ভয়ানক ভৌতিক গল্প – অশুভ আত্মার প্রতিশোধ – পর্ব ১১

ভয়ানক ভৌতিক গল্প – অশুভ আত্মার প্রতিশোধ – পর্ব ১১: কোন অশুভ আত্মার সাথে লড়াই করতে হবে, তাকে বোতলে বন্দি করতে পারব এসব শুধু কল্পনাই সম্ভব কিন্তু আমি এই কল্পনাকে বাস্তবে রুপান্তর করে ফেলেছি। আর এতেই আমার জীবন হয়ে উঠেছে দূর্বিসহ। না জানি আরো কত বিপদ আমার জন্য অপেক্ষা করছে!
পিশাচ ভর
আমি কিছুই বুঝতে পারলাম না। এইটা কি বলতেছে, এমন সময় শুনলাম রুমের মধ্যে কিসের যেন চিৎকার চেচামেচি শুরু হয়ে গেছে।
আমি বোতলটা আবার পকেটে রেখে রুমে চলে এলাম।
এসেই যা দেখলাম সেটা কখনো কল্পনাতেও ভাবিনি আমি।
রাসেল একটা কাচা মুরগি ধরে জিন্দা খাচ্ছে। রক্তে মুখ ভিজে গেছে। পুরো পিশাচের মতো মুরগিটাকে কাচা খেয়ে ফেলতেছে।
শাফিনঃ এই রাসেল কি করছিস!
এই বলে আমি দৌড়ে গিয়ে রাসেল এর হাত থেকে কাঁচা মুরগিটা নিয়ে জানালার বাহিরে ছুড়ে মারলাম। রাসেল আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বসা থেকে এক লাফে আমাকে জড়িয়ে ধরলো। আমার কোলের মধ্যে উঠে আমার ঘাড়ের মধ্যে কামড় বসিয়ে দিতে গেল।
আমি পেটের মধ্যে হাত দিয়ে জোরে ধাক্কা দিয়ে আবার পিছনে ফেলে দিলাম রাসেলকে।
তারপর দৌড়ে বাহিরে এসে দরজাটা বাইরে থেকে বন্ধ করে দিলাম।
রাসেল রুমের ভেতর থেকে দরজা জোরে জোরে আঘাত করছে। এমন জোরে লাথি মারছে যেন দরজা ভেঙে ফেলবে।
রনি আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
রনিঃ হুজুরকে তাড়াতাড়ি ডেকে নিয়ে আয়।
আমি হুজুরকে ফোন করলাম। আর খুব জলদিই আসতে বলেছি।
কিছুক্ষণ পর হুজুর আমাদের বাড়ির সীমানায় পা রাখতেই রুমের ভিতর রাসেল ভয়ঙ্কর চিৎকার করতে লাগলো।
রাতের বেলা শিয়ালরা একসাথে আওয়াজ করলে যেমন ভয়ঙ্কর একটা আওয়াজ সৃষ্টি হয়। ঠিক সেইরকম একটা আওয়াজ রুম থেকে ভেসে আসতেছে।
এইটা আমরা কাকে নিয়ে এসেছি, এইটা কি রাসেল নাকি অন্য কিছু।
প্রেত আত্মার মায়াবী শক্তি
হুজুর বাড়ির ভিতর প্রবেশ করতেই রাসেল ভিতর থেকে জোরে জোরে চিৎকার দিয়ে বলতে লাগলো।
রাসেলঃ সবাইকে শেষ করে ফেলব আমি। কাউকেই ছাড়বো না। আমার হাত থেকে কেও বেঁচে ফিরতে পারবি না। সবাইকে ধ্বংস করে ফেলব আমি।
আমি রাসেলের কন্ঠটা শুনে অবাক হয়ে গেলাম। এখন তার কন্ঠটা এমনভাবে শুনাচ্ছে, যেন কোন পুরুষ এবং মহিলা একসাথে কথা বলছে। তার কন্ঠটার মধ্যে যেন কোন ছেলে মেয়ে দুজনেরই কন্ঠ মিশ্রিত করা। রাসেলের গলার আওয়াজ শুনে আমি অনেকটাই ভয় পেয়ে গেছি। হঠাৎ করে তার কন্ঠ এরকম হল কেন?
হুজুর রুমের মধ্যে এসেই গলা থেকে তাবিজটা বের করল।
এটা হচ্ছে সেই তাবিজ, যে তাবিজ দিয়ে আমি ওই আত্মাটাকে বোতলের ভিতর ঢুকিয়েছিলাম।
হুজুর তাবিজ হাতে নিয়ে রাসেলের রুমের দরজাটা খুলে ফেলল। দরজা খোলার সাথে সাথে রাসেলে ভয়ংকর একটা চিৎকার দিয়ে এক লাফে হুজুরের উপর ঝাপিয়ে পড়ে।
হুজুর রাসেলকে ধরে জোরে ছুড়ে মারে বাহিরে।
রাসেল উড়ে গিয়ে দেওয়ালের সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যায়।
এসব দেখেই আমার রাগ উঠে গেছে।
আমি দৌড়ে গিয়ে হুজুরকে এক ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দিলাম।
তারপর তাড়াহুড়া করে ড্রয়ার থেকে দড়িটা নিয়ে রাসেলের হাত পা বেঁধে ফেললাম। আর পিছনে হুজুরের দিকে তাকিয়ে বললাম,
শাফিনঃ হুজুর, যা করার করেন। কিন্তু রাসেলকে কোন আঘাত করবেন না। আমার ভাইকে কিছু করলে সে কষ্ট পাবে। রাসেল আঘাত ফেলে অনেক কষ্ট পায়। অনেক ব্যথা পায়, আমার ভাইকে কষ্ট দিবেন না, প্লিজ। আমার কষ্ট হয়। কেন বুঝতেছেন না?
ভূত তাড়ানোর দোয়া
হুজুর একটু চুপ করে আস্তে করে বলে- শাফিন, এইটা এখন তোর ভাই নয়। তোর ভাইয়ের শরীরে অশুভ আত্মা প্রবেশ করেছে।
শাফিনঃ ফালতু কথা বলবেন না হুজুর। আমার পকেটের ভিতর বোতলের মধ্যে বন্দি সেই অশুভ আত্মা। রাসেলকে কিভাবে বস করতে যাবে?
হুজুরঃ এটা সেই অশুভ আত্মা নয় রে। তেতুল গাছে আরও একটি আত্মা আছে। আত্মাটা একটা মেয়ে পিশাচ। রাসেলের শরীরের ভেতরে প্রবেশ করেছে সে। এখন সম্পূর্ণরূপে এইটা রাসেল ঠিকই, কিন্তু ভিতরে অশুভ আত্মা বসবাস করতেছে।
শাফিনঃ আমি এত কিছু শুনতে চাই না হুজুর, আপনি যেভাবে পারেন রাসেলকে সেই আত্মার থেকে মুক্তি দিন। কিন্তু প্লিজ, কোন ভাবে আঘাত করবেন না আমার ভাইকে।
হুজুরঃ তুই বুঝতে পারছিস না কেন, শাফিন? এইটা অনেক খাতরনাক এক আত্মা। একে শেষ করতে হলে আমাকে মাঝে মধ্যে দু একটা আঘাত করতে হবে।
শাফিনঃ কিন্তু আমার ভাইকে তো আঘাত করা হবে, তাই না? না হুজুর, আমি তা মানতে পারব না। রাসেলকে কোন ভাবে আঘাত করবেন না, প্লিজ?
হুজুরঃ আমি বুঝেছি কেন আত্মাটা তোর ভাইয়ের উপর আছর করেছে। কারণ তুই তাকে আঘাত করবিনা জেনেই তোর ভাইয়ের উপর আছর করেছে। যেন সে আত্মা বেঁচে যায়।
শাফিনঃ এখন আপনি কি করবেন করুন, হুজুর?
হুজুরঃ আমি যা করার করছি, তুই দেখ।
হুজুর রাসেলের কাছে এগিয়ে এসে তাবিজটি রাসেলের কপালে ধরে বলল,
হুজুরঃ এখনই তুই ওর শরীর ছেড়ে চলে যা।
চোখ লাল করে রাসেল আবার সেই পুরুষ এবং মহিলা মিশ্রিত কন্ঠে বলল,
আত্মাঃ আমি ছেড়ে দেওয়ার জন্য তার গায়ে আচর করিনি। তোদেরকে শেষ করার পরে আমি এখান থেকে যাব। তার আগে না।
এটা বলেই রাসেল ধপাস করে জোরে দড়িগুলো ছিড়ে হাত দিয়ে হুজুরের গলা চেপে ধরলো। আমি দৌড়ে গিয়ে রাসেলের হাত ধরে টানাটানি করতেছি। কিন্তু কিছুতেই সরাতে পারছি না।
তারপর রাসেল আর এক হাত দিয়ে আমাকে সজোরে ধাক্কা দিল। আমি উড়ে গিয়ে টেবিলের সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে গেলাম। আম্মু আব্বু দৌড়ে এসে আমাকে দাঁড় করালো।
হুজুর কোনরকম হুজুরের গলা থেকে রাসেলের হাতটা ছাড়িয়ে নিয়েছে।
ভয়ানক শাসন
এরপর হুজুর উল্টো রাসেলের গলা চেপে ধরলো।
তারপর টানতে টানতে রুমের মধ্যে নিয়ে গিয়ে দরজাটা বন্ধ করে দিল। রুমের ভিতর থেকে রাসেল আবার চিৎকার দিয়ে বলতেছে,
আত্মাঃ ধ্বংস করে ফেলবো সবাইকে আমি। হাহাহা…. কেউ আটকাতে পারবে না আমাকে।
আমি দৌড়ে হুজুরের কাছে গিয়ে বললাম,
শাফিনঃ হুজুর, এসব কি হচ্ছে? আমার ভাইকে কি এই আত্মার থেকে মুক্তি দেওয়া কোনভাবে সম্ভব না?
হুজুর বললো,
এখন রাত হয়ে গেছে। সেজন্য আত্মাটা রাসেলের শরীরের ভেতরে আছে। দিনের বেলায় সে আত্মাটা রাসেলের শরীর ছেড়ে চলে যাবে। আবার রাতের বেলায় এসে রাসেলের শরীরে প্রবেশ করবে। সেজন্য তোকে রাতের বেলায় অনেক সাবধানে থাকতে হবে। আমি দেখছি দিনের বেলায় কি করা যায়।
শাফিনঃ প্লিজ হুজুর, আপনি একটা কিছু করেন। আমার ভাইয়ের এরকম অবস্থা আমি আর দেখতে পাচ্ছিনা।
হুজুরঃ ঠিক আছে, আমি একটা কিছু করার ব্যবস্থা করতেছি। এখন কেউ দরজা খুলবে না। দরজা খুললেই প্রচুর বিপদ হবে। রাত হয়ে গেছে। আমি বাসায় যাচ্ছি। কাল সকালে রাসেলের শরীর থেকে আত্মাটা চলে যাবে। তারপর আমি দেখি কি করা যায়? এখন রাসেলের পাশে যাওয়া যাবেনা। আত্মাটা অনেক খাতারনাক।
শাফিনঃ তাহলে কি এখন আমরা দরজা বন্ধ করে রাখবো?
হুজুরঃ দরজা বন্ধ থাকবে। যদি একবার বাহির হয়ে যায় রাসেল। তাহলে কি করবে সে নিজেও জানে না!
শাফিনঃ হুজুর, রাসেল কোন রাতে না খেয়ে থাকতে পারেনা। রাসেল যদি কখনো না খেয়ে শুয়ে পড়ে, সেদিন আমিও খাইনি। আমার ভাই আজকে কিছুই খাইনি। এভাবে তাকে বন্দী করে রাখব আমি? ভাই হয়ে আমার খুব কষ্ট হচ্ছে, হুজুর।
হুজুরঃ কিছুই করার নাই রে। আজকে তোকে এ কষ্ট সহ্য করতে হবে। কোনভাবেই রাছেলের দরজা খোলা যাবে না।
এই বলে হুজুর চলে গেছে। আমার ভাই না খেয়ে রুমের মধ্যে পড়ে আছে। তাই আমিও আর খেতে পারব না।
জানি, যদিও খাই, সেগুলো আমার পেটে হজম হবে না।
আব্বু আম্মুর দিকে তাকিয়ে দেখি সবাই অসহায় চেহারা নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
ভাইয়ের প্রতি মায়া
আমি আর কি করবো? এরকম দিন আসবে কখনো ভাবতেও পারিনি। এমন সময় আবার রুম থাকে রাসেল অনেক মায়া কন্ঠে বলতে লাগলো,
রাসেলঃ ভাইয়া রে, আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। রুমের মধ্যে আমার দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আমাকে বাহির কর, প্লিজ। আমার কলিজা ফেটে দু টুকরো হয়ে যাচ্ছে।
যেই আমি দরজাটা খুলতে যাব, তখনি আব্বু আম্মু আমার দিকে তাকিয়ে ইশারা করলো, দরজা না খুলতে।
শাফিনঃ আম্মু, আমি আর পারতেছিনা। রাসেল এভাবে বলতেছে। আমার মনে হয় আত্মাটা তাকে ছেড়ে দিয়েছে।
শাফিনের মাঃ হুজুর কি বলে গেছে শুনিস নি? কাল সকাল ছাড়া যাবে না এই আত্মা। এইসব আত্মার বাহানা।
আমি পকেট থেকে মোবাইল ফোন বের করে হুজুর কে কল দিলাম।
শাফিনঃ হুজুর, রাসেলকে মনে হয় আত্মাটা ছেড়ে দিয়েছে। ভেতর থেকে নিজের কন্ঠে বলতেছে, তার অনেক কষ্ট হচ্ছে। ওর দরজা খোলার জন্য বলছে।
হুজুর বললো,
হুজুরঃ রাসেলের শরীর থেকে যদি আত্মাটা চলে যায় তাহলে রাসেল কথা বলতে পারবে না। সে অজ্ঞান অবস্থায় থাকবে। তার মুখে পানি দেওয়া ছাড়া রাসেলের জ্ঞান ফিরবে না। তার মানে এইটা আত্মা। যে তোমার সাথে ছলনা করতে চাইছে।তার ফাঁদে পা দিও না। প্রস্তাবে নাহলে।
শাফিনঃ ঠিক আছে, হুজুর।
হুজুরের ফোন রাখতেই আবার রুমের ভেতর থেকে রাসেল কেঁদে কেঁদে বলতে লাগলো,
রাসেলঃ ভাইয়া রে, ওরা মিথ্যা কথা বলছে। আমার খুব খিদে পেয়েছেরে। আমাকে খাইয়ে দিবি না?
আমি আর সহ্য করতে না পেরে নিজের রুমে গিয়ে দরজাটা বন্ধ করে দিলাম। দু চোখ দিয়ে অঝোর-ধারায় পানি পড়তেছে। আমার ভাইয়ের কাঁদো কণ্ঠে আমাকে কখনো শুনতে হয়নি। কিন্তু আজ শুনতে হচ্ছে। ভাইয়ের জন্য বুকটা ফেটে যাচ্ছে। অনেকটা কষ্ট বুকে চেপে রাখছি।
রাসেলের আর্তনাদগুলো মনে পড়তেই চোখ দিয়ে পানি বাহির হয়ে যাচ্ছে।
ভাবতে ভাবতে শুয়ে পড়েছি। কখন ঘুমিয়ে গেছি, বুঝতেও পারেনি।
হঠাৎ নিচে কিছু একটার খটখট শব্দ হয়েছে।
চোখ খুলেই বিছানা থেকে এক লাফে উঠে রুমের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। বুঝতে পারলাম আওয়াজটা রাছেলের দরজা থেকে এসেছে।
হাতে টর্চ লাইটটা নিয়ে রাসেলের দরজার সামনে গিয়ে দেখলাম, দরজাটা খোলা।
রাসেল ভিতরে নেই। আমার মাথার মধ্যে যেন আকাশ ভেঙে পড়েছে।
রাসেল দরজা খুলে কোথায় গিয়েছে? আজ রাত কি কঠিন কিছু হতে চলেছে? চলবে….
পরের পর্ব- ভয়ানক ভৌতিক গল্প – অশুভ আত্মার প্রতিশোধ – পর্ব ১২