ভয়ানক ভৌতিক গল্প – অশুভ আত্মার প্রতিশোধ – শেষ পর্ব

ভয়ানক ভৌতিক গল্প – অশুভ আত্মার প্রতিশোধ – শেষ পর্ব: একটার পর একটা বিপদ ঘটিয়ে চলছে এই প্রেত আত্মা। কোনভাবেই তাকে থামাতে পারছি না। আমার ছোট ভাইয়কে দিয়ে কত ভয়াবহ কাজ সে করাল। সামান্য ভুলের খেসারত এভাবে দিতে হবে তা ভাবিনি কখনো। আজ যে করে হোক এর পুরো গুষ্টিকে শেষ করে ফেলব এতে যদি আমার মরণ হয় হোক, আর সহ্য করা যাবে না।
নিস্তব্ধ ভুতুড়ে পরিবেশ
রনি আমার এক হাত ধরে একটান দিয়ে, রুম থেকে বাহির করে ফেলেছে।
বাহির করেই রাসেলের রুমের দরজা আবার লক করে দিয়েছে।
এমন সময় আমাদের পিছনে কিসের যেন হুংকারের শব্দ ভেসে আসতে লাগলো।
এদিকে আমার ফোনটাও হাত থেকে পড়ে গেছে রাসেলের রুমে।
অন্ধকারে কিছু দেখতে পাচ্ছিনা।
হঠাৎ খেয়াল করলাম,
কে যেনো রনির ঘাড় জোরে ধরে টানতে টানতে নিয়ে যাচ্ছে।
রনির পা দুটো ফ্লোরে ঘষা খেতে খেতে বাড়ির বাহিরে চলে গেছে।
আমি দরজার দিকে তাকিয়ে রনি বলে জোরে চিৎকার দিলাম।
কিন্তু কোনো সাড়া শব্দ পাচ্ছি না রনির।
তাড়াহুড়া করে দৌড় দিয়ে বাড়ির বাহিরে চলে আসলাম।
এসে দেখি রনি কোথাও নেই।
জোরে জোরে রনি বলে চিৎকার করতেছি।
কিন্তু রনির কোন সাড়া শব্দ পাচ্ছি না।
প্রিয় বন্ধুর জন্য আহাজারি
তারপর যা দেখলাম, তা দেখার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।
আমি দেখতে পেলাম, আমার চোখের সামনে রাসেল রনির ঘাড় থেকে রক্ত চুষে চুষে খাচ্ছে।
শাফিনঃ আরে এই রাসেল, কি করছিস?
বলেই দৌড়ে গিয়ে রাসেলের মুখের মধ্যে এক ঘুষি মারতেই রাসেল উড়ে গিয়ে মাটিতে পড়ে গেল। মাটি থেকে এক লাফ দিয়ে কোথায় যেন হারিয়ে গেছে।
আমি রনিকে কোলে নিয়ে বললাম,
শাফিনঃ রনি, দোস্ত আমার। তোর কিছু হবে না। আমি আছি তো। (চোখের অশ্রু আর ধরে রাখতে পারছিনা)
এরপর রনিকে কোলে নিয়ে আমি দৌড় দিতে লাগলাম। বুকের ভিতরটা আমার ফুফিয়ে ফুফিয়ে উঠছে।
শাফিনঃ আমার কলিজার কোন ক্ষতি হতে পারে না। আল্লাহ রে…! তুমি আমার সহায় হও।
মনে মনে আল্লাহর নাম নিতে নিতে আমি মাত্র গেট থেকে বাহিরে পা রাখলাম। এমন সময়ে রনি হাতটা ঝুলিয়ে দিলো।
কেমন যেন ভর ভর লাগতেছে।
রনির মুখের দিকে তাকিয়ে দেখি রনি এখন কষ্টে কাতরাচ্ছেনা।
আমার মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়তেছে।
না, এই হতে পারে না।
আমি রনির নাকের মধ্যে হাত দিয়ে দেখি রনি নিঃশ্বাস নিচ্ছেনা।
তার মানে রনি?
না, এটা কখনো হতে পারে না।
শাফিনঃ আরে এই রনি! রনি! আরে উঠসনা কেন? এই দেখ, তোর কলিজা তোর সামনে তোকে ডাকছে। আরে উঠোস না কেন?
একটা চিৎকার দিয়ে আমি থেমে গেলাম। নিজের জীবনের থেকে যেন অর্ধেক আয়ু আমার মারা গেছে।
রনির মুখের ওপর তাকিয়ে তার মায়া ভরা মুখটি দেখছি।
চোখের পানি টপ টপ করে রনির মুখের মধ্যে পড়তেছে। পরিবেশ আমাকে চিৎকার দিয়ে বলছে। বাঁচাতে পারলি না। পারলি না তুই। রনিকে তুই বাঁচাতে পারলি না।
অশুভ আত্মার সাথে লড়াই
হে আল্লাহ, কেন সেদিন তুমি তাকে আমার থেকে নিয়ে যাও নি। কেন আমি তাকে তাড়িয়ে দেওনি।
এটাই আমার দোষ হয়েছে খোদা?
আমার জন্য রনি নিজের জীবন দিয়ে ফেলেছে?
হে আল্লাহ, আমি এখন কি করবো?
একদিকে আমার ভাইয়ের শরীরে অশুভ আত্মা প্রবেশ করেছে। যেন আমি তাকে কিছু করতে না পারি।
এইদিকে নিজের কলিজাকে না পেরেছি বাঁচাতে।
এটাই কি আমার কপালে লেখা ছিল? বলো, তুমি বলো? এইটাই কপালে লিখেছিলে? কেনো এমন লিখেছো খোদা তুমি?
তবে যখন এমন একবার হয়ে গেছে। আমার ভাইকে যে বস করে রেখে দিয়েছে, আমার থেকে আমার কলিজাকে কেড়ে নিয়েছে। সেই আত্মাটাকে মেরে দিবো। আমি তির তির করে মারবো তাকে।
আমি তাকে মারবোই।
তারপর রনিকে সেখানে রেখে আসলাম।
এবার চোখ অগ্নিরুপ ধারণ করেছে। লাল হয়ে গেছে চোখ।
রাগে বাসার ভিতরে ঢুকেই দেখলাম আম্মু আব্বুর রুমে চিৎকার-চেঁচামেচি।
একি! সেই অশুভ আত্মা আম্মু আব্বুর সাথে কিছু করে বসে নি তো?
দৌড়ে গিয়ে আম্মু আব্বুর রুমের দরজা খুললাম। দেখলাম, রাসেল আব্বু আম্মুর সামনে দাঁড়িয়ে তাদেরকে হুংকার দিচ্ছে।
তাদেরকে যেন এখনই খেয়ে ফেলবে।
আমি যেতেই রাসেল বাতাসের বেগে আমাকে জোরে ধাক্কা দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে পড়লো।
ওর পিছনে দৌড়াতে লাগলাম। রাসেল বাসা থেকে বের হয়ে যাচ্ছে।
আমি ‘বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম’ বলেই এক লাফে একটা গাছের ডাল ভেঙ্গে রাসেলের গায়ে নিক্ষেপ করলাম।
সেই ডালের আঘাতে রাস্তার মধ্যে হোঁচট খেয়ে পড়ে গেল রাসেল।
অশুভ আত্মা বনাম মানুষ
এমন সময় হুজুর এসে আমার সামনে দাঁড়ালো।
হুজুরঃ শাফিন, যা করতে হবে শুন। এই তাবিজ ওর শরীরে স্পর্শ করলে রাসেলের শরীর থেকে আত্মাটা বের হয়ে আসবে এবং বের হওয়ার পর যদি সে আত্মার শরীরে তাবিজটি আবার স্পর্শ করতে পারিস। তাহলে সে আত্মা গায়েব হতে পারবে না। শরীরের আকার বড় ছোট করতে পারবে।
কিন্তু অদৃশ্য হয়ে যেতে পারবে না।
যা শাফিন, তোর ভাইকে বাঁচা। রনির হত্যাকারীর বিচার কর। পারবি তুই, জলদি যা।
রাসেল মাটির মধ্যে পড়ে আছে। আমি গিয়ে যেই ওর শরীরে তাবিজ স্পর্শ করবো।
এমন সময় রাসেল পিছু হয়ে আমার পেটের মধ্যে জোরে এক লাথি মারলো।
আমি মাটি থেকে কম হলেও ১০-১৫ উপরে উঠে আবার নিচে পড়ে গেলাম।
আবার রাছেল পালানোর চেষ্টা করার আগে আমি দৌড়ে গিয়ে রাসেলের পা টেনে ধরি এবং তাবিজটি রাসেলের হাঁটুর মধ্যে স্পর্শ করে পেলি।
সাথে সাথে রাসেলের শরীর থেকে একটা ধোঁয়া বের হয়ে আসলো ভয়ংকর হুংকার করতে করতে।
পুরো ধবধবে সাদা এবং মানুষের আকারে বের হয়ে আসছে। যেনো কোন জ্বীন আমার সামনে।
আমি এদের শরীরে কিভাবে তাবিজ দিবো? যেটা একটা ধোয়া মাত্র।
কি করব উপায় না পেয়ে আমি তাবিজটি সেই ধোঁয়ার মধ্যে নিক্ষেপ করলাম।
সাথে সাথে সেই ধোয়াটি ভয়ঙ্করভাবে চিৎকার করতে করতে বলতে লাগল,
“তোকে তো আমি ছাড়বো না।”
এই বলে আত্মাটি হাওয়ায় ভাসতে ভাসতে আমার দিকে জোরে আসতে লাগলো।
আমিও চোখ লাল করেই আত্মার দিকে জোরে জোরে দৌড় দিতে লাগলাম।
যখনই আমার মুখে আত্মাটি নখ বসিয়ে দিবে তখনই আমি হাত নামিয়ে ২ হাটু মাটিতে পেলে দিয়ে পিচ্ছিল করে আত্মাটিকে ওভারটেক করলাম।
আবার সেই তাবিজটি হাতে নিলাম।
তাবিজটা হাতে নিয়ে এক সেকেন্ডও দেরী করলাম না। উল্টো লাফ দিয়ে সেই আত্মাটিকে জড়িয়ে ধরলাম।
একি! আমি স্পর্শ করতে পারছি আত্মাটিকে।
আমি অনুভব করতে পারছি আত্মাটিকে। এইবার আমার থেকে তোকে কে বাচায় দেখবো?
অশুভ আত্মাকে পরাজিত করা
তারপর তাবিজটি ঠিক আত্মার কপাল বরাবর ধরে রাখলাম।
আত্মাটি কষ্টে চিৎকার করতে করতে বলতে লাগলো,
আত্মাঃ আমার কপাল থেকে সরিয়ে নে শাফিন, আমি তোদের জীবন থেকে চলে যাব।
শাফিনঃ তুই কি আমার লাইফ থেকে কি চলে যাবি? আমি তোকে বিদায় করব!
বলেই আরো জোরে তাবিজটি চাপ দিয়ে ধরলাম। তারপর মাটিতে ফেলে দিলাম আত্মাটাকে।
এমন জোরে চাপ দিলাম তাবিজ। সাথে সাথে ধোয়াটি একটা আলোয় পরিণত হয়ে গেল।
আমাদের পুরো এলাকা যেন আলোয় ভরে গেছে।
তারপর চোখের নিমিষেই দূর আকাশের দিকে উড়ে চলে গেল আলোটি।
শেষ…..
শেষ হয়ে গেল আশুভ আত্মা।
মাটির মধ্যে হাটু ফেলেই চোখ দুটো বন্ধ করে রাখলাম।
এতদিন পর একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম আমি।
তারপর দৌড়ে এসে রাসেলকে তুলে নিলাম। রাসেল অজ্ঞান অবস্থায়। এতদিনে এই আত্মার বসে থেকে ভাইটিকে কি না কি খাইয়েছে। রাসেল এইদিকে পুরো অসুস্থ।
হুজুর মসজিদে আজান দিয়ে বসলো। সারা রাতটা আমার সাথে আত্মার যুদ্ধ করতে করতে কেটে গেছে।
নতুন জীবন
মাঝখানে চলে গেলো ৪ মাস।
আজ ০৮/০৪/২০১৯ তাং।
সকালে নিজের ফোন নিয়ে ছাদে গিয়ে বসলাম।
সূর্য উদয় হয়েছে পূর্ব দিকে। পৃথিবীটা কেমন যেন এখন অন্যরকম লাগছে।
রাতে যেন আমার কাছে একটা অভিশপ্ত রাত হিসেবে ছিলো।
কিন্তু এখন আমার কাছে পুরো দুনিয়া স্বাভাবিক মনে হচ্ছে।
সত্যিই….
এই পৃথিবীতে আমরা যা চোখে দেখি, আসলে এমনটা হয় না।
এর পিছনে লুকিয়ে থাকে হাজারো রহস্য, হাজারো অপরাধ, হাজারো অসম্পূর্ণ কাজ, হাজারো স্বপ্ন।
তবে এত কিছুর মধ্যে রনির জন্য খুব কষ্ট হচ্ছে। আমার এই সমস্যার মধ্যেই সে নিজে বলি হয়েছে।
ওপরের তাকিয়ে চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে এইটুকুই বললাম।
হে আল্লাহ, ওপারে আমার কলিজাটাকে তুমি ভালো রেখো। তোমার কাছে শুধু এই প্রার্থনা করি আমি।
~সমাপ্ত~
আরো পড়ুন- এলিয়েন রহস্য পর্ব ১ – এলিয়েন মানবের গল্প