কিন্তু আমি কি করেছি যে সে আমার সাথে এরকম করছে? কিছুই মেলাতে পারছি না। দেখি কি হয়?
প্রথম যাত্রায় বেঁচে যাওয়া
হাতটা নামিয়ে দিয়ে যেই আবার আরেকটু সামনে ১পা গেলাম। তখনই আবার সেই হাত আমার কাঁধে বসিয়ে দিল।
এবার একটু বেশিই ভয় পেয়ে গেছি আমি।
পিছনের দিকে না তাকিয়েই মুখে বললাম,
শাফিনঃ আমার পিছনে যেই থাকিস না কেন, আমাকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করিস না? আমি এত সহজে ভয় পাওয়ার ছেলে না।
হাতটা এবার আরও শক্ত করে আমার কাদের মধ্যে চাপ দিলো। আমি কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না? না জানি, আমার পিছনে কি রকম ভয়ঙ্কর চেহারা দাঁড়িয়ে আছে। তখনই মাথার মধ্যে বুদ্ধি আসলো, ভূতেরা আগুন ভয় পায়। সেদিন তেতুল গাছের নিচে দিয়ে আসার সময় আমার হাতে সিগারেট ছিল। সেজন্য হয়তো আমার কাছে আসতে না পেরে দূর থেকে দেখা দিয়েছিল এবং আমরা সেখান থেকে চলে আসার কারণে তেঁতুল গাছের মাথায় আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল।
সে আগুনে হয়তো তারা ভয় না পেলেও আমাদের ধরানো আগুনে তারা ভয় পায়। মনে পড়লো পকেটের মধ্যে তো একটা সিগারেট আছে। আমি তাড়াহুড়া করে পকেট থেকে সিগারেটটা বাহির করেই ধরিয়ে দিলাম। সাথে সাথে আমার কাঁধ থেকে হাতটা সরে গেছে। এবার আমি পিছনে তাকিয়ে দেখলাম কেউ নেই আমার পেছনে।
তখন সিগারেটটা মুখের মধ্যে রেখে বললাম,
শাফিনঃ হালার পো হালা, এখনো বাপরে চিনলি না।
তখনি একটা ধমকা হাওয়া বয়ে এসে একটা গাছের ডাল ভেংগে দিল। মনে মনে ভাবছি, এইটা ডেঞ্জার মাল।
কিছু না ভেবে আস্তে আস্তে করে নিজের বাসায় ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলাম। রুমের মধ্যে ঢুকে কাগজ কলম হাতে নিয়ে সুরা ইয়াসিন লিখতে লাগলাম, সেই কাগজের টুকরোটা পকেটের মধ্যে রেখে শুয়ে পড়লাম।
দেখি এইবার কোন বাপ আছে, যে আমাকে ডিস্টার্ব করে।
চোখ বন্ধ করতেই ফজরের আযান হল।
রহস্য ভাবনা
কখন রাত পার হলো বুঝতে পারলাম না। উঠে দেখলাম যে আম্মু তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করতেছে। আমি গিয়ে ওয়াশরুমে অজু করা শেষ করলাম। এখন মসজিদে গিয়ে নামাজটা শেষ করা বাকি। বাসা থেকে বের হয়ে মসজিদে নামাজ আদায় করলাম। তখনই খেয়াল করলাম হুজুর বারবার আমার দিকে তাকাচ্ছিল। নামাজ পড়া শেষে হুজুর আমাকে আলাদাভাবে ডাক দিল, আমিও নামাজ শেষে হুজুরের সঙ্গে আলাদাভাবে কথা বলতে গেলাম।
তখন হুজুর আমাকে জিজ্ঞেস করল,
হুজুরঃ তোকে তো আর কোন দিন এমন চেহারায় দেখি নি? কি হয়েছে?
শাফিনঃ কি হবে আবার, গত দুই দিন ধরে আমার সাথে অস্বাভাবিক কিছু ঘটনা ঘটে যাচ্ছে?
হুজুরঃ কেমন ঘটনা, শাফিন?
শাফিনঃ তাহলে শুনুন।
আমি হুজুরকে প্রথম দিন থেকে কাল রাতের ঘটনা পর্যন্ত সব গুলো খুলে বললাম। হুজুর মাথা চুলকাতে চুলকাতে একটু দূরে গিয়ে দাঁড়ালো।
তারপর আমার কাছে এসে বললো,
হুজুরঃ একটা অশুভ আত্মা তোমার পিছু নিয়েছে, শাফিন।
কথাটা শুনে সাথে সাথে আমার পায়ের নিচে যেন মাটি সরে গেল। একটা আত্মা আমার পিছু নিয়েছে? তাও আবার অশুভ আত্মা?
সূর্যের আলো ছড়িয়ে পড়েছে চারদিকে। বসন্তের হাওয়া বইছে। এত সুন্দর পরিবেশও আমার শরীরের লোম দাঁড়িয়ে গেছে ভয়ে।
অশুভ আত্মার রহস্য
হুজুর আবার বলল, এটা এই সেই আত্মা নয়, এই আত্মা মৃত্যুর আগে একজন খুনি ছিল। অনেকগুলি খুন করার পরে সে অনেক টাকার মালিক হয়ে যায়। সবগুলো ছিল কালো টাকা। কিন্তু আফসোসের ব্যাপার হচ্ছে তার বন্ধুরা তাকে মেরে সে টাকাগুলো ছিনিয়ে নেয় এবং সেই খুনি মানে সেই অশুভ আত্মা সেগুলো সহ্য করতে পারেনি। খুনির বন্ধুরা তাকে মেরে সেই তেঁতুল গাছের গোড়ায় পুতে রেখেছে।
সেজন্য সেই আত্মাটা তেতুল গাছের মধ্যে আশ্রয় নিয়েছিল। সেদিন তোকে রাস্তায় দেখে কিছু করতে পারেনি কারণ তোর হাতে আগুন ছিল বলে। তাল গাছ থেকে সে আত্মাটা নেমে তোকে ভয় দেখাতে চেয়েছিল। ভেবেছিল তোকে ভয় দেখিয়ে মেরে ফেলবে, কিন্তু তুই মনে সাহস রেখেছিস বলে তোর কিছু হয়নি।
রাতে যখন তোর কাঁধে হাত রেখে ছিল তখন সে তোকে কিভাবে যন্ত্রণা দিয়ে মারবে সেই চিন্তা করছিল। এর মধ্যেই তোর হাতে সিগারেট দেখে আত্মাটা পালিয়ে যায়। এখনো সেই আত্মা তোকে মারার জন্য ঘুরতেছে। সুযোগ পেলেই তোকে মেরে ফেলবে। আত্মাটা অনেক ভয়ঙ্কর, মৃত্যুর আগে অনেক মানুষকে মেরেছিল। এখন তোকেও মেরে ছাড়বে।
শাফিনঃ কিন্তু হুজুর… । আপনি এসব কিভাবে জানলেন?
হুজুরঃ কারণ তেঁতুল গাছের গোড়ায় সেই খুনিকে পুঁতে ফেলার সময় আমি দেখেছিলাম এবং তখন থেকে সে আত্মাটা আমাকেও মাঝেমধ্যে দেখা দিত। আমাকে কিছু বলতে চাইতো। কিন্তু আমি নিজেকে বাঁচানোর জন্য একটা তাবিজ বানিয়ে ফেললাম। তারপর থেকে আমাকে আর দেখা দেয় নি। আমি অনেক সাধনা করে তার সম্পর্কে সবকিছু জানতে পেরেছি এবং তুই যেটা বললি সেটা যদি সত্যি হয়ে থাকে, তাহলে সেই আত্মাটা অন্য কেউ নয়, সেই আত্মাটা হচ্ছে সেই খুনি, যে মৃত্যুর পরে হয়ে গেছে একটা অশুভ আত্মা।
শাফিনঃ আচ্ছা হুজুর? যে বন্ধুরা মিলে সে খুনি কে হত্যা করেছিল? সে বন্ধুরা এখন কোথায়?
হুজুরঃ তাদেরকে তিরতির করে মেরে ফেলেছে।
শাফিনঃ তাদেরকে মারার পরও সে আত্মা মুক্তি পায়নি কেন?
হুজুরঃ সেটা আমি জানি না… তবে এতটুকু জানি যে, সে আত্মা একটা অশুভ আত্মায় পরিণত হয়ে গেছে এবং যাকে সে একবার টার্গেট করে, তাকে মারার পর সে শান্তি পায়।
প্রতিরক্ষা কবজ
শাফিন একটু চুপ থেকে বলে- এখন আমি কি করব হুজুর?
হুজুরঃ তোমাকে একটা কাজ করতে হবে। আমার মতো তাবিজ বানাতে হবে। তবেই তুই সেই আত্মার থেকে বাঁচতে পারবি।
শাফিনঃ কি করতে হবে বলেন, হুজুর?
হুজুরঃ আমি তোকে একটা তাবিজ দিব। তুই সেই তাবিজ নিয়ে রাত ঠিক ১ টা ৩ ০মিনিটে কবরস্থানে চলে যাবি। সেখানে গিয়ে যে কবরটি নতুন দেওয়া হয়েছে। সেই কবরের মধ্যে থেকে একটু মাটি তুলে তাবিজটা পুতে দিতে হবে। তারপর তাবিজের উপর কিছু মাটি দিয়ে ঢেকে ফেলবি। ঢেকে ফেলার পরে সেই কবর থেকে এক মুঠো মাটি নিজের হাতে করে নিয়ে আসবি।
তারপর সেই মাটি গুলোকে একটা হাড়ির মধ্যে রেখে দড়ি দিয়ে ভালো ভাবে বেঁধে দিবি। এইটুকু রাত ৩ টা বাজার আগে করতে হবে। তারপর রাত তিনটা বাজে তুই সেই হাড়ি একটা কদম গাছে ভালো ভাবে বেঁধে ঝুলিয়ে রাখবি। দিনের বেলায় এসে একটা লাঠি দিয়ে সে হাঁড়িটা তোকে ভেঙ্গে ফেলতে হবে। তারপরেই সেই অশুভ আত্মা তোর পিছু ছেড়ে দিবে।
শাফিনঃ কি বলছেন এসব, হুজুর? রাত তিনটা বাজে কদম গাছে হাড়ি ঝুলানো। আবার রাত ১টা ৩০ মিনিটে কবরস্থানে গিয়ে কবরস্থানের ভিতর তাবিজ পুতে রাখা। আবার সেই কবর থেকে মাটি নিয়ে আসা। আমারতো এখনি গা ঝিমিয়ে আসছে।
হুজুরঃ এছাড়া আর কোন উপায় নাই, রিয়াজ?
শাফিনঃ ঠিক আছে, হুজুর। আমি রাজি আছি।
হুজুরঃ ওকে, এই নে সেই তাবিজ। তবে আরেকটা কথা, সেই অশুভ আত্মা তোকে অনেক ভাবে ভয় দেখাবে। তুই কিছুতেই ভয় পাবি না। যতক্ষণ তোর কাছে এই তাবিজ থাকবে, ততক্ষণ তোর কিছু করার সাহস পাবেনা আত্মাটা। যদি একবার ভয় পেয়ে পালানোর চেষ্টা করিস, তবে সে তোকে সেই জায়গায় মেরে ফেলবে।
শাফিনঃ ঠিক আছে, হুজুর। আমি তাহলে এখন যাই।
এরপর সারাদিন আমার টেনশনে কেটে গেছে। এখন রাত বারোটা। আর মাত্র ১ ঘন্টা পর আমি কবরস্থানে যাব। আল্লাহ তুমি আমাকে রক্ষা করো।
চলবে…..
পরের পর্ব- ভয়ানক ভৌতিক গল্প – অশুভ আত্মার প্রতিশোধ – পর্ব ৪