হৃদয়স্পর্শী ভালোবাসার গল্প – বেলা শেষে পর্ব ১৪: গত পর্বে দেখেছি প্রিয়ন্তী অপেক্ষা করছিল নীলের জন্য। সেজেগুজে বাইরে তাকিয়ে ছিলে এই পাগলিটা। চোখে মুখে শুধু অপেক্ষার প্রহর তার। কবে শেষ হবে এই প্রহর? কবে বেলাশেষে নীলের হাত ধরে ঘরে ফিরবে সে? আমাদেরও অপেক্ষা করে দেখার পালা শুধু। চলুন তবে দেখতে শুরু করি।
অপেক্ষার প্রহর
বৃষ্টি হচ্ছে!!
বারোটা বেজে গেল কিন্তু নীলের খবর নেই। প্রিয়ন্তী রেডী হয়ে বসে আছে।
উফফ এই লোকের টাইম সেন্স নাই বললেই চলে। এখনো আসেনা কেন! ফোনও দেয়না।
হঠাৎ নীলের ম্যাসেজ এলো, ‘আমি বের হচ্ছি, রেডী থেকো।’
প্রিয়ন্তীর মনটাই ভাল হয়ে গেল।
আয়নার সামনে গিয়ে নিজেকে ঠিক করে নিচ্ছে।
চুল গুলো একটা ক্লিপ দিয়ে আটকে নিলো। হাতে একটা পিচ কালারের হাত ঘড়ি পড়ল। প্রসাধনী বলতে কেবল ডার্ক চকোলেট কালার লিপ্সটিক দিল সে। এক্সট্রা নো সাজগোজ।
ঠিক একটায় নীল ফোন দিল। সে নিচে চলে এসেছে। প্রিয়ন্তীর মনে হয় এই সময়টাই সবচেয়ে মধুর। যখন নীল তার জন্য অপেক্ষা করে। মনের ভেতর কেমন একটা প্রজাপতি ওয়ালা ফিলিং ফিল করে সে তখন।
নিচে যেতেই নীল একটা হাসি দিয়ে হেলমেট টা প্রিয়ন্তীর হাতে দিল। সে পুরো কাকভেজা হয়ে এসেছে। ঠান্ডায় কাপছিল। প্রিয়ন্তী কে নিতে বেচারা এতোটা বৃষ্টিতে ভিজেও চলে এলো। প্রিয়ন্তী অজান্তেই হেসে ফেলল।
আজ কেমন অন্যভাবে দেখছে তাকে। তাহলে কি আজ প্রিয়ন্তী কে সুন্দর লাগছে নীলের চোখে?
বাইক দশ মিনিটের পথ অতিক্রম করতেই ঝিরিঝিরি বৃষ্টি আবার শুরু হলো।
বাইকের হাই স্পিডে বাতাসে প্রিয়ন্তীরও বেশ ঠান্ডাই লাগছে। নাহ এই ছেলে আজ নিজেরও জ্বর আনবে সাথে তারও।
নীল জানে প্রিয়ন্তী হাই স্পিডে বাইক চালালে ভয় পায়। তাই ইচ্ছে করেই যেন মাঝে মধ্যে স্পিড বাড়িয়ে দেয়। আর তখনই প্রিয়ন্তী এক চিৎকার মেরে নীলকে ধমকায়।
বৃষ্টিভেজা নীল ও প্রিয়ন্তী
বৃষ্টি অনবরত পড়েই যাচ্ছে। প্রিয়ন্তীর চুল পুরোপুরি ভিজে একাকার। নীলের পুরো ড্রেস ই ভিজে গেছে। প্রিয়ন্তী হঠাৎ জিজ্ঞেস করল,
: “আজ কি জ্বর কে খুব মিস করছেন? যে অবস্থা তাতে বেশী সময় আর অপেক্ষা করতে হবেনা এমনিই চলে আসবে।”
: “হেহে হ্যা জ্বর তো এলো বলে। ভাবছি কি হবে!”
: “ভালোই হবে। জ্বর হলে দুজনের একসাথেই হবে। ডাক্তার সাহেব আমার ট্রিটমেন্ট করে দিয়েন।”
: “এহহ ডাক্তারের ও জ্বর হবে। তাই আগে ডাক্তারকে কেয়ার দিয়ে সুস্থ করবেন। তারপর ডাক্তার আপনাকে ট্রিটমেন্ট করবে।”
প্রিয়ন্তী যেন এ কথায় বেশ লজ্জা পেল। কি বলছে নীল এসব!
নীল প্রথমেই একটা শপিং মলে গেল। প্রথমেই গেল শাড়ীর দোকানে। প্রিয়ন্তীকে বলল আপুর জন্য শাড়ী সিলেক্ট করতে।
প্রিয়ন্তী ঘুরে ঘুরে বেশ কিছু শাড়ী দেখছে। পরে মেরুন কালার একটা শাড়ী চুজ করলো সে। নীল দেখেই বলল
: “বাহ! শাড়ীটা তো বেশ সুন্দর। মিস প্রিয়ন্তী তোমার কাধে জড়াও তো দেখি কেমন লাগে!”
প্রিয়ন্তী কেমন একটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল। লজ্জায় মনে হচ্ছে তার গাল পুরো দমে টমেটোর রং ধারন করেছে।
শাড়ীটা গায়ে জড়াতেই নীল বেশ মনোযোগ দিয়ে তাকে দেখল। তারপর দোকানে বলল সেইম দুইটা শাড়ী প্যাক করতে।
প্রিয়ন্তী অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল,
: “সেইম শাড়ী দুইটা কেন?”
: “শাড়ীটা এত্তো ভাল লেগেছে যে ভাবলাম হবু বউ এর জন্য একটা নিয়ে নেই।”
প্রিয়ন্তী কথাটা শুনেই মুখ ঘুরিয়ে নিল।কি ঢং জানে লোকটা! একবার বলে বিয়ে শাদী ই করবেনা। এখন দেখো হবু বউ এর জন্য শাড়ীও কেনা হচ্ছে…
প্রিয়ন্তী একটা জুয়েলারির দোকানে গিয়ে আপুর জন্য কিছু অর্নামেন্টস কিনল। তার পক্ষ থেকে গিফট করবে এগুলো সে।
তারপর তারা ফুলের দোকান থেকে বেশ বড় একটা বুকে নিয়ে নিল।
মিরপুর চলে এলো। আহহ কতোটা পথ একসাথে এসেছে ভেবেই প্রিয়ন্তীর মন ভাল হয়ে গেল।
আপুর বাসায় যেতেই আপু ওদের দুজনকে দেখে বেশ চমকে গেল।খুশিও হলো অনেক।
প্রিয়ন্তী আপুর রুমে বসে আছে। তুরিন আপু আর নীল ড্রয়িং রুমে। আপু হঠাৎ দুইটা শাড়ী দেখে নীলকে জিজ্ঞেস করল,
: “কিরে এটা কার?”
: “আরে প্রিয়ন্তীই তোমার শাড়ী চুজ করলো। তার উপর এতোদূর আমাকে কোম্পানি দিল। তাই ভাবলাম ওর জন্যেও একটা নেই।”
তুরিন আপু আর কিছু বলল না।যাক তার ভাইয়ের একটু হলেও সুমতি হয়েছে তাহলে,
এরপর সবাই রেডি হয়ে লাঞ্চ করতে বের হলো।বাইরেই খাবে।তুরিন আপুর হাজবেন্ড ই ট্রিট দিল সবাইকে। (চলবে)
পরের পর্ব- হৃদয়স্পর্শী ভালোবাসার গল্প – বেলা শেষে পর্ব ১৫