মিথ্যা অপবাদ – Ekti Korun Kahini

মিথ্যা অপবাদ – Ekti korun kahini: আসিফ হঠাৎ রেগে গিয়ে রিমির গালে একটা খুব জোরে চর বসিয়ে দেয়। এই প্রথম আসিফ রিমির গায়ে হাত তুলে। আসিফ সঙ্গে সঙ্গে সংকুচিত হয়ে ভাবতে থাকে এটা সে কি করলো?


পর্ব ১

(আসিফ রিমির বিয়ের ১০ বছর পর আসিফকে ভুল বুজে রিমির সংসার ত্যাগ)
~ আব্বু আব্বু আজ তুমি আম্মুর আশে পাশে যেও না আম্মু খুব রেগে আছে।

আসিফ বাসায় প্রবেশ করতেই তার আদরের কন্যা রিমির রেগে থাকার সংবাদ কানে পৌছে দিল। আসিফ যানে রিমি কখনো আসিফের সাথে রাগ করে বেশিক্ষন থাকতে পারে না। আজ বাসায় ফিরতে একটু সময় লেগেছে আসিফের।

একটা খুব ইম্পর্টেন্ট কাজে গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিল। কিন্তু আসিফ রিমিকে কিছুই জানায় নি। আসিফ রিমিকে জানানোর চেস্টা করলেও মোবাইলে চার্জ না থাকার কারনে অফিস থেকেই গ্রামের বাড়ি চলে যায়।

আসিফ গ্রামে বাড়িতে গিয়ে এমন মহুর্তের সম্মুখীন হয় রিমিকে জানানোর কথা মাথায়ই আসে নাই। আসিফ তার মেয়ে রাইসাকে কুলে নিয়ে আদর করে বলে,

~ তোমার আম্মুর আশেপাশে না গেলে রাগ কমাবো কি করে? তুমি বলো তোমার আম্মু কোথায় এখন?
আসিফ তার মেয়ে রাইসাকে কুলে রেখেই জিজ্ঞাস করল রিমির কথা। রাইসা আংগুল দিয়ে দিক নির্দেশনা দিচ্ছে আসিফ সেদিকে যাচ্ছে। আসিফ রিমিকে তাদের বেডরুমেই আবিষ্কার করে।

রিমি আয়নার সামনে দাড়িয়ে কি যেন করছিল। আসিফ তার মেয়েকে কুল থেকে নামিয়ে রিমিকে পিছন দিক থেকে জড়িয়ে ধরলো। আসিফ কিছু বুজে উঠার আগে রিমি আসিফকে ছাড়িয়ে নিল। আর চেচিয়ে বলছিল।

~ অই তুই আমাকে আর কোনো দিন ছুবি না, যেখানে ছিলি সেখানে যা। (রিমি)
রিমি যখন রেগে যায় আসিফের সাথে এরকম তুই তুকারি করেই এতে আসিফ বিচলিত হয়না তবে বুজে নেয় রিমি খুব রেগে আছে। আসিফের একটা খুব বাজে সমস্যা কাউকে বোঝাতে পারে না কিন্তু খুব সহজে বুঝতে পারে। তাই আসিফ রিমির রাগ কন্ট্রোলে রাখার জন্য খুব নমর কন্ঠে বলে।

~ সরি রিমি! আমি জানি এতরাত করে বাসায় ফেরা আমার খুব বড় অন্যায় হইছে এবারের মতো মাফ করে দাও প্লিজ। (আসিফ)
~ তুই মেয়েদের মতো ন্যাকামি করে মিথ্যা কথা কাকে বলছিস? তুই কি মনে করছিস আমি কিছুই জানি না? সুনি না?

(রিমি রাগে আগুন)
আগুন নিভাবে পানির দরকার সেটা আসিফ জানে। তাই আসিফ পানির চরিত্র ধারন করতে চাইছে। কিন্তক আসিফ যে রিমিকে মিথ্যা বলেছে তা রিমি করে জানল? এখন একটা মিথ্যা ডাকতে তার কয়েকটা মিথ্যা বলতে হবে।

~ রিমি তুমি রেগে আছো খুব একটু শান্ত হও তার পর কথা বলছি। আমার খুব ক্ষুধা লেগেছে কিছু খেতে দাও? (আসিফ)
আসিফ চাচ্ছে রিমিকে শান্ত করতে। কারন গরম মাথায় কিছুই ডুকে না। আর আসিফের বুঝানোর ক্ষমতা খুবই কম। রাগের সময় উল্টা পাল্টা বলে ফেললে রাগ বেরে যেতে পারে। তাছাড়া রিমি এর আগেও আসিফের সাথে এরকম রাগারাগি করেছে। কিন্তু ২ ঘন্টায় আবার রিমিই আসিফের কাছে ফিরে এসেছে।

~ কিসের শান্ত হবো আমি? তুই কি মনে করছিস অফিসের নাম করে কোথায় যাস কি করিস আমি কিছু জানব না? সুনে রাখ তুই যে অফিসে চাকরি করিস সেটা আমার বাবারই অফিস সব খবরই আসে। (রিমি উত্তেজিত হয়ে)

~ রিমি রাইসার সামনে অন্তত এরকম ব্যবহার করো না প্লিজ। মানুষের ভুল ত হতেই পারে তাই বলে এরকম করা কি ঠিক? (আসিফ)
~ এটা ভুল বলছিস? আমার ত মনে হয় তুই ভালো মানুষের বেশে আমাকে ব্যবহার করছিস। (রিমি)
~ রিমি এইসব কি বলছো? তোমাকে ব্যবহার করছি মানে। আমি তোমাকে ভালোবাসি। (আসিফ)
~ তাই না? অফিসের নাম করে মিথিলার ওখানে যাও। আমি বিরক্ত করব তাই মোবাইল বন্ধ করে রাখো। আর এখন রাত করে বাসায় ফিরে বলো সরি? এগুলো কি ভালো মানুষির বেশে ব্যবহার না? (রিমি)

রিমির চোখ ভিজে যাচ্ছে কত ভালোবেসে ছিল আসিফকে। যাকে পাওয়ার জন্য পরিবারের সাথে যুদ্ধ করে। প্রতিটি বিপদে যার পাশে ছিল। কিন্তু সেই মানুষটা আজ রিমিকে না জানিয়ে মিথিলার বাসায় যায়। আবার এসে মিথ্যে বলে। রিমি পারছে না সেই কষ্ট গুলো বুকে জমা রাখতে। চোখে পানি হয়ে বেরিয়ে যেতে চাচ্ছে। কিন্তু রিমি রাগ টাকে ধরে রাখতে বার বার চোখ মুছছে।
~ হুম আমি মিথিলার বাসায় গিয়েছিলাম কিন্তু কেন গিয়েছিলাম জানো? (আসিফ)
~ কেন গিয়েছিলে হয়ত প্রথম ভালোবাসা আবার জীবিত হয়েছে। (রিমি)

রিমি এ ছাড়া কিছু বলতে পারছে না কারন রিমির চোখে আসিফ যে এখন অপরাধী। কেননা আসিফ মিথিলার বাসায় গোপনে গেছে তার মানে তাদের প্রথম ভালোবাসা আবার জীবিত হয়েছে। যদি এরকম কিছু না হতো রিমিকে কেন জানিয়ে গেলো না আসিফ
~ এইসব কি বলছো রিমি? (আসিফ)
~ যা বলছি ঠিকিই বলছি। (রিমি)

আসিফ হঠাৎ রেগে গিয়ে রিমির গালে একটা খুব জোরে চর বসিয়ে দেয়। এই প্রথম আসিফ রিমির গায়ে হাত তুলে। আসিফ সঙ্গে সঙ্গে সংকুচিত হয়ে ভাবতে থাকে এটা সে কি করলো? রিমির গালে চর বসিয়ে দিল? এটা ভুল হয়েছে,
রিমির গালে চর পরার পর রিমি অস্রুসিক্ত চোখে আসিফের দিকে তাকিয়ে ছিল কিছুক্ষন।

রিমি ভাবতে পারছে না আসিফ কিভাবে তার গালে চর মারলো। মিথিলার জন্য আসিফের এত মায়া। অই মেয়ের জন্য আমার গালে চর বসিয়ে দিল। রিমি ভাবছে আর বুজি হলো না সাজানো সংসার গুছিয়ে রাখা। ভালোবাসার মানুষের আঘাত সহ্য করতে পারছে না রিমি।

এদিক দিয়ে আসিফ রাগের মাথায় কি করে ফেলছে বুজতে পারছে না। রিমি চুপ হয়ে গেছে দেখে রাইসাকে তার রুমে নিয়ে গেছে ঘুমিয়ে দিয়ে আসার জন্য।
রাইসা এইসব দেখে ভয়ে থরথর করে কাপছে। রাইসার এবার থ্রি তে পড়ে। রাইসা কিছুটা হলেও ভালো মন্দ বুজতে শিখেছে। রাইসা সুয়ে সুয়ে তার মা-বাবার ঘটে যাওয়া কাহিনি গুলো মনে করছে। রাইসা কখনো তার আব্বু আম্মুর এমন জগড়া দেখে নি। তাই রাইসার কিছুটা ভয় লাগছে।

আসিফ রাইসাকে ঘুমিয়ে দিয়ে রিমিকে সরি বলার জন্য যাচ্ছে। অন্যদিকে রিমি ডিশিসন নিয়ে নিয়েছে যে আসিফের সাথে আর মনে হয় সংসার সম্ভব না।


পর্ব ২

আসিফ ভাবছে রিমিকে সরি বলে সব কিছু ঠিক করে ফেলবে। আর মিথিলাকে নিয়ে আসিফের ভুল ধারনাটা ধরিয়ে দিবে।

কিন্তু রিমির ভালোবাসার মানুষের হাতে চর খেয়ে মরে যেতে ইচ্ছে করছে। রিমি ভাবছে আজ মিথিলার প্রতি এত মায়া চলে আসলো আসিফের। মিথিলার জন্য আমার গায়ে হাত তুললো।

তাহলে কি আমি আসিফ আর মিথিলার ভালোবাসার বাধা হয়ে দাড়ালাম। আসিফ প্রথম থেকেই মিথিলার প্রতি দুর্বল আর যখন জানতে পারে সুমি আপুর স্বামী সব কিছু করিয়েছে। তখন যেন মিথিলার প্রতি আসিফ আরো বেশি দুর্বল হয়ে যায়। হ্যা আমি মানছি আসিফ আমাকেও অনেক ভালোবাসতো। কিন্তু এখন আসিফ কি আমাকে ভালোবাসে? আর ভালোবাসলে এভাবে ভালোবাসার মানুষকে কেউ চর মারে?
রিমি ঠিক করলো এই সংসারে আর নয়। রিমি চলে যাবে তার বাবার বাড়িতে। রিমি ব্যাগ পত্র গুছিয়ে নিচ্ছে।

এদিক দিয়ে আসিফ রিমির মনের কথা কিছুই জানে না। জানবে কি করে আসিফ ত আর অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারি নয়। আসিফ জানে রিমির রাগ বেশিক্ষন নয়। কারন রিমি যে আসিফকে পাগলের মত ভালোবাসে। আসলেই তাই যে যাকে ভালোবাসে তার থেকে পাওয়া কষ্ট খুব বেশি হয়।

আসিফ রুমে ডুকে দেখে রিমি কাপড় চোপড় গুছাচ্ছে। আসিফ চমকে উঠে রিমি কাপড় কেন গুছাচ্ছে? আসিফ রিমির কাছে যায়, রিমির হাত টা ধরে বলে,

~ সরি রিমি রাগের মাথায় চর বসিয়ে দিয়েছি তাই।
রিমি আসিফের কথার কোনো উত্তর না দিয়ে চোখের পানি ফেলে হাতটা ছাড়িয়ে চোখের পানি মুছে। রিমি আবার তার ব্যাগ গুছাতে শুরু করে। আসিফ বুজতে পারে রিমি খুব কষ্ট পেয়েছে। রিমিকে আসিফ জড়িয়ে ধরতে যায় যেন রিমি আসিফকে কাছে পেয়ে কষ্টটা ভুলে যায়।
কিন্তু না। রিমি মনে চলছে অন্যকিছু। রিমির মনে চলছে এটা আসিফের অভিনয়। আবার সত্যিই ভালোবাসাও হতে পারে। কিন্তু আমি এটা খুব ভালো করেই জানি আসিফ মিথিলাকে ভালোবাসে। আমাকে না জানিয়ে দেখা করতে যায়। আজ খবর টা পাইছি এমন হতে পারে এভাবে আমার চোখে ধুলো দিয়ে আসিফ সব সময়ই মিথিলার সাথে দেখা করতে যায়।

রিমি মনে মনে বলে আমি ত আসিফকে ভালোবাসি খুব বেশি ভালোবাসি। যদি আমার জন্য আসিফ তার ভালোবাসার মানুষকে না পায় এই ধায়বার আমার উপর বর্তায়। আমি চাই আমার ভালোবাসার মানুষ টা ভালো থাকুক। হ্যা আসিফের ব্যবহারে ভালোবাসার কমতি খুজে পাই না। আর যদি সেই ভালোবাসা হয় লোক দেখানো। তাহলে আমি সেই ভালোবাসা চাই না।
রিমি সিদ্ধান্তে অটল কালই রাইসা কে নিয়ে আসিফকে মুক্ত করে দিয়ে যাবে।

এদিক দিয়ে আসিফ ভাবছে রিমি হয়ত রাগ করে বাপের বাড়ি চলে যেতে চাইছে। এমনেতে অনেক দিন রিমিদের বাসায় যায় না। রিমি যেতে চাইলে বাধা দিব না তবে রিমির রাগ অভিমান যেভাবে পারি ভাঙ্গতে হবে।

কিন্তু আসিফ ত রিমির সাথে কথাই বলতে পারছে না কারন রিমি রাইসার রুমে চলে গেছে। এবং ভিতর থেকে দরজা লক। আসিফ কিছুক্ষন ডাকাডাকি করার পরও দরজা খুলে নাই। আসিফ ভেবে নিয়েছে মাঝরাতে রিমি ঠিকই ফিরে আসবে।
কি নিয়ে ঝামেলা শুরু?

আসিফ অফিসে যাওয়ার পর সুমি আপু আসিফকে ফোন করে বলে মিথিলার স্বামী মিথিলাকে কাল রাতে খুব মারধোর করছে। তাই আসিফকে সেখানে যেতে হবে। সেখানে গিয়ে সুনে তাহসান ভাই প্রতি রাতে মেয়েদের সাথে ফুর্তি মদ খেয়ে মাতাল হয়ে বাসায় ফিরে। এই নিয়ে তাদের সংসারে চলে জামেলা। তবে কাল রাতে নাকি দুইটা মেয়ে নিয়ে বাসায় ডুকে মিথিলাকে রুম থেকে বের করে দিয়ে অন্য রুমে যেতে বলে। মিথিলা যখন এর প্রতিবাদ করে মাতাল তাহসান মিথিলার উপর অত্যাচার শুরু করে।

মিথিলা কতদিন সহ্য করবে এই অত্যাচার। বিয়ের কয়েকমাস পর থেকেই মিথিলা তাহসানকে মাতাল অবস্থায় বাসায় আসতে দেখে। এই নিয়ে অনেক জামেলা হওয়া সত্বেও মিথিলা এই কয়েকটা বছর সংসার করতে বাধ্য হয়।

কারন মিথিলার আব্বু নাই, মেয়ের মত ভালোবাসার মত বড় আব্বু টাও যে নাই। মিথিলার কথা গুলো বুকের ভিতর চাপা রেখে যায়। আর সেই সাথে স্বামীকে ভালো মানুষ করার প্রচেষ্টা করে। কিন্তু তাহসানের ভালো হওয়ার লক্ষন নেই। এর মধ্যেই মিথিলার কোলে ছেলে সোহেল।

মিথিলার সংসার কষ্টেই কাটতে থাকে। টাকা পয়সার কষ্ট না। প্রতি রাতে ক্লাবে ক্লাবে ঘুরে বেড়ায় তাহসান। একটি মেয়ের শুধু টাকা নয় ভালোবাসা দরকার হয়।

সংসারে অভাব তবে স্বামীর ভালোবাসা আছে এমন সংসার চায় মিথিলা। কিন্তু দিন দিন তাহসান মিথিলাকে নানা ভাবে অত্যাচার শুরু করে। কোনো কিছুর প্রতিবাদ করলেই অমানবিক অত্যাচার। ছেলের দিকে তাকিয়ে মিথিলা সব সহ্য করছিল। কিন্তু আর পারছে না এত দিন বাহিরে মেয়েদের নিয়ে মজা করত। গত রাতে মেয়েদের বাসায় তুলে। মিথিলার রুম দখল করে মিথিলাকে তার রুম থেকে বের করে দেয়।

প্রতিবাদ করতেই অমানবিক অত্যাচার। মিথিলা সহ্য করতে না পেরে সুমি আপুকে সব জানায়।
সুমি আপু অনেক রেগে যায় এত বছর ধরে কেমনে সহ্য করছে মিথিলা। মিথিলার জিবন কি এভাবে যাবে? তাই সুমি আপু সকালে আসিফকে ডেকে নিয়ে মিথিলার শশুড় বাড়ি যায়। মিথিলার শশুড় শাশুড়ি কেউ নেই।

আসিফ, সুমি আপু, মিথিলার আম্মু আর আসিফের বড় ভাই গিয়ে ডিবোর্স এর সিদ্ধান্ত নেয়।
এই কথা গুলো আসিফ রিমিকে বলতে পারে নাই। বললে হয়ত রিমি আর ভুল বুজতো না।
সকাল হয়ে গেছে আসিফ ঘুমিয়ে আছে। এদিক দিয়ে রিমি সব কিছু গুছিয়ে নিয়ে রাইসা কে নিয়ে চলে যেতে চাচ্ছে। কিন্তু বাবা পাগল মেয়ে রাইসা আব্বুকে ছেড়ে কোথাও যাবে না। .


পর্ব ৩

সকাল হয়ে গেছে আসিফ ঘুমিয়ে আছে। এদিক দিয়ে রিমি সব কিছু গুছিয়ে নিয়ে রাইসা কে নিয়ে চলে যেতে চাচ্ছে। কিন্তু বাবা পাগল মেয়ে রাইসা আব্বুকে ছেড়ে কোথাও যাবে না।

রাইসা তার আম্মুকে বলছে,
~ আম্মু তুমি কোথায় যাবে আব্বুকে ফেলে রেখে? (রাইসা)
~ মামনি আমরা নানু বাসায় যাবো তুমি না বলছিলে নানু বাসায় যাবে? (রিমি)
~ সত্যি নানু বাসায় যাবা? (রাইসা আনন্দে নেচে উঠলো)
~ চলো চলো মামনি দেড়ি হয়ে যাচ্ছে? (রিমি)
~ আব্বু যাবে না? (রাইসা)

~ হুম পরে যাবে আমরা আগে যাই তার পর, (রিমি)
~ না আমি আব্বুকে ফেলে কোথাও যাবো না? (রাইসা)
এদিক দিয়ে আসিফ ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে রুম থেকে বের হয়ে দেখছে রিমি রাইসাকে নানু বাড়িতে যাওয়ার জন্য বুজাচ্ছে। আসিফকে দেখে রাইসা দৌরে এসে কোলে উঠে পরলো।

আর বলতে ছিল
~ আব্বু আব্বু আম্মু নানুবাড়িতে যাবে তুমি যাবে না? (রাইসার কথা সুনে আসিফ রিমির দিকে তাকালো)
আজ আসিফের খুব রাগ হচ্ছে। আসিফ ভাবছে এই টুকু একটা বিষয় নিয়ে বাপের বাড়ি চলে যাবে। আমাকে না জানিয়ে মেয়েকে নিয়ে যেতে চাইছে।
সম্পর্কে বিশ্বাস না থাকলে সেই সম্পর্ক টিকে না বেশি দিন। আর যদি এই টুকু বিষয়ে রিমি চল যেতে চায়। তাহলে ত সংসার টিকবে না।

আসিফ রিমির কাছে এসে নিজেকে কন্ট্রোল রেখে বলছে,
~ কোথায় যাচ্ছো? (আসিফ)
~ যেখান থেকে এসেছি সেখানেই যাচ্ছি? (রিমি)
~ বুজলাম না ক্লিয়ার করে বলো? (আসিফ)
~ তোমার থেকে দুরে চলে যাচ্ছি। আর কেউ তোমাকে কোনো কিছুতে বিরক্ত করবে না। নিজের যা ইচ্ছা করতে পারবে। (রিমি)
~ দুরে চলে যাচ্ছো মানে? (আসিফ)
~ আমি মুক্ত হতে চাচ্ছি, তোমার কৃত্রিম ভালোবাসার বেড়াজাল থেকে। (রিমি)
~ আমার ভালোবাসা তোমার কৃত্রিম মনে হচ্ছে? (আসিফ)

~ হুম, সেটাই তোমার ব্যবহারেই প্রকাশ পায়। (রিমি)
~ বুজতে পারছি, চলো এগিয়ে দিয়ে আসি? (আসিফ)
আসিফ রিমিকে বুজাতে না পেরে নিজেকেই দুষ দিচ্ছে। আগেই বলেছি আসিফের বুজ দেওয়ার ক্ষমতা অনেক কম। এখন ত রিমি আসিফের ভালোবাসাকেই বিশ্বাস করে না। সেখানে আসিফের কি কথা থাকতে পারে।

~ না লাগবে না, আমি যেতে পারবো? (রিমি)
~ তোমাকে তোমার বাড়িতে অক্ষত অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়া আমার দায়ীত্ব। কারন এখনো আমি তোমার স্বামী। (আসিফ)

আসিফ ভাবছে রিমি কিছুদিন রাইসার নানুর বাড়িতে থাকলে মনে হয় সব কিছু হয়ত ঠিক হয়ে যাবে। আর যাত্রা পথে যদি কোনো সমস্যা হয় তাই আসিফ নিজেই দিয়ে আসতে চাচ্ছে।

অন্যদিকে রিমির মনে আসিফের ভালোবাসা আর ভালোমানুষি গুলো শুধুই অভিনয় মনে হচ্ছে। রিমি কিছু বলছে না আসিফকে।

আসিফ গেইটের সামনে এসে ড্রাইভার কে রিমিকে তার বাসায় দিয়ে আসতে বলে। আসিফ জানে রাইসা এখানে ভালো থাকবে না যতদিন রিমি সেখানে থাকে রাইসাও থাকবে। তাই রাইসা কে কাল যাবে বলে বুজিয়ে রিমির সাথে পাঠিয়ে দেয়।

কাজের মেয়ে রুবিনা নাস্তা তৈরি করে টেবিল সাজাচ্ছে। রুবি সকালে কাজ করতে এসে কিছু কথা সুনে বুজতে পারে ম্যাডাম রাগ করে বাপের বাড়ি চলে যাচ্ছে।

আসিফ নাস্তা খেতে টেবিলে বসলো মুখটা মলিন হয়ে আছে। কাজের মেয়ে রুবিনা আসিফকে বলছে।
~ স্যার ম্যাডাম কি রাগ করছে আপনের উপর? (রুবিনা)

~ হুম, (আসিফ ছোট করে উত্তর দিল)
~ স্যার তিন বছর আপনের বাসায় কাজ করি কোনোদিন ত আপনাদের জগড়া দেহি নাই। আজ হঠাৎ কি হলো? (রুবিনা)

~ তেমন কিছু না, আজ ত নাস্তা অনেক বানিয়ে ফেলেছ। আমি খাওয়া শেষে বাসায় নিয়ে যেও? (আসিফ)

~ স্যার? (রুবিনা)
~ হুম বলো? (আসিফ)
~ ম্যাডাম আমাকে একটা কাগজ দিয়ে গেছে, আর বলছে আপনার খেয়াল রাখতে। স্যার ম্যাডাম কি আর আসবে না? (রুবিনা)
রুবিনার কথা সুনে আসিফ কাগজটা হাতে নেয়, কাগজের লেখা গুলো পড়ে আসিফ চোখের পানি ফেলছে। আসিফকে কাদতে দেখে রুবিনা বলছে।
~ স্যার কি লেখছে কাগজে আপনে কাদতাছেন কেন? (রুবিনা)

~ তোমার ম্যাডাম আর ফিরবে না জানিয়ে দিয়েছে? (আসিফ)
~ কি কন স্যার ছাড়াছাড়ি হইয়া যাইব? রাইসা মামনির কি হইব? (রুবিনা)

~ আচ্ছা রুবিনা তুমি খাবার নিয়ে চলে যাও। আজ আর কাজ করতে আসতে হবে না। কাল থেকে আইসো। (আসিফ)

রুবিনা কাজের মেয়ে হয়ে এত কিছু জানতে চাইছে এতে আসিফ কোনো কিছুই মনে করছে না। কারন রুবিনা তিন বছর ধরে এই বাসায় কাজ করে জানার অধিকার অবশ্যই আছে।

রুবিনা আবার বলছে,
~ স্যার দুপুরের, রাতের খাওন রান্না করে দিয়ে যাই। ফ্রিজে রাইখা খাইয়েন?
~ না লাগবে না তুমি যাও কাল আইসো?
আসিফ রুবিনার চলে যাওয়ার পর।

আসিফ রিমিকে ফোন দিচ্ছে। কয়েকবার বেজে গেছে রিমি ইচ্ছে করেই রিসিভ করছে না। কারন রিমি আসিফের সাথে কথা বলতেও চাচ্ছে না।
অনেক চেস্টার পর রিমি ফোন রিসিভ করছে। আসিফ শুধু জানতে চাচ্ছে রিমি কি সুস্থ জ্ঞানে এই লেখা গুলো লিখছে? আসিফের ভুল টা কি শুধুই না জানিয়ে মিথিলার বাসায় গিয়েছে তাই।

আর এর জন্য কি সম্পর্কে ফাটল ধরে যায়। সংসার ত্যাগ করতে হয়?
~ হ্যালো ফোন দিয়েছো কেন? (রিমি)
~ কাগজে কি সব কিছু সুস্থ জ্ঞান নিয়ে লিখছো? (আসিফ)
~ হুম আমি প্রেপার পাঠিয়ে দিব সাইন করে নিও? (রিমি)

রিমির কথা সুনে আসিফ দাড়ানো থেকে বসে পড়লো।
আসিফ ভাবছে এটা কি সেই রিমি যে রিমি আমার জন্য মরে যেতে চাইত। এটা কি সেই রিমি যে তার পরিবারের বিরুদ্ধে আমার মতো অপবাদ পাওয়া ঘর ছাড়া ছেলেকে বিয়ে করতে চেয়েছে? বিয়ের পর কোনোদিন রিমির চোখে পানি আসতে দেই নি আজ সেই আমি নাকি রিমিকে ব্যবহার করছি।

আসিফ সহ্য করতে পারছে না, আসিফ নিজে নিজের কাছে অপরাধী হয়ে যাচ্ছে। আসিফ জানে বিশ্বাস ভেঙ্গে গেলে তা আর জোরা লাগানো যায় না। আজ আসিফের দুর্বলতার জন্য রিমির আসিফের প্রতি বিশ্বাস উঠে গেছে।

আসিফ কেমন পাগলের মত হয়ে গেছে।
আসিফ আবার ভাবছে রিমির ত কোনো দুষ নেই আমি পারি নাই রিমিকে সত্যিটা বলতে।
আসিফ ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করে না। এভাবে কেটে গেলো দুই দিন।

এদিক দিয়ে রাইসা আব্বুর কাছে যাওয়ার জন্য কান্না করছে। রিমির আব্বু আম্মু এখনো কিছু বুজছে না। যে কি হচ্ছে এইসব হঠাৎ রিমি আসিফকে ছাড়া চলে গেলো কেন। আসিফকে ফোন করেছে কিন্তু মোবাইল রিসিভ করার কেউ নেই। কারন আসিফ যে রিমির সাথে শেষ কথা বলে মোবাইল কোথায় আসিফ কোথায় নিজেও জানে না।

আসিফ ঘুমিয়ে ছিল সপ্নে দেখে রাইসা আব্বক্র জন্য কান্না করছে। আসিফের ঘুম ভেঙ্গে যায়। আসিফ রওনা দেয় তার মেয়ের কাছে……


পর্ব ৪

রিমিদের বাসায় যেতেই রিমির মা আসিফের কাছে জানতে চায় কি হয়েছে তাদের মাঝে। রিমিকে কিছু বলতে না পারলেও আসিফ রিমির আম্মুর কাছে সব কিছু বলে। রিমির আম্মু সব কিছু শুনে আসিফকে বসিয়ে রিমির রুমে যায়।

রিমি তখন সুয়ে ছিল
~ রিমি আসিফ তোকে নিতে এসেছে রেডি হয়ে নে তারাতারি? (রিমির মা)
~ আমি যাবো না তুমি আসিফকে চলে যেতে বলো। (রিমি)
~ যাবি না মানে সমস্যা কি?
~ আসিফ আমাকে ভালোবাসে না? (রিমি)
~ কিভাবে বুজলি?
~ আসিফ আমাকে না জানিয়ে মিথিলার বাসায় গিয়েছে। আসিফ মিথিলাকে এখনো ভালোবাসে? (রিমি)
~ বুজলাম আসিফ কেন মিথিলার বাসায় গেছে জানতে চাইছিলি?

(রিমির আম্মু)
~ না, আসিফ আমাকে চর দিয়েছে। (রিমি)
~ হুম জানি আসিফ আমাকে সব কিছুই বলছে। বিনা কারনে তুই আসিফেরর সাথে রাগারাগি করছিস। সব কিছুর পেছনে কিছু কারন থাকে সেগুলো না যেনে এভাবে সংসার ত্যাগ করা বোকামি ছাড়া আর কিছু না। (রিমির আম্মু)

~ কি এমন কারন তোমাকে বলতে পারলো আমাকে বলতে পারে নাই? (রিমির মনটাও কেমন করছে আসিফের জন্য)
কারন রিমি যে আসিফকে তার জিবন থেকেও ভালোবাসে। তাই ত বাহ্যিক কিছু ভুল ধারনা নিয়ে কষ্টটা বেশি পেয়ে যায়।

~ তুই কি সুযোগ দিয়েছিলি? (রিমির আম্মু)
~ না, অনেক রাগ হয়েছিল তাই কোনো কিছু সুনতে চাইনি। (রিমি মাথা নিচু করে)

~ আসিফ কেন মিথিলার বাসায় গিয়েছিল জানিস?
কারন মিথিলার স্বামী মেয়ে নিয়ে প্রতি রাতে ফুর্তি করে। সেদিন বাসায় দুটা মেয়ে নিয়ে আসে প্রতিবাদ করায় মিথিলাকে মারধর করে। চাচাতো ভাই হিসেবে চাচাতো বোনের বিপদে এগিয়ে যাবে না ত কে যাবে?

তুই কোথায় আসিফকে নিয়ে মিথিলাকে সাহস জুগিয়ে দিবি উল্টো ভুল বুজে বাসায় চলে আসলি। (রিমির আম্মু)
~ আসিফ কই? (রিমি)

~ নিচে গিয়ে দেখ। (রিমির আম্মু)
রিমি তার ভুল বুজতে পেরে দৌরে নিচে নেমে দেখে আসিফ কোথাও নেই। রিমি সোফায় তাকিয়ে দেখে একটা কাগজ পরে আছে।

সেখানে লেখা,
(আমি আমার মেয়েকে নিয়ে গেলাম। তোমার অপেক্ষায় থাকব)
রিমি তার ব্যাগ গুছিয়ে নিজের বোকামি আর ভুল গুলো বুজতে পেরে আসিফের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে।

এদিক দিয়ে আসিফ রাইসাকে পেয়ে গভীর শান্তি খুজে পাচ্ছিল। আর রাইসা আব্বু কে পেয়ে রিমির কথাই ভুলে গেছে। আসিফ রাইসাকে নিয়ে একটা পার্কে সারাদিন ঘুরাঘুরি আনন্দ করে সন্ধ্যার দিকে বাসায় ফিরে। গেইটের সামনে এসে দাড়াতেই দাড়োয়ান রমিজ মিয়া আসিফকে বলে।

~ স্যার আপনে সারাদিন কই ছিলেন? (রমিজ মিয়া)
~ কেন রমিজ মিয়া কিছু হয়েছে? (আসিফ)
~ স্যার ম্যাডাম সেই দুপুরে এসে দরজার সামনে বসে আছে। (রমিজ মিয়া)

~ কি বলো সত্যিই তোমার ম্যাডাম এসেছে? (আসিফ)
~ জ্বি স্যার,
আসিফ রাইসাকে নিয়ে দ্রুত চললো রিমির খুজে। রিমিকে দরজার সামনে দাড়িয়ে থাকতে দেখে,
~ রিমি তুমি? (আসিফ)
~ আসিফ আমাকে মাফ করে দেও আমি তোমাকে ভুল বুজেছি। আমি শুধুই তোমার কাছে থাকতে চাই। আমাকে ফিরিয়ে দিও না। (রিমি)

রিমি হাত জোর করে আসিফের সামনে বসে পরলো। আসিফ রিমিকে তুলে জড়িয়ে নেয়। আর বলে
~ আমি জানতাম আমার পাগলিটা আমাকে ভুল বুজে থাকতে পারবে না। আর তোমার জায়গা আমার পায়ে নয় আমার বুকে। (আসিফের কথা সুনে)
রিমি কান্না করতে থাকে। রিমি ভাবছে কাকে ভুল বুজেছে? আসিফের মতো ত ছেলেই হয় না। এত কিছু হয়ে যাওয়ার পরেই আসিফ রিমিকে বুকে জড়িয়ে নিয়েছে।

~ কাদছ কেন পাগলি? (আসিফ)
~ আসিফ আমি তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলেছি/(রিমি)
~ এখন ভালোবাসা দিয়ে পুষিয়ে নিবে চলো ভিতরে চলো। (আসিফ)

ভালোবাসাতে মান অভিমান, ভুল বুজাবুজি থাকেই তার মানে সংসার ত্যাগ করতে হবে বিষয়টা এমন না। প্রতিটি জগড়ায় মান অভিমানে কেউ একজনকে অভিমান ভাঙতে হয়।

তাকেও অভিমান করে বসে থাকতে হয় না। তাহলে ভালোবাসা থাকে না।

প্রতিটি জিবনই সহজ যদি আপনি কঠিন করে না নেন ত। আপনার ভালোবাসার মানুষ, পরিবারের মানুষ, আপনি নিজেও প্রতিদিন কোনো না কোনো ভাবে ভুল করেন। কারন এই পৃথিবীতে কেউ পার্ফেক্ট নয়।

তাই প্রতিটি ভুল ভালোবেসে বুজিয়ে দিন। অপমান করে দুরে সরিয়ে দিয়েন না। তাহলে দেখবেন আপনার ভুল কালে সেও আপনার পাশে ভালোবেসে ভুলটা ধরিয়ে দিচ্ছে।

(আমি লেখক আসিফ। জানিনা লেখক টাইটেল টা লাগানোর যোগ্যতা আমার আছে কিনা। তার পরেও লেখালেখির শুরুর দিকে আপনাদের এত ভালোবাসা পেয়েছি। আমার মনে হয় আপনাদের দোয়া, আর ভালোবাসা, আমার চেস্টা একদিন এই টাইটেল টার পুর্নতা পাবে। তবে লেখালেখির শুরুর দিকে লেখাতে কিংবা আমার কথায় অনেক ভুল ত্রুটি হতে পারে। কারন আমাকে আরো অনেক শিখতে হবে জানতে হবে। তাছাড়া মানুষ ভুলের উর্ধে নয়। যদি আমার লেখালেখিতে ভুল অথবা কোনো ধরনের অপুর্নতা থাকে। তাহলে আমার বড় ভাই/বোন, বন্ধু হিসেবে ভুলটা ধরিয়ে দিবেন। ভালো কিছু করবার পরামর্শ দিবেন। দয়া করে কখনো পাব্লিক প্লেসে লজ্জা দিবেন না। ছোট মানুষ ত নিতে পারি না।)

লেখা – আসিফ

সমাপ্ত

(পাঠক আপনাদের ভালোলাগার উদ্দেশ্যেই প্রতিনিয়ত আমাদের লেখা। আপনাদের একটি শেয়ার আমাদের লেখার স্পৃহা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আমাদের এই পর্বের “মিথ্যা অপবাদ – Ekti korun kahini” গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম। ধন্যবাদ।)

আরো পড়ূন – সিনিয়র চাচাতো বোন যখন বউ – এবার খেলা হবে

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *