ছাত্রী ধর্ষণ – অতৃপ্ত আত্মার প্রতিশোধ শেষ পর্ব | ভুতের গল্প: গত ২য় পর্ব পর্যন্ত আমরা দেখেছি কিভাবে তুহিনের শায়েস্তা হচ্ছিল। কিন্তু কে এই সায়েস্তাকারী তা এখনো আমাদের অজানা। চলুন জানার চেষ্টা করি।
ভুতের সাথে পলাশ ও তুহিন
আর তখনি খেয়াল করে, মুখের মধ্যে রক্ত মিশ্রিত একটা ছেলে পলাশের সামনে বসে আছে। পলাশও ছেলেটির দিকে অদ্ভুত ভাবেই তাকিয়ে আছে। ছেলেটির হাভ ভাব দেখতে সুবিধাজনক না। পলাশ আরো ভালো করে খেয়াল করে বুঝতে পারে, এইটা কোনো মানুষ না! হতে পারে অদৃশ্য কোনো সাইকো।
পলাশ ভ্রু কুচকে তার দিকে তাকিয়ে আছে। সেও সেম ভাবে পলাশের দিকে তাকানো। এরই মাঝে তুহিন স্যারের গোংরানির শব্দ। পলাশ কান পেতে শুনে দেখে, সোফার নিচ থেকে আওয়াজ আসছে। যখনই পলাশ সোফার নিছে তাকাতে যাবে, তখনি সামনের সাইকোটা পলাশকে একটা লাথি মারে। পলাশ উড়ে গিয়ে দেওয়ালে টপকে পড়ে। সাইকোটা ভয়ংকরভাবে তেড়ে আসছে পলাশের দিকে। পলাশ তখনি পাশের ফুলদানি নিয়ে সাইকোর মুখে মেরে দেয়। কিন্তু অদ্ভুত ভাবেই, ফুলদানি সাইকোর মুখে পড়ার আগে সে অদৃশ্য হয়ে যায়। পলাশ চারদিকে চোখ বুলিয়ে দেখে,আপাতত রুমে কেও নেই। অর্থাৎ তারা সুরক্ষিত।
পলাশ দৌড়ে গিয়ে তুহিনকে সোফায় তোলে। তুহিন উলঙ্গ হয়ে শুয়ে ছিলো। পিছনের সাইটে রক্ত জমাট বেধেছে। পলাশ একটু পানি খাইয়ে তুহিনকে বলল-
পলাশঃ কি হয়েছে ভাই? এসব কি?
তুহিনঃ আর বলিস না। এই ভূত আমার জীবন শেষ করে দিল।
পলাশঃ কিন্তু প্রতিটা আত্মা একটা কারণ নিয়েই আসে। সেও নিশ্চয়ই ওমন কিছু নিয়ে এসেছে। কি পাপ করেছেন?
তুহিনঃ কি বলবো ছোট ভাই। আমার পাপের অভাব নাই।
পলাশঃ শুনি তো? বলেন কি কি করলেন।
তুহিনঃ আ.আ.আমি ছাত্রীদের রেপ করি, পলাশ।
পলাশঃ ষিহহহহ, এতটা খারাপ হলেন?.
তুহিনঃ হ্যাঁ, কিন্তু এখন তো সব ছেড়ে দিয়েছি।
একা তুহিন
পলাশ কিছুক্ষণ ভাবতে থাকে, আর মনে মনে অনেক গালি দেয় তুহিনকে। কার সাথে এতদিন সে একসাথে বসে চা খেয়েছি। কাকে সে এতদিন ভাই ভাই বলে সম্মান করেছে! এতো পশুর চেয়ে নিকৃষ্ট। কিছুক্ষণ ভাবা শেষে পলাশ বলে-
পলাশঃ আচ্ছা, ছাত্রীদের রেপ করলে, এই ছেলেটা কে।
তুহিনঃ সেটাই তো বুঝিনা।
পলাশঃ আচ্ছা, কোনো ছেলেকে রেপ করছেন?
তুহিনঃ আরেহহ না। ওতটাও নিচু না আমি।
পলাশঃ আপনি মিয়া আর কতই উচুতে আছেন।
তুহিনঃ এখন কি করবো বল?
পলাশঃ আপাতত আমার প্রশ্নের উত্তর দেন।
তুহিনঃ বল।
পলাশঃ কয়টা মেয়েকে রেপ করছেন।
তুহিনঃ ১০০+ হবে।
পলাশঃ কতজন ইচ্ছাকৃত মরেছে।
তুহিনঃ ১৭ জন।
পলাশঃ এই সাইকোটা কে জানেন?
তুহিনঃ না, তুই জানিস?
পলাশঃ হ্যাঁ, অনেক আগে থেকেই একে আমি চিনি।
তুহিনঃ কিভাবে?
পলাশঃ আপনার শাস্তি পাওয়াই উচিৎ। একজন স্যারের কাজ শিক্ষা দেওয়া। কয়েকটা জীবনে ফুল ফুটানো। স্বপ্ন ছোয়ায় সাহায্য করা। সেখানে কিনা আপনি নিজেই তাদের জীবন নষ্ট করতেন? আমি এখন বাহির থেকে দরজা লক করে যাবো। আমার মনে হয়, আজ রাতেই আপনাকে মেরে ফেলবে ও।
তুহিনঃ না পলাশ! প্লিজ আমাকে ছেড়ে যাস না। পলাশ দাঁড়া।
অতএব কে শুনে কার কথা। রুমে তুহিনকে একা রেখে দরজা অফ করে দেয় পলাশ। বাহিরে এসে শুনতে পায়, রুমের ভিতর থেকে একটা চিৎকারের শব্দ। পলাশ বুঝতে পেরেছে, অদৃশ্য সাইকো থেরাপি দেওয়া শুরু করেছে।
ফিরে দেখা ঘটনা
এদিকে তুহিন অনেক আকুতি মিনতি করে জানতে চায় যে সে কে? আর কেনই বা তার সাথে সে এরকম করছে। কিছুক্ষণ পর গোঙ্গানি থামিয়ে সেই অতৃপ্ত আত্মা বলে- স্নিগ্ধার কথা মনে আছে? যাকে তুই পড়া দেখানোর কথা বলে বাসায় ডেকেছিলি আর কি পাশবিক নির্যাতন করেছিলি। মেয়েটা হাতে পায়ে ধরে তোর কাছে মিনতি করেছিল তাকে ছেড়ে দেবার। কিন্তু তুই দিস নাই। ওইদিন স্নিগ্ধার সাথে আমার দেখা করার কথা ছিল, ও বলেছিল স্যারের কাছে পড়াটা বুঝে নিয়ে এসে আমার সাথে দেখা করবে। দিনটা ছিল আমার জন্য গুরুতবপূর্ণ, কারণ আমি আর স্নিগ্ধা ওইদিন ২০ জন পথশিশুদের হাতে বই খাতা কলম আর নতুন জামা উপহার দেয়ার প্লান করেছিলাম।
কিন্তু তোর মত নর পশুর জন্য সেটা হয়নি। স্নিগ্ধা সেদিন তোর বাসা থেকে বেরিয়ে এসে, আমাকে মেসেজ করে সব কিছু বলে ছাদ থেকে লাফ দিয়ে সুইসাইড করে, আর সেটা সইতে না পেরে আমিও পাগলের মত রাস্তায় ছুটাছুটি করি। একটা বড় ট্রাক আমার শরীরের উপর দিয়ে চলে যায়। আমার নিথর দেহ তখনো স্নিগ্ধার জন্য দেখা করতে তড়পাচ্ছিল। আমার প্রাণ চলে যায় দেহ থেকে কিন্তু সেটা আর বেশিদূর যেতে পারেনি। অতৃপ্ত প্রতিশোধ আত্মা হয়ে আছি। তোকে না মারা পর্যন্ত আমার শান্তি নেই।
এই বলে আবার গোঙাতে লাগল। তখন তুহিনের দুই চোখ বেঁয়ে অঝোরে পানি পড়ছিল। তার সামান্য কয়েক মিনিটের স্বাদ মেটানোর জন্য এত এত মেয়ের জীবন নষ্ট করেছে। প্রচণ্ড ঘ্রৃণা হতে লাগে নিজের প্রতি। মরে যাওয়ার জন্য আকুতি করে সেই আত্মার কাছে। কিন্তু আত্মা তার এই উপলদ্ধি বুঝতে পেরে তাকে আর জানে মারে নি সেদিন। শুধু একটা কথাই বলেছিল- তোর আজকের উপলদ্ধি তোকে সারাটা জীবন তিলে তিলে যন্তণা দিয়ে মারবে। তুই এখন এমনিতে মৃত। এই কথা বলে আত্মাটা চলে যায়।
শেষ পরিণতি
এদিকে তুহিনের সব কিছু ঠিক হয়ে যায় কিন্তু একটা বিবেক তাকে তাড়া করে বেড়াই সবসময়। অনেক বার আত্মহত্যা করতে চেয়েছিল সে কিন্তু পারে নি। একটা সময় ভাবতে ভাবতে মানসিক সমস্যা শুরু হয়। ঘটনার ৩ বছর পরে সে মানসিক ভারসাম্যহীন রোগী হয়ে গেল। এলাকাবাসী তাকে পাবনা পাগলাগারদে রেখে আসে। এরপর থেকে বাকিটা জীবন তার এখানেই কাটে। পাগলা গারদের ৩০৫ নম্বর শেলের দেয়ালে এখনো লেখা আছে- আমাকে ক্ষমা করে দাও তোমরা, আমি ধর্ষক, আমাকে মেরে ফেল তোমরা।
আরো পড়ুন: ছাত্রী ধর্ষণ – অতৃপ্ত আত্মার প্রতিশোধ পর্ব ১
আরো পড়ুন- ভালবাসা আসলে কি