অবহেলিত ছেলের ভালোবাসা – Koster valobasar golpo: আজকে আমার বিয়ে কিন্তু আমার তাতে কোনো খেয়াল নেই। আমি শুধু ইসমাইলের কথাই ভেবে চলেছি। কার সাথে আমার বিয়ে হচ্ছে তা জানারও ইচ্ছে হচ্ছে না।
পর্ব ০১
ঠাসসসস, ঠাসসসস, ঠাসসসস তোর সাহস কি করে হয় আমাকে প্রেম পএ দেওয়ার।
আমি ইচ্ছা করে দিই নি।
তোকে আর কিছু বলতে হবে না।
তোদের মত কিছু ছেলের জন্যই আজকে মেয়েরা সমাজে অবহেলিত।
প্রথম দিন ভার্সিটিতে এসেই মেয়েদের প্রেম পএ দেওয়া শুরু।
জানি না সামনে আর কি করবি।
তোকে দেখে তো মনে হয় একদম নিশ্পাপ বাচ্চা।
কিন্তু তুই যে এমন একটা কাজ করবি তা তোকে দেখে কেওই বুজতে পারবে না।
আর শোন আর কখনও কোনো মেয়ের সাথে এই রকম করবি না।
- মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছি।
অনেক ছাএ-ছাএী দাঁড়িয়ে আমাকে দেখছে।
কোনো কিছু না করেও এইভাবে সবার সামনে অপমানিত হলাম।
অবস্য অপমানিত হওয়া আমার কাছে নতুন কিছু নয়।
সেই ছোটবেলা থেকেই অপমানিত হয়ে আসছি।
বাবা-মা মারা গেছে তখন আমি অনেক ছোট।
তারপর থেকেই এতিম খানায় বড় হয়েছি।
এইচ.এস.সি পর্যন্ত সেখানে থেকে পড়ালেখা করেছিলাম।
কিন্তু যখন আমার বয়স ১৮ হলো তারপর তারা আমাকে কিছু টাকা দিয়ে বললো যে,
এখন থেকে আমি আর এখানে থাকতে পারবো না।
সেখান থেকে চলে আসার পর বুজেছি জিবন সংগ্রামে বেঁচে থাকাটা কত কঠিন।
কলেজে ভালো রেজাল্ট করেছি বিধায় এই কলেজে অনার্সে চান্স পেয়েছি।
আর আমার নামঃ ইসমাইল আমার এই দুনিয়ায় আমি শুধু একা।
কেউ নেই আমার।
কলেজে গেট দিয়ে ঢুকে সামনে যাইতেছি তখনই কেউ একজন ডাক দিল।
সামনে যাওয়ার পর বললো,
ছেলেটাঃ কলেজে নতুন?
ইসমাইলঃ জি ভাইয়া নতুন।
ছেলেটাঃ নাম কি?
ইসমাইলঃ নাম ইসমাইল।
ছেলেটাঃ তোমাকে দেখে তো ভদ্র মনে হয় কিন্তু তুমি এই বেয়াদবিটা কি করে করলা?
ইসমাইলঃ আমি কি করেছি ভাইয়া?
ছেলেটাঃ আমরা তোমার সিনিয়র। আর তুমি আমাদের সালাম না দিয়েই চলে যাচ্ছিলে কেনো?
ইসমাইলঃ দুঃখিত ভাইয়া। আমি খেয়াল করি নি। এখন থেকে দিব।
ছেলেটাঃ ঠিক আছে এবারের মত মাফ করে দিলাম।
এই খামটা নাও। আর ওই যে দেখতেছো না যে মেয়েটা দাঁড়িয়ে কথা বলছে ও আমার ফ্রেন্ড।
তুমি ক্লাসে যাওয়ার সময় ওই মেয়েটাকে এই খামটা দিবা।
এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা কাগজ।
ইসমাইলঃ আচ্ছা ভাইয়া দিব।
তারপর মেয়েটাকে খাম দেওয়ার পর কি হলো তা তো আপনারা জানেনই।
ক্লাসে চলে আসলাম কিছুখন পর দেখলাম ওই ছেলেগুলো আর ওই মেয়েটাও ক্লাসে আসছে।
তার মানে ছেলেগুলো আমার সিনিয়র নয়।
স্যার এসে সবার সাথে পরিচয় পর্ব সেরে নিলেন।
প্রথম দিন ছিল বলে আজকে তেমন আর ক্লাস হয় নি।
কলেজ থেকে বের হবো তখনই দেখলাম ওই ছেলেগুলা আড্ডা দিচ্ছে আর বলতে লাগলো
সাকিব তুই তো ছেলেটাকে ভালোই বোকা বানালি।
সাকিবঃ ছেলেটাকে র্যাগ দিয়ে অনেক মজা পেয়েছি।
- তা যা বলেছিস ছেলেটা কিন্তু ভিষন বোকা।
সাকিবঃ কালকে আবার নতুন কিছু দিতে হবে ওকে।
এই বলে সবাই হাসতে লাগলো।
কলেজ থেকে বের হয়ে আসলাম। আর ভাবতে থাকলাম এদের থেকে যতই দুরে থাকবো ততই ভালো।
এক রুমের একটা বাসা ভাড়া করেছিলাম।
আর এতিমখানা থেকে একটা হোটেলে চাকরির ব্যবস্থা করে দিয়েছিল ৩ টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত।
বাসায় গিয়ে কিছু খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।
ঘুম থেকে উঠতে একটু দেরি হয়ে গেছিল তাই হোটেলে ঠিক টাইমে পৌছাতে পারি নাই।
হোটেলে পৌছানোর পর ম্যানেজার বললো,
ম্যানেজারঃ এই জন্যেই তোমাদের মত ভার্সিটি পড়ুয়া ছেলেদের কাজ দিতে নেই। প্রথম দিনেই দেরি।
ইসমাইলঃ সরি স্যার আর হবে না।
ম্যানেজারঃ যাও কাজ করো।
রাত নয়টার সময় কাজ শেষ হলো।
বাসায় আসতে আসতে দশটা বেজে গেল।
রাতের খাবার হোটেলেই খাই।
বাসায় এসে পড়তে বসলাম।
পড়া শেষে ঘুমোতে গেলাম।
সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে কিছুখন পড়লাম।
তারপর কলেজে গেলাম।
কলেজে যাওয়ার পর আবার সেই ছেলেটা সাকিব ডাক দিল।
সাকিবঃ তোকে না বলেছিলাম আমাদের সালাম দিতে।
ইসমাইলঃ সালাম কেনো দিব। আমরা তো একসাথেই পড়ি।
সাকিবঃ তোরে তো….
তখনই একজন স্যার চলে আসলো।
স্যারঃ কি হচ্ছে কি এখানে। যাও ক্লাসে যাও।
তারপর ক্লাসে চলে আসলাম।
ক্লাস শেষ করে যখনই বাহিরে আসবো তখনই একটা ছেলে আমাকে ধাক্কা দিলললল।
পর্ব ০২
সাকিবঃ তোকে না বলেছিলাম আমাদের সালাম দিতে।
ইসমাইলঃ সালাম কেনো দিব। আমরা তো একসাথেই পড়ি।
সাকিবঃ তোরে তো….
তখনই একজন স্যার চলে আসলো।
স্যারঃ কি হচ্ছে কি এখানে। যাও ক্লাসে যাও।
তারপর ক্লাসে চলে আসলাম।
ক্লাস শেষ করে যখনই বাহিরে আসবো তখনই একটা ছেলে আমাকে ধাক্কা দিল।
ঠাসসসস, ঠাসসসস তোর সাহস কি করে হয় আমাকে জড়িয়ে ধরার?
আমি ইচ্ছে করে করিনি কে যেনো আমাকে ধাক্কা দিয়েছে।
ঠাসসসস, ঠাসসসস অন্যায় করে আবার মিথ্যা কথা বলছিস।
প্রথম দিন আমাকে লাভ লেটার দিলি আজকে আবার জড়িয়ে ধরেছিস।
তোকে যেনো আর কখনও আমার সামনে না দেখি।
এই বলে মেয়েটা চলে গেল।
তখনই সাকিব বললো, কিরে কেমন দিলাম।
এখন থেকে সব সময় আমাকে সালাম দিবি।
কিছু বললাম না। যানি এদের কিছু বলে লাভ হবে না।
চলে আসলাম সেখান থেকে।
রাস্থা দিয়ে ভাবছি। আমি কি শুধু সবার কাছে অবহেলিত হয়েই থাকবো?
বাইরের পৃথিবীটা যে কত কষ্টের তা এখন বুজতে পারছি।
বাসায় চলে আসলাম।
আজকে আর ঘুমালাম না।
ঠিক টাইমেই হোটেলে চলে আসছি।
তখনই ম্যানেজার এসে বললো,
ম্যানেজারঃ ইসমাইল এই খাবারগুলো ওই টেবিলে দিয়ে এসো।
ইসমাইলঃ আচ্ছা স্যার খাবার দিতে গেলাম তখনই একজন বললো, এতখন লাগে খাবার দিতে। সেই কখন থেকে অপেক্ষা করছি।
ইসমাইলঃ ঠিক টাইমেই তো দিলাম স্যার।
আবার মুখে মুখে কথা। যাও এখান থেকে।
চলে আসলাম ওখান থেকে।
ঠিক টাইমে খাবার দিলাম তারপরও বলে যে
দেরি হয়েছে।
হোটেলের কাজ শেষ করে বাসায় চলে আসলাম।
কিছুখন পড়ার পর ঘুমোতে গেলাম।
শুয়ে শুয়ে ভাবছি,
আমার জিবনের লক্ষ্য কি? এই দুনিয়ায় তো আমার কেউ নেই।
না আছে কোনো আত্তীয় স্বজন। না আছে কোনো বন্ধু।
আমার সাথে তো কেউ ভালো ব্যবহার করে না।
জানি না, এই অবহেলিত জীবনের সমাপ্তি কখন ঘটবে?
আমি মরে গেলে আমার লাস দাফন করার জন্যও কেউ থাকবে না।
এসব ভাবছি আর দু-চোখ বেয়ে পানি পড়ছে।
সকালে ঘুম থেকে উঠে কিছুখন পড়লাম।
তারপর কলেজে আসলাম।
ক্লাসে বসে আছি।
সবাই যার যার মত আড্ডা দিচ্ছে আর আমি পিছনের বেন্চে বসে আছি।
কারন হলো আমি তাদের মত নই।
হঠাৎ করে সাকিব বললো,
সাকিবঃ কিরে তুই প্রতিদিন একি শার্ট পড়ে কলেজে কেনো আসিস?
কলেজের মানবতার দেয়াল থেকে কিছু কাপড় নিস। ওগুলো তোর পড়নের কাপড় থেকে ভালো।
এটা বলার পরই সবাই হাসতে লাগলো।
আর আমি মাথা নিচু করে চোখের পানি ফেলছি।
স্যার ক্লাসে আসলো। পড়ানো শুরু করলেন।
ক্লাস শেষ করে কলেজ ক্যান্টিনে আসলাম
খুবই ক্ষুধা লাগছিল তাই কিছু খেতে গেলাম।
একটা চেয়ারে বসে সিংগারা খাচ্ছি তখনই সাকিব আর ওর বন্ধুরা আসলো।
তারা সবাই আমার পাশে থাকা চেয়ারে বসলো।
সাকিবঃ মামা সিংগারা দাও তো?
তারা সবাই আমার পাশে বসে সিংগারা খাচ্ছে।
সিংগারা খাওয়ার পর আমাকে দেখিয়ে বললো,
সাকিবঃ মামা সিংগারার টাকা ও দেবে।
আমাকে কিছু বলার সুযোগ সা দিয়েই তারা চলে গেল
তারপর বাধ্য হয়ে আমাকে টাকা দিতে হলো।
তারপর সেখান থেকে বাসায় চলে আসলাম।
ভাবছি আজকে দুপুরে না খেয়ে থাকতে হবে।
আমার মত ছেলের না খেয়ে থাকলেও কারও যায় আসে না।
বাসায় বসে এসব ভাবছি তখনই পাশের বাসার এক বড় ভাই এসে বললো,
বড় ভাইঃ- ইসমাইল তোমার রক্তের গ্রুপ কি?
ইসমাইলঃ B পজিটিভ ভাই।
বড় ভাইঃ- তুমি কি রক্ত দিতে পারবে?
ইসমাইলঃ জি ভাই পারবো।
তারপর বড় ভাইয়ের সাথে হাসপাতালে গেলাম রক্ত দিতে।
রক্ত দেওয়ার পর কিছুখন বেডে শুয়ে বিশ্রাম নিলাম।
দুপুরে আর না খেয়ে থাকতে হয় নি।
অনেক কিছু খেতে দিয়েছিল আমাকে।
সেখান থেকে আর বাসায় গেলাম না। ওখান থেকেই হোটেলে চলে গেলাম।
আজকে অনেক দেড়ি হয়ে গেছে। যানি না আজকে গেলে ম্যানেজার কি বলবে।
হোটেলে যাওয়ার পরই ম্যানেজার বললো,
ম্যানেজারঃ তোমার কি কোনো দায়িত্ববোধ নেই। তোমাকে বলেছিলাম না যে দেড়ি করবে না।
ইসমাইলঃ সরি স্যার।
এখানে আর দাড়িয়ে না থেকে যাও কাজ করো।
কাজ শেষ করে বাসায় আসলাম শরীর খুবই খারাপ লাগছে।
তাই আজকে আর পড়তে বসলাম না। তাড়াতাড়িই ঘুমিয়ে পড়লাম।
সকালে ঘুম থেকে উঠে কিছুখন পড়লাম। তারপর কলেজে গেলাম।
কলেজে যাওয়ার পর সাকিব ডাক দিল।
ওদের ওখানে গিয়ে দেখলাম ওরা সবাই সিগারেট খাচ্ছে।
আমি আবার সিগারেটের ধোয়া সয্য করতে পারি না।
তাই বললাম
ইসমাইলঃ যা বলবেন একটু তাড়াতাড়ি বলবেন আমি সিগারেটের ধোয়া সয্য করতে পারি না।
আমার কথা শুনে ওরা সবাই হাসতে লাগলো।
তারপর সাকিব বললো,
সাকিবঃ তোকে তো আজকে এত সহজে ছারছি না। তুই এখন আদিবাকে গিয়ে প্রপোজ করবি তা না হলে তোকে সিগারেট খাওয়াবো।
ইসমাইলঃ আদিবা কে?
সাকিবঃ এখনো আদিবাকে চিনো না। যার কাছে তুই থাপ্পর খাইলি সে হলো আদিবা।
ইসমাইলঃ আমি এটা করতে পারবো না।
সাকিবঃ তাহলে তো তোকে জোর করে সিগারেট খাওয়াবো তাও আবার অন্য স্টাইলে
এই গাজা গুলো সিগারেটের ভিতরে ভর তারপর ওকে জোর করে খাওয়া
ইসমাইলঃ দয়া করে আমার সাথে এমনটা করবেন না।
সাকিবঃ তাহলে যা আদিবাকে প্রপোজ কর।
বাধ্য হয়ে প্রপোজ করতে গেলামমমম।
পর্ব ০৩
আদিবার সামনে গিয়ে মাথা নিচু করে আদিবাকে প্রপোজ করলাম।
ঠাসসসস, ঠাসসসস ছোটলোকের বাচ্চা তুই আবার আমাকে প্রপোজ করেছিস।
তোকে বলেছিলাম না আর কখনও আমার সামনে আসবি না।
তারপর আমাকে প্রিন্সিপালের রুমে নিয়ে গেল।
প্রিন্সিপালঃ তুমি আদিবাকে বিরক্ত কেনো করছো? তোমাদের মত ছেলের জন্য কলেজের মান সম্মান নষ্ট হয়।
আমি তোমাকে কলেজ থেকে বহিস্কার করবো আমি প্রিন্সিপালের পায়ে ধরে বলতে লাগলাম স্যার দয়া করে আমাকে বহিস্কার করবেন না।
আমি আর কখনও এমনটা করবো না।
প্রিন্সিপালঃ যদি আর কখনও তোমার নামে অভিযোগ আসে তাহলে তুমি আর কোনো সুযোগ পাবে না
যাও এখন।
তারপর সেখান থেকে চলে আসলাম।
ভাবছি আমার সাথেই কেনো এমন হয়। আমি তো কারও কোনো ক্ষতি করি নাই।
তারপরও তারা কেনো আমার পিছনে পড়ে আছে।
দোস্ত ছেলেটার সাথে কিন্তু প্রতিদিন সেই মজা হয়।
সাকিবঃ তা যা বলেছিস কালকে আবার ওকে নতুন ভাবে র্যাগ দিব।
আদিবাকে দিয়ে ওকে প্রতিদিন মার খাওয়াবো।
এই বলে সবাই হাসতে লাগলো।
আদিবাঃ ওই ছেলেটার কোনো দোষ নেই। আর আমি শুধু শুধুই ওই ছেলেটাকে ভুল বুঝলাম।
কালকে কলেজে আসলে সরি বলতে হবে।
রাতে শুয়ে শুয়ে ভাবছি কালকে কলেজে গেলে তো আবার সাকিব আমার সাথে ওই রকম করবে।
মনে হয় না আর ওই কলেজে বেশি দিন থাকতে পারবো।
এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়লাম।
পরেরদিন কলেজে গেলাম।
যাওয়ার পরই আদিবা ডাক দিল।
আদিবাঃ সরি।
ইসমাইলঃ কেনো?
আদিবাঃ তোমার কোনো দোষ ছিল না তারপরও আমি তোমাকে অনেক অপমান করেছি।
গতকালকে আমি সাকিবের কাছ থেকে সব শুনেছি।
আমাকে মাফ করে দাও। আমি সত্তিই খুবই দুঃখিত।
ইসমাইলঃ তোমার তো কোনো দোষ নেই তোমার জায়গায় অন্য কোনো মেয়ে থাকলেও তাই করতো।
আদিবাঃ আচ্ছা তাহলে আজ থেকে আমরা বন্ধু। তোমার নাম কি?
ইসমাইলঃ ইসমাইল। তোমার?
আদিবাঃ আদিবা সুলতানা।
আজকে থেকে আমরা বন্ধু তাহলে।
ইসমাইলঃ না।
আদিবাঃ কেনো? তারমানে তুমি আমাকে মাফ করতে পারো নাই।
ইসমাইলঃ দেখো তুমি বড়লোক বাবাড় মেয়ে। আর আমি রাস্তার ছেলে। তোমার সাথে আমার বন্ধুত্ত করা ঠিক হবে না।
আদিবাঃ আর কখনও এই কথা বলবে না। তুমি যেমনই হও না কেনো তারপরও তুমি আমার বন্ধু।
ইসমাইলঃ তারপরও।
আদিবাঃ আর কোনো কথা বলবি না। আর এখন থেকে আমাকে তুই করে বলবি।
ইসমাইলঃ আচ্ছা চেষ্টা করবো।
তারপর ক্লাসে চলে গেলাম।
প্রথমবার আমি সামনের বেন্চে বসলাম তাও আবার আদিবার সাথে।
ক্লাস শেষে করে আদিবার সাথে ক্যাম্পাসে বসে আছি।
আদিবাঃ তোর মোবাইল নাম্বার দে?
ইসমাইলঃ আমি ফোন চালাই না।
আদিবাঃ মানে! তোর কি কারও সাথে কথা বলার প্রয়োজন মনে হয় না।
ইসমাইলঃ না।
আদিবাঃ কেনো?
ইসমাইলঃ আমার কেউ নেই।
আদিবাঃ কেউ নেই মানে?
ইসমাইলঃ এই দুনিয়ায় আমার আপনজন বলতে কেউ নেই। আমি এতিম।
আদিবাঃ আর কখনও নিজেকে এতিম বলবি না। আজকে থেকে আমি তোর আপনজন।
আয় এখন আমার সাথে।
ইসমাইলঃ কোথায়?
আদিবাঃ আসলেই দেখতে পাবি।
তারপর আদিবা আমাকে একটা মোবাইলের দোকানে নিয়ে গিয়ে একটা মোবাইল কিনে দিল।
ইসমাইলঃ আমার সব কথা শুনে করুনা করছিস আমাকে?
আদিবাঃ দিবো একটা থাপ্পর। এত বেশি বুজিস কেন।
তোরে এই মোবাইল দিয়েছি আমার সাথে কথা বলার জন্য।
তারপর দুপুরে একটা রেস্টুরেন্টে খেলাম।
খাওয়ার পর আদিবাকে বললাম
ইসমাইলঃ আমি তাহলে এখন যাই।
আদিবাঃ কোথায় যাবি?
ইসমাইলঃ কাজে যাবো
আদিবাঃ মানে?
ইসমাইলঃ আমি একটা হোটেলে চাকরি করি ২ টা থেকে রাত ১০ পর্যন্ত।
আদিবাঃ চল আমি তোকে নামিয়ে দিয়ে আসি।
তারপর আদিবা আমাকে ওর গাড়িতে করে আমাকে হোটেলে নামিয়ে দিল।
হোটেলের কাজ শেষ করে বাসায় গেলাম।
বাসায় যাওয়ার পর পড়তে বসলাম। তখনই আদিবা ফোন দিল
আদিবাঃ কি করিস?
ইসমাইলঃ এইমাএ বাসায় আসলাম। এখন পড়তেছি।
আদিবাঃ ভালো। তা কিছু খেয়েছিস?
ইসমাইলঃ হ্যা। হোটেল থেকেই খেয়ে এসেছি। তুই?
আদিবাঃ এইমাএ খেলাম।
ইসমাইলঃ ভালো।
আদিবাঃ আচ্ছা তাহলে পড় কালকে কলেজে কথা হবে।
ইসমাইলঃ আচ্ছা।
পড়া শেষে ঘুমিয়ে পড়লাম।
সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে কিছুখন পড়লাম। তারপর কলেজে গেলাম।
কলেজে যাওয়ার পর সাকিব ডাক দিল।
সাকিবঃ ওই ফকিন্নি এদিকে আয়।
কোথা থেকে যেন আদিবা এসে বললো,
আদিবাঃ ও যাবে না।
সাকিবঃ তা তুই বলার কে?
আদিবাঃ আমি ওর বন্ধু। আর আজকে থেকে তোরা ওকে আর কোনো বিরক্ত করবি না।
তোরা এতদিন ওর সাথে যা করেছিস তা সবই আমি জানি।
আর যদি কখনও ওর সাথে খারাপ কিছু করার চেষ্টা করিস তাহলে প্রিন্সিপালের কাছে বলে তোকে কলেজ ছাড়া করবো।
এই বলে আমাকে নিয়ে অন্য জাগায় চলে গেল।
আদিবাঃ তোর সাথে যে ওরা এত খারাপ ব্যবহার করে তা তুই কি কিছু বলিস না।
ইসমাইলঃ কি বলবো। সবাই আমার সাথে ওইরকম করে।
আদিবাঃ আজ থেকে কেউ যদি তোর সাথে খারাপ ব্যবহার করে তাহলে তুই তার প্রতিবাদ করবি।
তারপর ক্লাসে আসলাম। একটা ক্লাস করার পরই আদিবা বললো,
আদিবাঃ চল।
ইসমাইলঃ কোথায়? ক্লাস করবি না।
আদিবাঃ আজকে আর ক্লাস করবো না। এখন তুই আর আমি ঘুরতে যাবো।
তারপর আদিবা আমাকে নিয়ে নদীর পাড়ে একটা পার্কে ঘুরতে গেল।
একটা বেন্চের উপর দুজনে বসে আছি।
হালকা বাতাস বইছে। খুবই ভালো লাগতেছে।
হঠাৎই আদিবা আমাকে বললো,
আদিবাঃ আচ্ছা তুই কি কখনও কোনো মেয়ের প্রেমে পড়েছিস?
ইসমাইলঃ ( হাসতে হাসতে বললাম) কখনও এইটা নিয়ে ভাবিই নি।
আদিবাঃ কেনো?
ইসমাইলঃ কিভাবে বেঁচে থাকবো তার ঠিক নাই আবার প্রেমে পড়বো।
তুই কি কারও প্রেমে পড়েছিস।
আদিবাঃ অল্প অল্প।
ইসমাইলঃ বুজলাম না।
আদিবাঃ বুজতে হবে না। এখন চল ফুচকা খাবো।
তারপর আদিবা আমাকে নিয়ে ফুচকা খেতে গেল।
ফুচকা খাওয়ার পর আদিবা আমাকে হোটেলে নামিয়ে দিল।
হোটেলের কাজ শেষে রাতে বাসায় গিয়ে শুয়ে শুয়ে ভাবছি।
জীবনে প্রথমবার মনে হলো আমি একা নই।
প্রথম বার মনে হলো কোনো আপনজনের ভালোবাসা পেয়েছি।
যতখন আদিবার সাথে ছিলাম ততখন মনেই হই নি যে এই দুনিয়ায় আমার কেউ নেই।
জানি না আদিবা আমাকে কি ভাবে কিন্তু আমি চাই ও এভাবেই সবসময় আমার সাথে থাকুক।
এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়লাম।
সকালে আদিবার কলে ঘুম ভাংলো। তারপর ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে কিছুখন পড়লাম।
তারপর কলেজে গেলাম।
কলেজে যাওয়ার পর আদিবা বললো,
আদিবাঃ তোর চোখ লাল কেনো?
ইসমাইলঃ রাতে ঠিকভাবে ঘুম হয় নি।
আদিবাঃ কেনো?
ইসমাইলঃ এমনি।
আদিবাঃ আচ্ছা যাই হোক আজকে তোকে হোটেলে যেতে হবে না।
ইসমাইলঃ কেনো?
আদিবাঃ আজকে আমার জন্মদিন। সন্ধ্যায় বাসায় পার্টি আছে। আর তুই সেখানে অবস্যই আসবি।
ইসমাইলঃ শুভ জন্মদিন।
কিন্তু আমি না গেলে হয় না।
আদিবাঃ কি বললি তুইইইই?
পর্বঃ০৪
আদিবাঃ কি বললি তুই? ( রেগে গিয়ে বললো, ) কেনো আসলে কি হবে?
ইসমাইলঃ আসলে সেখানে কত বড় বড় লোক থাকবে। আর আমি সামান্য একটা হোটেলে কাজ করা এতিম ছেলে।
তুই অনেক কথা শুনবি। সবাই বলবে আমার মত একটা ছেলে কি করে তোর বন্ধু হলো।
আদিবাঃ সবাই কি বললো, তা আমি পরোয়া করি না। তুই যদি আমাকে তোর বন্ধু মনে করিস তাহলে অবস্যই আসবি।
আর এভাবে খালি খালি জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানালে হবে না।
আমার গিফট কই ( হাসতে হাসতে বললো, )
ইসমাইলঃ ইয়ে মানে গিফট ( গিফটের কথা শুনেই আমার মনটা খারাপ হয়ে গেল)
আচ্ছা নিয়ে আসবো।
আদিবাঃ এই আমি খুবই দুঃখিত। আমি তো মজা করছিলাম। তোর কোনো গিফট আনতে হবে না। তুই আসলেই আমি খুশি।
ইসমাইলঃ না তা কি করে হয়। সেখানে সবাই তো গিফট নিয়ে আসবে।
আদিবাঃ সবাই আর তুই এক না। তোর কাছে আমার কোনো গিফট চাই না। আমার কাছে তুই আমার জন্য গিফট।
তোর সাথে সময় কাটানোর পর যে ভালো লাগা কাজ করে তা আমার জীবনে আর কখনও হয়েছে কিনা যানি না।
তোর কোনো গিফট আনতে হবে না। শুধু তুই আসলেই আমি অনেক বেশি খুশি হবো।
ইসমাইলঃ আচ্ছা দেখা যাবে। এখন চল।
তারপর ক্লাসে গেলাম।
আজকে আদিবা কলেজ থেকে একটু তাড়াতাড়িই চলে গেল।
আদিবা চলে আসার পর কেমন যানি ভালো লাগছিলো না।
তাই আমিও বাসায় চলে আসলাম।
বাসায় এসে ভাবতে থাকলাম
আমার কি করা উচিত? সেখানে যাওয়া কি ঠিক হবে?
না শুধু গিফটা দিয়ে আসবো।
যদি যাই তাহলে আদিবা অনেক কথা শুনবে সেটা আমি নিশ্চিত।
আর যদি না যাই তাহলো তো আদিবা অনেক কষ্ট পাবে।
না আমি আদিবাকে জেনে শুনে কষ্ট দিতে পারি না।
ওই জিবনে প্রথম কোনো ব্যাক্তি যে আমার এতটা খেয়াল রেখেছিল।
আমি আদিবাকে কখনও কষ্ট দিতে পারি না।
কিন্তু আদিবার জন্য কি গিফট কিনবো। যাই কিনি না কেনো সেটা ওর জজন্মদিনের সব থেকে কম দামি গিফট হবে।
অনেক কষ্ট করে ২০০০ টাকা জমিয়ে ছিলাম।
ভেবেছিলাম বাবা- মায়ের জন্য মিলাদ পড়াবো।
ভাবছি সেটা পড়ে পড়িয়ে ওই টাকা দিয়ে আদিবার জন্য একটা শাড়ি কিনবো।
সন্ধ্যার সময় দোকান থেকে একটা শাড়ি কিনে। আদিবাদের বাসায় গেলাম।
গেট দিয়ে ঢুকবো তখনই দাড়োয়ান এসে বাধা দিল।
দাড়োয়ানঃ দাঁড়ান কোথায় যাচ্ছেন?
ইসমাইলঃ ভিতরে যাবো।
দাড়োয়ানঃ কে আপনি যে ভিতর যাবেন?
ইসমাইলঃ আমি আদিবার বন্ধু।
দাড়োয়ান আমার দিকে অনেকখন তাকিয়ে থেকে তারপর বললো,
দাড়োয়ানঃ ফাইজলামি করেন। আপনি কিভাবে আদিবা মেডামের বন্ধু হতে পারেন।
আর কিছু বললাম না। চলে আসবো তখনই আদিবা ডাক দিল।
আদিবাঃ সরি ইসমাইল।
আপনি ওকে ঢুকতে দিলেন না কেনো?
দাড়োয়ানঃ দুঃখিত মেডাম আমি বুজতে পারি নাই।
তারপর আদিবা আমাকে বাড়ির ভিতরে নিয়ে গেল।
বাড়ির ভিতরে ঢুকেই তো আমি অবাক চোখে তাকিয়ে আছি।
অনেক বড় বাড়ি আদিবাদের। আর পুরো বাড়ি অনেক সুন্দর করে সাজানো হয়েছে।
এখানে যারা এসেছে তারা সবাই অনেক বড়লোক।
আর আমাকে দেখে যে কেওই বুজে যাবে আমি কি রকম ছেলে।
সবাই আমার দিকে তাকাচ্ছে। কেমন জানি লাগছে আমার।
এখানে না আসলেই বুজি ভালো হতো।
এসব ভাবতে থাকলাম।
তারপর আদিবা আমাকে নিয়ে কেক কাঁটতে গেলো।
প্রথমে ওর বাবা-মা তারপর আমাকে খাইয়ে দিল।
আমি বোকার মত আদিবার দিকে তাকিয়ে আছি।
আর বাকিরা সবাই অনেক অবাক হয়েছে।
কারন আমার মত একটা ছেলেকে আদিবা ওর বাবা-মায়ের পর কেক খাইয়ে দিল।
আমি আদিবাকে কিছু বলতেও পারছি না।
এখান থেকে তাড়াতাড়ি যেতে পারলেই বাচি।
খাওয়া-দাওয়ার পর আদিবা বললো,
আদিবাঃ বাবা-মায়ের সাথে কথা বলবি চল।
ইসমাইলঃ ইয়ে মানে আজকে না বললে হয় না।
আদিবাঃ কেনো? কি হয়েছে?
ইসমাইলঃ আমার খুবই শরীর খারাপ লাগছে। আমি এখন বাসায় যাই পরে এক সময় কথা বলবো।
আদিবাঃ আচ্ছা যা। বাসায় গিয়ে ফোন দিস।
ইসমাইলঃ এই প্যাকেটটা রাখ
আদিবাঃ কি আছে এতে?
ইসমাইলঃ খুলার পরই দেখতে পারবি।
আদিবাঃ আচ্ছা এখনই খুলতেছি।
ইসমাইলঃ এই না। এখন খুলতে হবে না। পরে খুলিস।
আদিবাঃ পরে খুলবো কেনো? কি আছে এতে?
ইসমাইলঃ সেটা পরে খুললেই দেখতে পারবি। আমি এখন যাই।
তারপর সেখান থেকে বাসায় চলে আসলাম।
বিছানায় শুয়ে শুয়ে ভাবছি।
আদিবা ওর বাবা-মায়ের পরই আমাকে কেনো কেক খাইয়ে দিল?
আমি কল্পনাই করতে পারি নাই যে, আদিবা আমাকে তখন কেক খাইয়ে দিবে।
সেখানে উপস্থিত সবাই অনেক অবাক হয়েছে।
আদিবার বাবা-মা কি ভাববে জানি না।
এতকিছু হওয়ার পরও কিভাবে তাদের সাথে কথা বলতাম?
তাইতো দেখা না করেই চলে এসেছি।
আদিবাকে যত দেখছি ততই অবাক হচ্ছি।
ও কি শুধুই আমাকে ফ্রেন্ড ভাবে না অন্যকিছু।
ওর সাথে যদি আর কিছুদিন এভাবে থাকি তাহলে আমি তো ওকে ভালোবেসে ফেলবো।
এখনই ওর কথা না ভেবে একদিনও থাকতে পারি না।
ওই আমার জিবনের প্রথম ব্যাক্তি যে আমার এতটা খেয়াল রেখেছে।
জিবনে প্রথমবার মনে হয়েছে কোনো আপনজনের ভালোবাসা পেয়েছি।
জানি না ওকে ছাড়া কোনোদিনও থাকতে পারবো কিনা।
কিন্তু ও তো আর সবসময় আমার সাথে থাকবে না।
আমার মনে হয় ও আমাকে ভালোবাসে।
তাহলে কি ওকে আমার মনের কথা বলে দিব।
কিন্তু ও যদি আমাকে ভালো না বাসে তাহলে তো আমাকে ভুল বুজবে।
তারচেয়ে না বলাই থাক।
শুধু বন্ধু হয়েই থাকি।
সকালে ঘুম থেকে উঠে মোবাইল হাতে নিলাম।
দেখলাম রাতে আদিবা অনেক গুলো কল করেছিল।
মোবাইল সাইলেন্ট করা ছিল তাই শুনতে পাই নি।
এখন আর কল দিলাম না।
তারপর ফ্রেশ হয়ে কিছু খেয়ে কিছুখন পড়লাম।
তারপর কলেজে গেলাম।
কলেজে গিয়ে দেখলাম আদিবার আমার আগেই চলে এসেছে।
আমাকে দেখেই রাগি কন্ঠে বলতে লাগলো
আদিবাঃ রাতে কই ছিলি?
ইসমাইলঃ কেনো? বাসায় ছিলাম
আদিবাঃ কতগুলো কল করছি ধরলি না কেনো?
ইসমাইলঃ আসলে তোদের ওখান থেকে আসার পর পরই ঘুমিয়ে গেছিলাম।
আর মোবাইল সাইলেন্ট করা ছিল তাই শুনতে পাই নি।
আদিবাঃ তোকে বলেছিলাম না গিফট না আনতে তারপরও কেনো আনলি?
ইসমাইলঃ কেনো? পছন্দ হয় নি?
আদিবাঃ দিবো এক থাপ্পর। পছন্দ হবে না কেনো। কত সুন্দর একটা শাড়ি।
কিন্তু তুই এত টাকা কিভাবে জোগাড় করলি?
ইসমাইলঃ এতটাকা কোথায়। মাএ ২০০০ টাকা। তোর জন্মদিনের সবথেকে কমদামী গিফট।
টাকা আমার কাছে ছিল।
আদিবাঃ তোকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে যে, তুই মিথ্যা কথা বলছিস। সত্য কথা বল।
ইসমাইলঃ আসলে একটু একটু করে ওই টাকাগুলো জমিয়ে ছিলাম। ভেবেছিলাম বাবা-মায়ের নামে মিলাদ পড়াবো।
এখন ভাবছি মিলাদ পড়ে পড়াবো।
আদিবাঃ তারমানে ওই টাকা দিয়েই তুই আমার জন্য শাড়ি কিনেছিস?
ইসমাইলঃ হুমম।
আদিবার দু-চোখ বেয়ে পানি পড়ছে।
আর সাথে সাথেই আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললো,
আদিবাঃ কেনো তুই ওই টাকা দিয়ে শাড়ি কিনতে গেলি।
তোর কাছে আমার কোনো গিফট চাই না। আমার কাছে তুই সবথেকে বড় গিফট।
চল এখন?
ইসমাইলঃ কোথায়?
আদিবাঃ একটা এতিমখানায় যাবো।
ইসমাইলঃ কেনো?
আদিবাঃ তোর বাবা-মায়ের জন্য মিলাদ পড়াতে।
ইসমাইলঃ দুঃখিত। এটা আমি করতে পারবো না।
আদিবাঃ কেনো?
ইসমাইলঃ আমি আমার নিজের টাকা দিয়ে বাবা-মায়ের জন্য মিলাদ পড়াবো।
আদিবাঃ তো কি হয়েছে। মনে কর আমার টাকাই তোর টাকা।
ইসমাইলঃ কিছু মনে করিস না। আমার নিজের উপার্জিত টাকা দিয়ে মিলাদ পড়াবো। কারও কাছ থেকে নিয়ে নয়।
এখন বল শাড়িটা কেমন লাগছে?
আদিবাঃ অনেক সুন্দর।
ইসমাইলঃ তা কখনও কি শাড়িটা পড়বি?
আদিবাঃ পড়বো না কেনো?
ইসমাইলঃ না মানে শাড়িটা তো অনেক কম দামী তুই তো মনে হয় এত কমদামী জিনিস পড়িস না। তাই বললাম।
আদিবাঃ পড়িনি তো কি হয়েছে এখন থেকে পড়বো।
কালকে বিকালেই শাড়ি পড়ে তোর সাথে নদীর পাড়ে ঘুরতে যাবো।
ইসমাইলঃ দেখা যাবে এখন চল।
তারপর ক্লাস করে বাসায় চলে গেলাম।
ফ্রেশ হয়ে হোটেলে আসলাম।
ম্যানেজারকে বললাম
ইসমাইলঃ স্যার কালকে আমার ছুটি লাগবে
তারপর ম্যানেজার বললো, ?
পর্ব ০৫
ম্যানেজারঃ রোজ রোজ তোমাকে ছুটি দিতে পারবো না।
যদি কাজ করতে মন না চায় তাহলে আর আসার দরকার নেই
ইসমাইলঃ সরি স্যার।
আর কখনও ছুটি নিব না। শুধু কালকেই লাস্ট।
ম্যানেজারঃ মনে থাকে যেন কথাটা। কালকের পরে ছুটি নিতে হলে একবারে নিবে।
এখন যাও কাজ করো।
রাতে কাজ করে বাসায় এসে কিছুখন পড়লাম।
পড়ার পর ঘুমাতে গেলাম।
ভাবতে থাকলাম আদিবার কথা।
প্রথম কোনো মেয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরলো।
আমি কল্পনাই করতে পারি নাই যে আদিবা আমাকে জড়িয়ে ধরবে।
ওর সাথে থাকতে থাকতে কখন যে ওকে ভালোবেসে ফেলেছি তা নিজেও জানি না।
এখন তো এমন হয়েছে ওর সাথে কথা না বলে থাকতেই পারি না।
যখনই কেউ আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করে তখনই আদিবার হাসি মুখটা চোখের সামনে ভেসে ওঠে।
তখন সেই সব অপমান আর গায়ে লাগে না।
কালকে বিকালে আদিবা আমার দেওয়া শাড়ি পড়বে।
তাহলে কালকেই কি আদিবাকে আমার মনের কথা বলে দিব।
জানি না ও আমাকে কি ভাবে।
সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে কলেজে গেলাম।
আজকে একটু আগেই কলেজে চলে আসলাম।
গিয়ে দেখি আদিবা এখনও আসে নি।
কিছুখন একটা বেন্চের উপর বসলাম।
এর মধ্যে আদিবাও চলে এসেছে। আমার কাছে এসে বলতে লাগলো
আদিবাঃ আজকে এত তাড়াতাড়িই চলে এসেছিস। সব সময় তো আমার পরে আসতি।
ইসমাইলঃ এমনি আগে চলে এসেছি।
আদিবাঃ আজকে বিকালে যখন ঘুরতে যাবো তখন তোকে একটা কথা বলবো।
ইসমাইলঃ আমিও তোকে কিছু বলবো।
আদিবাঃ কি বলবি?
ইসমাইলঃ তা সময় হলেই জানতে পারবি।
আদিবাঃ আচ্ছা ঠিক আছে। এখন চল ক্লাসে যাই।
ইসমাইলঃ চল।
ক্লাস শেষ করে বাসায় চলে আসলাম। গোসল করে কিছু খেলাম।
তারপর একটু ঘুমিয়ে তৈরি হয়ে নদীর পাড়ে গেলাম আদিবার সাথে দেখা করতে।
আদিবার আসার আগেই আমি সেখানে চলে গেছি।
আমি খুবই চিন্তিত। জানি না আদিবাকে আমার ভালোবাসার কথা বললে ও কিভাবে নেবে সেটা।
যদি ও আমাকে ভালো না বাসে তাহলে হয়তো আমাদের বন্ধুত্ত ভেংগে যাবে।
কিন্তু আমি তো আদিবাকে ছাড়া থাকতে পারবো না।
অনেক ভালোবেসে ফেলেছি ওকে।
কিন্তু ও আমাকে কি কথা বলবে?
ও কি আমায় ভালোবাসে?
এসবই মাথায় ঘু্রপাক খাচ্ছে।
এর ভিতরে আদিবা চলে এসেছে।
আমার দেওয়া শাড়ি পড়ে এসেছে।
খুবই সুন্দর লাগছে ওকে। ওর দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে থাকলাম।
ও আমার কাছে এসে বলতে লাগলো।
আদিবাঃ এভাবে তাকিয়ে কি দেখছিস?
ইসমাইলঃ তোকে দেখছি।
আদিবাঃ আমাকে আজকে নতুন দেখছিস মনে হয়?
ইসমাইলঃ তা না তোকে আজকে অনেক সুন্দর লাগছে।
ভাবছি সত্তিই কি এটা তুই না অন্য কেউ।
আর শাড়িটা পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
আদিবাঃ তাকিয়ে থাকতে হবে না আর ধন্যবাদ ও দিতে হবে না।
এখন চল কিছুখন হাঁটি।
তারপর আদিবার সাথে হাঁটতে থাকলাম।
আদিবা কথা বলছে আর আমি নির্বাক শ্রোতার মত ওর কথা শুনছি আর ওকে দেখছি।
আজকে আদিবাকে খুবই সুন্দর লাগছে।
ভাবছি এখনই ওকে ভালোবাসার কথা বলবো।
কিন্তু তার আগেই আদিবা বললো,
আদিবাঃ চল ফুচকা খেয়ে আসি।
ইসমাইলঃ চল।
আদিবা আমাকে নিয়ে ফুচকা খেতে গেল।
তারপর দুজনে মিলে ফুচকা খেলাম।
ফুচকা খাওয়ার পর নদীর পাড়ের একটা বেন্চে দুজনে বসে আছি।
আদিবা বললো,
আদিবাঃ আচ্ছা তুই না আমাকে কিছু বলতে চাইছিলি?
ইসমাইলঃ তুইও তো কিছু বলতে চাইছিলি।
আদিবাঃ আগে তুই বল তারপর আমি বলবো
ইসমাইলঃ না আগে তোরটা বলবি।
আদিবাঃ আচ্ছা আমিই বলবো একটু পরে।
দাঁড়া একজনকে ফোন করে নেই।
আদিবাঃ কোথায়? তাড়াতাড়ি আসো আমরা সেই কখন থেকে বসে আছি।
ইসমাইলঃ কার সাথে কথা বললি? আর কে আসবে?
আদিবাঃ আসলেই দেখতে পাবি।
আচ্ছা ইসমাইল মনে কর তুই একজনকে ভালোবাসিস কিন্তু বলতে পারছিস না।
কিন্তু হঠাৎ করেই সে যদি তোকে প্রপোজ করে তাহলে কি করবি?
ইসমাইলঃ অবশ্যই রাজি হবো।
আদিবাঃ আমিও একজনকে ভালোবেসে ফেলেছি।
তারমানে ও কি আমাকে ভালোবাসে। খুবই আগ্রহ নিয়ে ওকে জিগ্গেস করলাম
ইসমাইলঃ কাকে ভালোবাসিস তুই?
আদিবাঃ বলবো একটু পড়ে এখন ঝারমুড়ি খাবো দুজনে। তার ভিতরে ও চলে আসবে।
ইসমাইলঃ কে আসবে?
আদিবাঃ আসলেই দেখতে পাবি।
তারপর দুজনে মিলে ঝারমুড়ি খেলাম।
এর মধ্যেই একটা ছেলে এসে আদিবাকে বলতে লাগলো
ছেলেঃ ওই ইসমাইল।
আদিবাঃ হ্যা।
তারপর ছেলেটা আমাকে বলতে লাগলো।
তোমার কথা ও যে কতবার বলেছে তার কোনো ঠিক নেই।
তুমি নাকি ওর লাইফে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একজন।
আমি আদিবাকে জিগ্গেস করলাম ছেলেটা কে?
ও রাব্বি আর আমি ওকেই ভালোবাসি।
আদিবার মুখে এই কথা শুনে মুহূর্তের মধ্যেই আমার মনে হলো কেও আমার বুকে চাবুক দিয়ে আঘাত করতেছে।
আদিবাকে দেখে মনে হচ্ছে ও খুবই খুশি।
কোনো রকমে চোখের পানি আটকে হাসি মুখে আদিবাকে বললাম
ইসমাইলঃ কবে থেকে? আগে তো বললি না?
আদিবাঃ ওকে আমি অনেক আগে থেকেই ভালোবাসি। কিন্তু ওকে কখনও বলা হয় নি।
আমাদের পাশেই ওর বাসা। ওই আমার লাইফের ফাস্ট ক্রাশ।
আর আমার জন্মদিনের পার্টির পর ও আমাকে প্রপোজ করে।
আমি প্রথমে খুবই অবাক হয়ে গেছিলাম।
কারন এর আগে কখনই ও আমার সাথে কথা বলে নাই। আমি শুধু ওকে দূর থেকে দেখতাম।
ও প্রপোজ করাই আমি এতটাই অবাক হয়ে গেছিলাম যে কিছুই বলতে পারছিলাম না।
তারপর ও বলে যে, আমাকে সময় নিতে।
তারপর আমি আজকে ওকে হ্যা বলে তোর সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে আসলাম।
ইসমাইলঃ ও ভালো করেছিস।
রাব্বিঃ তুমিই তাহলে ওর লাইফের বিশেষ ব্যাক্তি। আজকে ও বলেছিল যে আমাকে ও বিশেষ কারও সাথে পরিচয় করিয়ে দিবে।
আদিবাঃ হ্যা ও খুব ভালো একজন বন্ধু
ইসমাইলঃ আমার আসলে একটা কাজ আছে তাই আমাকে এখন যেতে হবে। তোরা আড্ডা দে।
আদিবাঃ তুই না আজকে হোটেল থেকে ছুটি নিলি।
ইসমাইলঃ হ্যা। কিন্তু আমাকে এখন একজাগায় যেতে হবে। আমি তোকে এখনই বলতাম। কিন্তু তার আগেই রাব্বি ভাইয়া চলে এসেছে।
রাব্বিঃ আচ্ছা তোমার যখন কাজ আছে তাহলে তোমাকে আর আটকে রাখা ঠিক হবে না।
আদিবাঃ আচ্ছা যা তাহলে কালকে কলেজে কথা হবে।
ওখান থেকে তাড়াতাড়িই চলে আসলাম। ওখানে আর এক মুহূর্ত থাকাও আমার পক্ষে সম্ভব হচ্ছিল না।
অনেক কষ্টে চোখের পানি আটকে রেখেছি।
বাসায় গিয়ে শুয়ে পড়লাম।
কিছুই ভালো লাগছিল না। কি করে পারতাম আদিবাকে অন্য কারও সাথে দেখতে।
আমি ভেবেছিলাম ও হয়তো আমাকে ভালোবাসে।
কিন্তু ও শুধুই আমাকে ওর একজন ভালো বন্ধু ভাবে।
জানি না এরপর কি ভাবে আদিবার সাথে স্বাভাবিক ভাবে কথা বলবো?
আদিবার সাথে পরিচয় হবার পর কিছুদিনের জন্য ভুলেই গেছিলাম যে আমার আসল পরিচয় কি?
যখন সবাই অপমান করতো তখন অনেক খারাপ লাগতো।
আর এখন তার থেকেও অনেক বেশি কষ্ট হচ্ছে।
এভাবে অনেকখন বিছানায় শুয়ে আছি কিন্তু ঘুম আসছে না।
কিভাবে ঘুম আসবে চোখ বুজলেই তো আদিবার মুখটা ভেসে ওঠে।
তবে আজকে একটা ব্যাপার খুবই অদ্ভুত লাগছে।
প্রতিদিন তো আদিবা এই সময়ে ফোন দেয় কিন্তু আজকে তো দিলো না।
তাই আমিই ফোন দিলাম কিন্তু আদিবার ফোন ওয়েটিং।
অনেকবার ফোন দিলাম কিন্তু ওয়েটিং।
হয়তো রাব্বির সাথে কথা বলছে তাই হয়তো আমার কথা মনে নেই।
এখন হয়তো আদিবার কাছে আমার থেকে রাব্বি গুরুত্বপূর্ণ।
থাকবেই না কেনো? আমি তো ওর শুধু বন্ধু।
আর রাব্বি তো ওর ভালোবাসা।
এসব কথা ভাবছি আর চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।
কিছুখন পর মোবাইলের স্কিনে আদিবা নামটা ভেসে উঠলো।
চোখের পানি মুছে কল রিসিভ করলাম।
তারপর আদিবা বললো………
পর্ব ০৬
আদিবাঃ কি করিস?
ইসমাইলঃ শুয়ে আছি। তুই কি করিস?
আদিবাঃ রাব্বির সাথে কথা বললাম এতখন।
তুই তো তাড়াতাড়িই চলে আসলি। জানিস তারপর আমরা কত আড্ড দিয়েছি।
ইসমাইলঃ আমার কাজ ছিল তাই তো আগে চলে এসেছি।
আদিবাঃ জানিস রাব্বি আমার প্রতি কত কেয়ারিং। আমি বাসায় আসছি কিনা খেয়েছি কিনা সব কিছুর খবর ও রাখে।
ও আমাকে অনেক ভালোবাসে। আমি খুবই ভাগ্যবান যে ওর মত একজনকে পেয়েছি।
ইসমাইলঃ ভালো। আমার খুবই ঘুম পেয়েছে রাখছি এখন।
আদিবাঃ আচ্ছা।
চোখের পানি আর কন্ট্রোল করতে পারছিলাম না। তাই তাড়াতাড়িই ফোন রেখে দিলাম।
নিজের ভালোবাসার মানুষের মুখে যদি অন্য কারও প্রশংসা শুনতে হয় তাহলে এর চেয়ে কষ্টের আর কিছু নাই।
আগে আদিবা ফোন দিলে আমার খোজ-খবর রাখতো।
আর এখন আদিবার খোজ-খবর অন্য কেউ রাখে।
হয়তো আদিবা রাব্বির সাথেই অনেক সুখি থাকবে।
আমি না হয় আদিবার বন্ধু হয়েই সারাজিবন থাকবো।
একটা দুষপ্ন ভেবে সব কিছু ভুলে যাবো।
সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখলাম অনেক সময় হয়ে গেছে।
রাতে ঠিক মত ঘুমোতে পারি নাই তাই সকালে তাড়াতাড়ি উঠতে পারি নাই।
তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে কিছু খেয়ে কলেজে গেলাম।
কলজে গিয়ে দেখলাম আদিবা এখনও আসে নি।
একা একা একটা বেন্চের উপর বসে আছি।
ক্লাসের সময় হয়ে গেল কিন্তু আদিবা এখনও এলো না।
তাই ফোন দিলাম আদিবাকে।
ইসমাইলঃ কোথায় তুই? কলেজে আসবি না?
আদিবাঃ আজকে আসবো না। রাব্বির সাথে নদীর পাড়ে ঘুরতে আসছি।
ইসমাইলঃ আচ্ছা ঠিক আছে। রাখছি তাহলে।
গতকালকেও তো আদিবার সাথে কথা বললাম তখন তো বললো, না যে আজকে কলেজে আসবে না।
হয়তো আমাকে বলার প্রয়োজন মনে করে নি।
আমি একাই ক্লাস করলাম। তারপর বাসায় চলে আসলাম।
বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে হোটেলে যাবার জন্য রওনা দিলাম।
রাস্থা দিয়ে হাঁটছি আর ভাবছি।
কেনো যে আদিবার সাথে পরিচয় হলো। তাহলে হয়তো এখন কষ্ট পেতাম না।
জিবনের সব কিছুতেই তো অবহেলিত হয়ে এসেছি।
ভালোবাসার বেলায় তার ব্যতিক্রম কেনো হবে।
এসব ভাবছি আর হাঁটছি তখনই দেখলাম
আদিবা আর রাব্বি বাইকে করে যাচ্ছে। রাব্বি বাইক চালাচ্ছে আর আর আদিবা ওকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে আছে।
আমি আর ওদের ডাক দিলাম না। ওরা ওদের মত যাচ্ছে।
আমি তাড়াতাড়ি হোটেলে চলে গেলাম।
আদিবাকে অন্য কারও সাথে দেখলেই খুবই খারাপ লাগে।
ও তো এখন খুবই ব্যস্ত তাই হয়তো আমার খবর নেওয়ার সময় পায় নি।
হোটেলে এসে কাজ করতে ছিলাম। আজকে কেনো যানি কাজ করতেও ভালো লাগছিল না।
অন্যমনস্ক হয়ে খাবার নিয়ে একটা টেবিলে গেলাম।
অসাবধান বসত কিছু খাবার একটা মেয়ের গায়ে পড়লো।
মেয়েঃ ছোটলোক কোথাকার দেখে কাজ করতে পারিস না।
দিলি তো আমার জামাটা নষ্ট করে।
জানিস তোর থেকে আমার জামার দাম বেশি।
এর ভিতরে ম্যানেজার চলে এসেছে।
ম্যানেজারঃ কি হয়েছে এখানে?
মেয়েঃ এই ছোটলোকটা আমার গায়ে খাবার ফেলে দিয়েছি।
ম্যানেজারঃ আমরা খুবই দুঃখিত ম্যাম। দয়া করে আর রাগারাগি করবেন না তাতে আমাদের হোটেলের সম্মান নষ্ট হবে।
আমরা ওর বিচার করবো।
ইসমাইল তুমি আমার সাথে এসো?
ম্যানেজার আমাকে নিয়ে একটা রুমে গেল তারপর বলতে লাগলো
ম্যানেজারঃ তোমার কি কাজ করার ইচ্ছা নেই।
মাঝে মাঝে ছুটি নেও। সময়মত আসো না। তার উপর আবার আজকে যেই ঘটনা ঘটালে।
এরপর আর তোমাকে কাজে রাখা সম্ভব নয়।
ইসমাইলঃ স্যার দয়া করে আমাকে কাজ থেকে বের করে দিবেন না। কথা দিচ্ছ এরপর আর আমার নামে কোনো অভিযোগ আসতে দিব না।
ম্যানেজারঃ মাফ করতে পারি এক শর্তে এখন গিয়ে ওই মেয়েটার কাছে সরি বলবে।
সে যদি মাফ করে তাহলেই তোমার চাকরি থাকবে।
ইসমাইলঃ ঠিক আছে স্যার।
তারপর মেয়েটার কাছে গিয়ে বললাম
ইসমাইলঃ সরি ম্যাম। আমাকে মাফ করে দিন। আমার ভুল হয়ে গেছে।
মেয়েঃ দিলাম মাফ করে এখন যা।
হোটেলের কাজ করে রাতে বাসায় আসলাম।
বিছানায় শুয়ে শুয়ে ভাবছি।
দুনিয়াটা বড় অদ্ভুত। অপরাধ না করেও মাফ চাইতে হলো।
আর মেয়েটা যা বলেছে ঠিকই বলেছে
আমার থেকে তার জামার দামও অনেক বেশি।
আদিবাকে কল দিলাম কিন্তু ওয়েটিং। অনেক বার কল দিলাম কিন্তু ওয়েটিং।
বিছানায় শুয়ে আছি ভাবছি আদিবা হয়তো কল দিবে।
কিন্তু অনেক সময় হয়ে গেল কিন্তু কল দিল না।
ওর কাছে কি আমি এতটাই মূল্যহীন। যে একবার আমাকে কল দিতেও পারলো না।
ওকে তো আর আমি ভালোবাসতে বলছি না। আমি তো শুধু ওর বন্ধু হয়েই থাকতে চাইছিলাম।
এগুলো ভাবতে ভাবতে একটা সময় ঘুমিয়ে গেলাম।
সকালে ঘুম থেকে উঠেই আগে ফোনটা হাতে নিলাম।
কিন্তু যে আশায় হাতে নিয়েছিলাম তা পূরন হয় নি।
আদিবা আমাকে একটি বারও কল করে নি।
হয়তো ওর কাছে এখন রাব্বিই সব।
ফ্রেশ হয়ে কিছুখন পড়লাম। কিন্তু পড়ায় একদমই মন বসছিল না। তারপর পড়ার চেষ্টা করলাম।
পড়া শেষে কিছু খেয়ে কলেজে আসলাম।
গিয়ে দেখি আদিবা এখনও আসে নি। তাই একা একা একটা বেন্চের উপর বসে সময় কাঁটালাম।
ক্লাস শুরু হওয়ার কিছুখন আগে আদিবা আসলো।
ইসমাইলঃ এত দেরি হলো কেনো আজকে?
আদিবাঃ আর বলিস না গতকাল অনেক রাত পর্যন্ত রাব্বির সাথে কথা বলেছিলাম তাই ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়েছে।
ইসমাইলঃ রাতে তোকে অনেকবার কল দিয়েছিলাম।
আদিবাঃ সরি। আমি খেয়াল করিনি। রাব্বির সাথে কথা বলে ঘুমিয়ে গেছিলাম তাই মনে ছিল না।
প্লিজ কিছু মনে করিস না।
ইসমাইলঃ আরে না মনে করার কি আছে।
আদিবাঃ আচ্ছা বিকালে তোর সাথে নদীর পাড়ে ঘুরতে যাবো ঠিক আছে।
ইসমাইলঃ না বিকালে যাওয়া যাবে না। হোটেল থেকে আমাকে ছুটি দিবে না।
আদিবাঃ তাহলে কালকে কলেজ টাইমে যাবো ঠিক আছে।
ইসমাইলঃ আচ্ছা।
তারপর ক্লাস করে বাসায় চলে আসলাম।
আজকে অনেক খুশি লাগছে। কারন কালকে আদিবার সাথে ঘুরতে যেতে পারবো।
এত খুশি হয়ে কাজ নাই। এখন তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে হোটেলে যেতে হবে।
দেড়ি করলে চাকরি থাকবে না।
আমাকে আর কোনো সুযোগও দিবে না।
ঠিক সময়ে হোটেলে চলে আসলাম। তারপর নিজের কাজ করতে লাগলাম।
আমাকে দেখে ম্যানেজার বলতে লাগলো।
ম্যানেজারঃ প্রতিদিন এভাবে ঠিক সময়ে আসবে। আর ভালোভাবে কাজ করবে।
ইসমাইলঃ জি স্যার।
আজকে কাজ করেও কেনো জানি অনেক আনন্দ পাচ্ছি।
হয়তো আদিবার জন্য। কারন কালকে ওর সাথে নদীর পাড়ে ঘুরতে যাবো।
অনেকদিন পর আদিবার সাথে আড্ডা দিব। ভাবতেই অনেক ভালো লাগছে।
কাজ করে বাসায় চলে আসলাম। ফ্রেশ হয়ে কিছুখন পড়লাম।
তারপর ভাবছি আদিবাকে একটা ফোন দিব।
যেই ভাবা সেই কাজ আদিবাকে ফোন দিলাম।
কিন্তু ফোন ওয়েটিং। অনেকবার ফোন দিলাম তাও ওয়েটিং।
ধুর মুডটাই খারাপ হয়ে গেল।
আরে আমি এত চিন্তা করছি কেনো। কালকে তো আদিবার সাথে কথা হবেই।
এই ভেবে ঘুমিয়ে পড়লাম।
সকালে কলেজে গিয়ে দেখলাম আদিবা এখনও আসে নি।
আগে আদিবা সব সময় আমার আগেই কলেজে আসতো।
ইদানিং দেখছি আদিবা কলেজে খুবই লেইট করে আসে।
হয়তো রাতে রাব্বির সাথে কথা বলে তাই সকালে ঘুম থেকে উঠতে দেঁড়ি হয়।
মন খারাপ করে একটা বেন্চের উপর বসে রইলাম।
কিছুখন পর আদিবা আসলো…..
পর্ব ০৭
আদিবাঃ কিরে এভাবে বেন্চের উপর বসে কি ভাবছিস?
ইসমাইলঃ কিছু না। তোর জন্য অপেক্ষা করছি।
আদিবাঃ সরি। আমার আসতে একটু দেঁড়ি হয়ে গেল।
ইসমাইলঃ কোনো সমস্যা না। এখন চল নদীর পাড়ে যাই।
আদিবাঃ চল।
তারপর আমি আর আদিবা নদীর পাড়ে ঘুরতে গেলাম।
বেন্চের উপর বসে দুজনে কথা বলছি।
হঠাৎ আদিবা কারে যেনো ফোন দিয়ে আসতে বললো,
কারে আসতে বললি?
আদিবাঃ রাব্বিকে।
মুহূর্তের মধ্যেই মনটা খারাপ হয়ে গেল। তারমানে আদিবা আমার জন্য আসে নি।
রাব্বির সাথে ঘুরতে এসেছে আর আমাকে সাথে করে নিয়ে এসেছে।
কিছুখন পর রাব্বি আসলো। রাব্বি আর আদিবা কথা বলছে আর আমি বোকার মত বসে আছি।
আমার খুবই খারাপ লাগতেছে।
আদিবা আমার সাথে কি করে করতে পারলো এমনটা।
আমি তো ওকে ঘুরতে যাওয়ার কথা বলি নি। ও নিজেই তো আমাকে বলেছে।
ওরা দুজনে কথা বলছে। মনে হচ্ছে আমি অপরিচিত কোনো মানুষ।
সেখান থেকে চলে আসতে ইচ্ছা করছে।
হঠাৎ করে আদিবা বললো,
আদিবাঃ আমার প্রচুর পানির পিপাসা লাগছে।
রাব্বিঃ ইসমাইল তুমি গিয়ে এক বোতল পানি কিনে নিয়ে আসো প্লিজ।
ইসমাইলঃ আচ্ছা তোমরা কথা বলো আমি নিয়ে আসছি।
মনে হচ্ছে ওদের সেবা করার জন্যই আমাকে নিয়ে আসছে।
আমাকে এখানে এনে এই ভাবে অপমান না করলেও পারতো আদিবা।
পানি নিয়ে বেন্চের এই জাগায় আসলাম। এসে দেখি ওরা নাই।
তারপর ওদের খুজতে লাগলাম।
হঠাৎ দেখলাম ওরা অন্য এক জাগায় বসে কথা বলছে।
আমি পিছন দিকে ছিলাম। আর সেখানে অনেক গাছও ছিল যার কারনে ওরা আমাকে দেখতে পায় নি।
আমি ওদের কাছাকাছি আসতেই শুনতে পেলাম।
রাব্বিঃ আদিবা তোমাকে কিছু বলতে চাই। জানি না তুমি কিভাবে নেবে।
আদিবাঃ আমি কিছুই মনে করবো না তুমি বলো।
রাব্বিঃ ইসমাইলকে আমার মোটেই সুবিধার মনে হচ্ছে না।
আদিবাঃ মানে? কি বলছো তুমি?
রাব্বিঃ দেখ আদিবা একটা ছেলে আর একটা মেয়ে কখনও শুধু বন্ধু হয়ে থাকতে পারে না। শুধু আমি না সবাই বলবে এটা।
তুমি ইসমাইলকে শুধু বন্ধু ভাবলেও আমার মনে হয় সে তোমাকে অন্যকিছু ভাবে।
তুমি যখন ওইদিন ইসমাইলকে বলেছিলে যে, তুমি আমাকে ভালোবাসো।
তখন ইসমাইলকে দেখে মনে হয়েছিল ও একদমই খুশি হয় নি।
আর তাই হয়তো ও কাজের বাহানা দিয়ে চলে গেছিল।
আদিবাঃ দেখ আমি ইসমাইলকে শুধুই আমার একজন ভালো বন্ধু মনে করি।
রাব্বিঃ আমি জানি সেটা। কিন্তু এখানে কথা হচ্ছে যে ইসমাইল তোমাকে কি ভাবে।
আর কোনো বয়ফ্রেন্ডই চাইবে না তার প্রমিকার কোনো ছেলে বেস্টফ্রেন্ড থাকুক।
আদিবাঃ তুমি শুধু শুধুই ইসমাইলকে সন্দেহ করছো। আর ও তো আমাকে বলেনি যে ও আমাকে ভালোবাসে।
তুমি শুধোই অযথা টেনশন করছো।
রাব্বিঃ দেখ আদিবা ও তোমার ভালো বন্ধু তাই হয়তো এখন তুমি এই কথা বলছো।
কালকে যখন ও আমার নামে তোমাকে বলবে যে আমি অন্য মেয়েকে নিয়ে ঘুরি। তখন তুমি সত্তিটা না জেনেই আমাকে সন্দেহ করবে।
আর বেশির ভাগ সম্পর্ক এই জন্যই নষ্ট হয়।
আর একজন মানুষের কাছে দুইজন সমান গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে না।
আর আমি চাই না যে, তুমি ইসমাইলের সাথে কথা বলো।
আর তোমার কাছে কে বেশি গুরুত্বপূর্ণ আমি না ইসমাইল?
আদিবাঃ এটা কেমন প্রশ্ন রাব্বি। তোমরা দুজনেই আমার লাইফে সমান গুরুত্বপূর্ণ।
তোমাকে আমি ভালোবাসি আর ইসমাইল আমার বন্ধু।
আর কোনো কারন ছাড়া কিভাবে আমি ইসমাইলের সাথে সম্পর্ক নষ্ট করতে পারি?
রাব্বিঃ আচ্ছা তোমার ইসমাইলের সাথে সম্পর্ক নষ্ট করতে হবে না। যদি কোনদিন ইসমাইল তোমাকে প্রপোজ করে তখন।
আদিবাঃ আশাকরি এমনটা কখনও আসবে না। যদি এমনটা হয় তাহলে ওর সাথে আর কোনো সম্পর্ক থাকবে না।
রাব্বিঃ আচ্ছা এখন এসব কথা বাদ দেই।
আমার জন্য কেনো আদিবার রিলেশন ভেংগে যাবে।
ও তো আমাকে শুধুই ওর বন্ধু ভাবে। আমিই শুধু ওকে ভালোবাসি।
আর রাব্বি হয়তো চায় না যে, আদিবা আমার সাথে কথা বলুক।
আমি না হয় ওদের থেকে দূরে চলে যাবো।
তারপর কিছুখন পর পানি নিয়ে ওদের কাছে গেলাম।
আচ্ছা তোমরা কথা বলো আমি যাই।
আদিবাঃ কেনো? তুইও আমাদের সাথে থাক।
ইসমাইলঃ না। তোরা আড্ড দে। আমার আবার হোটেলে যেতে হবে।
রাব্বিঃ আচ্ছা যাও।
তারপর আমি ওদের ওখান থেকে চলে আসলাম।
আমি চাই না আমার জন্য ওদের সম্পর্ক নষ্ট হোক।
তাই ওদের আর বিরক্ত করলাম না।
বাসায় এসে গোসল করলাম। তারপর কিছুখন শুয়ে থেকে হোটেলে গেলাম।
আজকেও ঠিক সময়ে চলে আসলাম। তাই ম্যানেজারের আর বকা খেতে হলো না।
কাজগুলোও ঠিকভাবে করতে লাগলাম।
রাতে বাসায় এসে শুয়ে শুয়ে ভাবছি। এখন থেকে আদিবাকে ভুলে থাকার চেষ্টা করতে হবে।
জানি ওকে ভুলে থাকা আমার পক্ষে খুবই কঠিন।
কিন্তু এছাড়া আর কোনো পথ নেই। আমার ভালোবাসা কোনোদিনও সফল হবে না।
বরং এভাবে চলতে থাকলে কোনোদিন জানি আদিবাকে প্রপোজ করে বসি।
তখন হয়তো ও আমাকে অনেক খারাপ ভাববে। আর বন্ধুত্তটাও নষ্ট করে দিবে।
তাই এখন থেকে কলেজে যটতা সম্ভব কম কথা বলতে হবে ওর সাথে।
তাহলে হয়তো ওর মায়ায় পড়বো না।
রাতে আর আদিবাকে ফোন দিলাম না।
সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে কলেজে গেলাম।
ক্লাস শুরু হওয়ার মাএ কিছুখন আগে গেলাম।
গিয়ে দেখি আমার আগেই আদিবা চলে এসেছে।
ক্লাসের সময় হয়ে গেছে তাই আর আদিবার সাথে তেমন কথা হয় নাই।
তারপর ক্লাস করে ওর সাথে কিছুখন আড্ডা দিয়ে বাসায় চলে আসলাম। আগের তুলনায় অনেক কম কথা বললাম।
বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে কিছুখন রেস্ট নিলাম। তারপর হোটেলে গেলাম।
কাজ করতে করতে হঠাৎ একটা টেবিলের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলাম।
কারন সেখানে রাব্বি ছিল আর ওর পাশে একটা মেয়ে বসা ছিল।
তারপর একটু আড়ালে গিয়ে ওদের কথা শুনতে লাগলাম।
মেয়ে: বাবু তুমি এখন আর আমার সাথে আগের মত কথা বলো না কেনো?
রাব্বিঃ আসলে বাবু ইদানিং একটু ব্যাস্ত ছিলাম তো তাই। এখন থেকে তোমাকে অনেক সময় দিব।
রাগ করো না বাবু। আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি।
মেয়েঃ আমি জানি আমার বাবুটা আমাকে অনেক ভালোবাসে।
ওদের কথা শুনে তো আমি অবাক হয়ে গেছি।
তারমানে রাব্বি আদিবাকে ধোকা দিচ্ছে। আর ও একটা প্লে বয়।
না জানি আরও কত মেয়ের সাথে সম্পর্ক আছে ওর।
কাজ শেষ করে বাসায় এসে শুয়ে শুয়ে ভাবছি
আদিবাকে যদি রাব্বির কথা বলি তাহলে হয়তো ও বিশ্বাস করবে না।
কারন ওই দিন রাব্বি ওকে পার্কে যেভাবে বলেছে তারজন্য হয়তো আমাকে ভুলও বুজতে পারে।
কিন্তু এটা যদি না বলি তাহলে হয়তো পরবর্তিতে ওর অনেক ক্ষতিও হতে পারে।
আর যা বুজলাম রাব্বি মোটেও ভালো না।
না ও আমাকে ভুল বুজলেও আমাকে এই কথাটা ওকে বলতেই হবে।
নয়তো ওর অনেক ক্ষতি হবে।
আর আমি চাই না আদিবার কোনো ক্ষতি হোক।
পরেরদিন কলেজে গিয়ে আদিবার আসার অপেক্ষা করতে লাগলাম।
কিছুখন পর আদিবা আসলো
ইসমাইলঃ আদিবা আমি তোকে কিছু বলতে চাই? যানি না তুই কি মনে করবি।
আদিবাঃ আমি কিছুই মনে করবো না। তুই বল।
ইসমাইলঃ গতকালকে রাব্বি আমার হোটেলে এসেছিল একটা মেয়েকে নিয়ে তারপর আমি ওদের সব কথা শুনলাম। ওরা একে অপরকে ভালোবাসে। আর আমার মনে হয় ও একটা প্লে বয়। ও তোকে ভালোবাসে না। ও শুধু তোকে ব্যবহার করতে চায়।
তারপর আদিবা……………..?
পর্ব ০৮
ইসমাইলঃ গতকালকে রাব্বি আমার হোটেলে এসেছিল একটা মেয়েকে নিয়ে তারপর আমি ওদের সব কথা শুনলাম। ওরা একে অপরকে ভালোবাসে। আর আমার মনে হয় ও একটা প্লে বয়। ও তোকে ভালোবাসে না। ও শুধু তোকে ব্যবহার করতে চায়।
আদিবাঃ -ঠাসসসস, ঠাসসসস তোর সাহস কি করে হয় রাব্বির সম্পর্কে এসব কথা বলার
তোকে আমি আমার একজন ভালো বন্ধু মনে করতাম।
কিন্তু তোর চিন্তা- ভাবনা যে এতটা খারাপ তা আগে জানা ছিল না।
রাব্বির সাথে আমার সম্পর্ক নষ্ট করে তোর কি লাভ?
ও বুজেছি ভালোবাসিস আমায়। তুই ভাবলি কি করে তোকে আমি ভালোবাসবো।
তোকে শুধু আমার একজন ভালো বন্ধু মনে করতাম।
কিন্তু আজকের পর আমি ভুলে যাবো যে, আমার তোর মত কোনো বন্ধু ছিল।
তুই আর কখনও আমার সাথে কথা বলবি না।
ওই দিন পার্কে রাব্বি ঠিকই বলেছিল। কিন্তু আমিই ওর কথা বিশ্বাস করি নি।
যা আমার সামনে থেকে।
চোখের পানি মুছে সেখান থেকে চলে আসলাম।
আদিবা রাব্বির ভালোবাসায় অন্ধ হয়ে গেছে। তাই ওর আমার কথা বিশ্বাস হচ্ছে না।
কিন্তু ও যে আমাকে কলেজে সবার সামনে থাপ্পর মারবে তা আমি কল্পনাও করি নি।
কিন্তু আমি আদিবাকে কি করে বিশ্বাস করাবো যে আমি যা বলেছি সব সত্যি।
আমি জেনে শুনে কিভাবে আদিবার ক্ষতি হতে দিতে পারি?
ও আমাকে ভালো না বাসলেও আমি তো বাসি।
তারপর সেখান থেকে ক্লাসে চলে গেলাম।
আদিবার সাথে পরিচয় হবার পর এই প্রথম বার ও আমার সাথে একিই বেন্চে বসে নায়।
আমি আগে থেকেই সামনের বেন্চ বসে ছিলাম।
ভেবেছিলাম হয়তো তখন রাগের মাথায় অনেক কিছু বলে ফেলেছে। এখন ঠিকই আমার পাশে বসবে।
কিন্তু আমার ধারনা ভুল প্রমান করে দিয়ে ও আমার পিছনের বেন্চে বসলো।
অনেক কষ্টে ক্লাস করলাম। ক্লাস শেষ হবার পর আদিবা আমাকে রেখেই একা চলে গেছে।
আদিবার এই অবহেলায় খুবই কষ্ট হচ্ছে।
আমি কলেজ থেকে বাসায় চলে আসলাম।
ফ্রেশ হয়ে কিছুখন রেস্ট করলাম তারপর হোটেলে চলে আসলাম
আদিবাঃ ইসমাইল আমার সাথে এমনটা করবে কখনও কল্পনাও করি নাই।
শেষ পর্যন্ত রাব্বির কথাই সত্তি হলো। সেদিন যদি ওর কথা বিশ্বাস করতাম তাহলে আজকে এই দিনটা দেখতে হতো না।
ইসমাইলের চিন্তা – ভাবনা এতটা খারাপ তা আগে বুজতে পারি নাই।
বিকালে রাব্বির সাথে নদীর পাড়ে ঘুরতে গেলাম।
রাব্বিঃ কি ব্যাপার আদিবা। তোমার মন কি খারাপ?
আদিবাঃ কখনও ভাবতেই পারি নাই যে, আমার জিবনে এইরকম একটা ঘটনা ঘটবে।
রাব্বিঃ কি হয়েছে?
আদিবাঃ ইসমাইল যে এতটা খারাপ তা আগে জানা ছিল না। ওকে আমি আমার একজন ভালো বন্ধু মনে করতাম।
ওর কত বড় সাহস তোমার সম্পর্কে বাজে কথা বলে।
রাব্বিঃ কি বলেছে?
আদিবাঃ তোমাকে নাকি ও কোন মেয়ের সাথে দেখেছে। তোমরা নাকি একে অপরকে ভালোবাসা।
কথাটা শুনে আমার এতটা রাগ হয়েছিল যে, সাথে সাথেই ওকে থাপ্পর মেরেছি।
আর ওর সাথে বন্ধুত্ত শেষ করেছি।
সেদিন তোমার কথা বিশ্বাস না করে অনেক বড় ভুল করে ফেলছি।
রাব্বিঃ যা হবার হয়েছে। এটা নিয়ে আর চিন্তা করো না। তুমি যা করেছো ভালোই করেছো।
ওইদিন তো আমার কথা বিশ্বাস করলে না। আর এখন নিজেই তো দেখলে।
আমার আগেই সন্দেহ হয়েছিল। ওকে দেখে আমার মোটেই ভালো ছেলে মনে হয় নি।
ও তোমার টাকা দেখে তোমার সাথে বন্ধুত্ত করেছে।
তারপর তোমাকে ভালোবাসার ফাঁদে ফেলে সব সম্পত্তি ওর নামে করতে চেয়েছিল।
আদিবাঃ ঠিকই বলেছো। কিন্তু ওর আর সেই সুযোগ কখনও পাবে না।
রাব্বিঃ আচ্ছা এখন এইসব কথা বাদ দেও। চলো আমরা সামনের দিকটায় যাই।
হোটেলে এসে কাজ করতে লাগলাম। কাজ শেষ করে রাতে বাসায় আসলাম।
বিছানায় শুয়ে শুয়ে ভাবছি।
আবার আমি একা হয়ে গেলাম। আদিবাকে কিরে বুজাবো যে, রাব্বি ভালো ছেলে নয়।
আমার নাম্বার ও ব্লাক লিস্টে রেখেছে।
ও রাব্বির ভালোবাসায় অন্ধ হয়ে গেছে।
একদিন আগেও কলেজের সবাই জানতো আমরা দুজন খুব ভালো বন্ধু।
আর আজকে সেই আদিবাই আমাকে সবার সামনে থাপ্পর মারলো।
এতটাও অন্ধ ভাবে কাউকে ভালোবাসা উচিত নয়। ও একবার পরিক্ষা করে দেখতে পারতো যে আমি সত্তি বলছি না মিথ্যা।
কালকে কলেজে যাওয়ার পর আদিবাকে আবার বুজাতে হবে।
ও আমাকে যতই অপমান করুক না কেনো।
ওর সামনে আমাকে সত্তিটা তুলে ধরতেই হবে।
সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে কিছুখন পড়লাম। তারপর কলেজে গেলাম।
কলেজে গিয়ে দেখলাম আদিবা ওর বান্ধুবিদের সাথে কথা বলছে।
ইসমাইলঃ আদিবা তোর সাথে আমার কথা আছে।
আদিবাঃ তোকে বলেছি না তুই আর কখনও আমার সামনে আসবিনা। আর কখনও আমার সাথে কথা বলবি না।
তারপরও বেহায়ার মত কেনো আবার আমার কাছে এসেছিস।
ইসমাইলঃ দেখ আদিবা তুই আমাকে যা বলার বল। দয়া করে আমার কথাটা একবার বিশ্বাস কর।
তুই ওর ভালোবাসায় অন্ধ হয়ে গেছিস তাই এখন তোর আমার কথা বিশ্বাস হচ্ছে না।
তুই একবার চিন্তা করে দেখ। আমি সত্তেও বলছি না মিথ্যা।
আদিবাঃ অনেক হয়েছে আর একবারও রাব্বির সম্পর্কে বাজে কথা বলবি না।
তোর কপাল ভালো যে, আমি তোর মত একটা ছেলের সাথে বন্ধুত্ত করেছিলাম।
কিন্তু তুই আমার সেই বন্ধুত্তের সুযোগ নিলি।
তোর কি মনে হয় রাব্বির সম্পর্কে এসব বললেই আমি রাব্বিকে ভুল বুজবো।
তারপর তোকে ভালোবাসবো। তোর কি মনে হয় আমি কিছু বুজি না।
তুই আমাকে ভালোবাসার ফাঁদে ফেলে আমার কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিতে চাস।
তোর সাথে বন্ধুত্ত করাই ছিল আমার জিবনের সবথেকে বড় ভুল।
আর এখন তা বুজতে পারছি।
তুই আর কখনও আমার সামনে আসবি না।
এই বলে আদিবা চলে যেতে লাগলো।
তখনই আমি আদিবার হাত ধরে ওকে কিছু বলতে যাবো তার আগেই।
আদিবাঃ ঠাসসসস, ঠাসসসস ছোটলোকের বাচ্চা তোর সাহস কি করে হয় আমার হাত ধরার।
তুই কোন সাহসে আমার হাত ধরলি।
আরে তোর তো মনে হয় জন্মেরই ঠিক নেই। তুই ভাবলি কি করে আমি তোকে ভালোবাসবো।
তোকে করুনা করে তোর সাথে বন্ধুত্ত করেছিলাম। কিন্তু তুই তার যোগ্য নস।
তোর মত এতিম ছেলেকে কেও কোনোদিন ভালোবাসবে না।
চোখের পানি মুছে বলতে লাগলাম।
ইসমাইলঃ এটা ঠিক যে আমি তোকে ভালোবাসি। কিন্তু এটা ঠিক নয় যে আমি তোর টাকার লোভে তোকে ভালোবাসি।
তুই ঠিকই বলেছিস আমার হয়তো জন্মেরই ঠিক নাই। তাইতো আমি জানি না যে কে আমার মা বাবা।
তোর সাথে পরিচয় হবার আগ পর্যন্ত আমার জিবনে কখনও খুশি আসে নি।
তুই ঠিকই বলেছিস যে আমি একটা এতিম ছেলে।
তোর সাথে পরিচয় হবার পর আমি ভুলেই গেছিলাম যে আমি একটা এতিম ছেলে।
আজকে তুই মনে করিয়ে দিয়ে ভালোই করেছিস।
আজকের পর থেকে এই এতিম ছেলেটা তোকে আর বিরক্ত করবে না।
তবে একটা কথা মনে রাখ একদিন ঠিকই তুই আমার কথা বুজবি। হয়তো তখন আমি থাকবো না।
তারপর সেখান থেকে চলে এসে একটা বেন্চের উপর বসে আছি আর চোখের পানি ফেলতেছি।
হঠাৎ করে সাকিব আমার কাছে এসেই ঠাসসসস, ঠাসসসস তোর সাহস কি করে হয় আদিবার হাত ধরার।
সাকিবঃ–এতদিন আদিবার জন্য তোকে কিছু বলতে পারি নাই।
ভেবেই পাচ্ছি না যে তোর মত ছেলের সাথে আদিবা কি করে বন্ধুত্ত করলো।
যাক অবশেষে আদিবা ওর ভুল বুজতে পেরেছে।
আজকে তোকে এমন মারবো যে আর কোনোদিনও আদিবার পিছে পড়বি না।
তারপর আমাকে অনেক মারলো। কোনো কিছুই বলতে পারি নাই।
মুখ বুজে সব সয্য করেছি।
আমি তো আদিবার কোনো ক্ষতি করি নি। শুধু ওর সাহায্য করতে চাইছিলাম।
কিন্তু তার প্রতিদান ও এইভাবে দিবে তা আমি কোনোদিনও ভাবতে পারি নাই।
কোনমতে বাসায় চলে আসলাম। বাসায় এসেই শুয়ে পড়লাম।
হাতে কোনো টাকাও নেই যে ডাক্তার দেখাবো। মারের কারনে জ্বর চলে আসলো।
চোখ দুটো বন্ধ হয়ে আসছে। আর কিছু মনে নেই।
চোখ খুলি দেখি আমি একটা বিছানায় শুয়ে আছি।
তারপর পাশে তাকিয়ে দেখলাম যে পাসের বাসার বড় ভাই আছে।
আমি চোখ খুলছি দেখেই বলতে লাগলো
বড় ভাইঃ তোর জ্ঞান ফিরেছে। আমি ডাক্তারকে নিয়ে আসি।
তারপর বড় ভাই ডাক্তার নিয়ে আসলো। ডাক্তার আমাকে দেখার পর বললো,
ডাক্তারঃ আর কোনো ভয় নেই। রোগী এখন বিপদ মুক্ত। দুই- তিন দিন পরই বাসায় নিয়ে যেতে পারবেন।
এটা বলে ডাক্তার চলে গেল।
তারপর আমি বড় ভাইকে বলতে লাগলাম
ইসমাইলঃ ভাই আমি হাসপাতালে কেনো? আমার কি হয়েছিল। আর আমি এখানে এলামই বা কি করে?
বড় ভাইঃ আমি তোর বাসার পাস দিয়ে যাওয়ার সময় দেখি তোর রুমের দরজা খোলা।
এই সময়ে সাধারনত তোর রুমের দরজা খোলা থাকে না।
তাই ভাবলাম হয়তো কোনো চোর হবে।
তাই তোর রুমের কাছে গেলাম। আর দেখলাম তুই বিছানার উপর শুয়ে আছিস।
তোকে দেখে মনে হলো তুই এক্সিডেন্ট করেছিস।
তারপর কাছে গিয়ে তোকে অনেক ডাকলাম। কিন্তু কোনো সাড়া শব্দ পেলাম না।
তখন তোর গায়ে হাত দিলাম। তোর শরীর গরম ছিল অনেক।
তারপর তোকে হাসপাতালে নিয়ে আসলাম। আর আজকে দুই দিন পর তোর জ্ঞান ফিরলো।
ইসমাইলঃ বড় ভাইর কাছ থেকে এসব শোনার পর আমি আমার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনার কথা মনে করতে লাগলাম।
মনে করতেই চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো।
বড় ভাইঃ তোর চোখে পানি কেনো? কি হয়েছে আমাকে বল তো?
তারপর বড় ভাইরে আমার সাথে ঘটে যাওয়া সব কিছু বললাম।
বড় ভাইঃ- এত কিছু হয়েছে তোর সাথে! ! মন খারাপ করিস না। দেখবি একদিন ঠিকই আদিবা ওর ভুল বুজতে পারবে। আর সেই দিন এসে ও তোর কাছে মাফ চাইবে।
ইসমাইলঃ হয়তো সেইদিন আমি থাকবো না।
বড় ভাইঃ ধুর যতসব বাজে কথা। এখন একটু ঘুমা তোর শরীর খুবই দুর্বল। আমি একটু বাসা থেকে আসি।
ইসমাইলঃ আচ্ছা ভাই।
তারপর শুয়ে শুয়ে ভাবতে থাকলাম।
মানুষ বড়ই অদ্ভুত। এক সময় আদিবা আমাকে বলেছিল আমি যেন আর কোনদিন নিজেকে এতিম না বলি।
কিন্তু সেই আদিবাই আমাকে এতিম বলে অপমান করলো।
কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম নিজেও জানি না।
কিছুখন পর ঘুম ভাংলো। দেখলাম বড় ভাই আমার পাশে।
ইসমাইলঃ যাকে আমার সবকিছু ভেবেছিলাম তার জন্যই আজকে আমার এই অবস্থা।
অথচ আপনি আমার রক্তের কেউ নন। তারপরও আমার জন্য এতকিছু করেছেন।
জানি না আপনার এই ঋন আমি কি ভাবে শোধ করবো?
বড় ভাইঃ অনেক বেশি কথা বলিস তুই। তোকে বলেছি ঋন শোধ করতে।
তুই না আমি তোর ঋন কিভাবে শোধ করবো জানি না?
ইসমাইলঃ মানে?
বড় ভাইঃ তুই ওইদিন যদি আমার বোনকে রক্ত না দিতি তাহলে হয়তো তাকে বাঁচানো যেত না।
তাছাড়া তোর মত ছেলে আমি খু্ব কমই দেখেছি। তোর জাগায় যদি অন্য কোন ছেলে থাকতো তাহলে হয়তো খারাপ পথে যেত।
কিন্তু তুই ঠিক তার উল্টো।
আমার বিশ্বাস একদিন তুই অনেক বড় হবি।
দুই দিন হাসপাতালে থাকার পর আজকে রিলিজ দিল।
এই দুই দিন বড় ভাই প্রায় সব সময়ই আমার পাশে ছিল।
হাসপাতাল থেকে রিলিজ পেয়ে বাসায় চলে আসলাম।
এখন অনেকটাই সুস্থ।
বাসায় আসার পর রেস্ট নিয়ে হোটেলে গেলাম।
অনেকদিন হোটেলে যাই না জানি না ম্যানেজার কি বলবে।
হোটেলে যাওয়ার পর আমাকে দেখেই ম্যানেজার বললো,
ম্যানেজারঃ তুমি এখানে কেনো?
ইসমাইলঃ স্যার আমি খুবই দুঃখিত। এতদিন না আসার জন্য। আসলে—-
ম্যানেজারঃ আর কিছু বলতে হবে না। আমি কি তোমার কাছে কিছু জানতে চেঁয়েছি?
এতদিন আসো নায় ভালো কথা। আর আসতেও হবে না।
এই নাও তোমার পাওনা টাকা। আর এখান থেকে বিদায় হও।
ইসমাইলঃ স্যার দয়া করে আমার সাথে এমনটা করবেন না। এই চাকরি তা আমার খুব প্রয়োজন। দয়া করে আমাকে চাকরি থেকে বহিস্কার করবেন না
আপনি আমার কথাটা একবার শুনুন। তারপর যা সিদ্ধান্ত নেবার নেবেন।
ম্যানেজারঃ তোমার কোন কথা আমি শুনতে চাই না। তুমি যদি আর একমুহূর্তও এখানে দাঁড়াও তাহলে আমি দাঁড়োয়ান ডাকতে বাধ্য হবো।
ইসমাইলঃ না স্যার। তার আর দরকার হবে না আমি চলে যাচ্ছি।
তারপর সেখান থেকে চলে আসলাম। রাস্থা দিয়ে হাঁটছি আর ভাবছি।
অবহেলিত জিবনটা এত কম সময়ে ইতি ঘটবে তা ভাবতে পারি নি।
জিবন সংগ্রামে বাঁচতে অনেক যুদ্ধ করেছি।
আমি যত উপরে উঠছি। মানুষ নামাকে তত নিচের দিকে টেনে নিচ্ছে।
জিবনে কখনও কারও ভালোবাসা পাই নি। প্রথমবার কেউ একজন আমার সংগ দিয়েছিল।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেও আমাকে ছেড়ে চলে গেছে।
আদিবা ঠিকই বলেছে। আমার হয়তো জন্মেরই ঠিক নেই।
তাইতো জানিও না কে আমার বাবা- মা।
আজকে যদি এই রাস্তায় আমার মৃত্যু হয়। তাহলে হয়তো আমার লাশটাও দাফন হবে না।
এই দুনিয়া বড়ই অদ্ভুত যে যুদ্ধ করতে চায় তাকে আরও যুদ্ধ করতে হয়।
তবে একটা ইচ্ছা মনে হয় অপূর্নই থেকে যাবে।
যদি আমার পরিচয়টা একবার জানতে পারতাম। তাহলে আর কোনো কষ্ট থাকতো না।
তাহলে কেউ আর বলতে পারতো না যে আমার জন্মের ঠিক নেই।
শেষ বারের মত এই পৃথিবীটাকে দেখে নিচ্ছে।
আত্তহত্যা করতে যাবো তখনই শুনতে পেলামমমম
পর্ব ০৯
আত্তহত্যা করতে যাবো তখনই শুনতে পেলাম।
এই আপনাকে বলেছি না আর বিরক্ত করবেন না। বারবার এসে একিই কথা কেনো জিগ্গেস করেন।
বারবার জিগ্গেস করলে কি জামাটার দাম কমে যাবে।
যেটা কিনতে পারবেন না সেটা নিয়ে পরে আছেন কেনো।
কোথা থেকে যে আসে এই সব রাস্তার মহিলা।
আমি পাশে দোকানের দিকে তাকিয়ে দেখলাম
দোকানদার একটা মহিলাকে এই কখা গুলো বলছে।
আমি দোকানদারকে গিয়ে জিগ্গেস করলাম
ইসমাইলঃ কি হয়েছে?
দোকানদারঃ দেখেন ভাই এই জামাটার দাম ৮০০ টাকা। আর মহিলা বারবার এসে বলছে তাকে ৪০০ টাকায় দিতে।
আপনি বলেন ভাই ৮০০ টাকার জামা ৪০০ টাকায় কি ভাবে দিব।
তারপর আমি সেই মহিলাকে জিগ্গেস করলাম
ইসমাইলঃ আপনি এই জামাটা দিয়ে কি করবেন?
মহিলাঃ বাবা এই জামাটা আমার মেয়ের জন্য কিনতে চেয়েছিলাম।
আমার মেয়েটা ক্লাস ৮ এ পড়ে। অনেক কষ্ট করে মানুষের বাসায় কাজ করে ওর লেখাপড়া করাই।
আমার মেয়েটা আজকে তিন দিন ধরে অসুস্হ। টাকার অভাবে ডাক্তার দেখাতে পারি নাই।
আজকে মেয়েটা আমার কাছে একটা নতুন জামা চেয়েছে। কোনোদিনও ওকে নতুন জামা কিনে দিতে পারি নাই।
ও খুবই অসুস্হ। হয়তো চিকিৎসার অভাবে আর বেশিদিন ওকে বাঁচাতে পারবো না।
তাই ওর এই ইচ্ছাটা পূরন করতে চেঁয়েছিলাম।
আর সকাল থেকে ভিক্ষা করে এই ৪০০ টাকা পেয়েছি।
এগুলো বলেই কান্নায় ভেংগে পড়লেন ওনি।
ওনার কথা শুনে আমারও চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো।
তারপর নিজের টাকা দিয়ে ওই জামাটা কিনে মহিলাকে বললাম।
ইসমাইলঃ এই নিন। আর চলেন আপনার মেয়েকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।
মহিলাঃ তুমি কেনো নিজের টাকা দিয়ে জামা কিনছো? আর আমার মেয়েকে ডাক্তার ও দেখাবা।
ইসমাইলঃ এই দুনিয়ায় আমার কেউ নেই। আমি জানি না কে আমার বাবা- মা।
আমি একটু আগে আত্তহত্যা করতাম। কিন্তু আল্লাহ তা’য়ালা আমাকে তা করতে দেয় নি।
হয়তো ওনি আমাকে একটা পরিবার দিতে চেঁয়েছিলেন। এখন আমি বাঁচবো আমার মা আর বোনের জন্য বাঁচবো।
আজ থেকে আপনি আমার মা। আর আপনার মেয়ে আমার বোন।
মহিলাঃ কিন্তু বাবা তুমি কেনো আত্তহত্যা করতে গেলে?
তারপর তাকে আমার জিবনের সবকিছু বললাম।
মহিলাঃ কেঁদো না বাবা। দেখবা সব ঠিক হয়ে যাবে।
তারপর তার বাসায় গেলাম। তার মেয়েকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলাম।
তিন দিন পর আজকে সুস্হ হলো। আমাকে দেখেই বলতে লাগলো
মেয়েঃ মা ওনি কে?
ইসমাইলঃ আজ থেকে আমি তোমার বড় ভাই। তোমার নাম কি?
মেয়েঃ জান্নাত। কিন্তু তুমি আমার বড় ভাই কি করে হলে?
তারপর মা জান্নাতকে সব কিছু খুলে বললো,
জান্নাতঃ জানো ভাইয়া আমার সাথে না কেউ ভালো ব্যবহার করে না। স্কুলে সবাই আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করে।
তখন ভাবতাম যদি আমার একটা বড় ভাই থাকতো তাহলে কেউ আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করতে পারতো না।
আমি জান্নাতকে জড়িয়ে ধরে বললাম।
ইসমাইলঃ এখন থেকে কেউ তোর সাথে খারাপ ব্যবহার করতে পারবে না। কারন এখন তোর ভাই আছে।
জান্নাত আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো।
জান্নাত সুস্হ হলে ওকে আর মাকে নিয়ে হাসপাতাল থেকে আমার বাসায় নিয়ে গেলাম।
আল্লাহ যা করে ভালোর জন্যই করে। হয়তো তিনি আমাকে একটা পরিবার দিতে চেঁয়েছিলেন।
তাই হয়তো আমাকে জিবীত রেখেছেন।
কিন্তু আর একটা জিনিস ভেবে খুবই চিন্তা হচ্ছে।
সেটা হলো, কিভাবে পরিবারের খরচ চালাবো?
বাসার সামনে বসে এগুলো ভাবছি তখনই বড় ভাই বললো,
বড় ভাইঃ ইসমাইল তোর বাসায় এরা কারা?
ইসমাইলঃ বড় ভাইকে সব কিছু খুলে বললাম।
বড় ভাইঃ ভালোই হয়েছে। তুই একটা পরিবার পেলি। তা তোকে এত চিন্তিত লাগছে কেনো?
ইসমাইলঃ হাসপাতালে থাকার কারনে তো হোটেলে যেতে পারি নাই। তাই চাকরিটা চলে গেছে।
এখন ভাবছি কিভাবে খরচ চালাবো?
বড় ভাইঃ এত ভাবতে হবে না। তোর তো হোটেলে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে।
আমি তোকে অন্য একটা হোটেলে কাজ দিয়ে দিব।
ইসমাইলঃ অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া। আপনার এই ঋন আমি হয়তো কোনোদিনও শোধ করতে পারবো না।
আপনি না থাকলে হয়তো আমি এতদিনে বেঁচেই থাকতাম না।
বড় ভাইঃ আর কখনও এই কথা বলবি না। আর সন্ধার সময় তৈরি থাকিস। তোকে নিয়ে সেই কাজের জন্য যাবো।
ইসমাইলঃ আচ্ছা ভাই।
তারপর বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে কিছু খেয়ে জান্নাতকে নিয়ে বাসার কাছে একটা স্কুলে গেলাম।
ওকে সেখানে ভর্তি করিয়ে দিলাম।
দুপুরে বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে সবাই মিলে খেতে বসলাম।
খাওয়া-দাওয়ার পর একটু ঘুমালাম।
সন্ধায় বড় ভাইয়ের সাথে তার পরিচিত একটা হোটেলে গেলাম।
বড় ভাই হোটেল ম্যানেজার এর সাথে কথা বলছে।
কিছুখন পর আমাকে ডাকলো।
আমাকে জিগ্গেস করলো যে, আমি কোন সময় থেকে কাজ করতে পারবো।
আগের হোটেলে যেই সময়ে করতাম ওই সময়ের কথা বললাম।
তারা কালকে থেকে কাজে যোগ দিতে বললো,
তারপর সেখান থেকে বাসায় চলে আসলাম।
রাতে শুয়ে শুয়ে ভাবছি।
সব কিছু যে এত সহজে হয়ে যাবে তা ভাবতে পারি নাই।
বড় ভাই আমার জন্য যা করেছে। হয়তো আপনজনরাও তা করতো না।
ওনি খুবই ভালো একজন মানুষ।
এতদিন ভাবতাম এই দুনিয়ায় আমি একা।
কিন্তু এখন আমি খুবই খুশি। কারন আমার মা আছে। জান্নাতের মত একটা বোন আছে।
এখন থেকে আর নিজেকে কখনও একা মনে হবে না।
শুধু একটা জিনিসই অপূর্ন থেকে গেল। সেটা হলো আদিবা।
আমি তো ওর ভালো চেঁয়েছিলাম। কিন্তু ও আমাকে ভুল বুজলো।
আমাকে অনেক অপমান করলো।
যেদিন রাব্বির সত্তিটা ও জানতে পারবে। সেদিন হয়তো ওর আমাকে মনে পড়বে।
হয়তো ওর সাথে বন্ধুক্ত করাই আমার উচিত হয় নি।
যদি ওর সাথে বন্ধুত্ত না করতাম তাহলে হয়তো ওর মায়ায় পড়তাম না।
আর এখন কষ্টও পেতাম না।
আমার ভালোবাসাটা শুধুই একতরফা। কারন এ ভালোবাসা হয়তো কখনও পূর্নতা পাবে না।
এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়লাম।
সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে কিছু খেয়ে জান্নাতকে নিয়ে স্কুলে গেলাম।
ওকে স্কুলে রেখে আমি কলেজে গেলাম।
অনেকদিন পর কলেজে যাচ্ছি।
কলেজে যাওয়ার পর একটা বেন্চের উপর একা একা বসে আছি। কারন এখনও ক্লাসের সময় হয় নি।
আগে হলে আমার সাথে আদিবা বসে থাকতো।
কিন্তু এখন আর তা সম্ভব নয়।
দূর থেকে দেখলাম। আদিবা ওর বন্ধুদের সাথে কথা বলছে।
আদিবা আমাকে দেখি নি। কারন আমি এমন ভাবে আছি যাতে আদিবার চোখ আমার উপর
ও আমাকে বলেছিল আমার মুখ যাতে ওর দেখতে না হয়। তাই যতটা সম্ভব ওর থেকে দূরে থাকতে হবে।
একটু আগে ভুলবশত ওর দিকে চোখ পড়েছে।
না আর কখনও বেহায়ার মত ওর দিকে তাকানো যাবে না।
এসব ভাবছি তখনই পেছন থেকে কে যেন বলল..।
তুই লুকিয়ে লুকিয়ে আদিবাকে কেনো দেখছিস?
পিছনে তাকিয়ে দেখলাম সাকিব আমাকে বলছে।
ইসমাইলঃ আমি ইচ্ছে করে তাকাই নি। হঠাৎ করেই চোখ পড়ে গেছে।
সাকিবঃ এতদিন আদিবার জন্য তোকে কিছু বলতে পারি নাই। ওর সাথে থেকে তো খুবই ভাব নিতি।
তা এখন কোথায় গেলো তোর সেই ভাব।
কিছু বললাম না। মাথা নিচু করে আছি।
সাকিবঃ কিরে কথা বলছিস না কেনো?
ইসমাইলঃ ক্লাসের সময় হয়ে গেছে আমি যাই।
সাকিবঃ আরে দাঁড়া। এত তাড়া কিসের। তার আগে আমাদের একটা কাজ করে দিয়ে যা।
ইসমাইলঃ কি কাজ?
সাকিবঃ আমাদের জন্য সিগারেট নিয়ে আয়।
ইসমাইলঃ সরি। আমি আনতে পারবো না। অন্য কিছু করতে বলেন।
সাকিবঃ তুই পারবি না তোর বাপ পারবে। ওই দিনের মারের কথা এত তাড়াতাড়িই ভুলে গেলি।
তুই যদি সিগারেট আনতে না যাস। তাহলে তোর এমন অবস্থা করবো। তা তুই ভাবতেও পারবি না।
তারপর বাধ্য হয়ে সিগারেট আনতে গেলাম।
কিন্তু আর একটা সমস্যা বেঁধে গেল।
সেটা হলো সিগারেট আনতে গেলে আদিবাদের সামনে দিয়ে যেতে হবে।
বাধ্য হয়েই নিচের দিকে তাকিয়ে হেঁটে গেলাম। যাতে আদিবাকে না দেখতে হয়।
তারপর সিগারেট নিয়ে সাকিবের কাছে দিয়ে আমি ক্লাসে চলে গেলাম।
মিমঃ দেখেছিস কত বড় সাহস কলেজ ক্যাম্পাসে হাতে সিগারেট নিয়ে ঘুরে।
আদিবাঃ মিম তুই এইসব ফালতু ছেলের কথা বাদ দে তো। ওর মত ছেলেরা এছাড়া আর কি বা করতে পারে।
মিমঃ তা ঠিক বলেছিস। ওকে দেখে অনেক ভদ্র ছেলে মনে হলেও। ও একটা ফালতু ছেলে।
তুই এইরকম একটা ছেলের সাথে যে কি করে এতদিন বন্ধুত্ত করলি। আমি তাই ভেবে পাচ্ছি না।
আদিবাঃ আগে কি করেছি তা নিয়ে ভাবলে চলবে না। সামনে কি করবো তা নিয়ে ভাবতে হবে।
তুই ওর কথা বাদ দে তো। অন্য কিছু বল।
মিমঃ আচ্ছা বাদ দিলাম। এখন বল রাব্বি ভাইয়ের সাথে তোর রিলেশন কেমন চলছে।
আদিবাঃ ভালোই চলছে। সে হলো মহা ব্যাস্ত মানুষ। তাই আজকাল আমাকে তেমন সময় দিতে পারে না।
মিমঃ দেখিস পাখি যেন আবার খাঁচা ছেড়ে চলে না যায়। ( হাসতে হাসতে বললাম)
আদিবাঃ ধুর। কি যে বলিস না তুই।
মিমঃ আরে মজা করলাম। রাব্বি ভাইয়া আর যাইহোক ইসমাইলের মত না।
আদিবাঃ কোথায় ওই ফালতু ছেলেটা আর কোথায় রাব্বি। কার সাথে যে তুই কার তুলনা করিস।
মিমঃ আচ্ছা বাদ দে। এখন চল ক্লাসে যাই।
আদিবাঃ চল।
ইসমাইলঃ ক্লাসে এসে সবার পিছনের বেন্চে বসে পড়লাম।
আদিবার সাথে যখন বন্ধুত্ত ছিল তখন ওর সাথেই সামনের বেন্চে বসতাম।
তখন কেওই আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করতো না।
আর এখন আদিবার সাথে বন্ধুত্তও নাই। আর সবার ভালো ব্যবহার ও শেষ।
সামনের বেন্চে আমার জায়গা হয় না। তাই পিছনের বেন্চে বসতে হয়।
ক্লাস শেষ করে। জান্নাতকে ওর স্কুল থেকে নিয়ে বাসায় চলে গেলাম।
ফ্রেশ হয়ে কিছু খেয়ে রেস্ট নিলাম। তারপর হোটেলে গেলাম।
নতুন হোটেলের ম্যানেজার অনেক ভালো তিনি আমাকে অনেক ভালো জানেন।
আর এখানে কাজ করেও অনেক আনন্দ পাচ্ছি। যা আগের হোটেলে পেতাম না।
আদিবাঃ ধুর কিছুই ভালো লাগছে না। এই রাব্বি টা না মনে হয় সারাদিনই ব্যাস্ত থাকে।
এখন একবার ফোন দিয়ে দেখি।
রাব্বিঃ কেমন আছো বাবু?
আদিবাঃ ভালো না।
রাব্বিঃ কেনো? কি হয়েছে?
আদিবাঃ তুমি আগের মতন আর আমার সাথে কথা বলো না। আমাকে সময় দাও না।
রাব্বিঃ সরি বাবু। আসলে ইদানিং খুবই ব্যাস্ত থাকি তো তাই।
এখন থেকে আবার তোমাকে আগের মতন সময় দিব।
রাগ করো না বাবু প্লিজ।
আদিবাঃ আচ্ছা মনে থাকে যেন।
রাব্বিঃ কালকে সকালে নদীর পাড়ে ঘুরতে যাবো আমরা ঠিক আছে।
আদিবাঃ আচ্ছা ঠিক আছে।
রাব্বিঃ এখন ঘুমাও বাবু গুড নাইট।
আদিবাঃ গুড নাইট।
রাব্বির সাথে কথা বলার পর এখন অনেক ভালো লাগছে।
এখন শান্তিতে ঘুমাতে পারবো।
হঠাৎ একটা জিনিস মনে পড়ে গেল।
সেটা হলো শাড়ি। ইসমাইল আমার জন্মদিনে আমাকে একটা শাড়ি দিয়েছিল।
না ওর কোনকিছুই আমার কাছে রাখা সম্ভব নয়।
কালকে আগে কলেজে যেতে হবে তারপর ওকে শাড়িটা দিয়ে রাব্বির সাথে ঘুরতে যাবো।
তার আগে রাব্বিকে বলে নেই যে আমাকে আগে কলেজে যেতে হবে।
রাব্বির নাম্বারে ফোন দিলাম কিন্তু ওয়েটিং। আবার দিলাম তাও ওয়েটিং।
কিছুখন পর রাব্বিই কল দিল।
রাব্বিঃ সরি বাবু। আসলে এক বন্ধর সাথে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা কথা বলছিলাম।
আদিবাঃ ওও।
রাব্বিঃ তা কিসের জন্য কল দিলা?
আদিবাঃ আসলে কালকে আমাকে আগে কলেজে যেতে হবে। তারপর কলেজ থেকে তোমার সাথে যাবো।
রাব্বিঃ আচ্ছা। আমি তোমাকে কলেজ থেকে এসে নিয়ে যাবো।
আদিবাঃ আচ্ছা।
ইসমাইলঃ অনেক রাত হয়ে গেছে এখনও বাসায় যেতে পারি নি।
না জানি মা আর জান্নাত কত চিন্তা করছে। মোবাইল ও তো নাই কারও কাছে যে ফোন দিব।
আমার কাছে যে মোবাইলটা ছিল ওটা তো আদিবার।
ওর সাথে যখন বন্ধুত্ত ছিল। তখন ও আমাকে দিয়েছিল।
আর এখন তো বন্ধুত্ত নাই। তাই এখন আর ব্যবহার করি না। প্যাকেটে ভরে যত্ন সহকারে রেখে দিয়েছি।
ওকে দিয়ে দিতাম। কিন্তু ও তো আমাকে ওর সামনে যেতে নিষেদ করেছে। তাই আর দেওয়া হয় নি।
কোনএকদিন সময় সুযোগ পেলে দিয়ে দিব।
বাসায় চলে আসলাম। আসার পরই মা বললো,
মাঃ আজকে এত দেঁড়ি হলো কেনো বাবা?
ইসমাইলঃ আজকে হোটেলে কাজের চাপ অনেক বেশি ছিল তাই আসতে দেঁড়ি হয়েছে।
তা তোমরা খেয়েছো?
মাঃ তোকে ছাড়া কি করে খাই বাবা।
জান্নাতও খায় নি।
মাঃ না।
ইসমাইলঃ শুধু শুধু এত রাত পর্যন্ত না খেয়ে থাকলে কেনো? তোমাদের কত কষ্ট হয়েছে।
তুমি অসুস্হ মানুষ। জান্নাতও ছোট মানুষ।
আর কখনও এমন করবে না।
জান্নাতঃ তুমি যত যাই বলো না কেনো ভাইয়া। আমরা তোমাকে ছাড়া কখনও খাবো না।
ইসমাইলঃ হয়েছে। আপনার আর পাকনামি করতে হবে না। এখন সবাই মিলে ভাত খাবো।
খেয়ে দেয়ে শুয়ে পড়লাম।
সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে কিছু খেয়ে জান্নাতকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম।
ও একটা জিনিসই তো নেওয়া হয় নি।
তাড়াতাড়ি করে মোবাইলটা ব্যাগের ভিতরে ভরে নিলাম।
প্রতিদিনই মোবাইলটা নিয়ে যাই। যখন সুযোগ পাবো তখনই দিয়ে দিবো।
তারপর জান্নাতকে ওর স্কুলে নামিয়ে দিয়ে আমি কলেজে চলে আসলাম।
একটা বেন্চের উপর বসে আছি। হঠাৎ পেছন থেকে আদিবার কন্ঠের মত কিছু শুনতে পেলাম।
তাকিয়ে দেখলাম আদিবা আমাকে ডাকছে। আর ওর হাতে একটা প্যাকেট।
প্যাকেটটা আমার হাতে দিয়ে বলতে লাগলো।
আদিবাঃ এটা তোর দেওয়া সেই শাড়িটা। আমি চাই না তোর কিছু আমার কাছে থাকুক।
এতদিন মনে ছিল না তাই দিতে পারিনি।
তারপর আমিও ব্যাগ থেকে মোবাইলটা বের করে ওকে দিয়ে দিলাম।
ইসমাইলঃ আমার মত রাস্তার ছেলের হাতে এটা শোভা পায় না। আপনার মোবাইল আপনার কাছেই রাখুন।
আপনার সামনে যেতে নিষেদ করেছিলেন তাই এতদিন দেওয়া হয় নায়।
আদিবাঃ ভালো করেছিস দিয়েছিস। সব জিনিস সবার জন্য না।
এই বলে আদিবা চলে গেল।
আদিবাঃ রাব্বিকে ফোন দিয়ে আসতে বললাম। ও আসার পর নদীর পাড়ে ঘুরতে গেলাম।
নদীর পাশেই একটা পার্ক আছে খুবই সুন্দর।
পার্কের একটা বেন্চের উপর বসে দুজনে গল্প করছি।
রাব্বিঃ আচ্ছা বাবু তুমি আমাকে ভালোবাসো তো?
আদিবাঃ এইটা কি ধরনের প্রশ্ন রাব্বি
রাব্বিঃ আরে রাগ করো না। আমি তো শুধু এমনিতেই জিগ্গেস করলাম।
আমি যদি কিছু বলি তুমি রাগ করবা না তো।
আদিবাঃ রাগ কেনো করবো?
রাব্বিঃ আচ্ছা আমি যদি তোমার কাছে কিছু চাই তুমি দিবে।
আদিবাঃ দেওয়ার চেষ্টা করবো। বলো কি চাইইইই?
পর্বঃ ১০
রাব্বিঃ আচ্ছা আমি যদি তোমার কাছে কিছু চাই তুমি দিবে।
আদিবাঃ দেওয়ার চেষ্টা করবো। বলো কি চাই?
রাব্বিঃআমি তোমার সাথে রুমডেট করতে চাই আদিবা?
আদিবাঃ কি বলছো তুমি এসব। তোমার মাথা ঠিক আছে তো?
রাব্বিঃ তুমি এভাবে রিয়্যাক্ট করছো কেনো? এটা তো আজকালকার যুগে কমন ব্যাপার।
সবাই এটা করে।
আদিবাঃ সবাই করে তারমানে এটা নয় যে আমাদেরও করতে হবে।
আর বিয়ের আগে আমি কখনই এসব করতে পারবো না।
রাব্বিঃ বিয়ে তো আমারা করবোই। তাহলে করলে সমস্যা কি।
আদিবাঃ আমরা বিয়ে করবো এখনও করি নি।
রাব্বিঃ দেখ আদিবা আমার সব ফ্রেন্ডরাই রিলেশন করে। আর ওরা ওদের গার্লফ্রেন্ডের সাথে রুমডেট ও করছে।
আর সবাই এটা করে। আজকালকার রিলেশনই এমন।
আদিবাঃ তারমানে তুমি আমার সাথে রুমডেট করে তোমার ফ্রেন্ডদের এটা বুজাতে চাও যে তুমি আমার সাথে রুমডেট করছো।
আর আজকালকার রিলেশন কেমন তা জানার প্রয়োজনবোধ আমি করছি না।
রাব্বিঃ আমি সেটা বুজাতে চাই নি। আমি তো শুধু তোমাকে এটা বুজাতে চাইছি যে এরকমটা এখন সচারচরই হয়ে থাকে।
আদিবাঃ আমি এটা ভেবে পাচ্ছি না যে, তুমি এরকম নিচু চিন্তা- ভাবনা কি করে করতে পারো।
আমি এ বিষয়ে তোমার সাথে আর কোনো কথা বলতে চাই না। আমি চললাম।
রাগ করেই সেখান থেকে চলে আসলাম। এতটা রাগ হয়েছে রাব্বির উপর তা বলার মত না।
ও কি করে আমায় এমন প্রস্তাব দিতে পারে আমি সেটাই ভেবে পাচ্ছি না।
বাসায় চলে আসলাস। কিছুই ভালো লাগছে না।
দুপুরে না খেয়েই শুয়ে পড়লাম।
বিকালে মিম ফোন দিল।
মিমঃ আজকে কলেজে আসলি না কেনো?
আদিবাঃ রাব্বির সাথে ঘুরতে গিয়েছিলাম।
মিমঃ তোর কন্ঠ এমন লাগছে কেনো? রাব্বি ভাইয়ের সাথে কি কিছু হয়েছে?
আদিবাঃ না। ভালো লাগছে না পরে কথা বলবো।
মিমঃ আচ্ছা আমি তোর বাসায় আসছি।
ফোনে কথা বলতেও ভালো লাগছিল না।
পার্কে থেকে আসার পর রাব্বি আমাকে অনেক কল, ম্যাসেজ দিয়েছিল। কিন্তু আমি রাগের কারনে রিপ্লাই দেই নাই।
কিছুপন পর মিম আসলে ওর সাথে ছাদে গেলাম।
মিমঃ এখন আমাকে বলতো তোর কি হয়েছে? আন্টির কাছে শুনলাম এখনও পর্যন্ত নাকি কিছু খাস নি।
আদিবাঃ রাব্বির উপরে রাগ করেছি।
মিমঃ কেনো? কি হয়েছিল?
আদিবাঃ ও আজকে পার্কে আমাকে রুমডেট করতে ওফার করেছিল।
মিমঃ কি? তা তুই কি বললি?
আদিবাঃ ওর সাথে ঝগরা করে চলে এসেছি।
মিমঃ তা এর সাথে ভাত না খাওয়ার কি সম্পর্ক।
আদিবাঃ আমার কিছুই ভালো লাগছিল না। আমি ভেবে পাচ্ছি না। ও এইরকমটা কি করে করতে পারে।
মিমঃ আমিও ভেবে পাচ্ছি না। যে রাব্বি ভাইয়া এটা কি করে বলতে পারলো।
আপাতত এসব চিন্তা মাথা থেকে বাদ দে।
তারপর মিমের সাথে আরও কিছুখন কথা বললাম।
ইসমাইলঃ হোটেলে এসে কাজ করতে ছিলাম। হঠাৎই শুনতে পেলাম
মেয়েঃ আমি আর তোমাকে সয্য করতে পারছি না। আমাদের উচিত আলাদা হয়ে যাওয়া।
ছেলেঃ আমিও এটাই চাই। তোমার মত মেয়ের সাথে রিলেশন চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।
মেয়েঃ এখন তো সব দোষ আমার। তুমি তো ধোয়া তুলসি পাতা। সব সমস্যার মূলে তুমি।
ছেলেঃ সব দোষ আমার উপর চাপিয়ে দিয়ে নিজে সাধু সেজেছো। তুমি তোমার ছেলে বন্ধুদের সাথে এত মেলামেশা না করলে তো আর সমস্যা হতো না।
মেয়েঃ ওরা শুধুই আমার বন্ধু। এর থেকে বেশি কিছু না। আর তুমি একটু আমাকে বলবে যে তুমি কোনদিন আমার সাথে দেখা করতে ঠিক সময়ে এসেছো।
রাতে ফোন দিলে তোমার মোবাইল ওয়েটিং। এমনকি আজকেও আমার এখানে এসে তোমার জন্য ওয়েট করতে হয়েছে।
ছেলেঃ আমি আমার বন্ধুদের সাথে কথা বলি। আর আমার একটু ঘুমের সমস্যা তাই ঠিক টাইমে আসতে পারি না।
আর তোমার সাথে রিলেশন হওয়ার পর আমার নিজের স্বাধীনতা চলে গেছে আমি কখন কি করবো না করবো সব তুমি ঠিক করে দাও। কখন খাবো তাও তুমি ঠিক করো।
এমনকি আমি কি শার্ট, প্যান্ট পড়বো তাও তুমি ঠিক করে দাও।
নিজের কাছে মনে হয় যেন আমি ছোট বাচ্চা।
মেয়েঃ আমি তোমাকে ভালোবাসি বিধায় এটা করি। আর তোমার সাথে রিলেশন চালিয়ে যাওয়া আমার পক্ষেও অস্ভব।
তাই আমাদের উচিত হবে আলাদা হয়ে যাওয়া।
ছেলে: আমিও তাই চাই।
এতখন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তাদের সব কথা শুনলাম।
ইসমাইলঃ ভাইয়া যদি কিছু মনে না করেন, আমি কি আপনাদের কিছু বলতে পারি?
ছেলেঃ বলুন।
ইসমাইলঃ আচ্ছা আপনারা দুজন কি একে ওপরকে ভালোবাসতেন।
দুজনেঃ অবস্যই বাসতাম।
ইসমাইলঃ আমার মনে হয় আপনাদের কারও মধ্যেই প্রকৃত ভালোবাসা ছিল না।
মেয়েঃ আপনার এরকম কেনো মনে হলো?
ইসমাইলঃ দেখুন ভালোবাসার মানে পাওয়া না। ভালোবাসার মানে হলো একে ওপরকে সেক্রিফাইস করা।
কিন্তু আপনারা দুজনে কেবল নিজেদের দিকটাই ভেবেছেন।
আপনি ভেবেছেন আপনার বয়ফ্রেন্ড আপনার কথা মত চলুক।
আর আপনি ভেবেছেন আপনার গার্লফ্রেন্ড আপনার সব কথা মেনে চলুক।
কিন্তু কখনও কি দুজনে একে অপরের ইচ্ছা – অনিচ্ছা জানতে চেয়েছেন।
একজন আর একজনকে বুজতে চেষ্টা করেছেন।
তা আপনারা করেন নি।
আশা করি আপনারা বুজতে পেরেছেন। একজন আর একজনকে কতটা সেক্রিফাইস করলেন তার মাধ্যমেই ভালোবাসা ফুটে ওঠে।
ছেলে: সত্তি ভাইয়া আপনি আমাদের চোখ খুলে দিলেন।
মেয়েঃ আমরা কখনও এভাবে ভেবে দেখি নি। এখন থেকে আমারা একজন আর একজনের ইচ্ছাকে গুরুত্ত দিব।
ছেলেঃ নিজেদের ভুলগুলি শুধরে নিয়ে নতুনভাবে শুরু করবো।
ইসমাইলঃ শুভ কামনা আপনাদের জন্য।
ছেলেঃ আচ্ছা ভাইয়া যদি কিছু মনে না করেন, আপনাকে কি কিছু জিগ্গেস করতে পারি?
ইসমাইলঃ মনে করার কি আছে। করুন।
ছেলেঃ আপনার গার্লফ্রেন্ড আছে?
ইসমাইলঃ না একজনকে ভালোবাসতাম কিন্তু সেটা একতরফা। সে অন্য কাউকে ভালোবাসে।
মেয়েঃ একটা কথা জোর দিয়ে বলতে পারি ওই মেয়ে জিবনে অনেক বড় ভুল করলো। হয়তো এর জন্য সে সারাজিবন পস্তাবে।
ইসমাইলঃ কিন্তু আমি তা চাই না।
ছেলে: সত্তিই ভাইয়া আপনার মত মানুষ হয় না। চলি ভাইয়া ভালো থাকবেন।
আর আমাদের জন্য দোয়া করবেন।
তারপর তারা চলে গেল। খুবিই খুশি যে, দুটো ভাংগা হৃদয়কে মিলিয়ে দিতে পারলাম।
আদিবাঃ রাতে শুয়ে আছি রাব্বি অনেক গুলো কল দিল। কিন্তু আমি ধরলাম না।
তারপর ম্যাসেজ দিল।
রাব্বিঃ শেষবারের মত কলটা ধরো। প্লিজ।
আদিবাঃ বলো।
রাব্বিঃ আমি খুবই দুঃখিত আদিবা। আমার তোমাকে তখন তা বলা উচিত হয় নি।
দয়া করে আমাকে মাফ করে দাও। আমি খুবই লজ্জিত।
আদিবাঃ জানো তোমার উপরে আমার ভিষন রাগ হয়েছিল তখন। আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি রাব্বি।
চলোনা আমরা বিয়ে করি ফেলি। আমার বাবা–মা অবস্যই মেনে নিবেন।
তাদের কাছে আমার সুখই সব।
রাব্বিঃ শান্ত হও আদিবা। আমি তোমাকে কিছু বলতে চাই।
আদিবাঃ বলো।
রাব্বিঃ এত কথা ফোনে বলা যাবে না। কালকে তুমি আমার সাথে দেখা করো নদীর পাড়ে।
আদিবাঃ আচ্ছা ঠিক আছে।
রাব্বিঃ ওকে। গুড নাইট।
আদিবাঃ গুড নাইট।
ইসমাইলঃ রাতে শুয়ে আছি। তখনই রেস্টুরেন্টের মেয়েটার কথা মনে পড়ে গেল।
মেয়েটা আদিবাকে নিয়ে যা বলেছিল।
হয়তো তা কখনও সত্তিই হবে না। কারন আদিবা আমাকে কোনোদিনও ভালোবাসবে না।
ও রাব্বিকে অনেক ভালোবাসে। জানি না রাব্বি ওকে ভালোবাসে কিনা।
কিন্তু আমি চাই আদিবা সুখে থাকুক। ওকে ভুলে যেতে চাই।
কারন ওর সাথে যখন আমার পরিচয় হয়েছিল তখন আমার কেউ ছিল না।
কিন্তু এখন আমার একটা পরিবার হয়েছে। আমাকে তাদের দেখভাল করতে হবে।
শুধু শুধু ওর কথা ভেবে বসে থাকলে চলবে না।
এসব ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে পড়লাম।
আদিবাঃ ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে কিছু খেলাম। তারপর রাব্বিকে ফোন দিয়ে বেরিয়ে পড়লাম।
পার্কে গিয়ে রাব্বির জন্য অপেক্ষা করতেছি। কিছুখন পর রাব্বিও চলে আসলো।
রাব্বিঃ দুঃখিত। আমার একটু দেঁড়ি হয়ে গেল।
আদিবাঃ আরে কোনো সমস্যা নেই। চলো দুজনে হাঁটি।
রাব্বিঃ আমি তোমার সাথে জরুরি কিছু কথা বলতে এখানে এসেছি।
আদিবাঃ আচ্ছা বলো।
আমি তোমাকে ভালোবাসি না আদিবা।
আদিবাঃ কি বলছো এসব? তোমার মাথা ঠিক আছে তো।
রাব্বিঃ আমি যা বলছি ভেবেই বলছি। আসলে তোমার সাথে রিলেশনে যাওয়ার আগে আমার আরও একটা রিলেশন ছিল।
ওর নাম লাবনী।
আমাদের পরিবারেরাও মেনে নিয়েছিল। তারা আমাদের বিয়েও ঠিক করেছিল।
কিন্তু হঠাৎই একটা ভুল বুজাবুজির কারনে আমাদের সম্পর্কটা ভেংগে যায়।
তারপর আমি খুবই ডিপ্রেশনে ভুগি। আমার কিছুই ভালো লাগতো না তখন।
আমার অবস্থা খুবই খারাপ হচ্ছিল।
তারপর হঠাৎ একদিন আমি তোমাকে দেখি। তুমি তোমার বান্ধুবির সাথে হেঁসে হেঁসে কথা বলছিলে।
কেনো জানি না আমার খুবই ভালো লেগেছিল তোমার হাঁসিটা।
তুমি যতখন কথা বলছিলে ততখন আমি তোমার দিকে তাকিয়ে ছিলাম।
এমনিতেই লাবনীর সাথে ব্রেকআপ হবার পর আমি ভীষন হতাস হয়ে পড়ছিলাম।
তারপর তোমাকে প্রপোজ করি। আর তুমিও রাজি হয়ে গেলে।
কিন্তু আমি তোমাকে মন থেকে মেনে নিতে পারছিলাম না।
কারন আমি লাবনীকে অনেক ভালোবেসেছিলাম।
প্রথম প্রথম তোমাকে অনেক ভালো লাগতো।
তাইতো তোমাকে ইসমাইলের সাথে মিশতে বারন করেছিলাম।
কিন্তু হঠাৎ একদিন লাবনী আমাকে ফোন করে।
ও আমাকে সরি বলে। আর আবার আমার জিবনে ফিরে আসতে চাইলো।
আসলে ওর সাথে ব্রেকআপ হবার জন্য শুধু ও দায়ী ছিল না।
আমিও সমান ভাবে দোষী ছিলাম।
তাই ওকে মেনে নিয়েছিলাম।
আর আমাদের দুই পরিবারও আমাদের এক হওয়াতে অনেক খুশি।
কারন তারা চাইতো আমরা যাতে এক সাথে থাকি।
ওর বাবা আর আমার বাবা বন্ধু ছিলেন। তাই তারা চাইতো আমরা যাতে একে অপরের সাথে থাকি।
আর ওইদিন রেস্টুরেন্টে আমি লাবনীর সাথেই কথা বলছিলাম।
ইসমাইল তোমাকে যা বলেছে তা সবই সত্তিই।
কিন্তু তুমি ইসমাইলের সাথে যা করেছিলে তা যখন আমার কাছে এসে বললে
তখন আমি অনেক অবাক হয়েছিলাম। এটা ভেবে যে তুমি আমাকে এতটা বিশ্বাস করো।
আমি খুবই চিন্তায় পড়ে গেলাম। লাবনীকেও তোমার কথা বলি নায়। ও জানতে পারলে হয়তো আবার আমাকে ছেড়ে চলে যাবে।
আর তুমিও আমাকে অনেক ভালোবাসো।
ভেবে পাচ্ছিলাম না কিভাবে তোমার সাথে ব্রেকআপ করবো।
তাই এই রুমডেট এর প্লানটা করি। কিন্তু পরে বুজতে পারলাম।
এসব বাদ দিয়ে তোমাকেই সরাসরি বলি।
আর আমাকে পারলে মাফ করে দিও।
হয়তো আজকের পর তোমার সাথে আমার আর কথা হবে না।
আদিবাঃ কি পেয়েছো আমাকে? খেলার পুতুল।
যখন যা মন চাইবে তখন তাই করবে।
আমার লাইফের ফাস্ট ক্রাস ছিলে তুমি।
তুমি আমাকে প্রপোজ করার আগে থেকে আমি তোমাকে দেখছি।
তাইতো তোমার প্রপোজে রাজি হয়ে গেলাম।
অনেক বিশ্বাস করতাম তোমাকে।
আর তুমি আমাকে এইভাবে ধোকা দিলে।
আমাকে আরও আগে বলতে পারতে। তা না করে দিনের পর দিন আমাকে ধোকা দিয়ে গেছো।
যখন ইসমাইলের সাথে এতকিছু করলাম তখনও তো বলতে পারতে। কিন্তু তুমি বলো নি। ( কাদঁতে কাদঁতে বললাম)
রাব্বিঃ আমি ভিষন চিন্তায় ছিলাম। যে তুমি কিভাবে নিবে বিষয়টা তা ভেবে।
আমি খুবই দুঃখিত। ( ওর হাত ধরে বললাম)
আদিবাঃ ঠাসসসস, ঠাসসসস তোর কোনো অধিকার নাই আমার হাত ধরার।
তা এতই যখন লাবনীকে ভালোবাসতি তাহলে আমার সাথে প্রেম কেনো করেছিলি।
তোদের মত ছেলেরা প্রেমটাকে খুবই সস্তা জিনিস ভাবিস।
এটা ভেবেই খুবই কষ্ট হচ্ছে যে আমি একটা ধোকাবাজের উপর ক্রাস খেয়েছিলাম।
চলে আসলাম পার্ক থেকে। খুবই কষ্ট লাগছে।
ওই ধোকাবাজটার জন্য না। ইসমাইলের জন্য।
কোনভাবে বাসায় চলে আসলাম। বাসায় এসেই দরজা বন্ধ করে শুয়ে শুয়ে কাঁদতে লাগলাম।
ইসমাইলের সাথে করা অন্যায়গুলো মনে হতে লাগলো।
আমি ওকে বলেছিলাম জিবনে আর কখনও নিজেকে এতিম না বলতে।
আর সেই আমিই ওকে এতিম বলে অপমান করেছিলাম।
আমি খুবই খারাপ মেয়ে তাইতো ওর বাবা-মা সম্পর্কে বাজে কথা বলেছিলাম।
ও হয়তো আমাকে কোনোদিনও মাফ করবে না।
নিজেকে খুবই নিকৃষ্ট মনে হচ্ছে।
কাঁদতে কাঁদতেই শুয়ে পড়লাম।
যখন ঘুম ভাংলো দেখলাম বাবা- মা আমার পাশে বসে আছে।
আমায় ঘুম ভাংতেই তারা বললো,
বাবাঃ তোর কি হয়েছিল মা? এভাবে দরজা বন্ধ করে ঘুমি পড়লি কেনো?
মাঃ জানিস আমরা কত ভয় পেয়ে গেছিলাম। তারপর দরজা ভেংগে ভিতরে ধুকে দেখি তুই ঘুমাচ্ছিস।
আদিবাঃ শরীর অনেক ক্লান্ত লাগছিল তাই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। দরজা ভুলে বন্ধ করেছিলাম।
মাঃ তা এখন কেমন লাগছে?
আদিবাঃ ভালো।
মাঃ আচ্ছা ফ্রেশ হয়ে খেতে আয়।
ইসমাইলঃ হোটেলে কাজে যাবার সময় বাসা থেকে শাড়ির প্যাকেটটা নিয়ে নিলাম। যেটা আমি আদিবাকে দিয়েছিলাম।
শাড়িটা কোনো গরিব মহিলাকে দিয়ে দিব। এটা আমার কাছে থাকলে আমি আদিবাকে কখনও ভুলতে পারবো না।
আর আমি আমার লক্ষেও পৌছাতে পারবো না।
বাসায় আসলেই ওর কথা মনে পড়ে। ঠিকভাবে পড়ালেখাও করতে পারি না।
হয়তো আদিবাকে কখনও ভুলতে পারবো না। কিন্তু এই শাড়িটা আমার কাছে না থাকলে হয়তো ওকে কম মনে পড়বে।
আর ওই কলেজও পরিবর্তন করতে হবে। ওই কলেজে পড়লে আদিবার সাথে প্রতিদিন দেখা হবে।
তাহলে ওকে ভুলে থাকা অসম্ভব হয়ে যাবে। কালকেই কলেজে গিয়ে প্রিন্সিপালের কাছে বলতে হবে।
শাড়িটা এক মহিলাকে দিয়ে দিলাম। তারপর আমি হোটেলে গেলাম।
রাতে বাসায় এসে খেয়ে পড়তে বসলাম। পড়া শেষে ঘুমিয়ে পড়লাম।
সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে কিছুখন পড়তে বসলাম। তারপর কিছু খেয়ে জান্নাতকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম।
ওকে ওর স্কুলে দিয়ে আমি কলেজে চলে আসলাম
ক্লাসের অনেক আগেই চলে আসলাম প্রিন্সিপালের সাথে কথা বলবো বলে।
তাকে অনেক করে বললাম। তিনি বললেন কলেজ পরিবর্তন করতে দশ হাজার টাকা লাগবে।
ক্যাম্পাসে একটা বেন্চের উপর বসে ভাবতে আছি।
এত টাকা কিভাবে জোগাড় করবো। কিন্তু আমাকে আমার লক্ষে পৌছাতে হলে এই টাকা আমাকে জোগাড় করতেই হবে।
নয়তো এখানে থাকলে আমি আমার পড়ালেখায় মনোযোগ দিতে পারবো না।
এসব ভাবতে ছিলাম তখনই বড় ভাইয়ের কথা মনে পড়ে গেল। হয়তো তিনি আমাকে এই বিপদে সাহায্য করতে পারবেন।
তারপর বড় ভাইয়ের কাছে চলে আসলাম। তাকে সব কিছু বললাম। তার কাছ থেকে টাকা নিয়ে আবার কলেজে চলে আসলাম।
প্রিন্সিপালের কাছে টাকা দিয়ে কলেজ পরিবর্তন করলাম।
কলেজ ক্যাম্পাসে বসে আছি। আজকে কেনো জানি ক্লাস করতে মন চাচ্ছে না। শেষ বারের মত কলেজটাকে দেখে নিলাম। হয়তো আর কখনও দেখা হবে না।
হঠাৎই আদিবার কন্ঠের মত কেউ আমার নাম ধরে পিছন থেকে ডাক দিল।
পিছনে তাকিয়ে দেখলাম আদিবাই।
আদিবাকে দেখা মাএই আমার চোখ নিচের দিকে নামিয়ে দিলাম।
ও আমাকে নরম কন্ঠে বলতে লাগলো।
আদিবাঃ আমি যা করেছি তা ক্ষমার অযোগ্য। তোকে অনেক কষ্ট দিয়েছি। দয়া করে আমাকে মাফ করে দে।
ইসমাইলঃ আরে কি করছেন। আপনি আমার কাছে কেনো মাফ চাইবেন। দেখেন আপনার সাথে যা হয়েছে তার সবই আমি ভুলে গেছি।
আর আমি চাইবো আপনিও ভুলে যান
আদিবাঃ তার মানে তুই মাফ করবি না।
এটা বলেই ব্যাগ থেকে একটা চাকু বের করে বলতে লাগলো।
আদিবাঃ হয় তুই আমাকে মাফ করবি না হয় আমি নিজেই নিজের ক্ষতি করবো।
ইসমাইলঃ বললাম তো আমি আপনাকে মাফ করে দিয়েছি। আপনি চাকু ফেলে দিন।
আদিবাঃ তুই এখনও আমাকে মাফ করিস নি। করলে আমাকে আপনি করে বলতে পারতি না।
ইসমাইলঃ আচ্ছা আমি তোকে মাফ করে দিয়েছি।
তারপর আদিবা চাকু ফেলে দিল।
আমি খুবই ভয় পেয়ে গেছিলাম। কারন আমি জানি আদিবা খুবই জেদী।
দুজনেই একটা বেন্চের উপর বসে আছি। আগে যেভাবে থাকতাম।
অনেকখন দুজনে চুপচাপ বসে ছিলাম। নিরবতা ভেংগে আদিবাই বললো,
আদিবাঃ এখনও ভালোবাসিস আমাকে?
ইসমাইলঃ না।
আদিবাঃ কেনো? আগে তো বাসতি।
ইসমাইলঃ তখন অনুভূতি গুলো জিবীত ছিল। এখন মরে গেছে।
আদিবাঃ আবার জাগিয়ে তুলবি।
ইসমাইলঃ তা সম্ভব নয়।
আদিবাঃ কেনো?
ইসমাইলঃ আগে এই পৃথিবীতে আমার কেউ ছিল না। এখন আমার এক মা আর বোন আছে।
তারাই এখন আমার সব। আগে আমার জিবনের কোনো লক্ষ্য ছিল না। কিন্তু এখন আছে।
আর তার জন্য তোকে ভুলে থাকাটা খুবই জরুরি।
আদিবাঃ ( কাঁদতে কাঁদতে বললো, ) আমি খুবই খারাপ একটা মেয়ে। তাইতো তোর সাথে ওইরকমটা করতে পেরেছি। তুই পারবি আমাকে ভুলে থাকতে। তুই না আমাকে অনেক ভালোবাসিস?
ইসমাইলঃ পারতে হবে। আর তার জন্যই আমি কলেজ পরিবর্তন করবো। এখানে থাকলে হয়তো তোকে ভুলে থাকা সম্ভব না।
আদিবাঃ তুই কলেজ কেনো পরিবর্তন করবি? তোকে আমার ভালোবাসতে হবে না। তারপরও তুই প্লিজ আমাকে ছেড়ে যাস না। তুই চলে গেলে আমি কিন্তু নিজের ক্ষতি করবো।
ইসমাইলঃ তুই ভালো করেই জানিস আমি চাই না তোর কোনো ক্ষতি হোক। তাই হয়তো তুই এভাবে বলছিস।
কিন্তু তুই যদি আমার সত্তিই ভালো চাস তাহলে নিজের কোনো ক্ষতি করবি না।
আদিবাঃ আমি তোকে ছাড়া বাঁচতে পারবো না। তোর মত করে কেউ আমাকে ভালোবাসতে পারবে না। তুই প্লিজ আমাকে ছেড়ে যাস না।
ইসমাইলঃ যদি কখনও জিবনে বড় হতে পারি। তাহলে আবার তোর কাছে ফিরে আসবো। আর যদি না পাড়ি তাহলো হয়তো আর কোনোদিনও আমাদের দেখা হবে না।
আদিবাঃ আমি তোর ফিরে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করবো।
ইসমাইলঃ তোকে শুধু একটা কথাই বলতে চাই যদি আমাকে সত্তিই চাস তাহলে নিজের কোনো ক্ষতি করবি না।
সব সময় ভালো থাকবি। হাসি- খুসি থাকবি। তুই অনেক ভালো একটা মেয়ে।
এটা বলে সেখান থেকে চলে আসলাম। পিছনে তাকালাম না।
জানি আদিবা বেন্চের উপর বসে কাঁদতেছে।
কাঁদুক। কাঁদলে হয়তো কষ্ট কম হবে। জানি না কখনও আদিবার যোগ্য হতে পারবো কিনা।
এখন জিবনের একটাই লক্ষ্য সেটা হলো ভালো পড়ালেখা করে ভালো চাকরি করা।
যাতে পরিবারের খেয়াল রাখতে পারি।
যদি কখনও আদিবাদের সমকক্ষ হতে পারি তাহলে ওর কাছে ফিরে
আসবো। অবহেলিত ভালোবাসার জন্য।
আর যদি না পাড়ি তাহলে মুছে ফেলতে হবে জিবন থেকে আদিবা নাম টি।
পর্বঃ ১১ (শেষ)
ইসমাইলঃ যদি কখনও জিবনে বড় হতে পারি। তাহলে আবার তোর কাছে ফিরে আসবো। আর যদি না পাড়ি তাহলো হয়তো আর কোনোদিনও আমাদের দেখা হবে না।
আদিবাঃ আমি তোর ফিরে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করবো।
ইসমাইলঃ তোকে শুধু একটা কথাই বলতে চাই যদি আমাকে সত্তিই চাস তাহলে নিজের কোনো ক্ষতি করবি না।
সব সময় ভালো থাকবি। হাসি- খুসি থাকবি। তুই অনেক ভালো একটা মেয়ে।
এটা বলে সেখান থেকে চলে আসলাম। পিছনে তাকালাম না।
জানি আদিবা বেন্চের উপর বসে কাঁদতেছে।
কাঁদুক। কাঁদলে হয়তো কষ্ট কম হবে। জানি না কখনও আদিবার যোগ্য হতে পারবো কিনা।
এখন জিবনের একটাই লক্ষ্য সেটা হলো ভালো পড়ালেখা করে ভালো চাকরি করা।
যাতে পরিবারের খেয়াল রাখতে পারি।
যদি কখনও আদিবাদের সমকক্ষ হতে পারি তাহলে ওর কাছে ফিরে আসবো। অবহেলিত ভালোবাসার জন্য।
আর যদি না পাড়ি তাহলে মুছে ফেলতে হবে জিবন থেকে আদিবা নাম টি।
আদিবাঃ বেন্চের উপর বসে কাঁদতেছি। আজকে নিজের দোষে ইসমাইলকে হারালাম।
যখন ও কাছে ছিল তখন বুজতে পারি নাই। আর এখন দূরে চলে যাওয়ায় কষ্ট পাচ্ছি।
জানি না ওকে আর পাবো কিনা।
এসব ভাবতেছি আর বেন্চের উপর বসে কাঁদতেছি। তখনই মিম আসলো।
মিমঃ তোর কি হয়েছে আদিবা? এভাবে বেন্চের উপর বসে কান্না কেনো করছিস।
আদিবাঃ আমি অনেক বড় ভুল করে ফেলেছি। আর সেই ভুলের জন্য আজকে ইসমাইল আমাকে ছেড়ে চলে গেছে।
মিমঃ কি হয়েছে আমাকে বলতো?
মিম সবকিছু বললাম। সব শোনার পর ও বললো,
মিমঃ এখন কষ্ট পেয়ে কি লাভ। ইসমাইল তো আর ফিরে আসবে না।
আমরা এমনই। যখন কাছে থাকে তখন তার মূল্য বুজি না। যখন সে দূরে চলে যায় তখনই তাকে বুজতে পারি।
এখন এভাবে কেঁদে আর কি হবে। যদি ওকে সত্তিই ভালোবাসিস তাহলে ওর জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোনো পথ নাই তোর কাছে।
আদিবাঃ হ্যা। আমি তাই করবো। প্রয়োজনে আমি ইসমাইলের জন্য সারাজিবন অপেক্ষা করবো।
ওকে যে আমি অনেক ভালোবাসি।
মিমঃ তা এখন কান্না থামা। চল তোকে বাসায় দিয়ে আসি।
ইসমাইলঃ জানি না আদিবাকে ভুলে থাকতে পারবো কিনা। যতই ওকে ভুলে থাকার চেষ্টা করি ততই আরও বেশি করে ওকে মনে পড়ে।
কিন্তু আমার তো ওকে ভুলে থাকতেই হবে। জানি এটা অনেক কঠিন।
তারপরও আমার পরিবারের জন্য হলেও আমাকে পাড়তে হবে।
এসব ভাবছিলাম তখনই মা জিগ্গেস করলো
মাঃ তোকে এমন দেখাচ্ছে কেনো বাবা? তোর কি কিছু হয়েছে?
ইসমাইলঃ না মা কিছুই হয় নি।
মাঃ আমার কাছে কিছু লুকাস না বাবা। তোকে দেখেই বোজা জাচ্ছে যে, তোর কিছু হয়েছে।
আর তুই তো আজকে কলেজ থেকেও তাড়াতাড়ি চলে এলি।
কিছু হয়ে থাকলে আমাকে বল বাবা?
মাকে আদিবার সাথে ঘটে যাওয়া সবকিছু বললাম।
মাঃ মেয়েটাকে তো অনেক ভালোবাসিস তাহলে ওর থেকে দূরে কেনো চলে এলি?
ইসমাইলঃ কি করতাম আমি মা? ওদের আর আমাদের মধ্যে আকাশ – পাতাল ব্যবধান।
ওর বাবা হয়তো কখনও এই সম্পর্ক মেনে নেবে না।
মেনে না নেওয়ারই কথা। কোনে বাবাই চাইবে না তার মেয়েকে কোনে গরিব ছেলের সাথে বিয়ে দিতে।
মাঃ এটা তুই বলছিস। হয়তো আদিবার বাবা তার মেয়ের সুখের জন্য রাজি হতো।
আর তুই কি পারবি আদিবাকে ভুলে থাকতে? তুই ঠিকই কষ্ট পাবি।
আর আমরা চাই না তুই কষ্ট পাস।
মিম আমাকে বাসায় পৌছে দিয়ে গেল। রুমে এসে কান্না করতে লাগলাম।
কিছুখন পর বাবা– মা আমার রুমে আসলো।
বাবাঃ তুই কি অসুস্হ মা? মিম তোকে বাসায় দিয়ে গেল।
মাঃ একি তুই কান্না কেনো করছিস? কি হয়েছে মা আমাদের বল?
আদিবাঃ ও আমাকে ছেড়ে চলে গেছে মা। আমার নিজের ভুলের জন্য ওকে হারালাম।
মাঃ কার কথা বলছিস তুই।
মা- বাবাকে ইসমাইলের ব্যাপারে সবকিছু বললাম।
বাবাঃ ওই ছেলের এত সাহস যে, আমার মেয়েকে কষ্ট দেয়। তুই চিন্তা করিস না মা ইসমাইলের সাথেই তোর বিয়ে দিব।
তুই শুধু ওর ঠিকানা দে।
আদিবাঃ কিন্তু ও রাজি হবে না বাবা।
বাবাঃ তা নিয়ে তুই চিন্তা করিস না। আমার মেয়ে কষ্ট পাবে আর ওই ছেলের জন্য তা আমি হতে দিব না।
বিছানায় শুয়ে আছি তখনই কে যেনো দরজা নক করলো।
মা গিয়ে দরজা খুলে দিল। কিছুখন পর আমাকে ডাক দিল।
ইসমাইলঃ মা এই লোকটা কে?
আমি আদিবার বাবা। আমি জানতে এসেছি তুমি আদিবাকে ছেড়ে কেনো চলে এলে?
ইসমাইলঃ আমি আদিবাকে ভালোবাসি আর ভবিষ্যৎেও বাসবো। ওর যোগ্য হয়েই ওর কাছে ফিরে আসবো।
আদিবার বাবাঃ- মানুষের যোগ্যতা তার চরিএেই ফুটে ওঠে। আর তুমি যদি আমাকে অন্য পাঁচটা মেয়ের বাবার মত ভাবো তাহলে ভুল ভাববে।
আমি মোটেই সেরকম নয়।
আমরা এখন পর্যন্ত আদিবার কোনো ইচ্ছা অপূর্ন রাখি নি। ও যা চেয়েছে তাই দিয়েছি।
ওকে কোনোদিনও কষ্ট পেতে দেই নি। আর আজকে প্রথমবার ও কষ্ট পেল। শুধু তোমার জন্য।
দেখো আমি চাই তুমি আদিবাকে বিয়ে করো। তোমার পরিচয় জানার দরকার নেই।
আমার শুধু তোমাকে জানলেই হবে।
ইসমাইলঃ মাফ করবেন আমাকে। আমি এখন আদিবাকে বিয়ে করতে পারবো না।
আপনি যতটা সহজভাবে বলে দিলেন। জিবনটা ততটা সহজ নয়।
আদিবার এক মাসের যা খরচ তা হয়তো আমি ছয় মাসেও আয় করতে পারি না।
আর এখন আমার যা অবস্থা তাতে আদিবাকে বিয়ে করা সম্ভব।
আদিবার বাবাঃ- তুমি আমার অফিসে কাজ করবে। তাহলে তো আর কোনো সমস্যা থাকলো না।
ইসমাইলঃ কিন্তু আমি কষ্ট না করে কোনো কিছু পেতে চাই না। কষ্ট না করে পেলে তার কোনো মূল্য থাকে না।
আমি আমার যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ করবো।
আদিবার বাবাঃ- আচ্ছা তুমি তোমার যোগ্যতা অনুসারেই আমার অফিসে কাজ করবে। পাশাপাশি লেখাপড়াও করবে।
দেখো বাবা আদিবা তোমাকে ছাড়া বাঁচতে পারবে না। ও খুবই আবেগী একটা মেয়ে। খুব অল্পতেই মানুষকে বিশ্বাস করে ফেলে।
ওকে কোনোদিনও এইভাবে কাঁদতে দেখি নি। আজকে প্রথমবার দেখলাম।
দয়া করে তুমি রাজি হয়ে যাও।
মাঃ রাজি হয়ে যা বাবা। তুইও তো আদিবাকে ভালোবাসিস।
জান্নাতঃ রাজি হয়ে যাও ভাইয়া। আমরা তোমাকে কষ্ট পেতে দেখতে চাই না।
ইসমাইলঃ আচ্ছা আমি রাজি। তবে আমার একটা শর্ত আছে।
আদিবার বাবাঃ কি শর্ত?
ইসমাইলঃ আপনি আদিবাকে আমার সাথে বিয়ের কথা বলবেন না। এটা ওর জন্য সারপ্রাইজ।
আদিবার বাবাঃ- আচ্ছা ঠিক আছে। তবে আমি চাই তোমরা সকলে আমার দেওয়া বাড়িতে ওঠো।
প্লিজ কিছু মনে করো না। এটা আমি দিব না অফিস।
থেকেই তোমাকে দেওয়া হবে। তার বিনিময়ে মাসিক টাকা কেঁটে রাখা হবে তোমার বেতন থেকে।
তোমরা সেই বাড়িতেই উঠবা। সেখানেই বিয়ের কার্যক্রম হবে।
ইসমাইলঃ আচ্ছা ঠিক আছে।
আদিবার বাবাঃ তাহলে আমি এখন চলি। কালকেই তোমাদের বিয়ে হবে।
আদিবাঃ বাবা ইসমাইল কি বললো, ?
বাবাঃ ও রাজি হয় নি মা। আমি জেদ করে তোর বিয়ে অন্য এক জাগায় ঠিক করে ফেলেছি কালকে।
আদিবাঃ এটা তুমি কি করলে বাবা। আমি এই বিয়ে করতে পারবো না।
বাবাঃ তুই যদি এই বিয়ে না করিস তাহলে আমার মরা মুখ দেখবি। মনে রাখিস কথাটা আমি গেলাম।
আদিবাঃ এটা কি হয়ে গেল। আমি ইসমাইলকে ছাড়া অন্য কাউকে কি করে বিয়ে করবো। ও তো আমাকে বলেছিল যে আমার কাছে ফিরে আসবে।
কিন্তু এই বিয়ে না করলে বাবা আত্তহত্যা করবে। আর আমি তা কিছুতেই হতে দিব না।
প্রয়োজনে বাবার জন্য নিজের ভালোবাসা বিসর্জন দিব। ( কাদঁতে কাদঁতে বললাম)
আজকে আমার বিয়ে কিন্তু আমার তাতে কোনো খেয়াল নেই। আমি শুধু ইসমাইলের কথাই ভেবে চলেছি। কার সাথে আমার বিয়ে হচ্ছে তা জানারও ইচ্ছে হচ্ছে না।
কবুল বলার সময় ইসমাইলের মুখটা বারবার চোখের সামনে ভেসে উঠলো।
তখনই বাবার কথা মনে পড়ে গেল। তারপর কবুল বলে দিলাম।
বাসর ঘরে বসে আছি। শুনেছি এই দিনটা নাকি মেয়েদের জিবনের শ্রেষ্ঠ রাত।
কিন্তু আমার কাছে আজাবের মত মনে হচ্ছে।
কিছুখন পর কেউ একজন বাসর ঘরে প্রবেশ করলো। তারপর বললো,
ইসমাইলঃ শুনেছি বাসর ঘরে স্বামি আসলে তাকে সালাম দিতে হয়। কিন্তু আপনি তা জানেন না মনে হচ্ছে।
আদিবাঃ দেখুন আপনাকে আমি স্বামি হিসেবে মানতে পারবো না। আমি অন্য একজনকে ভালোবাসি।
বাবাড় জন্য বিয়েটা করেছি।
ইসমাইলঃ আপনি বললেই তো আর হবে না। আপনি আমার বউ। আপনার উপর আমার অধিকার আছে আর আমি আমার অধিকার আদায় করেই ছাড়বো।
আদিবাঃ দেখুন ভালো হবে না কিন্তু। যখনই সামনে তাকালাম আমি অবাক ইসমাইলকে দেখে।
ইসমাইলঃ তুমি আমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছো। তাই তোমাকে তার শাস্তি দিলাম।
আদিবাঃ তুমি জানো আমি কতটা কষ্ট পেয়েছি। ( ওকে জড়িয়ে ধরে বললাম)
ইসমাইলঃ আর কখনও কষ্ট দিব না। তোমাকে অনেক ভালোবাসবো।
আদিবাঃ আমি খুবই দুঃখিত তোমাকে অপমান করার জন্য। দয়া করে আমাকে মাফ করে দাও।
ইসমাইলঃ এসব কথা এখন বাদ দাও। রাত যে ফুরিয়ে যাচ্ছে বাসর করবো কখন।
আদিবাঃ আজকে কোনো বাসর হবে না।
ইসমাইলঃ কেনো?
আদিবাঃ তুমি আমাকে কষ্ট দিয়েছো তাই।
ইসমাইলঃ তুমি বললেই তো আর আমি মানবো না। আমি আমার অধিকার ঠিকই বুজে নিব।
এটা বলেই আদিবাকে জড়িয়ে ধরলাম।
আদিবাঃ এই সবাই দেখছো তো লাইট বন্ধ করো।
লাইট বন্ধ করে আদিবাকে নিয়ে সুখের সাগর পাড়ি দিতে গেলাম।
লেখক – ইসমাইল মাহমুদ
সমাপ্ত
(পাঠক আপনাদের ভালোলাগার উদ্দেশ্যেই প্রতিনিয়ত আমাদের লেখা। আপনাদের একটি শেয়ার আমাদের লেখার স্পৃহা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আমাদের এই পর্বের “অবহেলিত ছেলের ভালোবাসা – Koster valobasar golpo” গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম। ধন্যবাদ। )
আরো পড়ূন – লাভ ছিনতাই – প্রেমিকা তুমি কার । ছলনাময়ী ভালোবাসা
Adiba ke aro kosto besi kosto dile valo because se biswas korte shikheni r sorry bolle sob ses hoy na.