হৃদয়স্পর্শী ভালোবাসার গল্প – বেলা শেষে পর্ব ৮: গত পর্বে আমরা প্রিয়ন্তীর মনের অস্থিরতা ও নীলের সাথে দেখা করার ইচ্ছার কৌতুহল দেখছি। আজ নীলের সাথে দেখা করার আনন্দ এই কৌতুহলকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। চলুন তাদের দেখা করার অনুভূতি দেখি।
আজ দেখা হবে মনের মানুষের সাথে
বাহিরের মিষ্টি রোদের দিকে চোখ যেতেই প্রিয়ন্তীর মনে হলো বাসন্তী রঙের ড্রেসটাই পড়বে সে। বাসন্তী রঙের উপর কালো ছোট ছোট ফুল। শেষে এইটেই পড়ে নিল সে। বড় এক খেজুর বেণী করে তা এক পাশে নিয়ে রাখল। তারপর তাতে কিছু বেলীর মালা গুজে দিল। হাত ভর্তি কালো রেশমী চুড়ি, কপালে কালো একটা টিপ, চোখে গাঢ় কাজল।
ব্যাস! প্রায় রেডীই সে। তাড়াতাড়ি নীলকে ফোন করল। ঘড়িতে সময় চারটা বেজে পনের মিনিট। নীল ফোন পিক করল না। কিছুক্ষনেই ম্যাসেজ দিল :” তুমি রেডী হয়ে নেও। আমিই তোমায় পিক করব। কোথায় আসতে হবে এড্রেসটা আমায় টেক্সট করে দেও।”
প্রিয়ন্তী নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছেনা। এই ছ্যাবলাা এই কথা বলে! সে নাকি নিজেই ওকে পিক করবে! আজ সূর্য কি ঠিক দিকেই উঠেছিল? ইশশ সকালে চেক ই করিনি।
পরে দ্রুত এড্রেস টা পাঠিয়ে দিল।
প্রিয়ন্তী তিন রাস্তার মোড়ের ঠিক এক কোণে দাড়িয়ে। নীলের কোন খবর নেই।আশেপাশে গাড়ীও নেই। এই লোক কখন কি করে আল্লাহ জানে! প্রিয়ন্তীর মেজাজ খারাপ হলো।
হঠাৎই পিছন থেকে একটা বাইকের বিকট হর্নে বিরক্ত হয়ে পিছনে ঘুরল ও। ভ্রুক্ষেপের দৃষ্টি ছুড়তেই আবার তা ফিরিয়ে নিতে হলো তার। কারণ নীল বাইকে বসে আছে। হেলমেটে তার মুখ দেখা না গেলেও প্রিয়ন্তী ঠিক চিনতে পেরেছে। তাই হাসিমুখে এগিয়ে গেল।
নীল হেলমেট খুলে হাসতে লাগল।
:”এই তুমি আমায় চিনে ফেললে! আমি আরো ভাবলাম তোমায় একটু ক্ষেপাবো। তুমি যে ঝগড়াটে মেয়ে, রাস্তায় আমাকে মেরেও বসতে পারতে!”
প্রিয়ন্তী হাসা ছাড়া কি বলবে বুঝতেছেনা! তাও জবাব দিল: “আমি ঝগড়াটে? এটা বলতে পারলেন?”
নীল: ‘জ্বী পারলাম। কারণ ইউ আর এ রিয়্যাল ঝগড়াটে। যাইহোক অনেক কথা হলো, এবারতো বাইকে ওঠো। বাই দ্যা ওয়ে আমি ক্যাজুয়ালি বাহিরে বাইকই চালাই।’
প্রিয়ন্তী ওহহহ বলে বাইকে উঠল।
নীলের বাইকে প্রিয়ন্তী
নীল একটানে বাইক ছুটালো। প্রিয়ন্তী বাইকের পিছন সাইডে ধরে বসল। ওর কেমন একটু আনইজি লাগছিল। তবু ভালো!নীলের পাশে আছে সে! বাতাসে সামনের চুল উড়ছে। মিররে একবার চোখ পড়তেই নীলের চোখের দিকে নজর পড়ল ওর।
সব কিছু যেন থেমে থেমে যায় ঐ চোখের মায়ায়।
নীল জিজ্ঞেস করল: “তোমার বসতে অসুবিধা হচ্ছেনা তো? ঠিকভাবে বসো কিন্তু।”
প্রিয়ন্তী জানাল তার কোন অসুবিধা হচ্ছেনা। হবেই বা কি করে! সে এমন একটা মুহুর্তেরই কল্পনা করেছিল।
কিন্তু এই সুন্দর মুহুর্তটি বেশীক্ষন স্থায়ী হলোনা। কারণ বাইক দ্রুতই টি এস সি গেটে পৌঁছালো। নীল গেটে বাইক থামিয়ে প্রিয়ন্তীকে নামতে বলল।
তারপর বাইক পার্ক করে টি এস সির ভেতরে গেল দুজন।
নীল প্রিয়ন্তীকে জিজ্ঞেস করল : “তুমি কি কোন জরুরী প্রয়োজনে আমায় আসতে বলেছিলে? নাকি এমনি?”
প্রিয়ন্তী: “জ্বী আসলে আজ খুব আসার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু ফ্রেন্ডরা ব্যস্ত থাকায় একা আসতে ইচ্ছেও হচ্ছিল না।”
নীল এক গাল হাসি হেসে বলল, “ঠিক আছে। চলো বসা যাক?”
দুজনেই টি এস সির অডিটোরিয়াম এর সামনের জায়গাটায় বসে। নীলের হেলমেটটি প্রিয়ন্তীর হাতে। প্রিয়ন্তী হেলমেটের গ্লাসে তাকিয়ে বারবার নীলকে দেখছে। কারণ সরাসরি তাকাতে ওর কেমন কেমন ভয় লাগে! নীল হাসিমুখে গল্প করছে। প্রিয়ন্তী হঠাৎ বলল,”চা খাবো, চলুন।”
নীল ও সম্মতি জানিয়ে সামনের টং থেকে দুজনের জন্যই মাল্টা চা নিলো।
প্রিয়ন্তী চা খাওয়ার বাহানায় ও নীলকে দেখার চেষ্টা করছিল!
নীল ও প্রিয়ন্তীর আড্ডা
নাহ এই ছেলে কে নিজের করে না পেলেও যদি সে তার সামনে থাকে, প্রিয়ন্তী সব ভুলে থাকতে পারবে। এমন কেন ছেলেটা! আজ বেশ খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে প্রিয়ন্তী।
নীলের চাহুনি, ওর হাসি,কথা বলার ধরন! সবই প্রিয়ন্তীকে মুগ্ধ করছে।
চা খাওয়া শেষে নীল বলল : “এই শোনো চা তে কিচ্ছু হবেনা আমার, বেশ ক্ষুধা লাগছে চলো অন্য কিছু খাব?”
প্রিয়ন্তী: “জ্বী আপনি খান,সমস্যা নেই। আমি কিছুই খাব না।”
নীল : “আগে চলো তো।”
বাইক নিয়ে সোজা চলে গেল পাস্তা খেতে। নীল অর্ডার করে এসে বসে পড়ল প্রিয়ন্তীর পাশে। কিন্তু নীল ঘুরে তার দিকে তাকিয়ে কথা বলছে।
প্রিয়ন্তী ভাবছে, ‘এই ছেলে কি আমার চোখের ভাষা বুঝতে পারছে? আমি কি ভাবছি? কেন তার সামনে এতটা সংকোচ বোধ করছি?
সে কি বুঝতেছে?”
পাস্তা আসতেই দুজনে খাওয়া শুরু করল। প্রিয়ন্তীর মনে হলো এটা ওর লাইফের বেস্ট পাস্তা খাওয়া। নীলের খাওয়ার ধরন দেখেও মজা পাচ্ছিল ও।
খাওয়া শেষে নীল বলল, “পলাশীর জ্যুস কর্নারের জ্যুস খেয়েছো?”
প্রিয়ন্তী বহুবার গেছে সেখানে রাকা, অর্ন আর নিহার সাথে। তবু কেন জানি মিথ্যাটাই বের হলো,’না তবে শুনেছি অনেক মজার জ্যুস পাওয়া যায়।’
নীল: “হায়হায় বলো কি? এত্ত মজার জ্যুস মিস করেছো তো! বাইকে উঠো জলদি।”
প্রিয়ন্তী মনে মনে হাসছে আর ভাবছে আমিও তো এটাই চাই নীল, তোমার পাশে থাকতে।
জ্যুস কর্নারে গিয়ে দুজন বসল। জ্যুস আসার আগেই ঘটল আরেক ঘটনা। ওদের চোখের সামনেই এক বৃদ্ধ এক্সিডেন্ট করল। প্রিয়ন্তী রক্ত দেখে বেশ ভয় পেয়ে গেল। নীল লোকটার পালস চেক করল, তার ব্লিডিং কমাতে সাহায্য করল। তারপর তাকে দ্রুত হসপিটালে নিতে সাজেস্ট করল। প্রিয়ন্তী বেশ ভয় পেয়েছে। নীল ওকে বুঝিয়ে বলল ভয়ের কিছু নেই। প্রিয়ন্তী এক চোখ বিশ্বাস নিয়ে নীলের দিকে তাকালো। (চলবে)