ভয়ানক ভৌতিক গল্প ১০

ভয়ানক ভৌতিক গল্প – অশুভ আত্মার প্রতিশোধ – পর্ব ১০

ভয়ানক ভৌতিক গল্প – অশুভ আত্মার প্রতিশোধ – পর্ব ১০: এই অশুভ আত্মার জ্বালায় আর বাঁচি না, শেষ পর্যন্ত আমার ছোট ভাইয়ের দিকে তার নজর গেল। শালা মরেও শান্তি দেয় না। এবার এর একটা বিহিত করতেই হবে।

আত্মা কাবু করার দোয়া

একবার জ্বলে উঠছে একবার নিভে যাচ্ছে। লাইট অফ-অন করার সাথে সাথেই লাইট দুটো ভেঙ্গে গেছে। রুমের ভিতরে অন্ধকার হয়ে গেছে মুহুর্তে।

তখনই হুজুর একটা মোমবাতি জ্বালিয়ে তার সামনে রেখেছে এবং চোখ দুটো বন্ধ করে আবার কি যেন পড়তে লাগলো।

আমি হুজুরের দিকে তাকিয়ে আছি।

এমন সময়, জানালাগুলো পিঠাপিঠি শুরু করেছে।

রুমের মধ্যে কেমন যেন একটা হালকা গরম এবং ঠান্ডা বাতাস দুটোই একসাথে বাড়তে লাগলো।

পুরো রুম যেন কাপাকাপি করতেছে।

আমি ভয়ে খাটের উপর বসে আছি।

হুজুর ফ্লোরের উপর বসে মন্ত্র পাঠ করতেছে।

তখন আমি খেয়াল করলাম রুমের কোনায় কেউ একজন পুরো কালো একটা পাঞ্জাবির মত কি একটা পড়ে দাঁড়িয়ে আছে।

মুখে কালো কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া। আমি দেখেই আমার গলা শুকিয়ে কাট হয়ে যাচ্ছে।

তারপর দেখলাম রুমের আরেক কোণায় সেম একই রকম আরো একটা কি যেন দাঁড়িয়ে আছে।

গায়ের মধ্যে কালো জামা, পুরো মাথা থেকে পা পর্যন্ত কিছুই দেখা যাচ্ছে না।

আমি ভয়ে মনে মনে ভাবছি, হুজুরকে ডাক দিব।

তার আগেই হুজুর চোখ মেলে সামনের দিকে জোরে একটা ফু দিলো।

এবং সেই ২ টি আত্মা ধপাস করে একটার শরীরে আরেকটা ঢুকে গেল। মানে দুটি আত্মা একটি শরীরে পরিণত হল।

ভয়ানক প্রতিশোধের নেশা

এরপর সেই আত্মাটা হাওয়ায় ভাসতে ভাসতে হুজুরের সামনে এসে দাড়ালো। হুজুর আবার কি পড়ে ফু দেওয়ার সাথে সাথে আত্মাটা হুজুরের সামনে বসে পড়লো।
তখন হুজুর জিজ্ঞাসা করল,

হুজুরঃ কি হয়েছে তোমাদের। এরকম করছ কেন?

তখনই সামনে থাকা আত্মাটা গম্ভীর মুখে বলল,

আত্মাঃ আমি তোদের সবাইকে শেষ করে দিব। কাউকে বাঁচতে দিব না ( রেগে রেগে)

হুজুরঃ কিন্তু কেন? আমরা তোমার কি ক্ষতি করেছি?

আত্মাঃ তোমরা আমাকে আমার স্বাধীনতা থেকে বন্দি করেছো।

হুজুরঃ সেটা তো তুমি আমাদেরকে বাধ্য করেছিলে।

আত্মাঃ আমি তোদেরকে বাধ্য করি নি, উপরে বসে থাকা এই শাফিন আমার মাথার মধ্যে পা দিয়েছিল। আমি তো তার জন্য তাকে মারিওনি। শুধুমাত্র ভয় দেখাতাম। সেটার জন্য তোরা আমাকে আমার স্বাধীনতা থেকে বন্দি করেছিস। কিন্তু এখন তো আমি সবাইকে মেরে ফেলবো।

হুজুরঃ তুমি শাফিনকে চেনো না? শাফিনের যদি একবার রাগ উঠে তাহলে হয়তো তোমাকে ধ্বংস করে ফেলবে। তাই আমি তোমাকে বলছি, তুমি আমাদের পিছু ছেড়ে দাও। তুমি সে তেতুল গাছে আশ্রয় নাও। আমরা তোমার পিছু ছুটবো না তুমিও আর আমাদের পিছু এসোনা।

আত্মাঃ যত রকম যত কিছু হয়ে যাক, আমি তো তোদের পিছু ছাড়ছি না। আর কি বললি? শাফিন আমার কিছু করবে?

হা হা হা হা …..

তার আগেই শাফিনকে শেষ করে ফেলব আমি …..

হুজুরঃ আচ্ছা, তোমার জেদ হচ্ছে আমার এবং শাফিন এর উপর। রাসেল তো কিছু করেনি। তাকে তো ছেড়ে দাও।

আত্মাঃ রাসেলকে আমি আজ রাতে বলি দিবো। তাকে আমি বলি দিলে আমি আবার আমার যৌবন ফিরে পাবো। এখন আমার চামড়াগুলো বুড়োর মতো হয়ে গেছে। আমার অনেক শক্তি ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে। রাসেলকে আজকে বলি দিয়ে আমি আমার সকল শক্তি আবার ফিরিয়ে আনবো। হা হা হা হা!

এই কথাটা শোনার সাথে সাথে আমার মাথায় যেন আসমান ভেঙে পড়ল।

এই আত্মা কি বলে? আমার ভাইকে বলি দিবে? এত বড় সাহস?

ভূতের উপর আক্রমণ

আমি রাগের চোটে দৌড়ে গিয়ে হুজুর হাত থেকে একটা তাবিজ নিয়ে নিলাম।

ও হ্যাঁ, হুজুরের হাতের মধ্যে একটা তাবিজ রেখেছিল যেন আত্মাটা হুজুরকে কিছু করতে না পারে। আমি তাবিজটা কেড়ে নিয়ে সেই আত্মাটার কপালের মধ্যে জোরে চেপে ধরলাম।

আত্মাটা তাবিজের চাপে না পারছে গায়েব হতে, আর না পারছে আমাকে কিছু করতে।

জোরে জোরে চিৎকার দিয়ে বলতেছে,

আমি এক্ষুনি তোর ভাইকে ছেড়ে দিচ্ছি। আমাকে ছেড়ে দে।

শাফিনঃ আরে রাখ তোর অর্থনাদ। আমার ভাই আমার জীবন। আর তুই কতো বড় কাজ করতে যাচ্ছিস, জানিস তুই? তোকে তো আজ আমার হাতেই মরতে হবে। (মেজাজ খিটখিটে গরম হয়ে গেছে)

আত্মাঃ আমি তোমার ভাইকে কিছু করবো না, আমাকে ছেড়ে দাও।

শাফিনঃ তুই আগে আমার ভাইকে ছেড়ে দিবি। তারপর তোকে আমি ছাড়বো।

আত্মাঃ আরে বুঝার চেষ্টা করো, আমাকে ছেড়ে না দিলে আমি কি করে তোমার ভাইকে ফিরে দেবো।

শাফিনঃ সেটা তো আমি জানি না। যেভাবে হোক এক্ষুনি আমার ভাইকে ছেড়ে দিবি, তুই।

বলেই আরো জোরে চাপ দিলাম। তখনই আত্মাটা বলল,

আত্মাঃ আরে আআআআআআ……কি করছো কি? আমি এক্ষুনি ছাড়ছি।

একটু চুপ থেকে আবার আত্মাটা বললো,

আত্মাঃ তোমার ভাই তেতুল গাছের নিচে আছে। তুমি গিয়ে নিতে পারো। আমি ছেড়ে দিয়েছি।

শাফিনঃ তুই ধোকাবাজ। এত সহজে তুই হার মানবি না। আমি নিশ্চিত কিভাবে হব যে আমার ভাইকে ছেড়ে দিয়েছিস?

তখনই আত্মাটা শোয়া থেকে তার হাতটা উপরে করল এবং দেখলাম তার হাতের মধ্যে একটা আয়না সৃষ্টি হয়েছে। সে আয়নার মধ্যে দেখা যাচ্ছে রাসেল তেতুল গাছের নিচে অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে আছে। তখনই আমি তাকে বললাম,

শাফিনঃ তোর সাথে আমাকেও গায়েব করে তেতুল গাছের নিচে নিয়ে যা।

অদৃশ্য হওয়া ও বন্দী করা

আত্মাটা আমার কপালে হাত রাখতেই আমি সহ আত্মা গায়েব হয়ে তেঁতুল গাছের গোড়ায় গিয়ে ভাসমান হলাম। তখন আত্মা বলল,

আত্মাঃ এবার তো আমার কপাল থেকে তাবিজ সরিয়ে নাও।

শাফিনঃ কি গ্যারান্টি আছে, তোর কপাল থেকে তাবিজ সরানোর পর তুই আমাকে ছেড়ে দিবি?

আত্মাঃ গ্যারান্টি কি আবার?

শাফিনঃ উফফফফফ, তুই আমার পিছু ছেড়ে দিবি। সেটার প্রমান কি?

আত্মাঃ ভূতেরা আর যাই করুক, একবার কথা দিলে সে কথার খেলাপ কখনো করে না। তুই তোর ভাইকে নিয়ে যা। আমি এখন তোকে কিছু করবো না।

শাফিনঃ রাসেলকে নিয়ে যাওয়ার পরে যদি আবার কিছু করিস, তখন কি হবে?

আত্মাঃ ঠিক আছে, আমি আজকে থেকে তোমার পিছু ছেড়ে দিয়েছি। আর কখনো কিছু করব না। দয়া করে, আমার কপাল থেকে তাবিজটা সরাও।

আমি সেই অশুভ আত্মার কপাল থেকে তাবিজটা সরানোর পরই আত্মাটা তার বিশাল বড় নখ দিয়ে আমার বুকের মধ্যে আঘাত করলো। আমি তিন চার হাত পিছনে গিয়ে আবার এক লাফে সেই আত্মাটার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে কপালে তাবিজটা চাপ দিয়ে ধরলাম আবার।

শাফিনঃ বেঈমান-বিশ্বাসঘাতক, তোর মতো বেঈমান আত্মা আমি কখনো দেখিনি।

একটা চাপা মারলাম। আমি তো কখনো আত্মা়ই দেখিনি। তারপরেও তার সামনে একটু ভাব ধরে বললাম,

শাফিনঃ তোকে আমি এক্ষুনি বোতলের ভিতরে ঢুকিয়ে ফেলবো।

কথাটা শুনে আত্মাটা ভয়ঙ্কর ভাবে জোরে জোরে চিৎকার দিয়ে বলতে লাগলো,

আত্মাঃ এবার আমি সত্যি করে বলছি, আমি আর কিছু করবো না। দয়া করে আমাকে এবারের মত মাফ করে দাও। আমাকে ছেড়ে দাও।

আমি সে আত্মার কথা না শুনে, তার কপালে তাবিজ চেপে ধরে, আর এক হাত দিয়ে টানতে টানতে রাস্তার পাশে একটা বোতল দেখতে পেলাম, সেখানে নিয়ে গেলাম।

তারপর বোতলটার মুখ আত্মাটার মাথার মধ্যে রেখে চাপ দিতে লাগলাম। আমাকে অবাক করে দিয়ে চোখের পলকে আত্মাটা বোতলের ভিতরে ঢুকে গেল।
আমি সাথে সাথে বোতলের মুখ লাগিয়ে দিলাম।

বাহ বাহ, একটা আত্মাকে এভাবে বন্দি করে ফেললাম? হটাৎ করে এতো সাহস কিভাবে আসলো আমার মধ্যে? নিজেই নিজেকে চিনতে পারছিনা।

অতৃপ্ত আত্মার কাহিনী

তবে ভালোই হয়েছে। এইবার লও ঠেলা। রিয়াজের সাথে পাংগা নিলে এমনি হবে। তখন দেখলাম আত্মাটা বোতলের ভিতরে ছোট আকার ধারণ করে বলতে লাগল,

আত্মাঃ আমি যদি একবার মুক্তি পেয়ে যাই তাহলে তোর পুরো পরিবার ধ্বংস করে ফেলবো। এখনো সময় আছে আমাকে ছেড়ে দে। না হলে তোর কপালে অনেক দুঃখ আছে।

শাফিনঃ চুপ হারামজাদা, তুই আর কি করতে পারবি সেটা আমার জানা আছে ভালো করে। আজকে থেকে তুই এই বোতলের ভিতরে বন্দী থাক।

আমি বোতলটা পকেটে রেখে রাসেলকে কোলে তুলে নিলাম। অন্য পকেট থেকে ফোনটা বের করে রনিকে ফোন দিয়ে বললাম,

শাফিনঃ আমার বাইকটা নিয়ে তাড়াতাড়ি তেতুল গাছের নিচে চলে আয়।

রনিঃ হুম আসছি। তুই ওইখানেই দাঁড়া।

দশ মিনিটের মাথায় রনি আমার কাছে এসে পোঁছালো। আমি রনির বাইকের পিছনে উঠে রাসেলকে নিয়ে বাসায় ফিরলাম।

কিন্তু রাসেল তো এখনো অজ্ঞান।

সবাই খুব চিন্তিতো হয়ে পড়েছি। পকেটের মধ্যে কি যেন নড়াচড়া করতে লাগলো। আমি সাইডে গিয়ে দেখি আত্মাটা ভিতর থেকে বলছে।

আত্মাঃ হা হা হা, আজ থেকে তোর জীবনে নেমে আসবে অভিশপ্ত দিন। আজ থেকে তোর রাতের ঘুম হারাম হয়ে যাবে, তোর পরিবার তীরে তীরে মরবে। হাহাহাহা..

আমি কিছুই বুঝতে পারলাম না। এইটা কি বলতেছে, এমন সময় শুনলাম রুমের মধ্যে কিসের যেন চিৎকার চেচামেচি শুরু হয়ে গেছে।

আমি বোতলটা আবার পকেটে রেখে রুমে চলে এলাম।

এসেই যা দেখলাম, সেটা কখনো কল্পনাতেও ভাবিনি আমি।

রাসেল একটা কাচা মুরগি ধরে জিন্দা খাচ্ছে। রক্তে মুখ ভিজে গেছে। পুরো পিশাচের মতো মুরগিটাকে কাঁচা খেয়ে ফেলতেছে। চলবে…

পরের পর্ব- ভয়ানক ভৌতিক গল্প – অশুভ আত্মার প্রতিশোধ – পর্ব ১১

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *