হৃদয়স্পর্শী ভালোবাসার গল্প – বেলা শেষে পর্ব ১২: গত পর্বে প্রিয়ন্তী বেশ শকড ছিল নীলের কথায়। মনের ভিতর জমানো স্বপ্নগুলোতে যেন ঘুনে ধরতে যাচ্ছে এই ভেবে মেয়েটি বেশ নিশ্চুপ হয়ে যায়, তারপরে কি হয়েছিল চলুন দেখি।
নীল ও প্রিয়ন্তীর বাস্তবমুখী পৃথিবী
প্রিয়ন্তী কোনমতে নিজেকে সামলে নিয়ে বলল- “একটা সম্পর্কে কমিটমেন্ট থাকা খুব জরুরী। কমিটমেন্ট ছাড়া কোন সম্পর্কই সম্ভব না।”
নীল: “কিন্তু মানুষ বিয়ে করেও যে কমিটমেন্ট রাখেনা, এমন কমিটমেন্ট জাস্ট ভেলুলেস।”
প্রিয়ন্তী: “সবাই তো সেইম না। তাইনা? আপনার কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত অতীতের ঘটনার জন্য তো আর সবাইকে এক কাতারে ফেলতে পারেন না!”
নীল: “সে যাই বলো! আমি কিন্তু লজিক ছাড়া বলিনি ভেবে দেখো।”
প্রিয়ন্তী: “আপনার লজিক আপনার কাছে রাইট।”
নীল: “তাও কথা! সবার ধারণা তো সেইম হবেনা। তবে তোমাকে যা বললাম তা নিশ্চয়ই বুঝেছো? মন খারাপ করার কিছু নেই। তুমিই বলেছো সবাই এক না।”
প্রিয়ন্তী বুঝে উঠতে পারছেনা কি বলা উচিৎ তার! কিই বা বলতে পারে সে! নীলের যা বলার বলেই দিল।
নীল বাইকে নামিয়ে দিয়েও আজ যাচ্ছেনা। প্রিয়ন্তীর চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। প্রিয়ন্তীর খুব অস্বস্তি লাগছিল!
নীল আবারো জিজ্ঞেস করল: “আমি যে ব্যাপারটা বুঝালাম বুঝেছো তো?”
প্রিয়ন্তী: “হুম মনে হয়না এখানে না বুঝবার কিছু আছে!”
নীল: “বলো তো কি বুঝেছো? আমার মনে হচ্ছেনা তুমি বুঝেছো।”
প্রিয়ন্তীর গলা থেকে কথা বের হচ্ছেনা। চিৎকার দিয়ে কান্না আসছে ওর! কি বলতে চেয়েছিল আর কি শুনল সে!
এক দৌড়ে বাসায় চলে গেল ও।
রুমে গিয়ে ঠাস করে মেঝেতেই বসে পড়ল। এমনটাই কি হবার ছিল! ওর ভালোলাগা, ভালোবাসার কি কোন মূল্য নেই?
নীলের একটা অতীত কি প্রিয়ন্তীর সব স্বপ্ন এভাবে ভেঙ্গে দেবে?
নাহ কান্না পেলেও চোখে পানি আসছেনা।
কেমন একটা পাথর হয়ে গেছে প্রিয়ন্তী।
এই মুহুর্তে কি করবে বুঝতে পারছিল না!
দুম করে আসা সুখটা বুঝি এভাবেই দুম করে হাওয়ায় মিলায়!
তবে কেন তার আগমন?
না এলেও তো পারতো সে?
কষ্টই যখন দেবে আসলো কেন সে?
ভীষণ একা প্রিয়ন্তীর পৃথিবী
কাউকে দরকার এই সময়ে পাশে। অন্তত একটু কথা বলার জন্য। রাকা আর নিহা দুজনেই ব্যস্ত থাকবে। তাই তাড়াতাড়ি অর্নকেই ফোন দিল প্রিয়ন্তী।
ফোন ধরতেই প্রিয়ন্তী ভাঙা ভাঙা কন্ঠে অর্নকে বাসায় আসতে বলল।
রাত প্রায় নয়টা! তাও অর্নের বুঝতে বাকি নেই কিছুতো হয়েছে তাই ওর যেতেই হবে। জলদি হল থেকে বেরিয়ে গাড়ি নিয়ে প্রিয়ন্তীর বাসায় এলো।
বাসায় ঢুকতেই আন্টির প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হলো, এতো রাতে তুমি!মা কোন সমস্যা?
অর্ন কি বলবে না বলবে জলদি বলে দিল: “আন্টি আজ হলে একটু ঝামেলা তাই প্রিয়ন্তীর সাথেই থাকতে চাচ্ছিলাম।”
আন্টি: “বেশ তো মা যাও প্রিয়ন্তী রুমেই আছে। ফ্রেশ হয়ে দুজনই খেতে চলে এসো।”
অর্ন কোনমতে আন্টিকে পাশ কাটিয়ে প্রিয়ন্তীর কাছে গেল।
রুমে ঢুকেই দেখল প্রিয়ন্তী জড়োসড়ো হয়ে মেঝেতে বসে আছে! অর্নকে দেখেই জড়িয়ে ধরল। তারপর সব খুলে বলতে লাগল ওকে।
প্রিয়ন্তীর খুব কষ্ট হচ্ছে কি এমন অতীত থাকতে পারে একটা মানুষের যে কারণে কমিটমেন্টেই বিশ্বাস করেনা নীল!
অর্ন সব শুনে প্রিয়ন্তীকে বুঝালো হয়তো অনেক খারাপ কিছুই ঘটেছে নীলের সাথে। নইলে একটা মানুষ তো আর এমনি এমনি এমন বদলে যায়না। প্রিয়ন্তীরও বোঝা উচিৎ নীলের সিচ্যুয়েশনটা।
অনেক ভালোবাসে ফেলাতে ব্যাপারটা প্রিয়ন্তীর কাছে আজব লাগলেও এটা বাস্তবতা।
প্রিয়ন্তী তাও মানতে পারছিল না। শুধু কি এই কারণেই তার ভালোবাসা হেরে যাবে?
অর্ন অনেক কষ্টে বুঝিয়ে প্রিয়ন্তীকে খাইয়ে ঘুমানোর জন্য বলছে। প্রিয়ন্তী শুয়ে চোখ বন্ধ করেও ভাবতে লাগল,
কি এমন চায় সে? নীলকে ছাড়া আর কিছু তো চায়নি সে! তবু কেন পাবেনা?
তার চাওয়াটা কি খুব বেশী?
চেয়েছিল আগত প্রতি বসন্তে নীলের পাশে হাটতে!
বাদল দিনের প্রথম কদম ফুলটা নীলের হাতে তুলে দিতে!
নয়তো রবীন্দ্রনাথের কবিতা পড়ে নীলকে শোনাতো!
এ কিছুই কি নীল হয়ে দেবেনা? সত্যিই দেবেনা ও এসব করার সুযোগ প্রিয়ন্তীকে?
আর ভাবতে পারছেনা প্রিয়ন্তী। কিচ্ছু ভাবতে পারছেনা। হয়তো নীল বদলাবে আর সাথে ওর চিন্তাধারাও। কিন্তু তা কি সম্ভব করতে পারবে প্রিয়ন্তী? জানে না সে, তবু ভালো যখন বেসেছে চেষ্টা তো করবেই।
এতো সহজে হাল ছাড়বেনা সে! কক্ষনো নাহ।
রাতের শেষ প্রহরে একটু একটু করে ঘুম নেমে এলো প্রিয়ন্তীর চোখে, ঘুমিয়ে গেল মেয়েটা একবুক ভালোবাসার প্রতিদানে একবুক কষ্ট নিয়ে! (চলবে)