হৃদয়স্পর্শী ভালোবাসার গল্প ১৩

হৃদয়স্পর্শী ভালোবাসার গল্প – বেলা শেষে পর্ব ১৩ | Love Story

হৃদয়স্পর্শী ভালোবাসার গল্প – বেলা শেষে পর্ব ১৩: গত পর্বে প্রিয়ন্তী ও নীলের মাঝে বেশ ভাল বোঝাপোড়া হয়। অনেকটা বাস্তববাদী চরিত্রের নীল অকপটেই তার কথা বলেছিল যা প্রিয়ন্তীর হৃদয় ভেদ করেছিল, নিস্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল কিছু সময়ের জন্য। তবে কি প্রিয়ন্তী তার মনের মানুষটিকে পাবে না? চলুন দেখি কি হয়।

নীলের হটাৎ ফোন

সকালে অর্ন উঠে দেখল প্রিয়ন্তী গভীর ঘুমে। তাই তাকে না জাগিয়ে ফ্রেশ হয়ে আন্টির কাছে গিয়ে বসল সে।
প্রিয়ন্তীর মা অর্নকে নাস্তা খেয়ে নিতে বলল।
কিন্তু অর্ন শুধু চা নিয়ে বলল প্রিয়ন্তী জাগলে একসাথেই নাস্তা করবে।

এদিকে প্রিয়ন্তীর গভীর ঘুমে বারবার তার ফোন বেজে উঠে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছিল। প্রিয়ন্তী বারবার কান চেপে আবার ঘুমিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু ফোন করা ব্যক্তিও নাছোড়বান্দা। কল দিচ্ছে তো দিচ্ছেই।
প্রিয়ন্তী ফোন বালিশের নিচে রাখল। নাহ তাও লাভ হলোনা। মনে হচ্ছে টানা একশো ফোন আসছে। বাধ্য হয়ে ফোন অফ করতে নিচ্ছিল প্রিয়ন্তী। ঘুম ঘুম চোখে ফোনটা হাতে নিতেই স্ক্রিনে দেখল লেখা ‘ডাক্তারবাবু’।

প্রিয়ন্তী এক লাফে শোয়া থেকে উঠে বসল। তার রাজ্যের ঘুম কোথায় যেন পালালো।
এ কি স্বপ্ন নাকি সত্যি? নীল তাকে ফোন দিচ্ছে সকাল সকাল! কিন্তু কেন?

ফোনটা বেজেই চলছে। এর মধ্যেই অর্ন রুমে ঢুকে অবাক হয়ে বলল: “কিরে কখন উঠলি? আর ফোনটা যে বাজছে।পিক না করে ওভাবে হা করে তাকিয়ে আছিস কেন?”
প্রিয়ন্তী অর্নের মুখের দিকে তাকিয়ে হা করে রইল।
শেষে বলল নীল তাকে কল দিচ্ছে।
অর্ন : “তো গাধীর মতো বসে আছিস কেন? আপনার নায়কের ফোনটা না ধরলে সে কি বলবে জানবেন কিভাবে শুনি?”
প্রিয়ন্তী : “ভয় হচ্ছে রে।”
অর্ন: “কিন্তু কেন!”
প্রিয়ন্তী: “না হঠাৎ সকাল সকাল ওনার ফোন! তাই।”

ফাইনালি ফোনটা পিক করল প্রিয়ন্তী। চুপ করে আছে সে।
ওপাশ থেকে নীল একনাগাড়ে বলতে থাকল,
: “মিস প্রিয়ন্তী, সুপ্রভাত। আ­মি অনেক দু:খিত ঘুমের মধ্যে আপনাকে ডিস্টার্ব করার জন্য।”
: ‘আরে না সমস্যা নাই। বলেন?”
: “একচ্যুয়ালি আজ তুরিন আপুর বার্থডে। আর আমি কাজের জন্য একদমই যেতে পারিনি আপুর বাসায়। সারপ্রাইজ দিতে চাচ্ছি আপুকে।”
: “বেশ তো ভাল আইডিয়া। হঠাৎ গিয়ে আপুকে চমকে দিন।”
: “আরে তা তো দেবই। কিন্তু এক্ষেত্রে আপনার হেল্প খুবই দরকার।”
: “কিভাবে?”
: “আপনার যদি সময় হয় আপুর জন্য গিফট কিনতে যেতাম আপনাকে নিয়ে। তারপর সোজা আপুর বাসায় গিয়ে আপুকে সারপ্রাইজ করে দেব। আপনার কি সময় হবে?”
: “সময় বলতে আমার তো ক্লাস আছে।”
: “ওহ তাহলে আর কি! আমার প্ল্যানটাই বরবাদ।”
: “আরে আরে ডিরেক্টর কত টাকা লস করে বরবাদ মুভি বানালেন আর আপনি না চাইতেই আপনার প্ল্যান বরবাদ হচ্ছে। হেহেহে।”
: “মজা করোনা তো। মুডটাই খারাপ হয়ে গেল।”
: “আচ্ছা রাখছি।”

নীলের অপেক্ষায় প্রিয়ন্তী

ফোন রাখতেই অর্ন সব জানতে চাইল। শুনেই অর্ন প্রিয়ন্তীকে এক থাপ্পড় লাগালো। এতো বড় চান্সটা প্রিয়ন্তী কেন মিস করল!
এই সুযোগে প্রথমত নীলের সাথে সে টাইম স্পেন্ড করতে পারতো, দ্বিতীয়ত নীলের আপুও খুশি হতো।
প্রিয়ন্তী মন খারাপ করে বলল,
: “আমিও তো এসব চাই কিন্তু আমার ডাক্তারবাবু তো আর চায়না।”
: “আরে এখন চায়না তো কি? চাইতে কতক্ষন? চেষ্টা করতে দোষ কী? এক্ষনি নীলকে ফোন দিয়ে বল তুইও যাবি।”

প্রিয়ন্তী যেন অর্নের কাছে থেকে এই ঝাড়িটা খেতেই অপেক্ষায় ছিল। এক চিলতে হাসি হেসে সে ফোন হাতে নিয়ে নীলকে ফোন দিল।
নীল ফোন ধরতেই প্রিয়ন্তী শুধু বলল,
: “আমি যাচ্ছি আপুর বাসায়। ক্লাসে যাব না আমি। বের হবার আগে আমায় একটা টেক্সট দিয়েন, ব্যাই।”
নীলকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই প্রিয়ন্তী ফোন রেখে দিল।

প্রিয়ন্তীর যখনই নীলের সাথে বের হবার কথা হয়, ওর অন্যরকম আনন্দ অনুভব হয়। আজো তার ব্যতিক্রম নয়।
অর্নকে জড়িয়ে ধরেছে সে। ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে নিয়েছে। তারপর শুরু হলো আবার সেই একই ধাধা !
কি পড়ে বের হবে আজ!
শাড়ী?/ড্রেস?
অর্ন বলল শাড়ী পড়তে।
কিন্তু বাইরে কেমন মেঘ করে আছে দেখে প্রিয়ন্তী বলল: “না ক্যাজুয়ালিই যাই।”
শেষে ডার্ক ব্লু এন্ড পিচ কালারের কম্বিনেশনের একটা টপ্স আর ব্লু-হোয়্যাইট লেগিন্স বেছে নিল প্রিয়ন্তী।

নাহ নীল ম্যাসেজ দেয়া অবধি সে অপেক্ষা করতে পারবেনা তাই আগেই ড্রেস পড়ে বসে রইল। যেন নীল আসলে দেরী না হয়। সে চায়না নীলের সাথে কাটানো সময়ের একটা সেকেন্ড ও নষ্ট করতে।

অর্ন প্রিয়ন্তীর এমন সব কান্ডকর্ম দেখে বেশ মজাই পাচ্ছিল। যে মেয়ে সারারাত কান্না করে চোখ ভাসিয়েছে, সেই এখন আনন্দে আনন্দে আকাশে উড়ছে! জীবনের কি জটিল সমীকরণ! কখন যে কি হয় কেউই জানেনা। এসব ভাবতে ভাবতে অর্নের একটা পুরানো গান মনে পড়ায় সে প্রিয়ন্তীর কাছে গিয়ে দুষ্টুমি করে গাইল,
‘কেউ তো জানেনা,
কখন যে কার কি হয়!’
প্রিয়ন্তী লজ্জায় টুকটুকে লাল হয়ে গেল। অর্ন ওর এ অবস্থা দেখে বলেই ফেলল,
: “বাপরে! কেউ তো নিজের বিয়েতেও এতোটা লজ্জা পায়না, তুই এখনই যতটা লজ্জা পাচ্ছিস!”
প্রিয়ন্তী ধ্যাত বলে রুম থেকে বেড়িয়ে গেল। (চলবে)

পরের পর্ব- হৃদয়স্পর্শী ভালোবাসার গল্প – বেলা শেষে পর্ব ১৪

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *