এলিয়েন রহস্য পর্ব ৬ – এলিয়েন মানবের গল্প: গত পর্বে আমরা জেনেছি যে শ্রাবণ ও তাহির নিজের ভাই এবং তাইসন সেই অদ্ভুত ধর্ষিত মেয়ের ছেলে যার মহাজাগতিক শক্তি আছে। আজ দেখার পালা শ্রাবণের সাথে কি ঘটে? কেনইবা শ্রাবণ বিদঘুটে সব স্বপ্ন দেখছে? চলুন রহস্যভেদ করি।
তাইসনের সামনাসামনি শ্রাবণ
শ্রাবণের অনুরোধে তাহির স্নেহাকে নিয়ে বাসার ভিতরে চলে যায়।
স্নেহার পুরো ব্যাপারটা ভালো লাগছিল না। শ্রাবণ আস্তে আস্তে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে যায় মহলের ছাদ থেকে। তাইসন দিঘীর পাড়ের পথ দিয়ে চলে গিয়েছিল দূর থেকে দূরে চোখের আড়ালে। আসার সময় ও হয়ত ওখান থেকেই আসবে। শ্রাবণ ও দিঘীর পাড়ের রাস্তায় গিয়ে পায়চারি করতে থাকে। আজ হয় এসপার নয় ওসপার। শ্রাবণের মনোবল এখন আর আগের মত দুর্বল নয়, তার মনের ভিতর প্রচন্ড আত্মবিশ্বাস চলে আসে। তার বাবা আছে, মা আছে। এতদিন নিজেকে যে পিতৃপরিচয়হীন সন্তান ভাবত সেটা সে নয়। তবে শ্রাবণ আজ যতটা খুশি ঠিক তার চেয়েও বেশি মর্মাহত এবং রাগান্বিত।
শ্রাবণ মনে মনে ভাবছিল, তার বাবা মায়ের প্রতি হওয়া অবিচারের প্রতিশোধ সে নিয়েই ছাড়বে। তাইসনের কোন অধিকার নেই এই গ্রামের মেয়েদের ধরে এনে ধর্ষন করা, নিজের দাসী বানানো। তাইসনের সৃষ্ট শহরে এই গভীর রাতে কাজ করছে হাজার হাজার মস্তিষ্কহীন মানুষ, আর তার ভিতর দিয়েই মনে ক্ষোভ দু:খ নিয়ে আস্তে আস্তে ঘোরাফেরা করতে থাকে শ্রাবণ। অপেক্ষা তাইসন কখন ফিরবে।
এভাবে বেশ কিছুক্ষণ কেটে যাওয়ার পর অনেক দূর থেকে ভেসে আসে একটি ঘোড়ার বিকট চিৎকারের শব্দ। শ্রাবণ বুঝতে পারে তাইসন চলে এসেছে। এটা ভাবা মাত্রই তার শরীরের ভেতরে অন্যরকম একটা ফিলিংস শুরু হয়। নিজেকে আস্তে আস্তে ভীষণ হালকা অনুভব করতে শুরু করে সে। আশেপাশের চারপাশের সবকিছু এই গভীর রাতেও স্পষ্ট দেখতে পায় শ্রাবণ। এমন তো আগে কখনো লাগে নি তার।
তাইসনের খুরের জোড়ালো আওয়াজ জানান দিচ্ছে সে খুব কাছেই চলে এসেছে। শ্রাবণ ও সোজাসুজি তাইসনের পথের মাঝখানে গিয়ে দাঁড়ায়। অনেক দূর থেকেই তাইসন দেখতে পায় কোন এক জন্তুর মত কিছু তার রাস্তার মাঝে দাঁড়িয়ে আছে। চোখ দুটি টাটকা সবুজ। এমনটা তো আগে কখনো হয় নি, তার রাস্তা আগলে অন্য কোন কিছু দাঁড়ানোর সাহস পেয়েছে। তাইসনের পায়ের খুরগুলো যেখানে পরে তার আশেপাশে বেশ কিছু অংশ জুড়ে সমস্ত জিনিস দুমড়ে মুচড়ে ধুলোয় মিশে যায়। তাইসন ব্যাপারটা নিয়ে মাথা ঘামায় না বেশি। মনে মনে ভাবে সে জন্তটাকে পা দিয়ে পিষে চলে যাবে। বেশ অনেকটা কাছে আসার পরে তাইসনের ভুল ভাংগে। এটা কোন জন্তু নয়। দাঁড়িয়ে আছে একজন মানুষ। সে আর কেউ নয়।
শ্রাবণ। কিন্তু শ্রাবণের চোখগুলো একরকম অদ্ভুত সবুজ কেন তা ভেবে পাচ্ছেনা তাইসন। গতি বাড়িয়ে দেয় সে। শ্রাবণকে এখানেই শেষ করে দেয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। ভবিষ্যতে হয়ত তার পথের বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে একমাত্র এই শ্রাবণই। দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে শ্রাবণের একদম সামনে চলে আসে তাইসন। তার শক্ত এবং বিশাল পা দিয়ে শ্রাবণকে পিষে ফেলার জন্য শ্রাবণের শরীরের উপর বেশ জোরে ডান পা ফেলে। শ্রাবণ তার অবস্থান থেকে সামান্য একটু সরে যায়, যার ফলে তাইসনের পায়ে পিষ্ট হওয়া থেকে বেঁচে যায় সে।
তাইসন Vs শ্রাবণ
তাইসনের পা যখন মাটি স্পর্শ করে তখন খপ করে ওর বিশাল একটি পা দু হাত দিয়ে শক্ত করে ধরে ফেলে শ্রাবণ। অসম্ভব দ্রুত গতিতে ছুটতে থাকা তাইসনের ঘোড়ার দেহ হঠাৎ এ গতি জড়তার কারণে হুমড়ি খেয়ে উলটো হয়ে সামনে আছড়ে পরে। পা তখন ও শ্রাবণ এর হাত থেকে মুক্ত হয়নি। তাইসন এতটাই জোড়ে আছাড় খেয়েছিল যে ঐ জায়গার মাটি বেশ জোড়েই কেঁপে উঠে। তাইসনের পিঠে থাকা টাকার বস্তা পিঠ থেকে পরে ছিড়ে যায়। বাতাসে ধুলোর সাথে উড়তে থাকে হাজার হাজার টাকার নোট।
বেশ কয়েক সেকেন্ড পরে শ্রাবণের হাতের ভিতরে থাকা তাইসনের পা আস্তে আস্তে ধোঁয়ায় মিলিয়ে যায়। ঘোড়াটির সামনের অংশ থেকে কালো ধোঁয়া উড়ে এসে শ্রাবণের সামনে জড়ো হতে থাকে। আস্তে আস্তে সেখানে স্পষ্ট হয় তাইসনের মানুষের শরীর।
শ্রাবণকে স্পষ্টভাবে জিজ্ঞেস করে, তুমি কে?
শ্রাবণের চোখগুলো তখনো প্রচন্ড পরিমানে সবুজ। সামনের শিকারী দাঁতগুলো খুব সামান্য একটু বড় হয়ে গিয়েছে। সে মেঘের মত গর্জনের শব্দে উত্তর দেয়,
‘তুমি যদি উগ্রতার পরিচয় দাও, তবে আমি আমার ধ্বংসের পরিচয় দিব।’
আমাকে তোমার ধ্বংস ভেবে নিও।
তাইসন শ্রাবণের দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে, তুই আমাকে থ্রেট দিচ্ছিস! এর পরিণতি হবে তোর ভয়াবহ মৃত্যু শ্রাবণ।
বলেই শ্রাবণের সামনে থেকে ধোঁয়ায় মিশিয়ে যায় তাইসন। হঠাৎ চোখের সামনে থেকে হারিয়ে যাওয়ায় শ্রাবণ এদিক সেদিক তাকিয়ে তাইসনকে খুঁজতে থাকে। কিন্তু চারদিকে তখন শুধুই অন্ধকার।
হঠাৎ পেছন থেকে মারাত্মক একটা আঘাত অনুভব করে শ্রাবণ। অপ্রস্তুত অবস্থায় পেছন থেকে কেউ সর্বশক্তি দিয়ে আঘাত করলে সেটা হয় খুবই ভয়াবহ। মাথার উপরের আঘাত লাগলে অনেকেই টাল সামলাতে পারে না। শ্রাবণ ও মাটিতে লুটিয়ে পরে, কিন্তু শ্রাবণের দেহ মাটি স্পর্শ করার আগেই তাইসন ধোঁয়া হয়ে সেখানে উড়ে গিয়ে ঘোঁড়ার পায় সৃষ্টি করে শ্রাবণের কোমড় বরাবর আবারো অনেক জোড়ে আঘাত করে।
এবারের আঘাতটা ছিল খুবই মারাত্মক। একটা কোলবালিশের মাঝ বরাবর কেউ সর্বশক্তি দিয়ে কিক করলে যেমন হয় শ্রাবণের অবস্থাটাও ঠিক তেমন ই হলো। উড়ে গিয়ে ছিটকে পরলো দিঘীর পারে লাগানো একটি গাছের উপর। শ্রাবণ প্রায় নিথর হয়ে মাটিতে লুটিয়ে আছে। তাইসন এবার আবার সেই পুরোনো দানবীয় ঘোড়ায় রূপ নেয়। শ্রাবণের দেহ নিয়ে ফুটবলের মত খেলতে খেলতে দিঘীর মাঝে ফালায় সে।
বাম পা শ্রাবণের গাল বরাবর রেখে দিঘীর তলদেশের মাটির সাথে চেপে ধরে তাইসন। শ্রাবণের মাথা পানির তলদেশের কাঁদার ভিতরে প্রায় এক হাতের মত দেবে যায়। তাইসন তার পা শ্রাবণের গালের উপর বার বার ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে পিষতে থাকে। অনেকটা পা দিয়ে পিষে যেভাবে পিঁপড়া বা কোন পতঙ্গ মারা হয় ঠিক সেভাবে। তাইসনের শক্ত খুরের এমন আঘাতে শ্রাবণের নরম গাল কেটে রক্ত বের হয়ে আসে। রক্তের রঙ লাল নয়। সবুজ।
তাইসনের পরাজয়
শ্রাবণের রক্ত দিঘীর পানিতে মেশা মাত্রই দিঘীতে ফুটে থাকা দুর্লভ নীল পদ্ম নেতিয়ে পরে আস্তে আস্তে দিঘীর জলে বিলীন হয়ে যায়। পানিতে থাকা মাছগুলো সব মারা গিয়ে উপরে ভেসে উঠে। দিঘীর জলে বসবাস করা অন্যান্য প্রানী দের একটাও আর বেঁচে থাকে না। তাইসনের গায়ে প্রচন্ড জ্বালাপোড়া শুরু হতে থাকে। সে শ্রাবণের উপর পা সরিয়ে এক লাফে তীরে উঠে আসার চেষ্টা করে। কিন্তু ততক্ষণে শ্রাবণ এক হাত দিয়ে তাইসনের পা ধরে ফেলেছে।
এরপর তাইসন একলাফে তীরে উঠে আসার সাথে সাথে শ্রাবণ ও তাইসনের সাথে উঠে আসে। দিঘীর পানি তাইসনের গায়ে লেগে থাকায় তার শরীর জ্বলে যাচ্ছিল। সে পাগলের মত মাটিতে গড়াগড়ি খেতে শুরু করে। শ্রাবণ তার কাদামাখা গালের রক্তে নিজের দু হাত ভিজিয়ে তাইসনের টুঁটি চেপে ধরে। সাথে সাথে তাইসন বিকট চিৎকার জুড়ে দেয়। হেমন্তপুর গ্রাম সে চিৎকারের সাথে সাথে পুরো কম্পিত হয়ে উঠে। প্রতিটা ঘুমন্ত মানুষ তাইসনের চিৎকারের শব্দে দরজা খুলে বাইরে নেমে উল্টাপাল্টা ভাবে দৌড়াদৌড়ি করতে শুরু করে। দিশেহারা হয়ে পরে তারা সবাই। কে কোথায় ছুটছে কেউ কিছু জানে না। ফ্যাঁসফেসে গলায় তাইসন শ্রাবণকে বলে, আমার সাথে তোমার শত্রুতা কি, প্লিজ আমাকে ছেড়ে দাও।
শ্রাবণ উত্তর দেয়,
আমার বাবা মা এবং এই গ্রামের প্রতিটা লোকের সাথে তোমার করা অপকর্মের শাস্তি পাচ্ছ তুমি।
তাইসন উত্তর দেয়, “এতটা বছর আমার জায়গায় তুমি ছিলে। তুমি নিজেকে ভাবতে তোমার বাবার ঠিক নেই। ব্যাপারটা কেমন লাগতো তা তুমিই ভালো জানো শ্রাবণ। আমি এক পরিচয়হীন জারজ সন্তান তা আমি জেনেছি মাত্র ১৩ বছর বয়সে। তারপর আমার ভিতর ক্রোধ, রাগ, হিংসে কাজ করেছে এ গ্রামের মানুষগুলোর প্রতি।”
শ্রাবণ তার দু হাত সরিয়ে নেয় তাইসনের গলা থেকে। একটা কাগজ যেমন আস্তে আস্তে আগুনে পুড়ে ছাই হতে থাকে, তাইসনের দেহও তেমনি সবুজ রঙের রক্তে ক্রমশই পুড়তে পুড়তে শেষ হচ্ছিল। তাইসন শ্রাবণের চোখের সামনেই আস্তে আস্তে বাতাসে মিলিয়ে যায়। হঠাৎ চারদিকে মৃদু গুঞ্জন আসে। তাইসনের রাজ্যে কাজ করা লোকগুলো তাদের চিন্তাশক্তি ফেরৎ পায়।
তারা এখানে কোথায় আছে কেনো আছে তা নিয়ে নিজেদের ভিতরে আলোচনা করতে শুরু করে। চারদিকে একটা হট্টোগোল লেগে যায়। কেউ কেউ মাটিতে ছড়িয়ে থাকা টাকা কুড়াতে শুরু করে। তাইসনের মহল থেকে বেরিয়ে আসতে শুরু করে হাজার হাজার বিবিস্ত্র মেয়ে। গ্রামের এ মেয়েগুলোকেই তাইসন দাসীতে পরিণত করে রেখেছিল। শ্রাবণ আস্তে আস্তে শ্বেত পাথরের দিঘীর ঘাটে যায়।
তার শরীরের পয়জোনাস ব্লাড। বিষাক্ত হয়ে আছে পুরো দিঘীর পানি। সে পানিতে নেমে ডুব দিয়ে গোসল করে শ্রাবণ।
সুন্দর নীল পদ্মটা আর স্নেহাকে দেয়া হলো না। যুদ্ধ সবসময় সুন্দর জিনিসগুলোকে ধ্বংস করে। শ্রাবণের বুকের উপরে থাকা বৃত্তাকার সাইনটি আরো দৃঢ় হয়েছে।
দিঘীর জলে গোসল করে উঠে শ্রাবণ তাইসনের বানানো মহলের দিকে হাঁটা শুরু করে। শ্রাবণ মনে মনে বলে, আই এম শ্রাবণ। আই এম দ্যা পয়জন কিং। গালের কাটা ক্ষত পরখ করার জন্য আঘাতপ্রাপ্ত স্থানে হাত বুলিয়ে দেখে শ্রাবণ, ক্ষতটা আর নেই। সেরে গিয়েছে একদম।
সেদিন থেকেই তাইসনের আর কোন খোঁজ পাওয়া যায় নি।
নতুন দিগন্তের সূচনা
হেমন্তপুরের লোকজন এই ঘটনার পুরোটাই তাহিরের কাছ থেকে জানতে পারে। তারা সিদ্ধান্ত নেয় তাইসনের এ রাজপ্রাসাদ যেহেতু অন্যদের জমি অবৈধ ভাবে দখল করে বানানো হয়েছিল, সুতরাং এটি ভেংগে ফেলা হবে। এর একমাত্র বিরোধিতা করে স্নেহা। সে চায় না এত সুন্দর একটি মহল ভেংগে ফেলা হোক। স্নেহা চায় ইতিহাসের অনন্য নজির হিসেবে মহলটি অক্ষত থাকুক। কিন্তু স্নেহার মতামতের গুরুত্ব কারো কাছেই নেই।
পুরোনো সেই তিনতলা বাসাটায় থাকার জন্য উঠে তাহির। প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস ছাড়া ঐ মহল থেকে আর তেমন কিছুই নিয়ে আসে নি সে। মহলের সব কিছু হেমন্তপুরের গ্রামবাসীরা ইচ্ছে মত লুট করছে। দেখতে দেখতে চোখের সামনে সুন্দর সাজানো এক মায়াপুরি পরিণত হয়ে গেল কিছু বিশৃঙ্খল ভগ্নাংশে।
শ্রাবণ তাহিরের কাছে বেশ কিছুদিন থাকে আরো। তারপর বিদেয় নেয়। শ্রাবণ এখন আর আগের মত নেই। বেশ ফুরফুরে একটা মেজাজে থাকে সব সময়। তবে স্নেহার ভিতরে অদ্ভুত একটা চেঞ্জ এসেছে।
আজকাল সে খুব গম্ভীর থাকে।
মাপ কাঠি করে প্রতিটা কথা বলে।
শ্রাবণের অবশ্য এ বিষয়ে কোন চিন্তা বা মাথাব্যথা নেই। তবে তাইসনের জন্য একটু হলেও খারাপ লাগা কাজ করে তার। শ্রাবণ নিজেকে যখন পিতৃপরিচয়হীন ভেবেছিল তখন তার মাঝে কাজ করতো প্রচন্ড পরিমানে দু:খ, কষ্ট, হতাশা।
আর এই সেম জিনিসটাই হয়ত তাইসন কে প্রতিশোধ পরায়ন বানিয়েছে।
একটা কথা আছে, দণ্ডিতের সাথে, দণ্ডদাতা কাঁদে যবে সমান আঘাতে, সর্বশ্রেষ্ঠ সে বিচার।
শ্রাবণের মনে হচ্ছিল, সে কোথাও একটা যেন জিতে গিয়েও হেরে গিয়েছে। কেমন একটা অনুশোচনা কাজ করছিল তার মাঝে। সব কিছু এখানেই শেষ নয়। তার নিজের ভিতরে কোথা থেকে পাওয়ার আসলো সেটাও উদঘাটন করতে হবে তার।
স্নেহাকে নির্যাতন
দীর্ঘ জার্নি শেষে শ্রাবণ ও স্নেহা ঢাকায় পৌঁছে।
স্নেহা আর বাস থেকে নেমে বোরখা পরে নি। সে সরাসরি তার বাসার ঠিকানার জন্য বাস নেয়। শ্রাবণকে বলে সে যেন সাবধানে গিয়ে তার নিজের বাসায় পৌঁছে। স্নেহার কাছ থেকে এমন একটা কথা শুনতে হবে আশা করেনি শ্রাবণ। অনেকটা মন খারাপ করেই সে নিজের মত বাসায় ফিরে আসে।
এদিকে স্নেহাকে না পেয়ে স্নেহার বাবা অসুস্থ হয়ে পরেছিলো সেদিনই। স্নেহার বাবার বন্ধু টাকা না পেয়ে সবার কাছে স্নেহার ব্যাপারে আজেবাজে কথা বলে বলে বেরিয়েছে। ভিডিও ক্লিপটিও ততদিনে বাংলাদেশে আস্তে আস্তে ভাইরাল হয়ে যায়।
প্রভাবটা গিয়ে স্নেহার ভাইদের উপরেও পরে। তারাও লজ্জায় মানুষের সাথে কথা বলতে পারে না। তারা বুঝতে পারে এর চেয়ে পঞ্চাশ লক্ষ টাকা দিয়ে বিয়ে দিয়ে দেয়টাই অনেক ভাল ছিল।
বিয়ের আগে পালানোর বদনাম টা স্নেহার পরিবারকে বাজে ভাবে ছোট করে সবার কাছে। তার উপর ভিডিও ক্লিপ তো আছেই। বিয়ের কার্ড ও বিলি করা হয়ে গিয়েছিল। অনেকটা একঘরের মত হয়ে যায় স্নেহার পুরো পরিবার। স্নেহা তার বাসার সামনে নামে রিকশা থেকে। এক নজরে চোখ বুলায় তাদের নিজেদের পাঁচতলা বিল্ডিংটায়। তারপর হনহন করে হেঁটে ভিতরে ঢুকে যায়।
দাঁড়োয়ান স্নেহাকে দেখে আগেই ছুটে গিয়ে স্নেহার পরিবারকে জানিয়েছে। খবরটা শুনে সবার আগে স্নেহার মেঝ ভাই আঁটসাঁট বেঁধে নিচে নামে। পরিবারের মুখে চুনকালি মাখানোর অধিকার ওকে কে দিয়েছে, আজ ওকে উচিৎ শিক্ষা একটা দিতেই হবে। স্নেহার মেঝ ভাইয়ের পেছন পেছন আসে ছোট ভাই এবং দুজনের স্ত্রীও। দো’তলার সিঁড়িতে অনেক দিন পরে দেখা হয় স্নেহার মেঝ ভাই এবং স্নেহার। দেখা হতে দেরী। ঝাঁপিয়ে পরে স্নেহার চুল মুঠি করে ধরতে দেরী হয়না তার।
ঘটনাটার জন্য স্নেহা প্রস্তুত ছিল না। তার চোখে ভয় বা উৎকন্ঠাও ছিল না। হঠাৎ স্নেহার মেঝ ভাই এসে আক্রমণাত্মক ভাবে স্নেহার চুল ধরে টান দেয়ার সাথে সাথেই ঠাস করে বাম হাত দিয়ে গাল বরাবর বেশ সজোরে একটা চড় বসিয়ে দেয় স্নেহা। চড় খাওয়ার সাথে সাথে দেয়ালের সাথে মাথা মাথা ঠুকে গিয়ে ওখানেই অজ্ঞান হয়ে পরে থাকে স্নেহার মেঝ ভাই। দাঁড়োয়ান থেকে শুরু করে সবার সামনেই ঘটনাটা ঘটে।
এরপর স্নেহা উপরে উঠে যাওয়ার সময় ওর ছোট ভাইয়ের চোখের দিকে একবার তাকায়। কোন রাগ কিংবা ঘৃণা নয় স্নেহা তার ছোট ভাই এর চোখে শুধু ভয় দেখতে পায়। আর তার ছোট ভাই দেখতে পায় কুচকুচে কালো হয়ে থাকা স্নেহার চোখের মণি। চলবে…
পরের পর্ব- এলিয়েন রহস্য পর্ব ৭ – এলিয়েন মানবের গল্প