পাপের পরিণাম – নতুন ভয়ানক ভুতের গল্প

পাপের পরিণাম – নতুন ভয়ানক ভুতের গল্প: বিছানার ওপর নগ্ন অবস্থায় পড়ে আছে নিশার দেহ। তার পেটের ওপর একটা সাপ বসে আছে। নিশার মুখ দিয়ে গলগল করে রক্ত বের হয়ে নিচে পড়ছে। নিশার চোখ দুটো বড় বড় হয়ে আছে। আতঙ্ক ভয় কষ্টের ছাপ তার চোখে। আস্তে আস্তে নিশার মৃত্যু ঘটে। কিন্তু কেন? জানুন….


পর্ব ১

ঘরে ঢুকেই রুমা নিশার এমন অবস্থা দেখতে পায়। রুমাকে দেখা মাত্রই সাপটা নিশার মুখের ভিতর চলে যায়। রুমা তা দেখে নিজেকে সামলাতে পারেনি। চিৎকার দিয়ে নিজের জ্ঞ্যান হারিয়ে ফেলে। নির্ঝর সাহেব তার মেয়ের চিৎকার শুনে দৌড়ে রুমে আসে। আর এসেই দেখে তার এক মেয়ে ফ্লোরে পড়ে আছে। আর অন্য মেয়ে নগ্ন অবস্থায় বিছানাতে পড়ে আছে।

নির্ঝর সাহেব অনেক ভয় পেয়ে যায়। তার মেয়ের সাথে এমন কেন হলো? সে দৌড়ে নিশার কাছে যায়। আর দেহের ওপর কাপড় দিয়ে দেয়। নিশাকে অনেক ডাকে কিন্তু সে যে না ফেরার দেশে চলে গেছে। সে আর কারো ডাকে সাড়া দিবেনা। রুমার কাছে এসে তাকে ডাক দেয়। রুমা চোখ খুলে তার বাবাকে দেখতে পায়। রুমা ধরফড় করে উঠে বসে।

  • বাবা বাবা নিশার কি হয়েছে দেখো।
    নির্ঝর সাহেব তার ছোট মেয়েকে বুকের সাথে চেপে ধরে কান্না করতে শুরু করে দেয়। রুমা বুঝতে পারেনা তার বাবা কান্না করছে কেন।

রুমা তার বাবাকে ছাড়িয়ে তার বোনের কাছে যায়। নিশাকে ডাকতে থাকে।

  • এই আপু তোর কি হয়েছে? এভাবে পড়ে আছিস কেন?

কিন্তু নিশা কোনো কথা কথা বলেনা। নিশা যে না ফেরার দেশে সে যে আর কথা বলতে পারবেনা।
নির্ঝর সাহেব তার ছোট মেয়ের কাছে যায়।

  • নিশা আর বেঁচে নেই। সে আর কথা বলবেনা।
    নির্ঝর সাহেব কথাটি বলেই কান্না করতে শুরু করে।
  • না বাবা আমার বোন আমাকে ছেড়ে যেতে পারেনা। তোমার কোথায় ভুল হচ্ছে। আর বিয়েতে সে আমাকে বউ সাজাবে বলেছে।
    রুমা পাগলের মতো আচরন করতে শুরু করে।
    নিশা রুমার বড় বোন। তাদের মধ্যে ভালেবাসাটা ছিলো অনেক। রুমার বিয়ে উপলক্ষে ১মাস আগেই বাবার বাড়িতে এসেছে নিশা। কিন্তু তার বোনের বিয়েটা আর দেখা হলোনা। তার আগেই মৃত্যু হয়ে গেলে নিশার।

নির্ঝর সাহেব অনেক কষ্টে তার ছোট মেয়েকে সামালাচ্ছেন। রুমা কোনো মতেই মানতে রাজি না তার বোন মারা গেছে। নির্ঝর সাহেব রুমা দুজনের মনেই তখন প্রশ্ন নিশার মৃত্যু কি করে হলো?
রুমার যতটুকু মনে আছে নিশার পেটের ওপর একটা সাপ বসে ছিলো। আর তা নিশার মুখ দিয়ে পেটের মধ্যে চলে যায়। তাহলে কি নিশার মৃত্যু সাপের কামড়ের ফলে হয়েছে?

নির্ঝর সাহেবের বাড়িতে মানুষে ভোরে গেছে। অনেক বড় মাপের মানুষ নির্ঝর সাহেব। অনেক ধন সম্পত্তি আছে। তার দুটোই মেয়ে। তার স্ত্রী অনেক দিন আগে মারা গেছে। এখন মেয়েদের নিয়েই তার জীবন ছিলো কিন্তু তার মাঝে বড় মেয়ের মৃত্যু। নিশার স্বামী এটা শুনে ছুটে চলে আসে। তিনিও অনেকটা ভেঙে পড়ে। পুরো বাড়িতে তখন কান্নার আওয়াজ।

পুলিশ এসে লাশ নিয়ে যায়। নির্ঝর সাহেবের সন্দেহ এটা কোনো স্বাভাবিক মৃত্যু নয়। নিশার চোখে ভয় আতঙ্ক কষ্ট বিরাজ করছিলো। তাই তিনি পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ তদন্ত করতে লাশটা নিয়ে যায়।
আস্তে আস্তে সবাই যে যার বাড়িতে চলে যায়। এখন শুধু রুমা আর নির্ঝর সাহেব রয়েগেছে বাড়িতে। পুরো বাড়িটাতে তখন শণ্যতা অনুভব করছে তারা। নিশা সব সময় রুমাকে আগলে রাখতো। রুমার জন্মের পরপরি তার মা মারা যায়। তখন থেকেই নিশা রুমাকে মানুষ করেছে। আর আজ সেই নিশাই দুনিয়াতে নেই। রুমার মনে তখন কষ্টের ঝড় বয়ে যাচ্ছে।

নিশার মৃত্যুর ২দিন হয়েগেছে। আস্তে আস্তে রুমাও কষ্টটা থেকে বের হবার চেষ্টা করছে। কিন্তু তার মাথার ওপরের ছায়াটাই আজ নেই। তাই অনেক কষ্ট হচ্ছে রুমার। জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে আছে রুমা। তার চোখের সামনে তখন পুরোনো দিনের সৃতি ভেসে উঠছে।

  • রুমা অনেক রাত হয়েছে ঘুমিয়ে পড় মা।
    বাবার ডাকে রুমা বাস্তব জগৎ এ ফিরে আসে।
  • ঘুম আসছেনা। নিশা আপুর কথা অনেক মনে পড়ছে বাবা।
  • দেখ মা যা হবার তা হয়েছে। কষ্ট আমারো হচ্ছে। তুই নিজেকে সামলে নে।
  • চেষ্টা করছি বাবা নিজেকে সামলে নিতে।
  • আচ্ছা মা তুই তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়িস।
  • ঠিক আছে বাবা তুমিও ঘুমিয়ে পড়ো।

নির্ঝর সাহেব সেখান থেকে তার রুমে চলে যায়। রুমা জানালা দিয়ে তখনো বাহিরে তাকিয়ে আছে। আকাশে অনেক বড় চাঁদ উঠেছে। হঠাৎ দেখে বাইরে তার বোন দাড়িয়ে আছে। আর রুমার দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে। নিশা কিছু বলতে যাচ্ছিলো ঠিক তখন তার মুখ থেকে সাপটা বেড়িয়ে আসে আর তার গলা চেপে ধরে। নিশার দেহ মিলিয়ে যায়।

রুমা অনেকটা ভয় পেয়ে যায়। সাপটা কেন তার বোনকে মারলো? আর সাপটা তো তার পেটের মধ্যে চলে গেছিলো তাহলে পুলিশ নিয়ে গিয়ে পোষ্ট মার্টম করালে তো সাপটাকে পাবে? কালকেই তাকে পুলিশের কাছে যেতে হবে।

সকালে ঘুম থেকে উঠেই সাগরকে ফোন দেয়। সাগরের সাথে রুমার বিয়ে ঠিক হয়ে আছে। ১মাস পড় তাদের বিয়ে।

  • হ্যালো সাগর কোথায় তুমি?
  • আমি তো বাসাতেই কি হয়েছে।
  • আমার সাথে একটু থানায় যেতে হবে।
  • থানায় কি করতে যাবে?
  • আপুর মৃত্যুুর ব্যাপারে কিছু জানতে।
  • আচ্ছা ঠিক আছে কখন যাবে?
  • আমি বাসা থেকে বের হয়ে তোমাকে ফোন দিবনি।
  • ঠিক আছে।

ফোনটা কেটে দিয়েই রুমা বিছানা থেকে উঠে ফ্রেশ হতে বাথরুমে যায়। বাথরুমে মুখ ধুতে ধুতে দেখে সেখানকার আয়নাতে একটা মেয়ের চেহারা দেখা যাচ্ছে আর তার মুখের মধ্যে একটা সাপ। মুখের ফুটো দিয়ে সাপটা বাইরে দেখছে। রুমা এটা দেখে অনেকটা ভয় পেয়ে যায়। চিৎকার করে উঠে রুমা। মেয়ের চিৎকার শুনে নির্ঝর সাহেব দৌড়ে চলে আসে।

রুমা তখন বাথরুমের ফ্লোরে পড়ে আছে। রুমার চোখে পানির ছিটা দিতেই চোখ খুলে তাকায় রুমা

  • কি হয়েছে রুমা তুই চিৎকার কেন করলি? আর এখানে পড়ে আছিস কেন?
    রুমার চোখে তখন অনেকটা ভয় বিরাজ করছে।
  • আমি বাথরুমের আয়নাতে একটা মেয়ের চেহারা দেখলাম আর তার মুখের মধ্যে একটা সাপ ছিলো। যেমনটা আপুর সাথে হয়েছে।
    রুমার কথাটা শুনে নির্ঝর সাহেবের মুখটা ছোট হয়ে যায়।
  • এটা কিভাবে সম্ভব? এমনটা হতে পারেনা। তুই ভুল দেখেছিস হয়তো।
  • না বাবা আমি ভুল দেখিনি আমি ঠিক দেখেছি।
  • আচ্ছা ঠিক আছে এবার বাইরে চল।

নির্ঝর সাহেব রুমাকে নিয়ে বাথরুম থেকে বাইরে বের হয়ে আসে। রুমাকে বিছানায় শুয়ে দেয়।

  • তুই এবার রেষ্ট নে। কি সব উল্টা পাল্টা ভাবছিস। সব সময় তোর বোনের কথা ভাবার জন্য এমন হচ্ছে।
  • ঠিক আছে বাবা।

নির্ঝর সাহেবের মনে তখন অনেক চিন্তা। তার সাথে এসব কি হচ্ছে। তার একটা মেয়ের মৃত্যু হলো আবার আরেক মেয়ে কিসব দেখছে। এসব কেন হচ্ছে তার মেয়ের সাথে।
রুমার দেহ বিছানার ওপর নগ্ন অবস্থায় পড়ে আছে। তার পেটের ওপর একটা সাপ বসে আছে। সাপটা হঠাৎ তার মুখের মধ্যে ঢুকে যায়।

রুমা ধড়ফড় করে বিছানাতে উঠে বসে। এতটুক সময়ে সে ঘুমিয়ে গেছে। আর সে এই স্বপ্নটা দেখেছে তার কপাল ঘেমে গেছে। এমন স্বপ্ন কেন দেখলো রুমা? তার কোনো কুল কিনারা করতে পারেনা রুমা। রুমার হঠাৎ মনে হয়ে যায় তার থানায় যাকার কথা আছে। তাই সে তাড়াতাড়ি বিছানা থেকে উঠে ফ্রেশ হয়।

এবার আর বাথরুমের আয়নাতে কিছু দেখতে পায়নি রুমা। রেডি হতে হতে সাগর কে ফোন দেয়। তারপর রেডি হয়ে সাগরের সাথে রুমা থানায় যায়। সাগরের সাথে রুমার ৩বছরের রিলেশন। পরে পরিবারের সম্মতিতে তাদের বিয়ে ঠিক হয়েছে। রুমার মনে তখন অনেক গুলো প্রশ্ন বিরাজ করছে। কিন্তু সেগুলোর উত্তর কি আওদো সে পাবে? নাকি তা ভাবনার মাঝেই থেকে যাবে।
নিশার কেসটা নিয়ে তদন্ত করছে আসিফ সাহেব। নির্ঝর সাহবের খাস বন্ধু। থানায় পৌছে রুমা সরাসরি আসিফ সাহেবের কাছে চলে যায়। রুমাকে দেখে আসিফ সাহেব একটু অবাক হয়।

  • আরে রুমা তুমি এখানে হঠাৎ?
  • এই তো আঙ্কেল কিছু জিগ্যেস করতে আসলাম।
  • বল কি জিগ্যেস করতে চাও।
  • আমার বোনের মৃত্যু কিভাবে হয়েছে কিছু জানা গেছে কি?
    আসিফ সাহেব এবার বেশ চিন্তিতো। কি বলবে বুঝতে পারছেনা
  • আমি তদন্ত করে জানতে পেরেছি তোমার বোনের মৃত্যুর আগে তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে। আর তারপর তাকে গলা টিপে মারা হয়েছে।
  • হোয়াট? কি বলছেন এসব আপনি? আমার বোনকে কেউ কি করে ধর্ষণ করবে? বাড়িতে তখন বাবা আর আমি ছিলাম। আর তার রুমে কাওকে দেখিনি একটা সাপ ছাড়া। আর আমি নিজে দেখেছি সাপ আপুর পেটের মধ্যে চলে যায় মুখ দিয়ে।
  • দেখো রুমা তুমি হয়তো ভুল দেখেছো পোষ্ট মার্টম রিপোর্টে নিশার দেহের ভিতরে কোনো সাপ পাওয়া যাইনি। আর তার মৃত্যু কোনো সাপে কামড়ানোর জন্যও হয়নি। তার মৃত্যু হয়েছে গলা টিপে মারার জন্য।

রুমা কথাটি শুনে অনেক অবাক হয়। এটা কিভাবে সম্ভব? তার চোখের সামনে সাপটা নিশার মুখ দিয়ে পেটের মধ্যে চলে গেছে। আর ইনি বলছেন সাপের কোনো চিহৃ নেই? রুমার মনে তখন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। তাদের বাড়িতে তখন কেউ ছিলনা। আর রুম থেকে কাওকে বের হতেও দেখেনি। তাহলে তার বোনকে আগে ধর্ষণ করল কে? আর গলা টিপে মারলোটাও কে? নিশা কিছুতেই মিলাতে পারছেনা। কি হচ্ছে এসব?

রুমা থানা থেকে বের হয়ে আসে। তার মনে তখন রহস্য ঘুরপাক খাচ্ছে যেগুলোর মানে রুমাকে খুজে বের করতেই হবে।

  • কি ব্যাপার রুমা এতো কি ভাবছো?
    সাগরের কথায় রুমার ভাবনার ছেদ ঘটে
  • আচ্ছা সাগর আমি একটা জিনিস মিলাতে পারছিনা। আমার চোখের সামনে যা হলো তা কি করে ভুল হতে পারে?
  • দেখো কিছু কিছু সময় মানুষ ভুল ভাবে। জেগে থেকেই তারা মনের ভাবনার মধ্যে থাকে। তোমারো হয়তো তা হয়েছে।
  • না এমনটা হতে পারেনা। আমি তখন সাপ নিয়ে কোনো কথা ভাবিনি।
    তাহলে কি করে ভুল হতে পারে?
  • এসব নিয়ে এত ভাবতে হবেনা চলো খাবে খুদা লাগছে।
  • ঠিক আছে চলো।

তারপর রুমা আর সাগর মিলে একটা রেস্টুরেন্টে খাওয়া দাওয়া করে। সাগর রুমাকে তার বাড়িতে ছেড়ে দিয়ে সে তার বাসায় চলে যায়। রুমা বাড়িতে ঢুকে দেখে তার বাড়িতে একটা মেয়ে বসে আছে। মুখ ঘোমটা দিয়ে ঢাকা। মেয়েটাকে তো চিন্তে পারলনা। কে মেয়েটা। পোশাক গুলো অপরিষ্কার।

  • কে তুমি? আর বাড়ির মধ্যে কি করে এলে?

মেয়েটি কোন কথা বলছেনা চুপচাপ বসে আছে। রুমা মেয়েটির কাছে যায়। আর তার ঘাড়ে হাত দেয়। মেয়েটি তখন রুমার দিকে ঘুরে তাকায়।
রুমা চমকে উঠে মেয়েটির চেহারা দেখে। সকালে আয়নাতে দেখা মেয়েটি তার সাসনে দাড়িয়ে আছে। মেয়েটি তার দিকে তাকিয়ে হাসতে থাকে।

  • তোর ও সময় হয়ে এসেছে।
    কথাটি বলে খিলখিল করে হাসতে থাকে মেয়েটি।
  • আমার কিসের সময় হয়েছে? আর এত হাসছো কেন?
  • সময় হলে সব বুঝতে পারবি। তোর বাবা তোর সময় ঘনিয়ে আসছে।
    আবার খিলখিল করে হাসতে থাকে।
    ঠিক তখন দেখে মেয়েটার মুখের ভেতর থেকে একটা সাপ বের হয় আর সাপটা তার গলায় পেচিয়ে যায়। রুমার দিকে তাকিয়ে সাপটি ফোস ফোস করতে থাকে। রুমা এটা দেখে নিজে সহ্য করতে পারেনি। চিৎকার দিয়ে জ্ঞ্যান হারিয়ে ফেলে।

নির্ঝর সাহেব বাইরে গেছিলেন কাজে। বাসায় এসে দেখে তার মেয়ে ফ্লোরে পড়ে আছে। তিনি তাড়াতাড়ি রুমাকে তার রুমে নিয়ে গিয়ে বিছানায় শুয়ে দেয়।
রুমার যখন জ্ঞ্যান ফিরে তখন দেখে সে তার বিছানায় শুয়ে আছে তারপাশে বাবা বসে আছে। রুমা উঠে বসার চেষ্টা করে।

  • তোকে উঠতে হবেনা মা। রেষ্ট নে। কত কিছু মনের মধ্যে ভাবছিস তাই শরীর খারাপ করছে হয়তো।
    রুমা তখনকার ব্যপারে তার বাবাকে কিছুই বলেনা। বললে হয়তো চিন্তা করবে। তাই কিছু না বলে চুপচাপ শুয়ে থাকে রুমা। কখন ঘুমিয়ে যায় বুঝতেই পারেনি। কিছু ঠান্ডা অনুভূত হয়। আর তখন রুমা জেগে উঠে। দেখে তার শরীরে কোনো কাপড় নেই। সে পুরো নগ্ন অবস্থায় বিছানায় পড়ে আছে। আর তার পেটের ওপর একটা সাপ বসে আছে।

রুমার দিকে তাকিয়ে আছে সাপটি তার ছোট ছোট চোখ দিয়ে। রুমার শরীর ঘামতে শুরু করে। রুমা নড়াচড়া করতে পারছেনা। তার মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছেনা। অনেক চেষ্টা করছে কথা বলার কিন্তু সে কথা বলতে পারছেনা। হঠাৎ সাপটি রুমার দিকে এগিয়ে আসছে। রুমা ভয়ে বারবার চিৎকার দিতে চেষ্টা করছে তার হাত পা নড়াতে চেষ্টা করছে কিন্তু কিছু করতে পারছেনা। তার কপাল ঘেমে গেছে। হঠাৎ সাপটি রুমার মুখের মধ্যে চলে যায়। রুমা তার জ্ঞ্যান হারিয়ে ফেলে।


পর্ব ২

রুমার যখন জ্ঞান ফিরে তখন সে দেখে বিছানাতেই শুয়ে আছে। আর সবকিছু ঠিক ঠাক আছে। তাহলে কি সে স্বপ্ন দেখেছিলো? কিন্তু এমন স্বপ্ন কেনোইবা দেখবে। যেমনটা তার বোনের সাথে হয়েছিলো? কিছু বুঝতে পারছেনা রুমা। তার মাথায় তখন নানা রকমের প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। বিছানা থেকে উঠার চেষ্টা করে রুমা কিন্তু তখন হঠাৎ তার পেট ব্যাথা শুরু হয়।

যা অন্যদিনের স্বাভাবিক পেট ব্যাথার থেকে অনেক বেশি ব্যাথা করছে। রুমা তার বাবাকে ডাক দেয়। নির্ঝর সাহেব মেয়ের ডাক শুনে দৌড়ে চলে আসে।

  • কি হয়েছে মা এভাবে চিৎকার করে ডাকছিস কেন?
  • আমার অনেক পেট ব্যাথা করছে বাবা।
  • হঠাৎ পেট ব্যাথা করছে কেন? কিছু খেয়েছিলি কাল?
  • না তেমনন কিছু খাইনি যেটা খেলে পেট ব্যাথা করবে।

নির্ঝর সাহেব তার রুম থেকে একটা পেট ব্যাথা কমার টেবলেট নিয়ে আনে। আর তা রুমাকে খাওয়ায়। কিন্তু তাও রুমার পেট ব্যাথা কমছিলোনা। বড়ং বেড়েই যাচ্ছিলো। রুমা অনেক ছটফট করতে থাকে পেটের ব্যাথায়। শেষে কোনো রাস্তা না পেয়ে নির্ঝর সাহেব রুমাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
রুমার পেটে কয়েকটা টেষ্ট করানো হয়। রুমাকে ডাক্তার কিছু মেডিসিন দেয়। আর তা খেয়ে রুমার পেট ব্যাথা কমে যায়। রুমা এখন ডাক্তারের চেম্বারে তার বাবার সাথে বসে আছে। ডাক্তার রিপোর্ট গুলে দেখে রুমার দিকে আর রুমার বাবার দিকে বারবার তাকাচ্ছে।

  • কি ব্যাপার ডাক্তার সাহেব এভাবে চুপচাপ না থেকে কিছু বলেন। রিপোর্টে কি এসেছে।
    নির্ঝর সাহেবের কথা শুনে ডাক্তার বলে
  • আপনার মেয়ে ৩ মাসের গর্ভবতী।
  • হোয়াট? আপনি এসব কি বলছেন? আপনার মাথা ঠিক আছে?
    টেবিল চাপড়ে রাগান্বিত গলায় কথাটি ডাক্তার কে বললেন নির্ঝর সাহেব।
  • দেখুন রিপোর্ট যেটা বলছে আমি আপনাদের সেটাই বলেছি।
    নির্ঝর সাহেব তার মেয়ের মুখের দিকে তাকালেন। হয়তো তিনি মনে মনে বলছেন ডাক্তার যা বলছে তা কি সত্যি? এমনটা কেন করলো রুমা?

রুমা হয়তো তার বাবার মনের কথা বুঝতে পেরেছে

  • বাবা আমি এমন কোনো কাজ করিনি যার জন্য আমি গর্ভবতী হবো।
  • তাহলে ডাক্তারের রিপোর্ট কি ভুল?
  • ভুল হতে পারে।
  • না রুমা ম্যাডাম আমি বেশ কয়েকবার রিপোর্ট চেক করে তবেই বলছি।
    রুমার তখন পায়ের মাটি মনে হচ্ছে সরে যাচ্ছে। এটা কিভাবে সম্ভব? সে এমন কোনো কাজ করেনি যার ফলে তার সাথে আজ এমন হচ্ছে।

যে মেয়ের ১মাস পর বিয়ে আর আজ ডাক্তার বলছে সে ৩মাসের গর্ভবতী? এমনটা নির্ঝর সাহেব মেনে নিতে পারছেনা। রুমার পছন্দের ছেলের সাথেই তো তিনি বিয়ে দিচ্ছিলেন তাহলে আগেই কেন রুমা এমন কাজ করলো? নির্ঝর সাহেব অনেকটা ভেঙে পড়েছে।

  • আপনারা ভেঙে পড়বেননা। আমি আবার পরিক্ষা করে দেখছি যদি ভুল হয়।
    ডাক্তার কথাটি বলে আবার রুমাকে মেসিনের ভিতর ঢুকিয়ে দেয়। নানা রকম পরিক্ষা করে। তারপর ডাক্তার রিপোর্টটা হাতে পায়।
  • ডাক্তার সাহেব এবার রিপোর্টে কি লেখা আছে?
  • আপনার মেয়ে গর্ভবতী এটা ঠিত কিন্তু
  • কিন্তু কি ডাক্তার?
  • বাচ্চাটা কোনো মানুষের না।
  • কি বলছেন এসব? মানুষের পেটে মানুষের বাচ্চা না তো কিসের বাচ্চা।
  • আপনার মেয়ের পেটে একটা সাপের বাচ্চা আছে। প্রতিটা রিপোর্ট সেটাই বলছে।
  • কি বলছেন ডাক্তার আপনি এসব? সাপের বাচ্চা রুমার পেটে কি করে আসবে?
  • কি করে এসেছে সেটা তো বলতে পারবোনা কিন্তু বাচ্চাটা সাপের এটা নিশ্চিত।

নির্ঝর সাহেব চেয়ার থেকে উঠে দাড়ায়। তার মাথা ঘুরতে থাকে। এটা কি শুনছে? এমনটা কি করে হতে পারে? মানুষের পেটে সাপের বাচ্চা? এমনটা কি কখনো হতে পারে? রুমার দিকে তাকায় নির্ঝর সাহেব।
রুমা চুপচাপ বসে আছে কোনো কথা নেই তার মুখে। এমন কথা শুনে হয়তো অনেক বড় শক খেয়েছে তাই চুপচাপ বসে আছে। নির্ঝর সাহেব ডাত্তারের কাছ থেকে রুমাকে নিয়ে চলে আসে। রুমাকে তার রুমে নিয়ে গিয়ে শুইয়ে দেয়। রুমার মনে তখনো কোনো পরিবর্তন লক্ষ করেনি নির্ঝর সাহেব।

হঠাৎ করে বিয়ে ভেঙে ফেলার কথা শুনে চমকে উঠে সাগর। কিন্তু হঠাৎ রুমার বাবা বিয়ে কেন ভাঙতে চায়। আর কয়দিন পর তাদের বিয়ে। সব প্লানিং করা হয়েগেছে আর এখন বলছে বিয়ে ভাঙার কথা। সাগরকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই নির্ঝর সাহেব ফোন কেটে দেয়। সাগর তখন ছটফট করতে থাকে। এমনটা কেন করতে চাচ্ছে রুমার বাবা? এটা জানতেই হবে বলে রুমার বাড়ির দিকে যেতে থাকে।
রুমার বাড়িতে পৌছে নির্ঝর সাহেবের সাথে দেখা।

  • কি ব্যাপার আঙ্কেল হঠাৎ বিয়ে কেন ভাঙতে চাচ্ছেন?
  • আমি তোমার সাথে আমার মেয়েকে বিয়ে দিতে চাইনা?
  • কিন্তু হঠাৎ কি হলো যে আমার সাথে বিয়ে দিতে চাননা?
  • আমার এ বিয়েতে মত নেই। আমি চাইনা এই বিয়ে হোক।
    সাগরের মনে তখন খটকা লাগে। রুমার সাথে সাগরের বিয়ের ফুল মত ছিল নির্ঝর সাহবের। অনেক আগে থেকে তাকে চিনে। তাহলে কি এমন হয়েছে যে একেবারে বিয়েটা ভাঙতে চাচ্ছে?
  • আঙ্কেল আপনি মিথ্যা বলছেন। আমাদের বিয়েতে আপনার মত ছিলো। কিন্তু এখন বলছেন মত নেই। তাহলে কি হয়েছে বলেন?
  • কিছু হয়নি বললাম না।
  • আমি বলছি সাগর কি হয়েছে।
    রুমার কথাটি শুনে তার দিকে তাকায় সাগর।
  • তুই কিছু বলবিনা রুমা। কিছু হয়নি।
  • বাবা সব কিছু লুকিয়ে রাখা যায়না। আর আমি এটা লুকাতে পারবোনা।
  • কি হয়েছে রুমা আমাকে বলো।
  • আমি গর্ভবতী।
  • তুমি প্রেগন্যান্ট? এটা কিভাবে সম্ভব?
  • আমার পেটে মানুষের বাচ্চা না সাপের বাচ্চা আছে।
    রুমার কথা শুনে সাগর দুপা পিছিয়ে যায়। তার নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছেনা। কি শুনলো সে? পেটে সাপের বাচ্চা? এটা কি করে সম্ভব?
  • রুমা তুমি ঠিক আছো? একটা মানুষের পেটে সাপের বাচ্চা কি করে আসবে?
  • আমি ঠিক আছি সাগর। ডাক্তারের রিপোর্ট এটাই বলছে।
  • রিপোর্ট ভুল ও হতে পারে?
  • না সাগর ভুল নেই বেশ কয়েকবার পরিক্ষা করার পর কথাটি বলেছে।

সাগর এটা বিশ্বাস করতে পারছেনা। এমনা কিভাবে সম্ভব? সাগর রুমার কাছ থেকে ডাক্তারের ঠিকানা নেয়। তারপর ডাক্তারের কাছে যায়। ডাক্তের চেম্বারে বসে আছে সাগর। একটা রুগি দেখছে ডাক্তার। তারপরেই সাগরের সাথে কথা বলবে। রুগি দেখা শেষে।

  • বলুন সাগর সাহেব কি জানতে চান?
  • রুমার যে রিপোর্ট আপনি করেছেন সেগুলো কি সঠিক?
  • আমি দুবার পরিক্ষা করিয়ে দেখেছি। ভুল হবার কোনো চান্স নেই।
  • কিন্তু ডাক্তার এটা কিভাবে সম্ভব? এমনটা কি হতে পারে?
  • কিভাবে সম্ভব এটা তো বলতে পারবোনা। তবে রিপোর্ট যা বলছে আমি তা বলছি।
  • এই সমস্যার কি কোনো সমাধান নেই?
  • সমাধান তো আছে কিন্তু অনেক রিস্কি। অপারেশন করে বাচ্চাটা বের করতে হবে। তবে সাপটা অনেব বিষাক্ত। যদি কোনো মতে রুমাকে কামড়ে দেয় তাহলে রুমার ক্ষতি হতে পারে।
  • এটা ছাড়া তো কোনো উপায় নেই?
  • আছে সাপের বাচ্চাকে পেটের মধ্যেই মেরে ফেরতে হবে তারপর অপারেশন করে বের করতে হবে।
  • এটাই ঠিক হবে।
  • হ্যা। এখন রুমাকে আর তার বাবাকে রাজি করাতে হবে।
  • আপনি এটা নিয়ে ভাববেননা। আমি সব ব্যবস্থা করছি।

সাগর সেখান থেকে রুমার বাড়িতে চলে যায়। তারপর নির্ঝর সাহেবকে সাগর সবকিছু খুলে বলে। নির্ঝর সাহেব তখন তার সামনে একটা পথ খুলা পায়। রুমাকে নিয়ে আবার হাসপাতালে যায়। রুমাকে অপারেশন টেবিলে নিয়ে গেছে ডাক্তার। বাইরে সাগর নির্ঝর সাহেব দাড়িয়ে আছে।

ডাক্তার রুমার পেটে সাপের বাচ্চাটাকে মারার জন্য মেডিসিন দেয়। কিন্তু ৩০মিনিটের বেশি হয়ে যায় কিন্তু বাচ্চাটার ওপর কোনো প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি মেডিসিনটা। ডাক্তার অনেক চেষ্টা করে কিন্তু কোনো ভাকেই রুমার পেটের মধেকার সাপের বাচ্চাকে মারতে পারেনি। রুমাকে একটা কেবিনে রাখা হয়। আর ডাক্তার বাইরে আসে।

ডাক্তারকে দেখেই নির্ঝর সাহেব দৌড়ে তার কাছে যায়।

  • কি হলো ডাক্তার সাহেব? আমার মেয়ে ঠিক আছে তো?
  • আপনার মেয়ে এখন বেহুশ। তবে ঠিক আছে কিন্তু তার পেটের মধ্যে বাচ্চাটাকে মারতে পারিনি।
  • কি বলছেন ডাক্তার?
  • আমরা অনরক চেষ্টা করেছি কিন্তু পারিনি। আমি এটা নিয়ে কাল বোর্ড মিটিং করবো তারপর কি করা যায় যেখা যাবে। ততোখন আপনার মেয়ে কে হাসপাতালেই থাকতে হবে।

ডাক্তার চলে যায়। নির্ঝর সাহেব ফ্লোরে বসে পড়ে। আমার সাথে কেন এমন হচ্ছে? বড় মেয়েটা অস্বাভাবিক মারা গেলো। আবার ছোট মেয়েটার এমন সমস্যা দেখা দিলো। তার সাথে এমন কেন হচ্ছে? আমার কোনো পাপের ফল আমার মেয়েরা ভোগ করছেনা তো?

নির্ঝর সাহেব কথা গুলে মনে মনে ভাবছিলো। হঠাৎ তার মনে পড়ে যায় অতীত। তার চোখে তখন ভয় আতঙ্কের ছাপ। এমনটা হতে পারেনা। যে মারা যায় সে কখনো ফিরে আসেনা। এটা একটা হাকিকতই হবে।

সাগরের মনে তখন নানা রকম প্রশ্ন বিরাজ করছে। রুমার পেটা সাপের বাচ্চা কি করে আসলো? আর সাপের বাচ্চাটাকে ডাক্তার কেন মারতে পারলোনা। এই সাপের বাচ্চার সাথে অশরীরী কিছু হাত নেই তো? নাকি এমনিতেই এমন কিছু হচ্ছে? না কিছু বুঝতে পারছেনা।

পরেরদিন সকালে ডাক্তারের বাড়িতে তার লাশ পাওয়া যায়। পুরো শরীর নীল হয়েগেছে। দেখে মনে হচ্ছে বিষাক্ত কোনো সাপ কামড়েছে। আরেকটা বিয়ষ লক্ষণীয় ডাক্তারের পেটে ছোট ফুটো পাওয়া যায়। আর যেখানে একটা সাপের মৃত বাচ্চা পাওয়া যায়। ডাক্তারের এমন মৃত্যু দেকে সবাই অনেক ভয় পেয়ে যায়। এমন কঠিন মৃত্যু কি করে হতে পারে।

নির্ঝর সাহেব ভেঙে পড়ে তার মেযের চিকিৎসা যে করছিলো সে মারা গেছে। আর পুরো হাসপাতালেরর লোক বলছে রুমার সাথে অশরীরী কিছু আছে তাকে চিকিৎসা করার জন্য ডাক্তারের এমন মৃত্যু হয়েছে। তাই রুমার চিকিৎসা করতে কেউ রাজি নয়। নির্ঝর সাহেব তখন কি করবে কিছু বুঝতে পারছেনা। তার মেয়ের সাথে কেন এমন করছে? তার মেয়ে তো কারো কোনো ক্ষতি করেনি। তাহলে কেন সে এমন কষ্ট পাচ্ছে?


পর্ব ৩ (শেষ পর্ব)

রুমার চিকিৎসা যখন কেউ করতে রাজি হচ্ছিলোনা তখন তাকে হাসপাতালে রেখে কি হবে? রুমাকে বাসায় নিয়ে আসে নির্ঝর সাহেব। তিনি কি করবেন বুঝতে পারছেনা। তার মেয়ের এমন সমস্যা হয়েছে যে কেউ তার চিকিৎসা করতে রাজি হচ্ছেনা। রুমাকে বাসায় নিয়ে আসার পর নির্ঝর সাহেব ডাক্তারের খোজে বের হোন। তার একজন ডাক্তার বন্ধু ছিলো তার কাছে যায় নির্ঝর সাহেব।
তার বন্ধুকে সব খুলে বলে তখন তার বন্ধু বলে,

  • পেটের মধ্যে যখন সাপের বাচ্চাটা মারা যায়নি মেডিসিনে তখন মনে হয় এর পিছনে অশরীরী কোনো কিছুর হাত রেয়েছে।
  • কি বলিস এগুলো। তুই একজন ডাক্তার হয়ে এসব কথা বলছিস?
  • দেখ নির্ঝর আমি এমন অলৌকিক ঘটনা দেখেছি তাই তোকে বলছি। আর যদি এমন কিছু না হবে তাহলে সাপের বাচ্চাটা মারা কেন যাচ্ছেনা? আর যে ডাক্তার তার চিকিৎসা করছিলো সে কেন মারা গেলো?
  • ঠিক আছে এমন কিছু আজব ঘটনা ঘটেছে তাই বলে?
  • দেখ বন্ধু আমার পরিচিত একজন লোক আছে যিনি জ্বীন ভুত নিয়ে অনেক কিছু জানেন। আমি বলি কি তুই তার কাছে একবার যা।
  • তুই যখন বলছিস তখন ঠিকানা দে।

তারপর নির্ঝর সাহেব তার বন্ধুর থেকে এক তান্ত্রিকের ঠিকানা নিয়ে তার কাছে যায়। তান্ত্রিকের আস্তানাটা ছিলো জঙ্গলের মাঝে। রাস্তার চারিধার গাছপালাতে ছেয়ে আছে। তান্ত্রিকের আস্তানাতে যখন নির্ঝর সাহেব পৌছায় তখন সেখানে দেখে অনেক মানুষ। আর তাদের মধ্যে কিছু মানুষ অস্বাভাবিক আচরন করছে।

নির্ঝর সাহেব সবকিছু দেখে অনেকটা ভয় পেয়ে যায়। তান্ত্রিকেন প্রধানকে নির্ঝর সাহেব তার পরিচয় দিলে তাকে একটা ঘরে নিয়ে যায়। তারপর বলে,

  • ডাক্তার জুয়েল আমাকে সব বলেছে। আপনার মেয়ের এমন সমস্যা কতদিন থেকে?
    তান্ত্রিক নির্ঝর সাহেবকে জিগ্যেস করে।
  • আমার বড় মেয়েটা হঠাৎ মারা যায়। আর তখন ছোট মেয়েটা কিছু দেখেছিলো। তারপর সমস্যা হতে থাকে। হঠাৎ একদিন সকালে পেট ব্যাথা হতে থাকে ডাক্তার দেখালে বলে পেটে সাপের বাচ্চা।
    সবকিছু শোনার পর তান্ত্রিক কিছুখন চুপচাপ থাকলো তারপর বললো,
  • আপনার মেয়েকে আর আপনার বাড়িটাকে দেখতে হবে।
  • অবশ্যই চলুন আমার সাথে।

তারপর নির্ঝর সাহেব আর তান্ত্রিক তার বাসায় যেতে লাগেন। রাস্তার মাঝে হঠাৎ ঝড় শুরু হয়। শুধু বাতাস হচ্ছিলো। আর বাতাস গুলো অনেক ঠান্ডা ছিলো। তারা এক সময় লক্ষ্য করে পুরো রাস্তা শুধু সাপ আর সাপ। নির্ঝর সাহেব অনেক ভয় পেয়ে যায়। তান্ত্রিক তাকে ভয় পেতে নিশেধ করে।

তারপর তারা নির্ঝর সাহেবের বাসায় পৌছায়। রাত তখন ১০টা। পুরো বাড়ি অন্ধকার। কোথাও আলোর কোনো চিহৃ নেই। কিন্তু অন্ধকার কেন সেটাই বুঝতে পারছেন না নির্ঝর সাহেব। বাড়ির ভেতর ঢুকে প্রথমে আলো জ্বালায় আর দেখে বাড়ির দারোয়ানের দেহ পড়ে আছে ফ্লোরে। আর পুরো শরীর নীল হয়ে আছে। আর তারও পেটের কাছে একটা ফুটো আর ফুটোর মধ্যে একটা মরা সাপের বাচ্চা।

নির্ঝর সাহেব ভয় পেয়ে যায়। আর দৌড়ে তার মেয়ের ঘরে যায়। আর সেখানে গিয়ে দেখে তার মেয়ে সেখানে নেই। হঠাৎ বিজলী চমকায়। এতখন পুরো আকাশ ভালো ছিলো। কিন্তু হঠাৎ পুরো আকাশ মেঘে ঢেকে যায়। আর বজ্রপাত হতে থাকে। রুমাকে ঘরের মধ্য না পেয়ে অনেক ভয় পেয়ে যায় নির্ঝর সাহেব। তার মেয়ে কোথায় গেলো?

নির্ঝর সাহেব পুরো বাড়ি খুজেও কোথাও যখন পাচ্ছিলোনা তখন কান্নায় ভেঙে পড়ে নির্ঝর সাহেব। আমার মেয়ের সাথে এমন কেন হলো? সে তো কারো কোনো ক্ষতি করেনি।

  • বাবা তুমি কান্না করছো কেন কি হয়েছে?

রুমার কথা শুনে নির্ঝর সাহেব চমকে উঠে। তার মানে রুমা ঠিক আছে?

  • তুই কোথায় গেছিলি মা? তোকে পুরো বাড়ি খুজে কোথায় পাচ্ছিলাম না।
  • আমি তো ছাদে গেছিলাম। একা একা ভালে লাগছিলোনা তাই।
  • স্যার অনেক বিজলী চমকাচ্ছে বাসায় আমার বউ অসুস্থ আমি কি বাসায় যাবো?
    বাড়ির দারোয়ানের কথা শুনে নির্ঝর সাহেব চমকে উঠে। যার লাশ একটু আগে ফ্লোরে পড়ে থাকতে দেখলো সে এখন কথা বলছে।

ভালো করে খেয়াল করে দেখে ফ্লোরে কোনো লাশ নেই একদম ফাকা।

  • আপনার বাড়িতে আত্মা আছে। আর সেই সবকিছু করছে।
    তান্ত্রিকের কথা শুনে নির্ঝর সাহেব বলে,
  • আত্মা? এটা কিভাবে সম্ভব?
  • সম্ভব। তার সাথে এমন কিছু ঘটেছে যার কারনে সে এখনো এই বাড়িতে আছে।
  • তাহলে কি করতে হবে এখন?

তান্ত্রিক তার ব্যাগ থেকে কিছু কড়ি বের করে। আর ফ্লোরের মাঝখানে একটা স্টার চিহৃ আঁকে। তারপর স্টার চিহৃের মাঝখানে রুমাকে বসায়। দারোয়ানকে বাসায় পাঠিয়ে দেয় নির্ঝর সাহেব।

তারপর তান্ত্রিক বিড়বিড় করে কি সব বলতে থাকে আর কিছুখন পর প্রচুর বজ্রপাত হতে থাকে। আর ঠিক তখন ঘড়ির ঢংঢংঢংঢংঢংঢংঢং আওয়াজ হয়। তার মানে তখন ১২টা বাজে। রুমার মধ্যে তখন অন্যকিছু প্রবেশ করে। রুমা ছটফট করতে থাকে।

  • তুই আমাকে আটকাতে পারবিনা তান্ত্রিক।
    রুমার কথা শুনে তান্ত্রিক আর নির্ঝর সাহেব দুজনেই অবাক হয়ে যায়।
  • কে তুমি আর কি চাও?
  • আমি মৃত্যু তাই। আমার সাথে ধোকাবাজির শোধ নিতে এসেছি আমি।
  • কিসের প্রতিশোধ নিতে চাও? আর কে তুমি?
  • আমি পুতুল। আর আমি আমার প্রতিশোধ নিতে এসেছি।

পুতুল নামটা শুনে নির্ঝর সাহেব পিছে সরে যায়। না এটা হতে পারেনা। এটা কিভাবে সম্ভব? এতদিন পর কোনো মানুষের আত্মা কি করে ফিরে আসতে পারে।

  • কিসের প্রতিশোধ নিতে চাও তুমি?

তান্ত্রিকের কথায় হাসতে থাকে রুমা রুপি পুতুল।

  • আমি এদের বংশ নির্বংশ করে দিবো। আমার সাথে ধোকাবাজি?
  • কিসের ধোকাবাজি? আমাকে খুলে বলো।

রুমা নির্ঝর সাহেবের দিকে তাকিয়ে হাসতে থাকে।

  • কি নির্ঝর তুই বলবি? ? ? কিসের প্রতিশোধ?
    তান্ত্রিক নির্ঝর সাহেবের দিকে তাকায়।
  • কি কাহিনী নির্ঝর সাহেব? আমাকে সব খুলে বলুন।
    নির্ঝর সাহেব কান্না করতে থাকে।
  • পুতুল আমার বসের একমাত্র মেয়ে ছিলো। বস মারা যাবার পর সব সম্পত্তির মালিক হয় পুতুল। আর আমি তখন লোভে পড়ে যাই। আর আমি লোভে পড়ে পুতুল আর তার বাড়ির কাজের লোককে সাপের কামড় দিয়ে মেরে ফেলি। যাতে সবাই ভাবে সাপের কামড়ে মৃত্যু হয়েছে। আমি ম্যানেজার ছিলাম। তাদের কোনো আত্বীয় ছিলনা। তাই সব সম্পত্তি আমি আমার নামে করে নেই।
  • নির্ঝর সাহেব আপনি এমনটা করতে পেরেছেন? আমি আপনাকে কোনো সাহায্য করতে পারবনা।
    নির্ঝর সাহেব তান্ত্রিকের পা চেপে ধরে।
  • এমনটা করবেননা। আমাকে মেরে ফেলুন কিন্তু আমার নির্দোষ মেয়েটাকে বাঁচান।
  • কাওকে বাচাতে পারবিনা তোরা। তোর বড় মেয়েকে আমিই মেরেছি আর একেও মারবো তারপর তোকে।

কথাটি বলেই খিলখিল করে হাসতে থাকে পুতুলের আত্মা।

  • আমার মেয়ে তো তোমার কোনো ক্ষতি করেনি। তাহলে তাদের কেন শাস্তি দিচ্ছো? আমাকে মেরে ফেলো আর আমার মেয়েকে ছেড়ে দাও।
  • না আমি কাওকে ছাড়বনা। সবইকে শেষ করে দেব।
    তান্ত্রিক আবার স্টার চিহৃের মধ্যে বসে পড়ে। আর বিড়বিড় করে কিসব পড়তে থাকে। আর তখন রুমা ফ্লোরে পড়ে যায়। আর তার মুখ থেকে একটা সাপ বের হয়ে আসে।

আর লাফ দিয়ে নির্ঝর সাহের কাছে চলে যায়। আর তার মুখের ভিতর ঢুকে যায়। নির্ঝর সাহেব পড়ে যায়। অনেক ছটফট করতে থাকে। হঠাৎ তার পেটে ফুটে হয় আর সেখান দিয়ে বেরিয়ে আসে সাপটি। নির্ঝর সাহেব তখনি মারা যায় আর তার শরীর নীল হয়ে যায়। সাপটি যখন রুমার দিকে এগিয়ে যেতে থাকে ঠিক তখন তান্ত্রিক সাপের ওপর একটা তরল ছিটিয়ে দেয়।

সাপটা তখন ছটফট করতে থাকে। এক পর্যায়ে সাপটা নির্ঝর সাহেবের দেহের মধ্যে চলে যায়। তখন তান্ত্রিক লাশটাকে টেনে ছাদে নিয়ে যায়। আর সেখানে লাশটা রেখে তান্ত্রিক ছাদে বসে পড়ে আর কি সব বিড়বিড় করে বলতে থাকে।

পুরো আকাশ কালো মেঘে ঢাকা। শুধু ছাদের ওপরের আকাশটা সাদা হয়ে আছে। মনে হচ্ছর সেখান থেকে সাদা রশ্মি বের হচ্ছে। তার চারিপাশে কালে মেঘ ঘুরাঘুরি করছে। বিজলী চমকাতে লাগে।
হঠাৎ কালো মেঘের মাঝখান থেকে সাদা আলোর রশ্মি নেমে আসে। আর তা লা লাশের ওপরে পড়ে। আর তখন লাশটা আসতে আসতে ওপরের দিকে উঠতে থাকে আর এক সময় অন্ধকার আকাশের সাদা আলোর রেখা মিশে যায়। আর আকাশের মেঘ কেটে যায়। আবার সবকিছু ঠিক হয়ে যায় চারিপাশ।

  • বাবা তার পর কি হয়েছিলো?
    ছেলের কথায় সাগর তখন ভাবনার জগৎ থেকে ফিরে আসে সাগর।
  • তারপর কি হবে। সব সমস্যা সমাধান হয়েগেলো। তোমার মাও ঠিক যায় তারপর।
  • হয়েছে আর বলতে হবেনা। এবার খেতে এসো অনেক রাত হয়েছে।

রুমার বলে,

  • তোমার মা খেতে ডাকছে না গেলে কিন্তু আবার ভুত হয়ে যাবে।
    সাগরের ছেলে সাগরে জড়িয়ে ধরে।
    আজকেও আকাশটা মেঘলা। বজ্রপাত হচ্ছে। বৃষ্টির শব্দে একটা ভয়ানক পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।

লেখক – সাগর ইসলাম রাজ

সমাপ্ত

(পাঠক আপনাদের ভালোলাগার উদ্দেশ্যেই প্রতিনিয়ত আমাদের লেখা। আপনাদের একটি শেয়ার আমাদের লেখার স্পৃহা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আমাদের এই পর্বের “পাপের পরিণাম – নতুন ভয়ানক ভুতের গল্প” গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম। ধন্যবাদ।)

আরো পড়ূন – প্রতিশোধ – রহস্যময় ভূতের গল্প

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *