প্রেমের গল্প

প্রেমের গল্প – দুই বোনের এক প্রেমিক – শেষ পর্ব | ত্রিভুজ প্রেম

প্রেমের গল্প – দুই বোনের এক প্রেমিক – শেষ পর্ব: জানি না কি হবে আমাদের? কি করব? কোথায় যাব? কিছু ভেবে পাচ্ছি না। টেনশনে মাথা ঘুরছে শুধু। নিজেকে অনেক অপরাধী মনে হচ্ছে? এদিকে মোহনা আপুও ভীষণ কষ্টে আছে। দেখি কি হয়? হয় এস্পার নয় অস্পার।

বিপদ হাজির বাসায়

রাকিবের রুমে যাওয়ার পথে যা দেখলাম তা দেখে আমি অবাক হয়ে গেলাম।

মোহনা আপুর বাবা তার লোক জন নিয়ে বাসার ভিতরে ঢুকছে।

মোহনা আপুর বাবা জানলো কিভাবে আমরা এখানে? আজকে কারো রক্ষা নেই।

দৌড়ে মোহনা আপুর রুমে গেলাম?

মোহনা আপুঃ কিরে কি হইছে তোর, দৌড়াচ্ছিস কেনো?

আমিঃ বাবা, ব্বায়াব্বা।

মোহনা আপুঃ কি বাবা বাবা করতেছিস?

আমিঃ আরে দূর তোমার বাবা আসতেছে, অলরেডি বাসায় ডুকে পরছে।

মোহনা আপুঃ হায় হায় এখন আমি কি করবো? আজকে তো সব শেষ।

আমিঃ রাকিব, রাসেল কই ওরা?

মোহনা আপুঃ ঘুমায়।

আমিঃ তাড়াতাড়ি উঠা ওদেরকে, বল ওদের যম এসে গেছে।

রাকিব, রাসেলকে তাড়াতাড়ি করে উঠালাম!

রাকিবঃ কিরে কি হয়ছে? এমন করতেছিস কেনো?

আমিঃ মোহনা আপুর বাবা এসে গেছে।

আমার কথা শুনে বাকিরাও চমকে উঠে গেলো।

রাকিবঃ কি বলিস এইসব?

আমিঃ হুম,বাসার ভিতর ডুকে গেছে একটু পর আমাদের সামনে এসে হাজির হবে।

রাকিবঃ ওই সবাই মৃত্যুর জনু প্রস্তুত হ। আজকে কারো রক্ষা নেই।

দরজায় করা ভাবে দমকানোর আওয়াজ পেলাম। উঠে দরজা খুললাম। এতক্ষণে রাকিব, রাসেল, সোহাগ, আশিক সবাই এক সিরিয়ালে দাঁড়িয়ে রইলো।

বাবার কান্না

দরজা খুলা মাত্রই মোহনা আপুর বাবা আফজাল খান রুমে ঢুকে পরলো তার পিছনে অনেক মানুষ।

আফজাল খানঃ ও তাইলে সব শয়তান এক জায়গায়?

আমরা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছি।

আফজাল খানঃ খলিল, ওদেরকে গাড়িতে উঠা। একটু এদিক সেদিক হলেই সরাসরি গুলি করে দিবি।

আমরা সবাই গাড়িতে উঠে বসলাম।

কিছুক্ষণ পর মোহনা আপু কে নিয়ে আফজাল খান গাড়িতে উঠলো।

আফজাল খানঃ ড্রাইভার চলো।

আমরা কিছুই বলতে পারিনা সবার মুখে হতাশার ছাপ, ভাগ্য ভালো হলে বাঁচতেও পারি ভাগ্য খারাপ হলে মরতেও পারি।

মোহনা আপুদের বাসায় চলে আসলাম। সেখানে অনেক মানুষের সমাবেশ মোহনা আপু আর আমাদের কে দেখার জন্য। সবচেয়ে ভয় তখনি লাগলো যখন দেখলাম আব্বু সেখানেই রাগী দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

আব্বুর সাথে আর আফজাল খানের অনেক ভালো সম্পর্ক একজন আর একজনের পরিপূরক।

আব্বুর মেজাজ ৫০০+। পারে না যেন আমাকে খেয়ে ফেলে।

আফজাল খানঃ এই নেও তোমার ছেলেকে, এবার তুমিই বিচার করো?

আব্বু পটাপট আসে আমার গালে তিন চারটা চড় বসিয়ে দিলো।

আব্বুঃ ফাজিল, তোকে এই শিক্ষা দিয়েছি, নিজের মান সম্মান সবি গেলো, তোকে আমি মেরেই ফেলবো।

আব্বু কথা গুলো বলছে আর কাঁদছে ।

বোনের প্রতি ভালবাসা

সত্যি কথা আব্বু আমাকে কোনোদিন এমন করে মারে নি। যা একটু রাগারাগি করতো। তাও আবার কিছুক্ষন পর আমার কাছে এসে কেঁদে দিতো। এই প্রথম আব্বু আমাকে মারতেছে।

রাকিবঃ আঙ্কেল ওর কোনো দোষ নেই, ওকে ছেড়ে দিন।

আমার ফ্রেন্ড সবার চোখে পানি।

আফজাল খানঃ চুপ সব কইটা হারামি। তোরা সবাই দোষ করেছিস তোদের সব কয়টাকে এক এক করে মারবো । কতো বড় সাহস তোরা খান বাড়ির মেয়ে নিয়ে পালিয়ে যাস। এমন মারা মারবো যেন সবাই বুঝবে খান বাড়ির মেয়ে নিয়ে পালানোর পরিনতি কি হতে পারে!

আফজাল খান হাতে একটা লাঠি নিয়ে আমার বন্ধুদের দিকে এগোতে লাগলো।

আমিঃ খবর দার আঙ্কেল ওদের গায়ে হাত দিবেন না? তাহলে কিন্তু খুব খারাপ হয়ে যাবে?

আমার কথা শুনে সবাই অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো।

আফজাল খানঃ কি করবি তুই?

আমিঃ যেই হাতে ওদের কে মারবেন সেই হাত আমি ভেঙ্গে ফেলবো।

কথাটি শুনে আফজাল খান হাতের লাঠি দিয়ে আমার পিঠে দুইটা বসিয়ে দিলো।

আব্বু যেন এখানে মরে যাবে। আফজাল খান তৃতীয় বার আঘাত করবে তখনি সুযোগ্য দুই কন্না আমার পাশে এসে দাঁড়ালো।

সুমিঃ খবর দার বাবা জিসানের গায়ে আর একটা ও টাচ করবা না?

আফজাল খানঃ সরে যা সুমি আজকে আমি মেরেই ফেলবো ওকে।

সুমিঃ এবার কিন্তু খুব খারাপ হবে বলছি!

আফজাল খানঃ তোকে সরতে বলছি সুমি।

সুমিঃ বাবা জিসান কিন্তু এখন মোহনা আপুর বর, এই খান বাড়ির বড় জামাই। তার সাথে এমন ব্যাবহার করলে তোমারি ক্ষতি হবে।

সুমির কথা শুনে আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম। সুমির সাথে আমার দেড় বছরের রিলেশন আর সে কিনা আজ আমাকে তার বোনের বর বানিয়ে ফেলছি।
মোহনা আপুও তাকিয়ে আছে সুমির দিকে।

দুই বোনের কান্না

আফজাল খান তার রাগ কন্ট্রোল করতে না পেরে মোহনা আপুর গালে ঠাস করে একটা চোড় মেরে দিলো, অঝরায় মোহনা আপু চোখের পানি ছেড়ে দিলো। চোড়টা যেনো আমার কলিজায় লাগলো।

আবার একটা চোড় দিতে যাবে তখনি আমি তার হাতটা ধরে নিলাম।

আফজাল খানঃ ওই বেয়াদব তুই আমার হাত ধরলি কোন সাহসে?

এবার আফজাল খানের মাথা পুরো পুরি গরম হয়ে গেলো। ভিতর থেকে বন্দুক নিয়ে আসলো।

আফজাল খানঃ আমি তোকে আজ মেরেই ফেলবো।

মোহনা আপু আর সুমি আমার সামনে দাঁড়ালো।

সুমিঃ জিসানকে মারতে হলে আগে আমাদেরকে মারো। আমি জিসান কে ভালোবাসি, যদি মারতে হয় আমাদের দুজন কে এক সাথে মারো।

মোহনা আপুঃ আমি ও জিসানকে ভালোবাসি জিসান মরলে আমিও মরে যাবো।

আমার সামনে দুজনে দেয়ালের মত দাঁড়িয়ে রইলো।

সুমিঃ বাবা জিসানের সাথে আমার দেড় বছরের রিলেশন, আমি জিসানকে ছাড়া বাঁচবো না।

আফজাল খানঃ তোকে যদি জিসান ভালোবাসতো তাহলে মোহনাকে নিয়ে পালালো কেন!

মোহনা আপুঃ কে বলছে আমাকে নিয়ে জিসান পালিয়েছে?

আফজাল খানঃ গ্রামের সবার মুখে মুখে শুনেছি।

সুমিঃ তাহলে তুমি আসল কথাটা শুনাও।

আফজাল খানঃ তোর কোনো কথাই আমি শুনবো না।

মোহনা তারপরও বলতে লাগলো,

মোহনা আপুঃ আমি রিজবি নামে একজন কে ভালোবাসতাম, বিয়ের দিন রাতে সে আমাকে ফুসকে বাড়ি থেকে বের করে নেয়। তারপর আমাকে স্টেশন অপেক্ষা করতে বলে। তার কথা মত আমি স্টেশন গেলাম, কিন্তু তার কোনো দেখা নেই দেখে রিজবি কে নক করি। সে আমাকে বলে তার বাবা মার বিরুদ্ধে যেতে পারবে না। তাই আমাকে নিয়ে পালাতে পারবে না। আমাকে বাসায় ফিরে আসতে বলে। আমি কোন মুখে বাসায় আসবো? আমি কোনো উপায় না পেয়ে স্টেশনের এক কোনে বসে বসে কাঁদতে লাগলাম। তখন জিসানের সাথে দেখা, জিসান আমার থাকার ব্যবস্থা করে দেয়।

-জিসান sorry, আমার জন্য তোকে এমন অপমান সহ্য করতে হলো। আমাকে মাপ করে দে। আমি খুব খারাপ আমার সাথে তোর মত ভালো মানুষের মানায় না, তুই সুমিকে বিয়ে করে নে। কথাটি বলে মোহনা আপু চোখের পানি ছেড়ে দিলো, কি করবে সে আমাকে যে বড্ড ভালোবেসে ফেলেছে।

বিয়ের প্রস্তাব

পরিস্থিতি এখন থমথমে, আফজাল খান হাতের বন্ধুক ফেলে দিয়ে বসে পরলো।

আব্বু আমার হাতটা ধরে,

আব্বুঃ আফজাল আমার ছেলেকে আমি বাসায় নিয়ে যাই?

আব্বু আমাকে বাসায় নিয়ে আসলো। আমার জন্য আব্বুও অনেক অপমান সহ্য করলো।

বাড়িতে কারো মুখে কোনো কথা নেই। আমি নিজের রুমে চলে আসলো, আমার সাথে রাকিব, রাসেল, আশিক, সোহাগ সবাই আছে।

আম্মু ওদেরকে যেতে দেয়নি।

তিন চারদিন কাঁটলো এভাবেই। একদিন আফজাল খান সুমিকে নিয়ে আমাদের বাসায় হাজির হলো।

আমার আব্বুকে বলতে লাগলো,

আফজাল খানঃ বন্ধু আমি না বুঝে তোকে অনেক বাজে কথা বলেছি, আমাকে ক্ষমা করে দিস।

আব্বুঃ দেখ একজন মেয়ের উপর তার বাবার কি টান থাকে তা আমি বুঝি। তুই যা কিরেছিস একটু ভুল করিস নি। বাবা হিসাবে তোর এটা কর্তব্য। তার জন্য ক্ষমা চাইতে হবে না।

আফজাল খানঃ তুই যদি কিছু মনে না করিস তাহলে তোর সাথে একটা কথা ছিলো।

আব্বুঃ হুম বল।

আফজাল খানঃ আমি চাই আমার ছোটো মেয়ের দায়িত্বটা তুই নে, তোর ছেলের বউ করে নে।

এই কথাটা আমিও শুনতে চেয়েছি। আমি প্রথমে আনন্দ উপভোগ করালাম। কিন্তু তারপর কেমন জানি মনে হচ্ছে কাজটা ভালো হচ্ছে না। বুকের মাঝে একটা নামের প্রতিধ্বনি “মোহনা”। বার বার মনে পরতে লাগলো মোহনা আপুর সাথে কাঁটানো মুহূর্তগুলো। তাহলে কি আমিও মোহনা আপুকে ভালোবেসে ফেলেছি? প্রশ্নের সাথে সাথে উত্তর পেয়ে গেলাম।

সামনে তাকিয়ে দেখি সুমি।

সুমিঃ তুমি সত্যি কথা বলেছো। মোহনা আপুও তোমাকে ভালোবাসে। কি করবে বেচারা বাড়ি থেকে পালিয়ে যে অপকর্ম করছে। বাবাকে মুখ ফুটে বলতে পারে না। বার বার আমার দিকে চেয়ে থাকে, যদি আমি একটু বলি বাবাকে। মেয়েটার দিকে তাকালে চোখের পানি ধরে রাখা যায় না।

আমিঃ আর তুমি আসলা তোমার বাবার সাথে তোমার বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে?

প্রেমিকার প্রেমের প্রতিদান

সুমি আমার কলার ধরে তার কাছে নিয়ে গেলো,

সুমিঃ দেড় বছর রিলেশন করেছি কি তোমাকে হারানোর জন্য?

আমিঃ আমি তোমাকে বিয়ে করবো না।

সুমিঃ আমার বাবা তোকে হত্যা করবে, আমি এখনি বাবা কে গিয়ে বলবো, তুমি আমাকে বিয়ে করতে রাজি আছো।

আমিঃ দেখো সুমি ভালো হবে না কিন্তু।

সুমি চলে গেলো তার আব্বুর কাছে। আমার মনে এখন মোহনা আপু। কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না। এখন সুমি গিয়ে বলে আমি বিয়ে করতে রাজি তাহলে আর কখনো এই কথার বিরুধিতা করতে পারবো না।

সুমির পিছু ছুটলাম।

সুমিঃ বাবা এই বিয়ে ক্যানসেল করে দাও।

আফজাল খানঃ কি বলছিস এগুলো তুই?

সুমিঃ হুম বাবা, জিসান বুবুকে ভালোবাসে তার সাথে বুবুকেই মানায়।

আফজাল খানঃ তুই যে বললি তোর সাথে জিসানের দেড় বছরের রিলেশন।

সুমিঃ বুবুর সাত দিনের রিলেশনে দেড় বছর কিছুই না। বুবু তোমাকে বলতে পারে না যে জিসান ভালোবাসে সারাদিন শুধু কেঁদেই চলেছে।

আফজাল খানঃ তাহলে তোর ভালোবাসা?

সুমিঃ থাক না, কিছু ভালোবাসা অপুর্ন। আমি জিসান কে অপছন্দ করি ওই দিন থেকে যেদিন শুনেছি জিসান বুবুকে নিয়ে পালিয়ে গেছে। জিসান তুমি আমার দেওয়া পরিক্ষায় পাশ করেছো, আমি ভাবছি তোমার ভালোবাসা শুধু টাইম পাস, কিন্তু এখন বুঝছি তুমিও আমার মত একজন মানুষ যার মনে মোহনা নামে একজন বাস করে। আমি কথা দিচ্ছি তোমার বিয়েতে আমার কোনো আপত্তি থাকবে না।

প্রেমিকার বোন যখন বউ

যাও মোহনা আপুর কাছে। মেয়েটা কাঁদতে কাঁদতে চোখ ফুলিয়ে ফেলছে।

আমি কিছুই বলছিনা। কি করবো এই সাত দিনে যে কখন মোহনা আপুকে পছন্দ করে ফেলেছি নিজেও জানিনা। নিজের আবেগও মাজে মাজে বাস্তবতা বুঝিয়ে দেয়।
আমি আর কিছু না বলে মোহনা আপুর বাসায় চলে গেলাম।

প্রত্যেকটি রুম তন্ন তন্ন করে মোহনা আপুকে খুজলাম। অবশেষে ছাদে গেলাম। এক কোণে দেখি বসে বসে মোহনা আপু কাঁদছে। আমাকে দেখা মাত্রই অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। সে হয়তবা ভাবে নি আমাকে এভাবে দেখবি। ভাবছিলো আমার আর সুমির বিয়ে হয়ে যাবে।

মোহনা আপু দৌড়ে এসে আমার বুকে ঝাপিয়ে পরলো। অন্যধারায় কাঁদতে লাগলো।

মোহনা আপুঃ প্লিজ জিসান, আমি তোকে ছাড়া বাঁচবো না। তুই আমাকে নিয়ে আবার পালিয়ে যা।

আমিও শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম।

আমিঃ তার কোনো প্রয়োজন নেই এখানেই আমাদের বিয়ে হবে।

মোহনা আপুঃ সত্যি?

আমিঃ হুম সত্যি।

আমাদের ঘিরে বাড়ির সবাই চলে আসলো, পাশ থেকে সুমি কাশি দিলো।

মোহনা আপু কে ছেড়ে দিলাম।

সুমিঃ বিয়ের আগে এই সব কি?

জানি না সুমি কিভাবে থাকবে? হয়তো বা আমাকে সারাজীবন মনে রাখবে আর না হলে দুই দিনের ভিতর ভুলে যাবে।

সমাপ্ত

আরো পড়ুন- রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প – বান্ধবী যখন বউ – পর্ব ১

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *