এলিয়েন রহস্য পর্ব ৮ – এলিয়েন মানবের গল্প: আমাকে যে করে হোক তাইসনকে শেষ করতে হবে কিন্তু স্নেহার ক্ষতি করতে পারব না। আমার দ্বারা তাকে আগুনে পুড়ানো সম্ভব না। কিন্তু কি করব আমি? কিভাবে করব?
অদ্ভুত শক্তির রহস্য
মাথায় হুডি চাপিয়ে খুব তাড়াতাড়ি সে জায়গা থেকে কেটে পরে শ্রাবণ। স্নেহা বাসা থেকে নেমে অনেক আগেই কোথায় যেন চলে গিয়েছে। আজ আর স্নেহাকে পাওয়া গেলো না। আরেকদিন আসতে হবে সময় করে। তবে একটু আগে যে ঘটনাটা ঘটলো সেটার রেশ এখনো কাটেনি শ্রাবণের শরীর থেকে। অদ্ভুত এক ধরণের পিপাসা মেটার মত ব্যাপার। একটা জিনিস শ্রাবণ খুব ভালো ভাবেই বুঝতে পেরেছে, তার বুকের বৃত্তাকার সিম্বলের উপরে কোনো সাধারণ মানুষের হাত লাগলে, সে মানুষটার ভিতরের এনার্জি শ্রাবণের শরীরে প্রবেশ করবে এবং মানুষটি শুকিয়ে কংকালের মত হয়ে মারা যাবে।
শ্রাবণের কাছে খুব অদ্ভুত লাগে বিষয়টি।
তাহলে যারা অপরাধ জগতের সাথে যুক্ত তাদের কাছ থেকে প্রচুর এনার্জী সংগ্রহ করা যাবে। কিন্তু এই পাওয়ার যেহেতু শ্রাবণের নিজের না, অন্য কারো এবং চাইলেই নিয়ে যেতে পারবে, সুতরাং এটাকে বাড়িয়েও বা লাভ কি!
শ্রাবণ সেদিনের মত বাসায় ফিরে আসে। আসার সময় খুব সাবধানে থাকে সে। তাকে কেউ ট্রাক করলো কিনা সে ব্যাপারে বেশ সতর্কতা অবলম্বন করে শ্রাবণ।
বাসায় ফিরে দরজা খুলে ভিতরে ঢোকার সাথে সাথেই শ্রাবণের বাসার সব লাইটগুলো নিজে নিজেই বন্ধ হয়ে যায়। সেদিনের মত একটা গন্ধ এসে নাকে লাগে। শ্রাবণ বুঝতে পারে কি হতে চলেছে!
গম্ভীর কর্কশ একটা কণ্ঠ যেন শ্রাবণের কানের কাছে এসে বলে, পৃথিবীর মানুষের শরীর থেকে তোমার দেহে আমি যেন আর শক্তি সংগ্রহ করতে না দেখি। তাইসনও ঠিক একই কাজ করে চলেছে। ওকে দু একদিনের ভিতরেই আটকে ফেলো। তাইসন কে হারানোর মত পর্যাপ্ত শক্তি তোমার মাঝে আছে। সুতরাং তোমার দেহে নতুন করে শক্তি সঞ্চয় করার কোন প্রয়োজনীয়তা দেখিনা।
শ্রাবণ সাথে সাথে প্রশ্ন করে,
তাইসন কে?
ওর মা কে ছিল?
বাবা কে?
এগুলো আগে আমাকে বলতে হবে।
কর্কশ কন্ঠে উত্তর আসে, “সেটা তুমি তোমার কাজ শেষ হওয়ার পর ই জানতে পারবে।
“আর আমি যদি তোমার কাজ না করি?”
“তোমার বাব মা এবং তোমাকে মারা যেতে হবে।”
“আমার বাবা মা আমার কাছে অনেক আগে থেকেই মৃত। এতে আমার কিছু যায় আসবে না। আমাকে মেরে ফেলো, সেটায় ও সমস্যা নেই। তবে আমি উত্তর না জেনে কাজ করবো না কোনো।”
“তুমি অনেক বুদ্ধিমান। তোমার বাবা মা কিংবা তোমাকে মেরে ফেলে আমার কোন লাভ নেই। তুমি তাইসনকে মারলেই বরং আমার অনেক লাভ। বেশ.. বলছি তবে।
ডার্ক ডেভিলসের রহস্য উন্মোচন
আমরা তোমাদের পৃথিবীর মত কোন গ্রহে থাকি না। আমাদের গ্রহের নাম হেলাক্স। সেখানে কোন জীবন্ত উদ্ভিদ নেই। পৃথিবীর সব মানুষ যেমন একই রকম বৈশিষ্ট্যের আমাদের গ্রহে তেমনটি নয়। আমাদের মাঝে তিনটি ভাগ রয়েছে, ডার্ক ডেভিলস, রেড ডেভিলস এবং পয়জন সৌল।
হেলাক্সে আধিপত্যের জন্য এই তিন জাতির ভিতরে তুমুল যুদ্ধ বাঁধে। তবে যুদ্ধে কেউ মৃত্যুবরণ করে না। ডেভিলস দের মৃত্যু নেই, এরা অনেক অনেক বছর পরে আস্তে আস্তে বৃদ্ধ এবং দুর্বল হতে শুরু করে। শক্তি হারিয়ে ফেলে, একপর্যায়ে মরার মতই রাস্তার এক পাশে নিস্তেজ পরে থাকে।
যুদ্ধে যে দল হেরে যায় তাদের হাজার হাজার সৈন্যদল কে বন্দী করা হয়। বন্দী অবস্থায় ই তাদের মাটির নিচে চাপা দিয়ে দেয়া হয়। এজন্য আমাদের গ্রহে মাটির নিচ থেকে কান্নার আওয়াজ শোনা যায়। কত কোটি কোটি ডেভিল’স মাটির নিচে আটকা পরে আছে তার কোনো হিসেব নেই।
রাজ বংশীয় ডেভিলসরা বৃদ্ধ হয়ে গেলে তাদের স্বজনরা বিভিন্ন গ্রহে সেই অকেজো দেহ নিয়ে চলে যায়। জীবন্ত প্রানীদের জীবনিশক্তি, বৃদ্ধ অকেজো দেহে প্রবেশ করিয়ে আবার আগের মতো যুবক শক্তিশালী এবং কর্মক্ষম করে তোলা যায়। এজন্য ই আমাদের বলা হয় ডেভিলস বা শয়তান। মূলতো আমাদের প্ররোচনাতে মানুষ সহ অনেকেই একজন আরেকজনকে খুন করে, সুইসাইড করে। তাদের জীবনি শক্তি সংগ্রহ করে রাজ বংশের ডেভিলসরা চিরযৌবনা থাকে।
আমাদের মাঝে সব থেকে পাওয়ারফুল হলো ডার্ক ডেভিলসরা। ওরা বছরের পর বছর হাজার হাজার পয়জন সৌল এবং রেড ডেভিলস দের বন্দী করে আটকে রেখে নিজেরা আধিপত্য চালায়। ওদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে শেষ পর্যন্ত রেড ডেভিলস এবং পয়জন সৌলস দের ভিতরে চুক্তি হয়। তারা একসাথে মিলে পরিকল্পনা অনুযায়ী হঠাৎ ডার্ক ডেভিলস দের আক্রমণ করে বসে।
তাইসন রাজার রহস্য
লাখ লাখ ডার্ক ডেভিলসরা তখন দু দলের সমন্বিত আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পরে। যে যেদিকে পারে ছুটতে শুরু করে, এদের প্রায় সবাইকে এক এক করে বন্দী করে ফেলা হয়। ডার্ক ডেভিলস দের রানী ছিলো মার্থা। সে ছিল প্রচন্ড শক্তিশালী । আমাদের দু দলের বিরুদ্ধে একাই লড়াই চালাতে থাকে বেশ অনেকক্ষণ। তবে এক পর্যায়ে আমাদের কঠিন আক্রমণের মুখে মার্থাও পিছু হটতে বাধ্য হয়।মার্থার শক্তি কমতে কমতে এতটাই কমে আসে যে, শেষবার তাকে বৃদ্ধা অবস্থা থেকে যে মেয়েটির জীবনের বিনিময়ে যুবতী বানানো হয়েছিলো তার রূপ ধারণ করে।
মার্থা যখন বুঝতে পারে সে কিছুতেই আমাদের সাথে পেরে উঠবে না, তখন ঠিক করে হেলাক্স গ্রহ থেকে অন্য কোথাও পালিয়ে যাওয়ার।
আমাদের ধারণা ছিলো মার্থা পালাতে পারে, তাই আমরাও সে অনুযায়ী নকশা করে রেখেছিলাম পয়জন সৌলদের আর্মিরা মার্থার চলন পথ আটকে তুমুল আক্রমণ শুরু করে। কিন্তু ওকে থামানো যায় নি, ওর সামনে থাকা সবাইকে ও এক নিমিষে টপকে গিয়ে পালিয়ে যায় পৃথিবীতে। তবে পয়জনের বিষাক্ততা মার্থাকে একদমই অকেজো করে ফেলে, ডেভিলসদের মৃত্যু নেই আগে বলেছিলাম। মার্থাও মরে নি। মরার মতই পৃথিবীতে গিয়ে অকেজো হয়ে পরে ছিলো।
তখন ওর দেহ ছিলো এমেরিকান একটা মেয়ের মতো, মার্থাকে নিস্তেজ অবস্থায় পেয়ে কিছু ছেলে ওকে রেপ করে ফেলে যায়। এরপর মার্থাকে খুঁজে পায় তোমার বাবা। মার্থার মানুষের মাঝে বসবাস শুরু হয়। আস্তে আস্তে সে নিজেকে পুনরূজ্জীবিত করতে শুরু করে। অনেকটা গুছিয়েও নিতে থাকে। তবে মার্থার শরীরে ততদিনে মানুষের বৈশিষ্ট্য চলে আসতে শুরু করেছে। তার গর্ভে ধর্ষক দের একজনের সন্তান আসে।
মার্থা পয়জন সৌলদের আক্রমনের স্বীকার হয়েছিলো তাই তার দেহ ছিলো বিষাক্ত। যে কারণে রেপিস্ট তিনজনের গায়েই তখন পচন ধরে। আস্তে আস্তে তারা মারা যায়। এর কয়েকমাস পরে মার্থা জন্ম দেয় মহাবিশ্বের প্রথম মানুষ এবং ডেভিলসদের সমন্বয়ে একজন শিশুর। পরবর্তীতে যার নাম রাখা হয় তাইসন। এই প্রথমবারের মতই একজন ডেভিলস এর মৃত্যু ঘটে। মার্থার শরীর সেদিন বিনাশ হয়ে যায়।
আমাদের গ্রহ থেকে আমরা পুরো ঘটনাটি খেয়াল করি।
আমার শক্তির রহস্য
সবচেয়ে ভয়ানক যে বিষয়টি আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়, সেটা ছিলো আমাদের সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী রেড ডেভিল কিংএর পাওয়ার লেভেলের চেয়েও শিশু তাইসন এর পাওয়ার লেভেল ছিলো অনেক উপরে। মানুষের সাথে সমন্বয়ের কারণে এত শক্তিশালী একজনের সৃষ্টি হবে আমরা তা ভাবতেও পারিনি।
তাইসন পুরো পৃথিবী দখল করে নেয়ার পর কোন না কোন এক সময় ঠিকই হেলাক্স গ্রহের সন্ধান পাবে, আর তখনও আমাদের সবাইকে বন্দী করে ফেলবে। এজন্যই ওকে ধ্বংস করার জন্য পাওয়ারফুল কারো প্রয়োজন ছিল। রেড ডেভিলস এবং পয়জন সৌল এর সংকরায়ন এ আমরা আমাদের গ্রহে নতুন শক্তিশালী একজনকে সৃষ্টি করি এবং তার সাথে তোমার সংমিশ্রণ ঘটাই। যার ফলে তাইসনের চেয়েও তুমি অনেক বেশি পাওয়ারফুল। তাইসন যাতে কখনোই আমাদের জন্য পথের কাঁটা হয়ে না দাঁড়ায়, সেজন্য আমরা চাচ্ছি ওর বিনাশ ঘটুক।
বুঝলাম। কিন্তু এ কাজের জন্য আমাকেই কেনো বাছাই করলে তোমরা?
কারণ তোমার ভিতরের অনুভুতি নামক জিনিসটি খুব কম। এই যে আমার সাথে কত ঠান্ডা মাথায় কথা বলছো! এ জায়গায় অন্য কেউ থাকলে ভয়ে হার্টফেইল করতো। আমাদের এরকম একজন জীবন্ত লাশের দরকার ছিলো। আমরা বেশ অনেক দিন ধরেই তোমার উপরে নজর রেখেছিলাম। তারপর যখন সুইসাইউ করতে গেলে, তখন তোমাকে অর্ধমৃত অবস্থায় উদ্ধার করেছি।
তোমার মস্তিষ্কের ভিতরের খারাপ চিন্তাশক্তির দিক কে তোমাকে দিয়েই খুন করিয়েছি, সবশেষে তোমার ভিতরে রেড ডেভিলস এবং পয়জন সৌলের শক্তি দিয়েছি। কিন্তু তুমি যদি অন্য মানুষের দেহ থেকে শক্তি সঞ্চয় করো, তবে তার ভেতরকার ডার্কনেস এসে তোমার মস্তিষ্কের ডার্কনেস কে জাগিয়ে তুলবে, যাকে তুমি হত্যা করেছিলে। তখন তোমার এ শক্তি তুমি খারাপ কাজে ব্যাবহার করতে শিখে যাবে।
স্বাভাবিকভাবে জীবন যাপন করতে পারবে না। আমি চাচ্ছি তুমি বেঁচে থাকো, ভালো থাকো, আমার কথা শুনে চলো। আমি তোমাকে আমাদের এজেন্ট বানাতে চাই। আমাদের হেলাক্স গ্রহের সকল ডেভিলসদের পুনরুজ্জীবিত করতে আমাদের অনেক জীবনীশক্তির দরকার, যেটা তোমার সাহায্যে আমরা সবচেয়ে বেশি পাব। সেসব নিয়ে পরে ভাবা যাবে। আপাতত তাইসন কে শেষ করো।
তাইসনের তাণ্ডব
হঠাৎ করেই বাসার লাইট জ্বলে উঠলো। চারপাশে কোথাও কেউ নেই। শ্রাবণ ডান হাত টা উঠিয়ে তার চোখের সামনে ধরে আস্তে আস্তে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখতে শুরু করলো! এই হাত, এই শরীরের ভিতরে তাহলে ডেভিলস এর বসবাস। অনেকটা অদ্ভুত লাগে সবকিছু, তবে তাইসনের মায়ে যেহেতু রানী ছিলো এবং তার বংশধররা রেড ডেভিলস ও পয়জন সৌলদের উপর অত্যাচার, তাই তাইসনের ভেতরেও একটা রাজকীয় এবং অত্যাচার করার মস্নেহাব রয়েছে।
তাইসনের দ্বারা পুরো পৃথিবীর ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা ও প্রবল। সব কিছু ভেবে তাইসন কে মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয় শ্রাবণ।
পরদিন সকালের খবরের কাগজে ছাপা হয় এক ভয়ানক খবর। রাজধানী শহরের বিভিন্ন স্থানে প্রায় পঞ্চাশ জন সিভিল পুলিশের লাশ পাওয়া গিয়েছে। এদের মধ্যে কারো গায়ে কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই। তবে তিনজনের দেহের চামড়া শুকিয়ে হাঁড়ের সাথে লেগে গিয়েছিলো একদম। একজন প্রত্যক্ষদর্শী পুলিশ জানায় সবুজ রক্ত বিশিষ্ট এলিয়েন এ খুন গুলো করেছে। তার গায়ের রক্ত থেকে প্রচন্ড ঝাঁঝালো গন্ধ আসে।
তবে এ কথাটা তেমন কেউ ই বিশ্বাস করতে চাইলো না, আবার একদম উড়িয়েও দেয়া গেলো না। এতগুল প্রশাসনের মানুষের একসাথে মারা যাওয়াটা যে অস্বাভাবিক সেটা সবাই ই বুঝতে পেরেছে। চায়ের কাঁপে চুমুক দিতে দিতে স্নেহাও পড়ছিলো খবরের কাগজটি। তার কাছে বিষয়টি তেমন বিশেষ কিছু না। কিন্তু শুঁকিয়ে যাওয়া তিনটি লাশের ছবি দেখে একটু খটকা লাগে তার।
সারা দেশে রুলস জারি হয়ে গিয়েছে। রাত ১০ টার পর কেউই বাইরে বের হতে পারবে না। বাইরে দেখলেই তাকে সরাসরি ক্রসফায়ার করে মারা হবে।
বেসিনের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছে শ্রাবণ। বুকের ডান পাশে ফুটে ওঠা বাঘের মুখের মত জায়গাটা থেকে হালকা হালকা ধোঁয়া বের হচ্ছে। নিজের দেহকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে থাকে সে। আগের চেয়ে বেশ প্রশস্ত বক্ষ, হাত পায়ের গড়ণ দৃঢ় , আয়নার নিচের শেল্ফ থেকে একটা ব্লেড নিয়ে হাতের বাম হাতের শিরার উপরে একটা টান দিতেই গলগল করে বেড়িয়ে আসে ঘনো সবুজ রক্ত। রক্তের ফোঁটা যেখানে পরে সেখান থেকেই ধোঁয়া বের হতে শুরু করে।
প্রথমবারের মত শ্রাবণ নিজে নিজেকে বেশ শক্তিশালী ভাবা শুরু করে।
তার মুখ থেকে অস্পষ্ট স্বরে বের হয়ে আসে,
“Yes, I am feeling the PoWer.”
সবার যেখানে শেষ, শ্রাবণ ও স্নেহার সেখানে শুরু। পুরো রাজধানীতে সসস্ত্র সেনাবাহিনী নামিয়ে দেয়া হয়েছে।
এদিকে শ্রাবণের ফ্লাটের মূল গেটে তালা ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে রাত দশটার সময়ই। কালো হুডি গায়ে চাপিয়ে ছাদে চলে যায় শ্রাবণ। এই সেই ছাদ যেখান থেকে মৃত্যুর জন্য শ্রাবণ ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো। আজ ও সে ঝাঁপ দিবে কিন্ত মৃত্যুর জন্য নয়। এক বুক নিশ্বাস নিয়ে একটু দৌঁড়ে এসে ছাদ থেকে সোজা নিচের দিকে ঝাঁপ দেয় শ্রাবণ। অভিকর্ষণ এর টানে প্রচন্ড গতিতে নিচের দিকে পড়লেও পায়ের উপরে ভর দিয়ে অবতরণ করতে কোন রকমের সমস্যা হয়না তার। বাসার গলি পেরিয়ে সরাসরি মেইন রোডে না উঠে ছোট বড় বিল্ডিং এর গা ঘেঁষে আড়ালে আড়ালে এগুতে থাকে শ্রাবণ। হঠাৎ তার চোখে পরে টহলরত একজন সসস্ত্র সেনাসদস্য দিকে।
শক্তি বাড়াতে তাইসনের ধ্বংসলীলা
রাস্তা দিয়ে হেঁটে আসছে স্নেহা।
আশ্চর্য! এখানে তো টহলরত সেনাবাহিনী থাকার কথা। তবে রাস্তাঘাট এমন ফাঁকা কেনো? তাহলে কি সব কিছুই ছিলো মানুষকে ভয় দেখিয়ে ঘরে বন্ধ করে রাখার বুদ্ধি! এতক্ষণে অন্তত সাত আটজন মানুষ তার খুব দরকার ছিলো! হাঁটতে হাঁটতে আরো সামনে আগায় সে। হঠাৎ তার চোখ পরে রাস্তার পাশেই পরে থাকা একজন সেনা সদস্যের নিস্তেজ দেহের উপরে। সাথে সাথে সেখানে ছুটে যায় সে। লাশটার শরীর শুকিয়ে একদম কঙ্কালের মতো হয়ে আছে।
একটু দূরর আরো একটি লাশ, তারপরে আরো, স্নেহার মাথা খারাপ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়। তার এখন মানুষ দরকার। জলজ্যান্ত মানুষ। কিন্তু এদিকে সব লাশ কেনো! মৃত্যুপুরীর মত নিস্তব্ধ হয়ে পরে আছে শহরটি।
হঠাৎ করে বুট জুতোর খট খট করে হেঁটে আসার শব্দ শুনে পিছনে ঘুরে তাকায় স্নেহা।
আগ্নেয়াস্ত্র হাতে নিয়ে রাস্তার মাঝে দাঁড়িয়ে আছে এক সেনা সদস্য।
স্নেহাকে উদ্দেশ্য করে সে নিজ থেকেই বললো,
“কাউকে খুঁজছেন”
এতক্ষণ রাগে মাথার চুল ছিড়তে থাকা স্নেহার মুখে হাসি ফুটে! এইতো, সে পেয়ে গেছে তরতাজা মানুষ। ঘাড় বাঁকিয়ে হাসিমুখে তার দিকে এগিয়ে যায় স্নেহা।
স্নেহার চোখের সাদা অংশ পুরোপুরি কালো হয়ে যায়। দু হাতের আংগুলের চারপাশে কালো ধোঁয়া খেলা করতে থাকে। আস্তে আস্তে ক্যাপ পরিহিত যুবক ছেলেটির খুব কাছে চলে আসে। স্নেহার কান নাক ও মুখ থেকে কালো ধোয়া বের হয়ে ছেলেটির চারপাশ ঘিরে ফেলে। পুরো অন্ধকার গ্রাস করে নেয় ছেলেটিকে, তার শরীর কালো ধোঁয়ার আড়ালে ঢাকা পরে যায়।
সেই কালো ধোঁয়ার ভিতরে হঠাৎ ই দপ করে জ্বলে উঠে সবুজ দুটি চোখ, একটি দৃঢ় হাত এসে স্নেহার গলা চেপে ধরে তাকে মাটি থেকে এক ফুঁট উপরে উঠিয়ে ফেলে।
সাথে সাথেই স্নেহার শরীর থেকে কালো একটি অবয়ব বের হয়ে যায়। আশেপাশের সব কালো ধোঁয়া সেই অবয়বে গিয়ে জড়ো হয়ে তাইসনের দেহ সৃষ্টি করে। স্নেহা তখন পা ছুড়ে ছটফট করছে। হাতটি স্নেহার গলা ছেড়ে দিয়ে তাইসনের দিকে এগিয়ে যায়।
তাইসনের মুখে একটা ঠান্ডা হাসি। সে পিছু হটছে না।
ডার্ক ও রেড ডেভিলস
শ্রাবণ তাইসনের কাছাকাছি গিয়ে তাকে আঘাত করার চেষ্টা করে, তার পরেই শ্রাবণ বুঝতে পারে তাইসনকে আঘাত করা আর বাতাসে আঘাত করা একই কথা। তাইসনের উপর কোনো আঘাতের প্রভাব পরবে না।
হাসতে হাসতে তাইসন বলে,
“আমি তোমর উপরে অনেক রেগে আছি। আমার শিকারে ভাগ বসানোর অধিকার আমি কাউকে দিবনা। আমার শক্তি সম্পর্কে তোর কোন ধারণা নেই শ্রাবণ। আমি ফিরে আসবো, তোর মৃত্যু আমার হাতে লেখা। তুই শুধু অপেক্ষা কর। তাইসন গিয়ে স্নেহার শরীরে প্রবেশ করে স্নেহাকে হাওয়ায় ভাসিয়ে নিয়ে যায় শ্রাবণের চোখের আড়ালে।
শ্রাবণ তার ভুল বুঝতে পারে, স্নেহার উপর রাতে হামলা করে তাইসন কে আটকানো যাবে না। তাইসন দিনে আলোর জন্য বাইরে আসতে পারবে না। তখন স্নেহাকে পুড়িয়ে ফেললেই ও মারা যাবে স্নেহার সাথে। হাতের এতটা কাছে পেয়েও কিছু করা গেলো না, আফসোস করতে থাকে সে। কিন্তু ইতিমধ্যে শ্রাবণ নিজে বুদ্ধি খাটিয়ে এ এলাকার টহলরত সেনা বাহিনীর প্রায় সবার শক্তি ই শুষে নিয়েছে। যদিও শ্রাবণকে নিষেধ করা হয়েছিলো! কিন্তু শ্রাবণ নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারে নি, পানির তেষ্টার মত শক্তি শুষে না নিতে পারলেও যে ভীষন অতৃপ্তিতে ভুগতে হয়!
পরদিনের খবরে সারা দেশ ভয়ে কাঁপতে শুরু করলো, ঢাকায় টহলরত সেনাবাহিনীদের বড় একটি অংশ মৃত অবস্থায় শুকিয়ে পরে আছে যেখানে সেখানে। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যাবস্থাও তেমন কোন কাজে দেয় নি। দেশজুড়ে এক অদ্ভুত আতংক ছড়িয়ে পরে। বাংলাদেশ সরকার ইন্টারন্যাশনাল হেল্প এর জন্য প্রেস কনফারেন্স করে।
সিসি ক্যামেরায় মাত্র দুটো ফুটেজ ধরা পড়েছে। দুটো ফুটেজেই দেখা যায় একজন সেনাসদস্য অন্য একজন সেনা সদস্যের সামনে গিয়ে কিছুক্ষন কথা বললো। তারপর তার হাতটা ধরে বুকের ডান পাশে লাগাতেই, কিভাবে দেহটা চোখের সামনে চুপসে গেলো!
রহস্যময় ঘটনা তদন্ত
বারবার দেখার পরে ভিডিওটা পজ করে বর্ণ চায়ে চুমুক দিতে দিতে বলে,
“বুঝেছিস তুরাণ! এই লোকটি সেনাবাহিনীর কেউ না। প্রথমে যে কোন ভাবে একজন কে ঘায়েল করে তার ইউনিফর্ম পরিধান করে কাজটাকে আরো সহজ করে নিয়েছে।”
জহির আংকেল মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলে সেটা কিভবে সম্ভব!
তুরাণ উত্তর দেয়, “যে লোকটা হেঁটে এল তার হাঁটার স্টাইল মোটেই সেনাবাহিনীদের হাঁটার মত না। এছাড়াও তার গায়ে দেয়া ইউনিফর্ম টা তার থেকেও একটু লম্বা মনে হচ্ছে। যেমনটা হওয়ার কথা নয়।
বর্ণ হাত থেকে টেবিলে চায়ের কাপ রাখে। পায়ের উপর পা রেখে বলে, সাবাশ!
সমস্যাটা কিন্তু খুব ই গুরুতরো। কি বলিস? মাঠে নেমে যাবো নাকি!
তুরাণ উৎসাহের সাথে বলে অবশ্যই স্যার! কেনো নয়!
বর্ণ ও তুরাণ দুজনেই এরপর জহির আংকেলের দিকে তাকায়। সে তখন ঢোক গিলছেন, মনে মনে প্রচন্ড ভয় পেলেও চক্ষুলজ্জার জন্য কিছুতেই বাইরে প্রকাশ করছেন না। কোন রকম কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললেন, এ আর এমন কি রহস্য! এই ব্যাটাকে ঘায়েল করার জন্য আমি একাই যথেষ্ট। চলবে….
পরের পর্ব- এলিয়েন রহস্য পর্ব ৯ – এলিয়েন মানবের গল্প