হৃদয়স্পর্শী ভালোবাসার গল্প ২৪

হৃদয়স্পর্শী ভালোবাসার গল্প – বেলা শেষে পর্ব ২৪ | Love Story

হৃদয়স্পর্শী ভালোবাসার গল্প – বেলা শেষে পর্ব ২৪: গত পর্বে নীলের সাথে প্রিয়ন্তির বেশ রোমান্টিক কিছু মুহুর্ত আমরা দেখেছি। শাড়িতে অপরূপ প্রিয়ন্তি এবং পাঞ্জাবীতে সুদর্শন নীল যেন হাজার বছরের অপেক্ষায় বসে থাকা জুটি। দুজনের মধ্যে মুখের ভাষার থেকে চোখের ভাষা বেশি মিছিল করছে, যেখানে নীল নীরব হয়ে থাকলেও প্রিয়ন্তি কিন্তু বেশ প্রতিবাদী। তো চলুন দেখি এই ভালবাসার মিছিলে প্রিয়ন্তী জয় কিভাবে ছিনিয়ে আনতে পারে?

বিদায়ী ভালবাসা

প্রিয়ন্তী তাকাতেই নীলও নোটিশ করল যে তার চেয়ারের কোণায় শাড়ীর আচল আটকে গেছে। নীল বেশ অপ্রস্তুত ভাবে আচলটা টেনে ঠিক করে দিল। প্রিয়ন্তীর বেশ মজাই লাগলো এই ঘটনায়।
আজ প্রিয়ন্তীর চারপাশের আনন্দকে অনুভব হচ্ছে। এই কয়েকদিন আয়োজন করেও এতোটা আনন্দ হয়নি ওর। কিন্তু নীল পাশে থাকায় সবই সুন্দর লাগছে।

প্রিয়ন্তী যখন স্টেজে গেল নিহাকে হলুদ দিতে তখন রাকা আর তুরিন আপু জোড় করে নীলকেও পাঠালো স্টেজে। দুজনে যখন একসঙ্গে হলুদ দিচ্ছিল প্রিয়ন্তী নীলের দিকে তাকিয়ে দেখছে। স্টেজের রঙ্গিন আলোয় চোখগুলো আরো মায়াভরা লাগছে,
নীল কেক নিয়ে নিহাকে খাওয়াতে যাবে তখন নিহা বলে উঠল,
: ভাইয়া আমি অনেক কেক খাচ্ছি আর খাব আজ। এই পিসটা না হয় আমার বান্ধুবীকেই দেন।
নীল নিহার কথা শুনে প্রিয়ন্তীর দিকে তাকাতেই সে লজ্জা পেয়ে স্টেজ থেকে নেমে গেল।
এরপর একে একে রাকা, সাব্বির সহ বাকীরাও পালাক্রমে সবাই হলুদ দেয়া শেষ করল।

খাওয়ার সময় সবাই এক টেবিলে বসতে গিয়ে প্রিয়ন্তী নীলকে খুজতে লাগল। কিন্তু আশেপাশে নীল কোথাও নেই।
প্রিয়ন্তী মন খারাপ করেই অনিচ্ছা সত্ত্বেও খেতে বসল ঠিকই কিন্তু খেতে পারল না।
খাওয়া শেষে তুরিন আপুকে খুজেঁ পেল। আপু চলে যাচ্ছে।
প্রিয়ন্তী দ্রুত পায়ে এগিয়ে গেল।

কাছে গিয়ে দেখল তুরিন আপুর চোখ কেমন ভেজা। প্রিয়ন্তী প্রশ্ন করেই বসল,
: আপু কি হয়েছে আপনার কোন সমস্যা?
তুরিন আপু কোন জবাব দিল না। প্রিয়ন্তী বুঝতে পারছেনা কি এমন হলো।
ও বুঝতে না পেরে চলে যাবে এমন সময় তুরিন আপু বলে উঠলো,
: প্রিয়ন্তী বোন আমার আই এম সরি।
: কেন আপু কি হয়েছে?
: আমার ভাইটাকে আটকাতে পারলাম না তোর জন্য। মাফ করে দিস।
প্রিয়ন্তীর মুখ নিমিষেই ফ্যাকাশে হয়ে গেল। কি বলছে আপু?
: আজ ২টায় নীলের ফ্লাইট।
: ফ্লাইট মানে? আপু উনি কোথাও যাচ্ছেন?
: ওর একটা ভাল জব অফার এসেছে চায়না থেকে। আর ওর ইচ্ছে ও বাইরেই কিছু করবে। ইভেন এ ব্যাপারে আমরাও জানতাম না। দুদিন আগেই জানালো আর তোমায় বলতে নিষেধ করে দিয়েছিল। তাই বলতে পারিনি। সরি বোন মাফ করে দিও আমায়।
প্রিয়ন্তীর যেন বিশ্বাস হচ্ছেনা! কি বলছে আপু এসব? তার ডাক্তারবাবু তাকে ছেড়ে চলে গেছে! তাও এভাবে কিছু না বলে? শেষবারের মত বিদায় ও নিল না? এতোটা পাষান কিভাবে হতে পারলো সে? প্রিয়ন্তী কি এতোই খারাপ?
প্রিয়ন্তী পাথরের মতো দাড়িয়ে এসব ভাবছে। ওর মাথায় কিছু কাজ করছেনা। কান্নাও আসছেনা আর কিছু বিশ্বাস করতেও ইচ্ছে হচ্ছেনা।

সে দৌড়ে রুমে গেল। ফোন দিল নীলকে। পিক করল না নীল। হঠাৎ নীলের ক্ষুদে বার্তা এলো,
“মিস প্রিয়ন্তী মেবি আই এম গেটিং উইকার অন ইউ। এন্ড আই ডোন্ট ওয়ান্ট দ্যাট। আমি তাই চলে যাচ্ছি। ভালো থাকবেন আর পারলে ক্ষমা করবেন। আই এম সরি।”

নীলের দেয়া নীল কষ্ট

প্রিয়ন্তীর এতোক্ষন কিছু বিশ্বাস না হলেও এই ম্যাসেজের পর সে বুঝতে পারলো তার নীল সত্যিই তাকে ছেড়ে চলে গেছে, অনেক দূরে, তাও নীলের নিজের ইচ্ছায়,
ভাবতে পারছেনা সে। কি করবে? কোথায় যাবে নীলকে খুজতে?এয়ারপোর্টে যাবে? কাকে বলবে এই কথা সে?
এমন এক সিচ্যুয়েশনে কি করার আছে আর!

রুম থেকে বের হতেই প্রিয়ন্তীর মা জোড় করে ডেকে আবার রুমে নিয়ে গেল। প্রিয়ন্তী ততক্ষনে তার হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে নির্বাক।
ওর মা হেসে হেসে বলল,
: ছেলেটা কে রে? ভারী মিষ্টি দেখতে।
প্রিয়ন্তী চুপ।
: রাকা বলল ছেলেটা নাকি ডাক্তার। তা তুই ওকে ভালোবাসিস আমায় বললে কি এমন হতো শুনি? আমিতো স্টেজে দেখেই ধরে ফেলেছি। শোন আর লজ্জা পেয়ে কাজ নেই। তোর বাবাকে আমিই বলব যা বলার। ছেলেটাকে আমার ভাল লেগেছে।
প্রিয়ন্তী আর পারছিল না। তার সহ্যক্ষমতা হারিয়েছে সে। মাকে হঠাৎ জোড়ে জড়িয়ে ধরেই চিৎকার করে কেদেঁ উঠলো আর বলতে লাগল,
: না মা। সে আমার না। আমার ভালোবাসার কোন মূল্যই নেই তার কাছে। সে চলে গেছে অনেক দূরে আমাকে ছেড়ে। আর পাওয়া হবেনা আমার তাকে। মা বলোনা কেন এমন হয়? ভালোবাসা কি অপরাধ মা? আমি কি কোন ভুল করেছি ভালোবেসে? সে কেন অন্য কারো ভুলের শাস্তি আমাকে দিল মা?বলো না মা? আমি আর পারছি না মা। আমার বুকটা যে ফেটে যাচ্ছে। সে কি একবারো ভাবছেনা আমার কথা?
প্রিয়ন্তীর মা মেয়ের এমন কথা শুনে বেশ হকচকিয়ে গেল।
সে আগে জানলে মেয়েকে এসব বলতোনা। অজান্তেই তার চোখেও পানি এসে গেল। তার সেই ছোট্ট প্রিয়ন্তী মনিটা আজ এত্তো কষ্টে আছে অথচ সে মা হয়ে কি করে বুঝলোনা!

প্রিয়ন্তী বাসায় এসে শাড়ী বদলালো না। আয়নায় নিজের প্রতিচ্ছবি দেখছে আর ভাবছে,
সে পারেনি তার নীলকে ধরে রাখতে।এটা তার নিজের ব্যর্থতা। এখানে নীলের কোন দোষ নেই।

এভাবেই হয়তো ভেঙে যায় বুক, কেটে যায় ঘুম,ভেঙ্গে যায় মন,
তারপর বাকী কথা জানে এ শূণ্যতা, বোবা চোখে দেখি অন্য জীবন,
(চলবে)

শেষ পর্ব- হৃদয়স্পর্শী ভালোবাসার গল্প – বেলা শেষে – শেষ পর্ব

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *