সাদিফ শেফার ভালবাসার খুনসুটি

সাদিফ শেফার ভালবাসার খুনসুটি – উনার শীতল শরীরের স্পর্শে আমি কেঁপে উঠলাম। বিয়ের এতো বছর পরেও উনার এই স্পর্শ আমাকে বারবার শিহরিত করে।


মূলগল্প

সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতেই, পায়ের নিচে কিছু চাপ পড়ার কারণে আমি পিছলে পড়ে যেতে যেতে পাশের পিলার ধরে নিজেকে সামলিয়ে নিলাম। নিজেকে সামলিয়ে ঠিক করে নিচে তাকিয়ে দেখলাম, জিনিসগুলো আসলে পারিসার খেলনা।

এইসব দেখে মেজাজটাই গরম হয়ে গেলো আমার। উপরে, নিচে যেদিকে যায় সেদিকেই পারিসার খেলনা চোখে পড়বেই। এই মেয়েটা পুরোই তার বাবা। এতো জিদ তার! মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে ঠাঠিয়ে দুইটি চড় দিই।

খেলনা খেলনা করতে করতে কিছুদিন পর বাড়িটাই একটা খেলনার গোডাউন হয়ে যাবে। প্রত্যেকদিন সাদিফ অফিস থেকে ফেরার সময় উনার মেয়ের জন্যে খেলনা আনবেনই। যার কারণে, পারিসার খেলনার বন্যা বয়ে যাচ্ছে ঘরে। এর একটা বিহিত করতেই হবে আজ। নাহলে, কোনদিন এই খেলনার জ্বালায় আমি পড়ে চিৎ হয়ে যায়, আল্লাহ্ ভালো জানেন।

নিচ থেকে খেলনাগুলো নিয়ে নিলাম আমি খেলনার বক্সে। একটু আগেই সাদিফ এলো অফিস থেকে। তখন পারিসা নিচেই ছিলো। কিন্তু তার বাবাকে দেখে সে নাচতে নাচতে সাদিফের সাথে উপরে চলে এলো।

রুমে গিয়ে দেখি মেয়ে একেবারে গোসল করে তৈরি হয়ে বসে আছে খাটের উপরে।

“বাহ্ বাহ্…আমার মহারানী তো একদম তৈরি হয়ে বসে আছে। নিচে আর উপরে যে খেলনা ছিটিয়ে আছে, সে খেয়াল কি তোমার আছে পারি?” (আমি)

“মা! আমি তোমার ছোট্ট মেয়ে। আমাকে বকছো কেনো?” (পারিসা)

“একটু আগে তোমার এই খেলনার জন্যেই আমার কোমর ভাঙতো।” (আমি)

সাদিফ তখন মাত্রই বাথরুম থেকে বের হলেন। আর সাথে সাথেই তার কড়া জবাব,

“এখনো সে আগের বাচ্চাটি রয়ে গিয়েছো তুমি? দেখে শুনে কি হাঁটা চলা যায় না!”

“আজিব! দোষ আপনার মেয়ের, আর আপনি বকা দিচ্ছেন আমাকে? আসলে… কার সাথে সংসার করছি আমি আল্লাহ্ জানেন।” (আমি)

“পারি মা, যাও নিচে গিয়ে সব খেলনা গুছিয়ে আসো। আর হেল্প লাগলে তোমার দাদীমাকে বলবে।” (সাদিফ)

“ওকে বাবা।” (পারিসা)

সাদিফ এর কথায় পারি নাচতে নাচতে রুম থেকে চলে গেলো।

সাদিফের কথা শুনে আমার গা জ্বলে উঠলো। মেয়ের সামনেও আমার সাথে কিভাবে কথা বলেন উনি। দুনিয়ার সব ভালো লোক একদিকে আর এই সাদিফ জল্লাদ অন্যদিকে।

সাদিফ আমার কাছে আসতে নিলে আমি অন্যদিকে ফিরে গেলাম।

“কি সমস্যা, বউ? অন্যদিকে ফিরলে কেন?” (সাদিফ)

“আমার ইচ্ছে। আপনার কোনো সমস্যা? সবার সামনে তো বকেন, অন্তত মেয়ের সামনে আমাকে ছোট না করলেও পারতেন।” (আমি)

“আমি কই ছোট করলাম? তুই তো এমনিও আমার থেকে ছোট আছিস। আর কতো ছোট হবি!”

কথাগুলো বলেই উনি ঘর কাঁপিয়ে হাসতে লাগলেন।

উনার কথায় আমি “ধেত”বলে চলে যেতে নিলেই উনি আমার হাত টেনে ধরলেন।

“প্রথমে অপমান করবেন, এরপর সোহাগ দেখাবেন! কোন ধরনের কথা এগুলো? আমি এখন এক বাচ্চার মা, তাও কি আপনার আমাকে ছোট মনে হয়!” (আমি রেগে বললাম)
“উফফ, আমার প্রিয়তমা। তুই যখন রেগে যাস তখন তোকে এতো হট লাগে, ইচ্ছে করে….”

সাদিফ আর কিছু বলার আগেই আমি উনার মুখে আমার হাত দিয়ে চেপে ধরলাম।

“অসভ্য। আপনি কি কখনোই সভ্য হবেন না?” (আমি)

“নাহ! আমার বাবুইয়ের জন্যে আমি কখনোই সভ্য হবো না। ইউ নো, আমি তোমার জন্যে কতটা বদমাইশ!”

আমি “উফফ” বলে উনার কাছ থেকে সরতে চাইলেও সাদিফ আমাকে জোর করে উনার বুকের সাথে মিশিয়ে নিলেন।

উনার শীতল শরীরের স্পর্শে আমি কেঁপে উঠলাম। বিয়ের এতো বছর পরেও উনার এই স্পর্শ আমাকে বারবার শিহরিত করে। সাদিফের এমন ভালোবাসায় আমার কঠিন থেকে কঠিন রাগ গলে পানি হয়ে যায়।

লেখা – সালসাবিল সারা

সমাপ্ত

(পাঠক আপনাদের ভালোলাগার উদ্দেশ্যেই প্রতিনিয়ত আমাদের লেখা। আপনাদের একটি শেয়ার আমাদের লেখার স্পৃহা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আমাদের এই পর্বের “সাদিফ শেফার ভালবাসার খুনসুটি” গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম। ধন্যবাদ। )

আরো পড়ূন – আমার প্রেম কাহিনী – সত্য প্রেমের গল্প

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *