না বলা কথা – ভালোবাসার ছোট গল্প কথা

পাশাপাশি বসে আছে সাগর আর তানহা। একঘন্টা ধরে তানহা সাগরকে বসিয়ে রেখেছে কিছু বলবে বলে কিন্তু বলতে পারছে না।
“তানহা কি বলবি বল না। এভাবে আর কতোখন বসিয়ে রাখবি?
” বলছি তো

“এক ঘন্টা যাবত ওয়েট করছি কি বলবি তা শোনার জন্য। আরো কি ঘন্টা খানেক বসে থাকতে হবে

” এমন করছিস কেনো? আমার সাথে একটু থাকলে কি হবে
“তোর সাথে আমি সারাদিনও থাকতে পারবো বাট আমার জন্য ও ওয়েট করছে
” এই ওটা কে?

“গার্লফ্রেন্ড। খুব ভালোবাসি রে ওকে
ভালোবাসি কথাটা শোনার পরেই তানহার বুকের ভেতর মোচর দেয়। চিনচিন ব্যাথা করছে। তানহা সাগরকে প্রপোজ করার জন্য ডেকেছিলো।

” কি রে চুপ করে আছিস কেনো?
সাগরের কথায় তানহার হুশ ফেরে
“হুম বল

” জানিস ও না আমার সাথে কেমন যেনো করে
“কেমন করে

” ভালো করে কথা বলে না। সময় দেয় না। প্রায় সময় কল ওয়েটিং পায়। আমি কিছু বললেই খিটখিট করে।
“তাহলে ছেড়ে দে ওকে

” পারবো না রে। ওকে ছাড়া আমার এক মুহূর্ত চলে না। ও যেমনই হোক ওকে আমার চাই। খুব ভালোবাসি যে ওকে
“সাগর আমার সাথে কাটানো মুহূর্ত গুলো মনে পরে?

“কেনো পরবে না। খুব মনে পরে। সেই ক্লাস ফাঁকি দিয়ে ঘুরতে যাওয়া। স্কুলের ছাঁদে বসে আচার চুরি করে খাওয়া।

হাত ধরে পথ চলা।
একবারও তো আমার পা কেটে গেছিলো তুই কি রকম পাগল পাগল হয়ে গেছিলি মনে হয়ে ছিলো পা টা আমার না তোর কেটেছে। খুব মিছ করি সেই দিন গুলো

” তোর ইচ্ছে হয় না আমার আমার সাথে হাত ধরে হাঁটতে। ঘুরে বেড়াতে

“না রে। আমার সুইটির সাথে থাকতে ইচ্ছে হয়। সারাক্ষণ ওকে দেখতে ইচ্ছে হয়।

তানহার খুব কান্না পায়। দাঁতে দাঁত চেপে কান্না আটকায় তানহা।
” এই তানহা শোন না
“হুম বল

” তুই একটু সুইটিকে বুঝাবি
“আমি
” হুমম। আমার জন্য এইটুকু করতে পারবি না
“তোর জন্য তো জীবনটাও দিতে পারি
” চল

সাগর তানহাকে নিয়ে সুইটির কাছে যায়। সুইটি পার্কের ঘাসের ওপর বসে কারো সাথে ফোনে কথা বলছিলো ওদের দেখে ফোনটা রাখে। সাগর তানহা সুইটির দুপাশে বসে

“সাগর ও কে? নিশ্চয় তোমার নিউ গার্লফ্রেন্ড। গার্লফ্রেন্ড কে সাথে নিয়ে এসেছো। দেখাতে এসেছো তোমার থেকে বেটার কাউকে পেয়ে গেছি

” সুইটি বিশ্বাস করো ও আমার ফ্রেন্ড
“তোমার ড্রামা বন্ধ করো। তোমার সাথে আমার কোনো কথা নাই। তোমার মতো ছেলের সাথে রিলেশন রাখবোই না

সুইটি রেগে উঠে যেতে নেয়। তানহা হাত ধরে আটকায়
” সুইটি তুমি সাগরকে ভালোবাসো?
“মানে

” ভালোবাসো কি না
“হুম বাসি
” যাকে ভালোবাসো তাকে একটু বিশ্বাস করতে পারো না। যানো একটা রিলেশনশিপের মুল ভিত্তি কি বিশ্বাস, ভরসা, আর ভালোবাসা। এগুলোর একটা যদি না থাকে তাহলে সম্পর্কে জরিয়ে লাভ কি।

“আমি ওকে ভালোবাসি কিন্তু বিশ্বাস করতে পারি না।
সাগর কিন্তু তোমায় খুব বিশ্বাস করে তাই তো তুমি ওকে ঠিক মতো টাইম দাও না, ওর সাথে ভালো করে কথা বলো না, কল ওয়েটিং পায় তবুও তোমার প্রতি ওর কোনো অভিযোগ নেই।

কেনো জানে?
সুইটি মাথা নারায় যার মানে ও জানে না
” সাগর তোমায় পাগলের মতো ভালোবাসে বিশ্বাস করে। তুমিও সাগরকে ততোটাই ভালোবাসার চেষ্টা করো যতটা ও তোমাকে বাসে।

আজ সাগর তোমার জন্য পাগলামি করছে বারবার ভালোবাসি বলছে তাই হয়ত তোমার ও কে বিরক্ত লাগছে।

কিন্তু কাল যখন ও চলে যাবে তখন অবসোস করবে। পাগলের মতো খুঁজবে কিন্তু পাবে না। কথায় আছে না “থাকলে কাছে কে আর বোঝে, হারিলে গেলে সবাই খোঁজে” আশা করি এরপর আর সাগরকে কষ্ট দেবে না। আগলে রাখবে।

সাগর হয়ত তোমার কাছে কিছু না কিন্তু একজনের কাছে ও ই তার পৃথিবী। ভালো থেকো
তানহা চলে যেতে নেয় সাগর বলে

“থ্যাংক্স তানহা। আর তুই কি যেনো বলতে চাইছিলি
তানহা পেছন ফিরে একটু মুচকি হেসে বলে

“আমার কথাটা না হয় না বলাই থাক। আজ তোর গল্পটা শুনলাম আমার গল্পটা তোর গল্পের মাঝেই লুকিয়ে আছে। কখনো যদি সময় হয় তাহলে খুঁজে দেখিস।

তানহার কথার মানে সাগর বুঝে না। তানহা চোখের কোনে জমে থাকা পানি হাতের উল্টো পিঠে মুছে হাটছে।

” ছোট বেলা থেকে এই একটা দুর্বল জায়গা ছিলো সাগর।

ভালোবাসার মানে বোঝার পর থেকেই সাগরকে ভালোবাসে তানহা। একটা সময় তানহার মনে হতো সাগরও ওকে ভালোবাসে। একদিন প্রপোজ করবে। এই আশাতেই দিন কাটতো। কিন্তু সাগর প্রপোজ করলো না।

তানহাও তার মনের কথা সাগরকে বলতে পারলো না। অনেক সময় নিজের সুখের চেয়ে প্রিয়জনের সুখটা বেশি দামী হয়ে। থাকনা সাগর সুইটির সাথে ভালো। তানহা না হয় ওদের সুখ দেখেই নিজের জীবনটা কাটিয়ে দেবে। তানহার কথা গুলো না বলাই থাক।

সমাপ্ত
না বলা কথা
Tanisha Sultana

আরো পড়ুন – হারিয়ে খুঁজি তোমায়

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *