অভিমানী প্রেমের গল্প

অভিমানী প্রেমের গল্প – প্রকৃত ভালবাসা | Sad Love Story Bangla

অভিমানী প্রেমের গল্প – প্রকৃত ভালবাসা: সত্যিকারের প্রকৃত ভালবাসা জানা মানুষগুলো শুধুই কষ্ট পায়। বেশিরভাগ প্রকৃত প্রেম শেষ পর্যন্ত অপূর্ণ থাকে। এরকমই একটি করুণ প্রেমের গল্প আজ আপনাদের বলব।

অভিমানী প্রেমের দৃশ্যপট

আমার এক বন্ধু ছিল সোনিয়া, সে সৌরভ নামের একটি ছেলেকে পছন্দ করত। তারা দু’জন একে অপরকে অনেক ভালবাসত। অন্য দিনের মত একদিন তাদের মধ্যে অনেক ঝগড়া হল, সোনিয়ার ধারণা যে, সৌরভ লুকিয়ে অন্য মেয়ের সাথে দেখা করে। সৌরভ অনেক চেষ্টা করেও তা সোনিয়াকে বোঝাতে পারেনি। ঝগড়া অনেক বেশি হওয়ায় সোনিয়া সৌরভের সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছিল এবং একে অপরের সাথে দীর্ঘদিন কথা হয় নি।

এক মাস পরে, সোনিয়া এবং সৌরভের আবার দেখা হয়, সৌরভ তখনও সোনিয়াকে ততটাই ভালবাসত। আর সোনিয়াও সৌরভেকে খুব ভালবাসত। সুতরাং যেদিন তাদের দেখা হয়েছিল, তারা দু’জন বসে অনেক কথা বললো। সৌরভ এতদিন কি পরিমাণ মিস করেছিল সোনিয়াকে তা বলেতে লাগল তবে সোনিয়া তার অনুভূতি সম্পর্কে কিছু না বলে সেখান থেকে চলে গেল। তারপরে আবার এক মাস পর সোনিয়া ফোন দেয় সৌরভকে। তারপর সৌরভকে বলে- আমি তোমার সাথে কথা না বলে তোমাকে এড়িয়ে চলে দেখতে চেয়েছিলাম যে তুমি কি কর? কিন্তু তুমি কি করলে? কিছুই করলে না, বরং আমাকেই ফোন দিতে হল। এইকি তোমার ভালবাসা!

অভিমান থেকে রাগ

তারপর সৌরভ বলল- দেখ সোনিয়া তুমি বিনা কারণে আমাকে ভুল বোঝে, দোষ দিয়ে ঝগড়া করবা, আবার কথাও বলবা না। এখন আমি যদি তোমাকে বোঝাতে যাই তাহলে তুমি আমাকেই সন্দেহ করবে আর ভাববে অযুহাত দিচ্ছি। সত্য তো একবার বলার জিনিস কিন্তু সেটা বারবার বললে মিথ্যে মনে হয়। তাই আমার মনে হয়েছে যে তুমি একদিন ভুল বুঝে আমার কাছে ফিরে আসবে। আর আমি তার জন্য অপেক্ষা করছিলাম।

এবার সোনিয়া আর কিছু না বলে, খুব দ্রুত সৌরভকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগল। কিছুক্ষণ পর সোনিয়া বলল-

আমি না হয় একটু রাগ করি তোমার উপর, তাই বলে তুমি আমাকে বোঝাবা না বলো? তুমি আমারা সাথে কথা না বললে আমার কি পরিমাণ খারাপ লাগে তা কি তুমি জান? আমার প্রতিটা দিন অভিশাপ লাগে, বেঁচে থাকার ইচ্ছা হারিয়ে যায়, আর ভাবি এই বুঝি তুমি আমাকে ফোন দিবা। কিন্তু তুমি দাও না। তুমি অনেক পাষাণ বুঝলা।


তারপর সৌরভ আর কিছু না বলে, হাত দিয়ে সোনিয়ার চোখের পানি মুছে দেয়। এভাবে আবার কিছু সুন্দর সময় কেটে গেল। একদিন সোনিয়া সৌরভকে তার বাসায় নিয়ে আসল এবং মায়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দিল। সোনিয়ার মা সৌরভকে অনেক পছন্দ করল, আর সৌরভের পরিবারও সোনিয়াকে পছন্দ করত। তাই দুই পরিবারের পক্ষ থেকে রাজি থাকায় দুজনে অনেক খুশি ছিল।

অল্প অল্প প্রেমের গল্প

একদিন হটাৎ সোনিয়া রেস্টুরেন্টে সৌরভকে দেখল একটা মেয়ের সাথে, মেয়েটি অনেক হেসে কথা বলছিল সৌরভের সাথে। তাই সোনিয়া ভাবল যে সৌরভ ঠিকি লুকিয়ে প্রেম করে। রাতে সোনিয়া সৌরভকে ফোন দিয়ে বিষয়টি জানতে চায়। তখন সৌরভ বলে- তুমি যাকে দেখেছ সে আমার ছোট বেলার বান্ধবী, অনেক দিন পর হটাৎ ফেসবুকে দেখি সে রিকুয়েস্ট পাঠিয়েছে। তারপর তার সাথে মাঝে মাঝে কথা হত। সে দেখা করতে চাওয়ায়, দেখা করেছি, একজন ভাল বন্ধু হিসেবে। বিশ্বাস করো সোনিয়া তার সাথে আমার কোন প্রেম-ভালবাসার সম্পর্ক নেই। তুমি চাইলে তার সাথে ফোনে কথা বলে সিউর হতে পার।

এরপর সোনিয়া কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল- তুমি তো আমাকে একবারো তোমার এই বান্ধবী সম্পর্কে আমাকে বল নাই। আমাকে তোমার বলাটা উচিত ছিল। তখন সৌরভ বলল- তোমাকে বলতে চাইছিলাম কিন্তু তুমি তো আবার হুটহাট করে রেগে যাও। বোঝার চেষ্টা করো না।

এই কথা বলায় সোনিয়া এবার রেগে গেল। তারপর আবার দুজনের তুমুল ঝগড়া শুরু হল, যা আগের থেকে অনেক ভয়াবহ ছিল। দুজনে কথা হয় না, কয়েকদিন, কয়েক সপ্তাহ, কয়েক মাস। অভিমানের পাল্লা এতটাই ভার ছিল যে কেউ কাউকে ফোন দেয় না। একদিন সোনিয়া নিজের ভুল বুঝতে পেরে, সৌরভকে দেখা করতে বলে তাদের পছন্দের জায়গায়।

অপেক্ষার প্রহর

তারপর যথাসময়ে সোনিয়া সেই জায়গায় এসে সৌরভের জন্য অপেক্ষা করতে লাগল। এদিকে অনেক সময় পার হল, কিন্তু সৌরভ আসে না। ফোন দিয়ে সোনিয়া দেখে যে ফোন সুইচ অফ। এরপর সোনিয়া ভীষণ রেগে গেল, বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যার সময় রাগে বিড়বিড় করতে করতে বাসায় ফিরে এল।

বাসায় এসে সোনিয়া মনে মনে প্রতিজ্ঞা করল যে- সৌরভ ফোন দিয়ে সরি বলা আর কানে না ধরা পর্যন্ত সে কথা বলবে না। কিন্তু দিন যায়, সপ্তাহ যায় সৌরভের ফোন আসে না। আর সহ্য করতে না পেরে সোনিয়া সৌরভের ছোট বোনকে ফোন দিয়ে বলে সৌরভের কি হয়েছে, কথা বলে না কেন। সৌরভের বোন কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল- আপু বিকেলে একটু দেখা করতে পারবা, তোমাকে একটা জিনিস দেয়ার ছিল। সোনিয়া বলল- কি হয়েছে, এভাবে বলছ কেন? ঘটনা কি খুলে বল। সৌরভের বোন আর কিছু না বলে ফোনটা কেটে দিল।

অসমাপ্ত প্রেমের চিঠি

তারপর বিকেলে সোনিয়া দেখা করল, সৌরভের বোন সোনিয়ার হাতে একটা চিঠি দিয়ে কিছু না বলে চলে গেল। সোনিয়া কিছুটা অবাক হয়ে চিঠিটা খুলল। সেখানে সৌরভের হাতের লেখা ছিল-

প্রিয় অভিমানী পাখি আমার, যে অভিমানী প্রেমের গল্প আমরা দুজন লিখে চলেছি তার শেষ যেন না হয় কখনো। তুমি কথা না বললে আমারো যে কি পরিমাণ খারাপ লাগে তা তোমাকে বলে বোঝাতে পারব না। কাল তুমি যখন ফোন দিয়ে আমাদের পছন্দের জায়গায় দেখা করতে বললে তখন যে আমার কি খুশি লাগছিল তা আর নাই বলি। তোমার পছন্দের নীল পাঞ্জাবীটা পড়ে তোমার সাথে আজ সারা বিকেল ঘুরব, বাবু মামার ফুচকা দোকানে দুজনে ফুচকা খাওয়ার প্রতিযোগিতা করব। অনেক বেশি ঝাল দিয়ে মুড়ি মাখা খাব, তুমি ঝালে চিল্লাবা আর আমি তোমার এই অদ্ভুত ভঙ্গিমার ছবি তুলে তোমাকে রাগাব।

তারপর তুমি আমাকে তাড়া করবা আর আমরা দৌড়াব। এরপর আর কি কি করব তা তুমি বলবা। আজ তোমাকে চিঠি দিয়ে এই আবদারগুলো জানালাম। আর একটা কথা সামনাসামনি বলতে আমার লজ্জা লাগে তাই চিঠিতেই বলে দেই- সোনিয়া আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি এবং আমি তোমাকে সর্বদা ভালবাসব। আমার জীবনে একটিই মাত্র তুমি থাকবে। আমাকে তোমার কোলে একটু ঠাই করে দিও।


এবার সোনিয়া ফোন দেয় সৌরভের বন্ধু সুজনকে। সুজনে সোনিয়াকে পাখি বাজারে আসতে বলে ফোন কেটে দেয়। সোনিয়া সেখানে গিয়ে সুজনের সাথে দেখা করে।

সুজন তারপর সোনিয়াকে নিয়ে বাজারের পিছনে পুকুরপাড়ে নিয়ে যায়। তারপর একটা ঘেরা দেয়া কবর ঘরকে দেখিয়ে বলে- ঐ যে ওইখানে সৌরভ ঘুমাচ্ছে। সোনিয়া এবার রেগে গিয়ে বলে ফাজলামো বাদ দিয়ে সৌরভের কাছে নিয়ে চল। তারপর সুজন বলে যেদিন তুমি সৌরভকে দেখা করতে বল ওইদিন সে নীল পাঞ্জাবী পরে বের হয়েছিল। তারপর একটা রোড এক্সিডেন্টে সৌরভ… এই বলে সুজন খুব দ্রুত সেখান থেকে চলে গেল।

ভালবাসার শেষ পরিণতি

সুজনের কথা শুনে সোনিয়া হতবাক হয়ে গেল। প্রথমে সে বিশ্বাস করতে পারছিল না, হাত পা অবশ হয়ে আসছিল তার। চিৎকার করে সৌরভের কবরের ঘেরা দেয়া বেড়া ধরে কাঁদতে লাগল, আর সৌরভ বলে করুণ সুরে ডাকতে লাগল। চিৎকার শুনে পাশের বাজার থেকে কিছু লোক এসে সোনিয়াকে বাসায় দিয়ে যায়।

তারপর সোনিয়া না খেয়ে আর কেঁদে কেঁদে শুকিয়ে যেতে শুরু করল, প্রতিদিন সৌরভের কবরে এসে কান্নাকাটি করে আর বাজারের লোকজন বাসায় দিয়ে যায়। এভাবে সোনিয়া ধিরে ধিরে অসুস্থ্য হতে লাগেল। সোনিয়া আর কখনই বিয়ে করেনি এবং কয়েক বছর পরে যখন সোনিয়া অসুখে মারা যায়, সৌরভের কবরের পাশে তাকেও দাফন করা হয়।

আরো পড়ুন: কষ্টের প্রেমের গল্প – অসমাপ্ত ফেসবুক প্রেম

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *