ভয়ানক ভৌতিক গল্প – অশুভ আত্মার প্রতিশোধ – পর্ব ১৪: জীবন পুরো হরর সিনেমা হয়ে গেছে! বেঁচে আছি এটাই এখন অবাক লাগে। জীবনে ভূতের সাথে এরকম মরণঘাতি খেলা খেলতে হবে তা কখনো ভাবি নি। যত যাই হোক আমাকে এই খেলায় জিততে হবেই, অনেক নিরিহ মানুষের প্রাণ চলে গেছে, আর নাহ। এবার জীবন বাজি রেখে হলেও যুদ্ধ করব।
ভয়াবহ পরিস্থিতি
আমার কপালে রক্তের ফোটা পড়তেছে।
উপরের দিকে তাকিয়ে দেখি রাসেল একটা বাচ্চাকে কোলের মধ্যে রেখে গাছের ডালে বসে ছিঁড়ে ছিঁড়ে খাচ্ছে।
বাচ্চাটির এক হাত ছিড়ে রাসেলের বাম হাতে রেখে চিবিয়ে চিবিয়ে খাচ্ছে এবং ডান হাত দিয়ে বাচ্চাটির গলা ধরে পেট কামড়ে কামড়ে খাচ্ছে।
রাসেলের এমন অবস্থা দেখে ভয়ে আমার হাত পা কাঁপতে লাগলো।
কি করব আমি বুঝে ওঠার আগেই রাসেল সেই ডাল থেকে এক লাফ দিয়ে কোথাও যেন উধাও হয়ে গেছে। তাকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আমি দাঁড়িয়ে আশেপাশে তাকিয়ে দেখতেছি।
সে কোথাও নেই। পেছনে তাকিয়ে আমি আবার অবাক হয়ে গেলাম। দেখলাম যে, আমরা যে ট্রাকের মধ্যে এখানে এসেছিলাম। সেই ট্রাকটি সেখানে অবস্থিত নেই।
এসব কি হচ্ছে আমাদের সাথে আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। হঠাৎ করে রনি বলল,
রনিঃ দোস্ত, আমাদের সাথে হয়তো অনেক খারাপ কিছু হতে চলেছে। যেভাবে হোক আমরা এখন বাসায় চলে যাই। এখানে থাকা আমার ভালো ঠেকছেনা।
শাফিনঃ সেটা তো আমরা যাবই। কিন্তু রাসেলকে এখন এই জায়গায় এভাবে একা ফেলে কিভাবে যাব?
রনিঃ কালকে যে ঘটনা ঘটেছে সে ঘটনা হিসেবে রাসেল ফজরের নামাজের আগে বাসায় চলে যাবে। এখন আমাদের বাসায় যেতে হবে। গিয়ে রাসেলের জন্য অপেক্ষা করতে হবে, এছাড়া তো আমাদের হাতে আর কোন উপায় নেই।
শাফিনঃ কিন্তু রনি, রাসেলকেও রাস্তায় ফেলে যাওয়া আমার মোটেও ভালো ঠেকছে না। রাসেলকে যদি সেই আত্মা কিছু করে ফেলে?
অশরীরী আত্নার বশ
রাসেলকে কিছু করবে না। কারণ সে আত্মা রাসেলের শরীরের মধ্যে প্রবেশ করেছে। যদিও করে, সেটা হচ্ছে রাসেলের শরীরের মধ্যে প্রবেশ করে যেসব কাজগুলো করতেছে। মানে কাঁচা মানুষের মাংস খাচ্ছে, বাচ্চাদের এভাবে চিবিয়ে চিবিয়ে খাচ্ছে। সে ভাইরাস শরীরের কোন ক্ষতি করতে পারে। এছাড়া আর কোনো ক্ষতি করবে না আমার যতটুকু আন্দাজ।
শাফিনঃ ঠিক আছে, তোর কথা যদি সত্যি হয় তাহলে আমাদের তো এখন একটাই লক্ষ্য। সে আত্মাটাকে রাসেলের শরীর থেকে বাহির করা। কিন্তু কিভাবে করব, আমার কাছে তো কোন রাস্তা জানা নেই। হুজুর যাও কিছু বলে, কিন্তু কাজ হচ্ছে না। রাসেল সেই তাবিজ কিভাবে মাটিতে ফেলে দিলো? আমি তো সেটাই বুঝতে পারছি না।
রনিঃ হয়তো আত্মাটা রাসেলের শরীরে প্রবেশ করার আগে রাসেলকে বশ করে তাবিজ টা খুলে ফেলেছে। তারপর তার শরীরে প্রবেশ করেছে হতে পারে।
শাফিনঃ এখন আমরা বাসায় যাব কিভাবে? এখনো তো অনেক দূর।
রনিঃ চিন্তা করিস না। আমার একটা বন্ধু আছে, নাম রবি। আমি তাকে ফোন দিয়ে বলছি তার বাইক নিয়ে আসার জন্য।
শাফিনঃ ওকে। তাহলে তুই তোর বন্ধু কে ফোন কর।
তারপর রনি রবি নামের এক বন্ধুকে ফোন করলো। আমরা সেখানে ২০ মিনিট দাঁড়ানোর পরে একটা বাইক এসে পড়ল।
তারপর রবি আমাদের দিকে তাকিয়ে বলল,
রবিঃ তাড়াতাড়ি উঠ। রাত অনেক হয়েছে। পুলিশের হাতে ধরা খেলে বড় কিছু হয়ে যাবে। গাড়ির কিন্তু লাইসেন্স নেই।
রনি ও শাফিনঃ ঠিক আছে, তাড়াতাড়ি চল।
আমরা সেই বাইকে করে রওনা হলাম নিজের বাসার দিকে। আমাদের বাসার সামনে বাইকটি এসে নামিয়ে দিয়ে চলে গেল। আমি আর রনি বাসার গেটের দরজা দিয়ে ঢোকার সময় কেমন একটা অস্বস্তি ফিল করলাম। কেমন একটা গন্ধ যেন পুরো বাড়ি জুড়ে গেছে।
এরপর রনিকে বললাম,
শাফিনঃ গেট অফ করে দে। রাসেল যদি আশে, সে তো দেওয়াল টপকে আসবে। গেট খুলে রাখার দরকার নেই। বাড়িতে চোর ঢুকতে পারে।
রনিঃ ঠিক আছে, তুই ভেতরে যা। আমি গেট বন্ধ করছি।
আমি বাসার দিকে যত এগোচ্ছি ততোই যেন কেমন একটা গন্ধ নাকের মধ্যে আসতে লাগল। গন্ধটা কোন মাংসের।
মনের মধ্যে ডাউট হতে লাগলো রাসেল সে বাচ্চাটার লাশ নিয়ে বাসায় চলে আসে নি তো?
ভয়ানক আত্মার আক্রমণ
আমি আর রনি তাড়াহুড়া করেই বাসার ভেতর ঢুকে পড়লাম। গিয়ে দেখি রাসেলের দরজা খোলা।
এদিকে কারেন্ট চলে গেছে। পুরো রুমে অন্ধকার। চাঁদের আলোয় হালকা হালকা দেখা যাচ্ছে রুম। চোখ দুটো কেমন ঝাপসা হয়ে আসছে।
এমনিই দুই রাত চোখের মধ্যে ঘুম নেই। তার উপর এভাবে অন্ধকারে ঝাপসা হতেই পারে।
পকেট থেকে ফোন বের করে দেখি ফোনের মধ্যে তেমন চার্জ নেই। মাত্র ১২%।
তারপরেও প্লাস লাইট অন করে রাসেলের রুমের ভিতর প্রবেশ করলাম।
প্রবেশ করতেই আমার যেন দম বন্ধ হয়ে যেতে লাগল। পুরো রুমের মধ্যে বিশ্রী একটা গন্ধ। আশেপাশে লাইট মেরে দেখি রাসেল রুমের মধ্যে নেই। তবে রুমের ফ্লোরের মধ্যে সেই বাচ্চাটির হাতের আঙ্গুল পড়ে আছে একটা।
তারমানে রাসেল রুমের মধ্যে এসেছে। সেই বাচ্চাটার হাত খেয়ে ফেলার পর একটা আংগুল রয়ে গেছে।
কিন্তু রাসেল কোথায়?
ভালো করে চারপাশ লাইট মেরে দেখি রাসেল রুমের মধ্যে নেই। তারপর দরজা দিয়ে আবার বাহির হওয়ার সময় হঠাৎ খেয়াল করলাম কিসের একটা শব্দ হচ্ছে। যেন কেউ কোন কিছু খাচ্ছে। শব্দটা আন্দাজ করলাম আমার পিছনে।
তখনই ঘাড় ঘুরিয়ে দেখি রাসেল তার রুমের কোনায় একেবারে উপরে হাওয়ায় ভেসে ভেসে দেওয়ালের সঙ্গে মিশে বাচ্চাটার একটা পা খেয়ে ফেলতেছে। রাসেলের মুখের মধ্যে রক্ত ভরা। যেন আমার ভাই রাসেল না, কোন রাক্ষস আমার বাড়ির মধ্যে।
রাসেলের এমন অবস্থা দেখে আমার মাথা কেমন চক্কর দিতে লাগলো। হঠাৎ করে রাসেল আমার দিকে তাকিয়ে কেমন একটা রাগী রাগী ভাব নিয়ে আসলো। মনে হচ্ছে এক্ষুনি আমাকে কোন কিছু করে বসবে। হঠাৎ সে দেওয়াল থেকে এক লাফ দিয়ে আমার উপরে এসে পড়ল।
রাসেল সেই বাচ্চাটির পা টাকে ছুড়ে মেরে আমার ঘাড়ের মধ্যে কামড় বসাতে যাচ্ছে। আমি দুই হাত দিয়ে রাসূলের মুখ চেপে ধরে রেখেছি। কিন্তু তার শক্তির সাথে আমার শক্তি যেন কোন ভাবে মিলছে না।
অনেক শক্তি হয়ে গেছে। আমি অনেক জোর করেও তাকে আমার কাছ থেকে ছাড়তে পারছি না। পিছন থেকে রনি দৌড়ে এসে একটা লাঠি নিয়ে রাসেলের মাথায় আঘাত করল।
আঘাত করার সাথে সাথেই রাসেল আমার উপর থেকে সাইডে গিয়ে পড়ে গেল।
রনি আমার এক হাত ধরে একটান দিয়ে, রুম থেকে বাহির করে ফেলেছে।
বাহির করেই রাসেলের রুমের দরজা আবার লক করে দিয়েছে।
এমন সময় আমাদের পিছনে কিসের যেন হুংকারের শব্দ ভেসে আসতে লাগলো।
এদিকে আমার ফোনটাও হাত থেকে পড়ে গেছে রাসেলের রুমে।
অন্ধকারে কিছু দেখতে পাচ্ছিনা… চলবে….
পরের পর্ব- ভয়ানক ভৌতিক গল্প – অশুভ আত্মার প্রতিশোধ – শেষ পর্ব